একীন (দৃঢ়প্রত্যয়) ও তাওয়াক্কুল (আল্লাহর উপর ভরসা)র গুরুত্ব সম্বন্ধে আরো অনেক আয়াত রয়েছে। এ মর্মের হাদীসসমূহ নিম্নরূপঃ-
1/75 عَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ الله عَنهُمَا، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله (صلى الله عليه و سلم): «عُرِضَتْ عَلَيَّ الأُمَمُ، فَرَأيْتُ النَّبيَّ ومَعَهُ الرُّهَيطُ، وَالنَّبِيَّ وَمَعَهُ الرَّجُلُ وَالرَّجُلانِ، وَالنبيَّ لَيْسَ مَعَهُ أَحَدٌ إِذْ رُفِعَ لي سَوَادٌ عَظيمٌ فَظَنَنْتُ أَنَّهُمْ أُمَّتِي فقيلَ لِي : هَذَا مُوسَى وَقَومُهُ، ولكنِ انْظُرْ إِلَى الأُفُقِ، فَنَظَرتُ فَإِذا سَوادٌ عَظِيمٌ، فقيلَ لي : انْظُرْ إِلَى الأفُقِ الآخَرِ، فَإِذَا سَوَادٌ عَظيمٌ، فقيلَ لِي : هذِهِ أُمَّتُكَ وَمَعَهُمْ سَبْعُونَ ألفاً يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ بِغَيرِ حِسَابٍ ولا عَذَابٍ»، ثُمَّ نَهَضَ فَدخَلَ مَنْزِلَهُ فَخَاضَ النَّاسُ في أُولئكَ الَّذِينَ يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ بِغَيْرِ حِسَابٍ ولا عَذَابٍ، فَقَالَ بَعْضُهُمْ : فَلَعَلَّهُمْ الَّذينَ صَحِبوا رسولَ الله (صلى الله عليه و سلم)، وَقالَ بعْضُهُمْ : فَلَعَلَّهُمْ الَّذِينَ وُلِدُوا في الإِسْلامِ فَلَمْ يُشْرِكُوا بِالله شَيئاً – وذَكَرُوا أشيَاءَ – فَخَرجَ عَلَيْهِمْ رَسُولُ الله (صلى الله عليه و سلم)، فَقَالَ: «مَا الَّذِي تَخُوضُونَ فِيهِ ؟»فَأَخْبَرُوهُ فقالَ: «هُمُ الَّذِينَ لاَ يَرْقُونَ وَلا يَسْتَرقُونَ، وَلا يَتَطَيَّرُونَ؛ وعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوكَّلُون»فقامَ عُكَّاشَةُ ابنُ محصنٍ، فَقَالَ : ادْعُ الله أنْ يَجْعَلني مِنْهُمْ، فَقَالَ: «أنْتَ مِنْهُمْ»ثُمَّ قَامَ رَجُلٌ آخَرُ، فَقَالَ : ادْعُ اللهَ أنْ يَجْعَلنِي مِنْهُمْ، فَقَالَ: « سَبَقَكَ بِهَا عُكَّاشَةُ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১/৭৫। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমার কাছে সকল উম্মত পেশ করা হল। আমি দেখলাম, কোন নবীর সাথে কতিপয় (৩ থেকে ৭ জন অনুসারী) লোক রয়েছে। কোন নবীর সাথে এক অথবা দুইজন লোক রয়েছে। কোন নবীকে দেখলাম তাঁর সাথে কেউ নেই। ইতোমধ্যে বিরাট একটি জামাআত আমার সামনে পেশ করা হল। আমি মনে করলাম, এটিই আমার উম্মত। কিন্তু আমাকে বলা হল যে, ‘এটি হল মূসা ও তাঁর উম্মতের জামাআত। কিন্তু আপনি অন্য দিগন্তে তাকান।’ অতঃপর তাকাতেই আরও একটি বিরাট জামাআত দেখতে পেলাম। আমাকে বলা হল যে, ‘এটি হল আপনার উম্মত। আর তাদের সঙ্গে রয়েছে এমন ৭০ হাজার লোক, যারা বিনা হিসাব ও বিনা আযাবে বেহেশ্তে প্রবেশ করবে।’’
এ কথা বলে তিনি উঠে নিজ বাসায় প্রবেশ করলেন। এদিকে লোকেরা ঐ বেহেশ্তী লোকদের ব্যাপারে বিভিন্ন আলোচনা শুরু করে দিল, যারা বিনা হিসাব ও আযাবে বেহেশ্তে প্রবেশ করবে। কেউ কেউ বলল, ‘সম্ভবতঃ ঐ লোকেরা হল তারা, যারা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবা।’ কিছু লোক বলল, ‘বরং সম্ভবতঃ ওরা হল তারা, যারা ইসলামে জন্মগ্রহণ করেছে এবং আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করেনি।’ আরো অনেকে অনেক কিছু বলল। কিছু পরে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিকট বের হয়ে এসে বললেন, ‘‘তোমরা কি ব্যাপারে আলোচনা করছ?’’ তারা ব্যাপার খুলে বললে তিনি বললেন, ‘‘ওরা হল তারা, যারা ঝাড়ফুঁক করে না,[1] ঝাড়ফুঁক চায় না এবং কোন জিনিসকে অশুভ লক্ষণ মনে করে না, বরং তারা কেবল আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখে।’’
এ কথা শুনে উক্কাশাহ ইবনে মিহসান উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন, ‘(হে আল্লাহর রাসূল!) আপনি আমার জন্য দো‘আ করুন, যেন আল্লাহ আমাকে তাদের দলভুক্ত করে দেন!’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি তাদের মধ্যে একজন।’’ অতঃপর আর এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আপনি আমার জন্যও দো‘আ করুন, যেন আল্লাহ আমাকেও তাদের দলভুক্ত করে দেন।’ তিনি বললেন, ‘‘উক্কাশাহ (এ ব্যাপারে) তোমার অগ্রগমন করেছে।’’[2]
2/76 عَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ الله عَنهُمَا أيضاً : أنَّ رَسُولَ الله (صلى الله عليه و سلم) كَانَ يَقُولُ: «اَللهم لَكَ أَسْلَمْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ، وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ، وَإِلَيْكَ أنَبْتُ، وَبِكَ خَاصَمْتُ. اَللهم أعُوذُ بعزَّتِكَ؛ لاَ إِلٰهَ إلاَّ أَنْتَ أنْ تُضِلَّني، أَنْتَ الحَيُّ الَّذِي لاَ يَمُوتُ، وَالجِنُّ والإنْسُ يَمُوتُونَ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ، وهذا لفظ مسلم واختصره البخاري
২/৭৬। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা লাকা আসলামতু অবিকা আ-মানতু অআলাইকা তাওয়াক্কালতু অইলাইকা আনাবতু অবিকা খা-স্বামতু। আল্লাহুম্মা আউযু বিইয্যাতিকা লা ইলা-হা ইল্লা আন্তা আন তুদ্বিল্লানী, আন্তাল হাইয়্যুল্লাযী লা য়্যামূত, অলজিন্নু অলইন্সু য়্যামূতূন।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি নিজকে তোমার নিকট সমর্পণ করলাম, তোমার প্রতি ঈমান আনলাম, তোমারই উপর ভরসা করলাম। হে আল্লাহ! তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তন করলাম, তোমারই ক্ষমতায় (শত্রুর বিরুদ্ধে) বিবাদ করলাম। হে আল্লাহ! তোমার ইয্যতের অসীলায় আমি আশ্রয় চাচ্ছি—তুমি ছাড়া কেউ (সত্য) উপাস্য নেই—তুমি আমাকে পথভ্রষ্ট করো না। তুমি সেই চিরঞ্জীব, যে কখনো মরবে না এবং দানব ও মানবজাতি মৃত্যুবরণ করবে।[3]
3/77 عَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ الله عَنهُمَا أيضاً، قَالَ : حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الوَكِيلُ، قَالَهَا إِبرَاهيمُ (صلى الله عليه و سلم) حِينَ أُلقِيَ في النَّارِ، وَقَالَها مُحَمَّدٌ (صلى الله عليه و سلم) حِينَ قَالُوا: «إنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعوا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ إيْماناً وَقَالُوا : حَسْبُنَا اللهُ وَنعْمَ الوَكيلُ». رواه البخاري، وفي رواية لَهُ عَنِ ابن عَبَّاسٍ رَضِيَ الله عَنهُما، قَالَ : كَانَ آخِرَ قَولِ إبْرَاهِيمَ (صلى الله عليه و سلم) حِينَ أُلْقِيَ في النَّارِ : حَسْبِي اللهُ وَنِعْمَ الوَكِيلُ.
৩/৭৭। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতেই বর্ণিত, তিনি বলেন যে, ‘‘হাসবুনাল্লাহু অনি’মাল অকীল’’ কথাটি ইব্রাহীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বলেছিলেন, যখন তাঁকে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটি তখন বলেছিলেন যখন লোকেরা বলেছিল যে, ‘(কাফের) লোকেরা তোমাদের মুকাবিলার জন্য সমবেত হয়েছে; ফলে তোমরা তাদেরকে ভয় কর।’ কিন্তু এ কথা তাদের ঈমানকে বাড়িয়ে দিল এবং তারা বলল, ‘‘হাসবুনাল্লাহ্ অনি‘মাল অকীল।’’ অর্থাৎ আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম কর্মবিধায়ক। (বুখারী) অন্য এক বর্ণনায় ইবনে আব্বাস বলেন, আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার সময় ইব্রাহীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শেষ কথা ছিল, ‘‘হাসবিয়াল্লাহ্ অনি‘মাল অকীল।’’[4]
4/78 عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبيّ (صلى الله عليه و سلم)، قَالَ: «يَدْخُلُ الجَنَّةَ أَقْوامٌ أَفْئِدَتُهُمْ مِثلُ أَفْئِدَةِ الطَّيرِ». رواه مسلم
৪/৭৮। আবূ হুরাইরাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘জান্নাতে এমন লোক প্রবেশ করবে, যাদের অন্তর হবে পাখীর অন্তরের মত।’’ [5]
* কারো নিকট এর অর্থ হল এই যে, তারা পাখীর মত আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হবে। আর অনেকের নিকট এর অর্থ এই যে, (পাখীর অন্তরের মত) তাদের অন্তর নরম হবে।
[1] এ কথাটি বুখারীতে নেই। তাছাড়া জিবরীল আলাইহিস সালাম ঝাড়ফুঁক করেছেন, ঝাড়ফুঁক করেছেন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। পক্ষান্তরে অন্য বর্ণনায় উক্ত কথার স্থলে ‘দাগায় না’ কথা এসেছে।
[2] সহীহুল বুখারী ৫৭০৫, ৩৪১০, ৫৭৫২, ৬৪৭২, ৬৫৪১, ২২০, তিরমিযী ২৪৪৬, আহমাদ ২৪৪৪
[3] সহীহুল বুখারী ৭৩৮৩, মুসলিম ২৭১৮, আহমাদ ২৭৪৩, (বুখারী-মুসলিম, এই শব্দগুলো মুসলিমের। ইমাম বুখারী (রহঃ) এটিকে সং[[প্তভাবে বর্ণনা করেছেন।)
[4] সহীহুল বুখারী ৪৫৬৩, ৪৫৬৪
[5] মুসলিম ২৮৪০, আহমাদ ৮১৮২