36- بَابُ النَّفَقَةِ عَلَى الْعِيَالِ
পরিচ্ছেদ – ৩৬ : পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَعَلَى ٱلۡمَوۡلُودِ لَهُۥ رِزۡقُهُنَّ وَكِسۡوَتُهُنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِۚ ﴾ [البقرة: ٢٣٣]
অর্থাৎ “জনকের কর্তব্য যথাবিধি তাদের ভরণ-পোষণ করা।” (সূরা বাক্বারাহ ২৩৩ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ لِيُنفِقۡ ذُو سَعَةٖ مِّن سَعَتِهِۦۖ وَمَن قُدِرَ عَلَيۡهِ رِزۡقُهُۥ فَلۡيُنفِقۡ مِمَّآ ءَاتَىٰهُ ٱللَّهُۚ لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِلَّا مَآ ءَاتَىٰهَاۚ ﴾ [الطلاق: ٧]
অর্থাৎ “সামর্থ্যবান নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করবে এবং যার জীবনোপকরণ সীমিত সে আল্লাহ যা দান করেছেন, তা হতে ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যে সামর্থ্য দিয়েছেন, তার চেয়ে গুরুতর বোঝা তিনি তার উপর চাপান না।” (সূরা ত্বালাক্ব ৭ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেন,
﴿وَمَآ أَنفَقۡتُم مِّن شَيۡءٖ فَهُوَ يُخۡلِفُهُۥۖ ﴾ [سبا: ٣٩]
অর্থাৎ “তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে, তিনি তার বিনিময় দেবেন।” (সূরা সাবা’ ৩৯ আয়াত)
1/295. وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ (صلى الله عليه و سلم): «دِينَارٌ أنْفَقْتَهُ في سَبيلِ اللهِ، وَدِينار أنْفَقْتَهُ في رَقَبَةٍ، وَدِينارٌ تَصَدَّقْتَ بِهِ عَلَى مِسْكِينٍ، وَدِينَارٌ أنْفَقْتَهُ عَلَى أهْلِكَ، أعْظَمُهَا أجْراً الَّذِي أنْفَقْتَهُ عَلَى أهْلِكَ». رواه مسلم
১/২৯৫। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘এক দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) তুমি আল্লাহর পথে ব্যয় কর, এক দীনার ক্রীতদাস মুক্ত করার কাজে ব্যয় কর, এক দীনার কোন মিসকীনকে সদকাহ কর এবং এক দীনার তুমি পরিবার পরিজনের জন্য ব্যয় কর। এ সবের মধ্যে ঐ দীনারের বেশী নেকী রয়েছে যেটি তুমি পরিবার-পরিজনের উপর ব্যয় করবে।’’ (মুসলিম) [1]
2/296. وَعَنْ أَبِي عَبدِ اللهِ، وَيُقَالُ لَهُ : أَبو عَبدِ الرَّحمَانِ ثَوبَانَ بنِ بُجْدُد مَوْلَى رَسُولِ اللهِ (صلى الله عليه و سلم)، قَالَ : قَالَ رَسُولِ اللهِ (صلى الله عليه و سلم): «أفْضَلُ دِينَارٍ يُنْفِقُهُ الرَّجُلُ : دِينَارٌ يُنْفِقُهُ عَلَى عِيَالِهِ، وَدينَارٌ يُنْفِقُهُ عَلَى دَابَّتِهِ في سَبيلِ الله، وَدِينارٌ يُنْفِقُهُ عَلَى أصْحَابهِ في سَبيلِ اللهِ». رواه مسلم
২/২৯৬। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্বাধীনকৃত গোলাম আবূ আব্দুল্লাহ মতান্তরে আবু আব্দুর রহমান সাওবান ইবনে বুজদুদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘(সওয়াবের দিক দিয়ে) সর্বশ্রেষ্ঠ দীনার সেইটি, যে দীনারটি মানুষ নিজ সন্তান-সন্ততির উপর ব্যয় করে, যে দীনারটি আল্লাহর রাস্তায় তার সওয়ারীর উপর ব্যয় করে এবং সেই দীনারটি যেটি আল্লাহর পথে তার সঙ্গীদের পিছনে খরচ করে।’’(মুসলিম) [2]
3/297. وَعَن أمِّ سَلمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ : قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ، هَلْ لِي أَجرٌ فِي بَنِي أَبي سَلَمَة أنْ أُنْفِقَ عَلَيْهِمْ، وَلَسْتُ بِتَارِكَتِهِمْ هكَذَا وَهكَذَا إنَّمَا هُمْ بَنِيّ ؟ فَقَالَ: «نَعَمْ، لَكِ أجْرُ مَا أنْفَقْتِ عَلَيْهِمْ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৩/২৯৭। উম্মে সালামাহ্ রাদিয়াল্লাহু আনহ বলেন, একদা আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি যদি (আমার প্রথম স্বামী) আবূ সালামাহর সন্তান-সন্ততির উপর ব্যয় করি, তাতে কি আমি নেকী পাব? আমি তো তাদেরকে এভাবে ছেড়ে দিতে পারছি না, তারা তো আমারই সন্তান।’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ, তুমি তাদের উপর ব্যয় করার দরুন নেকী পাবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [3]
4/298. وَعَن سَعدِ بنِ أَبي وَقَّاصٍ رضي الله عنه في حَدِيثِهِ الطَّوِيلِ الَّذِي قَدَّمنَاهُ في أَوَّلِ الكِتَابِ في بَابِ النِّيَةِ : أنَّ رَسُولَ الله (صلى الله عليه و سلم)، قَالَ لَهُ: «وَإنَّكَ لَنْ تُنْفِقَ نَفَقَةً تَبْتَغِي بِهَا وَجْهَ اللهِ إلاَّ أُجِرْتَ بِهَا حَتَّى مَا تَجْعَلُ فِيْ فِيِّ امْرَأَتِك». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৪/২৯৮। সা‘দ ইবনে আবী অক্কাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি তাঁর দীর্ঘ (বিগত ৬ নম্বর) হাদীসে বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছেন, ‘‘আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তুমি যা ব্যয় করবে, তোমাকে তার বিনিময় দেওয়া হবে। এমনকি তুমি যে গ্রাস তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দাও তারও বিনিময় তুমি পাবে!’’ (বুখারী, মুসলিম) [4]
5/299. وعَنْ أَبِي مَسْعُودٍ البَدْرِي رضي الله عنه، عَنِ النَّبيّ (صلى الله عليه و سلم)، قَالَ: «إِذَا أنْفَقَ الرَّجُلُ عَلَى أَهْلِهِ نَفَقَةً يَحْتَسِبُهَا فَهِيَ لَهُ صَدَقَةٌ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৫/২৯৯। আবূ মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘সওয়াবের আশায় কোন মুসলিম যখন তার পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করে, তখন তা সাদকাহ হিসাবে গণ্য হয়।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [5]
6/300. وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ (صلى الله عليه و سلم): «كَفَى بِالمَرْءِ إثْمَاً أنْ يُضَيِّعَ مَنْ يَقُوتُ».حديث صحيح رواه أَبُو داود وغيره .
وَرَوَاهُ مُسلِمٌ في صَحِيحِهِ بِمَعنَاهُ، قَالَ: «كَفَى بِالمَرْءِ إثْمَاً أنْ يحْبِسَ عَمَّنْ يَمْلِكُ قُوتَهُ».
৬/৩০০। আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনে আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘একটি মানুষের পাপী হওয়ার জন্য এটা যথেষ্ট যে, সে তাদের (অধিকার) নষ্ট করবে (অর্থাৎ তাদের ভরণ-পোষণে কার্পণ্য করবে) যাদের জীবিকার জন্য সে দায়িত্বশীল।’’ (আবূ দাউদ প্রমুখ, সহীহ) [6]
উক্ত অর্থ সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,) ‘‘মানুষের পাপী হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে যার খাদ্যের মালিক, তার খাদ্য সে আটকে রাখে।’’
7/301. وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه : أَنَّ النَّبيّ (صلى الله عليه و سلم)، قَالَ: «مَا مِنْ يَوْمٍ يُصْبِحُ العِبَادُ فِيهِ إلاَّ مَلَكَانِ يَنْزِلاَنِ، فَيقُولُ أحَدُهُمَا : اَللهم أعْطِ مُنْفقاً خَلَفاً، وَيَقُولُ الآخَرُ : اَللهم أعْطِ مُمْسِكاً تلَفاً». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৭/৩০১। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘প্রতিদিন সকালে দু’জন ফিরিশতা অবতরণ করেন। তাঁদের একজন বলেন, ‘হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের বিনিময় দিন।’ আর অপরজন বলেন, ‘হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস দিন।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [7]
وَعَنهُ، عَنِ النَّبيّ (صلى الله عليه و سلم)، قَالَ: «اليَدُ العُلْيَا خَيْرٌ مِنَ اليَدِ السُّفْلَى، وَابْدَأ بِمَنْ تَعُولُ، وَخَيْرُ الصَّدَقَةِ مَا كَانَ عَنْ ظَهْرِ غِنىً، وَمَنْ يَسْتَعْفِفْ يُعِفَّهُ اللهُ، وَمَنْ يَسْتَغْنِ يُغْنِهِ اللهُ»رواه البخاري
উক্ত সাহাবী হতেই বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘উপরের (দাতা) হাত নিচের (গ্রহীতা) হাত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। যাদের ভরণ-পোষণ তোমার দায়িত্বে আছে তাদেরকে আগে দাও। প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থেকে সাদকাহ করা উত্তম। যে ব্যক্তি (হারাম ও ভিক্ষা করা থেকে পবিত্র থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখেন এবং যে পরমুখাপেক্ষিতা থেকে বেঁচে থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে অভাবশূন্য করে দেন।’’ (বুখারী)
[1] মুসলিম ৯৯৫, আহমাদ ৯৭৬৯, ৯৮১৮
[2] মুসলিম ৯৯৪, তিরমিযী ১৯৬৬, ইবনু মাজাহ ২৭৬০, আহমাদ ২১৮৭৫, ২১৯০০, ২১৯৪৭
[3] সহীহুল বুখারী ১৪৬৭, ৫৩৬৯, মুসলিম ১০০১, আহমাদ ২৫৯৭০, ২৬১০২, ২৬১৩১
[4] সহীহুল বুখারী ৫৬, ১২৯৬, ২৭৪২, ২৭৪৪, ৩৯৩৮, ৫৩৫৪, ৫৬৫৮, ৬৩৭৩, ৬৭৩৩, মুসলিম ১৬২৮, তিরমিযী ৯৭৫, ২১১৬, ৩০৭৯, ৩১৮৯, নাসায়ী ৩৬২৬, ৩৬২৭, ৩৬২৮, ৩৬৩০, আবূ দাউদ ২৭৪০, ২৮৬৪, ৩১০৪, ইবনু মাজাহ ২৭০৮, আহমাদ ১৪৪৩, ১৪৭৭, ১৪৮২, ১৪৯১, ১৫০৪, ১৫২৭, ১৫৪৯, ১৬০২, মুওয়াত্তা মালেক ১৪৯৫, দারেমী ৩১৯৫, ৩১৯৬
[5] সহীহুল বুখারী ৫৫, ৪০০৬, ৫৩৫১, মুসলিম ১০০২, তিরমিযী ১৯৬৫, নাসায়ী ২৫৪৫, আহমাদ ১৬৬৩৪, ১৬৬৬১, ২১৮৪২, দারেমী ২৬৬৪
[6] মুসলিম ৯৯৬, আবূ দাউদ ১৬৯২, আহমাদ ৬৪৫৯, ৬৭৮০, ৬৭৮৯, ৬৮০৯
[7] মুসলিম ৯৯৬, আবূ দাউদ ১৬৯২, আহমাদ ৬৪৫৯, ৬৭৮৯, ৬৮০৯