41- بَابُ تَحْرِيْمِ الْعُقُوْقِ وَقَطِيْعَةِ الرِّحْمِ
পরিচ্ছেদ – ৪১ : পিতা-মাতার অবাধ্যতা এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা হারাম
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فَهَلۡ عَسَيۡتُمۡ إِن تَوَلَّيۡتُمۡ أَن تُفۡسِدُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَتُقَطِّعُوٓاْ أَرۡحَامَكُمۡ ٢٢ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ لَعَنَهُمُ ٱللَّهُ فَأَصَمَّهُمۡ وَأَعۡمَىٰٓ أَبۡصَٰرَهُمۡ ٢٣ ﴾ [محمد: ٢٢، ٢٣]
অর্থাৎ “ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবতঃ তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং তোমাদের আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। ওরা তো তারা, যাদেরকে আল্লাহ অভিশপ্ত করে বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন করেন।” (সূরা মুহাম্মাদ ২২-২৩ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَٱلَّذِينَ يَنقُضُونَ عَهۡدَ ٱللَّهِ مِنۢ بَعۡدِ مِيثَٰقِهِۦ وَيَقۡطَعُونَ مَآ أَمَرَ ٱللَّهُ بِهِۦٓ أَن يُوصَلَ وَيُفۡسِدُونَ فِي ٱلۡأَرۡضِ أُوْلَٰٓئِكَ لَهُمُ ٱللَّعۡنَةُ وَلَهُمۡ سُوٓءُ ٱلدَّارِ ٢٥ ﴾ [الرعد: ٢٥]
অর্থাৎ “যারা আল্লাহর সাথে দৃঢ় অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে, যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখতে আল্লাহ আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের জন্য আছে অভিসম্পাত এবং তাদের জন্য আছে মন্দ আবাস।” (সূরা রা’দ ২৫ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেন,
﴿ ۞وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعۡبُدُوٓاْ إِلَّآ إِيَّاهُ وَبِٱلۡوَٰلِدَيۡنِ إِحۡسَٰنًاۚ إِمَّا يَبۡلُغَنَّ عِندَكَ ٱلۡكِبَرَ أَحَدُهُمَآ أَوۡ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَآ أُفّٖ وَلَا تَنۡهَرۡهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوۡلٗا كَرِيمٗا ٢٣ وَٱخۡفِضۡ لَهُمَا جَنَاحَ ٱلذُّلِّ مِنَ ٱلرَّحۡمَةِ وَقُل رَّبِّ ٱرۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرٗا ٢٤ ﴾ [الاسراء: ٢٣، ٢٤]
অর্থাৎ “তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তিনি ছাড়া অন্য কারো উপাসনা করবে না এবং পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে; তাদের এক জন অথবা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে বিরক্তিসূচক কিছু বলো না এবং তাদেরকে ভৎর্সনা করো না; বরং তাদের সাথে বলো সম্মানসূচক নম্র কথা। অনুকম্পায় তাদের প্রতি বিনয়াবনত থেকো এবং বলো, ‘হে আমার প্রতিপালক! তাদের উভয়ের প্রতি দয়া কর; যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছে’।” (সূরা বানী ইস্রাঈল ২৩-২৪ আয়াত)
1/341. وَعَن أَبي بَكرَةَ نُفَيعِ بنِ الحَارِثِ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ (صلى الله عليه و سلم): «ألا أُنَبِّئُكُمْ بأَكْبَرِ الكَبَائِرِ؟» ثلاثاً، قُلْنَا: بَلَى، يَا رَسُول الله، قَالَ: «الإشْرَاكُ بالله، وَعُقُوقُ الوَالِدَيْنِ»، وكان مُتَّكِئاً فَجَلَسَ، فَقَالَ: «ألاَ وَقَوْلُ الزُّورِ وَشَهَادَةُ الزُّورِ» فَمَا زَالَ يُكَرِّرُهَا حَتَّى قُلْنَا: لَيْتَهُ سَكَتَ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১/৩৪১। আবূ বাকরাহ নুফাই‘ ইবনে হারেস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, (একদিন) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার বললেন, ‘‘আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় (কাবীরাহ গোনাহগুলো সম্পর্কে জ্ঞাত করবো না?’’ সবাই বললেন, ‘অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘(সেগুলো হচ্ছে) আল্লাহর সাথে শির্ক করা এবং পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া।’’ তিনি হেলান দিয়ে বসেছিলেন, এবার সোজা হয়ে বসে বললেন, ‘‘শুনে রাখ, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া।’’ এ কথাটি তিনি পুনঃ পুনঃ বলতে থাকলেন। এমনকি আমরা বলতে লাগলাম, ‘আর যদি তিনি না বলতেন!’(বুখারী ও মুসলিম) [1]
2/342. وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، عَنِ النَّبيِّ (صلى الله عليه و سلم)، قَالَ: «الكَبَائِرُ : الإشْرَاكُ بِاللهِ، وَعُقُوقُ الوَالِدَيْنِ، وَقَتْلُ النَّفْس، وَاليَمِينُ الغَمُوسُ». رواه البخاري
২/৩৪২। আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনে আস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘‘আনহুমা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, ‘‘কাবীরাহ গুনাহসমূহ হচ্ছে, আল্লাহর সাথে শরীক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, প্রাণ হত্যা করা এবং মিথ্যা কসম খাওয়া।’’(বুখারী) [2]
3/343. وَعَنهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ (صلى الله عليه و سلم)، قَالَ: « مِنَ الكَبَائِر شَتْمُ الرَّجُل وَالِدَيهِ !»، قَالُوا : يَا رَسُولَ اللهِ، وَهَلْ يَشْتُمُ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ ؟! قَالَ: «نَعَمْ، يَسُبُّ أَبَا الرَّجُلِ، فَيَسُبُّ أبَاه، وَيَسُبُّ أُمَّهُ، فَيَسُبُّ أُمَّهُ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وفي رِوَايَةٍ: «إنَّ مِنْ أكْبَرِ الكَبَائِرِ أنْ يَلْعَنَ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ !»، قِيلَ :يَا رَسُولَ اللهِ، كَيْفَ يَلْعَنُ الرَّجُلُ وَالِدَيهِ ؟! قَالَ: « يَسُبُّ أَبَا الرَّجُلِ، فَيَسُبُّ أباهُ، وَيَسُبُّ أُمَّهُ، فَيَسُبُّ أُمَّهُ».
৩/৩৪৩। উক্ত সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কাবীরাহ গুনাহসমূহের একটি হল আপন পিতা-মাতাকে গালি দেওয়া।’’ জিজ্ঞেস করা হল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপন পিতা-মাতাকে কি কোনো ব্যক্তি গালি দেয়?’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ, সে লোকের পিতাকে গালি-গালাজ করে, তখন সেও তার পিতাকে গালি-গালাজ করে থাকে এবং সে অন্যের মা-কে গালি দেয়, সুতরাং সেও তার মা-কে গালি দেয়।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [3]
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘কাবীরাহ গুনাহসমূহের একটি হল নিজের পিতা-মাতাকে অভিশাপ করা।’’ জিজ্ঞেস করা হল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! মানুষ নিজের পিতা-মাতাকে কিভাবে অভিশাপ করে?’ তিনি বললেন, ‘‘সে অপরের পিতাকে গালি-গালাজ করে, তখন সেও তার পিতাকে গালি-গালাজ করে থাকে। আর সে অন্যের মা-কে গালি দেয়, বিনিময়ে সেও তার মা-কে গালি দেয়।’’
4/344. وَعَن أَبي مُحَمَّدٍ جُبَيرِ بنِ مُطعِمٍ رضي الله عنه : أَنَّ رَسُولَ اللهِ (صلى الله عليه و سلم)، قَالَ: «لاَ يَدْخُلُ الجَنَّةَ قَاطِعٌ».قَالَ سُفيَانُ في رِوَايَتِهِ : يَعْنِي : قَاطِعُ رَحِم . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৪/৩৪৪। আবূ মুহাম্মাদ জুবাইর ইবনে মুত্বইম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’’ সুফিয়ান তাঁর বর্ণনায় বলেন, অর্থাৎ ‘‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী।’’(বুখারী ও মুসলিম) [4]
5/345. وَعَن أَبي عِيسَى المُغِيرَةِ بنِ شُعبَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبيِّ (صلى الله عليه و سلم)، قَالَ: «إنَّ اللهَ تَعَالَى حَرَّمَ عَلَيْكُمْ : عُقُوقَ الأمَّهَاتِ، وَمَنْعاً وَهَاتِ، وَوَأْدَ البَنَاتِ، وكَرِهَ لَكُمْ : قِيلَ وَقالَ، وَكَثْرَةَ السُّؤَالِ، وَإضَاعَةَ المَالِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৫/৩৪৫। আবূ ঈসা মুগীরা ইবন শু‘বাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের জন্য (তিনটি কর্মকে) হারাম করেছেন; মায়ের অবাধ্যাচরণ করা, অধিকার প্রদানে বিরত থাকা ও অনধিকার কিছু প্রার্থনা করা এবং কন্যা জীবন্ত প্রোথিত করা। আর তিনি তোমাদের জন্য অপছন্দ করেছেন (তিনটি কর্ম); ভিত্তিহীন বাজে কথা বলা (বা জনরবে থাকা), অধিক (অনাবশ্যক) প্রশ্ন করা (অথবা প্রয়োজনের অধিক যাচ্ঞা করা) এবং ধন-মাল বিনষ্ট (অপচয়) করা।’’ (বুখারী ৫৯৭৫নং ও মুসলিম) [5]
[1] সহীহুল বুখারী ২৬৫৪, ৫৯৭৬, ৬২৭৩, ৬৯১৯, মুসলিম ৮৭, তিরমিযী ১৯০১, ২৯০১, ৩০১৯, আহমাদ ১৯৮৭২, ১৯৮৮১
[2] সহীহুল বুখারী ৬৬৭৫, ৬৮৭০, ৬৯২০, তিরমিযী ৩০২১, নাসায়ী ৪০১১, আহমাদ ৬৮৪৫, ৬৯৬৫, দারেমী ২৩৬০
[3] সহীহুল বুখারী ৫৯৭৩, মুসলিম ৯০, তিরমিযী ১৯০২, আবূ দাউদ ৫১৪১, আহমাদ ৬৪৯৩, ৬৮০১, ৬৯৬৫, ৬৯৯০
[4] সহীহুল বুখারী ৫৯৮৪, মুসলিম ২৫৫৬, তিরমিযী ১৯০৯, আবূ দাউদ ১৬৯৬, আহমাদ ১৬২৯১, ১৬৩২২, ১৬৩৩১
[5] সহীহুল বুখারী ২৪০৮, ৮৪৪, ১৪৭৭, ৫৯৭৫, ৬৩৩০, ৬৪৭৩, ৬৬১৫, ৭২৯২, মুসলিম ৫৯৩, নাসায়ী ১৩৪১, ১৩৪২, ১৩৪৩, আবূ দাউদ ১৫০৫, ৩০৭৯, আহমাদ ১৭৬৭৩, ১৭৬৮১, ১৭৬৯৩, ১৭৭১৪, ১৭৭১৮, ১৭৭৩৪, দারেমী ১৩৪৯, ২৭৫১