32- بَابُ فَضْلِ ضِعْفَةِ الْمُسْلِمِيْنَ وَالْفُقَرَاءِ وَالْخَامِلِيْنَ
পরিচ্ছেদ – ৩২ : দুর্বল, গরীব ও খ্যাতিহীন মুসলিমদের মাহাত্ম্য
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَٱصۡبِرۡ نَفۡسَكَ مَعَ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ رَبَّهُم بِٱلۡغَدَوٰةِ وَٱلۡعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجۡهَهُۥۖ وَلَا تَعۡدُ عَيۡنَاكَ عَنۡهُمۡ تُرِيدُ زِينَةَ ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَاۖ ﴾ [الكهف: ٢٨]
অর্থাৎ “তুমি নিজেকে তাদেরই সংসর্গে রাখ যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের প্রতিপালককে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আহ্বান করে এবং তুমি পার্থিব জীবনের শোভা কামনা করে তাদের দিক হতে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ো না।” (সূরা কাহফ ২৮ আয়াত)
1/257. عَن حَارِثَةَ بنِ وهْبٍ رضي الله عنه قَالَ : سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ (صلى الله عليه و سلم) يَقُولُ: «ألاَ أُخْبِرُكُمْ بِأهْلِ الجَنَّةِ ؟ كُلُّ ضَعِيف مُتَضَعَّف، لَوْ أقْسَمَ عَلَى اللهِ لأَبَرَّهُ، أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِأهْلِ النَّارِ ؟ كُلُّ عُتُلٍّ جَوّاظٍ مُسْتَكْبِرٍ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১/২৫৭। হারেসাহ ইবনে অহাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘আমি তোমাদেরকে জান্নাতীদের সম্পর্কে অবহিত করব না কি? (তারা হল) প্রত্যেক দুর্বল ব্যক্তি এবং এমন ব্যক্তি যাকে দুর্বল মনে করা হয়। সে যদি আল্লাহর নামে কসম খায়, তাহলে তা তিনি নিশ্চয়ই পুরা করে দেন। আমি তোমাদেরকে জাহান্নামীদের সম্পর্কে অবহিত করব না কি? (তারা হল) প্রত্যেক রূঢ় সবভাব, কঠিন হৃদয় দাম্ভিক ব্যক্তি।’’ (বুখারী, মুসলিম) [1]
2/258. وَعَنْ أَبِي عَبَّاسٍ سَهلِ بنِ سَعدٍ السَّاعِدِيِّ رضي الله عنه، قَالَ : مَرَّ رَجُلٌ عَلَى النَّبيّ (صلى الله عليه و سلم)، فَقَالَ لِرَجُلٍ عِنْدَهُ جَالِسٌ: «مَا رَأيُكَ في هَذَا ؟»، فَقَالَ : رَجُلٌ مِنْ أشْرَافِ النَّاسِ، هَذَا واللهِ حَرِيٌّ إنْ خَطَبَ أنْ يُنْكَحَ، وَإنْ شَفَعَ أنْ يُشَفَّعَ . فَسَكَتَ رسولُ اللهِ (صلى الله عليه و سلم)، ثُمَّ مَرَّ رَجُلٌ آخَرُ، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ الله (صلى الله عليه و سلم): «مَا رَأيُكَ في هَذَا ؟»فَقَالَ : يَا رَسُولَ الله، هَذَا رَجُلٌ مِنْ فُقَراءِ المُسْلِمِينَ، هَذَا حَرِيٌّ إنْ خَطَبَ أنْ لا يُنْكَحَ، وَإنْ شَفَعَ أنْ لاَ يُشَفَّعَ، وَإنْ قَالَ أنْ لاَ يُسْمَعَ لِقَولِهِ . فَقَالَ رَسُولُ اللهِ (صلى الله عليه و سلم): «هَذَا خَيْرٌ مِنْ مِلءِ الأرْضِ مِثْلَ هَذَا». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
২/২৫৮। আবু আব্বাস সাহ্ল ইবনে সা‘দ সায়েদী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পাশ দিয়ে পার হয়ে গেল, তখন তিনি তাঁর নিকট উপবিষ্ট একজনকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘এ ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার মন্তব্য কী?’’ সে বলল, ‘এ ব্যক্তি তো এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের লোক। আল্লাহর কসম! সে কোথাও বিয়ের প্রস্তাব দিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে এবং কারো জন্য সুপারিশ করলে তা কবুল করা হবে।’ তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব থাকলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে আর এক ব্যক্তি পার হয়ে গেল। তিনি ঐ (উপবিষ্ট) লোকটিকে বললেন, ‘‘এ লোকটির ব্যাপারে তোমার অভিমত কী?’’ সে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! এ তো একজন দরিদ্র মুসলিম। সে এমন ব্যক্তি যে, সে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না, কারো জন্য সুপারিশ করলে তা কবুল করা হবে না এবং সে কোনো কথা বললে, তার কথা শ্রবণযোগ্য হবে না।’ তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘এ ব্যক্তি দুনিয়া ভর্তি ঐরূপ লোকদের চাইতে বহু উত্তম।’’ (বুখারী, মুসলিম) [2]
3/259. وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدرِي رضي الله عنه، عَنِ النَّبيّ (صلى الله عليه و سلم)، قَالَ: «احْتَجَّتِ الجَنَّةُ والنَّارُ، فَقَالتِ النَّارُ : فِيَّ الجَبَّارُونَ وَالمُتَكَبِّرُونَ . وَقَالتِ الجَنَّةُ : فِيَّ ضُعَفَاءُ النَّاسِ وَمَسَاكِينُهُمْ، فَقَضَى اللهُ بَيْنَهُمَا : إنَّكِ الجَنَّةُ رَحْمَتِي أرْحَمُ بِكِ مَنْ أشَاءُ، وَإنَّكِ النَّارُ عَذَابِي أُعَذِّبُ بِكِ مَنْ أشَاءُ، وَلِكلَيْكُمَا عَلَيَّ مِلْؤُهَا». رواه مسلم
৩/২৫৯। আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘জান্নাত ও জাহান্নামের বিবাদ হল। জাহান্নাম বলল, ‘আমার মধ্যে উদ্ধত ও অহংকারী লোকেরা।’ আর জান্নাত বলল, ‘আমার ভিতরে দুর্বল ও দরিদ্র ব্যক্তিদের বসবাস।’ অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের মধ্যে ফায়সালা করলেন যে, ‘তুমি জান্নাত আমার রহমত, তোমার দ্বারা আমি যার প্রতি ইচ্ছা অনুগ্রহ করব। আর তুমি জাহান্নাম আমার শাস্তি, তোমার দ্বারা আমি যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেব। আর তোমাদের উভয়কেই পরিপূর্ণ করা আমার দায়িত্ব।’’ (মুসলিম) [3]
4/260. وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَن رَسُولِ الله (صلى الله عليه و سلم)، قَالَ: «إنَّهُ لَيَأتِي الرَّجُلُ السَّمِينُ العَظِيمُ يَوْمَ القِيَامَةِ لاَ يَزِنُ عِنْدَ اللهِ جَناحَ بَعُوضَةٍ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৪/২৬০। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কিয়ামতের দিন মোটা-তাজা বৃহৎ মানুষ আসবে, আল্লাহর কাছে তার মাছির ডানার সমানও ওজন হবে না।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [4]
5/261. وَعَنهُ : أَنَّ امْرَأَةً سَوْدَاءَ كَانَتْ تَقُمُّ المَسْجِدَ، أَوْ شَابّاً، فَفَقَدَهَا، أَوْ فَقَدَهُ رَسُولُ اللهِ (صلى الله عليه و سلم)، فَسَأَلَ عَنْهَا، أو عَنهُ، فَقَالُوا : مَاتَ . قَالَ: «أَفَلا كُنْتُمْ آذَنْتُمُونِي»فَكَأنَّهُمْ صَغَّرُوا أمْرَهَا، أَوْ أمْرهُ، فَقَالَ: «دُلُّونِي عَلَى قَبْرِهِ»فَدَلُّوهُ فَصَلَّى عَلَيْهَا، ثُمَّ قَالَ: «إنَّ هذِهِ القُبُورَ مَمْلُوءةٌ ظُلْمَةً عَلَى أهْلِهَا، وَإنَّ اللهَ تَعَالَى يُنَوِّرُهَا لَهُمْ بِصَلاَتِي عَلَيْهِمْ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৫/২৬১। উক্ত রাবী থেকেই বর্ণিত, কালোবর্ণের একজন মহিলা অথবা যুবক মসজিদ ঝাড়ু দিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে (একদিন) দেখতে পেলেন না। সুতরাং তিনি তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। সাহাবীগণ বললেন, ‘সে মারা গেছে।’ তিনি বললেন, ‘‘তোমরা আমাকে সংবাদ দিলে না কেন?’’ তাঁরা যেন তার ব্যাপারটাকে নগণ্য ভেবেছিলেন। তিনি বললেন, ‘‘আমাকে তার কবরটা দেখিয়ে দাও।’’ সুতরাং তাঁরা তার কবরটি দেখিয়ে দিলেন এবং তিনি তার উপর জানাযা পড়লেন। অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘নিশ্চয় এ কবরসমূহ কবরবাসীদের জন্য অন্ধকারময়। আর আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য আমার জানাযা পড়ার কারণে তা আলোময় করে দেন।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [5]
6/262. وَعَنهُ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ (صلى الله عليه و سلم): «رُبَّ أشْعَثَ أغبَرَ مَدْفُوعٍ بِالأبْوابِ لَوْ أقْسَمَ عَلَى اللهِ لأَبَرَّهُ». رواه مسلم
৬/২৬২। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘বহু এমন লোকও আছে যার মাথা উষ্কখুষ্ক ধুলোভরা, যাদেরকে দরজা থেকে ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। (কিন্তু সে আল্লাহর নিকট এত প্রিয় যে,) সে যদি আল্লাহর উপর কসম খায়, তাহলে আল্লাহ তা পূর্ণ করে দেন।’’ (মুসলিম) [6]
7/263. وَعَن أُسَامَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبيّ (صلى الله عليه و سلم)، قَالَ: «قُمْتُ عَلَى بَابِ الجَنَّةِ، فَإِذَا عَامَّةُ مَنْ دَخَلَهَا المَسَاكِينُ، وَأصْحَابُ الجَدِّ مَحْبُوسُونَ، غَيْرَ أنَّ أصْحَابَ النَّارِ قَدْ أُمِرَ بِهِمْ إِلَى النَّارِ . وَقُمْتُ عَلَى بَابِ النَّارِ فَإِذَا عَامَّةُ مَنْ دَخَلَهَا النِّسَاءُ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৭/২৬৩। উসামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমি জান্নাতের দরজায় দাঁড়ালাম। অতঃপর দেখলাম যারা জান্নাতে প্রবেশ করেছে তাদের অধিকাংশ গরীব-মিসকীন মানুষ। আর ধনবানদেরকে (তখনও হিসাবের জন্য) আটকে রাখা হয়েছে। পক্ষান্তরে (অন্যান্য) জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। আর আমি জাহান্নামের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখলাম যে, যারা তাতে প্রবেশ করেছে তাদের বেশীর ভাগই নারীর দল। (বুখারী ও মুসলিম) [7]
[1] সহীহুল বুখারী ৪৯১৮, ৬০৭২, ৬৬৫৭, মুসলিম ২৮৫৩, তিরমিযী ২৬০৫, ইবনু মাজাহ ৪১১৬, আহমাদ ১৮২৫৩।
[2] সহীহুল বুখারী ৫০৯১, ৬৪৪৭,ইবনু মাজাহ ৪১২০
[3] সহীহুল বুখারী ৪৮৪৯, ৪৮৫০, ৭৪৪৯, মুসলিম ২৮৪৬,২৮৪৭, তিরমিযী ২৫৫৭, ২৫৬১, আহমাদ ৭৬৬১, ২৭৩৮১, ২৭২২৪, ১০২১০।
[4] সহীহুল বুখারী ৪৭২৯, মুসলিম ২৭৮৫।
[5] সহীহুল বুখারী ১৩৩৭, ৪৫৮, ৪৬০, মুসলিম ৯৫৬, আবূ দাউদ ৩২০৩, ইবনু মাজাহ ১৫২৭, আহমাদ ৮৪২০, ৮৮০৪, ৯০১৯
[6] মুসলিম ২৬২২, ২৮৫৪
[7] সহীহুল বুখারী ৫১৯৬, ৬৫৪৭, মুসলিম ২৭৩৬, আহমাদ ২১২৭৫, ২১৩১৮