47- بَابُ عَلَامَاتِ حُبِّ اللهِ تَعَالٰى لِلْعَبْدِ
وَالْحَثِّ عَلَى التَخَلُّقِ بِهَا وَالسَّعْيِ فِيْ تَحْصِيْلِهَا
পরিচ্ছেদ – ৪৭: বান্দাকে আল্লাহর ভালবাসার নিদর্শনাবলী, এমন নিদর্শন অবলম্বন করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা এবং তা অর্জন করার জন্য প্রয়াসী হওয়ার বিবরণ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۚ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٣١ ﴾ [ال عمران: ٣١]
অর্থাৎ “বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর। ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন। বস্তুত আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা আলে ইমরান ৩১ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مَن يَرۡتَدَّ مِنكُمۡ عَن دِينِهِۦ فَسَوۡفَ يَأۡتِي ٱللَّهُ بِقَوۡمٖ يُحِبُّهُمۡ وَيُحِبُّونَهُۥٓ أَذِلَّةٍ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى ٱلۡكَٰفِرِينَ يُجَٰهِدُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوۡمَةَ لَآئِمٖۚ ذَٰلِكَ فَضۡلُ ٱللَّهِ يُؤۡتِيهِ مَن يَشَآءُۚ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٌ ٥٤ ﴾ [المائدة: ٥٤]
অর্থাৎ “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের মধ্যে কেউ তার দ্বীন থেকে ফিরে গেলে আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায় আনয়ন করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন ও যারা তাঁকে ভালবাসবে, তারা হবে মুমিনদের প্রতি কোমল ও কাফেরদের প্রতি কঠোর। তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং কোন নিন্দুকের নিন্দায় ভয় করবে না, এ আল্লাহর অনুগ্রহ যাকে ইচ্ছা তিনি দান করেন। বস্তুত আল্লাহ প্রাচুর্যময়, প্রজ্ঞাময়।” (সূরা মায়েদাহ ৫৪ আয়াত)
1/391 عَن أبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ (صلى الله عليه و سلم): «إنَّ الله تَعَالَى قَالَ: مَنْ عَادَى لِي وَلِيّاً فَقَدْ آذَنْتُهُ بالحَرْبِ، وَمَا تَقَرَّبَ إِلَيَّ عَبْدِي بشَيءٍ أَحَبَّ إلَيَّ مِمَّا افْتَرَضْتُ عَلَيهِ، وَمَا يَزَالُ عَبْدِي يَتَقرَّبُ إلَيَّ بالنَّوافِلِ حَتَّى أُحِبَّهُ، فَإذَا أَحبَبتُهُ كُنْتُ سَمعَهُ الَّذِي يَسْمَعُ بِهِ، وَبَصَرَهُ الَّذِي يُبْصِرُ بِهِ، ويَدَهُ الَّتي يَبْطِشُ بِهَا، وَرِجْلَهُ الَّتِي يَمْشي بِهَا، وَإنْ سَأَلَني أعْطَيْتُهُ، وَلَئِنِ اسْتَعَاذَنِي لأُعِيذَنَّهُ ». رواه البخاري
১/৩৯১। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার কোনো বন্ধুর সাথে শত্রুতা করবে, তার বিরুদ্ধে আমার যুদ্ধের ঘোষণা রইল। আমার বান্দা যে সমস্ত জিনিস দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করে, তার মধ্যে আমার নিকট প্রিয়তম জিনিস হল তা, যা আমি তার উপর ফরয করেছি। (অর্থাৎ ফরযের দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করা আমার নিকটে বেশী পছন্দনীয়।) আর আমার বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে, পরিশেষে আমি তাকে ভালবাসতে শুরু করি। অতঃপর যখন আমি তাকে ভালবাসি, তখন আমি তার ঐ কান হয়ে যাই, যার দ্বারা সে শোনে, তার ঐ চোখ হয়ে যাই, যার দ্বারা সে দেখে, তার ঐ হাত হয়ে যাই, যার দ্বারা সে ধরে এবং তার ঐ পা হয়ে যাই, যার দ্বারা সে চলে। আর সে যদি আমার কাছে কিছু চায়, তাহলে আমি তাকে দেই এবং সে যদি আমার আশ্রয় চায়, তাহলে আমি অবশ্যই তাকে আশ্রয় দেই।’’(বুখারী) [1]
(‘আমি তার কান হয়ে যাই—-।’ অর্থাৎ আমার সন্তুষ্টি মোতাবেক সে শোনে, দেখে, ধরে ও চলে।)
2/392 وَعَنهُ، عَنِ النَّبيِّ (صلى الله عليه و سلم)، قَالَ: «إِذَا أَحَبَّ اللهُ تَعَالَى العَبْدَ، نَادَى جِبْريلَ: إنَّ الله تَعَالَى يُحِبُّ فُلاناً، فَأَحْبِبْهُ، فَيُحِبُّهُ جِبريلُ، فَيُنَادِي في أَهْلِ السَّمَاءِ: إنَّ اللهَ يُحِبُّ فُلاناً، فَأحِبُّوهُ، فَيُحِبُّهُ أهْلُ السَّمَاءِ، ثُمَّ يُوضَعُ لَهُ القَبُولُ في الأرْضِ ». متفق عليه .
وَفي رِوَايَةٍ لمسلم: قَالَ رَسُولُ اللهِ (صلى الله عليه و سلم): «إنَّ الله تَعَالى إِذَا أَحَبَّ عَبداً دَعَا جِبرِيلَ، فَقَالَ: إنّي أُحِبُّ فُلاَناً فأحْبِبهُ، فَيُحِبُّهُ جِبرِيلُ، ثمَّ يُنَادِي في السَّمَاءِ، فَيَقُولُ: إنَّ اللهَ يُحِبُّ فُلاَناً فَأَحِبُّوهُ، فَيُحِبُّهُ أَهلُ السَّمَاءِ، ثمَّ يُوضَعُ لهُ القَبُولُ في الأَرضِ، وَإِذَا أبْغَضَ عَبْداً دَعَا جِبْريلَ، فَيَقُولُ: إنّي أُبْغِضُ فُلاناً فَأبْغِضْهُ . فَيُبغِضُهُ جِبريلُ ثُمَّ يُنَادِي في أَهْلِ السَّماءِ: إنَّ اللهَ يُبْغِضُ فُلاناً فَأبْغِضُوهُ، فَيُبْغِضُهُ أَهْلُ السَّمَاءِ ثُمَّ تُوضَعُ لَهُ البَغْضَاءُ في الأَرْضِ » .
২/৩৯২। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে ভালবাসেন, তখন তিনি জিবরীলকে ডেকে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ অমুককে ভালবাসেন, অতএব তুমিও তাকে ভালবাস।’ সুতরাং জিবরীলও তাকে ভালবাসতে শুরু করেন। অতঃপর তিনি আকাশবাসীদের মধ্যে ঘোষণা করে দেন যে, ‘আল্লাহ অমুক বান্দাকে ভালবাসেন। কাজেই তোমরাও তাকে ভালবাসো।’ তখন আকাশবাসীরা তাকে ভালবাসতে শুরু করে। অতঃপর পৃথিবীতেও তাকে গ্রহণযোগ্য করার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [2]
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, ‘‘আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে ভালবাসেন, তখন তিনি জিবরীলকে ডেকে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি অমুককে ভালবাসি, অতএব তুমিও তাকে ভালবাস।’ তখন জিবরীলও তাকে ভালবাসতে শুরু করেন। অতঃপর তিনি আকাশবাসীদের মধ্যে ঘোষণা করে দেন যে, ‘আল্লাহ অমুক বান্দাকে ভালবাসেন। কাজেই তোমরাও তাকে ভালবাসো।’ তখন আকাশবাসীরা তাকে ভালবাসতে শুরু করে। অতঃপর পৃথিবীতেও তাকে গ্রহণযোগ্য করার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।
আর আল্লাহ তা‘আলা যখন কোন বান্দাকে ঘৃণা করেন, তখন তিনি জিবরীলকে ডেকে বলেন, ‘আমি অমুককে ঘৃণা করি, অতএব তুমিও তাকে ঘৃণা কর।’ তখন জিবরীল তাকে ঘৃণা করতে শুরু করেন। অতঃপর তিনি আকাশবাসীদের মধ্যে ঘোষণা করে দেন যে, ‘আল্লাহ অমুক বান্দাকে ঘৃণা করেন। কাজেই তোমরাও তাকে ঘৃণা কর।’ তখন আকাশবাসীরাও তাকে ঘৃণা করতে শুরু করে। অতঃপর পৃথিবীতেও তাকে ঘৃণ্য করার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।’’
3/393 وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا: أنَّ رَسُولَ اللهِ (صلى الله عليه و سلم) بَعَثَ رَجُلاً عَلٰى سَريَّةٍ فَكَانَ يَقْرَأُ لأَصْحَابِهِ في صَلاَتِهِمْ فَيَخْتِمُ بـ { قُل هُوَ الله أَحَدٌ }، فَلَمَّا رَجَعُوا ذَكَرُوا ذلِكَ لِرَسُولِ اللهِ (صلى الله عليه و سلم)، فَقَالَ: «سَلُوهُ لأَيِّ شَيْءٍ يَصْنَعُ ذٰلِكَ» ؟ فَسَألُوهُ فَقَالَ: لأَنَّهَا صِفَةُ الرَّحْمٰنِ فَأَنَا أُحِبُّ أنْ أقْرَأ بِهَا . فَقَالَ رَسُولُ اللهِ (صلى الله عليه و سلم): «أخْبِرُوهُ أنَّ اللهَ تَعَالَى يُحِبُّهُ ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৩/৩৯৩। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সাহাবীকে একটি মুজাহিদ দলের আমীর করে জিহাদে পাঠালেন। তিনি যখন নামাযে ইমামতি করতেন, তখনই (প্রত্যেক রাকআতে সূরা পড়ার পর) ‘ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ (সূরা ইখলাস) দিয়ে (ক্বিরাআত) শেষ করতেন। মুজাহিদগণ সেই অভিযান থেকে প্রত্যাবর্তন করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে বিষয়টি আলোচনা করলেন। তিনি বললেন, ‘‘তাঁকে জিজ্ঞাসা কর, কেন সে এ কাজটি করেছে?’’ সুতরাং তারা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তরে বললেন, ‘এই সূরাটিতে পরম করুণাময় (আল্লাহ)র গুণাবলী রয়েছে। এই জন্য সূরাটি তেলাওয়াত করতে আমি ভালবাসি।’ তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তাকে জানিয়ে দাও যে, আল্লাহ তা‘আলাও তাকে ভালবাসেন।’’(বুখারী ও মুসলিম) [3]
[1] সহীহুল বুখারী ৬৫০২
[2] সহীহুল বুখারী ৩২০৯, ৬০৪০, ৭৪৮৫, মুসলিম ২৬৩৭, তিরমিযী ৩১৬১, আহমাদ ৭৫৭০, ৮২৯৫, ৯০৮৮, ১০২৩৭, ১০২৯৬, মুওয়াত্তা মালিক ১৭৭৮
[3] সহীহুল বুখারী ৭৩৭৫, মুসলিম ৮১৩, নাসায়ী ৯৯৩