49- بَابُ إِجْرَاءِ أَحْكَامِ النَّاسِ عَلَى الظَّاهِرِ
وَسَرَائِرِهِمْ إِلَى اللهِ تَعَالٰى
পরিচ্ছেদ – ৪৯: লোকের বাহ্যিক অবস্থা ও কার্যকলাপের ভিত্তিতে বিধান প্রয়োগ করা হবে এবং তাদের আভ্যন্তরীণ অবস্থা আল্লাহকে সঁপে দেওয়া হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فَإِن تَابُواْ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُاْ ٱلزَّكَوٰةَ فَخَلُّواْ سَبِيلَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٥ ﴾ [التوبة: ٥]
অর্থাৎ “কিন্তু যদি তারা তওবা করে, যথাযথ নামায পড়ে ও যাকাত প্রদান করে, তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও।” (সূরা তওবাহ ৫ আয়াত(
1/395. وَعنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أنَّ رَسُولَ اللهِ (صلى الله عليه و سلم)، قَالَ: »أُمِرْتُ أنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَشْهَدُوا أنْ لاَ إِلٰهَ إلاَّ الله، وَأنَّ مُحَمَّداً رَسُولُ الله، وَيُقيمُوا الصَّلاةَ، وَيُؤتُوا الزَّكَاةَ، فَإِذَا فَعَلُوا ذَلِكَ عَصَمُوا مِنِّي دِمَاءهُمْ وَأمْوَالَهُمْ إلاَّ بحَقِّ الإسْلاَمِ، وَحِسَابُهُمْ عَلَى الله تَعَالَى». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১/৩৯৫। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমাকে লোকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে; যতক্ষণ না তারা সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া (সত্য) কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল। আর তারা নামায প্রতিষ্ঠা করবে ও যাকাত প্রদান করবে। যখন তারা এ কাজগুলো সম্পাদন করবে, তখন তারা আমার নিকট থেকে তাদের রক্ত (জান) এবং মাল বাঁচিয়ে নেবে; কিন্তু ইসলামের হক ব্যতীত (অর্থাৎ সে যদি কাউকে হত্যা করে, তবে তার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তাকে হত্যা করা হবে।) আর তাদের হিসাব আল্লাহর উপর ন্যস্ত হবে।’’[1] (বুখারী ও মুসলিম)
2/396. وَعَن أَبي عَبدِ اللهِ طَارِقِ بنِ أَشْيَمَ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ (صلى الله عليه و سلم)، يَقُولُ: «مَنْ قَالَ لاَ إِلٰهَ إلاَّ الله، وَكَفَرَ بما يُعْبَدُ مِنْ دُونِ اللهِ، حَرُمَ مَالُهُ وَدَمُهُ، وَحِسَابُهُ عَلَى الله تَعَالَى ». رواه مسلم
২/৩৯৬। আবূ আব্দুল্লাহ ত্বারেক ইবনে আশয়্যাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলল এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য উপাস্যকে অস্বীকার করল, তার মাল ও রক্ত হারাম হয়ে গেল ও তার (অন্তরের) হিসাব আল্লাহর দায়িত্বে।’’(মুসলিম) [2]
3/397 وَعَن أَبي مَعبَدٍ المِقدَادِ بنِ الأسْوَدِ رضي الله عنه، قَالَ: قُلْتُ لِرَسُولِ اللهِ (صلى الله عليه و سلم): أرَأيْتَ إنْ لَقِيتُ رَجُلاً مِنَ الكُفَّارِ، فَاقْتتَلْنَا، فَضَرَبَ إحْدَى يَدَيَّ بِالسَّيْفِ، فَقَطَعَها، ثُمَّ لاَذَ مِنِّي بِشَجَرَةٍ، فَقَالَ: أسْلَمْتُ لِلّهِ، أَأَقْتُلُهُ يَا رَسُولَ اللهِ بَعْدَ أنْ قَالَهَا ؟ فَقَالَ: «لاَ تَقْتُلهُ » فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، قَطَعَ إحْدَى يَدَيَّ، ثُمَّ قَالَ ذَلِكَ بَعْدَ مَا قَطَعَهَا ؟! فَقَالَ: «لا تَقتُلْهُ، فإنْ قَتَلْتَهُ فَإنَّهُ بِمَنْزِلَتِكَ قَبْلَ أنْ تَقْتُلَهُ، وَإنَّكَ بِمَنْزِلَتِهِ قَبْلَ أنْ يَقُولَ كَلِمَتَهُ الَّتِي قَالَ ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৩/৩৯৭। আবূ মা‘বাদ মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম, ‘‘আপনি বলুন, যদি আমি কোন কাফেরের সম্মুখীন হই এবং পরস্পরের মধ্যে লড়ি, অতঃপর সে তরবারি দিয়ে আমার হাত কেটে দেয়, তারপর আমার (পাল্টা) আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য সে একটি গাছের আশ্রয় নিয়ে বলে, ‘আমি আল্লাহর ওয়াস্তে ইসলাম গ্রহণ করলাম।’ তার এ কথা বলার পর হে আল্লাহর রসূল! আমি কি তাকে হত্যা করব?’’ তিনি বললেন, ‘‘তাকে হত্যা করো না।’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! সে আমার একটি হাত কেটে ফেলবে। কাটার পর সে ঐ কথা বলবে তাও?’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি তাকে হত্যা করো না। যদি তুমি তাকে হত্যা কর, তাহলে (মনে রাখ) সে তোমার সেই মর্যাদা পেয়ে যাবে, যাতে তুমি তাকে হত্যা করার পূর্বে ছিলে। আর তুমি তার ঐ কথা বলার পূর্বের অবস্থায় উপনীত হবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [3]
4/398 وَعَن أُسَامَةَ بنِ زَيدٍ رَضِيَ الله عَنهُمَا، قَالَ: بَعَثَنَا رَسُولُ اللهِ (صلى الله عليه و سلم) إِلَى الْحُرَقَةِ مِنْ جُهَيْنَةَ فَصَبَّحْنَا القَوْمَ عَلَى مِيَاهِهِمْ، وَلَحِقْتُ أنَا وَرَجُلٌ مِنَ الأَنْصَارِ رَجُلاً مِنْهُمْ، فَلَمَّا غَشَيْنَاهُ، قَالَ: لاَ إِلٰهَ إلاَّ الله، فَكفَّ عَنْهُ الأَنْصَارِي، وطَعَنْتُهُ برُمْحِي حَتَّى قَتَلْتُهُ، فَلَمَّا قَدِمْنَا المَدِينَةَ، بَلَغَ ذلِكَ النَّبيَّ (صلى الله عليه و سلم) فَقَالَ لِي: «يَا أُسَامَة، أقَتَلْتَهُ بَعْدَ مَا قَالَ لاَ إِلٰهَ إلاَّ اللهُ ؟! » قُلْتُ: يَا رَسُولَ الله، إِنَّمَا كَانَ مُتَعَوِّذاً، فَقَالَ: «أقَتَلْتَهُ بَعْدَ مَا قَالَ لاَ إِلٰهَ إلاَّ اللهُ ؟! » فَمَا زَالَ يُكَرِّرُهَا عَلَيَّ حَتَّى تَمنْيَّتُ أنِّي لَمْ أكُنْ أسْلَمْتُ قَبْلَ ذلِكَ اليَوْمِ . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وفي رواية: فَقَالَ رَسُولُ اللهِ (صلى الله عليه و سلم): «أقالَ: لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَقَتَلْتَهُ ؟! » قُلْتُ: يَا رَسُولَ الله، إِنَّمَا قَالَهَا خَوْفاً مِن السِّلاحِ، قَالَ: « أَفَلاَ شَقَقْتَ عَنْ قَلْبِهِ حَتَّى تَعْلَمَ أَقَالَهَا أمْ لاَ ؟! » فمَا زَالَ يُكَرِّرُهَا حَتَّى تَمَنَّيْتُ أنِّي أسْلَمْتُ يَوْمَئذٍ.
৪/৩৯৮। উসামা ইবনে যায়দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে জুহাইনা গোত্রের এক শাখা হুরাকার দিকে পাঠালেন। অতঃপর আমরা সকাল সকাল পানির ঝর্নার নিকট তাদের উপর আক্রমণ করলাম। (যুদ্ধ চলাকালীন) আমি ও একজন আনসারী তাদের এক ব্যক্তির পিছনে ধাওয়া করলাম। যখন আমরা তাকে ঘিরে ফেললাম, তখন সে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলল। আনসারী থেমে গেলেন, কিন্তু আমি তাকে আমার বল্লম দিয়ে গেঁথে দিলাম। এমনকি শেষ পর্যন্ত তাকে হত্যা করে ফেললাম। অতঃপর যখন আমরা মদীনা পৌঁছলাম, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এ খবর পৌঁছল। তিনি বললেন, ‘‘হে উসামা! তার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার পরেও কি তুমি তাকে হত্যা করেছ?’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! সে প্রাণ বাঁচানোর জন্য এরূপ করেছে।’ পুনরায় তিনি বললেন, ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার পরও তুমি তাকে খুন করেছ?’’ তিনি আমার সামনে এ কথা বারবার বলতে থাকলেন। এমনকি আমি আকাঙ্ক্ষা করলাম যে, যদি আজকের পূর্বে আমি ইসলাম গ্রহণ না করতাম (অর্থাৎ এখন আমি মুসলিম হতাম)। (বুখারী ও মুসলিম) [4]
অন্য এক বর্ণনায় আছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘সে কি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে এবং তুমি তাকে হত্যা করেছ?’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! সে কেবলমাত্র অস্ত্রের ভয়ে এই (কলেমা) বলেছে।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি কি তার অন্তর চিরে দেখেছিলে যে, সে এ (কলেমা) অন্তর থেকে বলেছিল কি না?’’ অতঃপর একথা পুনঃ পুনঃ বলতে থাকলেন। এমনকি আমি আকাঙ্ক্ষা করলাম যে, যদি আমি আজ মুসলিম হতাম।
[1] সহীহুল বুখারী ২৫, মুসলিম ২২
[2] মুসলিম ২৩, আহমাদ ১৫৪৪৮, ২৬২৭০
[3] সহীহুল বুখারী ৪০১৯, ৬৮৬৫, মুসলিম ৯৫, আবূ দাউদ ২৬৪৪, আহমাদ ২৩২৯৯, ২৩৩০৫, ২৩৩১৯
[4] সহীহুল বুখারী ৪২৬৯, ৬৮৭২, মুসলিম ৯৬, আবূ দাউদ ২৬৪৩, আহমাদ ২১২৩৮, ২১২৯৫