11/374. وَعَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه، قَالَ : جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللهِ (صلى الله عليه و سلم)، فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللهِ، كَيْفَ تَقُولُ في رَجُلٍ أَحَبَّ قَوْماً وَلَمْ يَلْحَقْ بِهِمْ؟ فَقَالَ رَسُول الله (صلى الله عليه و سلم): «المَرْءُ مَعَ مَنْ أحَبَّ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১১/৩৭৪। ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! কোনো ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়কে ভালবাসে, কিন্তু (আমলে) তাদের সমকক্ষ হতে পারেনি।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘মানুষ যাকে ভালবাসে, সে তারই সাথী হবে।’’(বুখারী ও মুসলিম) [1]
12/375. وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبيِّ (صلى الله عليه و سلم)، قَالَ: «النَّاسُ مَعَادِنٌ كَمَعَادِنِ الذَّهَبِ وَالفِضَّةِ، خِيَارُهُمْ في الجَاهِلِيَّةِ خِيَارُهُمْ في الإسْلاَمِ إِذَا فَقُهُوا، وَالأرْوَاحُ جُنُودٌ مُجَنَّدَةٌ، فَمَا تَعَارَفَ مِنْهَا ائْتَلَفَ، ومَا تَنَاكَرَ مِنْهَا اخْتَلَفَ». رواه مسلم
১২/৩৭৫। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সোনা-রূপার খনিরাজির মত মানব জাতিও নানা গোত্রের খনিরাজি। যারা জাহেলী যুগে উত্তম ছিল, তারা ইসলামী যুগেও উত্তম; যখন তারা দ্বীনের গভীর জ্ঞান লাভ করে। আর আত্মাসমূহ সমবেত সৈন্যদলের মত। সুতরাং আপোসে যে আত্মাদল পরিচিত ও অভিন্ন প্রকৃতির হয়, সে আত্মাদলের মাঝে মিলন ও বন্ধুত্ব স্থাপিত হয়ে থাকে এবং যে আত্মাদল আপোসে অপরিচিত ও ভিন্ন প্রকৃতির হয়, সে আত্মাদলের মাঝে বিচ্ছিন্নতা ও অনৈক্য প্রকট হয়ে ওঠে।’’(মুসলিম) [2]
13/376. وروى البخاري قوله: «الأَرْوَاحُ»إِلخ، من رواية عائشة رضي اللَّه عنها .
১৩/৩৭৬। তবে বুখারী ‘‘আত্মাসমূহ সমবেত সৈন্যদলের মত। সুতরাং আপোসে যে আত্মাদল পরিচিত ও অভিন্ন প্রকৃতির হয়, সে আত্মাদলের মাঝে মিলন ও বন্ধুত্ব স্থাপিত হয়ে থাকে এবং যে আত্মাদল আপোসে অপরিচিত ও ভিন্ন প্রকৃতির হয়, সে আত্মাদলের মাঝে বিচ্ছিন্নতা ও অনৈক্য প্রকট হয়ে ওঠে।’’ এ অংশটুকু আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণনা করেছেন। (বুখারী)
14/377. وَعَن أُسَيْرِ بنِ عَمرٍو، وَيُقَالُ : ابنِ جَابِرٍ، قَالَ : كَانَ عُمَرُ بْنُ الخَطَّابِ رضي الله عنه إِذَا أتَى عَلَيهِ أمْدَادُ أهْلِ اليَمَنِ سَألَهُمْ : أفِيكُمْ أُوَيْسُ بْنُ عَامِرٍ ؟ حَتَّى أتَى عَلَى أُوَيْسٍ رضي الله عنه، فَقَالَ لَهُ : أنْتَ أُوَيْسُ ابْنُ عَامِر ؟ قَالَ : نَعَمْ، قَالَ : مِنْ مُرَادٍ ثُمَّ مِنْ قَرَنٍ ؟ قَالَ : نَعَمْ . قَالَ : فَكَانَ بِكَ بَرَصٌ، فَبَرَأْتَ مِنْهُ إلاَّ مَوْضِعَ دِرْهَمٍ ؟ قَالَ : نَعَمْ . قَالَ : لَكَ وَالِدةٌ ؟ قَالَ : نَعَمْ . قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ (صلى الله عليه و سلم)، يَقُولُ: «يَأتِي عَلَيْكُمْ أُويْسُ بْنُ عَامِرٍ مَعَ أمْدَادِ أهْلِ اليَمَنِ مِنْ مُرَادٍ، ثُمَّ مِنْ قَرَنٍ كَانَ بِهِ بَرَصٌ، فَبَرَأَ مِنْهُ إلاَّ موْضِعَ دِرْهَمٍ، لَهُ وَالدةٌ هُوَ بِهَا بَرٌّ لَوْ أقْسَمَ عَلَى الله لأَبَرَّهُ، فإنِ اسْتَطَعْتَ أنْ يَسْتَغْفِرَ لَكَ فَافْعَل»فَاسْتَغْفِرْ لي فَاسْتَغْفَرَ لَهُ، فَقَالَ لَهُ عُمَرُ : أيْنَ تُريدُ ؟ قَالَ : الكُوفَةَ، قَالَ : ألاَ أكْتُبُ لَكَ إِلَى عَامِلِهَا؟ قَالَ : أكُونُ في غَبْرَاءِ النَّاسِ أَحَبُّ إِلَيَّ، فَلَمَّا كَانَ مِنَ العَامِ المُقْبِلِ حَجَّ رَجُلٌ مِنْ أشْرَافِهِمْ، فَوافَقَ عُمَرَ، فَسَألَهُ عَنْ أُوَيْسٍ، فَقَالَ : تَرَكْتُهُ رَثَّ البَيْتِ قَليلَ المَتَاعِ، قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ (صلى الله عليه و سلم)، يَقُولُ: «يَأتِي عَلَيْكُمْ أُوَيْسُ بْنُ عَامِرٍ مَعَ أمْدَادٍ مِنْ أهْلِ اليَمَنِ مِنْ مُرَادٍ، ثُمَّ مِنْ قَرَنٍ، كَانَ بِهِ بَرَصٌ فَبَرَأَ مِنْهُ إلاَّ مَوضِعَ دِرْهَمٍ، لَهُ وَالِدَةٌ هُوَ بِهَا بَرٌّ لَوْ أقْسَمَ عَلَى اللهِ لأَبَرَّهُ، فَإنِ اسْتَطْعتَ أنْ يَسْتَغْفِرَ لَكَ، فَافْعَلْ»فَأتَى أُوَيْساً، فَقَالَ : اسْتَغْفِرْ لِي . قَالَ : أنْتَ أحْدَثُ عَهْداً بسَفَرٍ صَالِحٍ، فَاسْتَغْفِرْ لي . قَالَ : لَقِيتَ عُمَرَ ؟ قَالَ : نَعَمْ، فاسْتَغْفَرَ لَهُ، فَفَطِنَ لَهُ النَّاسُ، فَانْطَلَقَ عَلَى وَجْهِهِ . رواه مسلم
وَفي رِوَايَةٍ لِمُسلِمٍ أَيضاً عَن أُسَيْر بنِ جَابِرٍ رضي الله عنه : أنَّ أهْلَ الكُوفَةِ وَفَدُوا عَلَى عُمَرَ رضي الله عنه، وَفِيهمْ رَجُلٌ مِمَّنْ كَانَ يَسْخَرُ بِأُوَيْسٍ، فَقَالَ عُمَرُ : هَلْ هاهُنَا أَحَدٌ مِنَ القَرَنِيِّينَ ؟ فَجَاءَ ذلِكَ الرَّجُلُ، فَقَالَ عمرُ : إنَّ رَسُولَ اللهِ (صلى الله عليه و سلم) قَدْ قَالَ: «إنَّ رَجُلاً يَأتِيكُمْ مِنَ اليَمَنِ يُقَالُ لَهُ : أُوَيْسٌ، لاَ يَدَعُ باليَمَنِ غَيْرَ أُمٍّ لَهُ، قَدْ كَانَ بِهِ بَيَاضٌ فَدَعَا الله تَعَالَى، فَأذْهَبَهُ إلاَّ مَوضِعَ الدِّينَارِ أَو الدِّرْهَمِ، فَمَنْ لَقِيَهُ مِنْكُمْ، فَلْيَسْتَغْفِرْ لَكُمْ».
وفي رِوَايَةٍ لَهُ : عَن عُمَرَ رضي الله عنه، قَالَ : إنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ (صلى الله عليه و سلم)، يَقُولُ: «إنَّ خَيْرَ التَّابِعِينَ رَجُلٌ يُقَالُ لَهُ : أُوَيْسٌ، وَلَهُ وَالِدَةٌ وَكَانَ بِهِ بَيَاضٌ، فَمُرُوهُ، فَلْيَسْتَغْفِرْ لَكُمْ».
১৪/৩৭৭। উসাইর ইবনে ‘আমর মতান্তরে ইবনে জাবের থেকে বর্ণিত, উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর নিকট যখনই ইয়ামান থেকে সহযোগী যোদ্ধারা আসতেন, তখনই তিনি তাঁদেরকে জিজ্ঞেস করতেন, ‘তোমাদের মধ্যে কি উয়াইস ইবনে ‘আমের আছে?’ শেষ পর্যন্ত (এক দলের সঙ্গে) উয়াইস (ক্বারনী) রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু (মদীনা) এলেন। অতঃপর উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি উয়াইস ইবনে আমের?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ।’ উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ললেন, ‘মুরাদ (পরিবারের) এবং ক্বার্ন্ (গোত্রের)?’ উয়াইস বললেন, ‘হ্যাঁ।’ তিনি (পুনরায়) জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার শরীরে শ্বেত রোগ ছিল, তা এক দিরহাম সম জায়গা ব্যতীত (সবই) দূর হয়ে গেছে?’ উয়াইস বললেন, ‘হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘তোমার মা আছে?’ উয়াইস বললেন, ‘হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘মুরাদ (পরিবারের) এবং ক্বার্ন্ (গোত্রের) উয়াইস ইবনে আমের ইয়ামানের সহযোগী ফৌজের সঙ্গে তোমাদের কাছে আসবে। তার দেহে ধবল দাগ আছে, যা এক দিরহাম সম স্থান ছাড়া সবই ভাল হয়ে গেছে। সে তার মায়ের সাথে সদাচারী হবে। সে যদি আল্লাহর প্রতি কসম খায়, তবে আল্লাহ তা পূরণ করে দেবেন। সুতরাং (হে উমার!) তুমি যদি নিজের জন্য তাকে দিয়ে ক্ষমাপ্রার্থনার দো‘আ করাতে পার, তাহলে অবশ্যই করবে।’’ সুতরাং তুমি আমার জন্য (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা কর।’
শোনামাত্র উয়াইস উমারের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করলেন। অতঃপর উমার তাঁকে বললেন, ‘তুমি কোথায় যাবে?’ উয়াইস বললেন, ‘কূফা।’ তিনি বললেন, ‘আমি কি তোমার জন্য সেখানকার গর্ভনরকে পত্র লিখে দেব না?’ উয়াইস বললেন, ‘আমি সাধারণ গরীব-মিসকীনদের সাথে থাকতে ভালবাসি।’
অতঃপর যখন আগামী বছর এল তখন কূফার সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন হজ্জে এল। সে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তিনি তাকে উয়াইস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। সে বলল, ‘আমি তাঁকে এই অবস্থায় ছেড়ে এসেছি যে, তিনি একটি ভগ্ন কুটির ও স্বল্প সামগ্রীর মালিক ছিলেন।’ উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘মুরাদ (পরিবারের) এবং ক্বার্ন্ (গোত্রের) উয়াইস ইবনে আমের ইয়ামানের সহযোগী ফৌজের সঙ্গে তোমাদের নিকট আসবে। তার দেহে ধবল রোগ আছে, যা এক দিরহামসম স্থান ছাড়া সবই ভালো হয়ে গেছে। সে তার মায়ের সাথে সদাচারী (মা-ভক্ত) হবে। সে যদি আল্লাহর উপর কসম খায়, তাহলে আল্লাহ তা পূর্ণ করে দেবেন। যদি তুমি তোমার জন্য তার দ্বারা ক্ষমাপ্রার্থনার দো‘আ করাতে পার, তাহলে অবশ্যই করবে।’’
অতঃপর সে (কূফার লোকটি হজ্জ সম্পাদনের পর) উয়াইস (ক্বারনীর) নিকট এল এবং বলল, ‘আপনি আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন।’ উয়াইস বললেন, ‘তুমি এক শুভযাত্রা থেকে নব আগমন করেছ। অতএব তুমি আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর।’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘তুমি উমারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছ?’ সে বলল, ‘হ্যাঁ।’ সুতরাং উয়াইস তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করলেন। (এসব শুনে) লোকেরা (উয়াইসের) মর্যাদা জেনে নিল। সুতরাং তিনি তার সামনের দিকে (অন্যত্র) চলে গেলেন। (মুসলিম)
মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় উসাইর ইবনে জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, কুফার কিছু লোক উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর নিকট এল। তাদের মধ্যে একটি লোক ছিল, সে উয়াইসের সাথে উপহাস করত। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু জিজ্ঞেস করলেন, ‘এখানে ক্বার্ন গোত্রের কেউ আছে কি?’ অতঃপর ঐ ব্যক্তি এল। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের নিকট ইয়ামান থেকে উয়াইস নামক একটি লোক আসবে। সে ইয়ামানে কেবলমাত্র তার মা-কে রেখে আসবে। তার দেহে ধবল রোগ ছিল। সে আল্লাহর কাছে দো‘আ করলে আল্লাহ তা এক দীনার অথবা এক দিরহাম সম স্থান ব্যতীত সবই দূর করে দিয়েছেন। সুতরাং তোমাদের কারো যদি তার সাথে সাক্ষাৎ হয়, তাহলে সে যেন তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘‘সর্বশ্রেষ্ঠ তাবেঈন হল এক ব্যক্তি, যাকে উয়াইস বলা হয়। তার মা আছে। তার ধবল রোগ ছিল। তোমরা তাকে আদেশ করো, সে যেন তোমাদের জন্য (আল্লাহর নিকট) ক্ষমাপ্রার্থনা করে।’’ [3]
[1] সহীহুল বুখারী ৬১৬৯, ৬১৬৮, মুসলিম ২৬৪১, আহমাদ ৩৮১০, ১৯১৩১
[2] সহীহুল বুখারী ৩৩৫৩, ৩৩৭৪, ৩৩৮৩, ৩৪৯০, ৩৪৯৪, ৪৬৮৯, ৬০৫৮, ৭১৭৯, মুসলিম ২৬৩৮, ২৩৭৮, ২৫২৬, তিরমিযী ২০২৫, আবূ দাউদ ৪৮৩৪, ৪৮৭২, আহমাদ ৭৪৪৪, ৭৪৮৮, ৭৮৩০, ৮০০৮, ৮২৩৩, ৮৫৬৩, ৮৮৩৬, ৮৯২০
[3] মুসলিম ২৫৪২, আহমাদ ২৬৮, দারেমী ৪৩৯