দ্বিতীয় খণ্ড
পাক-ভারতে এলমে হাদীছ
দ্বিতীয় খণ্ড
প্রথম অধ্যায়
এখন আমার দিখিতে চেষ্ট করিবে যে, আমাদের এ পাক-ভারতে রছূলুল্লাহর উম্মতীগণ তাঁহার ছুন্নাহর হেফাজত ও প্রচারে কতখানি অংশগ্রহণ করিয়াছেন।
পাক-ভারত উপমহাদেশেরে সহিত আরবদের সম্পর্কে অতি পুরাতন। ইসলাম-পূর্ব যুগের আরবগণ বাণিজ্য ব্যাপদেশে এখানে যাতায়াত করিত বলিয়া বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। ইসলামী যুগে খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলেই (৪০ হিজরীর মধ্যেই) পাক-ভারতের পশ্চিম উপকুল পর্যন্ত মুসলিম প্রচারক ও মুজাহিদ বাহিনী পৌছিয়ালেন বলিয়া ইতিহাস সাক্ষ্যা দেয়। বনিউমাইয়াদের আমলে খলীফপ ওলীদের সময় (৮৬-৯৬ হিঃ মোঃ ৭০৫-১৪ ইং) ৯৩ হিঃ মোঃ ৭১১ ইং মোহাম্মদ ইবনে কাছেম কর্তৃক নিয়মিতভাবে সিন্ধু বিজিত হয় এবং উহা খোরাছান প্রদেশের অংশরূপ একটি গুরুত্বপূর্ণ সীমন্ত এলাকায় পরিণত হয়। মুজাহিদ বাহিনীর একদল লোক স্থায়ীভাবে সিন্ধুতে বসতি স্থাপন করেন এবং দ্বিন ও এলমে দ্বীন প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন। ইহাদের অনেকেই ছিলেন তাবেয়ী ও তাবে’-তাবেয়ী। সুতরাং দ্বিধহীনভাবেই বলা যায় যে, প্রথম শতাব্দীতেই এলমে হাদীছ সিন্ধু পর্যন্ত পৌছিয়াছিল: তবে এ সময়কার বিস্তারিত বিবরণ জানা যায় না। হিজরী দ্বিতীয় শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত সিন্ধু রীতিমত কেন্দ্রীয় শাসনেরই অধীনে থাকে: অতঃপর কেন্দ্রীয় শাসনমুক্ত হইয়া ইহা কতক ক্ষুদ্র রাজ্যে পরিনত হয়। তৃতীয় শতাব্দীতে এ সকল ক্ষুদ্র রাজ্যেও ধ্বংস হইয়া যায় এবং তদস্থলে শিয়া মতাবলম্বী ‘বাতেনী’ সম্প্রদায়ের অধিকার স্থাপিত হয়। ফলে কিছু দিনের জন্য মুসলিম জগতের সহিত ইহার যোগসুত্র ছিন্ন হইয়া যায়। পঞ্চম শতাব্দীর প্রথম দিকে (৪১২ হিঃ) ছোলতান মাহমুদ মাহমুদ গজনবী খাইবার গিরিপতথে ভারতে প্রবেশ করেন এবং পাঞ্জাব ও সিন্ধু দখল করিয়া গজনী রাজ্যের অন্তর্ভক্ত করেন। ফলে ভারতের সহিত মুসলিম জগতের সম্পর্কে পুনঃস্থাপিত হয়। অতঃপর সপ্তম শতাব্দী হিজরী পর্যন্ত এক এক করিয় উপমহাদেশের সকল অংশই মসলমানদের করতলগত হয় এবং দিল্লীতে উহার রাজধানী স্থাপিত হয়। এ সময় মধ্য এশিয়ার খোরাছান ও তুর্কিস্তান প্রভৃতি স্থান হইতে বহু মুসলমান সৈনিক, ব্যবসায়ী, আলেম ও মোহাদ্দেছ এদেশে আগমন করেন এবং স্থায়ীভাবে এখানে বসবাস এখতেয়ার করেন। তখন হইতে এদেশে এলমে হাদীছের স্থায়ী চর্চা আরম্ভ হয়
পাক-ভারতে এলমে হাদীছের যুগ বিভাগঃ
পাক-ভারতে এলমে হাদীছের ক্রমবিকাশ কালকে প্রধানতঃ পাঁচ ভাগ বা যুগে ভাগ করা যাইতে পারে। যথা-
প্রথম যুগ
এ যুগ প্রথম শতাব্দীর হিজরীর (৭ ম খৃঃ) প্রথম হইতে ছোলতান মাহমুদ গজনবীর ভারত আক্রমণ পর্যন্ত (৩৯৩ হিঃ, ১০০৩ খৃঃ) প্রায় চারি শতাব্দীর যুগ। এ যুগের বিস্তারিত বিবরণ জানা যায় না। তবে এ কথা সত্য যে, এলমে হাদীছের শিক্ষা সিন্ধুতেই (দেবল, মানছুরা ও খোজদার প্রভৃতিতেই ) সীমাবদ্ধ ছিল। সিন্ধুর এ দিকের ভুভাগ তখনও ইসলামী রাজ্যের অন্তর্ভক্ত হয় নাই।
খলীফা হজরত ওমর ফারূকের আমলে (১৩-২৩ হিঃ) তৎকর্তৃক বাহরাইন ও ওমানে নিযুক্ত শাসনকর্তা ছাহাবী
হজরত ওছমান ইবনে আবুল আছ ছকফী তাঁহার ভ্রাতা আল হাকামেক সিন্ধুর বরুচ এবং অপর ভ্রাতা মগীরাহ ইবনে আবুল আছকে দেবল অভিযানে প্রেরণ করেন।তাঁহারা শক্রদের পরাস্ত করেন এবং ভারত সীমান্তে প্রথম ইসলামী পতকা উড্ডীন করেন। খলীফা হজরত ওছমান গনীর আমলে (২৩-৩৫ হিঃ) তৎকর্তৃক মাকরানে নিযুক্ত শাসনকর্তা ওবাইদুল্লাহ ইবনে মা’মার তামীমী সিন্ধু নদ পর্যন্ত সমগ্র ভুভাগ স্বীয় শাসনাধীনে আনয়ন করেন এবং তথাকার অধীবাসীদের করদানে বাধ্য করেন। তবে ভারতের আবহাওয়া অনুকুল নহে জনিয়া হজরত আলী মোরতাজার আমলে (৩৫-৪০ হিঃ) তাঁহার অনুমতিক্রমে ৩৯ হিজরীর একেবারে প্রথম দিকে হারেছ ইবনে মুররাহ আবদী এক স্বেচ্ছা সৈনিক বাহিনী লইয়া ভারত আক্রমণ করেন এবং সিন্ধুর উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল ইলামী রাজ্যভুক্ত করেন। কিন্তু ৪২ হিঃ উত্তর সিন্ধুর কিকান নামক স্থানে তিনি তাঁহার অধিকাংশ সৈন্যসহ শক্ত হস্তে নিহত হন।অবশেষে হজরত মুআবিয়ার আমলে ( ৪১-৬০) প্রথমে আবদুল্লাহ ইবনে ছাওয়া আবদী, পরে ছেনান ইবনে ছালামাহ হুজাইলী ভারত সীমান্তে আক্রমণ করেন।অতঃপর ৪৪ হিঃ তাবেয়ী মোহাল্লাব ইবনে আবু ছোফরাহ (১২ হাজার সৈন্যসহ) পাঞ্জাবের লাহোর ও বান্না পর্যন্ত অগ্রসর হন।–বালাজুরী-৪৩৮ পৃঃ এ সকল অভিযান উপলক্ষে নিশ্চয় বহু ছাহাবী এদেশে আগমণ করিয়াছিলেন, কিন্তু তাঁহাদের মধ্যে আমরা যাঁহাদের নাম জানিতে পারিয়াছি তাঁহাদের সংখ্যা বেশী নহে। (তাঁহাদের নামের তালিকা পরে দেওয়া হইয়াছে) দ্বিতীয় শতাব্দীতে কতক আরবীয় তাবেয়ী, তাবে-তাবেয়ী এ দেশে আগমন করেন এবং স্থায়ীভাবে সিন্ধুতে বসতি স্থাপন করেন। অবশ্য বিখ্যাত তাবে’-তাবেয়ী আবু মা’শার নজীহ সিন্ধী (মৃঃ ১৭০ হিঃ) খাছ সিন্ধুবাসী ছিলেন বলিয়া জানা যায়।তবে তিনি আরবেই হাদীছ শিক্ষা করেন এবং আরবেই (বাগদাদেই) জীবন অতিবাহিত করেন।
ছাহাবীগণের আগমণ
১। আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ওতবান
২। আশ ইয়াম ইবনে আমর তামীমী।
৩। ছোহার ইবনে আল আবদী।
৪।ছোহাইল ইবনে আদী।
৫।হাকাম ইবনে আবু আ’ছ ছকফী
ওছমানী আমলেঃ
৬। ওবাইদুল্লাহ ইবনে মা’মার তামীমী।
৭।আবদুর রহমান ইবনে ছামুরাহ বছরী (মৃঃ ৫০ হিঃ)। তিনি ৩১ হিঃ সিস্তানের শাসনকর্তা রূপে কার্যভার গ্রহণ করেন এবং সিন্ধুর বহু এলাকা স্বীয় অধিকারে আনয়ন করেন।
তাবেয়ীনঃ
৮। ছেনান ইবনে ছালামাহ ইবনে মোহাব্বাক হুজাইলী (মৃঃ ৫৩ হিঃ)। রেজাল শাস্ত্রকার ইবনে ছ’আদ তাঁহাকে প্রথম শ্রেণীর তাবেয়ী এবং ইবনে হাজার শেষ শ্রেণীর ছাহাবী বলিয়াছেন। তিনি হজরত মুআবিয়ার আমলে ইরাকের শাসকর্তা জিয়াদ কর্তৃক সেনাপতি নিযুক্ত হইয়া সিন্ধুর কিকান প্রভৃতি বহু স্থান ইসলামী রাজ্যের অন্তরভুক্ত করেন এবং দুই বৎসর উহা স্বীয় শাসনধীনে রাখেন। ৫৩ হিঃ কোছদারে (বর্তমান বেলুচিস্তনের খোজদারে) শক্র কর্তৃক তিনি নিহত হন।
৯। মোহল্লাব ইবনে আবু ছোফরাহ (মৃঃ ৮৩ হিঃ) তিনি হজরত মুআবিয়ার আমলে সিস্তান এর শাসনকর্তা আবদুর রহমান ইবনে ছামুরার আদেশে পাঞ্জাবের লাহোর ও বান্না আক্রমণ করেন।
১০।মুছা ইবনে ইয়াকুব ছকফী। তিনি সেনাপতি মোহাম্মদ ইবনে কাছেম কর্তৃক আলোরের কাজী (বিচারক) নিযুক্ত হন এবং তথায় স্থায়ী বসতি স্থাপন করেন। ‘উচে’ তাঁহার বংশধরগণ বহুদিন যাবৎ হাদীছ-কোরআনের আলো জ্বালাইতে থাকেন।
১১। ইয়াজীদ ছাহাবী ইবনে আবু কাবশাহ দেমাশকী (মৃঃ ৯৭ হিঃ। উমাইয়া খলীফা ছোলাইমান (৯৬-৯৮ হিঃ) মোহাম্মদ ইবনে কাছেমকে বরখাস্ত করিয়া তাঁহার স্থলে ইয়াজীদকে পাঠান। ইয়াজীদ ছাহাবী হজরত আবুদ্দারদা (রাঃ) ও শোরহাবীল ইবনে আওছ প্রমখ হইতে বহু হাদীছ রেওয়ায়ত করিয়াছেন।–Indias Contribution
১২। আমর ইবনে মুছলিম বাহেলী (মৃঃ অনুঃ ১২৩ হিঃ)। তিনি ইয়া’লা বিন ওবাইদের নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। খলীফা হজরত ওমর ইবনে আবদুল আজীজের আমলে (৯৯-১০১ হিঃ) তিনি সিন্ধু এলাকার শাসনকর্তা নিযুক্ত হন এবং দীর্ঘদিন ঐ পদে বহাল থাকেন।
১৩।মোফাজ্জাল ইবনে মোহাল্লাব ইবনে আবু ছোফরাহ (মৃঃ ১০২ হিঃ)। তিনি ছাহাবী হজরত নো’মান ইবনে বশীরের নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। খোরছানের শাসনকর্তা ইয়াজীদ ইবনে মোহল্লাব (তাঁহার ভাই) খলীফা ইয়াজীদ ইবনে আবদুল মালেকের আমলে (১০১-৫ হিঃ) উমাইয়াদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং রাজাকীয় সৈন্যের হাতে পরাজিত হন। মোফাজ্জাল তাঁহার পরামর্শক্রমে ১০২ হিঃ কান্দাবিলের (পাঞ্জাবের) আমীর ওদ্দা ইবনে হামীদের নিকট আশ্রয়ের তালাশে আসনে।
১৪। আবু মূছা ইছরাঈল ইবনে মূছা বছরী (মৃঃ ১৫৫ হিঃ অনুঃ)। তিনি বিখ্যাত তাবেয়ী হজরত হাছান বছরী (মৃঃ ১১০ হিঃ) ও আবু মূছা আশজায়ী (মৃঃ ১৯৫ হিঃ)-এর নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। তিনি ব্যবসায় উপলক্ষে সিন্ধু আগমন করেন এবং সিন্ধুতে স্থায়ী বসবাস এখতেয়ার করেন।
১৫। আবু বকর রবী ইবনে ছবীহ বছরী (মৃঃ ১৬০ হিঃ) তিনি হজরত হাছান বছরী প্রভৃতির নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। অনেকের মতে তিনিই প্রথম হাদীছের কিতাব তাছনীফ করেন। তিনি খলীফা মাহদীর আমলে (১৫৮-৬৯ হিঃ) এক নৌবাহিনীর সহিত সিন্ধু আগমন করেন এবং তথাকার এক দ্বীপে এন্তেকাল করেন।
১৬। আবু মা’শার নজীহ সিন্ধী (মৃঃ ১৭০ হিঃ)। তিনিই সম্ভবতঃ প্রথম ভারতীয় ব্যক্তি যিনি হাদীছ শাস্ত্রে বিশেষতঃ মাগাজীতে পণ্ডিত্য লাভ করেন। তিনি যুদ্ধবন্দী হিসাবে নীত হন এবং তথায় হজরত নাফে’ (মৃঃ ১১৭ হিঃ) ও মোহম্মদ ইবনে কা’ব কোরাইজী (মৃঃ ১০৮ হিঃ) প্রমুখ বিখ্যাত তাবেয়ীনগণের নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। অতঃপর বাগদাদে স্থায়ী বসবাস এখতেয়ার করেন। তাঁহার নাতি-পোতাদের মধ্যে অনেকেই বড় বড় মোহাদ্দেছ হন। indias-24
১৭। আবু জ’ফর মোহাম্মদ ইবনে ইব্রহীম দায়ীবলী (দেবলী মৃঃ ৩২২ হিঃ) তিনিই প্রথম দায়বলী (দেবলী), যিনি হাদীছ শিক্ষার জন্য আরব গমন করেন এবং মোহাম্মদ ইবনে জাম্বুর মক্কী (মৃঃ ২৪৮ হিঃ) ও আবদুর রহমান ইবনে ছবীহ প্রমুখের নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। তিনি মক্কায় আবস্থান করেন এবং তথায় এন্তেকাল করেন।
১৮।আহমদ ইবনে আবদুল্লাহ দায়বলী (মৃঃ ৩৪৩ হিঃ) তিনি এ যুগের একজন বিখ্যাত মোহাদ্দেছ। তিনি হাদীছ আম্বষণে তৎকালীন হাদীছের প্রসিদ্ধ কেন্দ্রঃ বছরা, কফা, বাগদাদ, মক্কা, মিছর, দেমাশক, বায়রুত হাররান, তোস্তর, আসকার প্রভৃতি পরিভ্রমণ করেন এবং বহু বড় বড় মোহাদ্দেছের নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। অবশেষে নিশাপুরে বসতি স্থাপন করেন এবং তথায় এন্তেকাল করেন। হাকেম আবু আবদুল্লাহ নিশাপুরী (৪০৫ হিঃ) তাঁহার নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন।
১৯। আলী ইবনে মূছা দায়েলী। তিনি খালাফ দায়বলীর ওস্তাদ ছিলেন।
২০। ইব্রহীম ইবনে মোহাম্মদ দায়বলী (মৃঃ ৩৪৫ হিঃ) ও মক্কার বিখ্যাত মোহাদ্দেছ আলী ইবনে ছায়েল কবীর (মৃঃ ২৯১ হিঃ)-এর নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন।
২১। মোহাম্মদ ইবনে মাহাম্মদ দায়বলী ওররাক (মৃঃ ৩৪৬ হিঃ)। তিনি বছরার কাজী আবু খলীফা (মৃঃ ৩০৫ হিঃ) ও বাগদাদের মোহাদ্দেছ জা’ফর ইবনে মোহাম্মদ ফারয়াবী (মৃঃ ৩০১ হিঃ) প্রমুখ বহু মনীষীর নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। হাকেম আবু আবদুল্লাহ (মৃঃ ৪০৫ হিঃ) তাঁহার নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন।
২২। খালাফ ইবনে মোহাম্মদ দায়বলী (মুঃ অনুঃ ৩৬০ হিঃ)। তিনি দেবলে শায়খ আলী ইবনে মূছা দেবলীর নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। অতঃপর বাগদাদের হাদীছ শিক্ষা দেন। আবুল হাছান আহমদ ইবনে মোহাম্মদ জুন্দী ( মৃঃ ৩৯৬ হিঃ) তাঁহার নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন।
২৩। আবু বকর আহমদ ইবনে মোহাম্মদ ইবনে হারুন দেবলী (মৃঃ ৩৭০ হিঃ) তিনি ২৭৫ হিঃ দেবল জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রথমে রায়, পরে দাগদাদের গমন করেন এবং তথাকার মোহাদ্দেছ জা’ফর ইবনে মোহাম্মদ ফারয়াবী (মৃঃ ৩০১ হিঃ) ও আহমদ ইবনে শরীফ কুফীর নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। বাগদাদের বহু মোহাদাদেছ তাঁহার শাগরিদী এখতেয়ার করেন।
২৪। আবুল আব্বাছ আহমদ ইবনে মোহাম্ম মানছুরী। তিনি পারস্যের বিখ্যাত মোহাদ্দেছ আবুল আব্বাছ ইবনে আছরাম (মৃঃ ৩৩৬ হিঃ) এবং বছরার আবু রাওয়াক আহমাদুল হিজনী শিক্ষা করেন এবং হাদীছে তাঁহার গভীর জ্ঞানের ভূয়সী প্রশংসা করেন। বিখ্যাত পর্যটক মাকদেছী (মৃঃ ৩৭০ হিঃ) তাঁহাকে মানছুরায় হাদীছ শিক্ষা দিতে দেখেন।
২৫। আবু মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ইবনে জা’ফর মানছুরী (মৃঃ ৩৯০ হিঃ) তিনি হাছান ইবনে মোকাররাম প্রমুখের নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন এবং হাকেম আবু আবদুল্লাহ তাঁহার নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন।_indias, 31-41 p.
দ্বিতীয় যুগ
হিজরী ৫ম শতাব্দীর প্রথম হইতে (মাহমুদ গজনবীর ভারত আক্রমণ হইতে) ৮ম শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত কর্তৃক প্রায় চারি শতাব্দীর যুগ। এ যুগের প্রথম দিকে ( ৪১২-১৬ হিঃ) ছোলতান মাহমুদ গজনবী কর্তৃক পাঞ্জাব বিজিত হইলে এলমে হাদীছের আলো পাঞ্জাবে আসিয়া পৌছে এবং পাঞ্জাব হাদীছের একটি বিশিষ্ট কেন্দ্র পরিণত হয়। তিনি সিন্ধুকে ইছমাঈলিয়া শিয়াদের কবল হইতে উদ্ধার করিলে সিন্ধুতেও হাদীছের পুনঃ চর্চা আরম্ভ হয়। এতদ্ব্যতীত এ যুগের মাঝামাঝি ছোলতান মোহাম্মদ ঘোরী কর্তৃক দিল্লী বিজিত হইলে ( ৫৯০ হিঃ মোঃ ১১৯৩ ইং) তথায়ও হাদীছের আলো বিকীর্ণ হইতে থাকে। এ যুগেই প্রথমতঃ ভারতীয় মোহদ্দেছগণ কর্তৃক হাদীছের কিতবি লেখা আরম্ভ হয় এবং তাঁহাদের লেখা কতিপয় মোহাদ্দেছের নাম নাম নীচে দেওয় গেল
১।আল হাছান ইবনে হামীদ দেবলী (মৃঃ ৪০৭ হিঃ)।তিনি তাঁহার একং ব্যবসায় উপলক্ষে বাগদাদে গমন করেন এবং এক বিশেষ কারণে জ্ঞান অর্জনের প্রতি আকৃষ্ট হইয়া পড়েন। তিনি আলী ইবনে মোহাম্মদ ইবনে ছাঈদ মুছেলী (মৃঃ ৪০৭ হিঃ)।তিনি তাঁহার এক ব্যব্যসায় উপলক্ষে বাগাদদ গমন করেন এবং এক বিশেষ কারণ ঞ্জান অর্জনের প্রতি আকৃষ্ট হইয়া পড়েন। তিনি আলী ইবনে মোহাম্মদ ইবনে ছাঈদ মুছেলী (মৃঃ ৩৫৯ হিঃ) মোহাদ্দেছ দালাজ (মৃঃ ৩৫১ হিঃ) ওমোহাম্মদ নাককাশ (মৃঃ ৩৫১ হিঃ) প্রমুখের নিকট হদীছ শিক্ষা করেন।
২। আবুল কাছেম শোয়ইব ইবনে মোহাম্মদ দবেলী (মৃঃ ৪০৯ হিঃ। তিনি মিছরে যাইয়া হাদীছের দরছ কায়েম করেন। মোহাদ্দেছ আবু ছাঈদ ইবনে ইউছ তাঁহার নিকট হাদীচ শিক্ষা করেন।
৩। শায়খ ইছমাঈল লাহোরী (মৃঃ ৪৪৪ হিঃ)।তিনি ৩৯৫ হিঃ। খোরাছান হইতে হাদীছ লইলয়া লাহোর আগমন করেন এবং তথায় স্থায় বসতি স্থাপন করেন। তিনিই প্রথমে পাঞ্জাবে হাদীছ চর্চা আরম্ভ করেন। তাঁহার হাতে বহু লোক ইসলামে দীক্ষা গ্রহণ করেন।
৪। জা’ফর ইবনে খাত্তাব কুছদারী (মৃঃ অনুঃ ৪৫০ হিঃ) তিনি আবদুছ ছামাদ ইবনে মোহম্মদ আছেমীর নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। তিনি বলখে অবস্থান করেন এবং তথায় এন্তেকাল করেন।
৫। ছিবওয়াইহ ইবনে ইছমাঈল কুছদারী (মৃঃ ৪৬৩ হিঃ) ।তিনি মোহাদ্দেছ আবদুল কাছেম আলী ইবনে মোহাম্মদ হোছাইনী, ইয়াহইয়া ইবনে ইব্রহীম মাকহুল ও রাজা ইবনে আবুল কাছেম আলী ইবনে মোহাম্মদ হোছাইনী, ইয়াহইয়া ইবনে ইব্রাহীম মাকহুল ও রাজা ইবনে আবদুল ওহীদ ইস্পাহানীর নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। তিনি মক্কায় বসবাস এখতেয়ার করেন এবং তথায় হাদীছ শিক্ষা দেন।
৬। আলী ইবেন ওছমান হুজবেরী লাহোরী (মৃঃ ৪৬৫ হিঃ) । তিনি মোহাদ্দেছ আবুল ফজল মোহাম্মদ ইবনে হাছান খাতানী প্রমুখের নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। ‘কাশফুল মাহজুব’ নামে (তাছাওফে) তাঁহার এক মূল্যবান কিতাব রহিয়াছে।তিনি লাহোর এন্তেকাল করেন।
India’s, নোজহাহ
৭। আবুল হাছান আলী ইবনে ওমর লাহোরী (মৃঃ ৫২৯ হিঃ)। তিনি আবু আলী মোজফফার ইবনে ইলয়াছ ছাঈদীর নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। নোজহাহ
৮। শায়খ আবুল কাছেম মাহমুদ ইবনে মোহম্মদ লাহোরী (মৃঃ ৫৪০হিঃ) তিনি ‘কিতবুল আনছাব’ প্রণেতা নিজে তাঁহার নিকট হাদীছ শিক্ষা করিয়াছেন বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন।
৯। আবু মোহাম্মদ বখতিয়ার ইবনে আবদুল্লাহ ফাচ্ছাদ হিন্দী (মৃঃ ৫৪১ হিঃ)। তিনি বাগদাদ ও বছরায় বহু মোহাদ্দেছর নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন।তিনি আরবে এন্তেকাল করেন।
১০। আবুল হাছান বখতিয়ার ইবনে আবদুল্লাহ ছূফী হিন্দী (মৃঃ ৫৪২ হিঃ) তিনি বাগদাদ ও বছরায় বহু মোহাদ্দেছের নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। ছামআনী তাঁহার নিকট হাদীছ শিক্ষা করিয়া ছিলেন।
১১। আবুল ফাতহ আবদুছছামাদ ইবনে আবদুর রহমান লাহোরী (মৃঃ ৫৫০ হিঃ)। তিনি আবুল হাছান আলী ইবনে ওমর লাহোরী প্রমোখের নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। ছামআনী তাঁহার নিকট হাদীছ শিক্ষা করিয়াছেন।–নোজহাহ-১-৩০৭ পৃঃ
১২। আমর ইবনে ছাঈদ লাহোরী (মৃঃ ৫৮১ হিঃ)। হাফেজ আবু মুছা মাদীনী তার নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন।
১৩। ছৈয়দ মোরতাজা কুফি (মৃঃ ৫৮৯ হিঃ)। ছোলতান মোহাম্মদ ঘোরীর আমলে (৫৭০-৬০২ হিঃ) । তিনি হিন্দুস্তান আগমন করেন এবং যোগ্যতা গুণে তাহার সেনাপতি পদ লাভ করেণ।
১৪। ইমাম হাছান ছাগানী—মজীউদ্দীন আবুল ফাজায়েল হাছঅন ইবনে মোহাম্মদ ছাগানী লাহোরী (মৃঃ ৬৫০ হিঃ। তিনি তাহার পিতার নিকট হাদীছ প্রভৃতি এলম শিক্ষা করেন। অতঃপর মক্কা আদান ও হিন্দুস্তানের অন্যান্য মোহাদ্দেছেন নিকট উহা (হাদীছ) পুণঃ শ্রবণ করেন। হাদীছের বিখ্যাত কিতাব ‘মাশারিকুল আনওয়ার’ তাহারই সংকলিত। ইহাতে তিনি বোখারী ও মোছলেম শরীফ হইতে ২২৭২ টি রছুলুল্লাহ (ছঃ)-এর কাওলী হাদীছ জমা করিয়াছেন। বহু দিন যাবৎ ইহা এদেশের পাঠ্য তালিকাভুক্ত ছিল। ইহার প্রায় শতের মত শরাহ লেখা হইয়াছে। ছৈয়দ শহীদ বেরেলবীর খলীফা মাওলানা খোররম আলী বলহুরী ইহার উর্দু তরজমা করিয়াছেন। হালে ছলীম চিশতী ইহাকে বিষয় অনুসারে সাজাইয়া বলহুরীর তরজমাসহ লাহোর হইতে প্রকাশ করিয়াছেন। ইহা একটি অতি ছহীহ ও মূল্যবান কিতাব। এছাড়া হাদীছ, ফেকহ ও অভিধানে তাহার আরো বহু মূল্যবান কিতাব রহিয়াছে।
তিনি ৫৭৭ হিঃ লাহোরে জন্মগ্রহণ করেন এবং শিক্ষা লাভের পর বাগদাদে যাইয়া বসতি স্থাপন করেন।খলীফা নাসের বিল্লাহ তাঁহাকে ছোলতান আলতমাসের আমলে (৬০৭-৩৩ ইং) দিল্লীর দরবারে স্থায়ী দুত হিসাবে নিযুক্ত করেন।তিনি প্রায় বিশ বৎছর কাল এই পদে সমাসীন থাকেন এবং দিল্লীতে হাদীছ চর্চা করেন।
১৫। শায়খুল ইসলাম বাহদ্দীন ‘জাকারিয়া মুলতানী’ (মৃঃ ৬৬৬ হিঃ)। তিনি শায়খ কামালুদ্দীন ইয়ামানীর শাগরিদ ও শায়খ শেয়খ শেহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দীর খলীফা ছিলেন।
১৬। কাজী মিনহাজুছ ছিরাজ জুজেজানী (মৃঃ ৬৬৮ হিঃ)। তিনি খোরাছনে জন্মগ্রহণ করেন অতঃপর হিন্দুস্থান আগমন করেন। তিনি সম্রাটদের অধীনে বড় বড় সরকারী পদ লাভ করেন।তিনি যথাক্রমে উচের ফিরুজিয়া মাদ্রাছা ও দিল্লীর নাছিরিয়া মাদ্রাছার প্রিন্সিপাল নিযুক্ত হন। তাঁহার পিতা ছোলতান মোহাম্মদ ঘোরীর আমলে (৫৭০-৬০২ হিঃ) সেনা বিভাগের বিচারক ছিলেন।
১৭। মাওলানা বুরহানুদ্দীন মাহমুদ বলখী (মৃঃ ৬৮৭ হিঃ) তিনি ইমাম ছাগানীর নিকট হাদীছ এবং হেদায়া প্রণেতা আল্লামা বুরহানুদ্দীন মিরগীনানীর নিকট ফেকাহ শিক্ষা করেন। তিনি সম্রাট গিয়াছুদ্দীন বলনের সময়ে ( ৬৬৪-৬৮৬ হিঃ) দিল্লী আগমন করেন এবং মাশারিকুল আনওয়ার শিক্ষা দিতে থাকেন।
১৮। মাওলানা কামালুদ্দীন জায়েদ- মোহাম্মদ ইবনে আহমদ মারিকেলী দেহলবী (মৃঃ ৬৮৪ হিঃ) তিনি ইমাম ছাগানী ও তাঁহার শাগরিদ বুরহানুদ্দীন মাহমুদ বলখীর নিকট হাদীছ এবং হেদায়া প্রণেতার নিকট ফেকাহ শিক্ষা করেন। অতঃপর দিল্লীতে দরছ কায়েম করেন।
১৯। মাওলানা রজীউদ্দীন বাদায়উনী (মৃঃ ৭০০ হিঃ) তিনি মক্কা, মদীনা ও বাগদাদে যাইয়া হাদীছ শিক্ষা করেন এবং লাহোরে এন্তেকাল করেন। হাদীছে তাঁহার কিতাব রহিয়াছে
২০। শায়খ শরফুদ্দীন আবু তাওয়ামহ ঢকোবী। তিনি সম্রাট আলতামাসের সময় (মৃঃ ৬০৭-৩৩ হিঃ মোঃ ১২১০-৩৬ ইং) দিল্লী হইতে সোনাগাঁও (ঢাকা) আগমন করেন এবং স্থায়ীভাবে তথায় বসতি স্থাপন করেন।তিনি একজন বিখ্যাত আলেম ও মোহাদ্দেছ ছিলেন। সম্ভবতঃ তাঁহার দ্বারাই প্রথমে বাংলায় আসিয় হাদীছ চর্চা আরম্ভ হয়। বিখ্যাত ওলী শায়খ শরফুদ্দীন ইয়াহইয়া মানীরী (বিহার) বাংলায় আসিয়া তাঁহার নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন।
২১। আবু হাফছা ছেরাজুদ্দীন ওমর ইবনে ইছহাক হিন্দী (মৃঃ ৭০৩ হিঃ) তিনি হাদীছ, ফেকাহ ও মোনাজারাফ (তর্কশাস্ত্রে) একজন বিখ্যাত ব্যাক্তি ছিলেন। তিনি শায়খ ওজীহুদ্দীন দেহলবী, শামছুদ্দীন দুলী (?), ছেরাজুদ্দীন ছকফী ও রুকনুদ্দীন বাদাউনী প্রমুখের নিকট ফেকাহ এবং কুতবুদ্দীন কাস্তালানীর নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। মক্কা ও মদীনায় তিনি হাদীছ শিক্ষা দেন এবং মিছর যাইয়া আসকরের কাজী নিযুক্ত হন। হাদীছ তাঁহার ‘লাওয়ামে’ (আরবী******************) নামে ‘জামউল’ জাওয়ামে’ ছুয়ুতীর এক শরাহ রিহিয়াছে। আকায়েদের বিখ্যাত কিতাব ‘শহরে আকীদাতুত তাহাবী’ (আরবী******************) তাঁহারই রচিত।
আখবারুল আখইয়ার নোজহাহ India ‘S
২২। শায়খ আলী ইবনে নাগুরী। তিনি তাঁহার পিতা হামীদ নাগুরীর নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। তিনি একজন জবরদস্ত ওলী ও মোহাদ্দেছ ছিলেন।
২৩। শায়খ ছফীউদ্দীন মোহাম্মদ ইবনে আবদুর রহিম আরমুবী (মৃঃ ৭১৫ হিঃ) তিনি হিন্দে জন্মগ্রহণ করেন এবং তাঁহার নানর নিকট এলম শিক্ষা করেন। তিনি ইয়ামান, মক্কা ও মিছর পরিভ্রমণ করিয়া অবশেষে দামেশেকে বসবাস এখতেয়ার করেন। তথায়ই তাঁহার সহিত ইমাম ইবনে তাইমিয়ার সহিত মোনাজারা হয়।ইমাম জাহবী তাঁহার নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন।
২৪ ছোলতানুল মাশায়েখ হজরত শায়খ নেজামুদ্দীন আওলিয়া (মৃঃ ৭২৫ হিঃ)। তিনি আরবী সাহিত্য, ফেকাহ ও উছুলে ফেকাহ প্রভুতি এলম শায়খ আলাউদ্দীন উছুলী বাদায়উনী ও মাওলানা শামছদ্দীন খাওয়ারেজমীর নিকট এবং হাদীছ মাওলানা কামালুদ্দীন জাহেদের নিকট শিক্ষা করেন। মাশারিকুল আনওয়ার তাঁহার মুখস্থ ছিল। তিনি শায়খ ফরীদুদ্দীন গঞ্জেশকর (রঃ) এর খলীফা ছিলেন।
২৫। শায়খ মুহীউদ্দীন কাশানী দেহলবী (মৃঃ ৭১৯ হিঃ) তিনি হজরত ছোলতানুল মাশায়েখের শাগরিদ ও মুরীত ছিলেন। হাদীছ, তফছীর ও ফেকাহয় তাঁহার অগাধ জ্ঞান ছিল।
২৬। শায়খ ফরীদুদ্দীন মাহমুদ নাগুরী (মৃঃ ৭২৫ হিঃ) তিনি তাঁহার পিতা আলী নাগুরীর নিকট হাদীছ শাক্ষা করেন- নোজহাহ
২৭। মায়খ নেজামুদ্দীন আল্লামী (মৃঃ ৭৩৫ হিঃ) তিনি হজরত ছোলতানুল মাশায়েখের শাগরিদ ও মুরীদ ছিলেন। হাদীছ পাণ্ডিত্যের দরুন তিনি ‘জুবদাতুল মোহাদ্দেসীন’ নামে অভিহিত হন।
২৮। মাওলানা শামছুদ্দীন ইয়াহইয়া আওধী (মৃঃ ৭৪৭ হিঃ) তিনি ছোলতানুল মাশায়েখের শাগরিদ ও মুরীদ ছিলেন।হাদীছে মাশারিকুল আনওয়ারের তাঁহার এক শরাহ রহিয়াছে।
২৯। মাওলান ফখরুদ্দীন জাররাদী (মৃঃ ৭৪৮ হিঃ) তিনি ছোলতানুল মাশায়েখের খলীফা ও আখি ছেরাজ বাঙ্গালীর ওস্তাদ ছিলেন।তিনি বাগদাদে হাদীছ শিক্ষা করেন।
৩০। হজরত আখি ছেরাজ বাঙ্গালী। তিনি হজরত ছোলতানুল মাশায়েখের খলীফা ও বিখ্যাত ওলীআল্লাহ শায়খ আলাউল হক পাণ্ডবীর পীর ছলেন।
৩১।শায়খ নছীরুদ্দীন চেরাগে দেহলী (মৃঃ ৭৫৭হিঃ) তিনি মুহীউদ্দীন কাশানী ও শামছুদ্দীন আওধীর নিকট এলমে জাহের এবং ছোলতানুল মাশয়েখেরে নিকট এলমে বাতেন শিক্ষা করেন।
৩২। মাওলানা আবদুল আজীজ আরদেবিলী। তিনি ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ প্রখ্যাত রেজাল মাস্ত্রকার ইউছফ মেজ্জী্ ও ইমাম জাহবীর নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। সম্রাট মোহাম্মদ তোগলক (৭২৫-৫২ হিঃ) তাঁহার নিকট হাদীছ শ্রবণ করেন।
৩৩। মাখদুম শায়খ শরফুদ্দীন ইয়াহইয়া মানীরী বিহারী (মৃঃ ৭৮২হিঃ) তিনি শায়খ শরফুদ্দীন আবু তাওয়ামাহ ঢাকোবীর শাগারিদ ও শায়খ নজীবুদ্দীন ফিরদাউছীর খলীফা ছিলেন।
৩৪।শায়খ ওজীহুদ্দীন। তিনি চেরাগে দেহলীর মুরীদ ও বড় একজন মোহাদ্দেছ ছিলেন। তাঁহার ‘মেফতাহুল জেনান’ নামক কিতাবে তিনি মাশারিকুল আনওয়ার হইতে বহু হাদীছ নকল করিয়াছেন (ব্রিটিশ মিউজিয়ামে ইহা রক্ষিত আছে।)
৩৫। শায়খ মোজফফার বলখী (মৃঃ ৭৮৫হিঃ) হাদীছে তিনি মাশারিকুল আনওয়ারের এক শরাহ লেখেন। সম্রাট ফিরোজ শাহ তোগলক (৭৫২-৯০ হিঃ) কর্তৃক তিনি দিল্লীর ‘কুশেকে লাল’ মাদ্রাছার আধ্যাপক নিযুক্ত হন। তিনি শায়খ মানীরীর খলীফা ছিলেন।
৩৬। ইফতেখাররুদ্দীন বানী। হাদীছ, তফছীর, মান্তক ও হিকমতে তাঁহার অগাধ জ্ঞান ছিল।
৩৭। শায়খ জামালুদ্দীন হোছাইন ইবনে আহমদ বোখারী আচী। তিনি একজন প্রসিদ্ধ ফকীহ ও মোহাদ্দেছ ছিলেন। সম্রাট ফিরোজ শাহ তোগলক তাঁহার মুরীদ ছিলেন।
৩৯। শায়খ ইলমুদ্দীন ছোলাইমান ইবনে আহমদ মুলতানী। তিনি মাখদুম ইয়াহইয়া মানীরীকে মোছলেম শরীফ উপহার দিয়াছিলেন।– তারীখুল হাদীছ।
৪০। শায়খ ইলমুদ্দীন ছোলাইমান ইবনে আহমদ মুলতানী। তিনি সম্রাট গিয়াছুদ্দীন তোগলকের সময় দিল্লী আগমন করেন।
৪১। শায়খ আলী ইবনে শেহাব হামদানী। তিনি ‘ফাজায়েলে আহলে বায়ত’ সম্পর্কে ‘মোছনাদে ফিরদাউছ’ হইতে ৭০টি হাদীছ সংগ্রহ করিয়া এক কিতাব লেখেন।
আখবারুল আখইয়ার,নোজহাহ, india’s
তৃতীয় যুগ
এ যুগ নবম শতাব্দী হিজরীর প্রথম হইতে একদশ শতাব্দীর প্রথম পাদ পযর্ন্ত প্রায় সোয়া দুই
শতাব্দীর যুগ। এ যুগের প্রথম দিকে গুজরাটের আমীর প্রথম আহমদ শাহ ( ৮১৪-৪৪ হিঃ) কর্তৃক ভারত ও আরবের মধ্যে সমুদ্রিক যোগাযোগ স্থাপন করা হইলে উভয় দেশের মধ্যে সরাসরিভাবে লোক গমনাগমনের অপূর্ব সুযোগ ঘটে। হাদীছ আকঙ্ক্ষীর আরব ও মিছর যাইয়া তথাকার মোহদ্দেছদের নিকট হইতে হাদীছ শিক্ষা করার সুযোগ লাভ করে।নবম শতাব্দীর প্রথম দিক হইতে দশম শতাব্দীর মাঝামাঝি পযর্ন্ত বহু হাদীছ শিক্ষার্থী আরব ও মিছরে যাইয়া হাফেজ ইবনে হাজার আছকালানী ( মৃঃ ৮৫২ হিঃ) ও বিখ্যাত মোহাদ্দেছ ইবনে হাজার হাইছমী মক্ক ( মৃঃ ৯৫৫ হিঃ) প্রমুখের নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন এবং দেশে প্রত্যাবর্তন করিয়া হাদীছ দ্বারা দেশকে গুলজার করিয়া দেন। এ কারণে এ যুগকে ছাহাবী ও হাইছমীর শাগরিদগণের যগও বলা যাইতে পারে।
এতদ্ব্যতীত এ সময় ইরানে শিয়া-প্রধান্য স্থাপিত হওয়ায় বহু ছন্নী আলেম ও মোহদ্দেছ ভারতে হিজরত করেন, ফলে ভারতে হাদীছ চর্চা দ্বিগুণ জোরদার হইয়া উঠে।
নীচে এ যুগের কতিপয় বিশিষ্ট মোহাদ্দেছের নাম দেওয়া গেলঃ
১। মাওলানা নূরুদ্দীন সিরাজী-আবুল ফাতহ নূরুদ্দীন আহমদ ইবনে আবদুল্লাহ শিরাজী। তিনি মজদুদ্দীন ফিরোজাবাদী ( মৃঃ ৮১৭ হিঃ) মীর ছৈয়দ শরীফ জুরজনী ( মৃঃ ৮২২ হিঃ) শামছূদ্দীন জজরী ( মৃঃ ৮৩৩ হিঃ) ও বাব ইউছুফ হারাবী প্রমুখের নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। তিনি ইরান হইতে ( সম্ভবতঃ আহমদ শাহর আমলের ৮১৪-৪৪ হিঃ) গুজরাটে আগমন করেন এবং ভারতবাসীদের হাদীছ শিক্ষা করার জন্য প্রেরণা দান করেন। এ কারণে তাঁহাকেও এ যগের প্রবর্তক বলা যাইতে পারে।
২। হাফেজ রুকনুদ্দীন কুরাইশী জ’ফরাবাদী ( মৃঃ ৮২০ হিঃ) তিনি হাদীছের হাফেজ ছিলেন। এক লক্ষ হাদীছ তাঁহার মুখস্থ ছিল।
৩। ছৈয়দ মোহাম্মদ গীছূদরাজ-আবুল ফাতহ ছদরুদ্দীন মোহাম্মদ ইবনে ইউছুফ মোসাইন দেহলবী ( মৃঃ ৮২৫ হিঃ) তিনি শেখ শরফুদ্দীন কাতহিলী ( ?), তাজুদ্দীন মোকাদ্দাম ও কাজী আবদুল মোকতাদেরের নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন।তিনি দিল্লী হইতে গুজরাট ও দৌলতাবাদ হইয়া গুলবরগায় উপনীত হন এবং ফিরোজ শাহ বাহমনী ( মৃঃ ৮০০-২৫ হিঃ)- এর নিকট উচ্চ সম্মান লাভ করেন। হাদীছ তাঁহার ( ছুফী মত অনুসারে) মাশারিকুল আনওয়ারের এক শরাহ, মাশারিকএর অনুবাদ, কিতাবুল আরবাই ( চল্লিশ হাদীছ) ও ছীরাতে নববঅ সম্পর্কে এক কিতাব রহিয়াছে।
৪। শায়খ বদরুদ্দীন মোহাম্মদ ইবনে আবু বকর ইস্কান্দারী দামমীনী ( মৃঃ ৮২৭ হিঃ)। তিনি ( মৃঃ ৭৬৩ হিঃ) আলোকজান্দ্রিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন এবং তাঁহার দাদা বাহাউদ্দীন দামামীনী, মাম ইবনে খালদুন ( মৃঃ ৮০৮ হিঃ) এবং কায়রো ও মক্কার বড় বড় মোহাদ্দেছগণের নিকট হাদীছ ও অন্যান্য এলম শিক্ষা করেন। তিনি প্রথমে মিছরের ‘আল আজহার’ ও পরে ইয়ামানের জামে’ জাবীদে শিক্ষাদান করেন। অতঃপর ( মৃঃ ৮২০ হিঃ মোঃ ১৪১৭ ইং) ছোলতান আহমদ শাহর আমলে গুজরাট আগমন করেন। তথা হইতে তিনি ( ফিরোজ শাহ বাহমনীর সময় ৮০০-২৫হিঃ) দাক্ষিণাত্যের গুলবরগায় আসেন এবং ২২৭ হিঃ তথয় এন্তেকাল করেন। হাদীছ ‘মাছবিহুল জামে’নামে বোখারী শরীফের,’তা’লীকুল মাছাবীহ’ নামে ‘মাছবীহুছ ছন্নার’ এক একটি শরহ এবং ফতহুর রব্বানী’ নামে অপর এক কিতাব রহিয়াছে।_ ইণ্ডিঃ ৮৭ হিঃ
৫। ইয়াহইয়া ইবনে আবদুর রহমান হাশেমী ( মৃঃ ৮৪৩ হিঃ)। তিনি মক্কয় ইবনে হাজার আছকালানীর শাগরিদ ইবনে ফাহাদের নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন এবং ৮৩০ হিঃ বোম্বাই-এর কাম্বে আগমন করেন। তথা হইতে গুলবরগায় আসেন এবং বেরারে এন্তেকাল করেন।
৬। হোছাইন ইবনে মইজুদ্দীন বিহারী ( মৃঃ ৮৪৪ হিঃ)। তিনি প্রথমে তাঁহার মাম শায়খ মোজাফফার বলখী, পরে মক্কার পথে আদনে খতীব আদনীর নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। তিনি তাঁহার কিতাব ‘আওরাদে দাহ ফছলী’তে বহু হাদীছ নকল করিয়াছেন।
৭। কাজী শেহাবুদ্দীন দৌলতাবাদী ( মৃঃ ৮৪৯ হিঃ)। তিনি দাক্ষিণাত্যের দৌলতাবাদে জন্মগ্রহণ করেন এবং দিল্লীতে শায়খ মুইনুদ্দীন ইমরানী ( মৃঃ ৮০৭ হিঃ) মাওলানা খাজেগী ( মৃঃ ৮১৯ হিঃ) ও কাজী আবদুল মুকতাদিরের নিকট শিক্ষালাভ করেন। তিনি হজরত চেরাগে দেহলীর মুরীদ এবং এ যুগের একজন বিখ্যাত আলেম ছিলেনে। ‘মানাকিছু ছা’দাত’ কিতাবে তিনি রহিয়াছে।
৮। মাওলানা খাজেগী-শামছুদ্দীন খাজগী ইবনে আহমদ কড়বী ( মৃঃ ৮৭৮ হিঃ)। তিনি ‘মাশারিক’ হইতে ৪০টি হাদীছ সংগ্রহ করিয়া এক ‘আরবাইন’ লেখেন।
৯। খাজা ইমাদুদ্দীন ওরফে মাহমুদ গাওয়ান ( মৃঃ ৮৮৬ হিঃ)। তিনি হাফেজ ইবনে হাজার আছকালানীর নিকট কায়রোতে হাদীছ শিক্ষা করেন এবং হিন্দুস্তানে আসিয়া গুলবরগায় বাদশাহ হুমায়ুন শাহর দরবারে মন্ত্রি পদ লাভ করেন।অতঃপর মোহাম্মদ শাহ বামনির আদেশে ৮৮৬ হিঃ নিহত হন।
১০। শায়খ আবল ফাতহ ইবনে রাজী মক্কা মালবী ( মৃঃ ৮৮৬ হিঃ)। তিনি মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন এবং তথায় ইমাম ছাখাবীর নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। অতঃপর গুজরাটে আসয়া মন্দুর রাজধানী মালবে ৩০ বৎসরকাল অবস্থান করেন। পরে মক্কায় যাইয়া এন্তেকাল করেন।
১১। শায়খ আহমদ লঙ্গর দরইয়া ইবনে হাছান মোজফফার বলখী ( মৃঃ ৮৯১ হিঃ)। তিনি তাঁহার দাদ হজরত মোজফফার বলখীর আদেশে ছয় মাসে’মাছবীহুছছুন্নাহ’ হেফজ করিয়াছিলেন।তিনি বিহারে মানীর শরীফের একজন বিখ্যাত ছূফী ছিলেন।
১২। শায়খ ওমর ইবনে মোহাম্মদ দেমাশকী খাম্বায়েতী ( মৃঃ ৯০০ হিঃ)। তিনি দেমাশকে জন্মগ্রহণ করেন এবং কায়রোতে সারা বিনতে জামআ ( মৃঃ ৮৫৫ হিঃ) এবং মক্কায় ইমাম ছাখাবীর নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। অতঃপর ব্যবসায় উপলক্ষে বোম্বাইর কাম্বে ( খাম্বায়েতে) আসিয়া তথাকার কাজী ( বিচারক) নিযুক্ত হন।
১৩। শায়খ আহমদ ইবনে ছালেহ ( মৃঃ অনুঃ ৯০৬ হিঃ)। তিনি তাঁহার পিতা ছালেহ মক্কী মালবে অবস্থানকালে তথায় ( মালবে) জন্মগ্রহণ করেন।অতঃপর মক্কয় যাইয়া ইমাম ছাখাবীর নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন এবং ছোলতান গিয়াছুদ্দীন মালবীর সময় ( ৮৭৪-৯০৬হিঃ) মালবে প্রত্যাবর্তন করেন। আখবারুল আখইয়ার, নোজহাহ ও india’s contr.
১৪। মোহাককেক জালালুদ্দীন দাওয়ানী ( মৃঃ ৯২৮ হিঃ)। তিনি ইরানের প্রসিদ্ধ মান্তেকী কুতবুদ্দীন রাজী তাহতানীর শাগরিদ ছিলেন। সম্রাট ফিরোজ শাহর আমলে তিনি দিল্লী আগমন করেন এবং হাওজে আলায়ীর উপর নির্মিত মাদ্রাছায় হাদীছ, তফছীর শিক্ষা দেন।
১৫। মাওলান আবদুল আজীজ ইবনে মোহাম্মদ তুসী ( মৃঃ ৯১০ হিঃ)। তিনি খোরাছানের তুসে জন্মগ্রহণ করেন এবং ইবনে হাজার আছকালানীর শাগরিদ আবদুল আজীজ আজহারী, মীর আছীলুদ্দীন শিরাজী ( মৃঃ ৮৮৩ হিঃ) ও ছাখাবীর নিকট হাদীছ শিক্ষ করেন। অতঃপর দাক্ষিণাত্যে আসিয়া মাহমুদ গাওয়াঁনের শ্যালকের গৃহশিক্ষাক নিযুক্ত হন।
১৬। শায়খ আবু বকর ইবনে মোহাম্মদ বারওয়াজী ( বরুচী মৃঃ অনুঃ ৯১৫ হিঃ)। তিনি গুজরাটের বরুচে হাদীছ শিক্ষা দেন এবং প্রথম মাহমুদ শাহ গুজরাটীর জন্য ‘হিছনে হাছীনে’র গুজরাটের বরুচে হাদীছ শিক্ষা দেন এবং প্রথম মাহমুদ শাহ গুজরাটীর জন্য ‘হিছনে হাছীনে’র এক ফার্সী তরজমা করেন।
১৭। মালুকুল মাহাদ্দেছীন শায়খ ওজীহুদ্দীন মোহাম্মদ মালেকী ( মৃঃ ৯১৯ হিঃ)। তিনি মিছরে জন্মগ্রহণ করেন এবং স্বীয় পিতার নিকট প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করার পর মক্কয় ইমাম ছাখাবীর নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। অতঃপর তিনি কিছু দিনের জন্য ইয়ামানের জায়লা মাদ্রাছায় শিক্ষকত করেন। তথা হইতে গুজরাটে আসিয়া হাদীছের দরছ কায়েম করেন। ছোলতান প্রথম মাহমুদ ( ৮৬৩-৯১৭হিঃ) তাঁহাকে মালেকুল মোহাদ্দেছীন ( মোহাদ্দেছীন- সম্রাট) উপাধিতে ভূষিত করেন এবং রাজ্যের অর্থমন্ত্রী করেন।
১৮। শায়খ মোহাম্মদ ইবনে ইজদান বখশ বাঙ্গালী শেরওয়ানী। তিনি একডালায় বসিয়া বোখারী শরীফ অনুলিপি করেন এবং তৎকালীন বাংলার বাদশাহ আলাউদ্দীনকে ( ৯০৫-২৭ হিঃ) উপহার দেন। ইহা এখনো পাটনার বাকিঁপুর লাইব্ররীতে বিদ্যমান আছে।
১৯। হোছাইন ইবনে আবদুল্লাহ কিরমানী ( মৃঃ ৯৩০ হিঃ)। তিনি ছাখাবীর নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন এবং মক্কা হইতে বিজাপুরের কাবুল আসিয়া ৪ ( চার) বৎসরকাল অবস্থান করেন। অতঃপর মক্কায় প্রত্যাবর্তন করেন।
২০। শায়খ জামালুদ্দীন ইবনে ওমর হাজরামী ( মৃঃ ৯৩০ হিঃ)। তিনি ছাখাবীর নিকট এবং জাবীদে আবদুল লতীফ শিরাজী ও মোহাম্মদ ছায়েগের নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। অতঃপর গুজরাটে আসিয়া দ্বিতীয় মোজফফার শাহর শিক্ষক নিযুক্ত হন। তিনি মুনজেরীর ‘তারগীব তারহীবের’ এক সংক্ষিপ্তসার রচনা করেন।
২১। ছৈয়দ রফীউদ্দীন ছুফুবী ( মৃঃ ৯৫৪ হিঃ)। তিনি মোহাককেক জালালুদ্দীন দাওয়ানী মাহমুদ শাহ গুজরাটির সময় ( ৮৬৩-৯১৭হিঃ) গুজরাটে আগমন করেন।গুজরাট হইতে সিকান্দর লুদীর আমলে (৮৯৪-৯২৩ হিঃ) আগ্রায় আসিয়া বসবাস এখতেয়ার করেন এবং ৩৪ বৎসর যাবৎ লুদী কর্তৃক নির্মিত মাদ্রাছায় হাদীছ তফছীর শিক্ষা দেন। তিনি ইরানের ছুফুবী রাজবংশের লোক ছিলেন।
২২। আবুল ফাতহে থানেসরী ( থানেম্বরী মৃঃ ৯৬০ হিঃ)।সৈয়দ ছুফুবীর এন্তেকালের পর তিনি তাঁহার স্থলাভিষিক্ত হন।
২৩। মীর ছৈয়দ আবদুল আওয়াল জৌনপুরী ( মৃঃ ৯৬৮ হিঃ)। তিনি প্রথমে তাঁহার দাদা ছৈয়দ আলাউদ্দীন হোছাইনীর নিকট এবং পরে আরবে যাইয়া তথাকার মোহাদ্দেছীনদের নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। অতঃপর আহমদাবাদের গুজরাটে আসিয়া হাদীছের দরছ কায়েম করেন। আকবরী আমলে খান খানানের অনুরোধে ৯৬৬ হিঃ দিল্লী আগমন করেন এবং দুই বৎসর পর তথায় এন্তেকাল করেন। হাদীছে তিনি ‘ফয়জুল বারী’ নামে বোখারী শরীফের এক বিস্তৃত শরাহ এবং ‘ছিআদাতে’র এক সংক্ষিপ্তসারে লিখিয়াছেন।
২৪। শায়খ আবদুল মালেক গুজরাটি আব্বাছী ( মৃঃ অনুঃ ৯৭০ হিঃ)। তিনি তাঁহার ভ্রাতা ও ছাখাবীর শাগরিদ কুতবুদ্দী আব্বাছীর নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন এবং আজীবন গুজরাটে হাদীছ শিক্ষা দেন। তিনি কোরআন ও বোখারী শরীফের হাফেজ ছিলেন।
২৫। মীর মোরতাজা শরীফী জুরজানী (মৃঃ ৯৭২ হিঃ)। তিনি মক্কায় ইবনে হাজার হাইছমীর নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। ৯৭২ হিঃ তিনি দাক্ষিণাত্য হইয়া আগ্রায় উপনীত হন এবং আকবরী দরবারে প্রভূত সম্মান লাভ করেন। তিনি মীর ছৈয়দ শরীফের পৌত্র ছিলেন।
২৬। শায়খ আলী মোত্তাকী বোরহানপুরী (মৃঃ ৯৭৫ হিঃ)। তিনি ৮৮৫ হিঃ জৌনপুরের নিকট বোরহানপুরের কাজী (বিচারক) নিযুক্ত হন। ৯৪১ হিঃ তিনি গুজরাটে উপনীত হন এবং তথা হইতে মক্কায় যাইয়া স্থায়ী বসবাস এখতেয়ার করেন। মক্কায় তিনি ইমাম ছাখাবীর প্রপৌত্র মোহাম্মদ ছাখাবী, শায়খ আবুল হাছান বকরী
(মৃঃ ৯৫২ হিঃ) ও ইবনে হাজার হাইছমীর নিকট হইতে পুনরায় হাদীছের সনদ হাছিল করেন।
ইছলামী বিভিন্ন বিষয়ে তাঁহার শতাধিক কিতাব রহিয়াছে। হাদীছে তাঁহার ( ১ ) ‘মানহাজুল ওমমাল’ ( ২ ) ইকমালুল মানহাজ ( ৩ ) গায়াতুল ওমমাল, ( ৪ ) আল মুস্তাদরাক, ( ৫ ) কানজুল ওমমাল’ ( ৬ ) ও মোস্তাখাবে কাজুল ওমমাল প্রভৃতি দশটি অতি মুল্যবান কিতাব রহিয়াছে। তাঁহার ‘কানজুল ওমমাল’কে হাদীছের বিশ্বকোষ বলা চলে। ইহাতে তকরার বাদ মোট ৩২ ( ? ) হাজার হাদীছ রহিয়াছে।
২৭ । মাখদুম ভিকারী।– নিজামু্দ্দীন ইবনে ওমর কাকুবী ভিকারী ( মৃঃ ৯৮১ হিঃ )। তিনি ঝাসিঁ ওলক্ষৌতে শায়খ ইব্রাহীম ইবনে মাহাম্মদ বাগদাদী ও জিয়াউদ্দীন মোহাদ্দেছ মদনীর নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। তিনি ‘আল মিনহাজ’ নামে উছুলে হাদীছের এক কিতাব লিখেন।
২৮। খাজা মোবারক ইবনে আররাজানী বানারসী ( মৃঃ ৯৮১ হিঃ )। তিনি তাঁহার পিতা মাখদুম আররাজনীর নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। ‘মাদারিজুল আখবার’ নামে তিনি বাগাবীর মাছাবীর পুনঃ তারতীব দেন এবং এই একই নামে ছাগানীর মাশারিকু আনওয়ারকে বিষয় অনুসারে সাজান। ( বাকিঁপুর লাইব্রেরীতে ইহার কপি বিদ্যমান আছে।) তিনি শেরশাহ সুরীর আমলে (৯৪৫-৫২ হিঃ ) তাঁহার মন্ত্রী নিযুক্ত হন।
২৯।মোল্লা আলী তারেমী ( মৃঃ ৯৮১ হিঃ)। তিনি মেশকাত শরীফের এক শারাহ লেখেন।
৩০। মীর কাঁলা মোহাদ্দেছ_( মোহাম্মদ ইবনে মাওলানা খাজা মৃঃ ৯৮৩ হিঃ) তিনি শিরাজে মাওলানা জামালুদ্দীন মোহাদ্দেছর পুত্র মীরকশাহর নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন, অতঃ পর মক্কায় হাদীছ শিক্ষা দেন। মক্ক হইতে তিনি ভারত আগমন করেন এবং যুবরাজ সলীমের ( জাহঙ্গীরের ) গৃহশিক্ষাক নিযুক্ত হন।
৩১। শায়খ আবদুল্লাহ ইবনে ছা’ দুল্লাহ সিন্ধী (মৃঃ ৯৮৪হিঃ)। তিনি আলী মোত্তাকীর শাগরিদ এবং সিন্ধর একজন বিশিষ্ট মোহাদ্দেছ ছিল্লেন।
৩২। শায়খ জামালুদ্দীন মোহাম্মদ তাহের পাট্তনী (মৃঃ ৯৮৬ হিঃ)। তিনি হিঃ উত্তর গুজরাটের পাট্তনে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রথমে ওস্তাদুজ্জামান শায়খ মাতহার ও শায়খ নাগুরীর নিকট আবশ্যক এলম হছিল করেন। অতঃপর মক্কয় যাইয়া ছয় বৎসর-কাল ইবনে হাজার হাইছমী, আবুল হাছান বকরী- বিশেষ শায়খ আলী মোত্তাকীর নিকট হাদীছের উচ্চ জ্ঞান লাভ করেন। ৯৫০ হিঃ দেশে ফিরিয়া তিনি সমাজ সংস্কার ও হাদীছ চর্চায় আত্মনিয়োগ করেন। হাদীছ তাঁহার বহু ম্যল্যবান কিতাব রহিয়াছে। হাদীছ অভিধানের বিখ্যাত কিতাব ‘মাজমাউল বেহার’,রেজালশাস্ত্রে ‘আল মুগনী’ ও ‘আছমাউর রেজাল’, মাওজুআতের ‘তাজকেরাতুল মাওজুআত’ ও কানূনে মাওজুআত’ তাঁহারাই রচিত। তিনি এ যুগের একজন ইমামুল হাদীছ ও সমাজ সংস্কারক ছিলেন।
৩৩। শায়খ আবদুল মু’তী হাজরামী (মৃঃ ৯৮৯ হিঃ)। তিনি ৯০৫ হিঃ মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন এবং কায়রোতে বিখ্যাত মোহাদ্দেছ শায়খ জাকারিয়া আনছারীর নিকট স্বীয় পিতাসহ হাদীছ শিক্ষা করেন। অতঃপর ৯৬০ হিজরীর পূর্বে গুজরাট আগমন করেন এবং বোখারী শরীফ শিক্ষা দিতে থাকেন। রেজালে বোখারী সম্পর্কে তাহার একটি অসমাপ্ত কিতাব রহিয়াছে।
৩৪। শায়খ আবদুন নবী গঙ্গুহী (মৃঃ ৯৯০ হিঃ)। তিনি স্বনামখ্যাত ছুফী আবদুল কুদ্দুছ গুঙ্গুহীর (মৃঃ ৯৪৫ হিঃ) পৌত্র ছিলেন। তিনি আরবে ইবনে হাজার হাইছমীর নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন এবং সম্রাট আকবরের শিক্ষক ও রাজ্যের ‘ছদরুছ ছদুর’ নিযুক্ত হন। তিনি ৯৮৬ হিঃ অর্থাৎ আকবরের ধর্মমত পরিবর্তনের পূর্ব পযর্ন্ত এই পদে বহাল থাকেন। তাঁহার রচনা_ ( ক ) ‘ছুনানুল হুদা ফী মোতাবায়াতিল মোস্তাফা’ ( খ ) ‘ওজায়েফুল ইয়াওমে ওয়াল লায়লাহ’।
৩৫। ছৈয়দ আবদুল্লাহ আইদরুছ তারেমী আহমদাবাদী (মৃঃ ৯৯০ হিঃ)। তিনি (দক্ষিণ আরবে) হাজরামাউতের তারেমে জন্মগ্রহণ করেন এবং ইবনে হাজার হাইছমী ও ছাখাবীর শাগরিদ ইবনুদ দীবা নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। ৯৫৮ হিঃ তিনি গুজরাটে ( বর্তমান পাকিস্তানের ) আহমাদাবাদে আসিয়া বসতি স্থাপন করেন। তিনি একজন বিখ্যেত ছুফী ও মোহাদ্দেছ ছিলেন।
৩৬। মাখদুমুল মুলক শায়খ আবদুল্লাহ আনছারী ছোলতানপুরী ( মৃঃ ৯৫০ হিঃ )। তিনি বর্তমান কপুরতালার ছোলতানপুর জন্মগ্রহণ করেন। আকবরপন্হী ওলামাদের উৎপীড়েনে তিনি মক্ক পলায়ন করেন। অতঃপর দেশে ফিরিয়া গুজরাটে বসবাস করেন।–(ক) ‘শরহে শামায়েলে’ ( খ ) ‘ইছমাতুল আম্বিয়া।
৬৭। শায়খ শেহাবুদ্দীন আব্বাছী ( মৃঃ ৯৯২ হিঃ )। তিনি ৯০৩ হিঃ মিছরে জন্মগ্রহণ করেন। এবং শায়খ জাকারিয়া আনছারীর নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। অতঃপর গুজরাটের আসিয়া বসবাস এখতেয়ার করেন। মাকদেছীর ‘ওমদাতুল হাদীছ’ ও নাবাবীর ‘আরাবাইন’ তাঁহার মুখস্থ ছিল।
৩৮। আবুছ ছাআদাত মোহাম্মদ ফকীহী ( মৃঃ ৯৯২ হিঃ )।তিনি ইবনে হাজার হাইছমী ও আবুল হাছান বকরীসহ মক্কা, হাজরামাউত ও জাবীদের প্রায় ৯০ জন শায়খের নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। অতঃপর ৯৫৭ হিজরীর পূর্বে গুজরাটে আসিয়া বসতি স্থাপন করেন।
৩৯। রাহমাতুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহা সিন্ধী ( মৃঃ ৯৯৩ হিঃ )।তিনি মক্কায় আলী মোত্তকীর নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন এবং মদীনায় হাদীছ শিক্ষা দেন। অতঃপর ৯৮২ হিঃ স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। এবং পুনরায় মক্কায় যাইয়া এন্তেকাল করেন। হিন্দূস্তান অবস্থাকালে আকবরের সমালোচক প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক মোল্লা আবদুল কাদের বাদায়উনী তাঁহার নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন।
৪০। শায়খ ওজীহুদ্দীন আলাবী গুজরাটী ( মৃঃ ৯৮৮ হিঃ )। তিনি শায়খ ইমাদুদ্দীন তারেমী ( মৃঃ ৯৪১ হিঃ ) ও শায়খ গাওছ গোয়ালিয়ারীর নিকট এলম শিক্ষা করেন এবং আহমাদাবাদে মাদ্রাছা কায়েম করিয়া ২৫ বৎসরকাল তথায় হাদীছ- তফছীর শিক্ষা দেন। হাঁদীছে তাঁহার ‘শরহে নোখবা’র এক শরাহ রহিয়াছে
৪১। শায়খ তৈয়ব সিন্ধী ( মৃঃ ৯৯৯ হিঃ )।তিনি ছৈয়দ আবদুল আওয়াল হোছাইনী ( মৃঃ ৯৬৮ হিঃ )-এর নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। এবং বোরহানপুর ও বেরারের ইলিয়াছপুরে র্দীঘ ২৫ বৎসরকা হাদীছ শিক্ষা দেন। শায়খ জামালুদ্দীন বোরহানপুরী তাঁহার নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। তিনি মিশেকাত শরীফের এক ‘তালীক ‘বা শরাহ লেখেন।
৪২। শায়খ ইব্রাহীম ইবনে দাউদ মানিকপুরী ( মৃঃ ১০০১ হিঃ )।তিনি এ যুগের একজন প্রথম শ্রেণীর মোহাদ্দেছ ছিলেন।
৪৩। শায়খ ইয়াকুব ছরফী কাস্মীরী ( মৃঃ ১০০৩ হিঃ )।তিনি প্রথমে কাস্মীর ও ছমরকন্দে মা’কুলাত ও ফেকাহ. অতঃপর মক্কায় ইবনে হাজার হাইছমীর নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। হজরত মুজাদ্দেদে আলফে ছানী ( মৃঃ ১০৩৪ হিঃ ) তাঁহার নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। হাদীছ তাঁহার রচনা- (ক) ‘শরহে বোখারী শরীফ’, (খ) রেছালায়ে আজকার’, (গ) ‘মাগাজীউন নবুওত’।
৪৪। শায়খ তাহের ইবনে ইউছুফ সিন্ধী ( মৃঃ১০০৪ হিঃ )। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা শায়খ শেহাবুদ্দীন সিদ্ধী এবং হাদীছ ছৈয়দ আবদুল আওয়াল হোছাইনীর নিকট লাভ করেন। হাদীছে তাঁহার এ সকল কিতাব রহিয়াছে—(ক) ‘তালখীছে শরহে আছমাউর রেজাল বোখারী’—কিরমানী, (খ) ‘শরহে বোখারী শরীফ’. (গ) ‘মুলতাকাতে জামউল জাওয়ামে’—ছুয়ুতী, (ঘ) ‘রিয়াজুছ ছালেহীন’।
৪৫। মোহাদ্দেছ জহরনাথ কাশ্মীরী। তিনি হাইছমী ও মোল্লা আলী তারেমীর নিকট হাদীছ শিক্ষা করেণ এবং কাশ্মীরে হাদীছ শিক্ষা দেন। তিনি একজন নও মুসলিম ছিলেন।
৪৬। মাওলানা ফরীদ বাঙ্গালী। তিনি আকবরের সমসাময়িক (৯৬৩-১০১৪ হিঃ) একজন বড় মোহাদ্দেছ ছিলেন। –তাজকেরায়ে ওলামায়ে হিন্দ।
৪৭। শায়খ আলীমুদ্দীন মন্দুরী (সিন্ধু)। তিনি ও যুগের একজন বিশিষ্ট মোহাদ্দেছ ছিলেন।
৪৮। শায়খ আহমদ ইবনে ইছমাঈল মন্দুবী। তিনি এ যুগের একজন বিশিষ্ট মোহাদ্দেছ ছিলেন।
৪৯। মাওলানা মোহাম্মদ লাগেরী। তিনি লাগেরের মুফতি ও মোহাম্মদ ছিলেন।
৫০। হাজী মোহাম্মদ কাশ্মীরী (মৃ ১০০৬হিঃ)। তিনি মক্কায় হাইছমী ও মদীনায় বিভিন্ন মোহারদ্দেছের নিকট হাদীছ শিক্ষা করেন। অতঃপর দেশে ফিরিয়া হাদীছ চর্চায় আত্ননিয়োগ করেন। ইসলামী বিভিন্ন বিষয়ে তাঁহার ৮০টির মত কিতাব রহিয়াছে। হাদীছে তাঁহার নিম্নলিখিত কিতাবসমূহ রহিয়াছে—(ক) ‘শরহে শামায়িল’, (খ) ‘শরহে ,মাশারিকুল আনওয়ার’, (গ) ‘শরহে হিছনে হাছীন’ ও (ঘ) ‘খোলাছাতুল জামে’ বা হাদীছ সংগ্রহ।
৫১। মাওলানা ওছমান ইবনে ঈসা সিদ্ধী (মৃ ১০০৮ হিঃ)। তিনি সিন্ধুতে মাওলানা ওজীহুদ্দীন আলাবী (মৃ ৯৯৪ হিঃ), কাজী মোহাম্মদ মারভী ও শায়খ হোছাইণ বাগদাদীর নিকট হাদীছ-তফছীর শিক্ষা করেন। অতঃপর বোরহানপুরে আসিয়া মোহাম্মদ শাহ ফারুকী (৯৭৪-৮৪ হিঃ মোঃ ১৫৬৬-৭৬ ইং) কর্তৃক তথাকার মাদ্রাছার অধ্যাপক ও রাজ্যের মুফতি নিযুক্ত হন। তিনি ‘গায়াতুত তাওজীহ’ নামে বোখারী শরীফের এক শরাহ লেখেন।
৫২। শায়খ মোনাওয়ার ইবনে আবদুল মজীদ লাহোরী (মৃঃ ১০১০ হিঃ)। তিনি লাহোরে শায়খ ছা’দুল্লাহ বণি-ইসরাঈলী (মৃঃ অনুঃ ১০০০ হিঃ) ও শায়খ ইছহাক কাকু (মৃঃ ৯৯৬ হিঃ)-এর নিকট হাদীছ-তফছীর শিক্ষা করেন। ৯৮৫ হিঃ মোঃ ১৫৭৭ ইং সম্রাট আকবর কর্তৃক তিনি মালবের ‘ছদর’ নিযোক্ত হন। কিন্তু আকবরের নূতন মতের বিরোধিতা করায় ৯৯৫ হিঃ মোঃ ১৫৮৭ হিঃ তিনি গোয়ালিয়ারের দুর্গে বন্দী হন। ৫ বৎসর পর আগ্রা দুর্গে নীত হন এবং কঠোর শাস্তির দরুন ১০১০ হিঃ মোঃ ১৬০২ ইং তথায় প্রাণ ত্যাগ করেন। হাদীছে তাঁহার ‘মাশারিকুল আনওয়ার’ ও ‘হিছনে হাছীন’-এর এক একটি শরাহ রহিয়াছে। তিনি গোয়ালিয়ার জেলে বসিয়া একটি তফছীরও লিখিয়াছেন।
৫৩। শায়খ ইমাদুদ্দীন মোহাম্মদ আরেফ ও আবদুন নবী শাত্তারী (মৃঃ ১০৩০ হিঃ)। তিনি আগ্রান আবদুল্লাহ ছুফীর খলীফা ছিলেন। হাদীছে তাহার কিতাবঃ (ক) ‘জরীয়াতুন নাজাত’ ‘শরহে মেশকাত’, (খ) ‘শরহে আছছালাতু মিরাজুল মু’মিনীন,’ (গ) ‘শরহে খায়রুল আছমায়ে আবদুল্লাহ ও আবদুর রহমান’, (ঘ) ‘শরহে নোখবাতুল ফকির,’ (ঙ) ‘লাওয়ামিউল আনওয়ার (ছৈয়দগণের ফজীলত)।
৫৩। শায়খ ইছহাক ইবনে ওমর হিন্দী (মৃঃ ১০৩২ হিঃ)। তিনি আবদুল্লাহ ছোলতানপুরীর (মৃঃ ৯৯০ হিঃ) শাগরিদ ছিলেন। হাদীছে তাহার শামায়েলে তিরমিজীর এক শরাহ রহিয়াছে।
৫৫। ছৈয়দ আবদুল কাদের আইদরুছী আহমদাবাদী (মৃঃ ১০৩৭ হিঃ মোঃ ১৬২৭ ইং)। তিনি তাহার পিতা ছৈয়দ আবদুল্লাহ আইদরুছের নিকট সকল এলম শিক্ষা করেন। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে বহু কিতাব লিখিয়াছেন। ‘আননুরুছ ছাফের ফী আয়ানিল কারনিল আশের’ তাহার এক বিখ্যাত কিতাব। এছাড়া হাদীছে তাহার নিম্নলিখিত কিতাবসমূহ রহিয়াছে— (ক) ‘আল কামহুল বারী-বে-খতমে ছহীহিল বোখারী’, (খ) ‘ইকদুল লাআল ফী ফাজায়িলিল আল’, (গ) ‘রেছালাহ ফি মানাকিবিল বোখারী,’ (ঘ) ‘আল কাওলুল জামে’ ফী বয়ানিল এলমিন নাফে’। —-আখবার, ইণ্ডিয়াস, তারীখুর হাদীছ প্রভৃতি।