দ্বিতীয় অধ্যায়
শরীয়তে ছুন্নাহর স্থান
রছূলের দায়িত্বঃ
আল্লাহ তা’আলা তাঁহার কিতাবে দুইটি কথা স্পষ্টভাবে বলিয়া দিয়াছেন। তাঁহার রছুল-এর দায়িত্ব এবং রছুল-এর উম্মতীদের কর্তব্য। রছূল-এর দায়িত্ব সম্পর্কে আল্লাহ বলিয়াছেন
[আরবী……………………….]
১. ‘আল্লাহ মু’মিনদের প্রতি বড় মেহেরবানী করিয়াছেন যে, তিনি তাহাদের প্রতি তাহাদের মধ্য হইতে এমন একজন রছুল পাঠাইয়াছেন যিনি তাহাদের নিকট-(১) আল্লাহর আয়াতসমূহ আবৃত্তি (তেলাওয়াত) করেন, (২) (শিরক ও কুফরীর কলুষ হইতে) তাহাদিগকে পবিত্র করেন এবং (৩) তাহাদেরকে (ক) আল্লাহর কিতাব এবং (খ) হিকমত তা’লীম দিয়া থাকেন।‘ (ছুরা আলে ইমরান-১৬৪)
এই মর্মে ছুরা-বাকারায় দুইটি (১২৯,১৫১) এবং ছুরা জুমাআয় একটি আয়াত রহিয়াছে অপর জায়গায় বলিয়াছেনঃ
[আরবী……………………….]
২. ‘আমি আপনার প্রতি জিকর (কোরআন) নাজিল করিয়াছি যাহাতে আপনি-তাহাদের প্রতি যাহা নাজিল করা হইয়াছে, তাহাদিগকে তাহা খোলাসা করিয়া বুঝিইয়া দেন।– নহল-৪৪ কলুষ হইতে মানুষকে পবিত্র করা, এবং (৩) কিতাব ও হিকমত মানুষকে হাতে-কলমে তালীম রছুলেরে দায়িত্ব (কবলমাত্র কিতাব পৌছাইয়া দেওয়া (আবৃত্তি করা), (২) শিরক ও কুফরীর দেওয়া বা আল্লাহর কিতাব তাহাদিগকে খোলাসা করিয়া বুঝাইয়া দেওয়া-এই সকল বিষয় হইল যে সকল দায়িত্ব (কেবলমাত্র কিতাব পৌছাইয়া দেওয়াই নহে)।প্রথমে দফা ব্যতীত তাঁহার অপর
উম্মতীদের কর্তব্যঃ
উম্মতীদের কর্তব্য হইল রছুলের ছুন্নাহর অনুসরণ করা। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
১. [আরবী……………………….]
‘তোমরা আল্লাহর ‘এতাআত’ (আনুগত্য) করিবে এবং (আল্লাহর) রছূলরে ‘এতাআত’ করিবে।‘- ছূরা নেছা-৫৯ ছূরা মায়েদাহ-৯২, ছূরা নূর-৫৪ ছূরা-মোহাম্মদ-৩৩ এবং ছূরা তাগাবুনের-১২ আয়াতও ইহার অনুরূপ।
এ সকল আয়াতে রছূলের ‘এতাআত’ অর্থ যদি আল্লাহর ‘এতাআত’ অর্থাৎ তাহার কিতাবের অনুসরণই হয় তা হইলে ‘এতাআতের’ জন্য পৃথক ‘(আরবী)——‘(এতআত) শব্দ ব্যবহারের কোন প্রয়োজনীয়তাই থাকে না। তখন শুধু ‘(আরবী————-) ‘ ‘আল্লাহ ও তাঁহার রছূলের ‘এতাআত’ কর’ বলাই যথেষ্ট হয়, যে ভাবে ছুরা-আলে ইমরানের একটি আয়াতে বলা হইয়াছে। সুতরাং এ সকল আয়াতে রছুলের ‘এতআত’ অর্থে রছুলের পৃথক ‘এতআত’অর্থাৎ তাঁহার ছন্নাহর অনুসরণকেই বঝিতে হইবে। ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম বলেনঃ ‘রছূলের ‘এতআত ‘কে যদি আল্লাহ তা’আলার এতআত বা তাঁহার কোনআনের আহামের এতাআতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করা হয় তা হইলে কোরআনে যে রছুলের বিশেষ এতআতের কথা বলা হইয়াছে তাহার কোন সার্থকতাই থাকে না।–এলাম
২। অন্য আয়াতে বলা হইয়াছেঃ
‘(আরবী————-)
‘হে মু’মিনগণ। তোমরা আল্লাহর ‘এতাআত’ করিবে এবং আল্লাহর রছুল ও তোমাদের মধ্যকার ‘উলিল-আমরা’দের (কর্মকতাদের) ‘এতাআত’ করিবে। যদি কোন বিষয়ে তোমাদের (ও তোমাদের ‘উলিল-আমরা’দের) মধ্যে মতবিরোধ দেখা তা হইলে উহা আল্লাহর প্রতি ও (তাহার) রছুলেন দিকে হাওয়ালা করিবে।–ছূরা নেছা-৫৯
উক্ত আয়াতে সাধারণেন ও ‘উলিল-আমরের’ মধ্যে বিরোধকালে উলিল-আমরের হুকুমকে চুড়ান্ত বলিয়া গ্রহণ করা হয় নাই’ বরং তখন আল্লাহ ও তাঁহার রছুলের হুকুমের প্রতি রুজু করার নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে। ইহাতে বঝা গেল যে, উলিল-আমরের হুকুমের স্বতন্ত্র বা স্বাধীন কোন মর্যাদা নাই; উলিল-আমরের হুকুম আল্লাহ ও তাঁহার হুকুমের প্রতি রুজু করার নির্দেশ এবং তাহার জন্য পৃথকভাবে (আরবী———) বা ‘এতাআত’ শব্দ ব্যবহারের কোন কারণই ছিল না।
৩। অপর এক আয়াতে বলা হইয়াছেঃ
‘(আরবী————-)
‘রছূল তোমাদের যাহা দেন তাহা গ্রহণ করিবে এবং যাহা হইতে বিরাত থাকিতে বলেন তাহা হইতে বিরাত থাকিবে।‘ছূরা-হাশর-৭
এ আয়াত হইতে রছূলুল্লাহর ছাহাবীগণ ইহাই বুঝিয়াছিলেন যে, আল্লাহর রছূলেন আদেশ নিষেধ আল্লাহরই আদেশ-নিষেধ। একদা উম্মে ইয়াকুব নাম্নী এক স্ত্রীলোক আসিয়া হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাছউদকে (রাঃ) বলিলেনঃ শুনিলাম, আপনি না কি অমুক কাজ যাহারা করে তাহাদের প্রতি লা’নত করিয়া থাকেন। তিনি উত্তর করিলেনঃ ‘হাঁ, কোরআন যাহা রহিয়াছেনঃ ‘আমি তাহা করিব না কেন? কোরআনের নাম শুনিয়া উম্মে উয়াকুব সবিস্ময়ে বলিয়া উঠিলেনঃ ‘আঃ, কোরআনে রহিয়াছে? আমি তো সমস্ত কোরআন পড়িয়াছি কৈ, আমি তো কোথাও তাহা হইলে নিশ্চয়ই ইহা দেখিতে; তুমি কি এ আয়াত দেখ নাইঃ ‘রছুল (ছঃ) তোমাদের যাহা দেন তাহা গ্রহণ করিবে এবং যাহা হইতে বিরত থাকিতে বলেন তাহা হইতে বিরত থাকিবে। উম্মে ইয়াকুব বলিলেনঃ ‘হাঁ, ইহা আমি দেখিয়াছি। তখন হজরত আবদুল্লাহ (রাঃ) বলিলেনঃ ‘রছুলুল্লাহ এ কাজ হইতে বিরত থাকিতে বলিয়াছেন এবং যাহারা উহা করে তাহাদের প্রতি লা’নত করিয়াছেন। সুতারাং আল্লাহও ইহা হইতে বিরত থাকিতে বলিয়াছেন এবং ইহা যাহারা করে তাহাদের প্রতি লা’নত করিয়াছেন।–বোখারী তাফছীরে ছুরা-হাশর
৪। অপর এক আয়াতে আছেঃ
(আরবী——————————————)
‘যখন আল্লাহ ও তাঁহার রছূল কোন বিষয় ফয়ছালা করিয়া দেন, তখন সেই ব্যাপারে কোন মু’মিন নর নারীর নিজস্ব কোন এখতিয়ার থাকে না। আর যে ব্যাক্তি আল্লাহ ও তাঁহার রছুলের নাফরমানী করে (ফয়ছালার ব্যাতিক্রম করে) সে প্রকাশ্য গোমরাহীতে পতিত হয়। আহযাবা-৩৬ এ আয়াতটি নাজিল হওয়ার কারণ সম্পর্কে মুফাচ্ছিরগণ বলেনঃ ‘রছূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম জুলাইবীর নামীয় এক ছাহাবীর জন্য এক আনছারী মেয়ের বিবাহের হয় এবং বলা হয় যে রছূলুল্লাহ (ছঃ)-এর ফয়ছলার পর এ বিষয় এই যে, বিবাহের প্রস্তাব বা সিদ্ধান্ত করিলেন আল্লাহর রছূল (স্বয় আল্লাহ নহে), অথচ আল্লাহ ইহাকে নিজের সিদ্ধান্ত বলিয়াই ঘোষণা করিতেছেন এবং বলিতেছেন যে, ‘যখন আল্লাহ ও তাঁহার রছূল কোন সিদ্ধান্ত করেন। ইহাতে বুঝিগেল যে, আল্লাহর রছুলের সিদ্ধান্ত বস্ততঃ আল্লাহরই সিদ্ধান্ত। সঙ্গে একথাও যদি রছুল ছাল্লাল্লহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম কোন সিদ্ধান্ত করিয়া ফেলেন উম্মতীগণ তাহা মানিতে বাধ্য।
৫। আর এক আয়াতে আছেঃ
(আরবী————-)
‘আপনার রব্বের কছম! তাহারা কখনো মু’মিন হইতে পারিবে না যে পযর্ন্ত না তাহারা তাহদের বিরোধীয় বিষয়ে আপনাকে সালিস মানে, লয়।‘ ছুরা নেছ-৬৫
এ আয়াতে নাজিল হওয়ার কারণ সম্বদ্ধ বোখারী শরীফে যে ঘটনাটির উল্লেখ রহিয়াছে তাহা এখানে প্রণিধানযোগ্য। তাহাতে রাহয়াছেঃ রছূল্লাহ (ছঃ)- এর ফুফাতু ভাই হজরত জুবায়ের ইবনে আওয়াম এবং জনৈক মদীনাবাসীর মধ্যে জামিনে পানি সেচ লইয়া এক মতবিরোদ দেখাদেয় এবং মীমাংসার জন্য উহা হুজুরের নিকট পেশ কা হয়। হুজুর ছাল্লাল্লাহ আলাইহে ওয়াছাল্লাম জুবায়েরকে বলিলেনঃ ‘তোমার জমিন সেচ করিয়া পরে উহা তোমার প্রতিবেশীর জমিনের দিকে ছারিয়া দিও। ইহা শুনিয়া প্রতিবেশীটি বলিয়া উঠিলঃ ‘আপনার ফুফাতু ভাই তো? ইহা শুনিয়া রাগে হুজুরের চেহারা লাল হইয়া গেল এবং হুজুর বলিলেনঃ ‘জুবায়ের, আইল ভাসিয়া যাওয়া পযর্ন্ত তুমি পান বন্ধ রাখিবে। (সে কি মনে করিয়াছে যে, আমি পক্ষাপাতিত্ব করিয়াছে?) হজরত জুবায়ের (রাঃ) বলেনঃ ‘আমি মনে করি, আয়াতটি এ ঘটনা উপলক্ষেই নাজিল হইয়াছে।‘ বোখারী তাফছীরে ছূরা-নেছা
এখানে দেখা যাইতেছে যে, ফয়ছালা সম্পর্কে আপত্তি করায় আল্লাহ তাহার ঈমানকেই বাতিল করিয়া দিতেছেন অথচ ফয়ছালা ছিল রাছুলুল্লাহর, আল্লাহর নহে।
৬। অপর এক আয়াতে রহিয়াছেঃ
(আরবী****************************************************************)
‘যাহারা তাহার (রছুলের) হুকুমের বিরোধিতা করে তাহাদের সতর্ক হওয়া উচিত যে, তাহাদের প্রতি যেন কোনো কঠিন বিপদ অথবা কঠোর আজাব আসিয়া না পড়ি।‘ ছূরা-নুর-৬৩
এসকল আয়াত হইতে ইহাই প্রতিপন্ন হইতেছে যে, রছূলুল্লাহ আলাইহে ওয়াছাল্লাম দ্বীন সম্পর্কে যাহা বলিয়াছেন-চাই উহা কোরআনরূপেই হউক, চাই ছুন্নাহরূপে-সবই ওহী, সবই আল্লাহর কথা। সুতরাং রছুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম-এর উম্মতীদের পক্ষে তাহার ছুন্নাহর অনুসরণ করা ফরজ, যেভাবে আল্লাহরই কিতাবের অনুসরণ করা ফরজ, আল্লাহর রছুলের আনুগত্য (এতাআত) প্রকৃতপক্ষে আল্লাহরই আনুগত্য। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবী****************************************************)
‘যে ব্যক্তি আল্লাহর রছুলের এতাআত করিয়াছে সে আল্লাহরই এতাআত করিয়াছে।‘
ইমাম শাফেয়ী (রাঃ) বলেনঃ ওলামাদের সর্ববাদিসম্মত মতে ছুন্নাহ তিন প্রকার।—-নেছা-৮০
(১) যাহাতে-কোরআনে যাহা রহিয়াছে হুবহু তাহাই রহিয়াছে।
(২) যাহাতে-কোরআনে যাহা রহিয়াছে তাহার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা হইয়াছে।
(৩) যাহাতে-কোরআনে যে বিষয়ে নীরব সে বিষয়ে নূতন কথা ১.(আপাতদৃষ্টিতে নূতন বলিয়া মনে হইলেও আসলে উহা নূতন নহে। অবশ্য কোন কোনটির সম্পর্কে এত সূক্ষ্ণ যে, সকলের পক্ষে উহা বুঝা সহজ নহে। তবে রছূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লামের পক্ষে তাহাও সহজ ছিল।‘)
বলা হইয়াছ।
অতঃপর তিনি বলেনঃ ‘ছুন্নাহ যে কোন প্রকারেরই হোক না কেন আল্লাহ তা’আলা সুস্পষ্ট-ভাবে বলিয়া দিয়াছেন যে, উহাতে আমাদিগের তাহার রছুলের ‘এতাআত’ করিতে হইবে। রছুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম-এর ছুন্নাহ জানিয়া উহার বরখেলাফ করার অধিকার আল্লাহ কাহাকেও দেন নাই।‘২(আরবি টিকা**********************************************************)
ইমাম ইবনুল কাইয়্যেমও ছূন্নাহকে উপরি-উক্ত তির প্রকারে ভাগ করিয়া বলেনঃ ‘কোন প্রকারের ছুন্নাহই কিতাবুল্লাহর বিরোধী নহে। যেখানে ছুন্নাহয় নুতন কথা রহিয়াছে সেখানে উহা রছুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম-এর পক্ষে হইতে নূতন বিধান বলিয়া মনে করিতে হইবে। এ ব্যাপারেও আমাদের অবশ্যই তাঁহার ‘এতাআত’ করিতে হইবে, অবাধ্যতা করা চলিবে না। ইহা দ্ধারা কিতাবুল্লাহর উপর ছূন্নাহর মর্যাদা দান করা হইতেছে না, বস্তুতঃ ইহা দ্ধারা আল্লাহ তা’আলা যে রছূলল্লাহ ছাল্লাহু আলাইলহে ওয়াছল্লাম-এর ‘এতআত’ করার নির্দেশ দিয়াছেন তাহারই বাস্তব-রুপে দান করা হইতেছে। এ ব্যাপারে যদি ‘তাহার ‘এতআত করা না হয়, তাহা হইলে তাঁহার ‘এতাআতের’ কোন অর্থই থাকে না।
[আরবী টীকা—————————————]
অতঃপর তিনি বলেনঃ যিনি (অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা) একথা লিয়াছেনঃ
(আরবী—————–)
‘রছূল তোমাদের যাহা দেন তাহা গ্রহণ করিবে এবং যাহা হইতে বিরত থাকিতে বলেন তাহা হইতে বিরত থাকিবে।‘- তিনি তাঁহার রছূলের মারফত আমাদের উপর তাঁহার কিতাকের অতিরিক্ত এ সকল বিষয়কে শরীয়তের বিধানরূপে নির্ধারণ করিয়া দিয়াছেন।–
[আরবী টীকা———————–]
আর একটু অগ্রসর হইয়া তিনি বলেনঃ ইহার বিরুদ্ধাচরণ করা উহারই (অর্থাৎ, কিতাবুল্লাহরই) বিরুদ্ধাচরণ করা।‘ এক কথায় আল্লাহর কিতাব যেরূপ শরীয়তের অপর একটি উৎস,- রছূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম-এর ছূন্নাহও সেরূপ শরীয়তের একটি উৎস- যদিও উভয়ের মর্যাদা সমান নহে। ইহা হইলে শরীয়তে ছুন্নাহর স্থান।
ছুন্নাহ অনুসরণের জন্য রছূলুল্লাহ (ছঃ)-এর তাকীদঃ
আল্লাহ তা’আলা যেরূপ রছূল-এর ছুন্নাহ অনুসরণের জন্য তাঁহার বান্দাদের তাকীদ করিয়াছেন, রছূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম নিজেও তাঁহার উম্মতীদের তাঁহার ছু্ন্না অনুসরণের জন্য তাকীদ করিয়াছেনঃ
১। বিদায় হজ্জের খোঃবায় তিনি বলেনঃ
(আরবী——————-)
আমি তোমাদের মধ্যে দুইটি জিনিস রাখিয়া যাইতেছিঃ আল্লাহর কিতাব এবং তাঁহার রছূলের ছুন্নাহ। যে পযর্ন্ত তোমরা এই দুইটিকে ধরিয়া থাকিবে সে পযর্ন্ত গোমরাহ হইবে না।‘
মোআত্তা, মেশকাত
২।অন্য হাদীছে রহিয়াছে, তিনি বলিয়াছেনঃ
(আরবী——————-)
‘আমি তোমাদের মধ্যে দুইটি জিনিস রাখিয়া যাইতেছিঃ ইহা অবলম্বন করার পর তোমরা কখনো গোমরাহ হইবে না। আল্লাহর কিতাব এবং আমরা ছুন্নাহ। এই দুইটি এক অপর হইতে কখনও পৃথক হইবে না, যে পযর্ন্ত না কেয়ামতে হাওজের পাড়ে ইহার আমার সহিত মিলিত হয়।‘- মোস্তদরাকে হাকেম
৩। আর এক হাদীছে রহিয়াছেঃ
(আরবী——————-)
‘আমার পর তোমাদের মধ্যে যাহারা বাচায়া থাকিবে তাহার বহু এখতেলাফ দেখিবে, তখন তোমরা আমার ছুন্নাহ এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের ছুন্নাহকে মজবুত করিয়া আঁকড়াইয়া ধরিয়া থাকিবে।‘- আহমদ, আবু দাউদ, তিরমিজী, ইবেন মাজাহ
৪। অন্য এক হাদীছে হরিয়াছেঃ
(আরবী——————-)
যে ব্যক্তি আমার ছুন্নাহ হইতে বিমুখ হইবে সে আমার মিল্লাতের মধ্যে নহে।
বোখারী ও মোছলেম
৫। তিনি আরও বলিয়াছেনঃ
(আরবী——————-)
‘যে আমার ছুন্নাহকে ভালবাসিয়াছে সে আমাকে ভালবাসিয়াছে।–তিরমিজী
৬। অপর হাদীছে রহিয়াছে, হুজুর ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম বলিয়াছোনঃ
(আরবী——————-)
যে ব্যাক্তি আমার ছুন্নতসমূহের মধ্যে এমন কোন ছুন্নতকে জেন্দা করিয়াছেন, যাহা আমার পর পরিত্যক্ত হইয়াছে, তাহার জন্য সে সকল লোকের পরিমাণ ছওয়াব রহিয়াছে, যাহারা ইহার সহিত আমল করিবে। অথচ তাহাদের ছওয়াবেরও কোন অংশ হ্রাস করা হইবে না।
তিরমিজী ও ইবনে মাজাহ
ছুন্নাহ অস্বীকার সম্পর্কে রছুলুল্লাহর ভবিষ্যদ্বণীঃ
১। রছুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম বলিয়াছেনঃ
(আরবী——————-)
‘(মু’মিনগণ) জানিয়া রাখ, আমাবে কোরআন দেওয়া হইয়াছেন এবং উহার সহিত উহার অনুরূপ (ছুন্নাহ)-ও দেওয়া হইয়াছে।আর ইহাও জানিয়া রাখ যে, এমন এক সময় আসিয়া পৌছিবে যখন কোন উদরপুর্ণ বড় লোক তাহার গদীতে ঠেস দিয়া বসিয়া বলিয়াঃ তোমরা শুধু এই কোরআনকেই গ্রহণ করিবে। উহাতে যাহা হালাল পাইবে তাহাকে হালাল জানিবে এবং উহাতে যাহা হারাম পাইবে তাহাকে হারাম মনে করিবে। অথচ আল্লাহর রছুল যাহা হারাম করিয়াছেন (অর্থাঃ, আমি যাহা হারাম বলিয়াছি) তাহা আল্লাহ যাহা হারাম করিয়াছেন তাহার অনুরূপ। অতঃপর রছুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম উদাহরণস্বরূপ গৃহপালিত গাধা, শিকার- দাওয়ালা পশু ও সন্ধতে আবদ্ধ অ-মুসলমান মুযাহিদদের হারানো বস্ত মুসলমানদের পক্ষে হালাল নহে এবং মুছাফিরকে আহার করানো আবশ্যক বলিয়া উল্লেখ বরেন’- অথচ এ সকল কথা কোরআনে নাই।– আবু দাউদ, দারেমী ও ইবনে মাজাহ, মিশকাত
২। অন্য হাদীছে রহিয়াছে, রছূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম বলেনঃ
(আরবী——————-)
‘আমি যেন তোমাদের কাহাকেও এরূপ না দেখিঃ সে তাহার গদীতে ঠেস দিয়া বসিয়া থাকিবে এবং তাহার নিকট আমার কোন পৌছিবে- যাহাতে আমি কোন বিষয় আদেশ করিয়াছি অথবা নিষধ করিয়াছি- আর সে বলিবেঃ ‘আমি এসব কিছু জানি না, আল্লাহর কিতাবে যাহা পাইবে তাহারই অনুসরণ করিব।
(আহমদ, আবু দাউদ, তিরমিজী, ইবনে মাজাহ ও বায়হাকী-মেশকাত)
ছুন্নাহ অস্বীকার করার রহম্যঃ
যে কোন ভাষায় একটি শব্দের বিভিন্ন অর্থ হইতে পারে; একটা বাক্যও একাধিক ভাব বুঝাইতে পারে। কোন বক্তা বা লেখক তাঁহার বক্তৃতা বা লেখায় (উদ্দেশ্যমূক প্রয়োগ ব্যতীত) কখনো উহা দ্ব্যর্থরূপে ব্যবহার করেন না। শব্দ বা ব্যক্য প্রয়োগকালে তাঁহার নিকট একটি মাত্র অর্থ বা ভাবই সুনির্দিষ্ট থাকে। বক্তার মখভংগি বা পারিপার্শ্বিকতা দ্বারা শ্রোতা সহজেই উহা উপলব্ধি করিতে করিতে পারে।এরূপে লেখকের সহিত ব্যক্তিগতভাবে বা তাঁহার মতবাদ ও লেখকের উদ্দেশ্য বুঝিতে পারিবে। বিশেষ করিয়া যাহাকে উদ্দেশ করায়া কথা বলা হইয়াছে বা লেখা সে। পক্ষান্তরে এ সকল দিক দিয়া বক্তা বা লেখকদের সহিত যার যত অধিক ব্যবধান থাকিবে তাহার পক্ষেন্তরে তাঁহাদের উদ্দেশ্য বুঝা ততই কঠিন হইবে। তাঁহার নজদিক তাহাদের বক্তৃতা বা লেখা অনেক জায়গায় দ্ব্যর্থবোধক হইয়া দাড়াইবে।
এ সত্যকে সম্মুখি রাখিয়া বিচার করিলে বলিতে হইবে যে, আল্লাহর কালামের অর্থ বা উদ্দেশ্য আল্লাহর রছুলই অধিক বুঝিয়াছিলেন। কেননা, তাহাকে উদ্দেশ্য করিয়াই উহা বলা হইয়াছে। (অতঃপর তাহার ছাহাবীগণই উহা অধিক বুঝিয়াছিলেন। কারণ তাহারা তাহার হাব-ভাব লক্ষ্য করিয়াছিলেন।) অতঃপর তিনি তাহার কথা, কার্য ও মৌন-সম্মত তথা আপন জীবন দ্বারা উহার ব্যাখ্যা করিয়াছেন। আর ইহারই নাম ছুন্নাহ। সুতরাং ছূন্নাহ হইল কোরআনের প্রকৃত অর্থ-নির্দেশক বা উহার বাস্তব ব্যাখ্যা। এমতাবস্থায় ছূন্নাহ অস্বীকার করার অর্থই হইল শরীয়তের বন্ধন হইতে মুক্তিলাভ করা। যাহারা ছূন্নাহ অস্বীকার করিবে তাহাদের পক্ষে কোরআনের যথেচ্ছা অর্থ করা চলিবে। তাহাদের উচ্ছৃংখল জীবন যাপনের পক্ষে সুযোগ বাহির হইয়া আসিবে। ইহাই হইল ছুন্নাহ অস্বীকার করার আসল রহস্য।
ছুন্নাহর আনুগত্য উম্মতীগণ
ছাহাবীগণের যুগ হইতে এ যোগ পর্যন্ত দুনিয়ার সমস্ত মুসলমানই এ বিশ্বাস পোষণ করিয়া থাকে যে, আল্লাহর কিতাবের এতাআত বা হুকুম পালন করা যেমন ফরজ, রছুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম-এর ছুন্নাহর হুকুম পালন করাও তাহাদের পক্ষে তেমন ফরজ। আল্লাহর কিতাব যেরূপ ইসলামী শরীয়াতের একটি উৎস, রছুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম-এর ছূন্নাহও সেরূপ উহার অপর একটি উৎস। কিতাবুল্লাহর পরেই ছুন্নাহর স্থান। আর কিতাব ও ছূন্নাহ উভয় মিলিয়াই রচনা করিয়াছে ইসলামী শরীয়ত। ইমামগণ তাহাদের মাজহাবের বুনিয়াদও রাখিয়াছেন এ দুই-এর উপর।
ছাহাবীগণঃ
ছাহাবীগণের মধ্যে সকলেই ছুন্নাহকে ইসলামী শরীয়াতের একটি উৎস বলিয়া মনে করিতেন। তাহাদের মধ্যে এমন কোন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা কাহারো পক্ষে সম্ভবপর হইবে না। যিনি ছূন্নাহ সম্বন্ধে ইহার বিপরীত মত পোষণ করিতেন। তাই তাহাদের সম্মুখে যখনই কোন সমস্যা উপস্থিত হইত তখনই তাহারা প্রথমে উহার সমাধান আল্লাহর কিতাবে অতঃপর রছূলুল্লাহ (ছঃ)-এর ছূন্নাহয় তালাশ করিতেন। খোলাফায়ে রাশেদীনেরও এ নিয়ম ছিল। তাহারা কখনো কোন বিষয় ইছতেহাদ করেন নাই যে পর্যন্ত না উহা ছূন্নায়হ অনুসন্ধান করিয়াছেন।
মাইমুন ইবনে মহরান বলেনঃ ‘হজরত আবু বকর ছিদ্দীকের (রাঃ) নিকট যখন কোন সমস্যা উপস্থিত হইত, তখন তিনি উহার সমাধান প্রথমে আল্লাহর কিতাবে তালাশ করিতেন। উহাতে না পাওয়া গেলে তিনি উহা রছূলের ছুন্নাহয় তালাশ করিতেন। তাহার জানা ছূন্নাহয়ও যদি উহা পাওয়া না যাইত তখন তিনি অপর ছাহাবীদের জিজ্ঞাসা করিতেন-এ ব্যাপারে রছূলুল্লাহর (ছঃ) কোন ছুন্নাহ রহিয়াছে কি না? দারেমী, হজ্জাত-১৪৯ পৃঃ। হজরত ওমর, হজরত ওছমান ও হজরত আলী (রাঃ) ও এ নিয়মেরই অনুসরণ করিয়াছেন। নীচে ইহার কতিপয় উদাহরণ দেওয়া গেল।
প্রথম খলীফা হজরত আবু বকর (রাঃ)ঃ
(১) রছুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম-এর এন্তেকালের পর যখন তাহার পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে হজরত ফাতেমা (রাঃ), হজরত আব্বাছ (রাঃ) ও উম্মাহাতুল মু’মেনীনগণ স্ব স্ব মীরাছের দাবী জানাইলেন তখন তিনি তাহাদের সকলকে এই বলিয়া বারণ করেণ যে, রছুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম বলিয়াছেনঃ
(আরবী**********************************************************)
‘আমরা নবীগণ কাহারো মীরাছ লাভ করি না এবং অপর কেহও আমাদের মীরাছ লাভ করে না। আমরা যাহা রাখিয়া যাই তাহা জনসাধারণেরই।‘ বোখারী ও মোসলেম, মেশকাত
(২) রছুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লামকে কোথায় দাফন করা হইবে এ লইয়া যখন ছাহাবীগণ এখতেলাফ করিতে থাকেন, তখন হজরত আবু বকর (রাঃ) এ বলিয়া তাহাদের শান্ত করিয়া দেন যে, রছুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম বলিয়াছেনঃ
(আরবী**********************************************************)
‘নবীগণ যেখানে সমাধীস্থ হইতে ভালবাসেন সেখানেই আল্লাহ তা’আলা তাহাদের ওফাত করেন।‘ তিরমিজী ও মোয়াত্তা
(৩) রছূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম-এর ওফতের পর যখন কোন কোন আরব গোত্র জাকাত প্রদান করিতে অস্বীকার করে এবং খলীফা হজরত আবু বকর (রাঃ) তাহাদের বিরুদ্ধে অভিযান প্রেরণের সিদ্ধান্ত করেন, তখন হজরত ওমর (রাঃ) তাহাকে এ বলিয়া বারণ করিতে চাহেন যে, রছুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম বলিয়াছেনঃ ‘আমাকে মানুষের সহিত লড়িতে আদেশ দেওয়া হইয়াছে যে পর্যন্ত না তাহারা কলেমা পড়ে, যখন তাহারা কলেমা পড়িবে তখন আইনসংগত কারণ ব্যতীত তাহাদের জান-মালের উপর হস্তক্ষেপ করার অধিকার আমাদের নাই।‘ মেশকাত
এ সময় খলীফা হজরত আবু বকর (রাঃ) হজরত ওমর (রাঃ) কে এ বলিয়া উত্তর দান করিলেন না যে, আপনি কোরআন পেশ না করিয়া হাদীছ পেশ করিতেছেন কেন, হাদীছ হইতে কি শরীয়ত গ্রহণ করা যাইতে পারে? বরং তিনি (আবু বকর) অপর দলিল দ্বারা তাহাকে ব্যাপার বুঝাইয়া দিলেন।
(৪) রছুলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম এর এন্তেকালের পর যখন আনছার ও মুহাজিরগণের মধ্যে কাহাদের মধ্য হইতে খলীফা নির্বাচীত হইবেন এই নিয়া মতবিরোধ দেখা দিল, তখন হজরত আবু বকর (রাঃ) বলিলেনঃ ‘রছূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম বলিয়াছেনঃ ‘(প্রাথমিক) ইমাম বা খলিফাগণ কোরাইশদের মধ্যে হইতেই হইবে।‘ ইহাতে সকলে শান্ত হইয়া গেলেন।
(৫) হজরত ছিদ্দীকের নিকট দাদী তাহার নাতীর মীরাছের অংশ পাইবে কি না জিজ্ঞাসা করা হইলে তিনি এ ব্যাপারে কোন হাদীছ আছে কি না ছাহাবীদের জিজ্ঞাসা করিলেন। ছাহাবী হজরত মুগীরা ইবনে শো’বা হাদীছ পেশ করিলেন এবং মোহাম্মদ ইবনে মাছলামা (রাঃ) উহার যথার্থতার সাক্ষ্য দান করিলেন, অতঃপর তিনি দাদীকে ষষ্ঠাংশ দেওয়ার হুকুম দিলেন।
খলীফা হজরত ওমর (রাঃ)ঃ
(১) হজরত ওমর (রাঃ) বলিয়াছেনঃ ‘ভবিষ্যতে এমন একদল লোক সৃষ্টি হইবে যাহারা কোরআনের দ্ব্যর্থ বা সন্দেহযুক্ত বর্ণনা লইয়া তোমাদের সহিত বিতর্কে লিপ্ত হইবে। তোমরা ছুন্নাহ দ্বারা তাহাদের উত্তর দিও। কেননা, ছুন্নাহ-অভিজ্ঞ ব্যক্তিগণই কোরআনের অধিক মর্মাভিজ্ঞ হইয়া থাকেন।‘ (অর্থাৎ, ছুন্নাহয়ই কোরআনের সঠিক মর্ম বিবৃত হইয়াছে।)
মীজানে শা’রানীর ভূমিকা ১৩ পৃঃ
(২) একদা খলীফা ওমর (রাঃ) সাধারণ্যে ঘোষণা করিলেনঃ ‘আমি আমার কর্মচারীবৃন্দকে তোমাদের নিকট এজন্য পাঠাই নাই যে, তাহারা তোমাদের মারিয়া চর্ম খসাইয়া লইবে অথবা তোমাদের বিষয়-সম্পদ ছিনাইয়া লইবে। আমি তাহাদের এজন্য পাঠাইয়াছি যে, তাহারা তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন এবং তোমাদের নবীর ছুন্নাহ শিক্ষা দিবেন।‘-এ’লাম-১-১১৭ পৃঃ
(৩) হজরত ওমর (রাঃ) কাজী শুরাইহের প্রতি এক নিদের্শনামায় বলেন, ‘যদি তোমার নিকট এমন কোন ঘটনা উপস্তিত হয় যাহার সমাধান আল্লাহর কিতাবে রহিয়াছে, তা হইলে তুমি ঐরূপেই ফয়ছালা করিবে এবং কাহারো মতের পরওয়া করিবে না। আর এইরূপ ঘটনা যদি উপস্থিত হয় যাহার সমাধান আল্লাহর কিতাবে নাই তা হইলে রছুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম-এর ছুন্নাহয় তালাশ করিবে এবং তদনুযায়ী ফয়ছালা করিবে।‘
দারেমী, হুজ্জাত ১৪৯ পৃঃ
(৪) একবার তিনি খোৎবা দানকালে বলিলেনঃ ‘লোকসকল! তোমাদের জন্য ছুন্নত নির্দিষ্ট এবং ফরজ নির্ধারিত করিয়া দেওয়া হইয়াছে। অপিচ তোমাদেরকে দ্বীনের সরল-সোজা পথ প্রদর্শন করা হইয়াছে-যদি না তোমরা ইচ্ছা করিয়া লোকদেরসহ ডানে-বামে সরিয়া পড়।‘ অতঃপর তিনি বলিলেনঃ ‘সাবধান, (কোরআনে না থাকিলেও) ব্যভিচারীকে পাথর বর্ষাইয়া মারার হুকুম অস্বীকার করিয়া আল্লাহর অসন্তোষভাজন হইও না। কেননা, আল্লাহর রছুল ব্যভিচারীকে পাথর বর্ষাইয়া মারিয়াছিলেন, তাই আমরা ও ইহা করিয়া থাকি।‘ ই’তেছাম-১-৮৯ পৃঃ
(৫) তিনি আরও বলিয়াছেনঃ ‘যাহারা দ্বীনের ব্যাপারে নিজেদের রায় দ্বারা মন গড়া কথা বলিবে তাহাদের হইতে সতর্ক থাকিবে। তাহারা হাদীছের শত্রু। হাদীছ হেফজ করা (রক্ষা করা) তাহাদের পক্ষে দুঃসাধ্য হইবে বলিয়াই তাহারা এইরূপ করিবে। ইহাতে তাহারা নিজেরাও গোমরাহ হইবে অপরদেরও গোমরাহ করিবে।‘ –ই’তেছাম-১-১২৪ পৃঃ
(৬) খলীফা হজরত ওমর (রাঃ) একবার সেনাপতি হজরত আবু উবাইদার যুদ্বক্ষেত্র পরিদর্শন উদ্দেশ্য শাম রওয়ানা হইলেন। ‘ছরগ’ নামক স্থানে পৌছায়া জানিতে পারিলেন যে, গন্তব্যস্থলে মহামারী আরম্ভ হইয়াছে। ইহাতে তিনি চিন্তিত হইয়া পড়িলেনঃ তথায় যাইতে হবে কি না এব্যাপারে শরীয়তের নির্দেশ কি? এ সময় হজরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ বলিলেনঃ ‘আমি রছুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লামকে বলিতে শুনিয়াছিঃ কোথাও মহামারী আরম্ভ হয় তবে ইচ্ছা করিয়া তথায় যাইবে না আর (পূর্ব হইতেই) যদি তথায় তুমি থাকিয়া থাক তাহা হইলে ভয়ে পলায়নও করিবে না।‘ ইহা শুনিয়া হজরত ওমর (রাঃ) তথা হইতে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করিলেন। ফাহম
(৭) হজরত ওমরের অভিমত ছিল, স্ত্রী তার নিহত স্বামীর দীয়তের অংশ পাইতে পারে না। ছাহাবী জাহহাক ইবনে ছুফইয়ান তাঁহাকে জানাইলেন যে, রছুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম আশইয়াম জেবাবীর দীয়ত (রক্তপণ) তাহার স্ত্রীকে প্রদানের জন্য তাহাকে (জাহহাককে) নির্দেশ দিয়াছিলেন। ইহা শুনিয়া তিনি নিজের মত পরিত্যাগ করেন।–তিরমিজী
(৮) এভাবে ‘জনীন’ বা ভ্রুণ হত্যার দীয়ত সম্পর্কে হজরত ফারূকের ধারণা ছিল; উট বা বকরী প্রদান করিলেই চলিবে। কিন্তু হজরত মুগীরা (রাঃ) প্রমুখাৎ যখন জানিতে পারিলেন যে, রছুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম এ ব্যাপারে গোলাম-বাঁদী আজাদ করার কথাই বলিয়াছেন, তখন তিনি তাঁহার পূর্ব মত পরিবর্তন করিলেন। ফাহম ৮৮ পৃঃ
(৯) একদিন বনী ছকীফের একজন লোক আসিয়া হজরত ফারূককে জিজ্ঞাসা করিলেনঃ (হজ্জের সময়) তাওয়াফে জিয়ারত করার পর যদি কোনো স্ত্রীলোকের ঋতু আরম্ভ হইয়া যায়, তাহা হইলে সে আর অপেক্ষা না করিয়া বাড়ী ফিরিতে পারে কি না? তিনি উত্তর করিলেনঃ না পারি না। (মিনায় অবস্থান করিতে হইবে) ছকফী লোকটি বলিলঃ ‘আমি রছুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লামকে ইহার বিপরীত হুকুম দিতে শুনিয়াছি।‘ ইহা শুনিয়া হজরত ফারূক ছকফীর প্রতি দোররার আঘাত করিয়া বলিলেনঃ ‘(পাজি কোথাকার!) যে ব্যাপারে স্বয়ং রছুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম-এর নির্দেশ জানা আছে সে ব্যাপারে আবার আমায় জিজ্ঞাস করিলে কেন? ফাহম ৮৮ পৃঃ, মাআলিম-৪-৩২ পৃঃ
খলীফা হজরত ওছমান (রাঃ)
(১) ছাহাবীগণ খলীফা হজরত ওছমান গণীর হাতে খেলাফতের বয়আত এভাবে করিয়া-ছিলেনঃ ‘আমরা আল্লাহর কিতাব, রছুলের ছুন্নাহ এবং খলীফা হজরত আবু বকর ও ওমরের ছুন্নাহ অনুসারে চলিব-আপনার নিকট এই অংগীকার করিতেছি।‘ আর তিনিও তাঁহাদের নিকট হইতে এইরূপ বয়আতই গ্রহণ করিলেন।
(২) হজরত ওছমান গণী (রাঃ)-এর ধারণা ছিল, স্বামী-মৃত স্ত্রীলোক তাহার ইদ্দতকালে যথা ইচ্ছা অবস্থান করিতে পারে। হজরত আবু ছাঈদ খুদরীর ভগ্নি ফরিয়াহ বিনতে মালেক যখন বলিলেনঃ ‘আমার স্বামী নিহত হওয়ার পর রছুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম আমাকে আমার নিহত স্বামীর গৃহেই ইদ্দত পালন করিতে নির্দেশ দিয়াছিলেন’, তখন তিনি তাঁহার নিজ মত পরিহার করিলেন।—মোয়াত্তা
(৩) হজরত ওছমান (রাঃ) ‘তামাত্তো’ বা হজ্জের সাথে ওমরাহ করার পক্ষে ছিলেন না। কিন্তু হজরত আলী মোরতাজার নিকট হাদীছ শুনিয়া তিনি তাঁহার মত পরিত্যাগ করিলেন।
খলীফা হজরত আলী (রাঃ)ঃ
(১) একদা হজরত আলী (রাঃ) বলেনঃ ‘শরীয়ত যদি শুধু কেয়াছ অথবা কাহারো বিবেক-বুদ্ধির উপরই নির্ভরশীল হইত তা হইলে (ওজুর সময়) মোজার উপরদিকে মছেহ না করিয়া উহার নিচের দিকে মছেহ করাই সংগত হইত। অথচ রছুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম উহার উপরিভাগ মছেহ করিয়াছেন।–বুলুগুল মারাম
(২) একবার হজরত আলী মোরতাজার নিকট কতক ইসলামত্যাগী মুরতাদকে আনা হইল। তিনি তাহাদের আগুনে পুড়াইয়া মারিতে নির্দেশ দিলেন। এসময় হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাছ (রাঃ) বলিয়া উঠিলেনঃ ‘রছুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলইহে ওয়াছাল্লাম বলিয়াছেনঃ যে ব্যক্তি তাহার দ্বীন পরিত্যাগ করিয়াছে তাহাকে (তরবারির দ্বারা) কতল করিবে।‘ ইহা শুনিয়া তিনি হুকুম পরিবর্তন করিলেন এবং বলিলেনঃ ইবনে আব্বাছ (রাঃ) সত্য বলিতেছে।
খলীফা ওমর ইবনে আবদুল আজীজ (রাঃ)ঃ
(১) পঞ্চম ‘খলীফায়ে রাশেদ’ হজরত ওমর ইবনে আবদুল আজীজ (রাঃ) বলেনঃ ‘রছুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম, অতঃপর খোলাফায়ে রাশেদীন বহু ছুন্নত কায়েম করিয়া গিয়াছেন। সে গুলি অনুসরণ করার মানে আল্লাহর কিতাবেরই সমর্থন করা, তাঁহার এতাআত-আনুগত্যের পূর্ণতা সাধন করা এবং তাঁহার দ্বীন পালনে শক্তি বৃদ্ধি করা। এ সকল ছুন্নাহর রদবদল করা বা উহার বিপরীত করা কাহারো পক্ষে জায়েজ নহে। যে ব্যক্তি উহা অনুসারে আমল করিয়াছে সে হেদায়ত লাভ করিয়াছে। যে ব্যক্তি উহার আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছে সে জয়লাভ করিয়াছে। পক্ষান্তরে যে উহার বিরুদ্ধাচরণ করিয়াছে, সে মু’মিন-গণের পন্হা ত্যাগ করিয়া অপরদের পন্হা এখতিয়ার করিয়াছে।—-এ’তেছাম-১-১০৩ পৃঃ
(২) হজরত ওমর ইবনে আবদুল আজীজ তাঁহার শাসনকর্তাদের লিখিয়া জানাইয়াছিলেন যে, আল্লাহর কিতাব যাহা আছে সে সম্পর্কে কাহারো কোন রায় বা মত প্রকাশের অধিকার নাই। মনীষীবৃন্দের অভিমত কেবল সেই সম্পর্কে প্রযোজ্য যে সম্পর্কে আল্লাহর কিতাবে কোন সমাধান নাই এবং রছূলুল্লাহর ছুন্নাহয়ও কিছু নাই। রছূলুল্লাহর ছুন্নাহয় যে বিষয়ের সমাধান রহিয়েছে সে সম্পর্কেও কাহারো মত প্রকাশের কোন অধিকার নাই। দারেমী, হুজ্জাতুল-১৫০ পৃঃ
ছুন্নাহ সম্পর্কে ইমামগণ
ইমাম আবু হানীফা (রাঃ)
ইমাম আজম আবু হানীফা (রাঃ) ছুন্নাহ সম্পর্কে স্বীয় অভিমত নিন্মলিখিত ভাষার (কথায়) ব্যক্ত করিয়াছেনঃ
১। ছুন্নাহ না হইলে আমাদের কেহই কোরআন বুঝিতে সক্ষম হইতে না। মীজানে শা’ রানী
২। সাবধান, দ্বীন সম্পর্কে কখনও কোনো মনগড়া কথা বলিবে না। এ সম্পর্কে ছুন্নাহর অনুসরণ করিবে। যে ব্যক্তি ছুন্নাহ হইতে দুরে সরিয়া গিয়াছে সে গোমরাহ হইয়াছে।
৩। মানুষ কল্যাণের সহিত থাকিবে যে পযর্ন্ত তাহাদের মধ্যে হাদীছ অনুসন্ধাকারী থাকিবে। যখন তাহার হাদীছবে বাদ দিয়া এলম তলব করিবে তখন ধ্বংসের পথে অগ্রসর হইবে।
৪। যখন কোন ছহীহ হাদীছ পাওয়া যাইবে, তখন উহাই আমার মাজহাব।_ শামী-১/৬৩
৫।যখনই আমার কোন আল্লাহর কিতাব বা রছূলের হাদীছের বিপরীত বলিয়া প্রমাণিত হইবে, তখনই উহাকে পরিত্যাগ করিবে।– শামী
৬। এছাড়া তিনি নিজেই পাঁচ শতের উপরে হাদীছ হেফাজ ও রেওয়ায়ত করিয়াছেন, যাহা ‘মোহাম্মদে ইমাম আজম’ নামক কিতাবে সংগৃহীত হইয়াছে।
ইমাম মালেক (রঃ)
ইমাম মাকলে (রঃ) হাদীছ সম্বন্ধে তাঁহার অভিমত এভাবে প্রকাশ করিয়াছনঃ
(১) আমি একজন সাধারণ মানুষ, দ্বীন সম্পর্কে কোন কথার ভলও করিতে পারি এবং সত্যেও উপিনীত হইতে পারি। সুতরাং আমার কথাকে কিতাব ও ছুন্নহর সহিত যাচাউ করিয়া দেখিবে, যাহা উহাদের মোয়াফিক হইবে গ্রহণ করিবে এবং যাহা উহাদের মোখলিফ হইবে পরিত্যাগ করিবে।– জামে’ বয়ানুল এলম-৩২ পৃঃ
২। মানুষের কথাবে মানুষ গ্রহণও করিতে পারে অথবা বর্জনও করিতে পারে। কিন্তু নবীর কথাকে বর্জন করার অধিকার কাহারও নাই।– উছুলুল আহকাম ইবনে হাজম-৬/১৩৫ পৃঃ
৩। তাঁহার কিতাব ‘মোয়ত্তা’ই হাদীছের প্রতি তাঁহার আনুগত্যের পরাকাষ্ঠা। তাহাকে তিনি আট শতের অধিক রছূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম-এর হাদীছ সংগ্রহ করিয়াছেন।
ইমাম শাফেয়ী (রঃ)
ইমাম শাফেয়ী (রঃ) তাঁহার উছুলে ফেকহা সম্পর্কীয় ‘রিছালায়’ হাদীছ অনুসরণ করার অপরিহার্যতা সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা করিয়াছেন এবং কোরআনের বিভিন্ন আয়াত হইতে প্রমাণ করিয়াছেন যে, আল্লাহর কিতাবের অনুসরণ করা যেমন মুসলমানদের উপর ফরজ তেমন তাঁহার নবীর ছুন্নাহ গ্রহণ করিতে বাধ্য। কেননা, আল্লাহ তা’আলা তাঁহার কিতাবে তাঁহার রছূলের কাথা গ্রহণ করিয়াছে সে আল্লাহর কথাই গ্রহণ করিয়াছে।– রিছালা ৭ পৃঃ
২। ‘আল্লাহ তা’আলা তাঁহার কিতাবে তাঁহার নবীর ছুন্নাহ অনুসরণ করাকে ফরজ করিয়া দিয়াছেন’ নামে এক স্বতন্ত্র শিরোনাম কায়েম করিয়া উহার এক স্থানে তিনি বলিয়াছেনঃ আল্লাহ ফরজ করিয়া দিয়াছেন।‘ অতঃপর বলেনঃ ‘আল্লাহ তা’আলা হজরত ইবরাহীমের দো’আয় ও অপর কয়েক জায়গায় দুইটি বিষয় উল্লেখ করিয়াছনঃ আল কিতাব’ ও ‘আল হিকমাত’।আল কিতাব’ তো হইল কোরআন-অভিজ্ঞ ‘অহলে এলম’ দিগকেও ইহার ও অর্থ করিয়ছি।– রিছালা-১৩ পৃঃ
৩।‘দুনিয়ার সমস্ত মুসলমান এ ব্যাপারে একমত যে, যখন কাহারো নিকট কোনো ছহীহ ছুন্নাহ সস্পষ্ট হইয়া পড়িবে,তখন তাহার পক্ষে কাহারো কাথায় উহাকে পরিত্যাগ করা জায়েজ নহে।–এলাম-২/৩৬১ পৃঃ
৪। এতদ্ব্যতীত ‘মোছনাদে’ নামে হাদীছ শাস্ত্রে তাঁহার একটি কিতাবও রহিয়াছে।
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রঃ)
১। ইমাম আহমদ (রঃ) বলিয়াছেনঃ ‘যে ব্যক্তি রছূলের হাদীছকে প্রত্যাখ্যান করিয়াছে সে ধ্বংসের মুখে পতিত হইয়াছে।– মানাকের ইবনে জাওজী-৮২ পৃঃ
২। হাদীছের প্রতি তাঁহার বিশ্বাস বা আনুগত্যের বড় প্রমাণ হইলে তাঁহার ‘আল মোছনাদ’। ইহাতে তিনি ৩০ হাজার হাদীছ সংগ্রহ করিয়াছেন এবং স্বীয় মাজহাবের ভিত্তিও ইহার উপরই স্থাপন করিয়াছেন।
শাহ্ ওলীউল্লাহ দেহলবী (রঃ)
শাহ্ ওলীউল্লাহ মোহাদ্দেছ দেহলবী বলিয়াছেনঃ সন্দেহমুক্ত এলম এবং দ্বীন সম্পর্কীয় যাবতীয় জ্ঞান ও বিজ্ঞানসমুহের মধ্যে এলমে হাদীছ হইতেছে সকলের মুল ও শীর্ষস্থানীয়। শেষ নবী হজরত মোহাম্মদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম যাহা কিছু বলিয়াছেন, যাহা কিছু করিয়াছেন এবং অন্যের যে সকল কথা ও কাজ তাঁহার নিকট সমর্থিত হইয়াছে তাহা সবই উহাতে সন্নিবেশিত হইয়াছে। বস্ততঃ এলমে হাদীছ হইতেছে অন্ধকারের বুকে প্রদীপ এবং হেদায়তের পথে আলোকস্তম্ভ। যে ব্যক্তি উহা আবৃত্তি করায়া তদনুযায়ী আলম করিয়াছে সে-ই সৎপথের সন্ধান লাভ করিয়াছে, পক্ষান্তারে যে ব্যক্তি উহা হইতে বিমুখ হইয়াছে সে নিঃসন্দেহে গোমরাহ ও ব্যর্থকাম হইয়াছে। হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগা-২ পৃঃ
ছুফিয়ায়ে কেরাম ও ছুন্নাহঃ
হজরত ইবরাহীম ইবনে আদহাম (রঃ) দো’আ কবুল না হওয়ার কারণ বর্ণনা করিতে যাইয়া বলেনঃ মানুষ রছূল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম-এর মহব্বতের দাবী করে অথচ তাঁহার ছন্নাতকে ছাড়িয়া দিয়াছে। ই’তেছাম-১/১০৮ পৃঃ
২।হজরত জুন্নুন মিছরী (রঃ) দুনিয়ার নানা অশান্তির কারণ বিশ্লেষণ প্রসংগে বলেনঃ ‘মানুষ রছূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম-এর ছুন্নাত পরিত্যাগ করয়া নিজেরদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করিতে চালিয়াছে।–ই’তেছাম-১/১০৮ পৃঃ
৩। হজরত বিশর হাফী (রঃ) বলেনঃ ‘একবার রছূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম আমায় স্বপ্নে বলিলেনঃ তুমি বলিতে পার কি তোমাকে অন্যদের উপর কেন মর্যাদ দান করা হইয়াছে? ছুন্নত অনুসরণ এবং নেক লোকদের ভালবাসার করণেই।_ ই’তেছাম-১/১০৯ পৃঃ
৪। হজরত আবু মোহাম্মদ আবদুল ওহহাব ছকফী (রঃ) বলেনঃ ‘আল্লাহ তা’আলা সঠিক জিনিস ব্যতীত কিছুই কবুল করেন না। অথচ কোনো জিনিসই খালেছ হইতে পারে না, যে পযর্ন্ত না উহা ছন্নাতের মোয়াফিক হয়। ই’তেছাম-১/১১ পৃঃ
৫। হজরত ছাহল তস্তরী (রঃ) বলেনঃ আমার নীতি হইল সাতটি।ইহার মধ্যে প্রথমটি হইল আল্লাহর কিতাবের অনুসরণ করা এবং দ্বিতীয়টি হইল রছূলুল্লাহ (ছঃ)-এর ছন্নাতের তাবেদারী করা।‘_ঐ-১/৬৪ পৃঃ
৬। হজরত শাহ কিরমাণী (রঃ) বলেনঃ যে ব্যাক্তি হারাম দৃষ্টি হইতে স্বীয় চক্ষুদ্বয়কে রক্ষা করিয়াছে, সন্দেহযুক্ত ব্যাপার হইতে নিজকে দূরে রাখিয়াছে, অন্তরকে মোরাকাবা এবং করিয়াছে তাহার অন্তর-দৃষ্টি কখনো ভুল হইতে পারে না।_ঐ
৭। হজরত আবু ছোলাইমান দারানী (রঃ) বলেনঃ ‘যখন কোন ব্যাপারে আমার অন্তরে সন্দেহের উদ্রক হয় তখনই আমি বলি, দুই সত্যবাদী সাক্ষীর সাক্ষ্য ব্যতিরেকে ইহা আমি কখনো গ্রহণ করিব নাঃ_ আল্লাহর কিতাব এবং রছূলের ছুন্নাহ।_ঐ
৮। হজরত আবু কাছেম জুনাইদ বাগদাদী (রঃ) বলেনঃ ‘ছুন্নতের অনুসরণ ব্যতীত আল্লাহর দিকে যাওয়ার কোন পথই উন্মুক্ত নাই।_ঐ-১/১১৫ পৃঃ
ছুন্নাহর হেফাজত ও প্রচারের জন্য রছূল্লাহর নির্দেশঃ
যেহেতু ছুন্নহ শরীয়তে ইসলামীর একটি উৎস, এজন্য স্বয়ং রছূলুল্লাহ (ছঃ) ছুন্নাহর হেফাজত ওপ্রচারের জন্য তাঁহার উম্মতীদের কড়া নির্দেশ দিয়াছেনঃ
১। বোখরী শরীফে রহিয়াছেঃ ‘রছূলুল্লাহ (ছঃ) আবদুল কায়ছ গোত্রের প্রতিনিধিদলকে কতক আহকাম তালীম দেওয়ার পর বলিয়াছেনঃ
(আরবী*******************************)
‘তোমরা ইহাকে ভালোরূপে ইয়াদ করিয়া লও। অতঃপর যাহার অনুপস্থিত তাহাদের নিকট পৌছাইয়া দাও। বোখারী কিতাবুল এলম
২। ছাহবী হজরত মালেক ইবনে হুয়াইরেছ (ছঃ) বলেনঃ
(আরবী*******************************)
‘নবী করীম (ছঃ) আমাদের (কতিপয় বিষয় শিক্ষা দেওয়ার পর) বলিয়াছিলেনঃ তোমরা তোমাদের পরিবারের নিকট ফিরিয়া যাও এবং তাহাদের (এ সকল বিষয়) শিক্ষা দাও।‘বোখারী
৩। রছূলুল্লাহ (ছঃ) বিদায় হজ্জের খোৎবায় লক্ষধিক লোকের সমাবেশে বলিয়াছেনঃ
(আরবী*******************************)
‘প্রত্যেক উপস্থিত ব্যক্তি যেন অনুপস্থিত ব্যক্তিকে ইহা পৌছাইয়া দেয়। কেননা, উপস্থিত ব্যাক্তি হয়ত এমন ব্যক্তির নিকট উহা পৌছাইয়া দিবে যে ব্যক্তি তাহার (উপস্থিত ব্যক্তির) অপেক্ষা (হাদীছের পক্ষে) উত্তম রক্ষক হইবে। বোখারী কিতাবুল এলম
৪। হজরত উবাদা ইবনে ছামেত (রাঃ) বলেনঃ রছূলুল্লাহ (ছঃ) বলিয়াছেনঃ
(আরবী*******************************)
‘আল্লাহ সেই ব্যক্তির মুখ উজ্জল করুন যে ব্যক্তি আমার কোনো কথা শুনিয়া উহা মুখস্থ করিয়া লইয়াছে এবং উত্তমরূপে উহা অনুধাবন করিয়াছে, অতঃপর উহা অন্যের নিকট পৌছাইয়া দিয়াছে। কেননা, এমন অনেক জ্ঞানের কথার বাহক (হাফেজ) আছে যাহারা নিজেরা জ্ঞানী নহে। এছাড়া অনেক জ্ঞানের বাহক এমন ব্যক্তির নিকট জ্ঞান বহন করিতে পারে, যে ব্যক্তি বাহক অপেক্ষা অধিকি জ্ঞানী। ‘(সুতরাং সে ইহা হইতে অনেক তথ্যের উদঘাট করিতে পারিবে) (আহমদ, তীরমিজী, ইবনে মাজাহ, দারেমী।মেশকাত)
৫। হজরত ইবনে মাছউদ (রাঃ) বলেনঃ আমি রছূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লামকে বলিতে শুনিয়াছিঃ
(আরবী*******************************)
আল্লাহ সেই ব্যক্তির মুখ উজ্জল করুন যে ব্যক্তি আমার নিকট কোনো কথা শুনিয়াছে অতঃপর উহাকে অন্যের নিকট পৌছাইয়া দিয়াছে ঠিক যেভাবে উহা শুনিয়াছে। কেননা, এমন অনেক ব্যক্তি রহিয়াছে যাহারা শ্রোতা অপেক্ষা অধি জ্ঞান রাখে।
তিরমিজী, ইবনে মাজাহ। মেশকাত
৬। হজরত আনাছ (রাঃ) বলেনঃ
(আরবী*******************************)
‘রছূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম যখন কোনো কথা বলিতেন, তিনবার করিয়া পুনঃ পুনঃ বলিতেন যাহাতে শ্রোতা উহা উত্তমরূপে বুঝিয়া লইতে পারে।–বোখারী
৭।হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাছ (রাঃ) বলেনঃ
(আরবী*******************************)
রছূলুল্লাহ ছাল্লাল্লহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম আমাদের নামাজের ‘তাশাহুদ’ শিক্ষা দিতেন যেভাবে কোরআনের ছুরা শিক্ষা দিতেন।– মোছলেম শরীফ
রছূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম ছাহাবীদের শুধূ যে হাদীছের শিক্ষাই দিতেন তাহা নহে; বরং তিনি উহা কখনো কখনো পুনরায় তাহাদরে নিকট হইতে শুনিয়াও লইতেন উহা ঠিক হইয়াছে কি না? তিরমিজীতে রহিয়াছে, একবার রছূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম হজরত বারা ইবনে আযাবকে শুইবার কালে পড়ার জন্য একটি দো’আ বাতলাইলেন। অতঃপর জিজ্ঞাসা করিলেনঃ বল দেখি আমি কী বলিয়াছি? সে(আরব**********) এর স্থালে বলিলঃ (আরবী**************) অর্থাৎ ‘নবী’ শব্দের স্থলে ‘রছূল’ শব্দ বলিল যাহার অর্থ এখানে এক হুজুর ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম তাঁহার বুকে খোচা মারিয়া বলিলেনঃ ‘না, হয় নাই; আমি যাহা বলিয়াছি তাহাই বল।