হাদীছের কিতাবের স্তরবিভাগ
হাদীছের কিতাবসমূহকে মোটামুটিভাবে পাঁচটি স্তর বা তাবাকায় ভাগ করা যাইতে পারে। শাহ ওলীউল্লাহ মোহাদ্দেছ দেহলবী (রঃ) ও তাঁহার ‘হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগা’ নামক কিতাবে এরূপ পাঁচ স্তরে ভাগ করিয়াছেন।
প্রথম স্তরঃ এ স্তরের কিতাবসমূহে শুধুমাত্র ছহীহ হাদীছই রহিয়াছে। এ স্তরের কিতাব মাত্র তিনটিঃ মোআত্তা ইমাম মালেক, বোখারী শরীফ ও মোছলেম শরীফ। দুনিয়ায় এ কিতাব তিনটি র যত অধিক আলোচনা সমালোচনা হইয়াছে অপর কোন কিতাবের এরূপ হয় নাই। আলোচনায় ইহাই সাব্যস্ত হইয়াছে যে, এ তিনটি কিতাবের সমস্ত হাদীছই নিশ্চিতরূপে ছহীহ। -হুজ্জাতুল্লাহ
[এ সকল কিতাব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা যথাস্থানে করা হইবে]
দ্বিতীয় স্তরঃ এ স্তরের কিতাবসমূহ প্রথম স্তরের খুব কাছাকাছি। এ স্তরের কিতাবে সাধারণতঃ ছহীহ ও হাছান হাদীছই রহিয়াছে। জঈফ হাদীছ ইহাতে খূব কমই আছে। নাছায়ী শরীফ, আবু দাঊদ শরীফ ও তিরমিজী শরীফ এ স্তরেরই কিতাব। ছুনানে দারেমী, ছুনানে ইবনে মাজাহ এবং শাহ ওলীউল্লাহ ছাহেবের মতে মোছনাদে ইমাম আহমদকেও এ স্তরে শামিল করা যাইতে পারে।
এ দুই স্তরের কিতাবের উপরই সকল মাজহাবের ফকীহগণ নির্ভর করিয়া থাকেন।
এ স্তরের কিতাবে ছহীহ, হাছান জঈফ, শাজ ও মোনকার-সকল রকমের হাদীছই রহিয়াছে। মোছনাদে আবু ইবনে রাজ্জাক, মোছাল্লাফে আবু বকর ইবনে আবু শাইবা, মোছনাদে আবাদ ইবনে হোমাইদ, মোছনাদে তায়ালছী এবং বায়হাকী, তাহাবী ও তবরানীর কিতাবসমূহ এ স্তরেরই আন্তর্ভক্ত। বিশেষজ্ঞগণের বাছাই ব্যতীত এ সকল কিতাবেরর হাদীছ গ্রহণ করা যাইতে পারে
চতুর্থ স্তরঃ
এ স্তরের কিতাবসমূহে সাধারণতঃ জঈফ ও গ্রহণের অযোগ্য হাদীছই রহিয়াছে। ইবনে হিব্বানের কিতাবুজ জুআফ, ইবনে আছীরের কামেল এবং খতীব বাগদাদী, আবু নোয়াইম, জাওজাকানী, ইবনে আছাকির, ইবনে নাজ্জার ও ফেরাদউছ দায়লামীর কিতাবসমূহ এ স্তরেরই কিতাব। মোছনাদে খাওয়ারেজমীও এ স্তরের যোগ্য।
পঞ্চম স্তরঃ উপরি-উক্ত স্তরে যে সকল কিতাবের স্থান নাই সে সকল কিতাবের নাম এখানে দেওয়া হয় নাই। উদাহরণস্বরূপ কেবল কতক কিতাবের নামই দেওয়া হইয়াছে।
ছাহীহাইনের বাহিরেও ছহীহ হাদীছ রহিয়াছে
বোখারী ও মোছলেম শরীফ হাদীছের ছহীহ কিতাব। কিন্তু সম্যক ছহীহ হাদীছই যে বোখারী ও মোছলেমে রহিয়াছে তাহা নহে। ইমাম বোখারী (রঃ) বলিয়াছেনঃ
,আমি আমার এ কিতাবে ছহীহ ব্যতীত কোন হাদীছকে স্থান দেই নাই এবং বহু ছহীহ হাদীছকে আমি বাদও দিয়াছি।
এইরূপে ইমাম মোছলেম বলেনেঃ আমি একথা বলি না যে ইহার বাহিরে যে সকল হাদীছ রহিয়াছে সেগুলি সমস্তই জঈফ।
সুতরাং এই দুই কিতাবের বাহিরেও ছহীহ হাদীছ ও কিতাব রহিয়াছে। শায়খ আবদুল হক মোহাদ্দেছ দেহলবীর মতে ছেহাহ ছেত্তা’, ‘মোআত্তা ইমাম মালেক’ ও ছুনানে দারেমী’ (এ আটখানি) ব্যতীত নিম্নোক্ত কিতাবসমূহও ছহীহ (যদিও বোখারী ও মোছলেমের পর্যায়ে নহে)
১. ছহীহে খোজাইমা (আরবী)-আবু আবদুল্লাহ মোহাম্মদ ইবনে ইসহাক (মৃঃ ৩১১ হিঃ) ।
২। ছহীহে ইবনে হিব্বান (আরবী)-আবু হাতেম মোহাম্মদ ইবনে হিব্বান বুস্তী (মৃঃ ৩৫৪ হি) ।
৩। আল মোস্তাদরাক (আরবী)-হাকেম আবু আবদুল্লা নিশাপুরী (মৃঃ ৪০২ হিঃ) ।
[তিনি ইহা বোখারী ও মোছলেমের মান অনুসারে লিখিয়াছেন বলিয়া দাবী করিয়াছেন। কিন্তু পরবর্তী মোহাক্কেক মোহাদ্দেছগণ তাঁহার এ দাবীকে সম্পূর্ণরূপে মানিয়া লইতে পারেন নাই; বরং কোন কোন হাদীছ সম্পর্কে ইহারা বিরূপ সমলোচনা করিয়াছেন। সুতরাং ছহীহাইনের পর্যায়ে না হইলেও ইহা একটি ছহীহ কিতাব
৪। আল মুখতারাহ (আরবী) জিয়াউদ্দীন মাকদেছী (মৃঃ ৭৪৩ হিঃ)
৫। ছহীহ আবু ‘ওয়ানাহ (আরবী) ইয়াকুব ইবনে ইছহাক (মৃঃ ৩১১ হিঃ)
৬। আল মোনতাকা (আরবী) ইবনুল জারুদ আবদুল্লাহ ইবনে আলী।
মোকাদ্দামায়ে শায়খ
এতহেদ্ব্যতীত মোহাম্মদ ইবনে মোহাম্মদ রাজা সিন্ধী (মৃঃ ২৮৬ হিঃ) এবং ইবনে হামজা জাহেরীরও (মৃঃ ৫৪৬ হিঃ) এক একটি ছহীহ কিতাব রহিয়াছে বলিয়া কোন কোন কিতাবে উল্লেখ দেখা যায়। কিন্তু পরবর্তী মোহাদ্দেছগণ এগুলিকে ছহীহ বলিয়া গ্রহণ করিয়াছেন কি না বা কোথাও এগুলির পণ্ডলিপি বিদ্যমান আছে কি না জানা যায় নাই
হাদীছের সংখ্যা
হাদীছের মূল কিতাবসমূহের মধ্যে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের ‘মোছনাদ’ একটি বৃহৎ কিতাব। ইহাতে ৭ শত ছাহাবী কর্তৃক বর্ণিত ‘তাকরার {এক কথাকে পুনঃ পুনঃ বলাকেই ‘তাকরার বলে। আমাদের মোহাদ্দেছগণ নান কারণে এক হাদীছকে অধ্যায়ে বিভিন্নবার বর্ণনা করিয়াছেন।} সহ মোট ৪০ হাজার এবং ‘তাকরার’ বাদ ৩০ হাজার এবং রহিয়াছেন। শায়খ আলী মোত্তাকী জৌনপরীর ‘মোনতাখাবে কানজুল ওমমালে’ ৩০ হাজার এবং ‘কানজুল ওমমালে’ ( তাকরার বাদ) মোট ৩২ হাজার হাদীছ রহিয়াছে।। অথচ এই কিতাব বহু মূল কিতাবের সমষ্টি। একমাত্র হাছান ইবনে আহমদ ছমরকন্দীর ‘বাহরুল আছানীদ’ কিতাবেই এক লক্ষ হাদীছ রহিয়াছে বলিয়া শুনা যায়। কিন্তু এ সংখ্যা ‘তাকরার’ বাদ কি না তাহা জানা যায় নাই। সুতরাং মোট হাদীছের সংখ্যা ছাহাবা ও তাবেয়ীনদের আছারসহ সর্বমোট এক লক্ষের অধিক নহে বলিয়া মনে হয়। ইহার মধ্যে ‘ছহীহ’ হাদীছের সংখ্যা আরো অনেক কম। হাকেম আবু আবদুল্লাহ নিশাপুরীর মতে প্রথম শ্রেণীর ছহীহ হাদীছের সংখ্যা ১০ হাজারেরও কম। – ম’রেফাতু ওলুমিল হাদীছ। ‘ছেহাহ ছেত্তায়’ মাত্র পৌণে ছয় হাজার হাদীছ রহিয়াছে। ইহার মধ্যে ২৩২৬টি হাদীছ মো্ত্তফাক আলাইহে। তবে যে বলা হইয়া থাকেঃ হাদীছের বড় বড় ইমামগণের লক্ষ লক্ষ হাদীছ জানা ছিল। তাহার অর্থ এই যে, অধিকাংশ হাদীছের বিভিন্ন ছনদ রহিয়াছে। -তাদবীন-৪৫ পৃঃ। অথচ আমাদের মোহাদ্দেছগণ যে হাদীছের যতটি ছনদ রহিয়াছে তাহাকে তত হাদীছ বলিয়াই গণ্য করেন। অবশ্য প্রথম যুগে ছনদের সংখ্যা এত অধিক ছিল না; সময়ের দীর্ঘতার সহিত ছনদের দীর্ঘতা এবং উভয়ই বাড়িয়া গিয়াছে। একজন ওস্তাদের একধিক প্রসিদ্ধ শাগরেদের মারফত একটি ছনদ একাধিক শাখা ছনদে বিভক্ত হইয়া ছনদের সংগে সংগে হাদীছের সংখ্যাও হ্রাস পাইবে। এ কারণেই আমরা তাবেয়ীন ও তাবে’ তাবেয়ীনদের মধ্যে কাহাকেও লক্ষ লক্ষ হাদীছের হাফেজ বা রাবী বলিয়া দেখিতেছি না এমান কি জুহরী কাতাদাহ, আবু ইছহাক এবং ‘আ মাশের ন্যায় ইমামগণকেও নহে।প্রথমেই জানিয়া রাখা আবশ্যক যে, ছাহাবীদের সংখ্যা ও তখনকার মসলমানদের সংখ্যা এক নহে। কারণ, ৮ম হিজরীতে মাক্কা বিজিত হওয়ার পর সমগ্র আরবের অধিবাসীরাই মসুলমান হইয়া গিয়াছিল। কিন্তু সকলের পক্ষেই যে রসূলুল্লাহ আলাইহে ওয়াছাল্লামের সহিত সাক্ষাৎ করিয়াছিলেন। এইরূপে যাহারা রছূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওছাল্লামকে দেখিয়াছিলেন এবং যাহারা রছূলুল্লাহ (ছঃ) হইতে হাদীছ বর্ণনা করিয়াছেন তাঁহাদের উভয়ের সংখ্যাও সমান নহে। কেননা, যাহারা রছূলুল্লাহর হাদীছ বর্ণনা করার সুযোগ ঘটিয়াছিল তাহা নহে।
যাঁহারা রছুলুল্লাহ আলাইহি ওয়াছাল্লামের নিকট হইতে সরাসরিভাবে অথবা অন্য ছাহাবীর মারফতে হাদীছ বর্ণনা করিয়াছেন ইমাম আবু জুরআ রাজীর মতে কেবল তাঁহাদের সংখ্যাই ছিল এক লক্ষের উপর (এক লক্ষ চৌদ্দ হাজার)। রছুলুল্লাহ (ছঃ)-এর এনতেকালের সময় ছাহাবীদের সংখ্যা ৬০ হাজার ছিল বলিয়া ইমাম শাফেয়ী (রঃ) যে উক্তি করিয়াছেন তাহা তিনি শুধু মক্কা ও মদীনা শরীফের ছাহাবীদের সম্বন্ধই করিয়াছেন। তখন মক্কা শরীফে ৩০ হাজার এবং মদীনা শরীফে ৩০ হাজার ছাহাবী ছেলেন-একথাও তিনি স্পষ্ট বলিয়া দিয়াছেন। তবে তাঁহাদের অধিকাংশই পল্লীবাসী ছিলেন বলিয়া অনেকের জীবনী জানা যায় নাই। এ কারণে ‘আছমাউর রেজালের’ কিতাব যাঁহাদের জীবনী রহিয়াছে তাঁহাদের সংখ্যা ৯ হাজারের অধীক নহে। ইবনে আবদুল বার তাঁহার ‘আল ইসতিয়াবে’ ৭ হাজারের, ইবনুল আছীর জজরী তাঁহার ‘উছদুল গাবায়’ ৭৫৫৪ জনের এবং ইমাম জাহবী তাঁহার ‘তাজরীদে’ ১২৮১ জন ছাহাবীয়াহসহ মোট ৮৮০৮ জনের জীবনী আলোচনা করিয়াছেন।
মদীনার বাহিরে ছাহাবীগণঃ
রছুলুল্লাহ এনতেকালের পর সমস্ত ছাহাবী মদীনায়ই অবস্থান করেন নাই; বরং নানা কারণে তাঁহাদের অনেকেই ( কোরআন ও হাদীছের এলম সঙ্গে লইয়া) মদীনার বাহিরে বসবাস এখতিয়ার করিয়াছিলেন। ইহার ফলে কোরআন ও হাদীছের এলম সমগ্র মুসলিম রাজ্যেই ছড়াইয়া পড়ে। যাঁহারা বাহিরে ছিলেন হাকেম আবু আবদুল্লাহ তাঁহাদের এরূপ হিসাব দিয়াছেন-মক্কায় ২৬, কুফায় ৫১, বছরায় ৩৫, শামে ৩৪, মিছরে ১৬, খোরাছানে ৬, এবং জজীরায় ৩ জন। অন্য কিতাবে অন্যরূপে সংখ্যাও রহিয়াছে। হজরহ আলী, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাছউদ, হজরত আবু মুছা আশআরী, হজরত ছা’দ ইবনে আবি ওককাছ, হজরত ছালমান ফারেছি (রা) প্রমুখ বিশিষ্ট ছাহাবেয়ে কেরাম কুফায় বসবাস করয়াছিলেন।
ছাহাবীগণের ফজীলত ও মর্যাদা
ছাহাবীগণের ফজীলত ও মর্যাদার পক্ষে ইহাই যথেষ্ট যে, তাঁহাদীগকে আল্লাহ তা’আলা তাঁহার প্রিয় নবী ও শ্রেষ্ঠ রছুলের সহচর্যের জন্য মনোনিত করিয়াছেন। কোরআন এবং হাদীছেও তাঁহাদের ফজীলত ও মর্যাদা সম্পর্কে বহু উক্তি রহিয়াছে।
কোরআনে রহিয়াছেঃ
(আরবী………………………………………………………………………………………)
(১) ‘আল্লাহ মু’মিনগণের প্রতি নিশ্চয়ই সন্তুষ্ট হইলেন যখন তাহারা বৃক্ষতলে আপনার নিকট বয়আত গ্রহণ করিতেছিল এবং আল্লাহ তাহাদের অন্তরের সব কিছুই অবগত ছিলেন। আল্লাহ তা’আলা তাহাদের মধ্যে শান্তি সৃষ্টি করিয়াছিলেন।‘-ছুরা ফাতহ ১৮
(আরবী…………………………………………………………………………………………..)
(২) ‘মুহাজির ও আনছারগণের মধ্যকার সে সকল অগ্রগামীগণ এবং যাহারা সততার সহিত তাহাদিগকে অনুসরন করিয়াছে তাহাদের উপর আল্লাহ রাজী হইয়াছেন এবং তাহারাও আল্লাহর উপর রাজী হইয়াছে।‘ ছূরা-বারাআত-১০০
(আরবী…………………………………………………………………….)
(৩)‘হে নবী! আপনার পক্ষে যথেষ্ট হইতেছেন আল্লাহ এবং সেই সকল মু’মিন যাহারা আপনার অনুসরণ করিতেছে।‘- ছূরা-আনফাল-৬৪
(আরবী…………………………………………………………………………………….)
(৪) ‘(উপরি-উক্ত মাল) প্রাপ্য হইতেছে দরিদ্র মুহাজিরদিগের, যাহারা নিজেদের আবাসভূমি ও বিষয়-সম্পত্তি হইতে বহিষ্কৃত হইয়াছে। তাহারা আল্লাহর রহমতে ও সন্তোষলাভের কামনা করিয়া থাকে এবং আল্লাহ ও তাঁহার রছুলের কাজে সাহায্য করিয়া থাকে-ইহারাই হইতাছে সত্যবাদী।‘-ছূরা হাশর-৮
(আরবী…………………………………………………………………………….)
(৫) ‘যাহারা ঈমান আনিয়াছে এবং হিজরত করিয়াছে এবং যাহারা জেহাদ করিয়াছে আল্লাহর রাহে নিজেদের ধন-প্রাণ-কোরবান করিয়া, তাহাদের মরতবা আল্লাহর হুজুরে (অন্যদের তুলনায়) বহুগুণ অধিক। আর এই সকল লোকই হইতেছে সিদ্ধকাম।‘-ছূরা-বারাআত-২০
(আরবী……………………………………………………………………………..)
(৬) ‘কিন্তু এই রছূল এবং তাঁহার সঙ্গে যে সমস্ত মু’মিন আছে-তাহারা এযাবৎ জেহাদ করিয়া আসিয়াছে নিজেদের ধন-প্রাণ কোরবান করিয়া; ইহাদের জন্য আছে যাবতীয় কল্যাণ এবং ইহারাই হইল সফলকাম।‘-ছূরা-বারাআহ-৮৮
(৭) ‘মক্কা বিজয়ের পূর্বে দান করিয়াছে যাহারা এবং জেহাদ করিয়াছে যাহারা, তাহাদের সমান উহারা হইতে পারে না যাহারা ইহার পরে দান করিয়াছে এবং জেহাদ করিয়াছে; প্রথমোক্ত ব্যক্তিদের মর্যাদা অনেক বেশী। আর প্রত্যক দলকেই আল্লাহ তা’আলা ভালোর (হুছনার) ওয়াদা দান করিয়াছেন।‘–ছূরা-হাদীদ-১০
(আরবী………………………………………………………………………………)
(৮) ‘কিন্তু যাহাদের ‘হুছনা’ সম্বন্ধে আমার ব্যবস্থা পূর্ব হইতেই অবধারিত হইয়া রহিয়াছে তাহাদিগকে অবস্থিত করা হইবে জাহান্নাম হইতে দূরে।‘-ছূরা-আম্বিয়া-১০১
শেষোক্ত দুই আয়াত হইতে ইমাম আবু মোহাম্মদ ইবনে হাজম এই বুঝিয়াছেন যে, সমস্ত ছাহাবীই বেহেশতী। কেননা, প্রথম আয়াতে বলা হইয়াছেঃ ছাহাবীগণকে আল্লাহ পাক ‘হুছনার ওয়াদা দান করিয়াছেন। আর দ্বিতীয় আয়াতে বলা হইয়াছেঃ যাহাদিগকে আল্লাহ ‘হুছনার’ ওয়াদা দান করিয়াছেন তাহাদীগকে জাহান্নাম হইতে দূরে রাখা হইবে। সুতরাং ছাহাবীদিগকে জাহান্নাম হইতে দূরে রাখা হইবে অর্থাৎ, বেহেশত দেওয়া হইবে।–এছাবা-১৯ পৃষ্ঠা
হাদীছে রহিয়াছেঃ
১ হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মোগাফফাল বলেনঃ রছুলুল্লাহ (ছঃ) বলিয়াছেনঃ আমার আছহাব সম্পর্কে মন্তব্য করিতে আল্লাহকে ভয় করিবে; তাহাদিগকে নিন্দা বিদ্রূপের লক্ষ্যস্থলে পরিণত করিবে না। যে ব্যক্তি তাহাদিগকে ভালবাসিবে সে আমাকে ভালবাসার দরুনই তাহাদিগকে ভালবাসিবে। আর যে ব্যক্তি তাহাদের সহিত বৈরীভাব পোষণ করিবে সে আমার সহিত বৈরীভাব পোষণ করার দরুনই তাহা করিবে। যে ব্যাক্তি তাহাদিকে কষ্ট দিল, সে আমাবে কষ্ট দিল। আর যে ব্যাক্তি আমাবে কষ্ট দিল সে (আসলে) আল্লাহকেই কষ্ট দিল। সুতরাং আল্লাহ শীঘ্রই তাহাকে কঠোরভাবে ধরিবেন। তিরমিজী, ইবনে হিব্বান, এছাবা ১৮ পৃঃ
২। হজরত আবু ছাঈদ খুদরী বলেনঃ রছূলুল্লাহ ( ছঃ) বলিয়াছেনঃ খোদার কছম (হে আমার উম্মতীগণ!) যদি তোমাদের কেহ ওহোদ পাহাড় পড়িমাণ স্বর্ণও দান করে তা হইলেও আমান ছাহাবীগণেরে এক মোদ বা অর্ধ মোদ ( এক সেরের মত) দানের মর্যদাও লাভ করিতে পারিবে না।– বোখারী, মোছলেম, এছাবা ২১ পৃঃ
৩। রছূলুল্লাহ (ছঃ) বলিয়াছেনঃ সবোর্ত্তম যুগ হইল আমার যুগ অর্থাৎ আমার সহচরদের যুগ। অতঃ পর যাহারা ইহাদের পরে আসিবে।– এছাবা ২১ পৃঃ
৪। তাবেয়ী জির ইবনে হুবাইশ বলেনঃ হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাছউদ বলিয়াছেনঃ আল্লাহ তা’আলা তাঁহার বান্দাদের অন্তরসমূহের প্রতি লক্ষ্য করিলেন এবং উহাদের মধ্যে হজরত মোহাম্মদ মোস্তাফ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওছাল্লামের অন্তরকে সর্বশ্র্রেষ্ঠ অন্তররূপে পাইলেন।তাআ তাহাকে পয়গম্বর পদে বরণ করিলেন। অতঃপর তিনি তাঁহার অপর বান্দাদের অন্তরসমূহের প্রতি দৃষ্টিপাত করিলেন এবং ছাহাবীদের অন্তরসমূহকে অপরাপর সমস্ত অন্তর হইতে উৎকৃষ্ট অন্তর হিসাবে পাইলেন: তাই তাঁহদিগকে তাঁহার উজীররূপে মনোনীত করিলেন। তাঁহারা দ্বীনের জন্য সংগ্রাম করিবেন। ইসতিয়াব-৬ পৃঃ
৫। হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ বলেনঃ রছূলুল্লাহ (ছঃ) বলিয়াছেনঃ আল্লাহ তা ‘আলা আমার ছাহাবীগণকে নবী-রছুল ব্যতীত সমগ্র মানব ও জিন জাতির উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করিয়াছেন।
{ ইবনে হাজার বলেন, বাজ্জার এ হাদীছকে ছহীহ ছনদের সহিত বর্ণনা করিয়াছেন।}
এছাবা-২২ পৃঃ
এ সকল আয়াত ও হাদীছ থাকিতে ছাহাবীদের ফজিলত ও মর্যাদা কাহারো মতানুকূল্যের অপেক্ষা রাখে না।
হাদীছ বর্ণনায় ছাহাবীগণের সত্যবাদিতা
হাদীছ বর্ণনা বর্ণনায় ছাহাবীগণ সকলেই সত্যবাদী (আদেল) কোন ছাহাবীই কখনো রছূলুল্লাহর নামে কোন মিথ্যা হাদীছ গড়িয়া বর্ণনা করেন নাই। হাফেজ ইবনে হাজার বলেনঃ ছাহাবীগণ সকলেই যে আদেল (হাদীছ বর্ণনায় সত্যবাদী), এ ব্যাপারে সমস্ত ছুন্নত জামাআত একমত। ছুন্নত জামাআতের বাহিরে কতক বেদআতী লোক অর্থাৎ মু’তাজিলা ও জিন্দীক { মুসলমান বেশে কাফের- ইসলামকে কলংকিত করা যাহার উদ্দেশ্য। } ব্যতীত ইহাতে কাহারো দ্বিমত নাই। খতীব বাগদাদী তাঁহার ‘কেফায়ায়’ বলিয়াছেনঃ ছাহাবীগণের ‘আদালত’ সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ তা’আলার সাক্ষ্য বিদ্যমান রহিয়াছে। আল্লাহ বলেনঃ
১। আল্লাহ মু’মিনগণের প্রতি সন্তুষ্ট হইলেন যখন তাহারা বৃক্ষতলে আপনার নিকট বয়আত গ্রহণ করিতেছিল এবং আল্লাহ তাঁহাদের অন্তরের সবকিছুই অবগত ছিলেন।– ছূরা ফাতহ-১৮
২। মুহাজির ও আনছাগণের মধ্যকার সে সকল অগ্রগামীগণ এবং যাহারা সততার সহিত তাদের অনুসরণ করিয়াছেন তাহদের প্রতি আল্লাহ রাজী হইয়াছেন এবং তাহারাও আল্লাহর উপর রাজী হইয়াছে।–ছূরা-তাওবা-১০০
৩। হে নবী! আপনার পক্ষে যথেষ্ট হইতেছেন আল্লাহ এবং সেই সকল মু’মিন যাহারা আপনার অনুসরণ করিতেছে।–ছূরা আনফাল-৬৪
৪। (উপরি-উক্তি মাল) প্রাপ্য হইতেছে দরিদ্র মুজাহিরদিগের যাহারা নিজের আবাসভূমি ও বিষয়-সম্পত্তি হইতে বহিষ্কৃত হইয়াছে। তাহারা আল্লাহর রহমত ও সন্তোষলাভের কামনা করিয়া থাকে এবং আল্লাহ ও তাঁহার রছুলের কাজে সাহায্য করিয়া থাকে; ইহারাই হইতেছে সত্যবাদী।–ছুরা হাশর-৮
এছাড়া এ ব্যাপারে বহু আয়াত রহিয়াছে। আল্লাহ তা’আলার এ সাক্ষ্যের পর ছাহাবীগণের সত্যবাদিতা অপর কাহারো সাক্ষ্যের অপেক্ষ করে না। আর যদি আল্লাহ তা’আলা এবং তাঁহার রছুলের সাক্ষাৎ নাও থাকিত তা হইলেও তাঁহাদের সত্যবাদিতায় বিশ্বাস করিতে আমরা বাধ্য ছিলাম। কেননা, তাঁহারা যে ভাবে ইসালামের জন্য নিজেদের জান-মাল, ও আত্নীয়-স্বজনকে কোরবান করিয়াছেন এবং হিজরত ও জেহাদ করিয়া খোদা ও রছুল-প্রীতির পরিচয় দিয়াছেন তাহাতে কেহ তাঁহাদের প্রতি এ বিশ্বাস না করিয়া পারে না।
হাদীছের তত্ত্ব ও ইতিহাস
ইমাম আবু জোরআ রাজী বলেনঃ যখন তুমি কোন ব্যক্তিকে ছাহাবীগণের বিরূপ সমালোচনা করিতে বা তাহাদীগকে হেয় প্রতিপন্ন করিতে দেখিবে, তখন নিশ্চয়ই মনে করিবে যে, সে জিন্দীক। আসলে তাহার ঈমানই নাই। কারণ, রছূল সত্য, কোরআন সত্য এবং কোরআন আমাদিগকে যাহা দিয়াছে তাহাও সত্য’ অথচ এ সকল বিষয় আমরা ছাহাবীগণের মারফতেই লাভ করিয়াছি, তাঁহাদের সাক্ষ্যই আমরা এ সকল বিষয়কে সত্য বলিয়া জানিতে পারিয়াছি। সুতরাং যাহারা আমাদের সাক্ষীদিগকে ঘায়েল বা সন্দেহযুক্ত করিতে চাহে, প্রকৃতপক্ষে তাহারা আমাদের কোরআন-হাদীছেকেই সন্দেহযুক্ত করিতে চাহে। তাহারা জিন্দীক, তাহারাই সন্দেহের পাত্র।–এছাবা-১৭ পৃঃ
হাফেজ ইবনুছ ছালাহ বলেনঃ সকল ছাহাবীই যে আদেল (হাদীছ বর্ণনায় সত্যবাদী) এ সম্বন্ধে সমগ্র উম্মত একমত। এমন কি, যাহারা রছুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম-এর পর আত্নকলহে লিপ্ত হইয়াছিলেন তাহারাও আদেল। ইসলামের জন্য তাহাদের নানাবিধ ত্যাগ ও বিভিন্ন গুণাবলির পরিপ্রেক্ষিতে তাহাদের প্রতি এ ধারণা পোষণ না করিয়া পারা যায় না। আর ইহাই হইল বিজ্ঞ আলেমবৃন্দের সর্ববাদিসম্মত অভিমত। ইহারই উপর আল্লাহ তা’আলা মুসল-মানদিগকে একমত করিয়া দিয়াছেন। কারণ, ছাহাবীগণই হইলেন পরবর্তী লোকদের পক্ষে শরীয়ত লাভের একমাত্র মাধ্যম। তাহাদের বিশ্বস্ততা প্রতিপন্ন না হইলে শরীয়তের বিশ্বস্তাতাই বিপন্ন হইয়া পড়ে।–মোকাদ্দমা ২৬০ পৃঃ
ইমাম গাজ্জালী (রঃ) বলেনঃ যেহেতু ছাহাবীগণের বিশ্বস্ততা সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ তা’আলার সাক্ষ্য বিদ্যমান রহিয়াছে, এজন্য পূর্ব ও পরবর্তী সকল মুসলমানই এ ব্যাপারে একমত। আর আমাদের আকীদাও ইহাই।–মোস্তাশফা, ফাহম। শাহ আবদুল আজীজ দেহলবী বলেনঃ আহলে ছুন্নাত জামাআতের নিশ্চিত বিশ্বাস এই যে, ছাহাবীগণ সকলেই আদেল। আর প্রত্যক যুগেই নুতনভাবে ইহার পুনরাবৃত্তি করা হইয়াছে।–জাফরুল আমানী, ফাহম-১০২ পৃঃ
‘ছাহাবীগণ সকলেই আদেল’-এ প্রসঙ্গে শাহ ওলীউল্লা দেহলবী বলেনঃ ‘কোন হাদীছ বর্ণনাকারী রাবী আদেল’ মোহাদ্দেছগণের নিকট ইহা সাধারণতঃ যে অর্থে ব্যবরিত নহে। ‘ছাহাবীগণ সকলেই আদেল’ ইহার অর্থ ‘ হাদীছ বর্ণনায় তাঁহারা সকলেই সত্যবাদী’ । তাঁহাদের জীবনচরিত তন্ন তন্ন করিয়া দেখা গিয়াছে যে, তাঁহাদের কেহই কখনও রছুলুল্লাহর নামে মিথ্যা হাদীছ রচনা করিয়া বলেন নাই। রছুলুল্লাহর নামে মিথ্যা রচনা করাকে তাঁহারা মাহাপাপ বলিয়া মনে করিতেন এবং ইহাকে কঠোভাবে পরিহার করিয়া চলিতেন।–জাফরুল আমীন। ইমাম ইবনুল আম্বারী বলেনঃ ‘ছাহাবীগণ সকলেই আদেল’ ইহার অর্থ এই নহে যে, তাঁহারা মা’ছুম বা নিষ্পাপ-তাঁহাদের কাহারো দ্বারা কখনো কোন অপরাধ সংঘটিত হয় নাই; বরং ইহার অর্থ এই যে, তাঁহারা হাদীছ বর্ণনায় সত্যবাদী। তাঁহাদের কেহই কখনো রছূলুল্লা ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লামের নামে মিথ্যা হাদীছ রচনা করিয়া বলেন নাই। সুতরাং ‘আদালত’ ব্যাপারে খুঁটিনাটি বিচারে প্রবৃত্ত না হইয়া সহজভাবেই তাঁহাদের রেওয়ায়ত গ্রহণ করিতে হইবে-যে পর্যন্ত না তাঁহাদের কাহারো দ্বারা এমন কোন কাজ সংঘটিত হইয়াছে বলিয়া প্রমাণিত হয় যদ্দারা তাঁহার হাদীছ গ্রহণ করা যাইতে পারে না। আর এরূপ কোন কাজ তাঁহাদের কাহারো দ্বারা সংঘটিত হইয়াছে বলিয়া প্রমাণিত হয় নাই।
-ইরশাদুল ফহুল, ফাহম ১৪২ পৃঃ
ছাহাবীদের প্রতি আস্থা নষ্ট করার অপচেষ্ট
ইসলামের শক্ররো ইসলামকে ধারাপৃষ্ঠা হইতে মছিয়া ফেলার উদ্দেশ্য যুগে যুগে যে সকল পস্থা অবলম্বন করিয়াছে সে সকলের মধ্যে রছূলুল্লাহর (ছঃ) ছাহাবীগণের নাম দুর্দাম রটনা করার পন্হাটি হইল সর্বাধিক সুক্ষ্ম ও মারাত্ম । কারণ, পরবর্তী উম্মতীগণের পক্ষে ইসলাম বা শরীয়ত লাভের একমাত্র মাধ্যমই হইলেন ছাহাবীগণ। ছাহাবীগণের মাধ্যমেই আমরা আল্লাহর কিতাব ও রছূলের ছুন্নাহ লাভ করিয়াছি। সুতরাং ছাহাবীগণের প্রতি আস্থা বজায় না থাকিলে কাহারো কক্ষে কোরআন-হাদীছে বিশ্বাস বা ইসালামের প্রতি আকর্ষণের কোন সূত্রই বাকী থাকে না। এ পন্হার উদ্ভবক হইল ছদ্মবেশী ইহুদী ইহুদী জিন্দীক আবদুল্লাহ ইবনে ছাবা। আদুল্লাহ ইবনে ছাবাই হজরত ওছমান গনীকে স্বজনপ্রিয় বলিয়া জন-সমাজে করম্কিত করার চেষ্টা করে। অতঃপর আব্বাসী আমলে এ পন্হার অনুসরণ করে অপর এক জিন্দীক- নাজ্জাম { ১. নাজ্জামের নাম ইনরাহীম, বাপের নাম ছাইয়ার। হাফেজ ইবনে হাজার লেছানুল মীজানে তাহাকে জিন্দীক বা মুসলিমবেশী কাফের বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন। মৃঃ ২২৯ হিঃ। লেছান ১/৬৭ পৃঃ} নাজ্জম হজরত আবুবকর, ওমর আলী, আবদুল্লাহ ইবনে মাছউদ, জায়েদ ইবনে ছাবেত ও হজাইফা ইবনে ইয়ামানের ন্যায় শ্রেষ্ঠ ছাহাবীগণের প্রতি এই বলিয়া দোষারোপ করে, যো তাঁহারা পরস্পর বিরোধী কাথা {
আমরা বিভিন্ন সময় ও বিভিন্ন পরিস্থিতিতে যে সকল কথা বলিয়া থাকি-সময় ও পরিস্থিতির বিভিন্নতাকে বাদ দিয়া দেখিলে আমাদের সে সকল কথা সমস্তই পরস্পর বিরোধী বলিয়া মনে হইবে। আর শক্ররা এইরূপেই দেখিয়া থাকে।} বলিয়াছেন এবং হজরত আবু হুরায়রাকে (রঃ) এই বলিয়া লোকের নিকট হেয় প্রতিপন্ন করিতে চাহে যে, তিনি অতি অল্প সময় রছূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওছাল্লাম-এর সহচর্য লাভ করিয়া বহু সংখ্য সংখ্যক হাদীছ বর্ণন করিয়াছেন। আবদুল্লাহ ইবনে ছাবার কার্ষের প্রতিবাদ করিয়াছেন স্বয়ং হজরত আলী (রঃ)। তিনি তাহাকে তাহার দলবলসহ আগুনে পোড়াইয়া মারিয়িছেন। আর নাজ্জামের কথার প্রতিবাদ করিয়াছেন মনীষী ইবনে কোতাইবাহ। ইবনে কোতাইবাহ যুক্তি-প্রমাণ দ্বারা তাহার প্রত্যেক কথার অসারতা প্রতিপন্ন করিয়া দিয়াছেন। আজ সমগ্র দুনিয়ার মুসলমানগণ এ ব্যাপারে একমত যে, নবীগণের পর রছূলুল্লাহ (ছঃ)-এর ছাহাবীগণই হইতেছেন সকল উম্মতের সেরা এবং তাঁহার সকলেই হাদীছ বর্ণনার ব্যাপারে সত্যবাদী। তথাপি ইসলামের পাশ্চাত্য সমালোচকগন যাহারা ইসলামের বিরুদ্ধে তৃণের সাহায্য লইতেও কুন্ঠাবোধ করেন না- ইবনে ছাবা ও নাজ্জামের পন্হা অবলম্ব করিয়া হজরত আবু হুরায়রা ও হজরত ইবনে আব্বাছের প্রতি তাঁহাদের রেওয়ায়তের অধিক্যের দরুন সন্দেহ প্রকাশ করিয়াছেন। তাহাদের মতে হজরত আবু হুরায়রার পক্ষে এত অল্প সময়ের নবী-সাহচর্যে এবং হজরত ইবনে আব্বাছের পক্ষে এত অল্প বয়সে এত অধিক হাদীছ আয়ত্ত করা ও তাহার মর্ম বুঝা সম্ভবপর নহে,- কাজেই তাহারা নিজেরাই হাদীছ রচনা করিয়াছেন। হজরত আবু হুরায়রা এবং হাজরত ইবনে আব্বাছের জীবনী আলোচনার ভিতর দিয়অ এখন আমরা দেখাইতে চেষ্ট করিব যে, তাঁহাদের পক্ষে এত অধিক হাদীছ বর্ণনা করা ও তাহার মর্ম উপলদ্ধি করা সম্ভবপর ছিল কি না।
(হজরত আবু হুরায়রা (রঃ)
হজরত আবু হুরায়রা (রঃ) ইয়ামানের অধিবাসী দৌছী গোত্রের লোক ছিলেন। তাঁহার বয়স যখন ত্রিশের উপর, তখন তিনি তাঁহার গোত্রের সহিত মদীনায় উপনীত হন এবং মদীনায় রছূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছল্লামকে না পাইয়া খায়বরে গমন করেন। রছূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম তখন খায়বরে ছিলেন। খায়বা যুদ্ধ সপ্তম হিজরীর মুহাররম মাসে সংঘটিত হয়। তখন হইতে একাদশ হিজরীর প্রথম ভাগে ( রবিউল আউয়াল মাসে) রছূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম-এর এন্তেকাল পর্যন্ত চারি বৎসরকাল তিনি রছূলুল্লাহ ছাল্লল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম এর খদমতে হাজির থাকেন।–তাবাকাতে ইবনে ছা’দ ৪ /৩২৫-৩৮২ পৃঃ
হজরত আলী (রঃ) আমলে তাহাকে উক্ত পদ গ্রহণ করিতে বলিলে তিনি তাহা অস্বীকার করেন। অতঃপর হজরত মুয়াবিয়ার আমলে তিনি দুইবার মদীনার শাসনকর্তা নিযুক্ত হন- মারওয়ানের পদচ্যুতির পূর্ব একবার এবং পরে একবার। শেষবারের কার্যকালে তিনি ৫৮ অথবা ৫৯ হিজরীতে মদীনায় এন্তাকাল করেন। এই সময়ে তাহার বয়স ছিল আশিরও উপরে।
ইসতিয়াব ২০৬ পৃঃ
তিনি রছূলুল্লাহ (ছঃ) হইতে মোট ৫৩৭৪ টি বর্ণনা করিয়াছেন। এত অধিক সংখ্যাক হাদীছ ছাহবীদের মধ্যে অপর কেহ বর্ণনা করেন নাই। এমন দেখা যাক, তাঁহার পক্ষে এত অধিক হাদীছ বর্ণনা করা সম্ভপর ছিল না।
জ্ঞান আহরণেন আগ্রহঃ
ইসলাম গ্রহণ করার পর দুনিয়ার যাবতীয় ভোগ-বিলাস ত্যাগ করিয়া রছূলুল্লাহর (ছঃ) নিকট হইতে জ্ঞান আহরণ করাকেই তিনি জীবনের একমাত্র ব্রত হিসাবে গ্রহণ করেন। তিনি ক্ষণেরকের তরেও রছূলুল্লাহর (ছঃ) সংগ ত্যাগ করেণ নাই। এমন কি, জীবন ধারণোপযোগী অন্ন-বস্ত্রের যোগা-ড়ের জন্যও নহে। তিনি হুজুরের নিকট হইতে যাহা পাইতেন তাহাই খাইতেন এবং হুজুর যাহা দিতেন তাহাই পরিতেন। আর দিবারাত্র মসজিদে নববীর ছোফফায় (বারান্দায়) পড়িয়া থাকিতেন। এতদ্ব্যতীত তিনি অত্যন্ত নিঃসংস্ষ্কোচ স্বভাবের লোক ছিলেন। কখনো তিনি হুজুরের নিকট কোন কথা জিজ্ঞাসা করিতে সংকোচবোধ করিতেন না। একবার তিনি হুজুরকে জিজ্ঞাসা করিলেনঃ ‘হুজুর ! ক্বেয়ামতের দিন আপনার শাফায়াত কোন ভাগ্যবান প্রথম লাভ করিবেন ?’ ইহা শুনিয়া হুজুর ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম বলিলেনঃ ‘আবু হুরায়রা! আমি তোমার জ্ঞান আহরণের আগ্রহ লক্ষ্য করিয়া পূর্বেই অনুমান করিয়াছিলাম যে, এ সম্পর্কে তুমিই সর্বপ্রথম আমাক জিজ্ঞাসা করিবে ।‘-বোখারী, এছাবা-৪-২০৩ পৃঃ
স্মরণশক্তিঃ
হজরত আবু হুরায়রার স্মরণশক্তি অত্যন্ত প্রখর ছিল। তিনি যাহা শুনিতেন তাহা আর সহজে ভুলিতেন না। তাঁহার স্মরণশক্তির জন্য তিনি নিজেও দোআ করিয়াছিলেন এবং স্বয়ং রছুলুল্লাহ (ছঃ)-ও তাঁহার জন্য দো’আ করিয়াছিলেন। হজরত যায়েদ ইবনে ছাবেত বলেনঃ একবার আমি, আমার এক সংগী এবং আবু হুরায়রা মসজিদে বসিয়া কিছু দো’আ করতেছিলাম। এমন সময় রছুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়াছাল্লাম আসিয়া পৌছিলেন। তাঁহাকে দেখিয়া আমরা খামুশ হইয়া গেলাম। ইহা দেখিয়া হুজুর বলিলেনঃ “তোমরা তোমাদের কাজ করিত থাক।“ আমরা পুনরায় দো’আ করিত লাগিলাম এবং হুজুর আমাদের সহিত ‘আমীন আমীন’ বলিতে লাগিলেন। আমাদের দুই জনের দো’আ শেষ হইলে আবু হুরায়রা বলিলেনঃ “খোদা ! আমরা সংগীদ্বয় তোমার নিকট যাহা চাহিয়াছেন তাহা আমিও তোমার নিকট চাহি; অধিকন্ত আমি তোমার নিকট ইহাও চাহি যে, তুমি আমাকে এমন এলম দান করিবে যাহা আমি সহজে ভুলিয়া না যাই।“অতঃপর আমরা বলিলামঃ “হুজুর! আমাদিগকেও যেন আল্লাহ এরূপ এলেম দান করেন।“হুজুর ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম বলিলেনঃ “এ ব্যাপারে আবু হুরায়রা তোমাদের আগেই দরখাস্ত করিয়া ফেলিয়াছে।“-নাছায়ী, এছাবা-৪-২০৫ পৃঃ
বোখারী শরীফে আছে, একদা হজরত আবু হুরায়রা রছুলুল্লাহ (ছঃ)-কে বলিলেনঃ “হুজুর, আমি আপনার নিকট অনেক হাদীছ শুনিয়া থাকি কিন্তু ভুলিয়া যাই। “ হুজুর বলিলেনঃ “তোমার চাদর বিছাও।“ আমি উহা বিছাইলাম (এবং হুজুর উহাতে কিছু পড়িয়া দিলেন ।) অতপর বলিলেনঃ “চাদর তোমার ছিনার ধারণ কর।“ আমি উহা ছিনায় ধারণ করিলাম। অতঃপর আমি আর কোন হাদীছ ভুলি নাই।–এছাবা-৪-২০৪ পৃঃ
মারওয়ানের লিখক কর্মচারী আবুজ জুয়াইজাহ বলেনঃ হজরত আবু হুরায়রাকে কিছু হাদীছ বর্ণনা করিত বলিলেন। আবু হুরায়রা হাদীছ বর্ণনা করিলেন এবং আমি উহা গোপনে লিখিয়া লইলাম। এক বৎসর পর মারওয়ান পুনরায় তাঁহাকে সে সকল হাদীছ বর্ণনা করিতে বলিলেনঃ তিনি উহা বর্ণনা করিলেন। কিন্তু কোথাও একটি শব্দও বেশ-কম হইল না। এছাব-৪-২০৩ পৃঃ
মোটকথা, য়ে ব্যক্তির এরূপ স্মরণশক্তি, তাঁহার পক্ষে চারি বৎসর সময়ে ছনদ ব্যতিত সাড়ে পাঁচ হাজার হাদীছ মুখস্থ করা কি অসম্ভব? এরূপ সময়ে এ পরিমান হাদীছ মুখস্থ করার মত লোক এখনো দুনিয়ায় বিরল নহে।
অভিযোগ সম্পর্কে তাঁহার নিজের উত্তরঃ
হজরত আবু হুরায়রার নিজের জামানাই যে সকল লোক তাঁহার অবস্থা ভাল করিয়া জানিতেন না অথবা যাহারা তাঁহাকে ভালবাসিতেন না তাহাদের কেহ কেহ বলিতে আরম্ভ করিয়া-ছিলেন যে, আবু হুরাযরা (রাঃ) অধিক হাদীছ বর্ণনা করিয়া থাকেন। এ অভিযোগের উত্তরে তিনি নিজে যাহা বলিয়াছিলেন তাহা এখানে প্রণিধানযোগ্য।
মারওয়ান যখন মদীনার শাসনকর্তা ছিলেন, তখন তিনি কোন এক ব্যাপারে হজরত আবু হুরায়রার (রাঃ) প্রতি অসন্তুষ্ট হইয়া বলিলেনঃ ‘লোকে বলে, আবু হুরায়রা (রাঃ) অধিক হাদীছ বর্ণনা করিয়া থাকেন। অথচ তিনি রছুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লামের ওফাতের অল্প দিন পূর্বেই মদীনায় আসিয়াছেন।‘ ইহা শুনিয়া হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলিলেনঃ খায়বার যুদ্ধের সময় সপ্তম হিজরীর প্রথম দিকেই আমি মদীনায় আসিয়াছি। তখন আমার বয়স ত্রিশের উপর। তখন হইতে আমি সর্বদা ছায়ার ন্যায় রছুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম-এর সঙ্গে রহিয়াছি। আমি তাঁহার সহিত বরাবর তাঁহার বিবিদের ঘরে গিয়াছি। আমি তাঁহার সহিত (আমার সময়ে সংঘটিত ) সকল জেহাদেই শরীক হইয়াছি এবং তাঁহার সহিত হজ্জ ও উমরা পালন সমাপন করিয়াছি। করিয়াছি। এককথায় আমি দিবারাত্রই তাঁহার খেদমতে পড়িয়া রহিয়াছি। এসব কারণে আমি অন্যদের তুলনায় তাঁহার হাদীছ অধিক অবগত আছি। খোদার কছম, যাঁহারা আমার পূর্ব হইতে হুজুরের (ছঃ) খেদমতে ছিলেন তাঁহারাও আমার এ হাজিরবাশির (সদা উপস্থিতির) স্বীকৃতি দান করিয়াছেন; বরং তাঁহাদের মধ্যে কেহ কেহ আমার নিকট রছূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম-এর হাদীছও জিজ্ঞাসা করিয়াছেন। এরূপ ব্যক্তিদের মধ্যে হজরত ওমর, হজরত ওছমান, হজরত তালহা ও হজরত জোবায়রও রহিয়াছেন।–তাবাকাতে ইবনে-এছাবা-৪-২০৬ পৃঃ
আমর ইবনে সাইদ বলেনঃ একদা হজরত আয়েশা (রাঃ) আবু হুরায়রা বলিলেনঃ ‘আম্মা, আপনাকে উহা হইতে সুর্মাদানী ও আয়না বাধা দিয়াছিল, আর আমাকে কোন কিছূই বাধঅ দিতে পারে নাই।‘-এছাবা-৪-২০৬ পৃঃ
হাদীছ বর্ণনায় সতর্কতাঃ
হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হাদীছ বর্ণনায় কতদূর সতর্ক ছিলেন তাহা নীচের ঘটনাগুলি হইতে অনুমান করা যায়।
একবার শফীয়াহ ইছবেহী নামক এক ব্যক্তি মদীনায় আসিয়া হজরত আবু হুরায়রাকে (রাঃ) একটি হাদীছ শুনাইতে অনুরোধ করিলেন। উত্তর হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলিলেনঃ “শুনাইব।“ অতঃপর বেহুঁশ হইয়া পড়িলেন। এভাবে তিনি তিনবার বেহুঁশ হইলেন এবং তিনবার হুঁশে আসিলেন। চতুর্থবারে তিনি এত অধিক বেহুঁশ হইলেন যে, একেবারে মাটিতে উপুড় হইয়া পড়িয়া গেলেন। শফিয়া বলেনঃ আমি তাঁহাকে উঠাইয়া লইলাম; হুঁশ ফিরিয়া আসিল। ইতঃপর তাবেয়ী কোলাইব বলেনঃ আমি হজরত আবু হুরায়রাকে (রাঃ) একথা বলিয়া হাদীছ বর্ণনা আরম্ভ করিতে শুনিয়াছি-রছূলুল্লাহ (ছঃ) বলিয়াছেন, “যে ব্যক্তি ইচ্ছা করিয়া আমার নামে মিথ্যা হাদীছ রচনা করিয়াছে সে যেন তাহার স্থান দোজখে তৈয়ার করিয়া লয়।“ এছাবা-৪-২০৬ পৃঃ
আবু হুরায়রার প্রতি ছাহাবীগণের আস্থাঃ
হাদীছ বর্ণনার ব্যাপারে হজরত আবু হুরায়রার প্রতি অপর কোন ছাহাবী কখনো অনস্থ প্রকাশ করেন নাই বা একথা বলেন নাই যে, আবু হুরায়রা (রঃ) রছূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম-এর নামে হাদীছ গড়িয়া বর্ণনা করেন।
মোস্তাদরাকে রিহয়াছেঃ আবু আমের তাবেয়ী বলেন, একদিন আমি হজরত তালহার নিকট ছিলাম। এমন সময় এক ব্যাতি আসিয়া বলিল, আবু মোহম্মদ (তালহা) আমি বুঝতে পারিতেছি না যে, রছূলুল্লাহকে এই ইয়ামানী ( আবু হুরায়রা) অধিক জানেন, না আপনি? তখন হজরত তালহা বলিলেনঃ ইহাতে কোন সন্দেহ নাই যে আবু হুরায়ারা রছূলুল্লাহ (ছঃ) নিকট এমন সকল হাদীছ শুনিয়াছেন যাহা আমরা শুনিবার সুযোগ পাই নাই। তিনি তাঁহার এমন কথা জানেন যাহা আমরা জানিবার সুযোগ পাই নাই। কারণ, আমাদের বিষয়-সম্পত্তি ছিল, স্ত্রী-পুত্র ছিল আমরা কেবল সকাল-সন্ধ্যয় হুজুরের খেদমতে হাজির হইতাম এবং অবশিষ্ট সময়ে এ সবের তত্ত্ববধানে কাটাইতাম। আর আবু হুরায়রা ছিলেন সর্বত্যাগী মিছকীন, (তখন) তাঁহার না ছিল বিষয়-সম্পত্তি আর না ছিল স্ত্রী-পুত্র। তিনি নিজেকে সম্পূর্ণরূপে রছূলুল্লাহ (ছঃ) হাতে সোপর্দ করিয়া দিয়াছিলেন।রছূলুল্লাহ (ছঃ) যেখানে যাইতেন তিনিও সেখানে যাইতেন। হজরত তালহা পুনরায় বলেন, নিঃসন্দেহে আবু হুরায়রা হুজুরের এমন সব কথা জানেন যাহা আমরা জানি না। তিনি তাঁহার নিকট এমন হাদীছ শুনিয়াছেন যাহা আমরা শুনি নাই। অতঃপর হজরত তালহা ইহাও পরিষ্কাররূপে বলিয়া দেন যে-
[ আরবী—————————————————————————]
‘আমাদের মধ্যে কেহ আবু হুরায়রার (রঃ) প্রতি এ অভিযোগ করেন নাই যে, আবু হুরায়রা রছূলুল্লাকহ (ছঃ) নামে এমন হাদীছ গড়িয়া বলিতেছেন যাহা রছূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওছাল্লাম বলেন নাই।–মুস্তাদরাক-৫১১ পৃঃ ফাহাম-১২৪ পৃঃ
বোখারী শরীফে আছেঃ হযরত আবু হুরায়রা (রঃ) যখন রছূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম-এর নামে এ হাদীছ বণর্না করিলেনঃ যে ব্যাক্তি জানাযার নামাজ পড়িয়া মৃতের সহিত কবরস্থান পযর্ন্ত যাইবে তাহার জন্য দুই কীরাত রহিয়াছেন।“তখন হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রঃ) বলিলেন, আবু হুরায়রা আমাদিগকে বহু হাদীছ শুনাইলেন এবং হজরত আয়েশার (রঃ) নিকট গিয়া উহা জিজ্ঞাসা করিলেন।হজরত আয়েশা (রাঃ) উহা সমর্থন করিলেন। তখন হজরত আব্দুল্লাহা বলিলেনঃ ওহো! আবু হুরায়রা (ঐ অনুসারে আমল করিয়া) নিশ্চয়ই আমাদের অপেক্ষা বহু কীরাত অধিক লাভ করিয়াছেন।
এছারা-৪/২০৬,তাবাকাত-৪/৩৩২ পৃঃ
তাবেয়ী আবু ছালেহ (রঃ) বলেনঃ হজরত আবু হুরায়রা কর্তৃক ফজরের ছুন্নাতের পর কিছক্ষণ বিশ্রামের হাদীছটি বর্ণনা করার খবর শুনিয়া হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রঃ) বলিলেনঃ আবু হুরায়রা বড় বেশী হাদীছ বর্ণনা করেন। তখন কেহ তাহাকে প্রশ্ন করিলে, তাহা হইলে আপনি কি মনে করেন যে, আবু হুরায়রা না জানিয়া হাদীছ বর্ণনা করেন? উত্তর হজরত আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেনঃ অবশ্য তাহা নহে। তবে তিনি বেশী সাহসী,আর আমরা এত সাহসী নহ্ ইহা জানিতে পারিয়া হজরত আবু হুরায়রা (রঃ) বলিলেনঃ আমি যদি হফেজ করিয়া রাখি, আর তাঁহারা তাহা ভূলিয়া যান ইহাতে আমার অপরাধ কি? –এছাবা-৪/২০৬ পৃঃ হজরত এজীদ ইবনে আব্দুল্লাহ বলেনঃ আমার পিতা আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রঃ) হজরত আবু হুরায়রাকে (রাঃ) একটি হাদীছ বর্ণনা করিতে শুনিয়া বলিলেনঃ আমরা রছূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলইহে ওয়াছাল্লাম-এর নামে যাহা বলি, ভয় করিয়া বলি, বেশী কথা বলিতে সাহস করি না, আর আবু হুরায়রা (রঃ) সাহস করিয়া অনেক কথাই বলেন। অবশেষে হজরত আব্দুল্লাহ ইহাও বলেনঃ ‘আবু হুরায়রা! আপনি আমাদের মধ্যে সকলের তুলনায় রছূলুল্লাহ ছাল্লাল্লহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম-এর খেদমতে অধিক হাজিরবাস ছিলেন এবং আমাদের সকলের তুলনায় অধিক হাদীছ অবগত আছেন। এছাবা-৪/২০৬ পৃঃ
হজরত ওরয়াহ ইবনে জোবায়র বলেনঃ একদা আমার পিতা হজরত জোবায়ার (রঃ তাঁহার বৃদ্ধাবস্থায়) আমাকে বলেন বলেনঃ মিঞা! আমাকে এই ইয়ামানীর নিকট লইয়া চল। সে বহু হাদীছ বণর্না করিয়া থাকে। আমি তাঁহাকে হজরত আবু হুরায়রা নিকট লইয়া গেলাম। হজরত আবু হুরায়রা হাদীছ বর্ণনা করিলেন। শুনিয়া আমার পিতা বলিলেন, ‘সত্যও বলিয়াছেন মিথ্যাও বলিয়াছেন। আমি বলিলাম, ইহার অর্থ কি আব্বা? উত্তরে তিনি বলিলেনঃ আবু হুরায়রা (রঃ) রছূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম-এর নিকট হইতে শুনিয়াছেন একথা সত্য। কিন্তু উহার কিয়দংশ অযথা স্থানে রাখিয়াছেন (অর্থাৎ,উহা ভুল বুঝিয়াছেন)।–এছাবা-৪/২০৭ পৃঃ
হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ আমার নিকট হাদীছ বর্ণনার খবর হজরত ওমরের (রঃ) নিকট পৌছিলে তিনি আমাকে (ডাকাইয়া) জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি অমুক ছাহাবীর ঘরে আমাদের বলিয়াছিলেনঃ ‘যে ব্যাক্তি ইচ্ছা করিয়া আমার নামে মিথ্যা রচনা করিবে সে যেন তাহার স্থান দোজখে তৈয়ার করে।‘ইহা শুনিয়া হজরত ওমর (রাঃ) বলিলেন [আরবী————————] এখন হাদীছ বর্ণনা করিতে পার।‘ এছাবা-৪/২০৬ পৃঃ
হজরত উবাই ইবনে কা’ব বলেনঃ হজরত আবু হুরায়রা (রঃ) রছূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম-এর নিকট এমন সব কথাও জিজ্ঞাসা করিতেন যাহা অপর কেহ সাধারণতঃ জিজ্ঞাসা করিত না। এছাবা-ঐ
তাবেয়ীনদের সাক্ষ্যঃ
তাবেয়ী হজরত আবু ছালেহ ছাম্মান (রঃ) বলেন, হজরত আবু হুরায়রা (রঃ) ছাহাবীগণের মধ্যে সর্বাপেক্ষা স্মরণশক্তিসম্পন্ন বা বড় হাফেজে হাদীছ ছিলেন।– এছাবা-ঐ
হাদীছ সমালোচক ইমামগণের সাক্ষ্যঃ
ইমাম শাফেয়ী (রঃ) বলেনঃ হজরত আবু হুরায়রা (রঃ)- এর নিকট প্রায় ৮ শত আহলে এলম (বিদ্ধান ব্যাক্তি) হাদীছ শিক্ষা করিয়াছেন। তিনি তাহার সমসাময়িক লোকদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় হাফেজে হাদীছ ছিলেন। এছাবা-৪/৩০২ পৃঃ
মোহাদ্দেছ আবু নোয়াইম বলেনঃ হজরত আবু হুরায়রা (রঃ) ছাহাবীগণের মধ্যে সর্বপেক্ষা বড় হাফেজে হাদীছ ছিলেন।–এছাবা।–ঐ
হাদীছ সমলোচনা ইমামগণের সাক্ষ্যঃ
ইমাম শাফেয়ী (রাঃ) বলেনঃ হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর নিকট প্রায় ৮ শত আহলে এলম ( বিদ্ধান ব্যাক্তি) হাদীছ শিক্ষা করিয়াছেন। তিনি তাহার সমসাময়িক লোকদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় হাফেজে হাদীছ ছিলেন।–এছাবা-৪/২০৩ পৃঃ
মোহাদ্দেছ আবু নোয়াইন বলেনঃ হজরত আবু হুরায়রা (রঃ) ছাহাবীগণের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় হাফেজে হাদীছ ছিলেন।– এছাবা।– ঐ ইমাম জাহাবী বলনে, হজরত আবু হুরায়রা হাদীছের ভাণ্ডার ছিলেন। ফেকাহয়ও তিনি ছিলেন বড় ইমামগণের অন্তর্গত। (আরবী)—————– তাজকেরাতুল হোফফাজ-১/২৮ পৃঃ
হাফেজে ইবনে হাজার আছকালানী বলেন, হজরত আবু হুরায়রা (রঃ) তাহার সমসায়িকদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় হাফেজে হাদীছ ছিলেন।– তাহজীবুত তাহজীব
ইমাম ইবনে আব্দুল বার বলেন, হজতে আবু হুরায়রা (রঃ) ছাহাবীগণের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় হাফেজে হাদীছ ছিলেন। তিনি সকল হুজুরের খেদমতে থাকিতেন যখন মুহাজিরগণ তাহাদের ব্যবসায়ে এবং আনছারগণ তাহাদের ক্ষেত্র- খামারে ব্যস্ত থাকার দরুন হাজির থাকিতে পারিতন না। রছূলুল্লাহ (ছঃ) স্বয়ং তাঁহাকে হাদীছের লোভী ও আগ্রহশীল বলিয়া অভিহিত করিয়াছেন।- ইসতিয়াব- ২০৬ পৃঃ
হাকেম আবু আহমদ বলেন, হজারত আবু হুরায়রা (হুজেরের খেদমতে) অধিক হাজিরবাস (সদা উপস্থিত) ছিলেন। তিনি দিবারাত্র হুজুরের খদমতে পড়িয়া থাকিতেন। হুজুর যেখানে যাইতেন তিনি সেখানে তাঁহার হাদীছের সংখ্যা অধিক।– এছাবা-৪/২০৩ পৃঃ
হাদীছ সংকলন ইমামগণের আস্থাঃ
হজরত আবু হুরায়রার (রাঃ) প্রতি হাদীছ সংকলনকারী সমস্ত ইমামগণেরই যে আস্থা রহিয়াছে তাহা বলাই বাহুল্য। হাদীছ সংকলন ইমামগণর মধ্যে এমন কোন ইমাম নাই যিনি হজরত আবু হুরায়রা হাদীছ গ্রহণ করেন নাই। এমন কি ইমাম বোখারী তাঁহার ‘ছাহীহ’ তে ৪১৮ টি হাদীছ গ্রহণ করিয়াছেন। অথচ তাঁহাদের (হাদীছের ইমামদের) সর্বসম্মত নীতি এই যে, যে ব্যাক্তি রছূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছেল্লাম-এর নামে একটি মাত্র হাদীছও গড়িয়া বলিয়াছে তাহার কোন হাদীছই গ্রহণযোগ্য নহে।
ফেকাহর ইমামগণের আস্থাঃ
ফেকাহ শাস্ত্রের সকল ইমামই ফেকাহ রচনায় হজরত আবু হুরায়রার হাদীছের উপর নির্ভর করিয়াছেন। ফেকাহর কিতাব হইতে হজরত আবু হুরায়রা কর্তৃক বর্ণিত হাদীছের ভিত্তিতে রচিত মাছআলাসমুহ বাদ দেওয়া হইলে ফেকাহর এক বিরাট অংশই বাদ পড়িয়া যাইবে। এখন বির্চায বিষয় এই যে, হজরত আবু হুরায়রা সম্পর্কে একদিকে ছাহাবা, তাবেয়ীন এবং হাদীছ ও ফেকাহর সেই সকল বিশেষজ্ঞগণ- যাঁহারা নিজেদের সমগ্র জীবনকে হাদীছ ও ফেকাহর খেদমতে ওয়াকফ করিয়া দিয়েছেন তাহাদের অভিমত আর অপর দিকে নাজ্জম জিন্দীক ও তাহার অনুসারীগণ, যাহাদের হাদীছ সম্বদ্ধে অভিজ্ঞতা তো দুরের কথা, স্বয়ং ইসলামে পযর্ন্ত আস্থা নাই তাহরদের রায়, এ দুই- এর মধ্যে কনটি গ্রহণযোগ্য? বিচারের ভার আমরা পাঠকবর্গের বিচর-বুদ্ধির উপর ন্যস্ত করিলাম।
(খ)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বছ (রাঃ)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাছ (রাঃ) রছূলুল্লাহ (ছঃ)- এর চাচা হজরত আব্বাছের পুত্র তিনি ৮ম হিজরীতে তাঁহার পিতা হজরত আব্বাছের সহিত মদীনা আগমন করেন। তাঁহার পিতা এই বৎসরই মক্কা বিজয়ের অল্পদিন পূর্ব প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণ করেন। এ হিসাবে হজরত আবদুল্লাহ তিন বৎসরকাল রছূলুল্লাহ (ছঃ)-এর সাহচর্য লাভ করেন। হুজুরের ওফাতের সময় আবদুল্লাহর বয়স ১২-১৫ বৎসরের মধ্যে ছিল।–ইসতিয়াব-৩৪৩ পৃঃ । তিনি ৭০-এর উপর বয়সে ৬৮ হিজরীতে তায়েফে এন্তেকাল করেন। হাদীছের কিতাবে তাঁহার প্রমখাৎ বর্ণিত মোট ১১৬০টি হাদীছ রহিয়াছে।
স্মরণশক্তি ও ধীশক্তিঃ
হজরত ইবনে আব্বাছের স্মরণশক্তি অত্যন্ত প্রখর ছিল। তিনি কোন কথা একবার শুনিলেনই স্মরণ রাখিতে পারিতেন। কথিত আছে যে, তিনি ওমর ইবনে রাকীয়ার একটি দীর্ঘ কবিতা একবা মাত্র শুনিয়াই মখস্থ করিয়া ফেলিয়াছেন।– জামে’-৩৬ পৃঃ। এভাবে তাঁহার ধীশক্তিও এত অসাধারণ ছিল যে, তিনি অতি সামান্য মনোযোগেইই নেহায়েত জতিল সমস্যার সমধান করিতে পারিতেন। হাদীছ ও ছারাতের কিতাব ইহার বহু নজীর রহিয়াছে। রছুলুল্লাহ (ছঃ) তাঁহাকে অত্যন্ত ভালবাসিতেন এবং তাঁহার এলম ও জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য বহু দো’আ করিয়াছেন। একবার আবদুল্লাহ তাঁহার খালার ঘরে রছূলুল্লাহর (ছঃ) জন্য অজুর পানি যোগাড় করিয়া রাখিলেন। ইহাতে খুশী হইয়া রছূলুল্লাহ (ছঃ) তাঁহার জন্য দো’আ করিলেনঃ ‘আল্লাহ! তুমি আবদুল্লাহকে দ্ধীনের জ্ঞান ও কোরআনের সমঝ দান কর।‘ এভাবে একবার তিনি রছূলুল্লাহ সতিত (তাহাজ্জদ) নামাজে শরীক হইয়া আদবের খাতিরে সামান্য পিছনে সরিয়া দাড়াইলেন। ইহা দেখিয়া রছূলুল্লাহ (ছঃ) তাঁহার জন্য দো’আ করিলেনঃ আল্লাহ! তুমি তাহাকে এলম ও সমঝ দান কর। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর বলেনঃ আমি রছূলুল্লাহকে (ছঃ) ইবনে আব্বাছের মাথায়া হাত ফিরাইতে এবং তাঁহার জন্য এই দো’আ করিতে দেখিয়াছিঃ ‘আল্লাহ তুমি আবদুল্লাহকে দ্ধীনেরে সমঝ এবং কোরআন বুঝিবার শক্তি দান কর।‘ এছাবা-২/৩২২ পৃঃ
জ্ঞান আহরণের আগ্রহঃ
হজরত ইবনে আব্বাছরে জ্ঞান আহরণের আগ্রহ অত্যন্ত প্রবল ছিল। এ উদ্দেশ্য তিনি সব সময় রছূলুল্লাহ (ছঃ)-এর সঙ্গে থাকিতেন। হজরত আবদুল্লাহ প্রায় রাত্র তাঁহার খালা-আম্মা উম্মুল মু’মিনীন হজরত মাইমূনার গৃহেই যাপন করিতেন এবং হুজুরের নিকট হইতে জ্ঞান আহরণ করিতে। হুজুরের এন্তেকালের পর তাঁহার এ আগ্রহ আরো প্রবল হইয়া উঠে এবং তিনি প্রবণ ছাহাবীদের দ্ধারে যাইয়া রছূলুল্লাহ হাদীছ সংগ্রত করিতে আরম্ভ করেন। আদবের খাতিরে অনেক সময় তিনি তাঁহার আগমন সংবাদ না জানাইয়াই ছাহাবীদের দ্ধারে বসিয়া অপেক্ষা করিতেন। ফলে ধুলাবালিতে তাঁহার সর্বশরীর ঢাকিয়া যাইতে।
দারেমীতে আছেঃ তিনি রছূলুল্লাহ (ছঃ)-এর আজাদ করা গোলাম হজরত আবু রাফের নিকট যাইয়া হাদীছ জিজ্ঞাসা করিতেন এবং উহা লিখিয়া লইতেন। দারেমীতে ইহাও রহিয়াছে যে, একবার তিনি তাঁহার সমবয়স্ক জনৈক আনছারীকে বলিলেনঃ ‘হুজুর (ছঃ) এন্তাকল করিয়াছেন। (আজ আমরা তাঁহার নিকট হইতে জ্ঞান আহণের বঞ্চিত হইলাম) চল, তাঁহার ছাহাবীগণের নিকট হইতে জ্ঞানের প্রতি কে মোহতাজ হইবে? আনছারী উত্তর করিলেনঃ ‘এত প্রবীণ ছাহাবী থাকিতে তোমার জ্ঞানের প্রতি কে মোহতাজ হইবে? ইহা শুনিয়া আবদুল্লাহ একাই জ্ঞান আহরণে আত্মনিয়োগ করিলেনঃ এই যু্বকটি আমা অপেক্ষা অধিক বুদ্ধিমানের কাজ করিছেন।
মোটকথা_ স্মরণশক্তি,ধীশক্তি ও আগ্রহ গুণে তিনি অল্প দিনের মধ্যেই কোরআন, হাদীছ ও আববী সাহিত্যে অগাধ পাণ্ডিত্য লাভ করেন এবং অল্প বয়সে প্রবীণ ছাহাবীগণের নিকটও সম্মান লাভ করিতে সমর্থ হন। হজরত ওমর (রাঃ) পযর্ন্ত তাঁহাকে প্রবীণ ছাহাবীদের সারিতেই বসাইতেন। একবার জনৈক ছাহাবী ইহাতে আপত্তি করিলে হজরত ওমর (রাঃ) উপস্থিত মসলিসে একটা প্রশ্ন উত্থাপন করিলেন। কেহই ইহার সন্তোষজনক দিতে পারিলেন না। অবশেষে হজরত ওমর (রাঃ) আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাছের প্রতি ইংগিত করিলেন। তিনি উহার এমন উত্তর দিলেন যাহাতে সকলেউ সন্তুষ্ট হইয়া গেলেন এবং হজরত ওমর (রাঃ) কতৃক তাঁহার সম্মানে কারণ বুঝিতে পারিলেন।
একবার এক ব্যাক্তি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমরকে কোরআনের একটি আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করিলেনঅ।তিনি তাহাকে উহা হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাছের নিকট দরইয়াফত করিতে বলিলেন। প্রশ্নকারী ফিরিয়া আসিয়া হজরত ইবনে আব্বাছের উত্তর নিবেদন করিলে হজরত ইবনে ওমর বলিলেনঃ ‘আমি এ যাবঃ মনে করিতাম, কোরাআন সম্পর্কে কথা বলা ইবনে আব্বাছের দুঃসাহস বৈ কিছুই নহে। কিন্তু এখন বঝিতে পারিলাম,সত্যই ইবনে আব্বাছকে ‘জ্ঞন’ দান করা হইয়াছে।‘-এছাবা
এক কথায় অল্প বয়সেই তিনি এক অথৈ বিদ্যার সাগর পরিণত হন এবং লোক তাঁহাকে ‘হিবরুল উম্মাহ’ (আরবী_——– বা জাতির জ্ঞানাচার্য নামে অভিহিত করেন। হজরত ইবনে আব্বাছ সম্পর্কে পাশ্চাত্য সমলোচকদের অভিযোগ এই যে, এত অল্প বয়সে একটি ছেলের পক্ষে হুজুর (ছঃ)-এর ক্থ ও কার্যের মর্ম উপলদ্ধি করা একরূপ অসম্ভব ব্যাপার। একথা, সত্য যে, হজরত ইবনে আব্বাছর বয়সের প্রতি নজর করিলে আপাততঃ ইহা কঠিন বলিয়া মনে হয়। কিন্তু তাঁহার পরিবেশ ও অসাধারণ ধীশক্তির প্রতি দৃষ্টিপাত করিলে ইহাতে আশ্চার্যবোধ করিবার কিছুই নাই। এ বয়সের একটা সাধারণ ছেলের পক্ষে রাজনৈতিক সমস্যাবলী উপলদ্ধি করা কঠিন হইলেও রাজ পরিবারভুক্ত ও রাজপরিবেশে প্রতিপালিত একটি বলিষ্ঠ ও অসাধারণ ছেলের পক্ষে ইহা মোটেই কঠিন নহে । নবী ছোলাইমান (আঃ) যে অল্প বয়সেই সূক্ষ্ম বুদ্ধির মালিক হইয়াছিলেন তাহার সাক্ষ্য আল্লাহ তা ‘আলাই দিয়াছেন । একজন নবী বা এত অতীততের কথা কেন, আমাদের এ শেষ যুগের সনীষীবৃন্দের মধ্যেও এমন অনেকে রহিয়াছেন যাঁহার প্রায় এ বয়সের মধ্যেই পূর্ণজ্ঞান লাভ করিয়াছিলন। ইমাম ইবনে তাইমিয়া দশ বৎসর বয়সে সাধারণ পাঠ্য শেষ করিয়া পনর বৎসর বয়সে ‘ফতওয়া’ দিতে আরম্ভ করেন’ আর সতের বৎসর বয়সে কিতাব লেখা আরম্ভ করেন।শাহ ওলীউল্লাহ দেহলবী [(রঃ) মৃঃ ১১৭৬ হিঃ ] প্রায় এ বয়সেই একজন বিজ্ঞ আলেমে পরিণত হন এবং মাওলানা আবদুল্ হাই লক্ষ্মৌবী (মৃঃ ১৩০৪ হিঃ) ১৬/১৭ বৎসর বয়সে অনেক মূল্যবান কিতাব লেখেন।
অতএব, হজরত ইবনে আব্বছের ন্যায় একজন অসাধারণ ছেলের পক্ষে রছূলুল্লাহর (ছঃ) অর্থাৎ, আপন ভাইয়ের কথা না বুঝার অভিযোগ কি সত্যই তাঁহার প্রতি অবিচার নহে? এতদ্ধ্য ভীত তিনি যে, সমস্ত হাদীছই রছূলুল্লাহর জীবনে রছূলুল্লাহর নিকট হইতে লাভ করিয়াছিলেন এ কথা বলিতেছেন কে? তিনি কোন কোন হাদীছ হজরত ওমর (রাঃ), হজরত আলী (রাঃ) ও হজরত উবাই ইবনে কা’বের নিকট শুনিয়াও বর্ণনা করিয়াছেন। আর মোহাদ্দেছগণের সর্ববাদি সম্মত মত এই যে, এক ছাহাবী অপর ছাহাবী অপর ছাহাবীর নিকট হাদীছ শুনিয়া যদি তাঁহার (মধ্যস্থ ছাহাবীর) নাম উল্লেখ না করিয়া সোজাসুজি রছুলুল্লাহ (ছঃ)- এর নাম করিয়াও বর্ণনা করেন এবং বলেন যে, রছূলুল্লাহ (ছঃ) এইরূপে বলিয়াছেন বা করিয়াছেন- তাহাও জায়েজ আছে। কেনান, ছাহাবীগণ সকলেই আমদেল অর্থাৎ, হাদীছ বর্ণনায় সত্যবাদী। আর এ ব্যাপারে যদি হজরত ওমর আলী ও উবাই ইবনে কা’ব (রাঃ)-ও সত্যবাদী।না হন, তবে দুনিয়াতে কে সত্যবাদী হইবেন?