ওহীর উপর ঈমান আনার কারণ
আপনার প্রথম প্রশ্ন হলো, “ওহীর সাথে ঈমান ও আনুগত্যের যতদূর সম্পর্ক রয়েছে-এ ক্ষেত্রে ওহীর উভয় অংশের মর্যাদা কি সমান?”
এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর কোন ব্যক্তির বুঝে উত্তমরূপে আসতে পারে না যতক্ষণ সে প্রথমে হৃদয়ঙ্গম না করবে যে, ওহীর উপর ঈমান আনয়ন এবং তার অনুসরণের আসল ভিত্তি কি? সুস্পষ্ট কথা হলো, ওহী যে ধরনেরই হোক না কেন তা সরাসরি আমাদের নিকট আসেনি যে, আমরা স্বয়ং তা আল্লাহর তরফ থেকে নাযিল হওয়ার বিষয়টি জানতে পরি এবং তার অনুসরণ করতে পারি। তা তো আমরা রসূলুল্লাহ (স) এর মাধ্যমে প্রাপ্ত হয়েছি এবং তিনিই আমাদের বলেছেন যে, এই হেদায়াত বাণী আল্লাহর পক্ষ থেকে তার নিকট এসেছে। ওহীর (আল্লাহর তরফ থেকে আসার) উপর ঈমান আনার পূর্বে আমরা রসূলের উপর ঈমান আনি এবং তাকে আল্লাহ তাআলার সত্য বণীবাহক বলে স্বীকার করি। আমরা রসূলের বর্ণনার উপর আস্থা স্থাপন করার পরই তার ওহীকে আল্লাহর তরফ থেকে পাঠানো ওহী হিসাবে মেনে নেয়ার এবং তার অনুসরণ করার পালা আসে। অতএব আসল জিনিস ওহীর উপর ঈমান নয়, বরং রসূলুল্লাহ (স) এর উপর ঈমান এবং তাকে সত্যবদী বলে মেনে নেয়া। তাকে সত্যবাদী বলে মেনে নেয়ার ফলশ্রুতিতে আমরা ওহীকে আল্লাহ প্রদত্ত ওহী বলে মেনে নেই। অন্য কথায় বিষয়টি এভাবে বলা যেতে পারে যে, রসূলের রিসালাতের উপর ঈমান আনার কারণ কুরআন নয়, বরং কুরআনের উপর আমদের ঈমানের কারণ রসূলের রিসালাতের উপর ঈমান। ঘটনাসমূহের ক্রমবিন্যাস এই নয় যে, প্রথমে আমাদের নিকট কুরআন এসেছে. তা আমাদেরকে মুহাম্মাদুর রসলুল্লাহ (স) এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে একং এর বক্তব্য সঠিক মনে করে আমরা রসূলুল্লাহ (স) কে আল্লাহর রসূল হিসাবে মেনে নিয়েছি। বরং ঘটনার সঠিক ক্রমবিন্যাস এই যে, প্রথমে মুহাম্মদ (স) এসে রিসালাতের দাবী পেশ করেছেন অতপর যে ব্যক্তিই তাকে সত্যবাদী রসূল বলে মেনে নিয়েছে সে তার এই কথাও সত্য সঠিক বলে মেনে নিয়েছে যে, এই যে কুরআন তিনি পেশ করছেন তা মুহাম্মদ (স) এর কালাম নয়, বরং আল্লাহ তাআলার কালাম নয়, বরং আল্লাহ তাআলার কালাম।
এটা এমন একটি স্বতঃসিদ্ধ মর্যাদা যা কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি অস্বীকার করতে পারে না। এই পজিশন যদি আপনি স্বীকার করেন তবে নিজ স্থানে চিন্তা করে দেখুন, যে রসূলের বিশ্বস্ততার ভিত্তিতে আমরা কুরআনকে ওহী হিসাবে স্বীকার করে নিয়েছি, সেই রসূলই যদি আমাদের বলেন যে, ুতিনি কুরআন ছাড়াও ওহীর মাধ্যমে আল্লাহর নিকট থেকে হেদায়াত ও বিধান লাভ করে থাকেন তবে তা বিশ্বাস না করার শেষ পর্যন্ত কি কারণ থাকতে পারে? যখন রিসালাতের প্রতি ঈমান আনয়ন-ই ওহীর উপর ঈমান আনয়নের মূল ভিত্তি তখন আনুগত্যকারীর জন্য এতে কি পার্থক্য সৃষ্টি হয় যে, রসূল (স) আল্লাহর আদেশ কুরআনের কোন আয়াতের আকারে আমাদের নিকট পৌছে দেন অথবা কোন নির্দেশ বা কাজের আকারে? দৃষ্টন্তস্বরূপ পাঁচ ওয়াক্ত নামায সর্বাবস্থায় আমাদের উপর ফরজ এবং কুরআনের কোন আয়াতে “হে মুসলমানগন! তোমাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নাময ফরজ করা হয়েছে” এরূপা নির্দেশ না আসা সত্ত্বেও উম্মাত তা ফরজ হিসাবে মান্য করে। প্রশ্ন হলো কুরআন মজীদে যদি এই হুকুমও এসে যেত তবে এর ফরজিয়াতের মধ্যে এবং এর গুরুত্বের মধ্যে কি শ্রীবৃদ্ধি ঘটতো? তখনও তা ঠিক সেভাবেই ফরজ হত যেভাবে এখন রসূলুল্লাহ (স) এর বক্তব্যের মাধ্যমে ফরজ আছে।
‘মা আনযালাল্লাহু’ দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে?
আপনার দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো “কুরআন মজীদ যেখানে (যা তোমার উপর নাযিল করা হয়েছে) বলেছে, তার দ্বারা কি শুধুমাত্র কুরআনকে বুঝানো হয়েছে, না তার মধ্যে ওহীর উল্লেখিত প্রধান অংশও অন্তর্ভূক্ত রয়েছে? এর জওয়াব এই যে, কুরআন মজীদে যেখানে “নাযিল করা”- সাথে “কিতাব” অথবা “যিকর” অথবা “কুরআন” ইত্যাদি শব্দ এসেছে কেবলমাত্র সেখানে (আল্লাহ যা নাযিল করেছেন) এর দ্বারা কুরআন মজীদ বুঝঅনো হয়েছে। আর যেসব স্থানে কোন সম্বন্ধপদ উক্ত বাক্যকে কুরআনের জন্য নির্দিষ্ট করে না সেখানে উক্ত বাক্য দ্বারা আমরা মহানবী (স) এর নিকট থেকে যেসব শিক্ষা ও হেদায়াত লাভ করেছি সেগুলো সবই বুঝায়, তা কুরআনের আয়াতের আকারেই হোক অথবা অন্য কোন আকারে। এর প্রমাণ স্বয়ং কুরআন মজীদেই বিদ্যমান রয়েছে। কুরআন আমাদের বলে যে, আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে মহানবী (স) এর উপর শুধুমত্র কুরআনই নাযিল হয়নি, বরং আরো কিছু নাযিল হয়েছে। সূরা নিসার ইরশাদ হচ্ছে:
“আল্লাহ তোমার প্রতি কিতাব ও হিকমাহ নাযিল করেছেন এবং তুমি যা জানতে না তা তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন”- (আয়াত নং ১১৩)।
অনুরূপ বিষয়বস্তু সম্বলিত আয়াত সূরা বাকারায়ও রয়েছে। যেমন:
“এবং তোমরা স্মরণ কর তোমাদের প্রতি আল্লাহর নিয়ামতসমূহের এবং তিনি তোমাদের উপর কিতাব ও হিকমাত থেকে যা নাযিল করেছেন, যার সাহায্যে তিনি তোমাদের উপদেশ দেন-”(আয়াত নং১৩১)।
এই কথার পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে সূরা আহযাবে, যেখানে মহানবী (স) এর ণকে উপদেশ দান করা হয়েছে।
“আল্লাহর আয়াতসমূহ ও জ্ঞানের কথা-যা তোমাদের ঘরসমূহের পঠিত হয় তা তোমরা স্মরণ রাখবে”-(আয়াত নং ৩৪)।
উপরোক্ত আয়াতসমূহ থেকে জানা যায় যে, মহানবী (স) এর উপর কিতাব ছাড়াও একটি জিনিস “হিকমাহ” ও নাযিল করা হয়েছিল যা শিক্ষা তিনি লোকদের দান করতেন। এর অর্থ এছাড়া আর কি হতে পারে যে, মহানবী (স) যে বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতা সহকারে কুরআন মজীদের পরিকল্পনা বস্তবায়িত করার জন্য কাজ করতেন এবং নেতৃত্ব ও পথনির্দেশের দায়িত্ব পালন করতেন তা শুধুমাত্র তাঁর স্বাধীন ও ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত ছিল না, বরং তাও আল্লাহ তাআলা তার উপর নাযিল করেন। অনন্তর তা এমন কোন জিনিস ছিল যা স্বয়ং তিনিই ব্যবহার করতেন না, বরং লোকদেরও শিক্ষা দিতেন।
প্রকাশ থাকে যে,. এই শিখানোর কাজ কথার আকারেও হতে পারে কিংবা বাস্তব কর্মের আকারেও হতে পারে। তাই উম্মাত মহানবী (স) এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার নাযিলকৃত দুটি জিনিস লাভ করেছিল: একটি কিতাব এবং দ্বিতীয়টি হিকমাহ (কর্মকৌশল)। আর এই হিকমাহ তারা লাভ করেছে তার বাণীসমূহের আকারেও এবং বাস্তব কার্যবলীর আকারেও।
পুনশ্চ কুরআন মজীদ আরও একটি জিনিসের কথা উল্লেখ করেছে যা আল্লাহ তাআলা কিতাবের সাথে নাযিল করেছেন।
“আল্লাহ-ই নাযিল করেছেন সত্যসহ কিতাব ও তুলাদন্ড”-(সূরা শূরা: ১৭)।
“নিশ্চয়ই আমি আমার রসূলগণকে সুস্পষ্ট প্রমানাদিসহ প্রেরণ করেছি এবং তাদের সঙ্গে কিতাব ও তুলাদন্ড দিয়েছি যাতে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে”-(সূরা হাদীদ:২৫)।
এই মীযান (তুলাদন্ড) যা কিতাবের সাথে নাযিল করা হয়েছে তা সুস্পষ্টভাবেই দোকানে দোকানে রক্ষিত দাড়িপাল্লা নয়, বরং এর দ্বারা এমন কোন জিনিস বুঝানো হয়েছে যা আল্লাহ তাআলার হেদায়াত অনুযায়ী মানবীয় জীবনে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করে, তার বিকৃতিকে পরিশুদ্ধ করে দেয় এবং বাড়াবাড়ি ও প্রান্তিকতা দূরীভূত করে মানব চরিত্র, আচার-আচরণ ও আদান-প্রদানকে ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠা করে। কিতাবের সাথে এই জিনিস নবী-রসূলগণের উপর নাযিল করার পরিষ্কার অর্থ এই যে, আল্লাহ তাআলা নবীগণকে বিশেষভাবে নিজের পক্ষ থেকে পথ প্রর্দশনের এমন যোগ্যতা দান করেছিলেন যার সাহায্যে তারা আল্লাহর কিতাবের লক্ষ্য অনুযায়ী ব্যক্তি সমাজ ও রাষ্টে ন্যয়ানুগ ব্যবস্থা কায়েম করেছেন। এই কাজ তাদের ব্যক্তিগত ইজতিহাদী ক্ষমতা ও রায়ের উপর সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং আল্লাহ তাআলার নাযিলকৃত তুলাদন্ডের সাহায্যে মেপে মেপে তাঁরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন যে, মানব জীবনের বিভিন্ন উপাদানের কোন অংশের কত ওজন হওয়া উচিত।
পুনশ্চ কুরআন মজীদ একটি তৃতীয় জিনিসের খবর দেয় যা কিতাবের অতিরিক্ত নাযিল করা হয়েছে।
“অতএব তোমরা ঈমান আন আল্লাহ ও তার রসূলের উপর এবং সেই নূরের উপর যা আমি নাযিল করেছে” (সূরা তাগাবুন:৮)।
“অতএব যারা এই রসূলের প্রতি ঈমান আনে, তাকে সম্মান করে তাকে সাহায্য করে এবং যে নূর তার সাথে নাযিল করা হয়েছে তার অনুসরণ করে তারই সফলকাম”(সূরা আরাফ:: ১৫৭)।
“আল্লাহর তরফ থেকে তোমাদের নিকট এক নূর ও স্পষ্ট কিতাব এসে গেছে। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে চায় এর দ্বারা তিনি তাদের শান্তির পথে পরিচালিত করেন” (সূরা মাইদা: ১৫-১৬)।
উল্লেখিত আয়াতসমূহে যে নূরের কথা বলা হয়েছে তা ছিল কিতাব থেকে স্বতন্ত্র একটি জিনিস যেমন তৃতীয় আয়াতের শব্দসমূহ পরিষ্কার বলে দিচ্ছে। এই নূরও আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তার রসূলের উপর নাযিল করা হয়েছিল। আল্লাহ তাআলা মহানবী (স) কে যে জ্ঞান বুদ্ধিবিবেক,প্রজ্ঞা দূরদৃষ্টি ও বিচক্ষণতা দান করেছিলেন, যার সাহায্যে তিনি জীবনের চলার পথসমূহের মধ্যে সঠিক ও ভ্রান্ত পথ চিহ্নিত করেছেন, জীবন সমস্যার সমাধান পেশ করেছেন এবং যার আলোকে কাজ করে তিনি নৈতিকতা ও আধ্যত্বিকতা, সভ্যতা সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও সমাজনীতি এবং আইন ও রাজনীতির জগতে মহান বিপ্লব সাধন করেছেন-এই নূর বলতে স্পষ্টতই সেই সব শক্তিকেই বুঝায়। এটা কারো ব্যক্তিগত কাজ ছিল না যে, সে আল্লাহর কিতাব পাঠ করে নিজের বুঝ অনুযায়ী চেষ্ট সাধনা করে থাকবে। বরং এটা ছিল আল্লাহ তাআলার সেই মহান প্রতিনিধির কাজ যিনি কিতাব লাভের সাথে সাথে সরাসরি আল্লাহর নিকট থেকে জ্ঞান ও বিচক্ষণতার নূরও লাভ করেছিলেন।
উপরোক্ত আলোচনার পর একথা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, কুরআন মজীদ যখন আমাদেরকে অন্য সব জিনিস ত্যাগ করে শুধুমাত্র (আল্লাহ যা নাযিল করেছেন)-এর অনুসরণের নির্দেশ দেয়া তখন এর অর্থ কেবলমাত্র কুরআনেরই অনুসরণ বুঝায় না, বরং সেই নূর, হিকমাহও মীযানেরও অনুসরণ করা বুঝায় যা কুরআনের সাথে মহানবী (স) এর উপর নাযিল করা হয়েছিল এবং যার প্রকাশ অবশ্যম্ভাবীরূপে মহানবী (স) এর জীবনাচার নৈতিকতা, কাজ ও কর্মের মধ্যেই হয়েছিল। তাই কুরআন মজীদ কোথাও বলে, (আল্লাহ যা নাযিল করেছেন )এর আনুগত্য কর ( যেমন: ৩. ৩১, ৩৩.২১ এবং ৭.১৫৬ নং আয়াত)। তা যদি স্বতন্ত্র দুটি জিনিস হত তাহলে একথা সুস্পষ্ট যে, কুরআনের হেদায়াত পরস্পর বিপরীত হয়ে যেত।
সুন্নাত কোথায় আছে?
আপনার তৃতীয় প্রশ্ন এই যে, “ওহীর দ্বিতীয় অংশ কোথায়? কুরআনের মত তার সংরক্ষণের দায়িত্বও কি আল্লাহ তাআলা নিয়েছেন?”
এই প্রশ্নের দুটি ভিন্ন ভিন্ন অংশ রয়েছে। প্রথশ অংশ “ওহীর এই দ্বিতীয় অংশ কোথায়?” হুবহু এই প্রশ্নই আপনি পূর্বে আমাকে করেছিলেন এবং আমিও তার বিস্তারিত উত্তর দিয়েছি। কিন্তু আপনি তা পুনর্বার এমনভাবে ব্যক্ত করেছেন যেন আপানি মূলত এর কোন উত্তরই পাননি। অনুগ্রহপূর্বক আপনার প্রথম চিঠি তুলে নিয়ে দেখুন, যার মধ্যে দুই নম্বর প্রশ্নের বিষয়বস্তু তাই ছিল যা আপনার বর্তমান প্রশ্নের বিষয়বস্তু। অতপর আমার দ্বিতীয় পত্রখানী তুলে পড়ে দেখুন যার মধ্যে আমি আপনাকে এই প্রশ্নের বিস্তারিত জওয়াব দিয়েছি। এখন আপনার উক্ত প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করা এবং আমার পূর্বেকার জওয়াব সম্পূর্ণ উপেক্ষা করার অর্থ এই দাড়ায় যে, আপনি হয় আপনার কল্পনার জগতে হারিয়ে গেছেন এবং অন্যের কথা আপনার মগজ পর্যন্ত পৌছার কোন পথ পায় না, অথবা আপনি এই বিতর্ক শুধুমাত্র বিতর্ক হিসাবেই করেছেন।
সুন্নাতের হেফাজতও কি আল্লাহ করেছেন?
আপনার এই প্রশ্নের দ্বিতীয় অংশের জওয়াব শুনার পূর্বে এ কথার উপর সামান্য চিন্তা করুন যে, কুরআন মজীদের হেফাজতের যে দায়িত্ব আল্লাহ তাআলা গ্রহণ করেছেন তা কি তিনি সরাসরি হেফাজত করছেন না মানুষের মাধ্যমে হেফাজত করছেন? এর উত্তর আপনি এছাড়া আর কিছুই দিতে পারবেন না যে, তার হেফাজতের জন্য মানুষকেই মাধ্যমে বানাণো হয়েছে। আর কার্যত তার হেফাজত এভাবে হয়েছে যে, মহানবী (স) এর নিকট থেকে লোকেরা যে কুরআন লাভ করছিল তা সমসাময়িক কালে হাজারো ব্যক্তি অক্ষরে অক্ষরে মুখস্ত করে নেন, অতপর হাজার থেকে লাখ এবং লাখ থেকে কোটি কোটি মানুষ বংশ পরস্পরায় তা গ্রহণ করেছে এবং মুখস্ত করে আসছে। এমনকি কুরআনের কোন শব্দ দুনিয়া থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার অথবা কখনও তার মধ্যে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হওয়া এবং সাথে সাথে তা দৃষ্টিতে না পড়া সম্পূর্ণ অসম্ভব হয়ে গেছে। হেফাজতের এই অসাধারণ ব্যবস্থা আজ পর্যন্ত দুনিয়ার অন্য কোন পুস্তকের জন্য সম্ভবপর হয়নি এবং তা প্রমাণ করে যে, এটা আল্লাহ তাআলার পর্কিল্পিত ব্যবস্থা।
আচ্ছা এখন নিরীক্ষণ করে দেখুন যে, সর্বকালের জন্য যে রসূলকে গোটা দুনিয়াবাসীর রসূল বানানো হয়েছিল এবং যার পরে নবূওয়াতরে দরজা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে তার জীবনের কর্মকান্ডের হেফাজতের ব্যবস্থা আল্লাহ তাআলা এমনভাবে করেছেন যে, মানব জাতির ইতিহাসে আজ পর্যন্ত বিগত কোন নবী, কোন পথপ্রদর্শক, নেতা, পরিচালক, বাদশাহ অথবা বিজয়ী বীরের ইতিহাস এভাবে সংরক্ষিত নেই। এই হেফাজতের ব্যবস্থাও সেইসব উপায়-উপকরণের সাহায্যে করা হয়েছে যে সবের মাধ্যমে কুরআনের হেফাজতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নবুওয়াতের পরিসমাপ্তির ঘোষণার অর্থ স্বয়ং এই যে, আল্লাহ তাআলা তার নিযুক্ত সর্বশেষ রসূলের পথপ্রদর্শন এবং তার পদাংক কিয়ামত পর্যন্ত জীবন্ত রাখার যিম্মাদারী নিয়ে নিয়েছেন, যাতে তার জীবন সর্বকালে মানব জাতিকে পথপ্রদর্শন করতে পারে এবং তার পরে কোন নতুন নবীর আগমনের প্রয়োজনীয়তা অবশিষ্ট না থাকে। এখন আপনি নিজেই দেখে নিন যে আল্লাহ তাআলা বাস্তবিকই পৃথিবীর পরতে পরতে এই পদচিহ্ন কিভাবে মজবুত করে দিয়েছেন যে,আজ কোন শক্তি তা বিলীন করতে সক্ষম নন।
আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন না, এই যে উযূ, পাঁচ ওয়াক্তের এই নামায, এই আযান, জামাআত সহকারে মসজিদের এই নামায, ঈদের নামায, হজ্জের অনুষ্ঠান, ঈদুল আযহার কুরবানী, যাকাত, খাতনা, বিবাহ ও তালাক, উত্তরাধিকারের নীতিমালা, হালাল-হারামের নিয়মকানুন এবং ইসলামী তাহযীব-তমদ্দুনের আরও অসংখ্য মূলনীতি ও পন্থা-পদ্ধতির যে দিন মহানবী (স) সূচনা করলেন সেদিন থেকে তা মুসলিম সমাজে ঠিক সেভাবে প্রচলিত হল যেভাবে কুরআন মজীদের আয়াতসমূহ মানুষের মুখে আবৃত্ত হচ্ছে। অতপর হাজার থেকে লাখ এবং লাখ থেকে কোটি কোটি মুসলমান পৃথিবীর প্রত্যন্ত এলাকায় বংশ পরষ্পরায় ঠিক সেইভাবে তার অনুসরণ করে আসছে যেভাবে তার বংশ পরষ্পরায় কুরআন বহন করে আসছে। আমাদের সংস্কৃতির বুনিয়াদী কাঠামো রাসূলে পাকের যেসব সুন্নাতের উপর প্রতিষ্ঠিত তা সঠিক ও যথার্থ হওয়ার প্রমাণ হুবহু তাই-যা কুরআন পাকের সংরক্ষিত থাকার প্রমাণ হিসাবে গণ্য। এটাকে যে ব্যক্তি চ্যলেজ্ঞ করে সে মূলত কুরআনকে চ্যালেজ্ঞ করার পথ ইসলামের দুশমনদের দেখিয়ে দেয়।
পুনরায় দেখুন যে, রসূলুল্লাহ (স) এর জীবনাচার এবং তার যুগের সমাজের কেমন বিস্তারিত নকশা, কেমন খুটিনাটি বর্ণনা সহকারে, কেমন নির্ভরযোগ্য রেকর্ডের আকারে আজ আমরা পাচ্ছি। এক একটি ঘটনা এবং প্রতিটি কথা ও কাজের সনদ (বর্ণনা পরস্পরা) বর্তমান রয়েছে যা যাচাই করে যে কোন সময় জানা যেতে পরে যে, বর্ননা হাদীস কতটা নির্ভরযোগ্য? শুধুমাত্র এক ব্যক্তির অবস্থা অবহিত হওয়ার জন্য সেই যুগের প্রায় ছয় লাখ লোকের অবস্থা গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, যার ফলে কোন ব্যক্তি এই মহা মানবের নামে কোন কথা বর্ণনা করেছেন তার ব্যক্তিত্ব বিচার-বিশ্লেষণ করে রায় কায়েম করা যেতে পারে যে, আমরা তার বর্ণনার উপর কতটা নির্ভর করতে পারি। ঐতিহাসিক সমালোচনার একটি ব্যাপক বিষয় একান্ত সূক্ষ্ম দৃষ্টি সহকারে শুধুমাত্র এই উদ্দেশ্যে প্রবর্তিত হলো যে, এই অনুপম ব্যক্তিত্বের সাথে যে কথাই সংশ্লিষ্ট হবে তা যে কোন দিক থেকে পর্যালোচনা করে যেন তার যথার্থতা সম্পর্কে আশ্বস্ত হওয়া যায়। পৃথিবীর গোটা ইতিহাসে এমন আর কোন দৃষ্টান্ত আছে কি যে, কোন ব্যক্তির সার্বিক অবস্থার সংরক্ষণের জর্য মানবীয় হাতের সাহায্যে এইরূপ চেষ্টা বাস্তব রূপ লাভ করেছে? যদি না পাওয়া যায় এবং পাওয়া যাবেও না, তবে তা কি এ কথার সুস্পষ্ট প্রমাণ নয় যে, এই চেষ্টার পেছনেও সেই মহান আল্লাহর অভিসন্ধি কার্যকর রয়েছে যা কুরআন পাকের হেফাজতের জন্য কার্যকর রয়েছে?
ওহী বলতে কি বুঝায়?
আপনার চতুর্থ প্রশ্ন এই যে “কুরআনের কোন স্থানে আরবী শব্দের পরিবর্তে একই অর্থ প্রকাশক ভিন্ন শব্দ স্থাপন করলে তাকে কি আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত মনে করা হবে? ওহীর উল্লেখিত দ্বিতীয় অংশের অবস্থাও কি তাই?
এটা আপনি এমন একটা অর্থহীন প্রশ্ন করেছেন যে, আমি কোন শিক্ষিত লোকের নিকট থেকে এরূপ প্রশ্নের আশা করতাম না। শেষ পর্যন্ত আপনাকে কে বলেছে যে, রসূলুল্লাহ (স) কুরআন পাকের ভাষ্যকার এই অর্থে যে, তিনি তাফসীরে বায়দাবী অথবা জালালাইনের মত কোন তাফসীর লিখেছিলেন, যার মধ্যে কুরআনের আরবী শব্দসমূহের ব্যাখ্যায় সমার্থবোধক কতিপয় আরবী শব্দ লিখে দিয়েছিলেন এবং এই ব্যাখ্যামূলক অংশকে এখন কোন ব্যক্তি “আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত ওহী” বলছে? যে কথা আপনাকে পুনপুন বলা হচ্ছে তা এই যে, রসূলুল্লাহ (স) পয়গাম্বর হিসাবে যা কিছুই করেছেন এবং বলেছেন তা ওহীর ভিত্তিতেই। তার গোটা নবুওয়াতী কার্যক্রম তিনি ব্যক্তি হিসাবে করেননি, বরং আল্লাহর নিযুক্ত প্রতিনিধি হিসাবে যা কিছুই করেছেন এবং বলেছেন তা ওহীর ভিত্তিতেই। তার গোটা নবুওয়াতী কার্যক্রম তিনি ব্যক্তি হিসাবে করেননি, বরং আল্লাহর মর্জির বিরুদ্ধে অথবা তার ইচ্ছা ছাড়া করতে পারেন না। একজন, শিক্ষক, মুরব্বী, নৈতিক সংস্কারক, সভ্যতা-সংস্কৃতির নির্মাতা,বিচারক, আইনপ্রণেতা, পরামর্শদাতা, সেনাপতি এবং একজন রাষ্টনায়ক হিসাবে তিনি যত কাজই করেছেন তার সবই মূলতঃআল্লাহর রসূল হিসাবে তাঁর কাজ ছিল। এ ক্ষেত্রে আল্লাহর ওহী তার পথপ্রদর্শন ও তত্ত্বাবধান করত। কোথাও সামান্যতম ক্রটি-বিচ্যুতি হওয়া গেলে আল্লাহর ওহী যথা সময়ে তার সংশোধন করে দিত। এই ওহীকে আপনি যদি এ অর্থে গ্রহণ করেন যে, কুরআনের শব্দাবলীর ব্যাখ্যায় আরবী ভাষার কতিপয় সমার্থবোধক শব্দ নাযিল হয়ে যেত তবে আমি এছাড়া আর কি বলতে পারি যে- “বুদ্ধিজ্ঞানের বহর যাদের এই তাদের থেকে দুরে থাকা বাঞ্চনীয়।”
আপনার জানা উচিত যে, ওহী অপরিহার্যরূপে কেবল শব্দসমষ্টির আকারেই আসৎ না, তা একটি ধারণার আকারেও হতে পারে যা অন্তরে ঢেলে দেয়া হয়। তা মনমগজ ও চিন্তার জন্য পথ নির্দেশনার আকারে হতে পারে। তা কোন একটি বিষয়ের সঠিক বোধশক্তির আকারে, কোন সমস্যার যথার্থ সমাধানের আকারে অথবা কোন অবস্থা বা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের যথোপযুক্ত কৌশল হৃদয়ঙ্গম করানোর আকারেও হতে পারে। তা শুধুমাত্র একটি আলোকবর্তিকাও হতে পারে যার সাহায্যে কোন ব্যক্তি তার সঠিক পথের সন্ধান পেয়ে যেতে পারে। তা একটি সত্য স্বপ্নও হতে পারে। তা পর্দার আড়াল থেকে একটি আওয়াজ অথবা ফেরেশতার মাধ্যমে আগত একটি বার্তাও হতে পারে। আরবী ভাষায় “ওহী” শব্দের অর্থ “সুক্ষ্মইংগিত”। ইংরেজী ভাষায় এর কাছাকাছি শব্দ হলো Revelation. আপনি যদি আরবী না জানেন তবে ইংরেজী ভাষারই কোন অভধানে উপরোক্ত শব্দের অর্থ দেখে নিন। এরপর আপনি নিজেই জানতে পারবেন যে, কোন শব্দের পরিবর্তে তদস্থলে সমার্থবোধক শব্দ স্থাপন করার এই অদ্ভুত ধারণা-যাকে আপনি ওহীর অর্থে গ্রহণ করেছেন কতটা শিশু সুলভ ধারণা!
আপনার পঞ্চম প্রশ্ন এই যে, “কোন কোন লোক বলে যে, মহানবী (স) নবুওয়াত লাভের পর থেকে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত যা কিছু করেছেন তা ছিল আল্লাহর পক্ষথেকে প্রাপ্ত ওহী আপনি কি তাদের সাথে একমত? যদি একমত না হন তবে এক্ষেত্রে আপনার আকীদা-বিশ্বাস কি?
এই প্রশ্নের উত্তর চার নম্বর প্রশ্নের উত্তরে এসে গেছে এবং উপরে আমি যে আকীদা বর্ণনা করেছি তা “কোন কোন লোকের” নয়, বরং ইসলামের সূচনা থেকে আজ পর্যন্ত সমস্ত মুসলমানের ঐক্যবদ্ধ আকীদা।
প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি মাত্র
আপনার ষষ্ঠ প্রশ্ন হলো, “আপনি যদি মনে করেন মহানবী (স) এর কতিপয় বাণী ওহীর সমষ্টি এবং কতিপয় বাণী ওহী ছিল না তবে আপনি কি বলবেন যে, মহানবী (স) এর যেসব বাণী ওহী ছিল তার সংকলন কোথায় আছে? অনন্তর তার যেসব বাণী ওহী ছিল না, মুসলমানদের ঈমান ও আগত্যের বিচারে তার মর্যাদা কি?
উপরোক্ত প্রশ্নের প্রথম অংশে আপনি আপনার তিন নম্বর প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করেছেন এবং এর জওয়াবও তাই যা উপরে ঐ প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে। দ্বিতীয় অংশে আপনি আপনার দুই নম্বর চিঠিতে যে কথা বলেছিলেন তার পুনরাবৃত্তি করেছেন এবং আমি তার জওয়াবও দিয়েছি। সন্দেহ হচ্ছে, আপনি আমার উত্তরসমূহ মনোনিবেশ সহকারে পড়েনও না এবং একই ধরনের প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করে যাচ্ছেন।
ঈমান ও কুফরের মাপকাঠি
আপনার সপ্তম প্রশ্ন এই যে, “কোন ব্যক্তি যদি কুরআন পাকের কোন আয়াত সম্পর্কে বলে, “তা আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত নয়” তবে আপনি কি একমত হবেন যে, সে ইসলামের গন্ডী থেকে বহিষ্কৃত হয়ে যাবে? যদি কোন ব্যক্তি হাদীসের বর্তমান সংগ্রসমূহের কোন হাদীস সম্পর্কে বলে যে, তা আলাহর ওহী নয় তবে সেও কি ইসলামের গন্ডি থেকে বিচ্যুত হয়ে যাবে?”
উপরোক্ত প্রশ্নের জওয়াব এই যে, হাদীসের বর্তমান সংগ্রহসমূহ থেকে যেসব সুন্নাতের সাক্ষ্য পাওয়া তা দুইটি বৃহত ভাগে বিভক্ত। এক প্রকারের সুন্নাত হলো, উম্মাত শুরু থেকে আজ পর্যন্ত যেগুলোর সুন্নাত হওয়ার ব্যাপরে একমত পোষণ করে আসছে, অর্থাৎ অন্য কথায় তা মুতাওয়াতির (ধারাবহিকভাবে প্রাপ্ত ) সুন্নাতসমূহ এবং তার উপর উম্মাতের উজমা (ঐক্যমত) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তার মধ্যে কোনটি মানতে যে ব্যক্তিই অস্বীকার করবে সে ঠিক সেভাবে ইসলামের গন্ডি থেকে বহিষ্কার হয়ে যাবে যেমন কুরআনোর কোন আয়াত অস্বীকারকারী ইসলামের গন্ডি থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়। দ্বিতীয় প্রকারের সুন্নাতহ হল যেগুলো সম্পর্ক মতভেদ আছে, অথবা মতভেদ হতে পরে। এই প্রকারের সুন্নাতের মধ্যে থেকে কোনটি সম্পর্কে যদি কোন ব্যক্তি বরে যে, তার সার্বিক পর্যালোচনা অনুযায়ী অমুক সুন্নাতটি প্রমাণিত নয়, তাই আমি তা গ্রহণ করছি না, তবে এই কথায় তার ঈমানের কোন ক্ষতি হবে না। ইলমী দিক থেকে তার অভিমত আমাদের সঠিক অথবা ভ্রান্ত মনে করাটা স্বতন্ত্র ব্যাপার। কিন্তু সে যদি যে, তা বাস্তবিকই রসূলুল্লাহ (স) এর সুন্নাত হলেও আমি তার অনুগত্য করাতে প্রস্তুত নই, তবে তার ইসলামের গন্ডি থেকে বিচ্যুত হওয়ার ব্যাপরে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নাই। কারণ সে রসূলূল্লাহ (স) এর কর্তৃত্ব (Authority) কে চ্যালেঞ্জ করছে, যার সুযোগ ইসলামের গন্ডিতে নাই।
সুন্নাতের বিধানের কি পরিবর্তন হতে পারে?
আপনার আট নম্বর এই যে, “রসূলুল্লাহ (স) দীন ইসলামের বিধানসমূহ কার্যকর করার জন্য যেসব পন্থার প্রস্তাব করেছেন, কোন যুগের চাহিদা ও সার্বিক কল্যাণের বিবেচনায় তার আংশিক পরিবর্তন বা প্রত্যাখ্যান করা যায় কি না? কুরআনের বিধানের ক্ষেত্রেও এরুপ আংশিক পরিবর্তন বা প্রত্যাখ্যান করা যায় কি না?
উপরোক্ত প্রশ্নের জওয়াব এই যে, কুরআনিক বিধানের আংশবিশেষ, উভয় ক্ষেত্রে কেবলমাত্র সেই অবস্থায় এবং সেই সীমা পর্যন্ত পরিবর্তন হতে পারে যখন এবং যে সীমা পর্যন্ত বিধানের মূল পাঠ কোন পরিবর্তনের সুযোগ দেয়, অথবা এমন অন্য কোন নস (কুরআনের আয়াত ও প্রমাণিত সুন্নাত) পাওয়া যায় যা কোন বিশেষ অবস্থার পেক্ষিতে কোন বিশেষ ধরনের বিধানে পরিবর্তন সাধনের অনুমতি দেয়। এছাড়া কোন মুমিন ব্যক্তি নিজেকে কোন অবস্থায়ই আল্লাহ ও তার রসূলের বিধানে পরিবর্তন সাধনের অধিকারী বা উপযুক্ত বলে চিন্তাও করতে পারে না। অবশ্য যেসব লোক ইসলাম থেকে বহিষ্কার হয়েও মুসলমান থাকতে চায় তাদের কথা স্বতন্ত্র। তাদের কর্মপন্থা হলো, প্রথমে তারা আল্লাহর রসূল (স) কে আইন-কানুন থেকে বেদখল করে “মুহাম্মদ বিহীন কুরআন” অনুসরণের অদ্ভুত মতবাদ আবিষ্কার করে, অতপর কুরআন থেকে গা বাচানোর জন্য তার এমন পছন্দসই ব্যাখ্যা দিতে আরম্ভ করে যা দেখে ইবলীস শয়তানও তাদের পরাকাষ্ঠার স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়।
বিনীত
আবুল আ‘লা