ইবাদত
আভিধানিক তত্ত্ব
আরবী ভাষায়——————— এর আসল অর্থ——– এবং—— অর্থাৎ বাধ্য হওয়া, অনুগত হওয়া, কারো সামনে এমনভাবে আত্মসমর্পণ করা যেন তার মোকাবিলায় কোন প্রতিরোধ, অবাধ্যতা, অকৃতজ্ঞতা না হয়। সে তার মর্জী মতো যেভাবে খুশী সেবা গ্রহণ করতে পারে-কাজে লাগাতে পারে। এজন্যে আরববাসীরা আরোহীর পূর্ণ অনুগত উষ্ট্রকে বলে —– অধিক লোকের চলাচলের ফলে যে পথ সমান হয়ে পড়েছে, তাকে বলা হয় ——– অতপর এ মূল ধাতুতে গোলামী, আনুগত্য, পুজা, সেবা, কয়েদ বা প্রতিবন্ধকতার অর্থ সৃষ্টি হয়। আরবী ভাষার সর্ববৃহৎ অভিধান লিসানুল আরব-এ এ শব্দের যে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, তার সংক্ষিপ্তসার এইঃ
একঃ ———————- যে ব্যক্তি কারো মালিকানাধীন -স্বাধীন নয়, তাকে বলা হয় আব্দ। ইহা ‘হুর’ বা আজাদের বিপরীত। ——— লোকটিকে গোলাম বানিয়ে নিয়েছে, তার সাথে গোলামের অনুরূপ আচরণ করেছে। ——— এবং ——— রো এই একই অর্থ হাদীসে উক্ত হয়ছেঃ
——————————————– তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে কিয়ামতের দিন আমি ফরিয়াদ করবো, বাদী হবো। তাদের মধ্য একজন হচ্ছেন সে ব্যক্তি, যে কোন আজাদ-স্বাধীন মানুসকে গোলাম বানিয়ে নেয় অথবা গোলামকে আজাদ করার পর তার সাথে গোলামের অনুরূপ আচরণ করে।
হযরত মূসা (আঃ) ফিরাউনকে বলেছিলেনঃ —————————————————- তুমি আমাকে যে অনুগ্রহের খোঁটা দিচ্ছ, তার তাৎপর্য এই যে, তুমি বনী ইসরঈলকে গোলামে পরিণত করেছিলে।
দুইঃ ———— ইবাদত বলা হয় এমন আনুগত্যকে, যা পূর্ণ বিনয়ের সাথে করা হয়। ————- তাগুতে ইবাদত করেছে, মানে, তার বাধ্য-অনুগত হয়েছে।
————– আমরা তোমারই ইবাদত করি, মানে পূর্ণ আদেশানুবর্তিতার সাথে তোমার আনুগত্য করি।
———————— তোমাদের রব-এর ইবাদত করো অর্থাৎ তাঁর আনুগত্য করো।
———————————- অর্থাৎ ফিরাউন যে বলেছিল- মূসা ও হারুনের কওম আমাদের আবেদ গোলাম-এর অর্থ হচ্ছে, তারা আমার ফরমানের অনুগত। ইবনুল আম্বারী বলেনঃ —————- এর অর্থ হচ্ছে- সে তার মালিকের ফরমাবরদার, তার নির্দেশের অনুসারী।
তিনঃ ————————- তার ইবাদত করেছে অর্থাৎ তাকে পূজা করেছে। ——– তাআরুদ — এর অর্থ কারো পূজারী হওয়া। কবি বলেনঃ-
————————— আমি দেখি কৃপণের টাকা বেঁচে যায়।———————
চারঃ ————— এবং——————– বলার অর্থ, সে তার সাথে সংশ্লিষ্ট হয়েছে, পৃথক হয়নি; তার পিছু নিয়েছে, তাকে আর ত্যাগ করে নি।
পাঁচঃ ———- কোন ব্যক্তি কারো কাছে আসতে বিরত থাকলে বলা হবে—— -কোন জিনিস তোমাকে আমার কাছে আসতে বিরত রেখেছে, বারণ করেছে?
এ ব্যাখ্যা থেকে এ কথা স্পষ্ট গিয়েছে যে, —- (আব্দ) ধাতুর মৌলিক অর্থ হচ্ছে কারো কর্তৃত্ব প্রাধান্য স্বীকার করে তার মোকাবিলায় আজাদী স্বেচ্ছাচারিতা ত্যাগ করা, ঔদ্ধত্য-অবাধ্যতা ত্যাগ করা, তার জন্যে অনুগত্ হয়ে যাওয়া। গোলামী-বন্দেগীর মূল কথাও এটাই। সুতরাং এ শব্দ থেকে প্রাথমিক যে ধারণাটি একজন আরবের মনে উদয় হয়, তা হচ্ছে গোলামী-বন্দেগীর ধারণা। গোলামের আসল কাজ যেহেতু আপন মুনিবের আনুগত্য আদেশানুবর্তিতা; তাই, কার্যত এ থেকে আনুগত্যে কেবল নিজেকে সোপার্দই করে না, বরং তার বিশ্বস্ততা শ্রেষ্ঠত্ব-কর্তৃত্বও স্বীকার করে, তাই তার সম্মান-মর্যদায় বাড়াবাড়ি ও করে। বিভিন্ন উপায়ে নেয়ামতের স্বীকৃতি প্রকাশ করে, এমনি করে বন্দেগীর অনুষ্ঠানিকতা পালন করে। এরই নাম পূজা। — (আবদিয়াত)- এর অর্থে এ ধারণা তখন স্থান লাভ করে, যখন গোলাম মুনিবের সামনে কেবল মাথা-ই নত করে না, বরং তার হৃদয়-মনও অবনত থাকে। বাকী রইল দুটি ধারণা। মূলত সে দুটি ধারণা – (আবদিয়াত) বা দাসত্বের প্রাসঙ্গিক ধারণা-বুনিয়াদী ধারণা নয়।
কোরআন ইবাদত শব্দের ব্যবহার
এ আভিধানিক তত্ত্বের পর আমরা কোরআনের প্রতি প্রত্যাবর্তন করলে জানতে পারি যে, এই পবিত্র গ্রন্থে এ শব্দটি সম্পূর্ণভাবে প্রথম তিন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। কোথাও প্রথম-দ্বিতীয় অর্থ একই সঙ্গে উদ্দেশ্য, কোথাও শুধু দ্বিতীয় অর্থ, আর কোথাও তৃতীয় অর্থ নেয়া হয়েছে, আর কোথাও যুগপ ৎ তিনটি অর্থই উদ্দেশ্য।
ইবাদত-দাসত্ব-আনুগত্য অর্থে
প্রথম ও দ্বিতীয় অর্থের উদাহরণ এইঃ
——————– অতপর মূসা ও তার ভাই হারূনকে আমরা নিজের নিদর্শন এবং সুস্পষ্ট প্রত্যাদিষ্টের দলীল-প্রমাণসহ ফিরাউন এবং তার সভাসদদের নিকট প্রেরণ করছি। কিন্তু তারা অহংকার করে এগিয়ে এলো। কারণ তারা ছিলো ক্ষমতার অধিকারী কওম। তারা বললো, আমরা কি আমাদেরই মতো দুজন মানুষের প্রতি ঈমান আনবো? তারা এমন কওমের লোক, যে কওম আমাদের আবেদ-তাবেদার।-আল-মুমিনুন-৪৫-৪৭
——————- (ফিরাউন মূসাকে খোটা দিয়ে বলছিলো, আমরা তোমাকে শৈশবে নিজের কাছে রেখে লালন-পালন করেছি, মূসা তার জবাবে বলেন) তুমি আমাকে যে অনুগ্রহের খোটা দিচ্ছ, তাতো এই যে, তুমি বনী ইসরাঈলকে তোমার ‘আব্দ’ বানিয়ে নিয়েছো।- আস্-শোয়ারা-২২
দুটি আয়াতেই ইবাদত অর্থ গোলামী, দাসত্ব, আনুগত্য ও আদেশানুবর্তিতা। ফিরাউন বললো, মূসা-হারুনের কওম আমাদের আবেদ। মানে আমাদের গোলাম এবং ফরমানের অনুসারী। আর হযরত মূসা বললেন; তুমিতো বনী ইসরাঈলকে তোমার ‘আব্দ’ বানিয়ে নিয়েছো। মানে তাদেরকে গোলাম বানিয়ে নিয়েছো, নিজের মর্জী মতো সেবা নাও তাদের কাছ থেকে।
————– হে ঈমানদাররা! যদি তোমরা আমারই ইবাদত করো, তবে আমি তোমাদের যেসব পবিত্র জিনিস দান করছি, তা খাও এবং আল্লাহ্র শোকর আদায় করো। -আল-বাকারা-১৭২
ইসলাম-পূর্বকালে আরবের লোকেরা তাদের ধর্মগুরুদের নির্দেশ ও বাপ-দাদার ধারণা কল্পনা মেনে চলতে গিয়ে খাদ্য-পানীয় বিষয়ে নানা ধরনের বিধি-নিষেধ মেনে চলতো। তারা ইসলাম গ্রহণ করলে আল্লাহ বলেন, “তোমরা যদি আমারই ইবাদত করো তবে এসব বিধিনিষেধ, বাধ্য-বাধকতার অবসান ঘটিয়ে আমি যা হালাল করেছি, তাকে হালাল মনেকরে নির্দ্বিধায় তা খাও।” এর স্পষ্ট দ্ব্যর্থহীন অর্থ এই যে, তোমাদের পন্ডিত-গুরুদের নয়, বরং তোমরা যদি আমারই বান্দাহ হয়ে থাকো, সত্যিই যদি তোমরা তাদের আনুগত্য-আদেশানুবর্তিতা ত্যাগ করে আমার আনুগত্য গ্রহণ করে থাকো, তাহলে হালাল-হারাম এবং বৈধ-অবৈধের ব্যাপারে তাদের মনগড়া বিধানের পরিবর্তে আমার বিধান মেনে চলতে হবে। সুতরাং এখানেও ইবাদত শব্দটি দাসত্ব-আনুগত্য অর্থেই ব্যবহৃত হয়েছে।
——————- বল, আল্লার নিকট এর চেয়েও মন্দ পরিণতি কাদের হবে-আমি কি তোমাদের বলে দেবো? তারা, যাদের ওপর আল্লাহ্র অভিসম্পাত হয়েছে, গজব নিপতিত হয়েছে। যাদের অনেককে বানর, শূকর বানিয়ে দেয়া হয়েছে এবং যারা তাগুতের ইবাদত করেছে।-আল-মায়েদা-৬০-
————————- আল্লাহ্র ইবাদত করো এবং তাগুতের ইবাদত থেকে বিরত থাকো-এ শিক্ষা দেয়ার জন্যে আমরা প্রতিটি কওমের মধ্যে একজন পয়গাম্বর প্রেরণ করেছি।-নাহাল-৩৬
———————– যারা তাগুতের ইবাদত পরিত্যাগ করে আল্লাহ্র ইবাদতের দিকে প্রত্যার্বতন করেছে, তাদের জন্যে সুসংবাদ।-যুমার-১৭
তিনটি আয়াতেই তাগুতের ইবাদত মানে তাগুতের দাসত্ব-আনুগত্য, ইতিপূর্বেও আমরা সে ইঙ্গিত করেছি। যে রাষ্ট্যক্ষমতা আল্লাহ্দ্রোহী হয়ে আল্লাহ্র যমীনে নিজের হুকুম চালায়, বল প্রয়োগ, লোভ-লালসা প্রদর্শন বা বিভ্রান্ত শিক্ষা দ্বারা আল্লাহ্র বান্দাদেরকে আপন নির্দেশানুসারী করে-কোরআনের পরিভাষায় তাকেই বলা হয় তাগুত। এমন কোন ক্ষমতা নেতৃত্বের সামনে মাথা নত করা, তার বন্দেগী গ্রহণ করে নির্দেশ শিরোধার্য করে নেয়া তাগুতেরই ইবাদত করা।
ইবাদত-আনুগত্য অর্থে
এবার নীচের আয়াতগুলোর প্রতি লক্ষ্য করুন। এসব আয়াতে ইবাদত শুধু দ্বিতীয় অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
———— হে বনী আদম! আমি কি তোমাদেরকে তাগীদ করি নি যে, শয়তানের ইবাদত করো না? কারণ সে তো তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন।
জানা কথা যে, দুনিয়ার কেউই তো শয়তানের পূজা করো না? বরং সব দিক থেকে তার ওপরতো অভিশাপ-অভিসম্পাতই বর্ষিত হয়। সুতরাং কিয়ামতের দিনবনী আদমের বিরুদ্ধে আল্লাহ্র তরফ থেকে যে অভিযোগ দায়ের করা হবে; তা শয়তানের কথা মতো চলেছিলো, তার বিধানের আনুগত্য করেছিলো। যে যে পথের প্রতি ইংগিত করেছে, সে পথে তারা ছুটে চলেছিলো।
——————— (কিয়ামত সংঘটিত হলে আল্লাহ্ বলবেন) যে সমস্ত জালেম, তাদের সাথী ও আল্লাহ্ ছাড়া যেসব মাবুদদের তারা ইবাদত করতো, তাদের সকলকে একত্র করে জাহান্নামের পথ দেখাও।…. অতপর তারা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করতে থাকবে। ইবাদতকারী বলবে, যারা কল্যাণের পথে আমাদের কা”ছে আসতো তোমরাই তো তারা! তাদের মাবুদরা জবাব দেবে; আসলে তো তোমরা নিজেরাই ঈমান আনার জন্যে প্রস্তুত ছিলো না। তোমাদের ওপর আমাদের কোন জোর জবরদস্তি ছিলো না, বরং তোমরা নিজেরাই ছিলে নাফরমান।” (সাফ্ফাত-২২-৩০)
এ আয়াতে আবেদ-মাবুদের মধ্যে যে প্রশ্ন-উত্তর উল্লেখ করা হয়েছে, তা প্রণিধান করলে স্পষ্টত জানা যায় যে, যেসব প্রতিমা-দেবতার পূজা করা হতো, এখানে মাবুদের অর্থ তা নয় বরং যেসব দেবতা-কর্তা ব্যক্তি কল্যাণের ছদ্মাবরণে মানুষকে বিভ্রান্ত-বিপথগামী করেছে, যারা পবিত্রতার লেবাসে হাজির হয়েছিলো, জপমালা ও চাদর-আলখাল্লা দ্বারা আল্লাহ্র বন্দাদের ধোঁকা দিয়ে যারা নিজেদের ভক্ত অনুরক্ত করে তুলে ছিলো অথবা যারা সংস্কার সংশোধন এবং শুভানুধ্যায়ীর দাবী করে ধ্বংস, অকল্যাণ ও বিপর্যয় ছড়িয়েছে-এমন লোকদের অন্ধ অনুসরণ এবং বিনা বাক্যব্যয়ে তাদের নির্দেশ মেনে নেয়াকেই এখানে তাদের ইবাদত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
———————– তারা নিজেদের ওলামা-মাশায়েখদেরকে আল্লাহ্র পরিবর্তে নিজেদের রব বানিয়ে নিয়েছিলো, এমনি করে মসীহ ইবনে মারিয়ামকেও। অথচ তাদেরকে এক ইলাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করার নির্দেশ দেয়া হয় নি।(তওবা-৩১)
ওলামা -মাশায়েখ, প্রাদ্রী-পূরোহিতদেরকে বর বানিয়ে তাদের ইবাদত করার অর্থ এখানে-তাদের নির্দেশ শিরোধার্য করে নেয়া। অনেক বিশুদ্ধ বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ (সঃ) নিজেও এ অর্থ স্পষ্টত ব্যক্ত করেছেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলোঃ আমরা তো কখনো ওলামা-মাশায়েখ, পাদ্রী পুরোহিতদের পূজা করি নি। জবাবে তিনি বলেছিলেন; আর তারা যে জিনিসকে হারাম করেছিলো, তোমরা কি তাকে হারাম বানিয়ে নাও নি?
ইবাদত-পূজা অর্থে
এবার তৃতীয় অর্থের আয়াতগুলো নিন। এ প্রসঙ্গে স্মরণ রাখা দরকার যে, কোরআনের মতো পূজা অর্থে ইবাদতে দুটি বিষয় শামিল রয়েছেঃ
একঃ কারো জন্যে রুকু-সিজদা করা, হাত বেধে দাঁড়ানো, তাওয়াফ, আস্তনায় চুম্বন, নজর-নেয়াজ এবং কোরবানীর সেসব অনুষ্ঠান পালন করা, যা সাধারণত পূজার উদ্দেশ্যো করা হয়ে থাকে-তাকে স্বতন্ত্র উপাস্য (মাবুদ) মনে করেই এমন কাজ করা হোক, তাতে কিছু যায় আসে না।
দুইঃ কার্যকারণপরস্পরা জগতে কাউকে ক্ষমতাশালী মনে করে নিজের প্রয়োজনে তার কাছে দোয়া করা, নিজের দুঃখ-কষ্টে তাকে সাহায্যের জন্যে ডাকা এবং ক্ষয়-ক্ষতি ও বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যে তার কাছে আশ্রয় চাওয়া।
কোরআনের দৃষ্টিতে এ দু’ধরনের কাজই সমভাবে পুজার পর্যায়ভুক্ত। উদাহরণস্বরূপঃ
—————— বল, আমার রবের পক্ষ থেকে স্পষ্ট নির্দেশ লাভ করার পর তোমরা আল্লাহ্কে ত্যাগ করে যাদের পূজা করছো, তাদের পূজা করতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে।-আল-মুমিন-৬৬
——————– (ইবরাহীম বললো) তোমাদেরকে এবং আল্লাহ্ ছাড়া যাদেরকে তোমরা ডাকো, তাদের সকলকেই আমি ত্যাগ করছি এবং আমার রব-কে ডাকছি।.. তাদের এবং আল্লাহ্ ছাড়া যাদের তারা ইবাদত করতো। সে যখন তাদের সকল থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো, তখন আমরা তাকে ইসহাকের মতো পুত্র দান করলাম।-মরিয়াম-৪৮-৪৯
—————— যে ব্যক্তি আল্লাহ্কে ত্যাগ করে এমন কাউকে ডাকে, যে কিয়ামত পর্যন্ত তাঁদের ডাকে সাড়া দিতে পারে না, তাদেরকে ডাকা হচ্ছে-এ খবর পর্যন্ত যাদের নেই, এমন ব্যক্তির চেয়ে বেশী পথভ্রষ্ট আর কে হতে পারে? হাশরের দিন এরা নিজেরাই হবে আহ্বানকারীদের দুশমন। সেদিন তারা এদের ইবাদত অস্বীকার করবে।১ -আল-আহকাফ-৪-৪
তিনটি আয়াতে কেরআন নিজেই স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, এখানে ইবাদতের অর্থ দোয়া চাওয়া এবং সাহায্যের জন্যে ডাকা।
—— বরং তারা জ্বিনের ইবাদত করতো।আর তাদের অধিকাংশই এদের প্রতি ঈমানএনেছিলো।” -সাবা-৪১
এখানে জ্বিনের ইবাদত এবং তাদের প্রতি ঈমান আনার যে অর্থ, সুরা জ্বিন-এর ৬নং আয়াত তার ব্যাখ্যা করছেঃ
—– কোন কোন মানুষ কোন কোন জীনের নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করতো।জ্বিন-২
এ জানা যায় যে, জ্বিনের ইবাদতের অর্থ তাদের আশ্রয় চাওয়া, বিপদাপদ ও ক্ষতির মোকাবিলায় তাদের নিকট নিরাপত্তা প্রার্থনা করা; আর তাদের প্রতি ঈমান আনার অর্থ তাদের আশ্রয় দান করা এবং নিরাপত্তা বিধানের ক্ষমতা আছে-এমন বিশ্বাস পোষণ করা।-
———————– আল্লাহ্ যেদিন তাদেরকে হাযির করবেন, আর হাযির করবেন সেসব মাবুদকে, আল্লাহ্কে ত্যাগ করে তারা যাদের ইবাদত করতো, সেদিন তিনি তাদের জিজ্ঞেস করবেনঃ আমার এ বান্দাদের তোমরা গোমরাহ করেছিলো না তারা নিজেরাই সত্য-সরল পথ হারিয়ে বসেছিলো? তারা আরাজ করবে; সুবাহানল্লাহ! হুযুরকে ত্যাগ করে অন্য কাউকে সঙ্গীসাথী করা আমাদের জন্যে কখন সমীচীন ছিলো!-আল-ফোরকান-১৭-১৮
এখানে বর্ণনা ভঙ্গি থেকে স্পষ্ট জানা যায় যে, মাবুদের অর্থ সঙ্গীসাথী আর তাদের ইবাদতের অর্থ, তাদেরকে বন্দেগীর গুনাবলী থেকে উন্নত এবং খোদায়ীর গুণাবলীতে বিভূষিত মনে করা; তাদেরকে গায়েবী সাহায্য, মুশকিল দূরীকরণ, পালন করা, যা পূজার সীমা পর্যন্ত গিয়ে পৌছেছে।
—— যেদিন আল্লাহ্ তাদের সকলকে সমবেত করবেন, অতপর ফেরেশতাদের জিজ্ঞেস করবেন; এরা যাদের ইবাদত করতো, তোমরাই কি তারা? জবাবে তারা বলবে, সুবহান্নাল্লাহ! তাদের সাথে আমাদের কি সম্পর্ক? আমাদের সম্পর্কতো আপনার সাথে।-সাবা-৪০-৪১
এখানে ফেরেশতার ইবাদতের১ অর্থ, তাদের পূজা। এ পূজা করা হতো তাদের অবস্থান, আকৃতি ও কাল্পনিক প্রতিকৃতি তৈরী করে। এপূজার উদ্দেশ্য ছিলো, তাদেরকে খুশী করে নিজেদের অবস্থার প্রতি তাদের অনুগ্রহ-দৃষ্টি আকর্ষণ করা এবং নিজেদের পার্থিব ব্যাপারে তাদের সাহায্য লাভ করা।
———— এবং তারা আল্লাহ্কে ত্যাগ করে কিছুর ইবাদত করছে, যা তাদের কল্যাণ-অকল্যাণ কিছুই করতে পারে না। আর বলেঃ এরা আল্লাহ্র দরবারে আমাদের সুপারিশকারী।-ইউনুস-১৮
—– আর যারা আল্লাহ্কে ত্যাগ করে অন্যদের বন্ধু বানিয়ে রেখেছে, তারা বলে-এরা আমাদেরকে আল্লাহ্র নিকটবর্তী করবে-কেবল এজন্যেই তো আমরা তাদের ইবাদত করছি।-আজ-জুমার-৩
এখানেও ইবাদতের অর্থ পূজা। যে উদ্দেশ্যে এ পূজা করা হতো, তাও ব্যাখ্যা করে দেয়া হয়েছে।
ইবাদত-বন্দেগীত-আনুগত্য -পূজা অর্থে
ওপরের উদহারণগুলো থেকে এ কথা ভালোভাবে স্পষ্ট হয়েছে যে, ইবাদত শব্দটি কোরআনের কোথাও দাসত্ব-আনুগত্য অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে, কোথাও শুধু আনুগত্য এবং কেবল পূজা অর্থে। যেখানে এ শব্দটি এক সঙ্গে তিনটি অথেই ব্যবর্হত হয়েছে, তার উদাহরণ দেয়ার আগে আর একটা ভুমিকা স্মরণ করা দরকার।
ওপরের যতগুলো উদাহরণ দেয়া হয়েছে, তার সবগুলোতে আল্লাহ্ ছাড়া অন্যদের ইবাদতের উল্লেখ আছে। যেখানে ইবাদতের অর্থ দাসত্ব-আনুগত্য, সেখানে
১. অনান্য মুশরেক জাতিরা এ ফেরেশতাদেরকে দেবতা (Gods) বানিয়েছে। আর আরববাসীরা তাদেরকে বলতো আল্লাহ্র কন্যা-সন্তান।
মাবুদ হয় শয়তান অথবা সেসব বিদ্রোহী ব্যক্তি, যারা নিজেরা তাগুত সেজে আল্লাহ্র বান্দাদের দ্বারা আল্লাহ্র পরিবর্তে নিজেদের বন্দেগী-আনুগত্য করিয়েছে অথবা এমন সব নেতা-কর্তা ব্যক্তি যারা কিতাবুল্লার পরিবর্তে নিজেদের মনগড়া মত-পথে জনগণকে চালিত করেছিলো। আর যেখানে ইবাদতের অর্থ পূজা, সেখানে মাবুদ হচ্ছে আম্বিয়া-আওলিয়া-সালেহীন-সৎসাধূ পুরুষ, তাদের শিক্ষা ও হেদায়েতের বিরুদ্ধেই তাদেরকে মাবুদ বানানো হয়েছে অথবা ফেরেশতা ও জ্বিন নিছক ভ্রান্ত ধারণাবশত অতি প্রাকৃতিক রুবুবিয়াতে তাদেরকে শরীক মনে করা হয়েছে অথবা কাল্পনিক শক্তির মূর্তি -প্রতিমা নিছক শয়তানী প্ররোচনায় যা পূজার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সেখানে মাবুদ হচ্ছে আম্বিয়া-আওলিয়া-সালেহীন-সৎসাধূ পুরুষ, তাদের শিক্ষা ও হেদায়েতের বিরুদ্ধেই তাদেরকে মাবুদ বানানো হয়েছে অথবা ফেরেশতা ও জ্বিন নিছক ভ্রান্ত ধারণাবশত অতি প্রাকৃতিক রুবুবিয়াতে তাদেরকে শরীক মনে করা হয়েছে অথবা কাল্পনিক শক্তির মূর্তি -প্রতিমা নিছক শয়তানী প্ররোচনায় যা পূজার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। কোরআন এই সব রকমের মাবুদকেই বাতিল এবং তাদের ইবাদতকে ভ্রান্ত প্রতিপন্ন করে। তাদের গোলামী, আনুগত্য পূজা- যা-ই করা হোক না কেন। কোরআন বলেঃ তোমাদের এসব মাবুদ-যাদের তোমরা পূজা করছো- আল্লাহ্র বান্দা ও গোলাম। তোমাদের ইবাদত পাওয়ার তাদের কোন অধিকার নেই। তাদের ইবাদত দ্বারা ব্যথর্তা ও লাঞ্ছনা-গঞ্জনা ছাড়া তোমাদের কিছুই ভাগ্যে জুটবে না-কিছু লাভ হবে না। আসলে তাদের এবং সারা বিশ্ব জাহানের মালেক আল্লাহ্। সকল ক্ষমতা ইখতিয়ার তাঁরই হাতে নিবদ্ধ। সুতরাং কেবল আল্লাহ্ ছাড়া আর কেউ-ই- ইবাদত পাওয়ার যোগ্য নয়।
——————— আল্লাহকে ত্যাগ করে তোমরা যাদের ডাকছো, তারা তো কেবল তোমাদের মতোই বান্দা। তাদের ডেকে দেখো, তাদের ব্যাপারে তোমাদের বিশ্বাস যদি সত্য হয় তবে তারা তোমাদের ডাকে সাড়া দিক।১…… আল্লাহ্ ছাড়া তোমরা যাদের ডাকছো, তারা তোমাদের কোন সাহায্য করতেও তারা সক্ষম নয়। -আল-আরাফ-১৯৪-১৭
১. জবাব দেয়ার অর্থ জবাবে সাড়া দেয়া নয়, বরং তার জবাবী ব্যবস্থা অবলম্বন করা। ইতিপূর্বে আমরা সেদিকে ইঙ্গিত করেছি।
————– ওরা বলে; রহমান কাউকে পুত্র হিসাবে গ্রহণ করেছেন! অথচ তাঁর কোন পুত্র সন্তান হবে -তা থেকে তিনি অনেক উর্ধ্বে। তারা যাদেরকে তাঁর পুত্র বলে-আসলে তার-হচ্ছে তাঁর বান্দা; যাদেরকে মর্যাদা দান করা হয়েছে। একটু এগিয়ে গিয়ে আল্লাহ্র দরবারে কিছু আরজ করার ক্ষমতাও তাদের নেই, বরং তার নির্দেশ মতই তারা কাজ করে। তাদের কাছে যা কিছু স্পষ্ট তাও আল্লাহ্ জানেন, আর যা কিছু তাদের কাছে অস্পষ্ট-লুকায়িত, তার খবরও তিনি রাখেন। আল্লাহ নিজে যার সুপারিশ কবুল করতে চান, তা ছাড়া তারা আল্লাহ্র দরবারে কারো জন্যে কোন সুপারিশই করতে পারে না। আর তাদের অবস্থা এই যে, আল্লাহ্র ভয়ে তারা নিজেরাই সদা সন্ত্রস্ত।১-আল-আম্বিয়া-২৬-১৮
————————– তারা ফেরশতাদেরকে-প্রকৃতপক্ষে যারা রহমানের বান্দা-দেবী বানিয়ে রেখেছে।-আয-যুখরূফ-১৯
———————————– তারা জ্বিন এবং আল্লাহ্র মধ্যে বংশগত সম্পর্ক ধারণা করে নিয়েছে। অথচ জ্বিনরা নিজেরা জানে যে, একদিন হিসেব দেয়ার জন্যে তাদেরকে আল্লাহ্র দরবারে হাযির হতে হবে। -আস-সাফ্ফাত-১৫৮
——————————– আল্লাহ্র বান্দা হওয়াকে মসীহ কখনো মনে করেন নি, দোষের মনে করেন নি নিকটতম ফেরেশতারাও। আর যে কেউ তাঁর বন্দেগী-গোলামীতে লজ্জাবোধ করে এবং অহংকার করে, (সে পালিয়ে যাবে কোথায়?) এমন সব মানুষকেই আল্লাহ্ তাঁর হুযুরে টেনে আনবেন।
—————————— চন্দ্র-সূর্য সবাই পরিক্রমণে নিয়োজিত। তারকা ও বৃক্ষ আল্লাহ্র সামনে আনুগত্যের শির নত করে আছে।-আর-রহমান-৫-৬
———————————— সাত আসমান-যমীন এবং তার মধ্যে যতসব বস্তু আছে-সকলেই আল্লাহ্র তসবীহ পড়ছে। এমন কোন বস্তু নেই, যা প্রশংসা- স্তুতির সাথে তাঁর তসবীহ পাঠ করে না কিন্তু তোমরা তাদের তসবীহ বুঝতে পারো না। -বনী-ইসরাঈল-৪৪
————————— আল্লাহ্র কুদরতের কব্জায় বাধা নয়-এমন কোন প্রাণীই নেই।-হূদ-৫৬
——————————— রহমানের সামনে গোলাম হিসাবে হাযির হবে না-আসামন-যমীনের বাসিন্দাদের মধ্যে এমন কেউ নেই। তিনি সকলকে শুমার করে রেখেছেন। আর কিয়ামতের দিন এক এক করে সকলেই তাঁর সামনে উপস্থিত হবে। -মরিয়াম-৯৩-৯৯৫
——————— বলঃ আল্লাহ্! রাজত্বের মালিক। যাকে খুশী তুমি রাজ্য দান করো, যার কাছ থেকে খুশী রাজ্য ছিনিয়ে নাও। যাকে ইচ্ছা ইজ্জত দাও, যাকে খুশী বেইজ্জত করো। মঙ্গর-কল্যাণ তোমার ইখতিয়ারে। নিশ্চই তুমি সব কি”ছুর ওপর ক্ষমতাবান।-আলে-ইমরান-২৬
কোননা কোন আকারে যাদের ইবাদত করা হয়েছে, এমনিভাবে তাদের সকলকে আল্লাহ্র গোলাম ও অক্ষম প্রমাণিত করার পর জ্বিন-ইনসান সকলের কাছে কোরআন দাবী জানায়-সকল অর্থের দৃষ্টিতে ইবাদত কেবল আল্লাহ্র জন্যে হওয়াই বিধেয়। গোলামী, আনুগত্য, পূজা-সব কিছুই হবে তারই জন্যে। আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো জন্যে কোন ধরনের ইবাদতের লেশমাত্রও থাকতে পারবে না।
————– আল্লাহ্র ইবাদত করো এবং তাগুত থেকে বিরত থাকো-এ পয়গাম দিয়ে প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে আমরা রাসূল পাঠিয়েছি।-আন-নহল-৩৬
———————————- যারা তাগুতের ইবাদত থেকে নিবৃত্ত থেকে আল্লাহ্র দিকে প্রর্ত্যাবতন করেছে-তাঁদের জন্যে সুসংবাদ।-আয-যুমার-১৭
———————- হে বনী আদম! আমি কি তোমাদেরকে তাগিদ করি নি যে, শয়তানের ইবাদত করো না? সে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন। এবং আমারই ইবাদত করবে। এটাই সোজা-সরলপথ।-ইয়াসিন-৬০-৬১
————————————– তারা আল্লার পরিবর্তে ওলামা-মাশায়েখ, পাদ্রী-পুরোহিতদেরকে রব বানিয়ে নিয়েছিলো।…. অথচ ইলাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত না করার জন্যে তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো।-তওবা-৩১
—————————————– হে ঈমানদাররা! তোমরা যদি সত্যিই আমার ইবাদত অবলম্বন করে থাকো তাহলে আমি তোমাদেরকে যেসব পাক জিনিস দান করেছি, নির্দ্বিধায় তা খাও এবং আল্লাহ্র শোকর আদায় করো।-বাকারা-১৭২
বন্দেগী-গোলামী, আনুগত্য-ফরমাবরদারীর অর্থে যে ইবাদত, এসব আয়াতে তাকে আল্লাহ্র জন্যে নির্দিষ্ট করার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে, এসব আয়াতে তার প্রমাণ রয়েছে।
——————————– বল! তোমার আল্লাহ্কে ত্যাগ করে যাদের ডাকছো, তাদের ইবাদত করতে আমাকে নিষেধ করা হয়েছে। এ জন্যে আমার রবের তরফ থেকে আমার কাছে স্পষ্ট নিদর্শনও পৌছেছে। এবং রাব্বুল আলামীনের সামনে মাথা নত করার জন্যে আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।-মুমিন-৬৬
———————————————— তোমাদের রব বলেছেন; আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো। যারা আমার ইবাদত করতে অহংকার করবে তারা অবশ্যই জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।-মুমিন-৬০
——————————– সে আল্লাহ্ই তো তোমাদের রব, রাজত্ব তাঁর। তিনি ছাড়া তোমরা যাদের ডাকছো অণু পরিমান বস্তুও তাদের ইখতিয়ারে নেই। তোমরা তাদের ডাকলে তারা তোমাদের ডাক শুনতে পায় না, শুনতে পেলেও জবাব দিতে পারে না। কিয়ামতের দিন তারা তোমাদের শের্ক অস্বীকার করবে।
—————————- বল! তোমরা কি আল্লাহ্কে ত্যাগ করে এমন কিছুর ইবাদত করছো? যারা না পারে তোমাদের কোন ক্ষতি করতে, না পারে কোন উপকার! কেবল ই তো সব কিছুর শ্রোতা, সব জান্তা।
যে ইবাদতের অর্থ পূজা, এ সব আয়াতে তাকে আল্লাহ্র জন্যে বিশেষিত করতে হেদায়েত দেয়া হয়েছে। ইবাদতকে যে দোয়ার সমর্থক হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে তারও স্পষ্ট নিদের্শক রয়েছে। পূর্বাপর আয়াতসমূহে সেসব মাবুদের উল্লেখ দেখা যায়, অতি প্রাকৃতিক রুবুবিয়াতে যাদেরকে আল্লাহ্র শরীক করা হতো।
এখন কোন দিব্যদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তির জন্যে এটা অনুধাবন করা দুঃসাধ্য নয় যে, কোরআনের যে যে স্থানে আল্লাহ্র ইবাদতের উল্লেখ আছে, ইবাদতের বিভিন্ন অর্থের কোন একটির জন্যে তাকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে-আশপাশে কোথাও এমন কোন প্রমাণও যদি না থাকে, এমন সব স্থানে ইবাদত অর্থ দাসত্ব, আনুগত্য এবং পূজা তিনটি হবে। উদাহরণস্বরুপ নীচের আয়াতগুলো লক্ষ্য করুন।
——————————- আমি-ই আল্লাহ্। আমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। সুতরাং তুমি কেবল আমারই ইবাদত করো।-ত্বাহা-১৪
———————– সে আল্লাহ্ই তোমাদের রব! তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই। তিনি সমুদয় বস্তুর স্রষ্টা। সুতরাং তোমরা কেবল তাঁরই ইবাদত করো এবং তিনি সব জিনিসের যথাযথ খবর রাখেন।-আনআম-১০২
———————————————————— বল, হে লোক সকল! আমার দীন কি, তা এখনও যদি তোমাদের অজানা থাকে,. তবে জেনে নাও যে, আল্লাহ্ ছাড়া তোমরা যাদের ইবাদত করো, আমি তাদের ইবাদত করি না, বরং আমি সে আল্লাহ্র ইবাদত করি, যিনি তোমাদের জান কবজ করেন। ঈমানদারদের মধ্যে শামিল হওয়ার জন্যে আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।-ইউনুস-১০৪
———————————— আল্লাহ্ ছাড়া আর যাদের তোমরা ইবাদত করছো, তোমাদের ও তোমাদের বাপ-দাদার রাখা কয়েকটি নাম ছাড়া তাদের তো আর কোন অস্তিত্ব নেই। তারা যে উপাস্য, এমন কোন দলীল -তো আল্লাহ্ নাযিল করেন নি। ক্ষমতা কেবল আল্লাহ্র জন্যে নির্দিষ্ট। তাঁরই নির্দেশ যে, তাঁর ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করা যাবে না। এটাই তো সোজা-সরল পথ।-ইউসুফ-৪০
———- আসমান-যমীনের যত তত্ত্ব বান্দাদের অজানা, সে সবের জ্ঞান কেবল আল্লাহ্রই রয়েছে। সকল বিষয় তাঁর হুজুরেই পেশ হয়। সুতরাং তুমি কেবল তাঁরই ইবাদত করো এবং তারই ওপর নির্ভর করো।-হৃদ-১২৩
——————————————————————————————– যা কিছু আমাদের সামনে আছে, আর যা কিছু আমাদের কাছে উহ্য, গোপন, আর যা কিছু রয়েছে এতদোভয়ের মধ্যখানে সব কিছুরই মালিক আল্লাহ্,তোমার রব। আর তোমার রব ভোলেন না। তিনি আসমান-যমীনের মালিক, মালিক সেসব বস্তুর, যেগুলো এতদোভয়ের মধ্যে রয়েছে। সুতরাং তুমি তারই ইবাদত কর এবং তাঁর ইবাদতের ওপর দৃঢ় থাকো।-মরিয়াম-৬৪-৬৫
————————– সুতরাং যে আপন রবের দীদার প্রত্যাশা করে, তার উচিত সৎ কর্ম করা এবং আপন রবের ইবাদতের সাথে অন্য কারো ইবাদতকে শরীক না করা।-কাহাফ-১১০
এসব আয়াত এবং এ ধরনের অন্যান্য আয়াতে ইবাদতকে নিছক পূজা,বন্দেগী বা আনুগত্যের জন্যে নির্দিষ্ট করে নেয়ার কোন কারণ নেই। এ ধরনের আয়াতে কোরআন মূলত পরিপূর্ণ দাওয়াত পেশ করে। স্পষ্ট কোরাআনের দাওয়াতই হচ্ছে এই যে, দাসত্ব-আনুগত্য-পূজা-যা কিছুই হবে,সবই হবে আল্লাহ্র জন্যে। সুতরাং এসব স্থানে ইবাদতকে সীমিত কোনও একটি অর্থে সীমিত করা মূলত কোরআনের দাওয়াতকে সীমিত করারই নামান্তর। আর এর অনিবার্য পরিণতি এই দাঁড়াবে যে, যারা কোরআনের দাওয়াতের এক সীমিত ধারণা নিয়ে ঈমান আনবে, তাঁরা তার অসমাপ্ত-অসম্পূর্ণ অনুসরণই করবে।