খতমে নবুয়্যাত
সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী
অনুবাদক: আবদুল মান্নান তালিব
স্ক্যান কপি ডাউনলোড
বর্তমান যুগে ইসলামের বিরুদ্ধে যে সকল ফেৎনার উদ্ভব হয়েছে তন্মধ্যে নতুন নবুয়্যাতের দাবী অতি মারাত্মক। এই নতুন নবুয়্যাতের দাবী মুসলিম জাতির মধ্যে বিরাট গোমরাহীর সৃষ্টি করে চলছে। সাধারণত দ্বীন সম্পর্কে মুসলমানদের পরিপূর্ণ ও সঠিক ধারণা না থাকার কারণেই এই ফেৎনার উদ্ভব ও তার বিকাশ সম্ভব হয়েছে। দ্বীন সম্পর্কে যদি মুসলমানগণ অনভিজ্ঞ না হ’তো এবং খত্মে নবুয়্যাতকে ভালোভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে পারতো তবে কিছুতেই বিংশ শতাব্দীতে এই ফেৎনার উদ্ভব ও বিকাশ সম্ভব হতো না বলেই আমাদের বিশ্বাস।
খত্মে নবুয়্যাত বিশ্বাসের তাৎপর্য ও তার গুরুত্ব সম্পর্কে জনগণকে অবগত ও অবহিত করানোই হচ্ছে এই ফেৎনাকে নির্মূল করার সঠিক কার্যপন্থা। এ ছাড়া অন্যকোন পথ নেই এবং হতেও পারেনা। এ ব্যাপারে মুসলমানদের মনে যে সকল সশয় সন্দেহের সৃষ্টি করা হয় তার যুক্তিপূর্ণ ও যথার্থ সমালোচনা এবং জবাবের প্রয়োজন।
আধুনিক বিশ্বের বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তানায়ক আল্লামা সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী ১৯৬২ সা?লে “খত্মে নবুয়্যাত” নামক একটি পুস্তিকা রচনা করেন। উর্দু আত্মপ্রকাশের অব্যবহিত পরেই উপরোক্ত বইটির বাংলা তরজমা পাঠকদের খেদমতে পেশ করা হয়। অতি স্বল্প সময়ের মধ্যেই বইটি নিঃশেষ হয়ে যায়। পাঠক সমাজের বারবার তাগাদার কারণে ১৯৬৭ সালে বইটির ২য় সংস্করণ এবং ১৯৭৭ সালে ৩য় সংস্করণ পাঠক সমাজের সম্মুখে পেশ করা সম্ভবপর হয়নি, কিন্তু এ সংস্করণও শিগগিরই নিঃশেষ হয়ে যায়। বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে বর্তমানে এর চতুর্থ সংস্করণ পাঠক সমাজের সম্মুখে উপস্থাপিত করা হলো। খত্মে নবুয়্যাত সম্পর্কে মুসলিম সমাজে যে বিভ্রান্তিকর মতবাদ সৃষ্টি করা হচ্ছে তাকে প্রতিহত করার কাজে সুধীবৃন্দ এই পুস্তিকা হতে সামান্যতম উপকৃত হলে আমাদের শ্রম সার্থক মনে করবো।
-প্রকাশক
শেষ নবী
(আরবী **********)
“মুহাম্মদ তোমাদের পুরুষদের কারুর পিতা নন। বরং তিনি আল্লাহর রসূল এবং শেষ নবী। এবং আল্লাহ সব জিনিসের ইলম রাখেন।”
আয়াতটি সূরা আহ্যাবের পঞ্চম রুকুতে উদ্ধৃত হয়েছে। হযরত জয়নবের (রা) সঙ্গে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের বিবাহের বিরুদ্ধে যেসব কাফের ও মুনাফিক মিথ্যা প্রচারণা শুরু করে দিয়েছিলো এই রুকুতে আল্লাহতায়ালা তাঁদের জবাব দিয়েছেন। তাদের বক্তব্য ছিল এই: জয়নব (রা) হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের পালিত পুত্র হযরত জায়েদের (রা) স্ত্রী। অর্থাৎ তিনি রসূলুল্লাহর (স) পুত্রবধু। কাজেই জায়েদের তালাক দেবার পর রসূলুল্লাহ (স) নিজের পুত্রবধুকে বিয়ে করেছেন। এর জবাবে আল্লাহতায়ালা উপরোক্ত সূরার ৩৭ নম্বর আয়অতে বলেন: আমার নির্দেশেই এই বিবাহ সম্পাদিত হয়েছে এবং এজন্য হয়েছে যে, নিজের পালিত পুত্রের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে বিবাহ করায় মুসলমানদের কোনো দোষ নেই। অতঃপর ৩৮ এবং ৩৯ নম্বর আয়াতে বলেন: নবীর ওপর যে কাজ আল্লাহ ফরয করে দিয়েছেন কোন শক্তি তাঁকে তা সম্পাদন করা থেকে বিরত রাখতে পারেনা। নবীদের কাজ মানুষকে ভয় করা নয়, আল্লাহকে ভয় করা। নবীদের ব্যাপারে আল্লাহর চিরাচরিত পদ্ধতি হলো এই যে, কারুর পরোয়া না করেই তাঁরা সব সময় আল্লাহর পয়গাম দুনিয়ায় পৌঁছান এবং নিঃসংশয় চিত্তে তাঁর নির্দেশ পালনস করে থাকেন। এরপরই পেশ করেছেন আলোচ্র আয়াতটি। এই আয়াতটি বিরুদ্ধবাদীদের যাবতীয় প্রশ্ন এবং অপপ্রচারের মূলোৎপাটন করে দিয়েছে।
তাদের প্রথম প্রশ্ন হলো: আপনি নিজের পুত্রবধুকে বিবাহ করেছেন। অথচ আপনার নিজের শরীয়তও একথা বলে যে, পুত্রের বিবাহিত স্ত্রী পিতার জন্য হারাম।এর জবাবে বলা হলো: “মুহাম্মদ তোমাদের পুরুষদের কারুর পিতা নন।” অর্থাৎ যে ব্যক্তি তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে বিবাহ করা হলো, সে কি মুহাম্মদের (সা) পুত্র ছিল? তোমরা সবাই জান যে, মুহাম্মদের (সা) কোন পুত্র নেই।
তাদের দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো: পালিত পুত্র নিজের গর্ভজাত পুত্র নয়, একথা মেনে নিয়েও বলা যায় যে, তার তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে বিবাহ করা জায়েজ হতে পারে, কিন্তু তাকে অবশ্যই বিবাহ করতে হবে এবং প্রয়োজনটা কোথায়? এর জবাবে বলা হলো: “কিন্তু তিনি আল্লাহর রসূল।” অর্থাৎ যে হালাল বস্তু তোমাদের রসম-রেওয়াজের বদৌলতে অযথা হারামে পরিণত হয়েছে, সে সম্পর্কে যাবতীয় বিদ্বেষ এবং পক্ষপাতিত্ব খতম করে তার হালাল হওয়াকে নিঃসন্দেহ এবং নিঃসংশয় করে তোলা রসূলের অবশ্য করণীয় কাজ। [‘খত্মে নবুয়্যাত’ অস্বীকারকারীরা এখানে প্রশ্ন উঠায় যে, কাফের এবং মুনাফেকদের এই প্রশ্নটি কোন্ হাদীসে উল্লিীখত হয়েছে? কিন্তু এই প্রশ্নটি আসলে কোরআন সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতারই ফল। কোরআন মজীদের বহু জায়গায় আল্লাহতায়ালা বিরোধীদলের প্রশ্ন নকল না করেই তাদের জবাব দিয়ে গেছেন এবং জবাব থেকেই একথা স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রকাশ হয়েছে যে, যে প্রশ্নটির জবাব দেয়া হচ্ছে সেটি কি ছিলো। এখানেও একই ব্যাপার। এখানেও জবাব নিজেই প্রশ্নের বিষয়বস্তু বিবৃত করছে। প্রথম বাক্যটির পর শব্দ দিয়ে দ্বিতীয় বাক্যটি শুরু করার প্রমাণ হলো যে, প্রথম বাক্যে প্রশ্নকারীর একটি কথার জবাব হয়ে যাবার পরও তার আর একটি প্রশ্ন বাকি রয়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয় বাক্যে তার জবাব দেয়া হয়েছে।মুহাম্মদ (স) নিজের পুত্রবধুকে বিবাহ করেছেন- তাদের এই প্রশ্নের জবাব তারা প্রথম বাক্যে পেয়ে গেছে। অতঃপর তাদের প্রশ্ন ছিল যে, একাজটা করার এমন কি প্রয়োজন ছিল? এর জবাবে বলা হলো: “কিন্তু তিনি আল্লাহর রসূল এবং শেষ নবী।” অন্য কথায় বলা যায়, যেমন কেউ বললো, জায়েদ দাঁড়ায়নি কিন্তু বকর দাঁড়িয়েছে। এর অর্থ হলো এই যে, “জায়েদ দাঁড়ায়নি” কথা থেকে একটি প্রশ্নের জবাব পাওয়ার পরও প্রশ্নকারীর আর একটি প্রশ্ন বাকি রয়ে গেছে। অর্থাৎ যদি জায়েদ না দাঁড়িয়ে থাকে, তবে কে দাঁড়ালো? এই প্রশ্নের জবাবে “কিন্তু বকর দাঁড়িয়েছে” বাক্যটি বলা হলো।]
আবার অতিরিক্ত জোর দেবার জন্য বলেন: “এবং শেষ নবী।” অর্থাৎ তাঁর যুগে আইন এবং সমাজ সংস্কারমূলক কোনো বিধি প্রবর্তিত না হয়ে থাকলে, এই কাজ সমাধা করার জন্য তাঁর পর কোনো রসূল তো নয়ই, কোনো নবীও আসবেন না। কাজেই জাহেলী যুগের রসম-রেওয়াজ খতম করে দেবার প্রয়োজন এখনই দেখা দিয়েছে এবং তিনি নিজেই একাজটা সমাধা করে যাবেন।
অতঃপর আরো জোর দিয়ে বলেন: “এবং আল্লাহ সব জিনিসের ইলম রাখেন।” অর্থাৎ এই মুহূর্তে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের সাহায্যে এই বদ রসমটা খতম করিয়ে দেবার প্রয়োজনটা কি এবং এটা না করায় কি ক্ষতি-একথা একমাত্র আল্লাহই জানেন। তিনি জানেন যে, তাঁর পক্ষথেকে আর কোন নবী আসবেন না। কাজেই শেষ নবীর সাহায্যে যদি এই বদ রসমটা খতম করিয়ে না দেয়া হয়, তাহলেএর পরে আর দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি আসবেন না, যিনি একে নির্মূল করে দিতে চাইলে সমগ্র দুনিয়ায় মুসলমানদের মধ্য হতে চিরকালের জন্য এটি নির্মুল হয়ে যাবে। পরবর্তীকালেল সংস্কারকগণ এটা নির্মূল করে দিলেও তাঁদের কারুর কাজের পেছনে এমন কোন চিরন্তন এবং বিশ্বজনীন কর্তৃত্ব থাকবেনা, যার ফলে প্রত্যেক দেশ এবং প্রত্যেক যুগের লোকেরা তাঁদের অনুসরণ করতে বাধ্য হবে এবং তাঁদের কারুর ব্যক্তিত্বও এতোটা পাক-পবিত্র বলে গণ্য হবেনা যে, কোনো কাজ নিছক তাঁর সুন্নাত হবার দরুন মানুষের হৃদয় হতে সে সম্পর্কে যাবতীয় ঘৃণা, দ্বিধা এবং সন্দেহ মুহূর্তের মধ্যে নির্মল হয়ে যাবে।
কোরআনের পূর্বাপর বিবৃতির ফায়সালা
বর্তমান যুগে একটি দল নতুন নবুয়্যাতের ফিত্না সৃষ্টি করেছে। এরা ‘খাতিমুন নাবিয়ীন’ শব্দের অর্থ করে “নবীদের মোহর”। এরা বুঝাতে চায় যে, রসূলুল্লাহ (স) তাঁর মোহরাংকিত হয়ে আরো অনেক নবী দুনিয়ায় আগমন করবেন। অথবা অন্য কথায় বলা যায়,যতক্ষণ পর্যন্ত কারুর নবুয়্যাত রসূলুল্লাহর মোহরাংকিত না হয়, ততক্ষণ তিনি নবী হতে পারবেন না।
কিন্তু “খাতিমুন নাবিয়ীন” শব্দ সম্বলিত আয়াতটি যে ঘটনা পরম্পরায় বিবৃত হয়েছে, তাকে সেই বিশেষ পরিবেশে রেখে বিচার করলে, তা থেকে এ অর্থ গ্রহণের কোন সুযোগই দেখা যায় না। অধিকন্তু এ অর্থ গ্রহণ করার পর এ পরিবেশে শব্দটির ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তাই বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং বক্তব্যের আসল উদ্দেশ্যের পরিপন্থী হয়ে দাঁড়ায়। এটা কি নিতান্ত অবান্তর ও অপ্রাসঙ্গিক কথা নয় যে, জয়নবের নিকাহর বিরুদ্ধে কথিত প্রতিবাদ এবংতাথেকে সৃষ্ট নানাপ্রকার সংশয়-সন্দেহের জবাব দিতে দিতে হঠাৎ মাঝখানে বলে দেয়া হলো: মুহাম্মদ (সা) নবীদের মোহর। অর্থাৎ ভবিষ্যতে যত নবী আসবেন তাঁরা সবাই তাঁর মোহরাংকিত হবেন। আগে পিছের এই ঘটনার মাঝখানে একথাটির আকস্মিক আগমন শুধু অবান্তরই নয়, এ থেকে প্রতিবাদকারীদের জবাবে যে যুক্তি পেশ করা হচ্ছিল, তাও দুর্বল হয়ে পড়ে। এহেন পরিস্থিতিতে প্রতিবাদকারীদের হাতে একটা চমৎকার সুযোগ আসতো এবং তারা সহজেই বলতে পারতো যে, আপনার জীবনে যদি এ কাজটা সম্পন্ন না করতেন, তাহলে ভালই হতো, কোন বিপদের সম্ভাবনা থাকতো না, এই বদ রসমটা বিলুপ্ত করার যদি এতোই প্রয়োজন হয়ে থাকে, তাহলে আপনার পরে আপনার মোহরাংকিত হয়ে যেসব নবী আসবেন, এ কাজটা তাঁদের হাতেই সম্পন্ন হবে।
উল্লিখিত দলটি শব্দটির আর একটি বিকৃত অর্থ নিয়েছে: ‘খাতিমুন নাবিয়ীন” অর্থ হলো: “আফজালুন নাবিয়ীন।” অর্থাৎ নবুয়্যাতের দরজা উন্মুক্তই রয়েছে, তবে কিনা নবুয়্যাত পূর্ণতা লাভ করেছে রসূলুল্লাহর ওপর। কিন্তু এ অর্থ গ্রহণ করতে গিয়েও পূর্বোল্লিখিত বিভ্রান্তির পুনাবির্ভাবের হাত থেকে নিস্তার নেই। অগ্র-পশ্চাতের সাথে এরও কোন সম্পর্ক নেই।বরং এটি পূর্বাপরের ঘটনা পরম্পরার সম্পূর্ণ বিপরীত অর্থবহ। কাফের ও মুনাফিকরা বলতে পারতো: ‘জনাব, আপনার চাইতে কম মর্যাদার হলেও আপনার পরে যখন আরোনবী আসছেন, তখন একাজটা না হয় তাদের ওপরই ছেড়ে দিতেন। এই বদ রসমটাও যে আপনাকেই মিটাতে হবে, এরই বা কি এমন যৌক্তিকতা আছে!
আভিধানিক অর্থ
তাহলে পূর্বাপর ঘটনাবলীল সাথে সম্পর্কের দিক দিয়ে একথা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে যে, এখানে খাতিমুন নাবিয়ীন শব্দের অর্থ নবুয়্যাতের সিলসিলার পরিসমাপ্তি ঘোষণা। অর্থাৎ রসূলুল্লাহর (স) পর আর কোন নবী আসবেননা। কিন্তু শুধু পূর্বাপর সম্বন্ধের দিক দিয়েই নয়, আভিধানিক অর্থের দিক দিয়েও এটিই একমাত্র সত্য। আরবী অভিধান এবং প্রবাদ অনুযায়ী ‘খতম’ শব্দের অর্থ হলো: মোহর লাগানো, বন্ধ করা, শেষ পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া এবং কোনো কাজ শেষ করে দায়িত্বথেকে অব্যাহতি লাভ করা।
খাতামাল আমাল (******) অর্থ হলো: ফারেগা মিনাল আমল (*****) অর্থাৎ কাজ শেষ করে ফেলেছৈ। খাতামাল এনায়া (*****) অর্থ হলো: পাত্রের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে এবং তার ওপর মোহর লাগিয়ে দিয়েছে, যাতে করে তার ভেতর থেকে কোনো জিনিস বাইরে আসতে এবং বাইরে থেকে কিছু ভেতরে যেতে না পারে।
খাতামাল কিতাব (*****) অর্থ হলো: পত্র বন্ধ করে তার ওপর মোহর লাগিয়ে দিয়েছে, ফলে পত্রটি সংরক্ষিত হবে।
খাতামা আলাল কাল্ব (******) অর্থ হলো: দিলের ওপর মোহর লাগিয়ে দিয়েছে। এরপর বাইরের কোনো কথা আর সে বুঝতে পারবে না এবং তার ভেতরের স্থিতিশীল কোনো কথা বাইরে বেরুতে পারবে না।
খিতামুল কুল্লি মাশরুব (****) অর্থ হলো: কোনো পানীয় পান করার পর যে স্বাদ অনুভূত হয়।
খাতিমাতু কুল্লি শাইয়েন আকিবাতুহু ওয়া আখিরাতুহ (আরবী ***********) অর্থাৎ] প্রত্যেক জিনিসের খাতিমা অর্থ হলো তার পরিণাম এবং শেষ।
খাতামাশ্ শাইয়ে বালাগা আখিরাহ (আরবী ***********) অর্থাৎ কোনো জিনিসকে খতম করার অর্থ হলো তা শেষ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। -খত্মে কোরআন বলতে এই অর্থ গ্রহণ করা হয় এবং এর অর্থের ভিত্তিতেই প্রত্যেক সূরার শেষ আয়াতকে বলা হয় ‘খাওয়াতিম’।
খাতিমুল কওমে আখেরুহুম (আরবী *********) অর্থাৎ খাতিমুল কওম অর্থ জাতির শেষ ব্যক্তি (দ্রষ্টব্য: লিসানুল আরব, কামুস এবং আকরাবুল মাওয়ারিদ।) [এখানে আমি মাত্র তিনটি অভিধানের উল্লেখ করলাম। কিন্তু শুধু এই তিনটি অভিধানই কেন, আরবী ভাষার যে কোন নির্ভরযোগ্য অভিধান খুলে দেখুন সেখানে ‘খতম’ শব্দের উপরোল্লিখিত ব্যাখ্যাই পাবেন। কিন্তু ‘খতমে নবুয়্যাত’ অস্বীকারকারীরা খোদার দ্বীনের সুরক্ষিত গৃহে সিঁদ লাগাবার জন্য এক আভিধানিক অর্থকে পুর্ণরূপে এড়িয়ে গেছেন। তারা বলতে চান, কোন ব্যক্তিকে ‘খাতামুশ শোয়ারা’, খাতামুল ফোকাহা’ অথবা ‘খাতামুল মুফাসসিরিন’ বললে এ অর্থ গ্রহণ করা হয় না যে, যাকে ঐ পদবী দেয়া হয়, তার পরে আর কোনো শায়ের কোন ফকিহ অথবা মুফাস্সরি পয়দা হননি। বরং এর অর্থ এই হয় যে, ঐ ব্যক্তির ওপররে উল্লিীখত বিদ্যা অথবা শিল্পের পূর্ণতার পরিসমাপ্তি ঘটেছে। অথবা কোন বস্তুকে অত্যাধিক ফুটিয়ে তুলবার উদ্দেশ্যে এই ধরনেসর পদবী ব্যবহারের ফলে কখনো খতম-এর আভিধানিক অর্থ ‘পূর্ণ’ অথবা ‘শ্রেষ্ঠ’ হয় না এবং ‘শেষ’ অর্ এর ব্যবহার ত্রুটিপূর্ণ বলৌ গন্য হয় না।
একমাত্র ব্যাকরণ-রীতি সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তিই এ ধরনের কথা বলতে পারেন। কোন ভাষারই নিয়ম এ নয় যে, কোন একটি শব্দ তার আসল অর্থের পরিবর্তে কখনো কখনো দূর সম্পর্কের অন্য কোন অর্থে ব্যবহৃরিত হলেসেটাই আসল অর্থে পরিণত হবে এবং আসল আভিধানিক অর্থে তার ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। আপনিয খন কোন আরবের সম্মুখে বলবেন:
(জাআ খাতামুল কওম)-তখন কখনো সে মনে করবে না যে গোত্রের শ্রেষ্ঠ অথবাপ কামেল ব্যক্তি এসেছে। বরং সে মনে করবে যে, গোত্রের সবাই এসে গেছে, এমনকি শেষ ব্যক্তিটি পর্যন্তও।]
এজন্যই সমস্ত অভিধান বিশারত এবং তাফসীরকারগণ একযোগে ‘খাতিমুন নাবিয়ীনা’ শব্দের অর্থ নিয়েছেন, আখেরুন নাবিয়ীন-অ অর্থাৎ নবীদের শেষ। আরবী অভিধান এবং প্রবাদ অনুযায়ী ‘খাতিম’ –এর অর্থ যাকঘরের মোহর নয়, যা চিঠির ওপর লাগিয়ে চিঠি পোস্ট করা হয়; বরং সেই মোহর যা খামের মুখে এই উদ্দেশ্যে লাগানো হয় যে, তার ভেতর থেকে কোনো জিনিস বাইরে বেরুতে পারবে না এবং বাইরের কোনো জিনিস ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে না।
রাসূলুল্লাহর বাণী
পূর্বাপর সম্বন্ধ এবং আভিধানিক অর্থের দিক দিয়ে শব্দটির যে অর্থ হয়, রসুলুল্লাহর (স) বিভিন্ন ব্যাখ্যাও এর সমর্থন করে। দৃষ্টান্তস্বরূপ এখানে কতিপয় হাদীসের উল্লেখ করছি:
(আরবী *********)
(১) রসূলুল্লাহ (স) বলেন: বনি ইসরাঈলদের নেতৃত্ব করতেন্ আল্লাহর রসূলগণ। যখন কোনো নবী ইন্তেকাল করতেন, তখন অন্য কোনো নবী তার স্থলাভিষিক্ত হতেন। কিন্তু আমার পরে কোনো নবীহবে না, হবে শুধু খলিফা।
(আরবী *********)
(২) রসূলুল্লাহ (স) বলেন: আমি আমার পূর্ববর্তী নবীদের দৃষ্টান্ত হলো এই যে, এক ব্যক্তি একটি দালান তৈরী করলো এবং খুব সুন্দর ও শোভনীয় করে সেটি সজ্জিত করলো।কিন্তু তার এক কোণে একটি ইটের স্থান শূন্য ছিল। দালানটির চতুর্দিকে মানুষ ঘুরে ঘুরে তার সৌন্দর্য দেখে বিস্ময় প্রকাশ করছিল এবং বলছিল, ‘এ স্থানে একটা ইট রাখা হয়নি কেন? কাজেই আমি সেই ইট এবং আমিই শেষ নবী।’ (অর্থাৎ আমার আসার পর নবুয়্যাতের দালান পূর্ণতা লাভ করেছে, এখন এর মধ্যে এমন কোন শূন্যস্থান নেই যাকে পূর্ণ করার জন্য আবার কোনো নবীর প্রয়োজন হবে)।
এই ধরনের চারটি হাদীস মুসলিম শরীফে কিতাবুল ফাজায়েলের বাবু খাতিমুন নাবিয়ীনে উল্লিখিত হয়েছে। এবং শেষ হাদীসটিতে এতোটুকুন অংশ বর্ধিত হয়েছে: (আরবী *********) “অতঃপর আমি এলাম এবং আমি নবীদের সিলসিলা খতম করে দিলাম।”
হাদীসটি তিরমিজী শরীফে একই শব্দ সম্বলিত হয়ে ‘কিতাবুল মানাকিবের বাবু ফাজলিন নবী’ এবং কিতাবুল আদাবের ‘বাবুল আমসালে’ বর্ণিত হয়েছে।
মুসনাদে আবু দাউদ তিয়ালাসীতে হাদীসটি জাবের ইবনে আবদুল্লাহ বর্ণিত হাদীসের সিলসিলায় উল্লিখিত হয়েছে এবং এর শেষ অংশটুকু হলো (আরবী *********) “আমার মাধ্যমে নবীদের সিলসিলা খতম করা হলো।”
মুসনাদে আহমদে সামান্য শাব্দিক হেরফেরের সাথে এই ধরনের হাদীস হযরত উবাই ইবনে কা’ৎব, হযরত আবু সাঈদ খুদরী এবং হযরত আবু হোরায়রা (রা) হতে বর্ণিত হয়েছে।
(আরবী *********)
(৩) রসূলুল্লাহ (স) বলেন: “ছ’টা ব্যাপারে অন্যান্য নবীদের ওপর আমাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে: (১) আমাকে পূর্ণ অর্থব্যঞ্জক সংক্ষিপ্ত কথা বলার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। (২) আমাকে শক্তিমত্তা ও প্রতিপত্তি দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে। (৩) আমাকে গনীমাতের অর্থ-সম্পদ আমার জন্য হালাল করা হয়েছে। (৪) পৃথিভীর জমীনকে আমার জন্য মসজিদে (অর্থাৎ আমার শরীয়তে নামায কেবল বিশেষ ইবাদতগাহে নয়, দুনিয়ার প্রত্যেক স্থানে পড়া যেতে পারে) এবং মাটিকে পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যমে (শুধু পানিই নয়, মাটির সাহায্যে তায়াম্মুম করেও পবিত্রতা হাসিল অর্থাৎ অজু এবং গোসলের কাজ সম্পন্ন করা যেতে পারে) পরিণত করা হয়েছে। (৫) সমগ্র দুনিয়ার জন্য আমাকে রসূল হিসাবে পাঠানো হয়েছে এবং (৬) আমার ওপর নবীদের সিলসিলা খতম করে দেয়া হয়েছে।”
(৪) রসূলুল্লাহ (স) বলেন: ‘রিসালাত এবং নবুয়্যাতের সিলসিলা খতম করে দেয়া হয়েছে। আমার পর কোনো রসূল এবং নবী আসবে না।”
(আরবী *********)
(৫) রসূলুল্লাহ (স) বলেন: “আমি মুহাম্মদ। আমি আহমদ। আমি বিলুপ্তকারী, আমার সাহায্যে কুফরকে বিলুপ্ত করা হবে। আমি সমবেতকারী, আমার পরে লোকদেরকে হাশরের ময়দানে সমবেত করা হবে (অর্থাৎ আমার পরে শুধু কিয়ামতই বাকি আছে) আমি সবার শেষে আগমনকারী (এবং সবার শেষে আগমনকারী হলো সেই) যার পরে আর নবী আসবে না।”
(আরবী *********)
রসূলুল্লাহ (স) বলেন: “আল্লাহ নিশ্চয়ই এমন কোনো নবী পাঠাননি যিনি তাঁর উম্মতকে দাজ্জাল সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন করেননি। (কিন্তু তাদের যুগে সে বহির্গত হয়নি)। এখন আমিই শেষ নবী এবং তোমরা শেষ উম্মত। দাজ্জাল নিঃসন্দেহে এখন তোমাদের মধ্যে বহির্গত হবে।”
(আরবী *********)
(৭) আবদুর রহমান ইবনে জোবায়ের বলেন: আমি আবদুল্লাহ ইবনে উমর ইবনে আস্’কে বলতে শুনেছি যে, একদিন রসূলুল্লাহ (সা) নিজের গৃহ থেকে বের হয়ে আমাদের মধ্যে তাশরীফ আনলেন। তিনি এভাবে আসলেন যেন আমাদের নিকট থেকে বিদায় নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি তিনবার বললেন, আমি উম্মী নবী মুহাম্মদ। অতঃপর বললেন, আমার পর আর কোন নবী নেই।
(আরবী *********)
(৮) রসূলুল্লাহ (স) বলেন: আমার পরে আর কোনো নবুয়্যাত নেই। আছে শুধু সুসংবাদ দানকারী কথার সমষ্টি। জিজ্ঞেস করা হলো, হে খোদার রসূল, সুসংবাদ দানকারী কথাগুলো কি? জবাবে তিনি বললেন: ভালো স্বপ্ন। অথবা বললেন, কল্যাণময় স্বপ্ন। (অর্থাৎ খোদার অহি নাযীল হবার এখন আর সম্ভাবনা নেই। বড় জোর এতোটুকু বলা যেতে পারে যে, আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে যদি কাউকে কোনো ইঙ্গিত দেয়া হয়, তাহলে শুধু ভালো স্বপ্নের মাধ্যমেই তা দেয়া হবে)।
(আরবী *********)
(৯) রসূলুল্লাহ (স) বলেন: আমার পরে যদি কোনো নবী হতো, তাহলে উমর ইবনে খাত্তাম সে সৌভাগ্য লাভ করতো।
(আরবী *********)
(১০) রসূলুল্লাহ (স) হযরত আলীকে (রা) বলেন: আমার সাথে তোমার সম্পর্ক মুসার সাথে হারুনের সম্পর্কের মতো। কিন্তু আমার পরে আর কোনো নবী নেই।
বুখারী এবং মুসলিম তাবুক যুদ্ধের বর্ণনা প্রসংগেও এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। মুসনাদে আহমদে এই বিষয়বস্তু সম্বলিত দু’টি হাদীস হযরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস থেকে বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে একটি বণনার শেষাংশ হলো: (আরবী *********) “কিন্তু আমার পরে আর কোনো নবুয়্যাত নেই।” আবু দাউদ তিয়ালাসি, ইমাম আহমদ এবং মুহাম্মদ ইসহাক এ সম্পর্কে যে বিস্তারিত বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন তা থেকে জানা যায় যে, তাবুক যুদ্ধে রওয়ানা হবার পূর্বে রসূলুল্লাহ (স) হযরত আলীকে (রা) মদীনা তাইয়েবার হেফাজত এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রেখে যাবার ফায়সালা করেন। এ ব্যাপারটি নিয়ে মুনাফিকরা বিভিন্ন কথা বলতে লাগলো। হযরত আলী (রা) রসূলুল্লাহকে (স) বললেন, ‘হে খোদার রসূল, আপনি কি আমাকে শিশু এবং মেয়েদের মধ্যে ছেড়ে যাচ্ছেন? রসূলুল্লাহ (স) তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলেন: ‘আমার সাথে তোমার সম্পর্কতো মূসার সাথে হারুনের সম্পর্কের মতো। অর্থাৎ কোহেতুরে যাবার সময় হযরত মূসা (আ) যেমন বনী ইসরাঈলদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য হযরত হারুনকে পেছনে রেখে গিয়েছিলেন অনুরূপভাবে মদীনার হেফাজতের জন্য আমি তোমাকে পেছনে রেখে যাচ্ছি। কিন্তু সংগে সংগে রসূলুল্লাহর মনে এই সন্দেহও জাগলো যে, হযরত হারুনের সংগে এভাবে তুলনা করার ফলে হয়তো পরে এ থেকে কোনো ফিত্না সৃষ্টি হতে পারে। কাজেই পরমুহূর্তেই তিনি কথাটা স্পষ্ট করে দিলেন যে, ‘আমার পর কোনো ব্যক্তি নবী হবে না।’
(আরবী *********)
(১১) হযরত সাওবান বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ (স) বলেন: আর কথা হচ্ছে এই যে, আমার উম্মতের মধ্যে ত্রিশজন মিথ্যাবাদী হবে। তাদের প্রত্যেকেই নিজেকে নবী বলে দাবী করবে। অথচ আমার পর আর কোনো নবী নেই।
এই বিষয়বস্তু সম্বলিত আর একটি হাদীস আবু দাউদ ‘কিতাবুল মালাহেমে’ হযরত আবু হোরায় (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিরমিযীও হযরত সাওবান এবং হযরত আবু হোরায় (রা) থেকে এ হাদীস দু’টি বর্ণনা করেছেন। দ্বিতীয় বর্ণনাটির শব্দ হলো এই:
(আরবী *********)
অর্থাৎ এমন কি তিরিশ জনের মতো প্রতারক আসবে। তাদের মধ্য থেকে প্রত্যেকেই দাবীকরবে যে, সে আল্লাহর রসূল।
(১২) রসূলুল্লাহ (স) বলেন: আমাদের পূর্বে যেসব বনি ইসরাঈল গুজরে গেছেন, তাঁদের মধ্যে অনেক লোক এমন ছিলেন, যাঁদের সংগে কালাম করা হয়েছে, অথচ তাঁরা নবী ছিলেন না। আমার উম্মতের মধ্যে যদি এমন কেউ হয়, তাহলে সে হবে উমর।
মুসলিমে এই বিষয়বস্তু সম্বলিত যে হাদীস উল্লিখিত হয়েছে, তাতে (****) এর পরিবর্তে (****) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু মুকাল্লিম এবং মুহাদ্দিস শব্দ দুটি সমার্থক। অর্থাৎ এমন ব্যক্তি যার সংগে আল্লাহতায়ালা কালাম করেছেন অথবা যার সাথে পর্দার পেছন থেকে কথা বলা হয়। এ থেকে জানা যায় যে, নবুয়্যাত ছাড়াও যদি এই উম্মতের মধ্যে কেউ আল্লাহর সাথে কালাম করার সৌভাগ্যঅর্জন করেন, তাহলে তিনি একমাত্র হযরত উমরই হবেন।
(আরবী *********)
(১৩) রসূলুল্লাহ (স) বলেন: আমার পরে আর কোনো নবী নেই এবং আমার উম্মতের পর আর কোনো উম্মত (অর্থাৎ কোনো ভবিষ্যত নবীর উম্মত) নেই।
(আরবী *********)
(১৪) রসূলুল্লাহ (স) বলেন: আমি শেষ নবী এবং আমার মসজিদ (অর্থাৎ মসজিদে নববী) শেষ মসজিদ। [খত্মে নবুয়্যাত অস্বীকারকারীরা এই হাদীস থেকে প্রমাণ করে যে, রসূলুল্লাহ (স) যেমন তাঁর মসজিদকে শেষ মসজিদ বলেছেন, অথচ এটি শেষ মসজিদ নয়; এর পরও দুনিয়ার বেশুমার মসজিদ নির্মিত হয়েছে অনুরূপভাবে তিনি বলেছেন, যে তিনি শেষ নবী। এর অর্থ হলো এই যে, তাঁর পরেও নবী আসবেন। অবশ্য শ্রেষ্ঠত্বের দিক দিয়ে তিনি হলেন শেষ নবী এবং তাঁর মসজিদ শেষ মসজিদ। কিন্তু আসলে এ ধরনের বিকৃত অর্থই একথা প্রমাণ করে যে, এই লোকগুলো আল্লাহ এবং রসূলের কালামের অর্থ অনুধাবন করার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। মুসলিম শরীফের যে স্থানে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে সেখানে এই বিষয়ে সমস্ত হাদীস সম্মুখে রাখলেই একথা পরিস্ফূট হবে যে, রসূলুল্লাহ (স) তাঁর মসজিদকে শেষ মসজিদ কোন্ অর্থে বলেছেন। এখানে হযরত আবুহোরায় (রা), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) এবং হযরত মায়মুনার (রা) যে বর্ণনা ইমাম মুসলিম উদ্ধৃত করেছেন, তাতে বলা হয়েছে যে, দুনিয়ার মাত্র তিনটি মসজিদ এমন রয়েছে যেগুলো সাধারণ মসজিদগুলোর ওপর শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার। সেখানে নামায পড়লে অন্যান্য মসজিদের চেয়ে হাজার গুণ বেশী সওয়াব হাসিল হয় এবং এজন্য একমাত্র এই তিনটি মসজিদে নামায পড়ার জন্য সফর করা জায়েজ। দুনিয়ার অবশিষ্ট মসজিদগুলোর মধ্যে সমস্ত মসজিদকে বাদ দিয়ে বিশেষ করে একটি মসজিদে নামায পড়বার জন্য সেদিকে সফর করা জায়েজ নয়। এর মধ্যে ‘মসজিদুল হারাম’ হলো প্রথম মসজিদ। হযরত ইবরাহীম (আ) এটি বানিয়েছিলেন। দ্বিতীয়টি হলো ‘মসজিদে আক্সা’। হযরত সুলায়মান (আ) এটি নির্মাণ করেছিলেন এবং তৃতীয়টি মদীনা তাইয়েবার ‘মসজিদে নববী’। এটি নির্মাণ করেন রসূলুল্লাহ (স)। রসূলুল্লাহ (স) এরশাদের অর্থ হলো এই যে, এখন যেহেতু আমার পর আর কোনো নবী আসবেনা, সেহেতু আমার মসিজদের পর দুনিয়ায় আর চতুর্থ এমন কোনো মসজিদ নির্মিত হবেনা, যেখানে নামায পড়ার সওয়াব অন্যান্য মসজিদের তুলনায় বেশী হবে এবং সেখানে নামায পড়ার উদ্দেশ্যে সেদিকে সফর করা জায়েজ হবে।
রসূলুল্লাহ (স) নিকট থেকে বহু সাহাবা হাদীসগুলো বর্ণনা করেছেন এবং বহু মুহাদ্দিস অত্যন্ত শক্তিশালী এবং নির্ভরযোগ্য সনদসহ এগুলো উদ্ধৃত করেছেন। এগুলো অধ্যয়ন করার পর স্পষ্ট জানা যায় যে, রসুল্লাহ (স) বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন শব্দের ব্যবহার করে একথা পরিষ্কার করেদিয়েছেন যে, তিনি শেষ নবী। তাঁর পর কোনো নবীআসবে না। নবুয়্যঅতের সিলসিলা তাঁর ওপর খতম হয়ে গেছে এবং তাঁর পরে যে ব্যক্তি রসূল অথবা নবী হবার দাবী করবে, সে হবে দাজ্জাল এবং কাজ্জাব। কোরআনের ‘খাতিমুন নাবিয়ীন’ শব্দের এর চাইতে বেশী শক্তিশালী, নির্ভরযোগ্য এবং প্রমাণ্য ব্যাখ্যা আর কি হতে পারে। রসূলুল্লাহ বাণীই এখঅনে চরম সনদ এবং প্রমাণ। উপরন্তু যখন তা কোরআনের একটি আয়াতের ব্যাখ্যা করে তখন তা আরো অধিক শক্তিশালী প্রমাণে পরিণত হয়। এখন প্রশ্ন হলো এই যে, মুহাম্মদের (স) চেয়ে বেশী কে কোরআনকে বুঝেছে এবং তাঁর চাইতে বেশী এর ব্যাখ্যার অধিকার কার আছে? এমন কে আছে যে, খতমে নবুয়্যাতের অন্য কোনো অর্থ বর্ণনা করবে এবং তা মেনে নেয়া তো দূরের কথা, সে সম্পর্কে চিন্তা করতেও আমরা প্রস্তুত হবো?