হযরত ঈসা (আ) নুযুল সম্পর্কিত হাদীস
(আরবী **********)
(১) হযরত আবু হোরায় (রা) বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেন: সেই মহান সত্তার কছম যাঁর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে ইবনে মরিয়ম ন্যায়বিচারক শাসকরূপে অবতীর্ণ হবেন। অতঃপর তিনি ক্রশ ভেঙ্গে ফেলবেন, শূকর হত্যা করবেন। [ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলার এবং শুকর হত্যা করার অর্থ হলো এই যে, একটি পৃথক ধর্ম হিসেবে ধর্মের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ঈসায়ী ধর্মের সমগ্র কাঠামো এই আকীদার ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে রয়েছে যে, আল্লাহ তাঁর একমাত্র পুত্রকে (অর্থাৎ হযরত ঈসাকে (আ) ক্রশে বিদ্ধ কলে ‘লানত’ পূর্ণ মৃত্যু দান করেছেন। এবং এতেই সমস্ত মানুষেরগোনাহর কাফ্ফারা হয়ে গেছে। অন্যান্য নবীদের উম্মতের সংগে ঈসায়ীদের পার্থক্য হলো এই যে, এরা শুধু আকীদাটুকু গ্রহণ করেছে, অতঃপর খোদার সমস্ত শরীয়ত নাকচ করে দিয়েছে। এমনকি শুকরকেও এরা হালাল করে নিয়েছে- যা সকল নবীর শরীয়তে হারাম।
কাজেই হযরত ঈসা (আ) নিজে এসে যখন বলবেন, আমি খোদার পুত্র নই, আমাকে ক্রুশে বিদ্ধ করে হত্যা করা হয়নিএবং আমি কারুর গোনাহর কাফফারা হইনি, তখন ঈসায়ী ধর্মবিশ্বাসের বুনিয়াদ সমূলে উৎপাটিত হবে। অনুরূপভাবে যখন তিনি বলবেন, আমার অনুসারীদের জন্র আমি শুকুর হালাল করিনি এবং তাদেরকে শরীয়তের বিধিনিষেধ থেকে মুক্তিও দেইনি, তখন ঈসায়ী ধর্মের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্যও নির্মূল হয়ে যাবে।
অন্য কথায় বলা যায়, তখন ধর্মের বৈষম্য ঘুচিয়ে মানুষ একমাত্র দ্বীন ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হবে। এর ফলে আর যুদ্ধের প্রয়োজন হবেনা এবং কারুর জিজিয়াও আদায় করা হবেনা। পরবর্তী ৫ এবং ১৫ নং হাদীস একথাই প্রমাণ করেছে।] এবং যুদ্ধ খতম করে দেবেন (বর্ণনান্তরে যুদ্ধের পরিবর্তে ‘জিজিয়া’ শব্দটি উল্লিখিত হয়েছে অর্থাৎ জিজিয়া খতম করে দেবেন)। তখন ধনের পরিমাণ এতো বৃদ্ধি পাবে যে, তা গ্রহণ করার লোক থাকবে না এবং (অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছবে যে, মানুষখোদার জন্য) একটি সিজদা করে নেয়াটাকেই দুনিয়া এবং দুনিয়ার বস্তুর চাইতে বেশী মূল্যবান মনে করবে।
(২) অন্য একটি হাদীসে হযরত আবু হোরায়রা (রা) বর্ণনা করেন যে (আরবী **********)
ঈসা ইবনে মরিয়ম অবতীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না….” এবং এর পর বলা হয়েছে তা উপরোল্লিখিত হাদীসের সংগে পুরোপুরি সামঞ্জস্যশীল।– (বুখারী, কিতাবুল মাজালেম, বাবু কাসরিক সালিব, ইবনে মাজা, কিতাবুল ফিতান, বাবু ফিতনাতিদ দাজ্জাল)
(আরবী **********)
(৩) হযরত আবু হোরায়রা (রা) বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ (স) বলেন, কেমনহবে তোমরা যখন তোমাদের মধ্যে ইবনে মরিয়ম অবতীর্ণ হবেন এবং তোমাদের ইমাম নিজেদের মধ্য থেকেই নিযুক্ত হবেন? [অর্থাৎ হযরত ঈসা (আ) নামাজে ইমামতি করবেননা। মুসলমানদের পূর্ব নিযুক্ত ইমামের পেছনে তিনি এক্তেদা করবেন।]
(আরবী **********)
(৪) হযরত আবু হোরায়রা (রা) বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ (স) বলেন: ঈসাইবনে মরিয়ম অবতীর্ণ হবেন। অতঃপর তিনি শুকর হত্যা করবেন। ক্রুশ ধ্বংস করবেন। তাঁর জন্য একাধিক নামাজ এক ওয়াক্তে পড়া হবে। তিনি এতো ধন বিতরণ করবেন যে, অবশেষে তা গ্রহীতা পাওয়া যাবে না। তিনি খিরাজ মওকুফ করে দেবেন। রওহা [রওহা মদীনা থেকে ২৫ মাইল দূরে একটি স্থানের নাম।] নামক স্থানে অবস্থান করেতিনি সেখান থেকে হজ্ব অথবা ওমরাহ করবেন অথবা দুটোই করবেন। (রসূলুল্লাহ এর মধ্যে কোন্টি বলেছিলেন- এ ব্যাপারে বর্ণনাকারীর সন্দেহ রয়ে গেছে)।
(আরবী **********)
(৫) হযরত আবু হোরায়রা (রা) বর্ণনা করেন, দাজ্জালের নির্গমন বর্ণনার পর রসূলুল্লাহ বলেন: ইত্যবসরে যখন মুসলমানরা তাঁর সংগে লড়াইয়ের প্রস্তুতি করতে থাকবে, কাতারবন্দি করতে থাকবে এবং নামাজের জন্য ‘একমত’ পাঠ করা শেষ হবে, তখন ঈসা ইবনে মরিয়ম অবতীর্ণ হবেন এবং নামাজে মুসলমানদের ইমামতি করবেন। খোদার দুশমন দাজ্জালতাঁকে দেখতেই এমনভাবে গলিত হতে থাকবে যেমন পানিতে লবণ গলে যায়। যদি ঈসা (আ) তাকে এই অবস্থায় পরিত্যাগ করেন, তাহলেও সে বিগলিত হয়ে মৃত্যু বরণ করবে। কিন্তু আল্লাহতায়ালা তাকে হযরত ঈসার (আ) হাতে কতল করবেন। তিনি দাজ্জালের রক্তে রঞ্জিত নিজের বর্শাফলক মুসলমানদের দেখাবেন।
(আরবী **********)
(৬) হযরত আবু হোরায়রা (রা) বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম বলেন: আমার এবং তাঁর (অর্থাৎ হযরত ঈসার) মাঝখানে আর কোনো নবী নেই। এবং তিনি অবতীর্ণ হবেন। তাঁকে দেখা মাত্রই তোমরা চিনে নিয়ো। তিনি মাঝারি ধরনের লম্বা হবেন। বর্ণ লাল সাদায় মেশানো। পরনে দু’টো হলুদ রঙের কাপড়। তাঁর মাথার চুল থেকে মনে হবে এই বুঝি পানি টপকে পড়লো। অথচ তা মোটেই সিক্ত হবেনা। তিনি ইসলামের জন্য মানুষের সংগে যুদ্ধ করবেন। ক্রুশ ভেঙ্গে টুক্রো টুক্রো করবেন। শূকর হত্যা করবনে। জিজিয়া কর রহিত করবেন। তাঁর জামানায় আল্লাহ সমস্ত মিল্লাতকেই নির্মূল করবেন। তিনি মসীহ দাজ্জালকে হত্যা করবেন এবং দুনিয়া চল্লিশ বছর অবস্থান করবেন। অতঃপর তাঁর ইন্তেকাল হবে এবং মুসলমানরা তাঁর জানাযায় নামাজ পড়বে।
(আরবী **********)
(৭) হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা) বলেন, আমি রসূলুল্লাহকে (স) বলতে শুনেছি:… অতঃপর ঈসা ইবনে মরিয়ম অবতীর্ণ হবেন। মুসলমানদের আমীর তাঁকে বলবেন, আসুন, আপনি নামাজ পড়ান। কিন্তু তিনি বলবেন, না, তোমরা নিজেরাই একে অপরের আমীর। [অর্থাৎ তোমাদের আমীর তোমাদের নিজেদের মধ্যথেকে হওয়া উচিত।] আল্লাহ তায়ালা এই উম্মতকে যে ইজ্জত দান করেছেন তার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি একথা বলবেন।
(আরবী **********)
(৮) হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (ইবনে সাইয়াদ প্রসংগে) বর্ণনা করেছেন যে, অতঃপর উমর ইবনে খাত্তাব আরজ করলেন, হে রসূলুল্লাহ। অনুমতি দিন, আমি তাকে কতল করি। রসূলুল্লাহ (স) বললেন, যদি এ সেই ব্যক্তি (অর্থাৎ দাজ্জাল) হয়ে থাকে, তাহলে তোমরা এর হত্যাকারী নও, বরং ঈসা ইবনে মরিয়ম একে হত্যা করবেন এবং যদি এ সেই ব্যক্তি না হয়েথাকে, তাহলে জিম্মীদের মধ্য থেকে কাউকে হত্যা করার তোমাদের কোনো অধিকার নেই।
(আরবী **********)
(৯) হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ বর্ণনা করেছেন যে, (দাজ্জাল প্রসংগে রসূলুল্লাহ বলেছেন:) সেইসময় ঈসা ইবনে মরিয়ম হঠাৎ মুসলমানদের মধ্যে এসে উপস্থিত হবেন। অতঃপর লোকেরা নামাজের জন্য দাঁড়িয়ে যাবে। তাঁকে বলা হবে, হে রুহুল্লাহ! অগ্রসর হন। কিন্তু তিনি বলবেন, না, তোমাদের ইমামের অগ্রবর্তী হওয়া উচিত, তিনিই নামাজ পড়াবেন। অতঃপর ফজরের নামাজের পর মুসলমানরা দাজ্জালের মুকাবিলায় বের হবে। (রসূলুল্লাহ) বলেছেন: যখন সেই কাজ্জাব (মিথ্যাবাদী) হযরত ঈসাকে দেখবে, তখন বিগলিত হতে থাকবে যেমন লবণ পানিতে গলে যায়। অতঃপর তিনি দাজ্জালের দিকে অগ্রসর হবেন এবং তাকে কতল করবেন। তখন অবস্থা এমন হবে যে, গাছপালা এবং প্রস্তরখন্ড ফুকারে বলবে, হে রুহুল্লাহ! ইহুদীটা এই আমার পিছনে লুকিয়ে রয়েছে! দাজ্জালের অনুগামীদের কেউ বাঁচবেনা, সবাইকে কতল করা হবে।
(আরবী **********)
(১০) হযরত নওয়াস ইবনে সাময়ান কেলাবী (দাজ্জাল প্রসংগে) বর্ণনা করছেন যে, (রসূলুল্লাহ বলেছেন:) দাজ্জাল তখন এসব করতে থাকবে, ইত্যবসরে আল্লাহতায়ালা মসীহ ইবনে মরিয়মকে প্রেরণ করবেন। তিনি দামেশকের পূর্ব অংশে সাদা মিনারের সন্নিকটে দুটো হলুদ বর্ণের কাপড় পরিধান করে দুজনফেরেশতার কাঁধে হাত রেখে নামাবেন। তিনি মাথা নীচু করলে পানি টপকাচ্ছে বলে মনে হবে। আবার মাথা উঁচু করলে মনে হবে যেন বিন্দু বিন্দু পানি মোতির মতো চমকাচ্ছে। তাঁর নিঃশ্বাসের হাওয়া যে কাফেরের গায়ে লাগবে- এবং এর গতি হবে তাঁর দৃষ্টিসীমাপর্যন্ত-সে জীবিত থাকবে না। অতঃপর ইবনে মরিয়ম দাজ্জালের পশ্চাদ্ধাবন করবেন এবং লুদের [এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, লূদ (Lydda) ফিলিস্তিনের অন্তর্গত বর্তমান ইসরাঈল রাষ্ট্রের রাজধানী তেলআবীব থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরে অবস্থিত। ইহুদীরা এখানে একটি বিরাট বিমান বন্দর নির্মাণ করেছে] দ্বারপ্রান্তে তাকে গ্রেফতার করে হত্যা করবেন।
(আরবী **********)
(১১) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ (স)বলেন: দাজ্জাল আমার উম্মতের মধ্যে বের হবে এবং চল্লিশ (আমি জানিনা চল্লিশদিন, চল্লিশ মাস অথবা চল্লিশ বছর) [এটি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমরের কথা] অবস্থান করবে। অতঃপর আল্লাহ ঈসা ইবনে মরিয়মকে পাঠাবেন।তাঁর চেহারা উরওয়া ইবনে মাসউদের (জনৈক সাহাবী) মতো। তিনি দাজ্জালের পশ্চাদ্ভাবন করবেন এবং তাকে হত্যা করবেন। অতঃপর সাত বছর পর্যন্ত মানুষ এমন অবস্থায় থাকবে যে, দুজনলোকের মধ্যে শত্রুতা থাকবেনা।
(আরবী **********)
(১২) হযরত হোজায়ফা ইবনে আসীদ আল গিফারী (রা) বর্ণনা করেছেনযে, একবার রাসূলুল্লাহ (স) আমাদের মজলিসে তাশরীফ আনলেন। তখন আমরা নিজেদের মধ্যে আলোনায় লিপ্ত ছিলাম। রসূলুল্লাহ (স) জিজ্ঞেস করলেন: তোমরা কি আলোচনা করছো? লোকেরা বললো, আমরা কিয়ামতের কথা আলোচনা করছি। তিনি বললেন: দশটিনিশানা প্রকাশ না হবার পূর্বে তা কখনো কায়েম হবেনা। অতঃপর তিনি দশটি নিশানা বলে গেলেন। এক: ধোঁয়া, দুই: দাজ্জাল, তিন: মৃত্তিকার প্রাণী, চার: পশ্চিম দিক হতে সুর্যোদয়, পাঁচ ঈসা ইবনে মরিয়মের অবতরণ, ছয়: ইয়াজুজ ও মাজুজ, সাত: তিনটি প্রকাণ্ড জমি ধ্বংস (Landslide) একটি পূর্বে, আট: একটি পশ্চিমে, নয়: আর একটি আরব উপদ্বীপে, দশ: সর্বশেষ একটি প্রকাণ্ড অগ্নি ইয়েমেন থেকে উঠবে এবং মানুষকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাবে হাশরের ময়দানের দিকে।
(আরবী **********)
(১৩) রসূলুল্লাহর (স) আজাদকৃত গোলাম সাওবান (রা) বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ বলেন: আমার উম্মতের দু’টো সেনাদলকে আল্লাহতায়ালা দোজখের আগুন থেকে নিষ্কৃতি দিয়েছেন। তাদের মধ্যে একটি হলো- যারা হিন্দুস্থানের ওপর হামলা করবে আর দ্বিতীয়টি ঈসা ইবনে মরিয়মের সংগে অবস্থানকারী।
(আরবী **********)
(১৪) মাজমা ইবনে জারিয়া আনসারী (রা) বলেন, আমি রসূলুল্লাহকে (স) বলতে শুনেছি: ইবনে মরিয়ম দাজ্জালকে লুদের দ্বারপ্রান্তে কতল করবেন।
(আরবী **********)
(১৫) আবু উমামা বাহেলী (এক দীর্ঘ হাদীসে দাজ্জাল প্রসংগে) বর্ণনা করেছেন যে, ফজরের নামায পড়বার জন্য মুসলমানদের ইমাম যখন অগ্রবর্তী হবেন, ঠিক সেইসময় ঈসা ইবনে মরিয়ম তাদের ওপর অবতীর্ণ হবেন। ইমাম পিছনে সরে আসবেনঈসাকে (আ) অগ্রবর্তী করার জন্য কিন্তু ঈসা (আ) তাঁর কাঁধে হাত রেখে বলবেন: না, তুমিই নামাজ পড়াও। কেননা এরা তোমার জন্যই দাঁড়িয়েছে। কাজেই তিনিই (ইমাম) নামাজ পড়াবেন। সালাম ফেরার পরঈসা (আ) বলবেন: দরজা খোলো। দরজা খোলা হবে। বাইরে দাজ্জাল ৭০ হাজার সশষ্ত্র ইহুদী সৈন্য নিয়ে অপেক্ষা করবে। তার দৃষ্টি হযরত ঈসার (আ) ওপর পড়া মাত্রই সে এমনভাবে বিগলিত হতে থাকবে, যেমন লবণ পানিতে গলে যায়। এবং সে পৃষ্ঠদর্শন করবে। ঈসা (আ) বলবেন: আমার নিকট তোর জন্য এমন এক আঘাত আছে যার হাত থেকে তোর কোনক্রমেই নিষ্কৃতি নেই। অতঃপর তিনি তাকে লূদের পূর্ব দ্বারদেশে গিয়ে গ্রেফতার করবেন এবং আল্লাহতায়ালা ইহুদীদেরকে পরাজয়দান করবেন….. এবং জমিন মুসলমানদের দ্বারা এমনভাবে ভরপুর হবে যেমন পাত্র পানিতে ভরে যায়। সবাই একই কালেমায় বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং দুনিয়ায় আল্লাহ ছাড়া আর কারুর বন্দেগী করা হবেনা।
(আরবী **********)
(১৬) উসমান ইবনে আবিল আস (রা) বলেন, আমি রসূলুল্লাহকে (স) বলতে শুনেছি:…… এবংঈসা ইবনে মরিয়ম আলাইহিস সালাম ফজরের নামাজের সময় অবতরণ করবেন। মুসলমানদের আমীর তাঁকে বলবেন, হে রুহুল্লাহ! আপনি নামাজ পড়ান! তিনি জবাব দেবেন: এই উম্মতের লোকেরা নিজেরাই নিজেদের আমীর। তখন মুসলমানদের আমীর অগ্রবর্তী হয়ে নামায পড়াবেন। অতঃপর নামাজ শেষ করে ঈসা (আ) নিজের সেনাবাহিনী নিয়ে দাজ্জালের দিকে অগ্রসর হবেন। তিনি নিজের অস্ত্র দিয়ে দাজ্জালকে কতল করবেন এবং তার দলবল পরাজিত হয়ে পৃষ্ঠপদর্শন করবে। কিন্তু কোথাও তারা আত্মগোপন করার জায়গা পাবেনা। এমন কি বৃক্ষও ফুকারে বলবে: হে মুমিন, এখানে কাফের লুকিয়ে আছে। এবং প্রস্তর খণ্ডও ফুকারে বলবে: হে মুমিন, এখানে কাফের লুকিয়ে আছে।
(আরবী **********)
(১৭) সামুরা ইবনে জুনদুব (এক দীর্ঘ হাদীসে) বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ (স) বলেন: অতঃপর সকাল বেলা ঈসা ইবনে মরিয়ম মুসলমানদের মধ্যে আসবেন এবং আল্লাহতায়ালা দাজ্জাল এবং তার সেনাবাহিনীকে পরাজয় দান করবেন। এমন কি প্রাচীর এবং বৃক্ষের কাণ্ডও ফুকারে বলবে: হে মুমিন, এখানে কাফের আমার পেছনে লুকিয়ে রয়েছে। এসো, একে কতল করো!
(আরবী **********)
(১৮) ইবনে হোসাইন বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ (স) বলেন: আমাদের উম্মতের মধ্যে হামেশা একটি দল হকের ওপর কায়েম থাকবে এবং তারা বিরোধী দলের ওপর প্রতিপত্তি বিস্তার করবে। অবশেষে আল্লাহতায়ালার ফয়সালা এসে যাবে এবং ঈসা ইবনে মরিয়ম আলাইহিস সালাম অবতীর্ণ হবেন।
(আরবী **********)
(১৯) হযরত আয়েশা রাজিআল্লাহ আন্হা (দাজ্জাল প্রসংগে) বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ বলেন: অতঃপর ঈসা আলাইহিস সালাম অবতীর্ণ হবেন। তিনি দাজ্জালকে কতল করবেন। অতঃপর ঈসা(আ) চল্লিশ বছর আদিল ইমাম এবং ন্যায়নিষ্ঠ শাসক হিসেবে দুনিয়ায় অবস্থান করবেন।
(আরবী **********)
(২০) রসূলুল্লাহর আজাদকৃত গোলাম সাফীনা (রা) (দাজ্জাল প্রসংগে) বর্ণনা করেছেন, যে রসূলুল্রাহ (স) বলেন: অতঃপর ঈসা আলাইহিস সালাম অবতীর্ণ হবেন এবং আল্লাহতায়ালা উফায়েকের পর্বতে পথের [উফায়েককে বর্তমান ফায়েক বলা হয়। সিরিয়া এবং ইসরাইল সীমান্তে বর্তমান সিরিয়া রাষ্ট্রের সর্বশেষ শঞর। এর পরে পশ্চিমের দিকেকয়েক মাইল দূরে তাবারিয়া নামক একটি হ্রদ আছে। এখানে জর্দান নদরি উৎপত্তিস্থল। এর দক্ষিণ-পশ্চিমে পাহাড়েরর মধ্যভাগে নিম্ন ভূমিতে একটি রাস্তা রয়েছে। এই রাস্তাটি প্রায় দেড় হাজার ফুট গভীরে নেমে গিয়ে সেই স্থানে পৌঁছায় যেখানথেকে জর্দান নদী তাবারিয়া মথ্যহতে নির্গত হচ্ছে। এই পার্বত্য পথকেইবলা ‘আকাবায়ে উফায়েক” (উফায়েকের নিম্ন পার্বত্য পথ)।] সন্নিকটে তাকে (দাজ্জালকে) মেরে ফেলবেন।
(আরবী **********)
(২১) হযরত হোজায়ফা ইবনে ইয়ামান (দাজ্জাল প্রসংগে) বর্ণনা করেছেনযে, রসূলুল্লাহ বলেন: অতঃপর যখন মুসলমানরা নামাজের জন্য তৈরী হবে, তখন তাদের চোখের সম্মুখে ঈসা ইবনে মরিয়ম অবতীর্ণ হবেন। তিনি মুসলমানদের নামাজ পড়াবেন অতঃপর সালাম ফিরিয়ে লোকদের বলবেন যে, আমার এবং খোদার এই দুশমনের মাঝখান থেকে সরেযাও…. এবং আল্লাহতায়ালা দাজ্জালের দলবলের ওপর মুসলমানদেরকে প্রতিপত্তি দান করবেন।
মুসলমানরা তাদেরকে বেধড়ক হত্যা করতে থাকবে। অবশেষে বৃক্ষ এবং প্রস্তর খণ্ডও ফুকারে বলবে: হে আল্লাহর বান্দা, হে রহমানেসর বান্দা, হে মুসলমান!দেখো, এখানে একজন ইহুদী, একে হত্যা করো। এভাবে আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করে দেবেন এবং মুসলমানগণ বিজয় লাভ করবে। তারা ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলবে, শুকর হত্যা করবে এবং জিজিয়া মওকুফ করে দেবে। [মুসলিমেও হাদীসটি সংক্ষেপে বর্ণিত হয়েছে এবং হাফেজ ইবনে হাজার আসকালীণ ফাতহুল বারীর ষষ্ঠ খণ্ডে ৫৫০ পৃষ্ঠায় এটিকে ‘ছহীহ’ বলে গণ্য করেছেন।
এই ২১টি হাদীস ১৪ জন সাহাবায়ে মারফত নির্ভুল সনদসহ হাদীসের নির্ভরযোগ্য কিতাবগেুলোয় উল্লিখিত হয়েছে। এছাড়াও এ ব্যাপারে আরো অসংখ্য হাদীস অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে উল্লিখিত হয়েছে। কিন্তু আলোচনা দীর্ঘ হবার ভয়ে আমি সেগুলো এখানে উল্লেখ করলাম না। বর্ণনা এবং সনদের দিক অধিকতর শক্তিশালী এবং নির্ভরযোগ্য হাদীসগুলোই শুধু এখানে উদ্ধৃত করলাম।
এই হাদীসগুলো থেকে কি প্রমাণ হয়?
যে কোনো ব্যক্তি এ হাদীসগুলো পড়ে নিজেই বুঝতে পারবেনযে, এখানে কোনো ‘প্রতিশ্রুত মসীহ’, “মছীলে মসীহ” বা “বুরুজী মসীহ”র কোনো উল্লেখই করা হয়নি। এমন কি বর্তমান কালে কোনো পিতার ঔরসে মায়ের গর্ভ জন্মগ্রহণ করে কোনো ব্যক্তির একথা বলার অবকাশ নেই যে, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম যে মসীহ সম্পর্কে ভবিষদ্বাণী করেছিলেন তিনিই সেই মসীহ। আজ থেকে দু’হাজার বছর আগে পিতা ছাড়াই হযরত মরিয়মের (আ) গর্ভে যে ঈসা আলাইহিস সালামের জন্ম হয়েছিল এই হাদীসগুলোর দ্ব্যার্থহীন বক্তব্যথেকে তাঁরই অবতরণের সংবাদ শ্রুত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি ইন্তেকাল করেছেন, না জীবিত অবস্থায় কোথাও রয়েছেন- এ আলোচনা সম্পূর্ণ অবান্তর। তর্কের খাতিরে যদি এ কথা মেনে নেয়া হয় যে, তিনি ইন্তেকাল করেছেন তাহলেও বলা যায় যে, আল্লাহ তাঁকে জীবিত করার ক্ষমতা রাখেন। [যারা আল্লাহর এই পুনরুজ্জীবনের ক্ষমতা অস্বীকার করেন তাদের সূরা বাকারার ২৫৯ নম্বর আয়াতটির অনুধাবন করাউচিত। এ আয়াতে আল্লাহ বলেন যে, তিনি তাঁর এক বান্দাকে ১০০ বছর পর্যন্ত মৃত অবস্থায় রাখার পর আবার তাকে জীবিত করেন।] উপরন্তু আল্লাহ তাঁর এক বান্দাকে তাঁর এই বিশাল সৃষ্টি জগতের কোনো এক স্থানে হাজার বছর জীবিত অবস্থায় রাখার পর নিজের ইচ্ছামতো যে কোনো সময়তাঁকে এই দুনিয়ায় ফিরিয়ে আনতে পারেন। আল্লাহর অসীম ক্ষমতার প্রেক্ষিতে একথা মোটেই অস্বাভাবিক মনে হয়না। বলা বাহুল্য, যে ব্যক্তি হাদীসকে সত্য বলে স্বীকার করে তাকে অবশ্যই ভবিষ্যতে আগমনকারী ব্যক্তিকে উল্লিখিত ঈসা ইবনে মরিয়ম বলে স্বীকার করতেই হবে। তবে যে ব্যক্তি হাদীস অস্বীকার করে সে আদতে কোনো আগমনকারীর অস্তিত্বই স্বীকার করতে পারেনা। কারণ আগমনকারীর আগমন সম্পর্কে যে বিশ্বাস জন্ম নিয়েছে হাদীস ছাড়া আর কোথাও তার ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যাবেনা। কিন্তু এই অদ্ভূত ব্যাপারটি শুধু এখানেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, আগমনকারীর আগমন সম্পর্কিত ধারণা বিশ্বাস গ্রহণ করা হচ্ছে হাদীস থেকে কিন্তু সেই হাদীসগুলোই আবার যখন সুস্পষ্ট করে এ বক্তব্য তুলে ধরছে যে, উক্ত আগমনকারী কোনো ‘মছীলে মসীহ’ (মসীহ-সম ব্যক্তি) নন বরং তিনি হবেন স্বয়ং ঈসা ইবনে মরিয়ম আলাইহস সালাম তখন তা অস্বীকার করা হচ্ছে।
এই হাদীসগুলো থেকে দ্বিতীয় যে বক্তব্যটি সুস্পষ্ট ও দ্ব্যার্থহীনভাবে ফুটে উঠেছে তা হচ্ছে এই যে, হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ) দ্বিতীয়বার নবী হিসেবে অবতরণ করবেন না। তাঁর ওপর অহী নাযিল হবেনা। খোদার পক্ষ থেকে তিনি কোনো নতুন বাণী বা বিধান আনবেন না। শরীয়তে মুহাম্মদীর মধ্যেও তিনি হ্রাস বৃদ্ধি করবেননা। দ্বীন ইসলামের পুনরুজ্জীবনের জন্যও তাঁকে দুনিয়ায় পাঠানো হবে না। তিনি এসে লোকদেরকে নিজের ওপর ঈমান আনার আহ্বান জানাবেননাএবং তাঁর প্রতি যারা ঈমান আনবে তাদেরকে নিয়ে পৃথক উম্মতও গড়ে তুলবেননা। [পূর্বপবর্ত আলেমগণ এ বিষয়টিকে অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন। আল্লামা আফ্তাবানী (হিঃ ৭২২-৭৯২) শরহে আকায়েদে নাসাফী গ্রন্থে লিখেছেন: “মুহাম্মদ (স) সর্বশেষ নবী, একথা প্রমাণিত সত্য… যদি বলা হয়, তাঁর পর হাদীসে হযরত ঈসার (আ) আগমনের কথা বর্ণিত হয়েছে তাহলে আমি বলবো, হাঁ হযরত ঈসা (আ) আগমনের কথা বলা হয়েছে সত্য, তবে তিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের অনুসারী হবেন। কারণ তাঁর শরীয়ত বাতিল হয়ে গেছে। কাজেই তাঁর ওপর অহী নাযিল হবেনা এবং তিনি নতুন বিধানও নির্ধারণ করবেন না। বরং তিনি মুহাম্মদ রসূলুল্লাহর (স) প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবেন।” (মিসরে মুদ্রিত, ১৩৫ পৃষ্ঠা)
আল্লামা আলুসী তাঁর ‘রুহুল মা’নী’ নামক তাফসীর গ্রন্থেও প্রায় একই বক্তব্য পেশ করেছেন। তিনি বলেছেন: “অতঃপর ঈসা আলাইহিস সালাম অবতীর্ণ হবেন। তিনি অবশ্য তাঁর পূর্ব প্রদত্ত নবুয়্যাতের পদমর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত থাকবেন। কাণ তিনি নিজের আগের পদমর্যাদা থেকেতো অপসারিত হবেননা। কিন্তু নিজের পূর্বের শরীয়তের অনুসারী হবেননা। কারণ তা তাঁর নিজের ও অন্যসব লোকদের জন্য বাতিল হয়ে গেছে। কাজেই বর্তমানে তিনি মূলনীতি থেকে খুঁটিনাটি ব্যাপার পর্যন্ত সর্বক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়তের বিধানও নির্ধারণ করবেননা। “বরং তিনি মুহাম্মদ রসূলুল্লাহর (স) প্রতিনিধি এবং তাঁর উম্মতের মধ্যস্থিত মুহাম্মদী মিল্লাতের শাসকদের মধ্য থেকে একজন শাসক হবেন।”) (২২শ খণ্ড, ৩২ পৃষ্ঠা)
ইমাম রাজী এ কথাটিকে আরো সুস্পষ্ট করে নিম্নোক্ত ভাষায় পেশ করেছেন: “মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম পর্যন্ত নবীদের যুগ শেষ হয়ে গেছে। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের আগমনের পর নবীদের আগমন শেষ হয়ে গেছে। কাজেই বর্তমানে ঈসার (আ) অবতহরণের পর তিনি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের অনুসারী হবেন একথা মোটেই অযৌক্তিক নয়।” (তাফসীরে কবীর, ৩য় খণ্ড, ৩৪৩ পৃষ্ঠা)] তাঁকে কেবলমাত্র একটি পৃথক দায়িত্ব দিয়ে দুনিয়ায় পাঠানো হবে। অর্থাৎ তিনি দাজ্জালের ফিত্নাকে সমূহে বিনাশ করবেন। এজন্য তিনি এমনভাবে অবতরণ করবেন যার ফলে তাঁর অবতরণের ব্যাপারে মুসলমানদের মধ্যে কোনো প্রকার সন্দেহের অবকাশ থাকবেনা। যেসব মুসলমানের মধ্যে তিনি অবতরণ করবেন তারা নিঃসংশয়ে বুঝতে পারবে যে, রসূলুল্লাহ (স) যে ঈসা ইবনে মরিয়ম সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন তিনিই সেই ব্যক্তি এবং রসূলুল্লাহর কথা অনুযায়ী তিনি যথা সময়ে অবতরণ করেছেন, তিনি এসে মুসলমানদের দলে শামিল হয়ে যাবেন। মুসলমানদের তদানীন্তন ইমামের পিছনে তিনি নামাজ পড়বেন। [যদিও দুটি হাদীসে (৫ ও ২১ নং) বলা হয়েছে যে, ঈসা আলাইহিস সালাম অবতরণ করার পর প্রথম নামাজটি নিজে পড়াবেন। কিন্তু অধিকাংশ এবং বিশেষ করে শক্তিশালী কতিপয় হাদীস (৩, ৭, ৯, ১৫ ও ১৬ নয়) থেকে জানা যায় যে, তিনি নামাজে ইমামতি করতে অস্বীকার করবেন এবং মুসলমানদের তৎকালীন ইমাম ও নেতাকে অগ্রবর্তী করবেন। মুহাদ্দিস ও মুফাস্সিরগণ সর্বসম্মতভাবে এ মতটি গ্রহণ করেছেন।] তৎকালে মুসলমানদের যিনি নেতৃত্ব দেবেন তিনি তাঁকেই অগ্রবর্তী করবেন যাতে এই ধরনের সন্দেহের কোনো অবকাশই না থাকে যে, তিনি নিজের পয়গম্বরী পদমর্যাদা সহকারে পুনর্বার পয়গম্বরীর দায়িত্ব পালন করার জন্য ফিরে এসেছেন। নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে যে, কোনো দলে খোদার পয়গম্বরের উপস্থিতিতে অন্য কোনো ব্যক্তি ইমাম বা নেতা হতে পারেন না। কাজেই নিছক এক ব্যক্তি হিসেবে মুসলমানদের দলে তাঁর অন্তর্ভুক্তি স্বতঃস্ফুর্তভাবে এ কথাই ঘোষণা করবে যে, তিনি পয়গম্বর হিসেবে আগমন করেননি। এজন্যতাঁর আগমনে নবুয়্যাতের দুয়ার উন্মুক্ত হবার কোনো প্রশ্নই ওঠেনা।
নিঃসন্দেহে তাঁর আগমন বর্তমান ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রপ্রধানের আমলে প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধানের আগমনের সাথে তুলনীয়। এ অবস্থায় প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধানের অধীনে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে অংশগ্রহণ করতে পারন। সাধারণ বোধ সম্পন্ন কোনো ব্যক্তি সহজেই এ কথা বুঝতে পারেন যে, এক রাষ্ট্রপ্রধানের আমলে অন্য একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধানের নিছক আগমনেই আইন ভেঙ্গে যায় না। তবে দুটি অবস্থায় আইনের বিরুদ্ধাচরণ অনিবার্য হয়ে পড়ে। এক, প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধান এসে যদি আবার নতুন করে রাষ্ট্র প্রধানের দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করেন। দুই, কোনো ব্যক্তি যদি তাঁর প্রধান রাষ্ট্রপ্রধানের মর্যাদা ও দায়িত্ব অস্বীকার করে বসেন। কারণ এটা হবে তাঁর রাষ্ট্র থাকাকালে যেসব কাজ হয়েছিল সেগুলোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করার নামান্তর। এই দু’টি অবস্থার কোনো একটি না হলে প্রাক্তন রাষ্ট্র-প্রধানের নিছক আগমনেই আইনগত অবস্থাকে কোনো প্রকারে পরিবর্তিত করতে পারেনা। হযরত ঈসার (আ) দ্বিতীয় আগমনের ব্যাপারটিও অনুরূপ। তাঁর নিছক আগমনেই খতমে নবুয়্যাতের দুয়ার ভেঙ্গে পড়েনা। তবে তিনি এসে যদি নবীর পদে অধিষ্ঠিত হন এবং নবুয়্যাতের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন অথবা কোনো ব্যক্তি যদি তাঁর প্রাক্তন নবুয়্যাতের মর্যাদাও অস্বীকার করে বসে, তাহলে এক্ষেত্রে আল্লাহর নবুয়্যাত বিধি ভেঙ্গে পড়ে। হাদীসে একদিকে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হচ্ছে যে, মুহাম্মদ রসূলুল্লাহর (স) পর আর কোনো নবী নেই এবং অন্যদিকে জানিয়ে দিচ্ছে যে, ঈসা আলাইহিস সালাম পুনর্বার অবতরণ করবেন। এ থেকে পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে যে, তাঁর এ দ্বিতীয় আগমন নবুয়্যাতের দায়িত্ব পালন করার উদ্দেশ্যে হবেনা।
অনুরূপভাবে তাঁর আগমনে মুসলমানদের মধ্যে কুফর ও ঈমানের কোনো নতুন প্রশ্ন দেখা দেবেনা। আজও কোনো ব্যক্তি তাঁর পূর্বের নবুয়্যাতের ওপর ঈমান না আনলে কাফের হয়ে যাবে। মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ (স) নিজেও তাঁর ঐ নবুয়্যাতের প্রতি ঈমান রাখতেন। মুহাম্মদ রসূলুল্লাহর (স) সমগ্র উম্মতও শুরু থেকেই তাঁর ওপর ঈমান রাখে। হযরত ঈসার (আ) পুনর্বার আগমনের সময়ও এই একই অবস্থা অপরিবর্তিত থাকবে। মুসলমানরা কোনো নতুন নবুয়্যাতের প্রতি ঈমান আনবে না, বরং আজকের ন্যায় সেদিনও তারা ঈসা ইবনে মরিয়মের (আ) পূর্বের নবুয়্যাতের ওপরই ঈমান রাখবে। এ অবস্থাটি বর্তমানে যেমন খতমে নবুয়্যাত বিরোধী নয়, তেমনি সেদিনও বিরোধীহবেনা।
সর্বশেষ যে কথাটি এই হাদীসগুলো এবং অন্যান্য বহুবিধ হাদীস থেকে আনা যায় তা হচ্ছে এই যে, হযরত ঈসাকে (আ) যে দাজ্জালের বিশ্বব্যাপী ফিত্না নির্মূল করার জন্য পাঠানো হবে সে হবে ইহুদী সংশোদ্ভূত। সে নিজেকে ‘মসীহ’ রূপে পেশ করবে। ইহুদীদের ইতিহাস ও তাদের ধর্মীয় চিন্তা-বিশ্বাস সম্পর্কে অনবহিত কোনো ব্যক্তি এ বিষয়টির তাৎপরর্য অনুধান করতে সক্ষম হবেনা। হযরত সুলায়মান আলাইহিস সালামের মৃত্যুর পর যখন বনি ইসরাঈলরা সামাজিক ধর্মীয় অবক্ষয় ও রাজনৈতিক পতনের শিকার হলো এবং তাদের এ পতন দীর্ঘায়িত হতে থাকলো, এমন কি অবশেষে ব্যবিলেন ও আসিরিয়া অধিপতিরা তাদেরকে পরাধীন করে দেশ থেকে বিতাড়িত করলো এবং দুনিয়ার বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষিপ্ত করে দিলো, তখন বনি ইসরাইলের নবীগণ তাদেরকে সুসংবাদ দিতে থাকলেন যে, খোদার পক্ষ থেকে একজন ‘মসীহ’ এসে তাদেরকে এই চরম লাঞ্চনা থেকে মুক্তি দেবেন। এইসব ভবিষ্যদ্বাণীর প্রেক্ষিতে ইহুদীরা একজন মসীহের আগমনের প্রতীক্ষারত ছিল। তিনি হবেন বাদশাহ। তিনি যুদ্ধ করে দেশ জয় করবেন। বনি ইসরাঈলদেরকে বিভিন্ন দেশ থেকে এনে ফিলিস্তিনে একত্রিত করবেন এবং তাদের একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র কায়েম করবেন। কিন্তু তাদের এসব আশা-আকাংখাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে যখন ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ) খোদার পক্ষ থেকে ‘মসীহ’ হয়ে আসলেন এবং কোনো সেনাবাহিনী ছাড়াই আসলেন, তখন ইহুদীরা তাঁকে ‘মসীহ’ বলে মেনে নিতে অস্বীকার করলো। তারা তাঁকে হত্যা করতে উদ্যত হলো। সে সময় থেকে আজ পর্যন্ত ইহুদী দুনিয়া সেই প্রতিশ্রুত মসীহর প্রতীক্ষা করছে, যার আগমনের সুসংবাদ তাদেরকে দেয়া হয়েছিল। তাদের সাহিত্য সেই বাঞ্চিত যুগের সুখ-স্বপ্ন কল্প-কাহিনীতে পরিপূর্ণ। তালমুদ ও রাববীর সাহিত্য গ্রন্থসমূহে এর যে নক্শা তৈরী করা হয়েছে তার কল্পিত স্বাদ আহরণ করে শত শত বছর থেকে ইহুদী জাতি জীবন ধারণ করছে। তাদের বুক ভরা আশা নিয়ে বসে আছে যে, এই প্রতিশ্রুত মসীহ হবেন একজন শক্তিশালী সামরিক ও রাজনৈতিক নেতা। তিনি নীল নদ থেকে ফোরাত পর্যন্ত সমগ্র এলাকা, যে এলাকাটিকে ইহুদীরা নিজেদের ‘উতর্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত এলাকা’ মনে করে, আবার ইহুদীদের দখলে আনবেন এবং সারা দুনিয়া থেকে ইহুদীদেরকে এনে এখানে একত্রিত করবেন।
বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের অবস্থার প্রতি দৃষ্টিপাত করে রসূলুল্লাহর (স) ভবিষ্যদ্বাণীর আলোকে ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, মহানবীর (স) কথামত ইহুদীদের ‘প্রতিশ্রুত মসীহর’ ভূমিকা পালনকারী প্রধানতম দাজ্জালের আগমনের জন্য মঞ্চ সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত হয়ে গেছে। ফিলিস্তিনের বৃহত্তম এলাকা থেকে মুসলমানদের বেদখল করা হয়েছে। সেখানে ইরাঈল নামে একটি ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সারা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে ইহুদীরা দলে দলে এখানে বাসস্থান গড়ে তুলছে। আমেরিকা, বৃটেন ও ফ্রান্স তাকে একটি বিরাট সামরিক শক্তিকে পরিণত করেছে। ইহুদী পুঁজিপতিদের সহায়তায় ইহুদী বৈজ্ঞানিক ও শিল্পবিদগণ দ্রুত উন্নতির পথে েএগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। চারপাশের মুসলিম দেশগুলোর জন্য তাদের এ শক্তি এক মহাবিপদে পরিণত হয়েছে। এই রাষ্ট্রের শাসকবর্গ তাদের এই ‘উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত দেশ’ দখল করার আকাংখাটি মোটেই
(মানচিত্র *****************)
লুকিয়ে রাখেননি। দীর্ঘকাল থেকে ভবিষ্যত ইহুদী রাষ্ট্রের যে নীল নক্শা তারা প্রকাশ করে আসছে পরের পাতায় তার একটি প্রতিকৃতি দেয়া হলো। এ নক্শায় দেখা যাবে, সিরিয়া, লেবানন ও জর্দানের সমগ্র এলাকা এবং প্রায় সমগ্র ইরাক ছাড়াও তুরস্কের ইস্কান্দোরুন, মিসরের সিনাই ও ব-দ্বীপ এলাকা এবং মদীনা মুনাওয়ারাসহ আরবের অন্তর্গত হেজাজ ও নজ্দের উচ্চভূমি পর্যন্ত তারা নিজেদের সাম্রাজ্র বিস্তার করতে চায়। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে যে, আগামীতে কোনোএকটি বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলে তারা ঐসব এলাকা দখল করার চেষ্টার করবে এবং ঐ সময়ই কথিত প্রধানতম দাজ্জাল তাদের প্রতিশ্রুত মসীহরূপে আগমন করবে। রসূলুল্লাহ (স) কেবল তার আগমন সংবাদ দিয়েই ক্ষান্ত হননি বরং এই সংগে একথাও বলেছেন যে, সে সময় মুসলমানদের ওপর বিপদের পাহাড় ভেঙে পড়বে এবং এক একটি দিন তাদের নিকট এক একটি বছর মনে হবে। এজন্য তিনি নিজে মসীহ দাজ্জালের ফিত্না থেকে খোদার নিকট আশ্রয় চেয়েছেন এবং মুসলমানদেরকেও আশ্রয় চাইতে বলেছেন।
এই মসীহ দাজ্জালের মোকাবিলা করার জন্য আল্লাহ কোনো ‘মসীলে মসীহ’কে পাঠাবেন না বরং আসল মসীহকে পাঠাবেন। দু’হাজার বছর আগে ইহুদীরা এই আসল মসীহকে মেনে নিতে অস্বীকার করেছিলএবং নিজেদের জানা মতে তারা তাঁকে শূলবিদ্ধ করে দুনিয়ার বুক থেকে সরিয়ে দিয়েছিল। এই আসল মসীহ ভারত, আফ্রিকা বা আমেরিকায় অবতরণ করবেন না বরং তিনি অবতরণ করবেন দামেশ্কে। কারণ তখন সেখানেই যুদ্ধ চলতে থাকবে। মেহেরবানী করে পরের পাতার নকশাটিও দেখুন। এতে দেখা যাচ্ছে, ইসরাঈলের সীমান্ত থেকে দামেশক মাত্র ৫০ থেকে ৬০ মাইলের মধ্যে অবস্থিত। ইতিপূর্বে আমি যে হাদীস উল্লেখ করে এসেছি, তার বিষয়বস্তু মনে থাকলে সহজেই একথা বোধগম্য হবে যে, মসীহ দাজ্জাল ৭০ হাজার ইহুদী সেনাদল নিয়ে সিরিয়ায় প্রবেশ করবে এবং দামেশকের সামনে উপস্থিত হবে। ঠিক সেই মুহুর্তে দামেশকের পূর্ব অংশের একটি সাদা মিনারের নিকট সুব্হে সাদেকের পর হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম অবতরণ করবেন এবং ফজর নামায শেষে মুসলমানদের নিয়ে দাজ্জালের মুকাবিলায় বের হবেন। তাঁর প্রচণ্ড আক্রমণে দাজ্জাল পশ্চাদপসরণ করে উফাইকের পার্বত্য পথ দিয়ে (২১১ নম্বর হাদীসে দেখুন) ইসরাঈলের দিকে ফিরে যাবে। কিন্তু তিনি তার পশ্চাদ্ধাবন করতেই থাকনে। অবশেষে লিড্ডা বিমান বন্দরে সে তাঁর হাতে মারা পড়বে (১০, ১৪ ও ১৫ নং হাদীস)। এরপর ইহুদীদেরকে সব জায়গা থেকে ধরে ধরে হত্যা করা হবে এবং ইহুদী জাতির অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যাবে (৯, ১৫ ও ২১ নম্বর হাদীস)। হযরত ঈসার (আ) পক্ষ থেকে সত্য প্রকাশের পর ঈসায়ী ধর্মও বিলুপ্ত হয়ে যাবে (১, ২, ৪ ও ৬ নম্বর হাদীস( এবং মুসলিম মিল্লাতের মধ্যে সমস্ত মিল্লাতে একীভূত হয়ে যাবে (৬ ও ১৫ নম্বর হাদীস)।
কোনোপ্রকার জড়তা ও অস্পষ্টতা ছাড়াই এই দ্ব্যার্থহীন সত্যটিই হাদীস থেকে ফুটে উঠেছে। এই সুদীর্ঘ আলোচনার পর এ ব্যাপারে কোনো প্রকার সন্দেহের অবকাশ থাকেনা যে, “প্রতিশ্রুত মসীহ”র নামে আমাদের দেশে যে কারবার চালানো হচ্ছে তা একটি প্রকাণ্ড জালিয়াতি ছাড়া আর কিছুই নয়।
এই জালিয়অতির সবচাইতে হাস্যকর দিকটি এবার আমি উপস্থাপিত করতে চাই। যে ব্যক্তি নিজেকে এই ভবিষ্যদ্বাণীতে উল্লিখিত মসীহর সাথে অভিন্ন বলে ঘোষণা করেছেন, তিনি নিজে ঈসা ইবনে মরিয়ম হবার জন্য নিম্নোক্ত রসালো বক্তব্যটি পেশ করেছেন:
“তিনি (অর্থাৎ আল্লাহ) বারাহীনে আহমদীয়ার তৃতীয় অংশে আমার নাম রেখেছেন মরিয়ম। অতঃপর যেমন বারাহীনে আহামদীয়ায় প্রকাশিত হয়েছে, দু’বছর পর্যন্ত আমি মরিয়মের গুণাবলী সহকারে লালিত হই…. অতঃপর ….. মরিয়মের ন্যায় ঈসার রহ আমার মধ্যে ফুৎকারে প্রবেশ করানো এবং রূপকার্থে আমাকে গর্ভবতী করা হয়। অবশেষে কয়েকমাস পরে, যা দশ মাসের চাইতে বেশী হবেনা, সেই এলহামের মাধ্যমে, যা বারাহীনে আহমাদীয়ার চতুর্থ অংশে উল্লিখিত হয়েছে, আমাকে মরিয়ম থেকে ঈসায় পরিণত করা হয়েছে। কাজেই এভাবে আমি হলাম ঈসা ইবনে মরিয়ম।” (কিশতীয়ে নুহ, ৮৭, ৮৮, ৮৯ পৃষ্ঠা)
অর্থাৎ প্রথমে তিনি মরিয়ম হন অতঃপর নিজে নিজেই গর্ভবতী হন। তারপর নিজের পেট থেকে নিজেই ঈসা ইবনে মরিয়ম রূপে জন্ম নেন। এরপরও সমস্যা দেখা দিলো যে, হাদীসের বক্তব্য অনুযায়ী ঈসা ইবনে মরিয়ম দামেশকে অবতরণ করবে। দামেশকে কয়েক হাজার বছর থেকে সিরিয়ার একটি প্রসিদ্ধ ও সর্বজন পরিচিত শহর। পৃথিবীর মানচিত্রে আজও এই শহরটি এই নামেই চিহ্নিত। কাজেই অন্য একটি রসাত্মক বক্তব্যের মাধ্যমে এ সমস্যাটির সমাধান দেয়া হয়েছে:
“উল্লেখ্য যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে দামেশকে শব্দের অর্থ আমার নিকট এভাবে প্রকাশ করা হয়েছে যে, এ স্থানে এমন একটি শহরের নাম দামেশ্ক রাখা হয়েছে যেখানে এজিদের স্বভাব সম্পন্ন ও অপবিত্র এজিদের অভ্যাস ও চিন্তার অনুসারী লোকদের বাস।….. এই কাদিয়ান শহরটি এখানকার অধিকাংশ এজিদী স্বভাব সম্পন্ন লোকের অধিবাসের কারণে দামেশকের সাথে সামঞ্জস্র ও সম্পর্ক রাখে।” (এযালায়ে আওহাম, ফুটনোট: ৬৩ থেকে ৭৩ পৃষ্ঠা)।
আর একটি জটিলতা এখনো রয়ে গেছে। হাদীসের বক্তব্য অনুসারে ইবনে মরিয়ম একটি সাদা মিনারের নিকট অবতরণ করবেন। এ সমস্যার সমাধান সহজেই করে ফেলা হয়েছে অর্থাৎ মসহি সাহেব নিজেই এসে নিজের মিনারটি তৈরী করে নিয়েছেন। এখন বলুন, কে তাঁকে বুঝাতে যাবে যে, হাদীসের বর্ণনা অনুসারে দেখা যায় ইবনে মরিয়মের অবতরণের পূর্বে মিনারটি সেখানে মওজুদ থাকবে। অথচ েএখানে দেখা যাচ্ছে প্রতিশ্রুত মসীহ সাহেবের আগমনের পর মিনারটি তৈরী হচ্ছে।
সর্বশেষ ও সবচাইতে জটিল সসনস্যাটি এখনো রয়ে গেছে। অর্থাৎ হাদীসের বর্ণনা মতে ঈসা ইবচনে মরিয়ম (আ) লিড্ডার প্রবেশ দ্বারো দাজ্জালকে হত্যা করবেন। এ সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে প্রথমে আবোল তাবোল অনেক কথাই বলা হয়েছে। কখনো স্বীকার করা হয়েছে যে, বায়তুল মুকাদ্দাসের একটি গ্রামের নাম লিড্ডা (এযালায়ে আওহাম, আঞ্জুমানে আহমদীয়া, লাহোর কর্তৃক প্রকাশিত, ক্ষুদ্রাকার, ২২০ পৃষ্ঠা)। আবার কখনো বলা হয়েছে, “লিড্ডা এমন সব লোককে হয় যারা অযথা ঝগড়া করে।… যখন দাজ্জালের অযথা ঝগড়া চরমে পৌঁছে যাবে তখন প্রতিশ্রুত মসীহের আবির্ভাব হবে এবং তার সমস্ত ঝগড়া শেষ করে দেবে” (এযালায়ে আওহাম, ৭৩০ পৃষ্ঠা)। কিন্তু এত করেও যখন সমস্যার সমাধান হলো তখন পরিষ্কার বলে দেয়া হলো যে, লিড্ডা (আরবীতে লুদ) অর্থ হচ্ছে পাঞ্জাবের লুদিয়ানা শহর। আর লুদিয়ানার প্রবেশ দ্বারে দাজ্জালকে হত্যা করার অর্থ হচ্ছে দুষ্টুদের বিরোধিতা সত্ত্বেও মীর্জা গোলাম আহমদ সাহেবের হাতে এখানেই সর্বপ্রথম বাইয়াত হয়। (আলহুদা, ৯১ পৃষ্ঠা)।
যে কোনো সুস্থ বিবেক সম্পন্ন ব্যক্তি এইসব বক্তব্য বর্ণনার নিরপেক্ষ পর্যালোচনা করলে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছতে বাধ্য হবেন যে, এখানে প্রকাশ্য দিবালোকে মিথ্যুক ও বহুরূপীর অভিনয় করা হয়েছে।
-:সমাপ্ত:-