অর্থনৈতিক জীবন
অর্থ মানে টাকা-পয়সা। দুনিয়ায় বেঁচে থাকতে হলে যত জিনিসপত্র দরকার সবই যোগাড় করতে টাকা-পয়সা জরুরি। তাই সব জিনিসের দাম টাকা হিসাবেই ঠিক করতে হয়।
বাঁচতে হলে খেতে হবে। খেতে হলে খাবার জিনিস যোগাড় করতে হবে। খাবার জিনিস তৈরি না হলে যোগাড় করা যায় না। জিনিস তৈরী করাকে উৎপাদন বলে। ইংরেজিতে Production বলে। জিনিস উৎপন্ন হলে আদান-প্রদানের মাধ্যমে সব জরুরি জিনিস সবার কাছে পৌঁছাতে হবে। এটাকে বণ্টন (Distribution) বলে।
মানুষের যত রকম জিনিস দরকার, এর উৎপাদন ও বণ্টনের ব্যাপারে যা কিছু করতে হয় এবং যেসব নিয়ম চালু করতে হয়, সেসবকেই অর্থনীতি বলা হয়। এ অর্থনীতি মানুষের জীবনের বিশাল এলাকা দখল করে আছে। মানুষ অর্থনীতির বিধি-বিধানের অধীন। তাই মানুষের অর্থনৈতিক জীবন ব্যাপক এবং কোনো মানুষ এর বাঁধন থেকে মুক্ত নয়। সব মানুষ অর্থনৈতিক অবস্থার শিকার।
দেশের সরকারই অর্থনৈতিক বিধি-বিধান তৈরী ও জারি করে। সরকার যদি দেশের সকল মানুষের অর্থনৈতিক প্রয়োজন পূরণ করতে চায়, তাহলে এ উদ্দেশ্য সফল করার জন্য যে ধরণের বিধি-বিধান বা নিয়ম-কানুন দরকার, তা-ই তৈরি ও জারি করবে। কিন্তু দেখা যায় যে, দেশের অল্প কিছু লোক সবচেয়ে বেশি সুবিধা ভোগ করে এবং বিলাসিতা করে বিরাট অংকের টাকা উড়িয়ে দেয়। আর বেশিরভাগ লোকই কোনো রকমে বেঁচে থাকে। কিন্তু এমন অনেক লোকও থাকে, যারা ভাত-কাপড়-বাসস্থান-চিকিৎসা-শিক্ষা ইত্যাদির অভাবে কষ্ট পায়। এ অবস্থার জন্য দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই দায়ী। যে নীতিতে সরকার দেশ শাসন করে এবং সে নীতি দেশে যে রকম অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু করে, জনগণ সে রকম সুবিধা বা অসুবিধাই ভোগ করে।
আদর্শ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা
দেশে এমন অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই চালু থাকা জরুরি যাতে-
১. দেশের মানুষ ইজ্জতের সাথে বেঁচে থাকার সুযোগ পায়।
২. কোনো মানুষ যাতে মৌলিক মানবীয় প্রয়োজন (ভাত-কাপড়-বাসস্থান-চিকিৎসা-শিক্ষা) থেকে বঞ্চিত না থাকে।
৩. কোনো মানুষকে যাতে অন্য কোনো মানুষের অর্থনৈতিকভাবে গোলাম হতে বাধ্য হতে না হয়।
৪. দেশের ধন-সম্পদ যাতে অল্প কিছু লোকের মালিকানায় চলে না যায়।
৫. সবাই যাতে নিজ নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী আয়-রোজগার করার সুযোগ পায় এবং কোনো কারণে যারা আয় করার যোগ্য নয়, তারাও যেন অভাবে কষ্ট না পায়।
এ পাঁচটি অর্থনৈতিক মহৎ উদ্দেশ্য যে খুবই যুক্তিপূর্ণ, সে কথা কেউ অস্বীকার করতে পারে না। সব দেশের সরকারই দাবি করে যে তারা এ উদ্দেশ্যেই অবিরাম চেষ্টা করছেন। তাহলে বাস্তবে এ ব্যবস্থা চালু নেই কেন? এ উদ্দেশ্য ক’টি যে মহৎ ও চমৎকার তা স্বীকার করা সত্ত্বেও বাস্তবে তা সফল হচ্ছে না কেন?
এসব উদ্দেশ্য ব্যর্থ হচ্ছে কেন?
এ মহৎ উদ্দেশ্য ব্যর্থ হওয়ার আসল কারণঃ
১. মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি এত সামান্য যে, সবদিক দিয়ে সঠিক ও নির্ভুল কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা গড়ে তোলার সাধ্য মানুষের নেই। তাই ভুল থেকে বাঁচার জন্য নতুন ব্যবস্থা তৈরী করতে বাধ্য হয়। তবুও ভুলই হতে থাকে।
২. মানবজাতির অর্থনৈতিক জীবনে শান্তি-শৃঙ্খলা কায়েমের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাআলা নবীর মাধ্যমে যেসব নীতিমালা দান করেছেন, তা মানুষ মেনে চলে না। ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও গোষ্ঠীগত স্বার্থে মানুষ আল্লাহর দেওয়া নীতি অমান্য করে। জাতীয় স্বার্থেও এক জাতি অন্য জাতির প্রতি যুলুম করে।
৩. স্বার্থে অন্ধ হয়ে মানুষ অর্থনৈতিক ময়দানেই সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি করে। আল্লাহ তাআলা যেসব পথকে হারাম করেছেন, মানুষের বিবেক তা সঠিক মনে করলেও অন্যায়ভাবে স্বার্থ হাসিলের জন্য হারাম পথেই চলে। সুদ, ঘুষ, জুয়া, প্রতারণার হাজারো উপায় মানুষ বের করে নেয়। সবাই সবাইকে ঠকিয়ে ধনী হতে চায়। তাই সবাইকেই ঠকের শিকার হতে হয়। যে ঘুষ খায় তাকেও বহু জায়গায় ঘুষ দিতে হয়।
৪. এর আসল কারণ একটাই। তা হলো, আল্লাহ বিধান না মানা। যা মেনে চললে সকল মানুষ সুখ-শান্তি ভোগ করতে পারে, সে বিধানই আল্লাহ দান করেছেন। গোটা সৃষ্টিজগতে আল্লাহর বিধান মযবুতভাবে চালু আছে। মানবসমাজকে আল্লাহ তাঁর বিধান মেনে চলতে বাধ্য করেননি। তাই মানুষ মনগড়া ভুল বিধান মেনে চলেই অশান্তি ভোগ করছে।
প্রাণিজগতের ব্যাপারে আল্লাহর বিধান
কুরআন মাজীদের ১২ নং পারার ১ম আয়াতে (সূরা হূদের ৬ নং আয়াতে) আল্লাহ বলেন, ‘‘দুনিয়ায় এমন জীব নেই, যার রিয্কের দায়িত্ব আল্লাহর উপর নেই।’’
‘রিয্ক’ শব্দটি কুরআনে যে অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে এর মর্ম ব্যাপক। কোনো জীবের ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য যেসব জিনিসের দরকার, সেসবই ঐ জীবের রিয্ক। গাছেরও প্রাণ আছে। রিয্কের অভাবে গাছ মরে যায়। বেঁচে থাকার জন্য গাছের যা কিছু জরুরি তা সবই গাছের জন্য রিয্ক। তাহলে রিয্ক মানে জীবনের উপকরণ।
উপরের আয়াতে আল্লাহ দাবি করেছেন, দুনিয়ার সব জীব বা প্রাণীর রিয্কের বন্দোবস্ত করার পূর্ণ দায়িত্ব তিনি নিয়েছেন। মানুষ ছাড়া কোনো প্রাণীই রিয্কের অভাবে কষ্ট পায় না। অন্যান্য প্রাণী মরে, কিন্তু রিয্কের অভাবে কষ্ট পেয়ে মরে না।
এ দাবি যে মহাসত্য, সে কথা একটু খেয়াল করলেই বোঝা যায়। বন-জঙ্গলে যত পশু-পাখি আছে, এর কোনো একটাকেও রিয্কের অভাবে শুকিয়ে যেতে দেখা যায় না। মানুষ যেসব জীব পোষে (যেমন-গরু, ছাগল ইত্যাদি) এর মধ্যে হাড্ডিসার অবস্থাও দেখা যায়; কিন্তু বনে কোনো পশুকে এমন অবস্থায় দেখা যায় না।
ছোট-বড় যেসব পাখি আমরা আশপাশে উড়তে দেখি, এর কোনোটাই ধরে প্রমাণ করা যাবে না যে, ওটা না খেয়ে শুকিয়ে গেছে। আমাদের ঘরের মুরগি শুকনা হতে পারে। কারণ, এর রিয্কের দায়িত্ব আমরা নিয়ে থাকি। এর দায়িত্ব আল্লাহর উপর নয়।
পশু-পাখিদের মধ্যে কোনো সরকার কায়েম নেই; কিন্তু তাদের উপর আল্লাহ রাজত্ব কায়েম আছে। তিনি তাদের সবার রিয্কের ব্যবস্থা করছেন। ছোট্ট কোনো কীট বা কোনো পিঁপড়াও রিয্কের অভাবে কষ্ট পায় না।
মানুষ রিয্কের অভাবে কষ্ট পায় কেন?
আল্লাহ দাবি করেছেন, তিনি সকল জীবের রিয্কের দায়িত্ব নিয়েছেন। মানুষ কি জীব নয়? তিনি তো ঘোষণা করেছেন, মানুষ তাঁর সেরা সৃষ্টি। তাহলে মানুষ সেরা জীব। অথচ দুনিয়ার লাখ লাখ মানুষ রিয্কের অভাবে মারা যাচ্ছে। আমাদের আশপাশেও দেখতে পাই, অনেক লোক রিয্কের অভাবে আধমরা হয়ে আছে। এখানে প্রশ্ন ওঠে, আল্লাহ কি মানুষের বেলায় তাঁর দায়িত্ব পালন করেন না? আল্লাহ কি দায়িত্ব পালনে অবহেলা করতে পারেন?
অথচ সূরা বাকারা’র ২৯ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে বলেছেন, ‘‘তিনি ঐ সত্তা, যিনি তোমাদের জন্য দুনিয়ার সব জিনিস পয়দা করেছেন।’’ আমরা খেয়াল করলে এ কথাটি যে খুবই সত্য, তা সহজেই বুঝতে পারি।
আল্লাহ তাআলা মানুষের প্রয়োজন পূরণের জন্য আলো, বাতাস, আগুন, পানি, পশু-পাখি, গাছ-পালা সবই তৈরী করেছেন। মানুষকে অন্য কারো প্রয়োজনে পয়দা করেননি। ঐসব জিনিস না হলে মানুষ বাঁচবে না; কিন্তু মানুষ না থাকলে ওদের কোনো অসুবিধা হবে না। মানুষ না থাকলে পশু-পাখির তো সুবিধা হওয়ারই কথা।
গরু-ছাগল মরলে শেয়াল-কুকুর-শকুন তা খায়। মানুষ মরলে তার দেহকে অন্য কোনো জীবকে খাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় না। কারণ, মানুষকে অন্য কোনো সৃষ্টির জন্য পয়দা করা হয়নি; বরং সকল সৃষ্টিকেই মানুষের জন্য পয়দা করা হয়েছে।
এটা কত বড় আজব কথা যে, অন্য কোনো জীব রিয্কের অভাবে কষ্ট পায় না। অথচ যে মানুষের জন্য সব কিছু পয়দা করা হয়েছে, সে মানুষই অভাবে ভোগে। যে পশু-পাখিকে মানুষের জন্য পয়দা করা হয়েছে, ওরা অভাবে কষ্ট পায় না, অথচ যে মানুষের জন্য ওদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে, সে মানুষই অভাবে কষ্ট পায়। এটা কেমন কথা?
এ প্রশ্নের সঠিক জবাব
মানুষের জন্য যত জিনিস দরকার তা পরিমাণমতো পয়দা করেন বলে আল্লাহ তাআলা বার বার কুরআন মাজীদে ঘোষণা করেছেন। তাই দুনিয়ার মানুষের জন্য খাবার জিনিসের অভাব নেই। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO- Food and Agricultural Organization) প্রায়ই ঘোষণা করে, বিশ্বে যত খাদ্য-শস্য উৎপন্ন হয়, যদি তা ঠিকভাবে বিলি-বণ্টন করা হয় তাহলে একজন মানুষেরও খাবারের অভাব হওয়ার কথা নয়। এর দ্বারা প্রমাণ হয় যে, বণ্টনব্যবস্থার ত্রুটির কারণেই মানুষ রিয্কের অভাবে কষ্ট পায়। এর আসল কারণ তালাশ করতে হবে।
আল্লাহ তাআলা মানুষের রিয্কের জন্য জরুরি সকল জিনিস উৎপন্ন করার জন্য মানুষের মধ্যে প্রেরণা দিয়েছেন। নিজেদের স্বার্থেই মানুষ রাত-দিন হাজারো জিনিস উৎপন্ন করার চেষ্টা করতে থাকে। সবাই তাদের উন্নতি চায়। তাই উৎপাদনের নতুন নতুন উপায় মানুষ বের করে। আল্লাহ তাআলা তাঁর সৃষ্টিজগৎকে উৎপাদনের ব্যাপারে মানুষের খিদমতে লাগিয়ে দেন। তাই মানুষের প্রয়োজন পরিমাণেই সবকিছু উৎপন্ন হয়।
কিন্তু উৎপাদিত জিনিস ইনসাফের সাথে বিলি-বণ্টনের যে নিয়ম-নীতি আল্লাহ তাআলা নবীর মাধ্যমে পাঠিয়েছেন, সে অনুযায়ী বণ্টন হয় না বলেই মানুষ রিয্কের অভাবে কষ্ট পায়। আল্লাহ তাআলা মানুষের জন্য যত বিধি-বিধান দিয়েছেন, তা জারি করার দায়িত্ব মানুষের উপরই দিয়েছেন। এটাই খিলাফতের দায়িত্ব।
রাসূল সা. ও তাঁর চারজন খলীফা আল্লাহর দেওয়া নিয়ম আল্লাহ প্রতিনিধি হিসেবে তাঁর পক্ষ থেকে পালন করতেন। কোনো মানুষ যাতে রিয্কের অভাবে কষ্ট না পায়, সে উদ্দেশ্যে তাঁরা চেষ্টা করতেন। ইসলামী রাষ্ট্রের এলাকা বেড়ে যখন অনেক দেশ তাঁদের শাসনের আওতায় আসে, তখন তাঁরা সকল সম্পদ ইনসাফের সাথে বণ্টন করতেন। যার ফলে হযরত ওমর ইবনে আবদুল আযীযের শাসনামলে যাকাত নেওয়ার মতো কোনো অভাবী পাওয়া যায়নি।
এতে প্রমাণ হয় যে, আল্লাহর বিধান চালু করার যোগ্য ঈমানদার ও নিঃস্বার্থ লোকদের হাতে শাসনক্ষমতা থাকলে আল্লাহর খিলাফত কায়েম থাকে এবং মানুষ রিয্কের অভাবে ভুগতে বাধ্য হয় না।
আজকাল দুনিয়ায় কেমন লোকদের হাতে শাসনক্ষমতা রয়েছে, তা তাদের চরিত্র ও আচরণ থেকে সহজেই বোঝা যায়। শয়তানের খলীফাদের হাতে দেশের শাসনক্ষমতা থাকা অবস্থায় কিছুতেই আশা করা যায় না যে, আল্লাহর বিধানমতো মানুষ তাদের রিয্ক ঠিকমতো পেতে পারে। বিশ্বের লাখ লাখ মানুষ যে রিয্কের অভাবে মারা যাচ্ছে, এর জন্য আল্লাহ দায়ী নন। আল্লাহর বিধান যারা অমান্য করেছে তারাই এর জন্য দায়ী।
একটা সহজ উদাহরণ
আমাদের দেশে অনেক যৌথ পরিবার আছে। ধরুন এক বাড়িতে চার ভাই এক পাকে (এক সাথে) খায়। সবাই বিয়ে করেছে এবং তাদের ছেলে-পেলেও আছে। তাদের বাপ-মা বেঁচে আছে বলে তারা বাপ-মায়ের সাথে এক বাড়িতেই থাকে। পিতার সম্পত্তি থেকেই পরিবার চলছে। চার ভাই যা রোজগার করে তাও পিতার হাতেই তুলে দেয়। এ পরিবারে তো অভাবই থাকার কথা নয়। পিতাই পরিবারের কর্তা। সংসারের জন্য যা কিছু কিনতে হয়, কোনোটারই অভাব হয় না।
পাকঘরের মূল কর্তৃত্ব চার ভাইয়ের মায়ের হাতে। মা রেওয়াজমতো চার বৌমার মধ্যে বড়-বৌকে পাকঘরের প্রধান দায়িত্ব দেন। সব বৌ-ই কাজ করে, কিন্তু পাক করা খাবার বিলি-বণ্টনের দায়িত্ব বড় বৌ-ই পালন করে। পাক করার জন্য কী পরিমাণ চাল, ডাল, তরি-তরকারি, মাছ-গোশত দরকার, বড় বৌ তা শাশুড়ি থেকে চেয়ে নেয়। মা হিসাবমতো সব জিনিস বড় বৌ-এর হাতে তুলে দেন।
কিন্তু বড় বৌ খাবার বিলি করার সময় নিজের স্বামী ও ছেলে-মেয়েদের মাছের বড় বড় টুকরো, এতো বেশি পরিমাণ ভাত, তরকারি ও ডাল দিয়ে দেয় যে, তারা সব খেয়ে শেষ করতে পারে না। বাকিটা ঝুটা হিসেবে বিড়াল-কুকুরকে দিয়ে দেয়। শাশুড়ি তো সবার জন্য পরিমাণমতো জিনিস দিয়েছেন; ফেলার জন্য তো দেননি। ফলে অন্য ভাই, তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের জন্য যে খাবার থাকে, তাতে তাদের পেট ভরে না।
এই যে পরিবারের অল্প কিছু লোক বেশি খেল এবং কিছু ফেলেও দিল, আর বাকি সবাই যে কম পেল-এর জন্য শাশুড়ি মোটেই দায়ী নয়। একমাত্র বড় বৌ-ই দায়ী।
দুনিয়ার সব মানুষ একই পরিবার
সকল আদমসন্তান আল্লাহর পরিবার। সারা দুনিয়া আল্লাহর সংসার। তিনি সকল দেশের মালিক। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের জন্য আলাদা আলাদা আল্লাহ নেই। সারা দুনিয়ায় যত খাদ্য উৎপন্ন হয়, তা সকল মানুষের প্রায়োজন-পরিমাণই। তবু কেন অভাব?
কোনো দেশের জন্য জরুরি সব জিনিস ঐ দেশেই উৎপন্ন হয় না। আমেরিকা, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার বিশাল এলাকায় এক বছরে যে পরিমাণ গম উৎপন্ন হয়, তা তারা তিন বছরেও খেয়ে শেষ করতে পারবে না। মরুভূমির সব দেশের মানুষের জন্য যে পরিমাণ খাদ্য দরকার, এর সামান্যও সেখানে উৎপন্ন হয় না। তবে মরুভূমির দেশের বালির নিচে এত পেট্রোল রাখা হয়েছে, যা না হলে ইউরোপ ও আমেরিকা অচল হতে বাধ্য।
বাংলাদেশে যত মানুষ আছে, উৎপন্ন খাদ্যের পরিমাণ সে তুলনায় কম। আবার বাংলাদেশে যে উন্নতমানের পাট উৎপন্ন হয়, তা ইউরোপ-আমেরিকায় হয় না; কিন্তু তাদেরও পাটের দরকার আছে।
এভাবেই আল্লাহ মানুষের সকল প্রয়োজনীয় জিনিস দুনিয়ার দেশে দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রেখেছেন। কোনো এক দেশে সব জিনিস উৎপন্ন হয় না। আল্লাহ চান যে, আদম সন্তানরা এক দেশের জিনিস অন্যান্য দেশের উৎপন্ন জিনিসের সাথে বিনিময় করুক এবং এর মাধ্যমে তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠুক।
সূরা আল হুজুরাতের ১৩ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘‘হে মানবজাতি! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে পয়দা করেছি, তারপর তোমাদেরকে বিভিন্ন কাওম ও গোত্র বানিয়ে দিয়েছি; যাতে তোমরা একে অপরকে (ঐসব নামে) চিনতে পারো।’’
একটা গ্রামে খাঁ বংশ, সরকার বংশ, ব্যাপারি পাড়া ইত্যাদি কেবল পরিচয়ের জন্য বলা হয়; কাউকে ছোট বা কাউকে বড় মনে করে এভাবে বলা হয় না। বাংলাদেশে ৬৪ টি জেলা আছে। এ সবই শুধু পরিচয়ের জন্য। কোনো জেলার নাম মন্দ মনে করে উল্লেখ করা হয় না; পরিচয়ের জন্যই উল্লেখ করা হয়। তেমনিভাবে বিভিন্ন দেশকে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, আমেরিকা ইত্যাদি নামে চিনতে হয়। সম্মান বা অসম্মানের জন্য কোনো দেশের নাম নেওয়া হয় না।
আল্লাহ চান যে মানুষে মানুষে, পাড়ায় পাড়ায়, জেলায় জেলায় সবাই সবাইকে চিনুক এবং জানুক। কেউ কাউকে মন্দ মনে না করুক। দেশে দেশে আদমসন্তানরা আল্লাহর দেওয়া সম্পদ আদান-প্রদান করে যার যার প্রয়োজন পূরণ করুক। সবাই এক আল্লাহর সৃষ্টি ও একই আদি পিতা-মাতার সন্তান হিসেবে সবাই সবাইকে ভালোবাসুক। আল্লাহর দেওয়া বিধান মেনে সবাই সুখ-শান্তি ভোগ করুক।
আল্লাহর পরিবারের কী দশা?
সারা দুনিয়ার আদমসন্তানের জন্য যা কিছু দরকার, সবই বিভিন্ন দেশে উৎপন্ন হচ্ছে। আল্লাহ তাআলা নিজেই উৎপাদনে সাহায্য করছেন। এক দেশের লোকের যে পরিমাণ জিনিস দরকার, সে দেশে উৎপন্ন জিনিসের সে পরিমাণের অতিরিক্ত জিনিস অন্য কোনো দেশের প্রয়োজন। ঐ দেশের কোনো অতিরিক্ত জিনিস এদেশে প্রয়োজন। এভাবেই সব দেশের লোক তাদের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস অন্য দেশ থেকে আমদানি করে এবং নিজেদের অতিরিক্ত জিনিস অন্য দেশে রফতানি করে। দেশে দেশে এভাবেই লেনদেন হয়।
যেমন- বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া থেকে গম কিনতে পারে। এর বদলে তারা বাংলাদেশ থেকে পাট কিনতে পারে। এ জিনিসের বদলে অন্য জিনিস বিনিময় করতে জিনিসের দাম ধরা হয়। এ দাম ধরার বেলায়ই এক দেশ আরেক দেশের প্রতি যুলুম করে। যুলুমের ধরণটা কেমন, তা উদাহরণ দিলে সহজে বুঝা যাবে।
বাংলাদেশের গম দরকার। অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশ গম নিতে চায়। এর বদলে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ থেকে পাট নিতে চায়। গম ও পাটের দর ঠিক করতে গিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। যেহেতু মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য গম জরুরি, সেহেতু অস্ট্রেলিয়া বেশি দাম দাবি করল। পাট এমন জিনিস নয়, যা না নিলে অস্ট্রেলিয়ার মানুষ মরবে। তাই তারা খুব কম দামে পাট কিনতে চাইল। বাংলাদেশ সমস্যায় পড়ে গেল। পাট উৎপাদন করতে যে খরচ পড়েছে এর চেয়ে কম দামে বিক্রি করতে বাংলাদেশকে বাধ্য করলে অবশ্যই এটা যুলুম। অথচ গম উৎপন্ন করতে যে খরচ হয়েছে এর কয়েক গুণ বেশিদামে বাংলাদেশকে গম কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। ভাবখানা এমন, এ দামে গম কিনলে কিনতে পার, না কিনলে পাট খেয়ে মর গিয়ে। অনেক দেশ সাধ্যের বেশি দামে গম কিনতে না পারায় অস্ট্রেলিয়ার গুদামে এত গম জমা হয়ে রইল যে, অনেক গম তারা পশুকে খাওয়াতে বাধ্য হলো। এমনকি অনেক গম পচে গেল, যা সমুদ্রে ফেলতে হলো। এটা গল্প নয়, এমনই হচ্ছে বলে পত্রিকায় খবর বের হয়।
এ একটা উদাহরণ থেকেই সমস্যাটা সহজে বুঝা যায়। কোনো কোনো দেশে গম পশুকে খেতে দেওয়া হয়, সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয়, অথচ অন্য কোনো দেশে খাদ্যের অভাবে মানুষ মারা যায়।
উপরে শাশুড়ি ও বড় বৌ- এর ভূমিকার উদাহরণটি থেকে বিষয়টি এভাবে বুঝতে পারা যায়। আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার সকল মানুষের জন্যই খাদ্য পয়দা করেন। কিন্তু ধনী দেশগুলোতে যারা বড় বৌ-এর ভূমিকা পালন করছে তাদের দোষেই লাখ লাখ আদমসন্তান না খেয়ে মরছে। তারা নিজের দেশের মানুষকে যে পরিমাণখাবার জিনিস অপচয় করতে দিচ্ছে, পশুকে পর্যন্ত খাওয়াচ্ছে এবং পচিয়ে নষ্ট করছে, সেখাদ্যটুকু পাওয়া যাদের হক ছিল তারা না খেয়ে মরছে। আল্লাহ পরিমাণমতোই পয়দা করছেন, পশুকে খাওয়ানোর জন্য বা পচানোর জন্য তো উৎপন্ন করছেন না। শাশুড়ি পরিমাণমতো সব জিনিস দিয়েছেন; কিন্তু বড় বৌ-এর দোষে পরিবারের অন্যরা খাবার কম পাচ্ছে।
ইনসাফের কথা
জাতিসংঘ কয়েকটি বড় দেশের হাতে বন্দি। ১৯১ টি সদস্য দেশের প্রতিনিধিদের সভায় এ পর্যন্ত অনেক ইনসাফপূর্ণ প্রস্তাব পাস হয়েছে। কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদের হাতে প্রস্তাব বাস্তবায়নের ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয়েছে। পরিষদের ১৫ জন সদস্যের মধ্যে ৫ জন বড় দেশগুলোর প্রতিনিধি। তাদের প্রত্যেককে এ ক্ষমতা দেওয়া আছে যে, যোকোনো প্রস্তাব তাদের যে কেউ নাকচ করে দিতে পারে। ২০০৩ সালে জাতিসংঘের মতের বিরুদ্ধে আমেরিকা ইরাক আক্রমণ করে। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে ভবিষ্যতে যুদ্ধ বন্ধ করার উদ্দেশ্যেই জাতিসংঘ গঠন করা হয়; কিন্তু এ যুদ্ধ বন্ধ করা গেল না।
সকল স্বাধীন রাষ্ট্রই জাতিসংঘের সদস্য। এটা দুনিয়ার সব রাষ্ট্রের একটা সমিতি। কিন্তু বড় কয়েকটি রাষ্ট্রের হাতে এমন ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয়েছে যে, সমিতির আসল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়ে গেছে। এ সমিতি ছোট রাষ্ট্রগুলোর উপর দাপট দেখাতে পারে। কিন্তু ৫ টি বড় রাষ্ট্রের কারণে এ সমিতি ইনসাফ করতে পারে না।
ইহুদিরাষ্ট্র ইসরাইলের বিরুদ্ধে এ সমিতির কোনো হুকুমই আমেরিকা জারি করতে দেয়নি। ফিলিস্তিনের পক্ষে সকল প্রস্তাবই রাশিয়া নাকচ করে ভারতকে কাশ্মীরের উপর চরম যুলুম করতে সাহায্য করেছে। এভাবে বড় কয়েকটি রাষ্ট্র দুনিয়ায় যুলুম চালু রেখেছে।
সব দেশের উৎপাদিত জিনিস যাতে ইনসাফপূর্ণ দরে সবাই নিতে পারে এবং লেনদেনে কারো উপর কেউ যুলুম করতে না পারে এমন প্রস্তাব যদি ঐ সমিতি পাস করে তাহলে যেসব দেশ অন্য দেশ থেকে খাবার জিনিস কিনতে বাধ্য হয় তারা যুলুম থেকে বাঁচতে পারে। এ উদ্দেশ্যে সমিতিকে এ প্রস্তাব পাস করতে হবে যে, কোনো জিনিস উৎপন্ন করতে যে খরচ হয়, সে জিনিস শতকরা ১০ বা ১৫ ভাগ লাভে বিক্রি করতে হবে। দুনিয়ার সব দেশে এ রকম একই আইন জারি করতে পারলে কেউ যুলুমের শিকার হবে না। এ জাতীয় প্রস্তাব বাস্তবায়নে স্বার্থপর বড় রাষ্ট্রগুলো কি রাজি হবে?
দেশের ভেতরে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা
দুনিয়াজোড়া অর্থনৈতিক শিকলে আবদ্ধ হওয়ার কারণে ছোট দেশগুলোকে যেসব সমস্যায় পড়তে হয় সে বিষয়ে কিছু ধারণা উপরে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংক, আঞ্চলিক ব্যাংক ও বড় দেশগুলো সাহায্যের নামে যা দেয়, তার একটা বড় অংশ তাদের নিযুক্ত কর্মকর্তাদের পেছনে খরচ হয়ে যায়। আর ধার বা ঋণ হিসেবে যা দেয় তা সুদসহ ফেরত দেওয়া বিরাট কঠিন ব্যাপার।
সরকার ঐ সব ঝামেলাসহই দেশের জন্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। যে দলই সরকারি ক্ষমতায় থাকে, তারা পরবর্তী নির্বাচনে জনগণের সমর্থনের আশায় যত কর্মসূচি গ্রহণ করে তা সঠিকভাবে বাস্তবে চালু করতে পারলে দেশ এগিয়ে যেতে পারে। কিন্তু যাদের হাতে তা চালু হয়, তাদের দুর্নীতির কারণে উদ্দেশ্য পুরোপুরি সফল হয় না। ঈমানদার ও যোগ্য লোকের শাসন কায়েম না হওয়া পর্যন্ত এ সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে না।
আমরা ইসলামী অর্থনীতি সম্পর্কে যা আলোচনা করছি তা জানা জরুরি বলেই লিখছি। কিন্তু সৎ লোকের শাসন কায়েম না হলে ইসলামী অর্থনীতি চালু হবে না।
দুনিয়ার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা
বর্তমান দুনিয়াতে যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু আছে, এর নাম হলো পুঁজিবাদ।
১৯১৭ থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত রাশিয়ার নেতৃত্বে আরেক ধরণের অর্থনেতিক ব্যবস্থা বেশ কয়টি দেশে চালু ছিল। এর নাম সমাজবাদ বা সমাজতন্ত্র। কমিউনিজম নামেও এর পরিচয় ছিল। সমাজতন্ত্র তার জন্মভূমি রাশিয়াতেই আত্মহত্যা করেছে। ঐ অর্থনীতি অচল বলে প্রমাণিত হয়েছে। সেখানে আবার পুঁজিবাদী অর্থনীতি চালু হয়েছে।
ইসলামের দৃষ্টিতে পুঁজিবাদ মানুষকে অর্থনৈতিক গোলাম বানায়। আর সমাজতন্ত্র জনগণকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উভয় গোলামে পরিণত করে। সমাজতন্ত্র অর্থনৈতিক মুক্তির দোহাই দিয়ে সকল অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা একটি দলের হাতে তুলে দিয়ে জনগণকে সকল দিক দিয়ে দাস বানিয়েছিল, আর পুঁজিবাদ ব্যক্তি-স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক মুক্তির দোহাই দিয়ে জনগণকে পুঁজিবাদীদের অর্থনৈতিক গোলাম বানিয়ে রেখেছে।
এত বড় কঠিন বিষয় জনগণের বুঝার মতো সহজ করে আলোচনা করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া সমাজতন্ত্র অনিবার্য মৃত্যুবরণ করেছে বলে সে বিষয়ে আলোচনার দরকার নেই। পুঁজিবাদ যেহেতু চালু আছে এবং আমরা এর অধীনেই আছিত সেহেতু এ বিষয়ে কিছু আলোচনা করা জরুরি।
পুঁজিবাদী অর্থনীতি
পুঁজি মানে উৎপাদন উপযোগী টাকা। মানুষের দরকার খাবার, কাপড় ও অন্যান্য অনেক জিনিস, যা সবাই ব্যবহার করে। কেউ টাকা খায় না, টাকা গায়ে দেয় না, টাকা সরাসরি ব্যবহার করে না। টাকা কোনো পণ্য নয়। পণ্য আদান-প্রদান বা বিনিময় করতে টাকা কাজে লাগে। ছোট একটা উদাহরণ দেওয়া যাকঃ
চাষী জমিতে ফসল বুনে ধান উৎপাদন করল। তাঁতী ঘরে কারখানায় কাপড় তৈরী করল। চাষী কাপড় কিনতে চায়, আর তাঁতী চাল কিনতে চায়। চাষী কি চালের বস্তা নিয়ে তাঁতীর কাছে কাপড় কিনতে যায়? তাঁতী কি কাপড়ের বস্তা নিয়ে চাষীর বাড়িতে চাল কিনতে যায়? চাল ও কাপড় বিনিময় করার এ নিয়ম মোটেই সুবিধাজনক নয়। তাই সহজ নিয়ম চালু হয়েছে যে, চাষী বাজারে চাল বিক্রি করে টাকা নেবে, তাঁতী কাপড় বেচে টাকা নেবে। ঐ টাকা দিয়ে যার যে জিনিস দরকার সে তা কিনবে। সুতরাং টাকা হলো পণ্যের বিনিময়ের মাধ্যম; টাকা কিন্তু কোনো পণ্য নয়। মানুষের পণ্য দরকার। টাকা পণ্য কেনার জন্য ব্যবহার করা হয়। টাকা কোনো পণ্য বানায় না, টাকা দিয়ে পণ্য কেনা হয় মাত্র।
পুঁজিবাদের ভিত্তি হলো সুদ। যার কাছে বেশি টাকা আছে সে অন্যকে ঐ টাকা সুদের উপর ধার দেয়। অর্থাৎ টাকা দিয়ে আরও টাকা কামাই করে। পুঁজিওয়ালা নিজে টাকা কামাই করতে পারে না। যে টাকা ধার নেয় সে লোকটি কামাই করে। পুঁজিওয়ালা কোনো কিছু না করেই ঐ লোকের কামাই থেকে সুদ দাবি করে। এটা শোষণ বা যুলুম। তাই ইসলাম সুদকে জঘন্য হারাম ঘোষণা করেছে।
একজনের পুঁজি আরেকজন নিয়ে কাজে লাগিয়ে যা লাভ করল ঐ লাভের অংশ টাকাওয়ালা নিলে সুদ হবে না। যদি লাভ না হয় তাহলে কিছুই পাবে না। এ শর্তে ধার দিলেও নিলে দোষ নেই। এতে শোষণ হবে না। পূর্ব-চুক্তি মোতাবেক লাভের একটা অংশ নিলে ব্যবসায় শরীক হিসেবে লাভ পাবে। টাকা দিয়ে ব্যবসায় লাভ না হলেও সুদ নেওয়াটাই যুলুম।
টাকার মালিকরা ব্যাংকের মাধ্যমে সুদে টাকা লগ্নি করে জনগণকে শোষণ করে তাদের টাকার অংক বাড়িয়ে অন্যায়ভাবে দেশের সম্পদের মালিক হয়ে যাচ্ছে, আর জনগণ সুদ দিতে দিতে আরও গরীব হচ্ছে। পুঁজিবাদীরা টাকাকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করছে। যারা ধার নিচ্ছে তাদের লাভ না হলেও এমনকি লোকসান হলেও সুদ আদায় করতেই হবে। বাড়ি-ঘর বেচে হলেও সুদ দিতে হবে। তাই পুঁজিবাদী অর্থনীতি চরম যুলুম ও শোষণ।
সুদের কুপ্রথা বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। গরীব লোকেরা উচ্চহারে সুদের উপর টাকা নিয়ে ফতুর হচ্ছে। আর টাকার গোলামরা গরীবদের রক্ত শোষণ করে চলেছে।
পুঁজিবাদ টাকাওয়ালার মধ্যে যে মনোভাব পয়দা করে, তাতে টাকাই তাদের জীবনের উদ্দেশ্য হয়ে যায়। টাকার অংক বাড়ানোর জন্যই তার সকল চিন্তা-ধান্দা। টাকার লোভ তাকে পেয়ে বসে। তার সুদী ব্যবসা দেশ, জাতি ও জনগণের কোনো উপকারে লাগছে কি-না সে কথা চিন্তাও করে না। পুঁজিবাদী অর্থনীতি গোটা সমাজকে লোভী ও স্বার্থপর বানায়। এ কারণেই লটারি, বহু রকমের জুয়া, ঘুষ ও অনেক রকম অসৎ উপায়ে আয় করার কু-প্রথা ব্যাপকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। পুঁজিবাদী মনোভাব মানুষকে টাকার পাগল বানায়। তাই চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, লুটপাট, চাঁদাবজি ইত্যাদি বেড়েই চলেছে। মানুষ নৈতিক চেতনা হারিয়ে টাকা ছাড়া কিছুই বুঝছে না।
ইসলামের অর্থনৈতিক ভিত্তি হলো যাকাত। সম্পদের শতকরা আড়াই ভাগ কুরআনের বিধান মোতাবেক দান করাকে যাকাত বলা হয়। ইসলামে যাকাত ব্যবস্থাটা মানুষকে অনেক কথা শেখায়। যেমন-
১. পয়লাই যাকাতদাতা বুঝে নেয় যে, তার কামাই করা মালের আসল মালিক সে নয়। আসল মালিক আল্লাহ; যার হুকুমে তার কামাই করা মালের একটা নির্দিষ্ট অংশ গরীবদের জন্য দিয়ে দিতে হয়। সে টাকার গোলাম নয়, আল্লাহর গোলাম।
২. হালাল কামাই থেকে যাকাত দিতে হয়। এর দ্বারা তাগিদ দেওয়া হয় যে, হারাম পথে কামাই করা যাবে না।
৩. যাকাত দেওয়ার পর তার হাতে যত টাকা আছে এর আসল মালিক যেহেতু আল্লাহ, সেহেতু এ টাকা হালাল কাজেই খরচ করতে হবে। হারাম কাজে ব্যয় করার অধিকার তার নেই।
৪. যাকাত গরীবের প্রতি যাকাতদাতার দয়া নয়; ধনীর ঘরে এটা গরীবের হক বা অধিকার, যা সরকারের হাতে তুলে দিতে হয়। এতে সরকারকে ফাঁকি দিয়ে লাভ নেই। এটা আল্লাহর হুকুম, তিনি এ বিষয়ে হিসাব নেবেন।
৫. যাকাত সরকারি ব্যবস্থাপনায় ধনীদের কাছ থেকে উসুল করে, যাদের হক তাদের কাছে পৌঁছিয়ে দিতে হবে। গরীবকে ধনীর দুয়ারে এসে ভিক্ষুকের মতো হাত পেতে নিতে হবে না। সরকার তার হক তার ঘরে সম্মানের সাথে পৌঁছে দেবে। এটাই ইসলামী নিয়ম।
ইসলামী সমাজে যাকাতব্যবস্থা জনগণের মাঝে এ মনোভাবই সৃষ্টি করে যে, ধন-সম্পদ হালাল উপায়ে হাসিল করতে হবে। আল্লাহকে এর আসল মালিক মনে করতে হবে, ধনীর মালে গরীবের হক রয়েছে। আল্লাহর দেওয়া মাল মানুষকে শোষণ করার জন্য ব্যবহার করা চলবে না; বরং আল্লাহকে খুশি করার জন্য অন্যদেরকে দান করতে হবে। টাকা-পয়সা ও ধনসম্পদ জীবনের আসল উদ্দেশ্য নয়; আসল উদ্দেশ্য দুনিয়ায় আল্লাহর সাচ্চা বান্দাহ হিসেবে জীবনযাপন করা, যাতে আখিরাতে সফল হওয়া যায়। এ আসল উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য টাকা-পয়সা কাজে লাগাতে হবে।
যাকাত সামাজিক নিরাপত্তা বিধান করে
সমাজে কোনো না কোনো কারণে কিছু লোকের অভাব থেকে যায়। আল্লাহ এ জাতীয় লোকদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য যাকাত ফরয করেছেন। সূরা তাওবার ৬০ নং আয়াতে তিনি তাদের তালিকা দিয়েছেন। অন্য কোনো কাজে যাকাতের টাকা খরচ করা যাবে না। কুরআনে যাকাতের ৮ টি খাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছেঃ
১. ফকীর- যারা এত গরীব, অন্যের কাছে হাত পাততে বাধ্য হয় তাদের জন্য।
২. মিসকীন- যারা অভাবী হলেও লজ্জায় কারো কাছে চায় না, তাদের সাহায্যের জন্য।
৩. সরকারের যাকাত বিভাগের কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার জন্য।
৪. নতুন মুসলমান- যাদের মন জয় করা দরকার। নওমুসলিমদেরকে উৎসাহ দেওয়ার জন্যও যাকাত দেওয়া যাবে।
৫. দাসদের মুক্তির জন্য বা জরিমানা আদায় না করতে পারায় যারা জেলে পড়ে আছে তাদের মুক্তির জন্য।
৬. ঋণগ্রস্থদেরকে ঋণের বোঝা থেকে উদ্ধার করার জন্য।
৭. আল্লাহ দীনকে বিজয়ী করার আন্দোলনে সাহায্য করার জন্য।
৮. মুসাফির অবস্থায় অভাবে পড়ে গেলে তার অভাব দূর করার জন্য। নিজের বাড়িতে কেউ ধনী হলেও মুসাফির অবস্থায় অসহায় হতে পারে।
সব ধরণের অভাবী লোকদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার মহান উদ্দেশ্যেই আল্লাহ তাআলা যাকাত ফরয করেছেন এবং এটাকে বড় ইবাদত হিসেবে গণ্য করেন। ইসলামে ভিক্ষা করা অত্যন্ত মন্দ। এ থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য যাকাত জরুরি। যারা গরীব অথচ হাত পাতে না, তাদেরকে খুঁজে বের করা সরকারের বিরাট দায়িত্ব। ধনীদের থেকে যাকাত উসুল করা ও হকদারদেরকে পৌঁছিয়ে দেওয়ার জন্য যারা কাজ করবে, তাদের বেতন যাকাত থেকেই দিতে হবে।
ইসলামী সরকারের প্রতি আল্লাহর নির্দেশ
ইসলামের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু করতে হলে প্রথমে ইসলামী সরকার কায়েম করতে হবে। ইসলামী সরকারকে আল্লাহ যেসব অর্থনৈতিক নির্দেশ (হুকুম) দিয়েছেন, তা দেশে চালু করা হলে জনগণ কেমন সুখ-শান্তি ভোগ করতে পারবে তা ঐ নির্দেশগুলো থেকেই বোঝা যায়। ইসলামী সরকারের জন্য আল্লাহর দেওয়া ৪ দফা কর্মসূচির প্রথম দফা হলো, জনগণের চরিত্র গঠনের উদ্দেশ্যে নামায কায়েমের ব্যবস্থা করা। এর পরই দ্বিতীয় দফা হলো যাকাত ব্যবস্থা চালু করে সকল আদমসন্তানের রিয্কের অভাব দূর করে আল্লাহর খিলাফতের প্রধান দায়িত্ব পালন করা। সৃষ্টিজগতে কোনো জীবকে আল্লাহ রিয্ক থেকে বঞ্চিত থাকতে দেন না। আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় ও শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ যদি রিয্কের অভাবে কষ্ট পায় তাহলে খিলাফতের আসল দায়িত্বই পালন করা হলো না।
এ দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করার জন্য ইসলামী সরকারকে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবেঃ
১. রাসূল সা. বলেছেন, ‘‘আদমসন্তানের এ কয়টি ছাড়া আর কোনো হক নেই- থাকার মতো ঘর, সতর ঢাকার-পরিমাণ কাপড় এবং শুকনা রুটি ও পানি।’’ বাঁচার জন্য মানুষের কমপক্ষে এ তিনটি জিনিসই জরুরি- বাসস্থান, কাপড় ও ভাত। এ তিনটি প্রতিটি মানুষের হক বলে ঐ হাদীসে বলা হয়েছে। এ হক কে পৌঁছাবে? আল্লাহর পক্ষ থেকে ইসলামী সরকারকেই তা পৌঁছাতে হবে। এ হাদীসের মর্ম হলো, এ তিনটি মানুষের হক। এর অতিরিক্ত যা মানুষ পায় তা আল্লাহর দয়া, যার হিসাব দিতে হবে। যা হক এর কোনো হিসাব দিতে হবে না। এ তিনটি হক যে পায়, আল্লাহর প্রতি অসন্তুষ্ট হওয়ার তার কোনো অধিকার নেই। কারণ, তার হক শুধু এটুকুই। আর সবই আল্লাহর নিয়ামত।
২. রাসূল সা. বলেছেন, ‘‘হালাল রুজি তালাশ করা অন্য সব ফরযের পর ফরয।’’ বৃদ্ধ ও শিশু ছাড়া সবার উপরই হালাল কামাই করা ফরয। ইসলামী সরকারকে যেমন ফরয নামায কায়েম করার জন্য ব্যবস্থা করতে হয়, তেমনি সবাইকে হালাল পথে আয়-রোজগার করার ফরযটি আদায় করার সুযোগ দেওয়ার দায়িত্বও পালন করতে হয়। সরকার দায়িত্ব পালন করলেই সবার রিয্ক সহজে যোগাড় হতে পারে।
সরকার যদি বাংলাদেশের সকল বেকার যুবকদেরকে অর্থকরী কাজ শেখার ব্যবস্থা করে, তাহলে অশিক্ষিত যুবকরাও দেশে-বিদেশে কাজ করে দেশকে সম্পদশালী করে দিতে পারে।
৩. সূরা বনী ইসরাঈলের ২৬ ও ২৭ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা হুকুম দিয়েছেন, ‘‘আত্মীয়-স্বজনকে তাদের হক দাও এবং গরীব ও মুসাফিরদেরকেও তাদের হক দিয়ে দাও। অপব্যয় করো না। নিশ্চয়ই অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই।’’
আল্লাহ সব জিনিস পরিমাণমতো পয়দা করেন। যদি কেউ অপব্যয় বা অপচয় করে তাহলে অন্য লোকের অভাব অবশ্যই হবে। অপব্যয় কয়েক রকমের হয়। যেমন-
ক. কোনো জিনিস নষ্ট করা।
খ. যতটুকু জিনিস দরকার এর চেয়ে বেশি ব্যবহার করা।
গ. হারাম কাজে খরচ করা।
৪. আল্লাহ যেসব কাজ হারাম করেছেন তা করতে যথেষ্ট খরচ করতে হয়। এসব কাজ থেকে ফিরে থাকতে কোনো খরচ হয় না। মদ খাওয়া, যিনা করা, নাচের আসর জমানো, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার আয়োজন করা ইত্যাদিতে বিপুল সম্পদের অপচয় হয়। এসব বন্ধ করা ইসলামী সরকারের কর্তব্য।
যাদের টাকা-পয়সা বেশি আছে তারাই এ জাতীয় অপব্যয় করে। যদি এসব বন্ধ করা হয়, তাহলে ঐ সম্পদ তারা এমন কাজে ব্যবহার করতে বাধ্য হবে, যা উৎপাদন বাড়ায়। টাকা-পয়সা তো খেয়ে ফেলার জিনিস নয়। তা কোনো না কোনো কাজে লাগাতেই হয়। হারাম কাজের সুযোগ বন্ধ করা হলে তা উৎপাদনের লাগাতে হবে। সুদে লগ্নি করার সুযোগও থাকবে না। সুতরাং তাদের টাকা মানুষের উপকারেই লাগবে।
৫. রাসূল সা. বলেছেন, ‘‘ঘুষ যে নেয় আর ঘুষ যে দেয়-দুজনই দোযখে যাবে।’’ তাই ইসলামী সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে ঘুষপ্রথা চালু হতে না পারে। অর্থনৈতিক জীবনে সবচেয়ে মারাত্মক রোগ হলো ঘুষ। ঘুণ যেমন ভেতর দিয়ে কাঠকে খেয়ে শেষ করে, ঘুষ তেমনি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দেয়। যেমন-
ক. যারা ঘুষ না পেলে কাজ করতে চায় না, তাদের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বিনা ঘুষে কাজ করে না। তাই তাদের যোগ্যতা কাজে লাগে না।
খ. ঘুষ দিতে রাজি না হলে তারা হকদারকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে।
গ. ঘুষ দিলে যার হক নেই তাকেও তারা অন্যায়ভাবে অন্যের অধিকার দিয়ে দেয়।
ঘ. ঘুষ সব আইন-কানুন ও বিধি-বিধানকে অচল করে দেয়। আইন যতই ভালো হোক, ঘুষ চালু থাকলে তা জনগণের উপকারে আসতে পারে না।
বাংলাদেশে ঘুষের কুফল
দুর্নীতিপরায়ণ দেশের তালিকায় ১৯৯৯ সাল থেকেই সারা দুনিয়ায় বাংলাদেশ এক নম্বর দেশ হিসেবে নিন্দিত। এর প্রধান কারণই হলো ঘুষ। সরকারি অফিস থেকে কোনো কাজ আদায় করতে হলে বিনা ঘুষে কিছুতেই তা সম্ভব নয়। বড় কর্মকর্তা থেকে পিয়ন পর্যন্ত ঘুষের নেশায় পাগল। শতকরা কতজন ঘুষ খায় না তা আল্লহই জানেন। রাজধানী ঢাকায় পর্যন্ত খুন, ডাকাতি, ছিনতাই, ধর্ষণ বন্ধ হচ্ছে না। এ সবের জন্য কঠোর শাস্তির আইন আছে; কিন্ত ঘুষের কারণে আইন অচল।
পুলিশকে টাকা দিলে খুনীর বিরুদ্ধে মামলা খারিজ হয়ে যায়। তাই খুনী খুন করার সময় আইনের পরওয়া করে না।
পুলিশ যদি ডাকাত থেকে ঘুষ নিয়ে ছেড়ে দেয়, তাহলে ডাকাতি কমে যাওয়ার বদলে বাড়বেই।
কোটি কোটি টাকার কারখানা কায়েম করতে সরকারি অনুমতি নিতে হয়। অফিসারকে এ কাজের জন্য বেতন দেওয়া হয়; কিন্ত লাখ টাকা ঘুষ না দিলে অনুমতি পাওয়া যায় না।
টেলিফোনের জন্য সরকারকে ফিসের টাকা দেওয়ার পরও কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে ঘুষ দিতে হয়। এরপরও লাইনম্যানকে ঘুষ না দিলে ঘরে টেলিফোন লাইন আসে না।
ওয়াসা’র পানির বিল ঘুষ দিলে কমিয়ে দেয় এবং সরকারকে ঠকিয়ে কর্মচারী ধনী হয়।
বিদ্যুৎ চোরদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে ইনস্পেকটর চুরি করতে দেয়। এর ফলে যারা নিয়মিত বিল আদায় করে তাদের বিলে চুরি হওয়া বিদ্যুতের বিল যোগ হয়। চুরির কারণে বিদ্যুতের দামও বেড়ে যায়।
এমনকি স্কুল-মাদরাসা বোর্ডেও শিক্ষকরা ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ আদায় করতে পারে না। স্কুলে শিক্ষক নিয়োগের বেলায় টাকা দিতে না পারলে যোগ্য শিক্ষকও চাকরি পায় না। টাকা দিয়ে নিম্নমানের শিক্ষকও চাকরি পেয়ে যায়।
ব্যাংক থেকে সুদের উপর টাকা ধার নিলেও কর্মচারীদেরকে ঘুষ না দিলে ধারের টাকা হাতে আসে না।
বাংলাদেশের সর্বত্র ঘুষের রাজত্ব। অল্প কিছু নমূনা উল্লেখ করলাম। ঘুষের দাপটে মেধা ও যোগ্যতার মূল্য নেই। একটু খেয়াল করলেই অনুভব করা যায় যে, ঘুষপ্রথা না থাকলে মানুষের জীবনে শান্তি কত বেড়ে যেতে পারে! তাই ইসলামী সরকারকে ঘুষপ্রথা খতম করতেই হবে।