12- بَابُ الْحَثِّ عَلَى الْاِزْدِيَادِ مِنْ الْخَيْرِ فِيْ أَوَاخِرِ الْعُمْرِ
পরিচ্ছেদ – ১২ : শেষ বয়সে অধিক পরিমাণে পুণ্য করার প্রতি উৎসাহ দান
আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন বলবেন,
﴿ أَوَ لَمۡ نُعَمِّرۡكُم مَّا يَتَذَكَّرُ فِيهِ مَن تَذَكَّرَ وَجَآءَكُمُ ٱلنَّذِيرُۖ ﴾ [فاطر: ٣٧]
অর্থাৎ “আমি কি তোমাদেরকে এতো দীর্ঘ জীবন দান করিনি যে, তখন কেউ উপদেশ গ্রহণ করতে চাইলে উপদেশ গ্রহণ করতে পারত? তোমাদের নিকট তো সতর্ককারীও এসেছিল।” (সূরা ফাত্বির ৩৭ আয়াত)
ইবনে আব্বাস ও সত্যানুসন্ধানী আলেমগণ বলেন, আয়াতের অর্থ এই যে, আমরা কি তোমাদেরকে ৬০ বছর বয়স দিইনি? পরবর্তী হাদীসটি এই অর্থের কথা সমর্থন করে। কেউ বলেন যে, এর অর্থ ১৮ বছর। আর কিছু লোক ৪০ বছর বলেন। এটি হাসান (বাসরী) কালবী ও মাসরুকের মত। বরং এ কথা ইবনে আব্বাস থেকেও বর্ণিত হয়েছে। তাঁরা বলেন যে, যখন কোনো মদীনাবাসী চল্লিশ বছর বয়সে পদার্পণ করেন, তখন তিনি নিজেকে ইবাদতের জন্য মুক্ত করেন। কিছু লোক এর অর্থ পরিণত বয়স করেছেন। আর আল্লাহর বাণীতে উক্ত ‘সতর্ককারী’ বলতে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও বেশীরভাগ আলেমের মতে স্বয়ং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। কিছু লোকের নিকট সতর্ককারী হল বার্ধক্য। এটা ইকরিমাহ্, ইবনে ‘উয়াইনাহ ও অন্যান্যদের মত।
এ মর্মে হাদীসসমূহ নিম্নরূপঃ-
1/114 عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عن النَّبيّ (صلى الله عليه و سلم)، قَالَ: «أَعْذَرَ الله إِلَى امْرِئٍ أَخَّرَ أجَلَهُ حَتَّى بَلَغَ سِتِّينَ سَنَةً». رواه البخاري
১/১১৪। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তির জন্য কোন ওজর পেশ করার অবকাশ রাখেন না (অর্থাৎ ওজর গ্রহণ করবেন না), যার মৃত্যুকে তিনি এত পিছিয়ে দিলেন যে, সে ৬০ বছর বয়সে পৌঁছল।’’[1]
আলেমগণ বলেন, ‘এই বয়সে পৌঁছে গেলে ওজর-আপত্তি পেশ করার আর কোনো সুযোগ থাকবে না।’
2/115عَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ الله عَنهُمَا، قَالَ : كَانَ عُمَرُ رضي الله عنه يُدْخِلُنِي مَعَ أَشْيَاخِ بَدرٍ فَكَأَنَّ بَعْضَهُمْ وَجَدَ في نفسِهِ، فَقَالَ : لِمَ يَدْخُلُ هَذَا معنا ولَنَا أبْنَاءٌ مِثلُهُ ؟! فَقَالَ عُمَرُ : إنَّهُ مَنْ حَيثُ عَلِمْتُمْ ! فَدعانِي ذاتَ يَومٍ فَأدْخَلَنِي مَعَهُمْ فَمَا رَأيتُ أَنَّهُ دَعَاني يَومَئذٍ إلاَّ لِيُرِيَهُمْ، قَالَ : مَا تَقُولُونَ في قَولِ الله : ﴿ إِذَا جَآءَ نَصۡرُ ٱللَّهِ وَٱلۡفَتۡحُ ١ ﴾ [النصر: ١] فَقَالَ بعضهم : أُمِرْنَا نَحْمَدُ اللهَ وَنَسْتَغْفِرُهُ إِذَا نَصَرنَا وَفَتحَ عَلَيْنَا، وَسَكتَ بَعْضُهُمْ فَلَمْ يَقُلْ شَيئاً . فَقَالَ لي : أَكَذلِكَ تقُولُ يَا ابنَ عباسٍ ؟ فقلت : لا. قَالَ : فَمَا تَقُولُ ؟ قُلْتُ : هُوَ أجَلُ رَسُولِ الله (صلى الله عليه و سلم) أعلَمَهُ لَهُ، قَالَ : ﴿ إِذَا جَآءَ نَصۡرُ ٱللَّهِ وَٱلۡفَتۡحُ ١ ﴾ [النصر: ١] وَذَلِكَ عَلاَمَةُ أجَلِكَ ﴿ فَسَبِّحۡ بِحَمۡدِ رَبِّكَ وَٱسۡتَغۡفِرۡهُۚ إِنَّهُۥ كَانَ تَوَّابَۢا ٣ ﴾ [النصر: ٣] فَقَالَ عُمَرُ رضي الله عنه: مَا أعلَمُ مِنْهَا إلاَّ مَا تَقُولُ . رواه البخاري
২/১১৫। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন যে, উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আমাকে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে (তাঁর সভায়) প্রবেশ করাতেন। তাঁদের মধ্যে কিছু লোক যেন মনে মনে ক্ষুণ্ণ হলেন। অতএব বললেন, ‘এ আমাদের সঙ্গে কেন প্রবেশ করছে? এর মত (সমবয়স্ক) ছেলে তো আমাদেরও আছে।’ (এ কথা শুনে) উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘এ কে, তা তোমরা জান।’ সুতরাং তিনি একদিন আমাকে ডাকলেন এবং আমাকে তাঁদের সঙ্গে (সভায়) প্রবেশ করালেন। আমার ধারণা ছিল যে, এদিন আমাকে ডাকার উদ্দেশ্য হল, তাদেরকে আমার মর্যাদা দেখানো। তিনি (পরীক্ষাস্বরূপ সভার লোককে) বললেন, ‘তোমরা আল্লাহর এই কথা ‘‘যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় উপস্থিত হবে।’’ (সূরা নাসর: ১ আয়াত) এর ব্যাখ্যার ব্যাপারে কী বলছ?’ কিছু লোক বললেন, ‘আমাদেরকে এতে আদেশ দেওয়া হয়েছে যে, যখন আল্লাহ আমাদেরকে সাহায্য ও বিজয় দান করবেন, তখন যেন আমরা তাঁর প্রশংসা করি ও তাঁর কাছে ক্ষমা চাই।’ আর কিছু লোক নিরুত্তর থাকলেন; তাঁরা কিছুই বললেন না। (ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,) অতঃপর তিনি আমাকে বললেন, ‘হে ইবনে আব্বাস! তুমিও কি এ কথাই বলছ?’ আমি বললাম, ‘না।’ তিনি বললেন, ‘তাহলে তুমি (এর ব্যাখ্যা) কী বলছ?’ আমি বললাম, ‘তা হল আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যু সংবাদ, যা আল্লাহ তাঁকে জানিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘‘যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় সমাগত হবে।’’ আর সেটা হল তোমার মৃত্যুর পূর্বলক্ষণ। ‘‘তখন তুমি তোমার প্রভুর প্রশংসায় তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা কর ও তাঁর কাছে সবীয় ত্রুটির জন্য ক্ষমা চাও। নিশ্চয়ই তিনি তওবা গ্রহণকারী।’’ (সূরা নাসর: ৩ আয়াত) অতঃপর উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, এর অর্থ আমি তাই জানি, যা তুমি বললে।[2]
[1] সহীহুল বুখারী ৬৪১৯, আহমাদ ৭৬৫৬, ৮০৬৩, ৯১২৮।
[2] সহীহুল বুখারী ৪৯৭০, ৩৬২৭, ৪২৯৪, ৪৪৩০, ৪৯৬৯, তিরমিযী ৩৩৬২, আহমাদ ৩১১৭, ৩৩৪৩