2/190 عَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ الله (صلى الله عليه و سلم) قَالَ: «مَا مِنْ نَبيٍّ بَعَثَهُ اللهُ في أمَّة قَبْلِي إلاَّ كَانَ لَهُ مِنْ أُمَّتِهِ حَوَارِيُّونَ وَأصْحَابٌ يَأخُذُونَ بِسنَّتِهِ وَيَقْتَدُونَ بِأَمْرِهِ، ثُمَّ إِنَّهَا تَخْلُفُ مِنْ بَعْدِهِمْ خُلُوفٌ يَقُولُونَ مَا لاَ يَفْعَلُونَ وَيَفْعَلُونَ مَا لاَ يُؤْمَرونَ، فَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِيَدِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِقَلبِهِ فَهُوَ مُؤمِنٌ، وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِلسَانِهِ فَهُوَ مُؤمِنٌ، وَلَيسَ وَرَاءَ ذلِكَ مِنَ الإيمَانِ حَبَّةُ خَرْدَل». رواه مسلم
২/১৯০। ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমার পূর্বে আল্লাহ যে কোনো নবীকে যে কোনো উম্মতের মাঝে পাঠিয়েছেন তাদের মধ্যে তাঁর (কিছু) সহযোগী ও সঙ্গী হত। তারা তাঁর সুন্নতের উপর আমল করত এবং তাঁর আদেশের অনুসরণ করত। অতঃপর তাদের পরে এমন অপদার্থ লোক সৃষ্টি হল যে, তারা যা বলত, তা করত না এবং তারা তা করত, যার আদেশ তাদেরকে দেওয়া হত না। সুতরাং যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে নিজ হাত দ্বারা সংগ্রাম করবে সে মু’মিন, যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে নিজ অন্তর দ্বারা জিহাদ করবে সে মু’মিন এবং যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে নিজ জিভ দ্বারা সংগ্রাম করবে সে মু’মিন। আর এর পর সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান নেই।’’[1]
3/191 عَنْ أَبِي الوَلِيدِ عُبَادَةَ بنِ الصَّامِتِ رضي الله عنه قَالَ: بَايَعْنَا رَسُولُ اللهِ (صلى الله عليه و سلم) عَلَى السَّمْعِ والطَّاعَةِ في العُسْرِ واليُسْرِ، والمَنْشَطِ وَالمَكْرَهِ، وَعَلَى أثَرَةٍ عَلَيْنَا، وَعَلَى أنْ لاَ نُنازِعَ الأمْرَ أهْلَهُ إلاَّ أنْ تَرَوْا كُفْراً بَوَاحاً عِنْدَكُمْ مِنَ اللهِ تَعَالَى فِيهِ بُرْهَانٌ، وَعَلَى أنْ نَقُولَ بِالحَقِّ أيْنَمَا كُنَّا لاَ نَخَافُ في اللهِ لَوْمَةَ لاَئِمٍ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৩/১৯১। আবূ অলীদ উবাদাহ ইবনে সামেত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এই মর্মে বাইয়াত করলাম যে, দুঃখে-সুখে, আরামে ও কষ্টে এবং আমাদের উপর (অন্যদেরকে) প্রাধান্য দেওয়ার অবস্থায় আমরা তাঁর পূর্ণ আনুগত্য করব। রাষ্ট্রনেতার বিরুদ্ধে তার নিকট থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার লড়াই করব না; যতক্ষণ না তোমরা (তার মধ্যে) প্রকাশ্য কুফরী দেখ, যে ব্যাপারে তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে দলীল রয়েছে। আর আমরা সর্বদা সত্য কথা বলব এবং আল্লাহর ব্যাপারে কোন নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করব না।’[2]
4/192 عَنِ النُّعمَانِ بنِ بَشِيرٍ رَضِيَ الله عَنهُمَا، عَنِ النَّبيّ (صلى الله عليه و سلم)، قَالَ: «مَثَلُ القَائِمِ في حُدُودِ اللهِ وَالوَاقعِ فِيهَا، كَمَثَلِ قَومٍ اسْتَهَمُوا عَلَى سَفِينَةٍ فَصَارَ بَعْضُهُمْ أعْلاها وَبَعْضُهُمْ أَسْفَلَهَا، وَكَانَ الَّذِينَ في أَسْفَلِهَا إِذَا اسْتَقَوا مِنَ المَاءِ مَرُّوا عَلَى مَنْ فَوْقهُمْ، فَقَالُوا: لَوْ أنَّا خَرَقْنَا في نَصِيبِنَا خَرْقاً وَلَمْ نُؤذِ مَنْ فَوقَنَا، فَإِنْ تَرَكُوهُمْ وَمَا أرَادُوا هَلَكُوا جَمِيعاً، وَإنْ أخَذُوا عَلَى أيدِيهِمْ نَجَوا وَنَجَوْا جَمِيعاً». رواه البخاري
৪/১৯২। নু‘মান ইবনে বাশীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহর নির্ধারিত সীমায় অবস্থানকারী (সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে বাধাদানকারী) এবং ঐ সীমা লংঘনকারী (উক্ত কাজে তোষামোদকারীর) উপমা হল এক সম্প্রদায়ের মত; যারা একটি দ্বিতলবিশিষ্ট পানি-জাহাজে লটারি করে কিছু লোক উপর তলায় এবং কিছু লোক নিচের তলায় স্থান নিল। (নিচের তলা সাধারণতঃ পানির ভিতরে ডুবে থাকে। তাই পানির প্রয়োজন হলে নিচের তলার লোকদেরকে উপর তলায় যেতে হয় এবং সেখান হতে সমুদ্র বা নদীর পানি তুলে আনতে হয়।) সুতরাং পানির প্রয়োজনে নিচের তলার লোকেরা উপর তলায় যেতে লাগল। (উপর তলার লোকদের উপর পানি পড়লে তারা তাদের উপর ভাগে আসা অপছন্দ করল। তারা বলেই দিল, ‘তোমরা নিচে থেকে আমাদেরকে কষ্ট দিতে এসো না।’) নিচের তলার লোকেরা বলল, ‘আমরা যদি আমাদের ভাগে (নিচের তলায় কোন স্থানে) ছিদ্র করে দিই, তাহলে (দিব্যি আমরা পানি ব্যবহার করতে পারব) আর উপর তলার লোকদেরকে কষ্টও দেব না। (এই পরিকল্পনার পর তারা যখন ছিদ্র করতে শুরু করল) তখন যদি উপর তলার লোকেরা তাদেরকে নিজ ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেয় (এবং সে কাজে বাধা না দেয়), তাহলে সকলেই (পানিতে ডুবে) ধ্বংস হয়ে যায়। (উপর তলার লোকেরা সে অন্যায় না করলেও রেহাই পেয়ে যাবে না।) পক্ষান্তরে উপর তলার লোকেরা যদি তাদের হাত ধরে (জাহাজে ছিদ্র করতে) বাধা দেয়, তাহলে তারা নিজেরাও বেঁচে যায় এবং সকলকেই বাঁচিয়ে নেয়।’’[3]
5/193 عَن أُمِّ المُؤمِنِينَ أُمِّ سَلَمَةَ هِندِ بِنتِ أَبي أُمَيَّةَ حُذَيفَةَ رَضِيَ الله عَنهَا، عَنِ النَّبيّ (صلى الله عليه و سلم)، أَنَّهُ قَالَ: «إنَّهُ يُسْتَعْمَلُ عَلَيْكُمْ أُمَرَاءُ فَتَعرِفُونَ وتُنْكِرُونَ، فَمَنْ كَرِهَ فَقَدْ بَرِئَ، وَمَنْ أنْكَرَ فَقَدْ سَلِمَ، وَلَكِنْ مَنْ رَضِيَ وَتَابَعَ» قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، أَلاَ نُقَاتِلهم؟ قَالَ: «لاَ، مَا أَقَامُوا فيكُمُ الصَّلاةَ». رواه مسلم
৫/১৯৩। উম্মুল মু’মেনীন উম্মে সালামাহ হিন্দ্ বিন্তে আবী উমাইয়া হুযাইফাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘অদূর ভবিষ্যতে তোমাদের উপর এমন শাসকবৃন্দ নিযুক্ত করা হবে, যাদের (কিছু কাজ) তোমরা ভালো দেখবে এবং (কিছু কাজ) গর্হিত। সুতরাং যে ব্যক্তি (তাদের গর্হিত কাজকে) ঘৃণা করবে, সে দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাবে এবং যে আপত্তি ও প্রতিবাদ জানাবে, সেও পরিত্রাণ পেয়ে যাবে। কিন্তু যে ব্যক্তি (তাতে) সম্মত হবে এবং তাদের অনুসরণ করবে (সে ধ্বংস হয়ে যাবে)।’’ সাহাবীগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব না?’ তিনি বললেন, ‘‘না; যে পর্যন্ত তারা তোমাদের মধ্যে নামায কায়েম করবে।’’[4]
6/194 عَن أُمِّ المُؤمِنِينَ أُمِّ الحَكَمِ زَينَبَ بِنتِ جَحشٍ رَضِيَ الله عَنهَا : أن النَّبيّ (صلى الله عليه و سلم) دَخَلَ عَلَيْهَا فَزِعاً، يَقُولُ: « لا إِلٰهَ إلاّ الله، وَيلٌ للْعَرَبِ مِنْ شَرٍّ قَدِ اقْتَرَبَ، فُتِحَ اليَوْمَ مِنْ رَدْمِ يَأجُوجَ وَمَأجُوجَ مِثلَ هذِهِ»، وحلّق بأُصبُعيهِ الإبهامِ وَالَّتِي تَلِيهَا، فَقُلتُ : يَا رَسُولَ الله، أنَهْلِكُ وَفِينَا الصَّالِحُونَ ؟ قَالَ: «نَعَمْ، إِذَا كَثُرَ الخَبَثُ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৬/১৯৪। উম্মুল মু’মিনীন উম্মুল হাকাম যয়নাব বিনতে জাহ্শ রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিত, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিকট শঙ্কিত অবস্থায় প্রবেশ করলেন। তিনি বলছিলেন, ‘‘আল্লাহ ব্যতীত কেউ সত্য উপাস্য নেই, আরবের জন্য ঐ পাপ হেতু সর্বনাশ রয়েছে যা সন্নিকটবর্তী। আজকে ইয়া’জূজ-মা’জূজের দেওয়াল এতটা খুলে দেওয়া হয়েছে।’’ এবং তিনি (তার পরিমাণ দেখানোর জন্য) নিজ বৃদ্ধ ও তর্জনী দুই আঙ্গুল দ্বারা (গোলাকার) বৃত্ত বানালেন। আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মাঝে সৎলোক মওজুদ থাকা সত্ত্বেও কি আমরা ধ্বংসপ্রাপ্ত হব?’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ, যখন নোংরামি বেশী হবে।’’[5]
7/195. عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدرِي رضي الله عنه، عَنِ النَّبيّ (صلى الله عليه و سلم)، قَالَ: «إيَّاكُمْ وَالجُلُوسَ في الطُّرُقَاتِ»! فقالوا : يَا رَسُول الله، مَا لَنَا مِنْ مجالِسِنا بُدٌّ، نتحدث فِيهَا . فَقَالَ رسولُ الله (صلى الله عليه و سلم): «فَإذَا أبَيْتُمْ إلاَّ المَجْلِسَ، فَأَعْطُوا الطَّريقَ حَقَّهُ».قالوا : وما حَقُّ الطَّريقِ يَا رسولَ الله ؟ قَالَ: «غَضُّ البَصَرِ، وَكَفُّ الأَذَى، وَرَدُّ السَّلامِ، وَالأمْرُ بِالمَعْرُوفِ، والنَّهيُ عن المُنْكَرِ» مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৭/১৯৫। আবূ সায়ীদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমরা রাস্তায় বসা হতে বিরত থাক।’’ সাহাবীগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! সে মজলিসে না বসলে তো আমাদের উপায় নেই; আমরা সেখানে কথাবার্তা বলি।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘যখন তোমরা (সেখানে) না বসে মানবেই না, তখন তোমরা রাস্তার হক আদায় কর।’’ তাঁরা বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! রাস্তার হক কি?’ তিনি বললেন, ‘‘দৃষ্টি সংযত রাখা, কাউকে কষ্ট না দেওয়া, সালামের জবাব দেওয়া, ভাল কাজের নির্দেশ ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা।’’[6]
[1] মুসলিম ৫০, আহমাদ ৪৩৬৬
[2] সহীহুল বুখারী ৭০৫৬, ১৮, ৩৮৯২, ৩৮৯৩, ৩৯৯৯, ৪৮৯৪, ৬৭৮৪, ৬৮০১৬৮৭৩৩, ৭১৯৯, ৭২১৩, ৭৪৬৮, মুসলিম ১৭০৯, তিরমিযী ১৪৩৯, নাসায়ী ৪১৪৯, ৪১৫১৪, ৪১৫২, ৪১৫৩, ৪১৫৪, ৪১৬১, ৪১৬২, ৪১৭৮, ৪২১০, ৫০০২, ইবনু মাজাহ ২৬০০, ২৮৬৬, আহমাদ ৪৩৮৮, ১৫২২৬, ২২১৬০, ২২১৯২, ২২২০৯, ২২২১৮, ২২২৪৮, ২২২৬৩.
[3] সহীহুল বুখারী ২৪৯৩, ২৬৮৬, তিরমিযী ২১৭৩, আহমাদ ১৭৮৯৭, ১৭৯০৪, ১৭৯১২, ১৭৯৪৪
[4] মুসলিম ১৮৫৪, তিরমিযী ২২৬৫, ৪৭৬০, আহমাদ ২৫৯৮৯, ২৬০৩৭, ২৬১৮৮
[5] সহীহুল বুখারী ৩৩৪৬, ৩৫৯৮, ৭০৫৯, ৭১৩৫, মুসলিম ২৮৮০, তিরমিযী ২১৮৭, ইবনু মাজাহ ৩৯৫৩, আহমাদ ২৬৮৬৭, ২৬৮৭০
[6] সহীহুল বুখারী ২৪৬৫, ৬২২৯, মুসলিম ১২১১, আবূ দাউদ ৪৮১৫, আহমাদ ১০৯১৬, ১১০৪৪, ১১১৯২