আমার পারিবারিক জীবনঃ
১৯৪৯ সনের জুন মাসে আমার বিবাহ হয়। আমি তখন ফাজিল ১ম বর্ষের ছাত্র। আমার শ্বশুর মরহুম হাজী আহেজদ্দীন মোল্লা ছিলেন মোড়েলগঞ্জ থানাধীন ফুলহাতা গ্রামের অধিবাসী। তার দ্বিতীয় কন্যা রাবেয়া খাতুনের সাথে আমি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। আমার শ্বশুর ছিলেন মল্লিকের বাড়ি সিনিয়র মাদ্রাসার সেক্রেটারী। আর আমার ওস্তাদ মাওলানা মূসা সাহেব ছিলেন এই মাদ্রাসার সুপার। আমার মাদ্রাসা জীবনের এই প্রথম ওস্তাদ আমাকে অস্বাভাবিক স্নেহ করতেন। তার সাথে আমার এই স্নেহ মমতার সম্পর্ক তার মৃত্যু পর্যন্ত বহাল ছিল। তারই আগ্রহে ও মধ্যস্ততায় আমার বিবাহ কাজ সম্পন্ন হয়।
আমি ও আমার স্ত্রী মোট ১১টি সন্তানের জনক ও জননী। এই ১১টি সন্তানের মধ্যে তিনটি কন্যা একেবারেই অপরিনত বয়সে মৃত্যু বরণ করে। বর্তমানে আমদের আট সন্তানের মধ্যে পাঁচ জন কন্যা ও তিনজন পুত্র। আমার সন্তানদের মধ্যে সবচেয়ে বড় হল নাসিমা খাতুন। ১৯৫৪ সনের মার্চ মাসে ফুলহাতা গ্রামে তার নানা বাড়িতে জন্ম গ্রহন করে। ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পরে তাকে যশোর জেলার নোয়াপাড়া নিবাসী মরহুম মাওলানা আব্দুল আজিজ সাহেবের ছোট ছেলে ডাক্তার আব্দুর রাজ্জাকের কাছে বিবাহ দেই। মরহুম মাওলান আব্দুল আজিজ দেওবন্দ মাদ্রাসা হতে সর্বোচ্চ ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ছিলেন একজন খ্যাতনামা আলেমে দ্বীন।
বিবাহের পরে নাসিমা খাতুন সৌদিআরবে চাকুরীরত তার স্বামীর সাথে সৌদিআরবে চলে যায়। সৌদিআরবে প্রায় বিশ বছর চাকুরী করার পর ডাঃ আব্দুর রাজ্জাক পরিবার পরিজনসহ দেশে প্রত্যাবর্তন করে। বর্তমানে তারা তাদের ধানমন্ডিস্থ ৩২ নং সড়কের বাড়িতে বসবাস করছে। আমার কন্যা নাসিমা খাতুন পাঁচটি পুত্র সন্তানের জননী। বড় ছেলেটি অসুস্থ বিধায় তেমন লেখা-পড়া শিখতে পারেনি। তবে বাকী চারজন খুবই মেধাবী ও প্রতিভাবান। মেঝ ছেলে জাবেদ ক্যানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয় হতে গ্রাজুয়েশন করে এখন এম, এস, করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তৃতীয় ছেলে আরাফাত নিউইয়ার্কের ইয়োলো ইউনিভার্সিটিতে, উনিভার্সিটির ফুল স্কলারশীপে গ্রাজুয়েশান করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সে খুবই মেধা সম্পন্ন ছেলে। চতুর্থ ছেলে হাছানুল বান্না গত বছর ‘এ’ লেবেল করে মালায়েশিয়ার কুয়ালালামপুর ইসলামি ইউনিভার্সিটিতে পড়া-শুনা করছে পঞ্চম ছেলে নাসিফ ‘ও’ লেবেল পরীক্ষা দিয়েছে। আল্লাহর রহমতে এরা সকলেই আদর্শ চরিত্রবান ও নামাজি। জামাতা ডাঃ আব্দুর রাজ্জাক একটি প্রাইভেট মেডিকেল কলেজে অধ্যাপনা করছেন।
আমার বড় ছেলে মাহবুবুর রহমান ১৯৫৮ সনে জানুয়ারীতে তার নানা বাড়ি ফুলহাতায় জন্ম গ্রহন করে। হিসাব বিভাগে মাস্টার্স করার পরে প্রথমতঃ খুলনা শহরে আমার ব্যবসা দেখাশুনা করত। আমার ব্যাবসা সংকোটিত করার পরে সে ঢাকাকে কেন্দ্র করে তার নিজস্ব ব্যবসা পরিচালনা করছে। তাকে বিবাহ দেয়া হয় বাগেরহাট জেলার প্রসিদ্ধ গ্রাম সাইয়েদ মহল্লার সাইয়েদ আতাউল হকের বড় মেয়ে সাইয়েদা আতীয়া খাতুনের সাথে। সাইয়েদা আতাউল হক বাংলাদেশ ব্যাংকে দীর্ঘদিন চাকুরী করে ডি.জি.এম. হিসেবে অবসর গ্রহন করেছেন। আমার বড় ছেলে এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের পিতা। এরা দুজনই স্কুলের ছাত্র। একজন এস এস সি পরীক্ষা দিচ্ছে আর একজন ‘ও’ লেবেল দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দুজনই মেধাবী।
আমার মেঝ মেয়ে হাছীনা খাতুন ১৯৬২ সনের সেপ্টেম্বর মাসে আমার খুলনার বাড়িতে জন্ম গ্রহন করে। তাকে বিবাহ দেয়া হয় বরিশাল শহরের অধিবাসী মরহুম হাছান খান সাহেবের বড় ছেলে ডাক্তার আব্দুল ওহাবের সাথে। মরহুম হাছান খান তখন বাংলাদেশ সরকারের রেভিনিউ মন্ত্রনালয়ের চাকুরী হতে অবসর গ্রহন করেছিলেন। যখন বিবাহ হয় তখন ডাক্তার আব্দুল ওহাব সৌদি সরকারের মিনিস্ট্রি অব হেলথে সরকারী ডাক্তার হিসাবে চাকুরী রত ছিল। বিবাহের বছরই হাছীনা খাতুন ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে জামাইয়ের সাথে সৌদি আরবে চলে যায়। আমার মেঝ মেয়ে এখন চার সন্তানেন জননী। বড় ছেলে মারুফ হাছান আমেরিকার কলগেট ইউনিভার্সিটি হতে গ্রাজুয়েশন করে ডাক্তারী পড়ার জন্য ডালাসের এক উনিভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছে। তার দ্বিতীয় সন্তান একমাত্র মেয়ে রাদিয়া খাতুন এবং দ্বিতীয় পুত্র মুবাশ্বের হাছান ইংলিশ মিডেয়াম স্কুল হতে কৃতিত্বের সাথে ‘এ’ লেবেল পাশ করেছ এবং ঢাকার নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটিতে পড়া-শুনা করতেছে। ছোট ছেলে মাহের ধানমন্ডি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়তেছে। এরা সকলেই আল্লাহর রহমতে প্রতিভাবান ও মেধাবী। সকলেই চরিত্রবান ও নামাজী। আমার জামাতা ডাক্তার আব্দুল ওহাব সৌদী আরবে ২৫ বছর চাকুরী করার পরে এবার অব্যাহতি নিয়ে দেশে ফিরে এসেছে। তারা ধানমন্ডির ১৪ নং রোডে তাদের নিজস্ব ফ্লাট বাড়িতে বসবাস করছে।
আমার মেঝ ছেলে মাসউদুর রহমান ১৯৬৪ সনের অক্টোবরে আমার খুলনার বাড়িতে জন্ম গ্রহন করে। সে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ হতে ইন্টামিডিয়েট পাশ করে বুয়েটে ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হয়। এখান থেকে সে ব্যাচেলার করে আমেরিকার সাউথ ডেকোটা স্টেটের এক বিশ্ববিদ্যালয় হতে এম এ করে আমেরিকার সর্ববৃহৎ টেলিভিশন কোং ইনটেলে চাকুরী গ্রহন করে। বর্তমানে সে ঐ কোম্পনীর রিজোনা স্টেটের কাখানায় ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কর্মরত আছে। তাকে বিবাহ করান হয় নোয়াখালি নিবাসী বর্তমানে ঢাকায় বসবাসরত জনাব এ, এইচ, এম, নূরুদ্দীন সাহেবের ছোট মেয়ে আসমা খাতুনের সাথে। জনাব নূরুদ্দীন সাহেব সি,এস,পি করার পরে প্রথমত জেদ্দা দূতাবাসে এবং পরবর্তিতে বাংলাদেশ আমলে কাবুল দুতাবাসের ফাষ্ট সেক্রেটারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করে পুনরায় সেক্রেটারিয়েটে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে জয়েন্ট সেক্রেটারী হিসেবে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি অবসর প্রাপ্ত। ধানন্ডিতে নিজের বাড়িতে বসবাস করছেন।
আমার মেজ ছেলে তিন সন্তানের পিতা। সবাই ছোট। প্রার্থমিক স্কুলে পড়া-শুনা করছে। মাসউদ অরিজোনা স্টেটে নিজস্ব বাড়িতে বসবাস করছে। সে এবং তার পরিবাররের সদস্যরা সকলেই এখন আমেরিকার নাগরিক।
আমার তৃতীয় কন্যা শামিমা নাসরিন যথাসম্ভব ১৯৬৬ সনের এপ্রিল মাসে আমার খুলান বাড়িতে জন্ম গ্রহন করে। অনার্সে পড়াকালীন অবস্থায় তাকে বিবাহ দেয়া হয় গোপালগঞ্জের, বর্তমান খুলনা শহরের বাসিন্দা জনাব ইসহাক (অবসরপ্রাপ্ত সহকারী পোসষ্ট মাষ্টা জেনারেল) সাহেবের বড় ছেলে ইঞ্জিনিয়ার আশফাকুজ্জামনের কাছে। আশফাক বর্তমানে দুবাই সরকারের বিদ্যুৎ মন্ত্রনালয়ের অধিনে চাকুরী করছে এবং পরিবার নিয়ে দুবাই জাবাল আলীর সরকারী কোয়ার্টারে বসবাস করছে। আমর তৃতীয় কন্যা নাসরিন বিবাহের পরে মাষ্টার্স করেছে। সে তিন সন্তানের জননী। এক মেয়ে ও দুই ছেলে, এরা সব দুবাইয়ের প্রাথমিক স্কুলে পড়া-শুনা করছে।
আমার তৃতীয় ছেলে মাসফুকুর রহমান ১৯৬৯ সনের সেপ্টেম্বরে আমার খুলনার বাড়িতে জন্ম গ্রহন করে। আমি তাকে মাদ্রাসায় শিক্ষা গ্রহন করার জন্য মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেই। দাখিল পরীক্ষা দেয়া পর্যন্ত সে মনোযোগ সহকারে পড়ে, দাখিল পরীক্ষায় ষ্টান্ড করেছিল। কিন্তু এরপর তার মাদ্রাসায় পড়ার আগ্রহ কমতে থাকে। সে বেশ মেধা সম্পন্ন এবং বিভিন্নমুখী প্রতিভার অধিকারী। ফাজেল পাশ করার পরে সে আমেরিকায় আমার মেঝ ছেলের ওখানে অস্টিনে চলে যায়। বর্তমানে সে অস্টিনে নিজস্ব ব্যবসা পরিচালনা করছে। সে এখানে নিজস্ব বাড়িও করেছে। তাকে বিবাহ দেই খুলা শহরের অধিবাসী জনাব জাফর সাহেবের কন্যার সাথে। মাসফুক বর্তমানে এক কন্যা সন্তানের পিতা। এরা সবাই আমেরিকার নাগরিক হিসেবে আমরিকায় বসবাস করছে।
আমার চতুর্থ কন্যা সাইদা তানিয়া নাজনীন ১৯৭২ সনের ১৯শে মার্চ আমার খুলনা শহরে বাড়িতে জন্ম গ্রহন করে। তাকে বিবাহ দেয়া হয় খুলনা শহরের অধিবাসী মরহুম ডাক্তার মুহাম্মদ আলীর কনিষ্ঠ ছেলে ক্যাপ্টেন মেহদী বিল্লার কাছে। বিবাহের সময় সে অনার্সের ছাত্রী ছিল। পরে সে মাস্টার্স করেছে। মেহেদী বিল্লাহ সামুদ্রিক জাহাজের ক্যাপ্টেন হিসেবে বেশ কয়েকবছর চাকুরী করে শিপ হতে বিদায় নিয়ে দুবাই পোর্টে এক শিপিং কোম্পনীর অধীনে চাকুরী করছে। আমার চতুর্থ কন্যা দুই মেয়ে সন্তানের জননী। এরা দুবাইর প্রার্থমিক স্কুলে পড়াশুনা করতেছে।
আমার ছোট মেয়ে সনিয়া শারমিন জন্ম গ্রহন করে ১৯৭৫ সনের এপ্রিল মাসে আমর খুলনার বাড়িতে। তাকে বিবাহ দেয়া হয় রাজশাহী নিবাসী জনাব আব্দুল মান্নন সাহেবের দ্বিতীয় ছেলে গোলাম সরওয়ারের কাছে। বিবাহের সময় সনিয়া অনার্সের শেষ বর্ষে পড়ত। জামাই গোলাম সরওয়ার কুয়ালালামপুর ইসলামী উইনিভার্সিটি হতে বি,বি,এ করে আমেরিকা থেকে এম, বি, এ করে ওখানেই চাকুরী করছে। আমেরিকার ওয়াসিংটন স্টেটের সিয়টল শহরে নিজস্ব খরিদ করা বাড়িতে বসবাস করছে। তার ছোট্ট পরিবারের সকলেই আমেরিকার নাগরিক। বর্তমানে আমার ছোট মেয়ে দু’টি কন্যা সন্তানের জননী।
বর্তমানে আমার ও আমার স্ত্রীর নাতি-নাতনীর সংখ্যা ২২ )বাইশ)।
আল্লাহতায়লা তাদের সকলকেই অভাবমুক্ত রেখেছেন। বেকার কেউ নেই, সকলেই কর্মরত। আমার নাতি-নাতনীদের মধ্যে যারা বড় হয়েছে তারা সকলেই আদর্শ চরিত্রের অধিকারী। সকলেই নামাজী। আমার ছেলে মেয়ে, পুত্রবধু ও জামাতারা সকলেই নামাজি ও তাকওয়ার জীবন যাপনে অভ্যস্থ। মেয়েরা ও পুত্রবধুরা পর্দ্দা মেনে চলে আমার ছেলে মেয়ে ও নাতি-নাতনীরা (যারা বড়) ইসলামী জ্ঞান লাভ করার জন্য যেমন আগ্রহ সহকারে ইসলামী বই পত্র পড়া শুনা করে, তেমনি ইসলামী জ্ঞান চর্চার অনুষ্ঠানেও নিয়মিত যোগদান করে। আমার ছেলে-মেয়েদের অদিকাংশই ধানমন্ডি এলাকায় আমার বাড়ির কাছে বসবাস করায় তাদের সকলকে নিয়ে আমার বাড়িতে নিয়মিত পারিবাকি বৈঠক হয়। এ বৈঠকে কোরআন হাদীসের দরস ও পরিবাকিরক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করা হয়।
আমার সন্তান ও নাতি নাতনীদের আদর্শ জীবন গঠনে আমার চেয়ে আমার স্ত্রীর ভূমিকা মূখ্য। কেননা আমি তাদেরকে আমার স্ত্রীর মত সময় দিতে পিরিনাই। আর তাদের জন্য অত চিন্তা ভাবনাও করতে পরি নাই। যত করেছে আমার স্ত্রী। পরম করুনাময় আল্লাহ আমার ও আমার পরিবারের উপরে যে দয়া ও মেহেরবানী কেছেন তার জন্য মহান রব্বুল আলামিনের অজস্র শুকরিয়া আদায় করছি। আর নিয়ত তাঁর কাছে কামনা, তিনি যেন আমার পরিবার ও আওলদের উপরে তার এই করুনাধারা দুনিয়া ও আখেরাতে অব্যাহত রাখেন। আমিন, ছুম্মা আমিন।