39- بَابُ حَقِّ الْجَارِ وَالْوَصِيَّةِ بِهِ
পরিচ্ছেদ – ৩৯ : প্রতিবেশীর অধিকার এবং তার সাথে সদ্ব্যবহার করার গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَلَا تُشۡرِكُواْ بِهِۦ شَيۡٔٗاۖ وَبِٱلۡوَٰلِدَيۡنِ إِحۡسَٰنٗا وَبِذِي ٱلۡقُرۡبَىٰ وَٱلۡيَتَٰمَىٰ وَٱلۡمَسَٰكِينِ وَٱلۡجَارِ ذِي ٱلۡقُرۡبَىٰ وَٱلۡجَارِ ٱلۡجُنُبِ وَٱلصَّاحِبِ بِٱلۡجَنۢبِ وَٱبۡنِ ٱلسَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُكُمۡۗ﴾ [النساء: ٣٦]
অর্থাৎ তোমরা আল্লাহর উপাসনা কর ও কোন কিছুকে তাঁর অংশী করো না এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, আত্মীয় ও অনাত্মীয় প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, পথচারী এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার কর। (সূরা নিসা ৩৬ আয়াত)
1/308. وَعَنِ ابنِ عُمَرَ وَعَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالاَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ (صلى الله عليه و سلم): «مَا زَالَ جِبْريلُ يُوصِينِي بِالجَارِ حَتَّى ظَنَنْتُ أنَّهُ سَيُوَرِّثُهُ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১/৩০৮। ইবনে উমার ও আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘‘আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘জিব্রাইল আমাকে সব সময় প্রতিবেশী সম্পর্কে অসিয়ত করে থাকেন। এমনকি আমার মনে হল যে, তিনি প্রতিবেশীকে ওয়ারেস বানিয়ে দেবেন।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [1]
2/309. وَعَن أَبي ذَرٍّ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ (صلى الله عليه و سلم): «يَا أَبَا ذَرٍّ، إِذَا طَبَخْتَ مَرَقَةً، فَأكثِرْ مَاءهَا، وَتَعَاهَدْ جِيرَانَكَ». رواه مسلم
وفي روايةٍ لَهُ عن أَبي ذر، قَالَ : إنّ خَلِيلِي (صلى الله عليه و سلم) أوْصَاني: «إِذَا طَبَخْتَ مَرَقَاً فَأكْثِرْ مَاءها، ثُمَّ انْظُرْ أهْلَ بَيْتٍ مِنْ جِيرَانِكَ، فَأصِبْهُمْ مِنْهَا بِمعرُوفٍ».
২/৩০৯। আবূ যার্র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘হে আবূ যার্র! যখন তুমি ঝোল (ওয়ালা তরকারি) রান্না করবে, তখন তাতে পানির পরিমাণ বেশী কর এবং তোমার প্রতিবেশীদের খেয়াল রাখ।’’ (মুসলিম) [2]
অন্য এক বর্ণনায় আবূ যার্র বলেন, আমাকে আমার বন্ধু (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অসিয়ত করে বলেছেন যে, ‘‘যখন তুমি ঝোল (ওয়ালা তরকারী) রান্না করবে, তখন তাতে পানির পরিমাণ বেশী কর। অতঃপর তোমার প্রতিবেশীর বাড়িতে রীতিমত পৌঁছে দাও।’’
3/310. وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه : أَنَّ النَّبيَّ (صلى الله عليه و سلم)، قَالَ: «وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ، وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ، وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ!» قِيلَ : مَنْ يَا رَسُولَ اللهِ ؟ قَالَ: «الَّذِي لاَ يَأمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ!». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وفي رواية لمسلم: «لا يَدْخُلُ الجَنَّةَ مَنْ لاَ يَأمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ».
৩/৩১০। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়। আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়। আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়।’’ জিজ্ঞেস করা হল, ‘কোন্ ব্যক্তি? হে আল্লাহর রাসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘যে লোকের প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদে থাকে না।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [3]
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদে থাকে না।
4/311. وَعَنهُ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ (صلى الله عليه و سلم): «يَا نِسَاءَ المُسْلِمَاتِ، لاَ تَحْقِرَنَّ جَارةٌ لِجَارَتِهَا وَلَوْ فِرْسِنَ شَاةٍ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৪/৩১১। উক্ত সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে মুসলিম মহিলাগণ! কোন প্রতিবেশিনী যেন তার অপর প্রতিবেশিনীর উপঢৌকনকে তুচ্ছ মনে না করে; যদিও তা ছাগলের পায়ের ক্ষুর হোক না কেন। (বুখারী, মুসলিম) [4]
5/312. وَعَنهُ : أَنَّ رَسُولَ اللهِ (صلى الله عليه و سلم)، قَالَ: «لاَ يَمْنَعْ جَارٌ جَارَهُ أنْ يَغْرِزَ خَشَبَةً في جِدَارِهِ»، ثُمَّ يقُولُ أَبُو هُرَيرَةَ : مَا لِي أرَاكُمْ عَنْهَا مُعْرِضِينَ ! وَاللهِ لأَرْمِيَنَّ بِهَا بَيْنَ أكْتَافِكُمْ . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৫/৩১২। উক্ত সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন প্রতিবেশী যেন তার প্রতিবেশীকে তার দেওয়ালে কাঠ (বাঁশ ইত্যাদি) গাড়তে নিষেধ না করে। অতঃপর আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, কী ব্যাপার আমি তোমাদেরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ থেকে মুখ ফিরাতে দেখছি! আল্লাহর কসম! নিশ্চয় আমি এ (সুন্নাহ)কে তোমাদের ঘাড়ে নিক্ষেপ করব (অর্থাৎ এ কথা বলতে থাকব)। (বুখারী ও মুসলিম) [5]
6/313. وَعَنهُ : أَنَّ رَسُولَ اللهِ (صلى الله عليه و سلم)، قَالَ: «مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بالله وَاليَومِ الآخرِ، فَلاَ يُؤْذِ جَارَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَومِ الآخِرِ، فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَومِ الآخِرِ، فَلْيَقُلْ خَيْراً أَوْ لِيَسْكُتْ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৬/৩১৩। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহেমানের খাতির করে। এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে, নচেৎ চুপ থাকে।’’ (বুখারী-মুসলিম) [6]
7/314. وَعَن أَبي شُرَيْحٍ الخُزَاعيِّ رضي الله عنه : أَنَّ النَّبيَّ (صلى الله عليه و سلم)، قَالَ: «مَنْ كَانَ يُؤمِنُ بِاللهِ وَاليَومِ الآخِرِ، فَلْيُحْسِنْ إِلَى جَارِهِ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ باللهِ وَاليَومِ الآخِرِ، فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَومِ الآخِرِ، فَلْيَقُلْ خَيْراً أَوْ لِيَسْكُتْ». رواه مسلم بهذا اللفظ، وروى البخاري بعضه.
৭/৩১৪। আবূ শুরায়হ খুযা‘য়ী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহেমানের খাতির করে। এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে, অথবা নীরব থাকে।’’ (মুসলিম, কিছু শব্দ বুখারীর) [7]
8/315. وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَت : قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ، إنَّ لِي جارَيْنِ، فَإِلَى أيِّهِمَا أُهْدِي؟ قَالَ: «إِلَى أقْرَبِهِمَا مِنكِ بَاباً». رواه البخاري
৮/৩১৫। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার দু’জন প্রতিবেশী আছে। (যদি দু’জনকেই দেওয়া সম্ভব না হয় তাহলে) আমি তাদের মধ্যে কার নিকট হাদিয়া (উপঢৌকন) পাঠাব?’ তিনি বললেন, ‘‘যার দরজা তোমার বেশী নিকটবর্তী, তার কাছে (পাঠাও)।’’ (বুখারী) [8]
9/316. وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ (صلى الله عليه و سلم): «خَيْرُ الأَصْحَابِ عِنْدَ اللهِ تَعَالَى خَيْرُهُمْ لِصَاحِبِهِ، وَخَيرُ الجِيرَانِ عِنْدَ الله تَعَالَى خَيْرُهُمْ لِجَارِهِ». رواه الترمذي، وَقالَ : «حديث حسن»
৯/৩১৬। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম সঙ্গী সে, যে তার সঙ্গীর কাছে উত্তম। আল্লাহর নিকট সেই প্রতিবেশী সর্বোত্তম, যে তার প্রতিবেশীর দৃষ্টিতে সর্বাধিক উত্তম।’’ (তিরমিযী-হাসান) [9]
[1] সহীহুল বুখারী ৬০১৪, মুসলিম ২৬২৪, তিরমিযী ১৯৪২, আবূ দাউদ ৫১৫১, ইবনু মাজাহ ৩৬৭৩, আহমাদ ২৩৭৩৯, ২৪০৭৯, ২৪৪২১, ২৫০১২
[2] মুসলিম ২৬২৫, ইবনু মাজাহ ৩৩৬২, আহমাদ ২০৮১৭, ২০৮৭৩, ২০৯১৮, ২০৯১০, দারেমী ২০৭৯
[3] সহীহুল বুখারী ৬০১৬, আহমাদ ১৫৯৩৫, ২৬৬২০
[4] সহীহুল বুখারী ২৫৬৬, ৬০৪৭, মুসলিম ১০৩০, তিরমিযী ২১৩০, আহমাদ ৭৫৩৭, ৮০০৫, ৯২৯৭, ১০০২৯, ১০১৯৭
[5] সহীহুল বুখারী ২৪৬৩, ৫৬২৭, ৫৬২৮, মুসলিম ১৬০৯, তিরমিযী ১৩৫৩, আবূ দাউদ ৩৬৩৪, ইবনু মাজাহ ২৩৩৫, আহমাদ ৭১১৩, ৭১১৪, ৭২৩৬, ৭৬৪৫, ৮১৩৫, ৮৯০০, মুওয়াত্তা মালিক ১৪৬২
[6] সহীহুল বুখারী ৬০১৮, ৩৩৩১, ৫১৮৪, ৫১৮৬, ৬১৩৬, ৬১৩৮, ৬৪৭৫, মুসলিম ৪৭, ১৪৬৮, তিরমিযী ১১৮৮ আহমাদ ৭৫৭১, ৯২৪০, ৯৩১২, ৯৫০৩, ১০০৭১, ১০৪৭৫, দারেমী ২২২২
[7] সহীহুল বুখারী ৬০১৯, ৬১৩৫, ৬৪৭৬, মুসলিম ৪৮, তিরমিযী ১৯৬৭, ১৯৬৮, আবূ দাউদ ৩৭৪৮, ইবনু মাজাহ ৩৬৭২, আহমাদ ১৪৯৩৫,. ২৬৬১৮, ২৬৬২০, মুওয়াত্তা মালিক ১৭২৮, ২০৩৬
[8] সহীহুল বুখারী ৬০২০, ২২৫৯, ২৫৯৫, আবূ দাউদ ৫১৫৫, আহমাদ ২৪৮৯৫, ২৫০০৯, ২৫০৮৭, ২৫৪৯৫
[9] তিরমিযী ১৯৪৪, আহমাদ ৬৫৩০, দারেমী ২৪৩৭