আবু বকর উমরকে চাইলেন উসামার কাছে
মুসলিম বাহিনী যাত্রা করেছে মু’তা অভিযানে।
বাহিনীর সেনাপতি উসামা বিন যায়েদ।
উসামা ঘোড়ায় সওয়ার।
বাহিনীকে বিদায় দেয়ার জন্য খলিফা আবু বকর উসামার ঘোড়ার পাশাপাশি হেঁটে চলেছেন।
অস্বস্তিবোধ করছেন উসামা। মহামান্য খলিফাতুর রাসূল (সাঃ) হাঁটবেন আর উসামা তাঁরই সামনে ঘোড়ায় বসে থাকবে।
উসামা খলিফা আবু বকর (রা)-কে বললেন, হে খলিফাতুর রাসূল, আপনি সাওয়ারিতে উঠুন, নয়তো আমি ঘোড়া থেকে নেমে পড়ব।
সংগে সংগে আবু বকর (রা) বললেন, ‘আল্লাহর কসম, তুমি নিচে নেমনা।’ এই কথা আবু বকর (রা) তিন বার উচ্চারণ করলেন।
অথচ এই উসামা আযাদ করা দাস যায়েদের সন্তান।
উসামার এই বাহিনীতে উমর ছিলেন এক সাধারণ সৈনিক।
উসামার বাহিনীর সাথে উমারও যাচ্ছেন মু’তা অভিযানে।
শেষ মুহূর্তে খলিফা আবু বকরের মনে পড়ল, উমরের মদীনা থেকে অনুপস্থিত থাকা উচিত নয়। তাঁকে খলিফার দরকার হবে। কিন্তু তিনি তো উমর (রা)-কে মদনিায় থাকার নির্দেশ দিতে পারেন না। সেনাপতি উসামা তাঁর একজন সৈনিকিকে নিয়ে যাবেন না রেখে যাবেন, সে সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ উসামার।
খলিফা আবু বকর উসামাকে নির্দেশ নয় অনুরোধ করলেন, ‘যদি আপনি ভাল মনে করেন, তবে অনুগ্রহপূর্বক উমরকে আমার সাহায্যের জন্যে রেখে যান।’
ইসলামের এই সাম্য ও গণতন্ত্রের কোন তুলনা নেই পৃথিবীতে।
উমর (রা) মনিব ও চাকরকে একসাথে খাওয়ালেন
মক্কা শরীফের একটি ঘটনা।
উমর (রা) তখন মক্কায়।
তিনি পথ দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তাঁর চোখ গেল পাশেরই এক বাড়ীতে। বাড়ীর মালিকরা বসে খাচ্ছে আর চাকর-বাকররা পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ক্রুদ্ধ হলেন উমর (রা)। তিনি থমকে দাঁড়ালেন এবং গিয়ে উঠলেন সেই বাড়ীতে। বললেন, “ব্যাপার কি! নিজেদের চাকর-বাকরদের সাথে এই বৈষম্যমূলক ব্যবহার করছ কেন?” বাড়ীর মালিকরা লজ্জিত ও অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল।
চাকর-বাকরদের সাথে এই ব্যবহার জাহেলিয়াতের যুগে চলে আসা বহু বছরের অভ্যাস। এই অভ্যেস এখনও নির্মূল হয়নি!
উমর (রা) চাকর-বাকরদেরকে ডেকে মনিবদের সাথে খানায় বসিয়ে দিলেন। তারপর আবার ফিরে চললেন আপন গন্তব্যে।
উমর (রা) লোকদের সামনে সা’দকে দোররা কষলেন
মদীনা শরীফ।
ইসলামী সাম্রাজ্যের রাজধানী। খলিফা উমর (রা) লোকদের মধ্যে বায়তুল মালের কিছু অর্থ বণ্টন করছেন।
স্বাভাবিকভাবেই বিরাট ভিড় জমে গেছে।
এ সময় সেখানে এলেন সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস। তিনি প্রভাবশালী ও অভিজাত মায়ের সন্তান।
ভিড় দেখার পর অন্যান্যদের মত তাঁর ধৈর্য ধরার দরকার ছিল, কিন্তু তা তিনি করলেন না।
তিনি ভিড় ঠেলে, দু’হাত দিয়ে লোকদের সামনে থেকে সরিয়ে উমরের কাছে গিয়ে হাজির হলেন।
উমর (রা) ব্যাপারটা আগেই লক্ষ্য করেছিলেন।
সুতরাং সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস তাঁর সামনে হাজির হতেই উমর (রা) তাঁর হাতের দোররা কষলেন তাঁর পিঠে। উপস্থিত সবাই দেখল খলিফা একটা দোররা মেরেছেন সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাসকে।
দোররা মারার পর হযরত উমর (রা) সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাসকে লক্ষ্য করে বললেন, “সবার এবং সবকিছুর উপরে যে আল্লাহর আইন, তা তোমার মনে নেই। আল্লাহর আইনের মুকাবিলায় তোমার কানাকড়িও যে মূল্য নেই, এটা তোমাকে বুঝিয়ে দেয়া প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিল।”
ইবনে আবজা যে কারণে গভর্নর হলেন
উমর (রা)-এর খিলাফত-কাল। মক্কায় গভর্নর নিযুক্ত করেছেন তিনি নাফে ইবনুল হারিসকে।
কোন এক প্রয়োজনে খলিফা উমর (রা) এসেছিলেন আরবেরই ‘উসফান’ নামক স্থানে। খলিফা সেখানে মক্কার গভর্নর নাফেকেও ডেকে পাঠিয়েছিলেন।
নাফের সাথে যখন উসফানে উমর (রা)-এর সাক্ষাৎ হলো, তখন তিনি নাফেকে (রা) জিজ্ঞাসা করলেন, ‘মক্কায় তুমি কাকে তোমার স্থলাভিষিক্ত করে এসেছ?’ নাফে বললেন, ‘আজাদকৃত গোলাম ইবনে আবজাকে আমার স্থলাভিষিক্ত করে এসেছি।’
উমর (রা) ইবনে আবজাকে পুরোপুরি জানতেন না। বললেন, “সেকি! একজন আজাদকৃত গোলামকে মক্কাবাসীদের উপর নিজের স্থলাভিষিক্ত করে দিয়ে এলে”?
নাফে বলল, “তিনি কুরআনে অভিজ্ঞ, শরীয়তে সুপণ্ডিত এবং সুবিচারক।”
উমর (রা) স্বগতোক্তির মত বললেন, “হবেই তো! রাসূল (সা) বলে গেছেন, আল্লাহ তায়ালা এই কিতাব দ্বারা অনেককে ওপরে তুলবেন, অনেককে নীচে নামাবেন।”
খলিফা আল-মানসুর যখন লা-জবাব
মুসলিম সাম্রাজ্যের রাজাধানী তখন বাগদাদে।
খলিফা আল-মানসুরের শাসনকাল। খলিফার পরিচিতি নিয়ে চললেও এই শাসন তখন বহু ক্ষেত্রেই খেয়াল খুশীর উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যেমন জনগণের বাইতুল মাল তারা ব্যক্তিগত সম্পত্তির মত ব্যবহার করতেন।
কিন্তু অবিরাম প্রতিবাদ হয়েছে এই স্বেচ্ছাচারিতার।
এক দিনের একটি ঘটনা।
সুফিয়ান সওরী গেলেন খলিফা আল-মানসুরের দরবারে। তিনি বললেন তাঁকে, “আমীরুল মুমিনীন, আপনি আল্লাহ ও মুসলমানদের ধন-সম্পদ তাদের ইচ্ছা ও সম্মতি ছাড়াই ব্যয় করছেন। বলুন এর কি জবাব আছে আপনার কাছে?” বলে একটু থেমেই খলিফার দৃষ্টি আকর্ষণ করে আবার বলতে শুরু করলেন, “উমর (রা) একবার সরকারী খরচে হজ্ব করেছিলেন। তাতে তাঁর ও তাঁর সংগী-সাথীদের উপর সর্বমোট ১৬ দিনার ব্যয়িত হয়েছিল। তথাপি হযরত উমর (রা) বলেছিলেন, ‘আমরা বাইতুল মালের উপর বিরাট বোঝা চাপিয়েছি।’ আপনি নিশ্চয় জানেন, মনসুর ইবনে আম্মার আমাদেরকে কি হাদীস শুনিয়েছিলেন। কারণ সেই মজলিসে আপনিও হাজির ছিলেন এবং সর্বপ্রথম হাদীসটা আপনিই লিপিব্ধ করেছিলেন। সে হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সম্পদে নিজের খেয়াল-খুশীমত হস্তক্ষেপ করবে তার জন্যে দোজখের আগুন অবধারিত।”
সুফিয়ান সওরীর এ স্পষ্ট বক্তব্যে খলিফার চাটুকাররা ক্ষেপে গেল। কয়েকজন ঝুনা চাটুকার বলে উঠলেন, ‘কি, আমীরুল মুমিনীনের সাথে এ ধরনের আলাপ?’ সুফিয়ান সওরী তাকে ধমক দিয়ে বললেন, ‘চুপ হতভাগা, হামান ও ফেরাউন এভাবেই চাটুকারিতা করে পরস্পরকে ধ্বংস করেছিল’- বলে যে উন্নত শির নিয়ে সুফিয়ান সওরী আল-মনসুরের দরবরে ঢুকেছিলেন, সেভাবে শির উন্নত রেখেই তিনি দরবার থেকে বেরিয়ে এলেন।
প্রবল প্রতাপশালী খলিফ আল-মানসুর সুফিয়ান সওরীর কথার জবাবে একটি কথাও বলতে পারেননি।
আবু ইউসুফের বিচার
আব্বাসীয় খলিফা হাদী’র শাসনকাল।
বাগদাদে প্রধান বিচারপতি আবু ইউসুফের আদালত।
এক ব্যক্তি একটি মামলা নিয়ে এলেন আদালতে। মামলা স্বয়ং খলিফা হাদী’র বিরুদ্ধে।
একটা বাগান নিয়ে খলিফার সাথে তাঁর ঝগড়া। লোকটির দাবী বাগানটি খলিফা হাদীর নয়, তাঁর।
সব শুনে বিচারপতি আবু ইউসুফ নিশ্চিত হলেন বাগানটি লোকটিরই প্রাপ্য। কিন্তু সমস্যা হলো খলিফার পক্ষে দু’জন সাক্ষ্য দিচ্ছে। এই অবস্থায় বিচারপতি আবু ইউসুফ সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য খলিফাকে আদালতে হাজির হবার নির্দেশ দিলেন।
খলিফা আদালতে হাজির হলে বিচারপতি আবু ইউসুফ তাঁকে বললেন, ‘খলিফার সাক্ষীরা যে সত্যবাদী এ ব্যাপারে খলিফাকে শপথ করতে হবে।’
খলিফা এই শপথ করার চাইতে বাগানটি বাদীকে ছেড়ে দেয়াকেই সহজ মনে করলেন এবং বাগানটি বাদীকে দিয়ে দিলেন।
আবু ইউসুফের আরেকটি বিচারের ঘটনা।
আব্বাসীয় খলিফা হারুনুর রশীদ তখন ক্ষমতায়। একটি মামলায় খলিফা আবু ইউসুফের আদালতে হাজির হলেন। খলিফার দাবীর পক্ষে সাক্ষী ছিল ফজল ইবনুল রাবী।
বিচারপতি আবু ইউসুফ ফজল ইবনুর রাবীর সাক্ষ্য বাতিল করে দিলেন।
খলিফা হারুনুর রশীদ ক্ষুব্দ হয়ে বললেন, “ফজলের সাক্ষ্য নাকচ করে দেবার কারণ কি?”
বিচারপতি আবু ইউসুফ বললেন, “আমি ফজলকে বলতে শুনেছি যে, সে আপনার গোলাম।” যদি তার কথা সত্য হয়, তাহলে আপনার গোলামের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়, আর যদি সে আপনার গোলাম না হয় তাহলে সে মিথ্যুক।
মিথ্যুকের সাক্ষ্য গ্রহণ করা যেতে পারে না।”
জালেম শাসকের সামনে নির্ভীক আলেম
জাহির নামের এক সুলতান তখন দামেশকের সিংহাসনে।
বৃষ্টি না হওয়ায় পশুর মড়ক ইত্যাদি কারণে সিরিয়ায় তখন দুর্ভিক্ষাবস্থা। মানুষের দুর্গতির সীমা নেই।
এই সময় যুদ্ধ-প্রস্তুতির কথা বলে শাসক জাহির জনগণের উপর ট্যাক্স বসালেন। দামেশকেই বাস করতেন শেখ মহিউদ্দিন নববী নামের এক বিখ্যাত আলেম। তিনি সুলতান জাহিরের কাছে এক চিঠি দুর্গত জনগণের উপর ট্যাক্স না বসাবার জন্যে অনুরোধ করলেন।
শেখ মহিউদ্দিনের এই চিঠি পেয়ে সুলতান ক্ষুব্ধ হলেন এবং তার ট্যাক্স বসাবার পক্ষে আলেমদের ফতোয়া জোগাড় করতে লাগলেন।
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার মাধ্যমে এ ধরনের বহুসংখ্যক ফতোয়া জোগাড় হবার পর জাহির ডাকলেন শেখ মহিউদ্দিনকে তাঁকে ফতোয়ায় অন্য আলেমদের দস্তখত দেখিয়ে ট্যাক্স বৃদ্ধির পক্ষে তাঁকেও দস্তখত দিতে বললেন।
সুলতান জাহির-এর এই কৌশল ও তাঁর উপর চাপ প্রয়োগ দেখে শেখ মহিউদ্দিন নববী খুবই অসন্তুষ্ট হলেন। তিনি সুলতানকে বললেন, ‘আমি জানি, আপনি একজন কয়েদী ক্রীতদাস ছিলেন। ছিলেন একজন দেউলিয়া। আল্লাহ আপনার উপর অনুগ্রহ করেন এবং আপনাকে বাদশাহর মর্যাদায় উন্নীত করেন। আমি জানি, আপনার কাছে জরিদার কাপড় পরিহিত এক হাজার ক্রীতদাস এবং আপাদম্স্তক স্বর্ণালংকারে মণ্ডিত একশো ক্রীতদাসী রয়েছে। এখন আপনি যদি ক্রীতদাসদের এই জরিদার কাপড়গুলো এবং দাসীদের অলংকারসমূহ বিক্রি করে দেন, তাহলে আমি ফতোয়া দেব যে, প্রজাদের নিকট থেকে আপনার ট্যাক্স আদায় বৈধ।”
সুলতান জাহির ক্রোধে ফেটে পড়লেন শেখ মহিউদ্দিনের এই কথায়। তৎক্ষণাত তাঁকে বহিষ্কার করলেন দামেশক থেকে।
দেশের সমস্ত আলেম ও ফকিহগণ আহত হলেন এই ঘটনায়। তাঁরা সকলে সুলতান জাহিরকে বললেন, “ইনি আমাদের সকলের শ্রদ্ধেয় ও সবার সেরা আলেম। তাঁকে দামেশকে ফিরিয়ে আনুন।”
বাদশাহ জাহির অনুমতি দিলেন শেখ মহিউদ্দিনকে দামেশকে আসার জন্যে। কিন্তু শেখ মহিউদ্দিন সুলতানের এই অনুগ্রহ গ্রহণ করতে অস্বীকার করে বললেন, ‘যতদিন জাহির সেখানে থাকবেন, আমি যাব না।’ এই ঘটনার এক মাসের মধ্যে জাহির ইন্তিকাল করলেন।
‘এ দরবারে শুধু একজন আলেমই আছেন’
সুলতান আবদুল আজিজ মিসর সফরে আসছেন। সাড়া পড়ে গেছে গোটা মিসরে। মিসরের শাসক ইসমাঈল সম্বর্ধনার আয়োজনে মহাব্যস্ত। সুলতান খুশী হলে শুধু তার আসন পাকাপোক্ত হওয়াই নয়, বহু আকাঙ্ক্ষিত খেতাবও এবার মিলে যেতে পারে।
সুলতানের জন্যে আড়ম্বরপূর্ণ সম্বর্ধনার ব্যবস্থা করলেন।
নির্দিষ্ট দিনে সুলতান আবদুল আজিজ মিসরে আসলেন। তাঁর সম্মানে বিশেষ দরবার বসানো হলো।
সুলতানকে সম্মান প্রদর্শনের জন্যে আলেমদেরও একত্রিত করা হয়েছে।
আলেমদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাঁরা অবনত মস্তকে দরবারে সুলতানের সামনে হাজির হবেন এবং মাথা ঝুঁকিয়ে কুর্নিশ করার পর পিছু হটে দরবার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, সুলতানকে পেছন দেখিয়ে অসম্মান করা যাবে না কিচুতেই। সুলতান খুশী হলে আলেমরা প্রচুর ইনাম পাবেন।
একে একে আলেমরা দরবারে প্রবেশ করতে লাগলেন অবনত মস্তকে এবং কুর্নিশ করে পিছু হটে বেরিয়ে এলেন।
আলেমদের মধ্যে ছিলেন শেখ হাসানুল আদাদী।
সর্বশেষে এল তাঁর দরবারে প্রবেশের পালা।
তিনি উন্নত শিরে দরবারে প্রবেশ করলেন। সুলতানকে কুর্নিশ না করে তিনি সালাম দিলেন। তারপর ঘুরে দাঁড়িয়ে যেভাবে দরবারে প্রবেশ করেছিলেন, সেইভাবে উন্নত শিরে দরবার থেকে বেরিয়ে এলেন।
সুলতানের কাছে বসা ইসমাঈলের মন হায় হায় করে উঠল। সুলতান নিশ্চয় অপমানিত বোধ করেছেন এবং ভীষণ ক্ষুব্ধ হবেন নিশ্চয়।
দরবার শুব্ধ সকলের মুখ শুকিয়ে গেল। মহামান্য সুলতান কি করেন সেই শংকা দেখা দিল সকলের মনে।
দরবার থেকে বের হলে সকলেই শেখ হাসানুলকে ছেঁকে ধরলো।
বলল তাঁকে, আপনি একি করলেন সবকিছু জানার পরেও।
শেখ বললেন, একজন সুলতান হিসেবে যে সম্মান পাওয়া উচিত তাঁকে তা দিয়েছি।
দরবার শেষ করার আগে সুলতান আবদুল আজিজ আলেমদের মধ্যে শুধু শেখ হাসানুল আদাদীকেই পুরস্কৃত করলেন এবং বললেন, ‘এই দরবারে শুধু এই একজন আলেমই রয়েছেন।’
উমর (রা) জমির মালিক হওয়ার পর
মদীনায় হিজরতের পর উমর (রা) দরিদ্রের জীবন যাপন করতেন।
খাইবার যুদ্ধের পর তাঁর ভাগে পড়লো উৎকৃষ্ট এক খণ্ড জমি, যা উমরের জন্যে নিয়ে এলো সচ্ছল জীবনের এক সম্ভাবনা।
জমির মালিকানা পাওয়ার পর উমর (রা) মহানবী (সা)-এর কাছে হাজির হলেন। বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ, খাইবারে আমি খানিকটা জমি পেয়েছি। এত মূল্যবান সম্পত্তি আমি কোনদিন পাইনি। এ সম্পর্কে আপনার নির্দেশ কি?’
আল্লাহর রাসূল (সা) উমরের মনোভব বুঝলেন। তঁকে বললেন, “যদি তোমার মন চায়, তাহলে আসল জমি নিজের অধিকারে রেখে জমির ফসল দান করে দাও।”
তাই করলেন উমর (রা)। গরীর-দুঃখী ও অভাবী আত্মীয়-স্বজনদের সাহায্য, গোলামদের আজাদ করা ও জনকল্যাণমূলক কাজের জন্যে তিনি তার প্রাপ্ত গোটা সম্পত্তি ওয়াকফ করে দিলেন।
দারিদ্র সচ্ছলতার প্রতি কোনো লোভ উমরের (রা) মধ্যে সৃষ্টিপ করতে পারেনি।
হুসাইন ঝর্ণা বিক্রি করলেন
মহানবীর (সা) প্রিয় নাতি হুসাইন (রা)।
তিনি ইসলামের চতুর্থ খলিফা আলী (রা)-এর পুত্র।
দরিদ্রের জীবন তাঁর।
বিরাট ঋণের বোঝা তাঁর মাথায়।
কিন্তু ‘আবী নাইজার’ নামক অতি মূল্যবান ঝর্ণার মালিক তিনি।
অনেকেই হুসাইনকে (রা) পরামর্শ দেন যে, ‘আবী নাইজার‘ ঝর্ণা বিক্রি করে ঋণ শেষার্ধ করেও বেশ অর্থের মালিক হতে পারেন তিনি।
কিন্তু আবী নাইজার ঝর্ণার পানি গরীব মুসলমানরা ব্যবহার করে। এ ঋর্ণার পানি থেকে সেচ করে তারা ফসল ফলায়। হুসাইন (রা) এ ঋর্ণা বিক্রি করলে গরীব মুসলমানরা এ ঋর্ণার পানি থেকে বঞ্চিত হবে। হুসাইন লাভবান হলেও মহাক্ষতিগ্রস্ত হবে বিরাট সংখ্যক গরীব মুসলমান।
এই চিন্তা করে হযরত হুসাইন (রা) আবী নাইজার ঋর্ণা বিক্রি করতে রাজী হননি। গরীর মুসলমানদের ক্ষতিগ্রস্ত করার পরিবর্তে নিজের দারিদ্র ও ঋণের বোঝা বহনকেই বেহ্তর মনে করেন তিনি।
—— সমাপ্ত —–