শিক্ষা ব্যবস্থার ইসলামী রূপরেখা
অধ্যাপক গোলাম আযম
শিক্ষাব্যবস্থার ইসলামী রূপরেখা
আমাদের দেশে ইসলামী রাষ্ট্র কথাটি যেরূপ কুয়াশাচ্ছন্ন, ‘ইসলামী শিক্ষা’ কথাটিও তেমনি অস্পষ্টতার অন্ধকারে নিমজ্জিত। এদেশে প্রচলিত প্রাচীন পদ্ধতির মাদরাসা শিক্ষাই যদি ইসলামী শিক্ষা হয় তাহলে প্রতিভাবান ছাত্রদের এ শিক্ষার দিকে আকৃষ্ট হওয়ার কোন কারণ নেই এবং সমাজে উন্নতি ও মর্যাদা লাভের উদ্দেশ্যে কোন অভিভাবকই তাদের সন্তানদের এ শিক্ষা দিতে রাজি হবে না। আর ইংরেজী প্রবর্তিত আধুনিক শিক্ষাই যদি আদর্শ শিক্ষা বলে প্রচারিত হয় তাহলে এ শিক্ষার ফল দেখে কোন ইসলামপন্থী লোকই সন্তুষ্টচিত্তে এ ধরনের শিক্ষাকে সমর্থন করতে পারে না। যারা ইসলামী মূল্যমান ও মূল্যবোধকে শ্রদ্ধা করে এবং ভবিষ্যৎ বংশধরদের দুনিয়া ও আখিরাতের কামিয়াব দেখতে চায়, তারা প্রচলিত দুটি শিক্ষাব্যবস্থার কোনটিকেই আদর্শ শিক্ষা বলে স্বীকার করতে পারে না। তাই বর্তমান যুগি দুনয়াতে শান্তি ও মর্যাদর সাথে জীবন যাপন করে আখিরাতের আদালতে মুসলিম হিসেবে আল্লাহর সম্মুখে হাজির হওয়ার যোগ্যতা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে যেসব অভিভাবক ছেলে-মেয়েদের জন্য উপযুক্ত শিক্ষা দ্বারা পার্তিব কোন যোগ্যতা সৃষ্টি হয় না। আর আধুনিক শিক্ষায় ইসলামী চরিত্র সৃষ্টিই অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই আধুনিক দুনিয়ার উপযোগী ইসলামী শিক্ষা কোন্ ধরনের হবে তা আমাদের গভীরভাবে চিন্তা করা দরকার। সরকারী পর্যায়ে এ ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা চালু না হলেও যাতে আগ্রহশীল লোকদের প্রচেষ্টায় একটি আদর্শ ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা ক্রমন্বয়ে গড়ে তোলা যায়, সেদিকে ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধাশীল লোকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার উদ্দেশ্যেই এই আলোচনার অবতারণা করছি।
যেহেতু বর্তমান শিক্ষাসংকট থেকে মুক্তিলাভের আকঙ্ক্ষায়ই ইসলামী শিক্ষার রূপ সম্পর্কে আলোচনা করছি, সেহেতু বর্তমান পটভূমিকে রেখেই আমাদেরকে অগ্রসর হতে হবে। তাই প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতেই আলোচনা করতে হবে।
এ ব্যাপারে প্রত্যেক চিন্তাশী ব্যক্তি বিশেষ করে আমাদের শিক্ষাবিদগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করার উদ্দেশ্যে কয়েকটি মৌলিক বিষয়ের অবতারণা করা অত্যন্ত জরুরি মনে করি।
প্রথমত, শিক্ষা বলতে কি বুঝায়, তা পরিষ্কার হওয়া দরকার।
দ্বিতীয়ত, মানুষের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা রচনাকালে মানুষের সঠিক পরিচয় সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। মানুষকে দেহসর্বস্ব জীব মনে করলে শিক্ষাব্যবস্বথায় আত্মার বিকাশ লাভের কোন বন্দোবস্তই থাকবে না। আবার মানুষের বস্তুগত প্রয়োজনের দিকটি উপেক্ষা করে একমাত্র আত্মিক উন্নতির উদ্দেশ্যে যে শিক্ষা পদ্ধতি কায়েম হবে তা মানুষের পক্ষে কল্যাণকর হওয়া কিছুতেই সম্ভব নয়।
তৃতীয়ত, যে ধরনের লোক তৈরি করা শিক্ষার উদ্দেশ্য হিসেবে নির্ধারিত হবে, সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থাকে তদনুযায়ী পুনর্গঠন করা প্রয়োজন। শিক্ষার উদ্দেশ্যের সাথে জাতীয় জীবনাদর্শের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। যে আদর্শকে জাতির লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারত করা হবে, শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে সে আদর্শের উপযোগী চরিত্রই গঠন করতে হবে।ভ
চতর্থিত, প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার মূল ত্রুটি কোথায়, তা সঠিকরূপে অবগত না হলে শিক্ষা পুনর্গঠনের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে। কেননা রোগের প্রকৃত কারণ না জানলে নির্ভুল চিকিৎসা কিছুতেই সম্ভব নয়।
এই চারিটি বিষয়ের মীমাংসা শিক্ষা পুনর্গঠনের ব্যাপারে অত্যন্তগুরুত্বপূর্ণ এসব বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করে শিক্ষার বাহ্যিক কাঠামো, আধুনিক উন্নত শিক্ষাপদ্ধতির প্রচলন, শিক্ষার স্তরবিভিাগ, শিক্ষার মানোন্নয়ন ইত্যাদির শ্রুতিমধুর ও মুখরোচক আলোচনা নিতান্তই অর্থহীন। রোগ নির্ণয় ও নির্ভুলি চিকিৎসার বন্দোবস্ত না করে রোগীকে যত সুন্দরভাবেই রাখা হোক এবং তই সেবা-শুশ্রুষা করা হোক, রোগীর অবস্থার উন্নতি এসব বাহ্যিক ব্যবস্থা দ্বারা মোটেই সম্ভব নয়। সুচিকিৎসার সাথে এসব বাহ্যিক ব্যবস্থা যুক্ত হলে উদ্দেশ্য সফল হবার পূর্ণ সম্ভাবনা আছে।
শিক্ষা কাকে বলে?
শিক্ষার সংজ্ঞা সম্বন্ধে শিক্ষাবিজ্ঞানীদের দার্শনিক জটিলতা থেকে মুক্ত হয়ে জনসাধারণের (Layman’s) বোধগম্য ও সরল আলোচনাই প্রয়োজন। আমাদের চারপাশের যেডসব জীব-জানোয়ারের সাথে আমাদের ঘনিষ্ঠ পরিচয় তাদের মধ্যে শিক্ষার কোন কৃত্রিম প্রচেষ্টা আমরা দেখতে পাই না। স্রষ্টা তাদের স্বভাবের মধ্যেই প্রয়োজনীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এরা বিচার-বিবেচনা করে, পরামর্শ ও গবেষণা চালিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে শিক্ষার কোন ব্যবস্থা করে না। এদের সহজাত বৃত্তির (Instinct) তাগিদেই প্রাকৃতিক নিয়মে তারা প্রয়োজনীয় জ্ঞান লাভ করে থাকে। কোন উস্তাদের কাছে সবক নিয়ে তারা শিক্ষা লাব করে না। বয়স্ক জীবেরা ছোটদের শিক্ষার জন্য কোন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করে বলেও আমরা জানি না। জীবশিশুদের পিতামাতাকে তাদের সন্তান-সন্ততির উপযুক্ত শিক্ষার জন্য পেরেশান হতেও দেখা যায় না।
কিন্তু তাই বলে কি তাদের শিক্ষার কোন প্রয়োজন নেই? প্রত্যেক জীবেরই জীবন ধারণের উপযোগী খাদ্য ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হয়। নিতান্ত বেঁচে থাকার প্রয়োজনেই তাদেরকে কাজ করতেও আমরা দেখতে পাই। জীবশিশু তার পূর্ণ বিকাশ লাবেল উপযোগী গুণাবলিও অর্জন করে থাকে। এসব মেনে নেওয়া সত্ত্বেও আমরা স্বীকার করতে বাধ্য যে, মানুষের ন্যায় ‘বুদ্ধি’ প্রয়োগ দ্বারা ইচ্ছাকৃতভাবে চেষ্টা করে তাদেরকে শিক্ষা লাভ করতে হয় না।
মানবশিশুর বিকাশ, এমনকি অস্তিত্ব পর্যন্ত তার পিতামাতা এবং অন্যান্য শিক্ষকের উপর যেরূপ নির্ভরশীল, অন্যান্য জীবের মধ্যে সেরূপ নির্ভরশীতার প্রয়োজন হয় না। মানবশিশু আগুনকে খেলার জিনিস মনে করে তাতে হাত দেয়, নিজের পায়খানাকে হালুয়ার মতো মুখে দেয়। কিন্তু কোন বিরাড়শিশুকে এরূপ করতে দেখা যায় না। যে কুকুর মানুষের মলকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে, তার শিশুকেও কোনদিন নিজের পায়খানা মুখে দিতে দেখা যায় না। মানুষের শৈশবকাল এতো দীর্ঘ যে, পনেরো-বিশ বছর পর্যন্ত তাকে পিতাতামা, শিক্ষক ও অভিভাবকের তত্ত্বাবধানে উপযোগী গুনাবলি অর্জন করতে হয়। অথচ মানুষের চেয়ে দীর্ঘজীবী প্রাণীদের বেলায়ও এরূপ নির্ভরশীলতার প্রয়োজন হয় না। সুতরাং দেখা যায় যে, মানবশিশুকে ইচ্ছাকৃতভাবে কৃত্রিম প্রচেষ্টা দ্বারা যা শিক্ষা দিতে হয়, অন্যান্য জীবশিশু তা সহজাত বৃত্তি দ্বারা আপনা-আপনিই লাভ করে থাকে।
কিন্তু মানুসের যাবতীয় জ্ঞানের জন্যই শিক্ষার প্রয়োজন। এদিক দিয়ে বিবেচনা করলে মানুষের শিক্ষার সংজ্ঞা নিম্নরূপ:
“প্রয়োজনীয় গুণাবলি ও জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত ব্যবস্থার নামই শিক্ষা।”
এ ধরনের শিক্ষা একমাত্র মানুষেরই প্রয়োজন। অন্যান্য জীব-জানোয়ার এ ঝামেলা থেকে মুক্ত। কোন্টা খাওয়া ঠিক ও কোন্টা খাওয়া ঠিক নয়, তা জানার জন্য ছাগশিশুর নাসিকাযন্ত্রের সহজাত ক্ষমতাই যথেষ্ট। কিন্তু মানবশিশুকে তা বড়দের নিকট থেকে শিখতে হয়।
শৈশবকালে মানুষও সহজাত বৃত্তি দ্বারা পরিচালিত হয় বটে; কিন্তু যতই তার বুদ্ধি ও ববেচনাশক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে, ততিই উক্ত সহজাত বৃত্তি বুদ্ধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। মানব চরিত্র গঠনের প্রাথমিক স্তরে বালক-বালিকারা ইচ্ছাকৃতভাবে জ্ঞানার্জন করার চেষ্টা না করলেও বড়দের ইচ্ছাকৃত চেষ্টার ফলেই তখন তারা শিক্ষা লাভ করে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে তারা নিজেরাই চেষ্টা করে জ্ঞানার্জন করতে অভ্যস্ত হতে থাকে।
মানুষের পরিচয়
মানুষ সম্বন্ধে সঠিক ধারণা ব্যতীত যদি শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করা হয় তাহলে শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য কিছুতেই সফল হতে পারে না। তাই মানুষের প্রকৃত পরিচয় সম্পর্কে যুক্তিপূর্ণ আলোচনার প্রয়োজন।
মানুষ সৃষ্টিজগতের বহু রহস্য উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে এবং প্রত্যেক যুগেই বস্তুজগতের বিভিন্ন শক্তিকে নিজের উপকারে ব্যবহার করেছে। কিন্তু ওহীর জ্ঞান ব্যতীত এবং নবীদের শিক্ষা ব্যতীত কোন কালেই মানুষ তার নিজের প্রকৃত পরিচয় লাভ করতে সক্ষম হয়নি।
আধুনিক বিজ্ঞান মানুষকে এতো বিপুল শক্তির অধিকারী করেছে যে, মানুষ আজ পাখির চেয়েও দ্রুত উড়তে সক্ষম এবং দ্রুততম প্রাণীর চেয়েও অধিকতর বেগে চলার উপযোগী যানবাহনের অধিকারী। এমনকি গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে বিচরণের ক্ষমতায়ও ভূষিত হয়েছে। কিন্তু ‘প্রকৃত মানুষ’ হিসেবে দুনিয়ায় জীবন যাপন করার উপযোগী শিক্ষা থেকে আধুনিক মানুষ বঞ্চিত রয়ে গেলো।
এর মুল কারণ এই যে, মানুষ নিজেকে ভালোভাবে চিনতে সক্ষম হয়নি। শুধু বিবেবুদ্ধি প্রয়োগ করে মানুষ নিজেকে চিনতে অক্ষম বলেই মানুষের মহান স্রষ্টা রাসূলের মারফতে যুগে যুগে মানুষকে আত্মজ্ঞান দান করেছেন। তাই মানুষের প্রকৃত পরিচয় পেতে হলে আমদেরকে কুরআন মাজীদের নিক ‘ধরনা’ দিতে হবে।
কুরআনে মানুষের পরিচয়
কুরআন অন্যান্য জীবের সাথে মানুষের যে ব্যবধা নির্দেশ করে তা এই যে, ‘মানুষ নৈতিক জীব’ আর অন্যান্য জীব নৈতিকতার বন্ধন থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। ভালো ও মন্দ, সৎ ও অসৎ, সত্য ও মিথ্যার বিচার করার ক্ষমতা মানুষ ছাড়া আর কোন জীবের মধ্যে আমরা দেখতে পাই না। মিথ্যার বেসাতিই যার সম্বল, সে মানুষটিও ‘মিথ্যা বলা অন্যায়’ বলে স্বীকার করে। মিথ্যা বলাকে ভালো কাজ মনে করলে সে ‘মিথ্যুক’ উপাধিতে ভূষিত হওয়া পছন্দ করতো। ‘চুরি করা খারাপ’ এ কথা স্বীকার করে বলেই চোর প্রকাশ্যে না গিযে গোপনে চুরি করতে যায়। ভালোমন্দের এই বিচারজ্ঞানই মানুষকে অন্যান্য জীব থেকে পৃথক করেছে। যারা এঈ নৈতিক দিককে উন্নতি করার চেষ্টা করে না, কুরআন তাদের সম্বন্ধে মন্তব্য করে যে,
(আরবী**************)
“তারা পশুর ন্যায়; বরং পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট।” নৈতিকতার উন্নতি ব্যতীত মানুষ তার যাবতীয় শক্তি যখন ব্যবহার করে তখন সে পশুর চেয়েও অনিষ্টকর ও ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়। চিন্তাশক্তিও বুদ্দি মানুষের বিরাট অস্ত্র। এ অস্ত্রের সাহায্যে শারীরিক আকারে ক্ষুদ্র হয়েও সে বিরাট বপুবিশিষ্ট হাতীর উপর কর্তৃত্ব করে। কিন্তু নৈতিকতার বিকাশ না হলে এই বুদ্ধিশক্তিকেই সে মানব জাতির অকল্যাণে প্রয়োগ করে। কিন্তু নৈতিকতার অবনতির ফলে যখন কেউ মিথ্যা বলে তখন সে কুকুরের চেয়েও অধম হয়ে পড়ে। কেননা কুকুর মিথ্যা বলতে পারে না। তাই বস্তুগত শক্তির সঠিক ব্যবহার নৈতিকতার উপরই নির্ভরশীল। একটি ছুরি নৈতিকতা সম্পন্ন ব্যক্তির হাতে ব্যবহৃত হলে তা মানুষের উপকারই করবে। কিন্তু নৈতিকতার অভাব হলে এ ছুরিই তাকে ডাকাতে পরিণত করবে। নৈতিকতার বিকাশ ব্যতী আধুনিক বিশ্ব এতো প্রচণ্ড বস্তুরশক্তির অধিকারী হয়েছে, বলেই আজ মানব জাতি এতো বড় সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। আণবিক শক্তি ও মহাশূন্যের ব্যবহার আজ মানব জাতির অস্তিত্বকে শঙ্কুল করে তুলেছে। কেননা এসব শক্তি নৈতিকতায় ভূষিত মানবের হাতে ব্যবহৃত হচ্ছে না, নৈতিকতাহীন দানবের হিংস্র থাবা দ্বারাই এদের ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে।
কুরআন হাত. পা, চোখ-কানবিশিষ্ট শরীরটিকে প্রকৃত মানুষ মনে করে না। কুরআনের মতে, এ দেহ সৃষ্টির বহু পূর্বে মানুষ সৃষ্টি হয়েছে। কুরআনের পরিভাষায় সেই মানুষটিই হলো ‘রূহ’ বা আত্মা। এ আত্মাই নৈতিকতার আধার। রূহকে উন্নত করার ব্যবস্থা না করলে এ শরীর পশুর ন্যায় ব্যবহার করবে। শরীরের যত সব বস্তুগত দাবি আছে তা পূরণের জন্য মানবদেহ সকল সময়ই ব্যস্ত। পেট খালি হলেই সে খাদ্যের জন্য ব্যস্ত হয়। মানুষ সেই খাদ্য চুরি করে আনলো, না পরিশ্রম করে অর্জন করলো সে বিষয়ে পেটের কোন মাথাব্যাথা নেই। তার খাদ্যের প্রয়োজন। অন্যায়ভাবে খাদ্য এনে দিলেও সে নিশ্চিন্তে খেতে থাকে। কিন্তু তখন রূহ বলতে থাকে যে, কাজটা অন্যায় হলো। গৃহপালিত পশু রজ্জু ছিঁড়ে নিজেরই দয়ালু মনিবের সাজানো বাগান খেতে একটুও দ্বিধাবোধ করে না। নৈতিকতার বন্ধন ছিঁড়তে পারলে মানবদেহও তেমনি একটি পশুতে পরিণত হয়। মহানবী (স) তাই নৈতিকিতাসম্পন্ন মানুষকে এমন এক ঘোড়ার সাথে তুলনা করেছেন, যা রজ্জু দ্বারা এক খুঁটির সাথে আবদ্ধ। এ ঘোড়াটি যেমন স্বাধীনভাবে বিচরণ করতে পারে না তেমনি মানুষ স্বাধীনতাও নৈতিকতার রজ্জু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তাই কেবল রজ্জুর সীমা পর্যন্তই সে স্বাধীনভবে চলাফেরা করতে সক্ষম।
দেহ ও আত্মার দ্বন্দ্ব
উপরিউক্ত আলোচনা ছাড়াও প্রত্যেক ব্যক্তিই তার বাস্তব অভিজ্ঞতা হতে এ কথা স্বীকার করতে বাধ্য যে, মানুষের আত্মার সাথে তার দেহের এক চিরন্তন দ্বন্দ্ব লেগে আছে। মানুষ অনেক নৈতিকতা বিরোধী কার্যকলাপ হতে বেঁচে থাকতে চেষ্টা করে কিন্তু অনেক সময় দেহের তাগিদের নিকট পরাজয় বরণ করে। এ দ্বন্দ্বে দেহের জ্বালায় অস্থির হয়েই একশ্রেণীর মানুষ নৈতিকতার চাপে বৈরাগী হওয়ার প্রেরণা লাভ করে। তারা ‘দরবেশ’ ও ‘সন্যাসী’ হলেও মানুষের মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হয়। তারা নির্জীব পাথর ও নিশ্চল গাছের ন্যায় জীবন-যাপন করে মনুষ্যত্বের উচ্চস্থান থেকে পতিত হয়। আবার অন্যদিকে অধিকাংশ লোক দেহের নিকট পরাজিত হয়ে আত্মাকে পঙ্গু করে পশুর ন্যায় জীবনযাপন করে। কুরআনে মানুষকে এ দ্বন্দ্বে সঠিক পথে পরিচালনার জন্য যে বিধান দিয়েছে, তা দেহের সকল দাবিকে নৈতিকতার সীমার ভেতরে পূরণ করতে সাহায্য করে। দেহের দাবিকে অস্বীকার করার বিরুদ্ধে কুরআন বলে, “বৈরাগ্য সাধনের নীতি মানুষ নিজেই আবিষ্কার করেছে, আমরা তাকে এ নির্দেশ দান করিনি।” (সূরা হাদীদ: ২৭)
আত্মা ও দেহের দ্বন্দ্বে দেহকে অস্বীকার করার বৈরাগ্য নীতি যেমন মানুষের উপযোগী নয়, তেমনি আত্মাকে পরাজিত করে পশুর ন্যায় ভোগবাদ ও ভোগবাদের মাঝামাঝি মনুষ্যত্বের সিরাতুল মুস্তাকীমই কুরআনের শেখানো পথ। তাই কুরআনর মতে মানুষ আত্মাহীনও নয়, দেহহীনও নয়; আবার আত্মাসর্বস্বও নয়; দেহসর্বস্বও নয়; বরং সে দেহ ও আত্মা উভয়েরই সমন্বয়। এখানে দেহ আত্বার বাহন, আর আত্মা দেহরই পারিচালক।
প্রবৃত্তি ও বিবেক
সাধারণ অর্থে দেহের দাবিকে নাফস বা প্রবৃত্তি এবং আত্মাকে বিবেক বলে অভিহিত করা চলে। মানবদেহের ইন্দ্রিয়সূহকে বিভিন্ন বস্তুর প্রতি আকৃষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এ আকর্ষণই প্রবৃত্তি। একদিকে দুনিয়ার আকর্ষণীয় বস্তুসমূহের প্রতি মানুষের তীব্রভাবে আকৃষ্ট হওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে, অপরদিকে তাকে সৎ ও অসৎ এবং ভালো ও মন্দ সম্বন্ধে সচেতন বিবেকশক্তি দান করা হয়েছে। এভাবে মানুষের মধ্যে প্রবৃত্তি ও বিবেকের বিপরীতমুখী তাড়না সৃষ্টি করা হয়েছে। মানুষ প্রবৃত্তির তাড়নায় যখনই বিবেকের বিপরীত কাজ করে তখনই বিবেক তাকে দংশন করতে থাকে। দেহ অসুস্থ হলে যেমন এর আকর্ষণীয় বস্তুর দিকে ধাবিত হয় না; তেমনি বিবেক অসুস্থ হলেও তার দংশন করার শক্তি হ্রাস পায়। স্বস্থ্যের নিয়ম পালন না করলে যেমন দেহ অসুস্থ হয়, তেমনি বিবেকের বিরুদ্ধে বারবার চললে বিবেকশক্তি লোপ পেতে থাকে। উ দু’টি শক্তির মধ্যে সমন্বয় সাধনের উপরই মানব জীবনের শান্তি সম্পূর্ণ নির্ভরশীল।
মানুষের উপযোগী শিক্ষা
মানুষকে যারা আত্মবিহীন এক জড় পদার্থ মনে করেন, তারা শিক্ষাব্যবস্থাকে তৈরি করার বেলায় মানুসের শুধু বস্তুগত প্রয়োজনের (Material need) দিকেই লক্ষ্য রাখেন। আর মানুষের প্রকৃত পরিচয় উপলব্ধি করতে অক্ষম হওয়ার ফলে সে ব্যবস্থায় মানুষকে অন্যান্য জীবের ন্যায়ই দেহসর্বস্ব মনে করে গড়ে তোলা হয়। পাশ্চাত্য সভ্যতা ধর্মনিরপেক্ষ ও খোদাবিমুখ বলে তার পক্ষে মানুষকে আত্মাপ্রধান হিসেবে চিনবার সযোগ হয়নি। ডারউইন মানুষকে বানরের উন্নত সংস্করণ প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন। এ মতাদর্শের বিশ্বাসীরা মানুষকে অন্যান্য পশুর ন্যায় গড়ে তুলবার উপযোগী শিক্ষাপদ্ধতির প্রচরণ করেছেন। এ শিক্ষা দ্বারা মনুষ্যত্বের বিকাশ অসম্ভব।
আবার যারা মানুষকে আত্মসর্বস্ব মনে করেন অথবা তারা জৈবিক প্রয়োজনের দিকে মনোযোগ না দিয়ে কেবল আধ্যাত্মিক উন্নতির উদ্দেশ্যে শিক্ষার প্রচরণ করেন, তাঁরাও মানুষের উপযোগী প্রকৃত শিক্ষা দিতে অক্ষম। এ শিক্ষা মানুষকে যতই খোদাভীরু ও ধর্মপ্রাণ হওয়ার অনুপ্রেরণা দান করুক, বাস্তব জীবনে বস্তুগত প্রয়োজনের তাগিদ তাকে ঈমানের বিপরীত পথে যেতে বাধ্য করে। তাই এই প্রকার শিক্ষাও মানুষের স্বভাবের বিপরীত।
তাই যে শিক্ষা মানুষের আত্মা ও দেহকে এক সুন্দর সামঞ্জস্যময় পরিণতিতে পৌঁছিয়ে এ জগতের রূপ-রস-গন্ধকে নৈতিকতার সীমার মধ্যে উপভোগ করার যোগ্যতা দান করে, সেই শিক্ষাই মানুষের প্রকৃত শিক্ষা। যে শিক্ষা প্রাকৃতিক শক্তিসমূহকে মানবতার উন্নতি ও নৈতিকতার বিকাশে প্রয়োগ করতে উদ্বুদ্ধ করে, তাই মানুষের উপযোগী শিক্ষা। আর জ্ঞান-বিজ্ঞানের চরম উন্নতি দান করা সত্ত্বেও যে শিক্ষা মনুষ্যত্ব ও আত্মার উন্নতিকে ব্যাহত করে তা প্রকৃতপক্ষে মানব-ধ্বংসী শিক্ষা, তাকে কিছুতেই মানুষের উপযোগী শিক্ষা বলা চলে না।
শিক্ষাব্যবস্থায় জাতীয় আদর্শের স্থান
দুনিয়ার সকল শিক্ষাবিদই এ বিষয়ে একত যে, শিক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে চরিত্র গঠন। শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে মন, মস্কিষ্ট ও চরিত্রকে গঠন করার চেষ্টা প্রত্যেকটি সজাগ জাতির কার্যসূচিরত প্রদান অঙ্গ। উন্নত জাতিসমূহের শিক্ষাব্যবস্থায় বাহ্যিক দিক দিয়ে অনেক সামঞ্জস্য থাকলেও মূলত তাদের সকলেরিই একই ধরনে চরিত্র সৃষ্টি উদ্দেশ্য নয়। আমেরিকার শিক্ষাব্যবস্থায় যে প্রকার মন, মস্তিষ্ক ও চরিত্র সৃষ্টি হচ্ছে, রাশিয়ায় হুবহু তার অনুকরণ হচ্ছেনা। এর প্রকৃর কারণ হল তাদের আদর্শের পার্থক্য। ভালো-মন্দের পার্থক্যজ্ঞঅন, মূল্যবোধ, সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা, ব্যক্তিচরিত্রের মান নির্ণয়, জগৎ ও জীবন সম্বন্ধে কতক ধারণা ইত্যাদির সমন্বয়েই একটি আদর্শ গড়ে উঠে। যে জাতির নিকট যে আদর্শ গ্রহণযোগ্য, সেই আদর্শকে সম্মুখে রেখেই উক্ত জাতির শিক্ষাব্যবস্থাকে গড়ে তেলা হয়। প্রত্যেক দেশের কোন না কোন আদর্শ থাকে। সে আদর্শ নিজস্বও হতে পারে অথবা অপর কোন দেশের নিকট থেকে ধার করাও হতে পারে। কিন্তু কোন আদর্শ নির্ধরণ ব্যতীত কোন জাতিই উন্নতির পথে পদক্ষেপ করতে পারে না। আদর্শ একটি জাতির লক্ষ্য। যে জাতির কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্য নেই, সে অপরাপর জাতির উচ্চিষ্ঠভোগী হতে বাধ্য। একটি বিশেষ আদর্শে জাতিকে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যত প্রকার পরিকল্পনাই গ্রহণ করা হোক তা শেষ পর্যন্ত একই লক্ষ্যের দিকে দেশকে পরিচালিত করবে। সুতরাং শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়নের বেলায় জাতীয় আদর্শ নির্ধারণ অপরিহার্য।
আমাদের জাতীয় আদর্শ
আমাদের প্রিয় জন্মভূীম বাংলাদেশের জাতীয় আদর্শ কী এ বিষয়ে বিরাট মতপার্থক্য রয়েছে। এটাই এদেশের প্রধান সমস?্যা। এ কারণেই ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের গোলামী থেকে স্বাধীন হওয়ার পর গত ৫০ বছরেও দেশের সকল নাগেরিকের উযোগী কোন সমন্বিত শিক্ষা-ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি।
১৯৪০-এর দশকে এ উপমহাদেশের স্বাধীনতা লাভের সযোগ আসে। মি. গান্ধি ও মি. হেরুর নেতৃত্বে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস ধর্ম-নিরপেক্ষতাবাদকে জাতীয় আদর্শ হিসেবে ঘোষণা করে। উপমহাদেশের ঐ সময়ের ১০ কোটি মুসলমানের পক্ষ থেকে কায়েদে আযম মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্বে অল-ইন্ডিয়া মুলিম লীগ ইসলামকে জাতীয় আদর্শ ঘোষণা করে।
১৯৪৬ সালে এ ইস্যুকে কেন্ত্র করেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মুসলমানদের শতকরা ৯৭টি ভোট ইসলামের পক্ষে পড়ে। ফলে আদর্শিক ভিত্তিতেহ ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে মুসলিম প্রদান অঞ্চল নিয়ে পাকিস্তান নামক একটি আদর্শিক রাষ্ট্র বিশ্বের মানচিত্রে স্থান লাভ করে।
দুর্ভাগ্যের বিষয় যে পাকিস্তানের শাসন-ক্ষমতা যাদের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছিল তাঁদের মন-মগজ-চরিত্র ইংরেজ আমলের শিক্ষা-ব্যবস্থায়ই গড়ে উঠায় তাঁরা শিক্ষা-ব্যবস্থাকে ইসলামী আদর্শে ঢেলে সাজাবার কোন চেষ্টাই করেননি। তাঁরা ব্রিটিশ আমলের শিক্ষা-ব্যবস্থাকেই বহাল রাখেন। কিন্তু তাঁরা ব্রিটিশ আমলের শিক্ষার মানটুকুও বহাল রাখতে ব্যর্থ হন।
যে আদর্শের ভিত্তিতে পাকিস্তান কায়েম হয় সে আদর্শের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার ফলে শাসকরা গণতান্ত্রিক শাসন-ব্যবস্থাও চালু রাখা নিরাপদ মনে করেননি। অথচ জাগণের ভোটের মাধ্যমেই পাকিস্তানের জন্ম। গণতন্ত্র বহাল থাকলে জনগণ ইসলামী আদর্শের পক্ষেই ভোট দেমে মনে করেই আইয়ূব খান সামরিক স্বৈর-শাসন জারী করেন। ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে পাকিস্তান কায়েম হওয়া সত্বেও সে আদর্শের লালন না করায় আদর্শিক শূণ্যতা সৃষ্টি হয়ে গেল। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, সমাজকতন্ত্র ও বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ ঐ শ্যন্যস্থান পূরণ করল। পরিণামে এদেশটি পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম শাসকগণ ঐসব ইসলাম বিরোধী মতবাদকেই জাতীয় আদর্শ হিসেবে শাসনতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত করে নিলেন। ভারত থেকে আমদানী করা ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ ও রাশিয়া থেকে ধার করা সমাজতন্ত্র এদেশের মাটিতে শেকড় গড়াতে ব্যর্থ হয়। তাই গণভোটো মাধ্যমে ১৯৭৭ সালে জনগণ ঐ দুটো মতবাদকে বাতিল ঘোষণা করে। আর বাংলাদেশের নাগরিকদের পরিচয় বাংলাদেশেী হিসেবে ঘোষণা করার ফলে বাঙ্গালী জাতীতাবাদও মতবাদ হিসেবে পরিত্যক্ত হয়।
১৯৯৬ সালে আওয়ামীল লীগ ক্ষমতাসীন হবার সযোগ পেয়ে দলীয়ভাবে এখনও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের বিশ্বাসী বলে দাবি করলেও এ দু্টো মতবাদ দেশের শাসনতন্ত্রে অনুপস্থিত। শাসনতন্ত্র দেশের যে আদর্শ ঘোষণা করেছে তা-ই জাতীয় আদর্শ। যারা সে আদর্শে বিশ্বাসী নয় তাদের ব্যাপারে জনগণই সিদ্ধান্ত নেবার অধিকারী।
বাংলাদেশের শাসনতন্ত্রে আদর্শ হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদরে বদলে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ লেখা হয়েছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের আদর্শ ‘ইসলাম’ বলে দাবি করলে তা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। সুতরং আমাদের জাতীয় আদর্শ যে ইসলাম তা অনস্বীকার্য। যারা একথা অস্বীকার করতে চান তারা বলুন বাংলাদেশের আদর্শের নাম কী?
বাংলাদেশের আদর্শ ইসলাম বলে স্বীকৃত না হলে পশ্চিম বঙ্গ থেকে আমাদের আলাদা থাকার কোন যুক্তি নেই। যারা এপার বাংলা ও ওপার বাংলাকে ঐক্যবদ্ধ করতে চান তাঁরা বাংলাদেশকে ভারতের একটি প্রদেশে পরিণত করতে আগ্রহী। তাই একমাত্র ইসলামী আদর্শের ধারক হিসেবে বেঁচে থাকতে চাইলেই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রয়োজন। ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতাবাদকে বাংলাদশের আদর্শ বলে নিলে ১৯৪৭ সালে ভারত থেকে আলাদা হওয়া কোন যুক্তি থাকে না।