পবিত্র কোরআনের পরে আর কোন আসমানী কিতাব নাযিল হচ্ছে না কেন?
মহানবীর আগমনের পূর্বে দুনিয়ায় যেমন অসংখ্য নবী রাসূল এসেছিলেন। তেমনি তাদের উপরে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অসংখ্য কিতাব ও সহীফাও অবতীর্ণ করেছিলেন। কিন্তু মহানবীর তিরোধানের পরে নতুন করে আর কোন আসমানী কিতাব বা সহীফাও অবতীর্ণ হবে না, আর এ অবস্থা কিয়ামত পর্যন্ত বহাল থাকবে।
প্রশ্ন হতে পারে, কোরআনের পরে কেন আর কোন আসমানী কিতাব অবতীর্ণ হবে না? এর জওয়াব স্বরূপ একথা বলা চলে যে, মহান আল্লাহ কোরআন অবতীর্ণের মাধ্যমে তাঁর দ্বীনকে মানব জাতির জন্য পূর্ণাঙ্গ করে দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ কোরআনে উল্লেখ করেছেন,
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا ۚ
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম এবং আমার নিয়ামতকেও তোমাদের উপরে সম্পূর্ণ করে দিলাম, আর দ্বীন হিসেবে তোমাদের জন্য আমি ইসলামকেই মনোনীত করলাম।” (সুরা মায়েদা, আয়াত-৩)
সুতরাং দ্বীনের পূর্ণতা প্রাপ্তির পরে নতুন করে আর কোন কিতাব নাযিল করার প্রয়োজন ছিল না।
দ্বিতীয়ত: আল্লাহর কিতাবের পরিবর্তন, পরিবর্ধন, উহার আংশিক কিংবা পূর্ণাঙ্গ বিলুপ্তির কারণেই অতীতে নতুন করে কিতাব নাযিলের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল। কিন্তু আল্লাহর অলৌকিক অনুগ্রহ কোরআন এসব বিপর্যয় হতে একেবারেই নিরাপদ। কোরআনের যেমন কোনরূপ পরিবর্তন, পরিবর্ধন সম্ভব নয়, তেমনি উহার কোন অংশের বিলুপ্তিরও আদৌ কোন সম্ভাবনা নেই। সুতরাং এমতাবস্থায় আর কোন আসমানী কিতাবের প্রয়োজনীয়তাই নেই।
অধুনা যোগাযোগ ব্যবস্থার অস্বাভাবিক উন্নতি, মুদ্রণ ব্যবস্থার ব্যাপক প্রসার ও সভ্যতার আদান-প্রদানের প্রচুর সুযোগ কোরআন ও কোরআনের বাণীকে দুনিয়ার প্রায় সর্বত্রই পৌঁছিয়ে দিয়েছে। কাজেই দুনিয়ার কোন প্রান্তেই এখন আর কোন আসমানী কিতাব নাযিল করার কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। সুতরাং হযরত মুহাম্মদের (স) আবির্ভাবের পরে তিনি যেমন সারা বিশ্বের সমগ্র মানব জাতির জন্য কিয়ামত পর্যন্ত একমাত্র নবী, তেমনি কোরআন অবতীর্ণের পরে সমগ্র মানব জাতির জন্য কিয়ামত পর্যন্ত কোরআনই একমাত্র অনুসরণযোগ্য আসমানী কিতাব। অতঃপর আর যেমন কোন নবীর আবির্ভাব ঘটবেনা, তেমনি আর কোন আসমানী কিতাবও অবতীর্ণ হবে না।
দুনিয়ার বিভিন্ন খেলাফত যুগের কোরআনের কয়েকখানা পান্ডুলিপি
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, রসূলুল্লাহ (স) সময়ই নিয়মিতভাবে কোরআন শরীফ লেখার কাজ শুরু হয় এবং হুজুরের জীবদ্দশায়ই বেশ কয়েকজন সাহাবীর কাছে খন্ডাকারে কোরআন লিখিতভাবে মওজুদ ছিল। হযরত আব বকরের (রা) সময় এই লিখিত বিচ্ছিন্ন টুকরাগুলিকে সাজিয়ে একখানা সুসজ্জিত পূর্ণাঙ্গ কিতাবের রূপ দেয়া হয়। অতঃপর হযরত উসমান (রা) হিজরী ২৫ সনে প্রথম হযরত আবু বকরের (রা) ব্যবস্থাপনায় লিখিত অত্র গ্রন্থখানার বেশ কয়েকখানা কপি তৈরী করিয়ে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় সাম্রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় পাঠিয়ে দেন।
হযরত উসামান (রা) স্বহস্ত লিখিত একখানা মাছহাব তার নিজের কাছেই ছিল। এ মাসহাব খানিকে “মাসহাফুল ইমাম” বলা হতো। আজীবন উহা হযরত উসমানের কাছে ছিল, অতঃপর হযরত আলী (রা) ও হযরত ইমাম হোসেনের হাতে আসে। পরবর্তী পর্যায়ে ইহা স্পেনে এবং তারও পরে উহা মরক্কোর রাজধানী ফাশ-এ গিয়ে পৌঁছে। এরপরে উহা আবার মদীনায় ফিরিয়ে আনা হয়। অতঃপর প্রথম মহাযুদ্ধকালে মদীনা হতে মাসহাফখানা তুরস্কের রাজধানী কনস্টান্টিনোপলে নীত হয় এবং অদ্যাবধি সেখানেই আছে।
হযরত উসমানের (রা) স্বহস্ত লিখিত একখানা পান্ডুলিপি যার শেষে এ কথা লিখা আছে যে, এ খানা লিখেছেন হযরত উসমান বিন আফফান।
বর্তমানে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে আছে এই মাসহাফখানা তেলাওয়াত করা অবস্থায়ই বিদ্রোহীরা হযরত উসমানকে (রা) শহীদ করে। পরে এখানা দামেস্কে নীত হয় এবং বনু উমাইয়া রাজন্য বর্গের হাতেই তাদের খেলাফতের শেষ পর্যন্ত থাকে। অতঃপর উহা বসরায় নীত হয়। বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা অষ্টাদশ শতাব্দীতে এখানা বসরায় দেখতে পান। ১৯৪১ সনে এখানা রাশিয়ার বলসেভিকদের হস্তগত হয় এবং সে হতে এখানা মস্কোতে আছে।
হযরত উসমানের (রা) তৈরী আর একখানা পান্ডুলিপি বর্তমানে ফ্রান্সে, একখানা মিসরের খাদুর্বিয়া কতুবখানা, একখানা আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরীতে এবং অন্য একখানা ফ্রান্সের গ্রন্থাগারে রক্ষিত আছে।
হযরত আলীর (রা) তৈরী পাঁচখানা পান্ডুলিপির মধ্যে একখারা মাশহাদে, দুখানা কনষ্টান্টিনোপলে ও একখানা বর্তমানে কায়রোর জামে হোসাইনে রক্ষিত আছে। হযরত আলীর (রা) তৈরী আর একখানা পান্ডুলিপি বর্তমানে দিল্লীর জামেয়া মিল্লাতে রয়েছে।
হযরত ইমাম হোসেন সঙ্কলিত একখানা পান্ডুলিপিও বর্তমানে দিল্লীর জামেয়া মিল্লিয়ায় রক্ষিত আছে। হযরত ইমাম জয়নাল আবেদিন কৃত একখানা মাসহাফ জামেয়া মিল্লিয়ায় এবং একখানা দেওবন্দের কুতুবখানায় মওজুদ আছে।
কোরআনে কখন জের, জবর, পেশ সংযুক্ত করা হয়
যাদের মাতৃভাষা আরবী তারা কোনরূপ হরকত ছাড়াই আরবী ভাষায় যে কোন বই-কিতাব পড়তে পারে। কাজেই যে পর্যন্ত ইসলাম আরবের বাইরে সম্প্রসারিত হয়নি ততদিন কোরআন হরকত ছাড়াই লেখা হত। কেননা আরবদের জন্য জের, জবর, ও পেশের সাহায্য ব্যতীরেকেই কোরআন পাঠ সম্ভব ছিল। কিন্তু ইসলাম যখন আরবের সীমানা অতিক্রম করে আযমেও সম্প্রসারিত হল, তখন অনারব মুসলিমদের পক্ষে হরকত বিহীন কোরআন পাঠ মুশকিল হয়ে দাঁড়াল। ফলে উপরোক্ত সমস্যার সমাধানকল্পে ৮৬ হিজরীতে (৭০৫ খৃস্টাব্দে) বনু উমাইয়া যুগে ইরাকের শাসনকর্তা হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কোরআনের হরকত অর্থাৎ জের জবর, পেশ সংযুক্ত করার নির্দেশ দেন।
পবিত্র কোরআন সম্পর্কে কতিপয় স্মরণীয় দিন তারিখ
১। হিজরী পূর্ব ১৩ সন ১৭ই রমাজান সোমবার হেরা গুহায় সর্বপ্রথম ওয়াহী অবতীর্ণ হওয়া শুরু হয়। (মোতাবেক ৬ই আগস্ট ৬১০ খৃস্টাব্দ)।
২। হিজরী ১১ সনের সফর মাসে কোরআন অবতীর্ণ সমাপ্ত হয়।
৩। সর্বপ্রথম যে পাঁচটি আয়াত হুজুরের প্রতি অবতীর্ণ হয় উহা ছিল সুরায়ে আলাকের প্রথম পাঁচটি আয়াত। যথা-
اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ﴾
﴿خَلَقَ الْإِنسَانَ مِنْ عَلَقٍ﴾
﴿اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ﴾
﴿الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ﴾
﴿عَلَّمَ الْإِنسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ﴾
৪। সর্বশেষ অবতীর্ণ আয়াত সুরায়ে বাকারার ৩৭ রুকুর শেষ আয়াত।
ﻭَﺍﺗَّﻘُﻮﺍ ﻳَﻮْﻣًﺎ ﺗُﺮْﺟَﻌُﻮﻥَ ﻓِﻴﻪِ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺛُﻢَّ
ﺗُﻮَﻓَّﻰ ﻛُﻞُّ ﻧَﻔْﺲٍ ﻣَﺎ ﻛَﺴَﺒَﺖْ ﻭَﻫُﻢْ ﻟَﺎ ﻳُﻈْﻠَﻤُﻮﻥَ
৫। তেলাওয়াতের সুবিধার জন্য ৮৬ হিজরীতে কোরআনকে পারা ও রুকুতে বিভক্ত করা হয়।
৬। হিজরী ৩০ সনে হযরত উসমানের (রা) আদেশে শুধু কোরায়েশী আরবী ব্যতীত অন্যান্য আরবী মাসহাফগুলিকে নষ্ট করে দেয়া হয়।
৭। কোরআন পাকের সর্বপ্রথম অবতীর্ণ পূর্ণাঙ্গ সুরা সুরায়ে মুদাসসির এবং সর্বশেষ অবতীর্ণ পূর্ণাঙ্গ সুরা সুরায়ে নছর। কারও কারও মতে সর্বপ্রথম অবতীর্ণ সুরা-সুরায়ে ফাতেহা।
পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন বিষয়ের কয়েকটি পরিসংখ্যান
মোট সুরা – ১১৪
মক্কী সুরা – ৯৩
মাদানী সুরা – ২১
রুকু – ৫৫৪
আয়াত সংখ্যা – ৬২৩৬
কোরআন সম্পর্কে কয়েকজন খ্যাতনামা অমুসলিম পণ্ডিতদের উক্তি
১। “ কোরআনের সংগ্রহকারীরা কোরআনের কোন অংশ, বাক্য কিংবা শব্দ বাদ দিয়েছে এমন কখনো শোনা যায়নি। আবার কোরআনের এমন কোন বাক্যের সন্ধান পাওয়া যায়নি যা বাহির হতে কোরআনে প্রবেশ করেছে। যদি এমন হত, তাহলে অবশ্যই হাদীসের কিতাবে উহার উল্লেখ থাকত, যা থেকে সামান্য বিষয়ও বাদ পড়েনি।” (উইলিয়াম ময়িউর)
২। নিঃসন্দেহে কোরআন আরবী ভাষার সর্বোত্তম এবং দুনিয়ার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ। কোন মানুষের পক্ষেই এ ধরনের একখানা অলৌকিক গ্রন্থ রচনা করা কিছুতেই সম্ভব নয়। কোরআন মৃতকে জীবিত করার চেয়েও শ্রেষ্ঠ মোজেযা। একজন অশিক্ষিত লোক কি করে এ ধরণের ত্রুটিমুক্ত ও নজিরবিহীন বাক্যাবলীর রচনা করতে পারে তা ভাবতেও আশ্চর্য লাগে।” (জর্জ সেল)
৩। “কেবল মাত্র কোরআনই এমন একখানা গ্রন্থ যাতে তেরশত বছরের ব্যবধানেও কোন পরিবর্তন ঘটেনি। ইহুদী ও খৃষ্টান ধর্মের এমন কোন নির্ভরযোগ্য ধর্মগ্রন্থ নেই যা আদৌ কোন দিক থেকে কোরআনের সমকক্ষ হতে পারে।” (প্রসিদ্ধ খৃস্টান ঐতিহাসিক মি: বাডলে)
৪। “প্রাচীন আরবীতে অবতীর্ণ কোরআন শরীফ অত্যন্ত মনোরম ও আকর্ষণীয়। ইহার বাক্য বিন্যাস পদ্ধতি ও প্রকাশভঙ্গী খুবই মনোমুগ্ধকর। কোরআনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বাক্যগুলিতে যে বলিষ্ঠ ও শক্তিশালী যু্ক্তির অবতারণা করা হয়েছে তা খুবই চমৎকার। কোরআনের ভাবধারা অন্য ভাষায় যথাযথ প্রকাশ করা খুবই মুসকিল।” (দি উইসডম অফ দি কোরআন- জন ফাস)
৫। “ কোরআনের বিধানবলী স্বয়ং সম্পূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ।” (প্রিচিং অফ ইসলাম- আর্নল্ড টয়েনবি)
৬।“দুনিয়ার কোন গ্রন্থই কোরআনের ন্যায় বেশি পাঠ করা হয় না। বিক্রির দিক দিয়ে হয়ত বাইবেল সংখ্যায় বেশী হবে। কিন্তু মুহম্মদের কোটি কোটি অনুসারীরা যেদিন থেকে কথা বলার ক্ষমতা অর্জন করে সেদিন থেকে দৈনিক পাঁচবার কোরআনের দীর্ঘ দীর্ঘ আয়াতসমূহ পাঠ করা শুরু করে।” (চার্লস ফ্রান্স পুটার)
৭। “ সমস্ত আসমানী গ্রন্থসমূহের মধ্যে কোরআন সর্বশ্রেষ্ঠ। মহান আল্লাহ তাঁর বিশেষ অনুগ্রহে মানব জাতির উদ্দেশ্যে এই সর্বোৎকৃষ্ট কিতাবখানান নাযিল করেছেন। মানুষের কল্যাণ সাধনে ইহা প্রাচীন গ্রীক দর্শনের চেয়েও অধিকতর ফলপ্রসূ। কোরআনের প্রতিটি শব্দ হতেই আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্বের ঝংকার ধ্বনিত হয়।” (ড: মোরসেন ফ্রান্স)
৮। “পবিত্র কোরআন শুধুমাত্র কতগুলি ধর্মীয় বিধানবলী সমষ্টিই নয়, বরং উহাতে এমন এমন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিধানবলীও রয়েছে যা গোটা মানব জাতির জন্য সমান কল্যালকর।” (ড: মসিজিউন)
৯। “ আমি কোরআনের শিক্ষাসমূহ উপরে গবেষণা করে এই সিদ্ধান্তে পোঁছেছি যে, কোরআন নাযিলকৃত আসমানী কিতাব এবং উহার শিক্ষাসমূহ মানব স্বভাবের সাথে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যশীল।” (মিস্টার গান্ধী- ভারত)
১০। “আমি ইসলামকে পছন্দ করি এবং ইসলামের গয়গম্বরকে দুনিয়ার একজন শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ বলে স্বীকার করি। আমি কোরআনের সামাজিক, রাজনৈতিক, আত্নিক ও নৈতিক বিধানবলীকে অন্তরের সহিত পছন্দ করি। হযরত উমরের খেলাফতকালে ইসলামের যে রূপ ছিল উহাকেই আমি ইসলামের বাস্তব ও পূর্ণাঙ্গ রূপ বলে মনে করি।” (লালা লাজ পাত রায়, ভারত)
১১। “কোরআনের অধ্যয়নে বিবেক হয়রান হয়ে যায় যে, একজন অশিক্ষিত লোকের মুখ হতে এ ধরনের কালাম (ভাষ্য) কি করে বের হল।” (কোন্ট হেনরী)
১২। “মুহম্মদের এ দাবী আমি সর্বান্তকরণে স্বীকার করি যে কোরআন মুহাম্মদের (স) একটি সর্বকালীন শ্রেষ্ঠ মোজেযা।” (মি: বোরথ সমুখ)
১৩।“ কোরআন গরীবের বন্ধু ও কল্যাণকামী। ধনীদের বাড়াবাড়িকে কোরআন সর্বক্ষেত্রেই নিন্দা করেছে।” (গর্ড ফ্রে হগনস)
১৪।“ তেরশত বছর পরেও কোরআনের শিক্ষাসমূহ এতই জীবন্ত যে আজও একজন ঝাড়ুদার মুসলমান হয়ে ( কোরআনের প্রতি ঈমান এনে) যে কোন খান্দানী মুসলিমদের সাথে সমতার দাবী করতে পারে।” (মি: ভুপেনন্দ্রেনাথ বোস)
১৫।“ইসলামকে যারা প্রতিক্রিয়াশীল ধর্ম বলে নিন্দা করে, তারা কোরআনের শিক্ষাকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারেনি। এই কোরআনের বদৌলতেই আরবদের কায়া সম্পূর্ণ পাল্টে গিয়েছিল।” (মোসেউর্মিওব ফ্রান্স)
কোরআনের গুরুত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে মহানবীর (সা) কতিপয় হাদীস
تركت فيكم أمرين لن تضلوا ما تمستمسكتُم بهما كتاب الله وسنّة رسوله. (مشكوة – موطا
“রসুলুল্লাহ (স) বলেছেন, আমি তোমাদের জন্য দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি।এ দুটিকে যে পর্যন্ত তোমরা আকড়ে থাকবে, পথভ্রষ্ট হবে না। উহা হল আল্লাহর কিতাব ও রসুলের সুন্নত।” (মেশকাত-মোয়াত্তা)
من قراً القرآن فاستظهرهٔ – فاًحل
خلالهٔ و حرم حرامهٔ آذخلهٔ الله به الجنة و شافعهٔ فی عشر من أهل بيته كلهم قد وجبت لة التار. ة
“হযরত আলী (রা) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে কোরআন পাঠ করত: উহার হালাল হারাম মেনে চলবে, আল্লাহ তাঁকে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন। আর তার বংশ হতে তাকে এমন দশজন লোকের সুপারিশ করার অধিকার দিবেন যাদের প্রতি জাহান্নাম ছিল ওয়াজিব।” (আহমদ, তিরমিজি, ইবনে মাযা, দারেমী)
و عن ابی سعی در رضایی انتهٔ عنهٔ قال قال رسول الله صلی اللههٔ عليه وسلم يقول الرب تبارك وتعالى. من شغلة القرآن عن ذكرى ومسألتي اعطيتة أفضل ما اعطي السائلين – فضل
كلام اللّه على سائر الكلام كفضل الله على خلقه.
হযরত আবু সাইয়িদ (রা) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ (স) বলেছেন, আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন,‘ যে ব্যক্তি কোরআন অধ্যয়নে মগ্ন থাকায় (অতিরিক্ত) জিকর ও দোয়ার সময় পায় না। আমি তাকে দোয়া প্রার্থীদের চেয়েও অধিক দিয়ে থাকি।’ আর যাবতীয় সৃষ্টির উপরে আল্লাহর মর্যাদা যেরূপ, যাবতীয় কালামের উপরে আল্লাহর কালামের মর্যাদা সেরূপ।” (তিরমিজি)
وعن عائشة رضيى الله عنها قالت قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الذي يقراً القرآن وهو ماهير به مع السفرة الكرام البررة والذي يقرأه وهو عليه شاقلة أجران. (بخاري – مسلم
“হযরত আয়েশা (রা) হতে বর্ণিত। রসূলে করীম (সা) বলেছেন, কোরআনে গভীর জ্ঞানের অধিকারী ব্যক্তি যিনি নিয়মিত কোরআন পাঠ করে থাকেন, তিনি ( কিয়ামতের) নবীদের সঙ্গী হবেন। আর যিনি কষ্ট করে কোরআন পাঠ করেন তিনি দ্বিগুণ প্রতিদান পাবেন।” (বুখারী ও মুসলিম)
وعن أبى هريرة قال قال رسول الله صلى الة علية وسلم وما اجتمع قوم فى بيتر من بيوتر الله يتلون كتاب الله ويتدارسونة بينهم الأنزلت عليهم السكينة وغشيتهم الرخمة وحفنهم الملائكة وذكرهم فيمن عندهٔ
“হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত, “নবী করীম (সা) ইরশাদ করেছেন, যখন কিছু লোক কোন একটি ঘরে আল্লাহর কিতাবের আলোচনার পর্যালোচনায় মগ্ন থাকে, তখন তাদের পরে মহাপ্রশান্তি অবতীর্ণ হতে থাকে এবং আল্লাহর রহমত ও করুণা তাদেরকে আচ্ছন্ন করে রাখে। আর ফিরিশতাগণ তাদেরকে ঘিরে রাখেন এবং আল্লাহ্ স্বয়ং নিকটস্থ ফিরিশতাগণের সঙ্গে তাদের সম্পর্কে আলোচনা করে থাকেন। আর যে ব্যক্তির আমল তাকে পিছন ঠেলবে বংশ মর্যাদা তাকে আগে বাড়াতে পারবে না।” (মুসলিম)
“হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রা) বলেন, রসূল (স) বলেছেন, যার সিনায় কোরআনের কোন অংশ নাই তার তুলনা হয় বিরান ঘরের সাথে।” (তিরমিযি)
“হযরত উমর বিন খাত্তাব (রা) বলেন, রসূল (স) বলেছেন, অবশ্য অবশ্য আল্লাহ এই কোরআনের সাহায্যে বহ জাতিকে শীর্ষে উঠাবেন, আবার এই কোরআনই (অর্থাৎ কোরআনকে ছেড়ে দেয়ার কারণে) কোন কোন জাতিকে অবনতির নিম্ন পর্যায়ে পৌঁছবেন।” (মুসলিম)
— সমাপ্ত —