৪২. কিবলার পরিবর্তন সম্পর্কিত আয়াতে কোন কিবলার কাথা বলা হয়েছে?
অভিযোগ:আপনি কিবলা পরিবর্তন সম্পর্কিত আয়াত ও তার অনুবাদ এই করেছেন:
“এবং আমি সেই কিবলা-যার অনুসরণ তুমি এ পর্যন্ত করেছিলে এজন্য নির্দিষ্ট করেছিলাম যাতে দেখতে পারি যে, কে রসূলেরর আনুগত্য করে আর কে পশ্চাতপদ হয়”-(সূরা বাকারা:১৪৩)।
এ সম্পর্কে আপনি লিখেছেন, “মসজিদুল হারামকে কিবলা নির্ধারণের পূর্বে মুসলমানগণ যে কিবলার অনুসরণ করত তাকে কিবলা বানানোর কোন নির্দেশ কুরআন মজীদে আসেনি। যদি এসে থাকে তবে আপনি তা উল্লেখ করুণ” (ঐ .পৃ.৪৪৯)।
এ সম্পর্কে যদি কুরআন পাকে কোন নির্দেশ এসে থাকত তবে তা অবশ্যই কুরআনে উল্লেখ থাকত। কিন্তু যখন নির্দেশই আসেনি তখন আমি কুরআন থেকে কিভাবে বরাত উল্লেখ করব? আপনি প্রথমেই ধারণা করে নিয়েছেন যে, প্রথম কিবলা আল্লাহ তাআলা নির্ধারণ করেছিলেন এবং তারপর আপনি এই ধারণা অনুযায়ী উক্ত আয়াতের অনুবাদ করেছেন। অত্র আয়াতে (কুনতা)শব্দের অর্থ “তুমি ছিলে” নয়,এর অর্থ হচ্ছে “তুমি আছ”। অর্থাৎ“আমরা সেই কিবলা যার উপর তুমি আছে এজন্য নির্দিষ্ট করেছি যে, আমরা যেন দেখতে পারি, কে রসূলের অনুসরণ করে আর কে পশ্চাতপদ হয়? এই অর্থের সমর্থনে স্বয়ং কুরআন থেকেই পাওয়া যায়।
উত্তরঃ উপরোক্ত আয়াতে (কুনতা) শব্দের অর্থ “তুমি আছ” কেবলমাত্র এই ভিত্তিতে করা হয়েছে যে, আরবী ভাষায় …(কানা) শব্দটি কখনও কখনও ‘ছিল’-এর পরিবর্তে “আছে” অর্থেও ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সূরা বাকারার যে রুকূতে উক্ত আয়াত রয়েছে সেই পূর্ন রূকুটি যে ব্যক্তি কখনও বুঝেশুনে পড়ে থাকবে, সে এখানে (কুনতা)শব্দটির অর্থ “তুমি আছ” করত পারে না। কারণ পূর্বাপর বিষয়বস্তু উক্তরূপ অর্থ করার পথে প্রতিবন্ধক। নিম্নোক্ত আয়াত থেকে রুকুটি শুরু হয়েছেঃ
“নির্বোধেরা অবশ্যই বলবে যে, তারা যে কিবলার অনুসরণ করত তা থেকে কোন জিনিস তাদের ফিরিয়ে দিয়েছে?”
এখানে ….(কানূ)শব্দের অর্থ “তারা আছে” কোনক্রমেই করা যেতে পারে না। কারণ “কোন জিনিস ফিরিয়ে দিয়েছে” বাক্যাংশ পরিষ্কার বলে দিচ্ছে যে, মুসলমানগণ অন্য কোন কিবলার দিকে মুখ করত। এখন তা ত্যাগ করে ভিন্ন কিবলার দিকে মুখ ফিরাতে যাচ্ছে এবং এই কারণে বিরুদ্ধবাদীরা অভিযোগ উত্থাপনের সুযোগ পেয়েছে যে, তারা তাদের পূর্ববর্তী কিবলা ত্যাগ করল কেন? এরপর আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বিরুদ্ধবাদীদের অভিযোগের জওয়াব কি হতে পারে তা বলে দেয়া হয়েছে। এই প্রসংগে অন্যান্য কথার সাথে নিম্নোক্ত কথাও বলা হয়েছেঃ
“তুমি যে কিবলার অনুসরণ করতে তা আমরা এজন্যই নির্দিষ্ট করেছি যে”।
এখানে(কুনতা আলাইহা) বলে ঠিক সেই জিনিসই বুঝানো হয়েছে যে সম্পর্কে উপরের আয়াতে (কানু আলাইহা) বল হয়েছে। এর অর্থ কোন ক্রমেই “তুমি আছ” করা যায় না। পূর্বোক্ত আয়াত চূড়ান্তভাবেই এর অর্থ “তুমি ছিলে” নির্দিষ্ট করে দেয়। এরপর তৃতীয় আয়াতে কিবলা পরিবর্তনে নির্দেশ এভাবে দেয়া হয়েছে:
“আমরা তোমার মুখমন্ডল বারবার আকাশপানে উত্তোলন লক্ষ্য করছি। অতএব আমরা তোমাকে তোমার কাংখিত কিবলার দিকে ফিরিয়ে দিচ্ছি। সুতরাং তুমি তোমার মুখমন্ডল মসজিদুল হারামের দিকে ফিরিয়ে দাও।”
উপরোক্ত আয়াত থেকে যে পরিষ্কার চিত্র সামনেআসে তা এই যে, প্রথমে মসজিদুল হারাম ব্যতীত অন্য কোন কিবলার দিকে মুখ করে নামায পড়ার নির্দেশ ছিল। রসূলুল্লাহ (স) আকাংখা করতেন যে, এখন এই কিবলা পরিবর্তন করে দেয়া হোক। এজন্য তিনি বারবার আসামানের দিকে মুখমন্ডল উত্তোলন করতেন যে, কখন কিবলা পরিবর্তনের নির্দেশ এসে যায়। এই অবস্থায় নির্দেশ এসে গেল যে, এখন আমরা তোমাকে সেই কিবলার দিকে ফিরিয়ে দিচ্ছি যাকে তুমি কিবলা বানাতে আগ্রহী। তোমার চেহারা মসজিদুল হারামের দিকে ফিরিয়ে দাও। পূর্বাপর এই সম্পর্কের আলোকে ………… আয়াতের প্রতি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, এখানে সেই উল্টাপাল্টা ব্যাখ্যার কোন সুযোগ নাই যা ডকটর সাহেব পেশ করেছেন। আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্টভঅবে বলছেন যে,মসজিদুল হারামের পূর্বে মুসলমানগণ যে কিবলার অনুসরণ করত তাও আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত ছিল এবং তিনি তা এজন্য নির্দিষ্ট করেছিলেন যে, তিনি দেখতে চান কে রসূলের অনুসরণ করে আর কে পশ্চাদপসরণ করে।
৪৩. কিবলার ব্যপারে রসূলুল্লাহ (স) এর আনুগত্য করা বা না করার প্রশ্ন কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিল?
অভিযোগ:যদি স্বীকার করে নেয়া হয় যে, প্রথম কিবলা আল্লাহ তাআলা নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন তবে নিম্নোক্ত কথার কোন অর্থই থাকে না: “তা আমরা এজন্য করেছিলাম যাতে দেখে নিতে পারি যে, কে রসূলের আনুগত্য করে আর কে পশ্চাৎপদ হয়।” এজন্য যে, প্রথম কিবলা নির্ধারণের সময় কারো পশ্চাৎপদ হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। মহানবী (স) একটি কিবলার দিকে মুখ করতেন। যে ব্যক্তি মহানবী (স) এর সাথে অংশগ্রহণ করত সেও ঐদিকেই মুখ করত। “পশ্চাৎপদ” হওয়ার প্রশ্ন তখনই সৃষ্টি হয় যখন এই কিবলার পরিবর্তন করা হয়। এ সময়ই পরখ করার সুযোগ আসে যে, কে সেই প্রথম কিবলার প্রতি বেশী আকর্ষণ বোধ করে এবং কে রসূলের (যিনি আল্লাহর নির্দেশের এই পরিবর্তন করেন) আনুগত্যের নিদর্শনস্বরূপ নতুন কিবলার দিকে মুখ ফিরায়।
উত্তর: এটা কেবল স্বল্প জ্ঞানের ফল। হাদীস অস্বীকারকারীরা জানে না যে, জাহিলী যুগে কাবা যার গোটা আরব জাতির পবিত্রতম তীর্থের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত ছিল। ইসলামে প্রথমত যখন কাবার পরিবর্তে বাইতুল মুকাদ্দাসকে কিবলা বানানো হয় তখন এটা ছিল আরবদের জন্য কঠিন পরীক্ষার বিষয়। নিজেদের কেন্দ্রীয় ইবাদতগৃহ ত্যাগ করে ইহুদীদের ইবাদত গৃহকে কিবলা বানানো তাদের জন্য কোন সহজ কাজ ছিল না। এভাবে আলোচ্য আয়াতের নিম্নোক্ত অংশ বলছে যেঃ
“যদিও সেই কিবলা কঠিনতর ছিল, কিন্তু সেই লোকদের জন্য নয় যাদেরকে আল্লাহ সৎপথ প্রদর্শন করেছেন, আর আল্লাহ তোমাদের ঈমান নষ্টকারী নন।”
উপরোক্ত বাক্য থেকে জানা যায় যে, এই কিবলা প্রসংগে পশ্চাৎপদ হওয়ার প্রশ্ন কোন সৃষ্টি হত? উপরন্ত এ আয়াত থেকে আরো জানা যায় যে, কুরআন পাকেযে হুকুম আসেনি, বরং রসূলুল্লাহ (স) এর মাধ্যমে পৌছানো হয়েছিল তার মাধ্যমে লোকদের ঈমানের পরীক্ষা করা হয়েছিল। যেসব লোক এই হুকুমের অনুসরণ করে তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, আমরা তোমাদের ঈমান নষ্টকারী নই। এরপরও কি এখন এব্যাপারে কোন সন্দেহের অবকাশ থাকতে পারে যে, কুরআন মজীদ ছাড়াও রসূলুল্লাহ (স) এর নিকট ওহীর মাধ্যমে কোন হুকুম আসতে পারে এবং তার উপরও ঈমান আনা অপরিহার্য?
৪৪. রসূলুল্লাহ (স) এর উপর নিজস্বভাবে কিবলা নির্ধারণের অপবাদ
অভিযোগ:এই কথা যে, এই নতুন কিবলার নির্দেশই আল্লাহর তরফ থেকে এসেছিল, প্রথম কিবলার হুকুম নয়, দুটি আয়াতের পরই কুরআন পরিষ্কার করে দিয়েছে যেখানে বলেছে যে-
“ তুমি যদি জ্ঞান এসে যাওয়ার পর লোকদের প্রবৃত্তির অনুসরণ কর তবে তুমি সাথে সাথে যালিমদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে” (সূরা বাকারঃ ১৪৫)।
এখান থেকে পরিষ্কার জান যায় যে, আল- ইলম (অর্থাৎ আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী) নতুন কিবলার জন্য এসেছিল। যদি পথম কিবলাও আল-ইলম অনুসারে নির্দিষ্ট হত তবে এখানে কখনও বলা যেত না যে, আল-ইলম আসার পর তোমরা প্রথম কিবলার দিকে মুখ কর না।
উত্তরঃ আমার অভিযোগ ছিল যে, হাদীস অস্বীকারকারীরা আমার বক্তব্যকে ভেংগেচুরে আমারই সামনে পেশ করে। কিন্তু এখন এদের বিরুদ্ধে কি অভিযোগ করা যায় যারা আল্লাহ তাআলা কিতাবের আয়াতকে ভেংগেচুরে তার মনগড়া অর্থ করার ব্যাপারে এতটা দুসাহসী?
যে আয়াতের শেষাংশ নকল করে তার উপরোক্ত অর্থ বের করা হচ্ছে সেই পূর্ণ আয়াতটি এবং তার পূর্বেকার আয়াতের শেষাংশ একত্রে রেখে পাঠ করলে জানা যায় যে, হাদীস প্রত্যাখ্যানকারীরা কুরআন মজীদের সাতে কি ব্যবহারটা করছে। বাইতুল মুকাদ্দাসকে বাদ দিয়ে যখন মসজিদুল হারামকে কিবলা বানানো হল তখন ইহুদীদের জন্যও তিরষ্কার, অপবাদ ও অভিযোগ আরোপের সেই সুযোগ সৃষ্টি হল যেভাবে পূর্ববর্তী কিবলার ব্যাপারে আরববাসীদের জন্য সৃষ্টি হয়েছিল। এ প্রসংঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
“কিতাবধারীরা উত্তমরূপেই জানে যে, তা (অর্থাৎ মসজিদুল হারামকে কিবলা নির্ধারণ ) তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে সঠিক ও যথার্থ। আর তারা যা কিছু করে আল্লাহ সে সম্পর্কে অনবহিত নন। তোমরা কিতবাধারীদের নিকট যে কোন নিদর্শনই পেশ কর না কোন তরা তোমাদের কিবলা অনুসরণ করবে না এবং তুমিও তাদের কিবলার অনুসারী নও। আর না তাদের মধ্যে কেউ কারো কিবলার অনুসরণকারী। আর তোমার নিকট সেই জ্ঞান এসে যাওয়ার পর তুমি যদি তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ কর তবে তুমি যালেমদের অন্তভূক্ত হবে” (সূরা বাকারাঃ ১৪৪-৪৫)।
আয়াতে পূর্বাপর পারস্পর অনুযায়ী যে কথা বলা হয়েছে তা থেকে অবশেষে এই তাৎপর্য কিভাবে বের হল যে, প্রথম কিবলা আল-ইলম অনুযায়ী নির্দিষ্ট কার হয়েছে? এখানে তো কেবল বলা হয়েছে যে, বাইতুল মুকাদ্দাসের পরিবর্তে মসজিদুল হারামকে কিবলা বানানোর নির্দেশ যখন এসে গেল তখন এই আল-ইলম আসার পর শুধুমাত্র ইহূদীদের অপপ্রচারে প্রভাবিত হয়ে পূর্বোক্ত কিবলার দিকে মুখ করা যুলুমের শামিল। তর্ক শাস্ত্রের ছত্রচ্ছায়ায়ও তার এই অর্থ করা যায় না যে, প্রথমে যে কিবলার দিকে মুখ করা হত তা মহনবী (স) এর নিজস্বভাবে নির্ধারিত ছিল। বিশেষত যখন এর পূর্ববর্তী আয়াতসমূহে সেইসব ব্যাখ্যা বর্তমান রযেছে যা ৪২ ও ৪৩ নং অভিযোগের জওয়াবে নকল করা হয়েছে। মহানবী (স) এর উপর নিজস্বভাবে কিবলা নির্ধারণের অপবাদ এক নিকৃষ্টতম শ্রেণীর দুসাহস।
৪৫. فقد صدق الله رسوله الرؤيا. আয়াতের তাৎপর্য।
অভিযোগ: দ্বিতীয় যে আয়াত আপনি পেশ করেছেন তা হচ্ছেঃ
“এবং এর তরজমা করেছেন- “আল্লাহ তার রসূলকে সত্য স্বপ্ন দেখিয়েছে……. ”। (সূরা ফাতহঃ২৭)।
প্রথমে বলুন, আপনি فقد صدق الله رسوله الرؤيا. এর অনুবদত “আল্লাহ সত্য স্বপ্ন দেখিয়েছেঃ কোন নীতিমালার ভিত্তিতে করেছেন? .الرؤي…صدقএর অর্থ “তিনি সত্য স্বপ্ন দেখিয়েছে” হতেই পারে না। এর অর্থ হবে-“স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখিয়েছেন”। যেমন- “আল্লাহ স্বীয় প্রতিশ্রুতি সত্যে পরিণত করে দেখিয়েছে। এরূপ অনুবাদ করেননি যে, আল্লাহ তোমার সাথে ত্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
উত্তরঃ …………………. এর অর্থ “আল্লাহ তার রসূলের স্বপ্ন সত্যে পরিণত করে দেখিয়েছেঃ কোন প্রকারেই হতে পারে না। একথা বলতে হলে …………… বলা হত ………….
বলা হত না। এই বাক্যাংশে … (সাদাকা) শব্দের দুটি মাফউল (কর্ম) রয়েছে। এক, রসূল-যাকে স্বপ্ন দেখানো হয়েছে। দুই, স্বপ্ন-যা ছিল সত্য, অথবা যাতে সত্য কথা বলা হয়েছে। এজন্য অপরিহার্যরূপে এর অর্থ হবেঃ আল্লাহ তার রসূলকে সত্য স্বপ্ন দেখিয়েছে, অথবা তাকে স্বপ্নে সত্য কথা বলে দিয়েছেন। এটা সম্পূর্ণরূপে এরূপ যেমন কেউ আরবীতে বলে এর অর্থ হবে-”সে আমর নিকট সত্য কথা বলেছে। তার এরূপ অর্থ হবে না যে, “সে আমার নিকট যে কথা বলেছে তা সত্যে পরিণত করে দিখিয়েছে।”
উপরন্তু ডকটর সাহেব উপরোক্ত আয়াতের যে অর্থ বলতে চান যদি তাই গ্রহণ করা হয় তবে এর পরবর্তী আয়াতাংশ অর্থহীন হয়ে পড়ে যেখানে আল্লাহ তাআলা বলেছেঃ “নিশ্চিত তুমি মসজিদুল হারামে প্রবেশ করবে।” এই শেষোক্ত বাক্য পরিষ্কার বলে দিচ্ছে যে, স্বপ্নে যা দেখানো হয়েছিল তা এখনও পূর্ন হয়নি, তা সত্য প্রমাণিত হওয়ার পূর্বে যেসব লোক রসূলুল্লাহ (স) এর স্বপ্নের সত্যতা সম্পর্কে সন্দিহান হয়েছিল তাদেরকে আল্লাহ তাআলা নিশ্চয়তা দান করেন যে, আমরা সত্য স্বপ্ন দেখিয়েছি, এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবেই। এই আয়াত নাযিল হওয়ার পূর্বে যদি এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়ে থঅকত তবে আল্লাহ তাআলা (তোমরা অবশ্যই প্রবেশ করবে) বলার পরিবর্তে (তোমরা অবশ্য প্রবেশ করেছ) বলতেন।
কথা শুধু এতটুকুই নয়, সূরা ফাতহ-এর পুরাটাই যার একটি আয়াতকে কেন্দ্র করে এখানে আলোচনা চলছে, এই কথার সাক্ষ্য দেয় যে, এই সূরা হুদায়বিয়ার সন্ধির পরে নাযিল হয়, যখন মুসলমানদের উমরা করতে বাধা দেয়া হয়েছিল এবং মসজিদুল হারামে প্রবেশের ঘটনাও সংঘটিত হয়নি। অতএব এই প্রাসংগিকতার আওতায় এই অর্থ করা যায় না যে, সেই সময় স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়ে গিয়েছিল।
৪৬. ওহী কি স্বপ্নের আকারেও আসে?
অভিযোগ: আপনি আপনার অনুবাদ অনুযায়ী প্রমাণ করতে চাচ্ছেন যে, মহনবী (স) এর এই স্বপ্নও ওহীর অন্তভূক্ত ছিল। স্বপ্নকে ওহী সাব্যস্ত করা ওহী সম্পর্কে অজ্ঞতারই প্রমান বহণ করে?।
উত্তর: সূরা আস-সাফফাত-এ ১০৩-৫ আয়াত ডকটর সাহেবের এই দাবী সম্পূর্ণরূপে অসার প্রমান করে। হযরত ইবরাহীম (আ) নিজের পুত্রকে বলেন:
“হে পুত্র! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে যবেহ করছি।” পুত্র উত্তরে বলে- “আব্বাজান ! আপনাকে যা নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা করে ফেলুন।” এর পরিষ্কার অর্থ হচ্ছে, সন্তান তার নাবী পিতার স্বপ্নকে শুধুমাত্র স্বপ্নেই মনে করেননি, বরং আল্লাহর হুকুম মনে করেছেন যা স্বপ্নের মধ্যে দেয়া হয়েছিল। সন্তান যদি একথা বুঝতে ভুল করতেন তবে আল্লাহ তাআলা তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতেন যে, আমরা নবীদেরকে স্বপ্নযোগে কোন নির্দেশ দেই না। কিন্তু পক্ষান্তরে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
“হে ইবরাহীম! তুমি স্বপ্ন সত্যে পরিণত করে দেখিয়েছ,আমরা সৎকর্মশীলদের এভাবেই পুরস্কৃত করে থাকি।”
৪৭. অর্থহীন অভিযোগ ও অপবাদ
অভীযোগ:আপনি লিখেছেনঃ “রসূলুল্লাহ (স) মদীনায় স্বপ্ন দেখেন যে, তিনি মক্কা মুআজ্জমায় প্রবেশ করেছেন এবং বাইতুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করেছেন। তিনি সাহাবায়ে কিরামকে এই খবর দেন এবং অতপর উমরা করার জন্য রওনা হয়ে যান। মক্কার কাফেররা তাকে হুদাবিয়া নামক স্থানে বাধা দেয় এবং তার ফলশ্রুতিতে হুদায়বিয়ার সন্ধি অনুষ্ঠিত হয়। কতিপয় সাহাবী সংশয়ে পড়ে যান এবং হযরত উমার (রা) তাদের প্রতিনিধি হয়ে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি আমাদের অবহিত করেননি যে, আমরা মক্কায় প্রবেশ করব এবং তাওয়াফ করব? তিনি বলেন, আমি কি একথা বলেছিলাম যে, এই সফরেই তা হবে?”
আপনার উপরোক্ত ভাষ্যের উপর এই আপত্তি তোলা যায় যে, (মাআযাআল্লাহ) স্বয়ং রসূলুল্লাহ (স) নিজের ওহীর বিষয় অনুধাবন করতে ভুলের শিকার হয়ছিলেন।
উত্তর:বুঝা যাচ্ছে না এই অভিযোগ কোথা থেকে সৃষ্টি হল যে, স্বয়ং রসূল্লাহ (স) ওহীর তাৎপর্য অনুধাবনে ভুলের শিকার হয়েছিলেন? উপরে যে বাক্য উধৃত করা হয়েছে তা থেকে তো শুধুমাত্র এতটুকু জানা যায় যে, মহানবী (স) এর স্বপ্নের কথা শুনে লোকেরা মনে করেছিল যে, এই সফরেই উমরা অনুষ্ঠিত হবে, এবং তা যখন হতে পারল না তখন লোকেরা সন্দেহে পড়ে গেল।
অভিযোগ:শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আপনি যে ঘটনা লিখেনেছন তা থেকে প্রতিভাত হয় যে, (১) রসূলুল্লাহ (স) প্রথম হতেই আল্লাহর পক্ষ থেকে অবহিত হয়েছিল যে, এ বছর তিনি বাধাপ্রাপ্ত হবেন এবং পরের বছর মক্কায় প্রবেশ করবেন। (২) রসূলুল্লাহ (স) সাহাবীদের মধ্যে কাউকেও এ সম্পর্কে অবহিত করেননি, বরং তাদের ভ্রান্তভাবে প্রভাবিত করেছেন যে, এই সফরেই মক্কায় প্রবেশ করা হবে। সাহাবীগণ যখনই অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেলেন এবং হযরত উমার (রা)-র মত প্রভাবশালী সাহাবী বলতে বাধ্য হলেন যে, আপনি তো আমাদের বলেছিলেন যে, আমরা মক্কায় প্রবেশ করব এবং বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করব। এর দ্বারা কি নবী (স) এর বিরুদ্ধে এই অপবাদ আরোপিত হয় না যে, তিনি সাহাবীদের ধোকা দিয়েছেন?
উত্তর: একথা কোথায় পাওয়া গেল যে, মহনবী (স) এই ধারণা দিয়েছিলেন? এটা তো কতিপয় লোক নিজ থেকে মনে করেছিল যে, এ বছর উমরা অনুষ্ঠিত হবে। স্বয়ং ডকটর সাহেব উপরে আমার যে কথা উধৃত করেছেন তাতে বলা হয়েছে যে, মহানবী (স) এর নিকট যখন বলা হলঃ“আপনি কি আমাদের খবর দেননি যে, আমরা মক্কায় প্রবেশ করব এবং বাইতুল্লাহ তাওয়াফ কবর” তখন মহানবী (স) তাদের উত্তর দেন “আমি কি বলেছিলাম যে, এই সফরই তা হবে?” সুস্পষ্টভাবেই বুঝা যাচ্ছে যে, স্বয়ং মহানবী (স) বাস্তবিকই যদি লোকদের এই ধারণা দিয়ে থাকতেন যে, এই সফরই উমরা অনুষ্ঠিত হবে তাহলে তিনি তাদের অভিযোগের জবাবে একথা কিভাবে বলতে পারেন?
এ প্রসংগে পাঠকগণ অত্র পুস্তকের (১২১-২২ পৃষ্ঠায় উর্ধূ) পূর্বেকার এ সম্পর্কিত আলোচনা বের করে পড়ে দেখুন যে, আসল বক্তব্য কি ছিল এবং তাকে দুমড়ে মুচড়ে কি বানানো হচ্ছে। মহানবী (স) স্বপ্নে দেখলেন যে, তিনি মক্কা মুআজ্জমায় প্রবেশ করেছেন এবং বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করেছেন। তিনি এই স্বপ্নের কথা সাহাবীদের নিকট হুবহু বর্ণনা করেন এবং তাদের সাথে নিয়ে উমরা পালনের উদ্দেশ্য রওনা হয়ে যান। এ অবস্থায় তিনি একথাও বলেন না যে, উমরা এবছর অনুষ্ঠিত হবে এবং এও বলেন না যে, উমরা এ বছর হবে না। প্রশ্ন হচ্ছে, এ সম্পর্কে ভুল ধারণা দেয়া অথাবা ধোকা দেযার অপবাদ কি করে আরোপিত হতে পারে? মনে করুন একজন সেনাপতিকে সর্বসময় কর্তৃত্বের অধিকারী সরকার একটি অভিযানে সেনাবাহিনীসহ রওনা হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিল। সেনাপতির জানা আছে যে, এই সফরে উক্ত অভিযান অনুষ্ঠিত হবে না, বরং পরে কোন এক সফরে অনুষ্ঠিত হবে এবং আসল উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে পথ পরিষ্কার করার জন্য এই অভিযান প্রেরিত হচ্ছে। কিন্তু সেনাপতি সৈনিকদের নিকট তা প্রকাশ করেন না এবং শুধু এতটুকু বলেন যে, আমাকে এই, অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেযা হয়েছে। এখন উপরোক্ত কথার কি এরূপ অর্থ করা যেতে পারে যে, সেনাপতি তার সৈনিকদের ধোকা দিয়েছেন? একজন সেনাপতির জন্য বাস্তবিকই কি এটা জরুরী যে, এই পরিকল্পনার কথা ফাস হয়ে গেলে সৈনিকদের মনোবলের উপর কি প্রভাব পড়তে পারে? সেনাপতি যদি সৈনিকদের নিকট না বলে যে, এই সফরে উদ্দিষ্ট অভিযান সফল হবে এবং একথাও না বলে যে, এই সফরে তা বাস্তবায়িত হবে না তবে শেষ পর্যন্ত কোন আইনের বলে এটাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করা যেতে পারে?
অভীযোগ:আল্লাহ তাআলা যখন নবী (স) কে পূর্বেই বলে রেখেছিলেন যে, ব্যাপারটি শেষ পর্যন্ত এই দাঁড়াবে তখন সাহাবীদের জিজ্ঞেস করার প্রেক্ষিতে আল্লাহ পাকের একথা বলার কি প্রয়োজন পড়ল যে, “আল্লাহ তার রসূলকে সত্য স্বপ্ন দেখিয়েছেন, আল্লাহ চান তো তোমরা অবশ্যই মসজিদুল হারামে প্রবেশ করবে?” এ থেকে প্রতিভাত হয় যে, (মাআযাল্লাহ) স্বয়ং নবী (স) সংশয়ে পড়ে গিয়েছিলেন যে, না জানি আল্লাহ আমাকে সত্য স্বপ্ন দেখিয়েছেন নাকি এমনিই বলেছেন যে, মক্কা চলে যাও, তোমরা মসজিদুল হারামে প্রবেশ করবে। এই সংশয় দূরীভূত করার জন্য আল্লাহ তাআলাকে পুনরায় নিশ্চয়তা প্রদান করতে হয়েছে যে, আপনি অস্থির হবেন না, আমরা সত্য স্বপ্ন দেখিয়েছি, আপনি অবশ্যই মসজিদুল হারামে প্রবেশ করবেন।
উত্তর: অভিযোগ দায়েরের উল্লাসে ডকটর সাহেব আত্বহারা হয়ে গেছেন যে, “তোমরা অবশ্যই মসজিদুল হারামে প্রবেশ করবে” এই সম্বোধথন রসূলুল্লাহ (স) কে নয়, বরং মুসলমানদের করা হয়েছে।لقد خلن বহুবচনের ক্রিয়াপদ। হুদায়বিয়ার সন্ধির প্রক্কালে মহাবনী (স) এর সাথে যেসব সাহাবী এসেছিলেন তাদের সম্বোধন করে বলা হয়েছে: আমরা আমাদের রসূলকে সত্য স্বপ্ন দেখিয়েছেন , তোমরা অবশ্যই মসজিদুল হারামে প্রবেশ করবে।
অভিযোগ: “আপনার বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে নবী (স) এর উপর মিথ্যার যে অপবাদ আরোপিত হয় তা আপনার জন্য কোন আশ্চর্যজনক ব্যাপার নয়। আপনি তো নিজের মিথ্যা কথনের বৈধতার সপক্ষে ও পর্যন্ত বলে ফেলেছেন যে, এরূপ ক্ষেত্রে নবী (স) ও কেবল মিথ্যা বলার অনুমতিই দেননি, বরং তাকে অপরিহার্য বলেছেন।”
উত্তর:মিথ্যার বেসতি করে সাফাই গাওয়া আর কি। হাদীস অস্বীকারকারীরা মিথ্যা অপপ্রচারে এখন এতটা বেপরোয়া হয়ে গেছে যে, এক ব্যক্তিকে সম্বোধন করে তার মুখের উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপেও ভুল করে না। তারা কি তাদের অভিযোগের সপক্ষে আমার কোন বক্তব্য পেশ করতে পারে যে, “এরূপ ক্ষেত্রে স্বয়ং নবী (স) ও মিথ্যার আশ্রয় নেয়ার শুধু অনুমতিই দেননি, বরং তা অপরিহার্য বলেছেন? ” মূলত আমি আমার একটি প্রবন্ধে যে কথা বলেছি তা এই নয় যে, “এরূপ ক্ষেত্রে” মিথ্যার আশ্রয় নেয়া বৈধ বা অপরিহার্য , বরং তা এই যে, যেখানে সত্যভাষণ কোন ভয়ংকর যুলুমের সহায়ক হতে পারে এবং সেই যুলুম প্রতিরোধের জন্য প্রকৃত ঘটনার পরিপন্থী বক্তব্য প্রদান ছাড়া উপায় থাকে না, সেখানে সত্য বলা অপরাধ হবে এবং অপরিহার্য পয়োজনের সীমা পর্যন্ত প্রকৃত ঘটনার পরিপন্থী কথা বলা কোন কোন অবস্থায় বৈধ এবং কোন কোন অবস্থায় অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ে। আমি সেই প্রবন্ধে এর একটি উদাহরণও পেশ করেছিলাম। মনে করুন, কাফের সৈন্যবাহিনীর মুসলিম বাহিনীর যুদ্ধ চলছে এবং আপনি শক্রবাহিণীর হাতে ধরা পড়ে গেলেন। এখন শত্রুবাহিণী আপনার নিকট জানতে চাচ্ছে যে, আপনার বাহিনী কোথায় অবস্থিত এবং এধরনের অন্যান্য সামরিক গোপন তথ্য জিজ্ঞেস করে। এখন আপনি বলুন যে, সত্য কথা বলে আপনি কি আপনার বাহিণীর যাবতীয় তথ্য ফাঁস করে দেবেন? এর বিরুদ্ধে ডকটর সাহেবের আপত্তি থাকলে তিনি এই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে এর সুস্পষ্ট জবাব দিন।
অভিযোগ:আপনি তো এতটা উদ্ধত ও অশালীন হয়েছেন যে, একথা বলতে গিয়েও লজ্জাবোধ করেননি যে-রাষ্টীয় ক্ষমতা যতক্ষণ করায়ত্ব করা যায়নি, ততক্ষণ নবী (স) মানুষের সমানাধিকারের শিক্ষা প্রচার করতে থাকেন। যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা করায়ত্ব হয়ে যায় তখন এই উপদেশ বাণী (পদদলিত করে)তাকের উপর দিয়ে নবী (স) রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব নিজের বংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দেন।
উত্তর:মুখের উপর মিথ্যা অপবাদের এটা আরেকটি উদাহরন। আমার যে প্রবন্ধের অবয়ব বিকৃত করে আমারই সামনে পেশ করা হচ্ছে তাতে একথা বলা হয়েছিল যে, ইসলামের নীতিমালা সমূহকে বাস্তবে কার্যকর করা অন্ধকার ও অনিশ্চিত পন্থায় সম্ভব নয়, বরং কোন মূলনীতিকে কোন বিষয়ের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে গিয়ে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যে, তা কার্যকর করার জন্য পরিবেশ অনুকূল কি না। যদি পরিবেশ অনুকূল না হয় তবে প্রথমে তা অনুকূল বানানোর চেষ্টা করতে হবে। অতপর তা কার্যকর করতে হবে। দৃষ্টান্ত হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছিল যে, ইসলামের সাম্যনীতির দাবী যদিও এই ছিল যে, অন্যান্য সকল পদের মত খলীফা নির্বাচনের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র যোগ্যতার দিকে লক্ষ্য রাখা উতিৎ ছিল এবং সেই যোগ্য লোকটি কোন গোত্রভুক্ত সেদিকে ভ্রক্ষেপ করা উচিৎ ছিল না। কিন্তু মহানবী (স) যখন লক্ষ্য করেন যে, খিলাফতের ব্যপারে উক্ত নীতি কার্যকর করার জন্য আরবের পারিপার্শিক অবস্থা এখনও অনুকুল হয়নি এবং কুরাইশ বংশ বহির্ভূত কোন লোককে খলীফা নিযুক্ত করলে সূচনাতেই ইসলামী খিলাফত অকৃতকার্য হওয়ার আশংকা রয়েছে, তখন তিনি উপদেশ দেন যে, কুরাইশ বংশ থেকেই খলীফা নির্বাচিত হবে। ডকটর সাহেব এ কথার যে বিকৃত অর্থ করেছেন তা প্রত্যেক ব্যক্তিই দেখতে পারেন।
৪৮. ………………………… আয়াতের তাৎপর্য।
অভিযোগ: সূরা তাহরীমের আয়াত আপনি এভাবে পেশ করেছেনঃ “মহানবী (স) তাঁর স্ত্রীদের মধ্য থেকে এক স্ত্রীর নিকট সংগোপনে একটি কথা বলেন। তিনি তা অন্যদের কাছে প্রকাশ করে দেন। মহনবী (স) এজন্য তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি বলেন, আপনি কিভাবে জানতে পারলেন যে, আমি অন্যদের কাছে তা বলে দিয়েছি? মহানবী (স) উত্তর দেন, (আমাকে মহাজ্ঞানী এবং সার্বিক ব্যাপারে জ্ঞাত সত্তা অবহিত করেছেন)।
অতপর আপনি জিজ্ঞেস করেছেন: “ বলুন কুরআন পাকে সেই আয়াত কোথায় যার সাহায্যে আল্লাহ তাআলা মহনবী (স) এর নিকট বানী প্রেরণ করতেন?”
প্রথমে তো বলুন, নবি (স) যখন বলেনঃ আমাকে “আল-আলীম ও আল-খাবীর” অবহিত করেছেন, তখন এর দ্বারা কিভাবে প্রমাণিত হল যে, মহানবী (স) বলেছিলেন যে, তাকে আল্লাহ তাআলা খবর দিয়েছে? এর অর্থ এই নয় কি যে, নবী (স) কে সেই ব্যক্তি অবহিত করেছেন যিনি এই গোপন কথা জানতে পেরেছিলেন? তবুও আমি স্বীকার করে নিচ্ছি যে, আল-আলীম আল-খাবীর বলতে এখানে আল্লাহ তাআলাই। কিন্তু এর দ্বারা কিভাবে প্রমাণিত হল যে, আল্লাহ তাআলা ওহীর মাধ্যমে এই সংবাদ দিয়েছিলেন? যে ব্যক্তি সমান্য গভীর দৃষ্টিতে কুরআন করীরেম অধ্যয়ন করছে তার সামনে এই সত্য গোপন নয় যে, কারো জ্ঞানকে যখন আল্লাহ তাআলা নিজের সাথে সম্পৃক্ত করেন তখন তার অর্থ (অবশ্যই) ওহীর মাধ্যমে জ্ঞানদান নয়। যেমন সূরা মাইদায় আছেঃ
“আর যা তোমরা শিকারী পশুকে শিখাওও তা সেই জ্ঞানের সাহায্যে শিখাও যা আল্লাহ তোমাদের শিখিয়েছেন”(আয়াত নং ৪-৫)
(১০৩ পৃ)বলুন, এখানে কি ……………..এর অর্থ এই যে, আল্লাহ শিকারী পশুদের প্রশিক্ষণদানকারীদের ওহীর মাধ্যমে শিক্ষা দেন যে, তোমরা এসব পশুকে এভাবে শিকার শিক্ষা দাও? অথবা ……….. অথবা ……. এর অর্থ কি এই যে, আল্লাহ তাআলা প্রতিটি মানুষকে তার অজানা যা কিছু তা ওহীর মাধ্যমে শিক্ষা দেন এবং স্বয়ং হাতে কলমে শিক্ষা দেন? এসব আয়াতে আল্লাহ তাআলা কর্তৃক জ্ঞানদান নির্দেশদান করার অর্থ যেমন ওহীর মাধ্যমে জ্ঞান বিতরণ বা নির্দেশ প্রদাণ নয়, তদ্রুপ …………….. এর অর্থও ওহীর মাধ্যমে, অবহিত করা নয়। এসব ক্ষেত্রে সাধারণত যেভাবে তথ্য অবগত হওয়া যায় ঠিক সেভাবেই নবী (স) উপরোক্ত তথ্যের জ্ঞান লাভ করেন।
উত্তর:খুলে দেখুন।সূরা তাহরীম-এর যে আয়াতকে কেন্দ্র করে এই আলোচনা করা হচ্ছে সেখানে তার সম্পূর্ণটা উধৃত করা হয়েছে। তাতে পরিষ্কার উল্লেখ আছে- (“আল্লাহ তাকে এ সম্পর্কে অবহিত করেন” তাই “আমাকে আল-আলীম আল-খাবীর অবহিত করেছেন” বলতে আল্লাহ তাআলাই হতে পারেন, অন্য কোন তথ্যপ্রদানকারী হতে পারে না। উপরন্ত আল-আলীম ও আল-খাবীর শব্দদ্বয় আল্লাহ ছাড়া আর কারো ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে পারে না। আল্লাহ ছাড়া অপর কেউ যদি খবর দিয়ে থাকতো তবে রসূলুল্লাহ (স) বলতেন- (এ সংবাদদাতা আমাকে অবহিত করেছেন।)
রসূলুল্লাহ (স) যদি সাধারণ মানবীয় তথ্যমাধ্যমে একথা অবহিত হয়ে থাকতেন তবে এই সমান্য বিষয়টি এক স্ত্রী তার গোপন কথা অন্য কারো কাছে বলে ফেলেছেন এবং কোন তথ্য প্রদানকারী তা তাকে অবহিত করেছেন, মূলতই কুরআনে উল্লেখিত হত না, আর তা এভাবে বর্ণনা করাও হত না যে, “আল্লাহ তাআলা নবীকে এ সম্পর্কে অবহিত করেছেন” এবং“আমাকে মহাজ্ঞানী ও মহাসংবাদদতা অবহিত করেছে”। কুরআন মজীদে উপরোক্ত ঘটনা এভাবে বর্ণনা করার উদ্দেশ্য তো ছিল লোকদের সতর্ক করে দেয়া যে, তোমাদের ব্যাপারসমূহ কোন সাধারণ মানুষের সাথে সম্পর্কিত নয়, বরং সেই রসূলের সাথে যাঁর পেছনে আল্লাহর মহান শক্তি সক্রিয় রয়েছে।
৪৯. হযরত যয়নব (রা)-র বিবাহ আলাহর হুকুমে অনুষ্ঠিত হয়ছিল কি না?
অভিযোগ:আপনি জিজ্ঞেস করেছেন, আল্লাহ তাআলা যে নবী (স) কে হুকুম দিয়েছিলেন, যায়দের স্ত্রীকে বিবাহ কর, তা কুরআনের কোথায় উল্লেখ আছে? প্রথমে দেখুন, আপনি লিখেছেন যে, নবী (স) “আল্লাহর র্নিদেশে” এই বিবাহ করেছিলেন। অথচ আয়াতে শুধুমাত্র এতটুকু আছে যার অনুবাদ আপনি এভাবে করেছেন, “আমরা এই মহিলার বিবাহ তোমার সাথে দিলাম”। যেমন আমি ইতিপূর্বে বলেছি, কুরআন করীমের বাচনভংগী এই যে, যেসব কথা আল্লাহ তাআলার বলে দেয়া কায়দা কানূন অনুযায়ী বলা হবে তা আল্লাহ নিজের সাথে সম্পৃক্ত করেন, চাই তা যার মাধ্যমেই প্রকাশ পাক। উদাহরণ স্বরূপ সূরা আল-আনফালে যুদ্ধে নিহতদের সম্পর্কে বলা হয়েছে-. “তাদেরকে তোমরা হত্যা করনি, বরং আল্লাহ হত্যা করেছেন” (১৭ নং আয়াত)। অথচ একথা সুস্পষ্ট যে, এই হত্যাকান্ড মুমিনদের হাতে সংঘটিত হয়েছে। … এর অর্থও তদ্রুপ। অর্থাৎ মহানবী (স) আল্লাহর বিধান অনুযায়ী এই বিবাহ করেন। সেই বিধান এই ছিল যে, তোমার জন্য হারাম করা হয়েছে (“তোমাদের ঔরসজাত পুত্রে দর স্ত্রীগণকে” (সূরা নিসাঃ ২৩)। আর মুখডাকা পুত্র যেহেতু ঔরসজাত পুত্র হতে পারে না, তাই তার পরিত্যক্ত স্ত্রীকে বিবাহ করা হরাম হতে পারে না, বরং জায়েয। মহানবী (স) আল্লাহর এই হুকুম অনুযায়ী হযরত যায়েদ (রা)-র তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে বিবাহ করেছিলেন।
উত্তর:হাদীস প্রত্যাখ্যানকারীদের দৃষ্টির সামনে তো কুরআন থেকে শুধুমাত্র নিজেদের মতলব খুজে বের করাই উদ্দেশ্য। কিন্তু এই বিষয়টি যারা হৃদয়গংম করতে চান তাদের নিকট আমি আবেদন করব যে, অনুগ্রহপূর্বক তারা যেন সূরা আল-আহযাবের প্রথম চারটি আয়াত গভীরভাবে অধ্যায়ন করেন, অতপর পঞ্চম রুকুর সেই আয়াতগুলোও যেন দেখে নেন যেখানে হযরত যায়েদ (রা) এর তালাকপ্রাপ্তার সাথে মহানবী (স) এর বিবাহের প্রসংগ উল্লেখিত আছে। প্রথম চারটি আয়াতে বলা হয়েছে যে, হে নবী! কাফের ও মুনাফিকদের দ্বারা দমে যেও না। আর আল্লাহর উপর ভরসা রেখে সেই ওহীর অনুসরণ কর যা তোমার উপর নাযিল করা হচ্ছে। মুখডাকা (পালক) পুত্র কখনও ঔরসজাত পুত্র নয়। এটা শুধু একটি কথা যা তোমরা মুখে প্রাকাশ কর। আল্লাহ তাআলার এই বাণীর মধ্যে পরিষ্কার ইংগীত পাওয়া যাচ্ছে যে, দুই নম্বর আয়াতে যে ওহীর উল্লেখ করা হয়েছে মুখডাকা পুত্রের সাতে তার সম্পর্ক আছে। কিন্তু এই প্রথার বিলোপ সাধনের জন্য স্বয়ং মহানবী (স) কে মুখডাকা পুত্রের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে বিবাহ করার হুকুম করা হয়েছিল কিনা উক্ত আয়াতে তার কোন ব্যাখ্যা নাই। অত:পর ৩৭-৩৯ নম্বর আয়াত পাঠ করে দেখুনঃ
(আরবী*****************************************************)
“অতপর যায়েদ যখন যয়নবের সাথে বিবাহ সম্পর্ক ছিন্ন করল তখন আমি তাকে তোমার সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ করলাম, যাতে মুমিনদের পোষ্যপুত্রগণ নিজ নিজ স্ত্রীর সাথে বিবাহবন্ধন ছিন্ন করলে সেসব স্ত্রীলোকদের বিবাহ করায় মুমিনদের কোন বিঘ্ন না হয়। আল্লাহর আদেশ কার্যকরী হয়েই থাকে। আল্লাহ নবীর জন্য যা বিধিসম্মত করেছেন তা করতে তার জন্য কোন বাধা নেই। পূর্বে যেসব নবী অতীত হয়েছে তাদের ক্ষেত্রেও এটাই ছিল আল্লাহর বিধান। আল্লাহর বিধান সুনির্ধারিত। তারা আল্লাহর বাণী প্রচার করত এবং তাঁকে ভয় করত, আর আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকেও ভয় করত না। হিসাব গ্রহণে আল্লাহ-ই যথেষ্ট”।
এই গোটা বক্তব্যের উপর গভীরভাবে চিন্তা করুন। এই বক্তব্য ও এই প্রকাশভংগী একথা কি বলে দিচ্ছে যে, মহানবী (সা) আল্লাহর বিধান অনুযায়ী একটি কাজ করেছিলেন, তাই আল্লাহ তাআলা এই কাজ নিজের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন? নাকি পরিস্কারভাবে একথা বলে দিচ্ছে যে, এই বিবাহের জন্য আল্লাহ তাআলা ওহীর মাধ্যমে নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং এই সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যের জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, মুখডাকা পুত্রদের স্ত্রীগণ ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রীদের মত হারাম থাকবে না? সাধারণ লোকদের জন্য তো এ ধরনের পুত্রদের তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীদের সাথে বিবাহ শুধু জায়েয ছিল কিন্তু মহানবী (সা)-এর জন্য তা ফরয করা হয়েছিল, এবং এই ফরয রিসালাতের দায়িত্বের অংশভুক্ত ছিল যার বাস্তবায়ন করতে মহানবী (সা) আদিষ্ট ছিলেন। এরপর ডকটর সাহেবের বক্তব্যের প্রতি লক্ষ্য করুন এবং নিজেই অনুমান করুন যে, এই লোকেরা বাস্তবিকই কি কুরআনের অনুসারী না কুরআনকে তাদের স্বকপোলকল্পিত মতবাদের অনুসারী বানাতে চায়?
৫০. (আরবী*******) এর অর্থ কি প্রচলিত রীতিনীতি না আল্লাহর নির্দেশ?
অভিযোগঃ পঞ্চম আয়াত আপনি এই পেশ করেছেন যে, নবী (সা) বানূ নাদীর –এর বিরুদ্ধে সৈন্যবাহিনী পরিচালনার সময় আক্রমণের উদ্দেশ্যে রাস্তা পরিস্কার করার জন্য আশপাশের অনেক গাছপালা কেটে ফেলেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
(আরবী*********************************)
“খেজুরের যেসব গাছ তোমরা কেটেছ এবং যেগুলো কান্ডের উপর অবশিষ্ট থাকতে দিয়েছ –এই উভয় কাজই আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে ছিল”-(সূরা হাশরঃ ৫)
এই প্রসংগে আপনি জিজ্ঞেস করছেন, “আপনি কি বলতে পারেন যে, এই অনুমতি কুরআন করীমের কোন আয়াতে নাযিল হয়েছিল?” সূরা হজ্জের যে আয়াতে বলা হয়েছে যে, (আরবী****************) “যেসব লোকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হচ্ছে তাদেরকে যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হল, কারণ তাদের উপর যুলুম করা হয়েছে”।–(সূরা হজ্জঃ ৩৯)।
উপরোক্ত আয়াতে ঈমানদার সম্প্রদায়কে যালেমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার অনুমতি হয়েছে। আর একথা সুস্পষ্ট যে, যুদ্ধের এই নীতিগত অনুমতির মধ্যে (নীতি ও আইনের আলোকে) যুদ্ধের জন্য অবশ্যকীয় প্রতিটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যে কথা আল্লাহর নির্ধারিত নীতিমালার আলোকে এবং আইনের বিধান অনুযায়ী হয়ে থাকে তাকে কুরআন (আরবী*******) বলে ব্যাখ্যা করে থাকে। যেমন- (আরবী*****************)
“উভয় দল সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হওয়ার দিন তোমাদের যা কিছু বিপদ এসেছিল তা আল্লাহর অনুমতিক্রমেই ছিল”।–(সূরা আল ইমরানঃ ১৬৫)। চাই সে বিধান বিশ্বজগতের বাইরে কার্যকর থাকন না কেন।
উত্তরঃ এই সম্পূর্ণ আলোচনা আমার যুক্তির কেন্দ্রীয় বিন্দু থেকৈ বিচ্যুত হয়ে করা হয়েছে। আমি লিখেছিলাম, মুসলমানগণ যখন একাজ করেছিল তখন বিরুদ্ধবাদীরা অপপ্রচার করর যে, বাগানের আংগুর ও ফলবান বৃক্ষসমূহ কেটে ফেলে তারা পৃথিবীর বুকে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে (দ্র. অত্র গ্রন্থের পৃষ্ঠা নং ১২৪, উর্দূ)। এটা ছিল আমার যুক্তির মূল ভিত্তি যা ডকটর সাহেব উদ্দেশ্যমূলকভাবে হটিয়ে দিয়ে নিজের বিতর্কের পথ পরিস্কার করার চেষ্টা করেছেন। আমার যুক্তি ছিল এই যে, ইহুদী ও মুনাফিকরা মুসলমানদের উপর একটি সুনির্দিষ্ট অপবাদ আরোপ করে। তারা বলত যে, এরা সঙস্কারক হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে এবং দাবী করছে, আমরা পৃথিবীর বুক থেকে অনাচারের মূলোৎপাটনকারী, কিন্তু এখন দেখে নাও পৃথিবীর বুকে কেমন অনাচার সৃষ্টি করছে। এর উত্তর যখন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে দেয়া হল যে, মুসলমানরা আমার অনুমতি সাপেক্ষে এ কাজ করেছে তখন এটা অবশ্যম্ভাবীরূপে তাদের অভিযোগের জবাব সাব্যস্ত হতে পারে এই অবস্থায় যে, যখন এ কাজের জন্য বিশেষভাবে আল্লাহর তরফ থেকে অনুমতি এসে থাকবে। পৃথিবীতে যুদ্ধের যে সাধারণ নীতি প্রচলিত ছিল তা জওয়াবের ভিত্তি হতে পারত না। কারণ সেই যুগে সামরিক নীতিমালা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছিল পাশবিক ও যুলুমভিত্তিক এবং মুসলমানরা স্বয়ং তাকে পৃথিবীর বুকে বিপর্যয়ের নামান্তর মনে করত। অভিযোগকারীদের উত্তরে এর আশ্রয় কিভাবে লওয়া যেত। এখন প্রকৃতিগত বিধান সম্পর্কে বলা যায় যে, এখানে তার বরাত দেয়া তো বাহ্যতই হাস্যকর হত। কোন ব্যক্তি বুদ্ধিজ্ঞান থাকলে সে কখনও ধারণাই করতে পারত না যে, এ স্থানে বিরুদ্ধবাদীরা যখন মুসলমানদের পৃথিবীর বুকে অনাচার সৃষ্টিকারী মনে করে থাকত, তবে আল্লহা তাআলা প্রতিউত্তরে বলে থাকতেন যে, মিয়া! প্রাকৃতিক বিধান তো এই। ডকটর সাহেব কুরআন মজীদ থেকে এখানে যে কয়টি উদাহরণ পেশ করেছেন তা থেকে যা কিছু প্রতীয়মানর হয় তা এই যে, সুন্নাত অস্বীকারকারীরা কুরআন বুঝতে সম্পূর্ণ অপারগ। তারা কুরআনিক আয়াতের পারস্পর, পূর্বাপর সম্পর্ক, স্থান ও প্রেক্ষাপট থেকে চোখ বন্ধ করে স্বাধীনভাবি এক স্থানের আয়াতের অর্থ সম্পূর্ণরূপে অন্য স্থানের আয়াত দ্বারা নির্দিষ্ট করে ফেলে।
৫১. আরও একটি মনগড়া ব্যাখ্যা
অভিযোগঃ ষষ্ঠ যে আয়াত আপনি পেশ করেছেন তা হলোঃ
(আরবী*****************************************)
“আর আল্লাহ যখন তোমাদের সাথে ওয়াদা করেছিলেন যে, দুই দলের (অর্থাৎ ব্যবসায়ী কাফেলা এবং কুরাইশ সৈন্যবাহিনী) মধ্যে একটি তোমাদের করায়ত্ব হবে এবং তোমরা চাচ্ছিলে যে, শক্তিহীন দলটি (ব্যবসায়ী কাফেলা) তোমাদের হস্তগত হোক। অথচ আল্লাহ তাঁর কলেমার দ্বারা সত্যকে সত্য প্রমাণ করে দেখাতে এবং কাফেরদের শক্তি চূর্ণ করে দিতে চাচ্ছিলেন”-(সূরা আনফালঃ ৭)।
অতপর আপনি জিজ্ঞেস করছেন, “আপনি কি সমগ্র কুরআন মজীদে একটি আয়াত দেখাতে পারবেন যার মধ্যে আল্লাহ তাআলার এই ওয়াদার কথা ব্যক্ত হয়েছিলঃ হে লোকেরা যারা মদীনা থেকে বদরের দিকে যাচ্ছ আমরা দুই দলের মধ্য থেকে একটি দল তোমাদের আয়ত্বে এনে দেব?”
নীতিগতভাবে এটা ছিল সেই পরিপূর্ণ প্রতিশ্রুতি যার ভিত্তিতে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের জামাআতকে বলেছিলেন যে, তাদেরকে পৃথিবীতে খেলাফতের পদে আসীন করা হবে, আল্লাহ এবং তাঁর রসূল জয়যুক্ত থাকবেন, বিজয় ও অবরোধ আল্লাহর দলভুক্তদের অনুকূলে থাকবে, মুমিনগণ সমুন্নত থাকবে। আল্লাহ কখনও মুমিনদের উপর কাফেরদের বিজয়ী করবেন না। মুজাহিদগণ বিরুদ্ধবাদীদের ধনসম্পদ ও মালিকানার অধিকারী হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। আর এই বিশেষ ঘটনায় এই “ওয়াদা” এবং স্বাভাবিক পরিস্থিতির সম্মুখীন করে –যার ব্যাখ্যা কুরআন করীম এভাবে করেছে যে,
(আরবী******************************) –অর্থাৎ তাদের মধ্যে একটি দল ছিল অস্ত্রহীন এবং তাদের বিরুদ্ধে বিজয়ী হওয়া নিশ্চিত মনে হচ্ছিল।
আমি ইতিপূর্বে বিস্তারিতভাবে বলেছি যে, যেসব কথা প্রাকৃতিক বিধানের সাথে সামঞ্জস্যশীল আল্লাহ তাআলা তাও নিজের সাথে সম্পৃক্ত করেন। আল্লাহর উপরোক্ত দুটি প্রতিশ্রুতিও এই শ্রেণীভুক্ত ছিল। অর্থাৎ পরিস্থিতি বলে দিচ্ছে যে, আলোচ্য দুটি দলের মধ্যে একটির উপর নিয়ন্ত্রণ লাভ ছিল নিশ্চিত।
উত্তরঃ এখানেও পূর্বাপর সম্পর্ক এবং স্থান-কাল উপেক্ষা করে নিপুণতা প্রদর্শনের চেষ্টা করা হয়েছে। একটি বিশেষ অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা চলছে। একদিকে কাফের সৈন্যবআহিনী অস্ত্রশস্ত্র ও রসদপত্রে সজ্জিত হয়ে মক্কা থেকে রওনা হয়ে আসছে এবং তাদের সামরিক শক্তি ছিল মুসলমানদের তুলনায় অনেক বেশী। অপরদিকে সিরিয়া থেকে কুরাইশ ব্যবসায়ী কাফেলা প্রত্যাবর্তন করছিল, যাদের সাথে ছিল প্রচুর পণ্য এবং নামমাত্র সামরিক শক্তি। আল্লাহ তাআলা বলেন, এ স্থানে আমরা মুসলমানদের প্রতিশ্রুতি দিলাম যে দুটি দলের মধ্যে যে কোন একটির বিরুদ্ধে তোমরা জয়যুক্ত হবেই। এটা ছিল পরিস্কার ও সুস্পষ্ট একটি প্রতিশ্রুতি, যা দুটি নির্দিষ্ট জিনিসের মধ্যে যে কোন একটি সম্পর্কে প্রদান করা হয়েছিল। কিন্তু ডকটর সাহেব তার দ্বিবিধ ব্যাক্যা দান করেন। একটি এই যে, উক্ত প্রতিশ্রুতি দ্বারা পৃথিবীতে শাসকের পদে আসীন করা এবং পরিপূর্ণ প্রতিপত্তির স্বাভাবিক ওয়াদা বুঝানো হয়েছে। কিন্তু যদি তাই বুঝানো হত তবে উভয় দলের উপর বিজয়ী হওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকত, দুটির মধ্যে একটির উপর নয়। দ্বিতীয় ব্যাখ্যা তিনি এই করেন যে, সেই সময়ের পরিস্থিতি বলছে যে, দুটি দলের মধ্যে একটির উপর নিয়ন্ত্রণ লাভ ছিল নিশ্চিত এবং পরিস্থিতির এই নিদর্শনকে আল্লাহ তাআলা নিজের প্রতিশ্রুতি সাব্যস্ত করেছেন। অথচ বদরের যুদ্ধে বিজয়ের পূর্বে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল তা বলছে যে, ব্যবসায়ী কাফেলার উপর নিয়ন্ত্রণলাভ তো নিশ্চিত, কিন্তু কুরাইশ বাহিনীর উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার। আল্লাহ তাআলা আলোচ্য আয়াতের পূর্ববর্তী আয়াতে স্বয়ং বলছেন, কুরাইশ বাহিনীর বিরুদ্ধে অবতীর্ণ হতে যাওয়াকালীন মুসলমানদের যে অবস্থা হয়েছিল তা এই যে (আরবী**************************) “তাদের যেন চাক্ষুস মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছিল”।–(সূরা আনফালঃ ৬)।
এটা কি সেই পরিস্থিতি যা বলছিল যে, কুরাইশ বাহিনীর উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা কাফেলার উপর নিয়ন্ত্রণ লাভের মতই নিশ্চিত? এ ধরনের নিপুণতার মাধ্যমে প্রতিভাত হয় যে, হাদীস প্রত্যাখ্যানকারী এই দলটি কুরআন থেকে নিজেদের মতবাদ গড়ে না, বরং কুরআনের উপর তাদের কল্পিত মতবাদ চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করে, কুরআনের বাক্যসমূহ তাদের মতবাদকে যতই প্রত্যাখ্যান করুক না কেন।
৫২. উল্টাপাল্টাপ জবাব
অভিযোগঃ সবশেষে আপনি যে আয়াত পেশ করেছেন তা এই যে,
(আরবী*************************************************)
“তোমরা যখন তোমাদের প্রতিপালকের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করছিলে তখন তিনি তোমাদের প্রার্থনার জবাবে বলেছিলে, আমি তোমাদের সাহায্যের জন্য অব্যাহতভাবে এক হাজার ফেরেশতা পাঠাব”-(সূরা আনফালঃ ৯)।
অতপর আপনি জিজ্ঞেস করেছেন, “আপনি কি বলতে পারেন যে, মুসলমানদের সাহায্য প্রার্থনার এই জওয়াব কুরআনের কোন আয়াতে নাযিল হয়েছিল?”
আমি কি আপনাকে জিজ্ঞেষ করতে পারি যে, আল্লাহ তাআলা যখন বললেন- (আরবী***********) (“আমি প্রত্যেক আবেদনকারীর আবেদনে সাড়া দিয়ে থাকি যখন সে আমাকে ডাকে”-(সূরা বাকারাঃ ১৮৬); তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রার্থনাকারীর প্রার্থনার জওয়াব কোন লিখিত দলীলের মাধ্যমে পাওয়া যায়? যে পন্থায় প্রত্যেক প্রার্থনাকারী আল্লহার পক্ষ থেকে তার প্রার্থনার জওয়াব পেয়ে থাকে ঠিক সেই পন্থায় ঈমানদারদের জামাআত তাদের প্রার্থনার জওয়াব পেয়েছিল। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতিটি কথা কাগজে মুদ্রিত পেতে চায়, প্রার্থনার জওয়াব তাদের নজরে কিভাবে পতিত হবে?
উত্তরঃ প্রশ্ন কি আর তার উত্তর কি! আমার প্রশ্ন ছিল, আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের প্রার্থনার জবাবে এক হাজার ফেরেশতা পাঠানোর যে সুস্পষ্ট ও চূড়ান্ত প্রতিশ্রুতির উল্লেখ এ আয়াতে করেছেন তা কুরআনের কোন আয়াতে নাযিল হয়েছিল। ডকটর সাহেব উপরোক্ত প্রশ্নের উত্তরে বলে, প্রত্যেক প্রার্থনাকারী যে পন্থায় তার প্রার্থনার জবাব আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত হয় ঠিক সেই পন্থায় বদরের প্রান্তরে মুসলমানগণও তাদের প্রার্থনার জবাব লাভ করেছিল। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, প্রত্যেক প্রার্থনাকারীই কি আল্লাহর পক্ষ থেকে এরূপ সুস্পষ্ট জওয়াব পেয়ে থাকে যে, তোমার সাহায্যের জন্য এত এত হাজার ফেরেশতা পাঠানোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে? সুনির্দিষ্ট সংখ্যার উল্লেখপূর্বক পরিস্কার ভাষায় এই জওয়াবের কথাও কি আল্লাহর কিতাবে লিখিত পাওয়া যায়?
এখানে আরও একটি অদ্ভুত ও চিত্তাকর্ষক কথাও লক্ষণীয় যে, আমাদের উপর “আল্লাহর প্রতিটি কথা কাগজে লিখিত পেতে চাই” এরূপ অপবাদ এমন লোকেরা আরোপ করছে যারা জেদ ধরে বসে আছে যে, যেসব ওহী লিখিত আকারে আছে আমরা শুধু তাই মানব।
৫৩. অক্ষরশূন্য ওহীর ধরন ও বৈশিষ্ট্য
অভিযোগঃ আপনি সামনে অগ্রসর হয়ে লিখেছেন, আপনি সামনে অগ্রসর হয়ে লিখেছেন, “ওহী অপরিহার্যরূপে শব্দসমষ্টির আকারেই হয় না, তা একটি ধারণার আকারেও হতে পারে যা অন্তরে ঢেলে দেয়া হয়”। আপনার দাবী তো সবজান্তার, অথচ এতটুকুও জানা নাই যে, কারো অন্তরে একটি ধারণার উদয় হবে এবং তার বাহন ভাষা হবে না এটা সম্পূর্ণ অসম্ভব। কোন ধারণাই ভাষা ছাড়া সৃষ্টি হতে পারে না, আর না কোন ভাষা ধারণা ছাড়া অস্তিত্ব লাভ করতে পারে। বিশেষজ্ঞ আলেমদের নিটক জিজ্ঞেস করুন, “ভাষাশূন্য ওহীর” “অর্থহীন সমাচার”-এর তাৎপর্য কি?
উত্তরঃ হাদীস প্রত্যাখ্যানকারীদের জানা নাই যে, ধারণা ও শব্দের রূপায়ন উভয়ই নিজ নিজ বৈশিষ্ট্যেও স্বতন্ত্র এবং তা একত্রেও সংঘটিত হয় না। মানবীয় মেধা কোন ধারণাকে ভাষায় রূপ দিতে এক সেকেন্ডের হাজার ভাগের একভাগই সময় নিক না কেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও মনে ধারণার উদয় হওয়া এবং মন তাকে ভাষায় রূপ দিতে সময়ের ক্রমধারা অবশ্যই রয়েছে। কোন ব্যক্তি যদি দাবী করে যে, মানুষের মনে অবশ্যই ভাষার আকারেই ধারণার উদয় হয় তবে সে একথার কি ব্যাখ্যা দিবে যে, একই ধারণা ইংরেজের মনে ইংরেজী ভাষায়, আরবদের মনে আরবী ভাষায় এবং আমাদের মনে আমাদের ভাষায় কেন উদিত হয়? অতএব এ থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, মানব মনে প্রথমে একটি ধাপরণা এককভাবে উদিত হয়, অতপর মেধাশক্তি তাকে নিজের ভাষায় ব্যক্ত করে। একাজটি খুব দ্রুততার সাথে সংঘটিত হয়, কিন্তু যেসব লোকের কখনও চিন্তা করে বলা অথবা লেখার সুযোগ হয়েছে তারা জানে যে, কখনও কখনও মনের মধ্যে একটি ধারণা ঘুরপাক খেতে থাকে এবং তা ভাষায় ব্যক্ত করতে মেধাশক্তির যথেষ্ট শ্রম স্বীকার করতে হয়। তাই একথা কেবলমাত্র এক আনাড়ীই বলতে পারে যে, ধারণা বাক্যের আকারেই উদিত হয় অথবা ধারণা ও ভাষা অপরিহার্যরূপে একসাথেই উপস্থিত হয়। ওহীর বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে একটি এই যে, আল্লাহ তাআলার তরফ থেকে কেবলমাত্র একটি ধারণা নবীর ওহী গায়র মাতলূ হওয়ার কারণ এই যে, এর ভাষা না আল্লাহর তরফ থেকে প্রদান করা হয়, আর না নবী তা বিশেষ শব্দসমষ্টির মাধ্যমে লোকদের পর্যন্ত পৌঁছাতে আদিষ্ট হন।
৫৪. ওহী মাতলূ ও ওহী গায়র মাতলুর মধ্যে পার্থক্য
অভিযোগঃ আপনি বলেছেন, “আরবী ভাষায় ওহী শব্দের অর্ত সূক্ষ্ম ইংগীত”। ওহীর আভিধানিক অর্থ সম্পর্কে কোন প্রশ্ন নেই, এর পারিভাষিক অর্থ সম্পর্কেই প্রশ্ন যা আল্লাহর পক্ষ থেকে আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম প্রাপ্ত হতেন। এই ওহীর শুধু “সূক্ষ্ম ইংগীত”-ই কি আল্লাহর পক্ষ থেকে হত না এর শব্দ সমষ্টিও আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত হত? শুধু ইশারাই যদি হত তবে তার অর্থ এই দাঁড়ায় যে, কুরআনের ভাষা ছিল স্বয়ং নবী (সা)-এর নিজস্ব।
উত্তরঃ এর জওয়াব ৩৫ নম্বর আলোচনায় বর্তমান রয়েছে, যার এক-দুইটি অংশ নিয়ে ডকটর সাহেব এই বিতর্কের অবতারণা করেছেন। কুরআন করীমের শব্দসমষ্টি ও তার বিষয়বস্তু উভয়ই আল্লাহ তাআলার এবং মহানবী (সা)-এর উপর তা এজন্য নাযিল করা হয়েছিল যে, তিনি নাযিলকৃত ভাষায় তা লোকদের নিকট পৌঁছাবেন। তাই এটাকে ওহী মাতলূ বলা হয়। দ্বিতীয় শ্রেণীর ওহী অর্থাৎ ওহী গায়র মাতলূ তার ধরন, বৈশিষ্ট্য, অবস্থা ও উদ্দেশ্যের দিক থেকে পূর্বোক্ত ওহী হতে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। তা রসূলুল্লাহ (সা)-কে পথনির্দেশ দেয়ার জন্য আসত এবং লোকদের নিকট তা আল্লাহ তাআলার ভাষায় নয়, বরং মহানবী (সা)-এর সিদ্ধান্ত, বক্তব্য ও কর্মের আকারে পৌঁছত। যদি কোন ব্যক্তি স্বীকার করে নেয় যে, মহানবী (সা)-এর নিকট প্রথমোক্ত শ্রেণীর ওহী আসতে পারে, তবে শেষ পর্যন্ত তার এটা স্বীকার করতে কি প্রতিবন্ধকতা আছে যে, সেই নবীর নিকট শেষোক্ত শ্রেণীর ওহীও আসতে পারে? কুরআনের মুজিযাসুলভ বাণী আমাদের যদি এই নিশ্চয়তা প্রদানের জন্য যথেষ্ট হয়ে থাকে যে, এটা আল্লাহ পাকেরই কালাম হতে পারে, তবে কি রসূলুল্লাহ (সা)-এর মুজিযাসুলভ জীবন এবং তাঁর মুজিযাপূর্ণ কার্যাবলী আমাদের এই নিশ্চয়তা দেয় না যে, এটাও আল্লাহ তাআলার পথনির্দেশেরই ফল?
৫৫. প্রতিষ্ঠিত সুন্নাত অস্বীকার করা রসূলুল্লাহ (সা) –এর আনুগত্য অস্বীকার করার নামান্তর
অভিযোগঃ আপনি বলেছেন, “হাদীসের বর্তমান ভান্ডারের মধ্য থেকে যেসব সুন্নাতের প্রমাণ পাওয়া যায় তা দুটি বৃহৎ শ্রেণীভুক্ত। এক প্রকারের সুন্নাত যার সুন্নাত হওয়ার ব্যাপারে শুরু থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত উম্মাত ঐক্যমত প্রকাশ করে আসছে। অন্য কথায় এগুলো হচ্ছে মুতাওয়াতির সুন্নাত। এর উপর উম্মাতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে কোন একটি সুন্নাত মান্য করতে যে কোন ব্যক্তিই অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করলে সে ঠিক সেইভাবে ইসলামের গন্ডী থেকে বের হয়ে যায়, যেভাবে কোন ব্যক্তি কুরআনের কোন আয়াত অস্বীকার করলে ইসলামের গন্ডী বহির্ভূত হয়ে পড়ে।
দ্বিতীয় প্রকারের সুন্নাত, যার প্রামাণ্যতা সম্পর্কে মতভেদ আছে অথবা হতে পারে। এই প্রকারের সুন্নাতের একটি সম্পর্কে যদি কোন ব্যক্তি বলে যে, তার তথ্যানুসন্ধান ও পর্যালোচনার ভিত্তিতে অমুক সুন্নাত প্রামাণ্য নয়, তাই সে তা মানতে বাধ্য নয়, তবে তার এই কথায় তার ঈমানের উপর কোন আঘাত আসবে না”।
আপনি কি বলবেন, আল্লাহ তাআলা কোথায় একথা বলেছেন, যে ব্যক্তি এই মুতাওয়াতির সুন্নাত মানতে অস্বীকৃতি জানাবে, যার উপর উম্মাতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সে কাফের হয়ে যাবে? আর যে ব্যক্তি বিতর্কিত সুন্নাত অস্বীকার করবে তার ঈমানের কোন ক্ষতি হবে না?
উত্তরঃ আল্লাহ তাআলা রসূলুল্লাহ (সা)-এর আনুগত্য ও অনুবর্তন করা বা না করাকে ইসলাম ও কুফরের মধ্যেকার সীমারেখা সাব্যস্ত করেছেন। অতএব যেখানে নিশ্চিতভাবে জানা যাবে যে, মহানবী (স) অমুক কাজের নির্দেশ দিয়েছেন অথবা অমুক কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেছেন অথবা অমুক বিষয়ে এই পথনির্দেশ দিয়েছেন, সেক্ষেত্রে আনুগত্য প্রত্যাহার অবশ্যম্ভাবীরূপে কুফরীর কারণ হবে। কিন্তু যেখানে মহানবী (সা)-এর কোন নির্দেশের সপক্ষে নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া না যায়, সেখানে নিম্নতম পর্যায়ের সাক্ষ্যপ্রমাণ গ্রহণ করা বা না করার বিষয়ে মতভেদ হতে পারে। যদি কোন ব্যক্তি দুর্বল সাক্ষ্যপ্রমাণ পেয়ে বলে যে, এই হুকুমের সপক্ষে মহানবী (সা)ত-এর নিকট থেকে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না, তাই আমি এর অনুসরণ করি না, তবে তার এই সিদ্ধান্ত স্বয়ং সঠিক হোক অথবা ভুল তাতে কুফরীতে পতিত হওয়ার কোন কারণ নেই। পক্ষান্তরে যদি কোন ব্যক্তি বলে যে, এটা রসূলুল্লাহ (সা)-এর নির্দেশ হলেও আমি তা মানতে বাধ্য নই, বা তা আমার জন্য কোন দলীল নয়, তবে এই ব্যক্তির কাফের হওয়ার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নাই। এটি একটি সম্পূর্ণ সোজা ও পরিস্কার কথা, যা হৃদয়ংগম করতে কোন ব্যক্তির মধ্যেই জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে না।