দ্বিতীয় অধ্যায়
ক্যারিয়ারের ভিত্তি: গুণগত শিক্ষা
ক্যারিয়ারের ভিত্তি: গুণগত শিক্ষা
ক্যারিয়ার গঠনের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হচ্ছে শিক্ষা। এই শিক্ষাই একজন ব্যক্তিকে প্রদান করবে প্রয়োজনীয় প্রাথমিক দক্ষতা। তবে বিশেষ কোন পেশার জন্য পাশাপাশি কিছু ট্রেনিং নিতে হতে পারে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ শুরু হয় আনুমানিক ৫/৬ বৎসর বয়স হতে যখন শিক্ষার্থী নিজে নির্বাচন করতে পারে না তার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষাক্ষেত্র, বিদ্যালয় বা বিষয়সমূহ। এই কাজটুকু পিতা-মাতা বা অভিভাবকরাই করে থাকেন।
Imparting the most effective education-ই হওয়া উচিত আমাদের সকলের লক্ষ্য। অথচ এ ক্ষেত্রে অনকে ধরনের প্রশ্নের সম্মুখিন হতে হয় সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীকে, বিশেষ করে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে। এদেশে বেশ কয়েক ধরনের System রয়েছে শিক্ষা ক্ষেত্রে। শিক্ষা গ্রহনের জন্যে একজন মানব শিশু তার শিক্ষা শুরু করতে পারে স্কুল থেকে অথবা বিকল্প হিসেবে মাদ্রাসায় গিয়ে।
আমাদের দেশেক স্কুল কলেজে পড়াশনার ক্ষেত্রে ভিন্নতা রয়েছে নানা কারণে। এ পর্যায়ে সিলেবাসের পার্থক্য হয়ে থাকে এবং সে কারণেই দেশীয় কারিকলাম এবং বৃটিশ কারিকলামে ভিন্নতা। দেশীয় কারিকালামের ক্ষেত্রে আবার বাংলা মিডিয়াম এবং ইংরেজি মিডিয়ামের বিভেদ।
বাংলা মিডিয়ামের ক্ষেত্রে আবার সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এর পার্থক্য। সাধারণভাবে বলা চলে এদেশে ব্যক্তি মালিকানায় পরিচালিত প্রতিষ্ঠানসমূহে তত্ত্বাবধান অপেক্ষাকৃত ভাল হয়ে থাকে। প্রধানত এ কারণেই সরকারি ফ্রি প্রাইমারি স্কুলসমূহের তুলনায় বেসরকারি কিন্ডার গার্টেন সিস্টেম পরিচালিত প্রতিষ্ঠানসমূহে পড়াশুনার মান উন্নততর। এক্ষেত্রে শিক্ষাকদের মান, তাদের sincerity কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত গ্রহনের দ্রুততা, ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা প্রদানে প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহে সফলতা ইত্যাদি বিষয়সমূহ (factors) জড়িত।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে শিক্ষার মান যে পর্যায়ে নেমে দিয়েছিল জাতি তা এখনও সম্পূর্ণরূপে কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে পড়েছি আমরা ইংরেজি ভাষার ক্ষেত্রে। ভাষার দক্ষতার এই ঘাটতির কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা নানা ভারব পিছিয়ে পড়ছে আজকাল। বর্তমান সময়ে তাই কোন কোন ক্ষেত্রে ভাষায় দক্ষতা অর্জন স্কুল কালেজের স্টান্ডার্ড নিরূপণের মাপকাঠি হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। প্রধাণত এ জন্যেই অনেকে ইংলিশ মিডিয়াম প্রতিষ্ঠানের দিকে ঝূঁকে পড়ছেন, আজকাল, এবং তা সঙ্গত কারনেই।
এদেশের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলসমূহে বৃটিশ কারিকুলাম এবং বাংলাদেশী কারিকুলাম উভয় পদ্ধতিরই প্রয়োগ রয়েছে। এই পদ্ধতিদ্বয়ের সুবিধা এবং অসুবিধা উভয়ই স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়ে অনেকের কাছেই। বৃটিশ কারিকুলামে পড়াশুনা করেছে এমন শিক্ষার্থীরা এ দেশের উচ্চ শিক্ষায় ভালভাবে অংশ গ্রহণ করতে পারে না। যারা এদেশেই উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে চায় তাদের জন্য বাংলাদেশের কারিকুলামের ইংলিশ মিডিয়ামই সর্বাপেক্ষা ভাল। পক্ষান্তরে এদেশে HSC বা A level করে বিদেশে যেয়ে গ্রাজুয়েশন করতে আগ্রহী কোন শিক্ষার্থীর জন্য তুলনামূলকভাবে A level system এ পড়াশুনা করা অনেক বেশি সুবিধাজনক।
কোর্স কারিকুলামে ভিন্নতার কারণে বাংলাদেশে বিদ্যমান মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থায়ও রয়েছে নানা প্রকার ভেদ। মাদরাসায় শিক্ষা গ্রহণকারী শিক্ষার্থীর জন্য সুবিধা হয় ধর্মীয় বিষয়সমূহ জানতে। কিন্তু এই সকল সুবিধার পাশাপাশি অনেকগুলো অসুবিধাও রয়েছে। যেমন:
(ক) এদেশে মাদরাসার সিলেবাস, কারিকুলামকে বর্তমান সময়ের উপযোগী করে সাজানো হয়নি।
(খ) এই সময়ের দাবি বাংলা, ইংরেজি, গণিত এবং বিজ্ঞানের বিষয়গুলো তাঁর কম প্রাধান্য দিয়ে পড়িয়ে থাকেন। ফলশ্রুতিতে মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে।
(গ) এদেশের মাদরাসার শিক্ষা আবার problem oriented ও হচ্ছে না।
এই সমস্যাগুলো শুধুমাত্র আমাদের দেশের মাদরাসা শিক্ষার ক্ষেত্রে পযোজ্য- অন্য দেশগুলোতে এমন নয়। মালয়েশিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থায় জীবনের শুরুতে কোন শিক্ষার্থীকে প্রথমেই মাদরাসায় পাঠানো হয়। পরবর্তীতে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে যখন সে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে তখন সে ইউরোপ বা আমেরিকার একজন গ্রাজুয়েটর সমমানে অবস্থান করে থাকে, এমনকি modern practical বিষয়গুলোতে। এ দেশের ক্ষেত্রে এই ব্যর্থতার কারণসমূহ হচ্ছে যেমন একদিকে সিলেবাস কারিকুলামে ঘাটতি অন্যদিকে আবার পদ্ধতিগত ঘাটতি, পরীক্ষা পদ্ধতির ত্রুটি; সর্বোপরি একজন ছাত্র-ছাত্রীকে পূর্ণাঙ্গ মানুষে পরিণত করার মানসে প্রয়োজনীয় সকল উপাদান প্রদানে ব্যর্থতা। এ সকল সমস্যা উত্তরণের জন্য অনেক বুদ্ধিমান অভিভাবক তাদের সন্তানকে প্রাথমিকভাবে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন এবং বাসায় আলাদাভাবে ধর্মীয় শিক্ষকের ব্যবস্থা করে ধর্মীয় শিক্ষার ব্যাপারে ঘটতিটুকু পূরণ করেন।
এভাবে হিসাব মেলানোর পরে সব শেষে আসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুণগত মানের প্রশ্ন। ভাল ক্যারিয়ার গঠনের ক্ষেত্রে ভাল প্রতিষ্ঠানের কোন বিকল্প নেই। তাই অভিভাবককে এ বিষয় সর্বাপেক্ষা বেশি নজর দিতে হয়ে সঙ্গত করনেই। বুদ্ধিমান পিতা-মাতা অনেক কিছুকে বিসর্জন দিচ্ছেন এই অর্জনটুকুকে ধরার জন্যে। পিতা-মাতাকে মনে রাখতে হবে বিদ্যা শিক্ষার ক্ষেত্রে ভাল অর্জন হচ্ছে-
(ক) সর্বপ্রকার ভাষার (বাংলা এবং ইংরেজি) উপরে দক্ষতা অর্জন। এ ক্ষেত্রে লিখিত এবং কখ্য উভয় দিকই বিবেচনায় রাখতে হবে। এ প্রসঙ্গে দৃঢ়তার সাথে বলা যায় যে তৃতীয়/চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থীর জন্য Creative writing খুবই উপযোগী। এ বয়সের কোন শিক্ষার্থী তার পরিচিত কোন বিষয়ে নিজে বানিয়ে লেখার দক্ষতা অর্জন করবে সেটাই কাম্য হওয়া উচিত। বর্তমান সময়ের মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় িএই বিষয়টিকে একেবারেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। এক্ষেত্রে এমন কি পঞ্চম শ্রেণীর বাংলা পাঠ্য পুস্তকে কোন গদ্য বা পদ্য থেকে শিক্ষার্থী নিজে বানিয়ে উত্তর দিবে এমন বর্ণনামূলক প্রশ্ন মাদরাসাবোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত বইতে কমই দেওয়া হয়েছে। অভিভাবক- অভিভাবকাকে এই ঘাটতি পূরণ করতে হবে বাড়িতে বাড়তি শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে অথবা বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিজে কাজটি করবেন গুরুত্বের এবং সতর্কতার সাথে।
(খ) উপরে উল্লেখিত বয়সে বিদ্যা শিক্ষার ক্ষেত্রে অর্জন নিরূপণের দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে গণিতের উপর দক্ষতা অর্জন। এদেশে অনেকের জন্য গণিত ভীতি সাধারণ (common) ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে আজকাল। সাধারণভাবে বলা চলে বিদ্যালয়ে এই বিষয়ে ভাল মানের শিক্ষকের অভাবই সমস্যাটিকে সৃষ্টি করছে মূলতঃ। এই সমস্যাটাকে কোনভাবেই এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। যে শিক্ষার্থী ছোট কাল হতে ভালভাবে বুঝে অংক করতে শিখবে না ভবিষ্যতে জীবনে সে বিজ্ঞান বা কমার্স দুটো অনুষদের বিষয়সমূহ হতে পিছিয়ে পড়বে। যারা ভাল অংক করতে পারে তাদের মধ্যে এ ধরনের (reasoning) তৈরি হয়ে যার ফলে তাদের ব্যক্তিত্বও অনেকটা প্রভাবিত হয়ে থাকে। মূলত এ কারণেই USA-এর মিলিটারি একাডেমীতে plebe Maths নামক একটি বিষয় রাখা হয়েছে সকল ক্যাডেটের জন্য। গুরুত্বের সাথে বিষয়টিকে উপস্থাপন করা হয় সেখানে। গণিতের উপরে গুরুত্বের অভাব বর্তমান সময়ে মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে বেশ কিছুটা পিছিয়ে দিয়েছে। এই ঘাটতি কাটিয়ে উঠার জন্যে আন্তরিকভাবে প্রচেষ্টা হতে হবে একাধারে যেমন বিদ্যালয়/মাদরাসা শিক্ষক-শিক্ষিকাকে আবার বাড়িতে অভিভাবককে। যে সমস্ত অভিভাবক মাদরাসাকেই নির্বাচন করবেন বিদ্যাপিঠ হিসেবে তাদের উচিৎ হবে এই বিষয়ে শিক্ষা দানের জন্য বাড়িতে বাড়তি ব্যবস্থা করা।
এদেশে বড় বড় শহরগুলোতে আজকাল বেশ কিছু ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীকে প্রাথমিকভাবে play Group (PG) শ্রেণীতে এ স্কুলে ভর্তি করে কায়েকটি বছর (আনুমানিক Std 3 পর্যন্ত) এখাবে রেখে এবং এর পরে স্কুলে পরিবর্তন করে ভাল বাংলা মিডিয়ামক স্কুলে স্থানান্তার করে উভয় System–এর সুবিধা নিচ্ছেন কেউ কেউ। এ ধরনের সিদ্ধান্ত প্রকৃতপক্ষে অনেক গুলো সুবিধা দিয়ে থাকে।
PG থেকে ক্লাস 3 পর্যন্ত শিক্ষার সময়কালে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো-
(ক) ক্লাসের সাথে বয়সের সঠিক সামঞ্জস্য রাখতে হবে। কোন ক্রমেই বয়সের তুলনায় শিক্ষার্থীকে উপরের ক্লাসে উঠিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না।
(খ) শিক্ষার্থীর মনের উপরে চাপ দিয়ে শিক্ষা দান করা যাবে না। বরং শিক্ষা দান পদ্ধতি যেন এমন হয় যে শিক্ষার্থী আনন্দ ঘন পরিবেশে শিখতে পারে।
(গ) এই বছরগুলোতে সবচেয়ে বড় অর্জন হতে হবে নিজের ভাষায় ব্যক্ত করার (লিখিত ও কথ্য উভয় ক্ষেত্রেই) দক্ষতা অর্জন করা।
চতুর্থ শ্রেণী হতে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা
আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় নবম শ্রেণীতে উঠে ছাত্র-ছাত্রীরা বিভিন্ন গ্রুপে (আর্টস, সাইন্স, কমার্স) বিভক্ত হয়ে যায়। সাধারণত এর পূর্বের সময়টার জন্য শিক্ষার্থীদের পঠিত বিষয় একই থাকে। এ ব্যাপারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভেদের কথা আগেই বিবৃত হয়েছে। এবারে যদি আমরা একটা বিশেষ প্রতিষ্ঠানের দিকে মনোযোগ নিবেশ করি তাহলে আমাদের আলোচনা নিম্নরূপ হবে।
চতুর্থ শ্রেণী হতে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত সময় অর্থাৎ সর্বমোট পাঁচটি বছর পরো জীবনের প্রেক্ষিতে খুব বড় ব্যাপ্তি না হলেও এ সময়টা অবশ্যই খুবই মূল্যবান। মানব জীবনের এই সময়ের ক্ষুরধার মেধা এর পরবর্তী বা পূর্ববর্তী জীবনে আর কখনও পাওয়া সম্ভব নয়। এ সময়েই কোন শিক্ষার্থী তার জীবনের বহু মূল্যবান জ্ঞানের সংস্পর্শে আসে। এ সময়ে যারা তাদের সমস্ত সুযোগকে একত্রীভুত করে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারে তারাই জীবন যুদ্ধে বিজয়ীর আসনে আসীন হয়। এ ব্যাপারে অভিভাকের নিখুঁত পরিকল্পনা এবং সঠিক সিদ্ধান্ত ক্রিয়া করে ছেলেমেয়েদের উপর। এ সময় যেসব ছাত্র- ছাত্রীরা তাদের প্রিয় শিক্ষকের সান্নিধ্য, সহযোগিতা এবং তত্ত্বাবধান পায় তারাই জীবন যুদ্ধে এগিয়ে যায় পরিপূর্ণভাবে। এর সাথে যদি যুক্ত হয় ব্যক্তির অদম্য স্পৃহা এবং নিরলস প্রচেষ্টা তাহলে সম্ভব হয় ইপ্সিত লক্ষ্যে পৌছানো।
এ বয়সের মধ্যেই একটা সময়ে শিক্ষার্থী ব্যক্তিস্বাতন্ত্র অর্জন করতে পারে, যার উপরে নির্ভর করে সে বাবা-মাকে ছেড়ে আলাদাভাবে জীবন যাপন করতে শেখে। সেজন্য সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রী থাকাকালীন কোন কোন বালাক-বালিকাকে তাদের পরিবার থেকে আলাদা করে ক্যাডেট কলেজে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। একইভাবে কোন কোন ছেলে-মেয়েকে আবার বাংলাদেশ ক্রীয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (BKSP) ভর্তির জন্য আলাদা করে ফেলা হয় এ বয়সেই। এদিক থেকে চিন্তা করলে এ সময়টা তাদের জন্য বিশেষভাবে অর্থবহ যারা ভবিষ্যতে ক্যারিয়ার হিসাবে সামরিক বাহিনীতে যোগদান করতে বা পেশা হিসেবে খেলাধলাকে বেছে নিতে চান। এদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সামরিক বাহিনীতে অফিসার হতে পারা একটি উন্নত মানের পেশা গ্রহনের সুযোগ পাওয়ার নামান্তর মাত্র। বর্তমান সময়ে ডিফেন্স সার্ভিস যারা অফিসার হিসাবে নির্বচিত হচ্ছেন তাদের অধিকাংশেরই ক্যাডেট কলেজ ব্যাকগ্রাউন রয়েছে। সেদিন হতে বিবেচনা করলে বলা চলে সামরিক বাহিনীতে চাকুরিকে যারা বেছে নিবেন ভবিষ্যতে, তাদের টার্গেট হওয়া উচিত ক্যাডেট কলেজে পড়াশুনার সুযোগ গ্রহণ করা।
বয়সের বিষয় বিবেচনা করলে এই সময়টা আলাদাভাবেই গুরুত্ব বহন করে। এ সময়েই কোন ব্যক্তি তার শারীরিক ও মানসিক ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা বেশি বিকাশের সুযোগ পেয়ে থাকে। Teen age হচ্ছে বয়সন্ধিকাল। এ সময়ের demand ব্যকিক্রমধর্মী এবং নানাবিধ। বালক-বালিকাদের মানসিক ও দৈহিক বিকাশের পাশাপাশি কিছু বাড়তি বিষয়ে সমস্যাগ্রন্থ করে ফেলে এই বয়স। এই সময়ে তাই পিতা-মাতা বা অভিভাবককে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে তাদের ছেলে-মেয়েদের ব্যাপারে। বালক-বালিকারা এ বয়সে যথেষ্ট Sensitive থাকে।
মানব জীবনের সম্পূর্ণ দৈহিক বিকাশের বেশির ভাগই সম্পন্ন হয়ে থাকে এই বয়স কালের মধ্যে। এই ব্যাপারটাও বিবেচনায় আসা উচিৎ। সেজন্যে এ বয়সে পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ বাড়াতে হয়। শিক্ষা জীবনের মোট তিনটি দিক রয়েছে- তা হলো একাডেমিক পড়াশুনা, সুস্বাস্থ্য অর্জন এবং চরিত্র গঠন। ৪র্থ শ্রেণী হতে ৮ম শ্রেণী সময়কালে শেষোক্ত দুটি বিষয়কে বিশেষ প্রাধান্য দেওয়া উচিৎ। চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রে যদি কেউ প্রয়োজনীয় গুরুত্ব দিতে ব্যর্থ হয় তবে এ সময়েও কিছু পদস্খলন হতে পারে, যা ব্যক্তির জীবনে অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করতে পারে।
ক্যাডেট কলেজ এবং BKSP তে পড়াশুনা
এ পর্যায়ে ক্যাডেট কলেজে ভর্তি এবং সেখান থেকে পড়াশুনা করা সম্পূর্কে কয়েকটি কথা বলা উচিৎ। ক্যাডেট কলেজ সিস্টেম এ দেশের জন্য এক ব্যতিক্রমধর্মী সিস্টেমই বটে। এই ব্যবস্থায় একজন শিক্ষার্থীকে তার পাঠ্য পুস্তক নির্ভর পড়াশুনা বাইরেও বাড়তি কিছু ট্রেনিং (মিলিটারী ট্রেনিং এর আদলে) দেওয়া হয় যা ভবিষ্যতে মিলিটারী সার্ভিসের উপযোগী করে গড়ে তোলার মানসিকতা তৈরী করে। এই ট্রেনিং বেশ কষ্টসাধ্য হওয়ার কারনে অনেক ছাত্র-ছাত্রীই তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে কোন এক সময়ে। প্রাথমিক দিনগুলোতে বাবা-মাকে ছেড়ে দূরে থাকতে পছন্দ করে না কেউ কেউ, অবশ্য পরে তা ধাতস্থ হয়ে যায়। এ সকল negative দিক এ পাশাপাশি অনেক গুলো ভাল দিকও রয়েছে ক্যাডেট কলেজ সিস্টিম-এ। ক্যাডেট কলেজ একজন ছাত্র/ছাত্রীকে পূর্ণাঙ্গ মানুষে রূপন্তর করার জন্য প্রয়োজনীয় ট্রেনিং দিয়ে থাকে। এই ট্রেনিং তাকে কষ্ট সহিষ্ণু করে তৈরী করে, তার মধ্যে নেতৃত্ব প্রদানের যোগ্যতা সৃষ্টি করে এবং সর্বোপরি অন্যের প্রতি নির্ভরতা কমিয়ে আনে। কেউ কেউ বেল থাকেন যে ক্যাডেট কলেজে অধ্যয়ন শেষে কোন শিক্ষার্থী আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে এবং অল্প বয়সে পরিবার ছেড়ে দুরে থাকার ফলে তাদের মধ্যে মমত্ব বোধ কমে যায় বহুলাংশে। সম্ভবত এটাই প্রয়োজন একজন সামরিক অফিসার হওয়ার জন্যে।
বর্তমান বিশ্বে খেলাধূলাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করার প্রবণতা বেড়েছে বেশ কিছুটা। আমাদের দেশেও এর ঢেউ এসে লেগেছে। এর ফলশ্রুতিতে দেশে BKSP নামে একটি ক্রিড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ভর্তিকৃত ছাত্র-ছাত্রী খেলাধূলা শেখার পাশাপাশি Academic পড়াশুনাও চালিয়ে যায়। BKSP –তে HSC পর্যন্ত পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়। এখানকার সিস্টেমের কিছুটা মিল রয়েছে ক্যাডেট কালেজের সিস্টেমের সাথে। তবে ফলাফলের ক্ষেত্রে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে আবার। ক্যাডেট কলেজে পড়াশুনা করলে মিলিটারি অফিসার হওয়া সহজতর হয়। এবং BKSP এর ছাত্র-ছাত্রীরা পরবর্তিকালে ভাল মানের খেলোয়াড় হতে পারে। পেশা হিসাবে খেলাধূলাকে গ্রহণ করে জীবনের খুব বেশি বয়স পার করা যায় না বলে অনেকে BKSP–তে পড়াশুনার পক্ষে মত দেন না।
বিষয় নির্বাচন
ক্যারিয়ার গঠনের প্রস্তুতিকল্পে বিষয় নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি ভূমিকা রেখে থাকে। ঈপ্সিত লক্ষ্যে পৌছানোর জন্যে যে বিষয়ের প্রয়োজন সেটা যেমন লক্ষ্মণীয় ব্যাপার, পাশাপাশি সে ব্যপারে শিক্ষার্থীর আগ্রহ আদৌ রয়েছে কিনা তাও ধর্তব্যের বিষয়।
একটি জাতির জ্ঞান-বিজ্ঞান, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প সাহিত্য, সংস্কৃতি ও রাজনীতি ইত্যাদি ক্ষেত্রেগুলোতে যারা ভবিষ্যত নেতৃত্ব প্রদান করবেন তাদের মানসগঠন (Mind-set) নির্ভর করে যথাযথ শিক্ষার উপর। এ কারণে বাংলাদেশের শিক্ষা পর্যায় প্রাথমিক শিক্ষার পর মাধ্যমিক শিক্ষার মাঝামাঝিতে অর্থাৎ নবম শ্রেণীর শুরুতে একজন শিক্ষার্থীকে বেছে নিতে হয় তার পছন্দের বিভাগ অর্থাৎ মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা নাকি বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হবে সে। উচ্চ শিক্ষা যদি ক্যারিয়ারের সোপান হয় তবে সেই সোপানের শুরু এ বিভাগ নির্বাচনের মাধ্যমে। এ নির্বাচন প্রক্রিয়া অত্যন্ত সতর্কতার মাধ্যমে হওয়া উচিত এবং এখানে শিক্ষার্থীর অভিপ্রায়, সহজাত আগ্রহ এবং অনুরাগ গুরুত্ব পাওয়া উচিত। অনেক ক্ষেত্রে এ বিষয়টির প্রতি অভিভাবক এবং শিক্ষকদের উদাসীনতা একজন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দিতে পারে।
নবম শ্রেণী, একাদশ শ্রেণী এবং স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীতে বিষয় (subject) নির্বাচনের ব্যাপারে সাধারণভাবে যে সমস্ত বিষয় বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন তা হলো-
(ক) অংকে ভাল এবং বিজ্ঞানে আগ্রহী না হলে কারো বিজ্ঞান গ্রুপে যাওয়া উচিৎ নয়। অবশ্য এর পাশাপাশি আরও প্রয়োজন হলো কঠোর পরিশ্রমের ইচ্ছা এবং যোগ্যতা, বিজ্ঞানের নানা বিষয় সম্পর্কে জানার প্রবল ইচ্ছা, শান্ত এবং ধীর-স্থির মেজাজ এবং বিজ্ঞানের খুঁটি নাটি নিয়ে ধৈর্যসহকারে চিন্তা করার মত একটি আগ্রহী ও অনুসন্ধিৎসু মন।
(খ) কলা ও মানবিক এবং সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের বিষয়সমূহ অধ্যয়নের জন্য প্রাথমিক প্রয়োজন দীর্ঘ লেখার (Writing) যোগ্যতা, কল্পনাপ্রবণতা, Critical মন এবং নির্বাচিত বিষয়ে অধ্যয়নের আগ্রহ।
(গ) বাণিজ্য অনুষদের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রয়োজন ধীর-স্থির স্বভাব এবং দূরদৃষ্টি। বাস্তব জ্ঞানসম্পন্ন আত্মপ্রত্যয়ী এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী তরুণ যার ব্যবস্থাপক হওয়ার যোগ্যতা এবং ঝাঁক রয়েছে সে বাণিজ্য অনুষদে পড়াশুনা করলে ভাল করতে পারবে।
বিষয় নির্বাচনে অনেকে ভুল করে থাকেন নানাভাবে। েএ সকল ভুলের মধ্যে একটি সাধারণ ভুল হলো অল্প পরিশ্রমে ভাল রেজাল্ট করার সুযোগ সন্ধান। যে বিষয়ে অল্প পরিশ্রমে ভাল রেজাল্ট করা যায় সেটা আবার ভাল ফল দিতে পারবে এটাই বা কিভাবে বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে। তাই যদি সত্য হতো তাহলে বর্তমান প্রতিযোগিতার যুগে অনেকেই সে ধরনের সিদ্ধান্তিই নিত। যে প্রাপ্তি পরিশ্রমের বিনিময়ে অর্জন করা সম্ভব তা সহজেই ভঙ্গুর হবে এটাই তো স্বাভাবিক। এটাই জগতের নিয়ম। দ্রুত বৃদ্ধি প্রাপ্ত লাউয়ের লিক লিকে ডগা কি কখনও শাল বৃক্ষের শত বছরের আয়ুস্কাল অর্জনে সমর্থ হয়? প্রকৃতপক্ষে এদেশে যেখানে বেকার সমস্যা প্রকট সেখানে অল্প পরিশ্রমে ভাল রেজাল্ট করার সিদ্ধান্ত নিয়ে বেকার সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে অনেকেই।
ক্যারিয়ার গঠনের পরিকল্পনা গ্রহণ যেমন দূরুহ ব্যাপার, পাশাপাশি তার বস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন হয় কঠোর এবং দীর্ঘ মেয়াদী পরিশ্রম। এ পর্যায়ে একটি উদাহরণ। সত্তর দশকের পূর্ব পর্যন্ত তৎকালীন পাকিস্তানে সিএসপি অফিসার হওয়াকে অনেকেই প্রথম টার্গেট হিসাবে গণ্য করতেন। ব্যাপারটা বাস্তবিকই সত্য ছিল তখন। সম্মান, প্রতিপত্তি, সামাজিক অবস্থান, সবকিছু মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাল ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে এই চাকুরি তখনকার সময়ে সর্বশ্রেষ্ঠ টার্গেট ছিল। যারা ভবিষ্যতে সিএসপি অফিসার হবেন বলে পরিকল্পনা গ্রহণ করতেন তাদের অনেকেই নবম শ্রেণী হতেই এ ব্যাপারে প্রস্তুতি শুরু করতেন প্রকারান্তরে। এসএসসি পর্যায়ে তাদের অনেকে বিজ্ঞান গ্রুপের ছাত্র হতেন। এ সময়ে পঠিত বিষয়ের মধ্যে বিশেষ করে গণিত এবং বিজ্ঞান সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিস (সিএস এস) পরীক্ষার এই দুটো বিষয়ে ভাল করতে সাহায্য করতো। বিজ্ঞান পড়ার মানসে তারা এ পর্যায়ে বিজ্ঞান নিতেন না। এইচএসসি পর্যায়ে তারা আর্টস নিতেন এবং বিষয় নির্বাচনে ইংরেজি, General History (ইতিহাস), অর্থনীতি এর প্রাধান্য দিতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীতে এ সমস্ত বিষয়ের কোন একটিকে বেছে নিতেন। এভাবে স্নাতক (সম্মান) এবং স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কোন বেসরকারি কলেজে অধ্যাপনা করতেন কিছু দিনের জন্য। উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রথমত: কলেজে শিক্ষকতার কাজে অফুরন্ত সময় পাওয়া যেত সিএসএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য। দ্বিতীয়ত: কলেজের অধ্যাপনা প্রার্থীকে সুন্দরভাবে কথা বলার আর্ট রপ্ত করতে, বক্তৃতা দিতে উপরোন্ত মানুষকে convince করতে সহায়তা করতো। এভাবে চিন্তা করলে দেখা যায় নবম শ্রেণী থেকে শুরু করে কলেজে অধ্যাপনার আনুমানিক দুই/তিনটি বছর পর্যন্ত সময় ছিল তাদের সিএসএস পরীক্ষার প্রস্তুতির সময়। প্রকৃতপক্ষে পেশা নির্বাচন সংক্রান্ত কার্যক্রম দাবি করে এতটা নিখুঁত পরিকল্পনা। এর সাথে বাড়তি প্রয়োজন হচ্ছে প্রবল আগ্রহ আর ইস্পাত কঠিন মনোবল ঈপ্সিত লক্ষ্যে পৌছানোর। মনে রাখতে হবে জীবনের সাফল্য সবার জন্য নয়, শুধুমাত্র অকুতোভয় সৈনিক তার যোগ্যতা বলে ছিনিয়ে আনতে পারে বহু প্রতীক্ষিত এ ধরনের সাফল্য। এক্ষেত্রে প্রশ্ন এসে যায় ভাগ্য কি তাকে টেনে নিয়ে যাবে অজনা কোথাও, নাকি সে তার প্রচেষ্টায় ভাগ্যকে টেনে এনে দাঁড় করবে তার পাশে।
এসএসসি এবং এইচএসসি পর্যায়ে পড়াশুনা
আমাদের দেশে ক্যারিয়ার গঠন প্রক্রিয়ায় এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের গুরুত্ব অপরিসীম। এসএসসি পরীক্ষা হচ্ছে জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষা। এর ফলাফলের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয় এইচএসসি লেভেল ভাল কলেজে ভর্তি হওয়া যাবে কিনা। এসএসসি লেভেল পড়াশুনার বিষয় নির্বাচনে। এভাবে পরবর্তিতে উচ্চতর শিক্ষার ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়বে বিষয় নির্বাচনের ব্যাপারে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে। এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে কলেজে পড়াশুনা করার সময়ে সরকারি বৃত্তি প্রদান করা হয়ে থাকে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্ভি এবং উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে এসএসসির ফলাফলের চেয়েও এইচএসসি লেভেল পরীক্ষার গুরুত্ব অধিকতর। এই ফলাফলের গুরুত্ব বর্তায় ভর্তি প্রক্রিয়ার উপরে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে বৃত্তি পাওয়ার উপর। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স লেভেলের পড়া শেষ করার পর শিক্ষার্থী নতুন করে উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করতে যাবে, নাকি চাকুরি খুঁজবে এই উভয় ক্ষেত্রে আবার এসএসসি এবং এইচএসসি ফলাফল গুরুত্ব বহন করে থাকে। এভাবে হিসাব করলে দেখা যায় এই দুটো পাবলিক পরীক্ষার রেজাল্ট কোন ব্যক্তির সারা জীবনের জন্য সঞ্চয় হয়ে থাকে।
এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট অর্জন করার জন্য প্রয়োজন-
ক) বেসিক বিষয়গুলোতে ভাল মানের জ্ঞান।
খ) বিশেষ করে ভাষার উপরে দখল।
গ) নিয়মিত পড়াশুনা করা।
ঘ) সময়ের সঠিক এবং সদ্ব্যবহার।
ঙ) সম্যকভাবে জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রচষ্টা হওয়া।
চ) সর্বোপরি বোর্ডের ফাইনাল পরীক্ষাসমূহে অংশ গ্রহণের জন্য সার্বিক প্রস্তুতি।
এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে Critical analysis করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত। এক্ষেত্রে বিষয়ের প্রয়োজগিক দিক এবং ব্যক্তির ভবিষ্যত পরিকল্পনা অবশ্যই যথাযথ গুরুত্ব বহন করে।
প্রাথমিক ও জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা
এদেশে সরকারি পর্যায়ে ৫ম শ্রেণীর ছাত্র-ছা্ত্রীদের জন্যে প্রাইমারী বৃত্তি পরীক্ষা এবং ৮ম শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যে জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। অবশ্য এর বাইরেও বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কিছু বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে শিশু-কিশোর ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে। এসকল বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে যে সাহসের এবং পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্যে যে সাহস ও অনুপ্রেরণার সঞ্চার হয় তা বহুলাংশে তাদের পরবর্তি জীবনের চলার পথের পাথেয় হিসেবে কাজ করে। Morning shows the day -তাই জীবনের উষা লগ্নের এই প্রথম কিছু সফলতা ছাত্র জীবনের বাকী অংশের সকল কা্র্মকান্ডে প্রভাব বিস্তার করবে এটাই কাম্য। এভাবে হিসেব মিলিয়ে ছাত্র জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে আরও কিছু বৃত্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রতিযোগিতা মনোভাবাপন্নতা শৈশব-কৈশরের আর একটি ধর্ম। বৃত্তি পরীক্ষা আয়োজনের পিছনে অন্য সকল যুক্তির মধ্যে এটাও একটা জোরালো যুক্তি বটে যে এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে কিশোর ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে লেখাপড়ার ব্যাপারে জোরালো মনোভাব সৃষ্টি হবে। যার কারণে এক্ষেত্রে তাদের পদক্ষেপ দীর্ঘায়িত, সুসংহত এবং বেগবান হবে। সমাজ এবং জাতীয় জীবনে সামষ্টিকভাবে এর সুপ্রভাব পড়বে ব্যক্তি পর্যায়ের উত্তোরণের ফলাফল ধরে।
বৃত্তি প্রাপ্তদেরকে পুরস্কৃত করা হয় আর্থিক সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে। এই সুবিধা শুধুই যে প্রেরণা যোগায় তা নয়; মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত পরিবারের ক্ষেত্রে বৃত্তির অর্থ একটা বড় ধরনের সহযোগিতাই বটে।
প্রাথমিক বৃত্তির হার ও সময়কাল
প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায ট্যালেন্টপুল ও সাধারণ এ দুটি গ্রেডে বৃত্তি দেয়া হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে ১ জন ছেলে ও ১ জন মেয়েকে সাধারণ বৃত্তি প্রদান করা হয়। এবং মেধাবৃত্তির জন্য ৪০০০ টি কোটা বরাদ্দ রাখা হয় প্রতি বছরে। যে কোন একটি ইউনিয়নের অধীন এক বা একাধিক পরীক্ষার্থী যারা অধিক ভাল ফলাফল করে উত্তীর্ণ হয় তাদেরক ট্যালেন্টপুল বৃত্তি প্রদান করা হয়। দুই গ্রেডে বৃত্তির হার পরের পৃষ্ঠায় দেয়া হলো।
ট্যালেন্টপুল এবং সাধারণ –এই উভয় উভয় ক্ষেত্রেই বৃত্তির মেয়াদ ৩ বছর। এ হিসেবে ট্যালন্টপুল বৃত্তিপ্রাপ্ত একজন শিক্ষার্থী বছরে মোট ১৯২০ টাকা করে তিন বছরে সর্বমোট ৫,৭৬০ + ৩০০ = ৬,০৬০/- টাকা এবং সাধারণ বৃত্তিপ্রাপ্ত একজন শিক্ষার্থী বছরে মোট ১২০০ টাকা হারে তিন বছরে সর্বমোট ৩,৬০০ + ৩০০ = ৩,৯০০/- টাকা বৃত্তির অর্থ পাবে।
ট্যালেন্টপুল বৃত্তি সাধারণ বৃত্তি | |||
বৃত্তির হার | এককালীন সাহায্য | বৃত্তির হার | এককালীন সাহায্য |
মাসিক টাকা- ১৬০ | প্রতি বছর টাকা- ১০০ | মাসিক টাকা-১০০ | প্রতি বছর টাকা-১০০ |
জুনিয়র বৃত্তির হার ও ব্যাপ্তিকাল
আঞ্চলিক উপ-পরিচালক কর্তৃক গৃহীত পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে নির্ধারিত কোটা অনুসারে টেলেন্টপুল ও সাধারণ এ দুটি গ্রেডে জুনিয়র বৃত্তি প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ২৫৯৪ টি টেলেন্টপুল বা মেধাবৃত্তি এবং ৫০০০ টি সাধারণ বৃত্তি, যা থানা ওয়ারী ছাত্র-ছাত্রীর অনুপাতে থানাসমূহের মধ্যে বণ্টন করা হয়। যদি কোন থানা বা উপজেলায় যোগ্য প্রার্থী না থাকে তাহলে পাশের থানা বা জেলার সম্পূরক বৃত্তি হিসেবে এই বাড়তি বৃত্তিগুলো বন্টন করা হয়। মেধাবৃত্তির সর্বনিম্ন যোগ্যতা ৬০% নম্বর এবং সাধারণ বৃত্তির যোগ্যতা সর্বনিম্ন ৪৫% নম্বর। দুই গ্রেডে বৃত্তির হার ও মেয়াদ নিম্নরূপ-
ট্যালেন্টপুল বৃত্তি সাধারণ বৃত্তি | |||
বৃত্তির হার | এককালীন প্রদেয় | বৃত্তির হার | এককালীন প্রদেয় |
মাসিক টাকা- ২৫০ | ২য় বছর: টাকা- ২০০
১ম বছর: টাকা- ৩০০ |
মাসিক টাকা-১৫০ | ১ম বছর: টাকা-১৫০
২য় বছর: টাকা- ১৫০ |
উভয়ক্ষেত্রেই বৃত্তির মেয়াদ ২ বছর। এ হিসেবে ট্যালেন্টপুল বৃত্তিপ্রাপ্ত একজন শিক্ষার্থী ১ম বছরে মোট ৩৩০০ টাকা, ২য় বছরে মোট ৩২০০ টাকা, অর্থাৎ সর্বমোট ৬৫০০ টাকা এবং সাধারণ বৃত্তি প্রাপ্ত একজন শিক্ষার্থী ১ম বছরে মোট ১৯৫০ টাকা, ২য় বছরে মোট ১৯৫০ টাকা, (সর্বমোট ৩৯০০ টাকা) বৃত্তির অর্থ পেয়ে থাকে।
বৃত্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি
স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা থেকে বৃত্তি পরীক্ষা আলাদা
বার্ষিক পরীক্ষা থেকে বৃত্তি পরীক্ষা সম্পূর্ণ আলাদা। বার্ষিক পরীক্ষায় একটি ক্ষুদ্র গণ্ডিতে একটি মাত্র স্কুলের অল্পসংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। এখানে ন্যূনতম পাস নম্বর পেলেই উত্তীর্ণ হওয়া যায়। আর বৃত্তি পরীক্ষায় একটি নির্দিষ্ট এলাকার বেশ কয়েকটি স্কুলের বিপুল সংখ্যক মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে তুমূল প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। এখানে সর্বোচ্চ নম্বরধারীদের মধ্য থেকে মেধা অনুসারে কোটাভিত্তিক বৃত্তি প্রদান করা হয়। একারণে বার্ষিক পরীক্ষা থেকে বৃত্তি পরীক্ষার গুরুত্ব অনেক বেশি। যেহেতু বৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন, সামাজিক সম্মান ও আত্মগৌরব স্বীকৃত হয়, তাই এখানে সবাই ভালো করার চেষ্টা করবে। এই প্রতিযোগিতায় যারা ভাল করে প্রস্তুতি গ্রহণ করবে তারাই সাফল্য অর্জন করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে এই প্রস্তুতি নিতে হবে?
কিভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে
বৃত্তি পরীক্ষায় প্রস্তুতি নেওয়ার ব্যাপারে কয়েকটি প্রয়োজনীয় পয়েন্ট নিম্নে প্রদত্ত হলো।
এই পরীক্ষায় সফলতা অর্জনের জন্য বছরের প্রথম থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করতে হবে। এ ধরনের পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়া কোন কাজে সফলতা অর্জন করা যায় না। পূর্ব প্রস্তুতির ওপরই পরীক্ষার সফলতা ও ব্যর্থতা নির্ভর করে। কাঙ্ক্ষিত সাফল্য লাভের জন্য এ সময় থেকেই রুটিন মাফিক পড়াশুনা চালিয়ে যেতে হবে।
নিয়মিত পড়াশুনা করে সময়ের সঠিক ব্যবহার করা উচিত। মূলত ছাত্রজীবনের সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে সময়ের সদ্ব্যবহারের উপর।
বৃত্তি পরীক্ষার সিলেবাসভুক্ত সব বিষয় সমান গুরুত্বপূর্ণ হলেও অঙ্ক ও ইংরেজি বিষয়ে একটু বেশি পরিশ্রম করলেই অন্যদের তুলনায় বেশি নম্বর পাওয়া যাবে। সে কারণে ছাত্র-ছাত্রীদের এদিকে সজাগ থাকতে হবে।
গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া উচিত। কেননা অমনোযোগী হলে পড়া মুখস্থ হয় না এবং এ ধরনের পড়া মনে রাখাও যায় না।
পাঠ্য বইয়ের প্রতিটি পাঠ মনোযোগের সাথে পড়ে পুরোপুরি আয়ত্তে আনতে হবে। এতে পরীক্ষার সময় যে কোন প্রশ্নেরই উত্তর দেয়া সম্ভব হবে।
যেটুকু পড়া আয়ত্তে আসবে তা বারবার খাতায় লিখতে হবে। এতে পরীক্ষার সময় উত্তর প্রদান করা সহজ হয়।
হাতের লেখা সুন্দর ও আকর্ষণীয় করতে হবে, কেননা সুন্দর হাতের লেখা অধিক নম্বর প্রাপ্তিতে সহায়তা করে।
বানান বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে; ভুল বানান মানেই পরীক্ষকের বিরাগভাজন হওয়া।
পাঠ্য বইয়ের সম্পূর্ণ অংশ আত্মস্থ করতে হবে। প্রয়োজনে পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি সাধারণ জ্ঞানের চর্চা করতে হবে।
চিত্র সম্বলিত প্রশ্নোত্তরের চিত্রগুলো বারবার আঁকার চর্চা করতে হবে। এতে পরীক্ষার খাতায় চিত্র আঁকা সহজ হবে।
অবসর সময়ে চিত্রাঙ্কন, শিক্ষামূলক ম্যাগাজিন ও দৈনিক সংবাদপত্রের শিক্ষামূলক অধ্যায়টি পড়ার চেষ্টা করতে হবে।
বৃত্তি পরীক্ষায় সাফল্যের জন্য সিলেবাস সম্পর্কে সম্যক ধারণা নিতে হবে। অর্থাৎ কোন কোন বিষয়ের ওপর কত নম্বরের পরীক্ষা হবে তা জেনে নিতে হবে।
প্রশ্নপত্রের মানবণ্টন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে।
সর্বোপরি সর্বদা ক্লাস শিক্ষকের পরামর্শ নিতে হবে।
কারিগরি শিক্ষা
কারিগরি শিক্ষা বা টেকনিক্যাল এডুকেশন বলতে সাধারনত হাতে-কলমে বাস্তবধর্মী শিক্ষাকে বুঝানো হয়। অন্যভাবে বলা যায়, সাধারণ মাধ্যমে পাঠ্যপুস্তকের যে বিষয়গুলো শেখানো হয় তার যান্ত্রিক বাস্তবায়নের নামই কারিগরি শিক্ষা। পাঠ্যপুস্তকের সাথে প্রাকটিক্যাল প্রশিক্ষণ, দক্ষতা আর মেধার সমন্বয় সৃজনশীল উৎপাদনমুখী কার্যক্রমই হল কারিগরি শিক্ষা।
নবম শ্রেণী থেকে কারিগরি শিক্ষা শুরু হয়। এদেশে টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারগুলোতে এসএসসি ভোকেশনাল কোর্সে পড়াশোনা করানো হয়। অন্যদিকে এসএসসি পাসের পর পলিটেকনিক এবং মনোটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে বিভিন্ন ট্রেডে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স করানোর ব্যবস্থা করা হয়।
পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে আগে তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স করানো হলেও সময়ের দাবিতে এসব কোর্সের কলেবর বৃদ্ধি করে বর্তমান চার বছর মেয়াদী কোর্স পড়ানো হচ্ছে। এসব কোর্স সম্পন্নকারী শিক্ষার্থীরা ডেপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে সহজেই দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পেশায় চাকরি পেয়ে থাকলেও বিএসসি ইঞ্জিলিয়ারদের মত সম্মান ও সুযোগ-সুবিধা পেতে সক্ষম হন না।
তবে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (DUET) এবং কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় চার বছর মেয়াদী বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের প্রবর্তন করেছে। এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে DUET এ ভর্তির সুযোগ অর্জন করতে হয়। মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণেরও সুযোগ আছে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা পাসের পর ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিক্যাল, কৃষি, ডেন্টাল বিষয়ে যে টেকনিক্যাল শিক্ষার সুযোগ দেওয়া হয় সে সব ক্ষেত্রে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের ভর্তির সুযোগ থাকে না।
যাদের জন্য কারিগরি শিক্ষা
অপেক্ষাকৃত কম খরচ এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষা পদ্ধতির কারণে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের জন্যে এ শিক্ষা উপযোগী এবং কার্যকর।
কারিগরি শিক্ষায় কাজটাই আসল। তাই এখানে যোগ্যতার মাপকাঠি হচ্ছে কাজের দক্ষতা। যে যতো ভাল কাজ করবে সে ততো আর্থিক সুযোগ-সুবিধা লাভ করবে। এছাড়া সাধারণ শিক্ষিতরাও এই শিক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেন।
এদেশে কারিগরি শিক্ষা
দেশে কারিগরি শিক্ষা পরিচালনা করে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (বাকাশিবো)। ১৯৫৪ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমান বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ৪২টি সরকারি পলিটেকনিক, ৭টি মনোটেকনিক, প্রায় অর্থ শতাধিক প্রাইভেট পলিটেকনিক, ব্যবসা শিক্ষাক্রম ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান, সরকারি ভোকেশনাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বেশ কিছু টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি) রয়েছে। বর্তমানে ক্রমান্বয়ে দেশের মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত শ্রেণীর কাছে কারিগরি শিক্ষা পদ্ধতি বেশি গ্রহণযোগ্য ও নির্ভযোগ্য হয়ে উঠছে।
কারিগরি শিক্ষার প্রধান প্রধান বিষয়
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ড পরিচালনা করছে বিভিন্ন মানের ও রকমের ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদের কোর্স। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে চার বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স। এর একটা পরিচয় নিম্নে প্রদত্ত হল।
বিষয় মোট আসন সংখ্যা
পলিটেকনিক
১. ডিপ্লোমা-ইন-সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ১২৬০
২. ডিপ্লোমা-ইন-ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ৯২০
৩. ডিপ্লোমা-ইন-মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ৭৬০
৪. ডিপ্লোমা-ইন-ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং ৭২০
৫. ডিপ্লোমা-ইন-কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং ১২৪০
৬. ডিপ্লোমা-ইন-পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং ৭৬০
৭. ডিপ্লোমা-ইন-আর্কিটেকচার ১৬০
৮. ডিপ্লোমা-ইন-অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ৮০
৯. ডিপ্লোমা-ইন-কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ৪০
১০. ডিপ্লোমা-ইন-ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং ৪০
১১. ডিপ.-ইন-এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং ৪০
মনোটেকনিক
১. ডিপ্লোমা-ইন-এনভায়ারনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং ২৫
২. ডিপ্লোমা-ইন-অপসেট প্রিন্টিং ২৫
৩. ডিপ্লোমা-ইন-সিরামিকস ৪০
৪. ডিপ্লোমা-ইন-গ্লাস ৪০
৫. ডিপ্লোমা-ইন-সার্ভেয়িং ৪০
এছাড়া ৪ বছর মেয়াদী মেরিন, শিপ বিল্ডিং, এরোস্পেস, এভিয়োনিক্স-এ ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স; ৪ বছর মেয়াদী এগ্রিকালচার, ৩ বছর মেয়াদী ফরেস্ট্রি, ২ বছর মেয়াদী এইচএসসি (ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা), কমার্স-এ ডিপ্লোমা কোর্স; ১ বছর মেয়াদী ফটওয়্যার মেকিং, লেদার ট্যানিং, সেক্রেটারিয়েল সায়েন্স-এ সার্টিফিকেট কোর্স; ১ বছর মেয়াদী সফটওয়্যার এপ্লিকেশন, মেডিকেল আল্ট্রাসাউন্ড-এ ডিপ্লোমা কোর্স এবং ১ বছর মেয়াদী মেডিকেল মার্কেটিং ম্যানেজমেন্ট ও প্যারামেডিকেল-এ সার্টিফিকেট কোর্স চালু রয়েছে।
উল্লেখযোগ্য ভোকেশনাল কোর্স সমূহ
বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষাবোর্ড এর অধীনে সাধারণ শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষার সমন্বয়ে সৃষ্টি এসএসসি (ভেকেশনাল) শিক্ষাক্রম প্রতি বছর সাধারণত নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে নবম শ্রেণীতে ভর্তির জন্য দরখাস্ত আহ্বান করে। এসএসসি উত্তীর্ণদের জন্য রাখা হয়েছে এইচএসসি ভোকেশনাল কোর্স। এ সকল কোর্স/ট্রেড এর পরিচয় নিম্নে প্রদত্ত হলো।
এসএসসি ভোকেশনাল কোর্সসমূহ
১. অটোমোবাইল
২. অডিও-ভিডিও সিস্টেম
৩. ওয়েল্ডিং
৪. রেফ্রিজারেশন এন্ড এয়ারকন্ডিশনিং
৫. জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কস
৬. ফিস কালচার এন্ড ব্রিডিং
৭. কম্পিউটার এপ্লিকেশন এন্ড অপারেশন
৮. ফার্ম মেশিনারি
৯. জেনারেল মেকানিক্যাল ওয়ার্কস
১০. ড্রেস মেকিং এন্ড টেইলারিং
১১. বিল্ডিং মেইনটেন্যান্স
১২. পোল্ট্রি বিয়ারিং এন্ড ফার্মিং
১৩. ড্রাফিটিং সিভিল
১৪. উড ওয়ার্কিং এন্ড কেবিনেট মেকিং
এইচএসসি ভোকেশনাল কোর্স/ট্রেডসমূহ
১. ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কস এন্ড মেইনটেন্যান্স
২. ক্লথিং এন্ড গার্মেন্টস ফিনিশিং
৩. এগ্রো মেশিনারি
৪. কম্পিউটার অপারেশন এন্ড মেইনটেন্যান্স
৫. ইলেকট্রিক্যাল কন্ট্রোল এন্ড কমিউনিকেশন
৬. মেশিন টুল অপারেশন এন্ড মেইনটেন্যান্স
৭. অটোমোবাইল
৮. রেফ্রিজারেশন এন্ড এয়ারকন্ডিশনিং
৯. ওয়েন্ডিং এন্ড ফেব্রিকেশন
১০. ফিশ কালাচার এন্ড ব্রিডিং
১১. বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন এন্ড মেইনটেন্যান্স
১২. পোল্ট্রি বিয়ারিং এন্ড ফার্মিং
১৩. ড্রাফিটিং সিভিল
১৪. উড এন্ড ডিজাইন
উল্লেখযোগ্য ডিপ্লোমা কোর্সসমূহ
ডিপ্লোমা ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং
কর্মপরিধি
আধুনিক সময়ে আবাসন সমস্যা নিরসনে নির্মিত হচ্ছে বহুতল ভবন। তৈরি হচ্ছে সড়ক, ব্রিজ ইত্যাদি। সবসময়েই বাড়ি, সড়ক এবং ব্রিজ তৈরির মূল নেপথ্য নায়ক হচ্ছেন একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। সড়ক, বিল্ডিং এবং ব্রিজ তৈরির নকশা, পর্যবেক্ষণ, সে মোতাবেক কাঠামো তৈরি, কাজ পরিচালনা, গুণগত মান রক্ষা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদেরই কাজ। নিঃসন্দেহে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং সর্বকালের আধুনিক ও সম্মানজনক পেশা।
কর্মসংস্থান
দেশের রিয়েল এস্টেট কোম্পানি, সয়েল টেস্ট ফার্ম, কনস্ট্রাকশন, বিদেশি প্রতিষ্ঠানসহ স্থাপত্য নির্মান সামগ্রী, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা রয়েছে। আত্ম-কর্মসংস্থানমূলক ব্যবস্থা হিসেবে আছে ঠিকাদারি ব্যবসা। দেশের বাইরেও এ পেশাজীবীদের রয়েছে কাজের বাজার। আছে মধ্যম মানের বেতন, সম্মান, অভিজ্ঞতা আর কর্মদক্ষতায় দ্রুত পদোন্নতিসহ বেতন বৃদ্ধির সুযোগ। তবে তা বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের তুলনায় বেশ কিছুটা কম।
ডিপ্লোমা ইন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
কর্মপরিধি
বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট, কল-কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত আর মুদি দোকান যেখানেই যান বিদ্যুৎ দরকার হবেই। এই বিদ্যুৎ উৎপাদন, সংরক্ষণ, সরবরাহ, বিতরণ, বিদ্যুৎ পরিচালনা পদ্ধতি, ক্যাবল লাইন স্ট্রাকচার থেকে শুরু করে এর সবরকম ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা পুঁথিগত বিদ্যা, মেধা ও দক্ষতার মাধ্যমেই পরিচালনা করছেন সারা দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে।
কর্মসংস্থান
হাই ভোল্টেজ ক্যাবল লাইন, পাওয়ার জেনারেটর প্লান্ট, হাউজ ওয়্যারিং, ইন্ডাস্ট্রি, ফ্যাক্টরিসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের রয়েছে একটা বড় কর্মক্ষেত্র। বর্তমান সময়ে দেশে বিদেশে তড়িৎ প্রকৌশলীদের জন্য রয়েছে উচ্চ ও সম্মানজনক জীবিকা নির্বাহের সুযোগ। এখানেও বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের তুলনায় ডিপ্লোমাধারীদের মর্যাদা অনেক কম।
ডিপ্লোমা ইন ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং
কর্মপরিধি
ঘড়ি, কলিংবেল, রেডিও, টেলিভিশন, মোবাইল ফোন, খেলনাসহ ইলেকট্রনিক্সের বহুবিধ সামগ্রী রয়েছে। এসব সামগ্রী তৈরির মূল কারিগরই হচ্ছেন একজন ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার। গ্রাম-গঞ্জে এখন রেডিও, টেলিভিশন এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর বহুল ব্যবহার এ পেশাদারিত্বের সুযোগ ও সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করেছে।
কর্মসংস্থান
ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর উৎপাদন, ডিজাইন, ব্যবস্থাপনা, প্রয়োগ এবং প্রচলন সংশ্লিষ্ট বহুবিধ প্রতিষ্ঠানে একজন ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারের ব্যাপক চাহিদা ও গুরুত্ব রয়েছে দেশে ও বিদেশে।
ডিপ্লোমা ইন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ারিং
কর্মপরিধি
সময়ের বিবর্তনে মানুষের রুচিতে আসছে অভিনবত্ব। কম জায়গায় কি করে একটি সুন্দর-পরিচ্ছন্ন বাড়ি তৈরি করা যায় অথবা একটি রাস্তা কিংবা একটি ব্রিজ কোন ধারায়, কোন কাঠামোতে, কোনভাবে টেকসই, মানসম্মত এবং দৃষ্টিনন্দন হবে এসবই নির্ভর করে একটি ভালো মানের ডিজাইনের উপর। আর এই নান্দনিক ডিজাইনের স্থাপতিই হলেন একজন আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ার।
কর্মসংস্থান
বিভিন্ন স্ট্রাকচার ডিজাইন ফর্ম, রিয়েল এস্টেট কোম্পানি, ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন এন্ড ডিজাইনিং ফার্মে এসব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা রয়েছে। আজকাল ব্যক্তি মালিকানায় যেসব ছোট ছোট ২-৫ তলা পর্যন্ত বিল্ডিং হচ্ছে সেগুলোতে অনেক আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ার এককভাবে কন্ট্রাকে বাড়িরে প্লান বা ডিজাইন করেন। এ ক্ষেত্রে তারা ডিপ্লোমাদেরকে সহকারী হিসেবে কাজের সুযোগ করে দেন। এই বিষয়ে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহীদের জন্য দেশে এবং বিদেশেও রয়েছে ভালো সুযোগ-সুবিধা।
ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং
কর্মপরিধি
কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং ইতোমধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য পেশায় পরিণত হয়েছে। একটি কম্পিউটার তৈরি, সফটওয়ার লোড, এর পরিচালনা পদ্ধতি, একে সচল রাখা এবং এর বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের যাবতীয় কাজ করেন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়াররা। এভাবে দেখতে গেলে বর্তমান সময়ে কোনো কিছুই আর কম্পিউটারের বাইরে নয়।
কর্মসংস্থান
কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং-এ রয়েছে বহুমাত্রিক পেশা। ই-কম্পিউটার ডিজাইনার, ডাটা এন্ট্রি, মেডিক্যাল ট্রান্সক্রিপশন, সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার, হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, গ্রাফিকস ডিজাইনার এরকম বহুমুখী কর্মক্ষেত্র রয়েছে এ পেশায়। হার্ডওয়্যার প্রতিষ্ঠান, সফটওয়্যার ফার্ম ও ট্রেনিং প্রতিষ্ঠান, ডিজাইন ফার্ম থেকে শুরু করে আজকাল কম্পিউটারের ব্যাপক প্রচলনের কারণে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা দ্রুত বেড়ে চলেছে। বর্তমান সময়ে সারা বিশ্বে এ পেশার জন্য রয়েছে সম্মানজনক এবং উচ্চ শিক্ষার সুপরিসর ব্যবস্থা।
ডিপ্লোমা ইন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং
কর্মপরিধি
উৎপাদনশীল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান উৎপাদন উৎসটিই হচ্ছে যন্ত্র বা মেশিন। এসব উন্নত আধুনিক মেশিনের পুরো ডায়াগ্রাম, পরিচালনা পদ্ধতি, বিভিন্ন যন্ত্রাংম এবং এর ব্যবহার, নিয়ন্ত্রন, মেরামত ইত্যাদি কাজ করে থাকেন দক্ষ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা। আমরা আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহার্য অকেন সামগ্রী যেমন- সাবান, ক্রীম, পেস্ট, চিপস, প্যাকেটজাত, অন্যান্য প্রসাধণী ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পেয়ে থাকি এখানে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের কর্মকান্ডের ফল হিসেবে, কেননা এ সবই এখন মেশিনের মাধ্যমে তৈরি বা প্রস্তুত হয়।
কর্মসংস্থান
আমাদের দেশেও দিন দিন তৈরি হচ্ছে জীবনযাপনের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, অটোমেটিক মেশিন তৈরির শিল্প, কল-কারখানা। আর এর ফলে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের কাজের সুযোগ বাড়ছে। বিভিন্ন মেশিনারিজ প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের রয়েছে ভাল চাহিদা। দেশের বাইরেও এ পেশাজীবীদের চাহিদা ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ আছে।
ডিপ্লোমা ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং
কর্মপরিধি
সময়ের সাথে মানুষের সচেতনতা বেড়ে চলেছে আজকাল। পোশাক পরিচ্ছদ এবং সাংসারিক প্রয়োজনীয় কাপড়জাত জিনিসপত্রে আসছে আধুনিকতার ছোঁয়া। এর ফলেই ডিজাইনার এবং সেই সাথে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা বেড়ে চলেছে।
কর্মসংস্থান
বিভিন্ন টেক্সটাইল মিল, গার্মেন্টস এন্ড ফ্যাশন হাউস, ডিজাইন হাউজে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের ব্যাপাক চাহিদা আছে। দক্ষতার ভিত্তিতে এ পেশাজীবীদের উচ্চ বেতন আর সুযোগ-সুবিধাও বাড়ে। বিদেশে এ পেশাজীবীদের কাজের বাজার এবং উচ্চ শিক্ষার দ্বারা উন্মুক্ত।
ডিপ্লোমা ইন গ্লাস এন্ড সিরামিকস ইঞ্জিনিয়ারিং
কর্মপরিধি
নানাবিধ সংগত কারণে মানুষের প্রয়োজন মেটাতে এদেশে গড়ে উঠছে প্রচুর গ্লাস সিরামিকস কারখানা। এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত গ্লাস এন্ড সিরামিকস ইঞ্জিনিয়ারদের নব নব উদ্ভাবিত ডিজাইন আর রঙচঙে সজ্জিত হয়ে বাজারে আসছে নানা ধরনের গ্লাস ও সিরামিকর জাত দ্রব্য। এসব পণ্যের নতুন নতুন ডিজাইন, নতুন উদ্ভাবন, প্রস্তুত কৌশল, প্রস্তুত ব্যয় সর্বোপরি এ শিল্পের সার্বিক পরিচালনা একেক জন গ্লাস ও সিরামিকস ইঞ্জিনিয়ারের তত্ত্বাবধানেই হয়ে থাকে।
কর্মসংস্থান
গ্লাস এন্ড সিরামিকস ডিজাইন, সরবরাহ ও প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানসমূহে এ পেশায় শিক্ষিতদের ভালো বেতনের চাকুরির এবং উচ্চ শিক্ষার সুযোগ রয়েছে দেশে এবং বিদেশে।
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য উচ্চশিক্ষা: ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকৌশল শিক্ষার মানোন্নয়ন ও গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশের চারটি (চট্রগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, ঢাকা) ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে ডিগ্রি প্রদানকারী স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করা হয়। বর্তমানে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে এম ইঞ্জিনিয়ারিং/এসএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ও পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে। ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর-এ কেবলমাত্র ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং পাস ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তি করা হয়।
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি তথ্য
যোগ্যতা
(ক) প্রার্থীকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। (খ) প্রার্থীকে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষায় গড়ে কমপক্ষে ৫৫% নম্বর পেয়ে সিভিল, আর্কিটেকচার, সিভিল (উড স্পেশালাইজেশন), ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স, কম্পিউটার, মেকানিক্যাল, পাওয়ার, অটোমোবাইল, রেফ্রিজারেশন এন্ড এয়ার কন্ডিশনিং ইঞ্জিনিয়ারিং এর সমমানের পরীক্ষায় কমপক্ষে সমতুল্য নম্বর বা গ্রেড পেয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। (গ) চাকুরিরত প্রার্থীরাও যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করতে পারেন।
ভর্তির সময়
সাধারণত মে-জুন মাসে পত্রিকায় ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়।
বিষয় ও আসন সংখ্যা
যথাক্রমে ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং- ৬০; সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং- ১২০; এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং- ১২০। এছাড়াও চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স চালু করা হচ্ছে।
কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের ব্যতিক্রমি বিষয়সমূহ
উপরোল্লিখিত বর্ণনার বাইরেও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতাভুক্ত কিছু কলেজে নিম্ন বর্ণিত বিষয়ে পড়াশুনার সুযোগ রয়েছে।
ডিপ্লোমা-ইন মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং- ২২, ডিপ্লোমা-ইন মিপ বিল্ডিং-৫৯; ডিপ্লোমা-ইন ফরেস্ট্রি-৫০; ডিপ্লোমা-ইন প্রিন্টিং-৫০; ডিপ্লোমা-ইন গ্লাস এন্ড সিরামিক্স-৮০; ডিপ্লোমা-ইন এয়ারক্রাফঠ মেইনটেনেন্স এভিয়োনিক্স-২২; এরোস্পেস-২২; ডিপ্লোমা-ইন হেলথ টেকনোলজি এন্ড সার্ভিসেস, মেডিকেল আল্ট্রা সাইন্ড-৮৮; প্যারা মেডিকেল-৪৪; মেডিকেল, মার্কেটিং, ম্যানেজমেন্ট-২২; ডিপ্লোমা-ইন টেকনিক্যাল এডুকেশন-১২০।