তৃতীয় অধ্যায়
ক্যারিয়ার গঠন: প্রয়োজনীয় বিবেচনা
সাফল্যই হবে তোমার প্রাপ্তি, ব্যর্থতা নয়
পূর্বের আলোচনা থেকে পেশা নির্বাচন সম্পর্কে যতটুকু ধারণা তৈরি হয়েছে তার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে এই নির্বাচন মূলত ব্যক্তির সহজাত প্রবৃত্তি (inherent quality) এবং আগ্রহের উপরে নির্ভর করেই করতে হয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে অনেক উঁচু একটা লক্ষ্য নির্ধারণ। অধিকাংশ মানুষ এই পর্যায়েই ভুল করে ফেলেন। অনেকেই এই উঁচু লক্ষ্য নির্ধারণ করতে সাহস পান না। আত্মবিশ্বাস আর নিরবিচ্ছিন্ন সাধনার অভাবেই তারা পিছিয়ে পড়েন। পৃথিবীর ইতিহাসে স্বার্থক লোকদের জীবনী পর্যালোচনা করলে কিন্তু ভিন্নতর চিত্র পাওয়া যায়, তাতে প্রতীয়মান হয় যে জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভের ক্ষেত্রে অনেক বাধাই অতিক্রম করা সম্ভব।
আমরা মানুষের সংগ্রামী জীবনে দেখি, সাধনার মাধ্যমে পৃথিবীর ইতিহাসে সবাইকে চমকে দিয়ে কিভাবে অন্ধমানুষ মিল্টন বিশ্ববিখ্যাত কবি হলেন। একজন বধির মানুষ বিটোফেন কিভাবে সঙ্গীত রচয়িতা হলেন। একজন অন্ধ, বোবা আর বধির মেয়ে হেলেন কিলার কিভাবে সাধনা করে চব্বিশ বছর বয়সে তার কলেজে সর্বোচ্চ মার্ক নিয়ে বিএ পাস করলেন এবং পরবর্তিতে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করলেন। কিভাবে একজন কাঠুরিয়ার ছেলে আর মুদি দোকানদার বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ আমেরিকার সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন হলেন। আর যদি অজুহাতের প্রশ্ন তুলি তবে কতই পাওয়া যাবে জীবন থেকে পিছিয়ে পড়ার। কিন্তু স্বার্থক লোকেরা কি তা করেন? তাহলে তো রুসবেল্ট তার অচল পা দুটির অজুহাত দিতে পারতেন; ট্রুম্যান কলেজ শিক্ষার অভাবকে ব্যর্থতার কারণ বলে অভিহিত করতে পারতেন; কেনেডি বলতে পারতেন, “এত অল্প বয়সে কি করে প্রেসিডেন্ট হবো” জনসন ও আইস্যানহাওয়ার তাদের হৃদরোগের অজুহাত দেখাতে পারতেন।
জীবন সংগ্রামে এমন বাধা হাজারটা তো আসবেই। কারা এই বাধা অতিক্রম করতে পারেন? নিশ্চয়ই তারা সাধারণ শ্রেণীর মানুষ অর্থাৎ মি: এভারেজম্যানদের” দলে পড়বেন না। এ প্রসঙ্গে ইঞ্জিনিয়ার হিশাম আল তালিবের একটি উদাহরণ প্রণিধানযোগ্য। তাঁর “ট্রেনিং গাইড ফর ইসলামিক ওয়ারকারস” বইতে মি. এভারেজম্যান নামক এক ব্যক্তিকে দাঁড় করিয়েছেন যার বর্ণনা হলো-
মি. এভারেজম্যান ১৯০১ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সি বা ডি গ্রেডের মান পেয়ে পরীক্ষা পাস করেছেন, ১৯২৪ সালে মিস মিডিওকার (মাঝারি ধরনের মেয়ে) কে বিয়ে করেছেন, “এভারেজম্যান জুনিয়র” (Mr. Averagemant jr) এবং বেটী মেডিওকার নামে এক ছেলে ও এক মেয়ে লাভ করেছেন। চল্লিশ বছরের নামদামহীন চাকুরি জীবনে বিভিন্ন অগুরুত্বপূর্ণ পদ অলংকৃত করেছেন। তিনি কোন সময় কোন ঝুকি বা সুযোগ নেননি, তিনি প্রতিভার স্ফূরণ এড়িয়ে চলেছেন, কোন সময় কারো সাথে কোন কিছুতে জড়িত হননি। তার প্রিয় পুস্তক ছিল – ‘non-Involvement the story of playing It safe’ অর্থাৎ ‘সম্পৃক্তহীন নিরাপদ জীবন চালনার গল্প। তিনি কোন উদ্দেশ্য-লক্ষ্য, পরিকল্পনা, আকাঙ্ক্ষা, সংকল্প বা আস্থা ব্যতীত ৬০ বছরের জীবন সমাপ্ত করেছেন, তার কবর গাহে খুদিত হয়েছে-
এখানে শায়িত আছেন
মি. এভারেজম্যান
জন্ম ১৯০১; মৃত্যু ১৯৬১, কবরস্থকরণ ১৯৬৪
তিনি কখনো কিছু করতে চেষ্টা করেন নাই
তিনি জীবন থেকে অল্পই প্রত্যাশা করেছেন
জীবন তাকে তার প্রাপ্য দিয়েছে।
মি. এভারেজম্যান হয়ে কিন্তু বড় কিছু করা সম্ভব হয় না, যদিও সমাজের বেশিরভাগ লোক তারাই। এ প্রসঙ্গে একজন বিজ্ঞ সমাজবিজ্ঞানী বলেছিলেন যে, সকল সমাজেই গড়ে ৮৫% লোক এই শ্রেণীভুক্ত। এরা ভেড়ার পালের মত- কোথায় যাচ্ছে বা কেন যাচ্ছে তা তারা জানে না, জানার প্রয়োজনও মনে করে না।
কোন জাতির উপর নিয়ন্ত্রণ অর্জন করার জন্যে প্রয়োজন হচ্ছে বাকী ১৫% লোককে নিয়ন্ত্রণে আনার। এই ৮৫% লোক ভাগ্যের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে, এবং এরাই হচ্ছে মি. এভারেজম্যান। তুমি বড় হতে চাও- এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, তুমি অবশ্যই মি এভারেজম্যান হবে না। কি আছে তার যা তোমাকে আকর্ষণ করবে? হতাশা, উচ্চাকাঙ্ক্ষার অভাব, লক্ষ্য-উদ্দেশ্যহীনতা, পরিকল্পনা, সংকল্প ও আস্থা বিহীনতা ছাড়া? এসব নিয়ে কখণও বড় কিছু করা যায় কি? বণ্যার তোড়ে প্রবাহমান স্রোতস্বিনীতে ক্ষুদ্র খড়-কুটা ভেসে যেতে দেখেছো কখনও- এরা তাই। পার্থক্য শুধু একটা- বন্যার স্রোতে নয় বরং সময়ের স্রোতে ভেসে হারিয়ে যায় এরা।
প্রতিভিা
জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভের ক্ষেত্রে ব্যক্তি প্রথমে যে প্রশ্ন তোলে তা হলো তার মেধা সম্পর্কিত। তাদের ধারণা মেধার তারতম্যের কারণেই মানুষের জীবনের অবস্থানের তারতম্য হয়ে থাকে। ব্যাপারটি আংশিক সত্য হতে পারে, অবশ্যই সম্পূর্ণরূপে সত্য নয়। এ ব্যাপারে কিছু আলোচনা করা যাক। প্রতিভা বলতে আমরা সর্বদাই ভিন্ন কিছু বুঝি। আসলে তা নয়। এ ব্যাপারে বৈজ্ঞানিক এডিসন বলেছেন, প্রতিভা হচ্ছে একভাগ প্রেরণা আর নিরানব্বই ভাগ পরিশ্রম ও সাধনা।
ব্যর্থ মানুষেরা বহু ক্ষেত্রেই প্রতিভার ঘাটতির অজুহাত দাঁড় করেন যা প্রকৃতপক্ষে সত্য নয়। এ পর্যায়ে মানুষের ব্রেনের সম্পর্কে কিছু কথা বলি। মানুষের ব্রেনের তথ্য ধারণাক্ষমতা অসীম। কম্পিউটার ও ব্রেনের তুলনামূলক আলোচনা করলেই বোঝা যায়, মানুষ কী বিশাল শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। বিশ্বের একটি সুপার কম্পিউটার হচ্ছে ক্রে-১ কম্পিউটার। এর ওজন সাত টন। আর মস্তিষ্কের ওজন দেড় কেজি। ক্রে-১ প্রতি সেকেন্ডে ৪০০ মিলিয়ন ক্যালকুলেশন করতে পারে। মস্তিষ্ক পারে ২০ হাজার বিলিয়ন। ক্রে-১ কম্পিউটার প্রতি সেকেন্ডে ৪০০ মিলিয়ন ক্যালকুলেশন হিসেবে একশত বছর কাজ করলে মস্তিষ্কের মাত্র ১ মিনিটের কার্যক্ষমতা ব্যবহার করতে পারবে। ব্রেনের নিউরোনের যোগাযোগ ব্যবস্থার সাথে বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাকে তুলনা করলে মস্তিষ্কের সামনে এটির তুলনামুলক অবস্থান হবে একটি চীনা বাদামের সমান। দীর্ঘ গবেষনার পর বিজ্ঞানীরা মাত্র বুঝতে শুরু করেছেন যে, মস্তিষ্ক হচ্ছে এক বিস্ময়কর জৈব কম্পিউটার, যার অসীম সম্ভাবনা এখনও প্রায় পুরোটাই অব্যবহৃত রয়ে গেছে। তাহলে মানুষ তার এই সম্ভাবনা ১০ গুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে নাকেন? যদি দিত তাহলে কি একজন পরীক্ষিত Duffer একজন প্রখর মেধাসম্পন্ন ব্যক্তিকে উৎরিয়ে যেতে পারতো না? অবশ্যই, পারতো, কারণ একজন মেধাবী ব্যক্তি আর একজন Duffer এর পার্থক্য কিন্তু কোনভাবে এতটা বেশি না।
সঠিক মনোভাব
সাফল্য অর্জনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হচ্ছে দৃঢ় মনোবল। ক্যালগরী টাওয়ার নামে অট্টালিকাটির উচ্চতা ১৯০.৮ মিটার, ওজন ১০,৮৮৪ টন। এর মধ্যে ৬,৩৪৯ টন মাটির নীচে আছে, যা হল তার সমস্ত ওজনের শতকরা ৬০ ভাগ। উচ্চতম বাড়িগুলের ভিত্তিকে এই ভাবে সুদৃঢ় করতে হয়েছে। একইভাবে সাফল্যকেও দৃঢ় ভিত্তিতে উপর প্রতিষ্ঠিত করতে হয় যা দিয়ে তা হচ্ছে সঠিক মনোবল।
প্রকৃতপক্ষে জীবনের সবক্ষেত্রেই মনোভাবের (attitude) বিশেষ গুরুত্ব আছে। কোনও ডাক্তার কি ভালো ডাক্তার হতে পারেন যদি তার উপযুক্ত দৃষ্টিভঙ্গি না থাকে? ছাত্রসুলভ মনোভাব না থাকলে একজন ছাত্র কি ভালো ছাত্র হতে পারে? একজন ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, পিতা-মাতা, মালিক, কর্মচারী প্রত্যেকের স্বস্ব ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনের উপযোগী মনোভাব না থাকলে যথাযথভাবে তাদের কর্তব্য করতে পারেন না। তাই যে পেশাই তুমি পছন্দ কর না কেন তার জন্য প্রয়োজনীয় সাফল্যের ভিত্তি হচ্ছে তোমার মনোভাব বা দৃষ্টিভঙ্গি। প্রধানত তিনটি উপাদান আমাদের মনোভাব গঠন করতে সাহায্য করে। সে তিনটি উপাদান হলো:
ক) পরিবেশ,
খ) অভিজ্ঞতা এবং
গ) শিক্ষা।
পরিবেশ বহুলাংশে আমাদেরকে প্রভিবিত করে থাকে। ঈগলের মতো উঁচুতে উঠতে হলে ঈগলের ক্ষমতা আয়ত্ত্ব করতে হবে। সফল ব্যক্তিদের সান্নিধ্য সফল হওয়ার সম্ভাবনা, চিন্তাশীলদের সান্নিধ্যে ভাবুক হওয়ার সম্ভবনা, আবার ছিদ্রান্বেষীদের সান্নিধ্যে ছিদ্রান্বেষী হওয়ার সম্ভবনাই থাকে। তুমি কোনটি হতে চাও সে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তোমাকে, আর সে অনুযায়ী কাজ শুরু করতে হবে। সেন্ট ফ্রান্সিস অফ আসিসি এই সম্পর্কে সার কথা বলেছেন , “যা প্রয়োজনীয তা করা শুরু কর, তারপর যা সম্ভবপর তা করা শুরু কর; অবশেষে দেখা যাবে যে অসম্ভব কাজও সম্ভব হচ্ছে। ”
ব্যর্থতা হচ্ছে সাফল্যের ভিত্তি
কাজ শুরু করে দু’একবার উদ্যোগ নিয়েছো এবং ব্যর্থ হয়েছো। এর পরে কি করবে? এই প্রসঙ্গে একজনের জীবন কাহিনীর উল্লেখ করি। তিনি ২১ বছর বয়সে ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্থ হন, ২৬ বছর বয়সে তার প্রিয়তমা মারা গেলেন। কংগ্রেসের নির্বাচনের পরাস্ত হলেন ৩৪ বছর বয়সে। ৪৫ বছর বয়সে হারলেন সাধারণ নির্বাচনে। ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু সে ক্ষেত্রেও ব্যর্থ হলেন ৪৭ বছর বয়সে। সিনেটের নির্বাচনে পূনর্বার হারলেন ৪৯ বছর বয়সে। শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হলেন ৫২ বছর বয়সে। এই ব্যক্তির নাম আব্রাহাম লিঙ্কন। এর নাম কি ব্যর্থতা? আব্রাহাম লিঙ্কন কিন্তু তা মনে করেননি। তার মতে পরাজয় মানে সমাপ্তি নয়, যাত্রা একটু দীর্ঘ হওয়া মাত্র।
১৯০৩ সালে ১০ ই ডিসেম্বর নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয়তে রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের জ্ঞানবুদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিলো, কারণ তারা বাতাসের থেকে ভারী একটি যন্ত্র তৈরি করে আকাশে ওড়ার চেষ্টা করছিলেন। এক সপ্তাহ পরে কিটি হক থেকে রাইট ভ্রাতৃদ্বয় তাদের অবিস্মরণীয় আকাশ যাত্রা শুরু করেন। রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের সাফল্যের পিছনে সবচেয়ে বড় যে কারণটি ছিল তা হলো তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং প্রবল আত্মবিশ্বাস।
সব মিলিয়ে একটা কথা বলা দরকার, তা হলো, “সফল মানুষেরা খুব বিরাট কিছু কাজ করেন না। তারা সামন্য কাজকেই তাদের নিষ্ঠা ও সততা দিয়ে বৃহৎ করে তোলেন। ”
জীবনের পথে চলতে বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হওয়া অবশ্যম্ভাবী। এরূপ বাধা আমাদের এগেয়ে চলার ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়। দুঃখের মধ্য দিয়েই বাধা-বিপত্তিকে জয় করার সাহস এবং আত্মবিশ্বাস পাওয়া যাবে। আমাদের বিজয়ী হওয়ার শিক্ষাই নেওয়া উচিত- বিজিত হওয়ার নয়। ভয় এবং সন্দেহ মনকে হতাশার অন্ধকারে ডুবিয়ে দেয় বলে এগুলোকে ঝেড়ে ফেলতে হবে মন থেকে। আর প্রত্যেক বিপত্তির পর নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে এই অভিজ্ঞতা থেকে আমি কী শিখলাম? এধরনের আত্মবিশ্লেষনের ফলে বাধার অবরোধকে উন্নতির সোপানে পরিণত করা যাবে।
কোনও কাজ নিস্পত্তি করার দৃঢ় অঙ্গীকার নির্মাণ করতে হয় দুটি স্তম্ভের উপর। সে দুটি হল সততা এবং বিজ্ঞতা। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, “যদি তোমার আর্থিক ক্ষতিও হয় তবু তোমার অঙ্গীকারে দৃঢ় থাকার নামই সততা এবং বিজ্ঞতা হচ্ছে, যেখানে ক্ষতি হবে সেই রকম বিষয়ে অঙ্গীকারাবদ্ধ না হওয়া।”
শৃঙ্খলা
সাফল্যের আর এক ফ্যাক্টর হচ্ছে সমস্ত কর্মকান্ডে শৃঙ্খলা আনায়ন। শৃঙ্খলার অর্থ আত্মনিয়ন্ত্রণ, আত্মত্যাগ, মনসংযোগ এবং প্রলোভনকে এড়িয়ে চলা। শৃঙ্খলার অর্থ নির্দিষ্ট লক্ষ্যে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখা। সংগতির অভাবে শঙ্খলাহীনতার লক্ষণ। নায়াগ্রা জল প্রপাত থেকে কোন জলবিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে না, যদি না তার স্রোতের শক্তিকে শৃঙ্খলিত করা যায়। বাষ্পকে যদি সংহত করে নির্দিষ্ট জায়গায় রাখা না যায় তবে তা ইঞ্জিনকে চালাতে পারবে না। তোমার জীবনের সাফল্যের ক্ষেত্রেও এই উদাহরণ শতভাগ সত্য।
মনে রাখতে সাফল্যের জন্য জরুরি শিক্ষাক্রম হলো-
জেতার জন্য খেলবে, হারার জন্য নয়।
উন্নত নৈতিক চরিত্রের মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করবে, চরিত্রহীনদের সাথে নয়।
সততার বিষয়ে কোনভাবে আপোস করবে না কখনো।
যা অপরের নিকট থেকে পাবে তার থেকে বেশি দিবে তাকে। এব্যাপারে ঋণী থেকে নিজেকে ছোট বানাবে না কখনো।
অন্যের ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে।
উদ্দেশ্যেহীনভাবে কোন জিনিসের সন্ধান করবে না। উদ্দেশ্য ঠিক করে এবং সিদ্ধান্ত নিয়েই ঈপ্সিত লক্ষ্যের সন্ধানে নামবে।
দীর্ঘমেয়াদী চিন্তা করবে, স্বল্প মেয়াদী নয়। তবে দীর্ঘ মেয়াদী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনা নিতেও পারে প্রয়োজনবোধে।
নিজের শক্তি যাচাই করে তার উপর আস্থা রাখবে।
সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় বড় লক্ষ্যের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখবে।
আর সাফল্যের পথে বাধার কারণগুলো হচ্ছে-
বিফলতার আশঙ্কা,
আত্ম-মর্যাদার অভাব,
পরিবল্পনার অভাব,
লক্ষ্য নির্দিষ্ট না করে কাজ শুরু করতে যেয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলা,
একাই অনেক কাজের ভার নেওয়া অর্থাৎ সামর্থ্যের অতিরিক্ত দায় গ্রহণ,
প্রশিক্ষণের অভাব,
অধ্যবসায়ের অভাব এবং
অগ্রাধিকারের অভাব।
মিলিয়ে দেখো তোমার নিজের ক্ষেত্রে এ কতটা তোমাকে আষ্টে পিষ্টে ধরেছে। তারপর সেসব বিপত্তি ঝেড়ে ফেল। দৃঢ়তার সাথে পদক্ষেপ ফেলো সামনে এগোনোর সাফল্যই হবে তোমার প্রাপ্তি, ব্যর্থতা নয়।
সফলতার পূর্বশর্ত জীবনে ভারসাম্য
ভারসাম্যতা হচ্ছে জগতের একটা সাধারণ নিয়ম। মহাবিশ্বের সকল গ্রহ-নক্ষত্র ক্রমান্বয়ে তাদের মধ্যে অবস্থান পরিবর্তন করে চলেছে, ফলশ্রুতিতে তাদের ব্যপ্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে, অথচ ভারসাম্য বজায় থাকছে তাদের মধ্যে। এর একটি ক্ষুদ্র অংশ সূর্য তার গ্রহগুলোকে একত্রে নিয়ে সম্মুখে এগিয়ে চলেছে, সেখানেও একই নিয়ম। সূর্যরে গ্রহ পৃথিবী-সে তার পাহাড়-পর্বত, সাগর-মহাসাগর, নদী-নালা বক্ষে ধারণ করে ছুটে চলেছে সূর্যের সাথে। সেখানেও এক ধরনের সু-সমন্বয় সর্বদা পরিলক্ষিত হয়। এবারে যদি আমরা দৃষ্টি আরও কিছুটা সংকীর্ণ করে আনি এবং শুধু এ দেশের কথাই ধরি তবে দেখা যাবে এখানে কোথাও যেমন রয়েছে সুশৃংখল বিস্তীর্ণ পাহাড়ে যেখানে সবুজের সমারোহ বসে বছরের একটা সময়ে, আর তার পাদতলে প্রবাহিত হয়ে চলেছে স্রোতাস্বিনী- এসব মিলে এক অপরূপ সৌন্দর্যের অবতারণা হয়, অথচ এর মূলে আছে অদৃশ্য অথচ সুষম ব্যবস্থাপনা। প্রকৃতির এই অমোঘ আয়োজনের উপর হস্তক্ষেপ করা হলে প্রকৃতি কখনও তার প্রতিশোধ নিয়ে ফেলে। এই কারণেও ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস ইত্যাদি ঘটে থাকে।
জীব জগতেও এর ব্যত্যয় ঘটেনি। প্রতিটি জীবের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে যে সুষম সমন্বয় প্রদান করা হয়েছে তা হচ্ছে তার এক ধরনের সৌন্দর্য। আর তার ফলেই এর কার্যকারিতা। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, দেশ সর্বত্রই এ নিয়মের প্রচলন। এ মহানিয়মকে আগ্রাহ্য করার উপায় নেই মানব জীবনের কোন ক্ষেত্রেই।
মানব জীবনের ব্যাপ্তি বেশি নয়, তবে বিস্তৃতি অনেক এবং নানাবিধ। এই বিস্তৃতি সৃষ্টি হচ্ছে ব্যক্তির নিজের নানাবিধ প্রয়োজনে পারিবারিক সম্পর্কির কারণে পরিবারের সকল সদস্য-সদস্যার সাথে, সামাজিকভাবে সামজের অনেকের সাথে, আর যাদি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ব্যক্তি উঠে আসতে পারেন আরও উপরে, তবে তার সম্পর্কের বিস্তৃতি দেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে। এ সবের মধ্যেও একটি সুন্দর সুশৃংখল সাম্য বিধ্যমান, সুন্দরভাবে এ জগতে বসবাস করার জন্য যার প্রয়োজন হয়। ব্যক্তি কিভাবে আগ্রাহ্য করবে এই প্রয়োজনের?
একই ব্যক্তি পুত্র হিসাবে কারো সাথে সম্পর্কিত, ভাই হিসাবে জড়িত করো কারো সাথে, পিতা হিসেবেও পরবর্তিতে সম্পর্কিত হন তিনি। এ ছাড়াও রয়েছে প্রতিবেশী হিসাবে সম্পর্ক এবং কর্ম ক্ষেত্রে সব মিলিয়ে হাজারটা সম্পর্ক। একজন বুদ্ধিমান লোক কি করেন এসকল সম্পর্কের ব্যাপারে? তার জন্য মৌলিক নিয়ম হচ্ছে বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সবকিছুতে ব্যালেন্স অর্থাৎ সম্পর্ক রক্ষার ব্যাপারে ভারসাম্য বজায় রাখা। বন্ধুত্ব এবং শত্রুতায়ও ভারসাম্য বজায় রাখা উচিৎ। কেননা আজ যে বন্ধু ভবিষ্যতে সে আমার শত্রু হবে না তার নিশ্চয়তা কে প্রদান করতে পারে? বন্ধু হিসেবে আমার সম্পর্কে গোপন করার মত কোন তথ্য যদি জেনে যায় তবে তা সেটা বিপদের কারণ হবে তার এই সম্পর্ক পরিবর্তনের জন্যে। অন্যদিকে আবার আজ যে শত্রু, কাল তো সে বন্ধুও হতে পারে, আমি কি তার সাথে চরম শত্রুতা সৃষ্টি করে তাকে বন্ধু হতে বাধাগ্রস্থ করবো? শুধু এই সম্পর্কের ব্যাপারেই নয়, মানব জীবনের সর্বক্ষেত্রে যেমন আয়-ব্যয়ের ক্ষেত্রে, চিন্তা-বিশ্বাসে, খাদ্যাভ্যাসে, এবং ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক সকল পর্যায়ে দায়িত্ব পালনে ভারসাম্যতা আনা উচিৎ।
কোন ব্যক্তি তার দৈনন্দিন জীবনে কয়টি কাজ করবেন? সেটা অনেক কিছুর উপরেই নির্ভর করে। তবে মূল ব্যাপার হচ্ছে তার জন্য কয়টি প্রয়োজন আর কয়টি কাজ তিনি করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে তিনি যা করবেন তা হলো তার সমস্ত কাজের একটি priority লিস্ট বা আগ্রাধিকারভিত্তিক তালিকা তৈরি করবেন প্রথমে, যেখানে তিনি ভারসাম্য বজায় রাখবেন। এরপর তার বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সেগুলো সম্পন্ন করবেন।
এই priority লিস্টি কেমন হবে একজন ছাত্রের জন্যে? মানব জীবনে বিভিন্ন বয়সে কাজের ধরন পাল্টিয়ে থাকে। এভাবে দেখলে ছাত্রজীবনে তার প্রধান দায়িত্বই হচ্ছে জীবন গঠন- একাডেমিক পড়াশুনার মাধ্যমে। এটা হচ্ছে ছাত্র জীবনের কাছে প্রধান চাহিদা (Demand) । এর পরেই হচ্ছে আত্মগঠনমূলক কার্যক্রম, এবং তার পর পরই আসে সুস্বাস্থ্য অর্জনের জন্য প্রয়াস। বাকী দায়িত্ব আরো পরে। তাবে হ্যাঁ অবস্থার পরিবর্তনের কারনে সাময়িকভাবে এই priority –এর পরিবর্তন হতে পারে। এই দায়িত্ব ও কর্তব্যের ব্যাপারে ভুল করলে চলবে না। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে, এই জাতির জন্যে এই সম্প্রদায় বিষয়ক চিন্তাই প্রধান হওয়া উচিৎ সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে। মানব জীবনের একটি বড় অংশ , ছাত্র জীবন- এর ক্ষতি অপূরণীয় ক্ষতিই বটে। একজন ছাত্রকে অবশ্যই তার সকল কর্মকান্ডে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। এই নিয়মটির ব্যত্যয় ঘটছে আজকাল ব্যাপকভাবে। ফলশ্রুতিতে প্রথমত ব্যক্তি পর্যায়ে পরে সামাজিকভাবে সর্বত্র এর কুফল ছড়িয়ে পড়েছে।
ছাত্রজীবনে ভারসাম্যতা হারানোর কারণে কি ধরনের ক্ষতি হচ্ছে সেব্যাপারে কিছু আলোচনা করছি এবার। এদেশে ছাত্রদের মধ্যে কিছু কিছু অংশ নানাবিধ আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ছে ছাত্র জীবনে? যার ফলশ্রুতিতে তার আন্দোলন যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হতে পারে সে কারণে অনেক বেশি সময় দিচ্ছি, এমন কি নিজের একাডেমিক পড়াশুনাকে বাদ দিয়েও। ছাত্রদের এই আন্দোলনের কতটুকু জাতি গঠনের কাজে আসবে সেটা নিরূপন করে বলতে হবে। তবে যদি ধরে নিই দেশ বা জাতি গঠনমূলক কাজের জন্যই তাদের সময় ব্যায়িত হচ্ছে সে ক্ষেত্রেও আন্দোলনের জন্য তাদের ব্যয়িত সময়ে ভারসাম্যতা বজায় রাখা উচিৎ। ছাত্রজীবন শেষ করার পর যখন সে তার প্রকৃত অবস্থা নিরূপণ করতে পারে, তখন তর আর সেই হারানো সময ও সুযোগ ফিরে পাওয়ার উপায় থাকে না। পরবর্তী জীবনের জন্যে যে প্রস্তুতি তার ছাত্র জীবনে নেওয়ার কথা ছিল সেটা না হওয়ার কারণে সে কর্ম জীবনে প্রবেশে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারছে না, সমাজে সু-প্রতিষ্ঠিত হতে পারছে না। ফলে সে তার পরিবার এবং সমাজের জন্য বোঝা হয়ে পড়ছে। এমন কি যে আন্দোলনের জন্যে সে তার ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়ে এসেছে সেখানেও সে এখন একটি বোঝা। এই কারণেই পরবর্তিতে সে আর তার প্রিয় আন্দোলনকে সহযোগিতা (Support) করতে পারে না। সব মিলে সৃষ্টি হয় ব্যক্তির মধ্যে হতাশা। যে সিদ্ধান্তের কারণে এই অবস্থা, তার ব্যাপারে সকল পর্যায়ে বিশ্লেষণ হওয়া উচিৎ এবং নীতিগত ভাবে এর একটা সুরাহা হওয়া উচিৎ।
মানব জীবনের তিনটি মূল্যবান সম্পদ সময়, শক্তি ও অর্থব্যয়ের ব্যপারেও এই মূল নীতি অর্থাৎ ভারসাম্যতার প্রয়োগ করতে হবে অবশ্যই।
ছাত্রজীবনের সাথে গভীরভাবে সংশ্লিষ্ট আরো দুটো বিষয় রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে-
(ক) সময়ের ব্যবহারে ভারসাম্য: আমার হাতে সারাদিনের ২৪ ঘন্টা সময় রয়েছে, ছাত্র হিসেবে এর ব্যবহারের জন্য আমাকে অবশ্যই একটি সুন্দর হিসাব করতে হবে। সে অনুযায়ী সময়কে ভাগ করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে মনে রাখা উচিৎ যে, সাধারণ হিসেবে ৬ ঘন্টা ঘুম, ২ ঘন্টা ব্যক্তিগত প্রাত্যহিত কাজ, ২/৩ ঘন্টা আন্দোলনের জন্য, এবং বাকী ১৩/১৪ ঘন্টা একাডেমিক পড়াশুনা (স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে ব্যয়িত সময় ধরে)। এ পর্যায়ে সাধারণভাবে অনেক অব্যবহারযোগ্য সময়কে সময় ব্যবস্থাপনা’-র কৌশল অবলম্বন করে ব্যবহারযোগ্য করে নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চার-পাঁচটি বছর যা আমরা অনেকে ভুল সিদ্ধান্তের কারণে (যেমন Career Sacrifice ) নষ্ট করে থাকি তার উপরেই কিন্তু নির্ভর করে ব্যক্তির বাকী জীবনের কার্যকারিতা।
(খ) পড়াশুনায় ভারসাম্য: পড়াশুনার ক্ষেত্রে ভারসাম্যতা হচ্ছে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমার কি কি বিষয়ে পড়াশুনা করতে হবে আজ সেটার ব্যাপার সিদ্ধন্ত, কোন বিষয়ে কতটুকু সময দিতে হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত, দিবসের কোন অংশে কোন বিষয় অধ্যয়ন করতে হবে সেটার ব্যাপারে সিদ্ধন্ত নিয়েই আমি আমার আজকের পড়াশুনার ব্যপারে একটি সম্যক পরিকল্পনা গ্রহণ করবো। তারপরেই তো প্রশ্ন উঠবে এটার বাস্তবায়নের। তা না হলে বাস্তবায়ন কোন শ্রেণীর হতে পারে? এ জগতে পরিকল্পনা না করে বড় ধরনের কোন কাজ সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে কি?
সব মিলে একটি মাত্র কথা- আর তা হলো ভারসাম্য পূর্ণ জীবন ব্যবস্থাই হোক আমাদের সকলের জীবনের জন্য গ্রহণযোগ্য একমাত্র সিদ্ধান্ত।
সময় ব্যবস্থাপনা
ভূমিকা
এদেশে অনেকেই বর্তমান সময়ের একটা বড় ধরনের সমস্যা হলো সময় সংক্রান্ত অব্যবস্থাপনা। এদেশে অনেককে পাওয়া যাবে যারা সারা দিনই কাজ করছেন অথচ কাজ শেষ করতে পারছেন না। তারা ভাবেন যদি দিনটির পরিধি ৪৮ ঘন্টা হতো অথবা ঘন্টাটা ৬০ মিনিটের স্থলে ১০০ মিনিট করে হতো। প্রকৃতপক্ষে অনেক ক্ষেত্রেই তারা কাজের চাপে ন্যুজ হয়ে পড়েন। আর অনেকে আছেন যারা আবার সময়কে কাজে লাগাতে পারে না। তারা সময় নষ্ট করে থাকেন বিভিন্ন পদ্ধতিতে।
এরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সময় নষ্ট করেন ঘুমিয়ে। ঘুমের ব্যাপারে বর্তমানে কোথায়ও কোথায়ও একটা নিয়ম প্রচলিত হয়ে পড়েছে প্রায়। তা হলো সকালে ফজরের নামযের পরে দ্বিতীয় বার ঘুম এবং দুপুরে খাওয়ার পরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করা নাম দিয়ে তৃতীয়বার ঘুম। তাদের অনেকেই ভেবে থাকেন সময়টি তাদের নিজস্ব সম্পদ (personal property) ।
প্রকৃতপক্ষে সময় আমাদের নিজেদের নয়। সময় আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন আমাদেরকে দিয়েছেন আমাদের পরীক্ষা গ্রহণের জন্যে। এই ব্যাপারটাকে সামনে রেখে সময় সম্পর্কে আমাদের সমস্যা নিন্মোক্তভাবে চিহ্নিত করা যায়-
(ক) সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের কিছু লোক বাস্তবিকই সময়ের স্বল্পতা অনুভব করছেন সর্বক্ষণ, তাদের জন্য গুছিয়ে কাজ করার পদ্ধতি খুবই প্রয়োজন। তারা সময়ের ব্যবস্থাপনার কৌশল আয়ত্ত্ব করে বাস্তবক্ষেত্রে তার প্রয়োগ করতে পারলে অনেক বেশি পরিমাণে কাজ করতে পারবেন। সময় ব্যবস্থাপনা তাদের জন্যই প্রয়োজনীয়।
(খ) পাশাপাশি সময় সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকার জন্যে অনেকে আবার অযথা সময়ের অপচয় করছেন। সময় সম্পর্কে তাদের উপলব্ধির অভাব রয়েছে। তাদের মধ্যে সময়ের মূল্য ও চেতনা সৃষ্টি করা একন্ত বাঞ্চনীয়।
সময় কি?
হয়ত আপনারা এ কথাটি জানেন, “কোনটি ঐ জিনিস যা সবচেয়ে বেশি দীর্ঘস্থায়ী যদিও তা সবচেয়ে বেশি ক্ষণস্থায়ী, সবচেয়ে দ্রুতগামী যদিও তা সবচেয়ে বেশি শ্লথ? আমরা সকলেই তাকে অবজ্ঞা করি যদিও পরে সকলেই আবার অনুশোচনা করি। একে ছাড়া কিছুই করা যায় না, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সবকিছুকে এটা গ্রাস করে নেয়, অথচ যা কিছু মহৎ এবং বড় তা সে তৈরি করে।” কে সে? সে হচ্ছে সময়।
এটি সবচেয়ে বড়, কারণ সময়ের যাত্রা এবং লয় সম্পর্কে কোন কিছুই আমাদের জানা নেই। পক্ষান্তরে এই বাস্তব জীবনের সমস্ত বস্তু বা পরিমাপযোগ্য সবকিছুর একটা সীমা দৃশ্যমান বা কল্পনার মধ্যে সীমাবদ্ধ। এটি সবচেয়ে বেশি ক্ষণস্থায়ী, কেননা আমাদের জীবনের সকল কাজ সম্পন্ন করার জন্যে প্রয়োজনের তুলনায় প্রদত্ত সময় নিতান্তই অল্প। সময় দ্রুতগামী তাদের কাছে, যারা সুখের সাগরে ভাসছে। আর পক্ষান্তরে মৃত্যু যন্ত্রণা নিয়ে যে সময় গুণছে তার দৃষ্টিতে তো ২/৩ মিনিট সময়ও অবশ্যই শ্লথ-ই হবে। সময়কে তো আমরা অবজ্ঞা করিই। তা না হলে জীবন থেকে দু’একটি ঘন্টা সময়কেও অযথা পার হতে দিতান না। কিন্তু আবার এই অন্যায় আচরণই আমাদেরকে পীড়া দিয়ে থাকে কখনও কখনও। সে কারণেই তো মূল্যবান কোন পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে প্রতিবারই ছাত্র-ছাত্রীরা অনুশোচণা করে থাকে তাদের অপচয়ের জন্যে। পরে অনুশোচনার কথা ভুলে গিয়ে আবার সেই অপচয়ই করতে থাকে। পৃথিবীতে এমন কি কোন কাজ আছে যা করা যায় সময়ের ব্যবহার ছাড়া? আর এই সময়ই তো গিলে খেয়েছে অতীতের কত বিশাল সংখ্যক মানব-গোষ্ঠীকে, বিগত হয়েছে তারা সকলে খালি হাতে, ইতিহাস তাদেরকে গ্রহণ করেনি সঙ্গত কারনেই। করেছে মাত্র অল্প কিছু মহামানবকে।
সময়ের মূল্য
ব্যর্থ লোকেরা যা করতে অনিচ্ছুক তা করে সফল লোকেরা তাদের সময়ের সদ্ব্যবহার করে। সফলতার জন্যে প্রয়োজনীয় ত্যাগ-তিতিক্ষার সাথে খাপ খাইয়ে সময় ব্যয় করার চেয়ে ব্যর্থতার গ্লানির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়াকে সাধারণ ব্যক্তিরা সহজতর মনে করে। এখানেই হচ্ছে অর্জনে যে ত্যাগ-তিতিক্ষার প্রয়োজন তার গুরুভার গ্রহণ করতে সমর্থ হয় না বলেই সাধারণ লোকেরা এই অবস্থার সাথে তাল মেলাতে পারে না। এটি তাদের কাজ নয়, অসাধারণ কাজ। তাঁরা বরং ঝরে পড়া সম্প্রদায়ের সাথে মিলে যেতে সমর্থ হয়, যার শেষ পরিণাম হলো জেনে-শুনেই ব্যর্থতার গ্লানি ধারণ করা।
মানব জীবনের বরাদ্দকৃত সময়টুকু সাধারণভাবে কাটিয়ে দেওয়ার এটাই হচ্ছে সম্ভবত সর্বজন পরিচিত প্রথা। আমাকে আজ একটি কাজ দিলে কাল করব বলে রেখে দেব, আর এই কাজটিই যদি আগামীকল্য দেওয়া হয় তবে তা পরবর্তি দিনের জন্য রক্ষিত হবে। এভাবেই আমরা সময়ক্ষেপণ করে থাকি, আর সেই সাথে সুযোগকে হাতছাড়া করি। আর এভাবেই শেষ পর্যন্ত ভাগ্যের বিড়ম্বনার শিকার হই। অপরদিকে যাদের মধ্যে এই প্রথার প্রতি শ্রদ্ধা নেই অর্থাৎ যারা আগামী কালের জন্যে বসে থাকবেন না কখনও, আজকের দিনটুকুকেও তার কাজে লাগাতে উদগ্রীব, তারাই তো সময়কে কাজে লাগাতে পারছেন পরিপূর্ণভাবে। জগতে বিস্ময়কর কিছু করার এখতিয়ার শুধুমাত্র তাদের জন্য, আগামী কল্যের গ্রুপের কারো জন্যে নয় অবশ্যই।
প্রতিদিন সকালে যখন আমরা ঘুম থেকে উঠি, তখন আমাদের পকেট বই ২৪ ঘন্টায় সমৃদ্ধ। রাসূলে করীম স. আমাদেরকে বলেছেন-
দুজন ফেরেশতার নিম্নরূপ আহবান ব্যতীত একটি প্রভাতও আসে না” হে আদম সন্তান! আমি একটি নতুন দিন এবং আমি তোমার কাজের সাক্ষী! সুতরাং আমার সর্বোত্তম ব্যবহার কর। শেষ বিচার দিনের আগে আমি আর কখনও ফিরে আসব না।”
একটি উদাত্ত আহ্বান রয়েছে এখানে, আমার সর্বোত্তম ব্যবহার কর, আর পাশাপাশি রয়েছে এক ধরনের সতর্কীকরণ। আজকের দিন সাক্ষ্য প্রদান করবে আমাদের ২৪ ঘন্টার কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে শেষ বিচারের দিন। অর্থাৎ সময়ের ব্যবহারের ব্যাপারে সংযত হতে হবে আমাদেরকে- এটা একটা কঠিন সতর্কীকরণই বটে।
(খ) সময়ের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে সুযোগ
মানবকুলের হাতে সময়ের প্রধানত দু’ধরনের অর্থ রয়েছে। এগুলো হলো-
১) সময় হচ্ছে শুধুমাত্র সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা এবং বছরের মাপকাঠি। সময়ের কথা ভাবতে তারা ঘড়ি বা ক্যালেন্ডারের দিকে তাকান; এর একটি মাত্র রূপ আছে, তা হচ্ছে সময়ের ব্যপ্তি। এটি সময় সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি অগভীর বা হাল্কা ধারনা, এরূপ ধারণা পোষণকারীদের কারো দ্বারাই শ্রেষ্ঠ কিছু সৃষ্টি হয়নি। এ ধারণা যেকোন উদ্যোগ গ্রহণকে ধ্বংস করে দেয়, সৃজনশীল অনুভূতিকে নিরুৎসাহিত করে এবং প্রাপ্ত সময় ব্যয়ের জন্য কোন কাজ দেয় না। কোন কাজ করার জন্যে এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হলে এতে এক সপ্তাহ লাগবে, দশদিন সময় দিলে দশদিনই ব্যয় হবে।
২) সময় সম্পর্কে দ্বিতীয় ধারণা; সময় হচ্ছে সুযোগ। এই সুযোগ সকল সময়ের জন্য স্থায়ী থাকে না। যখন সে তার সর্বোচ্চ মানে অবস্থানে করে তখনই সে সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব বহন করে থাকে। যারা সময়ের এই গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেন তারা জীবনের সমস্যাবলীকে অনেকাংশে সহজীকরণ করে নেন, ফলশ্রুতিতে আগ্রহ ও আত্মত্যাগের এক মহান স্পৃহা দ্বারা তাদের কার্যসম্পাদন নিয়ন্ত্রিত হয়। আর এর ফলশ্রুতিতে সমূহ সম্ভাবনার দ্বার তাদের জন্যই উন্মোচিত হয়ে থাকে।
অবসর সময় না সৃজনশীল সময়?
তথাকথিত হারিয়ে যাওয়া সময়ের ব্যাপারে আপনি কি ভাবেন? হিসাব করে দেখেছেন কি আমরা দিনে কতবার ১৫ মিনিট বা ৩০ মিনিট বা ১ঘন্টা করে সময় নষ্ট করছি- গল্প করে বা ঘুমিয়ে বা ঘুম থেকে গ্রাত্রত্থান করে ঝিমিয়ে। এভাবে আমাদের হারিয়ে যাওয়া প্রতি দিনের ১৫ মিনিট মানে পছরের পূর্ণ ১১দিন আর প্রতিদিনের ৩০ মিনিট মানে বছরের পূর্ণ ২২ দিন। এভাবে ৩০মিনিট করে ব্যয়িত সময় এক মাসের মূল কর্মঘন্টার চেয়েও বেশি। এবারে চলুন এই হারিয়ে যাওয়া সময়কে কিভাবে সৃজনশীল সময়ে পরিবর্তন করবেন সে ব্যাপারে চিন্তা করি। আপনি কারো সাথে গল্প করছেন, সেক্ষেত্রে আপনার আলোচনা ফলদায়ক আলোচনায় পরিবর্তন করলেই তো হয়। ট্রেনে বা স্টীমারে ভ্রমনের ব্যয়িত সময়ে যদি চিন্তাশীল বা গঠনমূলক কল্পনার কাজে ব্যয়িত হয় তাহলেই তো তা সৃজনশীল সময়ে পরিবর্তিত হবে। আর ঘুম- এতটা দরকার আপনার? এটি বর্তমানে পরীক্ষিত সত্য যে একজন সুস্থ্য পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক মাত্র ৬ ঘন্টা ঘুম প্রয়োজন। এর অধিক ঘুম বা অন্য দিকে ঘুমের ঘাটতি উভয়ই অসুস্থতার শিকার হচ্ছি।
পক্ষান্তরে প্রতিটি কর্মদিবস হতে এক ঘন্টা করে সময় বের করে নিলে বছরে আপনি ২৬০ ঘন্টা বা পূর্ণ ৩২ টি কর্মদিবস পাবেন এবং এরূপ সময়কালে অনেক বড় কাজ সম্পাদন করে নিতে পারবেন। এসময়ে আপনি যা করতে পারবেন তা একটি তলিকা দিচ্ছি।
কুরআন শরীফের বহু অংশ মুখস্থ করতে পারবেন;
কতগুলি নির্দিষ্ট দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন;
আপনার বাসস্থানের আশেপাশে সর্বোত্তম সুন্দর বাগান বা এমন কিছু গড়তে পারবেন যা মনের খোরাক হয়ে আপনাকে আনন্দ দিতে পারবে।
একটি বিদেশী ভাষা শিখতে পারবেন;
একটি বই লিখতে পারবেন অথবা
একটি বিষয়ে ডিপ্লোমা করতে পারবেন।
আর জীবনের সহস্র ছোট ছোট ঘটনার বেড়াজালে যে সময় উড়ে যায় প্রতিনিয়ত, কিছুটা হলেও তাকে বেঁধে ফেলতে হবে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা দিয়ে। এই সঞ্চয় কোন ক্রমেই ক্ষুদ্র নয়, বরং ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশের একত্রীকরণের মাধ্যমে সঞ্চিত এক বিশাল সময় ভান্ডার।
সময়ের বহমান স্রোত
কোন কোন বিশেষ কাজের জন্য আপনি সাধারণত আপনার সময়সূচি রক্ষা করে চলেন। আপনি যে কাজ সম্পাদন করতে চান সে জন্যে যে সময় বের করা দরকার তার জন্যও তা করুন। সে জন্য প্রত্যেক দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় বের করে নিন এবং তারপর যথাসাধ্য তা রক্ষার চেষ্টা করুন। সুতরাং মূল কথা দাঁড়ালো- যদি করণীয় কয়েকটি কাজের জন্যে সময় বের করতে চান তাহলে আপনার ব্যস্ততার তালিকায় এদের জন্য অবশ্যই পরিকল্পনা করে প্রোগ্রাম করে নিতে হবে। যদি আপনি সঠিক সময়টি আসার জন্য অপেক্ষা করতে চান তাহলে চিরদিনই সে জন্যে অপেক্ষা করতে হবে।
মাঝারি বয়স কালের একটি জীবনে আপনি আপনার সময় কিভাবে ব্যয় করতে পারেন তা চার্টে দেখানো হয়েছে-
কাজ | সময় |
জুতার ফিতা বেঁধে | ৮ দিন |
ট্রাফিক লাইনের বাতির দিকে তাকিয়ে | ১ মাস |
নাপিতের দোকানে ব্যয়িত সময় | ১ মাস |
টেলিফোনের ডায়াল ঘুরিয়ে | ১ মাস |
বড় শহরে লিফটে চড়ে | ৩ মাস |
নিজের দাঁত মেজে | ৩ মাস |
শহরে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে | ৫ মাস |
গোসল খানায় ব্যয়িত সময় | ৬ মাস |
বই পড়ে | ২ বছর |
খাওয়া-দাওয়ার সময় | ৪ বছর |
জীবিকা উপার্জনে ব্যয়িত সময় | ৯ বছর |
টেলিভিশন দেখে | ১০ বছর |
ঘুমিয়ে | ২০ বছর |
সময়কে কাজে লাগনোর পদ্ধতি
সময়কে কিভাবে কাজে লাগাতে হয় সে সম্পর্কে দু’একটা কথা বলছি।
১. প্রত্যহ সকালে লিখিতভাবে আপনার দিনের কাজগুলির পরিকল্পনা করুন এবং হয়ে গেলে একটি একটি করে তা কেটে দিন। অনেকে মনে করেন কাজের তালিকা করার দরকার কি- মুখস্থ রাখলেই তো হলো। এভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা তালিকার কিছু অংশ ভুলে যাওয়ার রিস্ক নিয়ে থাকেন। সর্বপরি এভাবে মুখস্থ রাখাটাও তো একটি কাজ। যদি লিস্ট বড় হয় তবে দরকার কি এভাবে অপ্রয়োজনীয় একটি বাড়তি কঠিন কাজ তৈরি করে বোঝা বাড়ানো।
২. টেলিফোনে বা অন্য কোন ভাবে না জানিয়ে কারো সাথে দেখা করতে যাবেন না। এখানে সমস্যা হলো ঈপ্সিত ব্যক্তি না জানার কারণে available নাও হতে পারেন। আর সে ক্ষেত্রে যাওয়া ও ফিরে আসার সম্পূর্ণ সময়টাই নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৩. কাগজ- কলম বা ছোট্ট নোট বই সব সময় পকেটে রাখবেন যাতে অবসর সময়ে আপনার চিন্তা-পরিকল্পনা লিখে নিতে পারেন।
৪. বিশ্রামের সময়কে নামাজের সময়ের সাথে মিলিয়ে পরিকল্পনা করুন। নামাজের পূর্বে ওজু করার ফলে শরীরের অনেক অংশই শীতল হয়ে থাকে যা আমাদের নার্ভাস সিস্টেমের উপর সুপ্রভাত ফেলে। আর নামাজের সময় কায়মনোবাক্যে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর কাছে নিজেকে হাজির করার যে মানসিক শান্তি- এটাকে তো পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি শান্তির কাজ বলে মনে করা হয় সঙ্গত কারণে।
৫. লেখাপড়া করে, কোন কিছু মুখস্থ করে বা গঠনমূলক কিছু করে অবসর সময়ের সদ্ব্যবহার করুন।
৬. সাক্ষাৎসূচি করাকালে উভয়েই যেন সঠিক সময় ভালভাবে বুঝে নেন সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। ধরুন আপনি আপনার বন্ধুর সাথে প্রোগ্রাম করেছেন কাল বিকালে চারটায় একত্রিত হবেন একটা নির্দিষ্ট স্থানে। আপনি হয়তো সময়মত যাবেন, কিন্তু সে বাঙ্গালীর সময় চারটা মানে সাড়ে চারটা ভেবে আধাঘন্টা পরে এসে হাজির হবে। এর ফলে আপনার মূল্যবান আধাঘন্টা সময় নষ্ট হবে। চারটা মানে চারটা, সাড়ে চারটা নয়। আর যদি তুমি বাঙ্গালীর সময় বোঝ তাহলে সাড়ে তিনটায় এসো।”
৭. দূরে যাওয়ার সময়ে সম্ভাব্য সময়ের চেয়ে বেশি সময় হাতে রাখবেন যাতে অভাবিত কিছু ঘটলেও যেন সময়মত সেখানে যেয়ে পৌছতে পারেন। আর বাড়তি সময়ে সম্পন্ন করার জন্য হাতে কিছু কাজও নিয়ে নিবেন।
৮. প্রবন্ধ লেখা, বা বক্তৃতা প্রস্তুত করা বা এ ধরনের যে কোন কাজ করার সময় প্রয়োজনীয় সকল উপাদান হাতের কাছে নিয়ে কাজ শুরু করবেন।
৯. আপনার সময়ক্ষেপণ করতে পারে এমন চিন্তাশূন্য লোক এড়িয়ে চলবেন। তবে এ ব্যাপারে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করবেন যেন লোকটি আবার আপনার আচরণে কষ্ট না পায়।
১০. চিঠি বা টেলিফোনে সেরে নেয়া যায় এমন কোন কাজের জন্য নিজে ব্যক্তিগতভাবে যাবেন না। এভাবে আপনার যাওয়া আসার সময়কে বাঁচাতে পারবেন।
১১. যদি কোন সংক্ষিপ্ত ভ্রমণ বা কোন কাজ থাকে, তাহলে সবকিছু লিখে পরিকল্পনা করুন যাতে স্বল্প দূরত্ব অতিক্রম করে এবং ভ্রমন দীর্ঘায়িত না করে সব কাজ করে আসতে পারেন।
সময় সম্পর্কে কিছু কথা
(ক) সময় নেবেন-
সময় নেবেন চিন্তা করতে, এটি ক্ষমতার উৎস;
সময় নেবেন খেলতে, এটি অনন্ত যৌবনের আঁধার;
সময় নেবেন পড়তে, এটি জ্ঞানের ভিত্তি;
সময় নেবেন নামাজ আদায় করতে, এটি দুনিয়াতে সবচেয়ে বড় শান্তি;
সময় নেবেন ভালবাসতে এবং ভালবাসা প্রদান করতে;
সময় নেবেন বন্ধু বনে যেতে, এটি সুখের সোপান;
সময় নেবেন হাসতে, এটি সর্বোত্তম লুব্রীক্যান্ট;
সময় নেবেন দিতে বা দন করতে, স্বার্থপর হয়ে জীবনটাকে ছোট করার কোন অর্থ নেই।
সময় নেবেন কাজ করতে, এটি সফলতার মূল্য (price) ,
কিন্তু সময়ক্ষেপণের জন্য কখনও সময় নেবেন না।
স্মরণ রাখবেন রাসূলে করীম স. বলেছেন-
“যারা দুটি দিন একই রকম যায় নিঃসন্দেহে সে ক্ষতিগ্রস্থ।”
(খ) সুব্যবহৃত সময়
জীবনের একটা ভাল অংশ বন্ধুদের সাথে ব্যয় হয়। এ সময়ে আমরা কী ধরনের আলাপ-আলোচনায় লিপ্ত হই? নিম্নোক্ত মহাবাণীগুলি স্মরণ রাখবেন সে ক্ষেত্রে-
মহৎ মন- ধারণা বা চিন্তামূলক আলোচনা করে;
সাধারণ মন- ঘটনাবলী আলোচনা করে;
ছোট মন- পরচর্চা করে;
অতি ছোট মন- নিজেদেরকে নিয়ে আলোচনা করে।
আজকের কাজ আগামীকালের জন্য ফেলে রাখবেন না
যদি আপনি কাজ শুরু করতে বিলম্ব করেন, তবে কাজ স্তুপীকৃত হতে থাকবে। কাল কি হবে তা আপনি জানেন না। গতকালের অসমাপ্ত কোন কাজ নেই, এমন অবস্থায় যদি আপনি দিন শুরু করতে পারেন, তবে তা হবে এক বড় স্বস্তি। পাঁচ মিনিট বা কম সময়ের কাজ হলে তৎক্ষণাৎ করে ফেলা ভাল। পাঁচ মিনিটের বেশি লাগলে অগ্রাধিকার অনুযায়ী কর্যতালিকা তৈরি করে নেবেন।
আজকের কাজ আগামীকালের জন্য ফেলে রাখবেন না। এভাবে ফেলে রেখে কিন্তু আপনি কাজ সম্পন্ন করার ব্যাপারে রিস্ক নিচ্ছেন। আজকের কাজ আজই সম্পন্ন করতে পারলেন না তাহলে আগামীকাল কিভাবে ফেলে রাখা কাজসহ দিনের নির্ধারিত কাজ সম্পন্ন করবেন?
কাজ ফেলে রাখার বিপক্ষে বলছি এভাবে-
“If you have hard work to do
Do it now
today the sky is clear and blue
tomorrow clouds may come in view
yesterday is not for you
so do it now”.
আজকের কাজ আগামীকালের জন্য ফেলে রাখবেন না। বরং আজকের কাজ শেষ করে আগামী কালের ব্যাপারে চিন্তা করুন-
মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত, আগামীকালের জন্য সে কি প্রেরণ করে, তা চিন্তা করা। আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করতে থাক। তোমরা যা কর আল্লাহ তায়ালা সে সম্পর্কে খবর রাখেন।”
সূরা হাশর-১৮।
সময়ের সুব্যবহার: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট
আমাদের দেশের জন্য ব্যতিক্রমধর্মী কিছু বিষয় রয়েছে যা অন্যদেশের সাথে মেলে না কোন ক্রমেই। এদেশে অনেক সময়েই বড় বড় শহর গুলোতে ট্রাফিক জ্যাম পড়ে থাকে ঘন্টার পর ঘন্টার জন্যে। এছাড়াও অনেকে বাস ধরার জন্যে স্ট্যান্ডে অপেক্ষা করতে থাকেন অনেক সময় ধরে। এ সময় অপেক্ষা করা ছাড়া অন্য কিছু করার সুযোগ থাকে না বলে অনেকে মনে করেন। শহরে বসবাস করতে দিনের একটা বৃহৎ অংশ আমরা নষ্ট করছি এভাবে। অথচ এই সময়টাকেও কাজে লাগানো যায়, যদি এ ব্যাপারে সঠিক পরিকল্পনা থাকে আমাদের।
আমার জানা মতে একজন ভদ্রলোক তাঁর ছাত্র জীবনে এ ধরনের বিশাল একটা সময়কে কাজে লাগাতেন। তিনি প্রতিদিন অনেকগুলো টিউশনি করতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি তার নিজের খরচের টাকা নিজেই উপার্জন করতেন। তাছাড়া তার ছোট ভাইয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ চালিয়ে মাঝে মধ্যে পিতাকেও আর্থিক সাহায্য দিতেন। তার পিতা সরকারি অফিসের একজন দরিদ্র কেরানী ছিলেন মাত্র। টিউশনি করতে যাওয়া আসার সময়টাকে তিনি কাজে লাগাতেনে তার পাঠ্য পুস্তকের কিছু অংশ মুখস্থ করার কাজ। এছাড়াও তিনি প্রতিদিন ২০ টি করে ইংরেজি শব্দ মুখস্থ করতেন কেননা ইংরেজিতে তিনি খুবই দুর্বল ছিলেন। এই ভদ্রলোক বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন এবং পরবর্তিতে একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পেরেছিলেন।
বর্তমানে ইংরেজি ভাষার দুর্বলতা আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের একটা বড় সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। এসমস্যা কাটিয়ে উঠার জন্যে উপরোক্ত পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে এবং এর ফলে অনেক অব্যবহৃত সময় মূল্যবান হয়ে উঠতে পারে আমাদের জন্য।
আর কয়েকটি বিষয় বলছি এবার।
১. আপনার সময় কিভাবে নষ্ঠ হচ্ছে প্রতিদিন তার একটা তালিকা তৈরি করুন।
২. সাধারণভাবে অব্যবহার্য এই সময়গুলোকে কাজে লাগনোর জন্যে একটা সুন্দর পরিকল্পনা গ্রহণ করুন।
৩. আপনার ধারে কাছে সব সময়েই কিছু না কিছু পাঠ্য সামগ্রী রাখুন যাতে করে সুযোগ পেলেই সেগুলোকে বের করতে পারেন এ ধরনের সময়কে কাজে লাগানোর জন্য।
ভেবে দেখেছেন কি এই ব্যবস্থাপনা আপনাকে কি পরিমাণ সাহায্য করতে পারে। সে সময়গুলো মূল্যবান হয়ে উঠবে যখন আপনি কারো জন্যে অপেক্ষা করছেন কোন এক স্থানে, অথবা কোন মিটিং এ যোগদানের জন্যে আপনি সময় মত পৌছে গিয়েছেন অথচ মিটিং শুরু হচ্ছে না অন্যরা আসেনি বলে। সে সময় আপনার ব্যাগ থেকে বই বের করে পড়তে শুরু করে দিয়েছেন। আপনি কখনও কি ভেবে দেখেছেন আপনার এই কাজ আপনার অধ:স্থন নেতা কর্মীদের উপর কিভাবে প্রভাব ফেলবে।
কল্পনা করুন তো দেখি এমন একটা সময়ের যখন আপনি একটা ট্রেনে বা লঞ্চে অন্য কোন যাত্রীর সাথে দূরের কোন গন্তব্য স্থানে যাচ্ছেন। আপনারা কয়েকজন মিলে গল্প করেছেন, কেউ ঝিমাচ্ছেন, আর একজন ব্যক্তি বই পড়ছেন। তাহলে কার প্রতি আপনার শ্রদ্ধাবোধ বেশি হবে? এই শ্রদ্ধাবোধের খুবই প্রয়োজন বর্তমানে এ সমাজের জন্য। আর একটি ঘটনা বলছি। যখন আপনি আপনার অফিসে যাওয়ার পথে অফিসের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছেন কোথাও, আপনি দাঁড়িয়ে আছেন অথচ আপনার হাতে একটি পাঠ্য সামগ্রী। খুবই ভাল হয় এটি যদি ছোট আকারের কোন কোরআন শরীফ হয়। আপনি হয়তো ভাবছেন একা একা দাঁড়িয়ে আছেন যেখানে; অথচ প্রকৃতপক্ষে আপনার পাশে কয়েক জন ফেরেশতাও রয়েছেন যাদের রিপোর্ট অনুযায়ী আপনি ইতোমধ্যে বেশ কিছু সওয়াবের ভাগী হয়ে যেতে পেরেছেন। আমাদের জীবনটাতো এমনই। এভাবে প্রচুর সুযোগ রয়েছে সওয়াব অর্জনের; পক্ষান্তরে এখানে সম্ভাবনাও রয়েছে বিপুলভাবে এই সুযোগসমূহের সদ্ব্যবহার না করার কারণে গুনাহ এর ভাগীদার হওয়ার। মহান রাব্বুল আলামীন এই সমস্ত সুযোগের এবং তার ব্যবহারের ব্যাপারে আমাদের হিসাব নিবেন হাশরের দিন।
শেষ কথা
সময় হচ্ছে সুযোগ। আর তা মেষ গওয়ার পরে মানুষের অবস্থা কেমন হবে সে সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ব্যক্ত হয়েছে-
”প্রত্যেক ব্যক্তির নির্ধারিত সময় যখন উপস্থিত হবে তখন আল্লাহ কাউকে অবকাশ দেবেন না। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে বিষয়ে খবর রাখেন।” সূরা মুনাফিক- ১১।
“সেখানে তারা আর্তচিৎকার করে বলবে, হে আমাদের রব বের করুন আমাদেরকে। আমরা সৎ কাজ করব। পূর্বে যা করতাম তা করব না, তা করব না। (আল্লাহ বলবেন) আমি কি তোমাদেরকে এতোটা বয়স দেইনি, যাতে যা চিন্তা করার বিষয় চিন্তা করতে পারতে? উপরন্তু তোমাদের কাছে সতর্ককারীও আগমন করেছিল। অতএব আস্বাদন কর। জালেমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নাই। “ সুরা ফাতির- ৩।
স্মরণ শক্তি: না জানা সব তথ্য
কেউ কেউ বলে থাকেন বয়স হয়েছে তো আজকাল আগেকার মত মনে রাখতে পারি না। কিন্তু কখনও ভেবে দেখেছেন কি ছোট কালে কয়টি বিষয়ে চিন্তা করতেন, আর আজকাল কোন কোন বিষয়ে? ছোট কালের বিষয় যেমন- এখন শীতকাল, কাল সকালে খেজুরের রস খেতে হবে, দাদুকে বলতে হবে আমার জন্যে একটি র্যাকেট কিনতে আর বন্ধুর কাছে আমার গল্পের বইটি রয়েছে। এসব বিষয় পাল্টে গেছে বর্তমানের ৭০ বছর বয়সে। এখনকার আইটেম ৩টির স্থলে ৩০টি, যেমন বড় ছেলেটি অ্যামেরিকায় পড়াশুনা করছে তাকে একটি E-mail করতে হবে, ব্যাংক থেকে পেনশনের টাকা তোলা প্রয়োজন, আমার জন্যে তিনটি ওষুধ আর স্ত্রীর জন্যে দুইটি, ছোট মেয়ের শ্বশুরকে দাওয়াত দিতে হবে এবং সবশেষে নাতির জন্য খেজুরের রস, একটি র্যাকেট এবং একটি গল্পের বই। মোট তিনটি আইটেম? এবং এ সবের মধ্যে শেষের তিনটির Priority কোথায় গিয়ে পড়ে হিসেব করুন তো। যদি ভুলতেই হয় তবে কি আপনি আপনার প্রেসারের অসুধ কেনার কথা ভুলবেন নাকি নাতির জন্যে গল্পের বই কেনার কথা, যে শীতকালে তার বাৎসরিক পরীক্ষা শেষ করে অতিথি হয়ে আপনার গ্রামের বাড়ীতে বেড়াতে এসেছে। বাস্তব কারণে এভাবই বৃদ্ধ বয়সে মানুষ Complain করে যে, সে অনেক কিছু ভলে যায়। প্রকৃতপক্ষে ৭০ বছর বা তারও বেশি বয়সী একজন মানুষও হতে পারেন চমৎকার স্মৃতিশক্তিধর মানুষ। সেজন্য প্রয়োজন একটা ইচ্ছাশক্তি কার্যকর করা। মনে রাখবেন কারো স্মরণশক্তি তখনই ক্ষয় হতে থাকে যদি তাকে ব্যবহার করা না হয়। অপরদিকে যদি এর ব্যবহার করা হয়, তাবে আমৃত্যু মানুষের স্মরণশক্তি শুধু বেড়েই চলে।
আপনি যে কারণে ভুলে যান তার প্রথমটি হলো আপনি ধরেই নিচ্ছেন যে আপনার বয়েস হয়েছে তাই ভুলে যাবেন। অর্থাৎ ভুলে যাবেন এটিই আপনার সিদ্ধান্ত। কিন্তু মনে রাখার জন্য প্রয়োজন হচ্ছে, মনে রাখার সিদ্ধান্ত। অর্থাৎ প্রয়োজনের বিপক্ষ সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন আপনি- তাই ভুলে যাচ্ছেন।
ভুলে যাওয়া’ ব্যাধি একটি অতি সাধারণ অসুখ, তবে এর চিকিৎসা করা না হলে বেড়েই চলে। এই চিকিৎসা কিন্তু আবার প্রচলিত নিয়মের ওষুধ দিয়ে সারানোর পদ্ধতি নয়- বরং ব্যক্তির মনে কিছুটা বিশ্বাস স্থাপন করা যে প্রকৃতপক্ষে এটা কোন অসুখ-ই নয়। বিংশ শতাব্দীর অন্যতম বিস্ময় আইনস্টাইন দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় জার্মানী থেকে পালিয়ে আমেরিকায় চলে যান। সরকারি উদ্যেগে তাঁকে একটি বাসস্থান বরাদ্দ দেওয়া হয় সেখানে। একবার জরুরি কাজে এক ভদ্রলোক তাকে টেলিফোন করে তার বাসার নম্বর জানতে চেয়েছিলেন তাঁর সাথে দেখা করবেন বলে। আইনস্টাইন তাকে বাসার নম্বর বলতে পারেননি। কারণ তিনি সেটা ভুলে গিয়েছিলেন। অবশ্য ভুলে যাবেনই বা না কেন। আইনস্টাইন অপ্রয়োজনীয় (তার মতে) তথ্য দিয়ে তার স্মৃতির ভান্ডার ভরে রাখতে চাইতেন না। তার বাসার ঠিকানা এই অপ্রয়োজনীয় তথ্যের পর্যায়েই পড়ে। এ ব্যাপারে তার অভিমত সম্পর্কে একটি ঘটনা বলি। তাঁকে একবার প্রশ্ন করা হয় এক মাইল কত ফুট থাকে। তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, “বলতে পারব না। যেসব তথ্য যে কোন রেফারেন্স বইয়ে দু’মিনিটে খুঁজে পাওয়া যায় সে গুলি মাথায় রাখার দরকার কি? আইনস্টাইন মনে করতেন মস্তিস্ককে তথ্য ভান্ডার না করে চিন্তা ভাবনায় প্রয়োগ করা বাঞ্চনীয়।
যাক ফিরে আসি আগের কথায়। ধরি স্মৃতি শক্তির বৃদ্ধি সম্পর্কিত এসব তথ্য আপনার জানা ছিল না আগে। এখন জেনেছেন এবং আপনার নিজের ব্যাপারে তা প্রয়োগ করতে চান। প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে করবেন?
এক্ষেত্রে একজন বিখ্যাত ব্যক্তির নাম বলছি- তিনি হলেন টনি বুজন। তিনিই ওয়ার্ল্ড মেমরি চ্যাম্পিয়নশীপ প্রতিযোগিতার চালু করেন ১৯৯১ সাল থেকে। সুদীর্ঘ সময় এই ধরণের কর্মকান্ডের মাধ্যেমে সঞ্চিত অভিজ্ঞতা থেকে তার অভিমত হচ্ছে-
(ক) স্মরণ শক্তি তখনই ক্ষয় হতে থাকে যদি তার ব্যবহার না করা হয়।
(খ) ব্যবহার বাড়িয়ে ক্ষয়ে যাওয়া স্মরণ শক্তির বৃদ্ধি করা যায়। সে জন্যে প্রয়োজন হয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আর ইচ্ছাশক্তিকে কর্যকর করার।
সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত হয়ে এবং পরবর্তিতে প্রাকটিস চালিয়ে যেয়ে কেউ কেউ অবাক করার মত স্মরণ রাখার ক্ষমতা অর্জন করে থাকেন। তাদেরকে মেন্টাল সুপার এথলেট বলে আখ্যায়িত করা হয়। আমাদের সবারই এদের মতো মেন্টাল সুপার এথলেট হওয়ার দরকার নেই। তবে একটা নির্ভরযোগ্য স্মৃতিশক্তি সবার জীবনেই গুরুত্বপূর্ণ। সে ব্যাপারই আমার পরবর্তী আলোচনা।
স্মৃতিবিষয়ক বিশেষজ্ঞ বব গ্রে। তিনি গত ২০ বছর ধরে মানুষকে একটি মেমোরাইজেশন মেথড’ শিক্ষা দিয়ে আসছেন। তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে কী অমিত স্মরণশক্তি সুপ্ত আছে, সে সম্পর্কে মানুষ সচেতন নয়। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে-আমরা ভুলোমনা মানুষগুলো এমন কী বিষয়টা জানি না, যা মেন্টাল সুপার এথলেটরা জানেন? সে বিষয়টি হচ্ছে mnemonic (নেমোনিক)। এই নেমোনিক হচ্ছে সবকিছু মনে রাখার সুপ্রমাণিত কৌশল। এজন্য কিংবা এ ফলাফল দেখার জন্য বছরের পর বছর ধরে পড়াশোনা করার দরকারও পড়বে না। একবার মৌলিক বিষয়গুলো বুঝে ফেলতে পারলে এবং তা নিয়মিত প্রয়োগ করলে আপনার কাজ হয়ে যাবে- তখন আপনি হবেন উন্নত স্মৃতিশক্তিধর এক মানুষ। এ কাজটি করতে পারবেন এত দ্রুত, যা এর আগে আপনি ভাবতেই পারেননি। টনি বুজন বলেছেন, এর মধ্যমে একদিনেই অগ্রগতিটা বোঝা যাবে।
বেশ কয়েক ডজন নেমোনিক টেকনিক রয়েছে। কিন্তু সবকিছু এসে মিশেছে দুটি বিষয়ে- ইমাজিনেশন এবং অ্যাসোসিয়েশন। বুজন এ দুটিকে আখ্যায়িত করেছেন পিলার্স অব ব্রেইন ফাংশন’। যেহেতু মস্তিস্কের মূল কাজ হচ্ছে, এগুলোকে দৃশ্যমান চিত্রের মতো মূর্ত করে তুলে স্মরণযোগ্য করে তোলা।
Roman Room পদ্ধতি হচ্ছে মনে রাখার সবচেয়ে জনপ্রিয় কৌশল। এটি হচ্ছে একটি পদ্ধতি যে ক্ষেত্রে ব্যক্তি মনে রাখার জন্যে তার অতি পরিচিত বাসস্থানের কক্ষ এবং তার আশ পাশের দৃশ্যের সহায়তা নিয়ে থাকে। একটি উদাহরণ দেই এ প্রসঙ্গে।
মনে করুন আপনি ব্যক্তিগতভাবে খুবই গোছালো প্রকৃতির। আপনার বাসস্থানের সবকিছু টিপ টপ থাকে সবসময়। ঘরে ঢুকেই দরজার পাশে জুতা বা স্যান্ডেল রাখেন নির্দিষ্ট একটি র্যাক। আপনার বাসার কাজের মেয়ে সর্বদা বাসার পরিচ্ছন্নতা এবং সবকিছু গুছিয়ে রাখার ব্যাপার যত্নশীল। এমতবস্থায় আপনি ঘরে ঢুকতেই দেখতে পাচ্ছেন একজোড়া স্যান্ডেল উল্টিয়ে রাখা দোরগোড়ায়। ব্যাপারটি কি আপনার চোখ এড়িয়ে যাবে? অবশ্যই নয়। এখানে বক্তব্য হচ্ছে আপনি সেখানে এক জোড়া স্যান্ডেল উল্টিয়ে রাখবেন আপনার কল্পনায়, নাকি একটি তাজা শিং মাছ সেখানে হেলে দুলে সামনে চলার চেষ্টা করছে এমন কিছু অথবা এক বোঝা লাউ শাক কেউ এনে ফেলে রেখেছে ঢুকতেই পথের উপর সেটা নির্ভর করবে আপনার প্রয়োজনের উপর। অর্থাৎ আপনি বাজার শিং মাছ কিনবেন, নাকি লাউ শাক বা এক জোড়া স্যান্ডেল। প্রয়োজন মাফিক কল্পনায় সাজিয়ে নিন দৃশ্যগুলো। এমনতো হতে পারে ঢুকতেই প্রথমে উল্টানো স্যান্ডেল, রান্নাঘর পার হওয়ার সময় একটি শিং মাছ এবং শেষ পর্যায়ে আপনার বেড রুমে ঢোকার দরজার সামনেই লাউয়ের আটি অর্থাৎ আপনাকে সবগুলোই কিনতে হবে বাজার থেকে।
আর একটা দৃশ্যের কথা বলি যা কখনও মেনে নেওয়া যায় না। তা হলো আপনার পরিপাটি বিছানার উপর কাঁদামাটি সহ খুবই অপরিস্কার এক জোড়া জুতা অথবা এক বোঝা লাকড়ি বা জগ ভর্তি একজগ পানি এবং পাশে একটি গ্লাস। বলুল এর কোনটি মেনে নেওয়া যায় অর্থাৎ আপনি এর মধ্যে কোন আইটেমকে ক্ষমা করবেন?
এবারে কোন এক সময়ে ইউ এস মেমোরি চ্যাম্পিয়ানশীপ-এ শিরোপা জিতেছিলেন এমন একজনের সম্পর্কে কিছু বলি। স্কট হ্যাগউড নামের এই ভদ্রলোকের থাইরয়েড ক্যান্সার চিকিৎসার সময় স্মৃতি শক্তি কমে যায়। পরবর্তিতে তিনি ১৯৯৯ সালে সিদ্ধন্ত নেন তার স্মৃতি শক্তি বাড়ানোর। করণীয় কর্যক্রম হিসাবে তিনি মাত্র একটি স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধির কোর্স করেছিলেন, এবং তার অর্জিত জ্ঞানকে বাস্তাবে প্রয়োগ করেছিলেন। ফলশ্রুতিতে তিনি ইউএস মেমোরি চ্যাম্পিয়ান হতে সামর্থ হয়েছিলেন। এবং পরবর্তিতে পেশা হিসেবে তিনি মেমোরি উন্নয়ন বিষয়ক ট্রেইনার এর কাজ বেছে নিয়েছিলেন।
বাড়তি কিছু তথ্য দিচ্ছি এবার যা আমাদের জানা থাকা দরকার। তা হলো আমাদের মস্তিস্কের দুই পাশ কাজ করে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে। ডান পাশের কাজ হচ্ছে আকার চেনা, স্থান ও সঙ্গীত ধারণ, আবেগতড়িত হওয়া ও সৃজনশীলতা। আর বাম পাশটা যুক্তি, ভাষা ধারাক্রম, উভয় পাশ ব্যবহার করবে, ততই একপাশ অপর পাশের জন্য বেশি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। যারা মস্তিস্কের উভয পাশ বেশি ব্যবহার করেন, তাদের স্মরণশক্তিই সবচেয়ে বেশি।
এর সাথে একটা কৌশলের বর্ণনা দিচ্ছি যা হলো নাম মনে রাখার কৌশল। কৌশলটি হচ্ছে-
১। কারো নাম মনে রাখবেন কিনা সে ব্যাপারে প্রথমে সিদ্ধান্ত নিন।
২। নামটা সঠিকভাবে জেনে, শুনে এবং বুঝে নিন।
৩। লোকটির চেহারা পর্যবেক্ষণ করে চেহারার বৈশিষ্ট্যগুলো আলাদাভাবে মনে রাখুন। এভাবে একটি মানচিত্র তৈরি করুন আপনার মানসপটে।
৪। নামটা মনে রাখার জন্য অন্য কিছুর সাথে সাদৃশ্য খুঁজে নিন। প্রয়োজনবোধে আরও দু’একটি পরিচিত নামের সাথে এই নামটিকে মিলিয়ে নিন, যেমন: মান্নান-হান্নান। মা’ ই বেশি কাছের তাই মান্নান, হান্নান হয়।
এভাবে কিছুদিন প্রাকটিস চালিয়ে দেখুন কাজ হয় কিনা।
ইংরেজি: উচ্চাকাঙ্ক্ষার সিঁড়ি
প্রায় দু’শ বছরের ইংরেজ শাসনে ইংরেজি ভাষা তার অবস্থান পোক্ত করেছিল এ দেশবাসীর মনোজগতে। ঔপনিবেশিক মানসিকতার অংশ হিসেবে ইংরেজি ভাষার প্রতি সেই সমীহ ও প্রেম এদেশবাসীর জীবনে এখনও কম বেশি প্রখন। কিন্তু কলোনিয়াল মানসিকতার ইংরেজি প্রেম এবং বর্তমান বিশ্বায়নের প্রভাব নতুন প্রজন্মের ইংরেজি প্রেম- এ দুটি বিষয় কিন্তু একেবারেই ভিন্ন। এদেশে এক সময়কার বিবেচনায় ইংরেজি ছিল প্রভু আর প্রভাবের ভাষা, শাসন আর শোষকের ভাষা। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে ইংরেজি এদেশে এখন ইতিবাচক অর্থেই প্রতিটি শিক্ষিত মানুষের উচ্চাকাঙ্ক্ষার সিঁড়ি।
বিশ্বায়নের অন্যতম প্রধান নিয়ামক প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তির প্রভাবেই পৃথিবী এখন গ্লোবাল ভিলেজ। বর্তমানে এ ভিলেজের lingua franca (লিংগোআ ফ্রাংকা- বহু ভাষাভাষী অঞ্চলে যে ভাষা যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়) অনিবার্যভাবে ইংরেজি। সুতরাং ইংরেজি ভাষায় দুর্বলতা আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে যে কোন ধরনের উন্নয়নের রোডম্যাপ বাস্তবায়নের বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। একারণে বিশ্বব্যাপী আর্থ সামাজিক, প্রযুক্তিগত এবং জ্ঞানগত উন্নয়নের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে হলে ইংরেজি আমাদের শিখতেই হবে।
বাংলাদেশে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি’- বিষয়টি আলোচিত, সমালোচিত কিন্তু উপেক্ষিত নয়। আমরা এ বিতর্কে না গিয়েই বলতে চাই, উচ্চ শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি ভাষাকে স্বাগত জানানো ক্যারিয়ার সচেতন প্রতিটি ব্যক্তির জন্যই এখন অপরিহার্য। কারণ শিক্ষার এই স্তরে যে বিষয়ই পড়ুক না কেন একজন শিক্ষার্থীকে প্রতিনিয়ত ইংরেজিতে লেখা বইয়ের সাহায্য নিতে হয়, ইংরেজিতে লিখতে হয় এবং ইংরেজিতে ইন্টারনেটের মত তথ্য প্রযুক্তির সাহায্য নিতে হয়। তাছাড়া ইচ্ছা থাকলেও বহু বিষয়ের, যেমন- প্রকৌশল বিদ্যা, চিকিৎসা বিদ্যা, এর শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় বইয়ের অভাবে মাতৃভাষায় লেখাপড়া করতে পারে না। ইংরেজিতে দুর্বল থাকার কারণে বহু শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষায় ভাল ফলাফল করতে পারে না, যা অনিবার্যভাবে তাদের ক্যারিয়ারের উপর প্রভাব ফেলে। কারণ উচ্চ শিক্ষই ক্যারিয়ারের শক্তিশালী সোপান।
বাংলাদেশের চাকুরির বাজার পূর্বের যেকোন সময়ের চেয়ে বহুগুণে প্রতিযোগিতামূলক এবং চ্যালেঞ্জিং। সরকারি, বেসরকারি, বহুজাতিক, আন্তর্জাতিক ইত্যাদি সংস্থাগুলোতে ক্যারিয়ার শুরু করতে চাইলে ইংরেজি ভাষা লেখা, বলা শোনা এবং পড়ার উপর প্রয়োজনীয় দক্ষতাকে অন্যতম গুণ হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রত্যাশিত সব দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র ইংরেজি ভাষায় অদক্ষতার কারণে বহু চাকুরিপ্রার্থী মূল্যবান এইসব চাকুরি থেকে বঞ্চিত হয়। সুতরাং যথাযথ ক্যারিয়ার নির্মাণে ইংরেজির উপর গুরুত্ব আরোপ আজ সময়ের দাবি।
ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ এখন বাংলাদেশের সামনে এক বড় সমস্যা। এই সমস্যা মোকাবেলার একটাই পথ, আর তা হচ্ছে বিপুল জনগোষ্ঠীকে জনশক্তি বা মানবসম্পদে রূপান্তর। আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজি এক্ষেত্রে আমাদের কিছুটা হলেও সাহায্য করতে পারে। আমাদের বিপুল সংখ্যক বেকার জনগোষ্ঠীকে ইংরেজি ভাষায় প্রশিক্ষিত করে বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে আরো বেশি পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। বাংলাদেশের শ্রমিকরা ইংরেজি না জানার কারণে পৃথিবীর বহু দেশে যেতে পারে না, আবার গেলেও ইংরেজি না জানার কারণে নানা বৈষম্যের শিকার হয়।
সবশেষে সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি বাস্তব ঘটনা দিয়ে ক্যারিয়ার নির্মাণে ইংরেজির গুরুত্ব শেষ করতে চাই। বছর কয়েক আগে বাংলাদেশের কয়েকজন পুলিশ অফিসারকে হয়েছিল জাতিসংঘ শান্তি মিশনে। দায়িত্ব পালনের পূর্বে UN সদর দপ্তরে বিভিন্ন পরীক্ষা, যেমন- শারীরিক ফিটনেস, ড্রাইভিং, আর্মস পরিচালনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে তারা ব্যাপক দক্ষতার পরিচয় দেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হার মানে ইংরেজি ভাষার প্রয়োজনীয় যোগাযোগের ক্ষেত্রে এবং তাদেরকে দেশে ফেরৎ পাঠানো হয়। এ ঘটনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় ইংরেজি এখন শুধু ব্যক্তির ক্যারিয়ারের জন্যই নয়, বরং দেশ ও জাতির মুখ উজ্জল এবং সুনাম রক্ষার্থেও ইংরেজির বিকল্প নেই।
চাকুরি : প্রস্তুতি
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষে ডিগ্রি অনুযায়ী একটি চাকুরি পাওয়া খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু এই স্বাভাবিক ঘটনাটাই আমাদের দেশে একন নানা বিবেচনায় অস্বাভাবিকতায় রূপ নিয়েছে। ডিগ্রি এখন চাকুরিতে আবেদনের যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত কিন্তু চাকুরিতে চান্স পাবার বেলায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডিগ্রির ভূমিকা গৌণ। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্জিত বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান একজন প্রার্থীকে অধিকাংশ চাকুরির পরীক্ষায় খুব বেশি সাহায্য করে না। যা সাহায্য করে তা হলো সাধারণ জ্ঞান। যেমন-
ক) সাধারণ জ্ঞান হিসেবে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি।
খ) সাধারণ জ্ঞান হিসেবে বাংলাদেশে ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী।
গ) মানসিক দক্ষতা বা মনস্তাত্ত্বিক জ্ঞান।
কিন্তু সাধারণ জ্ঞান কথাটি যত সাধারণ পরীক্ষার হলে সাধারণ জ্ঞান তার চেয়ে বহুগুণ অসাধারণ। চাকুরির বাজারের অসহনীয় এবং অভাবনীয় প্রতিযোগিতার কারণে চাকুরিদাতাগণ সীমিত সংখ্যক প্রার্থীকে গ্রহণের চেয়ে বহুসংখ্যক প্রার্থীকে বর্জনের বিষয়টিই আগে ভাবেন। ফলাফল যা দাঁড়ায় তাহলো- সাধারণ জ্ঞান তার সীমা পেরিয়ে অসাধারণতায় রূপ নেয়, আর চাকুরির পরীক্ষা না হয়ে, হয়ে যায় বর্জনের প্রক্রিয়া। এই বর্জনের প্রক্রিয়ায় নিজের অবস্থান নিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা আওতায় ক্রমাগত/ নিয়মিত সময়, শ্রম, ধৈর্য এবং অর্থের বিনিয়োগ। পরিমাণগত দিক থেকে অর্থ যৎকিঞ্চিৎ অর্থাৎ এককালীন বড় জোর একহাজার এবং প্রতিমাসে ন্যূনতম পঞ্চাশ টাকা। (বিবিএস- এর প্রস্তুতি অংশের প্রয়োজনীয় উপকরণ ও বইসমূহ দেখুন)।
সময়ের বিষয়টি অন্যতম বিবেচ্য একারণে যে, যদি প্রার্থী উচ্চ শিক্ষা শেষে চাকুরির প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন তাহলে নিয়মিতভাবে প্রতিদিন আট থেকে দশ ঘন্টা এখাতে চাকুরি না পাওয়া পর্যন্তব্যয় করতে হবে। কিন্তু যারা উচ্চশিক্ষার শুরুতে প্রস্তুতি নিতে শুরু করবেন তারা একাডেমিক লেখাপড়ার পাশাপাশি চাকুরি পরীক্ষার একটি মানসিক প্রস্তুতি স্মরণে রাখবেন এবং প্রতিদিন অবসরে কিন্তু সচেতনে অন্তত ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় এখাতে বিনিয়োগ করবেন। প্রতিদিনের ২০ মিনিট শিক্ষা শেষে আপনাকে এমন এক অর্জনের মুখোমুখি দাঁড় করাবে যে প্রত্যাশিত চাকুরি অনায়াসে আপনার হাতে ধারা দিবে। অনেক ক্ষেত্রেই সময় আমাদের সমস্যা নয়, কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় সময়ের ব্যবস্থাপনা। সময় ব্যবস্থাপনায় আপনি যেন হেরে না যান- এ কারণে আপনার থাকা দরকার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য এবং সে লক্ষ্য বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত অপরিসীম ধৈর্য। একারণে আমরা সময়, শ্রম এবং অর্থের সাথে ধৈর্যকে সফলতায় সোপান হিসেবে বিবেচানয় নিতে চাই।
বিসিএস (মৌখিক) পরীক্ষায় কিভাবে সফল হবেন
পূর্ব প্রসঙ্গ
বিসিএস (মৌখিক) পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার জন্য মেধাতালিকাভুক্ত শিক্ষার্থী হওয়ার দরকার নেই। এখানে যেটা দরকার, তাহলো, বাংলাদেশ ও বহির্বিশ্ব সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারনা, যা মেধাতালিকাভুক্ত শিক্ষার্থীদেরই বরং থাকার সম্ভাবনা কম। যারা প্রথম শ্রেণীতে প্রথমস্থান পাওয়ার জন্য পড়াশোনা করেন, তারা পাঠ্যসুচির বাইরে যাওয়ার অল্পই সুযোগ পান। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিশ্বের দৈনন্দিন ঘটনাপ্রবাহ, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, খেরাধূলা ও দৈনন্দিন বিজ্ঞানের খুঁটিনাটি সঙ্গত কারণেই তাদের জানা হয়ে ওঠে না। পক্ষান্তরে যাদের আশৈশব নেশা রাজনীতি ও খেলাধুলার প্রতি, যারা পত্রপত্রিকা ও সাময়িকীর পাতায় বুঁদ হয়ে থাকতে ভালবাসেন, কানে ট্রানজিস্টার লাগিয়ে খেলার ধারাবিবরণী শোনেন, তারা সমগ্র শিক্ষাজীবনে মধ্যম মানের হয়েও বিসিএস (মৌখিক) পরীক্ষা অনায়াসে উত্তীর্ণ হয়ে যান। এখানেই প্রশ্ন দাঁড়ায়, বিসিএস (মৌখিক) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মানদণ্ড তাহলে কোনটি?
বিসিএস (মৌখিক) পরীক্ষার মানদণ্ড
সাধারণভাবে বিসিএস (মৌখিক) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য ৭টি আবশ্যিক মানদণ্ড রয়েছে। ভাইভাবোর্ডের সদস্যগণ আশা করেন সাক্ষাৎকার প্রার্থীগণ ন্যুনতম এ সকল মানদণ্ড বজায় রেখেই ইন্টারভিউবোর্ডে হাজির হবেন। এই মানদন্ডগুলি হলো-
(ক) প্রার্থীর সপ্রতিভা চেহারা, সাবলিল বাচনভঙ্গী ও প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব;
(খ) নিজের অধ্যয়নকৃত বিষয় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা (উক্ত বিষয়ে সর্বশেষ নোবেলবিজয়ীর নামসহ);
(গ) নিজের জন্মস্থান সম্পর্কে খুটিঁনাটি জ্ঞান (উক্ত স্থানে জন্মগ্রহণকারী খ্যাতনামা ব্যক্তিবর্গের জীবন-বৃত্তান্তসহ);
(ঘ) প্রার্থী যে ক্যাডার বা পদে যেতে ইচ্ছুক, ঐ ক্যাডার বা পদ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা;
(ঙ) প্রার্থী তার পছন্দের ক্যাডার/ পদ-এ কেন যেতে ইচ্ছুক, তার গ্রহণযোগ্য কারণ;
(চ) প্রার্থীর কোন অতিরিক্ত যোগ্যতা থাকলে (যা তিনি মূল আবেদনপত্র জমা দেয়ার সময় উল্লেখ করেছেন) সে সম্পর্কে তাৎক্ষণিক বলতে পারার মতো জ্ঞান;
(ছ) বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিশ্বের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ, দৈনন্দিন বিজ্ঞান, খেলাধূলা ও শিল্প-সহিত্য সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান।
উপরে যে ৭টি মানদন্ডের কথা বলা হলো, এর মধ্যেই পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। যদি কোন পরীক্ষার্থী এ সকল ক্ষেত্রে ব্যর্থ হন, তবে তিনি হাজার অতিরিক্ত যোগ্যতা সম্পন্ন হলেও মৌখিক পরীক্ষায় কৃতকার্য হতে পারবে না।
যোগ্যতা অর্জনের উপায়সমূহ
(ক) সপ্রতিভ চেহারা, সাবলিল বাচনভঙ্গি ও প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব: মনোবৈজ্ঞানিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, জন্মের সময় পৃথিবীর সবাই এই তিনটি গুণ নিয়েই জন্মগ্রহণ করে। কেউ কারো চেয়ে দুর্বল ব্যক্তিত্ব ও প্রতিভা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না। পরবর্তিকালে জীবনযুদ্ধের নানা টানাপোড়ন, বৈরী পরিবেশ ও পরিস্থিতির কারণে কারো কারো এ সকল গুণাবলী লোপ পায়। যাদের লোপ বা কমে যায়, তারা এক ধরনের হীনমন্যতায় ভোগেন। সেই হীনমন্যতা বিসিএস ভাইভাবোর্ডেও তাদের ছাড়ে না। ফলে বিস্তর পড়াশোনা থাকা সত্ত্বেও সঠিক উপস্থাপনার অভাবে তাদের সকল প্রস্তুতি বিফলে যায়। আমাদের জানতে হবে এই বিফলে যাওয়ার কারণগুলো কি। কেন একজন পরীক্ষার্থী বিসিএস ভাইভাবোর্ডে সহজ হতে পারেন না? কেন পারেন না সে সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলো উল্লেখ করা হলো।
(১) অতিরিক্ত কার্য সচেতনতা: এটি আসে অতিরিক্ত সিরিয়াসনেস থেকে। পরীক্ষার্থী তার পোশাক-আশাক, চেহারা ও আচরণ সম্পর্কে এতখানি সিরিয়াস হয়ে উঠেন যে, তিনি আর অন্য কোনদিকে মনোযোগ দিতে পারেন না। ভাইভাবোর্ডের সভাপতি বা সদস্যগণ কি বলছেন, তা তার কানে ঢোকে না। তিনি নিজেও কি বলবেন, তা গুলিয়ে ফেলেন।
তাঁরা আশা করেন, একেক জন প্রার্থীর চাল-চলন, বাচনভঙ্গি অবশ্যই একেক রকম হবে। তাবে তাতে সপ্রতিভ ও চটপটে ভাব প্রকাশ পাবে। কাজেই অতি দায়িত্ব সচেতনতা, যাকে ইংরেজিতে ‘পারফরমেন্স কনশাসনেস’ বলা হয়, তাতে অহেতুক কাতর হওয়া ঠিক নয়।
(২) মুদ্রাদোষ: ভাইভাবোর্ডে সহজ হতে না পারার আরেকটি কারণ হলো মূদ্রাদোষ। কোন কোন পরীক্ষার্থীর নানা রকম মূদ্রাদোষ দেখা যায়। কেউ কথা বলতে গিয়ে তোতলান, কেউ জিভ দিয়ে ঠোঁট চাটেন, কেউ ঘনঘন ভ্রু কুঁচকান, কেউ কথা বলতে গিয়ে অহেতুক হাত নাড়েন, মূদ্রাদোষের কারণে এ সকল পরীক্ষার্থী হীনমন্যতায় ভোগেন, ভাইভাবোর্ডে আড়ষ্ট হয়ে থাকেন। কথা গুছিয়ে বলতে পারেন না।
এ থেকে পরিত্রানের উপায় হলো, মৌখিক পরীক্ষার আগে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্রাকটিস করা; কাল্পনিক বোর্ডের সামনে মৌখিক পরীক্ষার রিহার্সাল দেয়া। এতে করে মূদ্রাদোষের পরিমাণ যেমন কমে আসবে, তেমনি আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
(৩) উচ্চারণের আঞ্চলিকতা: উচ্চারণে আঞ্চলিকতাদুষ্ট হওয়া বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য মোটেই অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে তাকে লক্ষ্য রাখতে হবে এমন কোন আঞ্চলিক শব্দ যেন ভাইভাবোর্ডে বলা না হয়, যা সম্পূর্ণ বাক্যের অর্থই পাল্টে ফেলে। পরীক্ষার্থীকে মনে রাখতে হবে উচ্চারণের অল্পস্বল্প আঞ্চলিকতা দোষণীয় নয়, তবে গুরুতর আঞ্চলিকতা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। এ ক্ষেত্রে আগের মতোই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে উচ্চারণ চর্চা করা যায়। সবচেয়ে ভালো হয় যে কোনো আবৃত্তি সংগঠন আয়োজিত উচ্চারণ কর্মমালায় ভর্তি হয়ে গেলে।
(খ) নিজের অধ্যয়নকৃত বিষয় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা: পরীক্ষার্থী যে বিষয়ে অধ্যয়ন করেছেন, সে বিষয় মোটামুটি স্বচ্ছ ধারনা থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে ভাইভাবোর্ডের প্রথম প্রশ্ন হতে পারে তার অধ্যয়নকৃত বিষয় সম্পর্কে।
(গ) নিজের জন্মস্থান সম্পর্কে খুটিনাটি জ্ঞান: পরীক্ষার্থীকে তার জন্মস্থান সম্পর্কে বিশদ জানতে হবে। জন্মস্থানের নামকরণ, আদি ইতিহাস, আয়তন, জনসংখ্যা, প্রথান কৃষিজাত দ্রব্য, খনিজ সম্পদ, উক্তস্থানে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ব্যক্তিদের নাম ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহ ও মুখস্থ করতে হবে। অনেক সময় দেখা গেছে, কেবলমাত্র জন্মস্থান সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে পরীক্ষার্থীকে ভাইভবোর্ড থেকে বিদায় নিতে হয়েছে।
(ঘ) প্রার্থী যে ক্যাডার বা পদে যেতে ইচ্ছুক, ঐ ক্যাডার বা পদ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা: অনেক সময় দেখা যায়, প্রার্থী যে ক্যাডার/পদ-এ যেতে ইচ্ছুক ঐ ক্যাডার/ পদ সম্পর্কে প্রার্থীর কোন ধারণা নেই। বিসিএস ভাইভাবোর্ডে এটি গুরুতর গলদ হিসেবে দেখা হয়।
(ঙ) প্রার্থী তার পছন্দের ক্যাডার/ পদ-এ কেন যেতে ইচ্ছুক তার গ্রহণযোগ্য কারণ ব্যাখ্যা: বিসিএস ভাইভাবোর্ডে প্রার্থীকে প্রায়শই একটি কমন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। প্রশ্নটা হলো এই, আপনি কোন অমুক ক্যাডার/ পদ-এ যেতে চাচ্ছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে অধিকাংশ প্রার্থীই মানানসই বক্তব্য রাখতে পারেন না; সবকিছু তালগোল পাকিয়ে ফেলেন। কখনো কখনো প্রার্থীর অর্বাচীনসুলভ উত্তরে বোর্ড বিরক্ত হয়। বোর্ডের হাতে সুযোগ এসে যায় প্রার্থীকে ঘায়েল করার। এ থেকে পরিত্রানের একমাত্র পথ হলো গুছিয়ে কথা বলা, সঠিক ও বুদ্ধিদিপ্ত উত্তর দেয়া, পারতপক্ষে কম কথা বলা। কিছু কিছু ক্যাডার/ পদ আছে, যেখানে দুর্নীতির সুযোগ অত্যাধিক। যেমন- পুলিশ, কাস্টম এন্ড এক্সাইজ ইত্যাদী। প্রার্থীর পছন্দের তালিকায় এ সকল ক্যাডার রয়েছে কি না বা এসব পদ-এ যেতে চাইছেন কি-না সেটাও যাঁচাই করা হয়। এ ধরনের প্রশ্নে প্রার্থীকে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে উত্তেজিত হলে চলবে না।
(চ) প্রার্থীর কোন অতিরিক্ত যোগ্যতা থাকলে সে সম্পর্কে তাৎক্ষণিক জ্ঞান: প্রার্থীর মূল আবেদনপত্রে যদি অতিরিক্ত যোগ্যতার বর্ণনা থাকে, তাহলে ভাইভারোর্ডে সে সম্পর্কে প্রার্থীকে প্রশ্ন করা হয়। যেমন খেলাধূলা, অভিনয়, সঙ্গীত, সাহিত্যকর্ম ইত্যাদি। প্রার্থীকে এ সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা নিয়ে ভাইভাকক্ষে যেতে হবে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ঐ বিষয়ের খবরাখবরও তাকে রাখতে হবে।
(ছ) বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিশ্বের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ, দৈনন্দিন বিজ্ঞান, খেলাধুলা ও শিল্পসাহিত্য সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান: মৌখিক পরীক্ষার জন্য এ অংশটিই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। দেশের একজন প্রথম শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে প্রার্থী তার দেশ ও পারিপার্শ্বিক জগত সম্পর্কে কতখানি ওয়াকিবহাল, তা যাচাই করার জন্য প্রার্থীকে এ পর্যায়ে প্রচুর প্রশ্ন করা হয়ে থাকে।
দৈনন্দিন সংবাদপত্র/ সাময়িকী পাঠ, রেডিও-টিভিতে দেশ ও বহির্বিশ্বের সর্বশেষ ঘটনাপ্রবাহ অবহিত হওয়া-এ সকল উপায়েই কেবলমাত্র মৌখিক পরীক্ষার এ অংশের জন্য যথাযথ প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব হতে পারে।
ভাইভবোর্ডে যা যা বর্জনীয়
ভাইভবোর্ডে করণীয় যেমন আছে, তেমনি বর্জনীয়ও আছে অনেককিছু। এ সম্পর্কে প্রার্থীর জ্ঞানের অভাব অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এমনও হতে পারে, প্রার্থীর অঢেল জ্ঞান ও প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব থাকা সত্ত্বেও কেবলমাত্র বর্জনীয় স্বভাবের কারণে তাকে ভাইভাবোর্ড থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত ফল নিয়ে বেরিয়ে আসতে হচ্ছে। দাঁড়াতে হচ্ছে অযোগ্যদের কাতারে। এমন পরিস্থিতে যাতে না হয়, সেজন্য বিসিএস পরীক্ষার্থীকে বর্জনীয় বিষয়গুলো জানতে হবে। তাকে সতর্ক হতে হবে যাতে ভাইভা বোর্ডে এগুলো পরিহার করা যায়। অন্যথায় দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি ভেস্তে যেতে পারে। নীচে ভাইভবোর্ডে বর্জনীয় বিষয়ের একটি তালিকা দেয়া হলো-
১. চুইংগাম বা ঐ জাতীয় কিছু মুখে নিয়ে ভাইভাবোর্ডে প্রবেশ করা;
২. চোখে লাগে, এমন উৎকট রঙের (যেমন, টকটকে লাল বা কটকটে হলুদ) জামা পরা;
৩. গাঢ় রঙের সানগ্লাস পরে আসা;
৪. হাই তোলা;
৫. গা চুলকানো;
৬. দাঁত পরিস্কার করা;
৭. কান খোঁচানো;
৮. চেয়ারে বসে পা নাচানো;
৯. কথার মাঝখানে কথা বলা;
১০. বোর্ডের প্রশ্নে মনোযোগ না দেয়া;
১১. অমনোযোগীর মতো অঙ্গভঙ্গি করা;
১২. আলোচনার মধ্যে উত্তর বা পরবর্তী প্রশ্নের কথা চিন্তা করা;
১৩. উত্তেজিত বা রাগান্বিত হওয়া;
১৪. বোর্ডের সদস্যদের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হওয়া।