পরিশিষ্ট
পরিশিষ্ট-১
মক্কার আইন-শাস্ত্রবিশারদগণের সিদ্ধান্ত
(মুসলমানদের তিনটি প্রধান ধর্মীয় শাখার প্রধানগণ)
প্রশ্ন
নিম্নোক্ত প্রশ্ন সম্পর্কে আপনার (আপনার মহত্ত্ব চিরঞ্জীব হোক) মতামত কি? খ্রিস্টান শাসিত ভারত, যেখানে শাসক শক্তি নিয়মিত; দৈনন্দিন নামায, দুই ঈদের নামায প্রভৃতিসহ ইসলামের যাবতীয় বিধিসমূহ প্রতিপালনে বাধা দেয় না, অথচ ইসলামের কতিপয় বিধান লঙ্ঘন করার অনুমতি দেয়, যেমন, মুসলমান পিতার ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণের পরেও মুসলমান পিতৃপুরুষের সম্পত্তির উত্তরাধিকারিত্ব লাভের অনুমতি দেয়, এহেন ভারত দারুল ইসলাম কিনা? উপরোক্ত প্রশ্নের জবাব দিন এবং তাহলে আল্লাহ আপনাকে পুরস্কৃত করবেন।
জওয়াব-১
সকল প্রশংসা শুধু সর্বশক্তিমান আল্লাহর জন্য যিনি সকল সৃষ্টি জগতের প্রভু। হে আল্লাহ আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন।
যতদিন ইসলামের নিজস্ব বিধিবিধানের কিছুটা চালু থাকবে ততদিন এটা দারুল ইসলাম থাকবে।
আল্লাহ স্বয়ম্ভু, পবিত্র ও মহান:
এটা এমন এক ব্যক্তির নির্দেশ যিনি সর্বশক্তিমানের গোপন মদদ আশা করেন, যিনি আল্লাহর প্রশংসা করেন, এবং যিনি পয়গম্বরের শান্তি ও আশীর্বাদের জন্য প্রার্থনা করেন।
(স্বাক্ষর) জামাল ইবনে আবদুল্লাহ শেখ ওমারুল হানাফি
মক্কার বর্তমান মুফতি (সম্মানিত)। আল্লাহ তাকে এবং তার পিতাকে রহম করুন।
জওয়াব-২
সকল প্রশংসা শুধু আল্লাহরই প্রাপ্য, যিনি অদ্বিতীয়; এবং আমাদের ধর্মগুরু মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর, তার আওলাদদের উপর, সাহাবীদের উপর এবং তাহার উম্মতদের উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।
হে আল্লাহ, সঠিক পথে চলার জন্য আমি আপনার মদদ প্রার্থী
হ্যাঁ, ইসলামের কিছু পরিমাণ বিধিবিধান যতদিন প্রচলিত থাকবে ততদিন এটা দারুল ইসলাম।
আল্লাহ স্বয়ম্ভু, পবিত্র ও মহান।
এমন এক ব্যক্তি এই জওয়াব লিখেছেন যিনি করুণাময় আল্লাহর অনুগ্রহপ্রার্থী। আল্লাহ তাকে, তার পিতা-মাতাকে জ্ঞাতি-গোষ্ঠী ও ভ্রাতাগণকে বন্ধু বান্ধবদিগকে এবং সকল মুসলমানদের ক্ষমা করুন।
(স্বাক্ষর) আহমদ ইবনে জৈনী দাহলান,
মক্কার শাফী সম্প্রদায়ের মুফতি (পরহেজগার)।
জওয়াব-৩
সকল প্রশংসা শুধু অদ্বিতীয় আল্লাহরই প্রাপ্য,হে সর্বশক্তিমান! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন।
দাসুকীর মতামতে লিখিত আছে যে, কোন ইসলামী দেশ কাফেরদের করতলগত হওয়া মাত্রই দারুল হার্ব হয়ে যায় না; কেবলমাত্র ইসলামের সকল বা অধিকাংশ বিধিবিধান নাকচ হলেই দেশটি দারুল হার্বে পর্যবসিত হবে।
আল্লাহর স্বয়ম্ভু! আমাদের ধর্মগুরু মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর তার আওলাদবৃন্দ ও সাহাবীদের উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।
(স্বাক্ষর) হোসেন বিন ইবরাহিম
মক্কায় মালেকী সম্প্রদায়ের মুফতি (মশহুর)
পরিশিষ্ট-২
উত্তর ভারতের আইন-শাস্ত্রবিশারদগণের সিদ্ধান্ত
ভাগলপুরের কমিশনারদের ব্যক্তিগত সচিব সাঈদ আমীর হুসেন কর্তৃক প্রশ্নটি ভাষান্তরিত হয়েছ।
নিম্নোক্ত বিষয় সম্পর্কে আপনারা যারা বিজ্ঞ ও ইসলামী বিধিবিধানের অনুসারী তারা মতামত দিন:
যে ভারত আগে মুসলমান শাসকের অধীনস্থ ছিল, কিন্তু বর্তমানে খ্রিস্টান সরকারের শাসনাধীনে রয়েছে; এবং যেখানে খ্রিস্টান শাসক মুসলমান প্রজাগণকে তাদের ধর্মীয় বিধিবিধান প্রতিপালনে যেমন নামায, রোযা, হাজ্জ, যাকাত, শুক্রবারের নামায ও জামাত আদায় করতে কোনভাবেই বাধা দেয় না; এবং উপরোক্ত বিষয়সমূহ চর্চা করতে মুসলমান শাসকের মত সমান রক্ষা কবচের ব্যবস্থা করেছে; এবং যেখানে শাসক শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার কোন শক্তি ও উপায় উপকরণ মুসলমান প্রজাদের নেই এবং যেখানে যুদ্ধ বাধলে মুসলমানদের পরাজয়বরণ ও ইসলামের অবমাননার আশংকা রয়েছে সেই ভারতে জিহাদ আইনসঙ্গত কিনা?
অনুগ্রহপূর্বক প্রামাণ্য দলিল উল্লেখ করে জওয়াব দিবেন।
ফতোয়া তাং ১৭ই রবিউসাসানী, ১২৮৭ হি: মোতাবেক ১৭ই জুলাই ১৮৭০ খ্রিঃ
এখানে খ্রিষ্টানরা মুসলমানদের রক্ষাকবচের ব্যবস্থা নিয়েছে, এবং যেখানে মুসলমানদের রক্ষার ব্যবস্থা আছে সেখানে জিহাদ চলতে পারে না, কারণ মুসলমান ও কাফেরদের মাঝে রক্ষাকবচ ও স্বাধীনতা না থাকলেই শুধু ধর্মযুদ্ধের উদ্ভব হতে পারে, কিন্তু অনুরূপ অবস্থা এখানে বিদ্যমান নেই। এতদ্ব্যতীত এখানে মুসলমানদের বিজয় ও ইসলামের গৌরব বৃদ্ধির সম্ভাবনাও রয়েছে। এ কারণে জিহাদ এখানে আইনসিদ্ধ নয়।
এই সিদ্ধান্তের সমর্থনে মৌলবিগণ এখানে মানহাজ উলগফফার ও ফতোয়া-ই-আলমগীরি থেকে প্রামাণ্য উদ্ধৃতি পেশ করেন।
মৌলবি আলী মুহাম্মদ (লক্ষৌ)
মৌলবি আবদুল হাই(লক্ষৌ)
মৌলবি ফয়জুল্লাহ(লক্ষৌ)
মৌলবি মোহাম্মাদ নঈম (লক্ষৌ)
সীলমোহর
মৌলবি রহমত উল্লাহ (লক্ষৌ)
মৌলবি কুতুব উদ্দীন (দিল্লী)
মৌলবি লুতফুল্লাহ (রামপুর) এবং অন্যান্য।
পরিশিষ্ট -৩
কলকাতা মোহামেডান সোসাইটির সিদ্ধান্ত
উত্তর ভারতের আইন-শাস্ত্রবিদগণের মতামতের বিরোধিতা পর ভারত দারুল ইসলাম এই ঘোষণা প্রচার করে মৌলবি কারামত আলী বলেন:
দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে, এদেশে জিহাদ করা আইনসম্মত কিনা? প্রশ্নটির সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় প্রশ্নের সমাধান হয়ে গেছে। কারণ, দারুর ইসলামে জিহাদ কখনও আইনসংগত হতে পারে না। এটা এত স্পষ্ট যে, এর সমর্থনে কোন যুক্তি প্রমাণ বা প্রামান্য দলিল পেশ করার প্রয়োজন করে না। এখন কোন বিভ্রান্ত ব্যক্তি যদি হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ ভারতের শাসক শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়, তবে সে যুদ্ধ কে বিদ্রোহ বলে অভিহিত করাই সঙ্গত হবে; এবং মুসলমানি আইনে বিদ্রোহকে কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে সুতরাং একই কারণে অনুরূপ যুদ্ধ বেআইনি হবে; এবং কেউ যদি অনুরূপ যুদ্ধ শুরু করে তবে মুসলমান প্রজারা তাদের শাসককে সাহায্য করতে এবং শাসকের সহযোগিতায় বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বাধ্য থাকবে। উপরোক্ত সিদ্ধান্ত ফতোয়া ই আলমগীরিতে স্পষ্টাক্ষরে লিপিবদ্ধ রয়েছে।
— সমাপ্ত —