ইমাম খোমেনী
ইরানের একটি সুন্দর শহর। নাম তার খোমেইন। এটি সেদেশর রাজধানী তেহরান থেকে সোয়া দু’শত কিলোমিটা দক্ষিণে অবস্থিত। েএই শহরে জন্ম হয় আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ আল মুসাভী আলী খোমেনীর। সেদিন ছিল ১৯০১ সালের ২৩শে অক্টোবর। তাঁর পিতার নাম আয়াতুল্লাহ সাইয়েদ মোস্তফা মুসাভী। আর মাতার নাম হাজেরা। পিতা বড় আলেম ছিলেন। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে জনগনকে দিক নির্দেশনা দিতেন। সাইয়েদ মোস্তফার ছিল ৩ পুত্র কন্যা। ইমাম খোমেনী ছিলেন সকলের ছোট।
তিনি খুবই বুদ্ধিমান ও মেধাবী ছিলেন। ছাত্র হিসেবে তিনি সাফল্যৈর পরিচয় দেন। জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা এবং ধর্মতত্ত্বে তিনি পান্ডিত্য অর্জন করেন। পরে বেশ কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন। ২৭ বছর বয়সেই তিনি এসব মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করতে সক্ষম হন।
৪০ বছর বয়সে মানুষের জীবনেরপূর্ণতার সূচনা করে। আমাদের প্রিয় নবী (সা) ৪০ বছর বয়সে নবুওয়াতি লাভ করেন। ইমাম খোমেনীও তার ৪০ বছর বয়স হওয়ার পর থেকে তার দেশের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে ঘটনাবলী গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা শুরু করেন। সেটা ছিল ১৯৪১ সালের কথা। এ সময় থেকে তিনি ইরানে ইসলামী বিপ্লব ঘটানোর জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন।
রেজা শাহ নামে একজন ইরানী সৈনিক ইরাকের ক্ষমতা দখল করে নেন। তিনি হঠাৎকরে আড়াই হাজার বছর আগের রাজবংশের সদস্য বলে নিজেকে দাবী করেন। যুক্তরাষ্ট্র তাকে সবরকম সহায়তা দিত। তিনি এর বিনিময়ে তেল সহ দেশের সম্পদের নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেন। শাহের রাজতন্ত্র পুরাপুরিভাবে যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল। তারাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতো। শাহ পুতুলের মত তাদের কথায় উঠাবসা করতেন। শাহ ইরানে পাপাচারের বিস্তৃতি ঘটান। এটাকে তিনি নিজের দায়িত্ব বলে মনে করতেন।সারাদেশে মদের ব্যপক প্রচলন করা হয়। প্রগতির নামে নারীদের খোলামেলা করা হয়। ব্যভিচারকে সমাজে ব্যাপকভাবে চালু করা হয়। আলেমরা এসব অন্যায় কাজের বিরোধীতা করতেন। তাদের উপর ইরানের শাহের গুপ্ত পুলিশ সাভাক নজর রাখতো। আলেমদের অনেককে কারাগারে নিক্ষেপ করা হত। রেজা শাহ্ তাঁর দেশকে ধ্বংসের মুখে দাঁড় করিয়ে রাখেন। রাজবংশের শাসনের নামে ইরানের জনগণকে শোষণ করে রেজাশাহ ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে। সম্পদের প্রাচুর্যের কারণে তারা ধরাকে সরা জ্ঞান করতে থাকে। জনতার উপর জোল জুলুম আর অত্যাচার চালাতে থাকে। সে সময় মানুষের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার ছিল না। সংবাদপত্রগুলো স্বাধীন ছিল না। সাভালোক নামের গুপ্ত পুলিশ বাহিনী জনতার উপর খবরদারি করতো। কেউ শাহের বিরুদ্ধে কথা বলতে তাকে ঠান্ডামাথায় হত্যা করা হতো। অনেকের উপর চরম নির্যাতন চালানো হত। এর ফলে তারা চিরকালের জন্য পঙ্গু হয়ে পড়তেন।
এ সময় দেশে পাশ্চাত্যের ধ্যানধারণা চালু করা হয়। অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, মদ আর জুয়াতে দেশ ভাসতে থাকে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে মদের দোকান আর নাইট ক্লাব গজিয়ে ওঠে। ইরানের অর্থনীতি ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ করতো যুক্তরাষ্ট্র। বৃটেনও এতে সহায়তা দিত। সাভাক এর প্রশিক্ষণ হত ইসরাইলে।
ইরানের তেল সম্পদের বিরাট লভ্যাংশ বৃটেন ও আমেরিকার তেল কোম্পানীর হাতে ছিল। বহু জাতিক সংস্থাগুলো সম্পদ লূন্ঠন করছিল দেদারসে শাহ ছিলেন পাশ্চাত্যের অনুগত ভৃত্য। বৃটিশদের একচেটিয়া তামাক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে ইরানী জনগণ সেদেশের রাজবংশের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মত আন্দোলন করে। এর নেতৃত্ব আলেম সমাজই দেন। মুজতাহিদ মীর্জা হাসান সিরাজী তামাক বর্জনের ডাক দেন। এটা এত সুদূর প্রসারি হয় যে রাজবংশের মহিলারা পর্যন্ত তামাক বর্জন করেন। ১৮৯২ সাল থেকে ১৯৩৫ সাল। এ সময় সাম্রাজ্যবাদ ও রাজতন্ত্র বিরোধী আন্দোলনেরও আলেমরাই নেতৃত্ব দেন। নেতৃস্থানীয় আলেমদের মধ্যে ছিলেন, মীর্জা হাসান সিরাজী, মুজতাহিদ সাইয়েদ মুহাম্মদ বিহবাহানী, সাইয়েদ তাবাতবাঈ, শেখ ফয়জুল্লাহনূরী, আয়াতুল্লাহ মাখানী, আয়াতুল্লাহ বুরুজারদী।
১৯০৬ সালে আলেমরা কোরআন ভিত্তিক সংবিধান প্রবর্তনের দাবী জানান। এ আন্দোলনকে দমনের জন্য শাহ নেতৃস্থানীয় কয়েকজন আলেমকে ফঅঁসি দেন বৃটিশের সহায়তায় শাহ সে সময় চরম স্বৈরাচারী শাসন চালান। ১৯৫২-৫৩ সালে তেল শিল্প জাতীয় করণের সময় বৃটিশরা পুনরায় আলেম সমাজের প্রবল প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। ১৯৫৩ সালে ডক্তর মোসাদ্দেকের মন্ত্রী সভার পতন হয়। এরপর শাহের বিরুদ্ধে আলেমরা আরো জোরদার ভূমিকা গ্রহণ করে। আয়াতুল্লঅহ কাশানী এ সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আলেমদের আন্দোলনে ১৯৪১ সালে রেজা শাহ ক্ষমতাচ্যুত হন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সি আই এ-র সহায়তায় সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে এবং এর মাধ্যমে ১৯৫৩ সালে রেজা শাহ আবার সিংহাস বসে।
১৯৬২ সালে ইরানের মন্ত্রিসভা প্রাদেশিক ও নগর কাউন্সিল সংক্রান্ত একটি বিল অনুমোদন করে। এতে ইসলাম সম্পর্কিত বিধানটি বাদ দেওয়া হয়। নয়া প্রস্তাবে বলা হয়, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জন্য পবিত্র কোরআন নিয়ে শপথ করাটা বাধ্যতামূলক নয়। তারা যেকোন ধর্মগ্রন্থ নিয়ে শপথ করতে পারবেন। ইমাম খোমেনী এই বিলের বিরোধীতা করেন। জনতার তীব্র আন্দোলনে বিলটি বাতিল করা হয়। রেজা শাহ তার ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য শাহ ও জনতার বিপ্লব নামে তথাকথিত সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এজন্য ১৯৬৩ সালের ২৬ জানুয়ারী ইরানের গণভোট ডাকা হয়। ইমাম খোমেনী গণভোট বর্জনের ডাক দেন। কোম হচ্ছে ইরানের নেতৃস্থানীয় আলেমদের কেন্দ্রস্থল। জনগণ আলেমদের ডাকে সাড়া দিল। কেননা নববর্ষের দ্বিতীয় দিনেই ছিল হযরত ইমাম জাফর সাদেক (রা) এর শাহাদাত বার্ষিকী। এমাম খোমেনীর প্রতি জনগণের সমর্থন দেখে শাহ গণহত্যঅর পথ বেছে নিলেন।
১৯৬৩ সালের ২২মার্চ, ইরানের নবর্ষের দ্বিতীয় দিন। কোমের মাদ্রাসা ফারজিয়অয় ইমাম জাফর সাদেকের শাহাদাত দিবস উপলক্ষ্যে এক শোক সভার আয়োজন করা হয়। শাহের বাহিনী ঐ সভায় হামলা চালায়। এর প্রতিবাদ করে ইমাম খোমেনী বিবৃতি দেন। পরে ৫জুন মাদ্রাসা ফাজিয়ায় অপর িএক সমাবেশে ভাষন দেন। শাহ ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠলেন। সে রাতে কোম নগরী ঘেরাও করা হয়। সৈন্যরা ইমাম খোমেনীর বাড়ীতে গিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করলো।
ইমাদের গ্রেফতারের খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লো। সারাদেশের মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়লো। পরদিন সকালে ইমাম খোমেনীর পুত্র মোস্তফা খোমেনীর নেতৃত্বে কোমের পথে নেমে এল বিশাল মিছিল। শ্লোগান ওঠলো, হয় খোমেনী না হয় মৃত্যু। তেহরানেও বিশাল মিছিল বের হল। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয় ও বাজারর দোকান পাট বন্ধ হয়ে গেল। সারাদেশে জনতার বিক্ষোভে শাহের মসনদ নড়বড়ে হয়ে ওঠে। এতে ভীত হয়ে শাহ ইরানে সামরিক আইন জারী করেন। কিন্তু তাতেও কাজ হয় না। জনতা বিন্দুমাত্র ভীত হল না। সরকারের ক্ষমতার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দেশের অগনিত মানুষ তাদের ইমামের মুক্তির জন্য রাজপথে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে লাগলো। গোটা দেশ যেন জেগে উঠেছে। চারদিকে শুধু শ্লোগান আর শ্লোগান। ইরানের নগরে বন্দরে ও প্রতিটি জনপদে সফল হরতাল পালিত হল। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য শাহের সৈন্যরা নিরস্ত্র জনতার উপর কাপুরুষের মত হামলা চালায়। শুরু হয় পাইকারী গনহত্যা। তেহরানে ১৫ হাজার ও কোম শহরে সৈন্যদের গুলীতে ৪শ’ লোক শহীদ হলেন। ফারজিয়ায় নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডের প্রথম বার্ষিকী ঘনিয়ে এল। শাহের সৈন্যরা কোম শহর ঘেরাও করে। জনগণের তীব্র আন্দোলনে শাহ বাধ্য হয়ে ইমামকে মুক্তি দিলেন। ফিরে এলেন তিনি নিজ শহর কোমে।
সে সময় শাহের মনোনীত প্রধানমন্ত্রী পুতুল সরকার ইরানী পার্লামেন্টে ক্যাপিটিউশেন বিল পাশ করে। ইরানে মার্কিন নাগরিকদের জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে এই বিলটি পাশ করা হয়। ইমাম এই বিলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। আন্দোলনকে দমিয়ে দিতে শাহ ইমামকে দেশের বাইরে নির্বাসনে পাঠানের পরিকল্পনা করলেন।
১৯৬৪ সালের ৪ নভেম্বর। শাহের সৈন্যরা কোম শহর ঘেরাও করে। ইমাম খোমেনীকে আবার গ্রেফতার করা হয়। ইমামকে মেহরাবাদ বিমান বন্দরে নিয়ে সেখান থেকে তুরস্টের ইজমিরে নির্বাসনে পাঠানো হল। ১৯৬৫ সালের অক্টোবরে ইমামকে তুরষ্ক থেকে ইরাকের নাজাফে পাঠানো হল। শাহের অনুরোধে ইরাকের বাথ সরকার ইমাম খোমেনীকে নানাভাবে হয়রানি করতে থাকে। সেখানে থেকে তাকে প্যরিসে পাঠানো হয়। নির্বাসিত থেকেও ইমাম ইরানের জনগণের কাছে বক্তৃতা ও বানী পাঠান। যা ক্যাসেটে বাজানো হত।
১৯৭৮ সালের ৯ মহরম ইরানের গনঅভ্যূত্থান ঘটে। এদিন লাখ লাখ লোক তেহরানের রাজপথে নেমে আসে। অন্যান্য শহরেও মুক্তিকামী জনতা মেশিনগান সজ্জিত সৈন্যরেদ সামনে ছুটে যেতে থাকে। মানুষ শহীদ হওয়ার জন্য কাফনের কাপড়ও পরিধান করে। মেশিনগানের গুলীতে একের পর এক মানুষ শহীদ হতে থাকে। শুধুমাত্র কালো শুক্রবারেই (১৯৭৮ সালের ৮ই সেপ্টেম্বর) প্রায় ৫ হাজার লোক শহীদ হয়। ১৯৭৮ সালের ৪ নভেম্বর তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ইমাম খোমেনীকে ইরানে ফিরিয়ে আনার দাবীতে মিছিল বের করে। সৈন্যদের গুলী করার নির্দেশ দেওয়া হয়। তাদের গুলীতে ৬৫ জন ছাত্র শহীদ হন।
েএরপর মহররমের ৯ এবং ২০ তারিখে আবার বিক্ষোভ হয়। ইমাম খোমেনী প্যারিসথেকে আশুরার বানী পাঠান। তাতে মহররমকে তরবারির উপর রক্তের বিজয় বলে ঘোষণঅ করা হয়। শাহের নিয়োচিত সামরিক প্রধান জেনারেল আজহারী ঘোষণা দিলেন, সকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত দু’দিন কার্ফু থাকবে। এসময় মসজিদেও কোন অনুষ্ঠান করা যাবেনা। রাস্তায় কেউ একাকি বেরহতে পারবে না। জনতা সামরিক শাসন অগ্রাহ্য করলো। তেহরানের রাজপথে ৫০.৬০ লাখ লোক জমায়েত হল। তারা বিক্ষোভ মিছিল সহকারে উত্তরাঞ্চলের দিকে এগোতে থাকে। শাহ ও তার বিদেশী উপদেষ্টারা বুছতে পারলো এখন আর জনতাকে ঠেকানো যাবে না। তাই ইসলামী জনতার উত্থানকে ঠেকানোর জন্য জেনারেল আজহারির সরকারকে বাতিল করে কট্টর ধর্মবিরোধী শাপুর বখতিয়ারকে নিয়োগ করে। বখতিয়অর শাহের দেশত্যাগের ব্যবস্থা করেন। ১৯৭৯ সালের ১৬ জানুয়অরী শাহ দেশ ত্যাগ করেন। বখতিয়ার সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়। জনতা খোমেনীকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবী জানাতে থাকে। বখতিয়ারের অনুমাতি চাড়াই ইমাম খোমেনী দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। বিমান বন্দরে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র হল। ইমামের অনুগত বিমান বাহিনীর সদস্যরা ইমামকে এ বিষয়ে অবহিত করেন। কিন্তু ইমাম নির্দিষ্ট দিনে ও নির্দিষ্ট ফ্লাইটে দেশে ফেরার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন।
শাপুর বখরিয়ার তেহরান বিমান বন্দর বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। কিন্তু বিমান বন্দরের বর্মচারীরা তা মানলেন না। তারা ইমামের বিমানকে নির্বিঘ্নে ইরানে নামার সুযোগ দিলেন। ইমাম এবার বিজয়ীর বেশে দেশে ফিরলেন।
সেটা ছিল ১৯৭৯ সালের ১লা ফেব্রুয়ারী। এদিন ইমাম খোমেনী দেশে ফেরেন। ৬০ লাখ লোক তাকে বিমান বন্দরে সম্বর্ধনা জানায়। দেশে ফেরার এক সপ্তাহ পর তিনি মেহেদী বাজারগনকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেন। বাজারগণ অস্থায়ী মন্ত্রিসভা গঠন করেন। ইমাম খোমেনী এসময় একটি বিপ্লবী পরিষদও গঠন করেন। এদিকে বখতিয়ার সরকারও ক্ষমতা ছড়েনি। ফলে েএকই সাধে দু’টি সরকার অস্তিত্ব লাভ করলো। কিন্তু জনগনের উপর বখতিয়ার সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না। তবুও তিনি সেনাবাহিনীর সাহায্যে টিকে থাকতে চাইলেন। ১০ ফেব্রুয়ারী ইমাম সামরিক আইনের প্রতি গুরুত্ব আরোপ না করতে বললেন। ইমামের সমর্থনে সেনাবাহিনী থেকে দলত্যাগ শুরু হয়। সৈন্যরা যাতে জনগণের বিরুদ্ধে না যায় সেজন্য ইমাম তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
তেহরানে বিমান বাহিনীর ক্যাডেটরা মিছিল করে ইমাম খোমেনীর নেতৃত্বে ইসলামী সরকার গঠনের দাবী জানায়। অফিসাররা ব্যারাকে ফেরার জন্য চাপ দিলও তারা কর্ণপাত না করে বিদ্রোহী ঘোষণা করে। গ্যরিসনের কম্যান্ডপারদের রাজকীয় বাহিনীর সদর দফতরে ডাকা হয় বিদ্রোহ দমনের জন্য। বেশ কিছু ট্যাংক বিমান বাহিনীর গ্যারিসনে সদর দফতরে ডাকা হয়। বিদ্রোহ মনের জন্য। বেশ কিছু ট্যাংক বিমান বাহিনীর গ্যারিসনে পৌঁছায়। ইমাম জনগণকে সামরিক আইন উপেক্ষা করে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ার ডাক দেন। জনতা গুরুত্বপূর্ণ স্থান সমূহে হামলা চালাতে থাকে। প্রধানমন্ত্রীর অফিস রেডিও, টিভি, পার্লামেন্ট ভবন, সাভাক কেন্দ্রীয় দফতর ও অন্যান্য শাখা অফিস ও নির্যাতন কেন্দ্রে গোলযোগ ছড়িয়ে পড়ে। ফলে এদিন আরো ৭/৮শ লোক নিহত হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হওয়ায় শাপুর বখতিয়ার রাতের আঁধারে পালিয়ে যান। ফলে শাহ ও তার অনুচরদের পতন হয়। ১১ই ফেব্রুয়অরী ১৯৭৯। ইরানে ইসলামী বিপ্লব সফল হল।
ইমাম খোমেনী ছিলেন পাশ্চাত্যের আতংক। সালমান রুশদী ইসলাম বিরোধী গ্রন্থ রচনা করলে ইমাম তার মৃত্যূদন্ড ঘোষণা করেন। ইমাম নিজে সরকার পরিচালনা না করলেও সরকারকে দিক নির্দেশনা দিতেন। তিন ১৯৮৯ সালের ৩রা জুন রাত দশটা ২০ মিনিটে েইন্তেকাল করেন। তিনি সরকারী ক্ষমতা গ্রহণ না করেও তার দেশ ও বিশ্বের লক্ষ্য কোটি নির্যাতিত মানুষের একান্ত আপন জনে পরিণত হন।
আয়াতুল্লাহ সাইয়েদ আলী খামেনেয়ী
ইরানের একটি প্রদেশের নাম খোরাসান। খোরাসানের রাজধানী মাশহাদ। সেখানে এক ধর্মীয় পরিবারে জন্ম হল একটি শিশুর। সেটি ১৯৩৯ সালের ১৫ জুলাই। এই শিশুই পরবর্তীকালে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা হন। ইমাম খোমেনীর ইন্তেকালের পর বর্তমান ইরানের তিনিই রাহবার। তিনি আধ্যাত্মিক নেতা। সেদেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে তিন দিক নির্দেশনা দান করেন।
মাশহাদে প্রাথমিক শিক্ষালাভেপর পর তিনি পবিত্র কোম শহরে যান। সেখানে পড়াশুনা করার সময় তিনি এমাম খোমেনীর ঘনিষ্ট সংস্পর্শে আসেন। ১৯৬২ সালে তিন ইমাম খোমেনীর নেতৃত্বে পরিচালিত ইসলামী আন্দোলনে যোগদান করেন। ইমাম খোমেনী সে সময় কোরআনে অবমানামূলক একটি বিলের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছিলেন। আন্দোলনের প্রচন্ডতায় সরকার ইমাম খোমেনীকে গ্রেফতার করে। একই সাথে আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীও গ্রেফতার হন। ইমাম খোমেনী এবং তাঁর একান্তই বিশ্বস্ত সহকর্মী আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর গ্রেফতারের প্রতিবাদে সারা ইরানে প্রচন্ড বিক্ষোভ শুরু হয়। ১৯৭৬ সালের ৫ জুন শুধুমাত্র তেহরানেই ১৫ হাজার লোক শহীদ হন। শাহ ইমাম খামেনেয়ীকে বিদেশে নির্বাসনে পাঠালে আয়াতুল্লাহ খামানেয়ী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৭৮ সালে তিনি মাশহাদে ফিরে আসেন এবং ইসলামী বিপ্লবের নেতৃত্ব দেন। ১৯৭৯ সালের ১লা ফেব্রুয়ারী িইসলামী বিপ্লব শুরু হয়। বিপ্লবের পরপরেই ১৯৭৯ সালের মার্চে আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী বিপ্লবী পরিষদের একজন সদস্য মনোনীত হন।
১৯৭৯ সালের আগষ্টে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের উপ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হন। ডিসেম্বরে তিনি বিপ্লবী রক্ষী বাহিনীর অধিনায়ক হন। ১৯৮০ সালের ১৯ জানুয়ারী ইমাম খোমেনী তাকে তেহরান নগরীর জুময়ার নামাজের ইমাম নিযুক্ত করেন। ১১ মার্চ তিনি প্রতিরক্ষাপরিষদের উপদেষ্ট হন। এর আগে ৫ই মার্চ পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন।
ইরাকের সাথে যুদ্ধ শুরু হলে ইমাম খোমেনী তাকে দক্ষিণাঞ্চলের রনাঙ্গনে পাঠান। আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী ১৯৮০ সালের ১লা অক্টোবরে নির্বাচনে ৯৫ শতাংশ ভোট পেয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ইরাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তিনি প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি সরকার পরিচানাতেও যোগ্যতার প্রমাণ দেন। ১৯৮৫ সালের ২০ আগস্ট পুনরায় তিনি ইরানের প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হন।
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী ফার্সী ছাড়াও আরবী, তুর্কী প্রভতি ভাষায় সুপন্ডিত। তিনি ইসলামী আদর্শ ও ইতিহাসের উপর অনেকগুলো মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন। তার গ্রন্থসমূহের মধ্যে বিখ্যাত হচ্ছে “আয়েন্দেহ সুলহে ইমাম হাসান।” ইমাম খামেনেয়ীর ইন্তেকালের পর আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী ১৯৮৯ সালের ৪ঠা জুন ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের নতুন আধ্যাত্মিক নেতা নির্বাচিত হন।
মহাকবি নিজামী
তাঁর নাম নিজামী। পুরা নাম আল ইলিয়অস ইউসুফ আবুবকর নিজামুদ্দীন নিজামী। হিজরী ৫৩৩ সনে তিনি ইরানের কুমে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মুঈদ। নিজামী পন্ডিত বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ভাই বিখ্যাত কবি ছিলেন। নিজামী প্রথমে বিদ্যালয়ে শিক্ষা শেষ করেন। তিনি ছোটবেলা থেকেই কবিতা রচনা করতেন। শিক্ষা অর্জনের পর তিনি কাব্য সাধনায় মন ঢেলে দেন। এসময় তার কবিতার সুখ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর সুখ্যাতি শুনে সে যুগের সম্রাটরা তাঁর প্রতি যথেষ্ট ভক্তি শ্রদ্ধা দেখাতেন। সকল সম্রাট তাদের দরবারে তাকে ডেকে নিয়ে বহু তাঁর কবিতা শুনতেন।
নিজামী সৎ ছিলেন। তিনি সততা পছন্দ করতেন। অসৎ লোকদের দেখতে পারতেন না। বাহরাম শাহ কবি নিজামীকে পছন্দ করতেন। কবি মখজনই আসরার কাব্য গ্রন্থ রচনা করে হিজরী ৫৫৯ সালে তাঁর নামে উৎসর্গ করেন। বাহারাম শাহ এতে খুশী হন। এবং কবিকে ৫ হাজার স্বর্ণমুদ্রা, অনেকগুলো উট এবং বিভিন্ন ধরনের পোশাক পরিচ্ছদ উপহার দেন। মখজন রচনার সময় কবির বয়স ছিল ২৫ বছর।
নিজামীর জন্মভূমি গঞ্জ সেলজুক বাদশাহদের রাজত্বের সীমায় অবস্থিত ছিল। এ সময় এই বংশের সুলতান তুগরল বিন আরসান রাজত্ব করতেন। তিনি সাহসী, ন্যায় বিচারক ও জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি নিজেও কবিতা রচনা করতেন এবং কবিদের সমাদর করতেন।
নিজামী সে সময় শিরীন ও খসরু রচনা শুরু করেছেন। এর সুনাম বহু দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। তুগরলও জানতে পারলেন নিজামীর কাব্য রচনার কথা। তিনি কবির কাব্যের সাথে তাঁর নাম জড়িত করার অনুরোধ জানান।
নিজামী যখন ইই মসনভী রচনা করেছিলেন তখন তার এক বন্ধু তার সাথে দেখা করতে এলেন। তিনি কবিকে শিরীন খসরু রচনা করতে দেখে অসন্তুষ্ট হলেন এবং বললেন, মিথ্যা কাহিনী রচনা করে কি লাভ? নিজামী বন্ধুর মন্তব্যের কোন জবাব না দিয়ে তার কাব্যখানা পড়তে শুরু করলেন। কাব্যের অপরূপ সৌন্দর্য্যে ও মাধুর্য্যে তার বন্ধু মুগ্ধ হয়ে গেলেন। এরপর শিরীন খসরু কাব্যের ব্যাপারে তিনি আর কোন কথা বলতে পারলেন না।
কবির শিরীন খসরু কাব্য খো সমাপ্ত হয়েছে জানতে পেরে সম্রাট ফজল আরসান তাঁকে রাজদরবারে আসার আহবান জানালেন। পত্রবাহক রাজকীয় আমন্ত্রণ নিয়ে নিজামীর কাছে পৌঁছলেন। রাজার আদেশ তিনি মাথার উপর রাখলেন। সম্মানের সাথে চুমু খেয়ে তখনই ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হয়ে রওয়ানা হলেন। তখনকার দিনে সুপ্রশস্থ রাস্তাঘাট ছিল না। এখনকার মত যানবাহনও ছিল না। কবি দিনের পর দিন ঘোড়ায় চড়ে প্রান্তর ও বন অতিক্রম করতে থাকেন। একমাস পর তিনি সম্রাটের রাজধানীতে পৌঁছলেন। রাজদূত গিয়ে কবি নিজামীর আগমনের বার্তা ঘোষণা করলেন। সম্রাটের নির্দেশে তাঁর মন্ত্রী শামসুদ্দিন মাহমুদ কবিকে সঙ্গে করে রাজদরবারে নিয়ে আসেন। নিজামী যখন রাজদরবারে পৌঁছলেন সে সময় আনন্দ মজলিস বসেছে। প্রাসাদ সুন্দরভাবে সুসজ্জিত এবং গান বাজনা চলছিল। সম্রাট ফজল আরসালান কবি নিজামীর সম্মানার্থে গানবাজনা বন্ধ করে দিলেন। সিংহাসন থেকে উঠে নিজামীকে সসম্মানে উপযুক্ত স্থানে বসালেন। তাদের মধ্যে নানান বিষয়ে আলোচনা হল। কবি কবিতা পাঠ করতে চাইলেন। সে যুগে নিয়ম ছিল রাজদরবারে কবি নিজের কবিতা পাঠ করতেন না। বরং কবির সঙ্গে একজন লোক থাকতেন তিনি তা পাঠ করতেন। তাকে রাবী বলা হত। যতক্ষণ রাবী কবিতা পড়তেন ততক্ষণ কবিকে দাঁড়িয়ে থাকতে হত। নিজামীও দাঁড়িযে থাকতে চাইলেন। কিন্তু ফজল আরসালান তাঁকে দাঁড়াতে নিষেধ করলেন।
রাবী যখন খসরু-শিরী শুরু করলেন তখন সম্রাট কবির কাঁধে হাত রেখে বিশেষ আগ্রহভরে তা’ শুনতে লাগলেন। রাজসভার সকলেই মহাখুশী হলেন। বাদশাহ নিজামীর দিকে লক্ষ্য করে বললেন, চিরকালের জন্য আপনি আমার নাম বিখ্যাত করে দিলেন। এর মুল্র দেয়া আমার জন্য কর্তব্য। তিন আরো বলেন, তাঁর ভাই কবিকে জায়গির হিসেবে যে দু’খানা গ্রাম দিয়েছেন তা’ তিনি পেয়েছেন কিনা? কবি হ্যাঁ সূচক জবাব দেন।
নিজামীর সুখ্যাতি শুনে প্রত্যেক রাজা বাদশাহই তার নাম অমর করে রাখার জন্য কবিকে দিয়ে গ্রন্থ রচনা করিয়ে নিতে আগ্রহী হন। েএদের মধ্যে বাদশাহ মুনচেহর নিজ হাতে ১০/১৫ ছত্রের একটি পত্র নিজামীকে লিখে তাকে লায়লী মজনুর কাহিনী নিয়ে কাব্য রচনা করতে বললেন। তাঁর পত্র পেয়ে নিজামী চিন্তিত হয়ে পড়েন। এ সময় কবি ১৪ বছরের কিশোর পুত্র সেখানে উপস্থিত ছিল। কবি তাকে বললেন, এই লায়লী মজনুর কাহিনী কাব্য রচনার উপযুক্ত নয়। কেননা এটা একেবারেই দুঃখের কাহিনী। এটা কি করে উপভোগ্য রচনা করা যাবে- এ বিষয়ে তিনি খুবই উদ্বিগ্ন। পুত্র বলেন- ইতোপূর্বে আর কেউ এই কাহিনী কাব্য আকারে রচনা করেন নাই। কাজেই উহা রচনার জন্য তিনি পিতাকে অনুরোধ জানান। রাজকীয় আদেশ অনুযায়ী কবি ৪ মাসের মধ্যে লায়লী-মজনু রচনা শেষ করেন।
নিজামীর এই কাব্য রচনার পুরষ্কার হিসেবে সম্রাট কবি পুত্রকে রাজপুত্রের মত শিক্ষা-দীক্সা ও যাবতীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণের খরচ বহন করেন।
৫৯৩ হিরীর ১৪ রমজান কবি সুলতান গিয়াসুদ্দিনের নির্দেশে পয়বার নামক কাব্য রচনা করেন।
ফজল আরসালানের মৃত্যুর পর তাঁর ভাতিজা আবু বকর নাসিরুদ্দিন ৫৮৩ হিরজীতে সিংহাসনে বসেন। নেজামী বহুকাল বাদশাহদের ফরমায়েশ মোতাবেক কাব্য রচনা করেন। একবার তিনি নিজের ইচ্ছানুযায়ী সেকেন্দার নামা রচনা করেন। এতে নাসীরুদ্দিনের নামের উল্লেখ রয়েছে। এই কাব্য ৫৯৯ হিরীতে শেষ হয়। এই কাব্য রচনা করে তিনি রাজার কাছে উপহার পাঠান। সম্রাট তাকে মূল্যবান ঘোড়া ও কাপড়চোপ প্রদান কনে। নিজামীর পুত্রের সাথে এক সম্রাটের মেয়ের বিয়ে পর্যন্ত সম্পন্ন হয়। সেকান্দার নামা কাব্যে এ বিষয়ের উল্লেখ আছে। এটি রচনার সময় তাঁর বয়স ছিল ৬৩ বছর।
এই গ্রন্থ শেষ হওয়ার সাথে সাথে তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যুর বছর ছিল ৫৯৯ হিজরী।
তিনি সারা জীবন তাঁর নিজের ঘরেই কাটয়েছেন। বেশী লোকেরসাথে তিনি দেখা সাক্ষাৎকরতেন না। জীবনী কাররা তাঁর একটি বিশেষ গুণের প্রশংসা করে থাকেন। সেটা হচ্ছে তিনি রাজা বাদশাদের তোষামদ করা পছন্দ করতেন না। তারপরেও রাজা বাদশাহরাই তার সাথে বিশেষ আগ্রহের সাথে মিশতে চাইতেন এবং তাঁর কাছে আসতেন। তাঁকে প্রচুর পুরষ্কার দিয়ে রাজাবাদশাহরা সেজন্য গৌরববোধ করতেন।
নিজামী অসাধাণ কবি ছিলেন। ইরানে তাঁকে সাধারণত হেকিম নিজামী গঞ্জভী বলা হয়। নেজামী সারাজীবনতাঁর মাতৃভূমি গঞ্জে থাকতেন। তিনি খুব কমেই বাইরে ভ্রমনে যেতেন।তিনি ঘরকুনো ঘরনের লোক ছিলেন। কবি সারা জীবনে ্কবা মাত্র ঘর ছেড়ে বাদশাহ আরসালা সেলজুকীর আমন্ত্রণে তার দরবারে গিয়েছিলেণ।
নিজামী তিনটি বিয়ে করেন। তাঁর প্রথম স্ত্রীর নাম আফাক। বাদশাহ আরসালান যে উপহার সামগ্রী পাঠিয়েছিলেন তার মধ্যে অপূরব সুন্দরী এক তরুনী ছিল। তার নাম আফাক।কবি তাকে বিয়ে করেন। স্ত্রীর প্রেমে মশগুল থাকাকালে নিজামী শিরীন খসরু কাব্য রচনা করেন। এই কাব্য রচনা শেষ হওয়ার পর আফাক ইন্তেকাল করেন। তাঁর দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্ত্রীর নাম ও পরিচয় জানা যায়নি।
কবির ছেলেদের মধ্যে মুহাম্মদ নামে তার এক পুত্রের কথা জানা যায়। শিরীন খসরু রচনাকালে তার বয়স ছিল ১৪ বছর। তাঁর এ পুত্রের হাত দিয়ে সম্রাটের কাছে ‘শিরীন খসরু’ কাব্যগ্রন্থ পাঠান। তাঁর ইকবাল নামায় এ বিষয়ের উল্লেখ দেখা যায়। নেজামী ৬৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তার কবরপাকা করে তার উপর গম্বুজ তৈয়ার করা হয়।
নিজামী ২০ হাজার ছত্র কবিতা রচনা করেন। তিনি মহৎ স্বভাবের কবি ছিলেন। তিনি বাদশাহ এবং আমির ওমরাদের সাথে থাকতে পছন্দ করতেন না। সমগ্র জীবন তিনি ঘরের কোনে কাটিয়েছেন। নতুন গঞ্জ শহর থেকে এক মাইল দূরে তাঁর কবর রয়েছে।