৭। হযরত আবু বকরের(রা) জনসেবা
হযরত আবু বকর(রা) কে খলীফা নিযুক্ত করা হয়েছে একথা যখন ঘোষণা করা হলো তখন মহল্লার একটি গরীব মেয়ে অস্থির হয়ে পড়ল। লোকেরা জিজ্ঞেস করলো যে, আবু বকর(রা) খলীফা হয়েছেন, তাতে তোমার কি অসুবিধা হয়েছে? মেয়েটি বললো, “আমাদের ছাগলগুলোর কী হবে?” জিজ্ঞেস করা হলো, “এর অর্থ?” সে বললো, এখনতো উনি খলীফা হয়ে গেছেন। আমাদের ছাগল ক’টার দেখাশোনাই বা কে করবে, এগুলোর দুধই বা কে দুইয়ে দিবে? এ কথার কেনো জবাব দেয়া কারো পক্ষেই সম্ভব হলো না। কিন্তু পরদিন খুব ভোরে মেয়েটি অবাক হয়ে দেখলো যে, হযরত আবু বকর(রা) যথাসময়ে তাদের বাড়ি গিয়েছেন এবং দুধ দোহাচ্ছেন। আর যাওয়ার সময় বলে গেলেন, “মা, তুমি একটুও চিন্তা করো না। আমি প্রতিদিন এভাবেই তোমার কাজ করে দিয়ে যাবো।” তাবাকাতে ইবনে সাদে আছে যে, মেয়েটির বিচলিত হওয়ার সংবাদ শুনে হযরত আবু বকর(রা) বলেছিলেন, আমি আশা করি খেলাফতের দায়িত্ব আমার আল্লাহর বান্দাদের সেবার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। আমি এখনো এ দরিদ্র মেয়েটির ছাগল দোহন করে দিয়ে আসবো ইনশাল্লাহ।
ইবনে আসাকার লিখেছেন যে, আবু বকর(রা) খেলাফতের পূর্বে তিন বছর এবং খেলাফতের পরে এক বছর পর্যন্ত মহল্লার দরিদ্র পরিবারগুলির ছাগল দোহন করে দিয়ে আসতেন।
আবু ছালেহ গিফারী বর্ণনা করেন যে, হযরত আবু বকর(রা) যখন খলীফা হন তখন মদীনার এক অন্ধ বুড়ীর বাড়ির কাজকর্ম হযরত ওমর(রা) স্বহস্তে করে দিতেন। তার প্রয়োজনীয় পানি এনে দিতেন ও বাজার সওদা করে দিতেন।
একদিন ওমর সেখানে গিয়ে দেখেন বুড়ীর বাড়ি একদম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। কলসিতে পানি আনা হয়েছে, বাজারও করা হয়েছে। তিনি ভাবলেন, বুড়ীর কোনো প্রতিবেশি হয়তো কাজগুলো করে দিয়ে গেছে। পরদিনও দেখলেন একই অবস্থা। সব কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। এভাবে কয়েকদিন কেটে গেল। এবার হযরত ওমরের কৌতুহল হলো। ভাবলেন, এই মহানুভব ব্যক্তিটি কে তা না দেখে ছাড়বেন না।
একদিন নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগে এসে লুকিয়ে রইলেন। দেখলেন অতি প্রত্যুষে এক ব্যক্তি বুড়ীর বাড়ির দিকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে আসছেন। হযরত ওমর বুঝতে পারলেন যে, এই ব্যক্তিই সেই মহান ব্যক্তি যিনি তারও আগে এসে বুড়ীর সমস্ত কাজ সেরে দিয়ে যান। ব্যক্তিটি বুড়ীর ঘরের মধ্যে এসে যখন কাজ শুরু করে দিল তখন হযরত ওমর যেয়ে দেখেন, ইনি আর কেউ নন, স্বয়ং খলীফা হযরত আবু বকর(রা)। হযরত ওমর বললেন, হে রাসূলের প্রতিনিধি! মুসলিম জাহানের শাসন সংক্রান্ত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এই বুড়ীর তদারকীও চালিয়ে যেতে চান নাকি? হযরত আবু বকর(রা) জবাব না দিয়ে একটু মুচকি হেসে যথারীতি কাজ করতে লাগলেন।
শিক্ষাঃ সাধারণত উচ্চপদস্থ লোকেরা অন্যের কাজ করা দূরে থাক, নিজের কাজও করতে চায় না। চাকর চাকরানী ও যন্ত্রের মাধ্যমে সব কাজ সারতে চেষ্টা করে। হযরত আবু বাকরের হাতে দাস দাসীর অভাব ছিল না। উপকারের কাজটা কোনো ভৃত্যকে পাঠিয়ে দিয়েও করাতে পারতেন। কিন্তু আখেরাতের বাড়তি সাওয়াবের আশায় এবং সাধারণ মুসলমানদের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করার মানসে এভাবে স্বহস্তে অন্যের সেবা করেছেন সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদে আসীন থাকা অবস্থায়। সকল যুগের মুসলমানদের সকল পর্যায়ের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গের জন্য এটি একটি চমকপ্রদ অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
৮। হযরত আবু বকর(রা) এর অনুশোচনা
এক ব্যক্তি হযরত আবু বকর সিদ্দীক(রা) কে গালি দিচ্ছিল। সেখানে রাসূল(সা) উপস্থিত ছিলেন। আবু বকর(রা) কোনো বাদ প্রতিবাদ না করে নীরবে গালি শুনতে লাগলেন। কিছুক্ষণ পর তাঁর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেল। তিনি ঐ ব্যক্তিতে তারই দেয়া একটি গালি ফেরত দিলেন। তৎক্ষণাৎ রাসূলুল্লাহ(সা) এর মুখে অসন্তোষের চিহ্ন ফুটে উঠল। তিনি উঠে বাড়ীতে চলে গেলেন। হযরত আবু বকর(রা) ঘাবড়ে গেলেন। তিনি কালবিলম্ব না করে রাসূলুল্লাহ(সা) এর কাছে ছুটে গেলেন এবং বললেন, “হে রাসূল! লোকটি যখন আমাকে গালি দিচ্ছিল আপনি চুপচাপ শুনছিলেন। যেই আমি জবাব দিলাম অমনি অসন্তুষ্ট হয়ে উঠে চলে এলেন।”
রাসূল(সা) বললেন, “শোন আবু বকর, যতক্ষণ তুমি চুপ ছিলে এবং ধৈর্য ধারণ করছিলে, ততক্ষণ তোমার সাথে আল্লাহর একজন ফেরেশতা ছিল, যিনি তোমার পক্ষ হতে জবাব দিচ্ছিলেন। কিন্তু যখন তুমি নিজেই জবাব দিতে শুরু করলে তখন ঐ ফেরেশতা চলে গেলেন এবং মাঝখানে এক শয়তান এসে গেল। সে তোমাদের উভয়ের মধ্যে গোলযোগ তীব্রতম করতে চাইছিল। হে আবু বকর! মনে রেখ কোনো বান্দার উপর যদি যুলুম ও বাড়াবাড়ি হতে থাকে এবং সে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তা ক্ষমা করতে থাকে এবং কোনো প্রতিশোধ নেয়া হতে বিরত থাকে, তবে আল্লাহ যুলুমকারীর বিরুদ্ধে তাকে সর্বাত্মক সাহায্য করে।”
হযরত আবু বকর(রা) অনুতপ্ত হলেন যে, ধৈর্যহারা হয়ে তিনি আল্লাহর ফেরেশতার সাহায্য হতে বঞ্চিত হয়ে গেলেন।
শিক্ষাঃ এই ঘটনা আমাদের সামনে ধৈর্যের শিক্ষাই নতুন করে তুলে ধরেছে। রাসূল(সা) বলেছেনঃ “ধৈর্য এমন একটা গাছ, যার সারা গায়ে কাঁটা, কিন্তু এর ফল অত্যন্ত মজাদার।” সুতরাং প্রত্যেক মুসলমানের উচিত চরম উস্কানীর মুখেও ধৈর্য ধারণ করা ও ক্রোধ সম্বরণ করা। উস্কানীর মুখে ক্রোধ সম্বরণের সহজ পন্থা হলো সালাম দিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করা, নচেত ঠান্ডা পানি দিয়ে ওযূ করা।
৯। ব্যক্তিস্বাধীনতা ও বাক স্বাধীনতা
হযরত ওমর(রা) তখন মুসলিম জাহানের খলিফা। একবার রাতের বেলা একটা সুরেলা আওয়াজ শুনতে পেলেন। একটি লোক গান গাইছিলো। তাঁর সন্দেহ হলো। তিনি প্রাচীরে উঠে দেখলেন, পাশের ঘরে এক পুরুষ বসে আছে। তার পাশে মদ ভর্তি একটি পাত্র ও গ্লাস। অদূরে এক মহিলাও রয়েছে। খলিফা চিৎকার করে বললেন, ওরে আল্লাহর দুশমন! তুই কি মনে করেছিস যে, তুই আল্লাহর নাফরমানী করবি, আর তিনি তোর গোপন অভিসারের কথা ফাঁস করবেন না? জবাবে সে বললোঃ “আমিরুল মোমেনীন, তাড়াহুড়ো করবেন না। আমি যদি একটি গুনাহও করে থাকি, তবে আপনি করেছেন তিনটি গুনাহ। আল্লাহ তায়ালা মানুষের দোষত্রুটি খুঁজে বেড়াতে নিষেধ করেছেন কিন্তু আপনি দোষ ত্রুটি খুঁজছেন। আল্লাহ আদেশ দিয়েছেন কারো বাড়িতে ঢুকলে দরজা দিয়ে ঢুকতে, কিন্তু আপনি প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে ঘরে প্রবেশ করেছেন। আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন যে, নিজের বাড়ি ছাড়া অন্যের বাড়িতে অনুমতি না নিয়ে ঢুকতে। কিন্তু আপনি আমার অনুমতি ছাড়াই আমার বাড়িতে প্রবেশ করেছেন।”
এ জবাব শুনে হযরত ওমর(রা) নিজের ভুল স্বীকার করলেন এবং তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন না। তবে তার কাছ হতে অংগীকার আদায় করলেন যে, সে পাপের পথ ত্যাগ করে সৎ পথে ফিরে আসবে।
শিক্ষাঃ অন্যায়ের প্রতিরোধে সক্রিয় থাকা প্রত্যেক মুসলিমের সার্বক্ষণিক দায়িত্ব। কিন্তু এই দায়িত্ব পালনেও অনেক সতর্কতা ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হয়। নচেৎ প্রতিরোধের চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে। হযরত ওমরের(রা) ঘটনা থেকে সেই শিক্ষাই পাওয়া যায়।
১০। হযরত ওমর(রা) এর ইসলাম গ্রহণ
ইবনে ইসহাক থেকে বর্ণিত আছে যে, কুরাইশ প্রতিনিধি আমর ইবনুল আ’স ও আব্দুল্লাহ ইবনে রবীয়া’ যখন আবিসিনিয়া থেকে ফিরে এল এবং সেখানে হিযরত করতে যাওয়া মুসলমানদের ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হলো না, তার অল্প কয়েকদিন পরেই ওমর বিন খাত্তাবের ন্যায় দুর্দান্ত সাহসী ও প্রতাপশালী ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর ও হযরত হামযার ইসলাম গ্রহণে রাসূল(সা) ও সাহাবীগণের মনোবল যথেষ্ট বেড়ে যায় এবং তারা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ অনুভব করেন। এর আগে তাঁরা কাবার চত্ত্বরে নামায পড়ারও সাহস পেতেন না। ইসলাম গ্রহণের পর ওমর ঝুঁকি নিয়ে কাবার চত্তরে নামায পড়েন এবং তাঁর সাথে অন্যান্য সাহাবীগণও নামায পড়েন।
উম্মে আবদুল্লাহ বিনতে আবু খাসয়ামা(রা) বলেন যে, আমরা একে একে সবাই আবিসিনিয়ায় চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আমার স্বামী আমের তখন একটা পারিবারিক কাজে বাইরে গিয়েছিলেন। সহসা ওমর ইবনুল খাত্তাব এসে আমার সামনে দাঁড়ালেন। তখনো তিনি মোশরেক। তার জুলুম অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ ছিলাম। ওমর বললেনঃ হে উম্মে আবদুল্লাহ! আপনারা বুঝি বিদায় হচ্ছেন? আমি বললামঃ হ্যাঁ, আল্লাহর কসম। আল্লাহর পৃথিবীতে বেড়িয়ে পড়বো। তোমরা আমাদেরকে অনেক কষ্ট দিয়েছ, অনেক নির্যাতন চালিয়েছ। আল্লাহ এ অবস্থা থেকে আমাদের উদ্ধার করবেন। ওমর বললেনঃ “আল্লাহ আপনাদের সাথী হোন।” তার কথায় এমন একটা সহানুভূতির ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছিল যা আর কখনো দেখি নি। এরপর ওমর ইবনুল খাত্তাব চলে গেলেন। তবে আমার মনে হচ্ছিল, আমার দেশ ত্যাগের খবরে তিনি মর্মাহত। কিছুক্ষণ পর আমের প্রয়োজন সেরে ঘরে ফিলে এলো। আমি তাকে বললামঃ “ওহে আবদুল্লাহর বাবা! এই মাত্র ওমর এসেছিল। আমাদের প্রতি তার সে কি সহানুভূতি ও উদ্বেগ, তা যদি তুমি দেখতে!” আমের বললেনঃ তুমি তার ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে আশাণ্বিত? আমি বললামঃ হ্যাঁ। সে বললোঃ খাত্তাবের গাধা ইসলাম গ্রহণ করলেও তুমি যাকে দেখেছ সে(খাত্তাবের ছেলে ওমর) ইসলাম গ্রহণ করবে না। ইসলামের প্রতি ওমরের যে প্রচন্ড বিদ্বেষ, হঠকারিতা ও একগুঁয়েমির প্রকাশ দেখা যাচ্ছিল, তার দরুণ আমের হতাশ হয়েই অনুরূপ কথা বলেছিলিন।
হযরত ওমরের(রা) ইসলাম গ্রহণের কারণঃ
ইবনে ইসহাক হতে বর্ণিত আছে যে, ‘ওমরের বোন ফাতিমা বিনতে খাত্তাব ও তার স্বামী সাঈদ বিন যায়েদ বিন আমর বিন নুফায়েল ওমরের আগেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তাঁরা তাঁদের ইসলাম গ্রহণের কথা ওমরের কাছ হতে লুকিয়ে রেখেছিলেন। মক্কার আর এক ব্যক্তি নাঈম বিন আবদুল্লাহ আন নাহামও একইভাবে গোপনে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। ওমরের স্বগোত্রীয় অর্থাৎ বনু আদি বিন কা’বের অন্তর্ভুক্ত এই ব্যক্তি নিজ গোত্রের অত্যাচারের ভয়ে নিজের ইসলাম গ্রহণের কথা প্রকাশ করেন নি। খাব্বার ইবনুল আরাত(বনু তামীম বংশোদ্ভূত এই সাহাসী জাহিলিয়াতের যুগে তরবারী তৈরির পেশায় নিয়োজিত ছিলেন এবং বনু খোযায়া গোত্রের উম্মে আনমার নাম্মী মহিলার মুক্ত গোলাম ছিলেন) নামক অপর এক নওমুসলিম গোপনে ফাতিমা বিনতে খাত্তাবকে কুরআন পড়িয়ে যেতেন। একদিন ওমর ইবনুল খাত্তাব উন্মুক্ত তরবারী হাতে নিয়ে রাসূল(সা) ও তাঁর একদল সাহাবীর সন্ধানে বেড়িয়ে পড়লেন। তিনি জানতে পেরেছিলেন যে, প্রায় ৪০ জন নারী ও পুরুষ সাহাবীসহ রাসূল(সা) সাফা পাহাড়ের নিকটবর্তী একটা ঘরে সমবেত হয়েছেন। রাসূল(সা) এর তাঁর চাচা হামযা ইবনে আবদুল মুত্তালিব, আবু বকর সিদ্দীক বিন আবু কুহাফা এবং আলী বিন আবু তালিবসহ এমন কিছু সংখ্যক মুসলমান ছিলেন যারা রাসূল(সা) এর সাথে মক্কায় অবস্থান করছিলেন এবং আবিসিনিয়ায় হিজরতকারীদের সাথে হিজরত করেন নি।’ পথে নাঈম বিন আবদুল্লাহর সাথে ওমরের(রা) দেখা হলো। তিনি বললেন, কোথায় চলেছ ওমর? ওমর বললেন, “ধর্মচ্যূত মুহাম্মদের সন্ধানে চলেছি, যে কুরাইশ বংশে বিভেদ সৃষ্টি করেছে, তাদের বুদ্ধিমানদের বোকা সাব্যস্ত করেছে, তাদের অনুসৃত ধর্মের নিন্দা করেছে এবং তাদের দেবদেবীকে গালাগাল করেছে। আমি ওকে হত্যা করবো।” নাঈম বললেন, “ওহে ওমর, আল্লাহর কসম, তুমি আত্মপ্রবঞ্চনার শিকার হয়েছ। তুমি কি মনে কর, মুহাম্মদকে হত্যা করার পর বনু আবদ মানাফ তোমাকে ছেড়ে দেবে আর তুমি পৃথিবীর ওপর অবাধে বিচরণ করে বেড়াতে পারবে? তোমার কি উচিত নয় আগে পরিবার পরিজনের দিকে মনোনিবেশ করা এবং তাদেরকে শোধরানো?” ওমর বললেনঃ “আমার পরিবার পরিজনের কি হলো?” নঈম বললেন, “তোমার ভগ্নিপতি ও চাচাতো ভাই সাঈদ বিন যায়েদ বিন আমর এবং তোমার বোন ফাতিমা বিনতে খাত্তাব। আল্লাহর কসম, তাঁরা উভয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং মুহাম্মদের ধর্ম অনুসরণ করেছে। পারলে তাদেরকে সামলাও।” ওমর তৎক্ষণাৎ ফিরে গেলেন তার বোন ও ভগ্নিপতির বাড়ির দিকে। যখন তিনি তাদের কাছে রওনা হলেন তখন তাদের কাছে খাব্বাব ইবনুল আরাত ছিলেন। তিনি তাদেরকে পবিত্র কুরআনের একটি অংশ হাতে নিয়ে পড়াচ্ছিলেন। এই অংশটিতে ছিল সূরা ত্বা-হা। ওমরেরর আওয়াজ শুনে খাব্বাব গা ঢাকা দিলেন। তিনি ঘরের কোন এক অংশে লুকিয়ে রইলেন। আর ফাতেমা কুরআনের কোনো একটি অংশ নিজের উরুর নিচে চাপা দিয়ে রইলেন। ঘরের কাছাকাছি পৌঁছার পর ওমর খাব্বাবের পড়ার আওয়াজ শুনেছিলেন। ঘরে ঢুকে তিনি বললেন, “একটি দুর্বোধ্য বাণী আবৃত্তি করার আওয়াজ শুনেছিলাম। ওটা কি?” তাঁরা উভয়ে বললেন, “না, আপনি কিছুই শুনেন নি।” ওমর বললেন, “নিশ্চয়ই শুনেছি। আর আল্লাহর কসম, এটাও জেনেছি যে, তোমরা উভয়ই মুহাম্মদের অনুসারী হয়ে গেছ।” কথাটা বলে ভগ্নিপতি সাঈদকে প্রবলভাবে জাপটে ধরলেন। তার বোন ফাতিমা বিনতে খাত্তাব স্বামীকে বাঁচাতে ছুটে গেলে তিনি তাকে মেরে জখম করে দিলেন। এই কান্ড ঘটানোর পর তাঁর বোন এবং ভগ্নিপতি একযোগে বলে উঠলেন, “হ্যাঁ, আমরা ইসলাম গ্রহণ করেছি। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছি। এখন যা করতে চান করুন।” ওমর যখন দেখলেন তার বোনের শরীর রক্তাক্ত, তখন অনুতপ্ত হলেন। তিনি স্বীয় বোনকে বললেন, “আমাকে এই পুস্তিকাটি দাও, যা এইমাত্র তোমাদেরকে পড়তে শুনলাম। আমি একটু দেখবো মুহাম্মাদ কি জিনিস নিয়ে এসেছে।” ওমর লেখাপড়া জানা লোক। তিনি একথা বললে তাঁর বোন তাঁকে বললেন, “আমার ভয় হয় আপনি নষ্ট করে ফেলেন কি না।” ওমর বললেন, “ভয় পেয়ো না।” অতঃপর তিনি নিজের দেবদেবীর শপথ করে বললেন, “ওটি আমি পড়েই তোমার কাছে ফিরিয়ে দেবো।” ওমরের এ কথাটি শুনে ফাতেমার মনে আশার সঞ্চার হলো যে, ওমর ইসলাম গ্রহণ করতে পারে। তিনি বললেন, “ভাইজান! আপনি যে অপবিত্র! কেননা আপনি এখনো মোশরেক। অথচ এই পবিত্র গ্রন্থকে পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া স্পর্শ করতে পারে না।” ওমর তৎক্ষণাৎ উঠে চলে গেলেন এবং গোসল করে এলেন। এবার ফাতিমা তাকে পুস্তিকাখানি দিলেন। তাতে সূরা ত্বা-হা লিখিত ছিল। তিনি তা পড়লেন। প্রথম অংশটি পড়েই বললেনঃ “আহ্! কি সুন্দর কথা! কী মহৎ বাণী!” তাঁর এ উক্তি শুনে খাব্বা তাঁর সামনে বেরিয়ে এলেন। তিনি তাঁকে বললেন, “হে ওমর! আল্লাহর কসম, আমার মনে আশা সঞ্চার হচ্ছে যে আল্লাহ হয়তো আপনাকে তাঁর নবীর দাওয়াত গ্রহণের জন্য মনোনীত করেছেন। আমি গতকাল শুনলাম রাসূল(সা) দোয়া করেছেন, “ হে আল্লাহ! তুমি আবুল হিকাম বিন হিশাম অথবা ওমর ইবনুল খাত্তাবের দ্বারা ইসলামের শক্তি বৃদ্ধি কর। অতএব, আল্লাহর দিকে অগ্রসর হোন, আল্লাহর দিকে অগ্রসর হোন, হে ওমর।”
ওমর বললেন, “হে খাব্বাব! আমাকে মুহাম্মদের সন্ধান দাও। আমি তাঁর কাছে যেয়ে ইসলাম গ্রহণ করবো।” খাব্বাব বললেন, “তিনি সাফা পাহাড়ের নিকট একটি বাড়িতে আছেন। সেখানে তাঁর সাথে তাঁর একদল সাহাবী রয়েছেন।” ওমর তাঁর তরবারী আগের মতই খোলা অবস্থায় ধরে নিয়ে রাসূল(সা) ও তাঁর সাহাবীদের কাছে চললেন। সেখানে গিয়ে দরজায় কড়া নাড়লেন। ভেতর থেকে তাঁর আওয়াজ শুনে রাসূল(সা) এর জনৈক সাহাবী দরজার কাছে এগিয়ে গিয়ে ভেতর থেকে তাকালেন। দেখলেন ওমর মুক্ত তরবারী হাতে দাঁড়িয়ে। তিনি শংকিত চিত্তে রাসূল(সা) এর কাছে গিয়ে বললেন, “হে রাসূলুল্লাহ! এ যে ওমর ইবনুল খাত্তাব একেবারে নগ্ন তরবারী হাতে!” হামযা ইবনে আবদুল মুত্তালিব বললেন, “ওকে ভিতরে আসার অনুমতি দিন। সে যদি কোনো শুভ কামনা নিয়ে এসে থাকে, আমরা তার প্রতি বদান্যতা দেখাব। আর যদি কোনো কু-বাসনা নিয়ে এসে থাকে তাহলে ওর তরবারী দিয়েই ওকে হত্যা করবো।” রাসূল(সা) বললেন, “ওকে ভেতরে আসতে দাও।” উক্ত সাহাবী তাকে ভেতরে আসতে দিলেন। রাসূল(সা) নিজে উঠে তার কাছে এগিয়ে গেলেন এবং নিজের কক্ষে নিয়ে গিয়ে তার সাথে সাক্ষাৎ করলেন। রাসূল(সা) তার পাজামা বাঁধার জায়গা অথবা যেখানে চাদরের দুই কোণা মিলিত হয়, সেখানটা ধরে তাঁকে প্রচন্ডজোরে আকর্ষণ করলেন এবং বললেন, “কি হে খাত্তাবের পুত্র! তোমার এখানে আগমন ঘটলো কিভাবে? আমার তো মনে হয়, আল্লাহ তোমার ওপর কোনো বিপর্যয় না নামানো পর্যন্ত তুমি ফিরবে না।” ওমর বললেন, “ হে রাসূলুল্লাহ! আমি আপনার কাছে এসেছি আল্লাহর ওপর, তাঁর রাসূলের ওপর ও আপনার কাছে আল্লাহর পক্ষ হতে যা কিছু আসে তার ওপর ঈমান আনবার জন্য।” এ কথা শুনামাত্র রাসূল(সা) এমন জোরে “আল্লাহু আকবার” বলে উঠলেন যে, ঐ ঘরের ভেতর রাসূল(সা) এর যে কয়জন সাহাবী ছিলেন সবাই বুঝলেন যে, ওমর ইসলাম গ্রহণ করেছে।
এরপর রাসূল(সা) এর সাহাবীগণ যার যার জায়গায় চলে গেলেন। হামযার পর ওমর(রা) এর ইসলাম গ্রহণে তাঁদের মনোবল ও আত্মমর্যাদা বেড়ে গেল। তারা নিশ্চিত হলেন যে, ওঁরা দুজন রাসূল(সা) এর প্রতিরক্ষায় অবদান রাখবেন এবং ইসলামের দুশমনদের মোকাবিলায় মুসলমানদের সহযোগিতা করবেন।
এটি তাঁর ইসলাম গ্রহণ সংক্রান্ত সবচেয়ে প্রসিদ্ধ বর্ণনা।
ওমর ইবনুল খাত্তাবের ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে আতা ও মুজাহিদের বর্ণনাঃ ইবনে ইসহাক বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে আবি নুজাইহ আল মাক্কী স্বীয় শিষ্য আতা, মুজাহিদ অথবা অন্যান্য বর্ণনাকারীদের থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ওমর(রা) এর ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে ব্যাপক জনশ্রুতি রয়েছে যে তিনি স্বয়ং নিম্নরূপ বলতেনঃ “ আমি ইসলামের কট্টর বিরোধী ছিলাম। জাহেলী যুগে আমি খুব মদের ভক্ত ছিলাম। মদ পেলে খুবই আনন্দিত হতাম। আমাদের একটা মজলিশ বসতো উমার বিন আবদ বিন ইমরান আল মাখযুমীর পারিবারিক বাসস্থানের নিকটস্থ খাজওয়ারা নামক স্থানে। সেখানে কুরাইশের বহু লোক সমবেত হতো। একদিন রাতে ঐ আসরে আমার আমার সহযোগীদের উদ্দেশ্যে গেলাম। কিন্তু তাদের কাউকেই পেলাম না। এরপর ভাবলাম, মক্কার অমুক মদ বিক্রেতার কাছে গেলে হয়তো মদ খেতে পারতাম। তার উদ্দেশ্যে গেলাম। কিন্তু তাকে পেলামনা। এরপর মনে মনে বললাম, কা’বা শরীফে গিয়ে সাতবার অথবা সত্তরবার যদি তওয়াফ করতাম, মন্দ হতো না। অতঃপর কা’বা শরীফে তাওয়াফ করার জন্য মসজিদুল হারামে উপনীত হলাম। সেখানে দেখলাম, রাসূলুল্লাহ(সা) নামাযে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি তখনো সিরিয়ার দিকে মুখ করে নামায পড়তেন। নিজের ও সিরিয়ার মাঝখানে কা’বা শরীফকে রাখতেন। রূকনে আসওয়াদ ও রূকনে ইয়ামানীর মাঝে বসে তিনি নামায পড়তেন। তাঁকে দেখেই আপন মনেই বললাম, আল্লাহর কসম, আজকের রাতটি যদি মুহাম্মাদের(সা) আবৃত্তি শুনে কাটিয়ে দিতাম এবং সে কি বলে তা অবহিত হতাম, তাহলেও কাজ হতো। কিন্তু সেই সাথে এটাও ভাবলাম যে, মুহাম্মদের(সা) খুব কাছে গিয়ে যদি শুনি তাহলে তিনি ভয় পেয়ে যাবেন। তাই হাজরে আসওয়াদের দিক থেকে এলাম, কা’বা শরীফের পর্দার আড়ালে লুকিয়ে ধীর পায়ে এগিয়ে এলাম। রাসূল(সা) তখনো যথারীতি দাঁড়িয়ে নামাযে কুরআন পাঠ করে যাচ্ছেন। অবশেষে আমি তাঁর ঠিক সামনে কা’বার পর্দার আড়ালে লুকিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। যখন কুরআন শুনলাম, আমার মন নরম হয়ে গেল। আমি কেঁদে দিলাম। ইসলাম আমার মনমগজ দখল করে ফেললো। রাসূল(সা) নামায শেষ করে চলে না যাওয়া পর্যন্ত আমি ওখানেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম। তিনি যখন কা’বা থেকে যেতেন, ইবনে আবি হুসাইনের বাড়ির কাছ দিয়ে যেতেন। এই বাড়ী ছিল তার সাফা ও মারওয়ার দৌড়েরও শেষ সীমা। সেখান থেকে আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিবের বাড়ী এবং আজহার বিন আবদ আওফ আযযুহরীর বাড়ির মাঝখান দিয়ে, তারপর আখনাস বিন শুরাইকের বাড়ী হয়ে নিজের বাড়ীতে চলে যেতেন। দারুর রাকতাতে ছিল রাসূল(সা) এর বাড়ী। এই জায়গাটি ছিল আবু সুফিয়ানের ছেলে মুয়াবীয়ার মালিকানাধীন। ওমর(রা) বললেন, আমি রাসূল(সা) এর পিছু পিছু চলতে লাগলাম। যখন তিনি আব্বাসের বাড়ী ও ইবনে আযহারের বাড়ীর মাঝখানে গিয়ে পৌছলেন, তখন তাঁকে গিয়ে ধরলাম। আমার আওয়ায শুনেই রাসূল(সা) আমাকে চিনে ফেললেন। রাসূল(সা) মনে করলেন আমি তাঁকে কষ্ট দিতে এসেছি। তাই তিনি আমাকে একটা ধমক দিলেন। ধমক দিয়েই আবার জিজ্ঞাসা করলেন, “ওহে খাত্তাবের পুত্র! এ মুহুর্তে তুমি কি উদ্দেশ্যে এসেছ?” আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি এবং তাঁর কাছে যা কিছু আল্লাহর কাছ থেকে আসে, তার প্রতি ঈমান আনার উদ্দেশ্যে।” এ কথা শুনে রাসূল(সা) আল্লাহর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করলেন। তারপর বললেন, “হে ওমর! আল্লাহ তোমাকে হেদায়াত করেছেন।” তারপর তিনি আমার বুকে হাত বুলালেন এবং আমি যাতে ইসলামের উপর অবিচল থাকি সে জন্য দোয়া করলেন। অতঃপর রাসূল(সা)এর কাছ হতে বিদায় হলাম এবং তিনি নিজের বাড়ীতে প্রবেশ করলেন।”
ইবনে ইসহাক বলেনঃ ওমরের ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে উপরের দুটি ঘটনার মধ্যে কোনটি সঠিক তা আল্লাহই ভালো জানেন।
ইসলামের ওপর ওমরের দৃঢ়তাঃ ইবনে ইসহাক বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উমারের মুক্ত গোলাম না’ফে ইবনে উমার থেকে বর্ণনা করেন যে, আমার পিতা ওমর যখন ইসলাম গ্রহণ করলেন, তখন জিজ্ঞাসা করলেন যে, কুরাইশের কোন ব্যক্তি সর্বাধিক প্রচার মুখর? তাকে বলা হলো, জামীল বিন মুয়াম্মার আল জুমহী। তিনি তৎক্ষণাৎ তার উদ্দেশ্যে রওনা হলেন।
আবদুল্লাহ ইবনে উমার বলেনঃ আমি তাঁর পেছনে পেছনে ছুটলাম এবং তিনি কি করেন দেখতে লাগলাম। তখন আমি একজন বালক হলেও যা কিছু দেখি সবই বুঝতে পারি। ওমর(রা) জামীলের কাছে উপস্থিত হয়ে বললেনঃ “হে জামীল! আমি ইসলাম গ্রহণ ও মুহাম্মদের ধর্মে প্রবেশ করেছি।” ইবনে ওমর বলেন, জামীল তাঁর দিকে ভ্রুক্ষেপ না দিয়ে চাদর গুটিয়ে হাঁটতে লাগল। ওমর(রা) তার পিছু পিছু চললেন। আমিও আমার পিতার পিছু পিছু চললাম। চলতে চলতে মসজিদুল হারামের দরজার কাছে পৌঁছে সে বিকট চিৎকার করে বললো, “হে কুরাইশ জনমন্ডলী! শুনে নাও, ওমর ধর্মচ্যূত হয়ে গেছে।” এ সময় কুরাইশ নেতৃবৃন্দ কা’বার চত্ত্বরে তাদের আড্ডায় বসেছিল। ওমর তার পেছনে দাঁড়িয়ে বললেনঃ “জামীল মিথ্যা বলছে, আমি ধর্মচ্যূত হইনি, ইসলাম গ্রহণ করেছি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ(সা) তার বান্দা ও রাসূল।” সঙ্গে সঙ্গে সকলে তার দিকে মারমুখী হয়ে ছুটে এল। ওমর ও কুরাইশ জনতার মধ্যে লড়াই চললো দুপুর পর্যন্ত। এক সময় ওমর ক্লান্ত ও অবসন্ন হয়ে বসে পড়লেন। মারমুখী জনতা তখনো তাঁর মাথার উপরে। ওমর বলতে লাগলেনঃ তোমরা যা খুশী কর। আল্লাহর কসম, আমরা যদি তিনশো লোক হতাম, তাহলে আমরা তোমাদের জন্য রণাঙ্গন ছেড়ে দিতাম অথবা তোমরা ছেড়ে দিতে।”(অর্থাৎ মুসলমানদের সংখ্যা বেশি হলে তোমরা এত মারমুখী হতে না)। উভয়পক্ষ যখন এই পর্যায়ে, তখন সহসা সেখানে একজন প্রবীণ কুরাইশ সর্দারের আবির্ভাব ঘটলো। মূল্যবান ইয়ামানী চাদর ও নকশাদার আলখেল্লা পরিহিত এই বৃদ্ধ এসে তাদের পাশে দাঁড়ালেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাদের কি হয়েছে? তারা বললো, “ওমর ধর্মচ্যূত হয়ে গেছে।” বৃদ্ধ বললেন, “তাতে কী? থামো। একজন মানুষ নিজের ইচ্ছায় একটি জিনিস গ্রহণ করেছে। তোমরা তার কি করতে চাও? তোমরা কি ভেবেছ, বনু আদি বিন কা’ব[ওমর(রা) এর গোত্র] তাদের সদস্যকে তোমাদের হাতে এভাবেই ছেড়ে দেবে? ওকে ছেড়ে দাও।” ইবনে উমার(রা) বললেনঃ এ কথার পর তারা নিজেদের উত্তেজিত ভাবাবেগকে সংযত করলো। পরে মদীনায় হিজরত করার পর আমার পিতাকে জিজ্ঞাসা করেছিলামঃ আব্বা, ঐ বৃদ্ধটি কে, যিনি আপনার ইসলাম গ্রহণের দিন মারমুখো জনতাকে আপনার কাছ থেকে ধমক দিয়ে হটিয়ে দিয়েছিলেন? তিনি বললেন, তিনি আস ইবনে ওয়ায়েল আসসাহমী।
ইবনে হিশাম বলেনঃ আমাকে কোনো কোনো বিদ্বান ব্যক্তি বলেছেন যে, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর ও তাঁর পিতার কথোপকথনটি ছিল এরককঃ
ইবনে ওমরঃ আব্বা! ঐ লোকটি কে, যিনি আপনার ইসলাম গ্রহণের দিন মক্কাতে যারা আপনার ওপর আক্রমণ করেছিল, তাদেরকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিয়েছিলেন? আল্লাহ উনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।”
হযরত ওমর(রা)ঃ “হে বৎস্য! তিনি আস ইবনে ওয়ায়েল। আল্লাহ তাকে কোনোই উত্তম প্রতিদান যেন না দেন।” কারণ ইসলাম গ্রহণ ব্যতীত ভালো কাজের প্রতিদান পাওয়া যায়না। আ’স ইবনে ওয়ায়েল মোশরেক অবস্থায় এ কাজটি করেন এবং কখনো মুসলমান হন নি।
হযরত ওমর(রা) বলেনঃ “সেই রাত্রে ইসলাম গ্রহণ করার পর সিদ্ধান্ত নিলাম যে মক্কাবাসীর মধ্যে যে ব্যক্তি রাসূল(সা) এর সবচেয়ে কট্টর দুশমন, তার কাছে যাবো এবং তাকে জানাবো যে, আমি মুসলমান হয়ে গেছি। ভেবে দেখলাম যে এই ব্যক্তিটি তো আবু জাহল ছাড়া আর কেউ নয়।” উল্লেখ্য যে, ওমর(রা) আবু জাহলের আপন বোন খানতামা বিনতে হিশাম ইবনুল মুগীরার পুত্র ছিলেন। যাহোক, ওমর বললেনঃ আমি পরদিন সকালে তার কাছে গিয়ে দরজায় কড়া নাড়লাম। আবু জাহল আমার কাছে বেরিয়ে এলো এবং বললোঃ “আমার ভাগ্নেকে স্বাগত! তুমি কি খবর নিয়ে এসেছ ওমর?” আমি বললাম, “মামা, আমি আপনাকে জানাতে এসেছি যে, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল মুহাম্মদ(সা) এর প্রতি ঈমান এনেছি। তিনি যে বিধান নিয়ে এসেছেন তাও সত্য বলে মেনে নিয়েছি।” এরপর তিনি আমার মুখের উপর ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দিলেন এবং বললেনঃ “ধিক তোমাকে এবং ধিক তোমাকে বহন করে আনা সংবাদকে।”
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ বলেনঃ হযরত ওমরের(রা) ইসলাম গ্রহণ করা ছিল একটি বিজয়, তাঁর মদীনায় হিজরত ছিল আল্লাহর সাহায্য স্বরূপ এবং তাঁর খিলাফত ছিল আল্লাহর রহমত স্বরূপ।
শিক্ষাঃ
(১) পবিত্র কুরআন অধ্যয়ন করেই হযরত ওমর(রা) হেদায়াত লাভ করেছিলেন। তাই ইসলামের পুনরুজ্জীবন ও পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য যারাই কাজ করতে চায়, কেয়ামত পর্যন্ত তাদের এ কাজ সরাসরি কুরআন দিয়েই শুরু করতে হবে।
(২) রাসূল(সা) ওমরের নাম ধরে দোয়া করতেন তাঁর হেদায়াতের জন্য। তাই রাসূল(সা) এর পদানুসরণ করে আমাদেরও ইসলামের শত্রুদের হেদায়াতের জন্য নাম ধরে দোয়া করা উচিত। শুধু প্রচার ও শিক্ষা দান করেই ক্ষান্ত থাকা উচিত নয়। কেননা হেদায়াতের আসল চাবিকাঠি আল্লাহর হাতে রয়েছে।
(৩) আবিসিনিয়ায় হিজরতের পর মক্কার অবস্থান ছিল চরম নৈরাশ্যজনক। কিন্তু এহেন পরিস্থিতিতেও আল্লাহ তায়ালা হযরত ওমরের(রা) মত ব্যক্তিত্বকে ইসলাম গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। সুতরাং কোনো পরিস্থিতিতেই মুসলমানদের হতাশ হওয়া উচিত নয়। আল্লাহ তায়ালা অকল্পনীয়ভাবে সাহায্য পাঠাতে পারেন।
১১। স্বামী স্ত্রীর আচরণে সহনশীলতা
বর্ণিত আছে যে, এক ব্যক্তি নিজের স্ত্রীর দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে হযরত ওমর(রা)এর নিকট নালিশ করতে ও তাঁর পরামর্শ নিতে এলো। এসে হযরত ওমরের(রা) বাস ভবনের দরজায় দাঁড়াতেই শুনতে পেলে তাঁর স্ত্রী অত্যন্ত কর্কশ ভাষায় ও উচ্চস্বরে তাঁকে তিরস্কার করেছে, আর হযরত ওমর তা নীরবে শুনেছেন। লোকটি তৎক্ষণাত ফিরে যেতে উদ্যত হলো। সে ভাবলো, হযরত ওমরের(রা) মত কঠোর মেজাজের মানুষের যখন এই অবস্থা এবং তিনি খলীফা, তখন আমি আর কে? ঠিক এই সময়ে হযরত ওমর বাইরে বেরিয়ে দেখলেন এক ব্যক্তি তাঁর দরজা থেকে ফিরে যাচ্ছে। তিনি তাঁকে ডেকে ফেরালেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি জন্য এসেছ? সে বললোঃ “আমিরুল মোমেনীন! আমি আপনার কাছে এসেছিলাম নিজের স্ত্রীর বদমেজাজ ও কঠোর ব্যবহার সম্পর্কে নালিশ করতে। কিন্তু এসে নিজ কানে যা শুনতে পেলাম, তাতে মনে হলো আপনার স্ত্রীরও একই অবস্থা। তাই এই স্বান্তনা নিয়ে ফিরে যাচ্ছিলাম যে, খোদ আমিরুল মোমেনীনের যখন নিজের স্ত্রীর সাথে এরূপ অবস্থা, তখন আমি আর কোথাকার কে?
হযরত ওমর(রা) বললেনঃ “ওহে দ্বীনি ভাই, শোন! আমি আমার স্ত্রীর এরূপ আচরণ সহ্য করি দুটি কারণে-প্রথমতঃ আমার কাছে তার অনেক অধিকার পাওনা আছে। দ্বিতীয়তঃ সে আমার খাবার রান্না করে, রুটি বানায়, কাপড় ধোয় ও আমার সন্তানকে দুধ খাওয়ায়। অথচ এর কোনটি তার কাছে আমার প্রাপ্য নয় এবং সে এগুলো করতে বাধ্য নয়। এ সবের কারণে আমার মনে শান্তি বিরাজ করে এবং আমি হারাম উপার্জন থেকে রক্ষা পাই। এ কারণেই আমি তাকে সহ্য করি। লোকটি বললোঃ হে আমিরুল মোমেনীন, আমার স্ত্রীও তদ্রুপ। হযরত ওমর(রা) বললেনঃ তাহলে সহ্য করতে থাকো ভাই। দুনিয়ার জীবনতো অল্প কটা দিনের!
শিক্ষাঃ ইসলাম যে নারীর প্রতি কত উদার ও সহনশীল হওয়ার শিক্ষা দেয় তা এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়।
এই ঘটনা থেকে শরীয়তের এই বিধিও স্পষ্ট হয়ে যায় যে, নিছক প্রথাগতভাবে আমাদের সমাজে মনে করা হয় যে, রান্না বান্না করা, কাপড় ধোয়া ও গৃহস্থালির যাবতীয় কাজ করা স্ত্রীর দায়িত্ব ও কর্তব্য। কিন্তু আসলে তা তার কোনো দায়িত্ব ও কর্তব্য নয়। এ সব কাজ করা স্ত্রীর ইচ্ছাধীন। শুধু স্বামী ও সন্তানের মঙ্গলাকাঙ্খা থেকেই স্ত্রীরা নিজের ইচ্ছায় এসব কাজ করে থাকেন। এ সব কাজে কোনো ত্রুটি হলে সেজন্য তাকে শাস্তি বা বকাঝকা করা জায়েয নয়। তবে স্বামীর সম্পদ ও সন্তানের রক্ষণাবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধান অবশ্যই স্ত্রীর দায়িত্ব।
১২। রাসূলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারকারী এক মুরতাদের শাস্তি
হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত আছে যে, মদীনায় বিশর নামক একজন মুনাফিক বাস করতো। একবার জনৈক ইহুদীর সাথে তার বিবাদ বেধে যায়। ইহুদী বললোঃ চল, আমরা মুহাম্মদ(সা) এর কাছে গিয়ে এর মীমাংসা করে আসি। বিশর প্রথমে এ প্রস্তাবে রাজী হলো না। সে ইহুদী নেতা কা’ব ইবনে আশরাফের কাছে মীমাংসার জন্য যাওয়ার প্রস্তাব করলো। কা’ব ইবনে আশরাফ ছিল মুসলমানদের কট্টর দুশমন। বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে, এই ইহুদী নেতার কাছ থেকে মীমাংসা কামনা করেছিল মুসলমান পরিচয় দানকারী বিশর। অথচ ইহুদী লোকটি স্বয়ং রাসূল এর উপর এর বিচারের ভার অর্পণ করতে চাইছিল। আসলে এর কারণ ছিল এই যে, রাসূল(সা) এর বিচার যে পুরোপুরি ন্যায়সংগত হবে তা উভয়ে জানতো। কিন্তু ন্যায়সংগত মীমাংসা হলে মুনাফিক হেরে যেত আর ইহুদী জয়লাভ করত।
অনেক তর্ক বিতর্কের পর শেষ পর্যন্ত ইহুদীর মতই স্থির হল। উভয়ে রাসূল(সা) এর কাছে গিয়ে বিবাদটার মীমাংসার ভার তাঁর ওপর অর্পণ করলো। রাসূল(সা) মামলার ব্যাপক তদন্ত চালিয়ে ইহুদীর পক্ষে রায় দিলেন এবং বিশর হেরে গেল। সে এ মীমাংসায় অসন্তুষ্ট হয়ে ইহুদীকে এই মর্মে সম্মত করে যে, বিষয়টির চূড়ান্ত মীমাংসার জন্য তারা হযরত ওমরের নিকট যাবে। বিশর ভেবেছিল যে, হযরত ওমর যেহেতু কাফেরদের ব্যাপারে অত্যন্ত কঠিন, তাই তিনি ইহুদীর মোকাবিলায় তার পক্ষে রায় দেবেন।
দু’জনেই হযরত ওমরের নিকট উপস্থিত হলো। ইহুদী তাঁকে পুরো ঘটনা জানালো এবং বললো, এ ব্যাপারে রাসূল(সা) যে ফায়সালা করেছেন, তা আমার পক্ষে। কিন্তু এ লোকটি তাতে সম্মত নয়। তাই আমাকে আপনার নিকট নিয়ে এসেছে।
হযরত ওমর বিশরকে জিজ্ঞেস করলেন, ঘটনা কি এরূপ? সে বললো, হাঁ। তখন হযরত ওমর বললেন, তাহলে একটু অপেক্ষা কর। এই বলে তিনি ঘরের ভেতর থেকে একখানা তলোয়ার নিয়ে এলেন এবং “যে লোক রাসূলের ফায়সালা মেনে নিতে রাজী হয় না, ওমরের কাছে তার ফায়সালা হলো এই……” এই বলে চোখের নিমেষে বিশরকে দ্বিখন্ডিত করে ফেললেন।
এরপর বিশরের উত্তরাধিকারীরা রাসূল(সা) এর নিকট হযরত ওমরের(রা) বিরুদ্ধে এই বলে অভিযোগ করলো যে, তিনি শরীয়ত সম্মত কারণ ব্যতীত একজন মুসলমানকে হত্যা করেছেন। এ সময় রাসূল(সা) এর মুখ দিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ কথা বেরিয়ে আসে যে, “ওমর কোনো মুসলমানকে হত্যা করার ধৃষ্টতা দেখাতে পারে এটা আমি মনে করি না।”
আসলে হযরত ওমর(রা) তাকে এই মনে করে হত্যা করেছেন যে, সে যেহেতু আল্লাহর রাসূলের ফায়সালা প্রত্যাখ্যান করেছে, তখন সে স্পষ্টতই মুরতাদ ও কাফের হয়ে গিয়েছে। ইসলামী শরীয়তে মুরতাদের সর্বসম্মত শাস্তি যে মৃত্যুদন্ড সেটাই তিনি তাকে দিয়েছেন। আর এর অব্যাহতি পর সূরা নিসার ৬০ থেকে ৬৮ নং আয়াত নাযিল হয়ে হযরত ওমরের(রা) অভিমতকে সঠিক প্রমাণিত করে।
শিক্ষাঃ আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল(সা) এর আদেশ, নিষেধ বা সিদ্ধান্তকে যারা প্রকাশ্যভাবে অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করে, তাদেরকে মুসলমান বলে মনে করা বৈধ নয়। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত থাকলে এ ধরনের লোকদের মৃত্যুদন্ড দেয়া অপরিহার্য। অন্যথায়, এ ধরনের মুরতাদদের সমাজচ্যূত করা ও নিন্দা প্রতিবাদের মাধ্যমে কোনঠাসা করে রাখতে হবে, যাতে আর কেউ মুরতাদ হবার ধৃষ্টতা না দেখায়।
১৩। জাবালার ঔদ্ধত্য ও হযরত ওমর(রা)
একবার হযরত ওমর(রা) হজ্জ করতে মক্কায় এলেন। তিনি কা’বার চারপাশে তওয়াফ করছিলেন। তাঁর সাথে সাথে একই কাতারে তওয়াফ করছিলেন সদ্য ইসলাম গ্রহণকারী প্রতিবেশী এক রাজা জাবালা ইবনে আইহাম। জাবালা কা’বার চারপাশ প্রদক্ষিণ করার সময় সহসা আরোক তওয়াফকারী জনৈক দরিদ্র আরব বেদুইনের পায়ের তলায় চাপা পড়ে জাবালার বহু মূল্যবান ইহরামের চাদরের এক কোণা। চাদরটি রাজার কাঁধের ওপর থেকে টান লেগে নীচে পড়ে যায়।
ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে ওঠেন জাবালা। লোকটির কোনো ওজর আপত্তি না শুনে জাবালা তার গালে প্রবল জোরে একটি চড় বসিয়ে দেন।
লোকটি তৎক্ষণাত খলীফার নিকট গিয়ে নালিশ করে এবং এই অন্যায়ের বিচার চায়। খলিফা জাবালাকে তৎক্ষণাত ডেকে পাঠান এবং জিজ্ঞাসা করেন যে, অভিযোগ সত্যি কি না। জাবালা উদ্ধত স্বরে জবাব দেন, “সম্পূর্ণ সত্য। এই পাজিটা আমার চাদর পদদলিত করে আল্লাহর ঘরের সামনে আমাকে প্রায় উলংগ করে দিয়েছে।”
খলিফা দৃঢ়তার সাথে জবাব দেন, “কিন্তু এটা ছিল একটা দুর্ঘটনা।” জাবালা স্পর্ধিত কন্ঠে বললেন, “আমি তার পরোয়া করি নে। কা’বা শরীফের সম্মানের খাতিরে ও কা’বার চত্ত্বরে রক্তপাত নিষিদ্ধ থাকার কারণে আমি যথেষ্ট ক্রোধ সংবরণ করেছি। নচেত ওকে আমি চপেটাঘাত নয় হত্যাই করতাম।”
জাবালা হযরত ওমরের একজন শক্তিশালী মিত্র ও ব্যক্তিগত বন্ধু ছিলেন। খলিফা তাই একটু থামলেন এবং কিছু চিন্তাভাবনা করলেন। অতঃপর শান্ত অথচ দৃঢ় কন্ঠে বললেন, “জাবালা, তুমি নিজের অপরাধ স্বীকার করেছ। এখন বাদী ক্ষমা না করলে তোমাকে ইসলামী আইনের শাস্তি মাথা পেতে নিতে হবে এবং বাদীর হাতে পাল্টা একটি চপেটাঘাত খেতে হবে।”
স্তম্ভিত হয়ে জাবালা বললেন, “আমি একজন যোদ্ধা। আর ও হচ্ছে একজন সাধারণ কৃষক।”
হযরত ওমর(রা) বললেন, “তোমরা উভয়ে মুসলমান এবং আইনের চোখে সবাই সমান।”
জাবালা বললো, “যে ধর্মে রাজা ও একজন সাধারণ প্রজাকে সমান চোখে দেখা হয়, আমি তার আনুগত্য করতে পারি নে। ঐ চাষা যদি আমাকে চপেটাঘাত করে তবে আমি ইসলাম ত্যাগ করবো।”(নাউযুবিল্লাহ)।
হযরত ওমর ততোধিক কঠোর স্বরে জবাব দিলেন, “তোমার মত হাজার জাবালাও যদি ইসলাম ত্যাগ করে চলে যায়, তবে সেই ভয়ে ইসলামের একটি ক্ষুদ্রতম বিধিও লংঘিত হতে পারে না। তোমাকে এ শাস্তি পেতেই হবে। আর একথাও জেনে রাখ, ইসলাম কাউকে জোরপূর্বক মুসলমান বানায় না। তোমাকেও বানায় নি। কিন্তু ইসলাম ত্যাগ করা সহজ নয়। মুরতাদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড।”
হযরত ওমরের শেষোক্ত কথাটা শুনে জাবালা রাগে ও ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপতে লাগলো। হযরত ওমরের নির্দেশে বাদী তৎক্ষণাত সজোরে জাবালার মুখে ঠাস করে একটি চড় বসিয়ে দিয়ে প্রতিশোধ নিয়ে নিল।
জাবালা ক্রোধে চক্ষু লাল করে বাদীর দিকে একবার তাকালো। অতঃপর রাগে গরগর করতে করতে কা’বার চত্ত্বর ত্যাগ করে নীরবে চলে গেল। জানা যায়, এরপর জাবালা ইবনে আইহাম ইসলাম ত্যাগ করে প্রাণের ভয়ে সোজা রোম সম্রাটের কাছে গিয়ে আশ্রয় নেয় এবং সেখানেই জীবনের অবশিষ্ট দিনগুলি কাটায়।