দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
জ্ঞান ইসলামীকরণের তাৎপর্য ও গুরুত্ব অপরিসীম। মানব জীবনে যদি ইসলামের প্রয়োজনীয়তা থাকে, তা হলে ইসলামীকরণের গুরুত্বও রয়েছে। এ বিষয়টির বিভিন্ন দিক রয়েছে। নিম্নে প্রধান কটি দিক আলোচনা করা হলো:
আধ্যাত্মিক চাহিদা পূরণ:
মানুষের দেহই মূল মানুষ নয়। দেহ ও রূহের সমন্বয়ে মানুষ। নিচের চিত্রে বিষয়টি দেখানো যায়:
মানুষ সত্তা:- 1) দেহ-> মাটির তৈরী যা পঁচনশীলও সদা।
২) রূহ-> আল্লাহর আদেশ যা অবিনশ্বরও
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক বলেছেন, “যখন আপনার পালনকর্তা ফেরেশতাদেরকে বললেন, আমি মাটির মানুষ সৃষ্টি করব। যখন আমি তাকে সুষম করব এবং তাতে আমার রূহ ফুঁকে দেব, তখন তোমরা তার সামনে সেজদায় নত হয়ে যেও।” (সূরা সাদ: 71-72) মানুষের দেহের যেমনি চাহিদা পূরণ করতে হবে। খোরাক দিতে হবে। না হয়, জীবনে বিপর্যয় নেমে আসবে। এ রূহের খোরাক হলো আল্লাহর সাথে সম্পর্ক রাখা, আল্লাহর ইবাদত করা, আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞানের চর্চা ইত্যাদি। অথচ বর্তমানে সকল ধরণের জ্ঞান চর্চা করে দেহ আত্মার চাহিদার সমন্বিত পূরণের ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। এটা সম্ভব জ্ঞান ইসলামী করণের মাধ্যমে।
ইসলামের লক্ষ্য মানব সমাজের কল্যাণ প্রতিষ্ঠা:
জ্ঞান ইসলামীকরণ কাজটি অত্যন্ত বাস্তবভিত্তিক ও বাস্তবতার চাহিদা প্রতিফলন বিশেষ। কারণ ইসলাম মানব জীবনের কল্যাণ প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত। দুনিয়া ও আখেরাতে সার্বিক কল্যাণ প্রতিষ্ঠাই ইসলামের লক্ষ্য। মানুষের বৈষয়িক চাহিদাকে কোন ভাবেই উপেক্ষা করে না। বরং ইসলামই সুন্দরভাবে মানুষের বৈষয়িক চাহিদা পূরণেও ব্যবস্থাদি দিয়েছে।
ইসলামী শারী’আতের লক্ষ্য বর্ণনায় ইমাম গাযালী বলেন,
শারী’আতের গূঢ় উদ্দেশ্য হচ্ছে জনগণের কল্যাণ সাধনের মাধ্যমে তাদের ‘আকীদা বিশ্বাস, জীবন, বুদ্ধিবৃত্তি, সন্তান-সন্তুতি ও সম্পদের সংরক্ষণ করা। যা কিছু এই পাঁচটি বিষয় সংরক্ষণের নিশ্চয়তা বিধান করে তা-ই জনস্বার্থ বলে গণ্য এবং সে বিষয়টিই কাম্য।’
ইমাম শাতেবী মানব কল্যাণে নিয়োজিত ইসলামের লক্ষ্যকে তিনভাগে বিভক্ত করেন- ক. জরুরিয়াত/আবশ্যকীয় ((Necessities) এগুলো পাঁচটি: দীন রক্ষা করা, জীবন রক্ষা করা, বংশ রক্ষা করা, সম্পদ রক্ষা করা, বিবেক বুদ্ধি রক্ষা করা।
খ. হাজিয়া/ প্রয়োজনীয় (Requirement), যা জীবন যাত্রাকে সহজ করে দেয়, যেমন যানবাহন।
গ. তাহসিনিয়্যাত বা সৌন্দর্যবর্ধক ( Beautification) ।
ইমাম ইবনুল কায়্যিম বলেন,
The objective of the sharah (Islam) is wisdom and welfare. Anything that departs from wisdom to folly, from generosity to misery, from welfare to hardship has nothing to do with the shariah.”
(শারী’আহ তথা ইসলামের ভিত্তি হচ্ছে মানুষের প্রজ্ঞা এবং দুনিয়া ও আখেরাতে জনগণের কল্যাণ সাধন। আর কল্যাণ নিহিত রয়েছে সার্বিক আদল ( ন্যায়বিচার), দয়ামমতা, কল্যাণকামিতা ও প্রজ্ঞার মধ্যে। যেখানে আদলের পরিবর্তে যুলম, দয়া মমতার পরিবর্তে নিষ্ঠুরতা, কল্যাণকামিতার পরিবর্তে দু:খ দুর্দশা এবং প্রজ্ঞার পরিবর্তে নির্বুদ্ধিতা বা বোকামি স্থান পায়, তার সাথে শারীআতের কোন সম্পর্ক নেই।”)
উপরোক্ত আলোচনায় শারীআতের ক্ষেত্র ও বিষয়বস্তু স্পষ্ট হয়েছে। সুতরাং শারীআতের জ্ঞান তথা ইসলামী জ্ঞান মানুষের কল্যাণেই নিয়োজিত। এর প্রসার ঘটালে মানুষের কল্যাণই নিশ্চিত হবে। তাই মানুষের কল্যাণের জন্য জ্ঞান ইসলামীকরণ কার্যক্রম প্রয়োজন।
মুসলিম মনন ও চিন্তাধারার পুনর্গঠন:
জ্ঞান ইসলামীকরণ কাজটি একটি বুদ্ধিবৃত্তিক দৃষ্টিভঙ্গী ও আন্দোলন। এর টার্গেট প্রথমত মুসলিম সমাজের সংষ্কার। মুসলমানদের চিন্তাধারায় অনেক অ-ইসলামী ভাবধারার অনুপ্রবেশ ঘটে। জীবন কাজ করে তাকদীরের উপর নির্ভরশীলতা, অলসতা, অতিকল্পনা বিলাসপ্রবণতা, আবেগ উদ্দীপনার অধিক ব্যবহার, সুশৃঙ্খল ও পদ্ধতিগত চিন্তনের অভাব ইত্যাদি বিষয় মুসলিম মানসকে আক্রান্ত করেছে। চিন্তা জগতে ঘুনে ধরা এ মুসলিম সমাজকে সংষ্কারের জন্য প্রয়োজন কুরআন সুন্নাহের আলোকে ইসলামী চিন্তাধারার পুনর্গঠন। জ্ঞান ইসলামীকরণের মাধ্যমেই তাই করা হয়।
সত্য সন্ধানে ওহী জ্ঞানের প্রতি আস্থা সৃষ্টিকরণ:
সমসাময়িক বিশ্বের বৈজ্ঞানিক মানস এককথায় সব ধর্মীয় কিতাব বর্জন করে থাকে। যদিও এ সবের কিছু কিছু বিষয় সম্পর্কে নমনীয় ভাব প্রদর্শন করে। তবুও এসব গ্রন্থের ম্যাথডোলজি, বুনিয়াদি স্থাপনাগত এককত্ব, চূড়ান্ত কাঠামোকে তারা প্রত্যাখ্যান করে। তারা জোর দিয়েই বলে থাকে যে, এসব ধর্মীয় গ্রন্থাদির ক্ষেত্র বিশ্বাসগত তুষ্টি ও অদৃশ্যমান জগত পর্যন্ত সীমিত থাকা উচিত। অনন্তর ঐ দাম্ভিকদের মতে অদৃশ্যজগত ও বাস্তবতার মাঝে সমন্বিত অধ্যয়ন করা অসম্ভব। তারা বলে থাকেন, এ ধর্মীয গ্রন্থ সমূহে যে সব গায়েবী বা অদৃশ্য জগত সম্পর্কে কথাবার্তা আছে, তা তো বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণার উপযুক্ত ক্ষেত্র হতে পারে না। যদি তাই করা হয়, তা হলে এর যে কোন একটিকে অবান্তর ঘোষণা করতে হবে অথবা জোরাতালিমূলক সমঝোতা করতে হবে ও সমাধানে আসতে হবে। আসমানী কিতাবসমূহ অদৃশ্যজগত সম্পর্কে যে ইঙ্গিত দিয়ে থাকে বা কিছু কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা উল্লেখ করে, তা সমসাময়িক কালের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা নিরীক্ষার আয়ত্বাধীন নয়। এ বিষয়ে গবেষণাকে বৈজ্ঞানিক মর্যাদা দেয়া যাবে না। এ জন্য বর্তমান বিশ্বের জন্য ইউনেসকো জ্ঞানের একটি সংজ্ঞা পরিবেশন করেছে। তার ঘোষণায় বলা হয়:‘ যে জ্ঞাত বিষয় ইন্দ্রয়গাহ্য ও অভিজ্ঞতা লব্দ তাই জ্ঞান।’
কিন্তু তারা সকল ধর্ম গ্রন্থকে একই মাপকাঠিতে মূল্যায়ন করে ভুল করেছে। আল কুরআন এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। সামাজিক ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় আল কুরআন ও সুন্নাহর বিভিন্ন তত্ত্ব ও তথ্য সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে। এসবের অনেক কিছু অন্য নামে মানব সমাজে প্রচলিত আছে। যেমন সামাজিক বিজ্ঞানের অংশ প্রশাসন বিদ্যায় প্রশাসনে কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণ তত্ত্ব তথা সাংগঠনিক তত্ত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে। একটি হলো যান্ত্রিক মতবাদ। এ মতবাদে বলা হয়, কর্মচারীদের নিকট থেকে কঠোর নিয়মের আওতায় তথা যান্ত্রিক পদ্ধতিতে কাজ আদায় করে নিতে হবে। অপর আরেকটি মতবাদ হলো মনত্বাত্ত্বিক মতবাদ। এ মতবাদে বলা হয়, মানুষের পারিপার্শ্বিক ও মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা বিবেচনা করে কাজ নিতে হবে। এতে অনেকটা শিথিল মনোভাব পোষণ করা হয়। অন্য দিকে এতদুভয়ের মাঝামাঝি আরেকটি মতবাদ রয়েছে যাকে বলা হয় আধুনিক মতবাদ। তার কথা হলো এমন কঠোরতা আরোপ করা যাবে না, যাতে কর্মচারী সাধ্যাতীত হয়ে যায়। আবার এত শিথিল করা যাবে না যাতে নিয়ম শৃঙ্খলা নষ্ট হয়। বরং উভয়ের মাঝে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। উল্লেখ্য, ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এটি কুরআন হাদীছ সম্মত। অথচ মানব সমাজে এটি আধুনিকতার নামে প্রচলিত। তাই এরূপ বিষয়গুলো চিহ্নিত করতে হবে। কুরআন হাদীছের জ্ঞানের স্বরূপ তুলে ধরে এর প্রতি মানুষের আস্থা বৃদ্ধি করা সম্ভব। জ্ঞান ইসলামীকরণের মাধ্যমে এটি করা যায়।
এমনিভাবে আলকুরআনে বলা হয়, ‘প্রত্যেকই আপন কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান।’ আধুনিক বিজ্ঞানও তাই বলছে। সুতরাং হিন্দু পৌরাণিক তথ্যে বলা হচ্ছে, পৃথিবীর চতুর্পার্শ্বে সূর্য ঘূর্ণায়মান। অপরদিকে আলকুরআন যা বলছে, তা আধুনিক বিজ্ঞানের দ্বারা পরীক্ষিত ও প্রমাণিত। অতএব আলকুরআনকে অন্য সকল ধর্মগ্রন্থের সাথে একই পাল্লায় পরিমাপ করা ইনসাফপূর্ণ নয়।
এছাড়া, আল কুরআন মানব সমাজে এমন সময় এমন সব বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও তথ্য তুলে ধরেছে, যখন সেসব তথ্য আধুনিক বৈজ্ঞানিক উপকরণ ব্যবহার করে জানা সম্ভব ছিল না। এ দ্বারা বুঝা যায়, এটি আল্লাহ প্রদত্ত সত্য জ্ঞান সমৃদ্ধ। জীবন ও জগতের অনেক বিষয় আছে, যা গায়েবের সাথে জড়িত। তাই প্রত্যক্ষ জগতের বিভিন্ন বিষয় যদি বৈজ্ঞানিক সত্য বলে স্বীকৃত হয়, তা হলে স্বাভাবিকভাবে গায়েবের বিষয়াদিও সত্য বলে মনে নিতে হবে। এ ছাড়া জীবন ও জগতের অনেক কিছুর ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব নয়। আধুনিক বাস্তববাদী (Realism) দর্শন এ সব ক্ষেত্রে নিরব। সুতরাং কুরআনিক জ্ঞান বিজ্ঞান উপস্থাপনের মাধ্যমে ওহী জ্ঞানের প্রতি মানুষের আস্থা বৃদ্ধি পায়। জ্ঞান ইসলামীকরণ প্রচেষ্ঠার মাধ্যমে কুরআন সুন্নাহর জ্ঞান উপস্থাপন করা হয়।
শিক্ষা ও চিন্তাধারায় ঈমানী নৈতিকতার সংযোজন:
আজকে শিক্ষিত মানুষের মাঝে অপরাধ প্রবণতা বেশি। বড় বড় অপরাধের সাথে শিক্ষিত মানুষেরাই অধিক জড়িত। এর কারণ হলো নৈতিক শিক্ষার অভাব। শিক্ষা ক্ষেত্রের সমস্যাই সমাজে সকল সমস্যার মূল। (Problem of education is the main root our problems) । কিন্তু খোদ নৈতিকতার ভিত্তিতেই সমস্যা রয়েছে। নৈতিকতার ভিত্তি হলো: ব্যক্তিস্বার্থ ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষার আবেদন তুলে ধরার মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি করা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, ব্যক্তি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর চিন্তা করে কেউ ধুমপান থেকে বিরত থাকে না। জাতীয় স্বার্থের কথা চিন্তা করে কেউ জাতীয় সম্পদ নষ্ট করা থেকে বিরত থাকে না। রাজনৈতিক সংঘর্ষে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংঘর্ষে জাতীয় সম্পদ রক্ষা পায় না। তাই নৈতিকতার ঐ দর্শন ও ভিত্তি অকার্যকর। কিন্তু ইসলামী নৈতিকতার ভিত্তি তাকওয়া। তাই জ্ঞান আহরণ ও বিতরণ প্রক্রিয়া তথা শিক্ষা ব্যবস্থায় এ তাকওয়া কেন্দ্রিক নৈতিকতা দিয়ে সাজাতে হবে। সুতরাং এ কাজ করতে হলে শিক্ষা ও জ্ঞান ইসলামীকরণ প্রয়োজন। এর মাধ্যমেই শিক্ষা ও মূল্যবোধের ভূমিকা সম্পর্কে বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছেন-“…Science without religion is lame, Religion without science is blind.”
Stanly Hull বলেছেন- “If you teach your children the three R’s ( Reading, writing and Arithmetic) and and leave the fourth R ( i. e. Religion), you will get a fifth R (Rascality).”
বর্তমানে দ্বীনি শিক্ষা ও আধুনিক শিক্ষার যে দুটি ধারা দেখা যায়, এর প্রভাবে একদিকে সৃষ্টি হচ্ছে এক শ্রেণির দ্বীনি জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি যারা, বহুলাংশে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের সংস্পর্শে নেই। আবার আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিতদের মাঝে দ্বীনি ইলমের বেশ অভাব।
এতে ইসলামের জ্ঞান বা শিক্ষার সুমহান বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত। পৃথিবীতে বড় ধরণের অপরাধের সাথে জড়িত মূল ব্যক্তিটি দেখা যায় শিক্ষিত-বিশেষ করে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত। আবার দ্বীনি জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিটির মধ্যে সেই সব অপরাধের সাথে জড়িত না থাকলেও তারমধ্যে সেই সব ভয়াবহ পরিস্থিতিকে সামাল দেয়ার যোগ্যতার অভাব। দুনিয়া জ্ঞান-বিজ্ঞানের বেশ এগিয়ে যাবার পরেও শুনা যায়-
“টেকনোলজির বাড়ছে প্রভাব, কাণ্ড জ্ঞানের পড়ছে অভাব, দেখি মানুষের সেই পশু স্বভাব, দুনিয়ার এই চিত্রপটে।”
দু:খ করে মাওলানা জালালউদ্দিন রুমি (রহ:) বলেছিলেন-
“চারদিকে দেও-দানব ও জানোয়ার দেখতে দেখতে আমার বিরক্তি ধরে গেছে, আমি এখন মানুষ খুঁজে বেড়াচ্ছি।
সেই কাঙ্খিত মানের মানুষ গড়ে উঠতে পারে ইসলামী মূল্যবোধভিত্তিক শিক্ষার মাধ্যমে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামী মূল্যবোধের অভাব থাকাতে কাঙ্খিত মানের মানুষ গড়ে উঠছেনা। ডাক্তার হয়ে অর্থের লোভে অনেকেই অনৈতিক কাজ করছে, ইঞ্জিনিয়ার বা আমলা হয়ে ঘুষ-দূর্নীতি হয়ে পড়ছে। মানুষ কিন্তু মূল্যবোধহীন মানুষ গড়ে উঠছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় Secular ভাবধারা, নৃতত্ত্বে ডারউইনের মতবাদ, সমাজ বিজ্ঞানে মার্কসীয়, ফ্রয়েডিয় মতবাদ, ইতিহাস ইহজগৎকেন্দ্রিক ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে ইসলামী ভাবধারার পরিবর্তে পাশ্চাত্য ভাবধারা গ্রহণ করে শিক্ষিত নামধারী কিছু নৈতিকতা বিবর্জিত ইসলামী মূল্যবোধহীন, সমাজ সংসারের জন্য অনিষ্টকর, দুর্নীতিগ্রস্থ, ঘুষখোর, অহংকারী, খুনি, চক্রান্তকারী কিছু পশু স্বভাবের লোক পাওয়া যাচ্ছে।
ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করলে তাকওয়াবান, তাওয়াক্কুলকারী শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী ইত্যদি নানা পেশার লোক পাওয়া যেত। সেই সব লোকেরা হবে Practising Muslim. তারা হবে দেশ সমাজের সংসারের জন্য মঙ্গলময়। তাই জ্ঞান ও শিক্ষা ইসলামীকরণের মাধ্যমে ইসলামী মূল্যবোধের চর্চায় বিকশিত হবে ঈমানী চেতনা ও প্রকৃত মানবতা।
কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক সমাজ গঠন:
কুরআন সুন্নাহ ভিত্তিক সমাজ গঠন করতে হলেও সমাজে প্রচলিত জ্ঞানকে ইসলামীকরণ করতে হবে। না হয়, ইসলামী মূল্যবোধের আলোকে সমাজ পরিচালিত হবে না। তা হলে সহজেই ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সহজ হবে। গোটা মানবজাতিকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ সুস্থ ব্যবস্থার অধীনে গড়ে তোলা জ্ঞানের ইসলামীকরণের লক্ষ্য।
ইসলামী কার্যধারায় পদ্ধতিগত চিন্তার পুন:স্থাপন:
যুগে যুগে আসা নবী রাসূল আ: গণ সমাজ সংষ্কারে পদ্ধতিগত চিন্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন। শেষনবী হযরত মুহাম্মাদ সা: ও তাঁর সাহাবীগণও পদ্ধতিগত চিন্তনের পথ অনুসরণের করতেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ের মুসলমানরা অনেক সময় এ ব্যাপারে সচেতন ছিল না। বিশেষত মানব সমাজে শিল্প বিপ্লবের পর এর সমস্যাগুলো স্বভাবত জটিল আকার ধারণ করছে। এখন এগুলো সমাধানে পদ্ধতিগত চিন্তাধারার প্রয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এখন যারা পদ্ধতিগত চিন্তন প্রয়োগ করবে,তারাই টিকে থাকবে। অতএব জ্ঞান ইসলামীকরণের আওতাভূক্ত এ পদ্ধতিগত চিন্তার পুন:স্থাপনের মাধ্যমে মুসলমানরা পুনরায় বিশ্ব নেতৃত্ব অর্জন করতে পারে।
যুগ সমস্যা নিরসনে ইজতিহাদে নিবেশ করানো:
জ্ঞান ইসলামীকরণের অন্যতম শর্ত হলো ইজতিহাদে মনোনিবেশ করানো ইজতিহাদের মাধ্যমে নতুন নতুন সমস্যার সমাধান দিতে না পারলে ইসলামকে সে ক্ষেত্রের জ্ঞানের জন্য অকার্যকর বলে ঘোষণা করা হবে। তাই বৈচিত্রময় জীবনে নানান সমস্যা নিরসনে ইজতিহাদের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তাই ইসলামীকরণ কর্মসূচীর আওতায় মুসলিম স্কলারদেরকে ইজতিহাদে গভীরভাবে মনোনিবেশ করা যায়।
বিশ্ব দরবারে ইসলামের মৌলিকত্ব তুলে ধরা:
জ্ঞান ইসলামী করণের মাধ্যমে ইসলামের মৌলিকত্ব ফুটে উঠবে। বিশ্ব দরবারে ইসলামকে উপস্থাপনের জন্য ইসলামের মৌলিকত্ব স্পষ্ট করতে হবে।
সভ্যতার সংঘাত নয় বরং সংলাপ সৃষ্টি:
ইসলামী সংস্কৃতি ও চিন্তাধারা বিশ্ব সমাজে তুলে ধরার জন্যও জ্ঞান ইসলামীকরণ কার্যক্রম প্রয়োজন। এর মাধ্যমেই মানব সভ্যতার অর্থপূর্ণ যোগাযোগ ও বিনিময় প্রক্রিয়া চালু করা সম্ভব। সভ্যতার সংলাপে বসতে হলে ইসলামী চিন্তাধারার মৌলিক উপস্থাপন পেশ করতে হবে। তুলনার জন্য ও সংলাপের জন্য তুল্য বিষয়ের মৌলিকতা প্রয়োজন। মানব জাতিকে ঐশী সত্য (Divine truth) সম্পর্কে অবহিত করতে হলে কার্যকর বিনিময় প্রক্রিয়া শুরু হওয়া প্রয়োজন। আর এ ক্ষেত্রে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে অগ্রসর নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। জ্ঞান ইসলামীকরণ কার্যক্রমের মাধ্যমে তাই করা হয়। এ জন্য ফ্রান্সের মুসলিম স্কলার রজার জারোদী ( Roger Garaudy) বলেন, It is a means and an approach in the dialogue of civilization”.
ড. ত্বহা জাবির আলওয়ানী বলেন, In our estimation, the Islamization of knowledge, in its wider perspective, provides Muslims with the intellectual underpinnings for a complete civilizational transformation.”
তিনি আরো বলেন, “Recent international developments and the frightening destructive capabilities of the major technological powers should be enough to make this assertion apparent to all. Doubtless, dialogue between nations, as well as their exchange of ideas and appreciation for one another’s cultures, promote the kind of understanding presently required. The Islamization of knowledge will contribute positively to this dialogue.”
হান্টিংটন সভ্যতার সংঘাত (Clash of civilizations) নামে থিওরি দিয়ে বিশ্বে অশান্তি সৃষ্টিতে সহায়তা করেছেন। তাই জ্ঞান ইসলামীকরণ কার্যক্রমের মাধ্যমে সভ্যতার সংলাপ সৃষ্টি করা হবে। এর মাধ্যমে সংঘাত নয়, বরং শান্তিপূর্ণ সংলাপের মাধ্যমে মানব সমাজের সমস্যা নিরসনের প্রচেষ্ঠা চালানো হবে। তাই বিশ্বসভ্যতায় এ কার্যক্রমের গুরুত্ব অপরিসীম।
মুসলিম উম্মাহর মাঝে আস্থা ফিরিয়ে আনা:
আধুনিক শিল্পবিপ্লবের কারণে নতুন নতুন ব্যবস্থাপনা ও উদ্ভাবনার সামনে মুসলিম উম্মাহর মাঝে হীনমন্যতা ( Inferiority complex) সৃষ্টি হয়েছে। তাদের স্কলারদের কেউ কেউ ভাবতে শুরু করেছে যে, পশ্চিমাদেরই অনুসরণ করতে হবে। কিন্তু তারা হয়তো ভুলে গেছেন যে, মুসলিম উম্মাহ এক সময়ে জ্ঞান বিজ্ঞানে নেতৃত্ব দিয়েছে। পশ্চিমারা মুসলমানদের জ্ঞান বিজ্ঞান সমূহ সংস্কার ও উন্নয়ন করেই এতসব নবনব উদ্ভাবন উপহার দিচ্ছে। ইসলামী মূলনীতির আলোকে ইজতিহাদ করা হলে আবারও জ্ঞানের জগতে প্রাধান্য বিস্তার করা সম্ভব। তাই জ্ঞান ইসলামীকরণের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর মাঝে আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
সমাজের ভয়াবহ অবক্ষয়রোধ ও ইসলামী দাওয়াহ:
আজকের মানব সমাজ ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক তথা সকল দিক দিয়ে ভয়াবহ অবক্ষয় ও তীব্র সংকটের মুখোমুখি। বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্বের সমাজ ব্যবস্থায় ধ্বস নেমে এসেছে। এ ভয়াবহ ও পরিস্থিতিতে মুক্তি দিতে পারে ইসলাম। অমুসলিম সমাজে প্রচলিত জ্ঞান বিজ্ঞানের স্থলে ইসলামের সত্যজ্ঞান যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে পারলে তারা দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করবে। ফলে সে সব সমাজে ইসলামী দাওয়াহও সম্প্রসারিত হবে। তাই দাওয়াতের স্বার্থে এবং মানব সমাজের অবক্ষয় রোধে জ্ঞান ইসলামীকরণ কার্যক্রম প্রয়োজন। এটা তখন কোন ধর্ম কেন্দ্রিক প্রয়োজনীয়তা হিসেবে দেখা হবে না। মানবসভ্যতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য এটার প্রয়োজনীয়তা প্রতিভাত হবে। এর প্রয়োজনীয়তা সভ্যতাগত।
জ্ঞান ইসলামীকরণ একটি কুরআনিক মিশন:
আল কুরআনে যেমনিভাবে কুরআন অধ্যয়ন করতে বলা হয়েছে, তেমনিভাবে বিশ্বজগত সম্পর্কে অধ্যয়ন করতে বলা হয়েছে। এ জন্য প্রথম ওহীতেই দুধরণের পাঠ তথা অধ্যয়নের কথা বলা হয়। ইরশাদ হয়েছে:
ইক্বরা’ বিসমি রাব্বিকাল্লাযি খালাক্ব। খালাক্বাল ইনসানা মিন আলাক। ইক্বরা’ ওয়া রাব্বুকাল আকরাম। আল্লাযি আল্লামা বিল ক্বালাম।
“পাঠ করুন আপনার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে। পাঠ করুন, আপনার প্রভু মহা দয়ালু। যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন।” ( সূরা আলাক: ১-৪)।
তাই আল কুরআনের জ্ঞান ও বিশ্বজগতের জ্ঞানের মাঝে সমন্বয় সাধন করতে হবে। তা কুরআন বুঝার জন্য এবং তা প্রয়োগ করার জন্যও। অতএব জ্ঞান ইসলামীকরণ কাজটি কুরআনিক মিশনের আওতাভুক্ত।
সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ইসলাম পশ্চাতপদ নয়:
প্রতি যুগেই সমসাময়িক কিছু প্রসঙ্গ বা সমস্যা থাকে, যা কোন কোন ক্ষেত্রে ইসলামের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। যেমন: ব্যভিচার প্রমাণ করার জন্য আলকুরআনের বিধান হলো চারজন সাক্ষী প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমান মেডিকেল সাইন্সের কথা হলো সংশ্লিষ্ট নর নারীকে পরীক্ষার মাধ্যমে তা প্রমাণ করা যায়। তা হলে চার জন সাক্ষীর প্রয়োজন নেই। তাহলে কি আলকুরআনের এ বিধান আজকের সমাজে অকার্যকর। এ চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় বলা যায়, না অকার্যকর নয়। কারণ মেডিকেল রিপোর্টেও ভুল হতে পারে। তাই চারজন ডাক্তার যদি কোন রিপোর্টের উপর একমত হয়, তা হলেই এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে। এভাবে সমন্বয় করা যেতে পারে।
এভাবে নতুন নতুন সমস্যার উদ্ভবের প্রেক্ষাপটে কুরআন সুন্নাহর আলোকে সমাধান দেয়া এবং বিকল্প তৈরী করে দেয়ার জন্য জ্ঞান ইসলামী করণ কার্যক্রমের প্রয়োজন। ইসলাম কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে মূলনীতি নির্ধারণ করে দিয়েছে। এসবের আলোকে কিয়ামত পর্যন্ত সমাধান দিতে হবে।এ ক্ষেত্রে মুসলিম স্কলারদের পিছিয়ে থাকলে চলবে না। এ ধরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ইসলাম পশ্চাদপদ নয়।
মুসলিম উম্মাহ আব্বাসীয় আমলে গ্রীক সভ্যতার বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসন মোকাবেলা করেছিল। কিন্তু আধুনিক যুগে উম্মাহকে বৈজ্ঞানিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। সুতরাং সামাজিক ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞানসমূহ ইসলামীকরণের উপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে।
বিশ্বায়নের যুগে সভ্যতার সঞ্চালন:
উনবিংশ শতাব্দীতে প্যান ইসলাম মতবাদের মাধ্যমে জামাল উদ্দীন আফগানী বিশ্বব্যাপী যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন, ইসলামী চিন্তা চেতনা ও সংস্কৃতি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার জন্য, আজও ইসলামী জ্ঞান বিজ্ঞানের বিশ্বায়ন প্রয়োজন। বর্তমানে বিশ্বায়ন মানে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিশ্বায়ন। এর বিকল্প হিসাবে একমাত্র বিশ্বজনীন জীবন ব্যবস্থা ইসলাম। এর প্রসারের মাধ্যমেই কাঙ্খিত বিশ্বায়ন সম্ভব। মুসলিম উম্মাহর উদ্ভব যেহেতু বিশ্বমানবের জন্য, সেহেতু উম্মাহভিত্তিক এ কাজ করা সকল মুসলমানের কর্তব্য। এ ক্ষেত্রে জ্ঞান ইসলামীকরণ কার্যক্রম অবদান রাখতে পারে।
স্বনির্ভর মুসলিম বিশ্ব গড়া:
জ্ঞান বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মুসলিম উম্মাহকে পরনির্ভর হলে কাঙ্খিত উন্নয়ন ও অগ্রগতি অর্জন করা সম্ভব নয়। মুসলিম বিশ্ব জনশক্তি ও প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও স্বনির্ভর হতে পারছে না। কারণ এগুলোর চালিকাশক্তি হলো জ্ঞান বিজ্ঞান প্রযুক্তি। অথচ এ ক্ষেত্রে মুসলিম উম্মাহ পশ্চাতপদ। প্রতিটি সভ্যতার অধিকারীরা নিজেদের ইতিহাস ঐতিহ্যের আলোকে তাদের প্রযুক্তির বিন্যাস করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই সে সব প্রযুক্তি মুসলিম সমাজে আমদানী করার পর সেগুলো ইসলামী মূল্যবোধের কিছু পরিপন্থী কিছু দেখলেই সাধারণ মুসলমান তা প্রত্যাখ্যান করছে কিংবা ঈমান হারার আশংকায় সেগুলো যথাযথ ব্যবহার থেকে দূরে থাকছে। যেমন: তথ্য প্রযুক্তির বিষয়টি। তাই ইসলামী মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যের আলোকে জ্ঞান বিজ্ঞানগুলোকে সাজাতে হবে এবং মুসলিম উম্মাহর স্বার্থে সেগুলোর উন্নয়ন করতে হবে। তা হলেই এগুলো কার্যকর হবে। আর এ কাজে জ্ঞান ইসলামীকরণ ছাড়া মুসলিম উম্মাহর গত্যন্তর নেই।
মোট উম্মাহর পুনর্গঠন করতে হলে, দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ ও সাফল্য লাভ করতে হলে জ্ঞান ইসলামীকরণের বিকল্প নেই। উম্মাহর প্রয়োজনেই বিজাতীয় রীতিনীতি, বিনোদন মাধ্যম, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চর্চা, অসাড় শিক্ষা ব্যবস্থা ইত্যাদি বিস্তারের প্রধান বাহন জ্ঞান তত্ত্ব, জ্ঞান আহরণ ও বিতরণ প্রক্রিয়া ইসলামীকরণ করা। দ্বিমুখী শিক্ষা মুসলমানদের অধ:পতনের মূল কারণ। এ অবস্থার পরিবর্তন না হলে উম্মাহর পুনর্গঠন এবং আল্লাহ তায়ালার অর্পিত দায়িত্ব পালনের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবেসিত হবে। তাই এ ক্ষেত্রে মুসলিম চিন্তাবিদদের এগিয়ে আসতে হবে। জ্ঞানের বিষয় বা শাখা হিসাবে মানবিক, সমাজবিজ্ঞান ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ইসলামী দর্শনের আলোকে পুনর্গঠিত করতে হবে। প্রতিটি বিষয় পদ্ধতি কৌশল, উপাত্ত, সমস্যা লক্ষ্য ও আকাঙ্খার সাথে সামঞ্জস্য রেখে ইসলামী নীতিমালার আলোকে ঢেলে সাজানো আবশ্যক। যতদিন জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখা-প্রশাখা ইসলামের আলোকে না সাজানো হবে- যতদিন ইসলামী মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ তৈরী না হবে, ততদিন ইহকালে ও পরকালে শান্তি আশা করা কল্পনাবিলাস মাত্র্র। আর এ কাজটি করতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন জ্ঞান বা শিক্ষার ইসলামীকরণ করা।