আমার প্রথম হজ্জ্ব সফরঃ
জেলখানা হতে মুক্তি পাওয়ার দু’বছর পর অর্থাৎ ১৯৭৫ সনে আমি প্রথমবারের মত হজ্জ্ব সফরে যাই। আমার হজ্জ্ব সফরের কথা শুনে খুলনার প্রায় আরও ত্রিশজনের মত হজ্জ্ব গমনেচ্ছু আমার সাথে একত্রে হজ্জ্ব করার জন্য কাফেলাভুক্ত হন। আল্লাহর মেহেরবানীতে কাফেলাভুক্ত হজ্জ্ব গমনেচ্ছুক আমরা একই বিমানে জেদ্দা অবতরণ করে রাত্রের প্রথম দিকে মক্কা শরীফ গিয়ে পৌছি।
অধ্যাপক গোলাম আযম তখন বাংলাদেশের নাগরিকত্বহীন অবস্থায় দেশের বাহিরে বসবাস করছিলেন। যথা সম্ভব তখন তিনি লন্ডন হতে হজ্জ্ব উপলক্ষে মক্কা শরীফ আসেন। আমাদের মক্কার বন্ধুরা আমাদের জন্য একটা বাড়ি ভাড়া করে রেখেছিলেন। যাতে হজ্জ্ব কালীন সময় একত্রে বসবাস করতে পারি। আমি, অধ্যাপক গোলাম আযম, আব্বাস আলী খান, সাবেক ছাত্র নেতা আবু নাসের, দুবাই থেকে আগত নূরুজ্জমান সাহেব সহ আরও কয়েকজন আমরা এই বাড়িতে উঠি। হজ্জ্ব সমাপ্তির পর দেশে ফেরার আগ পর্যন্ত আমরা এই বাড়িতেই ছিলাম।
সাবেক পূর্ব পাকিস্তান মন্ত্রী সভায় আমাদের কলীগ এবং আমার বিশেষ বন্ধু ব্যারিস্টার আখতারুদ্দিন সাহেব তখন সৌদী এয়ার লাইনে লীগ্যাল এডভাইজার হিসাবে এয়ার লাইনের জেদ্দা অফিসে কর্মরত ছিলেন। তিনিও তার ফ্যামিলিসহ আমাদের সাথে হজ্জ্ব করার জন্য মিনার ক্যাম্পে এসে আমাদের তাবুতে স্থান নেন। আমরা ৯ই জিলহজ্জ্ব আরাফাত ও রাত্রে মুজদালিফায় অবস্থানের পরে আবার ১০ই জিলহজ্জ্ব মিনায় ফিরে আসি এবং যথারীতি কোরবানী করে মাথা কামিয়ে গোসল সেরে কেবল তাবুতে ফিরে আসি। ইতি মধ্যে অধিকাংশ লোক তাবুতে ফিরে এসেছে, এর মধ্যে দেখি আমাদের পার্শ্ববর্তী তাবুতে আগুন লেগে তা ছড়িয়ে যাচ্ছে। আমি কেবল তখন গোসল সেরে তাবুতে ফিরেছি। দেখি আমদের তাবুর সবাই তাবু ছেড়ে চলে গিয়েছে। আমিও কাল বিলম্ব না করে হাতের কাছে আমার যে সামান পত্র পেয়েছি তাই নিয়ে জলদি তাবু ছেড়ে পাহাড়ে গিয়ে উঠলাম।
আগুন দাউ দাউ করে চতুর্দিকে ছড়িয়ে যাচ্ছিল। আর তাবুর পর-তাবু জলতে ছিল। ইতিমধ্যে মক্কা ও জেদ্দা হতে ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি এসে আগুন নিভানোর চেষ্টায় ব্রতী হল। পার্শ্ববর্তী তাবুর খুটি সরিয়ে দড়ি কেটে তাবু মাটিতে ফেলে দেয়া হল। অত:পর কয়েক ঘন্টার চেষ্টার পরে আগুন নেভানো সম্ভব হল।
আমার সাথে তখন বিন হাবিব ছাড়া আর কেউ ছিলনা। আগুন যখন পুরাপুরি নিভানো হল তখন রাত হয়ে গিয়েছে। শীতের রাত্র, আমরা খুজা খুজি করে আমাদের ক্যাম্পের জায়গায় ফিরে আসলাম। আমরা দুপুরের খাবার খেতে পারিনি ফলে ক্ষুধায় খুব কাতর হয়ে পড়েছিলাম। অধিক রাত পর্যন্ত খুজাখুজি করে সবাইকে আবার একত্র করলাম। আল্লাহর রহমতে আমাদের সাথী হাজীদের কিছু ছামান পত্র পোড়া গেলেও সবাই জানে বেচে ছিলেন। আমার সাথী হাজীদের ফেরত পেয়ে আল্লাহর শুররীয়া আদায় করলাম।
পোড়া তাবুর হাজীদেরকে সৌদী সরকারের পক্ষ থেকে রাত্রের খানা ও কম্বল সরবরাহ করা হয়েছিল। কেননা তখন প্রচন্ড শীত ছিল। যে সব হাজীদের তাবু পুড়ে গিয়েছিল সৌদী সরকারের পক্ষ হতে পরে তাদেরকে এক হাজার রিয়াল করে ক্ষতিপুরণ দেয়া হয়েছিল। তাবুর মালিক মোয়াল্লেমদেরকে দেয়া হয়েছিল ক্ষতিপূরণ বাবদ মোটা অংকের টাকা। ফলে পোড়া যাওয়া তাবুর মোয়াল্লেমরা প্রচুর টাকা পেয়ে খুব খুশী হয়েছিল। আর পুড়ে যাওয়া তাবুর হাজীরাও এক হাজার করে রিয়াল পেয়ে খুশি ছিল। আমাদের তাবুর সবাই আমরা এক হাজার বিয়েল করে ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলাম।
এ সফরে আমরা বাদশাহ ফাহদের বাড়িতে বাদশার সাক্ষাত ও তার দেয়া খানার অনুষ্ঠানে যোগ দেই। এ ছাড়া শেখ বিন বাজের সভাপতিত্বে রাবেতার এক আলোচনা সভা ও রাবেতার দেয়া খানার অনুষ্ঠানেও যোগদান করি। এই প্রথম সফরেই শেখ বিন বাজের সাথে কয়েকবার দেখা সাক্ষাত ও তার সাথে ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টি হয়। তার সাথে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তার মৃত্যু পর্যন্ত বহাল ছিল। তিনি ছিলেন সৌদী সরকারের রাজকীয় প্রধান মুফতী। অতপর মক্কা রিয়াদ ও তায়েফে যতবারই তার সাথে আমার সাক্ষাত হয়েছে তিনি আমাকে তার বাড়িতে খানা না খাওয়ায়ে ছাড়েননি। তিনি একজন যুগশ্রেষ্ঠ খ্যাতনামা আলেমেদ্বীন যেমন ছিলেন, তেমনি তিনি ছিলেন বিশাল হৃদয়ের অধিকারী। তিনি সারা বিশ্বের মুসলমানদের সমস্যা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতেন। আল্লাহ তাঁর কবরকে নূর দ্বারা আলোকিত করুন, আর জান্নাতুল ফিরদাউসে তার স্থায়ী ঠিকানা করুন। আমীন।
এরপর আমি আল্লাহর মেহরবানীতে বহুবার হ্জ্জ্ব করেছি। কখনও রাবেতাতুল আলমে ইসলামীর মেহমান হিসেবে, কখনও সৌদী হ্জ্জ্ব মিনিষ্ট্রির মেহমান হিসেবে, কখনও জামায়াতে ইসলামীর ইজতেমায়ী হজ্জ্বের আমীরুল হজ্জ্ব হিসেবে। আমার হজ্জ্ব সফরের বিস্তারিত বিবরণ আমার লিখিত বই ‘দেশ হতে দেশান্তরের‘ মধ্যে বিশদভাবে এসেছে। আগ্রহী পাঠক ঐ বইখানা পড়ে দেখতে পারেন।
হযরত মাওলানা শামসূল হক ফরিদপুরীর (রঃ) সাথে তার গ্রামের বাড়িতে আমার ঐতিহাসিক সাক্ষাৎকারঃ
হযরত মাওলানা শামসূল হক সাহেব ছিলেন এ দেশের একজন খ্যাতনামা অনন্য চরিত্রের অধিকারী আলেমে দ্বীন। তিনি ওলামায়ে দেওবন্দের হালকায় শামিল থাকা সত্বেও সকল ধরনের ওলামা ও ইসলামপন্থীদের মহব্বত ও শ্রদ্ধা অর্জন করেছিলেন। এর মূলে ছিল তাঁর উদার মনোভাব। তিনি অত্যন্ত বিশাল হৃদয়ের মানুষ ছিলেন এবং আমাকে খুবই মহব্বত করতেন। আমার জাতীয় পরিষদ সদস্য থাকাকালীন সময় (১৯৬২-১৯৬৫) ইসলামের পক্ষে জাতীয় পরিষদে আমার ভূমিকায় তিনি খুবই সন্তুষ্ট ছিলেন এবং আমার জন্য দোয়া করতেন। সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী (রঃ) ও জামায়াতে ইসলামীর সাথে তাঁর সম্পর্ক ছিল হৃদ্যতাপূর্ণ। ইলমী আলোচনার মাধ্যমে চিন্তার ঐক্য ও ভুল বুঝাবুঝির অবসান কল্পে তিনি একাধিকবার তাঁর উপস্থিতিতে জামায়াতের নেতৃস্থানীয় আলেমদের সাথে দেওবন্দী হালকার আলেমদের আলোচনা বৈঠকের ব্যবস্থা করেছিলেন। এই ধরনের একটা বৈঠকের ব্যবস্থা তাঁর ইনতেকালে কয়েক মাস আগে তাঁর গওহারডাঙ্গারস্থ বাড়িতে করেছিলেন।
হযরত মাওলানা (রঃ) তখন তাঁর গ্রামের বাড়িতে অসুস্থ অবস্থায় ছিলেন। এমতাবস্থায় তাঁর একজন ভক্ত মুরীদ খুলনা শহরের অধিবাসী মাওলানা হাজী আহমদ আলীর দ্বারা তার সাথে সাক্ষাতের জন্য দুবার করে খবর দেয়ায় আমি বর্তমান ইত্তেহাদুল উম্মার মজলিসে সাদারতের সদস্য জনাব মাওলানা ফজলুর রহমানকে সাথে নিয়ে লঞ্চ যোগে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে খুলনা হতে গওহারডাঙ্গা মাদ্রাসায় পৌঁছি।
গওহারডাঙ্গা মাদ্রাসার মুহতামিম হযরত মাওলানা আব্দুল আজিজ সাহেব চা-নাস্তার পরে আমাদের সহ ফরিদপুরী সাহেবের বাড়িতে আসেন। আমরা যখন হযরত মাওলানা শামসুল হক (রঃ) সাহেবের বাড়িতে সাক্ষাৎ করি তখন ছিল ১৯৬৮ সনের এপ্রিল মাস, এর পর আর তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন নি। এভাবেই রোগাগ্রস্তাবস্থায় ১৯৬৯ সনের ২১শে ফেব্রুয়ারী তাঁর গ্রামের বাড়িতে তিনি ইন্তেকাল করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউ’ন) আমার সাথে স্বাক্ষাতের দশ মাস পর।
আমার বাড়িতে পৌঁছার পরে তিনি কিতাবসহ মাদ্রাসা হতে কয়েকজন আলেমকে ডাকেন। অতঃপর উপস্থিত আলেমগণ হযরত মাওলানার নির্দেশে আমার সাথে মাওলানা মওদূদীর (রঃ) প্রনীত খেলাফত ও মুলুকিয়াত পুস্তক হতে হযরত আমীরে মুয়াবীয়া (রাঃ) সম্পর্কীয় কয়েকটি উক্তি পাঠ করে তারিখে ইবনে কাছিরের হওয়ালা (রেফারেন্স) দিয়ে মাওলানা মওদূদীর উক্তিকে ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করেন। প্রকাশ থাকে যে, ঐ বৈঠকে যে দুটি বিষয় খেলাফত ও মুলুকিয়াতে লিখিত মাওলানা মওদূদীর উক্তিকে ভুল সাব্যস্ত করার চেষ্টা করা হয়েছিল আমি তারিখে ইবনে কাছিরের মাধ্যমেই তার জওয়াব দিয়ে দেই। কেননা তারিখে ইবনে কাছিরেই মাওলানা মওদূদীর বক্তব্যের পক্ষে মজবুত দলিল ছিল।(দেখুন ‘খেলাফত ওয়া মুলুকিয়াত পার এ’তারাযাত কা ই’লমি যায়েজাহ’)
আলোচনার এক পর্যায়ে আমি উপস্থিত, ওলামায়ে কেরামের সামনে হযরত মাওলানা শামসুল হক (রঃ) সাহেবকে এ কথা বলেছিলাম যে আমি কামিল ক্লাশে হাদীস অধ্যানকালে ইসলামের ইতিহাস সবটাই পড়ার মোটামুটি চেষ্টা করেছি। দিল্লীর ‘নদওয়াতুল মুছাম্বেফীন’ কর্তক প্রকাশিত ‘তারিখে মিল্লাতের’ ছয়টি খন্ডই আমার কাছে আছে। এর ১ম দিকের কয়েকটি খন্ড (বনু উমাইয়াদের ইতিহাসসহ) লিখেন হযরত মাওলানা কাজী জয়নাল আবেদীন দেওবন্দী। আমার এ কথা বলার সাথে সাথেই হযরত মাওলানা শামসুল হক সাহেব মাওলানা জয়নাল আবেদীন হসাহেবের ভুয়সী প্রশংসা করেন ও বললেন, আমরা বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিষয় জানার জন্য দেওবন্দে তাঁর কাছে যেতাম। তিনি খুব বড় আলেম ও মোহক্কেক ছিলেন। হযরত ফরিদপুরীর কথা শেষ হতেই আমি বললাম, ইসলামের ইহতহাসে হযরত আলী (রাঃ) ও আমিরে মুয়াবিয়া (রাঃ) এর মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধ ও ঘটনা সমূহ পড়ার পরে উভয় মহান ব্যক্তিদ্বয়ের ব্যাপারে আমার মনে একটা ধারণা জন্মেছে এবং উভয়ের জন্য মনের মণি কোঠায় আলাদা আলাদা মর্যাদা নিরূপন হয়েছে। ‘খেলাফত ও মুলকিয়াত’ বই খানা পাঠ করার পরে ঐ ধারণার কোন পরিবর্তন হয়নি। কেননা ইসলামের ইতিহাস যারা লিখেছেন (আরব ঐতিহাসিক হোক কিংবা অনারব, কাজী জয়নাল আবেদীন দেওবন্দীসহ) তাদের থেকে ভিন্ন কোন কথা মাওলানা মওদূদী লিখেননি। এ কথা বলেই আমি আমার ব্যাগ হতে কাজী জয়নাল আবেদীন প্রনীত ‘তারিখে মিল্লাত’ বইখানা বের করে উহা হতে হযরত আমীর মুয়াবীয়ার (রঃ) প্রসঙ্গে লিখিত বিভিন্ন বিষয় তাঁর (কাজী জয়নাল আবেদীনের) কয়েকটি উক্তি পাঠ করে শুনালাম, যার ভাষা ছিল মাওলানা মওদূদীর ভাষা হতে কড়া ও মন্তব্য ছিল খেলাফত ও মুলুকীয়াতের মন্তব্য হতে কঠোর।(টীকাঃ ১) এর পর আমি উপস্থিত ওলামায়ে কেরামকে লক্ষ করে বল্লাম, হযরত আমিরে মুয়াবিয়ার (রাঃ) ব্যাপারে এত বড় কথা লেখার পরেও কেন মাওলানা কাজী জয়নাল আবেদীন দেওবন্দী ও তাঁর মত অন্যান্য ইসলামী ইতহাস লেখকদের বিরুদ্ধে কোন ফতওয়া দেয়া হচ্ছে না? অথচ তাঁদের চেয়ে নমনীয় ও মার্জিত কথা লিখেও মাওলানা মওদূদী (রঃ) ফতওয়ার শিকার হয়েছে। এর কারণ অনুসন্ধান করা দরকার। আমার মতে যেহেতু মাওলানা মওদূদী ইসলামী আন্দোলন করছেন সে জন্যই তাঁর লেখা চালনী দ্বারা ছাকা হচ্ছে এবং ত্রুটি বের করার বা সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। হযরত মাওলানা কাজী জযনাল আবেদীনও যদি ইসলামী আন্দোলন করতেন তা হলে তাঁর লেখাও চালনী দ্বারী ছেকে ত্রুটি বের করার বা সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হত। (টিকাঃ২)
অতঃপর আলোচনা বৈঠকে সাহাবায়ে কেরামের ‘মে’ইয়ার হক্ক’ অর্থাৎ সত্যের মাপকাঠি হওয়ার প্রসঙ্গ উত্থাপিত হলে আমি ব্যাগ হতে আমার লেখা বই জামায়াতে ইসলামীর বিরোধীতার অন্তরালে বের করে উহা হতে ছাহাবায়ে কেরামের ‘মে’ইয়ারে হক্ক’ সত্যের মাপকাঠি হওয়া না হওয়া প্রসঙ্গে চার মাজহাবের ইমাম সহ কতিপয় প্রসিদ্ধ ইমাম ও মোজাদ্দেদীনের উক্তি দলিল হস পেশ করে শুনিয়ে দেই।
সে বৈঠকে যে সব আলেমগণ উপস্থিত ছিলেন তাদের মধ্যে আমি মাওলানা আব্দুল আজিজ সাহেবকে চিনতাম। অন্য যারা ছিলেন নিঃসন্দেহে তারা গওহারডাঙ্গা মাদ্রাসার মত একটি বড় মাদ্রাসার সকলেই ওস্তাদ ছিলেন। এ সব ওলামায়ে কেরাম আমার কথা সেদিন মনের সাথে মেনে নিয়েছিলেন কিনা জানিনা, তবে আমার কথার ও যুক্তি প্রমাণের কোন প্রতিবাদও তারা করেন নি।
এরপর আমি বল্লাম, আমাদের আকীদা ও বিশ্বাস পয়গম্বরগণ ছাড়া আর সকল মানুষের ভুল হওয়ার সম্ভাবনা আছে, সে যত বড় আলেম বা পীরই হোকনা কেন। সুতরাং মাওলানা মওদূদী ছাহেবের ‘খেলাফত ও মুলুকিয়াত’ বইখানা আরও ভাল করে পড়ুন এবং যদি আপনাদের দৃষ্টিতে কোথাও ভুল পরিলক্ষিত হয় তাহলে দলিলসহ মাওলানা মওদূদী সাহেবকে লিখুন। আমি কয়েকদিনর মধ্যেই জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার বৈঠকে যোগদানের জন্য লাহোর যাচ্ছি। আমি সেখানে বেশ কয়েকদিন থাকব। আপনাদের লেখা টিঠি বা প্রশ্ন ওখানে খোঁজ করে বের করব। এবং মাওলানা মওদূদী সাহেবের নিকট হতে জওয়াব লিখে নিয়ে আসব। এরপর আমি লাহোরে যাই এবং সেখানে আমি বেশ কিছুদিন অবস্থান করি। কিন্তু অনেক খোঁজাখুজি করেও তাঁদের কোন চিঠিপত্র সেখানে পাইনি। এর ফলে আমি ধারণা করে নিয়েছিলাম যে আমার আলোচনার পর তাঁরা আর কোন প্রশ্ন করা দরকার মনে করেননি।
প্রকাশ থাকে যে আমার সাথে ঐ ইলমি আলোচনার মাত্র ১০ মাস পর হযরত মাওলানা শামসুল হক সাহেব ১৯৬৯ সনের ফেব্রুয়ারী মাসে তাঁর গ্রামের বাড়িদত ইন্তেকাল করেন। (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন) (টীকাঃ ৩)
(টীকাঃ ১) (হযরত মাওলানা কাজী জয়নাল আবেদীন প্রণীত তারিখে মিল্লাত কিতাব খানা চকবাজারের লাইব্রেরীতে পাওয়া যায়)
(টীকাঃ ২) হযরত মাওলানা শামসুল হক সাহেব (রঃ) যেহেতু ইলমী আলোচনার জন্য মাঝে মধ্যে আমাদেরকে ডাকতেন। তাই খুলনায় আমাদের হাজী আহমদ আলী সাহেবের মাধ্যমে খবর দেয়ায় আমি ধারণা করেছিলাম যে হয়ত তিনি আমাকে আগের মতই কোন ইলমী আলোচনার জন্য ডেকেছেন। এই কথা ভেবে আমি ছোট আকারের কয়েকখানা কিতাব আমার ব্যাগে নিয়েছিলাম। তারিখে মিল্লাত কিতাখানাও ঐ কিতাব সমূহের মধ্যে ছিল। বড় কিতাব এ জন্য নেইনি যে বড় কিতাব ওখানকার মাদ্রাসা লাইব্রেরীতে ছিল। যে কিতাব ওখানে ছিলনা সে কিতাবই আমি সাথে নিয়েছিলাম।
(টীকাঃ ৩) দেওবন্দসহ উপমহাদেশের যত দরসে নেজামী মাদ্রাসা আছে উহাতে ইসলামের ইতিহাস পড়ান হয়না। কেননা তাহাদের নেছাবে তারিখ শামিল নাই। তবে কোন কোন মাদ্রাসায় শুধু রাসূলের (সঃ) জীবনীটুকুই পড়ান হয়। এমতাবস্থায় তারিখে ইসলাম (খোলাফায়ে রাশেদীন, বনু উমাইয়া ও বনু আব্বাস) সম্পর্কে অনবিহিত এবস আলেমদের কাছে যখন তাদের বুজুর্গদের অভিযোগসহ হযরত আলী, হযরত হাছান (রাঃ) ও হযরত আমীরে মুয়াবিয়া ও ইয়াজিদ সম্পর্কীয় মাওলানা মওদূদীর লিখনী পেশ করা হয়, তখন তারা কোনরুপ তাহকীক ছাড়াই তাদের বড়দের মত সমর্থন করে থাকেন। অথচ মাওলানা মওদূদী (রঃ) ইসলামের বিজ্ঞ পুরাতন ঐতিহাসিকগণ হতে আলাদা কোন তথ্য বা মন্তব্য পেশ করেননি।