কোরআন ও সুন্নাহ
স্থান – কাল প্রেক্ষিত
ডঃ তাহা জাবির আল আলওয়ানী
ডঃ ইমাদ আল দীন খলিল
অনুবাদঃ শেখ এনামুল হক
মুখবন্ধ
বহুদিন পর্যন্ত উম্মাহর শক্তি-সামর্থ, বিশুদ্ধতা, জ্ঞান ও অনুপ্রেরণায় মহান উৎস কোরআন ও সুন্নাহ সম্পর্কে ব্যাপক জ্ঞান গবেষণা করা হয়নি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজস্ব চৌহদ্দি পেরিয়ে অথবা তাদের বহুমুখী বিষয়ের দু একটি শাখা, প্রশাখায় অতিরিক্ত আলোচনা-পর্যালোচনা করে শাশ্বত ঝরণার উৎসের ব্যাপক সম্ভাবনার প্রতি চরম অবিচার করা হয়েছে; অপরদিকে উম্মাহ, তথা সমগ্র বিশ্বকে তার ব্যাপক উপযোগিতা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
বর্তমানে ইতিহাস ও সভ্যতার বিকাশে উম্মাহর নেতৃত্বস্থানীয় ভূমিকার পুনরুজ্জীবনে সে তার নিজস্ব সমস্যা ও সুপ্ত ক্ষমতা ও আখাংকার ব্যাপারে ক্রমবর্ধমানভাবে সচেতন হওয়ার প্রেক্ষিতে সেই ঝরণার থেকে পানি আহরণের বিষয়টি এখন অধিকতর সময়োচিত ও জরুরী। এই দুই উৎসের পুনঃপরিদর্শন এখন কোনক্রমেই সেকেলে, অতিমাত্রায় তাত্ত্বিক, অতীত স্মৃতি রোমন্থন বা পলায়নী মনোবৃত্তি নয় বরং আবিষ্কারের বহু মাহাযাত্রার ন্যায় এ ক্ষেত্রেও আসতে পারে বিবিধ চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাব্য প্রতিবন্ধক, তবে দৃঢ় ইচ্ছায় বলিয়ান হয়ে এ ক্ষেত্রে অগ্রসর হলে মহানিয়ন্তা এবং সকল পরিব্রাজকের আলোকবর্তিকায় রহমত ও করুণায় বদৌলতে খালি হাতে, শূণ্য মনে ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই।
বস্তুতঃ এর পুরস্কারেরও শেষ নেই। মানুষের সুপ্তশক্তি ও খোদার পরিকল্পনার উন্নততর উপলব্ধি; ভারসাম্যপূর্ণ, সক্রিয় ও উদ্দেশ্যমূলক জীবনের পুনরুজ্জীবন, মর্যাদা, শান্তি ও সম্প্রীতীর পুনরুদ্ধার শুধু উম্মাহর নয় বরং সমগ্র বিশ্বের যে বিশ্ব ভ্রান্ত আদর্শ ও ধারণায় বিভ্রান্ত হয়েছে বারবার।
বাস্তবতা এই যে, কোরআন ও সুন্নাহর উজ্জ্বলতর অধ্যায়সমূহ অতীতের অভিযাত্রার (গবেষণা ও পর্যালোচনা) মাধ্যমে সামাজিক ও ঐতিহাসিক পরিবর্তনের গতিশীলতা এবং পৃথিবীতে মানুষের ভূমিকা সম্পর্কে অধিকতর সচেতনতার সৃষ্টি করবে এবং বর্তমান কালেন চাহিদা ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মুসলমানদের সামর্থকে শাণিত ও প্রাণবন্ত করে তুলবে। এই অভিযাত্রায় সংশ্লিষ্ট মানবিক ও আপেক্ষিক পরিমন্ডলে আমাদেরকে মুসলমান ও মানব সমাজের ঘনিষ্ঠ হতে এবং আরো উচ্চতর ক্ষেত্রে-সর্বোচ্চ পর্যায়ে সকল জীবন ও প্রচেষ্টায় কেন্দ্রবিন্দু সৃষ্টিকর্তার কাছে নিয়ে যাবে।
এই গ্রন্থের প্রথম নিবন্ধে ডঃ তাহা জাবির আল আলওয়ানী আল্লাহর নাযিলকৃত ও সুরক্ষিত কোরআনকে জ্ঞানের উৎস হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। এটা এমন এক উৎস যা থেকে অধ্যয়নের মাধ্যমেই সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। ডঃ আলওয়ানী যুক্তি দেখিয়েছেন যে, কোরান অধ্যয়নের দুটি পর্যায় রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে আধ্যাত্নিক উৎকর্ষের চর্চা করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে খলিফা হিসেবে মানুষকে পৃথিবীতে বাস্তব কর্ম সম্পাদনের লক্ষ্যে বিশ্বজাহান অধ্যয়নের আহ্বান জানানো হয়েছে। এই উভয় অধ্যয়ন একত্রে সম্পাদন এবং তাদের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার মধ্যেই এই পৃথিবী ও পরজগতের কল্যাণ নিহিত।
ইতিপূর্বেকার মুসলমানগণ কোরআন ও কেয়ামতের বিভিন্ন দিকের ওপর মূলতঃ মনোনিবেশ করেছেন এবং নাযিলকৃত অহীকে ফিকাহ ও আইন কানুনের উৎস হিসেবে গণ্য করেছেন। কোআনের এ ধরনের সীমিত অধ্যয়ন বহুকাল ধরে স্থান ও কালের প্রেক্ষাপটে তার উপযোগিতা নিরূপণের উৎসাহ উদ্দীপনাকে দমিয়ে রাখে। এ জন্য ডঃ আলওয়ানী এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গির উপর গুরুত্ব দিয়েছেন যাতে কোরআনকে বিশুদ্ধ উপায়ে অনুধাবন করা যায়।
অনুরূপভাবে ডঃ আলওয়ানীর দ্বিতীয় নিবন্ধ ‘সুন্নাহর সুষ্ঠু অধ্যয়ন’ – থেকে হযরত মুহাম্মদের (সঃ) রসূল হওয়ার লক্ষ্য অনুধাবনের অনুকূল হবে এবং আমাদের কালের ও স্থানের বাস্তব চাহিদা অনুসারে সুন্নাহর চেতনার যুক্তিসঙ্গত বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
ডঃ ইমাদ আল দ্বীন খলিল তার নিবন্ধে কোরআন ও বিজ্ঞানের মধ্যকার সম্পর্কের বিষয়ে বলেছেন, কোরআন ও বিজ্ঞানের কোন পাঠ্যাপুস্তক নয়, তবে এতে নির্ভেজাল বৈজ্ঞানিক তথ্য বা নির্দেশনার আকারে বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাপক উপাত্ত (data) রয়েছে। তাঁর মতে এসব বৈজ্ঞানিক উপাত্ত কাজে লাগানোর জন্য কোরআন একটি নমনীয় ও সার্বিক পদ্ধতি (বিধি) পেশ করেছে-যে পদ্ধতি স্থান ও কালের পরিবর্তনের শিকার হবে না এবং প্রত্যেক যুগ ও পরিবেশ কাযর্কর থাকবে।
কোরআন ও সুন্নাহর নতুনভাবে অধ্যয়নের জন্য সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ইসলাম ও অন্যান্য দৃষ্টিকোন থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই গ্রন্থে দু জন খ্যাতনামা মুসলিম চিন্তাবিদ ডঃ আল আলওয়ানী এবং ডঃ খলিল ইসলামী কাঠামোর আওতায় এসব উৎসের প্রতি সুষ্ঠু দৃষ্টিভঙ্গির জন্য তাদের মতামত পেশ করেছন।
ডঃ এ এস আল শেইখ আলী
রশিদ মাসাউদী