১. উসমান
১. আমীর পদে উসমান
আনাতোলিয়ার ছোট্ট একটি জায়গীর ছিলো সুগুত। এর অধিপতি ছিলেন আত্তুগ্রিলের এক পুত্র সন্তান জন্মগ্রহন করেন। তাঁর নাম রাখা হয় উসমান। ১২৮৮ খ্রিষ্টাব্দে আত্তুগরিল ইন্তিকাল করেন। উসমানের বয়স তখন ত্রিশ বছর। তিনি পিতৃ মসনদে বসেন।
সুগুতের একজন প্রখ্যাত দীনদার ব্যাক্তি ছিলেন আবিদ আলী। উসমান তাঁর কন্যা মাল খাতুনকে বিয়ে করেন।
১২৯৯ খ্রিষ্টাব্দে উসমান ইয়েনি দখল করে রাজ্য সীমা বর্ধিত করেন। তিনি ইয়েনি শহরে তাঁর রাজ্যের রাজধানী স্থাপন করেন। উসমান ‘আমীর’ উপাধি গ্রহন করেন।
২. উসমান যেমন ছিলেন
উসমান ছিলেন ইসলামী নৈতিকতার বিমূর্ত রূপ। তাঁর জীবন ছিলো খুবই অনাড়ম্বর। তিনি ছিলেন উঁচু দরের শাসক। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে তিন ইসকলের সুখ-শান্তির কথা ভাবতেন। তিনি তাঁর দীনদার শ্বশুরকে প্রথমে কাযী ও পরে উযীর নিযুক্ত করেছিলেন। উসমান রাজ্যময় মসজিদ নির্মাণ করে সালাত কায়েম এবং ইসলামী জ্ঞানচর্চার সুব্যবস্থা করেন। তিনি ছিলেন খুবই বিচক্ষণ। সৈনিক হিসেবেও তিনি ছিলেন অসাধারণ তাঁর রণকৌশল ছিলো অত্যন্ত উন্নত মানের। যুদ্ধে প্রাপ্ত মালে গানীমার এক পঞ্চমাংশ রাষ্ট্র-তহবিলে জমা করে বাকি চার ভাগ সৈনিকদের মধ্যে বন্টন করে দিতেন। সাধারণত তিনি কোমলতা অবলম্বন করতেন। কিন্তু প্রয়োজনে তিনি হতেন ইস্পাতের মতো কঠিন। তিনি একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক ছিলেন।
তাঁর জীবনে বিলাসিতা ছিলোনা। তিনি দুনিয়ার প্রতি আসক্ত ছিলেন না। তিনি তাঁর উত্তরাধিকারীর জন্যও কোন ধন-রত্ন জমা করে যাননি। ইন্তিকালের পূর্বে তিনি তাঁর পুত্র ওরখানকে সম্বোধন করে বলেন, “তোমার প্রতি আমার নির্দেশ এই যে কখনো যুলুম ও নিষ্ঠুরতা অবলম্বন করবোনা। বিজিত অঞ্চলে ইসলাম প্রচারের উদ্যোগ নেবে। জ্ঞানী ব্যাক্তিদের সম্মান করবে। শারীয়ার বিধি বিধান মেনে চলবে। ঐশী আইনই আমাদের বড় শক্তি। পরম করুনাময়ের পথেই আমাদের সমৃদ্ধি। প্রজাদের রক্ষনাবেক্ষণ তোমার বড় কর্তব্য। এই কর্তব্য পালন করতে পারলে তুমি পরম করুনাময়ের অনুগ্রহ ও আশ্রয় লাভ করতে পারবে”
৩. রণাংগনে উসমান
১২৯৯ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর সেনাপতত্বে তাঁর সৈন্যগণ ইয়েনি দখল করে। এই ইয়েনি শহরই হয় উসমানী খিলাফতের প্রথম রাজধানী।
১৩০১ খ্রিষ্টাব্দে পার্শ্ববর্তী খ্রিষ্টান দেশ গ্রীসের সাথে উসমানের যুদ্ধ বাধে। গ্রীসই তখন পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের প্রাণকেন্দ্র। কুয়ুন হিসার যুদ্ধে গ্রীক সেনাপতি মুজালোনকে পরাজিত করে তিনি গ্রীস সাম্রাজ্যের কিছু অংশ দখল করেন।
১৩০২ খ্রিষ্টাব্দে গ্রীসের রাজা এক বিশাল সৈন্য বাহিনী নিয়ে আমীর উসমানের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। যুদ্ধে গ্রীসের রাজা পরাজিত হন। তাঁর রাজ্যের এশীয় অঞ্চল উসমানের পদানত হয়।
এই যুদ্ধের এক পর্যায়ে অন্যতম গ্রীক সেনাপতি এভারনোজ আল ইসলামের শ্রেষ্টত্ব উপলব্ধি করতে সক্ষম হন। মুসলিমদের আচরণ, চারিত্রিক পবিত্রতা এবং শৃংখলা দেখে তিনি মুগ্ধ হন। তিনি তাঁর অনুগত সৈন্যদেরকে নিয়ে খৃষ্টানধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম গ্রহন করেন। পরবর্তীকালে এভারনোজ এবং তাঁর সাথীদের তলোয়ার ইসলামের বিজয় নিশ্চিত করার জন্য ব্যবহৃত হতে থাকে।
১৩১৭ খ্রিষ্টাব্দে আমীর উসমানের সুযোগ্য পুত্র ওরখান গ্রীকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে প্রসিদ্ধ ব্রুসা নগরী দখল করেন। অতঃপর এই ব্রুসাই হয় উসমানী খিলাফাতের রাজধানী।
৪. উসমানের ইন্তিকাল
উসমান ৩৮ বছর শাসনকার্য পরিচালনা করেন। ১৩২৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ৭০ বছর বয়সে ইন্তিকাল করেন।
২. ওরখান
১. সুলতান পদে ওরখান
আমীর উসমানের সুযোগ্য পুত্র ছিলেন ওরখান। ১৩২৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ব্রুসা-র মসনদে বসেন। তিনি ‘সুলতান’ উপাধি ধারণ করেন। উল্লেখ্য যে উসমানই তাঁকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করে যান।
২. ওরখান যেমন ছিলেন
আমীর উসমানের মতোই ওরখান সাদাসিধে জীবন যাপন করতেন। তিনি ছিলেন আল ইসলামের একজন নিষ্ঠাবান অনুসারী। তিনি রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে বহু মাসজিদ, ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতাল স্থাপন করেন। রাজধানী ব্রুসাকে তিনি একটি আদর্শ মুসলিম শহরে পরণত করেন। ব্রুসাতে তিনি একটি সুদৃশ্য মাসজিদ নির্মাণ করেন।
পিতার মতোই তিনি জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে সকল মানুষের সুখ-সমৃদ্ধি বৃদ্ধির চেষ্টা করেন।
তিনি ছিলেন উঁচু মানের সুশাসক। পিতার মতো তিনিও রণ-কৌশলে পারদর্শী ছিলেন। উসমানের শাসনকালে কোন নিয়মিত সেনাবাহিনী ছিলো না। যুদ্ধের সময় ঘোষনা দেওয়া হতো। আগ্রহী লোকেরা এগিয়ে আসতো। তাদেরকে ট্রেনিং দিয়ে যুদ্ধের ময়দানে নিয়ে যাওয়া হতো। দূরদর্শী ওরখান একটি নিয়মিত সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় বেতনভোগী নিয়মিত সেনাবাহিনী গড়ে ওঠে। পদাতিক বাহিনীকে নাম দেওয়া হয় পিয়াদা এবং অশ্বারোহী বাহিনীকে বলা হতো সিপাই। যুদ্ধবন্দী খ্রিষ্টান যুবকদের মধ্যে থেকে যারা ইসলাম গ্রহণ করে তাদেরকে নিয়ে জাননিসার নামে একটি সৈন্য দলও তিনি গড়ে তোলেন।
৩. রণাংগনে ওরখান
উসমানের মতোই বীরযোদ্ধা ছিলেন ওরখান। ১৩২৭ খ্রিষ্টাব্দে গ্রীসের রাজা তৃতীয় এন্ড্রোনিকাস এক বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে ওরখানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামেন। পেলিকানন প্রান্তরে ওরখান তাঁর মুখোমুখি হন। যুদ্ধে পরাজিত হয়ে গ্রীস-রাজ রাতের আঁধারে পালিয়ে যান। ওরখান সসৈন্যে নাইসিয়া প্রবেশ করেন। নাইসিয়ার অধিবাসীগন মুসলিমদের আচরনে মুগ্ধ হয়। নাইসিয়ার অধিকাংশ অধিবাসী স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহন করে মুসলিম উম্মাহর অন্তর্ভুক্ত হয়।
১৩৩৮ খ্রিষ্টাব্দে ওরখান সসৈন্যে নিকোমেডিয়া অভিমুখে অগ্রসর হলে সেখানকার অধিবাসীগণ বিনা যুদ্ধে আত্নসমর্পণ করে। ওরখানের শাসনকালে উসমানী সৈন্যগণ সর্বপ্রথম ইউরোপ ভূ-খন্ডে পা দেয়। ১৩৫৬ খ্রিষ্টাব্দে ওরখান গ্যালিপলি জয় করেন। স্থানীয় রাজা রাজকুমারী থিয়োডোরাকে ওরখানের নিকট বিয়ে দেন।
৪. ওরখানের ইন্তিকাল
১৩৫৯ খ্রিষ্টাব্দে ওরখান ৭৫ বছর বয়সে ইন্তিকাল করেন। তিনি ৩৩ বছর শাসনকার্য পরিচালনা করেন।
ক্রুসেডার বা ধর্মযোদ্ধাগণ তাঁর বাহিনীর ওপর প্রচন্ড হামলা চালায়। প্রথম বায়েজিদ পালটা আক্রমণ শুরু করেন। মাত্র তিন ঘন্টার মধ্যেই সম্মিলিত খ্রিষ্টান বাহিনী ছত্রভংগ হয়ে পড়ে। দশ হাজার খ্রিষ্টান ক্রুসেডার প্রাণ হারায়। হাংগেরীর রাজা সিজিসমান্ড নৌকাযোগে ড্যানিউব নদী অতিক্রম করে স্বদেশে পালিয়ে যান। জন ডি-নেভার্স বন্দী হন। তাঁকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।
নিকোপলিসের যুদ্ধ ছিলো খ্রিষ্টানদের সর্বশেষ ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ।
১৩৯৭ খ্রিষ্টাব্দে গ্রীসের বিশপ রাণী হেলেনার দুর্নীতি ও অত্যাচারে অতিষ্ঠ গ্রীসবাসীকে মুক্ত করার জন্য প্রথম বায়েজিদের প্রতি গ্রীস আক্রমণের আহবান জানান। প্রথম বায়েজিদ সসৈন্যে অগ্রসর হলে গ্রীসের রাণী এগিয়ে এসে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁর বশ্যতা স্বীকার করেন।
৩. প্রথম মুরাদ
১. সুলতান পদে প্রথম মুরাদ
১৩৫৯ খ্রিষ্টাব্দে ওরখানের পুত্র প্রথম মুরাদ ব্রুসার মসনদে বসেন
২. প্রথম মুরাদ যেমন ছিলেন
প্রথম মুরাদ ছিলেন একজন নিরক্ষর ব্যাক্তি। কিন্তু তিনি অসাধারন প্রতিভার অধিকারী ছি্লেন। তিনি ছিলেন দূরদর্শী রাজনীতিবিদ। তিনিও ছিলেন আল ইসলামের একজন নিষ্ঠাবান অনুসারী। ইসলামী চিন্তা চেতনার প্রসারের দিকে তাঁরও ছিলো সজাগ নজর।
অন্যান্য ধর্ম অনুসারীদের প্রতিও তিনি সহনশীল ছিলেন। তাঁর শাসনকালেও খ্রিষ্টান প্রজাগণ পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করতো। তিনি ছিলেন একজন যোগ্য সংগঠক। তাঁর প্রচেষ্টায় উসমানী সেনাবাহিনী আরো বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
৩. রণাংগনে প্রথম মুরাদ
১৩৬৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম মুরাদ গ্রীসের সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে আড্রিয়ানোপল দখল করেন।
১৩৬৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মারিৎজা নদীর তীরে সংঘটিত যুদ্ধে খ্রিষ্টান বাহিনীকে পরাজিত করে মেসিডোনিয়া দখল করেন। সমসাময়িককালে প্রথম মুরাদ থ্রেস (বর্তমান রুমানিয়া)দখল করেন।
১৩৬৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম মুরাদ আড্রিয়ানোপলে রাজাধানী স্থানান্তরিত করেন।
১৩৭২ খ্রিষ্টাব্দে সার্বিয়ার সাহায্যপুষ্ট হয়ে বুলগেরিয়া উসমানী খিলাফাতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে। সামাকফ প্রান্তরে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। প্রথম মুরাদের পরিচালিত বাহিনী যুদ্ধে জয় লাভ করে। বুলগেরিয়া উসমানী শাসনাধীনে আসে।
১৩৮৯ খ্রিষ্টাব্দে সার্বিয়া এবং বুলগেরিয়ার মাঝখানে অবস্থিত কসোভো রণাংগনে ইউরোপীয় খ্রিষ্টান শোক্তি সার্বিয়ার রাজা ল্যাজারাসের নেতৃত্বে যুদ্ধে নেমে প্রথম মুরাদের হাতে ভীষনভাবে পরাজিত হয়। ল্যাজারাস বন্দী হন। তাঁকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।
৪. প্রথম মুরাদের শাহাদাত
কসোভা প্রান্তরে বিজয় লাভের পর কভিলভিচ নামক একজন স্লাভ সৈনিক সুকৌশলে প্রথম মুরাদের নিকটবর্তী হয়ে তাঁকে হত্যা করে।
১৩৮৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম মুরাদ শহীদ হন। তিনি ৩০ বছর শাসনকার্য পরিচালনা করেন।
৪. প্রথম বায়েজিদ
১. সুলতান পদে প্রথম বায়েজিদ
১৩৮৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম মুরাদের শাহাদাতের পর তাঁর পুত্র প্রথম বায়েজিদ আড্রিয়ানোপলের মসনদে বসেন।
২. প্রথম বায়েজিদ যেমন ছিলেন
প্রথম বায়েজিদ একজন দৃঢ় ব্যাক্তি ছিলেন। রণক্ষেত্রে তিনি অসাধারণ ক্ষিপ্রতা প্রদর্শন করেন। এই জন্য তাঁকে বলা হতো ইলদ্রিম বা বিদ্যুৎ। ইউরোপীয় খ্রিষ্টানদের সাথে যুদ্ধ করে তিনি উসমানী খিলাফাত আরো সসংহত করেন। তবে স্বভাবে তিনি নিষ্ঠুর ছিলেন। আর তাঁর সার্ব স্ত্রীর প্রভাবে তিনি নৈতিক অধপতনের স্বীকার হন। এতে উসমানী খিলাফাতের সুনাম যথেষ্ট ক্ষুণ্ণ হয়।
৩. রণাংগনে প্রথম বায়েজিদ
কসোভোর যুদ্ধে পরাজিত ও মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত সার্বিয়ার রাজা ল্যাজারাসের পুত্র স্টিফেন বুলকোভিচ সার্বিয়ার সিংহাসনে বসেন। প্রথম বায়েজিদ তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেন। স্টিফেন প্রথম বায়েজিদের আনুগত্য স্বীকার করে শান্তি চুক্তি সম্পাদন করেন। সার্বিয়া উসমানী খিলাফাতের অধীন স্বায়ত্বশাসন লাভ করে। রাজা স্টিফেন তাঁর বোন অলিভেরা ডিসপিনাকে প্রথম বায়েজিদের নিকট বিয়ে দেন। এই সার্ব যুবতী প্রথম বায়েজিদের উপর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হন। তবে সার্বিয়ার রাজা স্টিফেন সন্ধির শর্তাবলী যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে থাকেন।
১৩৯৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম বায়েজিদ তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র সুলাইমানকে বুলগেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন। সুলাইমান উত্তর বুলগেরিয়া আক্রমন করে রাজধানী ত্রিনোভা অধিকার করেন।
১৩৯৬ খ্রিষ্টাব্দে হাংগেরীর রাজা সিজিসমান্ড এর আবেদনে সাড়া দিয়ে পোপ নবম বেনিফাস উসমানী খিলাফাতের বিরুদ্ধে ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ ঘোষনা করেন।
ফ্রান্সের রাজা পঞ্চম চার্লসের প্রচেষ্টায় বিপুল সংখ্যক ফ্রান্সবাসী বারগান্ডির যুবরাজ জন ডি নেভার্সের নেতৃত্বে জমায়েত হয়। ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, লোম্বার্ডি, স্যাভয়, ব্যাভারিয়া, জার্মেনী, ওয়ালাচিয়া, বোহেমিয়া, অষ্ট্রিয়া প্রভৃতি দেশের রাজণ্যবর্গ এবং ৬০ হাজার খ্রিষ্টান ধর্মযোদ্ধা অষ্ট্রিয়ার বুদাপেষ্ট শহরে একত্রিত হয়। তারা ড্যানিউব নদীর তীর ধরে অগ্রসর হয়ে বুলগেরিয়ার নিকোপলিস শহরের কাছে এসে শিবির স্থাপন করে। প্রথম বায়েজিদ তাঁর সৈন্যবাহিনী নিয়ে এগিয়ে আসেন। খ্রিষ্টান ক্রুসেডার ধর্মযোদ্ধাগন টাঁড় বাহিনীর ওপর প্রচন্ড হামলা চালায়। প্রথম বায়েজিদ পালটা আক্রমণ শুরু করেন। মাত্র তিন ঘন্টার মধ্যেই সম্মিলিত খ্রিষ্টান বাহিনী ছত্রভংগ হয়ে পড়ে। দশ হাজার খ্রিষ্টান ক্রুসেডার প্রাণ হারায়। হাংগেরীর রাজা সিজিসমান্ড নৌকাযোগে ড্যানিউব নদী অতিক্রম করে স্বদেশ পালিয়ে যান। জন ডি-নেভার্স বন্দী হন। তাঁকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।
নিকোপলিসের যুদ্ধ ছিল খ্রিষ্টানদের সর্বশেষ ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ।
১৩৯৭ খ্রিষ্টাব্দে বিশপ রানী হেলেনার দুর্নীতি ও অত্যাচারে অতিষ্ট গ্রীসবাসীকে মুক্ত করার জন্য প্রথম বায়েজিদের প্রতি গ্রীস আক্রমনের আহবান জানান। প্রথম বায়েজিদ সসৈন্যে অগ্রসর হলে গ্রীসের রাণী এগিয়ে এসে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁর বশ্যতা স্বীকার করেন।
অতঃপর প্রথম বায়েজিদ কনস্ট্যান্টিনোপল অবরোধ করেন। এই সময় তিনি খবর পান যে তাতার সমর নায়ক তাইমুর খান জর্জিয়া প্রভৃতি অঞ্চল দখল করে এশিয়া মাইনরের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। প্রথম বায়েজিদ কনস্ট্যান্টিনোপলের অবরোধ তুলে নিয়ে তাইমুরের মুকাবিলার জন্য অগ্রসর হন।
১৪০২ খ্রিষ্টাব্দে আংকারা প্রান্তরে উভয় পক্ষে তুমুল যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে প্রথম বায়েজিদ পরাজিত হন। তিনি ও তাঁর পুত্র বন্দী হন।
৪. প্রথম বায়েজিদের ইন্তিকাল
১৪০২ খ্রিষ্টাব্দে বন্দী অবস্থায় প্রথম বায়েজিদ ইন্তিকাল করেন। তিনি ১৪ বছর শাসনকার্য পরিচালনা করেন।
৫. প্রথম মুহাম্মাদ
১. সুলতান পদে প্রথম মুহাম্মাদ
১৪০২ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম বায়েজিদের ইন্তিকালের পর কয়েকটি বছর তাঁর পুত্রদের মধ্যে কলহ চলতে থাকে। অতঃপর প্রথম বায়েজিদের পুত্র মুহাম্মাদ আড্রিয়ানোপলের মসনদে বসেন।
২. প্রথম মুহাম্মাদ যেমন ছিলেন
প্রথম মুহাম্মাদ একজন জ্ঞানী ও বিচক্ষণ সুলতান ছিলেন। তিনি একজন দক্ষ শাসক ও বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন মহানুভব ব্যক্তি। ন্যায় পরায়ণ শাসক হিসেবে তাঁর স্থান অনেক উর্ধে। তিনি খুবই শান্তিপ্রিয় লোক ছিলেন। একবার সার্বিয়া, ওয়ালাচিয়া এবং আলবেনিয়ার প্রতিনিধিবৃন্দকে তিনি বলেছিলেন, “তোমাদের নেতাদের বলতে ভুলো না যে আমি সকলকে শান্তি মঞ্জুর করেছি এবং সকলের নিকট থেকে শান্তিই গ্রহন করবো। আল্লাহ শান্তিভংগকারীদেরকে শাস্তি দিয়ে থাকেন।”
প্রথম মুহাম্মাহ তাঁর খ্রিষ্টান নাগরিকদের প্রতিও অত্যন্ত সদয় ছিলেন। প্রথম মুহাম্মাদ রাষ্ট্রের সীমানা বৃদ্ধি করার চেয়ে রাষ্ট্রের সংহতির বিষয়টিকে প্রাধান্য দেন।
৩. প্রথম মুহাম্মাদের ইন্তিকাল
১৪২১ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম মুহাম্মাদ ইন্তিকাল করেন। তিনি আট বছর শাসনকার্য পরিচালনা করেন।