২১. দ্বিতীয় আহমাদ
১. সুলতান ও খালীফা পদে দ্বিতীয় আহমাদ
স্বিতীয় আহমাদ একজন অযোগ্য শাসক ছিলেন। তিনি ছিলেন খুবই দুর্বলচেতা এবং সদেহপ্রবণ। শাসনকার্য পরিচালনায় তিনি দারুন ব্যর্থতার পরিচয় দেন।
২. দ্বিতীয় আহমাদ যেমন ছিলেন
দ্বিতীয় আহমাদ একজন অযোগ্য শাসক ছিলেন। তিনি ছিলেন খুবই দুর্বলচেতা এবং সন্দেহপ্রবণ। শাসনকার্য পরিচালনায় তিনি দারুণ ব্যর্থতার পরিচয় দেন।
৩. রণাংগনে দ্বিতীয় আহমাদ
দ্বিতীয় আহমাদ কোন সামরিক প্রতিভা ছিলেন না। রণাংগনে কোন ভূমিকা রাখার মতো যোগ্যতা ছিলো না তাঁর।
১৬৯১ খৃষ্টাব্দে অষ্ট্রিয়া উসমানী খিলাফাতের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিলে উযীরে আযম মুস্তাফা কুপ্রিলী শত্রুপক্ষের গুলির আঘাতে নিহত হন। এতে সৈন্যদল মনোবল হারিয়ে ফেলে। উসমানী সৈন্যগণ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
৪. দ্বিতীয় আহমাদের ইন্তিকাল
দেশে দুর্ভিক্ষ ও মহামারী দেখা দেয়। ১৬৯৫ খৃষ্টাব্দে পরাজয় ও ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে দ্বিতীয় আহমাদ ভগ্ন হৃদয়ে ইন্তিকাল করেন।
২২. দ্বিতীয় মুস্তাফা
১. সুলতান ও খালীফা পদে দ্বিতীয় মুস্তাফা
১৬৯৫ খৃষ্টাব্দে চতুর্থ মুহাম্মাদের পুত্র দ্বিতীয় মুস্তাফা কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।
২. দ্বিতীয় মুস্তাফা যেমন ছিলেন
দ্বিতীয় মুস্তাফা তাঁর পূর্ববর্তী সলতানের তুলনায় যোগ্য ও সাহসী ছিলেন
৩. রণাংগনে দ্বিতীয় মুস্তাফা
১৬৯৫ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় মুস্তাফা অষ্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালিয়ে কয়েকটি দুর্গ পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন।
১৬৯৭ খৃষ্টাব্দে তিনি আবার অষ্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে বের হন। কিন্তু জেন্টা প্রান্তরে অষ্ট্রিয়া বাহিনীর হাতে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন।
জেন্টা যুদ্ধে পরাজয়ের পর অষ্ট্রিয়া, হাংগেরী, ভেনিস এবং রাশিয়া দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে উসমানী খিলাফাতের ইউরোপীয় প্রদেশগুলোর ওপর নিজেদের প্রাধান্য ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা জোরদার করে। খিলাফাতের এই দুর্দিনে দ্বিতীয় মুস্তাফা হুসাইন কুপ্রিলীকে উযীরে আযম নিযুক্ত করেন। হুসাইন কুপ্রিলী একজন প্রতিভাবান ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে অল্পসময়ের মধ্যেই দেশের প্রশাসন, অর্থনীতি এবং সামরিক শক্তি সুসংহত হয়ে ওঠে। হুসাইন কুপ্রিলী ইউরোপীয় শক্তিগুলোর সাথে যথাসম্ভব সংঘর্ষ এড়িয়ে চলার নীতি অনুসরণ করেন।
১৬৯৯ খৃষ্টাব্দে উসমানী খিলাফাত অষ্ট্রিয়া, রাশিয়া, পোল্যান্ড এবং ভেনিসের সাথে কার্লোউইজ শহরে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে।
এই চুক্তি অনুযায়ী উসমানী খিলাফাত ট্রানসিলভানিয়া এবং বার্নাত ছাড়া গোটা হাংগেরী অষ্ট্রিয়াকে ছেড়ে দেয়। পোল্যান্ডও কয়েকটি অঞ্চল পায়। আজোভ অঞ্চল পেলো রাশিয়া। ভেনিস এথেন্স ছেড়ে দেয় এবং ডালমাটিয়া ও মোরিয়া নিয়ে নেয়। এই চুক্তির ফলে কিছুকালের জন্য পূর্ব ইউরোপে শান্তি স্থাপিত হয়। তবে উসমানী খিলাফাতের দুর্বলতার পরিচয় পেয়ে ইউরোপীয় শক্তিগুলো ক্ষয়িষ্ণু মুসলিম শক্তির স্থলাভিষিক্ত হওয়ার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে।
প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের ফলে হুসাইন কুপ্রিলী পদচ্যুত হন। এর কিছুকাল পরে তিনি মারা যান।
৪. দ্বিতীয় মুস্তাফার পদত্যাগ
হুসাইন কুপ্রিলীর মতো যোগ্য প্রশাসকের অবর্তমানে দেশ আবার বিশৃংখলার দিকে ধাবিট হয়। চারদিকে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। বিদ্রোহ দেখা দেয়। অবস্থার উন্নতি সাধনে ব্যর্থ হয়ে ১৭০৩ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় মুস্তাফা পদত্যাগ করেন।
২৩. তৃতীয় আহমাদ
১. সুলতান ও খালীফা পদে তৃতীয় আহমাদ
১৭০৩ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় মুস্তাফার ভাই তৃতীয় আহমাদ কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।
২. তৃতীয় আহমাদ যেমন ছিলেন
তৃতীয় আহমাদ একজন শান্তিকামী সুলতান ছিলেন। তবে আভ্যন্তরীন বিদ্রোহ দমনে তিনি কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করেন। তাঁর শাসনকালের প্রথম ছয়টি বছর রাষ্ট্রে শান্তি প্রতিষ্ঠিত ছিলো।
৩. রণাংগনে তৃতীয় আহমাদ
রাশিয়া কার্লোউইজ চুক্তি করে বিভিন্ন সামরিক তৎপরতা শুরু করে। ইতিমধ্যে সুইডেনের রাজা দ্বাদশ চার্লস রাশিয়ার জার পিটারের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে উসমানী খিলাফাতের আশ্রয় গ্রহন করেন। রাশিয়া সুইডেনের রাজাকে তাড়িয়ে দেয়ার জন্য তৃতীয় আহমাদের ওপর চাপ দিতে থাকে। তৃতীয় আহমাদ সুইডেনের রাজ্যহারা আশ্রিত রাজাকে তাড়িয়ে দিতে রাজি হলেন না। এতে রাশিয়া মারমুখো হয়ে ওঠে।
১৭১০ খৃষ্টাব্দে সুলতানের নির্দেশে উযীরে আযম মুহাম্মাদ পাশার সেনাপতিত্বে মুসলিম বাহিনী রাশিয়ার সৈন্যবাহিনীকে ঘিরে ফেলে। এই অবস্থায় রাণী ক্যাথরিন মূল্যবান স্বর্নালংকার প্রদান করে মুহাম্মাদ পাশাকে বশীভূত করে ফেলেন। ফলে শত্রুকে বাগে পেয়েও শায়েস্তা না করে ১৭১১ খৃষ্টাব্দে প্রুথ শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে মুহাম্মাদ পাশা ফিরে আসেন।
এই ঘটনা জনগনের মাঝে দারুণ অসন্তোষ সৃষ্টি করে। তৃতীয় আহমাদ উযীরে আযম পদ থেকে মুহাম্মাদ পাশাকে বরখাস্ত করেন।
১৭১৭ খৃষ্টাব্দে নতুন উযীরে আযম দামাদ আলী পেটারওয়ারদিন প্রান্তরে অষ্ট্রিয়া বাহিনীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন। শত্রুর গুলিতে দামাদ আলী নিহত হন। উসমানী বাহিনী পরাজয় বরণ করে।
১৭১৮ খৃষ্টাব্দে অষ্ট্রিয়া বাহিনী বেলগ্রেড দখল করে নেয়। এই যুদ্ধে নব নিযুক্ত উযীরে আযম ইবরাহীম পাশা পরিচালিত উসমানী সৈন্যগণ পরাজিত হয়।
১৭২৪ খৃষ্টাব্দে ইরানের সাভাবী শাসক শাহ তাহমাসপকে পরাজিত করে একদিকে রাশিয়া এবং অন্যদিকে উসমানী সৈন্যগন অগ্রসর হতে থাকে।
পরে রাশিয়া এবং উসমানী খিলাফাতের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী উসমানী খিলাফাত লাভ করে জর্জিয়া, ইরিভান, শিরওয়ান এবং আজারবাইজান। রাশিয়া লাভ করে দারবান্দ, বাকু এবং জিলান।
১৭২৫ খৃষ্টাব্দে উসমানী সোইন্যগণ ইরানের তাব্রিজ দখল করে।
১৭২৯ খৃষ্টাব্দে নাদির শাহ ইরানের ক্ষমতা লাভ করেন।
১৭৩০ খৃষ্টাব্দে নাদির শান উসমানী সৈন্যদেরকে হটিয়ে দিয়ে হারানো অঞ্চলগুলো পুনরুদ্ধার করেন। ইরানের নিকট পরাজিত হওয়ার খিলাফাতের সর্বত্র প্রশাসনের বিরুদ্ধে অসন্তোষ দেখা দেয়। এই অসন্তোষের সুযোগ নিয়ে জাননিসার সৈন্যদের সেনাপতি প্যাট্রোনা খলীল সুলতানের প্রাসাদ অবরোধ করে উযীরে আযম ইবরাহীম পাশাসহ অনেক ব্যক্তিকে হত্যা করে।
৪. তৃতীয় আহমাদের পদত্যাগ
১৭৩০ খৃষ্টাব্দে পরস্থিতি আয়ত্বে আনতে ব্যর্থ হয়ে তৃতীয় আহমাদ তাঁর ভাতিজা প্রথম মাহমুদের অনুকূলে পদত্যাগ করেন।
২৪. প্রথম মাহমুদ
১. সুলতান ও খালীফা পদে প্রথম মাহমুদ
১৭৩০ খৃষ্টাব্দে প্রথম মাহমুদ কনস্ট্যান্টিনোপ্লের মসনদে বসেন
২. প্রথম মাহমুদ যেমন ছিলেন
প্রথম মাহমুদ জাননিসার সেনাপতি প্যাট্রোনা খলীলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনেন।
প্রথম মাহমুদ একজন শান্তিকামী সুলতান ছিলেন। তিনি যুদ্ধের প্রতি আগ্রহী ছিলেন না। সৌভাগ্যক্রমে তিনি আগা বাশীর নামক একজন বিশ্বস্ত ও সুযোগ্য ব্যক্তির সাহায্য ও সহযোগিতা লাভ করেন।
৩. রণাংগনে প্রথম মাহমুদ
১৭২১ খৃষ্টাব্দে উসমানী সৈন্যবাহিনী ইরান আক্রমন করে হামাদান, কিরমান শাহ ও তাব্রিজ দখল করে নেয়। কিন্তু নাদির শাহের পাল্টা আক্রমনের মুখে এইসব স্থান বেশিদিন দখলে রাখা সম্ভব হয়নি।
এই দিকে রাশিয়ার জার পিটারের মৃত্যুর পর জারিনা এ্যানি রাশিয়ার সিংহাসনে বসেন। তিনি উসমানী খিলাফাত থেকে পূর্ব ইউরোপ ছিনিয়ে নিয়ে নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেবার জন্য অষ্ট্রিয়ার সাথে এক মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্স এই অঞ্চলে রাশিয়ার আধিপত্য বিস্তারের মাঝে নিজেদের ব্যবসা বাণিজ্য নষ্ট হওয়ার আশংকা দেখতে পায়। ফলে রাশিয়ার অগ্রাভিযান প্রতিহত করার জন্য এই দুইটি দেশ উসমানী খিলাফাতের পক্ষাবলম্বন করে।
এই প্রেক্ষাপটে ১৭৩৬ খৃষ্টাব্দে রাশিয়া এক অঘোষিত যুদ্ধের মাধ্যমে উসমানী খিলাফাত থেকে আজোভ এবং ক্রিমিয়া ছিনিয়ে নেয়। ১৭৩৭ খৃষ্টাব্দে রাশিয়ার মিত্র অষ্ট্রিয়া উসমানী সৈন্যদের হাত থেকে নাইস দখল করে নিয়ে বোসনিয়া-হারজেগোভিনার ওপর আক্রমন চালায়। উসমানী সৈন্যগণ এই আক্রমন প্রতিহত করতে সক্ষম হয়।
১৭৩৮ খৃষ্টাব্দে অষ্ট্রিয়া আবার হামলা চালায়। উসমানী সৈন্যদের পালটা আক্রমনে অষ্ট্রিয়া সৈন্যবাহিনী পিছু হটে বেলগ্রেড গিয়ে আশ্রয় নেয়।
১৭৩৯ খৃষ্টাব্দে ফ্রান্সের মধ্যস্ততায় উসমানী খিলাফাতের সাথে রাশিয়া এবং অষ্ট্রিয়া একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এটিকেই বলা হয় বেলগ্রেড চুক্তি। আর এটা ছিলো উসমানী খিলাফাতের জন্য সর্বশেষ সম্মানজনক চুক্তি
৪. প্রথম মাহমুদের ইন্তিকাল
১৭৫৪ খৃষ্টাব্দে প্রথম মাহমুস ইন্তিকাল করেন।
২৫. তৃতীয় উসমান
১. সুলতান ও খালীফা পদে তৃতীয় উসমান
১৭৫৪ খৃষ্টাব্দে তৃতীয় উসমান কন্সট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন।
তিনি মাত্র তিন বছর খালীফা ছিলেন। এই সময়ে কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেনি। তাঁর শাসনকালে রাষত্রে শান্তি-শৃংখলা বিরাজমান ছিলো।
২. তৃতীয় উসমানের ইন্তিকাল
১৭৫৭ খৃষ্টাব্দে তৃতীয় উসমান ইন্তিকাল করেন।