১১. দ্বিতীয় সলিম
১. সুলতান ও খালীফা পদে দ্বিতীয় সলিম
১৫৬৬ খৃষ্টাব্দে প্রথম সুলাইমানের ইন্তিকালের পর তাঁর পুত্র দ্বিতীয় সলিম কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন
২. দ্বিতীয় সলিম যেমন ছিলেন
দ্বিতীয় সলিম ছিলেন অযোগ্য ও আরামপ্রিয় ব্যক্তি। তিনি ছিলেন কাব্যরসিক। তিনি কবি-সাহিত্যিক এবং চাটুকারদের দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকতেন। প্রাসাদ অভ্যন্তরে অবস্থান করে নারীদের সাহচর্যে থাকা এবং মদ্যপান করা তাঁর প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল। কোন কোন ইতিহাসবিদ তাঁকে ‘মাতাল সেলিম’ নামে আখ্যায়িত করেন। তিনি বিলাসব্যসনে মত্ত ছিলেন। শাসনকার্যের তিনি অবহেলা প্রদর্শন করতেন। দ্বিতীয় সলিম উসমানী খিলাফাতের পতন যুগের প্রথম খালীফা।
৩. রণাংগনে দ্বিতীয় সলিম
দ্বিতীয় সলিম যুদ্ধ করার মতো ব্যক্তি ছিলেন না। তবে তাঁর উযীরে আযম মুহাম্মাদ সুকোল্লি একজন যোগ্য ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর পরিকল্পনা ও উদ্যোগে উসমানী সৈন্যরা কয়েকটি সামরিক অভিযানে বের হয়। ক্রীটস দ্বীপ জয়, আরব ও ইয়ামান পুনর্দখল এবং তিউনিসিয়া জয় দ্বিতীয় সলিমের শাসনকালের উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
১৫৭১ খৃষ্টাব্দে সেনাপতি লালা মুস্তাফা এবং বেলার বেগ ভেনিসের সেনাপতি ব্রাগাডিনোকে পরাজিত করে সাইপ্রাস জয় করেন।
১৫৭১ খৃষ্টাব্দে ভেনিসের প্ররোচনায় স্পেনরাজ, রোমের পোপ, স্যভয়ের ডিউক এবং মাল্টার নাইট মিলে অষ্ট্রিয়ার নৌ-সেনাপতি ডন জুয়ানের নেতৃত্বে লেপান্টো উপসাগরে উসমানী খিলাফাতের নৌবাহিনীর ওপর হামলা চালায়। নৌ-সেনাপতি কাপিতান পাশা নিহত হলে উসমানী বাহিনী বিশৃংখল হয়ে পড়ে এবং পরাজয় বরণ করে।
ইতিপূর্বে তিউনিস উসমানী খিলাফাতের অধীনে ছিল। লেপান্টো যুদ্ধের বিপর্যয়ের পর অষ্ট্রিয়ার নৌ-সেনাপতি ডোন জুয়ান স্পেনের সাহায্য নিয়ে তিউনিস দখল করেন। ১৫৭৪ খৃষ্টাব্দে মুসলিম নৌ-সেনাপতি উলুজ আলীর নেতৃত্বে মুসলিমগণ তিউনিস পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
৪. দ্বিতীয় সলিমের ইন্তিকাল
১৫৭৪ খৃষ্টাব্দে উসমানী সৈন্যদের দ্বারা তিউনিস পুনরুদ্ধার হওয়ার পর পরই দ্বিতীয় সলিম ইন্তিকাল করেন। তিনি আট বছর ক্ষমতায় ছিলেন
১২.তৃতীয় মুরাদ
১. সুলতান ও খালীফা পদে তৃতীয় মুরাদ
১৫৭৪ খৃষ্টাব্দে দ্বিতীয় সলিমের পুত্র তৃতীয় মুরাদ কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন। তখন তাঁর বয়স ২৮ বছর।
২. তৃতীয় মুরাদ যেমন ছিলেন
তৃতীয় মুরাদ একজন বিলাসী ব্যক্তি ছিলেন। রাষ্ট্র পরিচালনার কোন যোগ্যতাই তাঁর ছিলনা। তিনি নারী আর মদ নিয়ে প্রাসাদের অভ্যন্তরে মত্ত থাকতেন। তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠুর প্রকৃতির লোক ছিলেন। তিনি তাঁর সুযোগ্য উযীরদের ক্ষমতা হ্রাস করে খিলাফাতের বিপুল ক্ষতি সাধন করেন। তৃতীয় মুরাদের আম্মা নূর বানু এবং তাঁর ভেনিসীয় স্ত্রী সোফিয়া তাঁর ওপর প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত ছিলেন। এই প্রতিযোগিতায় শেষাবধি সোফিয়াই কৃতকার্য হন।
তৃতীয় মুরাদের শাসনকালে প্রশাসনে দুর্নীতিপরায়ণ লোকেরা জেঁকে বসে। স্বজন প্রীতি প্রাধান্য পায়। অনিয়ম সর্বত্র নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়।
৩. রণাংগনে তৃতীয় মুরাদ
তৃতীয় মুরাদের কোন সামরিক প্রতিভা ছিল না। যুদ্ধ করার মতো নৈতিক বলও ছিলনা তাঁর।
উসমানী খিলাফাতের গৌরব রক্ষার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন উসমান পাশা। ১৫৮৩ খৃষ্টাব্দে ইরানীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে তিনি বিজয়ী হন।
১৫৯০ খৃষ্টাব্দে ইরান একট শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তির শর্তানুযায়ী জর্জিয়া, তাব্রিজ, আজারবাইজান, শিরওয়ান প্রভৃতি অঞ্চল উসমানী খিলাফাতের অংশ বলে স্বীকৃতি লাভ করে।
৪. তৃতীয় মুরাদের ইন্তিকাল
১৫৯৫ খৃষ্টাব্দে তৃতীয় মুরাদ ইন্তিকাল করেন। তিনি একুশ বছর ক্ষমতায় ছিলেন।
১৩. তৃতীয় মুহাম্মাদ
১. সুলতান ও খালীফা পদে তৃতীয় মুহাম্মাদ
১৫৯৫ খৃষ্টাব্দে মুরাদের পুত্র তৃতীয় মুহাম্মাদ কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন। তিনি ছিলেন রানী সোফিয়ার গর্ভজাত সন্তান।
২. তৃতীয় মুহাম্মাদ যেমন ছিলেন
তৃতীয় মুহাম্মাদ একজন অপদার্থ সুলতান ছিলেন। ক্ষমতা নিষ্কন্টক করার জন্য তিনি তাঁর উনিশজন ভাইকে হত্যা করেন। রানী সোফিয়া তাঁর পুত্র তৃতীয় মুহাম্মাদের ওপর প্রভাবশালী ছিলেন। তৃতীয় মুহাম্মাদের স্ত্রীও তাঁর ওপর প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন। শাসনকার্যে মহিলাদের নির্দেশনা কার্যকর হতে থাকে। অপদার্ত সুলতান উযীরদের ওপর প্রশাসনের যাবতীয় কার্য ন্যস্ত করে নিজে প্রাসাদের অভ্যন্তরে নারী ও মদ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
৩. রণাংগনে তৃতীয় মুহাম্মাদ
তৃতীয় মুহাম্মাদের দুর্বলতার সুযোগে পূর্ব ইউরোপের খৃষ্টান অধিপতিগণ উসমানী খিলাফাতের ইউরোপঈয় প্রদেশগুলোর ওপর হামলা চালাতে শুরু করে।
১৫৯৬ খৃষ্টাব্দে অষ্ট্রিয়ার আর্কডিউকের নেতৃত্বে খৃষ্টানগণ সামনে এগুতে থাকে। একান্ত বাধ্য হয়ে তৃতীয় মুহাম্মাদ হাসান সুকোল্লি পাশা, ইবরাহীম পাশা এবং সিকালা পাসাকে সাথে নিয়ে সসৈন্যে ময়দানে নামেন। করেসটিস প্রান্তরে লড়াই হয়। বিপুল ক্ষয়ক্ষতির পর শেষাবধি মুসলিম বাহিনী বিজয় লাভ করে।
৪. তৃতীয় মুহাম্মাদের ইন্তিকাল
১৬০৩ খৃষ্টাব্দে তৃতীয় মুহাম্মাদ ইন্তিকাল করেন। তিনি নয় বছর ক্ষমতায় ছিলেন
১৪. প্রথম আহমাদ
১. সুলতান ও খালীফা পদে প্রথম আহমাদ
১৬০৩ খৃষ্টাব্দে তৃতীয় মুহাম্মাদের পুত্র প্রথম আহমাদ কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন। তখন তাঁর বয়স মাত্র চৌদ্দ বছর।
২. প্রথম আহমাদ যেমন ছিলেন
প্রথম আহমাদ তাঁর পূর্বসূরী দুইজন সুলতানের মতো অতো অযোগ্য ছিলেন না। বয়সে নবীন হলেও তিনি সাহসী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি প্রশাসনের ওপর মহিলাদের প্রভাব খর্ব করার পদক্ষেপ নেন।
৩. রণাংগনে প্রথম আহমাদ
১৬০৫ খৃষ্টাব্দে হাংগেরীর শত্রুতার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি সেনাপতি লালা মুহাম্মাদ পাশাকে হাংগেরীর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে প্রেরণ করেন এবং সফলতা লাভ করেন।
অতঃপর তিনি অষ্ট্রিয়ার সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন। ১৬০৬ খৃষ্টাব্দে সিটভাটোরক সন্ধি চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে যুদ্ধের অবসান ঘটে। এই সন্ধির শর্তানুযায়ী ট্রান্সিলভানিয়া উসমানী খিলাফাত থেকে স্বায়ত্বশাসন হাছিল করে। এতোকাল অষ্ট্রিয়া উসমানী খিলাফাতকে বার্ষিক ত্রিশ হাজার মুদ্রা কর দিতো। চুক্তি অনুযায়ী অষ্ট্রিয়া তা থেকে অব্যাহতি লাভ করে। তবে যুদ্ধের ক্ষতিপূরন হিসেবে এককালীন দুই লাখ মুদ্রা প্রদান করতে বাধ্য হয়।
উসমানী খিলাফাতের সাথে ইরানের সংঘর্ষ চলছিলো। ১৬১১ খৃষ্টাব্দে সুলতান প্রথম আহমাদ ইরানের শসাহ আব্বাসের সাথে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেন। চুক্তির শর্তানুযায়ী তিনি দিয়ারবেকির এবং কুর্দিস্তান ছাড়া ইরানের অন্যান্য অঞ্চল শাহ আব্বাসকে ফিরিয়ে দেন।
প্রথম আহমাদের শাসনকালে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ভেনিস এবং নেদারল্যান্ড উসমানী খিলাফাতের সাথে বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করে।
৪. প্রথম আহমাদের ইন্তিকাল
১৬১৭ খৃষ্টাব্দে প্রথম আহমাদ ইন্তিকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো উনত্রিশ বছর। তিনি ১৬ বছর খালীফা ছিলেন।
১৫. প্রথম মুস্তাফা
১. সুলতান ও খালীফা পদে প্রথম মুস্তাফা
১৬১৭ খৃষ্টাব্দে প্রথম আহমাদের ভাই প্রথম মুস্তাফা কনস্ট্যান্টিনোপলের মসনদে বসেন। মানসিক অসুস্থতার কারনে তিনি তিন মাসের মধ্যেই পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।