জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি

মুসলিম মানসে সংকট

অন্তর্গতঃ uncategorized
Share on FacebookShare on Twitter

সূচীপত্র

  1. প্রকাশকের কথা
  2. উপক্রমণিকা
  3. মুখবন্ধ
  4. মুখবন্ধ
  5. অধ্যায় এক
    1. সমসাময়িক ইসলামী আসালা : এমমাত্র সমাধান
    2. দিক নির্দেশিকা
    3. অনুসরণযোগ্য বিদেশী সমাধান
    4. সাম্প্রতিক ইতিহাসের কিছু দৃষ্টান্ত
    5. উম্মাহ ও আমদানিকৃত সমাধান
    6. উম্মাহ এবং ইতিহাস নির্ভর সমাধান
    7. সমসাময়িক ইসলামী আসালা দৃষ্টিভঙ্গি
    8. সংকটের ঐতিজাসিক উৎমূল
    9. রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্বে ভাঙ্গন
    10. সমস্যার সূল এবং উম্মাহর ভবিষ্যৎ
    11. বুদ্ধিবৃত্তিক বিচ্ছিন্নতা
  6. অধ্যায় দুই
    1. ইসলামী চিন্তাধারা পুরনো পদ্ধতি
    2. আল-উসূলঃ সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা
    3. সমাজ বিজ্ঞানের অবহেলা
    4. ওহী ও যুক্তির দ্বন্দ্ব
    5. আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক উত্তরাধিকার : অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ
  7. অধ্যায় তিন
    1. ইসলামী চিন্তাধারারয় পদ্ধতিবিজ্ঞানের নীতিমালা
    2. ইসলামী চিন্তাধারার পদ্ধতিগত কাঠামো
    3. ইসলামী পদ্ধতিবজ্ঞানের ‍উৎসসমূহ
    4. প্রত্যাদেশ, যুক্তি ও মহাবিশ্ব
  8. যুক্তি
    1. ইসলামী পদ্ধতিবিজ্ঞঅন ও চিন্তাধারার মূলনীতিসমূহ
    2. সাফল্যের ধারণা
    3. বিশ্বাসের স্বাধীনতা
    4. সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা, স্বাধীন ইচ্ছা ও দায়িত্ব
    5. চিন্তার স্বাধীনতা
    6. তাওয়াক্কুল নীতি
    7. মানব প্রকৃতির কার্যকারণ সম্বন্ধ
    8. ইসলামী পদ্ধতিবিজ্ঞান : উপায় ও প্রয়োগ
    9. শেষ কথা
  9. অধ্যায়ঃ চার
    1. ইসলামী সভ্যতাবিষয়ক বিজ্ঞান
    2. ইসলামী মূল পাঠগুলোর শ্রেণী বিভাজন
    3. একটি ব্যাপক সভ্যতামুখী দৃষ্টিভঙ্গি
    4. সমাজ বিজ্ঞানের সূত্রসমূহ
    5. অস্তিত্বের উদ্দেশ্য এবং বিশ্বে নিয়ম শৃঙ্খলার করণ
  10. অধ্যায় পাঁচ
    1. সমাজ বিজ্ঞানের সূত্রসমূহ
    2. ইসলামীকরণ ও শিক্ষাবিজ্ঞান
    3. ইসলামিকরণ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান
    4. ইসলামিকরণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  11. অধ্যায় ছয়
    1. ইসলাম ও ভবিষ্যৎ
    2. উম্মাহর চরিত্রের ভবিষ্যৎ
    3. ইসলামিকরণ ও একাডেমিক প্রতিষ্ঠানসমূহ
    4. মানবাজতির ভবিষ্যৎ পথ
    5. ইসলামী ঐক্যের সমাজ
    6. ইসলামে জ্ঞান চর্চা
    7. ইসলামিকরণ : উম্মাহর বিচার্য বিষয়
    8. পরিশেষ

অধ্যায়ঃ চার

ইসলামী সভ্যতাবিষয়ক বিজ্ঞান

প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয় উপাদানসমূহ

এ অধ্যায়ে আমরা ইসলামী সভ্যতার সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠার জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, পদক্ষেপ ও স্তরগুলো আলোচনা করবো। আমরা যখন এখানে বিভিন্ন বিজ্ঞান সম্বন্ধে কথা বলি তখন আমরা সব মানবীয় জ্ঞান ও শিক্ষার কথা বলি। এর মধ্যে রয়েছে ঐসব বিজ্ঞান যেগুলোর সাথে মানব সমাজের সম্পর্ক রয়েছে অর্থাৎ সমাজ বিজ্ঞান, প্রযুক্তি বিজ্ঞান, প্রকৃতি বিজ্ঞান ও ফলিত বিজ্ঞান।
এর আগে এ পুস্তেকে উল্লেখ করা হয় যে, সনাতন ইসলামী উসূলে ফিকহ শাস্ত্রে জীবনের বিভিন্ন দিক থেকে গভীর অনুসন্ধানের ভিত্তি মজবুত রয়েছে। প্রাথমিক যুগের এসব ভিত্তির মধ্যে সমাজ সম্পর্কে তাত্ত্বিক অনুসন্ধানের পূর্বাভাসেও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। দুর্ভাগ্যক্রমে প্রাচীন উসূলে ফিকহ অধ্যয়নে ইজতিহাদ সম্পর্কিত সাধারণ নীতিগুলোকে কখনো গুরুত্বের সাথে বিকাশের সুযোগ দেয়া হয়নি। শরিয়তের দৃষ্টিভঙ্গিতে মানব জাতির বিভিন্ন বিষয় ও শর্তাবলী সম্পর্কে যৌক্তিক অনুসন্ধানের ক্ষেত্রেও এটি সত্য ছিল। প্রাথমিক ইঙ্গিত বা প্রতিশ্রুতিগুলোর কোনটি পদ্ধতিবিজ্ঞানের ভিত্তি হিসাবে বাস্তবায়িত হয়নি অথবা স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত জ্ঞান বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাস্ত্র হিসাবে গড়ে উঠেনি; যে সব শাস্ত্র জীবনের বিভিন্ন বিষয় অনুসন্ধানে যুক্তিকে ব্যবহার করতে পারত, বিশেষ করে সমাজ বিদ্যার ক্ষেত্রে। তাহলে এটা স্পষ্ট যে, প্রাচীন ফিকহ শাস্ত্রের আইন সংক্রান্ত রুলিং বা রায়ের সংকলনের উপর নির্ভর করার পেছনে কোনো যুক্তি নেই, অথবা বিভিন্ন সমাধান ও বিকল্পের বুদ্ধিবৃত্তিক ও তাত্ত্বিক ভিত্তি হিসাবে এমনকি তার সাধারন নীতিগুলোর উপর নির্ভর করার পক্ষে কোনো যুক্তি নেই। কারণ, যে শিক্ষা মুসলিম মনকে কোনো কিছুর সূচনা বা নবায়ন করার সামর্থ্য বা ক্ষমতা দেয়নি অথবা মুসলিম মনকে সে যৌক্তিক ও বুদ্ধিভিত্ত্বিক হাতিয়ার উপহার দেয়নি যা দিয়ে সমাজ জীবনের বাস্তবতা ও দায়িত্বের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করা যায়। সমাজ বিজ্ঞান, সাহিত্য, কলা, দর্শন এবং প্রকৃতি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জন্য ইসলামী পদ্ধতিবিজ্ঞানে নতুন ভিত্তি খুঁজে পাওয়ার জন্য পূর্বোল্লিখিত পয়োজনের উপর গুরুত্বরোপ করার জন্য এ বিষয়টি বিকৃত করা হলো। এ পথে ওহী থেকে প্রাপ্ত বিজ্ঞান এসব বিজ্ঞানের পরিপূরক হবে এবং মানব জতিকে একদিকে ওহী নির্দেশিত জ্ঞান দান করবে, অপরদিকে তাদের জ্ঞান, মনন এবং প্রাকৃতিক আইন উপহার দেবে। এ অধ্যয়নে আমরা ইসলামী চিন্তাধারার সমাজ বিজ্ঞানের জন্য উপাদানের বাস্তব উত্সর অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠার পথে কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রচেষ্টা চালাবো। এছাড়া আমরা এসব বিজ্ঞানের ইসলামীকরণের জন্যে একটি প্রাথমিক কাজের পরিকল্পনার বিষয়বস্তুর গবেষণা করব।

ইসলামী মূল পাঠগুলোর শ্রেণী বিভাজন

কালামে ওহী সহজে অধিগত করা ছাড়া জ্ঞানের ইসলামীকরণ অথবা সমাজ বিজ্ঞানের ইসলামীকরণ অকল্পনীয় বা ধারণাতীত। এ ধরণের অধিগত করার ক্ষমতা সঠিক ও সহজ হওয়া প্রয়োজন যাতে যে কোনো মুসলিম পন্ডিত এটি কাজে লাগাতে পারে। ইতোপূর্বে এটিও ব্যাখ্যা করা হয়েছিল কালামে ওহীর উপলব্ধির জন্য। বিভিন্ন বিষয়ের পুনর্বিন্যাসই শুধু পয়োজন নয় সাথে সাথে সেগুলোকে সকল দুর্বোধ্যতা বা অস্পষ্টতা থেকে মুক্তি করতে হবে।
কিন্তু ওহীর মূল পাঠের শ্রেণী বিভাজন বিশেষ করে সুন্নাহের পাঠকেও বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করে সেগুলোকে সংশ্লিষ্ট পদ্ধতিবিজ্ঞান হিসেবে নতুনভাবে উপস্থাপন করতে হবে। যাতে মুসলিম পন্ডিত ও শিক্ষিত সম্প্রদায় সুন্নাহ অধ্যয়নের পরিভাষাগত ও তাত্ত্বিক সূক্ষ্মতার যে ঐতিহাসিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে তার এড়িয়ে যেতে পারে। একমাত্র এ পথেই পন্ডিত ও একাধিক বিষয়ে পারঙ্গম ব্যক্তিরা সুন্নাহের মূল পাঠে সে বিষয় সম্পদ রয়েছে তা থেকে উপকৃত হতে পারবে।
মূল পাঠের সঠিক উপলব্ধি ও যথাযথ প্রয়োগের জন্য সেগুলোর শব্দার্থ সংক্রান্ত ও ইতিহাস নির্ভর অধ্যয়ন শুরু করতে হবে যাতে প্রত্যেকটির মূল পাঠ তার নিজ নিজ বর্ণনার বিষয়ে স্থাপন করা যায়। একমাত্র এ পথেই একজন ছাত্র বা গবেষক মূল পাঠের উচ্চতর উদ্দেশ্যে, মূল পাঠের অন্তর্নিহিত নীতি এবং মৌলিক ধারণা পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারবে। ওহী নাজিলের সময় ও স্থানের বিরাজমান পরিস্থিতির প্রভাব অপসৃত না হওয়া পর্যন্ত অথবা সুন্নহের ক্ষেত্রে স্পষ্টভাবে উচ্চারিত কথা ছাড়া ওহীর অর্থাৎ আল-কুরআন ও সুন্নাহের সঠিক ব্যাখ্যা অসম্ভব। এ ধরণের প্রাতিষ্ঠানিক প্রস্তুতির ফলে আল-কুরআন ও সুন্নাহর মূল পাঠগুলো দ্ব্যর্থহীন তাত্পর্যের জীবন্ত উপস্থাপনা হতে পারে। সমভাবে এটি গুরুত্বপূর্ণ যে, একাডেমির মূল কাজটি সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে। যাতে আল-কুরআন ও সুন্নাহর টিকা বা ব্যাখ্যাকে কেউ কুরআনের আয়াত ও রাসূলুল্লাহর পবিত্র সুন্নাহ বলে ভুল না করে। যেন কেউ পুরোপুরি নিশ্চিতরূপে প্রামাণ্য নয় এমন সব বিষয় কে অভ্যান্তরূপে প্রামাণ্য বিষয়ের সঙ্গে তালগোল পাকিয়ে না ফেলে। এভাবে প্রতিষ্ঠিত প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতিবিজ্ঞানের সাহায্যে প্রতিটি আয়াত বা মূল পাঠের (text) অর্থ ও বর্ণনা সুস্পষ্ট হয়ে উঠে। অধিকন্তু, কালামে ওহীর যে সব মূল পাঠের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা সম্ভব নয় সেগুলো রাসূলুল্লাহ (সা) এর জীবন চরিত্র, ইসলামের প্রাথমিক যুগের ইতিহাসে এবং ইসলামের সাধারণ নীতি ও উচ্চতর লক্ষ্যের বৃহত্তর পরিপ্রেক্ষিতে উপলব্ধির জন্য ছেড়ে দিতে হবে।
অধিকন্তু, এটি অত্যাবশ্যক যে সুশৃঙ্খল রীতিতে সংকলিত ও প্রামান্য এসব মূল পাঠগুলো নির্ভরযোগ্য বিদ্যাপীঠ, গবেষণা প্রতিষ্ঠান অথবা যোগ্য ও বিশ্বস্ত পন্ডিতদের কাছে থেকেই আসতে হবে। পন্ডিত ও গবেষকদের জন্য এসন মুলপাঠ অধ্যয়ন ও সংকলনের ক্ষেত্রে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে তারপর সেগুলো গঠনমূলক ভঙ্গিতে বিচার এবং সমালোচনা করাও প্রয়োজন। সমভাবে মুসলিম পন্ডিত সমাজে এ কাজ যাতে সম্পন্ন হয় তা নিশ্চিত করাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এই পথেই তারা ইসলামী চিন্তাধারা বিরাট খেদমত করতে পারবে। এটিও অত্যাবশ্যক যে, ওহীর মূল পাঠগুলোকে সংগ্রহ ও শ্রেণী বিভাজনের জন্য আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। প্রাচীন সাহিত্যের প্রধান রচনাগুলোর বিষয়গুসমূহের সূচিপত্র তৈরীর জন্য আরেকটি প্রকল্প হাতে নিতে হবে। এর ফলে মুসলমানরা তাদের পুর্বপুরুষের সাহিত্যকর্ম ও অভিজ্ঞতার সঙ্গে পরিচিত হতে পারবে এবং তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রমের ফল থেকে উপকৃত হতে পারবে। বর্তমানে “ইন্টারন্যশনাল ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থ্যট“ এ বিষয়টিকে একটি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয় হিসেবে বিবেচনা করছে এবং বিষয়টিকে এগিয়ে নেয়ার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। আশা করা যায় এ দায়িত্ব ও কর্মভারের সফল পরিসমাপ্তির জন্য সকল মুসলিম ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সংগঠন এবং একাডেমিক বিশেষজ্ঞগণ একসাথে কাজ করবেন।

একটি ব্যাপক সভ্যতামুখী দৃষ্টিভঙ্গি

সমাজ বিজ্ঞানে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা কাঁধে নেয়ার প্রস্তুতি পর্বে মুসলমানদের উপলব্ধি করা উচিত যে, তারা একেবারে সহায়সম্বলহীনভাবে এ কাজ শুরু করছে না বরং বলা যায় অপরপক্ষে মুসলমানরা সভ্যতার ইতিহাসে মূল্যবান আবদান রেখেছেন। তা সত্ত্বেও যেহেতু অন্যান্য জাতি বা সম্প্রদায় এ ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতিসাধন করেছে, সেহেতু মুসলমানরা আধুনিক বিশ্বের সভ্যতায় বিশিষ্ট স্থান অধিকার করার জন্য যে দৌড় প্রতিযোগিতা চলছে তাকে ইসলামের প্রতি চ্যালেঞ্জ হিসাবে গন্য করতে শুরু করেছে।
এ চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পর থেকে মুসলমানরা এ ক্ষেত্রে অন্যরা কি করছে সে সম্পর্কে জানতে শুরু করেছে। অধিকন্তু, তারা যা কিছু হারিয়েছে তা ফিরে পাওয়ার জন্যে অন্যদের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেছে। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এ ক্ষেত্রে তেমন বড় কিছু অর্জিত হয়নি এবং এ জন্য এতে তাদের অর্থব্যয় ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
এটি সুস্পষ্ট যে, ভিন্ন সম্প্রদায়সমূহের বিজ্ঞান ও সাহিত্য অনুবাদে বৃহত্তর প্রচষ্টা অথবা ভিন্ন সম্প্রদায়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ধিত হারে ছাত্র প্রেরণের দ্বারা এ দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির পরিবর্তন করা যাবেনা। অধিকন্তু, এ দু:খজনক পরিস্থিতির পেছনের কারণগুলো খুঁজে পাওয়া যাবে মুসলমানদের অনুকরণপ্রিয়তার মানসিকতার মধ্যে, শুধু তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণের পদ্ধতিবিজ্ঞানের মধ্যে এবং তার ধর্মীয় উত্সাহ-উদ্দীপনা এবং মনস্তাত্ত্বিক আত্মসম্মানবোধ হারিয়ে ফেলার মধ্যে। এটিও লক্ষ্য করার বিষয় যে, ইসলামী ও পাশ্চাত্য চিন্তাধারার মধ্যে সুষ্ঠু সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন মুসলিম মন ও মুসলিম সম্পর্কে ব্যাপক পড়াশোনার ব্যবস্থা। এসব অধ্যয়ন কেন্দীভূত হওয়া উচিত সমসাময়িক চিন্তাধারা ও সভ্যতা তাদের ইতিহাস, মূল্যবোধ, উদ্দেশ্য এবং তাদের পরিপূরক সম্পর্ক ও সম্বন্ধের উপর। এ পথেই আমাদের বুদ্ধিজীবীরা নিজেদের পশ্চিমা চিন্তাধারার সমুদ্রে নিমজ্জিত হতে বা মিশে যাওয়ার হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারেন। এভাবেই তারা সে চিন্তাধারার বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে স্বাধীনভাবে চিন্তাভাবনা করতে পারবেন বা সে পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের অবস্থান নির্ণয় করতে পারবেন। এর ফলশ্রুতিতে ইসলামী চিন্তধারা নিজের ভিত্তি বা বৈশিষ্ট্যসমূহ বিসর্জন না দিয়ে অন্যান্য জাতির অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হতে পারবে।
অন্যদের চিন্তাধারা ও সংস্কৃতির দ্বারা আচ্ছন্ন হয়ে যাওয়া আর তাদের চিন্তাধারা ও সংস্কৃতির মধ্যে যা কিছু সত্যিকারভাবে কল্যাণকর তা বাছাই করে গ্রহণ করা এ দুয়ের মধ্যে যে পার্থক্য আছে তা উপলব্ধি করাও গুরুত্বপূর্ণ। মনোযোগ সহকারে সযত্নে যখন কোনো কিছু বাছাই করা হয় তখন ঈমান, পরিচিতি, অভীলিপ্সা এবং নীতির প্রশ্নে কোনো দরকষাকষি করা যায় না এবং তাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা যায় না। বরং তখন বিষয়টি হচ্ছে সবচেয়ে কল্যাণকর উপায় বা মাধ্যমটিকে বেছে নিয়ে উম্মাহর জন্য সবচেয়ে লাভজনকভাবে ব্যবহার করা। অপর থেকে এভাবে গ্রহণ করাকে গভীর ভাবনাচিন্তার ফসল ও সুশৃঙ্খল বিরাট সাফল্য অর্জন বলে আখ্যায়িত করা যায়। বিভিন্ন সভ্যতার মধ্যে পারস্পারিক চিন্তাধারার সফল বিনিময়ের ভিত্তিও এটিই। রাসূল (সা) আহলে কিতাবদের সঙ্গে ব্যবহারকালে এ কৌশল কাজে লাগিয়েছিলেন। তিনি তাঁর সাহাবাদের এবং মুসলিম সমাজকে একই পদ্ধতি অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। পাশ্চাত্য জগৎ তার স্বর্ণযুগে ইসলাম ও ইসলামী সভ্যতার মোকাবিলায় এ পদ্ধতি ব্যবহার করে। মুসলিম জগৎ থেকে তারা যা কিছু ধার করেছিল তা তাদের পৃথক পরিচিতি, বিশ্বাস অথবা মৌলিক জ্ঞানকে পরিবর্তন করেনি। এর সম্পূর্ণ বিপরীতে পাশ্চাত্য জগৎ ধর্মীয় বা মতবাদ সব ধরণের ইসলামী প্রভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে এবং এ উদ্দেশ্য সম্ভাব্য সব ধরণের প্রচারনা ও সেন্সরশিপকে ব্যবহার করেছে। উদাহরণ স্বরূপ প্রায়ই তারা ইসলামী নবী এবং বিশিষ্ট মুসলিম ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও মনগড়া অপপ্রচার চালিয়েছে।
এ কারণে পরস্পর বিরোধী যে কোনো ধরনের সাংস্কৃতিক বিনিময়ের জন্য সমসাময়িক সমাজ সম্পর্কে সুষ্ঠ ও ব্যাপক উপলব্ধি ও জ্ঞান থাকা অত্যাবশ্যক। বাস্তবিকই এ ধরনের উপলব্ধি ও জ্ঞান থাকলে অন্যের জ্ঞান ও প্রযুক্তি থেকে উপকৃত হওয়া সম্ভভ হয়। অথচ এ কারণে কোনো ব্যক্তিকে তার মূল্যবোধ, নীতি, পরিচিতি এবং বিশ্বাসকে বিসর্জন দিতে হয় না। সুতরাং পারস্পরিক আদান-প্রদান বা বিনিময়কে অনুকরণপ্রিয়তার সাথে যাতে গুলিয়ে ফেলা না হয়, সেদিকে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। একে অপর থেকে ধার নেয়া বা বিনিময় করার কাজটি দু‘পক্ষের সমতার ভিত্তিতে হতে হবে- একজন নেতা, অপরপক্ষ তার অনুসারী, এ ভিত্তিতে নয়।
International Institute of Islamic thought এ মিশন নিয়ে এগিয়ে চলেছে। শুধু অনুবাদ নয় বরং মুসলমানদেরকে পাশ্চাত্যের সমাজ বিজ্ঞান এবং সভ্যতা সম্পর্কে ব্যাপক অধ্যয়নের ব্যবস্থা করে ইনস্টিটিউট মুসলিম মন যাতে পাশ্চাত্য সভ্যতা সম্পর্কে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে পারে সে লক্ষ্যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পাশ্চাত্য সভ্যতার সূচনা, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, ঐতিহাসিক অগ্রগতি ও সাফল্য এবং শক্তি দুর্বলতা সম্পর্কে একটি ব্যাপক রচনা প্রকাশ করার জন্য ইনস্টটিউট আশা রাখে। এ ধরণের একটি পুস্তক সমসাময়িক ইসলামী চিন্তাধারায় দীর্ঘদিন ধরে বিরাজমান শূন্যতা পূরণ করবে। প্রকৃতপক্ষে এ গুরুত্বপূর্ন প্রকল্পকে সফল করে তোলার জন্য ইনস্টিটিউট মুসলিম পন্ডিত ও চিন্তাবিদদের সহযোগিতাকে স্বাগত জানায়।

সমাজ বিজ্ঞানের সূত্রসমূহ

সমাজ বিজ্ঞান ও কলার উদ্দেশ্য হচ্ছে তিনটি ক্ষেত্রে সুশৃঙ্খল অনুসন্ধান করা:
১. প্রাণী ও মহাবিশ্বের প্রকৃতি ও সম্পর্ক
২. সমাজের বাস্তবতা, সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জসমূহ
৩. সমাজ জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় পদ্ধতি, ধারণা, নীতি ও বিকল্পসমূহ।
এসব কিছু করার পর ইসলাম সুস্পষ্টভাবে যে ওহীর কথা বলেছে তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যর সাথে সমাজ বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ বিষয়ের সম্পর্ক কি?
এ সম্পর্ক সৃষ্টি করার উপায় হচ্ছে সমাজ বিজ্ঞানের সূত্রগুলোর পাশাপাশি ইসলামের মূলনীতির সূত্রগুলোর শ্রেণীভাগ করা, যাতে তাদের কাঠামোর রূপরেখার সংজ্ঞা নির্ণয় করা যায় এবং তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সুস্পষ্ট করে তোলা যায়। তা করা না হলে এর যে অধ্যয়ন বা পঠন পাঠন হবে তার মধ্যে পরিসংখ্যা এবং নিশ্লেষণ ছাড়া আর বেশি কিছু থাকবে না। এসব কিছুই ইসলাম ও ওহী ছাড়া ভিন্ন উত্স থেকে তাদের অনুপ্রেরণা লাভ করবে।
সমাজ বিজ্ঞানীর জন্য দু‘ধরনের ইসলামী সূত্র রয়েছে। প্রথমে রয়েছে সাধারণ সূত্র, ইসলামের সাধারণ নীতির সঙ্গে এগুলো সংশ্লিষ্ট। এ সূত্রগুলো ইসলামী পদ্ধতি এবং ইসলামী ব্যক্তিত্বের জীবনে প্রধান প্রধান মূল্যবোধ ও অগ্রাধিকারসমূহের সংজ্ঞা নির্দেশ করে। দ্বিতীয় সূত্রগুলো অতি গুরুত্বপূর্ণ, একাডেমিক কাজ এর মধ্যে রয়েছে।
১. সমাজ বিজ্ঞান সমূহ, প্রত্যেক বিজ্ঞান ও শিক্ষার সূত্র ও ভিত্তি;
২. প্রত্যেক শিক্ষার প্রকৃতি, বাস্তবতা, সম্ভাবনা, শক্তি ও সম্পর্ক;
৩. প্রত্যেক শিক্ষার লক্ষ্য-উদ্যেশ্য, মূল্যবোধ, প্রশিক্ষণ এবং ইসলামী পদ্ধতি বিজ্ঞানের নির্দেশনা;
৪. বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সমাজের উপর প্রভাব বিস্তারকারী লক্ষ্য উদ্দেশ্য এবং অনৈসলামী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পৃথকভাবে সে জ্ঞানের ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গিকে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরার জন্য জ্ঞানের বৈশিষ্ট্যসমূহ ও প্রধান প্রধান বিষয়গুলি।
৫. যদিও এ সূত্রগুলো কালামে ওহী থেকে খুঁজে বের করা যাবে তা সত্বেও এগুলো হবে ইজতিহাদের মাধ্যমে প্রাপ্তসূত্র এবং এভাবে এসব সূত্র যৌক্তিক অনুসন্ধানে স্থলাভিষিক্ত হবে এবং বিভিন্ন সভ্যতার চ্যালেঞ্জের প্রতি ইসলামের জবাব হিসেবে কাজ করবে। এভাবে এগুলো অবাধ ও সৃজনশীল ইসলামী চিন্তাধারার উদাহরণের প্রতীক হয়ে উঠবে। অবাধ ও সৃজনশীল ইসলামী চিন্তাধারা আলোচনা-সমলোচনা ও সংশোধনের জন্য উন্মুক্ত। এটি নি:সন্দেহ যে, ইসলামী অবদান ক্রমান্বয়ে জোরদার হওয়ার সাথে সাথে এসব সূত্রগুলো পাকাপোক্ত হবে এবং জ্ঞানের প্রধান স্রোতধারায় মিশে যাবে। এ পদ্ধতিতে সমাজ বিজ্ঞানে এবং জ্ঞানের সকল শাখায় ইসলামী অবদান বাড়বে। অনুরূপভাবে এসব বিষয়ের ইসলামী ব্যবহার তার দৃষ্টিভঙ্গি ও অবদান অনুসারে সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে। এটি উপলব্ধি করা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, মুসলমানদেরকে ইসলামী চিন্তাধরায় অবশ্যই সভ্যতার অনুকূল ও পদ্ধতিগত প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে হবে এবং এভাবে ইসলামী চিন্তধারাকে তার খুঁটিনাটি বিষয় ও তাত্বিক বেড়াজাল থেকে এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সংগ্রামের ফলে সৃষ্ট প্রভাব থেকে মুক্ত করতে হবে। মুসলমানদের অবশ্যেই তাদের চিন্তাধারার জন্য একটি নিখুঁত ও সর্বাত্মক পদ্ধতিবিজ্ঞান সৃষ্টি করতে হবে যাতে তারা পুনরায় ইজতিহাদের দরজা খুলতে পারে এবং তাকলিদের সৃষ্ট মানসিকতা কাটিয়ে উঠতে পারে। মুসলিম জাতি এসব উদ্যোগ বা কাজে সফল হতে না পারলে উম্মাহর বর্তমান শোচনীয় অবস্থার কোন পরিবর্তন হবে না। অধিকন্তু পূর্বের মতোই সমসাময়িক যুগের ইসলামী আন্দোলন ও সংস্থাসমূহের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাবে।
সমসাময়িক যুগে মরুভুমির দেশগুলোতে যেসব ইসলামী আন্দোলন সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলো সম্পর্কে অধ্যয়নের ফলে এটি সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে যে, প্রাথমিক স্তরে তাদের সাফল্যের কারণ ছিল, তারা এমন এক পরিবেশে আন্দোলন শুরু করেছিলেন, যার সঙ্গে রাসূল (সা) সময়কালের বহুলাংশে সাদৃশ্য ছিল। এটি স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, যেসব ইসলামী আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য দীন অনুকরণ ও খুঁটিনাটি ব্যাপারে মনোযোগ নিবন্ধকরণ এবং যেসব আন্দোলন ইসলামী, তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সভ্যতার বুনিয়াদেগুলোর শুধু ইতিহাসগত ও বর্ণনামূলক উপলব্ধি সুদূর মরুভূমির বাইরে সেগুলো কখনো বেগবান হবে না, এমনকি ওসব আন্দোলনের মধ্যে কয়েকটি স্থানীয় বা জাতীয় পর্যায়ে ক্ষমতায় যেতে সফল হলেও সামগ্রিকভাবে আন্দোলনসমূহের ব্যর্থতা অনিবার্য ছিল। কারণ আধুনিক সমাজের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তারা সম্পূর্ন অপ্রস্তুত ছিল। এসবে তারা সামরিক বা রাজনৈতিক ক্ষতি স্বীকারের আগেই চিন্তাধারা ও সংস্কৃতির রণক্ষেত্রে পরাজিত হয়েছিল।
এভাবেই একের পর এক ইসলামী আন্দোলন আবির্ভূত হয়েছে। প্রতিটি আন্দোলনই কালক্রমে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে এ কারণে যে, তারা সংস্কৃতি ও মনের দিক থেকে ছিল অযোগ্য। ফলে তারা মুসলীম সমাজে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করতে পারেনি। সমাজকে নব রূপ দান বা এর সংস্কর করতে পারেনি এমনকি মুসলিম সমাজের অস্তিত্বের প্রতি হুমকি সৃষ্টিকারী বিভিন্ন অপশক্তির হাত থেকে তাকে রক্ষাও করতে পারেনি। সম্ভবত তাদের নেতাদের (অর্থাৎ লিবিয়ার আল-সানৌসী, সুদানের আল-মাহদী, ভারতের শাহ ওয়ালী উল্লাহ এবং আরবের মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহাব) সম্পর্কে গবেষনা করলে এ বিশ্লেষণের উপর আরো আলোকপাত করা যাবে।
আধুনিক মুসলিম বিশ্বে ইসলামী আন্দোলনকে সফল হতে হলে তাকে প্রথমে ইসলামী চিন্তাধারার পদ্ধতি-বিজ্ঞান এবং সাধারণভাবে সভ্যতার প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গির সংস্কারের প্রচেষ্টা চালাতে হবে। একমাত্র এ পথেই উম্মাহর উদ্যেগ প্রচেষ্টা এবং জিহাদ আবেগময় ও ভাবাবেগপূর্ণ আবেদনের ছাপিয়ে উঠতে পারবে। কারণ এসব আবেদন আধুনিক চ্যালেঞ্জসমূহের মোকাবিলা করা, উম্মাহর পরিচিতি ও ব্যক্তিত্বকে সুস্পষ্টরূপে প্রতিভাত করা অথবা ইসলামী ধাঁচের দৃষ্টিভঙ্গি ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনরায় ঢেলে সাজানোর জন্য প্রয়োজনীয় চিন্তাধারা ও সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনার জন্য কিছুই করেনা।
পদ্ধতিবিজ্ঞানে পরিবর্তন সাধন করা না হলে, কোনো গঠনমূলক প্রচেষ্টা চালানো যাবে না এবং কোনো উদ্যোগই কিছু বয়ে আনবে না। আসলে এসব প্রচেষ্টাকে মূল্যবান সম্পদ নি:শেষিত করার প্রতীক বলা যেতে পারে। অপরদিকে উম্মাহ এবং বিশ্বের অন্যান্য জাতির মধ্যেকার ব্যবধান আরো বাড়তে থাকে। উম্মাহ দেখতে থাকে তার ভূখন্ড ক্রমাগত অন্যের দখলে চলে যাচ্ছে, সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে, তার প্রতি আনুগত্য হারিয়ে যাচ্ছে এবং তার উপর ক্রমবর্ধমান হারে দুর্যোগ নেমে আসছে। যতদিন এবং যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার সম্মুখের সমস্যাগুলোর প্রতি সম্যকভাবে মনোযোগ নিবদ্ধ না করে ততদিন তার অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না।
মুসলিম চিন্তধারা এবং পদ্ধতিবিজ্ঞান সংস্কারের গুরুত্ব এখন সবার কাছে সুস্পষ্ট হয়ে যাওয়া উচিত। একই সাথে এটিই উপলব্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ যে, আমাদের ধর্মের মূল্যবান সম্পদ, আমাদের ইতিহাস, আমাদের দেশ ও রাজ্যসমূহ আমাদের কাছে থাকা সত্ত্বেও যতদিন পর্যন্ত আমাদের চিন্তধারা, আমাদের মনস্তাত্ত্বিক গঠন এবং আমাদের সংস্কৃতি বিকৃত ও পঙ্গু অবস্থায় ততদিন আমাদের কষ্ট ও দুর্দশা বাড়তে থাকবে এবং আমাদের আরো বুঝতে হবে যে, সময় আমাদের পক্ষে নয়।
সমালোচনার শানিতে দৃষ্টিতে আমাদেরকে নিজেদের দিকে তাকাতে হবে এবং নিজেদের ত্রুটি বিচ্যুতির সম্মুখীন হতে হবে। এটিা আমাদের দায়িত্ব। এটা সহজ নয় বরং তিক্ত ও বেদনাদায়ক কাজ। সে যা হোক, আমরা যদি নিজেদের কাছে সৎ থাকতে চাই, আবেগ প্রবণতা কাটিয়ে উঠতে চাই, আমাদের সামর্থ্য, সাংস্কৃতিক গুণাবলী ও নিজেদের সম্পর্কে ফলানো ফাঁপানো ধারণা একপাশে সরিয়ে রাখতে চাই, তাহলে এমন উদ্যোগ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। সুধু এটা যদি আমরা করি তাহলে আমরা অতীতের শিক্ষা থেকে উপকৃতি হতে পারবো এবং ভবিষ্যতের জন্য সেগুলো কাজে লাগাতে পারবো।
ইসলামী পদ্ধতিবিজ্ঞান সম্পর্কে আমাদের কর্মসূচি সম্প্রসারিত করতে হবে। এখন আমরা যদি সভ্যতার সমসাময়িক প্রেক্ষিত থেকে ইসলামী প্রেক্ষিতকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করতে পারি, এমন কিছু সুত্র নিয়ে আলোচনা করতে পারি, তাহলে সেটাই হবে সঠিক কাজ। বাস্তবিকই এসব সূত্রর ভিত্তিতে আমরা আশা করতে পারি যে, এক সময় উম্মাহ মানব জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক অবদান রাখতে পারবে। মানব প্রকৃতি সম্পর্কিত ইসলামী ধারণা এবং ফিতরাত ইসলামী প্রেক্ষিতের অন্তর্ভুক্ত থাকায় এটি পূর্ণাঙ্গ হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে সমাজ বিজ্ঞান ও কলাশাস্ত্র (Arts) অধ্যয়ণ, গবেষণা, বিশ্লেষণের জন্য একটি সঠিক ও অনন্য ভিত্তি প্রদান করা ছাড়াও মানবতার জন্য ইতিবাচক অবদান রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়। এসব সূত্র আলোচনাকালে আমরা নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর উপর আলোচনা কেন্দীভূত রাখবো।
ইসলামে মানব অস্তিত্বের বহুমাত্রিকতা একটি সামষ্টিক এককত্ব ও একটি ব্যাপক ভিত্তিক বহুত্ব,
অস্তিতের উদ্দেশ্য এবং মহাবিশ্বে শৃঙ্খলার পেছনে যুক্তি,
সত্যের নিরপেক্ষতা এবং মানব প্রকৃতি ও সামাজিক সম্পর্কের বাস্তবতা।
ইসলামে মানব অস্তিত্বের বহুমাত্রিকতা সামষ্টিক এককত্ব ও একটি ব্যাপক ভিত্তিক বহুত্ব:
ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মানব অস্তিত্ব একটি একীভূত মানবিক এককত্বের আওতায় অস্তিত্বের বহুমাত্রিকতার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। এটি আচার-আচরণ, মানব প্রকৃতি এবং বিশেষভাবে মুসলিম সত্ত্বার অধ্যয়নে সুদূরপ্রসারী ফলাফল বয়ে আনবে।
বিভিন্ন ধর্ম ও আদর্শগুলো মানব অস্তিত্বের মাত্র একটি দিকে সীমাবদ্ধ। এভাবে জীবনের অন্য সব দিকগুলোকে অবহেলা করা হয়। সুতরাং এসব ধর্ম ও আদর্শগুলোর সাফল্য ও কৃতিত্ব সত্ত্বেও তাদের অনুসারীরা ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে বিভ্রান্ত থাকে এবং অন্ধত্বের শিকার হয়। ব্যক্তি পর্যায়ে পাশ্চত্য বস্তুবাদ ইন্দ্রীয় আনন্দ ও আকাঙ্ক্ষার উপর তার মনোযোগ নিবন্ধ রাখে। তারপর দৈহিক আরাম-আয়েশ ও কামনা-বাসনার ক্ষেত্রে পাশ্চাত্য সভ্যতার এত কিছু অর্জন সত্ত্বেও ব্যক্তি মনস্তাত্বিক ব্যাধির শিকার হয়েছে এবং এসব ব্যাধির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সমাজের ওপর এবং এ ব্যাধি ক্রমেই বাড়ছে এবং জটিল আকার ধারণ করছে।
একইভাবে বস্তুবাদী, সমূহবাদী, মার্কসবাদী, প্রায় পুরোপুরিভাবে বস্তুতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক বিষয়াদির ওপর তাদের মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রেখেছে। এভাবে উত্পাদন ও মানুষেকে বস্তুগত প্রয়োজন থেকে মুক্তি দেয়াকে মার্কসবাদ তার সর্বোচ্চ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে। তথাপি এসব কিছু সত্ত্বেও মার্কসবাদী ব্যবস্থার অধীনে একজন ব্যক্তি মানুষ অনেকটা পাশ্চাত্যের ব্যক্তি মানুষের মতোই সমভাবে মনস্তাত্ত্বিক ব্যাধির শিকারে পরিণত হতে পারে। এভাবে উভয় মতাদর্শই ব্যক্তি ও সমাজকে সামগ্রিকভাবে কল্যাণ ও নিরাপত্তাবোধ উপহার দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
দূর প্রাচ্যের ধর্মগুলো মানুষের আকাঙ্খা, কামনা-বাসনা এবং প্রয়োজনকে খুব কমই গুরুত্ব দেয়। ধর্মগুলো খ্রিষ্টান ধর্মের সংযম ও আত্মকৃচ্ছ মতবাদের তুলনায় অনেক বেশি কঠোর হলেও তাদের অনুসারীদের ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক জীবনের অনগ্রসরতার ও হতাশার সমস্যাসমূহ সমাধানে তারাও ব্যর্থ হয়েছে। এসব ধর্মে তাদের বিশ্বাসের কমতি ছিল বলেই সমগ্র জনগোষ্ঠী চীনের জনগনের মতো বস্তুবাদী মতাদর্শ ও সমূহবাদে তাদের মুক্তি খুঁজে পেতে চেয়েছিল। এভাবে যে কোনো ব্যক্তি এসব ধর্ম সম্বন্ধে চিন্তা করতে বসলে তার কাছে ধর্মগুলোর ত্রুটি-বিচ্যুতি সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে। জনগন যদি এসব ধর্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং তা থেকে পালাতে শুরু করে এবং তার অন্ত:সারশূন্যতা থেকে ফিরে যায় তাহলে আশ্চার্য হবার কিছু ‍থাকবে না।
কিন্তু কালামে ওহীর সুস্পষ্ট উচ্চারণে আমরা যে ইসলামকে পেয়েছি তা মানুষের প্রকৃতি, অস্তিত্ব েএবং চাহিদা সম্পর্কে পৃথকভাবে ভূমিকা রেখেছে। ইসলাম স্বীকার করে যে, মানুষের স্বাভাবিক কামনা-বাসনা, আশা ও আকুল আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। বাস্তবিকই ইসলাম এগুলোকে মানুষের প্রতি অনুগ্রহ বলেই বিবেচনা করে। সুতরাং এগুলোকে সঠিক ও গঠনমূলকভাবে ব্যবহার করা হলে তা সুখ ও সন্তোষ বয়ে আনতে পারবে এবং জীবন ও শক্তিকে সৌন্দর্য ও নবরূপ দান করতে পারবে। ইসলাম এ কথাও স্বীকার করেছে মানুষের দৈহিক ও অর্থনৈতিক চাহিদা আছে এবং এগুলোকে সে বেঁচে থাকার, কার্যকর করার এবং উদ্ভাবনের উপায় হিসাবে এবং সত্য ও সুবিচারপূর্ণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার উপায় হিসাবে এবং সমাজের সকলের কল্যাণ সাধনের উপায় হিসেবে বিবেচনা করে। এমনিভাবে ইসলাম মানুষকে শুধু বস্তুর পর্যায়ে নামিয়ে দিতে অস্বীকার করে। কারণ, মানুষ শুধু আত্মার সক্রিয় রূপ এ কথা ইসলাম মানে না। বরং ইসলাম মানুষকে দেখে বস্তু ও চেতনা এবং দেহ ও আত্মা হিসেবে। ইসলামের মানুষের একটি পার্থিব অস্তিত্ব আছে, আছে একটি বেহেশতি লক্ষ্য। এভাবে মানবজীবনে প্রতিটি কাজ অথবা বস্তুগত সাফল্যকে ইসলামী পরিপ্রেক্ষিত থেকে একটি আধ্যাত্মিক লক্ষ্য হাসিলের বাহ্যিক রূপ বা বস্তব অভিব্যক্তি হিসেবে দেখা হয়। ইসলামে আধ্যাত্মিক অর্জনকে লক্ষ্য করেই মানব অস্তিত্বকে অর্থবহ করা হয়।
ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের রয়েছে বস্তুগত অস্তিত্ব। তার আছে কামনা, বাসনা ও আকাঙ্ক্ষা এবং অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য তার রয়েছে কাজের প্রয়োজন। মানুষ আবার একটি আত্মা বা রুহও বটে যার আছে উচ্চতর আধ্যাত্মিক লক্ষ্য, উদ্দেশ্য যা তাকে শুভ, মঙ্গল ও সংস্কারের পথে কর্মদ্যোগে নিয়োজিত রাখে। এ কারণে ইসলাম নির্দেশিত প্রত্যেক প্রকারের ইবাদত, আল্লাহর জিকির বা স্মরণ এবং মোরাকাবা বা ধ্যান বাস্তবে খুব সহজেই করা যায়। এ ছাড়াও এসব ইবাদত বন্দেগী যারা কারেন তারা আধ্যাত্মিক ও বস্তুগত কল্যাণও লাভ করেন। উদাহরণ স্বরূপ, অযু থেকে পরিচ্ছন্নতা, সালাত বা নামাজ থেকে শৃঙ্খলা, ধৈর্য ও সহিঞ্চুতা, সওম বা রোজা থেকে, জাকাত থেকে বদান্যতা ও সহৃদয়তা এবং হজ্জ থেকে সাম্যতা আমরা লাভ করি। প্রতিটি ক্ষেত্রেরই উদ্দেশ্য হচ্ছে ভালো কাজ করা, আমানতকে সম্মান করা। খেলাফতের দায়িত্ব বহনের জন্য এবং সংস্কার ও সভ্যতার মাধ্যমে পৃথিবীতে সত্কাজ করার জন্য আত্মাকে তৈরি করা। কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতসমূহ নিয়ে একটু ভাবুন :
“আল্লহ সুবিচার, ইনসাফ, অনুগ্রহ ও আত্মিয়স্বজনকে দানের নির্দেশ নিচ্ছেন এবং সব অন্যায়, পাপ, নির্লজ্জতা ও জুলুম অত্যাচার করতে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদের নসিহত করেছেন যেন তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারো।”(১৬:২০)
“তুমি কি সে ব্যক্তিকে দেখেছ যে পরকালের শুভ প্রতিফল ও শক্তিকে অবিশ্বস করে? এতো সে লোক যে ইয়াতীমকে ধক্কা দেয়, আর মিসকীণদের খাবার দিতে উত্সাহিত করেনা।”(১৭:১-৩)
“যে কেহ নেক আমল করবে সে নিজের জন্যই করবে আর যে অন্যায় করবে সে নিজেই তার পরিণতি ভোগ করবে। শেষ পর্যন্ত সবাইকে যেতে হবে নিজেদের রবের নিকট।”(৪৫:১৫)
“তিনিই মৃত্যু ও জীবন উদ্ভাবন করেছেন যিনি তোমাদেরকে পরখকরে দেখতে পারেন যে, তোমাদের মধ্যে আমলের দিক দিয়ে সর্বোত্তম ব্যক্তি কে?” (৬৭:২)
উপরন্তু যে লোক বিন্দু পরিমাণও নেক আমল করে থাকবে সে তা দেখতে পারবে এবং যে লোক বিন্দু পরিমাণে বদ আমল করবে সেও দেখতে পাবে।” (৯৯:৭-৮)
প্রিয় নবী (সা) বলেন,
“একটি সদয় বাক্য সদকা”
“তোমাদের যৌন তৃপ্তিতে সদকা রয়েছে“
“এক ব্যক্তিকে একটি বিড়ালের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণের জন্যে দোযখের শাস্তি দেয়া হয়। অপরদিকে গরমের দিনে একটি কুকুরকে পানি পান করানোর জন্য অপর একজনকে আল্লাহ ধন্যবাদ দেন এবং ক্ষমা করে দেন।”
মানুষ সম্পর্কে ইসলামে ধারণা হচ্ছে একজন মানুষ হোক সে পুরুষ বা মহিলা, তার অস্তিত্বের দিকগুলো, তার বিভিন্ন প্রয়োজন বা চহিদা এবং ব্যক্তিত্ব বৃদ্ধির প্রেক্ষাপেটে একই সাথে সে একক এবং পূর্ণাঙ্গ অস্তিত্ব হিসেবেই বিদ্যমান থাকে এবং তার অস্তিত্বে থাকে বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক দিক, যেগুলো কখনো এক সাথে মিলে যায় আবার তা পৃথকও করা যায়। এসব দিকের কোন একটিকে অবজ্ঞা করা হলে বা অপব্যবহার করা হলে এ বিশ্ব একজন মানুষের জীবনের কোনো সুখ বা ভারসাম্য আসতে পারে না।
এ বিশ্বের মানুষের এ রকম দাসত্বপূর্ন ও সীমিত জীবন ধারণ সম্পূর্ণ নতুন মাত্রা ধারন করে। এ জীবনের পরে আসছে আরেক জীবন এবং মৃত্যু, মানুষের অস্তিত্বের সমাপ্তি। একটি উদ্দেশ্য পূরণের জন্য মানুষকে জীবন দান করা হয় এবং জীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে মানুষ তাদের স্বাধীন ইচ্ছা প্রয়োগ করতে পারে। এ ব্যাপারে সে স্বাধীন। তারপর এ জীবনের পর যে অনন্ত জীবন আসবে তা হবে এ পৃথিবীতে মানুষ যে ধরনের জীবন-যাপন করতো তারই পরিণাম। অন্য কাথায় পরকালে মানুষের অবস্থান সে এ পৃথিবীতে যে ধরনের জীবনযাপন করতো তার উপর নির্ভরশীল হবে। মানব জীবন সম্পর্কে একমাত্র এ ধারনাতেই তার গঠন, গন্তব্যস্থল ও ফিতরাতের বাস্তবতার প্রতিফলন দেখা যায়। সুতরাং যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি তার দুনিয়ার জীবন তার দৈহিক চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষা পূরণর চেয়ে বেশি কিছু অর্জন করতে না পারে, সে কখনো মনস্তত্ব ও আবেগ অনুভূতির মধ্যে স্থিতিশীলতা অথবা নিরাপত্তা পাবে না। অপর পক্ষে সে হবে এমন এক প্রাণীর মতো যে জীবনে টিকে থাকার জন্য যে কোনো নৈতিক বিচ্যুতিকে অবলম্বন করবে। কারণ অবস্থা যাই হোক না কেন এ জীবন শেষ হয়ে যাবে। এ ধরণের প্রাণী জানে না কোথা থেকে সে এসেছে এবং চলে যাচ্ছে। সে যা হোক, তার সীমিত উপলব্ধি দিয়ে সে নিশ্চিতভাবে নির্ধারণ করতে পারে না যে, সে কোন লক্ষ্যে দিকে অগ্রসর হবে অথবা কোন উদ্দেশ্য সামনে রেখে তাকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল। ব্যক্তিমানুষ এ পৃথিবীতে বিভিন্ন পার্থিব বিপর্যয়, পরিবর্তন ও পরীক্ষার সম্মুখীন হলে জীবনে কখনো সত্যিকারের সুখের সন্ধান পাবেনা যতক্ষণ বা যতদিন সে বুঝতে না পারে যে এ জীবনের আরেকটি মাত্রা রয়েছে, এটি সব কিছুকে সংশোধন করছে এবং সঠিক করে দেবে। অন্যথা, এটি কোন ধরণের জীবন হবে? একটি প্রাণীর জীবন সুস্পষ্টভাবে বলা যায় আরো ভালো হবে, কারণ মোটের উপর তার কোনো বোধশক্তি নেই। সুতরাং সুবিচার ও ন্যায়পরায়ণতা তাদের ভাগ্যে না জুটলে তারা এর অভাব অনুভব করবে না।
সুতরাং পরকালীন জীবন সম্পর্কে ইসলামী মতবাদ ব্যক্তি মানুষের মানসিক ভারসাম্য রক্ষা ও সুখের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। একটি সঠিক মুসলিম জীবন তার এককত্ব, ব্যাপকতা এবং পরকালীন জীবনে বিশ্বাসের দারুন সুখ, সন্তোষ ও নিরাপত্তার দিকে পরিচালিত হয়। এ পথে তার যে উদ্যোগ ও কর্মপ্রচেষ্টা তা কখনো বৃথা যেতে দেয়া হবে না। তার ধৈর্য, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং আল্লাহর ইনসাফ ও প্রজ্ঞায় আস্থা কোনো কিছুই নিরর্থক হয় না। একজন মুসলিম নারী বা পুরুষের জীবনের এগুলোই হচ্ছে সম্বল। এভাবে একজন মুসলিম আল্লাহর দানের প্রশংসা করে এবং তুষ্ট থাকে, কারণ তার জাগতিক জীবনে চালচলন সংক্রন্ত বিষয় এবং উচ্চতর নৈতিক বিষয়সমূহ (sublime) দুটিই অন্তর্ভূক্ত থাকে।
ব্যক্তি মুসলিমের পরকালীন জীবন সম্পর্কিত উপলব্ধি সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে মুসলিম ব্যক্তিত্ব এবং সামগ্রিকভাবে সমাজ কী সংকট ও ভ্রান্তির সম্মখীন হয় তা কল্পনা করা মোটেই সম্ভব নয়। নিশ্চিতভাবে পরকালীন জীবনের বিষয়টি কোনো গৌন বিষয় নয়। অপরেদিকে এর বৈশিষ্ট্য এমন যে, এটি মুসলিম সমাজ এবং ব্যক্তি জীবনের ওপর গভীর প্রভাব বিস্তার করে।
একীভূত একক হিসেবে মানুষ সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের বিভিন্ন দিকের মধ্যে কোনো সংঘর্ষ বা বৈপরীত্য থাকে না। বরং দুটিই হচ্ছে একটি একক সত্তা ও তার প্রয়োজনের বহি:প্রকাশ এবং দু‘টি বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক উভয় দিক থেকেই বিভিন্ন ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত। একইভাবে ব্যক্তি ছাড়া আধ্যাত্মিক জীবন অস্তিত্ব লাভ করতে পারে না বা টিকে থাকতে পারে না। সুতরাং মানবজীবন এ দু‘টি মাত্রার সমন্বয়ে গঠিত। কাজেই মানব জীবন সম্পর্কিত ইসলামী ধারণা কোনো সংঘর্ষের ধারণা নয়। এ যুক্তির আরেকটি ফল হচ্ছে এ যে, ইসলাম সব ধরনের জুলুম, স্বৈরাচার, বে-ইনসাফি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে।
ইসলাম কীভাবে দুর্নীতির মোকাবিলা করে তা লক্ষ্য করার বিষয়। আল্লাহর হুকুম হিসেবে যা দ্ব্যর্থহীনভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে তা মতামত বা ব্যাখ্যা বা ইজতিহাদ এর চেয়ে বেশি কিছু নয়। তাকে সুস্পষ্টভাবে পৃথক করার মাধ্যেমে ইসলাম দুর্নীতির মোকাবিলা করে। ব্যাখ্যার উপযোগী বিষয়গুলো চূড়ান্তভাবে উম্মাহর বিবেচনার জন্য পেশ করা হয় অথবা আরো সুনির্দিষ্টভাবে এ বিষয়সমূহ উম্মাহর রাজনৈতিক ও আইন প্রণয়নজনিত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের ভার যাদের ওপর ন্যস্ত রয়েছে তাদের কাছে পেশ করা হয়। (আহল আল হাল ওয়া আল-আকদ) সুতরাং এসব বিষয়ে শুমারি প্রক্রিয়ায় উম্মাহর স্বীকৃতি ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ সঠিক হতে পারে না।

অস্তিত্বের উদ্দেশ্য এবং বিশ্বে নিয়ম শৃঙ্খলার করণ

আমরা এর আগে জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার সব ধরণের গবেষণা ও একাডেমিক কর্মকান্ডে নির্দেশনাদানকারী ইসলামী পদ্ধতিবিজ্ঞানের একটি উপাদান ও মৌলিক ধারনা হিসেবে অস্তিত্বের উদ্দেশ্যসহ দৃষ্টিভঙ্গির বিষয় আলোচনা করেছি। বাস্তবে এ উপাদানই প্রতারণা, অজ্ঞতা এবং অনিচ্ছাকৃত বিচ্যুতি থেকে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিচালিত প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণাকে রক্ষা করে। এভাবে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গিতে একাডেমিক গবেষণার কাজ হাতে নেয়া হলে এবং তার সাথে ফিতরাত থেকে উত্সারিত অন্তর্দৃষ্টি শামিল হলে এ কর্মকান্ডে একটি বিশ্বজনীন কল্যাণ ব্যবস্থা, সংস্কার ও সভ্যতার গোড়াপত্তনে সহায়ক হবে। আর এ ব্যবস্থা এমন হবে যাতে দুর্নীতি, পদস্খলন বা বিচ্যুতি, বিকৃতি, কুসংস্কার অথবা কুফরের কোনো স্থান থাকবে না।
“হে আমার প্রভু! তুমি এসব কিছুই বৃথা সৃষ্টি করোনি।”(৩:১৯১)
সত্যের নিরপেক্ষতা এবং মানব প্রকৃতির বাস্তবতা ও সামাজিক সম্পর্ক
ইসলামী চিন্তধারা, আল্লাহ এবং তার এককত্বের বিশ্বাস থেকে উত্সাহিত দৃষ্টিভঙ্গি ও ধারণার সমন্বয়ে গঠিত। জ্ঞানের ক্ষেত্রে যখন আলোকপাত করা হয় তখন তাতে অন্তর্নিহিত থাকে একটি খাঁটি মৌলিক ধারণা। এ সাধারণ ও মৌলিক ধারণা হচ্ছে সভ্যতা ও বাস্তবতা, ন্যায় ও অন্যায়, ভালো ও মন্দ বাস্তবে নিরপেক্ষ বাস্তবতা। এগুলোকে অবশ্যই আল্লাহ মানুষের মধ্যে যে আকৃতি দিয়েছেন এবং মানুষের পথ নির্দেশনা দেয়ার জন্য যে ওহী পাঠিয়েছেন এ দু‘টোর আলোকে বুঝতে হবে। এ অবস্থায় বিন্দু থেকে বলা যায় মুসলিম মন বিজ্ঞানমনস্ক। পূর্ব নির্ধারিত ধারণার ওপর নির্ভর না করে সে তার নিজ শর্তানুযায়ী এবং নিজস্ব উদ্দেশ্যের অনুকুল রীতিবিধানের ভিত্তিতে জ্ঞান অন্বেষণ করে। এ কারণে একটি মুসলিম মনের সাধনা বিনষ্ট হবে না বা বিপথগামী হবে না।
“আর সত্য ‍যদি কখনো এ লোকদের খায়েশের পিছনে চলতো তাহলে জমিন ও আসমান এবং তার অধিবাসীদের ব্যবস্থাপনা চূর্ন-বিচূর্ণ হয়ে যেত।” (২৩:৭১)
“এবং সে ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক গোমরাহ আর কে হতে পারে যে ব্যক্তি আল্লাহর হেদায়াত ব্যতীত শুধু নিজের লালসা-বাসনার অনুসরণ করে চলে।” (২৮:৫০)
“তাহলে তুমি কি কখনো সে ব্যক্তির অবস্থা চিন্তা করে দেখেছ যে লোক স্বীয় নফসের খায়েশের নিজের খোদা বানিয়ে নিয়েছে?” (৪৫:২৩)
সমসাময়িক যুগের বস্তুবাদী মনকে জটিল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অধ্যয়নকালে বৈষয়কি হতে বাধ্য করা হলে সে একই মনকে সমাজবিজ্ঞান, সাহিত্য-দর্শন ও ইতহাস অধ্যয়নে বেপরোয়াভাবে ছেড়ে দেয়া হবে, তখন তা বিকৃত স্বভাব বিশিষ্ট শয়তানে রূপান্তরিত হবে। তারপর বৈজ্ঞানিক গবেষণার নামে নীতিভ্রষ্টতার সকল পথকে যুক্তিযুক্ত করে মানুষ উপস্থাপন করে। এ কারণে আমরা দেকতে পাই, সমাজবিজ্ঞানে অন্তহীনভাবে একটির পর একটি গোষ্ঠি সৃষ্টি হচ্ছে, এদের প্রত্যেকের রয়েছে নিজস্ব মতবাদ ও ভবিষ্যতবাণী। অন্তর্বর্তী সমাজে বিরাজ করে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি এবং সব সমস্যায় সে জড়িত হয়ে পড়ে, তা থেকে মুক্তি পাওয়ার কোন উপায় সে পায়না।
বস্তুবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজ বিজ্ঞান অধ্যয়নকালে ওহীর উপাদানকে পুরোপুরি অবজ্ঞা করা হয়। এটিকে তার একটি প্রধান দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত না করে সমাজ বিজ্ঞানের বস্তুবাদী পন্ডিত্য দাবি করে যে, তাদের পান্ডিত্য ও অধ্যয়নের ক্ষেত্র জটিল এবং তা অবিশেষজ্ঞদের বোধগম্য হবার নয়। যাই হোক, মানবীয় যুক্তির উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল সমাজ বিজ্ঞান অবশ্যই বিপথে চালিত হবে। কারণ, মানুষের মন মানবীয় অভিজ্ঞাতার লক্ষ্যবস্তু সম্পর্কিত পুরোপুরি সত্য অনুধাবন অথবা মানবীয় অভিজ্ঞতার উচ্চতর লক্ষ্য উপলব্ধিতে অক্ষম বা অসমর্থ। ধর্ম ও নবুয়াতের ধারণাকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত করার ফলে জ্ঞানের উত্স হিসেবে ওহীকে পাশ্চাত্য অবজ্ঞা করেছে এবং এর উপর আস্থা স্থাপন করতে পারেনি। পশ্চিমা চিন্তবিদদের মধ্যে মাত্র একটি গ্রুপের অনুসারীদের চিন্তধারায় ফিতরাতের প্রতিফলন দেখা যায়। সত্যনিষ্ঠ ও বস্তুগত উপায়ে ফিতরাতের ধারণাকে উপলব্ধির এ প্রচেষ্টাকে চালিয়েছে প্রাকৃতিক নিয়মের অনুসারী চিন্তাবিদগণ (School of Natural Law) কিন্তু প্রাকৃতিক নিয়মপন্থির চিন্তাধারা নিয়ে তারা এগুতে পারেনি। কারণ, সত্য ও অবিকৃত ওহীর সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক ছিল না। পাশ্চাত্যের মানুষের কাছে প্রত্যাদেশ থেকে প্রাপ্ত উত্সগুলো এমনভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে যাতে কুসংস্কার ও অবৈজ্ঞানিক বিশ্বাস প্রবল হয়ে উঠে। সামাজিক অবিচারের কথা উল্লেখ না করা হরেও বলা যায় এ কারণেই পশ্চিম ধর্ম সম্পর্কিত ধারণা মারাত্মকভাবে বিকৃত হয়ে পড়ে।
ইসলামী প্রক্ষাপেট থেকে সমাজ বিজ্ঞানের প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণায়, জীবন, মহাবিশ্ব, প্রকৃতি এবং সব কিছু সম্পর্কে নিশ্চিত ও বস্তুনিষ্ঠভাবে অনুসন্ধান থাকা উচিত। এ কাজ কারতে গিয়ে তাকে ওহীর শিক্ষা, উদ্দেশ্য ও মূল্যবোধের আলোকে অগ্রসর হতে হবে। একমাত্র এ পথে অগ্রসর হলেই সে তার পথ হারাবে না অথবা নিজস্ব ঝোঁক-প্রবনতার শিকার হবে না। আগের আলোচনার আলোকে এ কথা বলা যায়, আমাদের জন্য এটিই মোটেই কোনো আশ্চর্যের ব্যাপার নয় যে, জটিল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে পাশ্চাত্যের পন্ডিত সমাজ যা কিছু অর্জন করেছে সমাজ বিজ্ঞানে সে তুলনায় তেমন কিছু অর্জন করতে পারেনি এবং এটাও কোনো বিস্ময়কর ব্যাপার নয় যে, প্রযুক্তিতে পাশ্চাত্যের সাফল্যের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে সমাজ, পরিবার ও ব্যক্তি পর্যায়ে তার ব্যর্থতাও রয়েছে। আসল বিষয় হচ্ছে, একটি জীবন্ত ও গতিশীল ধারণা ও ফিতরাত মহাবিশ্বের প্রাকৃতিক আইনসমূহ এবং ন্যায় অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টিকারী মূল্যবোধের দ্বারা এর মধ্যকার সম্পর্কগুলো নিয়ন্ত্রিত হয়। এটি এমন এক ধারনা যা রুগ্ন মনের কুতর্ককে প্রত্যাখ্যান করে কারণ, এ কুতর্ক জ্ঞান ও অবাধ গবেষণার নামে সমাজের শোভনতর সর্বাপেক্ষা মৌলিক মাপকাঠিকে তুচ্ছ করে। এ ধরনের মনের অধিকারী যারা তারা সবচাইতে বিরক্তকর বিকৃতিগুলোর পক্ষে কথা বলতে ইতস্তত হরে না এবং এসব বিকৃতিকে তারা এমনভাবে উপস্থাপন করে যাতে মনে হয় এগুলোই রীতি বা নিয়ম, ব্যতিক্রম নয়। এ ধরনের চিন্তা এবং অন্ধ পদ্ধতি-বিজ্ঞারেন পরিণাম হচ্ছে বিকৃতি বা ন্যায়ভ্রষ্টতা, দুর্নীতি এবং পথভ্রষ্টতা যা সমাজকাঠামোকে ছিন্নভিন্ন করে এবং পারিবারিক কাঠামোকে ধ্বংস করে। পাশ্চাত্য সমাজে এটিকে চলার অনুমতি দেয়া হলে সে ওহী থেকে (খ্রিস্টান ধর্মের মাধ্যমে) এবং ইসলামী সভ্যতা (প্রধানত ক্রুসেডের সময়ে) থেকে অর্জিত সকল মুল্যবোধ হারিয়ে ফেলবে।
ইসলামী ভাবাদর্শে উজ্জীবিত সমাজ বিজ্ঞানের সাথে অনৈসলামী আদর্শ অনুসারী সমাজ বিজ্ঞানের পার্থক্য সৃষ্টিকারী উপাদানগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে এ যে, ইসলামী সমাজ বিজ্ঞানের অবশ্যই সব সময় তার লক্ষ্য এবং ইচ্চতর উদ্দেশ্য সম্পর্কে মনোযোগী হতে হবে। সত্য ও ন্যায়ের পথ থেকে বিচ্যুত না হবার জন্যে এটিই একমাত্র রক্ষাকবচ, নতুবা একাডেমিক স্বাধীনতার নামে এটি নৈতিক বিচ্যুতির সৃষ্টি করবে এবং যা কিছু অন্যায়, শোষণমূলক এবং দাম্ভিকতাপূর্ণ তা-ই টিকে থাকবে।

Page 5 of 7
Prev1...4567Next

© Bangladesh Jamaat-e-Islami

  • আমাদের সম্পর্কে
  • প্রাইভেসি পলিসি
  • যোগাযোগ
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস

@BJI Dhaka City South