অধ্যায় ছয়
ইসলাম ও ভবিষ্যৎ
উম্মাহ ও মানবজাতি উভয়ের জন্য সংস্কার সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ- এ বিষয়ের উপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। সুতরাং তিনটি মৌলিক বিষয়ের প্রতি ইসলামী কর্মী ও নেতাদের মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা চালানো আবশ্যক।
১. উম্মাহর ভবিষ্যৎ অর্থাৎ মুসলিম যুব সমাজের মধ্যে কাজ করা।
২. ইসলামিকরণ এবং জ্ঞান ও স্বজন সম্পর্কে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি সুস্পষ্ট করা এবং নতুন প্রজন্মকে ইসলামের চিরন্তন বাণী মানবজাতির কাছে পৌছিয়ে দেয়ার যোগ্য করে তৈরি করা।
৩. মানবজাতির অগ্রগতি ও চিন্তাধারাকে পরিশুদ্ধ করার জন্য মানব সভ্যতার ভবিষ্যৎ গতিপথের নির্দেশনা প্রদান করা।
উম্মাহর চরিত্রের ভবিষ্যৎ
এটি স্পষ্ট যে, উম্মাহর বর্তমান চিন্তাধারার সংস্কারের প্রয়োজন আছে। এটিও স্পষ্ট যে, উম্মাহর বর্তমানের মনস্তাত্ত্বিক গঠনও ক্রকিপূর্ণ। এমনকি উম্মাহ এবং পুরো প্রজন্মও নতুন তথ্য ও ভাবধারা গ্রহণে সক্ষম হলে তা হবে কৃত্রিম এবং সত্যিকার চরিত্র গঠনের প্রক্রিয়া থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে ভিন্ন। রাসূল (সা) বলেছেন জাহিলিয়াতে যারা তোমাদের মাধ্যে ছিল সেরা, ইসলামেও তোমরা হবে শ্রেষ্ঠ, যতদিন তোমরা ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করবে। এ কারণেই মরুভূমির মুক্ত স্বাধীন ও সাহসী আরবরা ইসলাম গ্রহনের পর এত অল্প সময়ের মধ্যে এত বেশি কিছু অর্জন করতে পেরেছিল।বর্তমান মুসলিম প্রজন্মের ভূমিকা হবে প্রথমে বর্তমান পরিবেশের প্রকৃতি বা মেজাজকে বোঝা, সম্ভাব্য কর্মকান্ড, প্রাপ্তি, সাধ্য ও কর্মদক্ষতার সীমা নিরূপণ করা এবং কার্যকর ও সময়োপযোগী চিন্তাধারার প্রস্তাব করা। এটি করার জন্য প্রথমে ছোটদের জন্য আদর্শ স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যাতে তারা এসব স্কুলে শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে দৃঢ় চরিত্র গঠন করতে পারে এবং ইসলামের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ইসলামের অনুশাসন সম্পর্কে অবিচল বিশ্বাস অর্জন করতে পারে। উম্মাহর ভবিষ্যতের জন্য বর্তমানে আমরা কি কাজ করলাম (Investment for future) এবং সামগ্রিকভাবে সভ্যতার জন্য দায়িত্ব পালেনে যুব সমাজ আবেগ ও মননের দিক থেকে কোন ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করে তার উপর উম্মাহর মধ্যে পরিবর্তন সৃষ্টির যে কোন আশা নির্ভর করবে। আজকের প্রজন্ম তার কর্তব্য পালন করলে পরবর্তী প্রজন্মকে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করলে, তার দায়িত্ব সাফল্যের সাঙ্গে পালন করা হয়েছে বলা যাবে। অপরদিকে সে যদি ধারণা করে যে এ কাজ স্বীয় চেষ্টায় করতে পারবে, তাহলে সে আসল বিষয় হারিয়ে ফেলবে এবং তার শক্তি ক্ষয় করবে।
বর্তমান প্রজন্ম যে ভূমিকা পালন করবে তার গুরুত্ব হচ্ছে ভবিষ্যত প্রজন্মের সঠিক প্রস্তুতির জন্য সুষ্ঠু দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি করা এবং পর্যাপ্ত উপায় বা মাধ্যম তৈরি করা। একবার এ বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারলে তখন তিনটি প্রধান কজের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা আমাদের জন্য অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়াবে।
১. গঠনমূলক কাজের জন্য শক্তি ও সম্পদ প্রদান করা এবং তা যাতে নি:শেষ না হয়ে যায় সে দিকে লক্ষ্য রাখা।
২. ইসলামী পরিপ্রেক্ষিতে থেকে সুষ্ঠু ভাবধারা সৃষ্টি করা।
৩. ইসলামী স্বপ্নকে বস্তব রূপদানের জন্য সম্পদ নিয়োজিত করা যাতে তা যুবকদের বেড়ে ওঠার জন্য ব্যবহার করা যায়।
মুসলিম বুদ্ধিজীবী ও নেতাদের জন্য এটার মানে হবে সুষ্ঠু ও নিখাদ ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি প্রণয়নের মাধ্যম ইসলামী চিন্তাধারার নবায়ন এবং তা হবে বর্তমান প্রজন্মের প্রথম অগ্রাধিকার বিষয়।
এ প্রারম্ভিক পর্যায়ে উম্মাহর ভবিষ্যৎ নির্মানের কাজ শিক্ষা ও মননের ক্ষেত্রে শুরু করতে হবে। কারণ এ দুটি ক্ষেত্র থেকেই সংস্কারের জন্য প্রয়াজনীয় শক্তি সৃষ্টি হবে। সুতরাং বর্তমান পরিস্থিতিতে উম্মাহর উচিত হবে রাজনৈতিক ও সামরিক সংগঠনের জন্য ব্যয় করা। তাকে ততটুকুই ব্যয় করা উচিত যতটুকু তার নির্মাণ ও সংস্কারের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে পারে। বর্তমান সময়ে উম্মাহর নেতৃত্বের দায়িত্ব হচ্ছে অভিভাবক ও শিক্ষকদের কাছে মনস্তাত্ত্বিক বিকাশের অর্থ, উম্মাহর কাছে এর গুরুত্ব এবং মনস্তাত্ত্বিক বিকাশের প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো সম্পর্কে ব্যাখ্যা করা। এটি করা হলে ভবিষ্যৎ বংশধরেরা কখনো অতীতের মতো পশ্চাত্পদতা ও ধ্বংসের শিকার হবে না। আগামী প্রজন্মের মনস্তত্ত্বিক ও মননের ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন আসছে, সুস্পষ্টভাবে তারই উপর উম্মাহর ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। আমাদের যুব সমাজকে তাদের দায়িত্ব বহনের উপযোগী করে তোলার জন্য আমরা যত বেশি প্রচেষ্টা চালাবো ততো বেশি আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জনের কাছাকাছি পৌছতে পারবো। উম্মাহর চিন্তাবিদ ও পন্ডিতদের দায়িত্ব হচ্ছে উম্মাহর চিন্তাধারার সংস্কারে, তার সৃষ্টিকে স্বচ্ছকরণে তাদের শক্তি ব্যয় করা এবং এসব কিছুকে এমনভাবে উম্মাহর কাছে উপস্থাপন করা, যাতে তার প্রতিষ্ঠানগুলো এর থেকে উপকৃতি হতে পারে।
উম্মাহর চিন্তাবিদ ও পন্ডিতদের দায়িত্ব হচ্ছে অভিভাবক ও শিক্ষকদের নিকট উম্মাহর মানসিক বিকাশের (Psychological development) জন্য এর গুরুত্ব এবং কি কি উপাদান (elements) মাধ্যমে তা অর্জন হয়েছিল তা ব্যাখ্যা করা। একমাত্র তখনই উম্মাহ নতুন পথে অভিযাত্রা শুরু করতে পারবে এবং সে ধরণের চিন্তাধারা সৃষ্টিতে সক্ষম হবে যা তাকে উন্নততর ভবিষ্যৎ পানে পরিচালিত করবে।
উম্মাহর চিন্তাবিদ ও পন্ডিতদের দায়িত্ব হচ্ছে ইসলামী চিন্তাধারার ভিত্তি পর্যালোচনা করা, এর অপরিহার্য বা মৌলিক উপাদানগুলোর মধ্যে অত্যাবশ্যকীয় সম্পর্ক এবং সমাজের জন্য নতুন ভাবধারা সৃষ্টিতে এসব কী ভূমিকা পালন করবে তাও পর্যালোচনা করা।
উম্মাহর চিন্তাবিদ ও পন্ডিতদের দায়িত্ব হচ্ছে ইসলামী চিন্তাধারার কাছে তার মৌলিকতা, অখন্ডত্ব ও ব্যাপকতা ফিরিয়ে দেয়া। একমাত্র এ পথেই অতীতের বিচ্যুতি এড়িয়ে যাওয়া যাবে। শুধুমাত্র এটি করা গেলেই উম্মাহর চিন্তাধারা মরীচিকা থেকে বেশি কিছু হবে। উম্মাহর চিন্তাবিদ ও পন্ডিতদের দায়িত্ব হচ্ছে ইসলামী চিন্তাধারার উসূল ও পদ্ধতিবিজ্ঞান অধ্যয়ন করা, যাতে শুধু ওহীর মূল পাঠের সেবায় নয় বরং জীবন ও সমাজের বিজ্ঞানের সেবায় অনন্য ইসলামী শৃঙ্খলা গড়ে তোলা যায়। ইসলামী চিন্তাধারা সুনিশ্চিতভাবেই শিক্ষা, রাজনীতি, অর্থনীতি, প্রশাসন, যোগাযোগ এবং বিজ্ঞান ও তাত্ত্বিক বিজ্ঞানের দর্শনের ক্ষেত্রে মূল্যবান অবদান রাখার যোগ্যতা রাখে। উম্মাহর চিন্তাবিদ ও পন্ডিতদের এটিও মেনে নেয়া প্রয়োজন যে, উম্মাহর অগ্রগতির পথে ফিরে আনার দায়িত্ব শুধু তাদেরই। অন্যেরা শুধু তাদের দৃষ্টি ও পরামর্শ অনুসরণ করে চলবে। এভাবে চিন্তাধারা উপস্থাপনে তাদের সাফল্য অন্যদের চিন্তাধারাকে ফলপ্রসূ করে তুলবে।
উম্মাহর জীবনের বর্তমান সংকটময় সময়ে তাদের আর একটি দায়িত্ব হচ্ছে যারা ইসলামের অনুগত বলে দাবি করে তাদের সচেতনতা বৃদ্ধি করা। এটি তখনই ঘটবে যখন শিক্ষা প্রক্রিয়ার প্রাথমিক স্তর থেকে চরিত্র গঠন পদ্ধতিকে ব্যবহার করা হবে। বাস্তবিকই যুবকরা আমাদের ভবিষ্যৎ, আমাদের শক্তি। আগামীকালের জন্য উম্মাহর যে মানুষ প্রয়োজন এখন তা তৈরি শুরু করতে হবে। এ কাজ করতে গিয়ে শিশুদের লালন পালনে পিতামাতার ভূমিকা কি হবে তা উম্মাহর শিক্ষকদের বিবেচনা করা প্রয়োজন। বাস্তবিকই শিশুদের কীভাবে বা কী উপায়ে বড় করে তুলতে হবে এ ব্যাপারে পিতামাতার যে প্রত্যয় রয়েছে তার সাথে কোন কিছুই তুলনীয় নয়। মূল্যবোধের বিকাশ ও চরিত্র গঠন বহুল পরিমাণে শিশুর সঙ্গে মাতাপিতার সম্পর্কের উপর নির্ভর করে। স্কুল বা সমাজের যে প্রচেষ্টায় মাতাপিতার অনুমোদন নেই তা নিশ্চিতভাবে ব্যর্থ হতে বাধ্য।
শিশুদের শিক্ষা ও তাদের লালন পালনের বিষয়টি মাতাপিতার দৃষ্টিতে নিয়ে আসার যোগ্যতার ওপর চিন্তাবিদ ও শিক্ষকদের সাফল্যের যে কোনো সম্ভাবনা নির্ভর করবে। যখন তা ঘটবে তখন মাতাপিতা ও আপন ঘর উভয়ই কাঙ্ক্ষিত ফল লাভে তাদের ভূমিকা পালন করব। তারপর এ মৌলিক পথ ধরেই উম্মাহ তার সংস্কার ও উন্নয়নের পথে কোন প্রতিষ্ঠান বা সমাজ ব্যবস্থার পক্ষ থেকে যে সব বাধা বিঘ্ন আসবে তা অতিক্রম করতে সক্ষম হবে।
ইসলামিকরণ ও একাডেমিক প্রতিষ্ঠানসমূহ
ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আমাদের আলোচনা পূর্ণঙ্গ হবে না, যদি আমরা ইসলামিকরণের লক্ষ্য অর্জনে এবং একটি তথ্যসমৃদ্ধ ইসলামী প্রেক্ষাপট প্রণয়নে ইসলামী একাডেমিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকার কথা উল্লেখ না করি। এটি সুস্পষ্ট যে, উম্মাহর সংকট হচ্ছে প্রতিষ্ঠিত ও পরিপূর্ণ সামাজিক কাঠামোর অভ্যন্তরে ইসলামী মূল্যবোধ ও মতবাদকে সুস্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা। এটি স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, উম্মাহ যে অর্থেই পানিতে পড়ে গেছে, রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে উম্মাহর প্রচেষ্টা ও ত্যাগ তাকে সেখানে থেকে টেনে তোলার ব্যাপারে কোনো সাহায্য করতে পারবে না। বরং মুসলিমদের সাথে উন্নত দেশগুলোর ব্যবধান অব্যাহতভাবে বেড়েই চলেছে। জ্ঞানের সূত্র-এর অসাধারণ পদ্ধতিবিজ্ঞান উম্মাহর দেহের অংশে পরিণত না হলে এবং বিশেষভাবে তা সব মুসলমানের শিক্ষায় বদ্ধমূল করা না হলে ইসলামের উন্নত সভ্যতার ভাবধারা এবং তার অগ্রসর সামাজিক ব্যবস্থা বাস্তবায়ন কখনো সম্ভব হবে না। এভাবে পরিবার ও গৃহের পরিবেশ ছাড়াও উম্মাহর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হবে পরিবর্তনের প্রধান এলাকা। এটি সত্য যে, সমাজে পরিবর্তনের হাতিয়ার বা সহায়ক হবার মিশনে এসব প্রতিষ্ঠানকে সফল হতে হলে তাদের পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্ধ অনুকরণ অবশ্যই ছাড়তে হবে। ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এমন হবে না যে, তাদের সেরা ছত্রদের যোগ্যতা অর্জন, প্রশিক্ষন গ্রহণ অথবা দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিবেশী বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে সব সময় পাঠাতেই হবে। এর পরিবর্তে তাদেরকে অবশ্যই একটি মননশীল পরিবেশ সৃষ্টির ওপর তাদের কাজকর্ম কেন্দ্রীভূত করতে হবে, যে পরিবেশ সত্যিকারের অনুসন্ধিত্সু মন, মৌলিক চিন্তাধারা এবং সৃজনশীলতার বিকাশকে উত্সাহিত ও নিশ্চিত করবে।
সুতরাং এটি অবশ্যই প্রয়োজনীয় যে, ইসলামী বিশ্বের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের গুরুত্ব অনুধাবন করবে এবং নিজেদেরকে উম্মাহ, তার সম্পদ, ধর্ম, চিন্তাধারা এবং লক্ষ্যের উত্স বিবেচনা করে তাদের মানসিকতা পাল্টাবে। এরপর তাদের এমন কর্মসূচি দিতে হবে যা উম্মাহর সম্পদকে সবচেয়ে কল্যাণমূলক কাজে নিয়োজিত করবে। এ পথেই তারা তাদের সামনের বাস্তব চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে এবং ইসলামী উম্মাহর সত্যিকার প্রয়োজন পূরণ করতে পারবে।
আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কেবর প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের জ্ঞান-বিজ্ঞানের আক্ষরিক অনুবাদের চেয়ে আর বেশি কিছু পেশ করতে পারবে না, এটা আর মেনে নেয়া যায় না। মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা অপরের চিন্তাধারা ও প্রচেষ্টাকে পূনরায় অবিকল পেশ করবে বা তাদের মত করে তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে উপস্থাপন করবে এবং এতে সন্তুষ্ট থাকেব, তাও আর গ্রহণযোগ্য নয়। মুসলিম বিশ্বের শিক্ষায়তনগুলোকে ইসলামের অপরিহার্য বিষয়গুলো, তার বিশ্বজনীন সত্য, প্রত্যয় ও উদ্দেশ্যকে সূচনা বিন্দু হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। এটি অর্জন করার জন্য এমন সব একাডেমিক কেন্দ্র, ইউনিট ও সমিতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে যেগুলো জ্ঞানের প্রতিটি শাখায় ইসলামী প্রতিষ্ঠানিক পদ্ধতিবিজ্ঞান প্রণয়ন ও গড়ে তোলার জন্য প্রচেষ্টা চালাবে। জ্ঞানের ইসলামীকরণের কাজে জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় লাগসই পদ্ধতিবিজ্ঞান সৃষ্টি এবং প্রত্যেকটির জন্য সাধারণ নির্দেশনা তৈরি করা প্রয়োজন। এসব বুনিয়াদ ইসলামের অনুকূল গবেষণা ও ইজতিহদের কাঠমো হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ গবেষণা ও ইজতিহাদের লক্ষ্য হচ্ছে মুসলমানদের নতুন প্রজন্মের লালন পালন ও উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেয়া। জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় ইসলামীকরণ প্রচেষ্টার সাফল্য সুনিশ্চিত করতে হলে গবেষক, পন্ডিত, শিক্ষক ও ছাত্রদের কর্মশক্তিকে নতুন ইসলামী বুদ্ধিবৃত্তিক রূপরেখা প্রণীত করে তা স্পষ্ট ও বোধগম্য করতে হবে এবং একটি নতুন মানসিকতা সৃষ্টি করতে হবে। তারপরই ইসলাম ও অন্যান্য জাতির একাডেমিক উত্তরাধিকারের শ্রেণী বিভাজন সম্ভব হবে। এ ধরণের প্রচেষ্টাই হচ্ছে প্রয়োজনীয় একাডেমিক যোগ্যতা ও পূর্ণতা প্রাপ্তির জন্য একমাত্র পথ।
ইসলামী বিশ্বের অভ্যন্তরে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী সমাজবিদ্যার বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কিত একাডেমিক বিভাগ খোলা। যেমন ইসলামী অর্থনীতি বিভাগ, ইসলামী সভ্যতা এবং গবেষণা কেন্দ্র, ইসলামী চিন্তাধারা ও ইসলামী অর্থনীতি কেন্দ্র এবং ইসলামী সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষাদান, ইসলামী আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ইসলামী রাজনৈতিক চিন্তাধারা, ইসলামী রাজনৈতিক পদ্ধতি, ইসলামী বিশ্বের রাজনৈতিক উন্নয়ন ইত্যাদির জন্য সঠিক ও ইতিবাচক পদক্ষেপ এবঙ সম্ভাব্য সকল উপায়ে এসব কিছুকে উত্সাহিত করা প্রয়োজন।
নতুন ইসলামী সমাজ বিদ্যা বিষয় যেসব জরুরি সমস্যা দেখা দিয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে কঠিন সমস্যা হলো সম্পদের স্বল্পতা। কোনো কেন্দ্র, ইউনিট অথবা বিভাগের দিকে তাকালে বুঝা যায় যে, তার সম্পদ সীমিত এবং যোগ্যতা সম্পন্ন জনশক্তির অভাব প্রকট।
এ পর্যায়ে যোগ্য বিশেষজ্ঞবৃন্দ এবং তাদের মিশন পূর্ণ করার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা বা আর্থিক সমর্থনের ব্যবস্থা না করে শুধু একটি কেন্দ্র খোলা অথবা একটি শিক্ষা দান প্রতিষ্ঠান চালু করা বা একটি নতুন বিষয় শিক্ষা দেয়া মোটেই যথেষ্ট নয়। যোগ্য ব্যক্তিদের ইসলামী বিষয় বা সমাজবিদ্যা শিক্ষা দানের দায়িত্ব প্রদান করে আবার একই সাথে প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীর যোগান না দিয়ে তাদের উপর প্রশাসনিক দায়িত্বের বোঝা চাপানোর রীতি বা অভ্যাস কোনোভাবেই অব্যাহত রাখা যাবে না। বিশেষ করে ইসলামিকরণ প্রক্রিয়ার বর্তমান নাজুক পর্যায়ে এ ধরনের পন্ডিতদের এখন সময় দেয়া প্রয়োজন যাতে তারা তাদের নির্দিষ্ট বাচাইকৃত বিষয়সমূহে গবেষণা চালাতে পারে। কাজেই তাদের উপর এ ধরনের ভার চাপানোর ফলে তারা উত্সাহিত হওয়ার পরিবর্তেত তাদের অগ্রগতি থমকে দাঁড়াবে। জ্ঞান ও শিক্ষার ইসলামিকরনের আন্দোলনের সাফল্য লাভের পথ হলো অব্যাহত অধ্যবসায়ী প্রচেষ্টা। সংবাদ ও প্রাচর মাধ্যমে ঘোষনা দেয়ার বিষয়টি অনেক বেশি জটিল।
জ্ঞানের ইসলামিকরণের উদ্দেশ্য ইসলামী শিক্ষা ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিম্নোক্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো হতে নিতে হবে:
১. ওহীর মূল পাঠ কুরআন ও সুন্নাহর শ্রেণীবিভাজন ও সূচিভুক্তকরণ, কুরআন ও সুন্নাহর উপলব্ধি ও উদ্দেশ্যগুলোকে গবেষক ও ছাত্রদের জন্য সহজ করে তোলা, মূল পাঠ সহজেই উপলব্ধি করার ক্ষমতা এবং এ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় কর্ম সম্পাদনের ব্যবস্থাকে সহজ করে দেয়া।
২. বুদ্ধিবৃত্তিক উত্তরাধিকারের বিশেষ জ্ঞানকোষ সম্পর্কীয় মূল বিষয়গুলোর সম্পাদনা। এগুলোর শ্রেণী বিভাজন ও সূচিভুক্তকরণ যাতে গবেষকদের জন্য মূল বিষয়গুলোর উপলব্ধি সহজতর করে তোলা যায়। মুসলিম ছাত্রদের ইসলামের সুসংহত ও সংযত উত্তরাধিকারের সাথে পরিচিত করার প্রক্রিয়া এবং তাদের মধ্যে অভিন্নতা ও সাংস্কৃতিক অখন্ড তাবোধ ধীরে ধীরে সঞ্চারিত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি সম্পন্ন করা না হলে ইসলামী চিন্তাধারার সংশোধনের প্রতিটি প্রচেষ্টা শুধু সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছু হবে না।
৩. ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানমূহে এমন যোগ্য লোক নিয়োগ করা প্রয়োজন যারা সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বিশেষ জ্ঞানের অধিকারী হওয়ার সাথে সাথে ইসলামী বুদ্ধিবৃত্তিক উত্তরাধিকার সম্বন্ধে সুষ্ঠু জ্ঞান সমৃদ্ধ হবে। অধ্যয়ন ও গবেষণার সাহয্যে তাদের উচিত কাঙ্ক্ষিত দর্শন ও পদ্ধতি-বিজ্ঞানেকে সুস্পষ্টরূপে তুলে ধরা। শুরুতে বিশেষ গবেষণা কেন্দ্র এবং গ্রাজুয়েট বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। তারপর গ্রেজুয়েট ছাত্রবৃন্দ এবং গবেষকগণ ক্রমান্বয়ে পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যবই তৈরির জন্য অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে পারবে। তাদের তৈরি পাঠ্যবই বর্তমানে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি স্তরে স্থলাভিষিক্ত হবে। অযোগ্যতা ও ব্যর্থতার কারণেই অনুপযোগী পাঠ্যবই ছাপানো এবং ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। এর দ্বারা বোঝা যায় দায়িত্ব এড়ানোর জন্য চেষ্টা চলছে। অথচ দায়িত্ব পালন করলে তা সাফল্যের পথে নিয়ে যেত। এভাবে চলতে থাকলে আরো হতাশা পড়বে।
৪. ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রয়োজনী নেতৃবৃন্দ, শিক্ষিত মুসলমান ও প্রতিষ্ঠানের জন্য ইসলামিকরণ বিষয়ে সেমিনার, সম্মেলন ও বক্তৃতামালার আয়োজন। এছাড়া সেতৃবৃন্দ এবং সাধারণভাবে শিক্ষিত মুসলমানদের জন্য প্রতিষ্ঠানের দ্বারা উন্মক্ত করে দিতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য আরো প্রয়োজন একাডেমিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা এবং ইসলামীকরণ বিষয়ে একাডেমির পক্ষ থেকে পত্রপত্রিকা প্রকাশ করে বিষয়টিকে উত্সাহিত করা। এখন সময় এসেছে ইসলামিকরণকে অন্ত:সারশূন্য সাময়িক প্রচলিত প্রথা থেকে একটি সুসংগঠিত এবং বিশ্বব্যাপী আন্দোলনে রূপ দেয়।
৫. ইসলামী একাডেমিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখন অবশ্যই গ্রাজুয়েশন পর্যায়ে গবেষণা ও কর্মসূচিকে ইসলামিকরণের কাজ করতে হবে। এ পথেই তারা আগামী প্রজন্মের জন্য প্রয়োজনীয় একাডেমিক জনশক্তি সৃষ্টিতে সক্ষম হবে। সে সব লোকের মন ও দৃষ্টিভঙ্গি সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে তাদের প্রত্যাবর্তনের জন্য আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আর মোটেই অপেক্ষা করা উচিত নয়।
এভাবে আমাদেরকে সংগঠিত পরিকল্পনা ও অধ্যবসায়ী কর্মের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন যে, উম্মাহর প্রতি আমরা আমাদের দায়িত্ব পূরণ করছি। এ পথেই আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তাঁর পক্ষ থেকে তওফীক লাভের যোগ্য হবো।
মানবাজতির ভবিষ্যৎ পথ
ইসলামী উম্মাহর ভবিষ্যৎ যদি তার পদ্ধতিবিজ্ঞান, চিন্তাধারা ও শিক্ষা সংগঠনে এবং নতুন ইসলামী সামজবিজ্ঞান বিষয়সমূহে বুনিয়াদ রচনার ক্ষেত্রে সংস্কার প্রচেষ্টায় অর্জিত সাফল্যের মাত্রার উপর নির্ভরশীল হয় তাহলে বিভ্রান্ত ও হুমকিপ্রাপ্ত মানবজাতির ভবিষ্যৎ ইসলামী শিক্ষা ও আদর্শের জীবন্ত উদাহরণ পেশ করার ক্ষেত্রে মুসলমানদের যথার্থ তা নিরূপিত হতে পারে। ইসলামী মানবজাতিকে বেচেঁ থাকার জন্য যুক্তি ও কারণ উপহার দিয়েছে এবং মানবজাতি কীভাবে জীবনযাপন করবে সে জন্য নৈতিক নিয়মাবলী দিয়েছে। ইসলাম মানবজাতিকে তার ফিতরাত সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি দিয়েছে এবং দৃশ্য ও অদৃশ্যের সঙ্গে ব্যক্তি, সমাজ এবং সমগ্র বিশ্বের সঙ্গে বিশ্বজনীন সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি মাত্রা দিয়েছে। ইসলাম মানবজাতিকে একটি স্থিতিশীল সমাজ, অগ্রগতি, নিরাপত্তা এবং বিশ্ব শান্তির জন্য ভিত্তি দিয়েছে।
ইসলাম পরিবার নামক প্রষ্ঠিানকে রক্ষা করে। ইনসাফ, ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত দায়িত্ব, বিশ্বাস ও চিন্তার স্বাধীনতা, শূরা এবং উত্পত্তির দিক থেকে সমগ্র মানবজাতির ঐক্য, স্বার্থ ও ভাগ্যের নীতিসমূহ সমুন্নত রাখে। এ পূর্ণাঙ্গ ইসলামী দৃষ্টিই আধুনিক বস্তুবাদী সমাজের অকল্যাণ এবং এদের থেকে উদ্ভূত হুমকি দূর করতে সক্ষম আধুনিক সমাজের নৈতিক দেউলিয়াপনা এখন কারো কাছে গোপন নয়। বস্তুবাদের ছায়ায় বিশ্ব এখন উত্তর-দক্ষিণ, সাদা-কালো, ধনী-দরিদ্র, মাত্রাতিরিক্ত ভোজনকারী ও কম ভোজনকারী, উপনিবেশ স্থাপনকারী এবং ঔপনিবেশিক শাসনে শাসিত, প্রভু ও ভৃত্যে বিভক্ত। আজকের মানুষের কাছে শান্তির অর্থ আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত একজাতি বা অন্যজাতি, একশ্রেণী বা অপর শ্রেণী, এক শিবির বা অপর শিবিরের পক্ষ থেকে গণবিধ্বংসী বাহিনীকে হামলার জন্য ছেড়ে দেয়ার আতঙ্ককে দমন করা ছাড়া কিছু নয়। উন্নত দেশগুলোর সমাজে বিরাজিত মারাত্মক ত্রুটির কারণে তাদের কাছে বর্তমান সময়ে ইসলামের প্রয়োজন আগের যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। কারন ইসলামে এমন সব নীতি ও ধারণা রয়েছে যা উন্নত দেশের ত্রুটিগুলো সংশোধন করতে সক্ষম। এসব নীতি ও ধারণা সংক্ষেপে দুটি ভাগে প্রকাশ করা যায়।
ইসলামী ঐক্যের সমাজ
ইসলামী সমাজ ঐক্যের ভিত্তি ও ভ্রাতৃত্বের ধারণার উপর দাঁড়িয়ে আছে। এ কারণে এ সমাজের তত্পরতা ব্যক্তির মৌলিক প্রয়োজন পূরণের উপর কেন্দীভুত থাকে এবং পরিবার, প্রতিবেশী, জাতি এবং সাধারণভাবে মানবজাতির সঙ্গে ব্যক্তির যে অভিন্ন স্বার্থ থাকে তা পূরণের উপরও ইসলামী সমাজের কর্মসূচি ব্যস্ত থাকে। সমসাময়িক বিশ্বের বস্তবাদী শক্তিগুলোর সংঘর্ষের দর্শন হলো আগামী কালের দর্শন।
আল্লাহ এরশাদ করেন :
“হে মানুষ, তোমাদের রবকে ভয় করো যিনি তোমাদের একটি জীবন থেকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর তার থেকে তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন এবং তারপর তাদের থেকে অসংখ্য পুরুস ও নারী সৃষ্টি করেছেন।”(৪ : ১)
“হে মানুষ, আমরাই তোমাদেরকে পুরুষ ও নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদের বিভিন্ন জাতি ও ভ্রাতৃগোষ্ঠী বানিয়েছি যাতে তোমরা পরস্পরকে চিনতে পারো। নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক সম্মানিত সে যে আল্লাহকে বেশি ভয় করে।” (৪ : ১৩)
“তার নিদর্শনসমূহের মর্মে রয়েছে আকাশসমূহ ও জমিনের সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের ভিন্নতা ও পার্থক্য।”(৩০ : ২২)
“প্রথমে মানব সমাজ একই উম্মতভুক্ত ছিল, পরে তারা বিভিন্ন ধরণের মত ও পথ রচনা করে নিল।”(১০ : ১৯)
“পিতামাতার সাথে ভাল ব্যবহার কর, নিকটাত্মীয় ইয়াতীম ও মিসকিন, আত্মীয় প্রতিবেশী ও আনাত্মীয় প্রতিবেশী পাশাপাশি চলার সাথী ও পথিকের প্রতি।”(৪ : ৩৬)
“এ কারণে আমরা বনি ইসরাইলের প্রতি ও ফরমান লিখে দিয়েছিলাম, যদি কেহ কোনো খুনের পরিবর্তে কিংবা জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করা ছাড়া অন্য কোনো কারণে কাউকে হত্যা করে সে যেন সব মানুষকে হত্যা করল।”(৫ : ৩২)
“পারস্পরিক কাজকর্মে সহানুভূতি দেখাতে কখনো ভুল করো না।”(২ : ২৩৭)
“লোকদের সাথে সদালাপ করবে।”(২ : ৮৩)
“আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না সেসব লোকদের সাথে কল্যাণকর ও সুবিচারপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করতে যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে ঘরবাড়ি থেকে বের করে দেয়নি।”(৬০ : ৮)
“আর তোমরা যদি প্রতিশোধ গ্রহণ কর তাহলে শুধু ততটুকু প্রতিশোধ নেবে যতখানি তোমার উপর অত্যাচার করা হয়েছে। কিন্তু তোমরা যদি ধৈর্যধারণ করো, তাহলে নি:সন্দেহে ধৈর্যধারণকারীদের জন্য কাল্যাণ রয়েছে। (১৬ : ১২৬)
“তোমরা আল্লাহর পথে তাদের সাথে লড়াই কর যারা তোমাদের সাথে লড়াই করে। কিন্তু সে ব্যাপারে বাড়াবাড়ি ও সীমালঙ্ঘন করো না। (২ : ১৯০)
তারপর তারা বিরত হয়, তবে এ কথা জেনে রাখো কেবল যালেমদের ছাড়া কারো উপর হস্ত প্রসারিত করা সংগত নয়।”(২ : ১৯৩)
“কোনো বিশেষ দলের শত্রুতা তোমাদের যেন্ এতদূর উত্তেজিত না করে দেয় যে, তার ফলে ইনসাফ ত্যাগ করে বসবে। ন্যায়বিচার কর, বস্তুত, তাকওয়ার সাথে এর গভীর সামঞ্জস্য রয়েছে। (৫ : ৮)
“আর যখন কথা বলে, ইনসাফের কথা বলে, ব্যাপারটি নিজের আত্মীয়েরই হোক না কেন। (৬ : ১৫২)
আর লোকদের মধ্যে যখন (কোন বিষয়ে) ফয়সালা করবে তখন তা ইনসাফের সাথে করো। (৪ : ৫৮)
“যেসব কাজ পূর্ণ ও আল্লহ তাকওয়ামূলক তাতে সকলের সাথে সহযোগিতা কর আর যা গুনাহ ও সীমালঙ্ঘনের কাজ তাতে একবিন্দু সাহায্য ও সহযোগিতা করো না। (৫ : ২)
আর যদি ঈমানদার লোকদের মধ্য থেকে দুটি দল পরস্পরের লাড়াইয়ে লিপ্ত হয়ে পড়ে তাহলে তাদের মধ্যে সন্ধি করে দাও, পরে যদি তাদের মধ্য হতে একটি দল অন্য দলের প্রতি বাড়াবাড়ি ও সীমালঙ্ঘনমূলক আচরণ করে তা হলে সীমা লঙ্ঘনকারী দলটির সাথে লাড়াই কর, যতক্ষণ না সে দলটি আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসবে, অতপর সে যদি ফিরে আসে তা হলে তাদের মাঝে সুবিচার সহকারে সন্ধি করে দাও। আর ইনসাফ কর। আল্লাহ তো ইনসাফকারী লোকদের পছন্দ করেন। নিশ্চয়ই মুমিনরা তো পরস্পরের ভাই। অতএব, তোমাদের, ভাইদের পারস্পরিক সম্পর্ক যথাযথভাবে পুনর্গঠিত করা হবে। (৪৯ : ৯-১০)
ইসলামে জ্ঞান চর্চা
এ বিষয়টি জ্ঞানের এবং যে উপায়ে একাডেমিক গবেষণা চালানো হয় তার সাথে সম্পর্কিত। বস্তুবাদী চিন্তাধারা মৌলিকভাবে যুক্তিভিত্তিক, পরীক্ষামূলক, এবং আরোহী পদ্ধতির ভিত্তিতে রচিত যা বস্তব জগতের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান থেকে উদ্ভূত এবং এ থেকেই জীবন ও জগতেকে নিয়ন্ত্রনকারী আইনসমূহের তত্ত্ব (Theory) বের করা হয়। এ চিন্তাধারার সাথে ওহীর কোনো সম্পর্ক নেই। এর প্রধান কারন হচ্ছে যে, কোন একটা প্রধান ধর্ম সম্পর্কে পশ্চিমা জগতের আস্থার অভাব। এ অবস্থা তখনই সৃষ্টি হলো যখন এটা সাধারণভাবে জানাজানি হয়ে গেল যে খ্রিস্ট ধর্মের মূল গ্রন্থ (Text) বিকৃত হয়ে গেছে এবং এতে রয়েছে অনেক অযৌক্তিক, পরস্পরবিরোধী ও অবিশ্বাস্য বিষয়।
মানুষের সামাজিক স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য বিস্ময়কর এক জটিলতা। কোনো এক সময়ে যেসব উপাদান সমষ্টিগতভাবে মানুষের আচরণকে প্রভাবান্বিত করে আর তা যখন আমরা বুঝতে পারি, তখন স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করতে পারি কীভাবে সমাজ বিজ্ঞানের বিষয়গুলো এবং মতবাদের অব্যাহত অগ্রগতি সুব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়।
যেহেতু এসব ক্ষেত্রে যেসব ভুল করা হয়েছে তার পরিণতি স্বল্প মেয়াদে নির্ণয় করা সম্ভব নয় এবং একবার চালু হবার পর সংশোধন করা প্রায়ই অসম্ভব, সে ক্ষেত্রে আমরা ইসলামী জ্ঞানের বৈশিষ্ট্য সূচক উপাদানগুলো আরো ভালোভাবে অনুধাবন করতে কালক্ষেপণ করবো না। ইসলামী জ্ঞান ফিতরাহ এবং বিশ্বের প্রাকৃতিক আইন সম্পর্কে যুক্তিবাদী ও বস্তুবাদী জ্ঞান ঐক্যমত্য পোষণ করে। শুধু জ্ঞান অর্জনের কাজে থেমে না থেকে ইসলামী জ্ঞান অর্জিত জ্ঞানকে সংস্কৃতি ওপরিমার্জিত করার পথে এগিয়ে চলে এবং অর্জিত জ্ঞানের ত্রুটি বিচ্যুতির ফলে যাতে সমাজে কোনো নেতিবাচক প্রভাব সুষ্টি না হয় সেদিকে প্রচেষ্টা চালায়। এভাবে মুসলমানেরা খোদায়ী ওহীর মধ্যেমে প্রকাশিত সব দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রত্যয় এবং সামাজিক আচরণের মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে নিজেদের করণীয় কি হবে তা উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়। এ কারণে কোনো মুসলমান যদি এ বিষয়ে কোনো ভুল ধারণা পোষণ করতে শুরু করে তখন ওহী তার ভুল ধরিয়ে দিয়ে তার ধারণা পাল্টে দেবে। সুতরাং ইসলামী একই সাথে অভিজ্ঞতালব্ধ ও আরোহী পদ্ধতিতে অর্জিত জ্ঞানকে ওহীর উত্সর সঙ্গে উপস্থাপন করে যাতে মুসলমানরা নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী কাজকর্ম ও লেনদেন চালাতে পারে, অবশ্য যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের কাজকর্ম, লেনদেন সমাজের ওপর কোনো প্রভাব না ফেলে। এভাবে মুসলমানরা বিশেষ পরিস্থিতি অনুযায়ী জীবিকা অর্জন করতে পারে এবং তাদের পারিবারিক বিষয়াদি সুসম্পন্ন করতে পারে। সুতরাং ইসলামের শিক্ষাকে জিঞ্জির বা শৃঙ্খল হিসেবে নয় বরং জীবনের যাত্রাপথে আলোক সংকেত ও পথ নির্দেশনা হিসাবে বিবেচনা করতে হবে।
ঐক্যের সমাজ এবং জ্ঞানের উন্নয়ন- এ দুটি বিষয় মুসলমানরা উত্তমরূপে বুঝতে পারলে তা আগামীকালের বিশ্বের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে। ভবিষ্যতে মানব সমাজ আস যা ভুল করেছে আগামীকাল তার জন্য আর ক্ষতিপূরণ করতে পারবে না। ইসলামের ইতিহাসের সিদ্ধান্তকারী (Decisive) যুদ্ধগুলোতে নিহতের সংখ্যা কয়েকশ‘র বেশি হয়েছে এমনটি কমই দেখা গেছে এবং যুদ্ধক্ষেত্রের কাছাকাছি জাতি বা দেশগুলো, প্রতিপক্ষের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধের ফলে অপেক্ষাকৃত কমই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মানবজাতি যখন নিজেকে এবং যে গ্রহে সে বাস করছে তাকে ধ্বংস করার ক্ষমতা তার কাছে আছে এটা উপলব্ধি করতে পারবে তখন সে কুরআন ও সুন্নাহর বিধৃত ওহীভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ বিধিবিধানের প্রয়োজনীয়তা হৃদয়ঙ্গম করতে পারবে। কেবল এটা উপলব্ধি করেই মানবজাতি নিজেকে ধ্বংসের অতলগহ্বরে নিক্ষিপ্ত হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারবে। ঐক্য এবং অভিন্ন স্বার্থের অন্বেষা ছাড়া তার সামনে আর কোনো পথ থাকবে না। মুসলমানরা যে মিশন নিয়ে এসেছে, নিজেদের লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্য তা তাদের বোঝা প্রয়োজন।
“এভাবে আমরা তোমাদের মধ্যপন্থি জাতি বানিয়েছি যাতে তোমরা মানবজাতির প্রতি সাক্ষী হতে পারো। (২ : ১৪৩)
“সুতরাং যে কেহ অণু পরিমাণ ভাল কাজ করবে সে তা দেখবে এবং যে কেহ অণু পরিমাণ মন্দ কাজ করবে সে তা দেখবে। (৯৯ : ৭-৮)।
মুসলিম পন্ডিত ও চিন্তাবিদদের দায়িত্ব অনেক বেশি। কারণ তারা অন্যদের কাছে বাস্তবে ইসলামী মতবাদ কতখানি সুযুক্তিপূর্ণ তা সুস্পষ্ট কর তুলে ধরতে পারলে অথবা একটি আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারলে শুধু নিজেদেরকে এবং আপন সমাজকেই রক্ষা করতে পারবে না, বরং বৃহত্তর পরিসরে মানবজাতি ও সমাজকেও বাচাঁতে পারবো। অতপর তারা একটি শান্তি ও নিরাপত্তার সমাজ কায়েম করতে পারবে, বিজ্ঞান ও বৈষয়িক অগ্রগতির কর্মকান্ড পরিচালনা করতে পারবে এবং আল্লাহর নির্দেশানুসারে দুনিয়াতে খিলাফত সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।
ইসলামিকরণ : উম্মাহর বিচার্য বিষয়
এ অধ্যায়ের উদ্দেশ্য হলো উম্মাহর সার্বিক অবস্থা বর্ণনা করা এবং তারপর সেটা মুসলমানদের সামনে পেশ করা যাতে তারা সমাজের সমস্যাবলী আলোচনা করতে পারে এবং ব্যক্তি, উম্মাহ ও সমগ্র মানবজাতির জন্য স্বস্তির উপায় খুঁজে বের করতে পারে। এসব উচ্চতর লক্ষ্য অর্জনের প্রচেষ্টা থেকে সব চাইতে বেশি যা আশা করা যায়, তা হচ্ছে এর ফলে মুসলিম চিন্তাধারা সম্পর্কে গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে এবং মুসলিম মনকে উম্মাহর পশ্চাত্পদতার কারণ সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ বিবেচনায় অনুপ্রণিত করা।
এটি স্পষ্ট যে, উম্মাহর সম্পদ, সুযোগ-সুবিধা অথবা মূল্যবোধের প্রয়োজন বাস্তবে নেই। বরং তার অভাব হলো সুষ্ঠু চিন্তাধারার জন্য পদ্ধতিবিজ্ঞান। বাস্তবিকই উম্মাহর সমস্যাগুলো বিভ্রান্ত চিন্তাধারা, অস্পষ্ট সামাজিক দর্শন, সামষ্টিক ও অপর্যাপ্ত শিক্ষা এবং প্রতিষ্ঠানসমূহের বিলুপ্তির সাথে স্পষ্টভাবে সংযুক্ত। ফল দাড়িয়েছে এ যে, উম্মাহ এখন বিভক্ত এবং দুর্বল ও মাথানত করে থাকা গোলাম সদৃশ হতে শুরু করেছে। আশা করা যায়, ইসলামিকরণ এবং বিশেষভাবে জ্ঞানের ইসলামিকরন আগামী দশকগুলোতে উম্মাহর সামনে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠবে। এটাও আশা করা যেতে পারে যে, সমসাময়িক যুগের ইসলামী আন্দোলনের নেতৃত্ব ইসলামিকরণকে তাদের কর্মকান্ডের অবমূল্যায়ন হসেবে মনে করবে না বা এতে তাদের খ্যাতি হ্রাস পাবে বলেও মনে করা হবে না। বরং সুষ্ঠু চিন্তাধারা বা ধারণা ব্যতিরেকে এবং সেগুলো মানুষের কাছে পৌছিয়ে দেয়ার যোগ্য লোক ছাড়া রাজনৈতিক কর্মকান্ড ও সংগঠন নিশ্চিতভাবে বিনষ্ট হয়।
এ সমস্যাকে উম্মাহর সমস্যা হিসেবে বোঝা অত্যাবশ্যক এবং এটাকে বিশ্বসভ্যতার নেতার যোগ্য আসনে সমাসীন হওয়ার আগে প্রস্তুতির স্তর হিসেবেই গণ্য করতে হবে। এভাবে বিষয়টি ক্ষমতায় আরোহণের বা একটি এলাকার উপর শাসন পরিচালনা বা একটি রাজনৈতিক দল গঠনের নয়। চিন্তাধারা এমন একটি অপরিহার্য বিষয় যা আরও বুনিয়াদী স্তরে কাজ করে এবং যে কোনো কর্মসূচিকে বাস্তব ফলাফল প্রদানের উপযোগী করে তোলে।
এটিও খুবই প্রয়োজন যে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে, যাতে তারা পরস্পরের পরিপূরক হয় এবং অন্যকে সহায়তা দান করতে পারে। মনে রাখতে হবে যে, এক বিষয়ের উপর অন্য বিষয়কে অগ্রাধিকার দেয়া মানে এ নয় যে, তাদের কোন একটি বিষয়কে অবহেলা হবে বা ভুলে যেতে হবে। সুতরাং বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক উদ্যোগের সাথে সাথে একাডেমিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পর্যায়েও কাজ করতে হবে। বাস্তবে রাজনৈতিক কর্মকান্ডকে প্রকৃতিগতভাবে আত্মরক্ষামূলক এবং মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য উম্মাহ নিজেকে উন্নত করতে পারে এবং তার সম্পদ বৃদ্ধির জন্য গৃহীত বলে মনে করতে পারে।
আরো একাটি বিষয় পরিস্কার হওয়া উচিত। একাডেমিক কাজের নিজস্ব বাস্তব কর্মপরিধি রয়েছে। এগুলো পদ্ধতিবিজ্ঞান, জ্ঞানতত্ত্ব, দর্শন ইত্যাদি মৌলিক বিষয়গুলোর সাথে সম্পর্কিত। এগুলোর মধ্যে ব্যবহারিক, প্রায়োগিক গতিবিজ্ঞান বা রণকৌশল সম্বন্ধীয় বিষয়ও রয়েছে। এর মধ্যে অধিকতর মৌলিক ও জটিল বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলোর উপর উম্মাহকে জোর দিতে হবে। ব্যবহারিক ও প্রয়োগিক স্তরের সাফল্য মৌলিক স্তরে পদ্ধতিবিজ্ঞান সংক্রান্ত বিষয়সমূহের সুষ্ঠুতা ও গভীরতার উপর নির্ভর করে। এর দ্বারা আমরা প্রায় ১০০ বছর আগে আবদুর রহমান আল কাওয়াকিবি প্রণীত ‘উম্মুল কোরা’ পুস্তকের গুরুত্বপূর্ণ চিন্তাধারা বুঝতে পারি এবং ইসলামী পুনর্জাগরণ কিভাবে হবে তা স্পষ্টভাবে এবং বিস্তারিতভাবে জানতে পারি। এ আন্দোরন দ্বারা স্থানীয়ভাবে কিছু সাফল্য অর্জন ছাড়া উম্মাহর জন্য গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু করা সম্ভব হয়নি। তবে আশার কথা যে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চ্যালেঞ্জ হিসেবে ইসলামী সংস্কারমুখী কাজ চালিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে প্রচেষ্টা জোরদার করা হবে।
উম্মাহর মনীষী ও চিন্তাবিদদের কাছে বিষয়টি এতটা স্পষ্ট হলে এবং তারা উম্মাহর কাছে বিশদভাবে বাণী পৌছিয়ে দেয়ার জন্য আন্তরিকভাবে দৃঢ় সংকল্প হলে বিষয়টি সম্পুর্ন হতো এবং সবার মধ্যে অগ্নিস্ফূলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়ত। এ সম্পর্কে ইতিহাসের শিক্ষা একেবারে পরিস্কার। সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুযুক্তিপূর্ণ ধ্যান ধারণা এবং স্বচ্ছ চিন্তাধারার অধিকারী জাতি তারাই যারা নতুন ও বৃহত্তর সাফল্য নিয়ে বসন্তকালীন বন্যার ন্যায় আকস্মাত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তবে আশার কথা, অপেক্ষাকৃত স্বল্প সময়ের ব্যবধানেও পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটতে পারে।
উম্মাহর চিন্তাবিদ ও মনীষীদের অবশ্যই তাদরে দৃঢ় সঙ্কল্প ও মনোযোগ সর্বপ্রথম মুসলিম চিন্তাধারার সংস্কারের উপর দিতে হবে এবং উম্মাহ ও তার নেতৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গির স্বচ্ছতা সাধনের ওপর কেন্দ্রীভূত করত হবে। এরপর ইনশাআল্লাহ উম্মাহ ভবিষ্যৎ নির্মাণ এবং নয়া দিগন্ত অভিমুখে অগ্রসর হতে শুরু করবে।
পরিশেষ
আল্লাহর কাছে আমাদের মোনাজাত তিনি যেন আমাদের প্রজ্ঞা ও পথনির্দেশনা দান করেন। তিনি যেন আমাদেরকে পাথরকুঁচি থেকে মুক্তি দেন যার নিচে রয়েছে উম্মাহ ও সমগ্র মানবজাতির ধ্বংস এবং আমাদেরকে পরিণত করেন এমন পূন্যবান কর্মীবাহিনীতে, যারা আল্লাহর ডাকে সাড়া দেয় এবং তাঁর নাযিল কৃত সর্বোত্কৃষ্ট বিধানের অনুসরণ করে।
নিখিল বিশ্বের স্রষ্টা আল্লাহর জন্যই সকল প্রশংসা।
— সমাপ্ত —