দীনের দাওয়াত
দীনের প্রতি আহবানকারীদের আচার আচরণ
১. দায়ী হিসেবে তোমার পদের প্রকৃত জ্ঞান সৃষ্টি কর, কেননা, তুমি নবীর উত্তরাধিকারী। দীনের দাওয়াত, সত্যের সাক্ষ্য এবং তাবলীগ বা প্রচারের কর্তব্য সম্পাদন করতে হবে যা আল্লাহর নবী করেছেন। সুতরাং দায়ীসুলভ ব্যাকুলতা সৃষ্টির চেষ্টা কর যা রাসূল(সা)এর ছিল।
পবিত্র কোরআনে উল্লেখ আছেঃ আরবী (*******)
“তিনি (আল্লাহ) তোমাদেরকে নির্বাচিত করেছেন এবং দীনের মধ্যে তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা রাখেন নি। তোমাদের পিতা ইবরাহীম(আ) এর দীন, তিনি তোমাদের নাম রেখেছেন মুসলিম। আর রাসূল(সা) তোমাদের সাক্ষী, তোমরা মানুষের সাক্ষী হও।”
অর্থাৎ মুসলিম উম্মতগণ রাসূল (সা) এর উত্তরাধিকারী। তাকে তাই করতে হবে যা রাসূল(সা) করেছেন। যেভাবে রাসূল(সা) নিজের কথা ও কাজ, দিন ও রাতের কুরবানী আল্লাহর দীন প্রচারের কাজে ব্যয় করেছেন, ঠিক অনুরূপ উম্মতকেও দুনিয়ার সকল মানুষের নিকট আল্লাহর দীনকে পৌছে দিতে হবে এবং এ কর্তব্যের কথা সর্বদা স্মরণ রাখতে হবে যেন সত্য দীনের জীবিত সাক্ষ্য হয়ে থাকা যায়।
২. নিজের মর্যাদার প্রতি সর্বদা লক্ষ্য রাখবে, জীবনকে যথার্থ করে গঠন করা এবং পবিত্র রাখার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। দুনিয়ার অন্যান্য উম্মতের মত একজন উম্মত নয় বরং আল্লাহ তোমাকে একটি স্বতন্ত্র মর্যাদা দান করেছেন। তোমাকে দুনিয়ার জাতি সমূহের মধ্যে নেতৃ্ত্বদানের দায়িত্ব দিয়েছেন।
পবিত্র কুরআনে আছে-
আরবী (*********)
“আমি তোমাদেরকে একটি মধ্যপন্থী উম্মত হিসেবে সৃষ্টি করেছি, যেন তোমরা লোকদের সাক্ষী হও এবং রাসূল তোমাদের সাক্ষী হন।” (সূরায়ে বাকারাহ)।
৩. উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য নয় বরং প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করে হৃদয়ে ধারণ করবে। আল্লাহর দৃষ্টিতে উম্মাতের প্রধান উদ্দেশ্য দীনকে প্রতিষ্ঠিত করবে যা হযরত মুহাম্মদ (সা) নিয়ে এসেছেন আর যে আকীদাসমূহ ও সমাজনীতি রাষ্ট্রনীতি তথা মানবিক জীবনের সাথে সম্পর্কিত সবই আসমানী হেদায়াতের অন্তর্গত। রাসূল(সা) নিজে এ দীনকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি মৌল বিশ্বাস ও চরিত্র সম্পর্কে এবং ইবাদতের নিয়ম পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন। জীবনকে সুশৃংখলিত করে এবং ভাল ও প্রাচুর্য দ্বারা পরিপূর্ণ করে এক বরকতময় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন।
৪. অসৎ কাজকে ধ্বংস ও সৎকাজ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রস্তুত থাকবে এবং এটাই ঈমানের দাবী, আর এটাই জাতীয় অস্তিত্বের উদ্দেশ্য। এ উদ্দেশ্যের জন্যই বেঁচে থাকবে আর এ জন্যই প্রাণ বিসর্জন দিবে। এ কাজ সম্পাদনের জন্যই মহান আল্লাহ ‘খায়রে উম্মত’ বা ‘উত্তম জাতি’ নামক মহা উপাধিতে ভূষিত করেছেন।
“তোমাদেরকে খায়রে উম্মাত (উত্তম জাতি) বা সমগ্র মানবতার উপকারার্থে সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দিবে, অসৎকাজ হতে মানুষদের বিরত রাখবে আর আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখবে।” (আল কুরআন)।
আরবী (*****)
রাসূল (সা) বলেছেন, “সে সত্ত্বার শপথ যার হস্তমুষ্টিতে আমার প্রাণ, তোমরা অবশ্যই সৎকাজের নির্দেশ দিবে এবং অসৎ কাজ হতে বিরত রাখবে নতুবা আল্লাহ তায়ালা অচিরেই তোমাদের ওপর এমন আযাব অবতীর্ণ করবেন যে, তখন তোমরা দোআ করতে থাকবে কিন্তু তোমাদের দোআ কবুল হবে না।” (তিরমিযী)।
৫. আল্লাহর বার্তা পৌছানো এবং আল্লাহর বান্দাদেরকে জাহান্নামের ভয়াবহ আযাব হতে বাঁচানোর জন্য আহবানকারীদের উদাহরণ পেশ করার মত যোগ্য ব্যক্তিত্ব সৃষ্টি করা। রাসূল(সা) এর অনুপম ব্যাকুলতা ও অন্তরের ব্যথার কথা পবিত্র কুরআনে এই ভাষায় উল্লেখিত হয়েছেঃ
فَلَعَلَّكَ بَاخِعٌ نَّفْسَكَ عَلَىٰ آثَارِهِمْ إِن لَّمْ يُؤْمِنُوا بِهَٰذَا الْحَدِيثِ أَسَفًا [١٨:٦]
“সম্ভবতঃ আপনি তাদের দুঃখে আপনার জীবন ধ্বংস করে দিবেন যদি তারা কেতাবের উপর ঈমান না আনে।” (সূরায়ে কাহাফ-৬)।
স্বয়ং রাসূল(সা)ও নিজের এ অবস্থার কথা বর্ণনা করেছেন এভাবে-
“আমার উদাহরণ ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে আগুন প্রজ্জলিত করেছে আর যখন তার চারিদিক আগুনের আলোতে ঝলমল করে উঠল তখন চতুর্দিক হতে কীটপতঙ্গগুলো আগুনের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়তেই থাকলো। অনুরূপভাবে আমিও তোমাদের কোমর চেপে ধরে জাহান্নামের আগুন হতে বাঁচাতে চেষ্টা করছি অথচ তোমরা আগুনের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ছো।” (মেশকাত)।
একবার হযরত আয়েশা(রা) রাসূলুল্লাহ(সা) কে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! উহুদ ময়দানের চেয়ে কঠিন অবস্থা কি কোনদিন আপনার উপর অতিক্রম করেছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই। তা ছিল ঐদিন যেদিন তিনি মক্কাবাসীদের নিকট থেকে নিরাশ হয়ে তায়েফবাসীদের নিকট আল্লাহর দীনের দাওয়াত দিতে গিয়েছিলেন। সেখানের সরদার আবদে ইয়ালীল শহরের গুন্ডাদেরকে তার পেছনে লেলিয়ে দিলো আর তারা আল্লাহর দীনের রহমত ও বরকতময় দাওয়াতের জবাবে পাথর বর্ষণ করলো। আল্লাহর রসূল রক্তে রঞ্জিত হয়ে গেলেন আর বেহুঁশ হয়ে ঘুরে পড়লেন। হুঁস ফিরে আসলে তিনি অস্থির ও দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে সেখান হতে ফিরে গেলেন। সালাব নামক স্থানে পৌঁছার পর দুঃখ কিছুটা হাল্কা হলো। এখানে আল্লাহ আযাবের ফেরেশতাকে তাঁর নিকট প্রেরণ করলেন। তখন আযাবের ফেরেশতা বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি যদি নির্দেশ দেন তা হলে আমি কোরাইশ পাহাড়ের ও লাল পাহাড়ের মধ্যে পরস্পর ধাক্কা লাগিয়ে দেব? আর উভয় পাহাড়ের মধ্যবর্তী এ সকল পাপিষ্ঠকে পিষে তাদের পরিণাম জাহান্নামে পৌছে যাবে। রাহমাতুল্লিল আলামীন আল্লাহর রাসূল বললেন, না, না। আমাকে ছেড়ে দাও। আমি আমার জাতিকে ভয় প্রদর্শন করতে থাকবো। হয়তোবা আল্লাহ তাআলা তাদের অন্তরকে হেদায়াতের জন্য খুলে দিবেন, অথবা তাদের সন্তান সন্তুতিদের মধ্যে এমন লোক সৃষ্টি হবে যারা হেদায়াত কবুল করবে।” (বুখারী, মুসলিম)।
রাসূল(সা) মক্কায় আছেন এবং মক্কার লোকদের মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কেউ বলছে দেশ থেকে বের করে দাও, কেউ বলছে তাকে হত্যা করে ফেলো। এমন সময় মক্কায় মারাত্মক দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। কোরাইশের লোকেরা অভাবের তাড়নায় গাছের পাতা ও ছাল-বাকল খেতে বাধ্য হলো। শিশুরা ক্ষুধার জ্বালায় ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতো আর বড়রা তাদের এ দুরবস্থা দেখে অত্যন্ত ব্যাকুল হয়ে উঠতো।
রহমতে আলম সমাজের এ কঠিন বিপদ দেখে অস্থির হয়ে পড়লেন এবং তাঁর সাথীরাও তাঁর অস্থিরতা দেখে ব্যাকুল হয়ে উঠলেন। তাঁর এ প্রাণের শত্রুদেরকে যাদের থেকে প্রাপ্ত জখম তখনও তাজা ছিল তিনি সহানুভূতির বাণী প্রেরণ করলেন এবং আবু সুফিয়ান ও ছাফওয়ানের নিকট পাঁচশত দীনার প্রেরণ করে বলে পাঠালেন, এ দীনারগুলো দুর্ভিক্ষপীড়িত গরীবদের মধ্যে বন্টন করে দেয়া হোক।
৬. জাতির খেদমতে নিয়োজিত অবস্থায় নিজের কোন খেদমতের প্রতিদান মানুষের কাছে চাইবে না। যা কিছু করবে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করবে আর তাঁর নিকটই নিজের পুরস্কার ও সাওয়াবের আশা করবে। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সাওয়াবের আশা এমন ক্রিয়াশীল যা মানুষের উপর প্রভাব সৃষ্টি করে আর মানুষকে উৎসাহ প্রদান করে। আল্লাহ চিরকাল আছেন এবং চিরকাল থাকবেন। তাঁর ঘুমও আসেনা এবং তন্দ্রাও ধরে না। বান্দাহর কোন আমলই তাঁর দৃষ্টির বাইরে নয়। তিনি তাঁর বান্দাহদের পুরস্কার কখনো নষ্ট করেন না। তিনি পরিশ্রমের অনেক গুণ বেশি পুরস্কার দেন। আর কাউকে বঞ্চিতও করেন না।
নবীগণ তাঁদের জাতিকে বলতেন, “আমি তোমাদের নিকট কোন পুরস্কার বা প্রতিদান আশা করি না, আমার পুরস্কার তো আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দায়িত্বে।”
৭. ইসলামের গভীর জ্ঞান অর্জন করা এবং দৃঢ়ভাবে এ বিশ্বাস রাখা দরকার যে, আল্লাহর নিকট ইসলামই একমাত্র দীন। এ দীনকে ছেড়ে ইবাদতের যে কোন নিয়ম পদ্ধতিই গ্রহণ করা হোক না কেন আল্লাহর নিকট কোন মর্যাদা ও মূল্য হবে না। আল্লাহর নিকট তার তো ঐ দীনই গ্রহণীয় যা কুরআনে আছে। যার আমলী ব্যাখ্যা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নিজের বরকতময় জিন্দেগী দ্বারা পেশ করেছেন।
পবিত্র কুরআনে আছেঃ
قُلْ هَٰذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ ۚ عَلَىٰ بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي ۖ وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ [١٢:١٠٨]
(হে রাসূল!)“আপনি বলে দিন যে, ইহা আমার পথ। আমি ও আমার অনুসারীগণ দুরদৃষ্টির সাথে আল্লাহর দিকে আহবান জানাচ্ছি। আর আল্লাহ প্রত্যেক দোষ হতে পবিত্র এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।” (সূরায়ে ইউসুফ-১০৮)।
আল্লাহপাক আরো পরিষ্কার করেছেনঃ
وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ [٣:٨٥]
“যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য দীনের অন্বেষণ করবে, তার থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (সূরায়ে আলে ইমরান-৮৫)।
ইন্নাদ্দিনা ইনদাল্লাহিল ইসলাম।
“নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট ইসলামই মনোনীত একমাত্র দীন।”
৮. নিজের এ উদ্দেশ্যের মহত্ত্ব ও গুরুত্বকে সর্বদা স্মরণ রাখবে এবং এও লক্ষ্য রাখবে যে, উহা মহান কাজ, যার জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে নবী প্রেরিত হয়েছেন। আর বিশ্বাস রাখবে যে আল্লাহ দীনের যে দৌলত বা নিয়ামত দান করেছেন তা ইহকাল ও পরকালের উন্নতির মূলধন।
পবিত্র কুরআনে আছে-
“আমি আপনাকে সাতটি পুনরাবৃত্তির আয়াত এবং মহত্বের অধিকারী কুরআন দান করেছি। সুতরাং আপনি ধ্বংসশীল জাগতিক সম্পদের প্রতি দৃষ্টি দিবেন না, যা আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণীকে পূর্বেই দিয়ে রেখেছি।”
আহলী কিতাবদেরকে সম্বোধন করে বলা হয়েছে-
আরবী (****)
“হে আহলে কিতাব, তোমরা কিছুই নও যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা তৌরাত ইঞ্জীল আর অন্যান্য কিতাবকে প্রতিষ্ঠিত করো যা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে অবতীর্ণ করা হয়েছে।”
৯. দীনের সঠিক বুঝ অর্জন আর দীনের রহস্যসমূহ বুঝার চেষ্টা করতে থাকবে।
রাসূল(সা) বলেছেনঃ “আল্লাহপাক যাকে কিছু দান করতে ইচ্ছা পোষণ করেন তাকে নিজের দীনের সঠিক বুঝ দান করেন।” (বুখারী, মুসলিম)।
১০. কেউ যদি দুনিয়ার সামনে কিছু পেশ করতে চায় তাহলে প্রথমে নিজেকেই করবে। অপরকে শিক্ষা দেবার আগে নিজেকেই শিক্ষা দিবে। অপরের কাছ হতে যা চাইবে তা আগে নিজে করে দেখাবে। সত্য দীনের আহবানকারীর পরিচয় হলো সে তার সঠিক আদর্শ পেশ করবে। সে যা কিছু বলে, তা নিজের আমল ও কর্মকে তার সাক্ষী করে রাখে। যে সকল সত্য গ্রহণে সে নিজেকে দুনিয়ায় সৌভাগ্যবান মনে করে সে নিজেকে উহার সর্বাধিক যোগ্য করে নিবে। নবীগণ যখনই জাতির সামনে দাওয়াত নিয়ে অগ্রসর হয়েছেন, তখনই ঘোষণা করেছেন, আমিই প্রথম মুসলিম।
মুখ ও কলমের সাহায্যে সাক্ষ্য দেবে যে, সত্য তাই, যা সে পেশ করেছে আর নিজের ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক ও সামাজিক কাজ কারবার আর রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় চেষ্টা তদবীর দ্বারাও প্রমাণ করবে যে, সত্য দীনকে গ্রহণ করেই পবিত্র চরিত্র সৃষ্টি হয়, আদর্শ পরিবার ও উত্তম সমাজ গঠিত হয়।
আল্লাহর নিকট অত্যন্ত অপছন্দনীয় হলো যে অন্যকে উপদেশ দেয় কিন্তু নিজে আমল করে না আর এমন কথা বলে যা সে নিজেই করে না। রাসূল (সা) এরূপ বেআমলকারীদেরকে ভয়ানক আযাবের ভয় দেখিয়েছেন।
রাসূল (সা) বলেছেন-কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে আগুনে ফেলে দেওয়া হবে এবং ঐ আগুনের উত্তাপে তার নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে পড়বে। নাড়িভুঁড়ি নিয়ে এভাবে ঘুরবে যেন গাধা তার চাক্কিতে ঘোরে। এসব দেখে অন্যান্য জাহান্নামী তার নিকট একত্রিত হবে আর জিজ্ঞেস করবে, হে অমুক ব্যক্তি! তোমার কি অবস্থা? তুমি কি দুনিয়ায় আমাদেরকে নেক কাজের শিক্ষা দিতে না এবং অসৎ কাজ হতে বিরত রাখতে না? এরূপ নেক কাজ করা সত্ত্বেও তুমি কিভাবে এখানে আসলে? তখন বলবে, আমি তোমাদেরকে সৎকাজের শিক্ষা দিতাম, কিন্তু নিজে কখনো সৎ কাজের নিকটেও যেতাম না। তোমাদেরকে তো অসৎ কাজ হতে বিরত রাখতাম কিন্তু আমিই অসৎ কাজ করতাম।(মুসলিম, বুখারী)।
মেরাজের রাতের যে উপদেশমূলক দৃশ্য রাসূল(সা) মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন তার এক গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হচ্ছে খারাপ লোকদের সতর্ক করে দেয়া এবং তারা যেন নিজেদের অবস্থার সংশোধনের চিন্তা ও চেষ্টা করে।
রাসূল (সা) বলেছেন-“আমি মেরাজের রাতে কিছু লোককে দেখতে পেলাম যে, আগুনের কাঁচি দ্বারা তাদের ঠোঁট কর্তন করা হচ্ছিল। আমি জিবরাঈল(আ)কে জিজ্ঞেস করলাম, এরা কোন লোক? জিবরাঈল (আ) বললেন, এরা আপনার উম্মতের বক্তা, এরা অন্যদেরকে সৎকাজ ও পরহেজগারীর কথা শিক্ষা দিত অথচ নিজেরা তা করতো না।” (মেশকাত)।
একদা এক ব্যক্তি হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ(রা)কে বললো, হযরত, আমি আশা করি যে, লোকদেরকে সৎকাজের আদেশ দিব, অসৎ কাজ হতে বিরত রাখবো এবং দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করবো। তিনি বললেন, তুমি কি মুবাল্লিগ হওয়ার স্তরে পৌছতে পেরেছো? সে বললো, হ্যাঁ, আশা আছে। হযরত ইবনে আব্বাস(রা) বললেন, তোমার যদি এ আশঙ্কা না হয় যে, পবিত্র কুরআনের তিনটি আয়াত তোমাকে অপদস্ত করবে, তাহলে তুমি দীনের তাবলীগের কাজ করো। সে ব্যক্তি বললো, হযরত, আয়াত তিনটি কি? হযরত ইবনে আব্বাস বললেনঃ প্রথম আয়াত এই-
أَتَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنسَوْنَ أَنفُسَكُمْ
“তোমরা কি লোকদেরকে সৎকাজের নির্দেশ দিচ্ছ আর তোমরা নিজেদের কথা ভুলে যাচ্ছ? ” (সূরায়ে আল বাক্বারাহ ৪৪)।
হযরত ইবনে আব্বাস(রা) বলেছেন, এ আয়াতের উপর কি তোমার পূর্ণ আমল আছে? সে বলল, না।
দ্বিতীয় আয়াত এইঃ
لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا تَفْعَلُونَ [٦١:٢]
তোমরা যা করো না তা বলো কেন? (সূরায়ে ছফ-২)।
তুমি এ আয়াতের উপর পূর্ণ আমল করেছ? সে বললো, না।
তৃতীয় আয়াত এই-
وَمَا أُرِيدُ أَنْ أُخَالِفَكُمْ إِلَىٰ مَا أَنْهَاكُمْ عَنْهُ ۚ
হযরত শোআইব(আ) নিজের জাতির লোকদের বললেন-
“যে সব অসৎ কাজ হতে তোমাদেরকে নিষেধ করেছি, তা আমি করব, সে ইচ্ছা আমি করি না। বরং আমি সেসব হতে দূরে থাকবো।” (সূরায়ে হুদ-৮৮)।
বলো, তুমি কি এ আয়াতের উপর পূর্ণ আমল করতে পেরেছো? সে বলল, না। তখন হযরত ইবনে আব্বাস(রা) বললেন যাও, প্রথমে নিজেকে সৎ কাজের নির্দেশ দাও এবং অসৎ কাজ হতে বিরত রাখ।”
১১. নামায তার পূর্ণ নিয়ম পদ্ধতি ও শর্তসমূহসহ গুরুত্বের সাথে আদায় করবে। নফল নামাযসমূহেরও গুরুত্ব প্রদান করবে। আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ সম্ভব নয়। আল্লাহর সাথে সম্পর্ক সৃষ্টির একমাত্র উপায় হলো একমাত্র নামায, যা স্বয়ং আল্লাহ নিজেই তাঁর বান্দাহদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন।
আল্লাহ তাঁর নবীকে সম্বোধন করে বলেছেনঃ
يَا أَيُّهَا الْمُزَّمِّلُ قُمِ اللَّيْلَ إِلَّا قَلِيلًا نِّصْفَهُ أَوِ انقُصْ مِنْهُ قَلِيلًا أَوْ زِدْ عَلَيْهِ وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِيلًا إِنَّا سَنُلْقِي عَلَيْكَ قَوْلًا ثَقِيلًا
“হে চাদর আচ্ছাদনকারী! রাতে কিয়াম করুন। কিন্তু কিছু কিছু রাত, অধেরক অথবা তার চেয়ে কিছু কম বা বেশী, কুরআনকে ধীরে ধীরে বিন্যস্তভাবে পড়ুন। আমি নিশ্চিই অনতিবিলম্বেই আপনার উপর একটি গুরুদায়িত্বের ভারী নিদেশ প্রেরণ করবো।” (সূরায়ে মুযযামিলঃ ১-৫)।
গুরুদায়িত্বের ভারী নির্দেশের দ্বারা ‘‘সত্য দীনের তাবলীগ’’ বুঝানো হয়েছে। এ দায়িত্ব দুনিয়ার সকল দায়িত্ব থেকেও অধিক ভারী ও কঠিন। এ মহান দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োজন ঐ ব্যক্তির, যে নামাযের দ্বারা শক্তি অর্জন করবে এবং আল্লাহর সাথে সম্পর্ক মজবুত করবে।
১২. পবিত্র কুরআনের সাথে গভীর মহব্বত সৃষ্টি করবে এবং নিয়মানুবর্তিতার্ সাথে তা তেলাওয়াত করবে। নামাযে অত্যন্ত মনোযোগের সাথে তেলাওয়াত করবে আর নামাযের বাইরেও উৎসাহের সাথে ধীরে ধীরে তেলাওয়াত করবে। মনোযোগের সাথে যে কুরআন তেলাওয়াত করা হয় তা দ্বারা কুরআন উপলব্ধি করা সহজ হয় এবং আগ্রহ ও আকাঙ্খাও বৃদ্ধি পায়। পবিত্র কুরআন হেদায়াত ও উপদেশের একমাত্র উৎস এবং ইহা এজন্য অবতীর্ণ হয়েছে যে, তার আয়াতের গবেষণা করা হবে আর তার উপদেশ ও নছীহত দ্বারা উপকার গ্রহণ করা যাবে। ধ্যান ও চিন্তার অভ্যাস করতে হবে আর এ সংকল্পের সাথে কুরআন তেলাওয়াত করতে হবে এবং এরই পথ নির্দেশনায় নিজের জীবন গঠন ও নির্দেশ মোতাবিক সমাজের পরিবর্তন সাধন করতে হবে। আল্লাহর দীনকে এ লোকেরাই প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে যারা নিজেরা চিন্তা গবেষণার কেন্দ্রবিন্দুতে পবিত্র কুরআনকে নিধারিত করবে। এর থেকে বেপরোয়া হয়ে নিজেও দীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা সম্ভব নয় এবং দীন প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় অংশগ্রহণেরও কোন অবকাশ নেই।
কুরআন তেলাওয়াতকারীদের হেদায়াত করা হয়েছে এভাবে-
كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ إِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِّيَدَّبَّرُوا آيَاتِهِ وَلِيَتَذَكَّرَ أُولُو الْأَلْبَابِ [٣٨:٢٩]
“এ কিতাব, যা আমি আপনার উপর অবতীর্ণ করেছি তা সম্পূর্ণই বরকতময়, যেন তারা এর আয়াতসমূহ নিয়ে চিন্তা গবেষণা করে আর যেন জ্ঞানীদের নিকট হতে শিক্ষা গ্রহণ করে।” (সূরা সোয়াদ-২৯)।
রাসূল(সা) বলেছেনঃ
“অন্তরে মরিচা ধরে যায় যেমন পানি পড়ার কারণে লোহায় মরিচা ধরে যায়। জিজ্ঞেস করা হলো, ইয়া রাসূলুল্লাহ! অন্তরের মরিচা দূর কার উপায় কি? তিনি বললেন, অন্তরে মরিচা এভাবে দূর হয়, প্রথমতঃ মানুষ মৃত্যুকে স্মরণ করে আর দ্বিতীয়ত কুরআন তেলাওয়াত করে।” (মিশকাত)।
১৩. সর্বাবস্থায় আল্লাহর শোকর আদায় করবে। শোকরের আবেগ সৃষ্টির জন্য এই সকল লোকের প্রতি দৃষ্টি রাখবে যারা পার্থিব পদমযাদায় এবং ধন সম্পদ তার থেকে নিম্নতম।
রাসূল (সা) বলেছেনঃ “ ঐ সকল লোকের দিকে দেখ যারা তোমার চেয়ে ধন-সম্পদ ও পার্থিব সাজ সরঞ্জামে তোমার চেয়ে বেশী। যেন এ সময় তুমি যেসব নেয়ামত পেয়েছ তা তোমার দৃষ্টিতে তুচ্ছ না হয়।”
১৪. বাহুল্য সুখ অন্বেষণ হতে বিরত থাকবে। এমন সৈনিকরূপে নিজেকে গঠন করবে যে সবসময় ডিউটিতে রত থাকবে এবং কোন সময়ই হাতিয়ার রেখে দেবে না।
রাসূল(সা) বলেছেন-
“আমি সুখ ও সমৃদ্ধির জীবন কিভাবে যাপন করব? ইসরাফীল(আ) সিঙ্গা মুখে নিয়ে, কান খাড়া করে, মাথা নত করে অপেক্ষা করছেন যে, কখন সিঙ্গায় ফুঁ দেবার আদেশ হবে?”
পবিত্র কুরআনে মুমিনগণকে সম্বোধন করে আল্লাহ বলেছেনঃ
وَأَعِدُّوا لَهُم مَّا اسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّةٍ وَمِن رِّبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِ عَدُوَّ اللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ وَآخَرِينَ مِن دُونِهِمْ لَا تَعْلَمُونَهُمُ اللَّهُ يَعْلَمُهُمْ ۚ وَمَا تُنفِقُوا مِن شَيْءٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنتُمْ لَا تُظْلَمُونَ [٨:٦٠]
“তোমরা তোমাদের সামর্থ অনুযায়ী শক্তি প্রয়োগ করো এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ঘোড়াগুলোকে তাদের মোকাবেলায় প্রস্তুত রাখো যেন তার দ্বারা আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রু আর ঐ সকল শত্রুকে ভীত করে তুলতে পারে, যাদেরকে তোমরা জান না কিন্তু আল্লাহ জানেন। তোমরা আল্লাহর পথে যা কিছু খরচ করবে তার পূর্ণ প্রতিদান অবশ্যই তোমরা পাবে। তোমরা অত্যাচারিত হবে না, অর্থাৎ তোমাদের প্রতিদানে কোন প্রকারের হেরফের হবে না।” (আল আনফাল ৬০)।
১৫. দীনের জন্য সকল প্রকার কুরবানী দিতে এবং প্রয়োজনবোধে নিজের মাতৃভূমি হতে হিজরত করতেও নিজেকে (মানসিকভাবে) পুরোপুরি প্রস্তুত রাখবে আর নিজেকে পরিমাপ করতে থাকবে যে, তোমার মধ্যে এ আবেগ কতটুকু শক্তিশালী হয়েছে?
পবিত্র কুরআনে হযরত ইবরাহীম(আ) এর হিজরতের ঘটনা বর্ণনাক্রমে হিজরতের উৎসাহ এবং কুরবানীর জন্য প্রস্তুত থাকার শিক্ষা দিয়েছেন এভাবে-
وَاذْكُرْ فِي الْكِتَابِ إِبْرَاهِيمَ ۚ إِنَّهُ كَانَ صِدِّيقًا نَّبِيًّا﴿٤١﴾
إِذْ قَالَ لِأَبِيهِ يَا أَبَتِ لِمَ تَعْبُدُ مَا لَا يَسْمَعُ وَلَا يُبْصِرُ وَلَا يُغْنِي عَنكَ شَيْئًا ﴿٤٢﴾
يَا أَبَتِ إِنِّي قَدْ جَاءَنِي مِنَ الْعِلْمِ مَا لَمْ يَأْتِكَ فَاتَّبِعْنِي أَهْدِكَ صِرَاطًا سَوِيًّا ﴿٤٣﴾
يَا أَبَتِ لَا تَعْبُدِ الشَّيْطَانَ ۖ إِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلرَّحْمَٰنِ عَصِيًّا ﴿٤٤﴾
يَا أَبَتِ إِنِّي أَخَافُ أَن يَمَسَّكَ عَذَابٌ مِّنَ الرَّحْمَٰنِ فَتَكُونَ لِلشَّيْطَانِ وَلِيًّا ﴿٤٥﴾
قَالَ أَرَاغِبٌ أَنتَ عَنْ آلِهَتِي يَا إِبْرَاهِيمُ ۖ لَئِن لَّمْ تَنتَهِ لَأَرْجُمَنَّكَ ۖ وَاهْجُرْنِي مَلِيًّا ﴿٤٦﴾ قَالَ سَلَامٌ عَلَيْكَ ۖ سَأَسْتَغْفِرُ لَكَ رَبِّي ۖ إِنَّهُ كَانَ بِي حَفِيًّا ﴿٤٧﴾ وَأَعْتَزِلُكُمْ وَمَا تَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ وَأَدْعُو رَبِّي عَسَىٰ أَلَّا أَكُونَ بِدُعَاءِ رَبِّي شَقِيًّا ﴿٤٨﴾ فَلَمَّا اعْتَزَلَهُمْ وَمَا يَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ وَهَبْنَا لَهُ إِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ ۖ وَكُلًّا جَعَلْنَا نَبِيًّا [١٩:٤٩]
“এ কিতাবে ইবরাহীম (আ) এর কাহিনী হতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো। নিঃসন্দেহে তুমি একজন সত্য নবী ছিলে। লোকদেরকে ঐ সময়ের কথাবার্তা শুনাও যখন তিনি তাঁর পিতাকে বললেন, পিতা, আপনি এই সব বস্তুর ইবাদত কেন করছেন যারা শুনেনা ও দেখেনা এবং আপনার কোন কাজেও আসতে পারে না? আমার নিকট ঐ জ্ঞান এসেছে যা আপনার নিকট আসে নি, আপনি আমার কথামতো চলুন। আমি আপনাকে সোজাপথে চালাবো। হে পিতা! আপনি শয়তানের ইবাদত করবেন না, শয়তানতো আল্লাহর বড় নাফরমান। আমার পিতা! আমি ভয় করি যে, আপনি যদি এভাবে চলেন তাহলে আল্লাহর আযাব আপনাকে ঘিরে ধরবে আর আপনি শয়তানের বন্ধূ হয়ে থাকবেন।
পিতা বললো, ইব্রাহীম! তুমি কি আমাদের উপাস্যসমূহ থেকে ফিরে গিয়েছ? যদি ফিরে না আস তাহলে আমি তোমাকে পাথর মেরে মেরে শেষ করে ফেলবো। যাও, চিরকালের জন্য আমার থেকে দূর হয়ে যাও। ইব্রাহীম (আঃ) বললেন, আপনাকে আমার সালাম এবং আমি আমার প্রতিপালকের নিকট দোআ করবো যে, তিনি যেন আপনাকে ক্ষমা করে দেন। নিঃসন্দেহে আমার প্রতিপালক আমার উপর বড় দয়াবান। আপনাদের কাছ হতে আলাদা হয়ে যাচ্ছি এবং ঐ সকল অস্তিত্ব থেকেও যাদেরকে আপনারা আল্লাহর পরিবর্তে ডাকছেন, আমিতো অবশ্যই আমার প্রতিপালককেই ডাকবো। আমি আশা রাখি যে, আমি আমার প্রতিপালককে ডেকে কখনো অকৃতকার্য হবো না। (সূরা মরিয়াম ঃ ৪১-৪৮)।
১৬. আল্লাহর পথে বের হবার আশা, প্রাণ ও সম্পদ দ্বারা জিহাদ করার আবেগ এবং তার পথে শহীদ হবার আকাংখা সৃষ্টি করবে। জিহাদ হলো ঈমানের পরিতাপ আর যে অন্তরে তার আকাঙ্খা হবে না সে ঈমান ও হেদায়াত হতে বঞ্চিত, এক অন্ধকারময় ও বিরান মরুভূমি। জেহাদের ময়দানে পৌছার এবং আল্লাহর পথে জান ও মাল কুরবানীর সুযোগ পাওয়া বড়ই সৌভাগ্য কিন্তু অবস্থা যদি এমন না হয় যে, জিহাদের উপায় ও উপকরণ না থাকে এবং তুমি জেহাদের ময়দানে পৌছে ঈমানের নৈপূণ্য দেখাতো পারো তবুও তোমরা গণনা হিসেবে আল্লাহর নিকট ঐ সকল মোজাহিদের সাথে হতে পারে, যারা আল্লাহর পথে শহীদে হয়েছে অথবা গাজী হয়ে ফিরে এসেছে, কিন্তু শর্ত হলো যে তোমার অন্তরে আল্লাহর পথে বের হবার প্রচন্ড আগ্রহ থাকতে হবে, দীনের পথে কুরবান হবার আবেগ থাকতে হবে আর শাহাদাতের আকাঙ্খা থাকতে হবে। কেননা আল্লাহর দৃষ্টি ঐ সকল ব্যক্তির উপরই হয় যারা মুজাহিদসুলভ গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য মানুষকে অস্থির করে দেয়।
রাসূল(সা) তাবুক যুদ্ধ হতে ফিরে আসার সময় পথিমধ্যে তাঁর সাথীদেরকে বলেছিলেনঃ
“মদীনায় এমন কিছু লোক আছে, তোমরা যে যাত্রা করেছো এবং যে মাঠ প্রান্তর অতিক্রম করেছে তারা তোমাদের সাথে ছিল। রাসূল(সা) এর সাথীগণ আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, মদীনায় থেকেই? তিনি বললেন, হ্যাঁ, মদীনায় থেকেই, কেননা তাদেরকে থামিয়ে রেখেছিল অপারগতা কিন্তু তারা থেমে থাকার লোক ছিলেন না।”
পবিত্র কুরআনেও আল্লাহ এমন লোকদের প্রশংসা করেছেন যারা আবেগ সত্ত্বেও জিহাদে অংশগ্রহণ থেকে বঞ্চিত থাকে এবং নিজেদের এ বঞ্চনার কারণে তাদের চক্ষুযুগল অশ্রু প্রবাহিত করতে থাকে।
وَلَا عَلَى الَّذِينَ إِذَا مَا أَتَوْكَ لِتَحْمِلَهُمْ قُلْتَ لَا أَجِدُ مَا أَحْمِلُكُمْ عَلَيْهِ تَوَلَّوا
وَّأَعْيُنُهُمْ تَفِيضُ مِنَ الدَّمْعِ حَزَنًا أَلَّا يَجِدُوا مَا يُنفِقُونَ [٩:٩٢]
“ঐ সকল সরঞ্জামবিহীন লোকদের ওপর অভিযোগ আছে যারা নিজেরা আপনার নিকট এসেছে যে, আপনি তাদের জন্য সওয়ারির ব্যবস্থা করে দেন এবং আপনি যখন বলেছেন যে, আমি তোমাদের সওয়ারির ব্যবস্থা করতে পারবো না। তখন তারা এ অবস্থায় প্রত্যাবর্তন করলো যে তাদের চোখ হতে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছিল, এ দুঃখে যে, তাদের নিকট জিহাদে অংশ গ্রহণ করার জন্য খরচ করার সামর্থ্য নেই।” |
রাসূল(সা) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জেহাদ না করে মৃত্যুবরণ করলো আর তার অন্তরে তার কোন আকাঙ্খাও ছিল না তা হলে সে মুনাফিকের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলো।” (মুসলিম)।
মূলকথা এই যে আল্লাহর পথে লড়াই করা আর জান ও মালের কুরবান করার আবেগ থেকে যে অন্তর খালি তা কখনোই মুমিনের অন্তর হতে পারে না।
দাওয়াত ও তাবলীগের আদবসমূহ
(১) দাওয়াত ও তাবলীগের রীতিনীতির প্রতি পূর্ণ লক্ষ্য রাখ এবং এরূপ কর্মনীতি অবলম্বন কর যা প্রত্যেক দিক হতে গাম্ভীয্যপূর্ণ, উদ্দেশ্যের সমতাপূর্ণ এবং সম্বোধিত ব্যক্তির মধ্যে আগ্রহ ও উদ্যম সৃষ্টিকারী।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক বলেছেন,
আরবী (********)
“তোমার প্রতিপালকের দিকে দাওয়াত দাও হেকমতের সাথে এবং উত্তম উপদেশের সাথে আলোচনা করো এমন নীতির উপর যা অত্যন্ত ভাল।”
পবিত্র কুরআনের এ আয়াত হতে তিনটি মৌলিক উপদেশ পাওয়া যায়।
(ক) দাওয়াত হেকমতের সাথে দিতে হবে।
(খ) উপদেশ ও শিক্ষা উত্তম নিয়মে দিতে হবে।
(গ) আলোচনা বা তর্ক বিতর্ক উত্তম পদ্ধতিতে করতে হবে।
হেকমতের সাথে দাওয়াত পেশ করার অর্থ হলো এই যে, নিজের দাওয়াতের পবিত্রতা এবং মহত্বের পুরোপুরি অনুভূতি থাকতে হবে আর এ মূল্যবান সম্পদকে মূর্খতাবশত এমনিতেই যেখানে সেখানে ছড়াবে না বরং সুযোগ ও স্থানের প্রতি পূর্ণ লক্ষ্য রাখবে। আর সম্বোধিত ব্যক্তিরও প্রত্যেক শ্রেণী, প্রত্যেক ব্যক্তি বা দল থেকে তার চিন্তার গভীরতা, ক্ষমতার উপযুক্ততা, মানসিক অবস্থা এবং সামাজিক মযাদা অনুযায়ী কথা বলবে।
উত্তম উপদেশ দানের অর্থ হচ্ছে এই যে, হিতাকাংখী এবং অকৃত্রিমতার সাথে দাওয়াত পেশ করবে যেন মানুষ আগ্রহের সাথে তার দাওয়াত কবুল করে। দীনের প্রতি তার সম্পর্ক যেন শুধু মানসিক শান্তির সীমারেখা পয্যন্ত সীমাবদ্ধ না থাকে বরং দীন তার অন্তরের আওয়াজ, আত্মার খোরাক হয়ে যায়।
সমালোচনা ও আলোচনায় বা তর্ক বিতকে উত্তম নীতি অবলম্বনের অর্থ এই যে, সমালোচনা গঠনমূলক, হৃদয়োত্তাপ এবং সৌন্দযের প্রতীক হবে। আর পদ্ধতি এরূপ সাদাসিধে চিত্তাকষক হবে যে, সম্বোধিত ব্যক্তির মধ্যে একগুঁয়েমী, ঘৃণা, হঠকারীতা, গোঁড়ামি, অজ্ঞতা ও মযাদাবোধের আবেগে উদ্বেলিত না হয়ে সত্যি সত্যি কিছু চিন্তা করার ও বুঝার উপর গুরুত্ব দিতে বাধ্য হয়।
২. সবাবস্থায় পরিপূর্ণ দীনের দাওয়াত দিবে এবং নিজের বুদ্ধিতে এর মধ্যে কাট-ছাট করবে না। ইসলামের দাওয়াত যে দিবে তার অধিকার নেই সুবিধামত তার কিছু অংশ পেশ করবে আর কিছু অংশ গোপন করবে।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন-
“যখন তাদেরকে আমার আয়াতসমূহ পড়ে শুনানো হয়, তখন সেই সকল লোক আমার সাক্ষাতের আশা রাখে না, তারা বলে এ কুরআনের পরিবর্তে অন্য কোন কুরআন আনুন। নতুবা এর মধ্যে কিছু পরিবর্তন পরিবর্ধন করে দিন। আপনি বলুন যে, আমি আমার পক্ষ হতে এর মধ্যে কমবেশী করতে পারি না। আমিতো ঐ অহীর অনুসরণকারী, যা আমার নিকট প্রেরণ করা হয়েছে। আমি যদি আমার প্রতিপালকের নাফরমানী করি তা হলে আমার জন্য এক মহান দিনের ভয়ানক আযাবের ভয় আছে। আর বলুন! আল্লাহ যদি ইচ্ছা না করতেন যে, আমি তোমাদের এ কুরআন শোনাব, তাহলে আমি কখনো শোনাতে পারতাম না। তোমাদেরকে উহা জ্ঞাত করাতেও পারতাম না। আমি তো এর আগে তোমাদের মধ্যে জীবনের এক বিরাট অংশ কাটিয়েছি। এরপরেও কি তোমরা বুঝ না যে নিজের পক্ষ হতে কোন কথা বানিয়ে আল্লাহর দিকে মিথ্যা সম্বন্ধযুক্ত করবে অথবা আল্লাহর আয়াতকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে, নিশ্চিত অপরাধী ব্যক্তিরা সফলকাম হবে না।” (সূরায়ে ইউনুস ১৫-১৭)।
৩. দীনকে হেকমতের সাথে স্বাভাবিক নিয়মে পেশ করবে যে, তা অস্বাভাবিক বোঝা অনুভব না হয়। মানুষ ভয়ে চমকে যাওয়া বা বিষন্ন হওয়ার স্থলে তাকে কবুল করার শান্তি ও সুখ অনুভব করে, নম্রতা, মিষ্টি ভাষা এবং হেকমতপূর্ণ দাওয়াতের পদ্ধতি দ্বারা মানুষের দীনের মধ্যে অসাধারণ আকর্ষণ অনুভব করে।
৪. নিজের লেখা বক্তৃতা ও দাওয়াতী আলোচনাসমূহে সর্বদা মধ্যমপন্থা অবলম্বন করবে এবং শ্রোতাদের আশা আকাঙ্খার প্রতি দৃষ্টি রাখবে। শুধু ভয়ের উপর এরূপ অত্যধিক গুরুত্ব প্রদান করবে না যেন সে আল্লাহর দয়া থেকে নিরাশ হয়ে নিজের সংশোধন ও মুক্তি শুধু কঠিনই নয় এমনকি অসম্ভব মনে করে। আল্লাহর রহমত ও ক্ষমার এরূপ ধারণা প্রদান করবে না যে, সে একেবারেই নির্ভীক এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন হয়ে এবং আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমত ও ক্ষমার আশায় নাফরমানী করতে থাকে।
হযরত আলী (রা) বলেছেন, উত্তম আলেম সে ব্যক্তি যে লোকদেরকে আল্লাহ হতে নিরাশ করে দেয় না এবং আল্লাহর নাফরমানী করার অনুমতিও দেয় না এবং আল্লাহর আযাব হতে তাদেরকে নির্ভীক করে দেয় না।
৫. দাওয়াতী কাজের ধারা অব্যাহত রাখবে আর যে প্রোগ্রামই তৈরী করবে তা দায়িত্বের সাথে সর্বদা চালু রাখার চেষ্টা করবে। কাজ অসমাপ্ত রেখে দেয়া আর নূতন নূতন কর্মসূচী তৈরী করা ফলদায়ক নয়। কাজ অল্প হোক কিন্তু সবসময় করবে।
রাসূল(সা) বলেছেন-
“তা উত্তম আমল যা সবসময় করা হয়। তা যতই অল্প হোকনা কেন।”
৬. দাওয়াত ও তাবলীগের পথে সৃষ্ট জটিলতা, কষ্ট ও পরীক্ষাসমূহকে হাসিমুখে বরণ করে নিবে এবং ধৈর্য্য ও সহনশীলতা দেখাবে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেছেন-
وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنكَرِ وَاصْبِرْ عَلَىٰ مَا أَصَابَكَ ۖ
“সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজ থেকে বিরত রাখতে থাক এবং এপথে যত বিপদই আসুক না কেন তা ধৈর্য্যের সাথে সহ্য করে যাও।” (সূরায়ে লোকমান-১৭)।
সত্যের পথে বিপদ ও জটিলতা জরুরী, পরীক্ষার স্তরগুলো অতিক্রম করেই শক্তি আসে এবং চরিত্র ও কর্মে পরিপক্কতা সৃষ্টি হয়। এ কারণেই আল্লাহ তাঁর ঐ সকল বান্দাহকে অবশ্যই পরীক্ষা করেন যারা ঈমানের দাবী করে এবং যে ঈমানের দিক হতে যত পরিপক্ক তার পরীক্ষা ও তত কঠিন।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেন-
“আমি অবশ্যই তোমাদেরকে ভয়-ভীতি, ধন সম্পদ, প্রাণ ও ফসলে ক্ষতি দ্বারা পরীক্ষা করব এবং ধৈর্যশীলদের সু-সংবাদ দাও, যাদের উপর কোন বিপদ এসে পড়লে তারা বলে, আমরা নিশ্চয়ই আল্লাহর জন্য এবং আমরা তারই নিকট প্রত্যাবর্তনকারী। তাদেরকে প্রতিপালকের পক্ষ হতে মহান প্রতিদান দেয়া হবে আর তারাই হেদায়াতপ্রাপ্ত।” (সূরায়ে বাকারা ১৫৫-১৫৭)।
হযরত সাআদ (রাঃ) রাসূল (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! কোন ব্যক্তির সর্বাধিক কঠিন পরীক্ষা নেওয়া হবে? তিনি বললেন, নবীগণের, আর যারা দীন ও ঈমানের মর্যাদার দিক দিয়ে তাঁদের নিকটবর্তী। তারপর দীনের কাজে যে যত পরিপক্ক তার পরীক্ষাও তত কঠিন হবে। যে দীনের কাজে দুর্বল তার পরীক্ষাও হাল্কা ধরনের হবে। আর এ পরীক্ষাও হতেই থাকে, এমন কি সে দুনিয়াতে এমতাবস্থায় চলাফেরা করে যে, তার উপর গোনাহের কোন চিহ্নও থাকে না। (মেশকাত)।
রাসূল (সাঃ) নিজের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন- আমাকে এত বেশি নির্যাতন করা হয়েছে যে, আগে কখনো কোন ব্যক্তিকে এত বেশি নির্যাতন করা হয় নি। আর আমাকে আল্লাহর পথে এত বেশি ভয় দেখানো হয়েছে যে, আর কখনো কাউকে এত বেশি ভয় দেখানো হয় নি। ত্রিশ দিন ত্রিশ রাত এমন অতিবাহিত হয়েছে যে, আমার এবং বেলালের খাবার জন্য বেলালের বগলের নিচে (পুটলীতে) যা ছিল তা ছাড়া এমন কোন বস্তু ছিল না যা কোন প্রাণী খেতে পারে। (তিরমিযী)।
রাসূল (সা) বলেছেন-যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করার চেষ্টা করবে আল্লাহ তাকে ধৈর্য ধারণ করার তাওফীকও দান করবেন। (বুখারী, মুসলিম)।
মূলতঃ পরীক্ষাসমূহ আন্দোলনকে শক্তিশালী করা ও অগ্রসর করার অপরিহার্য উপকরণ। পরীক্ষা অতিক্রম করা ছাড়া কখনো কোন আন্দোলন সফলকাম হতে পারে নি। বিশেষতঃ যে আন্দোলন মানসিক জগতে এক সার্বজনীন বিপ্লবের দাওয়াত এবং পূর্ণ মানবিক জীবনকে নতুন ভিত্তির উপর গঠন করার পরিকল্পনা রাখে।
যে যুগে মক্কার পাষাণ, হৃদয়হীন ব্যক্তিরা রাসূল (সা) ও তাঁর সাথীদের উপর অকথ্য অত্যাচার চালিয়েছিল সে যুগের একটি ঘটনা হযরত খোবায়েব বিন আরত (রা) বর্ণনা করেছেন-
রাসূল (সাঃ) বাইতুল্লাহর ছায়ায় মাথার নিচে চাদর রেখে বিশ্রাম করছিলেন। আমরা তাঁর নিকট অভিযোগ নিয়ে পৌঁছলাম। ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি কি আমাদের জন্যে আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করেন না? আপনি কি এ অত্যাচার শেষ হওয়ার জন্য দোআ করেন না? এ ধারা কতদিন পর্যন্ত বিলম্বিত হবে আর কখন এ বিপদের পালা শেষ হবে?
শুনে রাসূল (সাঃ) বললেন, “তোমাদের পূর্বে এমন লোক গত হয়েছে যাদের মধ্য হতে কারো জন্যে গর্ত খনন করা হতো, তারপর ঐ গর্তে তাকে দাঁড় করানো হতো, অতঃপর করাত এনে চিরা হতো, এমনকি তার শরীরকে চিরে দু’টুকরাও করা হতো। তারপরও সে নিজের দীন হতে বিচ্যূত হতো না। তার শরীরে লোহার চিড়ুনি দ্বারা আচড়ানো হতো যা গোশত অতিক্রম করে হাড্ডি মগজ পর্য্ন্ত গিয়েও পৌছতো, কিন্তু সে আল্লাহর সত্য দীন হতে বিচ্যূত হতো না। আল্লাহর শপথ! এ দীন বিজয়ী হবেই। এমনকি আরোহী ইয়ামানে রাজধানী ছানআ থেকে হাযরামাউত পর্যন্ত একাকী ভ্রমণ করবে কিন্তু পথিমধ্যে শুধু আল্লাহর ভয় ব্যতীত আর কোন ভয় থাকবে না। অবশ্য রাখালদের ভয় থাকবে যে কোথাও বাঘে বকরী নিয়ে যায় কি না। কিন্তু আফসোস যে তোমরা বেশি বাড়াবাড়ি করছ।” (বুখারী)।
হযরত মুআবিয়া (রাঃ) বলেছেন, আমি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি যে, “আমার উম্মতের মধ্যে সর্বদা এমন একদল লোক থাকবে যারা কেবল আল্লাহর দীনের হেফাজত করতে থাকবে। যারা তাদের সহযোগিতা না এবং তাদের বিরোধিতা করবে তারা তাদেরকে ধ্বংস করতে পারবে না। এমনকি যে আল্লাহর ফয়সালা অর্থাৎ কিয়ামত এসে যাবে আর এ দীনের অনুসারী ঐ অবস্থাতেই প্রতিষ্ঠিত থাকবে।” (বুখারী, মুসলিম)।
৭. অপাত্রে উদারতা, খোশামোদ-তোষামোদ করা হতে অবশ্যই বিরত থাকবে। পবিত্র কুরআনে মুমিনদের প্রশংসায় বলা হয়েছে “তারা কাফিরদের উপর কঠোর।”
অর্থাৎ তারা নিজেদের দীন এবং দীনের মৌলিক বিষয়সমূহ সম্পর্কে অধিক কঠোর। তারা তাদের দীনের মৌলিক বিষয়সমূহ সম্পর্কে কোন অবস্থাতেই আপোষ এবং শৈথিল্য প্রদর্শন করে না। তারা সবকিছু সহ্য করতে পারে, কিন্তু দীন ও দীনের মূলনীতির কুরবানী দিতে পারে না।
মুসলমানদেরকে আল্লাহ তাআলা রাসূল (সাঃ) এর মাধ্যমে হেদায়াত করেছেনঃ
فَلِذَٰلِكَ فَادْعُ ۖ وَاسْتَقِمْ كَمَا أُمِرْتَ ۖ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ ۖ
“অতঃপর আপনি দীনের দিকে দাওয়াত দিন আর আপনাকে যেভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সেভাবে স্থির থাকবেন আর তাদের কামনার অনুসারী হবেন না।” (সূরায়ে শুরা-১৫)।
দীনের ব্যাপারে খোশামোদ তোষামোদ, অপাত্রে উদারতা এবং বাতিলের সাথে আপোষ মারাত্মক দুর্বলতা যা দীন ও ঈমানকে ধ্বংস করে দেয়।
রাসূল (সা) বলেছেন,
“বনী ইসরাঈলীরা যখন আল্লাহর নাফরমানীর কাজ শুরু করলো তখন তাদের আলেমগণ তাদের বাধা দিল কিন্তু তারা বিরত হলো না। তখনও তাদের আলেমগণ তাদের কাছ হতে সম্পর্কচ্ছেদ করার পরিবর্তে তাদের মজলিসে বসা আরম্ভ করলো এবং তাদের সাথে খানাপিনাও করতে লাগলো। যখন এরূপ অবস্থা ধারণ করলো তখন আল্লাহ তাদের সকলের অন্তরকে এক করে মিলিয়ে দিলেন। অতঃপর আল্লাহ হযরত দাউদ (আ) ও হযরত ঈসা (আ) ইবনে মরিয়মের ভাষায় তাদেরকে লা’নত (অভিসম্পাত) করলেন। কেননা, তারা নাফরমানীর পথ অবলম্বন করেছে এবং ক্রমশ তা বৃদ্ধিই হচ্ছিল।”
এ হাদীসের বর্ণনাকারী হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রা) বলেন যে, রাসূল (সাঃ) হেলান দিয়ে বসা ছিলেন, এতটুকু বলার পর সোজা হয়ে বসলেন। অতঃপর বললেন, না ঐ সত্তার শপথ! আমার প্রাণ যার হাতের মুঠোয়, তোমরা লোকদেরকে সৎ কাজের আদেশ দিতে থাকবে এবং অসৎ কাজ হতে বিরত রাখবে। যালিমের অত্যাচারে বাধা দিবে এবং যালিমকে সত্যের সামনে মাথা নত করাবে। তোমরা যদি এরূপ না করো তাহলে তোমাদের সকলের অন্তরও ঐরূপ হয়ে যাবে। আর আল্লাহ তোমাদেরকে হেদায়াত ও রহমত থেকে দূরে ঠেলে দেবেন যেমন তিনি বনী ইসরাইলকে হেদায়াত ও রহমত হতে বঞ্চিত করেছেন।
৮. শিশুদেরকে সংশোধন ও প্রশিক্ষণ এবং তাদেরকে দীন প্রতিষ্ঠার কাজে লাগানোর জন্য গঠন করা হলো প্রাথমিক কর্তব্য। এ ছাড়া তাবলীগী ও সংশোধনী চেষ্টার জন্য বাইরের ক্ষেত্র খোঁজ করা শিশুদের প্রকৃতি বিরোধীপূর্ণ কাজ। উদাহরণ এরূপ যে, দুর্ভিক্ষাবস্থায় বান্দাহ তার পরিবারস্থ লোকদেরকে দুর্বল ও ক্ষুধার্ত অবস্থায় রেখে বাইরের অভাবী লোকদেরকে তালাশ করে খাদ্য বন্টন করার বদান্যতার প্রদর্শনী করেছে। যেমন তার ক্ষুধা পিপাসা, নৈকট্য এবং ভালবাসার অনুভূতি নেই তেমনি তার মষ্তিষ্ক বিবেক খাদ্য শস্য বন্টনের বিজ্ঞানসম্মত নীতি পদ্ধতি থেকে চরম অজ্ঞ।
পবিত্র কুরআনে মুমিনদেরকে হেদায়াত করা হয়েছে-
আরবী (*******)
“মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং পরিবারস্থ লোকদেরকে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা করো।”
রাসূল (সাঃ) এর ভাষায়-
“তোমরা প্রত্যেকেই পাহারাদার ও দায়িত্বশীল। সুতরাং তোমাদের প্রত্যেকের নিকট হতেই ঐ সকল লোকদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে যারা তোমাদের অধীনস্থ। যেমন শাসক একজন পাহারাদার, তাকে তার অধীনস্থ লোকদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে, স্বামী তার পরিবারস্থ লোকদের পাহারাদার, স্ত্রী তার স্বামীর ঘর ও বাচ্চাদের পাহারাদার। সুতরাং তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেককেই ঐ সকল লোকদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে যাদেরকে তার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল।” (বুখারী, মুসলিম)।
৯. প্রতিবেশী ও মহল্লাবাসীদের সংশোধন ও শিক্ষার প্রতিও খেয়াল করবে এবং তাকেও নিজের কর্তব্য বলে মনে করবে।
একদিন রাসূল (সাঃ) কিছু মুসলমানের প্রশংসা করলেন। তারপর বললেনঃ “কেন এমন হচ্ছে যে, লোকেরা তাদের প্রতিবেশীদের মধ্যে দীনের জ্ঞান সৃষ্টি করছে না? তাদেরকে দীন শিক্ষা দিচ্ছে না এবং দীনী শিক্ষা হতে দূরের প্রতিফলের কথা কেন অবহিত করছে না? আল্লাহর শপথ! মানুষ অবশ্যই নিজ নিজ প্রতিবেশীদেরকে দীনের শিক্ষা দান করবে। তাদের মাঝে দীনের বুঝ ও জ্ঞান সৃষ্টি করবে, তাদেরকে উপদেশ দিবে, তাদেরকে সৎকাজে শিক্ষা দেবে এবং অসৎকাজ হতে বিরত রাখবে। অন্যদেরও নিজেদের প্রতিবেশীদের নিকট হতে দীন সম্পর্কে শিক্ষা লাভ করা আবশ্য, দীনের বুঝ সৃষ্টি করবে, এবং তাদের উপদেশ গ্রহণ করবে নতুবা আমি তাদেরকে অতিসত্বর শাস্তি দেবো।” অতঃপর তিনি ভাষণ শেষ করে মিম্বর থেকে নেমে আসলেন।
শ্রোতাদের মধ্য থেকে একে অন্যদেরকে জিজ্ঞেস করলো, এরা কোন লোক যাদের বিরুদ্ধে রাসূল (সাঃ) ভাষণ দিয়েছেন? জনৈক ব্যক্তি বললো যে, তাঁর কথার ইঙ্গিত ছিল আশআর গোত্রের লোকদের দিকে, এ সকল লোকেরা দীন সম্পর্কে জ্ঞানসম্পন্ন ছিল আর তাদের প্রতিবেশীরা হলো ঝর্ণার উপকূলে বসবাসকারী গ্রাম্য গন্ডমূর্খ লোক।
এ সংবাদ যখন আশআর গোত্রের লোকদের নিকট পৌছলো তারা তখন রাসূল (সাঃ) এর দরবারে এসে বললো, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি আপনার ভাষণে কিছু লোকের প্রশংসা করেছেন এবং আমাদের উপর রাগ করেছেন। তবে বলুন, আমাদের কি অপরাধ হয়েছে? তিনি বললেন, মানুষের কর্তব্য হলো যে, তারা তাদের প্রতিবেশীদেরকে দীন সম্পর্কে শিক্ষা দিবে, তাদেরকে ওয়াজ নসীহত করবে, সৎ কাজ সম্পর্কে শিক্ষা দেবে এবং অসৎকাজ হতে বিরত রাখবে। অনুরূপ লোকদেরও কর্তব্য যে, তারা তাদের প্রতিবেশীর নিকট হতে দীনী জ্ঞান অর্জন করবে এবং তাদের উপদেশ গ্রহণ করবে। আর নিজেদের মধ্যে দীনী বুঝ সৃষ্টি করবে নতুবা আমি তাদেরকে দুনিয়ায় শাস্তি দেবো। একথা শুনে আশআর গোত্রের লোকেরা বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি অন্যদের মাঝে দীনের বুঝ সৃষ্টির চেষ্টা করবো? তিনি বলেছিলেন, “হ্যাঁ, এটা তোমাদের দায়িত্ব”। তখন তারা বললো, হুযুর! আমাদেরকে একবছর সময় দিন! সুতরাং হুযুর (সঃ) তাদেরকে এক বছর সময় দিলেন যার মধ্যে তারা তাদের প্রতিবেশীদেরকে দীনি শিক্ষা দান করবে। অতঃপর রাসূল (সাঃ) পবিত্র কুরআন হতে এ আয়াত পাঠ করলেন-
“বনী ইসরাইলের উপর দাউদ (আঃ) এবং ঈসা বিন মরিয়ম (আঃ) এর ভাষায় অভিসম্পাত করা হয়েছে। তা এজন্য যে, তারা নাফরমানীর পথ অবলম্বন করেছে আর তারা সীমালংঘন করেছিল। তারা পরস্পরকে অসৎ কাজ হতে বিরত রাখতো না। সুতরাং নিঃসন্দেহে তারা অত্যন্ত খারাপ কাজ করতো।” (সূরায়ে মায়েদাহ)।
১০. যে সকল লোকের মাঝে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করবে তাদের গোত্রীয় আকীদা বিশ্বাস এবং আবেগের সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করবে। তাদের মহান ব্যক্তিদের এবং নেতাদের খারাপ নামে ডাকবে না, তাদের আকীদা বিশ্বাসের উপর আক্রমণ করবে না আর তাদের মাযহাবী দর্শনের ঘৃণা করবে না। ইতিবাচক পদ্ধতিতে নিজের দাওয়াত পেশ করবে আর সমালোচনার ক্ষেত্রেও সম্বোধিত ব্যক্তিদেরকে উত্তেজিত করার পরিবর্তে অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে তাদের অন্তরে নিজের কথা পেশ করবে। কেননা, আবেগময় সমালোচনা ও ঘৃণ্য কথাবার্তা দ্বারা সম্বোধিত ব্যক্তির মধ্যে কোন ভাল পরিবর্তনের আশা করা যায় না। অবশ্য আশংকা থাকে যে মুর্খতাজনিত একগুঁয়েমি ও গোঁড়ামির বশবর্তী হয়ে আল্লাহ ও দীন সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করা আরম্ভ করবে আর দীনের নিকটবর্তী হওয়ার পরিবর্তে দীন হতে অনেক দূরে সরে যাবে।
পবিত্র কুরআনে হেদায়াত করা হয়েছে-
“(মুমিনগণ!) এরা আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে ডাকে, তাদেরকে গালি দিও না। এমন হতে পারে তারাও অজ্ঞতাবশতঃ শত্রুতাবশত আল্লাহকে গালি দিবে।”
১১. দায়ী ইলাল্লাহ হিসেবে তৈরি হয়ে দাওয়াতের কাজ করবে। অর্থাৎ শুধু আল্লাহর দিকে দাওয়াতকারীই হবে। আল্লাহর বান্দাহদেরকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন কিছুর দিকে কখনো আহবান করবে না। মাতৃভূমির দিকে, না জাতি ও গোত্রের দিকে, না কোন ভাষার দিকে, না কোন দলের দিকে, মুমিনের প্রধান উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি। মূলনীতির দিকেই শুধু আহবান করবে এবং এ বিশ্বাস সৃষ্টির চেষ্টা করবে যে, বান্দার কাজ শুধু নিজের সৃষ্টিকর্তা ও মালিকের ইবাদত করবে, নিজের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় কাজ কারবারেও, অর্থাৎ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজের প্রতিপালক ও মালিক আল্লাহর কথামত চলবে এবং অকপটভাবে তাঁর আইন মেনে চলতে হবে, তিনি ছাড়া আর এমন কোন শক্তি নেই যাকে মুসলমানরা মূল উদ্দেশ্য স্থির করবে এবং তার দিকে লোকদেরকে দাওয়াত দিবে। মুমিন যখনই আল্লাহর হেদায়াত হতে মুখ ফিরিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্য কোন কিছু নিজের মূল উদ্দেশ্য হিসেবে স্থির করবে, সে উভয়জগতে হতাশ ও অসফলকাম হবে।
আরবী (******)
“ঐ ব্যক্তির কথা হতে আর কার কথা উত্তম হবে? যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দিয়েছে, নেক আমল করেছে এবং বলেছে যে, নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর অনুগত মুসলমান।” (আল কুরআন)।
দল গঠনের নিয়মনীতি
১. দাওয়াত ও তাবলীগের কর্তব্য সম্পাদনের জন্য মজবুত সংগঠন সৃষ্টি করবে, আর ইকামাতে দীন বা দীন প্রতিষ্ঠার জন্য সমবেতভাবে প্রচেষ্টা চালাবে।
পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে-
“তোমাদের মধ্য হতে এমন একটি দল হওয়া প্রয়োজন যারা ভালোর দিকে দাওয়াত দিবে এবং সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে বিরত রাখবে।”
এ ভাল দ্বারা দুনিয়াকে পরিপূর্ণ করে দেয়ার জন্য প্রয়োজন হলো, মুসলমানগণ জামাতবদ্ধ হয়ে সংগঠিতভাবে কাজ করবে। আর জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাতিলের উপর বিজয় অর্জনের জন্য মজবুত সংগঠন কায়েম করবে এবং অত্যন্ত সুসংগঠিত ও সমবেতভাবে প্রচেষ্টা চালাবে।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের এই মজবুত সংগঠন ও সমবেত সর্বাত্বক প্রচেষ্টার চিত্র তুলে ধরে তাদের উদাহরণযোগ্য সংগঠনের প্রশংসা করেছেন এবং তাদেরকে তাঁর বন্ধু বলেও স্বীকৃতি দিয়েছেন-
আরবী (*****)
“নিশ্চয়ই সে সকল লোক আল্লাহর বন্ধু যারা আল্লাহর পথে লড়াই করে এমন শক্তভাবে যেন তারা সীসা ঢালা মজবুত প্রাচীর।” (আল কুরআন)।
রাসূল (সাঃ) সামাজিক জীবনের গুরুত্ব এবং দলবদ্ধ হয়ে জীবন যাপনের শিক্ষা দিতে গিয়ে বলেছেন-
“মাত্র তিনজন লোক কোন জঙ্গলে বসবাস করলেও তারা তাদের মধ্য হতে একজনকে আমীর বা নেতা নির্বাচন না করে অন্যভাবে জীবন যাপন করা জায়েয নেই।”
তিনি আরো বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি জান্নাতের ঘর তৈরী করতে ইচ্ছে করে, তাকে জামায়াতের সাথে সংঘবদ্ধ থাকা উচিত। এক ব্যক্তির সাথে শয়তান থাকে, আর যখন তারা দুজন হয় তখন শয়তান দূরে পলায়ন করে।”
২. ঐক্যের ভিত্তি শুধু দীনের উদ্দেশ্যে হবে। ইসলামী সংগঠনের ভিত্তি হবে আল্লাহর দীন। আল্লাহর দীনকে বাদ দিয়ে কোন মতেই অন্য কোন ভিত্তির উপর মুসলমানদের ঐক্য ও একতা হতে পারে না।
পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে-
“তোমরা সকলে একত্রিত হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়িয়ে ধর আর বিচ্ছিন্ন হয়ো না, তোমাদের উপর আল্লাহর সে নেয়ামতের কথা স্মরণ রাখ যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে অতঃপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ভালবাসা সৃষ্টি করে দিলেন এবং তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে।” (সূরা আলে ইমরান-১০৩)।
আল্লাহর রজ্জু মানে আল্লাহর দীন ইসলাম। পবিত্র কুরআনের নিকট মুসলমানদের ঐক্য ও সমবেত হওয়ার ভিত্তি হলো এই দীন। ইহা ব্যতীত আর কোন ভিত্তিই মুসলমানদের একত্রিত করবে না বরং টুকরো টুকরো করে দিবে।
৩. সত্যের পথের কর্মীদের সাথে আন্তরিকভাবে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করবে আর এ সম্পর্কে সকল আত্মীয়তা থেকে বেশি গুরুত্ব দিবে এবং সম্মানোপযোগী মনে করবে।
পবিত্র কুরআনে মুমিনদের প্রশংসা করে বলা হয়েছে-
“তোমরা কখনো এমন দেখতে পাবে না যে আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমানদার লোকেরা কখনো তাদের ভালবাসা স্থাপন করতে পারেন না যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে শত্রুতা পোষণ করছে, যদিও তারা তাদের পিতা, তাদের ছেলে, তাদের ভাই অথবা তাদের পরিবারস্থ লোকই হোক না কেন।” (সূরায়ে মুজাদালাহ-২২)।
৪. সংগঠনাবদ্ধ বন্ধুদের উপদেশ হীতাকাংখার গুরুত্ব প্রদান করবে আর সংগঠনাবদ্ধ জীবনের শিক্ষাকে সমুন্নত রাখবে। কেননা, এটাই সফলতার প্রধান জামানত।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন-
“কালের শপথ! নিশ্চয়ই মানুষ ক্ষতিতে নিমজ্জিত। তবে তারা ব্যতীত যারা ঈমান এনেছে, সৎকাজ করেছে, যারা পরস্পরে সত্য দীনের অছিয়ত করেছে আর পরস্পরে ধৈর্য্যের প্রতিযোগীতা করেছে।” (সূরা আছর)।
৫. সাংগঠনিক শৃঙ্খলার পুরোপুরি নিয়মনীতি পালন করবে আর সংগঠনকে মজবুত দীনি কর্তব্য মনে করবে।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেছেন-
“প্রকৃত মুমিন তারাই যারা সত্যিকারভাবে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে। যখন কোন সম্মিলিত কাজের সময় আল্লাহর রাসূলের সাথী হয় তখন তার অনুমতি ব্যতীত তারা কোথাও যায় না। নিশ্চিত যারা আপনার নিকট অনুমতি প্রার্থনা করছে তারা সত্যিকারভাবে আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে।” (সূরায়ে নূর-৬২)।
সংগঠনের শৃঙ্খলা, নিজের নেতার আনুগত্য ও অনুসরণ শুধু একটি আইনানুগ ব্যাপারই নয় বরং ইহা শরীয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পবিত্র কুরআন তাদের ঈমানের সত্যতার সাক্ষ্য দিয়েছে।
৬. সাংগঠনিক জীবনে সকল হৃদয় দিয়ে সহযোগিতা করবে, যতটুকু সম্ভব তাতে ত্রুটি করবে না। স্বার্থপরতা, উদ্দেশ্যসিদ্ধি এবং অহংকার এর মত খারাপ অভ্যাস থেকে সর্বদা চরিত্রকে পবিত্র রাখবে।
পবিত্র কুরআনে হেদায়াত করা হয়েছে-
আরবী (*****)
“সৎ ও আল্লাহভীতির কাজে পরস্পরকে সহযোগীতা কর।”
৭. সাথীদের সাথে সুসম্পর্ক রাখবে। কখনো কারো সাথে মতভেদ হয়ে গেলে তাড়াতাড়ি আপোষ মীমাংসাও করে নিবে। আর অন্তরকে দুঃখ বেদনা হতে পবিত্র রাখবে।
পবিত্র কুরআনে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে-
আরবী (*********)
“অতঃপর আল্লাহকে ভয় করো এবং পারস্পরিক সু-সম্পর্ক স্থাপন করো।”
৮. খুশি মনে ইসলামী সংগঠনের নেতার আনুগত্য করবে আর তার হিতাকাংখী ও বিশ্বস্ত হয়ে থাকবে।
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “মুসলমানদের জন্য তার দায়িত্বশীলদের কথা শুনা ও মান্য করা এবং আনুগত্য অনুসরণ করা অপরিহার্য্য।” (বুখারী, মুসলিম)।
হযরত তমীম দারী (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন-
“দীন অকৃত্রিম হিতাকাংখা ও বিশ্বস্ততার নাম।” একথা তিনি তিনবার বললেন। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, কার হিতাকাঙ্খা ও বিশ্বস্ততা? তিনি বললেন, “আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের, আল্লাহর কিতাবের, মুসলমানদের দায়িত্বশীলদের এবং সাধারণ মুসলমানদের বিশ্বস্ততা।” (মুসলিম)।
৯. সাংগঠনিক পক্ষপাতিত্ব, সংকীর্ণ দৃষ্টি ও পক্ষ সমর্থন করা হতে বিরত থাকবে। প্রশস্তমনা ও উত্তম চরিত্রের সাথে প্রত্যেকের সঙ্গে সহযোগীতা করবে। যে ব্যক্তিই দীনের কাজ করবে তাকে সম্মান করবে, তাদের সাথে হিতাকাঙ্খা ও বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করবে আর তাদেরকে পথের সাথী ও কাজের সাহায্যকারী মনে করবে। দীনের কর্মীরা মূলতঃ একে অন্যের কাজের সহযোগী ও সাহায্যকারী। সকলের উদ্দেশ্যই দীন এবং সকলেই নিজ নিজ জ্ঞান অনুযায়ী দীনের খেদমতই করতে চায়। আন্তরিকতার সাথে বুঝা ও বুঝ গ্রহণের মাধ্যমে একে অন্যের ভুলত্রুটি প্রকাশ এবং সঠিক চিন্তাধারা চিহ্নিতকরণ একটি অতি উত্তম কাজ আর এরূপই হওয়া উচিত। কিন্তু পারস্পরিক হিংসা বিদ্বেষ, অসন্তোষ, শত্রুতা, একগুঁয়েমি, একে অন্যকে তুচ্ছ জানা এবং একে অন্যের বিরুদ্ধে প্রচার প্রোপাগান্ডা করা এমন হীন কাজ যা দীনের দাওয়াত দাতার জন্য কখনোই শোভা পায় না। যারা সত্যিকার প্রত্যাশা করে যে, নিজের শক্তি সামর্থ্যকে আল্লাহর পথে ব্যয় করবে আর জীবনে আল্লাহর দীনের কিছু কাজ করে যাবে, তাঁদের অন্তর এ ধরনের অবস্থা হতে পরিষ্কার রাখা উচিত।
নেতৃত্বের নিয়ম নীতি
ইসলামী সংগঠনের নেতৃত্ব ও পরিচালনার জন্য আল্লাহভীতি ও সংযমশীলতায় সর্বাধিক উন্নত ব্যক্তিকে নির্বাচন করবে। দীনের মধ্যে মহাত্মা ও বৃহত্বের পরিমাপ ধন-সম্পদ ও বংশের বিবেচনায় নয় বরং দীনের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বাধিক উত্তম ব্যক্তি যে আল্লাহকে ভয় করে।
পবিত্র কুরআনে এ সম্পর্কে আল্লাহপাক বলেছেন-
“হে মানবমন্ডলী ! নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে একটি পুরুষ ও একটি নারী হতে সৃষ্টি করেছি এবং আমি তোমাদেরকে গোষ্ঠী ও গোত্রে বিভক্ত করেছি যেন তোমরা পরস্পর পরিচয় লাভ করতে পার। নিশ্চয়ই তোমাদের, সে ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট সর্বাধিক সম্মানিত যে সর্বাধিক সংযমী-আল্লাহ ভীরু।” (সূরায়ে আল হুজরাত)।
২. নেতৃত্ব নির্বাচনকে একটি খাঁটি দীনি কর্তব্য মনে করবে এবং নিজের মত প্রকাশকে আল্লাহর আমানত মনে করে শুধু ঐ ব্যক্তির পক্ষেই ব্যবহার করবে যাকে এ গুরুভার বহন করা ও তার হক আদায় করার জন্য সর্বাধিক উপযুক্ত যোগ্য মনে করবে।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেছেন-
إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَن تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَىٰ أَهْلِهَا
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা আমানতসমূহ যোগ্য লোকদের নিকট অর্পণ করো।” (সূরায়ে নিসা-৫৮)।
এটা একটি মৌলিক ও পরিপূর্ণ ইবাদত, যা সর্বপ্রকার আমানতের উপর প্রতিষ্ঠিত। বর্ণনা অনুযায়ী “আমানতসমূহ” দ্বারা ইসলামী সংগঠনের দায়িত্ব বুঝানো হয়েছে অর্থাৎ ইসলামী সংগঠনের নেতৃত্ব ও পরিচালনার জন্য নিজের রায় ও পছন্দের আমানত ঐ যোগ্যতম ব্যক্তির উপর অর্পন করবে যে সত্যি এ আমানতের ভার বহনের যোগ্যতা ও ক্ষমতা রাখে। এ ব্যাপারে পক্ষপাতিত্ব অথবা অপাত্রে উদারত এবং এ জাতীয় অন্য কোন প্রভাবে প্রভাবান্বিত হয়ে রায় দেয়া খেয়ানত, যা থেকে মুমিনকে অবশ্যই পবিত্র থাকা উচিত।
৩. কেউ যদি মুসলমানদের সংগঠনের দায়িত্ব গ্রহণ করে , তাহলে তার কর্তব্য সম্পর্কে পুরোপুরি জ্ঞান ও নজর রাখবে এবং পূর্ণ সততা, পরিশ্রম, দায়িত্ব সচেতনতা ও কঠোর সংযমের সাথে তা সম্পাদন করবে।
রাসূল (সাঃ) বলেছেন-
“যে ব্যক্তি মুসলমানদের সামাজিক কাজের দায়িত্বশীল হয়, আর সে তার খেয়ানত করে, তাহলে আল্লাহ তার জন্য বেহেশত হারাম করে দিবেন।” (বুখারী, মুসলিম)।
৪. কর্মী ও অনুগত লোকদের সাথে নম্রতা, স্নেহ, ইনসাফ ও সহনশীলতাপূর্ণ ব্যবহার করবে যেন তারা খুশী মনে তার সাথে সহযোগিতা করতে পারে এবং আল্লাহ তাআলা এ সংগঠনকে তার দীনের কাজ করার সুযোগ দান করেন।
পবিত্র কুরআনে রাসূল (সাঃ) এর প্রশংসায় বলা হয়েছে-
আরবী (*****)
“এটা আল্লাহর রহমত যে, আপনার অন্তর তাদের জন্য নরম। আর আপনি যদি কঠোর স্বভাবের এবং শক্ত হৃদয়ের হতেন তাহলে তারা আপনার নিকট হতে কেটে পড়তো।”
আর তাঁকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে-
وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ [٢٦:٢١٥]
“আর আপনি আপনার অনুসারী মুমিনদের জন্য আপনার স্নেহের বাহু বিস্তৃত করে দিন।” (সূরা শুআরা-২১৫)।
একবার হযরত ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ) ভাষণ দিতে গিয়ে বলেছেনঃ
“লোকসকল! তোমাদের উপর আমার অধিকার হলো যে, তোমরা আমার অবর্তমানে আমার হিতাকাঙ্খী হবে এবং সৎ কাজে সাহায্য করবে।”
৫. নিজের সহকর্মীদের গুরুত্ব অনুভব করবে, তাদের আবেগের মর্যাদা দিবে, এবং তাদের প্রয়োজন বুঝবে। তাদের সাথে এমন ভ্রাতৃত্ব সুলভ ব্যবহার করবে যে, যেন তোমাকেই প্রধান হিতাকাংখী মনে করে।
৬. নিজের সাথীদের সম্মান করবে, তাদেরকে নিজের মূলধন মনে করে আন্তরিকতার সাথে প্রশিক্ষণ দিবে। তাদেরকে কপর্দকহীন ও গরীব মনে করে আল্লাহ যাদেরকে পার্থিব মান-মর্যাদা ও ধন-সম্পদ দিয়ে অবকাশ দিয়েছেন তাদের প্রতি লোভনীয় দৃষ্টিতে তাকাবে না।
এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা রাসূল (সাঃ) কে সম্বোধন করে বলেছেনঃ
আপনি তাদের সাহচর্যে ধৈর্য্যধারণ করবেন যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁকে ডাকে, আর আপনি তাদেরকে উপেক্ষা করে পার্থিব জীবনের চাকচিক্যের অন্বেষায় ব্যস্ত থাকবেন না। (সূরায়ে আল কাহাফ -২৮)।
৭. সংগঠনের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে অবশ্যই সাথীদের সাথে পরামর্শের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। মুমিনদের গুণ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বর্ণনা করেন যে, “তাদের কাজ কারবার যেন পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে সম্পাদিত হয়।” রাসূল (সাঃ) কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, বিশেষ কাজ কারবারে সাথীদের পরামর্শ গ্রহণ করবে।
৮. সাংগঠনিক কাজ কারবার সর্বদা প্রসন্ন হৃদয় ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে সম্পাদন করবে, নিজেকে এবং নিজের পরিবারস্থ কোন কম যোগ্য লোকদেরকে সাংগঠনিক কোন কাজ কারবারে প্রাধান্য দিবে না। বরং সর্বদা আত্মত্যাগও বদান্যতাসুলভ ব্যবহার করবে যেন সাথীরা প্রফুল্ল হৃদয়ে সর্বপ্রকার ত্যাগ স্বীকারে অগ্রগামী থাকে।
হযরত আবুবকর (রাঃ) এর মৃত্যুকালে হযরত ওমর (রাঃ)কে পরবর্তী খলীফা নির্বাচন করার পর বলেছেনঃ
“হে খাত্তাবের পুত্র! আমি তোমাকে মুসলমানদের উপর এজন্য অর্পণ করেছি যে, তুমি তাদের সাথে স্নেহসুলভ ব্যবহার করবে। তুমি রাসূল (সাঃ) এর সাহচর্য লাভ করেছো এবং দেখতে পেয়েছো যে রাসূল (সাঃ) কিভাবে আমাদেরকে তাঁর নিজের এবং আমাদের পরিবারস্থ লোকদেরকে তাঁর নিজের পরিবারস্থ লোকদের উপর প্রাধান্য দিতেন। এমনকি আমরা রাসূল (সাঃ) এর পক্ষ থেকে যাই কিছু পেতাম তা থেকে বেঁচে গেলে আমরা আবার তা রাসূল (সাঃ) এর পরিবারস্থ লোকদের জন্য হাদিয়া হিসেবে প্রেরণ করতাম। (কিতাবুল খেরাজ)।
৯. পক্ষপাতিত্ব ও স্বজনপ্রীতি হতে বিরত থাকবে। অপাত্রে শিথিলতা ও উদারতা প্রদর্শন করবে না। হযরত ইয়াজীদ বিন সুফিয়ান (রাঃ) বলেছেন যে, হযরত আবুবকর (রাঃ) যখন আমাকে সেনাপতি নিযুক্ত করে সিরিয়ায় প্রেরণ করলেন তখন এ উপদেশ প্রদান করেনঃ
“হে ইয়াযীদ! তোমার কিছু বন্ধু ও আত্মীয় স্বজন আছে, হতেও পারে তুমি তাদের কিছু দায়িত্ব প্রদানে প্রাধান্য দিবে। তোমার জন্য আমার সর্বাধিক চিন্তা ও ভয়ের কারণ হলো এটিই।”
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি মুসলমানদের সামাজিক কাজের দায়িত্বশীল হলো আর সে মুসলমানদের উপর শুধু আত্মীয়তার ভিত্তিতে অথবা বন্ধুত্বের কারণে শাসক নিযুক্ত করলো তাহলে আল্লাহ তার কোন প্রকারের কুরবানী গ্রহণ করবেন না। এমনকি তাকে জাহান্নামে ফেলে দিবেন।” (কিতাবুল খেরাজ)।
১০. সংগঠনের শৃঙ্খলাকে মজবুত রাখবে আর কখনো এ ব্যাপারে অপাত্রে নম্রতা ও শিথিলতা প্রদর্শন করবে না। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন-
“সুতরাং তারা যখন তাদের কোন বিশেষ কাজে আপনার কাছে অনুমতি প্রার্থনা করে তখন আপনি তাদের যাকে ইচ্ছা তাকে অনুমতি দিন, আর তাদের জন্য আল্লাহর নিকট মাগফিরাতের দোয়া করুন।” (সূরায়ে নূর-৬২)।
অর্থাৎ সংগঠনের সাথীরা যখন কোন ভাল কাজের জন্য একত্রিত হয় আর কোন ব্যক্তি যদি তার ব্যক্তিগত প্রয়োজনে এবং অপারগতার অনুমতি প্রার্থনা করে তা হলে সংগঠনের পরিচালকের কর্তব্য হলো যে, সে সংগঠনের গুরুত্ব ও শৃঙ্খলার প্রেক্ষিতে শুধু ঐসব লোকদেরকে অনুমতি প্রদান করবে যাদের প্রয়োজন সত্যিই এই দীনি কাজের অধিক অথবা যাদের ওজর শরয়ী এবং যাদের অপারগত শরয়ী বলে প্রমাণিত, আর তা গ্রহণ করা জরুরী।