আল্লাহর দাসত্বের অনুভূতি
তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনার নিয়ম-নীতি
১. তওবা কবুল হওয়া সম্পর্কে কখনও নিরাশ হবে না, যত বড় গুনাহই হোক না কেন, তওবা দ্বারা নিজের আত্মাকে পবিত্র করবে আর আল্লাহর নিকট দোয়া কবুলের জন্য পরিপূর্ণ আশা রাখবে। নৈরাশ্য কাফেরদের স্বভাব, মুমিনদের বিশেষ গুণ হচ্ছে তারা অত্যধিক তওবাকারী এবং কোন অবস্থাতেই আল্লাহ থেকে নিরাশ হয়না। অধিক গুনাহের কারণে ভীত হয়ে নৈরাশ্যতায় পতিত হওয়া এবং তওবা কবুল হওয়া সম্পর্কে নিরাশ হওয়ার মানসিকতা ও চিন্তা হলো ধ্বংসকারী গোমরাহী। আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় বান্দাহদের প্রশংসায় একথা বলেননি যে, তাদের কাছ থেকে কোন গুনাহ প্রকাশ পায়না এবং তিনি বলেছেন, তাদের গুনাহ হয় কিন্তু তারা গুনাহের উপর হঠকারিতা করে না, তারা তা স্বীকার করে এবং নিজে পবিত্র হবার জন্যে ব্যকুল হয়ে উঠবে।
“যারা কখনো কোন খারাপ কাজ করে ফেলে অথবা তারা তাদের নফসের উপর কোন অত্যাচার করে ফেলে এবং তাদের সাথে সাথে আল্লাহর কথা স্মরণ হয় আর তাঁর নিকট তাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, তখেন আল্লাহ ছাড়া আর কেউ গুনাহসমূহ ক্ষমা করতে পারে? আর তারা জেনে শুনে গুনাহের উপর হঠকারিতা করে”।
(আলে-ইমরান-১৩৫)
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেছেনঃ
আরবি
“নিশ্চয়ই যারা আল্লাহকে ভয় করে তাদেরকে শয়তানের কোন দল এসে স্পর্শ করলেও তারা সাথে সাথে আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর তারা পরিষ্কার দেখতে পায় যে, সঠিক পথ কোনটি?
(সূরায়ে আ’রাফ-২০১)
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় বান্দাদের এ বিশেষ গুণের কথা বর্ণনা করেছেন যে, তারা শেষ রাতে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি ও তওবা এস্তেগফার করে। আর মুমিনদেরকে প্রতিনিয়ত তওবা ও এস্তেগফার করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এ কথা অন্তরে বিশ্বাস রাখবে যে, আল্লাহ তাদের গুনাহের উপর ক্ষমা ও মাফের হাত প্রসারিত করে দেবেন, কেননা, তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও আপন বান্দাদেরকে অত্যধিকক মাত্রায় ভালবাসেন।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেছেন-
আরবি
“তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তার নিকট তওবা করো, নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক অত্যন্ত দয়ালু ও বান্দাদের অধিক মুহব্বতকারী”।
(সূরায়ে হুদ-৯০)
২. সকল সময় আল্লাহর রহমতের আশাবাদী থাকবে এবং এ দৃঢ় আশা রাখবে যে, আামর গুনাহ যত বেশীই হোক না কেন আল্লাহ তার চেয়ে অনেক বেশী ক্ষমাশীল। আল্লাহর দরবারে গুনাহের কারণে লজ্জিত হয়ে কাঁদতে আরম্ভ করলে আল্লাহ তার কথা শুনেন এবং তাকে নিজের রহমতের ছায়ায় স্থান দেন অর্থাৎ তার প্রতি দয়া করে তাকে ক্ষমা করে দেন। যেমন পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন-
“হে আমার বান্দাহ! যারা নিজেদের আত্মার উপর অত্যাচার করেছ, তারা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়োনা, নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্থ গুনাহ ক্ষমা করে দেবন, নিশ্চয়ই তিনি মহান ক্ষমাশীল ও দয়াবান। তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের দিকে প্রত্যাবর্তন করো আর তাঁর আনুগত্য স্বীকার কর, তোমাদের উপর আযাব নাযিল হবার পূর্বে; কেননা তোমরা কোন দিক থেকেই সাহায্য পাবেনা”।
(সূরায়ে যুমারঃ ৫৩-৫৪)
৩. জীবনে কোন গুনাহের উপর লজ্জা ও শরমের অনুভূতি সৃষ্টি হলে তাকে আল্লাহর মেহেরবানী মনে করবে এবং তওবার দরজা খোলা আছে মনে করবে। আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাহর তওবা মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্হ পর্যন্ত কবুল করেন। শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হবার পর যখন সে অন্য জগতের পথিক হয়ে যায় তখন তওবার সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়।
রাসূল (সাঃ) বলেছেন-
“আল্লাহ তাআলা নিজের বান্দার তওবা কবুল করেন তার নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত”।
(তিরমিযি)
হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর ভাইয়েরা তাঁকে অন্ধ কূপে ফেলে দিলে তাদের ধারণা ইউসুফকে শেষ করে দিয়েছে। আর তার জামায় রক্ত লাগিয়ে তাদের পিতাকে বিশ্বাস করাতে চেয়েছে যে, ইউসুফকে বাঘে খেয়ে ফেলেছে। কিন্তু এ মহাপাপ করার পর কয়েক বছর তাদের মধ্যে যখন নিজেদের পাপের অনুভূতি জাগরিত হলো এবং তারা লজ্জিত হয়ে যখন তাদের পিতার নিকট প্রার্থনা জানাল, আল্লাহর নিকট দোআ করুন আল্লাহ যেন আমাদের গুনাহ মাফ করে দেন। তখন ইয়াকুব (আঃ) এ কথা বলে তাদেরকে নিরাশ করে দেননি যে, তোমাদের গুনাহ বিরাট, এ গুনাহের পর কয়েক বছর অতীত হয়ে গিয়েছে এখন আবা ক্ষমার কি প্রশ্ন? বরং তিনি তাদের সাথে ওয়াদা করেছেন যে, আমি অবশ্যই আমার প্রতিপালকের নিকট তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবো এবং তাদেরকে এ আশ্বাস দিয়েছেন যে, আল্লাহ অবশ্যই তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। কেননা তিনিমহান ক্ষমতাশীল ও অত্যন্ত দয়ালু।
আরবি
“তারা বলল, হে আমাদের পিতা! আমাদের গুনাহ মাফের জন্য দোআ করুন, সত্যিই আমরা বড় পাপী”।
(সূরায়ে ইউসুফ-৯৮)
রাসূল (সাঃ) উম্মতকে নৈরাশ্যতার ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সাহাবায়ে কেরামকে আশ্চর্যজনক একটি কাহিনী শুনিয়েছেন, যা থেকে শিক্ষা লাভ করা যায়। যে মুমিন তাঁর জীবনের যে কোন অংশেই তার গুনাহের উপর লজ্জিত হয়ে সর্বান্তঃকরণে আল্লাহর দরবারে কাঁদবে তখন তিনি সে বান্দাকে নিশ্চিত ক্ষমা করে দেবেন আর তাকে কখনো দূরে ফেলবেন না।
রাসূল (সাঃ) বলেছেন যে, অতীতে এক লোক নিরান্নব্বইটি খুন করেছিল। সে মানুষের নিকট জানতে চাইল যে, পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক বড় আলেম কোন ব্যক্তি? লোকেরা তাকে এক আল্লাহওয়ালা পাদ্রীর ঠিকানা দিল। সে ঐ পাদ্রীর নিকট গিয়ে বলল, হুযুর! আমি নিরান্নব্বইটি খুন করেছি। আমারও কি তওবা কবুল হতে পারে? পাদ্রী বললেন, না, এখন তোমার তওবা কবুল হবার কোন সুযোগ নেই। সে একথা শুনেই ঐ পাদ্রীকেও হত্যা করলো। এখন সে পুরো একশ হত্যাকারী হলো। তখন আবার সে লোকেদেরকে জিজ্ঞেস করতে আরম্ভ করলো যে, পৃথিবীতে এখন সর্বাধিক বড় আলেম কে? লোকেরা আবার তাকে অন্য একজন পাদ্রীর ঠিকানা দিল। এখন সে তওবার উদ্দেশ্যে ঐ পাদ্রীর নিকট গেলো এবং তার নিকট নিজের অবস্থার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বললো, হুযুর! আমি একশত হত্যা করেছি। আমার তওবা কি কবুল হতে পারে? পাদ্রী বললো, কেন হবেনা? তুমি অমুক দেশে যাও। ওখানে আল্লাহর কিছু সম্মানিত বান্দা আল্লাহর ইবাদতে অবিরত মশগুল আছে, তুমিও তাদের সাথে আল্লাহর ইবাদতে লেগে যাও, এবং কখনো নিজের মাতৃভূমিতে ফিরে আসবে না। কেননা এ স্থান এখন তোমার জন্য ধর্মীয় দিকে থেকে স্বাভাবিক নয়। এখানে তোমার জন্য তওবায় প্রতিষ্ঠিত থাকা এবং সংশোধনের চেষ্টা করা বেশ কঠিন। খুনি রওয়ানা দিল। অর্ধেক রাস্তা পৌঁছেছিল মাত্র, তার মৃত্যুর পরোয়ানা এসে গেলো। তখন রহমতের ফিরিশতা ও আযাবের ফেরেশতার মধ্যে পরস্পরে তর্ক বেঁধে গেলো। রহমতের ফেরেশতা বললেন,এ ব্যক্তি গুনাহ থেকে তওবা করে আল্লাহর দিকে মনোযোগী হয়েই এ দিকে এসেছে। আযাবের ফেরেশতা বলছেন, না। সে এখনও পর্যন্ত কোন নেক কাজ করেনি। এমতাবস্থায় মানুষের রূপ ধারণ করে একজন ফেরেশতা আসলো। ঐ ফিরিশতাগণ এ ব্যক্তিকে নিজেদের বিচারক মেনে তার নিকটে এ বিষয়ে মীমাংসা কামনা করলো। আগত মানুষরূপী ফেরেশতা বললেন, উভয় দিকের জমি পরিমাপ করো আর দেখ যে, যেখান থেকে সে এসেছিল সে স্থান নিকটে না যে স্থানের দিকে সে যাচ্ছিল সেই স্থান নিকটে। ফেরেশতাগণ জমি পরিমান করার পর যে স্থানে সে যাচ্ছিল সে স্থানকে নিকটে পেল। সুতরাং রহমতের ফেরেশত তার জান কবজ করলো আর আল্লাহ তার গুনাহ ক্ষমা করে দিলেন”।
(বুখারী, মুসলিম)
৪. শুধু নিজের গুনাহসমূহ স্বীকার করবে এবং আল্লাহর দরবারেই কাঁদবে, তাঁর দরবারেই নিজের অক্ষমতা, অসহায়ত্ব এবং পাপের কথা প্রকাশ করবে। অসহায়ত্ব ও বিনয় মানুষের এমন পুঁজি যা শুধূ আল্লাহর দরবারেই পেশ করা যেতে পারে। আর যে দুর্ভাগা নিজের এ অসহায়তা ও অভাবের কথঅ তারই মত দুর্বল ও অসহায় মানুষের নিকট পেশ করে সুতরাং এ দেওলিয়ার কাছে আল্লাহর দরবারে পেশ করার জন্য আর কিছুই থাকে না। সে চিরজীবন অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায় কিন্তু কোথাও সম্মান পায় না।
আল্লাহ তাআলা বলেছেন-
আরবি
“তিনি তো তাঁর বান্দাদের তওবা কবুল করেন এবং তাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করেন তোমরা যা কিছু করো তিনি তা সব জানেন”।
(সূরায়ে শূরা-২৫)
মূলতঃ মানুষের এ বিশ্বাস রাখা উচিত যে, উন্নতি ও সফলতার দরজামাত্র একটিই, এ দরজা থেকে যাকে তাড়িয়ে দেয়া হলো সে চিরজীবনের জন্য লাঞ্চিত ও বঞ্চিত হয়ে গেল। মুমিন হলো সেই বান্দা যে ধরনের গুনাহই করুক না কেন তার কাজ সে আল্লাহর দরবারেই কান্নাকাটি করবে। বান্দাহর জন্য আল্লাহর দরজা ব্যতীত আর কোনো দরজা নেই যেখানে সে ক্ষমা পেতে পারে। সীমা এই যে, মানুষ যদি আল্লাহকে ছেড়ে রাসূলকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করে তাহলে তার সে চেষ্টায় কোন ফল হবে না, বরং তাকে তাড়িয়ে দেয়া হবে। রাসূল (সাঃ) ও আল্লাহর বান্দাহ এবং তিনিও এ দরজার ফকীর, অভাবী, তিনি যে মহান আল্লাহর সর্বাধিক বিনয়ী বান্দা এবং তিনি সাধারণ লোকদের তুলনায় আল্লাহর দরবারে অনেক বেশী কান্নাকাটি করেন।
রাসূল (সাঃ) বলেছেন-
“লোকেরা! আল্লাহর নিকট গুনাহ মাফের প্রার্থনা কর আর তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তন করো। আমাকে দেখ! আমি প্রত্যহ শতবার আল্লাহর নিকট গুনাহ মাফের প্রার্থনা করতে থাকি”।
(মুসলিম)
মুনাফিকদের আলোচনায় আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ
আরবি
“মুনাফিকরা আপনার নিকট শপথ করবে যেন আপনি তাদের নিকট থেকে সন্তুষ্ট হন, আপনি যদি তাদের নিকট থেকে সন্তুষ্টও হয়ে যান তা হলেও নিশ্চয়ই আল্লাহ এ দুষ্কৃতিকারী জাতি থেকে সন্তুষ্ট হবেন না”।
(সূরা তওবা-৯৬)
পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হযরত কাআব বিন মালেক (রাঃ)-এর ঘটনা সর্বকালের জন্য শিক্ষণীয় যে, বান্দাহ সব কিচু সইতে পারে, প্রত্যেক পরীক্ষা বরদাশত করতে পারে কিন্তু আল্লাহর দরজা থেকে উঠার কল্পনাও মনে করতে পারে না। দীনের পথে মানুষের উপর যত কিছুই অতিবাহিত করা হোক আল্লাহর পক্ষ থেকে যতই পদদলিত করা হোক তার জীবনকে উজ্জ্বল করা এবং মর্যাদা বৃদ্ধির উপকরণ মাত্র। এ অসম্মান চিরস্থায়ী সম্মানের বিশ্বস্ত পথ এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর দরজা ছেড়ে অন্য কোথায়ও সম্মান অন্বেষণ করে সে কোথায়ও সম্মান পেতে পারে না। সে সর্বত্র অপমানিত হবে এবং আসমান ও জমিনের কোন একটি চক্ষুও তাকে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখতে পারে না।
“ঐ তিনজনকেও আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দিয়েছেন, যাদের কাজ-কারবার পূর্বে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। যখন জমিন বিস্তৃতও প্রশস্ত থাকা সত্বেও তাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল আর তাদের প্রাণও তাদের নিকট বোঝা বোধ হতে লাগলো এবং তারা বুজতে পারলো যে, আল্লাহর কাছ থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর উপায় ছাড়া আর কোন উপায় নেই, তখন আল্লাহ তাআলা দয়া করে প্রত্যাবর্তন করান যেন তারা প্রত্যাবর্তিত হয়। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তিনিই ক্ষমাশীল ও অত্যন্ত দয়ালু”।
(সূরায়ে তওবা-১১৮)
তিন ব্যক্তির দ্বারা হযরত কাআব বিন মালেক (রাঃ), হযরত মোররাহ বিন রবী এবং হযরত বেলাল বিন উমাইয়্যাকে বুঝানো হয়েছে। এ তিনজনের তওবা জীবন থাকা পর্যন্ত মুমিনদের জন্য পতের দিশারী হয়ে থাকবে। হযরত কাআব বিন মালেক (রাঃ) বৃদ্ধাবস্থায় অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন এবং তাঁর ছেলের সাহায্য নিয়ে চলাচল করতেন। তিনি নিজেই নিজের তওবার শিক্ষণীয় ঘটনাগুলো নিজের ছেলের নিকট বর্ণনা করেছিলেন যা হাদীসের কিতাবসমূহে আছে।
৫. তওবা করতে কক্ষণো বিলম্ব করবে না, জীবনের অবস্থা সম্পর্কে যে সময় আসছে তা জীবনের না মৃত্যুর তার কোন হদিস নেই। সর্বদা চূড়ান্ত পরিণামের কথা স্মরণ রাখবে এবং তওবা ও এস্তেগফার দ্বারা আত্মা, মন ও জবানকে গুনাহ থেকে পরিষ্কার করতে থাকবে।
রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেছেন-
আল্লাহ রাতে রহমতের হাত বিস্তার করেন, যে ব্যক্তি দিনে গুনাহ করেছে সে যেন রাতে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে। এবং যে ব্যক্তি রাত গুনাহের কাজ করেছে সে যেন দিনে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে এবং গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।
(মুসলিম)
আল্লাহ তাআলার হাত বিস্তার করার অর্থ হচ্ছে তিনি নিজের গুনাহগার বান্দাদের আহ্বান করেন এবং নিজের রহমত দ্বারা তাদের গুনাহগুলোকে ঢেকে দিতে চান। বান্দা যদি কোন সময় সাময়িক আবেগের বশবর্তী হয়ে কোন গুনাহ করেও ফেলে তাহলে তার উচিত যে, সে যেন তার রাহীম ও গাফুর আল্লাহর দ্বারা গুনাহ সৃষ্টি হয় আর শয়তান সর্বদা মানুষ শিকারের চেষ্টায় ব্যস্ত আছে। সে তাকে গোমরাহ করার চিন্তা থেকে নিশ্চিন্ত নেই।
৬. অত্যন্ত সরল অন্তরে তওবা করবে যা নিজের জীবনের ধারাই পরিবর্তন করে দেয়। আর তওবার পরে মানুষ ভিন্ন মানষে পরিণত হয়ে যায়।
আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেছেন-
“হে, মুমিনগণ! আল্লাহর নিকট তওবা কর, আশা করা যায় যে, তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের গুনাহসমূহ দূর করে দেবেন। আর তোমাদেরকে এমন বেহেশতে প্রবেশ করাবেন যার নিচ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত। সে দিন আল্লাহ তার নবী ও তাঁর সাথে যারা ঈমান এনেছে এমন লোকদের লজ্জিত করবেন না”।
(সূরা তাহরীম-৮)
অর্থাৎ এমন তওবা করবে যে, অন্তর ও মস্তিষ্কের কোথাও যেন গুনাহের দিকে প্রত্যাবর্তন করার কোন সন্দেহও না থাকে। এমন তওবার তিন চারটি অংশ আছে। গুনাহের সম্পর্ক যদি আল্লাহর হকের সাথে সম্পর্কিত হয় তাহলে তওবার ৩টি অংশ।
(ক) মানুষ তার গুনাহের কারণে আল্লাহর দরবারে লজ্জিত হবে।
(খ) আগামীতে গুনাহ থেকে বিরত থাকার জন্য মজবুত সংকল্পবদ্ধ থাকবে।
(গ) নিজের জীবনকে সংশোধন করার জন্য পূর্ণ মনোযোগের চেষ্টা করবে। অধিকন্তু সে যদি কোন বান্দার হক নষ্ট করে থাকে তাহলে তওবার অংশ আরো একটি আছেঃ তাহলো
(ঘ) বান্দর হক আদায় করবে অথবা তার নিকট থেকে ক্ষমা চেয়ে নেবে। ঐ তওবা যার দ্বারা মানুষ গুনাহ থেকে পবিত্র হয়ে যায় তার একেকটি গুনাহ তার আত্মা থেকে ফোঁটা ফোঁটা করে ঝরে পড়ে আর সে নেক দ্বারা সজ্জিত জীবন নিয়ে আল্লাহর দরবারে পৌঁছে অতঃপর আল্লাহ তাকে বেহেশত দান করেন।
রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেছেন-
বান্দাহ যখন গুনাহের কাজ করে তখন তার অন্তরে একটি কাল দাগ পড়ে যায়, তখন সে যদি-
- গুনাহ থেকে ফিরে আসে।
- নিজের গুনাগর কারণে লজ্জিত হয়ে ক্ষমাপ্রার্থী হয়।
- আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে গুনাহ থেকে বিরত থাকার দৃঢ় সঙ্কল্প করে তখন আল্লাহ তার অন্তরকে উজ্জ্বল করে দেন এবং যদি সে আবার গুনাহের কাজ করে তখন তার অন্তরের দাগ বৃদ্ধি করে দেন। এমনকি তার সমগ্র অন্তরে সে দাগ ছড়িয়ে যায়। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেনঃ
আরবি
“কখনো নয়, বরং তাদের অসৎ কৃতকর্মের ফলে তাদের অন্তরে মরিচা ধরে গিয়েছে”।
৭. নিজের তওবার উপর স্থির থাকার জন্য দৃঢ় সংকল্প রাখবে আর রাত দিন এ খেয়াল রাখবে যে,আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা ও চুক্তির যেন কোন প্রকার ত্রুটি না হয়। নিজের পবিত্রতা ও অবস্থার সংশোধনে দৈনিক ক্রমোন্নতির খয়িান দ্বারা কৃতসংকল্পের যাচাই করতে থাকবে। নিজের সার্বিক প্রচেষ্টা সত্বেও যদি পদস্খলিত হয়ে যায় এবং পুনরায় কোন গুনাহ করে বসে তাহলেও কক্ষনো নিরাশ হবে না বরং আবারো আল্লাহর মাগফিরাতরে আশ্রয় খোঁজ করবে এবং আল্লাহর দরবারে বিনীত প্রার্থনা করবে যে, হে প্রতিপালক! আমি অত্যন্ত দুর্বল, কিন্তু তুমি আমাকে অপমান করে তোমার দরজা থেকে বের করে দিওনা, কেননা, আমার জন্য তোমার দরজা ভিন্ন আর কোন দরজা নেই। যেখানে গিয়ে আমি আশ্রয় গ্রহণ করবে।
হযরত শেখ সাদী (রহঃ) বলেছেন-
আরবি
“আয় আল্লাহ! তুমি আমাকে তোমার দরজা থেকে লাঞ্ছিত বঞ্চিত করে তাড়িয়ে দিওনা, কেননা আমি তো তোমার দরজা ছাড়া আর কারো দরজায় যাবনা”।
আল্লাহ যে জিনিসের দ্বারা বেশী সন্তুষ্ট হন তাহলো বান্দার তওবা। তওবার অর্থ হলো প্রত্যাবর্তন করা। মানুষ যকন গোমরাহীতে পতিত হয়, গুনাহের পঙ্কিলতায় পড়ে যায় তখন সে আল্লাহর নিকট থেকে নিক্ষিপ্ত হয়ে অনেক দূরে সরে যায়। আবার সে যখন ফিরে এসে তার কৃতকর্মের দরুণ লজ্জিত হয়ে আল্লাহর দিকে মনোযোগী হয়, তকন এমন মনে হয় যেন আল্লাহ তার হারিয়ে যাওয়া বান্দাকে ফিরে পেলেন, এই অবস্থাকে রাসূল (সাঃ) এভাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন-
“তোমাদের কারো উট যদি ঘাস-পানিবিহীন মরুভূমিতে হারিয়ে যায় এবং তার খাবার পানীয় ও মালপত্র ঐ উটের পিঠে থাকে সে ব্যক্তি তখন এ মরুময় প্রান্তরে উট খুঁজে না পেয়ে নিরাশ হয়ে নির্ঘাত মৃত্যুর অপেক্ষা করতে থাক্ ঠিক এমতাবস্থায় সে যদি তার হারানো উটকে সমস্ত মাল-পত্র বোঝাই অবস্থায় তার কেমন আনন্দ অনুভূত হবে? অনুরূপ তোমাদের প্রতিপালকও সে ব্যক্তি থেকে আরো অধিক আনন্দিত হন যখন তোমাদের মধ্য থেকে তাঁর পথহারা গোমরাহ বান্দা তওবা করে তাঁর দিকে আবার প্রত্যাবর্তন করে। আর গোমরাহীর পরে সে আবার আনুগত্যের পথ অবলম্বন করে”।
(তিরমিযী)
রাসূল (সাঃ) এ গুরুত্বপূর্ণ রহস্যকে অন্য এক উদাহরণের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন।
একবার এক যুদ্ধে কিছু লোক গ্রেফতার হয়ে আসলো। তাদের মধ্যে একজন মহিলা ছিল যার দুগ্ধপোষ্য শিশু হারিয়ে গিয়েছিল। সে শিশুর জন্য এমন অস্থির ও উন্মাদ হয়ে গিয়েছিল যে, কোন ছোট শিশু পেলেই তাকে নিয়ে দুধ পান করাতো। এ মহিলার এমন অবস্থা দেখে রাসূল (সাঃ) সাহাবায় কেরামগণকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি এমন আশা পোষণ করতে পারবে, যে এই মলিা স্বয়ং তার নিজ শিশুকে নিজ হাতে আগুনে ফেলে দেবে! সাহাবাগণ উত্তর দিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! নিজে ফেলা তো দূরের কথা, সে শিশুকে যদি নিজে আগুনে পড়তে দেখে তাহলে এই মা নিজের প্রাণ বাজি রেখে তাকে বাঁচাবে। এরপর রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেছেন-
“এই মা তার শিশুর প্রতি যেমন দয়ার্দ্র আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের উপর তার থেকেও বেশী দয়াবান”।
৮. তওবা ও এস্তেগফার করতে থাকবে, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মানুষের অজানা কত গুনাহইনা হতে থাকে, অনেক সময় মানুষের সে সম্পর্কে অনুভূতিও থাকেনা। এ কথা মনে করবে না যে, শুধু কোন বড় গুনাহ হয়ে গেলেই তওবা করতে হবে, মানুষ সব সময়ই তওবা ও এস্তেগফারের মুখাপেক্ষী এবং কদমে কদমেই তার ত্রুটি-বিচ্যুতি হতে থাকে। স্বয়ং রাসূল (সাঃ) দিনের মধ্যে সত্তর বার বা একশত বার তওবা এস্তেগফার করতেন।
(বুখারী,মুসলিম)
৯. যে গুনাহগার তওবা করে নিজের জীবনকে সংশোধন করে নেয় তাকে কখনো তুচ্ছ মনে করবে না। হযরত ইমরান ইবনুল হোসাইন (রাঃ) রেসালাতের যুগের একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন যে, জুহাইনা গোত্রের এক মহিরা যিনার মাধ্যমে গর্ভবতী হয়েছিল, সে রাসূল (সাঃ) এর দরবারে হাজির হয়ে বললো, “ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যিনার শাস্তি পাওয়ার উপযুক্ত, আমার উপর শরীয়তের আইন প্রতিষ্ঠা করুন এবং আমাকে শাস্তি দিন”। রাসূল (সাঃ) ঐ মহিলার অলীকে বললেন, তোমরা এর সাথে উত্তম ব্যবহার করতে থাক। যখন সন্তান প্রসব করবে তখন তাকে আমার নিকট নিয়ে আসবে। সন্তান প্রসবের পর সে মহিলাকে যখন আনা হলো তখন রাসূল (সাঃ) নির্দেশ দিলেন, তার শরীর বেঁধে দাও। যেন পাথর মেরে হত্যা করার নির্দেশ দিলেন। তাকে পাথর মারা হলো। অতঃপর রাসূল (সাঃ) তার জানাযা পড়লেন, তখন হযরত ওমর (রাঃ) রাসূল (সাঃ)-কে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি জানাযা পড়লেন? এতো খুবই অসৎ কাজ করেছে? এর পরে রাসূল (সাঃ) বললেন, এ এমন তওবা করেছে যে, তা মদীনার সত্তরজন পাপী লোকের উপর বন্টন করে দিলে তাদের নাজাতের জন্য তা যথেষ্ট হয়ে যাবে। তুমি তার চেয়ে উত্তম কোন ব্যক্তিকে দেখেছ কি? সে তার জীবনকে আল্লাহর দরবারে পেশ করে দিয়েছে।
১০. সাইয়্যেদুল এস্তেগফারের গুরুত্ব প্রদান করবে। রাসূল (সাঃ) শাদ্দাদ বিন আওস (রাঃ)-কে এমন শিক্ষা দিয়েছেন যে, সাইয়্যেদুল এস্তেগফার অর্থাৎ মাগফিরাতের সর্বোত্তম দোআ এইটি-
আরবি
“আয় আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক। তুমি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছো এবং আমি তোমার বান্দা, আমি তোমার সাথে এবাদতের যে ওয়াদা ও চুক্তি করেছি তার উপর সাধ্যানুযায়ী প্রতিষ্ঠিতি থাকবো, আমি যে গুনাহ করেছি তার কুফল থেকে তোমার আশ্রয় চাই, তুমি আমাকে যেসব নেয়ামত দান করেছ তা আমি স্বীকার করি এবং আমি আমার গুনাহ স্বীকার করি। সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা করো, তুমি ছাড়া গুনাহ ক্ষমাকারী আর কেউ নেই”।
(বুখারী, তিরমিযি)
দোআর নিয়ম
১. দোআ শুধু আল্লাহর নিকট করবে। আল্লাহ ব্যতীত কক্ষণো কাউকে অভাব মোচনের জন্য ডাকবে না। দোআ হলো ইবাদতের রত্ন আর ইবাদত পাওয়ার অধিকারী হলেন একমাত্র আল্লাহ।
পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছে-
“আর তাঁকে ডাকাই ঠিক এবং তাঁকে ছাড়া অন্যদেরকে ডাকলে তারা তাদের দোআর জবাব দিতে সক্ষম নয়, তাদেরকে ডাকাতো এমন, যেমন কোন ব্যক্তি তার উভয় হাত পানির দিকে বাড়িয়ে চায় যে, দূর থেকেই পানি তার মুখে এসে পড়ুক। বস্তুতঃ পানি এভাবে তার মুখে এসে পড়তে পারেনা। অনুরূপ কাফেরদের দোআ নিস্ফল ও ভ্রষ্ট”।
(সূরা রাদ-১৪)
অর্থাৎ অভাব মোচন ও কর্ম সম্পাদনের সমস্ত ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহরই হাতে। আল্লাহ ব্যতীত কারো কাছে কোন ক্ষমতা নেই। সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। তিনি ব্যতীত আর কেউ নেই যে, বান্দার ডাক শুনবে এবং তাদের দোআর জবাব দেবে।
পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছে-
“মানবগণ! তোমরা সকলেই আল্লাহর মুখাপেক্ষী, আর আল্লাহই হলেন একমাত্র অমুখাপেক্ষী ও প্রশংসিত”।
(সূরা ফাতের-১৫)
রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেছেন যে, আল্লাহ বলেছেন-
আমার বান্দাহগণ? আমি আমার উপর যুলুমকে হারাম করেছি সুতরাং তোমরাও একে অন্যের উপর যুলুম করাকে হারাম মনে করো। আমার বান্দাগণ! তোমাদের মধ্য থেকে যাকে আমি হেদায়েত করবো সে ব্যতীত বাকি সকলেই গোমরাহ। সুতরাং তোমরা আমার নিকট হেদায়েত প্রার্থনা কর তাহলে আমি তোমাদেরকেও হেদায়েত দান করবো। তোমাদের মধ্য থেকে যাকে আমি খাবার দান করি সে ব্যতীতক বাকি সকলেই ক্ষুধিত। সুতরাং তোমরা আমার নিকট খাবার প্রার্থনা করো তা হলে আমি তোমাদেরকে খাবার দান করবো। তোমাদের মধ্য থেকে যাকে আমি পরিধান করাব সে ব্যতীত সকলেই বস্ত্রহীন থাকবে। সুতরাং তোমরা আমার নিকট পোশাক প্রার্থনা কর তাহলে আমি তোমাদেরকে পোষাক দান করবো। বান্দাহগণ! তোমরা রাতে আমার গুনাহ করেছ যে আমি সকল গুনাহ মাফ করে দেবো”।
(মুসলিম)
রাসূল (সাঃ) বলেছেন যে, “মানুষের আবশ্যকীয় সকল জিনিসের জন্যে আল্লাহরই নিকট প্রার্থনা করা উচিত। এমনকি যদি জুতার ফিতা নষ্ট হয়ে যায় তাও আল্লাহরই নিকট প্রার্থনা করবে এমনকি যদি লবণের প্রয়োজন হয় তাও আল্লাহরই নিকট প্রার্থনা করবে”।
(তিরমিযি)
অর্থাৎ মানুষের প্রয়োজনীয় ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তুর জন্যও আল্লাহর মুখাপেক্ষী হওয়া উচিত। কেননা তিনি ব্যতীত প্রার্থনা কবুল করার জন্য আর কেউ নেই, আর তিনি ছাড়া আশা পূর্ণকারীও কেউ নেই।
২. আল্লাহর নিকট হালাল ও পবিত্র বস্তুই প্রার্থনা করবে। নাজায়েয উদ্দেশ্য ও গুনাহের কাজের জন্য আল্লাহর দরবারে হাত তোলা অত্যন্ত ঘৃণ্যতম বেয়াদবী, নির্লজ্জতা ও অভদ্রতা। হারাম ও নাজায়েয উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা এবং মান্নত করা দীনের সাথে নিকৃষ্টতম পরিহাস। এমন দোআ করবে না যা আল্লাহ তাআলা চিরন্তভাবে স্থির করে দিয়েছেন যার কোন পরিবর্তন হতে পারে না। যেমন কোন বেঁটে ব্যক্তি লম্বা হবার জন্য দোআ করা অথবা কোন অসাধারণ লম্বা ব্যক্তি খাটো হবার জন্য দোআ করা অথবা কোন ব্যক্তির এরূপ দোআ করা যে, আমি সর্বদা যুবক থাকবো আর কখনো যেন বৃদ্ধাবস্থা স্পর্শ না করে ইত্যাদি।
পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছে-
“প্রত্যেক ইবাদতে সেজদার স্থান- এর দিকে মুখ করবে এবং তার জন্য দীনকে খাঁটি করে তার নিকট প্রার্থনা করবে”।
(সূরা আ’রাফ-১৯)
নাফরমানীর পথে চলার প্রয়োজনে নিজের নাজায়েয উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য আল্লাহর দরবারে দোআ করবে না। অসৎ কাজে প্রয়োজন সদুদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবে।
৩. গভীর আবেগ ও পবিত্র নিয়তে দোআ করবে। এমন প্রত্যয় ও বিশ্বাসের সাথে দোআ করবে যে, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা হচ্ছে, তিনি সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে অবগত আছেন। আর তিনি আপনার প্রতি অত্যন্ত দয়ালুও বটে, তিনি নিজ বান্দাদের আরাধনা শুনেন আর তাদের দোআ কবুল করেন। লোক দেখানো প্রদর্শনী, রিয়াকারী এবং শিরক থেকে নিজের দোআকে সর্বদা পবিত্র রাখবে।
পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছে-
আরবি
“অতঃপর তোমরা নিরংকুশ আনুগত্যের মাধ্যমে আল্লাহরই নিকট দোআ করো”।
(আল মুমিন-১৪)
“আর যে, রাসূল! আমার বান্দাগণ যখন আপনাকে আমার সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করে তখন তাদেরকে বলে দিন, আমি তাদের নিকটেই আছি। প্রার্থনাকারী যখন প্রার্থনা করে তখন আমি তাদের দোআ কবুল করি। সুতরাং তাদেরও আমার দাওয়াত কবুল করা উচিত। আর আমার উপর ঈমান রাখা উচিত তাহলে তারা সত্য পথে চলতে পারবে”।
(সূরা বাকারা-৮৬)
৪. দোআ পূর্ণ মনোযোগ, একনিষ্ঠতা এবং একাগ্র চিত্তে করবে, আল্লাহর উপর ভরসা করবে, নিজের পাপরাশির পরিবর্তে আল্লাহর অশেষ ক্ষমা ও করুণা এবং অসীম দানশীলতা ও বদান্যতার প্রতি দৃষ্টি রাখবে। যে ব্যক্তি অমনোযোগী, বেপরোয়া ও নির্ভীকতার সাথে আল্লাহর সাথে সুধারণা পোষণ না করে মুখে কিছু শব্দ আওড়ায় তার দোআ মূলত দোআই নয় অর্থাৎ এরূপ দেআ আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না।
“নিজের দোআ কবুল হবার আশায় একাগ্রচিত্তে দোআ-করবে, আল্লাহ অমনোযোগী ও ভয় শূণ্য নির্ভীক অন্তরের দোআ কবুল করেন না”।
(তিরমিযি)
৫. দোআ, অত্যন্ত অনুনয়-বিনয়, নম্রতা ও মিনতির সাতে করবে। খুশু ও খুজু এর অর্থ এই, অন্তরে আল্লাহর ভয়, মহত্ব ও গুরুত্বের প্রভাবে কম্পমান থাকবে এবং শরীরের বাহ্যিক অবস্থায়ও এর প্রকাশ ঘটবে, মাথা ও দৃষ্টি অবনত হবে, আওয়ায নিম্নগামী হবে, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ শিথিল হয়ে যাবে, চক্ষু হবে অশ্রু ভেজা এবং চাল-চলনে হীনতা ও অসহায়তা প্রকাশ পেতে থাকবে।
রাসূল (সাঃ) এক ব্যক্তিকে দেখতে পেলেন যে, নামাজে দাঁড়িয়ে দাঁড়ি নাড়া-চাড়া করছে, তখন তিনি বললেন, “তার অন্তরে যদি বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ পেতো!”
মূলতঃ দোআ করার সময় মানুষকে আল্লাহর ভয়ে ভীত হওয়া উচিত যে, আমি একজন হতভাগা সহায় সম্পদহীন মিসকীন, আল্লাহ না করুন,আমি যদি এ দরবার থেকে প্রত্যাখ্যাত হই তবে আমার দ্বিতীয় কোন আশ্রয়স্থল নেই, আমার নিকট আমার বলার মতো কিছু নেই, যা কিছু আছে তার মালিক আল্লাহ, আল্লাহ যদি না দেন তাহলে দুনিয়াত আর কেউ নেই যে, আমাকে কিছু দিতে পারে, আল্লাহই সব কিছুর অধিকারী, তাঁরই নিকট সবকিছুর কোষাগার এবং বান্দা শুধু ফকীর ও মোহতাজ।
পবিত্র কুরআনের হেদায়েত হচ্ছে-
আরবি
“তোমাদের প্রতিপালকের নিকট অশ্রু-সিক্ত নয়নে দোআ কর”।
দাসত্বের পরিচয়ই এই যে, বান্দা তার প্রতিপালককে অত্যন্ত বিনয়-নম্রতা ও অসহায়তার সাথে ডাকবে, আর তার মন মস্তিষ্ক ও আবেগ-অনুভূতি এবং সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তাঁর দরবারে নত হয়ে থাকবে। তার জাহের ও বাতেনের দ্বারা অভাব-অভিযোগের প্রার্থনা প্রকাশ পেতে থাকবে।
৬. দোআ চুপে চুপে মৃদু স্বরে করবে এবং আল্লাহর দরবারে অবশ্যই কাঁদবে কিন্তু এ কান্নাকাটি যেন প্রর্দশনী অর্থাৎ লোক দেখানো না হয়। বান্দার মিনতি ও বিনয়তা এবং অভিযোগ পেশ শুধু আল্লাহর দরবারেই হওয়া উচিত।
নিঃসন্দেহে দোআ কোন কোন সময় উচ্চস্বরেও করা যায়, কিন্তু নির্জনে এরূপ করবে অথবা সমবেতভাবে দোআ করা হয় তখন উচ্চস্বরে দোআ করবে যেন শ্রোতাগণ আমীন বলতে পারেন। সাধারণ অবস্থায় চুপে চুপে দোআ করবে নিজের জন্যে, কখনো লোকদেরকে দেখানোর জন্য যেন না হয়।
পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছে-
“তোমার প্রতিপালককে মনে মনে ভয় ও রুনাজারীর সাতে স্মরণ করবে। আর মুখেও সকাল সন্ধ্যায় নিম্নস্বরে স্মরণ করবে এবং কখনো অমনোযোগীদের অন্তর্ভূক্ত হবে না”।
হযরত যাকারিয়া (আঃ) এর ইবাদতের প্রশংসা করে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে-
আরবি
“যখন সে তাঁর প্রতিপালককে চুপে চুপে ডাকলো”।
(সূরা মরিয়ম-৩)
৭. দোআ করার আগে কিছু নেক আমলও করবে, যেমনঃ কিছু ছদকা খয়রাত করবে, কোন অনাহারিকে আহার করাবে অথবা নফল নামায ও রোযা রাখবে, আর যদি আল্লাহ না করুন! কোন বিপদ এসেও পড়ে তাহলে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে ইবাদত করেছো, সেই ইবাদতের অসীলা দিয়ে আল্লাহর দরবারে দোআ করবে। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছে-
“তাঁরই দিকে পবিত্র কথাগুলো উত্থিত হয় আর নেক আমল তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে”।
(সূরা আল ফাতের-১০)
একবার রাসূল (সাঃ) এমন তিন সাথীর কাহিনী বর্ণনা করলেন যারা এক অন্ধকার রাতে পাহাড়ের গুহায় বন্দী হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর তারা তাদের ইবাদতের দোহাই দিয়ে আল্লাহর দরবারে দোয়া করেছিল এবং আল্লাহ তাদেরকে বিপদ মুক্ত করে দিয়েছিলেন।
ঘটনা এরূপ, তিনি সাথী এক অন্ধকার রাতে পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নিয়েছিল হঠাৎ পাহাড়ের গুহামূলে পাথরের এক বিরাট খন্ড এসে পড়ল। ফলে গুহার মুখ বন্ধ হয়ে গেল। পাথর ছিল বড় তা সরিয়ে গুহার মুখ পরিষ্কার করা তাদের পক্ষে সাধ্যাতীত ছিল। তাই তারা পরামর্শ করলো যে, প্রত্যেকে প্রত্যেকের জীবনের উল্লেখযোগ্য ইবাদতের দোহাই দিয়ে আল্লাহর দরবারে এ বিপদ থেকে মুক্তির জন্য দোআ করবে, হয়তো আল্লাহ তাদেরকে এ সংকট থেকে মুক্তি দিতে পারেন। সুতরাং মধ্য থেকে এক ব্যক্তি বলল-
আমি জঙ্গলে মেষ চরাতাম, তাতেই আমার জীবিকা নির্বাহ হতো। আমি যখন জঙ্গল থেকে ফিরে এসে সর্বপ্রথম আমার মা-বাবাকে দুধ পান করাতাম তারপর আমার ছেলে-মেয়েদেরকে। একদিন আমার ফিরতে দেরী হলো। এদিকে আমার বৃদ্ধ মাতা-পিতা ঘুমিয়ে পড়লেন, ছেলে-মেয়েরা জাগ্রত আর ক্ষুধিত ছিল। কিন্তু আমি ভাল মনে করলাম না যে, মাতা-পিতার আগে ছেলে-মেয়েদেরকে দুধ পান করার এবং মাতা-পিতাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তাঁদের ঘুমের ব্যাঘাতও ঘটাতে মন চাইলো না। সুতরাং আমি দুধের পেয়ালা হাতে নিযে তাদের শিয়রে দাঁড়িয়ে রইলাম। ছেলে-মেয়েরা আমার পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকলো কিন্তু আমি ভোর হওয়া পর্যন্ত এভাবে দাঁড়িয়েই রইলাম।
আয় আল্লাহ! আমি এ কাজ শুধু তোমারই সন্তুষ্টির জন্যই করেছি। সুতরাং তুমি আমার ত্যাগের বরকতে পাথর সরিয়ে গুহার মুখ খুলে দাও। এরপর আল্লাহর ইচ্ছায় গুহার মুখ কিছুটা পরিষ্কার হলো যার ফলে আকাশ দেখা গেল।
দ্বিতীয় ব্যক্তি বলল, আমি কিছু মজুর দ্বারা কাজ করিয়েছিলাম এবং সকলকে তাদের মজুরী দিয়ে দিলাম, কিন্তু এক ব্যক্তি তার মজুরী না নিয়েই চলে গেল। কয়েক বছর পর সে তার মজুরী নিতে আসলে আমি তাকে বললাম, এ গরু ছাগল এবং চাকর নওকর যা আছে এগুলো সবই তোমার, তুমি এগুলো নিয়ে যাও। সে বলল, আল্লাহর দোহাই, বিদ্রূপ করোনা। আমি বললাম, বিদ্রূপ নয় বরং এসব কিছুই তোমার। তুমি যে মজুরীর টাকা ছেড়ে চরে গিয়েছিলে আমি তা ব্যবসায় খাটালাম, ব্যবসায় আল্লাহ তাআলা যথেষ্ট বরকত দিলেন আর তুমি এসব যা কিছু দেখছ তা সবই ঐ ব্যবসার ফল। এগুলো তুমি সন্তুষ্টচিত্তে নিয়ে যাও। এরপর সে সব নিয়ে চলে গেল।
আয় আল্লাহ এসব কিছু আমি তোমার সন্তুষ্টির জন্যই করেছি। আয় আল্লাহ! তুমি এর বরকতে গুহার মুখের পাথর সরিয়ে দাও। আল্লাহর অশেষ রহমতে প্রস্তর খণ্ড আরো সরে গেলো।
তৃতীয় ব্যক্তি বলল, আমার এক চাচাত বোন ছিল, তার সাথে আমার ভালো বন্দুত্ব ছিল, সে কিছু টাকা চাইল এবং আমি তাকে টাকা যোগাড় করে দিলাম। কিন্তু আমি যখন আমার প্রয়োজন মিটানোর জন্য তার পাশে বসলাম তখন সে বলল, “আল্লাহকে ভয় করো এবং এ কাজ থকে বিরত থাক”। আমি তখনই উঠে চলে গেলাম, আর আমি তাকে যে টাকা দিয়েছিলাম তাও তাকে দান করলাম।
আয় আল্লাহ! তুমি ভাল করেই জান যে, আমি এসব কিছু তোমার সন্তুষ্টির জন্যই করেছি। আয় আল্লাহ! তুমি এর বরকতে গুহার মুখ খুলে দাও। অতঃপর আল্লাহ গুহার মুখ থেকে পাথর সরিয়ে দিলেন এবং এ তিন ব্যক্তিকেই আল্লাহ বিপদ থেকে মুক্তি দিলেন।
৮. সদুদ্দেশ্যে দোয়া করার সাথে সাথে আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক নিজের জীবনকে সুসজ্জিত ও সংশোধন করার চেষ্টাও করবে। গুনাহের কাজ ও হারাম বস্তু থেকে পুরোপুরিভাবে বিরত থাকবে। প্রত্যেক কাজে আল্লাহর নির্দেশের মর্যাদা ও সম্মান করবে এবং পরহেজগারীর ন্যায় জীবন-যাপন করবে। হারাম খেয়ে, হারাম পান করে, হারাম পরিধান করে এবং হারাম মাল দ্বারা নিজের শরীরকে পালন করে দোআকারী ব্যক্তি এ আশা পোষণ করবেনা যে, আমার এ দোআ কবুল হবে। এমন করলে তা হবে অত্যন্ত মূর্খতা ও নির্লজ্জতা। দোআকে কবুলের যোগ্য করার জন্য প্রয়োজন হলো মানুষের কথা, কাজ ও দীনের নির্দেশ মোতাবেক চলা।
রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেছেন-
“আল্লাহ পবিত্র আর তিনি শুধু পবিত্র মালকেই গ্রহণ করেন এবং আল্লাহ মুমিনদেরকে তাই নির্দেশ দিয়েছেন যার নির্দেশ তিনি রাসূলদেরকে দিয়েছেন।
আল্লাহ পাক বলেন-
“হে রাসূলগণ! পবিত্র খাদ্য খাও এবং নেক আমল কর”। মুমিনদেরকে সম্বোধন করে বলেছেনঃ
আরবি
“হে মুমিনগণ! আমি তোমাদেরকে যে সব হালাল ও পবিত্র বস্তু দান করেছি তোমরা তা খাও”।
অতঃপর তিনি এমন এক ব্যক্তির কথা আলোচনা করেছেন, যে সফরে দীর্ঘপথ অতিক্রম করার পর পবিত্র স্থানে উপস্থিত হয়েছে, তার শরীরে ধূলি মিশ্রিত, আর সে আকাশের দিকে হাত বিস্তৃত করে বলে, হে আমার প্রতিপালক! হে, আমার প্রতিপালক!! বস্তুতঃ তার খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পোষাক হারাম আর হারামের দ্বারাই তার শরীর লালিত পালিত হয়েছে। এমন ব্যক্তির দোআ’ কিভাবে কেমন করে কবুল হতে পারে?
(সহীহ মুসলিম)
৯. সব সময় দোআ করতে থাকবে। আল্লাহর দরবারে নিজের অক্ষমতা, অভাব এবং দাসত্বের প্রকাশ করাও একটি ইবাদত। মহান আল্লাহ তাআলা স্বয়ং নিজেই দোআ করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন, “বান্দা যখন আমাকে ডাকে তখন আমি তার ডাক শুনি”। দোআ করা থেকে কখনও বিরত হবে না। আর এ দোআ দ্বারা তাকদীর বা ভাগ্য পরিবর্তন হবে কি হবে না, দোআ কবুল করা বা না করা আল্লাহর কাজ, যিনি মহান জ্ঞানী ও মহা বিজ্ঞানী। বান্দার কাজ সর্বাবস্থায় এই যে, সে একজন অসহায় ভিক্ষুক ও অভাবগ্রস্তের মত নিয়মিত দোআ করতে থাকবে এবং নিজেকে মুহূর্তের জন্যেও অমুখাপেক্ষী মনে করবে না।
রাসূল (সাঃ) বলেছেন-
“সর্বাধিক অসমর্থ সে ব্যক্তি যে দোআ করায় অসমর্থ”।
(তিবরানী)
রাসূল (সাঃ) ইহাও বলেছেন যে, “আল্লাহর নিকট দোআ করা থেকে অধিক সম্মান ও মর্যাদার বস্তু এই জগতে আর কিছুই নেই”।
(তিরমিযি)
বান্দাহর কাজ হলো, দুঃখ ও সুখ, দারিদ্র ও স্বচ্ছলতা, বিপদ ও আনন্দ, আরাম সর্বাবস্থায় আল্লাহকেই ডাকা, তাঁরই দরবারে অভাব অভিযোগ পেশ কর এবং নিয়মিত তাঁরই নিকট ভালোর জন্য দোআ করতে থাক।
রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেছেন-
“যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট দোআ করে না আল্লাহ তার উপর রাগান্বিত হন”।
(তিরমিযি)
১০. দোআ’ কবুল হওয়ার ব্যাপারে অবশ্যই আল্লাহর উপর ভরসা রাখবে। দোআ কবুল হবার লক্ষণ যদি তাড়াতাড়ি পরিলক্ষিত নাও হয় হবে নিরাশ হয়ে দোআ করা ছেড়ে দেবে না। দোআ কবুল হওয়ার চিন্তায় অস্থির হওয়ার পরিবর্তে দোআ ঠিক মতো করার চিন্তা করবে।
হযরত ওমর (রাঃ) বলেন-
“আমার দোআ কবুল হওয়ার চিন্তা নেই, বরং আমার শুধু দোআ করার চিন্তা আছে। আমার যখন দোআ করার সৌভাগ্য লাভ হয়েছে তখন কবুলও তার সাথে হয়ে যাবে”।
রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেছেন-
“কোন মুসলমান যখন আল্লাহর নিকট কিছু চায় এবং আল্লাহর দিকে মুখ ফিরায় তখন আল্লাহ তার আবেদন পূরণ করে দেন। হয়তো তার উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়ে যায় অথবা আল্লাহ তার প্রার্থিত বস্তুকে আখেরাতের জন্য সঞ্চিত রেখে দেন। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার এক মুমিন বান্দাকে তাঁর দরবারে হাযির করবেন এবং তাকে নিজের সামনে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করবেন, হে আমার বান্দা! আমি তোমাকে নির্দেশ দিয়েছিলাম যে, তুমি আমার প্র দোআ করবে আর আমি তা কবুল করব। তুমি কি দোআ করেছিলে? সে বলবে, প্রতিপালক! দোআ করেছিলাম। অতঃপর আল্লাহ বলবেন, তুমি আমার নিকট যে দোআই করেছিলে আমি তা কবুল করেছিলাম। তুমি কি অমুক দিন এ দোআ করোনি যে, আমি তোমাকে সেই দুঃখ-কষ্ট থেকে পরিত্রাণ দিয়েছিলাম? বান্দাহ বলবে, হ্যাঁ সত্য, হে প্রতিপালক! অতঃপর আল্লাহ বলবেন, সে দোআ তো আিম কবুল করে দুনিয়াতেই তোমার আকাঙ্খা পূরণ করে দিয়েছিলাম। অমুক দিন তুমি অন্য এক দুঃখে পতিত হয়ে দোআ করেছিলে যে, আয় আল্লাহ! এ বিপদ থেকে মুক্তি দাও। কিন্তু তুমি সে দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি পাওনি। অনবরত সে দুঃখ ভোগ করেছিলে। সে বলবে, নিঃসন্দেহে হে প্রতিপালক। তখন আল্লাহ বলবেন, আমি সে দোআর পরিবর্তে বেহেশতে তোমার জন্য বিভিন্ন প্রকার নেয়ামত গচ্ছিত করে রেখেছি। অনুরূপ অন্যান্য প্রয়োজনের কথা জিজ্ঞেস করেও এরূপ বলবেন।
অতঃপর রাসূল (সাঃ) বলেন-
মুমিন বান্দার কোন দোআ এরূপ হবে না যার সম্পর্কে আল্লাহ এ বর্ণনা দেবেন না যে, তা আমি দুনিয়ায় কবুল করেছি এবং তোমার জন্য পরকালে সঞ্চয় করে রেখেছি। এ সময় মুমিন বান্দা চিন্তা করবে আমার কোন দোআই যদি দুনিয়ার জন্য কবুল না হতো তাহলে কতই না ভাল হতো।সুতরাং বান্দার সর্বাবস্থায় দোআ করতে থাকা উচিত”।
(হাকেম)
১১. দোআ করার সময় দোআর আদবসমূহ এবং পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার প্রতি দৃষ্টি রাখা উচিত। আর অন্তরকেও পবিত্র রাখবে।
পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছে-
আরবি
“নিশ্চয়ই আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, যারা বেশী বেশী করে তওবা করে আর যারা অত্যন্ত পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন থাকে”।
সূরায়ে মুদ্দসসের বলা হয়েছেঃ
আরবি
“আর আপনার প্রতিপালকের বড়ত্ব বর্ণনা করুন এবং আপনার কাপড় (আত্ম)-কে পবিত্র রাখুন”।
১২. অন্যের জন্যও দোআ করবে। তবে সর্বদা নিজের জন্যেই আরম্ভ করবে অতঃপর অন্যান্যের জন্য। পবিত্র কুরআনে ইবরাহীম (আঃ) ও নূহ (আঃ)-এর দু’টি দোআ বর্ণনা করা হয়েছে এভাবে-
“হে আমার প্রতিপালক! আমাকে নামায প্রতিষ্ঠকারী হিসাবে তুমি কবুল কর, আর আমার সন্তানদের থেকেও (এমন মানুষ সৃষ্টি কর যারা একাজ করবে)। আমার দোআ কবুল করো। হে আমাদের প্রতিপালক! যে দিন হিসাব-নিকাশ হবে সেদিন আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে ক্ষমা কর”।
(সূরা ইবরাহীমঃ ৪০-৪১)
নূহ (আঃ)-এর দোআ-
আরবি
“আমার প্রতিপালক। আমাকে ক্ষমা কর, আমার মাতা-পিতাকে ক্ষমা করো এবং যারা আমার ঘরে মুমিন হিসেবে এসেছে তাদেরকেও ক্ষমা করো এবং সকল মুমিন পুরুষ ও নারীদেরকে ক্ষমা করো”।
(সূরা নূহ-২৮)
হযরত উবাই বিন কা’আব (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) যখন কারো সম্পর্কে আলোচনা করতেন তখন তার জন্য দোআ করতেন, আর সে দোআ প্রথমে নিজের তরফ থেকেই আরম্ভ করতেন।
(তিরমিযি)
১৩. আপনি যদি ইমামতি করেন তাহলে সর্বদা সকলকে জড়িয়ে দোআ করবেন এবং বহুবচনের শব্দ ব্যবহার করবেন। পবিত্র কুরআনে যে সবল দোআ বর্ণনা করা হয়েছে, ঐগুলোতে সাধারণতঃ বহুবচনের শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। ইমাম মূলতঃ মুক্তাদিদের প্রতিনিধি। ইমাম যখন বহুবচনের শব্দ ব্যবহার করে দোআ করে তখন মুক্তাদিগণেরও সাথে সাথে ‘আমীন’ বলা উচিত।
১৪. দোআ সংকীর্ণমনা এবং স্বার্থপরতা থেকে মুক্ত হবে আল্লাহর বিস্তৃত দয়াকে সীমিত মনে করে ভুল করে তার দয়া ও দানকে নিজের জন্য নির্ধারিত করে দোআ করবে না।
হযরত আবু হুরাইর (রাঃ) বলেছেন, মসজিদে নববীতে এক বেদুঈন এসে নামায আদায় করলো, তারপর দোআ করল এবং বললো যে, আয় আল্লাহ! আমার এবং মোহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর দয়া করো। আর আমাদের সাথে কারো উপর দয়া করো না তখন রাসূল (সাঃ) বললেনঃ
আরবি
“তুমি আল্লাহর বিস্তৃত দয়াকে সংকীর্ণ করে দিয়েছো”।
(বুখারী)
১৫. দোআয় ছন্দ মিল করার চেষ্টা করা থেকেও বিরত থাকবে এবং সাদাসিধে ও বিনীতভাবে দোআ করবে। গীত এবং সুর মিলান ভাল নয়। তবে বিনা চেষ্টায় যদি কখনো মুখ থেকে মিল মত শব্দ বের হয়ে যায় অথবা ছন্দ মিল হয়ে যায় তাহলে কোন ক্ষতি নেই। রাসূল (সাঃ) এর এরূপ কোন কোন দোআ বর্ণিত আছে যে, যার মধ্যে বিনা চিন্তায় ছন্দ মিল ও সমতাপূর্ণ হয়ে গিয়েছে। যেমন হযরত যায়েদ বিন আরকামএর এরূপ একটি অর্থপূর্ণ দো বর্ণিত আছে-
“আয় আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় চাই এমন অন্তর থেকে যার মধ্যে বিনয় নেই, তৃপ্তি নেই, এমন বিদ্যা যার মধ্যে কোন উপকারিতা নেই আর এমন দোআ যা কবুলও হয় না”।
১৬. আল্লাহর দরবারে নিজের প্রয়োজনের কতা পেশ করার পূর্বে তাঁর প্রশংসা ও গুনাগুণ বর্ণনা করবে। অতঃপর দু’রাকাত নফল নাময পড়ে নেবে এবং দোআর প্রথম ও শেষে রাসূল (সাঃ)-এর উপর দরূদ ও সালাম পেশ করার চেষ্টা করবে।
রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেছেন-
“যখন কেউ আল্লাহর নিকট অথবা কোন মানুষের নিকট কোন প্রয়োজন পূরণের ব্যাপারে উপস্থিত হয় তখন তার উচিত সে যেন প্রথমে অযু করে দু’রাকাত নফল নামায পড়ে। অতঃপর আল্লাহর প্রশংসা করবে এবং রাসূল (সাঃ)-এর উপর দরূদ ও সালাম পেশ করবে এবং তারপর আল্লাহর দরবারে নিজের প্রয়োজনের কথা বলবে”।
(তিরমিযি)
রাসূল (সাঃ) সাক্ষ্য দিয়েছিলেন যে, বান্দার যে দোআ আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান এবং রাসূল (সাঃ)-এর দরূদ ও সালামের সাথে পেশ করা হয় তা কবুল হয়। হযরত ফোবালা (রাঃ) বলেছেন যে, রাসূল (সাঃ) মসজিদে ছিলেন এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি এসে নামায পড়ল, নামাযের পর সে বললো
আরবি
“আয় আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করো”।
তিনি শুনে তাকে বললেন, “তুমি আবেদন করতে গিয়ে তাড়াতাড়ি করেছো যখন নামায পড়তে বসবে তখন প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা করবে, তারপর দরূদ শরীফ পাঠ করবে, অতঃপর দোআ করবে। তিনি যখন একথা বলছিলেন এমতাবস্থায় দ্বিতীয় এক ব্যক্তি আসলো, সে নামায পড়ে আল্লাহর প্রশংসা করল, দরূদ শরীফ পাঠ করলো। রাসূল (সাঃ) বললেন, এখন দোআ করো, দোআ কবুল হবে”।
(তিরমিযি)
১৭. আল্লাহর নিকট দোআ করতে থাক। কেননা তিনি তাঁর বান্দাদের ফরিয়াদ শনতে কখনো বিরক্ত হননা, বরং হাদীস থেকে জানা যায় যে, এমন কিছু বিশেষ সময় ও অবস্থা আছে যার মাধ্যমে দোআ তাড়াতাড়ি কবুল হয়। সুতরাং এ সকল বিশেষ সময় ও অবস্থায় দোআর বিশেষ ব্যবস্থা করবে।
(ক) রাতের শেষাংশে মানুষ নিদ্রায় বিভোর থাকে-এ সময় যে বান্দা উঠে তার প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনা করে, আর অসহায় মিসকীন হয়ে নিজের অভাব-অভিযোগের কথা তাঁর দরবারে পেশ করে তখন তিনি দয়া করেন।
রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেছেন-
“আল্লাহ প্রত্যেক রাতে দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন এমনকি যখন রাতের শেষাংশ বাকী থেকে যায় তখন বলেন, কে আমার নিকট দোআ করবে। আমি তার দোআ কবুল করব, কে আমার নিকট চাইবে? আমি তাকে দান করব, কে আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব”।
(তিরমিযি)
(খ) লাইলাতুল ক্বাদরে বেশী দোআ করবে, কেননা, এ রাত আল্লাহর নিকট হাজার মাস থেকেও উত্তম। আর বিশেষ করে এ দোআ করবে যে,
আরবি
“আয় আল্লাহ! তুমি অধিক ক্ষমাকারী, তুমি ক্ষমা করাকে ভালোবাস, সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।
(তিরমিযি)
(গ) আরাফাতের মাঠে যিলহজ্বের ৯ তারিখে আল্লাহর মেহমানগণ যখন একত্রিত হয়।
(তিরমিযি)
(ঘ) জুমার দিন বিশেষ সময়ে অর্থাৎ খোৎবা আরম্ভ থেকে নামায শেষ পর্যন্ত অথবা আছরের নামাযের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত।
(ঙ) আযানের সময় আর জিহাদের ময়দানে যখন মুজাহিদদের কাতার বন্দী করা হয়।
রাসূল (সাঃ) বলেছেন-
“দু’টি জিনিস আল্লাহর দরবার থেকে ফেরত দেয়া হয় না, প্রথমটি হলো আযানের দোয়া আর দ্বিতীয়টি হলো জিহাদে কাতার বন্দীর সময়ের দোয়া”।
(আবু দাউদ)
(চ) আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়।
রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেছেন-
আযান ও ইক্বামতের মধ্যবর্তী সময়ের দোআ প্রত্যাখ্যান করা হয় না। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ। এ মধ্যবর্তী সময়ে আমরা কি দোআ করব? তিনি বললেন-
আরবি
“আয় আল্লাহ! আমি তোমার নিকট দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য ক্ষমা, সুস্থতা ও শান্তি কামনা করি”।
(ছ) রমযান মুবারক এর দিন সমূহে বিশেষতঃ ইফতারের সময়।
(তিরমিযি)
(জ) ফরয নামাযের পর মাসনূন দোয়া। (তিরমিযি) একাকী বা ইমামের সাথে।
(ঝ) সেজদা রত অবস্থায়।
রাসূল (সাঃ) এরশাদ করেছেন-
“সেজদাবনত অবস্থায় বান্দা তার প্রতিপালকের অনেক নৈকট্য লাভ করে। সুতরাং এ সময় তোমরা বেশী বেশী দোআ করবে”।
(ঞ) যখন কঠিন বিপদ অথবা অত্যন্ত দুঃখ-কষ্টে নিপতিত হয়।
(হাকেম)
(ট)যখন যিকির ও ফিকির (আলোচনা গবেষণা) এর কোন মজলিস অনুষ্ঠিত হয়। এবং
(বুখারী, মুসলিম)
(ঠ) পবিত্র কুরআন খতমের সময়।
(তিবরানী)
১৮. এ সকল স্থানেও দোআর বিশেষ ব্যবস্থা করবে। হযরত হাসান বসরী (রহঃ) মক্কা থেকে মদীনায় যাবার প্রাক্কালে মক্কাবাসীদের নামে একটি চিঠি লিখলেন, যাতে মক্কায় অবস্থানের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য বর্ণনা করেছেন এবং তাতে এও উল্লেখ করেছেন যে, মক্কায় এই এগারটি স্থানে বিশেষভাবে দোআ কবুল হয়।
(১) মুলতাযামের নিকট। (২) মীযাবের নীচে। (৩) কা’বা ঘরের ভিতর। (৪) যমযম কূপের নিকট। (৫) ছাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের উপর। (৬) ছাফা মারওয়ার নিকটবর্তী স্থান যেখানে সায়ী’ করা হয়। (৭) মাকামে ইব্রাহীমের পিছনে। (৮) আরাফাতে। (৯) মুযদালিফায়। (১০) মিনায় এবং (১১) তিন জামরার নিকট।
১৯. সব সময় চেষ্টা করবে যে, দোআর ঐ সকল শব্দসমূহ মুখস্থ হয়ে যায় যা পবিত্র কুরআনে ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে।
আল্লাহ তাআ’লা তাঁর নবী-রাসূল ও নেক বান্দাদেরকে যে পদ্ধতি ও শব্দসমূহ শিক্ষা দিয়েছেন তার চেয়ে উত্তম শব্দ ও পদ্ধতি আর মিলবে কোথায়? তদুপরি আল্লাহর শিক্ষা দেয়া ও রাসূলের পছন্দনীয় শব্দসমহূহে যে প্রভাব ও বরকত এবং কবুল হবা যে মর্যাদা বিদ্যমান তা অন্য বাক্যে কিভাবে সম্ভব? অনুরূপভাবে রাসূল (সাঃ) দিন রাত যে সব দোআ করেছেন তাতেও হৃদয়স্পর্শী মধুরতা এবং পূর্ণ দাসত্বের মাহাত্ম্য পাওয়া যায়, তার চেয়ে উত্তম দোআ, আবেদন ও আকাঙ্খার কল্পনা করাও সম্ভব নয়।
দোআর জন্য কোন ভাষা, পদ্ধতি অথবা বাক্যের কোন বাধ্য-বাধকতা নেই। বান্দা আল্লাহর নিকট যে কোন ভাষায় এবং যে কোন বাক্যে যা ইচ্ছে তাই প্রার্থনা করতে পারে। কিন্তু আল্লাহ তাআলার অতিরিক্ত মাহাত্ম্য ও দয়া যে, তিনি শিক্ষা দিয়েছেন “আমার নিকট প্রার্থনা করো”। বান্দাকে দোআর শব্দসমূহ শিক্ষা দিয়েছেন। সুতরাং আল্লাহর নিকট কুরআন ও হাদীসের দেয়া শব্দের মাধ্যমে দোআ করবে। আর এ সকল দোআ সব সময় করবে যা পবিত্র কুরআনে বর্ণনা করা হয়েছে অথবা স্বয়ং রাসূল (সাঃ) যেভাবে প্রার্থনা করেছেন।
অবশ্য যে পর্যন্ত কুরআন হাদীসের এ দোআগুলো মুখস্ত না করতে পারবে সে পর্যন্ত দোআ সমূহের সারমর্ম মনে রাখবে।