ইসলামী উসূলে ফিকাহ
ইসলামী বিধান শাস্ত্রের উৎসগত পদ্ধতিবিদ্যা
মূল
ড. তাহা জাবির আল আলওয়ানী
অনুবাদ
মুহাম্মদ নুরুল আমিন জাওয়ার
বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ইসলামিক থ্যট
সকল প্রশংসা পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহ তা আলার যিনি সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা এবং সালাত ও সালাম তাঁর সর্বশেষ নবী ও রাসূলের (সা:) প্রতি।
প্রকাশকের কথা
যে সকল মনীষী ইসলামী আইন শাস্ত্র (ফিকাহ) ও ইসলামী আইনতত্ত্ব (উসূলে ফিকাহ) অধ্যয়নে এবং এর গবেষণা ও উন্নয়নে যুগ যুগ ধরে অবদান রেখে এসেছেন তাঁদেরই একজন ড. তাহা জাবির আল আলওয়ানী বর্তমান সময়ের একজন বিশ্বসেরা ইসলামী পণ্ডিত। তার লেখা Usul Al Fiqh Al Islami বইটির বাংলা সংস্করণ ইসলামী উসূলে ফিকাহ নামে বিআইআইটি থেকে প্রকাশ করতে পেরে আনন্দবোধ করছি।
বস্তুত উসূলে ফিকাহ বা ইসলামী বিধানতত্ত্ব একটি অত্যন্ত কঠিন বিষয়। বাংলা ভাষায় এতে ব্যবহৃত পরিভাষার যথোপযোগী প্রতিশব্দ পাওয়া দুষ্কর। তবুও আমরা মুল পরিভাষার পাশাপাশি তার অর্থ প্রদানের চেষ্টা করেছি যাতে বাংলা ভাষায় এর একটি উপযুক্ত পরিভাষা গড়ে উঠতে পারে। বাংলা ভাষায় এ পর্যন্ত কোন নির্ভরযোগ্য উসূলে ফিকাহর অনুবাদ প্রকাশিত হয়নি। কেবল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের জন্য তাদের পাঠ্যক্রমভূক্ত কিছু অংশেরবাংলা অনুবাদ লক্ষ্য করা যায়।
আলোচ্য গ্রন্থখানি উসূলে ফিকাহর প্রাথমিক দিক। মূল গ্রন্থকার ছয় খন্ডে সমাপ্ত একখানি উসূলে ফিকাহর গ্রন্থ রচনা করেছে। বর্তমান গ্রন্থখানি তারই অংশবিশেষ। এই গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ করেছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক জনাব মুহাম্মদ নুরুল আমিন জাওহার। অনুবাদ থেকে অনুবাদ তৈরিকরলে বিষয় বিচ্যুতি ঘটার যথেষ্ট আশঙ্কা থাকে। তাই খ্যাতনামা গবেষক আলেম ও লেখক মাওলানা মুহাম্মদ মুসা মূল আরবির সাথে বাংলা অনুবাদ মিলিয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও সম্পাদনা করে দিয়েছেন। এজন্য তাদের দুজনকেই বিআইআইটির পক্ষ থেকে আন্তরিক মোবারকবাদ।
উল্লেখ্য, বইটির প্রথম সংস্করণ প্রকাশ হয়েছিল ১৯৯৬ সালে, দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ হয়েছিল ২০০৩ সালে এবং এটি এর তৃতীয় সংস্করণ। এর দ্বারা এমন একটি কঠিন বিষয়ের উপর লিখা বইয়ের পাঠক প্রিয়তা সহজেই অনুমান করা যায়।
আমাদের চারদিকের গভীরতম অন্ধকারে যারা আলোর সন্ধান করছেন, আমাদের সমসাময়িক সমস্যাসমূহ থেকে পরিত্রাণের উপায় বের করতে সচেষ্ট রয়েছেন সেসব মুসলিম যুবকদের উদ্দেশ্যে আমরা এই গ্রন্থখানি নিবেদন করছি। আশা করি গ্রন্থখানি তাঁদের কাজে লাগবে ইনশাআল্লাহ।
এম আবদুল আজিজ
উপ নির্বাহী পরিচালক
ভূমিকা
এই গবেষণা কর্মটি ১৯৭৩ সালে আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী বিধান শাস্ত্রের উপর আমার পি এইচ ডি প্রোগ্রামের অংশ বিশেষ। পরবর্তীতে ১৯৮২ সালে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে ইসলামী চিন্তা/দর্শনের উপর দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে জ্ঞানের ইসলামীকরণ বিষয়ের উপর আমার থিসিসের এ অংশটুকু সংশোধিত আকারে উপস্থাপন করা হয়।
মুসলিম ইয়ুথলীগ যখন উসূল আল ফিকহ তথা ইসলামী বিধান শাস্ত্রের উৎসগত পদ্ধতি বিদ্যার উপর একটি প্রশিক্ষণ কোর্স অনুষ্ঠানে আগ্রহ প্রকাশ করে, তখন আমার পূর্বে উপস্থাপিত এ অংশটুকু উক্ত প্রশিক্ষণ কোর্সের ছয়টি বিষয়ের মধ্যে একটি অন্যতম বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়। অতঃপর উক্ত কোর্সে অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই এই বক্তৃতাটি ছাপানো আকারে পেতে ইচ্ছে প্রকাশ করে।
যেহেতু জ্ঞানের ইসলামীকরণ বিষয়ে অনুষ্ঠিত ইসলামাবাদ কনফারেন্সের জন্য একটি পেপার হিসেবে তা ছাপানো হয়েছিল এবং ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ইসলামিক থ্যট তা প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছিল, সেহেতু আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি যে, কনফারেন্সে উপস্থাপিত এ অংশটুকু যারা কোর্সে অংশ গ্রহণ করেছে এবং যারা প্রয়োজনীয় শরীয়াহ বিজ্ঞানের জ্ঞান আহরণ করতে চায় তাদের সামনেও উপস্থাপন করা যায়।
মুসলিম চিন্তাবিদদের দ্বারা এ পর্যন্ত উদ্ভাবিত গবেষণা পদ্ধতিরমধ্যে উসূল আল ফিকাহকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞান হিসেবে যথাযথভাবে বিবেচনা করা হয়। অবশ্য ইসলামী জ্ঞানের সকল শাখা সমূহের নিখাদ ভিত্তি হিসেবে উসূল আল ফিকহ শুধুমাত্র ইসলামী সভ্যতার উপকার সাধনই করেনি বরং সামগ্রিকভাবে বিশ্ব সভ্যতার বুদ্ধিবৃত্তিক মানোন্নয়নেও অবদান রেখেছে।
এটা বলা এখানে অপ্রাসঙ্গিক হবেনা যে, ইসলামী বিধান শাস্ত্রীয় কাঠামোতে যে সাদৃশ্যমূলক পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয় তাই পরীক্ষা মূলক মতবাদ প্রতিষ্ঠা ও গঠনে পদ্ধতিবিদ্যার প্রাথমিক বিন্দু হিসেবে কাঠামো দান করে যা পরবর্তীতে সমসাময়িক সভ্যতার ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। আমরা এ বিষয়ে যারা জ্ঞান আহরণে আগ্রহী তাদের উদ্দেশ্যে এ সংক্ষিপ্ত গবেষণা কর্ম উপস্থাপন করছি।
আমরা মহান আল্লাহর সাহায্য কামনা করছি যাতে আমরা যা শিখছি তা থেকে উপকৃত হই এবং যাদ্বারা আমরা উপকৃত হই তা শিখতে পারি। যে জ্ঞান আমাদের উপকারে আসেনা তা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারি আর এমন কাজ থেকে বাঁচতে চাই যা আল্লাহর নিকট গ্রহণীয় নয়। নিঃসন্দেহে বিশ্ব জগতের রক্ষাকর্তা, প্রভূ আল্লাহর জন্যই সমস্ত প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা।
ড. তাহা জাবির আল আলওয়ানী
অনুবাদকের কথা
অর্থনীতির জগতে যেমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিময় মাধ্যম, জ্ঞানের জগতেও অনুবাদ তেমনি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিময় মাধ্যম। তবে মূল উৎস থেকে আহরিত জ্ঞানের আনন্দ নিঃসন্দেহে অনুদিত জ্ঞানে তুলনায় অনেক বেশি এবং অধিক নির্ভরযোগ্য। তারপরও মানব সভ্যতায় অনুবাদের প্রয়োজনীয়তা কখনো ফুরাবে বলে মনে হয় না। অনুবাদের উপর সওয়ার হয়ে জ্ঞানের সফর চলেতে থাকে ব্যক্তি মন থেকে সমাজ মনে, এক সংস্কৃতি থেকে অন্য সংস্কৃতিতে, যুগ থেকে যুগান্তরে। ড. তাহা জাবির আল আলওয়ানী রচিত গবেষণা গ্রন্থ উসূল আল ফিকাহ আল ইসলামী তেমনি এক যুগান্তরের সফর। ইসলামী চিন্তাধারার চরম উৎকর্ষের যুগে অনুসৃত গুরুত্বপূর্ণ এই গবেষণা পদ্ধতির সাথে আধুনিক গবেষকদেরকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার মহৎ উদ্দেশ্যে লেখক আরবি ভাষায় গ্রন্থখানি রচনা করেছিলেন। অতঃপর ইউসুফ তালাল দেলোরেনযো এবং এ এস. আল শাইখ আলী কর্তৃক এই মূল্যবান গ্রন্থটির ইংরেজি অনুবাদ একই ভাবে আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে। আমাদের বলছি এ কারণে যে, মূলতঃ বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ইসলামিক থ্যট কর্তৃপক্ষ, বিশেষ করে অধ্যাপক জয়নুল আবেদীন মজুমদারের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা না পেলে আমিও হয়তো এ গ্রন্থখানি অনুবাদের কাজ হাতে নিতাম না। এজন্য আমি তাঁদের কাছে বিশেষভাবে ঋণী। অনুবাদ করতে যে সকল অসুবিধার কথা ইংরেজি অনুবাদক উল্লেখ করেছেন, তাঁর অনুভূতির সাথে আমার অনুভূতির কোন ব্যতিক্রম নেই। বরং ক্ষেত্রবিশেষে ঋণী। অনুবাদ করতে যে সকল অসুবিধার কথা ইংরেজী অনুবাদক উল্লেখ করেছেন, তার অনুভূতির সাথে আমার অনুভূতির কোন ব্যতিক্রম নেই। বরং ক্ষেত্রবিশেষে বঙ্গানুবাদের সমস্যা তুলনামূলকভাবে বেশিই বলা যায়। কারণ বর্তমানে ইংরেজি ভাষায় স্বল্প পরিমাণে হলেও ইসলামী আইন সম্পর্কিত গ্রন্থাদি পাওয়া যায়। কিন্তু বাংলা ভাষায় এ বিষয়ে বিশেষতঃ ফিকাহ শাস্ত্র সম্পর্কিত গ্রন্থ নেই বললেই চলে। ফলে অনুবাদকের কাছে সর্বপ্রথম যে সমস্যাটি প্রকট হয়ে দেখা দেয় তা হলো পরিভাষাসমূহের অনুবাদ করার সমস্যা। আশা করি সুধী পাঠকগণের সুচিন্তিত পরামর্শ গ্রন্থটির আগামী সংস্করণকে আরো সমৃদ্ধ করবে। পান্ডুলিপি কপি করার কাজে আমার স্ত্রী বেগম আলিমা সকল কৃতজ্ঞতা একমাত্র মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে।
মুহাম্মদ নুরুল আমিন জাওহার