মেহেরউল্লার কাজের স্বীকৃতি
বঙ্গ বিখ্যাত বাগ্মী মুনসী মহম্মদ মেহেরউল্লা যে সময় মুসলমান জাতিকে খ্রীষ্টান পাদ্রী ও হিন্দুদের রোষানল থেকে রক্ষা করেছেন, সেই সময় মুসলমান জাতির অধঃপতন ও দুর্দশার কথা স্মরণ করলেও শরীর শিউরে উঠে। যতদূর ধারণা এই সময় যদি আল্লাহর মেহেরবানীতে মেহেরউল্লার আবির্ভাব না হতো মুসলমানদের ইতিহাস ভারত উপমহাদেশে হয়ত বা অন্য রকম হত। হয়ত ৮৬ জন মুসলিম অধ্যুষিত এই বাংলাদেশ আজ খ্রীস্টান অধ্যুষিত বাংলাদেশে পরিণত হত।
আল্লাহ মেহেরবান। আমাদেরকে এমন নাজুক অবস্থা থেকে রক্ষা করেছেন। কিন্তু যার প্রচার বাগ্মীতায় রক্ষা পেল এদেশের মুসলিম সমাজ তারা তাঁর স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য কতটুকু করেছে সেটাই এখন আলোচনা করতে চাই –তাঁর স্মৃতি রক্ষার জন্য যা কিছু করা হয়েছে তার মধ্যে যশোর কুষ্টিয়া ট্রেন লাইনের একটা স্টেশনের নামকরণ করা হয়েছে ‘মেহেরুল্লাহনগর’। এ স্টেশনটি তাঁর পৈত্রিক নিবাসছাতিয়ানতলা সংলগ্ন। দ্বিতীয়ত যশোর শহর থেকে ৭ মাইল দূরে ১৯৭৭ ঈসায়ী সালে ঝাউদিয়া বাজারে কর্মবীর মুনসী মোহ্মমদ মেহেরুল্লাহ একাডেমী নামে একটি বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন তদানিন্তন জেলা প্রশাসক জবান মহিউদ্দীন খান আলমগীর।
১৯৭৮ সালে মুনসী মেহেরউল্লার ১১৬তম জন্ম বার্ষিক উপলক্ষে যশোরেররবিবাসরীয় সাহিত্য সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী ঝাউদিয়াস্থ মুনসী মেহেরুল্লাহ একাডেমিতে বিভিন্ন স্থানের সাহিত্যিকদের নিয়ে তাঁর জীবনীর ওপর এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। এ উপলক্ষে রবিবাসরীয় সাহিত্য সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী একটা স্মরনিকা প্রকাশ করে। যতদূর জানা যায় তাঁর ওপর এটাই প্রথম স্মরণিকা। অবশ্য এ ব্যাপারে তৎকালীন জেলা প্রশাসক জনাব মহিউদ্দীন খান আলমগীর এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সাধারণ) জনাব আজিজুল হক পূর্ণ সহযোগিতা করেন।
এ স্মরণিকায় জেলা প্রশাসক লিখেছিলেন “তাঁর (মেহেরউল্লার) শক্তিশালী লেখনী ও সমাজ সংস্কারের বলিষ্ঠ পদক্ষেপ তৎকালীন সমাজকে এক নব দিগন্তের সন্ধান দিতে সমর্থ হয়। তাঁর ১১৬তম জন্ম বার্ষিকীতে তাঁকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি”।
কুষ্টিয়ার তৎকালীন জেলা প্রশাসক জনাব তাজুল হক লিখেছিলেন –“তাঁরই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা আজ পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিড়েছি, সংগ্রাম করে চলছি, জাতির অজ্ঞতা ও কুসংস্কার অন্ধকারকে বিদূরিত করতে”।
যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক লিখেছেন, “……তিনি যদি বাংলার মুসলমান সমাজকে অনাচার কদাচার ও অত্যাচারের হাত হতে উদ্ধার করে ইসলামের সঞ্জীবনী শক্তির দিকে আকৃষ্ট না করতেন তবে হয়ত তৎকালীন বহু ধর্মপ্রাণ মুসলমান বিভ্রান্তির শিকার হতেন। তাই তাঁর প্রতি প্রতিটি মুসলমান তথা বাংলার মুসলমান চির কৃতজ্ঞ থাকবে”।
স্মরণিকায় তাঁর জীবনের ওপর বেশ কিছু লেখাও প্রকাশিত হয়েছিল।
১৯৮১ ও ১৯৮২ সালে যশোর ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র কর্তৃক একবার তার সমাধিস্থল ছাতিয়ানতলাতে আর একবার ঝাউদিয়াস্থ মেহেরুল্লাহ একাডেমীতে কিছু সংখ্যক কবি সাহিত্যিক নিয়ে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিল। যশোর টাউন হল ময়দানকে “মেহেরুল্লাহ ময়দান” নামকরণ করা হয়েছে।
এরপর ১৯৭০ সালে যশোর সিটি কলেজের কতিপয় মেহের ভক্ত ছাত্রের উদ্যোগে সিটি কলেজের নামকরণ “মুনশী মেহেরুল্লাহ কলেজ” করা হয়। এমন কি মুনসী মেহেরউল্লার নাম লিখিত প্রস্তর ফলকও স্থাপন করা হয়। কিনউত সে নামকরণ পরে অজ্ঞাত কারণে বাতিল করা হয়। এরপর “মুনশী মেহেরুল্লাক একাডেমী” নামে ১৯৮৩ সালে একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়।
এ ছাড়া তাঁর মৃত্যুর মাত্র এক বছর পর তাঁর ঘনিস্ঠ সহচর ও বন্ধু মুনসী শেখ জমিরুদ্দীনের রচিত ‘মেহের চরিত’ (১৯০৯) প্রকাশিত হয়। ঐ বছরই জলপাইগুড়ি থেকে মোহাম্মদ আছিরউদ্দীন প্রধান রচিত ‘মেহেরউল্লার জীবনী’ (১৯০৯) প্রকাশিত হয়। এর অনেকদিন পর ১৯৩৪ সালে প্রকাশিত হয় কবি শেখ হবিবর রহমান সাহিত্যরত্ন রচিত ‘কর্মবীর মুনশী মেহেরুল্লাহ’ গ্রন্থটি।
মুনসী মহম্মদ মেহেরউল্লার জীবন ও কর্মকে নিয়ে এ তিনটি নির্ভরযোগ্য বই প্রকাশিত হওয়ার পর সুদীর্ঘ পঞ্চাশ বছর আর কোন গ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৩৬৭ সনের শীত সংখ্যা ‘সাহিত্য পত্রিকা’য় মেহেরুল্লাহ ও জমিরুদ্দীন’ শিরোনামে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের একটি নাতিদীর্ঘ গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। ১৯৭০ সালে কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রকাশিত হয় মুস্তাফা নূরুল ইসলাম রচিত গ্রন্থ মুনসী মহম্মদ মেহেরউল্লা। ১৯৮৩ সালে যশোর শহর থেকে মুহাম্মদ শাহাদাত আলী আনসারী রচিত ‘মুনশী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ’ প্রকাশিত হয়। এরপর মুনসী মেহেরউল্লার ওপর উল্লেখযোগ্য কাজ করেন অধ্যাপক মুহম্মদ আবূ তালিব। তাঁর রচিত ‘মুনশী মেহেরুল্লাহঃ দেশ কাল সমাজ’ গবেষণা গ্রন্থটি ১৯৮৩ সনে ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত হয়। ইসলামিক ফাউণ্ডেশন অবশ্য আবুল হাসনাত রচিত ‘মুনসী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ’ ও জোবেদ আলী রচিত ‘ছোটদের মুনশী মেহেরুল্লাহ’ নামে দুটো পুস্তিকাও প্রকাশ করেছে। এরও অনেক আগে ১৯৬৫ সনে শিশুদের জন্য দেওয়ান আবদুর হামিদ ‘ছোটদের মুনশী মেহেরুল্লাহ’ বইটি রচনা ও প্রকাশ করেন। পরে ১৯৮৫ সনে যশোর শহর থেকে মুহম্মদ জিলহজ আলী রচিত ‘ছোটদের সৈনিক মেহেরুল্লাহ’ প্রকাশিত হয়।
খন্দকার আবদুর মোমেন সম্পাদিত সাহিত্য পত্রিকা ‘প্রেক্ষণ’ মুনশী মেহেরুল্লাহ স্মরণ সংখ্যা (নভেম্বর ১৯৯৬) প্রকাশ করেছে। নাসির হেলাল সম্পাদিত ‘পালকি’র প্রথম সংখ্যায় মুনসী সাহেবের অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি ‘মানব জীবনের কর্তব্য’ ও দ্বিতীয় সংখ্যায় শেখ জমিরুদ্দীন রচিত মুনসী মেহেরউল্লার সংক্ষিপ্ত জীবনী ছাপা হয়েছে।
১৩০৬ সালে মুনসী শেখ জমিরুদ্দীনের রচিত ও শেখ আজিজুদ্দীন প্রকাশিত ‘হযরত ঈসা কে?’ পুস্তিকাটি মুনসী মহম্মদ মেহেরউল্লার নামে উৎসর্গ করা হয়েছে। উৎসর্গ পত্রে লেখা হয়েছে –“স্বজাতি বৎসল, স্বধর্ম পরায়ণ, সুবক্তা, উন্নতমনা, বিবিধ সদগুণরত্ন বিমণ্ডিত সোদর প্রতিম পরম সুহৃদ শ্রীল শ্রীযুক্ত মুনসী মহম্মদ মেহেরউল্লা সাহেব করকমলেষু”।
১৯৯৬ সালে কবি আফজাল চৌধুরী অনূদিত ও বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত ‘বার্নাবাসের বাইবেল’ গ্রন্থটি মুনসী মেহেরউল্লার নামে উৎসর্গ করা হয়েছে।
সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জী
(১৮৬১-১৯০৭)
১৮৬৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর যশোর জেলার ঝিনাইদহ মহকুমার বারবাজারের নিকটবর্তী ঘোপ গ্রামে মামার বাড়ীতে মুনসী মহম্মদ মেহেরউল্লা জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতারনাম মুনশী ওয়ারেশ উদ্দীন। স্থায়ী নিবাস যশোর শহর থেকে ৪ মাইল পশ্চিম-উত্তর কোণে ছাতিয়ানতলা গ্রামে।
১৮৬৬ সালে পাঁচ বছর বয়সে তাঁকে গ্রাম্য পাঠশালায় ভর্তি করা হয়। অল্পকালের মধ্যেই তিনি বিদ্যাসাগর রচিত ‘বর্ণ পরিচয়’ ১ম ও ২য় ভাগ সমাপ্ত এবং তৃতীয় পাঠ্যপুস্তক ‘বোধোদয়’ পাঠ শুরু করেন। কিন্তু স্নেহময় পিতা ওয়ারেস উদ্দীনের আকস্মিক ইন্তেকালের কারণে তাঁর লেখাপড়ার আপাতত ইতি ঘটে। পরে অবশ্য মহিয়সী মাতার নিকট তার পাঠ গ্রহণ অব্যাহত থাকে এবং তিনি এ সময়ে পবিত্র কোরআন, শেখ সা’দীর গুলিস্তাঁ, বুস্তাঁ ও পান্দেনামা পাঠ শেষ করেন। আরো পরে ১৮৭৫ সালে ১৪ বছর বয়সে তিনি খাজুরার নিকটবর্তী করচিয়া ও কয়ালখালী গ্রামে মুহাম্মদ ইসমাইলের নিকট ৩ বছর ও মুনশী মেসবাহ উদ্দীনের নিকট ৩ বছর আরবী ফারসী উত্তমরূপে অধ্যয়ন করেন।
২০ বছর বয়সে ১৮৮১ সালে তিনি যশোর জেলা পরিষদে ছোট একটি চাকুর গ্রহণের মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। কিন্তু স্বাধীনচেতা মনোভাবোর কারণে পরবর্তীতে চাকুরী ত্যাগ করে দর্জির কাজ শুরু করেন। ঐ ১৮৮১ সালে অথবা ১৮৮২ সালে তিনি যশোর দড়াটানায় একটি দর্জির দোকান দিয়ে স্বাধীনভাবে ব্যবসা শুরু করেন। যতদূর জানা যায়, এ সময় থেকেই খৃষ্টান মিশনারীদের অপতৎপরতার ময়দানী জবাব দেওয়া শুরু করেন। অবশ্য দর্জির কাজে কর্মরত অবস্থায় তিনি কিছুদিন দার্জিলিং ছিলেন। সেখানেও একটি দর্জির দোকান খুলেছিলেন তৎকালীন যশোরের জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের সহযোগিতায় এখানে থাকা অবস্থায় তিনি বাইবেল, বেদ, গীতা, উপনিষদ, ত্রিপিটক, গ্রন্থসাহেব ইত্যাদি ধর্মীয় গ্রন্থসমূহ গভীরভাবে পড়ার সুযোগ পান। বিশেষ করে এ সময় ‘তোফাজ্জল মুকতাদী’ নামক একটি উর্দুগ্রন্থ, হযরত সোলায়মান ওয়ার্সীর লেখা ‘কেন আমি পৈত্রিক ধর্ম ত্যাগ করেছিলাম’, ‘প্রকৃত সত্য কোথায়’ ইত্যাদি গ্রন্থ পাঠে তিনি প্রভূত জ্ঞান অর্জন করেন।
১৮৮৬ সালে ২৫ বছর বয়সে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম গ্রন্থ ‘খৃষ্ট ধর্মের অসারতা’। একই সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ইসলাম ধর্মোত্তোজিকা সমিতি যশোর’। মুনসী মহম্মদ মেহেরউল্লা এ সময়ে আর দর্জি থাকলেন না, তিনি হয়ে উঠলেন রীতিমত একজন তর্কযোদ্ধা ও লিখিয়ে।
৩০ বছর বয়সে ১৮৯১ সাল, মোতাবেক ১২৯৮ বঙ্গাব্দের ২১, ২২ ও ২৩শে আশ্বিন তারিখে বরিশালের পিরোজপুরে মুসলমান-খৃষ্টান তর্কযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তাঁর বিপক্ষে ছিলেন পাদরী ঈশানচন্ত্র মণ্ডল, পাদরী স্পার্জন ও পাদরী হাসান আলী। এ তর্কযুদ্ধে মুনসী সাহেব জয়লাভ করেন।
১৮৯২ সালের ৩১ বছর বয়সে রেভারেণ্ড জন জমিরুদ্দীন পাঠক রত্নের বিরুদ্ধে কলম যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। জমিরুদ্দীন সাহেবের প্রবন্ধ ছিল ‘আসল কোরআন’। দীর্ঘ কলম যুদ্ধের পর জমিরুদ্দীন পরাস্ত হন এবং ইসলাম গ্রহণ করেন।
৩৪ বছর বয়সে ১৮৯৫ সালে তাঁর ‘মেহেরুল এছলাম’ কাব্য এবং ‘রদ্দে খৃষ্টান ও দলিলোল এছলাম’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। ১৮৯৭ সালে প্রকাশিত হয় ‘বিধবা গঞ্জনা বা বিষাদ ভাণ্ডার’ কাব্যগ্রন্থটি। প্রশ্নোত্তর মূলক পুস্তিকা ‘জওয়াবুন্নাছারা’ প্রকাশিত হয় ১৮৯৮ সালে।
মুনসী মেহেরউল্লা ৩৮ বছর বয়সে পাবনা জেলার বড়ইবাড়ি হাটের জলসায় গিয়ে কিশোর ইসমাইল হোসেন সিরাজীর সাথে প্রথম পরিচিত হন। সময়টা ছিল ১৮৯৯ সাল। ঐ একই সালে তিনি খুলনার পায়গ্রাম কসবা, দৌলতপুর হাইস্কুল ময়দান, নোয়াখালীর ঈদগাহ ময়দান, জুবিলী স্কুল ময়দানের (৩, ৪ ও ৫ই ফাল্গুন ১৩০৬) জলসায় বক্তৃতা প্রদান করেন। এ সব জলসায় জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে হাজার হাজার লোকের সমাগত হত।
‘হিন্দু ধর্ম রহস্য দেবলীলা’ কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় মেহেরুল্লাহর ৩৯ বছর বয়সে। এই ১৯০০ সালেই তিনি নিজ খরচায় শিরাজীর ‘অনল প্রবাহ’ কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন। ১৯০১ সালে তিনি যশোরের মহোহরপুর গ্রামে ‘মাদ্রাসায়ে কারামতিয়া’ প্রতিষ্ঠা করেন। এই মাদ্রাসাটিই বর্তমানে ‘মুনশী মেহেরুল্লাহ একাডেমী’ নামে পরিচিত। ঐ ১৯০১ সালেই তিনি বগুড়া টমসন হলে (২২শে মাঘ) ও পাবনা টাউন হলে (৪ ও ৫ই আষাঢ়) বক্তৃতা প্রদান করেন।
১৯০৩ মোতাবেক ১৩১০ বঙ্গাব্দের ২০ ও ২১ শে চৈত্র তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম শিক্ষা সম্মেলনের ১ম অধিবেশনে যোগদান করেন। পরের বছর ১৩১১ বঙ্গাব্দের ২৬শে আষাঢ় বিহারের টাউন হলের এক জলসায় বক্তৃতা দেন; যার জন্যে রচনা করেন ‘মানব জীবনের কর্তব্য’ (অপ্রকাশিত) পুস্তিকাটি।
মুনসী সাহেব কুমিল্লার পশ্চিমগাঁওতে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম শিক্ষা সম্মেলনের দ্বিতীয় বার্ষিক অধিবেশনে যোগদান করেন ১৯০৫ সালে। এ সময়ে তার বয়স হয়েছিল ৪৪ বছর। মৃত্যুর এক বছর পূর্বে ৪৫ বছর বয়সে ১৯০৬ সালে তিনি যশোরের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক তাঁর নিজ ইউনিয়ন পরিষদের প্রেসিডেন্ট (চেয়ারম্যান) মনোনীত হন।
৪৬ বছর বয়সে ১৯০৭ সাল মোতাবেক ১৩১৪ বঙ্গাব্দের ২৪ ও ২৫শে বৈশাখ উত্তর বঙ্গের মঙ্গলঘাটের জলসা এবং ২৭শে বৈশাখ রংপুরের দারাজগঞ্জে জলসা করার পর তিনি নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে প্রত্যাবর্তন করেন। তাঁর অবস্থান অবনতি হলে সংবাদ পেয়ে মুনশী শেখ জমিরুদ্দীন ২১শে জৈষ্ঠ ছাতিয়ানতলায় আগমন করেন ও মুনসী সাহেবের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। ২৪শে জৈষ্ঠ্য ছাতিয়ানতলায় আগমন করেন ও মুনসী সাহেবের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। ২৪শে জৈষ্ঠ কলকাতা থেকে মুসলমান ডাক্তার আনা হয় তাঁর সুচিকিৎসার জন্য কিন্তু সব প্রচেষ্টাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে ঐ একই তারিখ বেলা ১টায় তিনি ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহে অ-ইন্না ইলাইহে রাজিউন।
গ্রন্থপঞ্জীঃ
১। কর্মবীর মুনশী মেহেরুল্লাহ –শেখ হবিবর রহমান
২। মুনশী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহঃ দেশ কাল সমাজ –মুহাম্মদ আবূ তালিব
৩। মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য –ডঃ আনিসুজ্জামান
৪। মুনশী মুহম্মদ মেহেরুল্লাহ –মুস্তফা নুরুল ইসলাম
৫। মুনশী মুহম্মদ মেহেরুল্লাহ –আবুল হাসনাত
৬। মুন্সী মুহম্মদ মেহেরুল্লাহ –মুহঃ শাহাদত আলী আনসারী
লেখক পরিচিতিঃ
নাম নাসির হেলাল। পিতা ও মাতার নাম যথাক্রমে মরহুম নাসির উদ্দীন বিশ্বাস এবং মরহুমা নূরজাহান বেগম নূরী। যশোর জেলার চৌগাছা থাকার বাড়ীয়ালী গ্রামে ১৯৬২ সালের ১০ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন এ কলম সৈনিক। শিশুকাল থেকেই ইতিহাস ঐতিহ্যপ্রেমী নাসির হেলাল কলম হাতে বেড়ে ওঠেন। কুষ্টিয়া মুসলিম হাইস্কুল, যশোর মুসলিম একাডেমীসহ গোটা দশেক স্কুল পরিবর্তনের পর ১৯৭৮ সালে নাভারণ বুরুজবাগান হাইস্কুল থেকে তিনি এস.এস.সি পাস করেন। ১৯৮০ সালে যশোর সিটি কলেজ থেকে এইচ.এস.সি, পরে ১৯৮৪ সালে যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং –এ ডিপ্লোমা পাস করেন। দীর্ঘ বিরতির পর বহিরাগত প্রার্থী হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯০ সালে বি.এ এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে নিয়মিত ছাত্র হিসাবে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ (১৯৯২ সালের পরীক্ষা ১৯৯৪ তে অনুষ্ঠিত হয়) পাস করেন। ঝিনাইদহের মহেশপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা বাংলা সাহিত্য পরিষদ ঢাকা’র ব্যবস্থাপনা এবং ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ –এর ইসলামী বিশ্বকোষ বিভাগ বিভাগে তিনি তাঁর কর্মজীবন অতিবাহিত করছেন।
সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় নাসির হেলাল –এর উল্লেখযোগ্য অবদানের মধ্যে –গবেষণা: ১. যশোর জেলার ছড়া ২. যশোর জেলায় ইসলাম প্রচার ও প্রসার ৩. বারবাজারের ঐতিহ্য।
উপন্যাস: ১. একাত্তরের প্রেম ২. অবাঞ্ছিত কলঙ্ক ৩. তিন পুরুষ ৪. খুন ৫. প্রেমের অনেক রং।
জীবনী গ্রন্থ: ১. বিশ্বনবীর পরিবার বা আহলে বাইত ২. নবী রাসূলদের জীবন কথা ৩. বেহেশতের সুসংবাদ পেলেন যাঁরা (দ্বিতীয় প্রকাশ) ৪. মু’মীনদের মা (দ্বিতীয় প্রকাশ) ৫. নবী দুলালী ৬. জাতীয় জাগরণের কবি গোলাম মোস্তফা ৭. সেরা মুসলিম মনীষীদের জীবন কথা।
নাটক: ১. মুনসী মেহেরউল্লা ২. ফেরাউন ৩. সত্য সমাগত।
সম্পাদতা: ১. মুনসী মেহেরউল্লা রচনাবলী (১ম খণ্ড), ২. মুনসী মেহেরউল্লা: জীবন ও কর্ম।
রহস্য সিরিজ ‘ফ্লাইং সসার’ যে নাসির হেলাল রচিত তা নিশ্চয় পরিচয় করিয়ে দেয়ার দরকার নেই।
‘আগুনঝরা ছড়া’র ছড়াকার নাসির হেলাল এবার আমাদের জাতীয় জাগরণের পথিকৃত, বাগ্মীকুলতীলক, ইসলাম প্রচারক ‘মুনসী মহম্মদ মেহেরউল্লা’ কে নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন। আমাদের একান্ত বিশ্বাস এ গ্রন্থটিও পাঠক নন্দিত হবে।