জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি

বিংশ শতাব্দীর জাহিলিয়াত

অন্তর্গতঃ uncategorized
Share on FacebookShare on Twitter

সূচীপত্র

  1. আমাদের কথা
  2. ভূমিকা
  3. ইতিহাসের পৃষ্ঠা থেকে
  4. আধুনিক জাহিলিয়াতের নিদর্শন
  5. চিন্তার ক্ষেত্রে সৃষ্ট বিপর্যয়
  6. চিন্তার বিপর্যয়
  7. আচার-আচরণে বিপর্যয়
  8. অর্থনীতির ক্ষেত্রে বিপর্যয়
  9. সামাজিক বিপর্যয়
  10. নৈতিকতার বিপর্যয়
  11. যৌন সম্পর্কে বিপর্যয়
  12. শিল্পকলায় বিপর্যয়
  13. সকল ক্ষেত্রেই বিপর্যয়
  14. ইসলাম ছাড়া গতি নেই
  15. ইসলামকে লোকেরা ঘৃণা করে কেন?
  16. আল্লাহর দিকে বিশ্বমানবতার প্রত্যাবর্তন

ইসলামকে লোকেরা ঘৃণা করে কেন?

ইসলামী জীবন পদ্ধতি পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ। সকল প্রকার বক্রতা ও বিকৃতি বা বিপথগামিতার মলিন স্পর্শ থেকে তা সম্পূর্ণরূপে মুক্ত ও পবিত্র।

মানুষের মনে যত প্রশ্নের উদয় হয়, মানুষের জীবনে দেখা দেয় যত সমস্যা ও জটিলতা, সব কিছুর জবাব ও সমাধান ইসলাম দিতে পারে, দিচ্ছেও। আর তার দেওয়া প্রতিটি জবাব নির্ভুল এবং সমস্যার ক্ষেত্রে দেওয়া প্রতিটি সমাধান যেমন ন্যায়সঙ্গত ও যুক্তিভিত্তিক, তেমনি অতীব কার্যকর।

এই জীবন বিধান মানুষের মনের বহু বিচ্ছিন্ন যোগ্যতা প্রতিভাবে একত্রিক করে একটি মাত্র মহান লক্ষ্য অর্জনের জন্যে কাজে লাগায়। এর ফলে মানুষের বিপুল যোগ্যতা ও কর্মক্ষমতা যেমন বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যয়িত হতে পারে না, তেমনি তার মনের ঝোঁক প্রবণতা ও আগ্রহ-উৎসাহও বহুতর ক্ষেত্রে বিভক্তও হয়ে পড়ে না। নানাবিধ পরস্পর বিরোধী কাজে ব্যস্ত হয়ে নিজেদের সীমিত শক্তিকে ব্যয় করে ফুরিয়ে যেতেও অন্তঃসারশূন্য হয়ে পড়তে হয় না মানুষকে।

এই জীবন পদ্ধতিই মানুষকে তার সখল দুর্ভাগ্য, দুঃখ-কষ্ট, পীড়ন, বিস্ময় ও বিভ্রান্তি থেকে মুক্তি দেতে পারে। এই মুক্তিদানের জন্যে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো কিছুরই করার নেই।

কিন্তু এতদসত্ত্বেও কিছু সংখ্যক মানুষ ইসলামী জীবন পদ্ধতিকে অপছন্দ করে এবং এড়িয়ে চলতে চায়, একটা বিস্ময়কর ব্যাপার নয়?

এই লোকদের যতই এদিকে ডাকা হয়, ততই যেন তা এ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, নিকটে আসার পরিবর্তে। ….এ দেখে নিশ্চয়ই সকলের মনে বিস্ময়ের উদ্রেক হওয়া খুবই স্বাভাবিক।

কিন্তু না এতে বিস্ময়ের কিছু নেই। এটা নয় কোনো স্বাভাবিক ঘটনা। এ দেখে বিস্ময়ের উদ্রেক হওয়াটা অস্বাভাবিক না হলেও এই মূল ব্যাপারটি খুবই স্বাভাবিক। ….স্বাভাবিক যতদূর কল্পনা করা যায়।

  সমস্ত জাহিলিয়াতেই –ইতিহাসের পৃষ্ঠায় যতগুলো জাহিলিয়াতের উল্লেক পাওয়া যায় –তার প্রতিটিই ইসলামকে অপছন্দ করেছে। অপছন্দ করেছে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কেননা এটা ইসলাম। ….ইসলাম তো ঘৃণারই পাত্র।….

জাহিলিয়াত প্রচণ্ড অহংকারী। আল্লাহ থেকে দূরে –অনেক দূরে অবস্থিত। জাহিলিয়াত তাকে অপছন্দ করে কেবল এজন্যে যে, আল্লাহ তা’আলা নিজেই এই পদ্ধতি নাযিল করেছেন মানুষের সমগ্র জীবনে তা বাস্তবায়ত করার জন্যে। এই জন্যে যে, তা-ই হবে গোটা মানব জীবনের একমাত্র নেয়ামক ও নিয়ন্ত্রণকারী বিধান।

পৃথিবীর ইতিহাসে এ জাহিলিয়াত অন্যান্য সকল জাহিলিয়াতের তুলনায় অধিক গৌরবী ও অহংকারী। আর এ কারণেই তা ইতিহাসের সব কয়টি জাহিলিয়াতের তুলনায় ইসলামকে অধিক অপছন্দকারী।

তাই বলছিলাম, জাহিলিয়াত ইসলামকে ঘৃণা করে, শত্রু মনে করে। কিন্তু ইসলামে যে পরম সত্য ও মহাকল্যাণ নিহিত জাহিলিয়াত জানে না বলে ঘৃণা করে, তা নয়। অথবা জাহিলিয়াত যে বাতিল মতাদর্শের মধ্যে অবস্থান করছে ও তাকেই তা সঠিক ও নির্ভুল মনে করে এবং ইসলামের তুলনায়ও তাকে উন্নত ও অধিক সত্য বলে বিশ্বাস করে এটাও তার ঘৃণার আসল কারণ নয়।

ইসলামের প্রতি জাহিলিয়াতের এই ঘৃণা বোধটা কোনোরূপ অজ্ঞতা বা ভুল বুঝাবুঝির কারণে নয়। বরং ইসলামে নিহিত সত্য ও কল্যাণের কথা মানব জীবনে সংঘটিত সকল বক্রতাকে ইসলাম যে সঠিক করে, তা জেনে শুনেই তাকে অপছন্দ ও ঘৃণা করে। এই ঘৃণার কারণ হলো, জাহিলিয়াত মানব জীবনের বক্রতা ও বিকৃতি-বিপর্যয়েরই কামনা করে, বক্রতা ও বিপর্যয় দূর হয়ে যাক, তা তো তার সহ্যই হয় না। মানুষ চিরকাল বিপথে চলুক এটাইতার কাম্য। অথচ ইসলাম তার সম্পূর্ণ বিপরীত ভূমিকা পালন করে।

জাহিলিয়াত জাহিরিয়াত বলেই তা ইসলামকে ঘৃণা করে।

(আরবী**********************************************************)

আর সামুদের কথা। আমরা তো তাদেরকে হেদায়েত দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা হেদায়েতের পরিবর্তে অন্ধত্বকে ভালো মনে করে গ্রহণ করে নিল।

(সূরা হা-মীম সেজদাঃ ১৭)

এটি একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে গণ্য হতে পারে এবং তা সমস্ত দৃষ্টান্তেরই সারনির্যাস। হেদায়েতের পরিবর্তে অন্ধত্বকে গ্রহণই হলো ইতিহাসের প্রতিটি জাহিলিয়াতের নীতি ও আদর্শ।

(আরবী******************************************************************************)

আমরা অবশ্যই নূহকে তার সময়কার জনগণের প্রতি পাঠিয়েছিলাশ। সে বললে হে জনগণ, তোমরা এক আল্লাহর দাসত্ব কবুল করো। কেননা তিনি ছাড়া তোমাদের ইলাহ আর কেউ নেই। আমি তোমাদের প্রতি কঠিন দিনের আযাবের ভয় করছি। তার সময়কার জনগণের সরদার ও বড় লোকেরা বলল আমরা তোমাকে সুস্পষ্ট গুমরাহীর মধ্যে নিমজ্জিত দেখতে পাচ্ছি। (সূরা আরাফঃ ৫৯-৬০)

(আরবী************************************************************************)

আদ সম্প্রদায়ের লোকেরদ প্রতি তাদের ভাই হুদকে পাঠিয়েছিলাম। সে আহবান জানালো! হে জনগণ তোমরা এক আল্লাহর বান্দা হয়ে থাকো। তিনি ছাড়া তোমাদের ইলাহ কেউ নেই। তোমরা কি ভয় করে তাঁর অবাধ্যতা থেকে নিজেদের বাঁচাবে না? জবাবে কাফেরদের সরদার ও বড় লোকেরা বলল –আমরা তো তোমাকে খুব নির্বুদ্ধিতার মধ্যে ডুবন্ত দেখতে পাচ্ছি।….

(সূরা আরাফঃ ৬৫-৬৬)

(আরবী*****************************************************************)

এবং সামুদদের প্রতি তাদের ভাই সালিহকে পাঠিয়েছিলাম। সে আহবান জানাল এই বলেঃ হে জনগণ! তোমরা আল্লাহর দাসত্ব কবুল করো, তিনি ছাড়া তোমাদের ইলাহ কেউ নেই…. তখন সেই অহংকারী লোকেরা বললঃ তোমরা যার প্রতি ঈমান এনেছ, আমরা তাকে অস্বীকার করছি….।

(সূরা আরাফঃ ৭৩ ও ৭৬)

(আরবী**********************************************************************)

এবং লুতকে পাঠিয়েছি। সে তার জনগণকে বললেঃ তোমরা এমন এক নির্লজ্জতার অপরাধ করে যাচ্ছ, যা তোমাদের পূর্বে জনতের কেউ করেনি। তোমরা যৌন লালসা পূরণের জন্যে মেয়েদের বাদ দিয়ে পুরুষদের কাছে যাচ্ছ? …আসলে তোমরা তো সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া বাড়াবাড়িকারী লোক।

এই কথার জবাবে সমাজের লোকদের জনপদ থেকে ওদের বহিস্কৃত করো। ওরা তো এমন লোক যে, নিজেদেরকে খুব পবিত্র চরিত্রবান রূপে জাহির করছে। (আরাফঃ ৮০-২১)

(আরবী********************************************************************)

মাদাইয়ানবাসীদের নিকট তাদের ভাই শুয়াইবকে পাঠিয়েছিলাম। সে বললঃ হে জনগণ! তোমরা সকলে এক আল্লাহর দাসত্ব স্বীকার করো, তিনি চাড়া তোমাদের ইলাহ কেউ নেই –বড় ও সরদার লোকেরা যারা অহংকারে মেতে গিয়েছিল বললঃ হে শুয়াইব, আমরা তোমাকে অবশ্যই বহিস্কৃত করব, তোমার প্রতি যারা ঈমান এনেছে তাদেরকেও অথবা তোমরা আমাদের নিজস্ব পন্থা ও রীতিনীতিতে ফিরে আসবে……। (সূরা আরাফঃ ৮৫ ও ৮৮)

এই ধরনের ঘটনা মূলত অভিন্ন হলেও ইতিহাসে তা বারবার ঘটেছে, বারবারে ঘুরেফিরে আসা একই জাহিলিয়াতের ইসলামের প্রতি শত্রুতার আচরণ এক চিরন্তন সত্য হয়ে রয়েছে।

যার সারনির্যাস হচ্ছেঃ

ওদের হেদায়েত তো আমরা দিয়েছিলাম, কিন্তু হেদায়েতের পরিবর্তে অন্ধত্বকেই ভালোবেসে অগ্রাধিকার দিয়ে গ্রহণ করে নিল।

তাই আমরা বলছিলাম, জাহিলিয়াত যে ইসলামকে পছন্দ করে না, বরদাশত করতে প্রস্তুত নয়, তা দেখে বিস্মিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। ইতিহাসের সুদীর্ঘ ধারায় প্রতিটি জাহিলিয়াতই ইসলামের প্রতি এই শত্রুতামূলক আচরণ গ্রহণ করেছে। তা ইসলামকে ঘৃণা করে তাকে সহ্য করতেই পারে না। যে লোকই ইসলামের আহবান জানায়, তাকেও তা সহ্য করে না। তাকে দেশ থেকে বহিস্কার করে, তার ওপর কঠিন দন্ডের ফয়সালা করে। ইসলামের আহবান দাতারা একটু শান্তি ও নিরাপত্তা সহকারে বাঁচাবে, বসবাস করবে, তাও তার বরদাশত হয় না। মত প্রকাশের বা কোনো আকিদা পোষণের স্বাধীনতাটুকু দিতে প্রস্তুত নয়।

(আরবী*****************************************************************)

এবং মাদইয়ানবাসীদের প্রতি তাদের ভাই শুয়াইবকে পাঠিয়েছিলাম। সে বললঃ হে জনগণ! তোমরা সকলে এক আল্লাহর দাসত্ব স্বীকার করো, তিনি ছাড়া তোমাদের ইলাহ কেউ নেই –বড় ও সরদার লোকেরা যারা অহংকারে মেতে গিয়েছিল বললঃ হে শুয়াইব, আমরা তোমাকে অবশ্যই বহিস্কৃত করব, তোমার প্রতি যারা ঈমান এনেছে তাদেরকেও অথবা তোমরা আমাদের নিজস্ব পন্থা ও রীতিনীতিতে ফিরে আসবে……। (সূরা আরাফঃ ৮৫ ও ৮৮)

এই দরনের ঘটনা মূলত অভিন্ন হলেও ইতিহাসে তা বারবার ঘটেছে, বারবারে ঘুরেফিরে আসা একই জাহিলিয়াতের ইসলামের প্রতি শত্রুতার আচরণ এক চিরন্তন সত্য হয়ে রয়েছে।

যার সারনির্যাস হচ্ছেঃ

ওদের হেদায়েত তো আমরা দিয়েছিলাম, কিন্তু হেদায়েতের পরিবর্তে অন্ধত্বকেই ভালোবেসে অগ্রাধিকার দিয়ে গ্রহণ করে নিল।

তাই আমরা বলেছিলাম, জাহিলিয়াত যে ইসলামকে পছন্দ করে না, বরদাশত করতে প্রস্তুত নয়, তা দেখে বিস্মিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। ইতিহাসের সুদীর্ঘ ধারায় প্রতিটি জাহিলিয়াতই ইসলামের প্রতি এই শত্রুতামূলক আচরণ গ্রহণ করেছে। তা ইসলামকে ঘৃণা করে তাকে সহ্য করতেই পারে না। যে লোকই ইসলামের আহবান জানায়, তাকেও তা সহ্য করে না। তাকে দেশ থেকে বহিস্কার করে, তার ওপর কঠিন দণ্ডের ফয়সালা করে। ইসলামের আহবান দাতারা একটু শান্তি ও নিরাপত্তা সহকারে বাঁচাবে, বসবাস করবে, তাও তার বরদাশত হয় না। মত প্রকাশের বা কোনো আকিদা পোষণের স্বাধীনতাটুকু দিতে প্রস্তুত নয়।

(আরবী**********************************************************************)

এবং মাদইয়ানবাসীদের প্রতি তাদের ভাই শুয়াইবকে পাঠালাম। সে বললঃ হে জনগণ! তোমরা এক আল্লাহর দাসত্ব স্বীকার করো, তিনি ছাড়া তোমাদের প্রতি অকাট্য দলীল এসে গেছে। অতএব তোমরা পরিমাপ ও ওজন পূর্ণ করো, লোকদেরকে তাদের জিনিস সমূহে ক্ষতিগ্রস্ত করো না এবং তোমরা পৃথিবীতে শান্তিও স্থিতি কায়েম হওয়ার পর তথায় বিপর্যয়ের সৃষ্টি করো না। এই নীতিই তোমাদের জন্যে বিপুল কল্যাণবহ যদি তোমরা মুমিন হও এবং প্রতিটি পথে তোমরা বসো না, বসে লোকদের নানা ওয়াদা করো না, আল্লাহর প্রতি ঈমানদার ব্যক্তিদেরকে আল্লাহর পথে যেতে বাধাগ্রস্ত করো না। তাদের বাঁকা পথে নিয়ে যেতেও চেয়ো না। তোমরা স্মরণ করো, যখন তোমরা খুব কম সংখ্যক ছিলে, পরে তিনি তোমাদের সংখ্যা বিপুল করে দিয়েছেন। তোমরা লক্ষ্য করো, বিপর্যকারীদের পরিণাম কত মর্মান্তিক হয়েছে। তোমাদের মধ্য থেকে কিছু সংখ্যক লোক যদি আমার প্রেরিত দ্বীন ও ঈমান এনে থাকে, আর কিছু লোক যদি ঈমান না এনে থাকে, তা হলে তোমরা ধৈর্যধারণ করো যতক্ষন না আল্লাহ আমাদের পরস্পরের মধ্যে চূড়ান্ত ফয়সালা করে দেন। কেননা তিনিই সর্বোত্তম বিচারক। জনগণের মধ্য থেকে অহংকালী বড় লোকেরা বললঃ হে শুয়াইব। আমরা তোমাকে ও তোমার সাথে যারা ঈমানদার হয়েছে তাদের সকলকে আমাদের এই জনপদ থেকে বহিস্কৃত করব অবশ্যই। অথবা তোমরা আমাদের রীতিনীতি ও আদর্শে ফিরে আসবে। (সূরা আরাফঃ ৮৫-৮৮)

না, জাহিলিয়াত পন্থদের এতটুকু ধৈর্য-সহ্যও নেই। এমনকি সেই নম্র নীতিবাদী ও শান্ত সন্ধিকামী লোকদের যারা বলেঃ তোমরা একটু ধৈর্য ধরো, আল্লাহ আমাদের মধ্যে চূড়ান্ত ফয়সালা করে দেবেন, তিনিই তো সর্বোত্তম সুবিচারক। তাদেরকেও বরদাশত করা হয়নি।

জাহিলিয়াতের এই আচরণ হঠাৎ করে ঘটে যাওয়া ব্যাপারেও নয়। এর পেছনে বহু কারণ বর্তমান।

আল্লাহর প্রতি ঈমান ও তাঁর পথ থেকে যখন বিভ্রান্তি ও  বিপথগামিতা শুরু হয় তখন গোটা ব্যাপারের মূলেই বিপর্যয় সূচিত হয়ে যায়, প্রথমে মুমিনদের প্রতি লজ্জাবোধ ও গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। কেননা এই সময় মুমিনরাই থাকে বিজয়ী শক্তি। আর আল্লাহর দ্বীন হয় চূড়ান্ত পথ-নির্দেশক।

প্রাথমিক পর্যায়ে শুভ ধ্যান-ধারণা নিয়েই বিপর্যয় সূচিত হয়। কষ্ট বহনে অক্ষমতার কারণে ও দুর্বলতার দোহাই দিয়েই বিপথগামিতা শুরু করা হয়। সিরাতুল মুস্তাকীমে চলা খুব কষ্টকর মনে হয় বলেই তাকে প্রথম দিক দিয়ে বরদাশত করা হয়।

অথবা মুসলিম সমাজে বাইরের থেকে অনুপ্রবেশকারী ও মুনাফিকরা খুবই খারাপ উদ্দেশ্যে এই বিপর্যয় শুরু করে। তারা ওৎ পেতে অপেক্ষায় বসে থাকে, সুযোগ পেলেই মৌল বিশ্বাসের ওপর প্রচণ্ড আঘাত হানে। কেননা তারা তো তার প্রতি সত্যিকারভাবে ঈমান আনেনি, মুনাফিকী মনোভাব নিয়েই তার ধারক সেজে ছিল। তাদের এবং মুনাফিকীর গোপন কৌশলের ব্যবহার চলতে থাকে যদ্দিন সেই মৌল বিশ্বাস বিজয়ী হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত থাকে –তার ভয়ে তারা সন্ত্রস্ত হয়ে থাকে।

কিন্তু এই অবস্থার মধ্য দিয়েও মুনাফিকী ও বিপর্যয় সৃষ্টির চেষ্টা একটুও থেমে যায় না, যদিও সে চেষ্টা হালকা, গভীর ও প্রকাশ্যভাবে করার সাহসের অভাব থাকে।

অতঃপর ভাঙ্গন শুরু হয়, বিপর্যয়ের রেখা দীর্ঘ হয়। লোকদের মনের ওপর গাদ জমতে থাকে আকীদা থেকে দূরত্ব বৃদ্ধির অনুপাতে। পথের স্বচ্ছতা এবং সে পথ গ্রহনকারীর মনের স্বচ্ছতার ওপর ময়লা জমে ওঠে। অতঃপর আলোকসম্পাত বন্ধ হয়ে যায়।

আর তখনই পৃথিবতে বিপর্যয় সূচিত হয। তাগুত ভয়াবহ হয়ে ওঠে।

ক্রমশ ভাঙ্গনটা বৃদ্ধি পায়, বিপর্যয় সৃষ্টির জন্যে লোকদের সাহস বেড়ে যায়। আর তখন তাগুত কার্যত মানুষের ব্যাপারাদিতে হস্তক্ষেপ করেও নিজ ইচ্ছামতো শাসন কার্য চালাতে থাকে। এসব ব্যাপারে আল্লাহর বিধান পুনরায় কার্যকর হতে পারে না।

এই রূপ অবস্থায় হেদায়েতের দিকে আহবানদাতারা জাহিলিয়াত সাড়া দিতে প্রস্তুত হয় না; বরং তার প্রতি ক্রমান্বয়ে শত্রুতার আচরণ শুরু করে দেয়।

একটু পরই তার বিরুদ্ধে প্রচণ্ড ও নির্মম যুদ্ধ শুরু করে দেয়। চেষ্টা করে তাকে সমাজ ও দেশ থেকে বহিস্কৃত করতে। তার ব্যাপারে মারাত্মক ধরনের সিদ্ধান্ত করতে এই সময়ও হেদায়েতের আহবান যতই হয়ে থাকে, যুদ্ধের প্রচণ্ডতা ততই বাড়তে থাকে। তখন শেষহীন শত্রুতা ছাড়া উভয়ের মধ্যে সম্পর্কের আর কোনো দিক অবশিষ্ট থাকে না।

এই স্তরে এসে বিপর্যয় সৃষ্টিকারীর মনে শুভ মানসিকতা ও সদিচ্ছা বলতে কিছুই থাকে না, তা-ই মানুষকে মৌল আকীদা থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার একমাত্র কারণ থাকে না। শত্রুতার কারণ হয় না ইসলামী পদ্ধতির সম্পর্কে অজ্ঞতা।

তখন জাহিলিয়াত স্বীয় অস্তিত্ব ও স্বার্থ রক্ষার ব্যাপারে রীতিমতো ভয় পেয়ে যায়। তার লালসা ও নবতর আলো থেকে বিভ্রান্তির চরিতার্থতার ব্যাপারে সন্দিহান হয়ে পড়ে। সত্য থেকে বিপথগামিতা, স্বেচ্ছাচারিতার শাসন ও লালসার কাছে আত্মসমর্পণ যে পরিমাণে বাড়ে, তখন তা সে মনে মনে অনুভব করে। সহীহ আকীদা দুনিয়ার ওপর বিজয়ী থাকা কালে তাকে তার স্বার্থ, মুনাফা ও সুবিধাদি থেকে কতটা বঞ্চিত করে রেখেছিল, জাহিলিয়াত তা মর্মে মর্মে অনুভব করে।

আর এই কারণেই জাহিলিয়াত ইসলামকে ঘৃণা করে। তার বিরুদ্ধে রীতিমতো সশস্ত্র যুদ্ধ করতেও কুণ্ঠিত হয় না। একাজে অহংকারী বড় লোক ও দুর্বল শাসিত সকলেই  এখানে একাকার হয়ে যায়। কেননা জাহিলিয়াতে প্রত্যেকেরই নিজস্ব কিছু স্বার্থ মুনাফা ও কামনা-বাসনা থাকে, যা সে পুরোপুরি পেতে চায়, তা থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখতে প্রস্তুত হয় না। তাই আল্লাহর পদ্ধতি পুনরায় বিজয়ী ও পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়ে তাদেরকে সেই সব থেকে বঞ্চিত করে দিক, তা চাইতেই পারে না। এ রূপ অবস্থায় তো খারাপ স্বার্থ ও মুনাফা অর্জনের সুবিধাদি সম্পূর্ণ শেষ হয়ে যাবে। তাদের লালসা-কামনার চরিতার্থতার পথে সত্য দ্বীন প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

এ তত্ত্বকে সামনে রাখতে ইসলামের বিরুদ্ধে আধুনিক জাহিলিয়াতের অনমনীয় ও চরম শত্রুতার ভূমিকা গ্রহণের অন্তর্নিহিত কারণটা বুঝতে একটুও কষ্ট হয় না।

আসলে এটা হচ্ছে জাহিলিয়াতের ইসলামকে পছন্দ না করার, শত্রুতা ও যুদ্ধ করার ভূমিকা। এই ব্যাপারে প্রাচ্য ও প্রাতীচ্য সম্পূর্ণ একমত। যে সব দেশ নিজেদের ইসলামী দেশ মনে করে তারাও এক্ষেত্রে কিছু মাত্র পশ্চাদপদ নয়।

তবে ইউরোপের কতা –তার পূর্ব ও পশ্চিম অংশ তথা আমেরিকার অবস্থাটা আমরা সহজেই বুঝতে পারি।

শুরুতে তারা ‘দ্বীন’ মাত্রকেই ঘৃণা করে, উপেক্ষা করে চলে। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা স্থাপনকেও তারা অত্যন্ত খারাপ মনে করে। বাস্তব জীবনের ওপর আল্লাহর প্রতি ঈমান কিছুমাত্র কর্তৃত্ব করবে, তা তারা বরদাশত করতে রাজি নয়। এ ছাড়াও তারা ইসলামকে অপচন্দ করে ও অচিন্তনীয়ভাবে ইসলামর বিরুদ্ধে তারা যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করে ভিন্নতর এক বিশেষ কারণে।

তবে দ্বীন বা ধর্ম মাত্রকেই তাদের অপছন্দ করার পর্যায়ে আমরা এই গ্রন্থের পিছনের অধ্যায়সমূহে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করে এসেছি।

রোমান সাম্রাজ্যবাদের সময়ে কনস্টান্টাইন সম্রাটের নির্দেশে সৃষ্ট ধর্মকে সমগ্র রোমান সাম্রাজ্যবাদের ওপর জোরপূর্বক চাপিয়ে দেওয়া হয়।

এ কথাও জানা আছে যে, আসমানীয় ঈসায়ী আকীদার সাথে তৎকালে প্রচলিত ব্যাপক পৌত্তলিকতা সংমিশ্রিত হয়ে গিয়েছিল। তা করা হয়েছিল পৌত্তলিকদের সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে এবং খ্রিষ্ট ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পক্ষে উৎসাহ দেওয়ার জন্যে।–[আমেরিকান লেখক ড্রিপার-এর পিছনে উদ্ধৃত সাক্ষ্য দ্রষ্টব্য।] এভাবে খোদায়ী দ্বীন ও পৌত্তলিক ধারণা সংমিশ্রিত হলে লোকদের পক্ষে তা দুর্বোধ্য হয়ে গেল। আর এই সময়ই গির্জা দাবি করে বসল, ধর্মের বিশেষ গভীর তত্ত্ব কেবল তারই জানা আছে। এ বিষয়ে তার সাথে কেউই শরীক নেই। কাজেই আর্লাহর প্রতি ঈমান আনতে হলে তাদের দাবিকৃত তত্ত্বের প্রতি অন্ধভাবে কোনোরূপ উচ্চবাচ্য ছাড়াই বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। আর আল্লাহকে পেতে হলে গির্জাকে মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।

এভাবে গির্জা জনগনের অন্তর, চিন্তা ও মন-মানসিকতার ওপর দুরধিগম্য প্রতিপত্তি চাপিয়ে দেয়।

সকল প্রকার কর ধার্য করে দেয় জনগণের ওপর।

পরে এই গির্জাই বৈরাগ্যবাদের দিকে আহবান জানায়, যদিও বৈরাগ্যবাদ স্বভাব প্রকৃতি পরিপন্থী ও তার সাথে সাংঘর্ষিক।

জনগণকিচু কাল পরই লক্ষ্য করল, গির্জার আসল প্রতিষ্ঠানটিই পবিত্রতা, ইবাদত ও আল্লাহর প্রতি নিষ্ঠা রাখার পরিবর্তে অত্যন্ত জঘন্য ধরনের নানা হারাম কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে। সে কাজগুলো তারাই করে যারা ধর্মের ধারক-বাহক, পাদ্রী পুরোহিত তথা পবিত্র মহান আত্মা হওয়ার দাবিদার লোকেরাই।

এর পরই গির্জা শুরু করে দেয় ক্ষমা পাওয়ার চেক বিক্রয় করতে। ফলে ধর্ম সংক্রান্ত গোটা ব্যাপারটাই একটা অর্থহীন জিনিসে পরিণত হয়ে যায়। মানুষের মনে ধর্মের প্রতি এক বিন্দু ভক্তি ও শ্রদ্ধ অবশিষ্ট থাকে না।

তারপর গির্জা যখন নবতর জ্ঞান ও বিজ্ঞানের পথে প্রবল বাধা হয়ে দাঁড়াল, তখন ধর্মের ওপর এলো প্রচণ্ড আঘাত। গির্জা কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞানীদের নানাভাবে পীড়ন দিয়ে ও জ্বালিয়ে মারতে শুরু করে দিল। আর এই সবই করা হচ্ছিল আসমানী ধর্মের দোহাই দিয়ে।

এই সময় থেকেই সমগ্র ইউরোপে ধর্ম ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের মাঝে দুরতিক্রম্য পার্থক্যের পাহাড় দাঁড়িয়ে যায়। জীবন থেকে ধর্ম নিঃশেষিত হয়ে যায় ক্রমশ।

ইউরোপে ধর্মের বিরুদ্ধে সাধারণ মনোভাবের মূল কারণ এটাই। সময়ের অগ্রগতির সাথে সাথে ধর্ম সম্পূর্ণরূপে বিলীন হয়ে গেল মানুষের জীবন ক্ষেত্র থেকে।

পরে রেনেসাঁর যুগের সূচনা হয়। ইউরোপ ইষলামী সভ্যতা ও সংস্কৃতির থেকে জ্ঞানের যে নির্মল আলো লাভ করেছিল, ইসলামের মৌল তত্ত্ব সম্পর্কে যা কিছু জানতে পেরেছিল, তা ইউরোপে ধর্মের বিরুদ্ধেই দাঁড়িয়ে গেল রেনেসাঁর নামে। তাই ইউরোপীয় রেনেসাঁ কার্যত ধর্ম বিরোধী পুনর্জাগরণ মাত্র।

ইউরোপের জন্যে একটা বড় কৈফিয়ত দেওয়ার বিষয় হলো গির্জার সাথে রেনেসাঁর চরম মাত্রার দ্বন্দ্ব ও সংঘর্ষ। কিন্তু গির্জার সাথে এই দ্বন্দ্ব ধর্মের বিরোধিতা রূপ পরিগ্রহ করল কেন? ……এর কোনো জবাব ইউরোপ দিতে পারবে না।

সে যা-ই হোক, বাস্তবে ঘটেছিল এই যে, গির্জাকে ঘৃণা করতে করতে তারা গির্জার ধর্মকেও ঘৃণা করতে লাগল। উত্তরকালে ধর্ম বিরোধী এই মনোভাব ইসলামের বিরুদ্ধে –ইসরামের প্রতি কুফরী গ্রহণের ভিত্তি হিসেবে কাজ করল অথচ ইসলামের জ্ঞান-বিজ্ঞানই ছিল ইউরোপের রেনেসাঁ তথা পুনর্জাগরনের মৌল প্রেরণা উৎস। এক্ষণে তারা অন্ধকার থেকে আলোকের মধ্যে কি করে আসতে পারে?­-[এই গ্রন্থে উদ্ধৃত বেফল্ট-এর সাক্ষ্য দ্রষ্টব্য।]

গির্জাবিরোদী মনোভাবকে ইসলামেরও বিরুদ্ধে ব্যবহার করা একটা অপরাধ সন্দেহ নেই। আসলে তারও মূলে নিহিত কার হচ্ছে গির্জার সেই ঘৃণ্য ভাবধারা। যদিও ইসলামের ব্যাপক কল্যাণময় অবদানের কথা তাদের কিছু মাত্র অজানা ছিল না, তাদের রেনেসাঁও যে ইসলামেরই ব্যাপক কল্যাণময় অবদানেরই বিশেষ অবদান তাও তারা ভালোভাবেই জানত। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারাই ইসলামের বিরুদ্ধে মরণ-পণ যুদ্ধ শুরু করে দিল। চতুর্দিকে ইসলাম বিরোধী মিথ্যা প্রচারণা চালাতে থাকল, ইসলামের উজ্জ্বল নির্মল অকলংক চেহারাকে বিকৃত করে পেশ করতে লেগে গেল।

অবশ্য ইহুদীবাদ যে কোনো নবতর দ্বীনী আহবানের অপেক্ষায় ঘাঁটিতে ওৎ পেতে বসেছিল, তার ওপর প্রচণ।ড আক্রমণ চালানোর পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে, আল্লাহর সাথে কৃত তাদের চুক্তিকে পর্যন্ত গ্রাহ্য করছিল না, আল্লাহর হেদায়েতকে পালন করে চলতে তারা অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।

ইউরোপে যখন রেনেসাঁর উদ্ভব হলো গির্জার ধর্মের বিরুদ্ধে মনোভাব ও প্রচণ্ড শত্রুতা লয়ে, তখন ইহুদীবাদ এটাকে মহাসুযোগ রূপে গ্রহণ করল খুব চালাকী সহকারে। যে খ্রিষ্টবাদ ইহুদীদেরকে নানাভাবে অত্যাচারে জর্জরিত করেছে, তার বিরুদ্ধে তাদের এই যুদ্ধ প্রবৃত্তি ছিল একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। তারা এই যুদ্ধ চালালো সকল শক্তি-সামর্থ্য ব্যয় করে।

এর পরই ডারউইনের আগমন। তার বিশেষ ধর্মবিরোধী মনোভাবের মতবাদের কারণে গির্জার সাথে প্রচণ্ড সংঘর্ষে লিপ্ত হল। বিশ্ব ইহুদীবাদ গির্জা বিরোধী এই যুদ্ধকে মার্কস, ফ্রয়েড ও দরখায়েম। তারা তিন জন মিলিত চেষ্টায় ধর্মের ভিত্তিটিকেই সম্পূর্ণরূপে উৎপাটিত ও তাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিল।–[আরবী************************) গ্রন্থের তিন ইহুদী দ্রষ্টব্য।] অতপর গহবর আরও অধিক গভীর হয়ে খ্রিষ্ট ধর্মের আকীদাটিকেও সম্পূর্ণ গিলে ফেলে। দৃষ্টান্তহীন জঘন্য ও বীভৎস চরিত্রহীন কার্যকলাপের দ্বারা ব্যাপক নৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টি করে দিল, মানব-ইতিহাসে যার কোনো দৃষ্টান্তই খুঁজে পাওয়া যাবে না। সে নৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টি করে দিল, মানব-সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে ব্যক্তি ও জাতিসমূহের মধ্যকার সংহতি ধ্বংস করেছে, তার ভিত্তিমূলে বিশ্লিষ্টতা ঢুকিয়ে দিয়েছে। এটা ঠিক সেই সময় ঘটেছে যখন বিশ্ব ইহুদীর বিশ্বের রাজনীতি গড়ে তুলে ছিল প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে। ফলে তা একই সাথে পুঁজিবাদ ও মার্কসীয় ধর্মভিত্তিক সমাজবাদের পূর্ণ কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে নিয়েছে।

অতঃপর ইহুদী খ্রিষ্টান যৌথ শত্রুতা সমগ্র শক্তি ও প্রচণ্ডতা নিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত শত্রুতায় উঠে-পড়ে লেগে যায়।

অতঃপর ইউরোপ ইহুদীদের ধন-মালের সাহায্য পুষ্ট হয়ে সারা মুসলিম জাহানের ওপর সর্বাত্মক সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠিত করে। মুসলমানদের অধীন বানিয়ে তাদেরকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। ইসলামকে তার মূল থেকে উৎপাটিত করার জন্যে সর্বাত্মক চেষ্টা চালায়। মিশনারীদের পাঠায়, ইসলামের বীভৎস রূপ অংকিত করে মুসলিমকেই তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী বানাতে চেষ্টা করে। মুসলমানদের চরিত্র ধ্বংস করে। শেষ পর্যন্ত তাদের প্রবর্তিত বিশেষ ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ইসলামের প্রতি চরম বিদ্বেষী একটি নবতর বংশ গড়ে তোলেন। এই মুসলিম সন্তানরাই উত্তরকালে মুসলিম দেশগুলো থেকে ইসলামকে বিদায় দিয়ে তার পরিবর্তে পাশ্চাত্যের অন্ধ গোলামীকে নিজেদের আদর্শ ও চরিত্ররূপে গ্রহণ করে।–[(আরবী*******************) গ্রন্থ দ্রষ্টব্য, বিশেষ করে তার (আরবী**********) অধ্যায়।]

খ্রিষ্টান ইহুদীবাদের মুসলিম জাহানের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনার সঠিক প্রসঙ্গ এটা নয়। ইসলামকে খতম করার জন্যে ওদের যৌথ চেষ্টা-প্রচেষ্টা ও অবলম্বিত হীন ষড়যন্ত্র কলাকৌশল ও চক্রান্ত এক জঘন্য ব্যাপার।

তবে এই পর্যায়ে এ্যালফর্ড কণ্ট্রোল স্মীথ তার Islam in modern History গ্রন্থে যে স্বীকারোক্তি করেছে তার প্রতি ইঙ্গিত করাই যথেষ্ট। উক্ত গ্রন্থের ১০৪ থেকে ১১৩ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, পাশ্চাত্য ইসলামের বিরুদ্ধে সামরিক, বৈজ্ঞানিক, চৈন্তিক, সামাজিক, সামষ্টিক ও অর্থনৈতিক সর্ব প্রকারের হাতিয়ারই অকাতরে ব্যবহার করেছে। এই পাশ্চাত্যই মুসলিম জাহানের বুকে ইসরাইল রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছে। এটা এই সুপরিকল্পিত ও বিশেষ আয়োজন সহকারে আবদ্ধ ব্যাপক যুদ্ধেরই একটা অংশ।

বস্তুত ইউরোপ ইসলামের সাথে চরম শত্রুতা করছে এবং তাকে সর্বতোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্যে যে ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সেদিকে ইঙ্গিত করাই এখানকার এই আলোচনার উদ্দেশ্য।

তবে ‘আলমে ইসলামী’ যে দেশসমূহকে শামিল করে তা কোনো কোনো দিক দিয়ে ইউরোপ থেকে ভিন্নতর অবস্থায় রয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারই সাথে মিলিত হচ্ছে, যেমন একটি জাহিলিয়াত অপর একটি জাহিলিয়াতের সাথে মিলিত হয় পৃথিবীর প্রতিটি স্থানে এবং ইতিহাসের প্রতিটি স্তরে। যদিও খুব কম দিক দিয়েই সে দুটির মধ্যে পার্থক্য থাকে যা একটিকে অপরটি থেকে স্বতন্ত্রভাবে চিহ্নিত করে ও একটির পরিবেশ অন্যটি থেকে খানিকটা ভিন্নতর হয়।

সত্যি কথা এই তথাকথিত আলমে ইসলামী –ইসলামী জাহানেরও ইসলাম বর্তমানে একান্তই অপরিচিত ও ঠিক যেমন জাহিলিয়াতের আরব ভূ-খণ্ডে সূচনাকালে নিতান্তই অপরিচিত ছিল। কিন্তু বর্তমানে পার্থক্য এতটুকু ঘটেছে যে, তখন শুধু অপরিচিতই নয়, সেই সাথে ‘ঘৃণিত’-ও অবশ্য বেশ কিছু দেশে।

কিন্তু লোকেরা ইসলামকে ঘৃণা করে কেন, এই প্রশ্ন নিয়ে আমরা এখানে একটু একটু করে আলোচনা করব। এ আলোচনায় বিভিন্ন অংশে মানুষের প্রসঙ্গও স্বাভাবিকভাবেই এসে পড়বে। আলমে ইসলামের অধিবাসী লোকদের ইসলাম-বিরোধীতা বা ইসলামের সাথে তাদের শত্রুতা বিভিন্ন গোষ্ঠী ও প্রকারের বিভক্তি হয়ে রয়েছে।

‘মুসলিম জাহানে’র কোনো আল্লাহদ্রোহী শক্তি তা ইসলামের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই যুদ্ধ ঘোষণা করে থাকুক কিংবা বাহ্যিকভাবে সমঝোতার মনোভাব প্রকাশ করে ভিতরে ও গোপনে গোপনে ইসলামের সাথে শত্রুতায় লিপ্ত হোক –ইসলামের সাথে মোকাবিলা করতে পারে না। তার একটা সহজতর কারণ রয়েছে এবং সে কারণ হচ্ছে যে, ইসলাম সরাসরি আল্লাহর সাথে মানবতার সম্পর্ক স্থাপন করে। কিন্তু অপরাপর শক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করায়।

ইতিহাসের যে-কোনো আল্লাহদ্রোহী শক্তি ইসলামের বিরুদ্ধে মাথা তুলে এমনি ভাবেই পরাজয় বরণ করতে বাধ্য হচ্ছে। তার এই যুদ্ধ ইসলামের আকীদা বিশ্বাসের বিরুদ্ধে হোক, কি ইসলাম অনুসরণকারীদের বিরুদ্ধে।

এতদ্ব্যতীত এ ব্যাপারও বিবেচনা সাপেক্ষ যে, মুসলিম জাহানের এই আল্লাহদ্রোহী শক্তিগুলো নিজস্ব শক্তির বলে দাঁড়াতে পারেনি, আসলে খ্রিষ্টীয় সাম্রাজ্যবাদ ও ইহুদী ষড়যন্ত্র মিলিতভাবে তাদের দাঁড় করিয়েছে এবং সাহায্যদানে পরিপুষ্ট করছে, যেন তারা ইসলামকে ক্ষতিগ্রস্ত ও মুসলমানদের ধ্বংস করে দিতে সক্ষম হয়।

মুসলিম জাহানে বুদ্ধিজীবীর নামে পরিচিতি ব্যক্তি রয়েছে। তারা আসলে খ্রিষ্টীয় ইহুদী যৌথ ষড়যন্ত্র ও প্রতারণার শিকার। ইসলামের আসল দুশমন ওরাই। কেননা সাম্রাজ্যবাদী শক্তিই বিশেষ চেষ্টা যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে নিজস্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠাসমূহে এই বুদ্ধিজীবীদের গড়ে তোলা হচ্ছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে, মুসলিম সমাজের মধ্যেই এমন একটি বংশ তৈরি করা, যারা নামে মুসলিম হলেও প্রকৃত পক্ষে ইসলামকে বিন্দুমাত্রও জানবে না। তার পরিবর্তে তাদের হৃদয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে নানা ধরনের সন্দেহ-সংশয়ে হবে মর্মান্তিকভাবে বিভ্রান্ত।

এই ‘মুসলিম বংশধর’দের মনে এই ধারণা বদ্ধমূল করে দেওয়া হয়েছে যে, ইসলাম ও পশ্চাদপদতা, অধঃপতন, দারিদ্র ও প্রতিক্রিয়াশীলতারই নাম। উন্নতি প্রগতি ও সভ্যতা সংস্কৃতির মানেই হচ্ছে ধর্মের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করা। জীবনের তৎপরতা ও চেষ্টা সাধনার ক্ষেত্র থেকে ধর্মকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে এবং জীবনের বিভিন্ন দিক –রাজনীতি, সমাজ ব্যবস্থা, অর্থনীতি, শিক্ষা ও সংস্কৃতি প্রভৃতিকে –ধর্মের প্রভাব থেকে অবশ্যই মুক্ত রাখতে হবে –তাদের কোনো সুযোগই দেওয়া যেতে পারে না। জীবনের সকল ব্যাপারের ব্যাখ্যা ও তাৎপর্য ইসলামের পরিবর্তে খ্রিষ্টীয় ইহুদী চিন্তা-বিশ্বাস থেকে গ্রহণ করতে হবে।

এই তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের শেখানো হয়েছে যে, ধর্ম হচ্ছে উন্নতি ও প্রগতির পথে সবচেয়ে বড় বাধা। শক্তি ও সভ্যতা এবং বিজ্ঞান ও প্রতিষ্ঠান লাভ করার একমাত্র উপায় হচ্ছে ধর্মকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করা ও জীবনের পথ থেকে সরিয়ে দেওয়া।

নিজেদের বোকামী ও মেধা-বুদ্ধিমত্তার অনুপস্থিতির কারণেণ এই বুদ্ধিজীবীরা আধুনিক জাহিলিয়াতের বিষাক্ত ঝর্ণা থেকে পানি পান করে সঞ্জীবিত হয়ে এসেছে। এমন কি বর্তমানে তারা নিজেদের সত্যিকার কল্যাণ-অকল্যাণ বুঝার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছে। এই গর্দভেরা এতটুকুও বুঝে না যে, এই বিদ্যার্জন সামাজিক-সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে তা যতই প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ হোক এবং জীবনের বিভিন্ন দিকে আল্লাহ প্রদর্শিত সিরাতুল মুস্তাকীম থেকে বিভ্রান্ত ও বিপথগামী মতাদর্শ গ্রহণ কখনোই এক অভিন্ন জিনিস নয়; বরং এ দুটি সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাপার। একটির সাথে অন্যটির কোনো যৌক্তিক সম্পর্ক নেই। আর বর্তমানে এই চিন্তাগত বিভ্রান্তি ও বিপথগামিতাই ইসলামী জাহানকে ঘুণের মতো কুরে কুরে খাচ্ছে।

সাম্রাজ্যবাদ খ্রিস্টীয়-ইহুদী ধোঁকাবাজিতে পড়েই এই বুদ্ধিজীবীরা ইসলমাকে ঘৃণা করছে এবং ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে সেই সমস্ত হাতিয়ার ও কলাকৌশল, যা খ্রিষ্টীয় ইহুদী ইসলাম দুশমন শক্তি ইসলামের ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে নির্মাণ করেছে।

 এদের বাইরে বেশ কিছু সংখ্যক লেখক, শিল্পী, গাল্পিক, রেডিও আর্টিস্ট ও সিনেমা টেলিভিশন অনুষ্ঠানকারীও প্রতিটি মুসলিম দেশে অবস্থান করছে যারা ইসলামকে ঘৃণা করে। সত্যিকথা ইসলামকে তারা ভয় পায়।

তাদের এই ঘৃণা বা ভয় পাওয়ার বড় কারণ, তারা যে ব্যবসায় করে সেই পথে যে বিপুল মুনাফা অর্জন করে তাদের জীবিকার উৎস যা, তা-ই মূলত চরিত্র ধ্বংসকারী, সমাজে ব্যাপক চরিত্রহীনতা বিস্তারকারী। যুবক-যুবতীদের উচ্ছৃঙ্খল ও চরিত্রহীন বানাবার এগুলোই হচ্ছে প্রধান মাধ্যম। এরা পরস্পর পরস্পরের ওপর হঠাৎ করে আক্রমণ করে। এই ব্যবসায় ও জীবিকা যে সম্পূর্ণ হারাম, তা তারা খুব ভালো করেই জানে এবং এও জানে যে, ইসলাম বিজয়ী হয়ে এলে তাদেরকে এ্ হীন নিকৃষ্ট কলংকময় উপজীব্য গ্রহণের আদেশ সুযোগ বা অনুমতি দেবেনা। কেননা এই জীবিকা তাদের জীবনকে কলুষিত করেছে, তাদের রক্ত-মাংস হারাম খাদ্য খেয়ে বেড়ে উঠেছে ও দিন-রাত বেড়ে চলছে। আসলে এসব উপজীব্য সরাসরি ইযযত আবরু বিক্রয় করে যা দেহপণ্যের বিনিময়ে উপার্জনের সমান কাজ। এ দুইয়ের মাঝে মৌলিক পার্থক্য কিছুই নেই। এ কথা তারা অন্তর দিয়ে বুঝে ও বিশ্বাসও করে। তারা এও জানে যে, কেবলমাত্র আধুনিক জাহিলিয়াত তাদের জন্যে এই জীবকার ব্যবস্থা করেছে এবং তা যদ্দিন প্রতিষ্ঠিত থাকবে, ততদিনই তারা এর মাধ্যমে বিলাসী জীবনের অফুরন্ত উপজীবিকা অর্জন করতে সক্ষম হবেব। কিন্তু ইসলাম একটি পরিচ্ছন্ন, পবিত্র ও নির্মল জীবনাদর্শ বলে তাদেরকে এসবের মাধ্যমে বিলাসবহুল জীবিকা গ্রহণ ও এই উপায়সমূহ চালাবার কোনো সুযোগই দেবে না। আর ঠিক এই কারণেই উক্ত লোকেরা ইসলামকে ঘৃণা করে, তার আগমনকে ঠেকাবার জন্যে সর্বশক্তি নিয়োগ করে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

সেসব যুবক-যুবতীর জীবন দুয়ার খোলাই হয়েছে তাদের ‘লাশের’ ওপর শুধু এজন্যে যে, তারা নিজেরাও বিপথগামী হবে, বিপর্যয় সৃষ্টি করবে গোটা সমাজ পরিমণ্ডলে। তারা তো নৈতিক চরিত্রহীনতা গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসে চলেছে নিরুদ্দেশভাবে। তাদের জীবনটাই হয়ে পড়েছে প্রবহমান সঙ্গীত, কিংবা লম্পটের কাহিনী অথবা নগ্নতার নির্লজ্জ নৃত্য বিশেষ। অথবা গোপনে বা প্রকাশ্যে যৌন পণ্যের ক্রয়-বিক্রয়ের মুহুর্ত সামষ্টি। এরা যে ইসলামকে অত্যন্ত বিষ দৃষ্টিতে দেখবে, তা বলার প্রয়োজন পড়ে না।

এরা ইষলামকে বিষের মতো পরিত্যাজা মনে করে। কেননা ওরা ভালো করেই জানে যে, ওরা এসব পণ্যের বিনিময়ে বিপুল অর্থ কামাই করছে, ওরা পরস্পরের দেহপণ্য ক্রয় করছে ও বিক্রয় করছে বিপুল অর্থের বিনিময়ে, আর এই যৌন লালসার মধ্যেই ওরা দিন-রাত ডুবে থাকছে। আল্লাহর দ্বীন তো পবিত্রতা-পরিচ্ছন্নতা ও উচ্চতর আদর্শিকতার কারণে ওদেরকে এই কলুষতার মধ্যে পড়ে থাকার অনুমতি কখনোই দেবে না। অথচ ওরা এই ময়লা ভরা গহবরে পড়ে থাকার জন্যে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই কলুষতার মধ্যেই যেন ওদের জীবন নিহিত। তা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে যেন জানটাই বের হয়ে যাবে। কিন্তু ওরা জানে না পূর্বকালের বহু জাতি বহু জনবসতিই এই রূপ চরিত্রহীন ও পাপ কলুষতায় নিমজ্জিত হয়ে পড়েছিল। পরে ওরা চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়। ওরা এও বুঝে না যে, মানবতার চির দুশমন বিশ্ব বিপর্যয়কারী শক্তিগুলো তাদের বিপর্যয়ের আয়োজন করেছে, তাদেরকে খ্রিষ্টীয় বিশ্ব ইহুদীবাদের কর্মী বানাবার লক্ষ্যে লালসার গড্ডালিকা প্রবাহে এমনিভাবে ভাসিয়ে দিয়েছে যে, তারা নিজেদের এই অবস্থা সম্পর্কে কোনো চেতনাই পায় না। শুধু তাদেরকে কেউ সজাগ করতে চাইলে, তাদেরকে বিপর্যয়ের গ্রাস থেকে উদ্ধার করতে চেষ্টা করলে এবং তাদের এই হীন অবস্থা থেকে তুলে ঊর্ধ্বে উঠিয়েনিতে চাইলে তাকেও ওরা বন্ধু মনে করবে না; বরং শত্রুই মনে করবে, তাই ওদেরও অপছন্দ করা কোনো বিচিত্র ব্যাপার নয়।

এছাড়া স্বাধীনা বন্ধনমুক্ত মেয়েরাও ইসলামকে পছন্দ করে না। বরং ইসলামকে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপই করে। বস্তুত মুসলমানের ঘরের মেয়েদেরকে সাম্রাজ্যবাদী খ্রিষ্টান-ইহুদী শক্তিই বিগত কয়েক শতাব্দী কালের অবিশ্রান্ত চেষ্টা ও যত্নের ফলে এই অবস্থায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে।

La Conquete du Monde Musulman নামের ফরাসী ভাষায় একটি গ্রন্থ রয়েছে, “আল-আলমিল-ইসলামী’ পত্রিকার একটি বিশেষ সংক্যায় আরবী ভাষায় অনূদিত ও প্রকাশিত হয়েছিল। প্রায় পঞ্চাশ-ষাট বছর পূর্বে মুসলিম জাহানে মিশনারীদের কার্যাবলী পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে প্রকাশিত হতো। উক্ত গ্রন্থের আরবী অনুবাদের ৪৮ পৃষ্ঠায় লিখিত রয়েছেঃ

খ্রিষ্টান মিশনারীদের চেষ্টার ফলে প্রাথমিকভাবে যে ফল পাওয়া গেছে তাহলো, যুবক-যুবতীদের মধ্য থেকে খ্রিষ্টান বানানো গেছে খুবই অল্প সংখ্যককে। আর দ্বিতীয় ফল এই পাওয়া গেছে যে, মুসলমানদের প্রায় সব শ্রেণীতেই এমন লোক তৈরি করা সম্ভব হয়েছে যারা ক্রমশ খ্রিষ্টীয় চিন্তা-ভাবনাকে পুরোপুরি গ্রহণ ও অনুসরণ করবে। এর পূর্ববর্তী ৪৭ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছেঃ

মিশনারীদের নিরাশ হওয়া উচিত নয় যদি তারা মুসলমানদের মধ্যে তাদের কাজ দুর্বল দেখতে পায়। কেননা একথা অকাট্যভাবে সত্য যে, মুসলমানদের মনে ইউরোপীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতি এবং তাদের মেয়েদের ‘মুক্ত’ করার জন্যে বিপুল আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে।

আর উক্ত বইয়ের ৮৮ ও ৮৯ পৃষ্ঠায় লক্ষ্ণৌ ও কায়রোতে অনুষ্ঠিত খ্রিষ্টান মিশনারীদের সম্মেলনদ্বয়ের বিবরণ ও প্রস্তাবাদির উল্লেখ রয়েছে। লক্ষ্ণৌ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯১১ সনে। তাতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচী গৃহীত হয়ঃ

প্রথম, চলমান অবস্থার পুর্ণ অধ্যয়ন।

দ্বিতীয়, মিশনারী ও মেয়েদের শিক্ষাদানের ক্ষেত্রকে অধিকতর প্রশস্ত করার জন্যে গুরুত্ব সহকারে চিন্তা-ভাবনা করা।

কায়রোর অধিবেশন হয়েছিল ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে। তাতে উপরোক্ত কয়টি ছাড়া আরও কতিপয় কর্মসূচী গৃহীত হয়েছিল।

সপ্তম দফাঃ মুসলিম মেয়েলেকাদরে মধ্যে পারস্পরিক মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক সম্পর্কের উৎকর্ষ বিধান।

এবং এভাবে সূচনা করা হয়েছেঃ মিশনারীদের সম্মেলনসমূহে মুসলিম মেয়েদের উন্মুক্ত করণ।

অর্থাৎ, খ্রিষ্টান-মিশনারীরা মুসলিম মেয়েদেরকে মুক্ত করার আহবান জানায় এবং সেজন্যে কাজকরে।

কিন্তু কেন এই প্রশ্ন করবে? তার জবাব হচ্ছে, Morroe Berger সমসাময়িক আমেরিকান ইহুদী লেখক তাঁর The Arab world today গ্রন্থে লিখেছেনঃ

(শেষের দিনগুলোতে আরব জাহান সম্পর্কে প্রকাশিত গ্রন্থাবলীর মধ্যে এই গ্রন্থখানি অধিক শক্ত, সূক্ষ্ম ও বিপদসংকুল)।–[গ্রন্থটি ১৯৬২ সনে প্রকাশিত হয়।]

মুসলিম শিক্ষিতা মহিলারাই সমাজের সব লোকের তুলনায় দ্বীন ইসলাম সম্পর্কিত জ্ঞান থেকে সব চাইতে বেশি দূরে অবস্থিত। আর গোটা সমাজকে দ্বীন-ইসলাম থেকে অনেক দূরে টেনে নেওয়ার দিক দিয়ে সকল লোকের তুলনায় অনেক বেশি সক্ষম।

এক্ষণে মহিলাদেরকে শিক্ষাদানের মিশনারী ক্ষেত্রকে অধিক প্রশস্ত করে দেওয়ার নির্দেশ উপদেশ প্রকাশিত হওয়া এটা নিতান্তই স্বাভাবিক ব্যাপার এবং মিশনারীরাও মিশনারীদের সম্মেলনে যে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেবে, তাতেও আশ্চর্যের কিছুই নেই। কেননা তাদের আসল লক্ষ্য হচ্ছে, গোটা মুসলিম সমাজকে দ্বীন-ইসলাম থেকে অনেক দূরে নিয়ে যাওয়া।

কেননা মুসলিম মহিলারা যদি বাস্তবিকই প্রকৃত মুসলিম থাকে, তাহলে ইসলামী আকীদা বিশ্বাসকে খতম করার জন্যে গৃহীত অন্যান্য সকল চেষ্টা-প্রচেষ্টাই যে চরম ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে তা সহজেই বোঝা যায়।

যেহেতু মা-ই নতুন বংশ সৃষ্টির ও শিশুর লালনের প্রধান ও প্রাথমিক কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব, মা’র ক্রোড়ই শিশুর প্রথম শিক্ষাগার। মুসলিম মা যতই মুর্খ হোক, সে নিশ্চয়ই তার ক্রোড়ের শিশুর মনে ইসলামী আকীদার বীজ বপন করবে। বাচ্চাদের প্রাথমিক স্বাভাবিক শিক্ষাই হবে ইসলামী আকীদা শিক্ষা। এই বাচ্চাদের বাইরের বিপর্যয় সৃষ্টিকারী কর্মতৎপরতাকার প্রভাবে যতই বিপর্যস্ত ও বিপথগামী হোক, সমাজ সমষ্টি বা বিপর্যয়ের পরিকল্পনাকারী তাদের বিপর্যস্ত করার জন্যে যত চেষ্টাই করুক, তাদের অকলংক শিশুমনে বোনা ইসলামী আকীদা তাদের চূড়ান্ত মাত্রার বিপর্যয় থেকে অবশ্যই রক্ষা করবে, ফিরিয়ে আনবে। কিছুকালের বিভ্রান্তির পর আবার তাদের সিরাতুল মুস্তাকীমে প্রত্যাবর্তিত করবে।

কাজেই মুসলিম সমাজের মা’দেরকেই যদি সকল উপায় পন্থা নিয়োগ করে বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভভ না হয়, তাহলে খ্রিষ্টীয় ইহুদী সাম্রাজ্যবাদের ইসলামী আকীদাকে খতম করার সকল চেষ্টা প্রচেষ্টাই সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়ে যাবে, তাতে কোনোই সন্দেহ নেই।

অতএব মা’দেরকে ইসলাম থেকে বিভ্রান্ত ও বিপথগামী বানাতে হবে মা’র অন্তর থেকে ইসলামী আকীদা বিশ্বাস কুরে কুরে নির্মূল করতে হবে। কেননা ব্যাপকভাবে ইসলামী আকীদাকে হত্যা করাই খ্রিষ্টান ইহুদীদের চিরদিনের চেষ্টা।

মুসলিম মেয়েদের মধ্য থেকে এমন একটি গোষ্ঠীকে এমন তৈরি করে দিতে হবে, যারা ইসলাম জানে না চিনে না। আর তার একমাত্র পথ হচ্ছে শিক্ষা। সে শিক্ষা দান অবশ্যই সাম্রাজ্যবাদী পদ্ধতিতে হতে হবে, যার অভিজ্ঞতা বহু পূর্ব থেকেই অর্জন করা গেছে পুরুষদের ব্যাপারে এবং তার সুফল (?)-ও পাওয়া গেছে, যদিও সীমিত পরিমাণে; এই সীমাবদ্ধতার কারণ হচ্ছে, মুসলিম মা’রা সব সময়ই তাদের সন্তানদের মনে-মগজে পাশ্চাত্য বিপর্যয় বিরোধী বীজ বপন করে আসছিল।

খ্রিষ্টীয় ইহুদী সাম্রাজ্যবাদ তুরস্ক, মিসর, আরব ও পাকিস্তান সৃষ্টির পূর্ববর্তী ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও আফ্রিকা প্রভৃতি দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনসমূহের মোকাবিলা করা হচ্ছিল, সেই সাথে নারী শিক্ষার ব্যাপক ক্ষেত্র তৈরির জন্যে বিশেষ উৎসাহ দেওয়া হচ্ছিল। তা-ও ছিল সাম্রাজ্যবাদকে শক্ত বুনিয়াদে দাঁড় করার জন্যে গৃহীত কর্মসূচী অনুযায়ী (তা সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হোক বা মিশনারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে) উদ্দেশ্য ছিল এমন সব মুসলিম মহিলা তৈরি করা, যারা শুধু ইসলামী রীতি-নীতি ও আচার-আচরণ পরিত্যাগকারিণীই হবে না, তারা হবে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী, ইসলামের শত্রু।

একথা বলার প্রয়োজন হয় না, ইসলাম মুসলিম পুরুষ নারী সকলের প্রতিই ইলম অর্জন করা ফরয করেছে। কাজেই ইসলাম নারী শিক্ষার পথে বাধার সৃষ্টি করেনি বরং ইসলামই নারী শিক্ষার বড় প্রবক্তা। কিন্তু পুরুষ ও নারীকে নিশ্চয়ই সেই শিক্ষা দিতে ইসলাম বলেনি যা তাদের উভয়কে দ্বীন-ইসলামের প্রতি বিদ্বেষী ও তার শত্রু বানিয়ে দেবে।

আর খ্রিষ্টীয় ইহুদী সাম্রাজ্যবাদ মুসলিম নারীদের শিক্ষার ওপর অধিকতর গুরুত্ব দিয়েছে নিশ্চয়ই এজন্যে নয় যে, তারা প্রকৃত অর্থেই মুসলিম মহিলা হয়ে গড়ে উঠবে। বরং তা কেবলমাত্র এজন্যে যে, তারা নিজেদের মুক্ত বানিয়ে নেবে। কিসে থেকে মুক্ত ও স্বাধীন? সাম্রজ্যাবাদী গোলামী থেকে নিশ্চয়ই নয়। বরং দ্বীন ইসলাম থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ও স্বাধীন।

নারীশিক্ষার এই জরুরী ব্যবস্থাপনার পর দ্বিতীয় পদক্ষেপ নেওয়া হলো এই যে, মুসলিম নারীদের শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হলো সম্পূর্ণ ইসরাম বিরোধী নিয়ম-নীতিতে। মুসলিম জাহানে নবতর সামাজিক চিন্তাগত ও নৈতিক পরিবেশ নতুন করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে। অনৈসলামী রীতিনীতিতে মুসলিম মহিলাদের শুধু শিক্ষাই দেওয়া হলো, যা তাদের ঘরের নিরাপদ আশ্রয় থেকে বাইরে বের করে আনা হলো ভিন পুরুষের পাশে। এভাবেই বিপর্যয় সৃষ্টির কাজটাকে সম্পূর্ণতা দান করা হলো।

কেননা নারীদের বিপথগামী করাই ছিল প্রথম লক্ষ্য, যেন তারা অন্যদের –অন্য নারী ও পুরুষদের বিপর্যয়ের মধ্যে টেনে নিতে সক্ষম হয়, আর কার্যত হয়েছেও তাই।

প্রথমে যুবক-যুবতীদেরকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা বিষাক্ত ও কলংকিত পরিবেশের মধ্যে একত্রিত করে দেওয়া হলো। তারাই হলো লেখক, গাল্পিক, শিল্পী, সাংবাদিক, সিনেমা আর্টিস্ট, ঘোষক।

চলাফেরা, ক্যাম্প, শিল্পকারখানা, ব্যবসায় কেন্দ্র, অফিস-আদালত ও পথে ঘাটে সর্বত্রই নারী ও পুরুষের –যুবক ও যুবতীদের অবাধ মেলামেশার ব্যবস্থা করা হলো। কেননা আসল লক্ষ্যে হচ্ছে নারীদেরকে চরিত্রহীনা বানানো।

বর্তমান মুসলিম জাহানের নতুন জেগে ওঠা সমাজই হচ্ছে খ্রিষ্টীয় ইহুদী সাম্রাজ্যবাদের আসল টার্গেট। কেননা তারাই হবে ইসলামী আকীদা বিশ্বাসের অবশিষ্ট শেষ চিহ্নটুকুও মুছে ফেলার জন্যে বড় হাতিয়ার। বিশেষ করে নব্য বয়সের নারীরা। এক ইহুদী লেখক তাদের সম্পর্কে লিখেছেন, সমগ্র সমাজটিকে ইসলাম থেকে অনেক দূরে টেনে নেওয়ার জন্যে সকলের তুলনায় অধিক সক্রিয় ও সার্থক হাতিয়ার হবে এই মেয়েরাই।

হ্যাঁ কার্যত হয়েছেও তাই।

একালের শিক্ষিতা যুবতী মেয়ে সবদিক দিয়েই মুক্ত, স্বাধীন। তাদের গর্ভে যদি কখনও সন্তানের জন্ম হয়, তা হলে তারা নিশ্চয়ই শিশু সন্তানের মনে-মগজে ইসলামী আকীদা-বিশ্বাসের বীজ বপন করবে না। কেননা তারা নিজেরাই তার প্রতি বিশ্বাসী নয়, তাদের বাস্তব জীবন যাত্রার ওপর ইসলামের একবিন্দু প্রভাব নেই। বরং ইসলামী রীতি ও বিশ্বাসের প্রতি তারা বিদ্বেষী, শত্রু ভাবাপন্ন। তারা ইসলামকে রীতিমত ঘৃণা করে। এক্ষণে খ্রিষ্টীয় ইহুদী জগতে নিশ্চিন্তে বিশ্রাম গ্রহণ করতে পারে। বিগত দুই শতাব্ধী কাল ধরে যে প্রাণ-পণ চেষ্টা চালিয়েছিল, তা এখনও চালিয়ে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। মুসলিম দ্বীন প্রচারণকারী ও সাধারণ মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যে যে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমটা তারা এ যাবত করে এসেছে তার দায়িত্ব এখন পালন করে চলছে মুসলিম পরিবার ও সমাজের সেই মেয়েরা, যারা তাদের শিক্ষা ও চরিত্র পেয়ে মনে-প্রাণে-চরিত্রে খ্রিষ্টান ইহুদী হয়ে গেছে –তাদের গর্ভে এখন আর মুসলিম সন্তানের জন্ম হয় না। তারা হয় সন্তা নপ্রসব ছেড়েই দিয়েছে খ্রিষ্টান-ইহুদী চক্রান্তে পড়ে, আর কোনো সন্তান প্রসব করলেও তার মন-মগজে ইসলামী আকীদার বীজ বপন করে না। ফলে খ্রিষ্টান ইহুদীদের সেই সর্বাত্মক চেষ্টা-প্রচেষ্টা এখন অপ্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা সত্ত্বেও তাদের সে সর্বাত্মক চেষ্টা বন্ধ করা হয়নি। কেননা এতসব আয়োজন সত্ত্বেও তারা তাদের মুসলিম নিধন যজ্ঞের পরিকল্পনাকে পূর্ণত্বে পৌঁছানোর জন্যে সজাগ রয়েছে। কেননা ইসলামের সাথে শত্রুতা করার জন্যে নিত্য নতুন পন্থার উদ্ভাবন তারা প্রয়োজনীয় মনে করে।

এই দিক দিয়ে বিবেচনা করলে দেখা যায়, এই স্বাধীনা ও মুক্ত নারীর কোনো বিবাহ ইসলামের সাথে নেই। অর্থাৎ অধিকার প্রাপ্তির জন্যে ইসলামের সাথে তাদের কোনো দ্বন্দ্ব বা সংঘর্ষের সৃষ্টি করার অবকাশ নেই।

কেননা অধিকার দাবির ব্যাপারটির মীমাংসা হতে পারে কেবল ইসলামী শরীয়তকে পুরোপুরি পরিহার করার দ্বারা। অথবা এমন পন্থায়, যা বাহ্যত অতী সহজ হলেও প্রকৃতপক্ষে তা অধিক বিপজ্জনক। আর ইসলামের সম্পূর্ণ উৎখাত সাধনের জন্যে তা অবশ্য অধিক কার্যকর আর তা হচ্ছে দ্বীন-ইসলামের অর্থ ও তাৎপর্যকেই পরিবর্তিত করে দেওয়া। বর্তমানের মুসলিম নামধারী বুদ্ধিজীবীরা তা-ই করছে।

উপরে উল্লেখিত ব্যক্তিগণের বাইরে রয়েছে সাধারণ মুসলিম জনগণ। তারা ইসলামকে ঘৃণা করে, ইসলামের প্রতি তাদের বিশ্বাসও রয়েছে। যদিও ইসলামকে বাস্তব জীবনে অনুসরণ করে চলাকেই তাদের অনেকেই পছন্দ করে না।

এই সাধারণ মুসলিম জনগণ অন্তরে প্রচ্ছন্ন হয়ে থাকা আকীদার পক্ষপাতিত্বকে তারা সেভাবেই রাখতে ইচ্ছুক। আর বেশি হলেও শুধু এতটুকুতেই তারা রাজি যে, ইসলামী আকীদা অনুযায়ী তারা নামা পড়ছে, রোযা রাখছে, কিন্তু এছঅড়া আরও কিছু পালন করতে হলে তাদের হৃদয়কে কষ্ট করতে হবে, যা করতে তারা রাজি হচ্ছে না।

তারা সকল প্রকার বন্ধন থেকে মুক্ত সহজ জীবন যাপন করতে ইচ্ছুক, তারা চায়, সিনেমা দেখা যতই গুনাহের কাজ হোক, তা তারা দেখবে। টেলিভিশনের নৃত্য ও গান দ্বারা নিজেদের চোখ ও কানকে পরিতৃপ্ত করবে, তা যতই নগ্ন ও অশ্লীল অশ্রাব্য হোক।

এতদসত্ত্বেও তারা মুসলিম। এই কথা মনে করে তারা সান্ত্বনা পেতে চায়। তারা মিথ্যা কথা বলবে, গীবত করবে, পরের দোষ তালাশ করে বের করবে বা বানোয়াট করবে ও শত মুখে প্রচার চালাবে পূর্ণ স্বাধীনতা সহকারে। কেউ চায় না যে তাদের বলে, এটা হারাম এটা হালাল। পুরুষরা চায় মেয়েরা ঘরের বাইরে রাস্তা ঘাটে তাদের সাথে ধরাধরি করে আনন্দ স্ফুর্তি ও স্বাদ আস্বাদন করবে।

তাদের মেয়েরা চায়, এই পুরুষগুলোকে যে কোনো উপায়ে নিজেদের প্রতি আকৃষ্ট ও আসক্ত বানাবার জন্যে সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা চালাবে এবং পোশাক-পরিচ্ছদ অলংকারাদির ও দৈহিক সৌন্দর্য কোনোরূপ গোপনীয়তাকে প্রশ্রয় না দিয়ে প্রকাশ্যভাবে দেখিয়ে বেড়াবে।

আর এই পুরুষ ও নারী উভয়েরই মনের কামনা হচ্ছে, তারা যে কোনো ভুল কাজ করছে এই চেতনাটুকুও যেন তাদের না হয়, কেননা তাদের নিয়ম খুবই ভালো।

এভাবে ইসলাম মনের গোপন পরতে লুক্কায়িত একটা আকীদা বা বিশ্বাস মাত্রে পরিণত হয়ে গেছে। বেশির পক্ষে তা এমন আকীদা, যার সাথে কিছুটা নামায-রোযাও আছে। কিন্তু গোটা জীবনের বিধান হবে ইসলাম, বাস্তব জীবন ইসলাম অনুযায়ী যাপন করতে হবে, ছোট বড় সব আদেশ-নিষেধ পালন করে জীবনকে মহা কষ্টের মধ্যে ছেড়ে দিতে হবে। পোষাক, খানাপিনা, আইন ও শাসন, ব্যবসায় ও বাণিজ্য সব কিছুই ইসলাম অনুযায়ী চালাতে হবে –এমন বাধ্যবাধকতা তারা মাথায় তুলে নিতে একবোরেই না-রায। তার প্রয়োজনীয়তাও তারা বোধ করে না।

এসবলোক যদিও উপরিউক্ত বুদ্ধিজীবীদের মতো ইসলামকে ঘৃণা করে না, ইসলামের প্রতি কোনোরূপ বিদ্বেষও পোষন করে না, তবু এতে সন্দেহ নেই যে, তারা প্রকৃত ইসলামকে গভীর অন্তর দিয়ে গ্রহণ করার পক্ষপাতী নয়।

বর্তমান মুসলিম সমাজের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর আচরণ ও ভূমিকা ইসলামের প্রতি কিরূপ, তা-ই এতক্ষণ বিবৃত হলো।

শেষ পর্যায়ে এদের সাথে মিলিত হয় সেসব লোক, যারা সুবিধাবাদ, স্বার্থ দৃষ্টি ও লালসা-কামনার দরুন ইসলামকে ঘৃণা করতে বাধ্য হচ্ছে।

এই ঘৃণার সমান মাত্রায় শরীক রয়েছে সামজের বড় বড় অহংকারী লোক এবং সমাজের নানা দিক দিয়ে দুর্বল লোকেরা।

কেননা এদের প্রত্যেকেরই একটা সুবিধাবাদী দৃষ্টিভঙ্গী রয়েছে, আছে নিজস্ব স্বার্থ ও লালসা-কামনা, যাঁর জন্যে দিন রাত উন্মুখ ও অন্বেষী হয়ে থাকে। ধর্ম পালন তাদেরকে তা থেকে বঞ্চিত করুক তা তারা পছন্দ করে না। ফলে মুসলিম জাহানেও জাহিলিয়াত প্রবিষ্ট হয়ে পড়ে, যেমন আধুনিক জাহিলিয়াত সারা পৃথিবীকে গ্রাস করে ফেলেছে।

তা হলে মুসলিম পরিচিত লোকদের মধ্যে অবশিষ্ট থাকল কারা? হ্যাঁ, তা সত্ত্বেও কিছু মুসলিম রয়েছে, যারা সারা মুসলিম জাহানের ইতস্তত ছড়িয়ে রয়েছেন, তারা ব্যক্তি মাত্র। তারা দ্বীন-ইসলামের প্রকৃত নিগূঢ় তত্ত্ব জানেন, তাকে অন্তর দিয়ে ভালোবাসেন, তাকে সাধ্যমত সম্মান ও শ্রদ্ধা করেন এবং পালনও করেন যতটা সাধ্যে কুলায়। তারা নিঃসন্দেহে জানেন যে, দ্বীন-ইসলামই সত্য, আল্লাহ প্রদত্ত সত্যিকার জীবন বিধান এবং বর্তমান সময় বিশ্বমানবতা যে কঠিন সমস্যাবলীর আবর্তে দিশেহারা, তাদের যাবতীয় সমস্যারও একমাত্র সমাধান হচ্ছে এই ইসলাম।

সেই সাথে তাঁরা এও জানে যে, এই প্রকৃত ইসলামের পথ কিছুমাত্র কুসুমাস্তীর্ণ নয়; বরং ভয়াবহভাবে কণ্টকাকীর্ণ। এ পথে রয়েছে অক্লান্ত পরিশ্রম, রক্ত দান ও অশ্রুবর্ষণের অনিবার্য প্রয়োজন। আল্লাহর পথে অবস্থিত কাঁকার বিদ্ধ হতেও তারা কাতর নয়। কেননা তারা তার বিনিময় এই পৃথিবীতে পেতে চান, চান না আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর কাছ থেকে কোনো বিনিময় লাভ করতে।

কিন্তু ইতস্তত বিক্ষিপ্ত এই নিষ্ঠাবান ব্যক্তিগণ ঐকান্তিক কামনা ও চেষ্টা সত্ত্বেও বর্তমান পর্যায়ে কোনো কিছু করিয়ে বা ঘটিয়ে দেওয়ার সাধ্য রাখে না। দলবদ্ধ ও সমষ্টিগত চেষ্টা-প্রচেষ্টা দ্বারা প্রকৃত ইসলামকে কায়েম করার সংগ্রাম তো দূরের কথা, এককভাবেও তারা অত্যাচারী দুর্ধর্ষ নির্মম শাসকদের কড়া শাসকের অধীন টার্গেট হয়ে বসে আছেন, তারা এদেরকেও চিরতরে ধ্বংস করতে সচেষ্ট।

কিন্তু দ্বীন-ইসলামের ব্যাপারে মানুষই চূড়ান্ত ও একমাত্র সিদ্ধান্তগ্রহণকারী।

নিজেদেরকে মুসলিম মনে করে, এমন লোক তো দুনিয়ায় অসংখ্য বাস করছে। তারা নিজেদেরকে মুসলিম ধারণ করেও –বড়ই দুঃখের বিষয় –ইসলামকে পছন্দ করতে পারছে না। তাদের দিন-রাতের তৎপরতা নিয়োজিত রয়েছে জীবনের পৃষ্ঠা থেকে ইসলামের নাম-চিহ্নটুকুও মুছে ফেলার লক্ষ্যে। কিন্তু তবু ওরা এবং ওদের মতো অন্যরা ইসলামের একমাত্র অভিভাবক নয়।

(আরবী***********************************************************)

আল্লাহর জন্যেই সেই সব কিছু যা আছে আসমান জগতে এবং যা আছে পৃথিবীতে। তোমাদের পূর্বে যাদেরকে আমরা কিতাব দিয়েছি তাদেরকে আমরা অসিয়ত করেছি যে, তোমরা নিজেদেরকে রক্ষা করো, আল্লাহকে ভয় করো আর তোমরা যদিও কুফরী করে তাহলে জেনে রাখো, আল্লাহর জন্যেই রয়েছে যা কিছু আসসামন লোকে আছে এবং যা কিছু পৃথিবীতে। আর আল্লাহ তো পরবিমুখ এবং মহাপ্রশংসিত। আর আল্লাহরই জন্যে আসমান ও জমিনের সবকিছুই। আল্লাহই যথার্থ দায়িত্বশীল, আল্লাহ যদি চান –হে মানুষ –তোমাদেরকে নি যাবেন এবং অন্য লোকদের নিয়ে আসবে। আর আল্লাহ তা করতে খুবই ক্ষমতাবান। (সূরা আন-নিসাঃ ১৩১-১৩৩)

হ্যাঁ, দুনিয়ার সর্বত্র এক নতুন বংশধর জেগে উঠেছে, যারা মহান আল্লাহর দিকেই ফিরে যাবে……।

Page 14 of 15
Prev1...131415Next

© Bangladesh Jamaat-e-Islami

  • আমাদের সম্পর্কে
  • প্রাইভেসি পলিসি
  • যোগাযোগ
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস

@BJI Dhaka City South