দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ ইসলামী আন্দোলনের শরয়ী মর্যাদা
আল কোরআনের আলোকে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর আওতাভুক্ত যে কাজগুলোর আলোচনা করা হলো,ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে এই সবগুলো কাজই ফরজ। সুতরাং পূর্ণাঙ্গ ইসলামী আন্দোলন যে ফরজ এতে আর কোন সন্দেহের অবকাশ থাকে না। ফরজের ক্ষেত্রে ফরজে আইন ও কেফায়ার বিতর্ক তোলার ও কোন সঙ্গত কারন নেই। ফরজে কেফায়া ফরজই এবং যে কোন নফল ও সুন্নাত কাজের তুলনায় বহুগুণে উত্তম ও অনেক বেশী মর্যাদাসম্পন্ন কাজ। উপরন্তু ফরযে কেফায়ার প্রসঙ্গটা আসে কেবল কিতালের পর্যায়েই। কিতালের ব্যাপারে বৃদ্ধ, রুগ্ন প্রভৃতিকে অব্যাহিত দেয়া হয়েছে। দাওয়াতের কাজ যে কোন স্থানে যে কোন অবস্থায় একজন মানুষ আঞ্জাম দিতে পারে। সত্যের সাক্ষ্য পেশের ব্যাপারটাও এই পর্যায়েরই। ইকামাতে দ্বীন তো ব্যাপক অর্থবোধক একটি পরিভাষা যার মধ্যে দাওয়াত,শাহাদাত,কিতাল এবং আমর বিল মা’রূফ ও নেহী আনিল মুনকার ও শামিল। সুতরাং এর বেশীর ভাগ কাজগুলো যে কোন মানুষ যে কোন অবস্থায় আঞ্জাম দিতে পারে।
কোরআন এবং সুন্নাহর আলোকে বিচার বিশ্লেষণ করলে আরো সুস্পষ্টভাবে যে সত্যটি আমাদের সামনে ভেসে উঠে তা হলো- ইসলামী আন্দোলন বা জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর কাজ শুধূ ফরজ তাই নয়, সব ফরজের বড় ফরজ। অন্যান্য ফরজ কাজ সমূহের আঞ্জাম দেয়া নয়- এই ফরজ আদায় না করে। নিম্নের ছয়টি বিষয়ের আলোকে বিচার করলে আমরা এর গুরত্ব আরও ভালভাবে উপলব্ধি করতে পারব।
১.মানুষ আল্লাহর খলিফা। খলিফা হিসেবে দুনিয়ায় তাকে যে কাজটি করতে বলা হয়েছে তা হলো আল্লাহর দ্বীনের ভিত্তিতে জীবন যাপন করা। একমাত্র আল্লাহর হুকুম- আহকাম মেনে চলা জীবনের সর্বক্ষেত্রে ও বিভাগে এটা করতে হলে ইসলামী আন্দোলন ছাড়া গত্যন্তর নেই।
২. আল্লাহর খলিফা হিসেবে মানুষ এই দুনিয়ার কি দায়িত্ব পালন করবে, কিভাবে সে দায়িত্ব আঞ্জাম দেবে তা শেখানোর জন্যেই এসেছেন যুগে যুগে আম্বিয়ায়ে কেরাম (আলাইহিমুস সালাম)। তারা সবাই আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন পরিচালনা করেছেন। কোন একজন নবীর জীবনেও এর ব্যতিক্রম কিছু দেখা যায় না।
৩. শেষ নবী মুহাম্মাদ (সঃ) এর কাজ সম্পর্কে আল কোরআন যে সব ঘোষণা দিয়েছে তার মূল কথা আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার সংগ্রাম পরিচালনা এবং নেতৃত্ব দান ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি ২৩ বছরের নবূয়তী জীবনে বাস্তবে যা করেছেন তাও একটি বিপ্লবী আন্দোলন পরিচালনা। শুধু তাই নয়, কিয়ামত পর্যন্ত অনুরূপ আন্দোলন পরিচালনার ব্যবস্থা ও তিনি রেখে গেছেন। যে কাজটি তিনি নিজে আঞ্জাম দিয়েছেন, সে কাজটি কিয়ামত পর্যন্ত জারি রাখার দায়িত্ব তিনি তার উম্মতের উপর অর্পণ করেছেন।
৪.সুতরাং উম্মতে মুহাম্মদী হিসেবে পরিচয় দিতে হলে এই দায়িত্ব পালন অবশ্যই করতে হবে। উম্মতে মুহাম্মদী হিসেবে এই দায়িত্ব পালনের তাকিদ প্রথমতঃ সরাসরি আল কোরআন থেকে প্রমাণিত। দ্বিতীয়তঃ সুন্নাতে রাসূলে ও এর সুস্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। তৃতীয়তঃ এই ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরামের ইজমা রয়েছে।
৫.আলকোরআন এবং সুন্নাতে রাসূলে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর কাজটাকে ঈমানের অনিবার্য দাবী হিসেবেই উল্লেখ করা হয়েছে। কোরআনে বলা হয়েছেঃ
الَّذِينَ آمَنُوا يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالَّذِينَ كَفَرُوا يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ الطَّاغُوتِ [النساء : 76]
যারা ঈমানদার তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে। আর যারা কাফের তারা লড়াই করে তাগুতের পথে, খোদাদ্রোহিতার পথে।(আন নিসা:৭৬)
৬.আল কোরআনে আখেরাতে নাজাতের উপায়,একমাত্র উপায় হিসেবে আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমানের সাথে সাথে আল্লাহর পথে মাল দিয়ে ও জান দিয়ে সংগ্রাম করার, জিহাদ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সুতরাং ইসলামী আন্দোলন নিছক কোন রাজনৈতিক আন্দোলন নয়। এই যুগের কোন নতুন আবিষ্কার ও নয়। এই আন্দোলনের মাধ্যমেই শরীয়তের প্রধানতম ফরজ কাজ আঞ্জাম দেয়া সম্ভব। সমস্ত নবী রাসূলগনের তরিকা অনুসরণ করতে হলে উম্মতে মুহাম্মদীর হক আদায় করতে হলে, ঈমানের দাবী পূরণ করতে হলে, সর্বোপুরি আখেরাতে নাজাতের পথে চলতে হলে ইসলামী আন্দোলনে যোগদান ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই।
ইসলামী আন্দোলনের কাজ আল্লাহর কাজ
মানুষের জীবনে ও আল্লাহর যমীনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজটা মূলত আল্লাহরই কাজ। সৃষ্টির সর্বত্র আল্লাহর হুকুম আল্লাহ নিজেই সরাসরি কার্যকর করেছেন। মানুষের সমাজেও তারই হুকুম চলুক এটাই তার ইচ্ছা। এখানে ব্যতিক্রম এতটুকু যে, মানূষকে সীমিত অর্থে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। সৃষ্টি জগতের কোথাও আর কারও কোন স্বাধীনতা নেই। ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক সবাই আল্লাহর হুকুম বা তার দেয়া নিয়ম-নীতি মেনে চলতে বাধ্য। কিন্তু মানুষকে আল্লাহ এভাবে বাধ্য করেননি। নিজেদের স্বাধীনতা ইচ্ছার ভিত্তিতে মানুষকে এইটুকু সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ আল্লাহ দিয়েছেন যে,সে আল্লাহ দেয়া নিয়ম-নীতি অনুযায়ী চলতে পারবে, আবার এটা অমান্য ও করতে পারবে। কিন্তু আল্লাহ চান যে মানুষ তার এই স্বাধীন ইচ্ছাকে আল্লাহর হুকুম মেনে চলার কাজেই প্রয়োগ করুক। সুতরাং যখন মানুষ তার স্বাধীন ইচ্ছাকে আল্লাহর ইচ্ছার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে। এই কারণেই দ্বীন কায়েমের আন্দোলনে নিয়োজিত ব্যাক্তিদেরকে আনসারুল্লাহ- আল্লাহর সাহায্যকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা আল কোরআনে ঘোষণা করেছেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا أَنْصَارَ اللَّهِ [الصف : 14]
হে ঈমানদার গণ! তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হয়ে যাও। (আস সফ: ১৪)
অর্থা মানুষের সমাজে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্টা হোক আল্লাহর এই ইচ্ছা বাস্তবায়নে সাহায্য কর। এভাবে আল্লাহর কাজে সাহায্য করার অনিবার্য দাবী হলো আল্লাাহর সাহায্য পাওয়া। আল্লাহ বলেনঃ
; يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنْ تَنْصُرُوا اللَّهَ يَنْصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ [محمد : 7]
তোমরা যদি আল্লাহকে সাহায্য কর তাহলে তিনি তোমাদেরকে সাহায্য করবেনএবং তোমাদেও স্থিতি সুদৃঢ় কওে দেবেন। (মুহাম্মদ: ৭)সুতরাং যারা আল্লাহার দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেয় তারা আল্লাহর সাহায্যকারী হয়ে যায়, আর আল্লাহও তাদেও কে দুনিয়ার কোন শক্তিই পরাভূত করতে পারে না। প্রকৃত পক্ষে এভাবে যারা আল্লাহর সাহায্যকারীর তালিকাভূক্ত হয়ে যায় তারাই আল্লাহর অলি হিসেবে গৃহীত হয়। যারা এই অলিদের বিরোধিতা করে, আল্লাহ নিজে তাদেও বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দেন। হাদিসে কুদসীতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আল্লাহর থেকে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন:
ومن عاد لي وليا فقد أذنته للحرب
যে আমার অলিদের সাথে শত্রুতা করে, আমি তাকে যুদ্ধের আহ্বান জানাই। অবশ্য আল্লাহর সাহায্যকারীগণ সত্যিই আল্লাহর সাহায্যকারী কি না, সত্যি সত্যি আল্লাহকে ভালবাসে কি না এর পরীক্ষা –নিরীক্ষার একটা ব্যবস্থা আল্লাহ রেখেছেন। এই পরীক্ষায় পাশ করা ছাড়া তিনি কাউকেই অলি বা বন্ধু হিসেবে কবুল করেন না। এই পরীক্ষা সব নবী- রাসূল এবং তাদের সঙ্গী-সাথীদের নেয়া হয়েছে। হযরত ইব্রাহীম(আঃ) কে আল্লাহ বিশ্বজোড়া মানুষের ইমামত দান করার আগে চরম পরীক্ষা নিয়েছেন। এসব পরীক্ষায় পাশ করার পরই আল্লাহ ঘোষণা করেছে।
إِنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامًا [البقرة : 124]
আমি তোমাকে বিশ্বের সমস্ত মানুষের ঈমাম বা নেতা বানাতে চাই। (আল বারাকা:১২৪)
আল্লাহ তায়ালা এভাবে তার সাহায্যকারীদের পরীক্ষা নেয়ার কথা আল কোরআনে বিভিন্নভাবে ব্যক্ত করেছেন।
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ حَتَّى نَعْلَمَ الْمُجَاهِدِينَ مِنْكُمْ وَالصَّابِرِينَ وَنَبْلُوَ أَخْبَارَكُمْ [محمد : 31]
অবশ্যই আমরা তোমাদেরকে পরীক্ষার সম্মুখীন করবো যাতে তোমাদের মধ্যে কারা সংগ্রামী ও ধৈর্য ধারণকারী তা জেনে নিতে পারি এবং তোমাদের অবস্থা যাচাই করতে পারি। (মুহাম্মদ:৩১)
أَحَسِبَ النَّاسُ أَنْ يُتْرَكُوا أَنْ يَقُولُوا آمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُونَ [العنكبوت : 2]
মানুষ কি মনে করে নিয়েছে যে, আমরা ঈমান এনেছি এতটুকু বললেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে- তাদের পরীক্ষা নেয়া হবে না। (আল আনকাবুত:২))
أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُمْ مَثَلُ الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْ مَسَّتْهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوا حَتَّى يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ مَتَى نَصْرُ اللَّهِ أَلَا إِنَّ نَصْرَ اللَّهِ قَرِيبٌ [البقرة : 214]
তোমরা কি ভেবে নিয়েছ যে, এমনিতেই বেহেশতে পৌছে যাবে? অথচ তোমাদের পূর্বের লোকদের সামনে যেসব কঠিন মুহূর্তে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় এসেছে তারতো কিছুই এখনও তোমাদের সামনে আসেনি। তাদের উপর কঠিন থেকে কঠিনতর মুহূর্ত এসেছে- বিপদ-মুছিবত তাদেরকে প্রকম্পিত করে তুলেছে- এমন কি নবী রাসূলগণ ও তাদের সাথীগণ সমস্বরে বলে উঠেছে- আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে? তোমরা জেনে রাখ, আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটে। (আল বারাকা: ২১৪)
এভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা আল্লাহ তায়ালা তার সব নেক বান্দাদেরই নিয়েছেন এবং নিয়ে খাকেন। তাই হাদিসে বলা হয়েছে:
اشد البلاء الانبياء ثم الامثال فالامثال
সবচেয়ে বেশী বিপদ-মিুছিবত তথা পরীক্ষা-নিরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছেন আম্বিয়ায়ে কেরামগণ। এর পর তাদের অনুসরণের ক্ষেত্রে যারা যত বেশী অগ্রসর তাদেরকে তত বেশী বিপদ-মুছিবত বা পরীক্ষা – নিরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে আল্লাহ তায়াল কি চান তাও পরিষ্কার করে বলেছেন:
]
إِنْ يَمْسَسْكُمْ قَرْحٌ فَقَدْ مَسَّ الْقَوْمَ قَرْحٌ مِثْلُهُ وَتِلْكَ الْأَيَّامُ نُدَاوِلُهَا بَيْنَ النَّاسِ وَلِيَعْلَمَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَيَتَّخِذَ مِنْكُمْ شُهَدَاءَ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِينَز وَلِيُمَحِّصَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَيَمْحَقَ الْكَافِرِينَ
তোমাদের যদিও বা কিছুটা ক্ষতি, কিছুটা বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয়েছে- তাতে কি আর আসে যায়, তোমাদের প্রতি পক্ষের ও তো অনুরুপ বিপর্যয় এসেছে। এই দিনসমূহ (সুদিন বা দুর্দিন) তো আমারই হাতে। আমি মানুষের মাঝে তা আবর্তিত করে থাকি। এখাবে আল্লাহ জেনে নিতে চান, কারা সত্যিকারের ঈমানদার এবং তোমাদের মধ্য থেকে কিছু লোককে শহীদ হিসেবে গ্রহণ করতে চান। আল্লাহ জালেমদের পছন্দ করেন না। তিনি আরও চান, ঈমানদারদের মধ্যে খাঁটি-অখাঁটি হিসেবে ছাঁটাই-বাছাই করতে এবং কুফরী শক্তির মূলোৎপাটন করতে। (আলে ইমরান:১৪০-১৪১)
আল্লাহ পাকের উক্ত ঘোষণার আলোকে পরিষ্কার ভাবে আমরা বুঝতে পারি, পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথমতঃ ঈমানের দাবীর সত্যতা ও যথার্থতা প্রমাণিত হয়। দ্বিতীয়তঃ কিছু লোক আল্লাহর দরবারে শহীদ হিসেবে মকবুল হয়। তৃতীয়তঃ শহীদদের সাথীদের এক অংশ এই কাফেলা থেকে ছিটকে পড়ে। চতুর্থতঃ পরীক্ষার বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করে শহীদদের সাথীদের মধ্য থেকে যারা ছবর ও ইস্তেকামাতের পরাকাষ্ঠা দেখাতে সক্ষম হয়-আল্লাহ তাদের হাতে দ্বীন ইসলামের বিজয় পতাকা দান করেন এবং তাদের মাধ্যমে কুফরী শক্তির মূলোৎপাটন করে দ্বীন ইসলামকে বিজয়ী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।
সুতরাং ইসলামী আন্দোলনের পথে বাধা-প্রতিবন্ধকতা, বিপদ-মুছিবত যা আসে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপকরণ হিসেবেই আসে। তাই যাদের দিলে সঠিক ঈমানের আলো আছে, তারা এসব মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করে না।
مَا أَصَابَ مِنْ مُصِيبَةٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ وَمَنْ يُؤْمِنْ بِاللَّهِ يَهْدِ قَلْبَهُ [التغابن : 11]
আল্লাহর অনুমতি ছাড়া, নির্দেশ ছাড়া তো কোন বিপদ মুছিবত আসতেই পারে না। আর যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে আল্লাহ তাদের দিলকে সঠিক হেদায়েত দান করেন। (আত তাগাবুন:১১)
বস্তুত ইসলাম প্রতিষ্ঠার এই আন্দোলনের পথে এমন একটা মুহূর্ত তো আসতেই হবে যেখানে পৌছে আন্দোলনের কর্মীগণ সাহায্য ছাড়া আর কোন কিছুর উপরই নির্ভর করবে না, করতে পারবে না। এমনি মুহূর্তেই আল্লাহর নৈকট্য লাভের মুহূর্ত – মেরাজের মুহূর্ত। ইসলামী আন্দোলনের কাফেলার সঙ্গী-সাথীগণ যখন এই পর্যায়ে উপনীত হতে সক্ষম হয়, তখনই আল্লাহ তায়ালা তাদের বিজয় দানের ফায়সালা করেন।
এ কাজে শরীক হওয়ার জন্যেও আল্লাহর অনুমোদন প্রয়োজন
ইসলামী আন্দোলনের কাজটা আল্লাহর কাজ। সুতরাং এই কাজে শরীক হতে পারাটাও আল্লাহর অনুমোদন সাপেক্ষ। অবশ্য যারাই নিষ্ঠার সাথে এই পথে চলার সিদ্ধান্ত নেয়, আল্লাহ তাদের সিদ্ধান্ত কে কবুল করেন।
وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا [العنكبوت : 69]
যারাই আমার পথে সংগ্রাম- সাধনায় আত্মনিয়োগ করে আমি তাদেরকে পথ দেখিয়ে থাকি। (আল আনকাবুত: ৬৯)
আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর সাথে যারা এই কাজে অংশগ্রহণ করেছেন তাদেরকে লক্ষ্য করে আল্লাহ বলেছেন:
هو اجتباكم
তিনি তোমাদেরকে এই কাজের জন্যে বাছাই করেছেন। (আল হজ্জ)
آمَنُوا مَنْ يَرْتَدَّ مِنْكُمْ عَنْ دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ ذَلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ [المائدة : 54]
হে ঈমানদার লোকেরা! তোমাদের মধ্য থেকে যারা দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজ থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে আল্লাহ তাদের পরিবর্তে অন্য কোন সম্প্রদায়কে এই কাজের দায়িত্ব দেবেন- তারা আল্লাহকে ভালবাসবে, আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসবেন, তারা মুমিনদের প্রতি হবে দয়ালু আর কাফিরদের প্রতি হবে কঠোর।তারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করবে- কোন নিন্দুকের নিন্দাবাদের পরোয়া করবে না…এটাতো আল্লাহর বিশেষ মেহেরবানী, তিনি যাকে ইচ্ছা তার প্রতি এই বিশেষ অনুগ্রহ প্রদর্শন করেন। আল্লাহ তো গভীর জ্ঞানের অধিকারী। (আল মায়েদা:৫৪)
উক্ত ঘোষণায় স্পষ্ট প্রতিয়মান হয় যে, দ্বীন প্রতিষ্ঠার এই আন্দোলনের সুযোগ পাওয়াটা আল্লাহর বিশেষ মেহেরবানীর উপর নির্ভরশীল। আল্লাহ গভীর জ্ঞানের অধিকারী, আল্লাহ জেনে বুঝে এ মেহেরবানী প্রদর্শন করে থাকেন। কারা আল্লাহর এই বিশেষ মেহেরবানী পাওয়ার যোগ্য, তাও আল্লাহ পরিষ্কার করে বলে দিয়েছেন- যারা আল্লাহকে ভালবাসবে এবং আল্লাহর ভালবাসা পাওয়ার মত কাজ করে আল্লাহর প্রিয়পাত্র হবে, যারা এই পথে প্রাণান্তকর সংগ্রাম করবে এবং এই পথে চলতে গিয়ে কোন প্রকারের বাধা, বিপত্তি,নিন্দাবাদ, জুলুম, নির্যাতন কোন কিছুর পরোয়া করবে না অর্থাৎ দুনিয়ায় সবকিছু থেকে বেপরোয়া হতে পারবে, তাদেরকেই আল্লাহ এই কাজের জন্যে যথাযোগ্য পাত্র হিসেবে গণ্য করে গ্রহণ করবেন। এই কাজের সুযোগ পাওয়া যেমন আল্লাহর মেহেরবানীর উপর নির্ভরশীল। এই কারণেই আল্লাহ তায়ালা দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন:
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ [آل عمران : 8]
হে আমাদের রব! একবার হেদায়াত দানের পর আবার আমাদের দিলকে বাঁকা পথে নিও না। তোমার পক্ষ থেকে আমাদেরকে খাস রহমত দান কর, তুমিই মহান দাতা। (আলে ইমরান:৮)
ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্যে একটি সতর্কবাণী
যে আন্দোলনের কাজ অতীতে আঞ্জাম দিয়েছেন নবী রাসূলগণ, যে আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন আল্লাহর প্রিয় বান্দা ও নবী রাসূলদের সার্থক উত্তরসূরীগণ, আল কোরআন যাদের কে অভিহিত করেছে সিদ্দিকীন, সালেহীন এবং শুহাদা হিসেবে, সেই আন্দোলনে শরীক হতে পারা আল্লাহর একটি বিশেষ মেহেরবানী ছাড়া আর কিছুই নয়। এই কথা আমরা ইতঃপুর্বে আলোচনা করেছি। আল্লাহর এই মেহেরবানীর দাবী হলো, আল্লাহর প্রতি আরও বেশী বেশী কৃতজ্ঞ হওয়ার প্রয়াস চালানো। আর সেই কৃতজ্ঞতার দাবী হলো,আল্লাহর এই মেহেরবানীর পূর্ণ সদ্ব্যবহারের আপ্রাণ চেষ্টা চালানো। নিজের যোগ্যতা প্রতিভার সবটুকু এই কাজে লাগিয়ে দেয়া। এই ভাবে যতক্ষণ কোন একটা দলের বা সম্প্রদায়ের লোকেরা সম্মিলিতভাবে এবং নিষ্ঠার সাথে এই দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত থাকে ততক্ষণ আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করতে থাকেন, তাদের জন্যে পথ খুলতে থাকেন।
কিন্তু যখন ইসলামী আন্দোলনে নিয়োজিত ব্যক্তিগণ সম্মিলিত ভাবে আদর্শচ্যুতির শিকার হয়ে যায়, কঠিন এই দায়িত্বের অনুভূতি হারিয়ে ফেলে, আল কোরআনের ভাষায় পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে, তখন তাদেরকে চরম দুর্ভাগ্য কুড়াতে হয়। তাদেরকে আল্লাহ তার এই বিশেষ মেহেরবানী থেকে বঞ্চিত করেন। তাদের পরিবর্তে অন্য কোন দল বা সম্প্রদায়কে এই কাজের সুযোগ করে দেন। কারণ আল্লাহ তার দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজের ব্যাপারে কোন দল বা গোষ্ঠী বিশেষকে ঠিকাদারী দেন নি। কোন দল বা গোষ্ঠীর কাজ করা না করার উপর তার দ্বীনের বিজয়ী হওয়া না হওয়াকে নির্ভরশীলও করেননি। আল্লাহতো তার দ্বীনকে বিজয়ী করবেনই। সুতরাং যারা আজ তাই কাজের সুযোগ পেয়েছে তারা যদি চরম উদাসীনতার পরিচয় দেয়, অযোগ্যতা ও নিষ্ক্রিয়তার পরিচয় দেয় তাহলে দায়িত্বহীনতা ও নিস্ক্রিয়তার কারণে আল্লাহ তার দ্বীনের বিজয়কে ঠেকিয়ে রাখবেন না, বরং তাদের পরিবর্তে অন্যদেরকে এই কাজের সুযোগ করে দেবেন যারা তাদের মত হবে না। এই মূল বিষয়টি ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের গভীরভাবে ভেবে দেখার মত।
অনেকেই মনে করে থাকে, আন্দোলনে অংশ নিয়ে, সময় দিয়ে অর্থ দিয়ে তারা আন্দোলনের প্রতি মেহেরবানী করছেন। তাদের বেশ অবদান আছে, আন্দোলনকে দেয়ার মত অনেক অনেক যোগ্যতার অধিকারী তারা, ইত্যাদি ইত্যাদি। এই ধরনের লোকদের মনোভাব ও মানসিকতাকে সামনে রেখেই তো আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন:
يَمُنُّونَ عَلَيْكَ أَنْ أَسْلَمُوا قُلْ لَا تَمُنُّوا عَلَيَّ إِسْلَامَكُمْ بَلِ اللَّهُ يَمُنُّ عَلَيْكُمْ أَنْ هَدَاكُمْ لِلْإِيمَانِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ [الحجرات : 17]
তারা ইসলাম কবুল করে যেন আপনার প্রতি অনুগ্রহ করে- এই মর্মে তারা খোটা দেওয়ার প্রয়াস পায়। আপনি বলে দিন, বরং ঈমানের পথ দেখিয়ে আল্লাহই তোমাদের প্রতি ইহসান করেছেন, যদি তোমরা সত্যি সত্যি ঈমানদার হয়ে থাক। (আল হুজুরাত: ১৭)
আল্লাহর এই বিশেষ অনুগ্রহের অনিবার্য দাবী-এর সদ্ব্যবহরের প্রতিদান এবং অপব্যবহারের পরিণাম সম্পর্কে সদা জাগ্রত ও সচেতন থাকতে হবে। এই দায়িত্ব পালনে গভীর আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা দেখাতে হবে। সুবিধাবাদী মনোভাব ও আচরণ থেকে ব্যক্তি ও সমষ্টিকে মুক্ত রাখার সযত্ন প্রচেষ্টা চালাতে হবে। অন্যথায় এই সৌভাগ্য দুর্ভাগ্যে পরিণত হবে। দুনিয়াতেও লাঞ্ছনা পোহাতে হবে। আখেরাতেও কঠোরতম শাস্তি ভোগ করতে হবে। এই দুর্ভাগ্যজনক পরিণতি পরিণাম থেকে বাঁচতে হলে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের কাজ করার সুযোগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদেরকে, ভাগ্যবান ব্যক্তিদেরকে তাদের চলার পথে আল্লাহর সতর্ক সংকেতগুলোও সব সময় সামনে রাখতে হবে। আল্লাহর এই সতর্কবাণী সূরায় আল মায়েদায় এভাবে বর্ণিত হয়েছ:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَنْ يَرْتَدَّ مِنْكُمْ عَنْ دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ ذَلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ [المائدة : 54]
হে ঈমানদার লোকেরা! তোমাদের মধ্য থেকে যারা আল্লাহর দ্বীন থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে (দ্বীন কায়েমের সংগ্রাম থেকে পিছুটান দেবে তারা যেন জেনে নেয়) আল্লাহ তাদের পরিবর্তে অন্য কাউকে এই কাজের সুযোগ করে দেবেন। তাদেরকে আল্লাহ ভালবাসেন এবং তারাও আল্লাহকে ভালবাসবে। তারা মুমিনদের প্রতি হবে রহমদিল এবং কাফেরদের মোকাবিলায় হবে কঠোর। তারা সংগ্রাম করে যাবে আল্লাহর পথে। কোন নিন্দুকের নিন্দাবাদের পরোয়া করবে না-এটাতো হবে আল্লাহ তায়ালারই অনুগ্রহ তিনি যাকে চান এভাবে অনুগ্রহ প্রদর্শন করে থাকেন। তিনি তো সীমাহীন জ্ঞানের অধিকারী। (আল মায়েদা:৫৪)
সূরায়ে তাওবায় এই সতর্ক সংকেত একটু ভিন্ন সুরে ধ্বনিত হয়েছে- আল্লাহর পথে যুদ্ধে যাওয়ার আহবান জানানো হয়েছে। এই আহবানে সাড়া দিতে যারা গড়িমসি করছে তাদের লক্ষ্য করে বলা হচ্ছে:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَا لَكُمْ إِذَا قِيلَ لَكُمُ انْفِرُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ اثَّاقَلْتُمْ إِلَى الْأَرْضِ أَرَضِيتُمْ بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا مِنَ الْآخِرَةِ فَمَا مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فِي الْآخِرَةِ إِلَّا قَلِيلٌ (38) إِلَّا تَنْفِرُوا يُعَذِّبْكُمْ عَذَابًا أَلِيمًا وَيَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ وَلَا تَضُرُّوهُ شَيْئًا وَاللَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ [التوبة : 38 ، 39]
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কি হয়েছে যে, যখন আল্লাহর পথে বেরিয়ে পড়তে বলা হয় তখন তোমরা মাটি আঁকড়ে পড়ে থাক। তোমরা কি দুনিয়ার জিন্দেগী নিয়েই খুশী থাকতে চাও অথচ দুনিয়ার এই পার্থিব জীবনতো আখেরাতের তুলনায় কিছুই নয়। যদি তোমরা বের না হও তাহলে (এই কাজের জন্যে) তোমাদের জায়গায় আল্লাহ অন্য জাতিকে সুযোগ করে দেবেন। তোমরা তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ তো সবকিছুর উপর ক্ষমতাশীল এবং কর্তৃত্বের অধিকারী। (আত তাওবা: ৩৮-৩৯)
সুরায়ে মুহাম্মাদ বা সূরায়ে কিতালে এই সতর্কবানী এসেছে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে লিপ্ত ব্যক্তিদের মন-মানসিকতার সার্বিক বিশ্লেষণের প্রেক্ষাপটে। কিতালের নির্দেশ বাস্তবায়নে যাদের মনে দ্বিধা সংশয় ছিল, তাদের এই দ্বিধা সংশয় সম্পর্কে একদিকে সতর্ক করা হয়েছে। সেই সাথে যে কুফরী শক্তির ভীতি তাদের মনে ছিল, সেই কুফরী শক্তির অসারতা, পরিণামে তাদের ব্যর্থতা অনিবার্য- এই কথা সুস্পষ্টভাবে বলার পর আল্লাহ ঘোষণা করেন:
فَلَا تَهِنُوا وَتَدْعُوا إِلَى السَّلْمِ وَأَنْتُمُ الْأَعْلَوْنَ وَاللَّهُ مَعَكُمْ وَلَنْ يَتِرَكُمْ أَعْمَالَكُمْ (35) إِنَّمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا لَعِبٌ وَلَهْوٌ وَإِنْ تُؤْمِنُوا وَتَتَّقُوا يُؤْتِكُمْ أُجُورَكُمْ وَلَا يَسْأَلْكُمْ أَمْوَالَكُمْ (36) إِنْ يَسْأَلْكُمُوهَا فَيُحْفِكُمْ تَبْخَلُوا وَيُخْرِجْ أَضْغَانَكُمْ (37) هَا أَنْتُمْ هَؤُلَاءِ تُدْعَوْنَ لِتُنْفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَمِنْكُمْ مَنْ يَبْخَلُ وَمَنْ يَبْخَلْ فَإِنَّمَا يَبْخَلُ عَنْ نَفْسِهِ وَاللَّهُ الْغَنِيُّ وَأَنْتُمُ الْفُقَرَاءُ وَإِنْ تَتَوَلَّوْا يَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُونُوا أَمْثَالَكُمْ [محمد : 35 – 38]
অতএব তোমরা ভগ্নোৎসাহ হবে না, আপোষ করতে যাবে না, তোমরাই বিজয়ী হবে। আল্লাহ তোমাদের সাথে আছেন। তিনি তোমাদের আমল নষ্ট বা ব্যর্থ হতে দেবেন না। এই দুনিয়ার জীবন একটা খেল তামাশা বৈ আর কিছুই নয়। যদি তোমরা ঈমানদার হও এবং তাকওয়ার অধিকারী হও তাহলে তিনি তোমাদের যথার্থ প্রতিদান দেবেন। তিনি তোমাদের কাছে তোমাদের মাল চাইবেন না। যদি কখনও তিনি মাল চেয়ে বসেন এবং সবটা চান তাহলে তোমরা কৃপণতা প্রদর্শন করবে। এই ভাবে তিনি তোমাদের মনের রোগব্যাধি প্রকাশ করে ছাড়বেন। দেখ, তোমাদেরকে আল্লাহর পথে মাল খরচ করার আহ্বান জানানো হচ্ছে, এমতাবস্থায় তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ বখিলি করেছে। প্রকৃত পক্ষে তারা নিজেদের সাথেই এই বখিলির আচরণ করছে। (এর পরিণামে তারা নিতেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে) আল্লাহ তো (অশেষ ভান্ডারের অধিকারী) কারো মুখোপেক্ষী নন বরং তোমরাই তার সাহায্যের মুখাপেক্ষী। যদি তোমরা এই কাজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে আল্লাহ তোমাদের জায়গায় অন্য কাউকে নিয়ে আসবেন। অতঃপর তারা তোমাদের মত হবে না। (মুহাম্মদ: ৩৫-৩৮)
লক্ষণীয়, এই সতর্ক ও সাবধান সংকেত প্রত্যক্ষভাবে তাদেরকে শুনানো হয়েছে, যারা আল্লাহর রাসূলের কাছ থেকে সরাসরি দাওয়াত পেয়েছিল,তাঁর পরিচালনায় চলছিল। এমনকি তাঁর পেছনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ বা জামায়াত আদায় করছিল। আর আমরা তাদের তুলনায় কি? অতএব আল্লাহর এই সতর্ক সংকেতকে ইসলামী আন্দোলনের সাথে জড়িত ব্যক্তিদেরকে সব সময় ব্যক্তিগতভাবে ও সামনে রাখতে হবে, সামষ্টিক ভাবে ও সামনে রাখতে হবে।