জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস
জামায়াত অনলাইন লাইব্রেরি

ইসলামী সমাজ বিপ্লবের ধারা

অন্তর্গতঃ উচ্চতর অধ্যয়ন, পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
Share on FacebookShare on Twitter

ইসলামী সমাজ বিপ্লবের ধারা

সাইয়েদ কুতুব শহীদ

ভাষান্তর: আবদুল মালেক


স্ক্যান কপি ডাউনলোড


সূচীপত্র

  1. গ্রন্থকার পরিচিতি
    1. সাইয়েদ কুতুবের জন্ম, শিক্ষা ও কর্মজীবন
    2. গ্রেফতার ও নির্যাতন
    3. আবার গ্রেফতার ও দণ্ড
    4. সাইয়েদ কুতুবের জ্ঞান ও সাহিত্য চর্চা
  2. ভুমিকা
    1. মানবতার দুরবস্থা
    2. নয়া নেতৃত্বের প্রয়োজন
    3. ইসলামের ভুমিকা
    4. বিশ্ব নেতৃত্বের জন্যে প্রয়োজনীয় গুণাবলী
    5. আধুনিক যুগের জাহেলিয়াত
    6. ইসলাম ও জাহেলিয়াতের পার্থক্য
    7. ইসলামী সমাজের পুনরুজ্জীবন
  3. প্রথম অধ্যায়
    1. পবিত্র কুরআনে বাণীবাহক দল
    2. সাহাবায়ে কেরাম (রা)—এর সমতুল্য লোক দেখা যায় না কেন?
    3. আমাদের করণীয়
  4. দ্বিতীয় অধ্যায়
    1. মক্কী যুগের মৌলিক কুরবানী শিক্ষা
    2. দাওয়াতী কাজের সূচনা
    3. জাতীয়তাবাদ ও দ্বীনি দাওয়াত
    4. অর্থনৈতিক বিপ্লব ও দ্বীনের বাণী
    5. নৈতিক সংগঠনের মাধ্যমে আন্দোলনের সূচনা
    6. সর্বাত্মক বিপ্লব
    7. বিপ্লব কি করে এল?
    8. বাস্তবধর্মী জীবন বিধান
    9. আদর্শ বাস্তবায়নে ক্ষমতার প্রয়োজনীয়তা
    10. দ্বীন প্রতিষ্ঠার সঠিক উপায়
    11. জাহেলিয়াতের মুকাবিলায় ইসলাম
    12. ইসলাম নিছক মতবাদ নয়
    13. আল্লাহ প্রদত্ত আদর্শ বাস্তবায়নে আল্লাহ প্রদত্ত কর্মসূচী
  5. তৃতীয় অধ্যায়
    1. ইসলামী সমাজের বৈশিষ্ট্য ও সমাজ গঠনের উপায়
    2. নবীগণের মুল দাওয়াত
    3. সৃষ্ট জগতে মানুষের মর্যাদা
    4. জাহেলিয়াতের অক্টোপাশ থেকে মুক্তির উপায়
    5. ইসলামী সমাজের আদর্শিক ভিত্তি
    6. জাহেলী সমাজের মুসলমান অধিবাসী
    7. জাহেলী পরিবেশে ইসলামী পুনর্জাগরণের পন্থা
    8. মানবতার উন্নয়ন
  6. চতুর্থ অধ্যায়
    1. আল্লাহর পথে জিহাদ
    2. জিহাদের বিভিন্ন স্তর
    3. বিশ্বব্যাপী বিপ্লবী ঘোষণা
    4. আল্লাহর শাসন প্রতিষ্ঠার উপায়
    5. বন্দেগীর তাৎপর্য
    6. ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের স্বাধীনতা
    7. নিছক আত্মরক্ষার নাম জিহাদ নয়
    8. মক্কী স্তরে সশস্ত্র জিহাদ নিষিদ্ধ থাকার কারণ
    9. হিজরাতের পরও কিছুকাল সশস্ত্র যুদ্ধ পরিহার
    10. জিহাদের আরও একটি কারণ
    11. ইসলাম ও দেশরক্ষা
    12. জিহাদ-ই ইসলামের প্রকৃতিগত দাবী
    13. জাহেলিয়াতের সাথে কোন আপোষ নেই
    14. ইসলামী জিহাদ সর্ম্পকে দু’রকম ধারণা
    15. জিহাদ সম্পর্কে পাশ্চাত্যের ভ্রান্ত ধারণা
  7. পঞ্চম অধ্যায়
    1. ইসলামী জীবন বিধান
    2. ইসলামী সমাজের বৈশিষ্ট্য
    3. ইসলামী সমাজ গঠনের উপায়
    4. জাহেলিয়াত এবং তার প্রতিকার
  8. ষষ্ঠ অধ্যায়
    1. বিশ্বজনীন জীবনাদর্শ
    2. মানবদেহের জৈবিক অংশ
    3. সৃষ্টজগত সহাসত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত
    4. মহাসত্য থেকে বিচ্যুতির কুফল
  9. সপ্তম অধ্যায়
    1. ইসলামই সত্যিকার সভ্যতা
    2. ইসলামী সমাজ ও জাহেলী সমাজের মৌলিক পার্থক্য
    3. একমাত্র ইসলামী সমাজই সুসভ্য সমাজ
    4. ইসলাম ও জাহিলী সমাজের মৌলিক পার্থক্য
    5. সভ্যতার প্রকৃত মানদণ্ড
    6. সভ্যতার বিকাশে পারিবারিক ব্যবহারের গুরুত্ব
    7. পাশ্চাত্য সভ্যতার নমুনা
    8. আল্লাহ পোরস্ত সভ্যতা ও বৈষয়িক উন্নতি
    9. ইসলামী সমাজের ক্রমবিকাশ
    10. ইসলামী সভ্যতা সমগ্র মানবতার সম্পদ
  10. অষ্টম অধ্যায়
    1. ইসলাম ও কৃষ্টি
    2. শরীয়াতে ইলাহীর সীমারেখা
    3. ইউরোপের পরীক্ষামূলক বিজ্ঞান
  11. নবম অধ্যায়
    1. মুসলমানদের জাতীয়তা
    2. ঈমানই ঐক্যের ভিত্তি
    3. মধ্যবর্তী উম্মাত
    4. দারুল ইসলাম ও দারুল হরব
    5. দেশ ও জাতিবিদ্বেষ তাওহীদের পরিপন্থী
  12. দশম অধ্যায়
    1. সুদূর প্রসারী পরিবর্তন প্রয়োজন
    2. কিভাবে ইসলামের দাওয়াত পেশ করতে হবে
    3. ইসলামের প্রকৃত লক্ষ্য
    4. সাফল্যের চাবিকাঠি
    5. সাফাই পেশ করার প্রয়োজন নেই
    6. আহবানকারীদের সঠিক ভূমিকা
  13. একাদশ অধ্যায়
    1. ঈমানের শ্রেষ্ঠত্ব
  14. দ্বাদশ অধ্যায়
    1. রক্তে রঞ্জিত পথ

গ্রন্থকার পরিচিতি

সাইয়েদ কুতুবের জন্ম, শিক্ষা ও কর্মজীবন

সাইয়েদ কুতুবের নাম সাইয়েদ। কুতুব তাঁর বংশীয় উপাধি। তাঁর পূর্বপুরুষগণ আরব উপদ্বীপ থেকে এসে মিসরের উত্তরাঞ্চলে বসবাস শুরু করেন। তাঁর পিতার নাম হাজী ইবরাহীম কুতুব। ইবরাহীম কুতুবের পাঁচ সন্তান ছিল। সাইয়েদকুতুব, মুহাম্মাদ কুতুব, হামিদ কুতুব, আমিনা কুতুব।পঞ্চম কন্যা সন্তানটির নাম জানা যায়নি। সাইয়েদ কুতুব ভাই বোনদের মধ্যে বড়, তাঁরা সকল ভাই বোনই উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন; ইসলমামী জীবনাদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্যে জিহাদ করেন এবং কঠোর অগ্নি পরীক্ষায় দৃঢ়তার পরিচয় দেন।

সাইয়েদ কুতুব উনিশ শ’ ছয় সালে মিসরের উসইউত জিলার মুশা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আম্মা ফাতিমা গোসাইন উসমান অত্যন্ত দ্বীনদার ও আল্লাহভীরু মহিলা ছিলেন। সাইয়েদের পিতা হাজী ইবরাহীম চাষাবাদ করতেন কিন্তু তিনিও ছিলেন অত্যন্ত ধর্মপরায়ন ও চরিত্রবান।

গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাইয়েদ কুতুবের শিক্ষা শুরু হয়। মায়ের ইচ্ছানুসারে তিনি শৈশবেই কুরআন হেফয করেন। পরবর্তীকালে তাঁর পিতা কায়রো শহরের উপকণ্ঠে হালওয়ান নামক স্থানে বসবাস শুরু করেন। সাইয়েদ তাজহিযিয়াতু দারুল উলুম মাদ্রাসায় শিক্ষা সমাপ্ত কের তিনি কায়রোর বিখ্যাত মাদ্রাসা দারুল উলুমে ভর্তি হন। উনিশ শ’ তেত্রিশ সালে ঐ মাদ্রাসা থেকে বি.এ. ডিগ্রি লাভ করেন এবং সেখানেই অধ্যাপক নিযুক্ত হন।

কিছুকাল অধ্যাপনা করার পর তিনি শিক্ষা মন্ত্রোণালয়ের অধীনে স্কুল ইন্সপেক্টর নিযুক্ত হন। মিসরে ঐপদটিকে অত্যন্ত সম্মানজনক বিবেচনা করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেই তাঁকে আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতি পড়া-শুনার জন্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়। তিনি দু’বছরের র্কোস শেষ করে বিদেশ থেকে দেশে ফিরে আসেন। আমেরিকা থাকা কালেই তিনি বস্তুবাদী সমাজের দুরবস্থা লক্ষ্য করেন। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে যে, একমাত্র ইসলামই সত্যিকার অর্থে মানব সমাজকে কল্যাণের পথে নিয়ে যেতে পারে।

আমেরিকা থেকে দেশে ফেরার পরই তিনি ইখয়ানুল মুসলেমুন দলের আদর্শ, উদ্দেশ্য ও কর্মসূচী যাচাই করতে শুরু করেন। উনিশ শ’পয়তাল্লিশ সালে তিনি ঐ দলের সদস্য হয়ে যান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বৃটিশ সরকার যুদ্ধ শেষে মিসরেক স্বাধীনতা দানের ওয়াদা করেন। যুদ্ধ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই ইখওয়ান দল বৃটিশের মিসর ত্যাগের দাবীতে আন্দোলন শুরু কের। এর ফলে তাদের জনপ্রিয়তা অত্যন্ত বেড়ে যায়। মাত্র দু’বছর সময়ের মধ্যে এ দলের সক্রিয় কর্মী সংখ্যা পঁচিশ লক্ষে পৌছে। সাধারণ সদস্য, সমর্থক ও সহানুভুতিলীলদের সংখ্যা ছিল কর্মী সংখ্যার কয়েকগুণ বেশী। বৃটিশ ও স্বৈরাচারী মিসর সরকার ইখওয়ানের জনপ্রিয়তা দেখে ভীত হয়ে পড়েন এবং এ দলের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে ষড়ডন্ত্রে লিপ্ত হন।

ইংরেজী উনিশ শ’ বায়ান্ন সালের জুলাই মাসে মিসরে সামরিক বিপ্লব অনুষ্ঠিত হয়। ঐ বছরই ইখওয়ান দল পুনরায় বহাল হয়ে যায়। ডঃ হাসানুল হোদাইবি দলের মোরশেদ –এ- আম নির্বাচিত হন। দলের আদর্শ প্রচার ও আন্দোলনের সম্প্রসারণ বিভাগ তাঁর পরিচালনাধীনে অগ্রসর হতে থাকে। পরিপূর্ণ রূপে নিজেকে আন্দোলনের কাজে উৎসর্গ করেন তিনি।

উনিশ শ’ চুয়ান্ন সালে ইখওয়ান পরিচালিত সাময়িকী-“ইখওয়ানুল মুসলিমুন”- এর সম্পাদক নির্বাচিত হন। ছ’মাস পরই কর্নেল নাসেরের সরকার পত্রিকাটি বন্ধ করে দেন। কারণ, ঐ বছর মিসর সরকার বৃটিশের সাথে নতুন করে যে চুক্তিপত্র সম্পাদন করেন, পত্রিকাটি তার সমালোচনা করে। পত্রিকা বন্ধ করে দেয়ার পর নাসের সরকার এ দলের উপর নির্যাতন শুরু করেন। একটি বানোয়াট হত্যা ষড়যন্ত্র মামলার অভিযোগে ইখওয়ানুল মুসলিমুন দলকে বেআইন ঘোষণা করে দলের নেতাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার ও নির্যাতন

গ্রেফতারকৃত ইখওয়ান নেতাদের মধ্যে সাইয়েদ কুতুবও ছিলেন। তাঁকে মিসরের বিভিন্ন জেলে রাখা হয়। গ্রেফতারের সময় তিনি ভীষণভাবে জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। সামরিক অফিসার তাঁকে সে অবস্থায় গ্রেফতার করেন। তাঁর হাতে পায়ে শিকল পরানো হয়। শুধু তাই নয়, সাইয়েদ কুতুবকে প্রবল জ্বরে আক্রান্ত অবস্থায় জেল পর্যন্ত হেঁটে যেতে বাধ্য করা হয়। পথে কয়েকবার বেহুঁস হয়ে তিনি মাটিতে পড়ে যান। হুঁশ ফিরে এলে তিনি বলতেনঃ ———— (আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ)।

জেলে ঢুকার সাথে সাথেই জেল কর্মচারীগণ তাঁকে মারপিট করতে শুরু করে এবং দু’ঘন্টা পর্যন্ত এ নির্যাতন চলতে থাকে। তারপর একটি প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কুকুরকে তাঁর উপর লেলিয়ে দেয়া হয়। কুকুর তাঁর পা কামড়ে ধরে জেলের আঙ্গিনায় টেনে নিয়ে বেড়ায়। এ প্রাথমিক অভ্যর্থনা জানানোর পর একটানা সাত ঘন্টা ব্যাপী তাঁকে জেরা করা হয়। তাঁর স্বাস্থ্য এসব নির্যাতন সহ্য কর আর যোগ্য ছিল না। কিন্তু তিনি তাঁর সুদৃঢ় ঈমানের বলে পাষাণ থেকে উচ্চারিত হতে থাকেঃ—————– (আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ)

জেলের অন্ধকার কুঠরী রাতে তালাবদ্ধ করা হতো। আর দিনের বেলা তাঁকে রীতিমত প্যারেড করনো হতো। তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। বক্ষপীড়া, হৃদপিণ্ডেরদুর্বলতা ও সর্বাঙ্গে জোড়ায় জোড়ায় ব্যাথা ইত্যাদি বিভিন্ন রোগে তিনি কাতর হয়ে পড়েন। তবু তাঁর গায়ে আগুনের ছেঁকা দেয়া হতে থাকে। পুলিশের কুকুর তাঁর শরীরে নখ এ দাঁতের আঁচড় কাটে। তাঁর মাথায় খুব গরম পানি এবং পরক্ষণেই বেশী ঠাণ্ডা পানি ঢালা হতে থাকে। লাথি, কিল, ঘুষি, অশ্লীন ভাষায় গালাগালি ইত্যাদি তো ছিল দৈনন্দিন ব্যাপার।

উনিশ শ’ পঞ্চান্ন সালের তেরই জুলাই, গণআদালতের বিচারে তাঁকে পনর বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়। অসুস্থতার দরূণ তিনি আদালতে হাজির হতে পারেননি। তাঁর এক বছর কারাভোগের পর নাসের সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেয়া হয় যে, তিনি সংবাদ পত্রের মাধ্যমে ক্ষমার আবেদন করলে তাঁকে মুক্তি দেয়া যেতে পারে। মর্দে মুমিন এ প্রস্তাবের যে জবাব দিয়েছিলেন, তা ইতিহাসের পাতায় অম্নান হয়ে থাকবে। তিনি বলেনঃ

“আমি এ প্রস্তাব শুনে অত্যন্ত আশ্চর্যান্বিত হচ্ছি যে, মযলুমকে যালিমের নিকট ক্ষমার আবেদন জানাতে বলা হচ্ছে। আল্লাহর কসম! যদি ক্ষমা প্রার্থনার কয়েকটি শব্দ আমাকে ফাঁসি থেকেও রেহাই দিতে পারে, তবু আমি এরূপ শব্দ উচ্চারণ করতে রাযী নই। আমি আল্লাহ্‌র দরবারে এমন অবস্থায় হাযির হতে চাই যে, আমি তাঁর প্রতি এবং তিনি আমার প্রতি সন্তুষ্ট।”

পরবর্তীকালে তাঁকে যতবার ক্ষমা প্রার্থনার পরামর্শ দেয়া হয়েছে ততবারই তিনি একই কথা বলেছেন: “যদি আমাকে যথার্থই অপরাধের জন্য কারারুদ্ধ করা হয়ে থাকে, তাহলে আমি এতে সন্তুষ্ট আছি। আর যদি বাতিল শক্তি আমাকে অন্যায়ভাবে বন্দী করে থাকে, তাহলে আমি কিছুতেই বাতিলের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবো না।”

উনিশ শ’ চৌষট্টি সালের মাঝামাঝি ইরাকের প্রেসিডেন্ট আবদুস সালাম আরিফ মিসর যান। তিনি সাইয়েদ কুতুবের মুক্তির সুপারিশ করায় কর্নেল নাসের তাঁকে মুক্তি দিয়ে তাঁরই বাসভবনে অন্তরীণাবদ্ধ করেন।

আবার গ্রেফতার ও দণ্ড

এক বছর যেতে না যেতেই (?)তাঁকে আবার বলপূর্বক ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। অথচ তিনি তখনও পুলিশের কড়া পাহারাধীন ছিলেন। শুধু তিনি নন, তাঁর ভাই মুহাম্মাদ কুতুব, বোন হামিদা কুতুব ও আমিনা কুতুবসহ বিশ হাযারেরও বেশী লোককে গ্রেফতার করা হয়েছিলো। এদের মধ্যে প্রায় সাত শ’ ছিলেন মহিলা।

উনিশ শ’পয়ষট্টি সালে কর্নেল নাসের মস্কো সফরে থাকাকালীন এক বিবৃতিতে ঘোষণা করেন যে, ইখওয়ানুল মুসলিমুন তাঁকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছিল। আর এই ঘোষণার সাথে সাথেই সারা মিসরে ইখওয়ান নেতা ও কর্মীদের ব্যাপক ধরপকড় শুরু হয়। উনিশ শ’ চৌষট্টির ছাব্বিশে মার্চে জারীকৃত একটি নতুন আইনের বলে প্রেসিডেন্টকে যে কোন ব্যক্তিকে গ্রেফতার,তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণ প্রভৃতি দণ্ডবিধির অধিকার প্রদান করা হয়। তার জন্যে কোন আদালতে প্রেসিডেন্টের গৃহীত পদক্ষেপের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা যাবে না বলেও ঘোষণা করা হয়। কিছুকাল পর বিশেষ সামরিক আদালতে তাদের বিচার শুরু হয়। প্রথমত ঘোষনা করা হয় যে, টেলিভিশনে ঐ বিচারানুষ্টানের দৃশ্য প্রচার করা হবে। কিন্তু অভিযুক্ত ব্যক্তিগণ অপরাধ স্বীকার করতে অস্বীকার এবং তাদের প্রতি দৈহিক নির্যাতনের বিবরণ প্রকাশ করায় টেলিভিশন বন্ধ করে দেয়া হয়। তারপর রুদ্ধদার কক্ষে বিচার চলতে থাকে। আসামীদের পক্ষে কোন উকিল ছিল না। অন্য দেশ থেকে আইনজীবীগণ আসামী পক্ষ সমর্থনের আবেদন করেন। কিন্তু তা প্রত্যাখান করা হয়। ফরাসী বার এসোসিয়েনের ভূতপূর্ব সভাপতি উইলিয়াম থরপ (Thorp) ও মরোক্কোর দু’জন আইনজীবী আসামী পক্ষ সমর্থনের জন্য রীতিমত আবেদন করেন। কিন্তু তা না মঞ্জুর করা হয়। সুদানের দু’জন আইনজীবী কায়রো পৌছে তথাকার বার এসোসিয়েশনে নাম রেজিষ্ট্রী করে আদালতে হাযির হন। পুলিশ তাঁদের আদালত থেকে ধাক্কা মেরে বের করে দেয় এবং মিসর ত্যাগ করতে বাধ্য করে। সাইয়েদ কুতুব ও অন্যান্য আসামীগণ উনিশ শ’ ছেষট্টি সালের জানুয়ারী ও ফেব্রুয়ারী মাসে বিচার চলাকালে ট্রাইবুনালের সামনে প্রকাশ করেন যে, অপরাধ স্বীকার করার জন্যে তাঁদের উপর অমানুষিক দৈহিক নির্যাতন চালানো হয়। ট্রাইবুনালের সভাপতি আসামীদের কোন কথার প্রতিই কান দেননি।

ইংরেজী উনিশ শ’ ছেষট্টি সালের আগষ্ট মাসে সাইয়েদ কুতুব ও তাঁর দু’জন সাথীকে সামরিক ট্রাইবুনালের পক্ষ থেকে মৃত্যুদন্ডাদেশ শুনানো হয়। সারা দুনিয়ায় প্রতিবাদের ঝড় উঠে। কিন্তু পঁচিশে আগষ্ট, উনিশ শ’ ছেষট্টি সালে ঐ দন্ডদেশ কার্যকর করা হয়।

সাইয়েদ কুতুবের জ্ঞান ও সাহিত্য চর্চা

সাইয়েদ কুতুব মিসরের প্রখ্যাত আলেম ও সাহিত্যকদের অন্যতম। শিশু সাহিত্য দিয়ে তাঁর সাহিত্যক জীবনের সূচনা। ছোটদের জন্যে আকর্ষণীয় ভাষায় নবীদের কাহিনী লিখে তিনি প্রতিভার পরিচয় দেন। শিশুদের মনে ইসলামী ভাবধারা জাগানোর জন্যে এবং তাদের চারিত্রক মান উন্নয়নের উদ্দেশ্যে তিনি গল্প লিখেন। পরবর্তীকালে ‘আশওয়াক’ (কাটা) নামে ইসলামী ভাবধারাপুষ্ট একখানা উপন্যাস রচনা করেন। পরে ঐ ধরণের আরও দু’টো উপন্যাস রচনা করেন। একটি ‘তিফলে মিনাল ক্বারীয়া’ (গ্রামের ছেলে) ও অন্যটি ‘মাদিনাতুল মাসহুর’ (যাদুর শহর)।

তাঁর রচিত গ্রন্থাবলির বিবরণ নিম্নরূপ:

(১) —————– (কুরআনের আঁকা কেয়ামতের দৃশ্য )। কুরআন পাকের ১১৪টি সূরার মধ্য থেকে ৮০ টি সূরার ১৫০ স্থানে কেয়ামতের আলোচনা রয়েছে। সাইয়েদ বিপুল দক্ষতার সাথে সেসব বিবরণ থেকে হাশরের ময়দান, দোযখ ও বেহেশতের চিত্র এঁকেছেন।

 (২) ——————- ২০০ পৃষ্ঠা সন্বলিত গ্রন্থখানায় সাইয়েদ কুতুব কুরআনের ভাষা, ছন্দ, অলংকার ও হৃদয়গ্রাহী বর্ণনাভঙ্গীর আলোচনা করেছেন।

 (৩)———————- (ইসলাম ও সামাজিক সুবিচার )। এ পর্যন্ত বইখানার ৭ম সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় বইখানা অনুদিত হয়েছে। (যথাঃ ইংরেজী, ফারসী, তুর্কী ও উর্দুভাষায় )।

 (৪) ———————- সাইয়েদ কুতুবের এক অনবদ্য অবদান। আট খন্ডে সমাপ্ত এক জ্ঞানের সাগর। ঠিক তাফসীর নয়- বরং কুরআন অধ্যয়নকালে তাঁর মনে যেসব ভাবের উদয় হয়েছে তা-ই তিনি কাগজের বুকে এঁকেছেন এবং প্রতিটি আয়াতের ভিতরে লুকানো দাওয়াত সংশোধনের উপায়, সতর্কীকরণ, আল্লাহর পরিচয় ইত্যাদি বিষয়ে নিপুণতার সাথে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

 (৫)—————(ইসলাম ও পুঁকিবাদের দ্বন্দ)।

 (৬)—————– (বিশ্বশান্তি ও ইসলাম )।

 (৭)——— (ইসলামী রচনা বলী)।

 (৮)——————-(সাহিত্য সমালোচনার মূলনীতি ও পদ্ধতি )।

 (৯)——————— (‘ভবিষ্যত সংস্কৃতি’ নামক পুস্তকের সমালোচনা )।

 (১০) —————– (গ্রন্থাবলী ও ব্যক্তিত্ব )।

 (১১)————– (ইসলামী সমাজের চিত্র)।

 (১২)————(আমি যে আমেরিকা দেখেছি)।

 (১৩)—————- (চার ভাই বোনের চিন্তাধারা)। এতে সাইয়েদ কুতুব, মুহাম্মাদ কুতুব, আমিনা কুতুব ও হামিদা কুতুবের রচনা একত্রে সংকলিত হয়েছে।

 (১৪)——— (কবিতা গুচ্ছ)।

 (১৫)———– (নবীদের কাহিনী )।

 (১৬) ————(কবিতা গুচ্ছ)।

 (১৭)————-(কবিতা গুচ্ছ )।

 (১৮) ————- (জীবনে কবির আসল কাজ)।

 (১৯)————— (সমাজ বিপ্লবের ধারা )।

——— পুস্তক লেখার জন্যেই মিসর সরকার সাইয়েদ কুতুবকে অভিযুক্ত করেন ও ঐ অভিযোগে তাঁর মৃত্যুদণ্ড হয়। মিসরে সামরিক বাহিনীর পত্রিকা————— পয়ষট্টির ১লা অক্টোবরের প্রকাশিত ৪৪৬নং সংখ্যায় তাঁর বিরুদ্ধে অতীত অভিযোগের যে বিবরণ প্রকাশিত হয়, তাতে যা বলা হয়েছে, তার সারমর্ম নিম্নরূপঃ

“লেকখ পাশ্চাত্য সভ্যতা ও সমাজ এবং মার্কসীয় মতবাদ উভয়েরই তীব্র বিরোধিতা করেছেন। তিনি দাবী করেন যে, ঐসব মতবাদের মধ্যে মানব জাতির জন্য কিছুই নেই। তাঁর মতে বর্তমান দুনিয়া জাহেলিয়াতে ডুবে গেছে। আল্লাহর সার্বভৌমত্বের জায়গায় অন্যায়ভাবে মানুষের সার্বভৌমত্ব কায়েম হয়ে গেছে। লেখক কুরআনের দৃষ্টিভংগীকে পুনরুজ্জীবিত করে সে জাহেলিয়াতকে উচ্ছেদ করার উপর জোর দেন এবং এ জন্যে নিজেদের যথাসর্বস্ব কুরবানী করে দেয়ার আহবান জানান।

তিনি আল্লাহ ব্যতীত সকল শাসনকর্তাদের তাগুত আখ্যা দেন। লেখক বলেন – তাগুতের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করা প্রতিটি মুসলমানের জন্যে ঈমানের শর্ত। তিনি ভাষা, গাত্রবর্ণ, বংশ, অঞ্চল ইত্যাদির ভিত্তিতে ঐক্যবোধকে ভ্রান্ত আখ্যা দিয়ে ইসলামী আকীদার ভিত্তিতে ঐক্য গড়া এবং এ মতবাদের বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রাম করার জন্যে মুসলিমদের উস্কানী দিচ্ছেন।

লেখক তাঁর ঐ পুস্তুকের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত সরকারের বিরুদ্ধে জিহাদ করা, সারা মিসরে ধ্বংসাত্মক কাজ শুরু করা ও প্রতিষ্ঠিত সরকারকে উচ্ছেদ করার পরিকল্পনা পেশ করেন।”

Page 1 of 15
12...15Next

© Bangladesh Jamaat-e-Islami

  • আমাদের সম্পর্কে
  • প্রাইভেসি পলিসি
  • যোগাযোগ
কোন ফলাফল নেই
সকল ফলাফল দেখুন
  • নীড়
  • সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
  • বিভাগ ভিত্তিক
    • আল কুরআন
    • আল হাদিস
    • ফিকাহ
    • ঈমান
    • ইসলাম
    • পারিবারিক জীবন ও সামাজিক সম্পর্ক
    • আন্দোলন ও সংগঠন
    • সীরাত ও ইতিহাস
    • সীরাতে সাহাবা
    • মহিলাদের বিশেষ বই
    • রাজনীতি
    • অর্থনীতি
    • বিবিধ
  • রুকন সিলেবাস
    • রুকন সিলেবাস (স্বল্প শিক্ষিত)
    • রুকন সিলেবাস (শিক্ষিত)
  • কর্মী সিলেবাস
  • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (শিক্ষিত)
    • বাৎসরিক পাঠ্যসূচি (স্বল্প শিক্ষিত)
  • উচ্চতর অধ্যয়ন
  • অডিও বই
  • অন্যান্য
    • দারসুল কুরআন
    • দারসুল হাদিস
    • আলোচনা নোট
    • বইনোট
    • প্রবন্ধ
    • কবিতা
    • বুলেটিন
    • স্মারক
    • ম্যাগাজিন
    • এপস
    • রিপোর্ট বই
    • ছাত্রী সিলেবাস

@BJI Dhaka City South