যুগে যুগে ইসলামী আন্দোলন
শুরুর কথা
খৃস্টীয় ৬২২ সনে মহাম্মাদুর রাসূরুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলমাদীনা আলমুনাওয়ারা-কে কেন্দ্র করে গড়ে তুলেছিলেন একটি ইসলামী রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্রের রাষ্ট্র-প্রধা হিসেবে মুহাম্মাদুর রাসলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (খৃস্টীয় ৬২২-৬৩২ সন) দশ বছর রাষ্ট্র পরিচালনা করেন।
তাঁর ওফাতের পর আমীরুল মু’মিনীন বা খলীফঅ হিসেবে আবু বকর আছছিদ্দিক (রা) খৃস্টীয় ৬৩২-৬৩৪ সন) দুই বছর তিন মাস দশ দিন রাষ্ট্রপ্রধান রূপে শাসনকার্য পরিচালনা করেন।
তাঁর ওফাতের পর উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) (খৃস্টীয় ৬৩৪-৬৪৪ সন) দশ বছর ছয় মাস চারদিন রাষ্ট্র পরিচালনা করেন।
তাঁর শাহাদাতের পর উসমান ইবনু আফফান (রা) (খৃস্টীয় ৬৪৪-৬৫৬ সন) রাষ্ট্র পরিচালনা করেন বার দিন কম বার বছর।
তাঁর শাহাদাতের পর আলী ইবনু আবী তালিব (রা) (খৃস্টীয় ৬৫৬-৬৬১ সন) চার বছর নয় মাস রাষ্ট্র পরিচালনা করেন।
তাঁর শাহাদাতের পর আল হাসান ইবনু আলী (রা) (খৃস্টীয় ৬১১ সন) ছয় মাস রাষ্ট্র পরিচালনা করেন।
মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরিচালনাধীন দশ বছর আর খিলাফত ‘আলা মিনহাজিন নাবুওয়াত ত্রিশ বছর- এই চল্লিশটি বছর পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিলো ইসলামী শাসন। গড়ে উঠেছিলো সভ্যতার সোনালী অধ্যায়।
দুঃখের বিষয় উসমান ইবনু আফফানের (রা) শাহাদাতকে কেন্দ্র করে মুসলিম উম্মাহ অন্তর্বিরোধের শিকার হয়। এক সময়ে এসে খিলাফতেরস্থান দখল করে রাজতান্ত্রিক শাসন।
মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও আলখুলাফঅউর রাশিদূনের শাসনকালে আশশূরা ছিলো রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান প্রতিষ্ঠান।
রাজতান্ত্রিক শাসন কায়েম হয়ে যাবার পর আশ-শূরার এই মর্যাদা রইলো না। ক্রমশ দীনী নেতৃত্ব ও রাজনেতিক নেতৃত্ব পৃথক হয়ে যায়।
দ্রুত প্রবাহিত হতে থাকে কালের স্রোত। আলকুরআন ও আসসুন্নাহ থেকে দূরে সরে যেতে থাকেন শাসকেরা। একই পথ ধরে শাসিতরাও। অ-মুসলিমদের জীবন দর্শন ও জীবনাচার প্রভাব ফেলতে শুরু করে মুসলিম উম্মাহর ওপর।
ইসলামের মনগড়া ব্যাখ্যা দানকারীদের বিভিন্ন গোষ্ঠী গড়ে ওঠে। তাঁরা মানুষের সামনে উপস্থাপন করতে থাকেন নানা মত ও পথ। তাঁরা ইসলামকেই কাটছাঁট করে অথবা অন্য কোন চিন্তাধারার সাথে মিশ্রিত করে এমনভাবে পেশ করেছেন যে এতে ইসলামের আসল রূপ অবশিষ্ট থাকেনি। প্রকৃতপক্ষে তাঁদের দ্বারা মানুষের সামনে উপস্থাপিত হয়েছে ইসলামের বিকৃত রূপ।
এরি পাশাপাশি সকল যুগেই এমন কতিপয় বিশিষ্ট ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটেছে যাঁরা ইসলামী জীন দর্শন ও জীবন বিধানের শ্রেষ্ঠত্ব, সৌন্দর্য, পূর্ণত্ব, চির নতুনত্ব ও কল্যাণময়তা সম্পর্কে ছিলেন নিঃসংশয়। তাঁরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে আলকুরআন ও আস্সুন্নাহতে পরিবর্তন আনার কোন সুযোগ নেই, প্রয়োজনও নেই। প্রয়োজন ভ্রান্ত চিন্তাধারার অনুসারীদের চিন্তাধারার পরিবর্তন, তাঁদের চিন্তার বিশুদ্ধি সাধন।
আর চিন্তার বিশুদ্ধি সাধনের জন্য এবং সমাজ ও সভ্যতার সকল ক্ষেত্রে ইসলামের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁরা নিরলস প্রয়াস চালিয়ে গেছেন।
এই সত্যনিষ্ঠ আপোসহীন ব্যক্তিত্বের কয়েকজনের অবদান আমার আলোচ্য বিষয়।
১। আল হুসাইন ইবনু আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) খৃস্টীয় (৬২৬-৬৮০)
‘খিলাফাত ‘আলা মিনহাজিন্ নাবুওয়াত’ থেকে সরে যাওার বিরুদ্ধে সর্ব প্রথম আওয়াজ তোলেন আল হুসাইন ইবনু আলী (রা)।
এই বিচ্যুতিতে হিজাযের লোকেরা দারুণভাবে বিক্ষুব্ধ ছিলেন।
ইরাক থেকেও অনুরূপ মনোভাব প্রকাশ পেতে থাকে। শত শত বিশিষ্ট ব্যক্তি আল হুসাইন ইবনু আলীকে (রা) কুফা যাওয়ার জন্য চিঠির মাধ্যমে দাওয়াত দিতে থাকেন।
তিনি কুফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।
আল হুসাইন ইবনু আলী (রা) ইরাকের ফোরাত নদীর তীরবর্তী কারবালা নামক স্থানে কুফাস্থ গভর্ণর উবাইদুল্লাহ ইবনু যিয়াদের প্রেরিত কয়েক হাজার সৈন্যের মুখোমুখি হন।
তাঁর সংগী ছিলেন পরিবারের সদস্য ছাড়া চুয়াত্তর জন। তাঁর ওপর এবং খোদ আল হুসাইন ইবনু আলী (রা ওপর ঝাঁকে ঝাঁকে তীর বর্ষণ করা হয়।
তীর বিদ্ধ রক্তাক্ত শরীর নিয়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
তাঁর দেহের ওপর ঘোড়া দাবড়ানো হয়। দেহ থেকে তাঁর মাথা কেটে নেওয়া হয়।
এই হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটে খৃস্টীয় ৬৮০ সনে, হিজরী ৬১ সনে।
জীবন দিয়ে আল হুসাইন ইবনু আলী (রা) বিচ্যুতির বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার শিক্ষা দিয়ে গেলেন।
২। উমার ইবনু আবদিল আযীয (রাহিমাহুল্লাহ (খৃস্টীয় ৬৮০-৭২০)
উমার ইবনু আবদিল আযীয (রাহিমাহুল্লাহ) ছিলেন বানু উমাইয়ার অষ্টম খলীফা।
বানু উমাইয়া-র সপ্তম খলীফা সুলাইমান ইবনু আবদিল মালিক অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং পরবর্তী খলীফা মনোনীত করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন। কারণ তাঁর ছেলেরা সকলেই ছিলো ছোট ছোট। অবশেষে তিনি একটি গোপন ওয়াছিয়াতনামা লিখে তাঁর প্রধান উপদেষ্টা রাজা ইবনু হায়ওয়া-র নিকট গচ্ছিত রাখেন। এতে লেখা ছিলো, তাঁর ওফাতের পর উমা ইবনু আবদিল আযীয খলীফঅ হবেন এবং তাঁর ওফাতের পর খলীফা হবেন ইয়াযিদ ইবনু আবদুল মালিক।
খৃস্টীয় ৭১৭ সনে সুলাইমান ইবনু আবদিল মালিক মারা যান। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব এসে পড়ে উমার ইবনু আবদিল আযীযের ওপর।
রাজধানী দামিসকে অভিষেক অনুষ্ঠানের জন্য একটি দিন ধার্য হয়। রাষ্ট্রের সকল অঞ্চলের প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিরা উপস্থিত হন। সমবেত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে উমার ইবনুল আবদিল আযীয় একটি ভাষণ দেন। সেই ভাষণে তিনি বলেন, ‘আমার ওপর রাষ্ট্র পরিচালনার ভার অর্পণ করে আমাকে পরীক্ষায় ফেলা হয়েছে। আমি এটা চাইনি। এই ব্যাপারে আমার মতও নেওয়া হয়নি। আপনাদের ঘাড়ে আমার আনুগত্যের যেই রজ্জু পরিয়ে দেওয়া হয়েছেতা আমি খুলে দিচ্ছি। এখন আপনারা যাকে ইচ্ছা তাকেই আপনাদের আমীর বানাতে পারেন।’
সমাবেশ থেকে জোর আওয়াজ ওঠলো, ‘আমরা আপনাকেই চাই।’
এবার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে উমার ইবনু আবদিল আযীয (রাহিমাহুল্লাহ) একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ পেশ করেন। সেই ভাষণে তিনি বলেন, ‘আসলে রব, নবী ও কিতাবের ব্যাপারে এই উম্মাহর মধ্যে বিরোধ নেই। বিরোধ শুধু দীনার-দিরহামের ব্যাপারে। আল্লাহর কসম, আমি অন্যায়ভাবে কাউকে কিছু দেবোনা, আবার কারো বৈধ অধিকারে বাধাও দেবোনা। ওহে জনমন্ডলী, শুনুন। যেই ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্য করে, তার আনুগত্য করা ওয়াজিব। আর যেই ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্য করেনা, তার জন্য কোন আনুগত্য নেই। যতোক্ষণ আমি আল্লাহর আনুগত্য করি, ততোক্ষণ আপনারা আমার আনুগত্য করবেন। আর আমি আল্লাহর অবাধ্যতা করলে, আমার আনুগত্য করা আপনাদের জন্য ওয়াজিব নয়।’
এবার উমার ইবনু আবদিল আযীয ইছলাহে হুকুমাত শুরু করেন।
তাঁকে পাহারা দেওয়ার জন্য দেহরক্ষী বাহিনী এগিয়ে এলে তিনি তাদেরকে ফেরত পাঠান।
বানু উমাইয়া যেইসব সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করেছিলো, তিনি সেইগুলো প্রকৃত মালিকের কাছে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
বিভিন্ন প্রদেশে নিযুক্ত যালিম গভর্ণরদেরকে বরখাস্ত করেন।
জনগণের ওপর অন্যায়ভাবে যেইসব ট্যাকস চাপানো হয়েছিলো, সেইগুলো রহিত করেন।
নও-মুসলিমদের ওপর অন্যায়ভাবে ধার্যকৃত জিয্ইয়া রহিত করেন।
অ-মুসলিমদের দখলকৃত উপাসনালয় তাদেরকে ফেরত দেন।
নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ আলাদ করে দেন।
সর্বজনীন শিক্ষার জন্য-গণ শিক্ষা কার্যক্রম চালু করেন।
জনগণকে ইসলাম সম্পর্কে ওয়াকিফহাল করে তোলার জন্য দেশের সর্বত্র মুবাল্লিগ নিযুক্ত করেন।
রাষ্ট্রীয়ভাবে মুহাম্মাদূর রাসুলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদীগুলো সংগ্রহ ও একত্রিত করার অভিযান শুরু করার জন্য একদল বিশেষজ্ঞের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করেন।
ইসলামে পারদর্শী ব্যক্তিদেরকে নিয়ে আশ-শুরা গঠন করেন। ইত্যাদি।
সন্দেহ নেই, উমার ইবনু আবদিল আযীয ছিলেন একজন সাহসী পুরুষ, একজন কর্মবীর।
মাত্র আড়াই বছরের মধ্যেই তিনি বিরাট পরিবর্তন নিয়ে আসেন। চারদিকে খিলাফতে ‘আলা মিনহাজিন নাবুওয়াতের আলো ছড়িযে পড়ে।
নিষ্ঠাবান মুসলিমরা উল্লসিত হন। কিন্তু বানু উমাই নাখোশ হয়।
বানু উমাইয়ার কিছু দুষ্টু লোক চক্রান্তে মেতে ওঠে। তাঁরা তাঁর খাদ্যে বিষ মিশিয়ে দে।
খৃস্টীয় ৭২০ সনে উমার ইবনু আবদিল আযীয (রাহিমাহুল্লাহ) দামিসকে শাহাদাত বরণ করেন।
৩। আবু হানিফঅ আন নু’মান ইবনুস সাবিত (রাহিমাহুল্লাহ) (খৃস্টীয় ৬৯৯–৭৬৭)
খৃস্টীয় ৬৯৯ সনে আবু হানিফা বানু উমাইয়া খলীফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের শাসনকালে কুফাতে জন্মগ্রহণ করেন। আবু হানিফঅ যখন যৌবনে পৌঁছেন তখন উমার ইবনুল আবদিল আযীযের স্বর্ণযুগ শেষ হয়ে গেছে।
কিন্তু তাঁর নির্দেশে আল হাদীস সংগ্রহের যেই অভিযান শুরু হয় তা পুরোদমে চলছিলো।
হাদীছ বিশারদদের একদল ছিলেন সংগ্রাহক। অপর দলে ছিলেন বিশ্লেষক। আবু হানীফা ছিলেন দ্বিতীয় দলের একজন।
খৃস্টীয় ৭৫০ সনে বানু উমাইয়া খিলাফতের অবসান ঘটে। শুরু হয় বানুল আব্বাস খিলাফত।
আবু হানিফা বানুল আব্বাসের দ্বিতীয় খলীফা আবু জাফর আবদুল্লাহ আল-মানছুরে শাসনকালের মধ্যভাগ পর্যন্ত জীবিত ছিলেন।
এই সময় খারেজী, মুতাযিলা ও মুর্যিয়া নামে বিভিন্ন চিন্তাধারার নেতা ও কর্মীরা ঈমান, কুফর, খিলাফতে রাশেদা এবং ছাহাবীদের মর্যাদা ইত্যাদি বিষয়ে বিভ্রান্তিকর চিন্তা ছড়াতে থাকে। আবু হানিফা এইসব মতবাদের ভ্রন্তি উন্মোচন করে সঠিক চিন্তাধারা উপস্থাপন করন।
রাস্ট্র দর্শনের অন্যতম মৌলিক বিষয় হচ্ছে সার্বভৌমত্ব। এই বিষয়ে ইসলামের সর্বজন স্বীকৃত মতবাদই ছিলো আবু হানিফার মতবাদ। অর্থাৎ সার্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহর।
আইনের উৎস সম্পর্কেও তিনি সঠিক চিন্তার অধিকারী ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর কিতাবে কোন বিধান পেলে আমি তা দৃঢ়ভাগে গ্রহণ করি। আল্লাহর কিতাবে সেই বিধানের সন্ধান না পেলে আল্লাহর রাসূলের সুন্নাহ গ্রহণ করি। আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাহতে কোন বিধান না পেলে আছহাবে রাসূলের ইজমা অনুসরণ করি। আর কোন বিষয়ে তাঁদের মাছে মত-পার্থক্য থাকলে কোন ছাহাবীর মত গ্রহণ করি ও ভিন্ন মত পোষণকারী ছাহাবীর মত গ্রহণ করিনা। তাদের বাইরে অন্য কারো মত গ্রহণ করি না। বাকি রইলো অন্যান্যদের মত। ইজতিহাদের অধিকার তাঁদের যেমন আছে, তেমনি অধিকার আমারও আছে।’
খিলাফতে রাশেদার পর আশ্ শূরার অবিদ্যমানতার ফলে আইন ব্যবস্থায় শূন্যতার সৃষ্টি হয়।
রাষ্ট্রের বিস্তৃতি ঘটছিলো। নিজেদের সংস্কৃতি ও আচার-অনুষ্ঠান নিয়েই বহু জনগোষ্ঠী মুসলিম রাষ্ট্রের অন্তর্ভূক্ত হচ্ছিলো।
কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক লেনদেন, শুল্ক, যুদ্ধ, সন্ধি ইত্যাদি বিষয়ক নতুন নতুন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছিলো। অথচ কোন স্বীকৃত সংস্থা ছিলো না যেখানে বসে মুসলিম বিশেষজ্ঞগণ সেইসব সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে পারতেন।
এই শূন্যতা পূরণের জন্য আবু-হানিফা একটি সংস্থা গড়ে তোলেন যেটিকে একটি বে-সরকারী আইন পরিষদ বলা যায়।
আবু হানিফার কয়েক হাজার ছাত্রের মধ্যে বিশিষ্টতা লাভ করেছিলেন ৩৬ জন। তাঁদের মাজলিস বসতো প্রতিদিন। একটি সমস্যা নিয়ে কয়েক দিন কিংবা কয়েক মাস ধরে আলোচনা হতো। আলোচান্তে একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হতো। এই মজলিস হাজার হাজার সমস্যার সমাধান উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে। আবু হানিফার শিক্ষা মাজলিস থেকে আহরিত জ্ঞান নিয়ে হাজার হাজার ছাত্র রাষ্ট্রের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েন।
বানু উমাইয়ার সর্বশেষ খলীফা মারওয়ান ইবনু মুহাম্মাদ কর্তৃক নিযুক্ত ইরাকের গভর্ণর ছিলেন ইয়াচিদ ইবনু উমার ইবনু হুবাইরা। তিনি ইমাম আবু হানিফঅকে বিচারপতি পদ গ্রহণ করার জন্য প্রস্তাব দেন। ইমাম সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এতে ইয়াযিদ ইবনু উমার ক্ষেপে যান। তাঁর নির্দেশে প্রদিতিন দশটি করে ১১ দিন পর্যন্ত তাঁর পিঠে ১১০টি চাবুক মারা হয়। এতো বড়ো শাস্তির পরও ইমাম তাঁর সিদ্ধান্তে অটল থাকেন।
বানুল আব্বাস খলীফা আল মানছুর আবু হানিফাকে বিচারপতি বানাতে চান। তিনি রাজি হননি। এইজন্য তাকে বন্দি করা হয়।
খৃস্টীয় ৭৬৭ সনে তিনি বন্দি অবস্থায় বাগদাদে মৃত্যুবরণ করেন।