৪। আবু আবদিল্লাহ মালিক ইবনু আনাস (রাহিমাহুল্লাহ) (খৃস্টীয় ৭১৪–৭৯৮)
খৃস্টীয় ৭১৪ সনে বানু উমাইয়া খলীফা আলওয়ালীদ ইবনু আবদিল মালিকের শাসনকালে ইমাম মালিক ইবনু আনাস আল মাদীনায় জন্ম গ্রহণ করেন। বানুল আব্বাস খলীফা হারুনুর রশীদের শাসনকালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
উমার ইবনু আবদিল আযীযের মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ছয় বছর। যৌবনে পৌঁছে তিনি আল হাদীস সংগ্রহের অভিযান প্রত্যক্ষ করেন।
আল হাদীস সংগ্র এবং আল হাদীস বিশ্লেষক-এই দুই ধারার সাথেই তাঁর সংশ্লিষ্টতা ছিলো। তবে দ্বিতীয় ধারাটির সাথে তাঁর সংশ্লিষ্টতা ছিলো বেশি। তাঁর প্রণীত হাদীস সংকরনের নাম ‘আলমুয়াত্তা’।
আল হাসান ইবনু আলী (রা) বংশীয় মুহাম্মাদ ইবনু আবদিল্লাহ, যাঁকে ‘আন্ নাফসুয্ যাকিয়া’ বলা হতো, খিলাফত ‘আলা মিনহাজিন নাবুওয়াত’ প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করেন। তাঁর প্রতি মালিক ইবনে আনাসের সমর্থন রয়েছে অভিযোগ এনে তাঁকে গ্রেফতার করা হয় এবং আল মাদীনার গভর্ণরে নির্দেশে তাঁর পিঠে চাবুক মারা হয়।
ইমাম মালিক সুস্পষ্টভাবে এই অভিমত ব্যক্ত করতেন যে জোর করে ক্ষমতা দখল করা বৈধ নয়। তাঁর এই স্পষ্ট উক্তিতে বানুল আব্বাস খলীফা আল মানছুর তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট হন। তাঁকে বন্দি করে এনে চাবুক মারা হয়। তাঁর হাত পেছনে এমনভাবে শক্তভাবে বাঁধা হয়েছিলো যে কনুইয়ের জোড়া শিথিল হয়ে যায়। এই জন্য বাকি জীবন তিনি দারুন কষ্টভোগ করেন।
খৃস্টীয় ৭৯৮ সনে তিনি খলীফা হারুনুর রশীদের শাসনকালে আলমাদীনায় মৃত্যুবরণ করেন।
৫। আবু আবদিল্লাহ আহমাদ ইবনু হাম্বল (রাহিমাহুল্লাহ) (খৃস্টীয় ৭৮০–৮৮৫)
খৃস্টীয় ৭৮০ সনে বানুল আব্বাস খালীফা মুহাম্মদ আল মাহদীর শাসনকালে আমহাদ ইবনু হাম্বল বাগদাদে জন্ম গ্রহণ করেন।
খলীফা আল মামুনের শাসনকালে গ্রীক দর্শন ও ভারতীয় দর্শন প্রবল বেগে মুসলিম জাহানে প্রবেশ করে। আল মামুন গ্রীসের রাজধানী এথেন্স থেকে গ্রীক ভাষায় রচিত দর্শনের গ্রন্থাবলী সংগ্রহ করে এনে কোস্টা নাক এক ব্যক্তিকে সেইগুলো আরবীতে অনুবাদের দায়িত্ব দেন। অনুরূপভাবে সংস্কৃত ভাষায় লিখিত ভারতীয় দর্শনের গ্রন্থাবলী সংগ্রহ করে এনে দুবান নামক এক ব্রাহ্মণকে সেইগুলো আরবী ভাষায় অনুবাদের দায়িত্ব দেন।
বানু উমাইয়া খিলাফতকালে প্রখ্যাত তাবে’য়ী আল হাসান আল বাছরীর (রাহিমাহুল্লাহ) শিক্ষা মাজলিসে বসতো বাছরাতে। এই মাজলিসের অন্যতম ছাত্র ছিলো ওয়াসিল ইবনু ‘আতা। আর ভ্রান্ত চিন্তার পরিচয় পেয়ে আল হাসান আল বাছরী তাঁর শিক্ষা মজলিস থেকে বের করে দেন। এই ওয়াসিল ইবনু ‘আতা’ই হচ্ছে মুতাযিলাবাদের প্রবর্তক। বানুল আব্বাস খলীফা আল মামুনের পৃষ্ঠপোষকতায় মুতাযিলাবাদ শক্তিশালী হয়ে ওঠে। মুতাযিলারা বিভিন্ন সরকারী পদে অধিষ্টিত হয়। মুতাযিলা তাত্বিকগণ মসজিদে ও শিক্ষালয়ে গিয়ে বক্তৃতার মাধ্যমে তাদের ভ্রান্ত মত প্রচার করতে থাকে।
মুতযিলারা বলতো, আল কুরআন একটি সৃষ্ট বস্তু। মানুষের কার্যাবলী সম্বন্ধে কোন চিরস্থায়ী বিধি নেই। আসমানী অনুশাসন গুলোও পরিবর্তনের অধীন। তারা আখিরাতে মানুষের শারীরিক পুনরুত্থানে বিশ্বাস করতো না। তারা জান্নাতে আল্লাহকে মানবীয় চোখে দেখা যাবে বলে বিশ্বাস করতো না। তারা ইসলামী আইনের উৎ]স হিসেবে আল হাদীস ও আল ইজমাকে প্রায় বাতিল বলে গণ্য করতো। ইত্যাদি।
এই চিন্তার বিভ্রান্তিকে রুখে দেওয়ার জন্য ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল মাথা উঁচু করে দাঁড়ান। তিনি একদিকে গ্রীক দর্শন ও ভারতীয় দর্শন, অন্যদিকে মুতাযিলাবাদের সমালোচনা কর লোকদেরকে আল কুরআন ও আস্ সুন্নাহর স্বচ্ছ ধারার অনুসারী হওয়ার আহ্বান জানান।
আহমাদ ইবনু হাম্বল বলেন, আল্লাহর সঠিক পরিচয় একমাত্র আল কুরআনেই রয়েছে। আল্লাহর ওপর ঈমান আনার অর্থ হচ্ছে আল কুরআনে আল্লাহ নিজের যেই রূপ পরিচয় তুলে ধরেছেন সেইভাবে তাঁকে মানা। আল্লাহর গুণাবলী এবং সার্বভৌমত্ব সঠিক বলে মেনে নিলেই চ লবৈ না, আল্লাহর সত্তা, আল্লাহর আরশ, আখিলাতে মুমিনদেরকে তাঁর দর্শন দান ইত্যাদিও বিশ্বাস করতে হবে। আরো বিশ্বাস করতে হবে যে বিশ্ব জাহানের কোন কিছুরই আল্লাহর সাথে কোন সাদৃশ্য নেই।
আহমাদ ইবনু হাম্বল দৃঢ়ভাবে এই অভিমত ব্যক্ত করতেন যে, আল কুরআন সৃষ্ট বস্তু নয়, এটি আল্লাহর চিরন্তন বাণী।
তিনি আরো বলতেন, আল কুরআনের শব্দাবলীর প্রত্যক্ষ অর্থ বাদ দিয়ে কোন পরোক্ষ অর্থ গ্রহণ করা যাবে না। আল হাদীছকেও সেইভাবেই গ্রহণ করতে হবে। এই দুইটির পর আছহাবে রাসূলের অভিমতকে গ্রহণ করতে হবে। কারণ আছহাবে রাসূল পরবর্তী কালের লোকদের তুলনায় আল কুরআন ও আল হাদীছে অনেক বেশি পারদর্শী ছিলেন এবং তাঁরা পূর্ণ নিষ্ঠার সাথে আল কুরআন ও আল হাদীছের নির্দেশগুলো অনুসরণ করতেন।
প্রশাসনে জেঁকে বসা মুতাযিলা চক্রান্তে মেটে ওঠে। ওই সময় খলীফা আল মামুন তারসুসে অবস্থান করছিলেন। ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বলকে গ্রেফতার করে শিকল পরিয়ে তাঁর সামনে হাজির করার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো। পথিমধ্যে খবর পাওয়া যায় যে আল মামুন মারা গেছেন। তখন ইমাম ইবনু হাম্বলকৈ ছেড়ে দেওয়া হয়। পরবর্তী খলীফা আল মুতাসিমবিল্লাহ মুতাযিলাবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করতে থাকেন। ইমাম আহমদ ইবনু হাম্বলকে আবার গ্রেফতার করে জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
একদিন খলীফা আল মুতাসিমবিল্লাহর নির্দেশে ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বলকে দরবারে আনা হয়। উদ্দেশ্য ছিলঃ তাঁর কাছ থেকে মুতাযিলাবাদের পক্ষে সমর্থন আদায়। তিনি মুতাযিলাবাদের বিরুদ্ধে তাঁর বক্তব্য পেশ করেন। খলীফার নির্দেশে তাঁর পিঠে চাবুক মারা শুরু হয়। অতপর তাঁকে জেল খানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এবার জেলে থাকতে হয় দুই বছর। দুই বছর পর মুক্তি দিয়ে তাঁকে স্বীয় গৃহে নজরবন্দি করে রাখা হয়।
পরবর্তী খলীফা আলওয়াসিক বিল্লাহর শাসনকালেও তাঁকে দৈহিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। কিন্তু বারবার নির্যাতিত হয়েও তিনি নিরেট যুক্তিবাদীদের অযৌক্তিক বক্তব্যের কাছে আল কুরআন ও আল হাদীছের শিক্ষাকে বিসর্জন দিতে প্রস্তুত হননি।
খৃস্টীয় ৮৪৮ সনে খলীফা হন আল মুতাওয়াক্কিল ‘আলাল্লাহ। সৌভাগ্যের বিষয়, তিনি মুতাযিলাবাদের ভ্রান্তি বুঝতে সক্ষম হন এবং সালফে ছালেহীনের চিন্তাধারাকে পৃষ্ঠপোষকতা করতে শুরু করেন। তাঁর শাসন কালে ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল স্বস্তি লাভ করেন।
বানু উমাইয়া খলীফা ইবনু আবদিল আযীযের নির্দেশে আল হাদীছ সংগ্রহের যেই প্রভাহ শুরু হয়েছিলো, তিনি সেই প্রবাহে নিজেকে সংশ্লিষ্ট করেন। তিনি ঊনত্রিশ হাজার হাদীছ সম্বলিত একটি সংকলন তৈরি করেন যার নাম মুসনাদে আহমাদ।
খৃস্টীয় ৮৮৫ সনে আলমুতামিদ ‘আল্লাহর শাসনকালে ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল বাগদাদে মৃত্যুবরণ করেন।
৬। তাকীউদ্দীন আবুল আব্বাস আহমাদ ইবনু আবদিল হালিম ইবনু তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) (খৃস্টীয় ১২৬৩–১৩২৮)
খৃস্টীয় ১২১৯ সনে তেমুজিন বা চেংগিস খান মংগোলিয়ার সকল অঞ্চল ও চীন দখল করে মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন জনপদে হামলা চালাতে থাকেন।
মধ্য এশিয়া ও ইরানকে বিরাণভূমিতে পরিণত করে চেংগিস খান দেশে ফিরে গিয়ে মারা যান।
ইরানে নতুন হামলা চালান তাঁর পুত্র মংগু খান।
খৃস্টীয় ১২৫৮ সনে চেংগিস খানের অপর পুত্র হালাকু খান বানুল আব্বাস খিলাফতের রাজধানী বাগদাদ দখল করে ২০ লাখ অধিবাসীর মধ্যে ১৬ লাখকে হত্যা করেন।
তছনছ করে ফেলা হয় সব কিছু।
খলীফা আল মুসতাসিম বিল্লাহ, তাঁর পুত্র ও বিশিষ্ট ব্যক্তিগণকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
বাগদাদ নগরীর পতনের পাঁচ বছর পর খৃস্টীয় ১২৬৩ সনে সিরিয়ার হাররান শহরে ইমাম ইবনু তাইমিয়া জন্ম গ্রহণ করেন।
খৃস্টীয় ১৩০২ সনে তাতারদের নেতা কাজান সিরিয়া ও মিসর দখল করার অভিপ্রায় নিয়ে দামিসকে আক্রমণ করার জন্য এগিয়ে আসেন। ইমাম ইবনু তাইমিয়া সুলতান আল মালিকুন্ নাছির মুহাম্মাদ ইবনু কালাউন-কে আলজিহাদের প্রেরণায় উজ্জীবিত করতে সক্ষম হন। তাতার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়। ইমাম ইবনু তাইমিয়া তাঁর ছাত্রদেরকে নিয়ে জিহাদে অংশ গ্রহণ করেন।
প্রচণ্ড প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়ে তাতার বাহিনী পেছনে সরে যায়। সিরিয়া ও মিসরের রক্ষা পায়। এই স্বাধীনতা রক্ষার পেছনে ইমাম ইবনু তাইমিয়ার অবদান ছিলো অনেক বড়ো।
খস্টীয় ১৩০৬ সনে ইমাম ইবনু তাইমিয়া মিসরের রাজধানী কায়রো আসেন। আল্লাহর প্রতি মানবীয় গুণ আরোপের অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর কারাদণ্ড ঘোষিত হয়। মাটির নিচে একটি কুঠরিতে তাঁকে বন্দি করে রাখা হয়।
দেড় বছর তিনি জেলে থাকেন। জেল থেকে মুক্তি লাভ করে তিনি দামিসকের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। এক মনযিল পথ অতিক্রম করার পর সরকারি লোকজন এসেতাঁকে আবার গ্রেফতার করে। এবারো তাঁকে জেলে থাকতে হয় দেড় বছর।
অতপর তিনি দামিসকে আসেন।
তাঁর শর’য়ী দৃষ্টিভংগি বিদ’আতপন্থী এবং বিদ’আত পন্থীদের প্রভাবে প্রভাবিত শাসকদের পছন্দনীয় ছিলো না বিধায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।
পাঁচ মাস আঠার দিন তিনি দামিসকের দুর্গে বন্দি জীবন যাপন করেন। অতপর তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়।
এবার কয়েকটি বছর তিনি নির্বিঘ্নে দা’য়ী ইলাল্লাহর ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হন।
এরপর তাঁকে আবার গ্রেফতার করে দামিসকের দুর্গে রাখা হয়। জেল খানায় বসে ইবনু তাইমিয়া লেখালেখি করতে থাকেন।
তিনি চল্লিশ খণ্ডে একটি তাফসীর লিখেছিলেন। নাম ছিলো ‘আল বাহরুল মুহিত’। দুঃখের বিষয়, এই অমূল্য তাফসীরের পান্ডুলিপিটি হারিয়ে যায়। তিনি প্রায় পাঁচশত বই লিখেছেন।
ইবনু তাইমিয়ার জন্মের দশ বছর আগে নাসিরুদ্দীন তূসীর মৃত্যু হয়। কিন্তু নারিসরুদ্দীন তূসী ও তার অনুসারীদের গ্রীক দর্শন চর্চা মুসলিম জাহানে চিন্তার বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেয়। ইবনু আরাবী নামের এক ব্যক্তি ‘ওয়াহদাতুল উযুদ’ বা সর্বেশ্বরবাদ তত্ব প্রচার করে বহু মুসলিমকে বিভ্রান্ত করে। নূছাইরি শি’য়াদেরও তখন ভারী উপদ্রব।
ইমাম ইবনু তাইমিয়া তাদের চিন্তার বিভ্রান্তির উন্মোচন করে বই লিখেন, বক্তৃতা-ভাষণ দিতে থাকেন। তাঁর ছাত্রগণ জনগণের নিকট ইসলামের সঠিক পরিচয় তুলে ধরতে থাকেন।
ইবনু তাইমিয়া আলকুরআন ও আলহাদীসের আক্ষরিক অর্থকে প্রাধান্য দিতেন এবং টেনেটুনে অর্থ বের করা ঘৃণা করতেন।
ইবনু তাইমিয়া বলতেন, আল্লাহর হাত, পা ইত্যাদি আছে। তিনি আরশের ওপর সমাসীন। তবে অবশ্যই সেইগুলো তেনম যেমন তাঁর জন্য সাজে। যাঁরা আল্লাহকে মানুষের মতো শরীরী মনে করেন বা সৃষ্ট কোন কিছুকে তাঁর অনুরূপ মনে করেন তাঁরা আল্লাহ সম্পর্কে সত্য বলেন না।
ইবনু তাইমিয়া বলেন, আল্লাত তা’আলা সৃষ্টি জগত থেকে একেবারেই স্বতন্ত্র অস্তিত্বের অধিকারী। সৃষ্টি জগতে তাঁর সত্তার যেমন কোন অংশ নেই, তেমনি তাঁর সত্তার মাঝেও সৃষ্টি জগতের কোন অংশ নেই।
আল্লাহর রাসূলের প্রতি ঈমান আনার তাৎপর্য বুঝাতে গিয়ে তিনি বলেন, রাসূলের প্রতি মানুষকে অবশ্যই এমন ঈমান আনতে হবে যাতে কোন শর্ত যোগ হবে না। আল্লাহর রাসূলের প্রতিটি কথাই বিশ্বাস করতে হবে এবং প্রতিটি নির্দেশ পালন করতে হবে।
আল্লাহর রাসূলের বক্তব্য-বিরোধী প্রতিটি কথাকে মিথ্যা ও বাতিল গণ্য করতে হবে। যেই ব্যক্তি নিজের আকল-বুদ্ধির সম্মতি সাপেক্ষে রাসূলের কথা বিশ্বাস করে এবং আকল ও যুক্তির অনুমোদন না পেলে রাসূলের কথা প্রত্যাখ্যান করে অর্থাৎ বুদ্ধি ও যুক্তিকেই রাসূলের বক্তব্যের মুকাবিলায় প্রাধান্য দেয়, আবার রাসূলের প্রতি ঈমান পোষণের দাবিও করে, সেটা তার চরম স্ব-বিরোধিতা, বুদ্ধিভ্রস্টতা ও ধর্মহীনতা। তদ্রূপ যেই ব্যক্তি বুদ্ধি ও যুক্তির মাধ্যমে আশ্বস্ত না হয়ে রাসূলের কথা বিশ্বাস করবে না বলে থাকে, তাঁর কুফরের ব্যাপারে কোন দ্ব্যর্থতা নেই।
ইবনু তাইমিযা খারিজী, রাফিয়ী, মুতাযিলা, জাহামি, মুরযিয়া প্রভৃতি সম্প্রদায়গুলোর ভ্রান্তি উন্মোচন করেন। তিনি উগ্রপন্থী শি’য়াদের কঠোর সমালোচক ছিলেন। তিনি বিদ’আতের বিরুদ্ধে আপোসহীন ছিলেন। তিনি নাচ-গানের বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য রাখেন। তিনি আরো বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও আছহাবে রাসূল কোন গানের আসর বসাতেন না। তবে বিয়ের মতো অনুষ্ঠানে দফ বাজিয়ে মেয়েদের কিছু গাওয়াকে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুমোদন দিয়েছেন।
ইমাম ইবনু তাইমিয়ার সকল প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দু ছিলো মুসলিমদেরকে আল কুরআন ও আস্ সুন্নাহর দিকে আহ্বান জানানো। তিনি বলতৈন, ‘আল কুরআন ও আস্ সুন্নাহর দিকে ফিরে আস। এর বাইরে রয়েছে ফিসক, বিদ’আত, শিরক ও কুফর।’
ইমাম ইবনু তাইমিয়া বলেন, ‘রাষ্ট্রের নেতৃত্ব জনগণের রায়ের ভিত্তিতে স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে। অর্থাৎ জনগণ যখন কারো হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করে তখন তিনি রাষ্ট্র প্রধান হতে পারেন, পূর্ববর্তী কোন পদাধিকার বলে নয়।’
তিনি বলেন, ‘দীন প্রতিষ্ঠার জন্য সাধ্য মতো চেষ্টা করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফারযে আইন। যাঁর ওপর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও শাসনভার ন্যস্ত তাঁর দায়িত্ব ও কর্তব্য সর্বাধিক। আল্লাহর আনুগত্য, ইকামাতুদ্ দীন এবং শাসিতদের কল্যাণ সাধনই তো রাষ্টের ক্ষমতা লাভের উদ্দেশ্য।’
খৃস্টীয় ১৩২৮ সনে ইমাম ইবনু তাইমিয়া দামিসকে মৃত্যুবরণ করেন।