৭। আবুল বারাকাত বাদরুদ্দীন আহমাদ সরহিন্দি (রাহিমাহুল্লাহ) (খৃস্টীয় ১৫৬৩–১৬২৪)
খৃস্টীয় ১৫৬৩ সনে শায়খ আহমদ সরহিন্দি ভারতের তৃতীয় মুগল সম্রাট আকবারে শাসনকালে পূর্ব পাঞ্জাবের পাতিয়ালা রাজ্যের সরহিন্দ নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন।
এই সময় রামানন্দ, কবীর, চৈতন্য দেব প্রমুখের প্রচারিত ‘ভক্তিবাদ’ তথা ‘ধর্মীয় আচার নয়, ভক্তিতেই মুক্তি’- বহু সংখ্যক লোককে বিভ্রান্ত করে ফেলে। বিভিন্ন ধর্মের বহু আনসারী এই মতবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ে। অন্যদিকে বিকৃত সুফীবাদ মুসলিমদেরকে বিপথগামী করে চলছিলো।
ওই সময় ‘আলফিয়াহ’ নামে একটি মতবাদও প্রচারিত হতে থাকে। এই মতবাদের বক্তব্য ছিলো: ইসলাম এসেছিলো এক হাজার বছরের জন্য। এক হাজার বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। এখন নতুন দীনের প্রয়োজন।
সম্রাট আকবার ফতেহপুর সিক্রি নামক স্থানে একটি ইবাদাতখানা স্থাপন করেন। এই ইবাদাতখানায় বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী পণ্ডিতদেরকে ডাকা হতো। তিনি তাদের আলোচনা শুনতেন। তবে ইসলাম সম্পর্কিত আলোচনা তার ভালো লাগতো না।
খৃস্টীয় ১৫৮২ সনে আকবার ‘দীনে ইলাহী’ নামে এক নতুন ধর্মের প্রবর্তন করেন। এই ধর্মের কালেমা ছিলো। লা ইলাহা ইল্লাহ আকবারো খলীফাতুল্লাহ। এই ধর্মে অনুসারীদেরকে বলা হতো চেলা। চেলাদের পাগড়িতে আকবারের প্রতিকৃতি শোভা পেতো। দরবারে ‘দিল্লীশ্বরোবা জগদীশ্বরোবা’ বলে সম্রাটকে কুর্নিশ করার রীতি চালু হয়। নতুন ধর্ম মতে মদ, সুদ ও জুয়া বৈধ বলে ঘোষিত হয়।
দেওয়ালী, দশোহরা, পুনম শিবরাত্রি পালনের ব্যবস্থা রাখা হয়। পর্দার বিধান নিন্দিত হয়। গরু যবাই নিষিদ্ধ হয়। নাচ-গানের ব্যাপক প্রসার ঘটানো হয়।
এই সময় শায়খ আহমাদ সরহিন্দি ১৯ বছরের একজন তরুণ। কিন্তু তিনি আল কুরআন ও আস্সুন্নাহর স্বচ্ছ জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। আলকুরআন ও আস্ সুন্নাহর সাথে সাংঘর্ষিক ছিলো বিধায় তিনি দীনে ইলাহীর বিরোধিতা শুরু করেন। তিনি চিন্তার বিশুদ্ধি সাধনের কাজে হাত দেন। তিনি নিয়মিত শিক্ষা মাজলিস অনুষ্ঠিত করতেন। ছালাতুল জুহর থেকে ছালাতুল আছর পর্যন্ত হতো সাধারণ অধিবেশন। ছালাতুল আছর থেকে ছালাতুল মাগরিব পর্যন্ত বসতো বিশেষ অধিবেশন। এইভাবে তিনি লোক তৈরির কাজ চালাতে থাকেন। তিনি ইসলামী বিষয় পণ্ডিত বলে পরিচিত ব্যক্তিদের কাছে জ্ঞানগর্ভ দিক-নির্দেশনামূলক চিঠি পাঠাতে থাকেন। তাঁর সান্নিধ্যে থেকে গড়ে ঠা তরুণ ব্যক্তিদেরকে তিনি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে দিয়ে লোকদেরকে ইসলামের সঠিক ধারণা দেওয়ার কাজ শুরু করেন।
খৃস্টীয় ১৬০৫ সনে আকবর মারা যান। পরবর্তী সম্রাট নুরুদ্দীন মুহাম্মাদ জাহাঙ্গীর দীনে ইলাহীর প্রচার চালাতে থাকেন।
শায়খ আহমাদ সরহিন্দি সম্রাটের নিকট, শাহজাদা খুররমের নিকট, সম্রাটের পরিষদগণের নিকট এবং সেনাপতিদের নিকট ইসলামের প্রকৃত রূপ তুলে ধরে এবং তা অনুসরণের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে দাওয়াতী চিঠি পাঠাতে থাকেন। তিনি প্রায় পাঁচশত চিঠি লিখেছিলেন।
বিদ’আত পন্থীরা তাঁর তৎপরতায় বিচলিত হয়ে পড়ে। তারা তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু করে। শি’য়া প্রধানমন্ত্রী আসাদ খানের প্ররোচনায় তারা সম্রাটক বলে যে শায়খ আহমাদ সরহিন্দি সারা দেশে তাঁর অনুসারীদের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন। তিনি সম্রাটকে মানেন না। তিনি নিজেই সম্রাট হতে চান। শিগগিরই তিনি বিপ্লব ঘটাবেন।
সম্রাট জাহাঁগীর শায়খ আহমাদ সরহিন্দিকে আগ্রার রাজ-প্রাসাদে ডেকে পাঠান। তিনি সম্রাটের নিকটবর্তী হলে ডান দিক থেকে বাম দিক থেকে বলা হলো: ‘সম্রাটকে কুর্শিশ করুন।’
তিনি বললেন, ‘মুমিনের মাথা তো আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে নত হয় না।’
ভীষণ রেযে যান জাহাঁগীর। তাঁকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন।
তাঁকে বন্দি করে গোয়ালিয়ার দুর্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
দুর্গে বন্দি কয়েদীদের মধ্যে তিনি দাওয়াতী কাজ শুরু করেন। বহু কয়েদী এবং কারারক্ষী তাঁর দারস শুনে খাঁটি মুমিন হিসেবে জীবন গড়ার শপথ নেয়।
েএক বছর প্রলম্বিত হয় তাঁর জেল জীবন।
ইতোমধ্যে সম্রাট জাহাঁগীরের চিন্তায় বেশ পরিবর্তন আসে। তিনি দীনে এলাহীর প্রচার বন্ধ করে দেন। আকবারের প্রবর্তিত বহু রীতি ত্যাগ করেন। মুসলিম প্রধান শহরগুলোতে মাদরাসা এবং গ্রামগুলোতে মাকতাব স্থাপনের নির্দেশ দেন।
সম্রাট রাজ-প্রাসাদের পাশেই একটি মসজিদ নির্মাণ করেন এবং পরিষদবর্গকে নিয়ে ওই মাসজিদে ছালাত আদায় শুরু করেন।
শায়ক আহমাদ সরহিন্দি নাস্তিকতা ও শিরকের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেন। সুফিবাদের নামে যেই নর্তন কুর্দন চলতো, সেই গুলোর কঠোর সমালোচা করেন। তিনি বিজাতীয় দর্শন ও ভক্তিবাদের অনিষ্ট সম্পর্কে মুসলিমদেরকে সতর্ক করেন। তাঁর প্রচেষ্টায় প্রশাসনের ওপর থেকে শি’য়া প্রভাব বিদূরিত হয়।
খৃস্টীয় ১৬২৪ সনে শায়খ আহমাদ সরহিন্দি সরহিন্দেই মৃত্যবরণ করেন।
উল্লেখ্য যে শাহজাদা খুররম শায়খ আমহাদ সরহিন্দির দাও‘য়াতি চিঠি পড়ে ইসলামের অনুরাগী হয়ে ওঠেন।
খৃস্টীয় ১৬২৭ সনে সম্রাট জাহাঁগীরের মৃত্যুর পর শাহজাদা খুররম শিহাবুদ্দীন মুহাম্মাদ শাহজাহান নামে মসনদে বসেন। এই শাহজাহানই দিল্লী জামে মাসজিদ এবং লাহোরে জামে মাসজিদের প্রতিষ্ঠাতা। দিল্লী জামে মাসজিদে খতীব হিসেবে দায়িত্ব পালন করার জন্য তিনি বুখারা থেকে এক বিশিষ্ট আলিমকে নিয়ে আসেন।
খৃস্টীয় ১৬৫৮ সনে আওরঙ্গজেব সম্রাট হন।
তিনি শায়খ আহমাদ সরহিন্দির সেরা ছাত্র মোল্লা জীওয়ান (আহমাদ ইবনু আবি সায়ীদ ইবনু উবাইদুল্লাহ)-কে তাঁর অন্যতম শিক্ষক হিসেবে গ্রহণ করেন।
এই মোল্লা জীওয়ানের কাছ থেকেই সম্রাট ইসলামের স্বচ্ছ সঠিক জ্ঞান লাভ করেন।
উল্লেখ্য যে মোল্লা জীওয়ান ছয় বছর সম্রাটের সাথে থেকে দাক্ষিণাত্যের বিদ্রোহী রাজ্যগুলোর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন।
আওরঙ্গজেবের পৃষ্ঠপোষকতায় উপ-মহাদেশের মুসলিমদের মাঝে ইসলামী ধ্যান-ধারণা ব্যাপকতা লাভ করে। তাঁরই নির্দেশে একদল বিশিষ্ট ইসলামী বিশেষজ্ঞ ‘ফঅতওয়া-ই-আলমগীরী’ নামক গ্রন্থ রচনা করে মুসলিমদের প্রভূত কল্যাণ সাধন করেন।
আওরঙ্গজেব মদ পান নিষিদ্ধ করে ফরমান জারি করেন। জুয়া খেলা নিষিদ্ধ করন। নওরোজত (নব বর্ষ উৎসব), সম্রাটের জন্মোৎসব পালন এবং সম্রাটকে উপঢৌকন দেওয়ার রেওয়াজ বন্ধ করে দেন। রাজ-প্রাসাদে সংগীতানুষ্ঠান নিষিদ্ধ করেন এবং এক হাজার গায়ক-গায়িকাকে অবসর ভাতা দিয়ে বিদায় দেন।
জনগণের কল্যাণ বিবেচনায় তিনি আশি প্রকারে ট্যাকস রহিত করেন। সম্রাট আওরঙ্গজেব অত্যন্ত সাদামাঠা জীবন যাপন করতেন। তার প্রভাব অন্যদের ওপরও পড়তে শুরু করে।
৮। আবুল ফাইয়াদ আহমাদ কুত্বুদ্দীন (শাহ ওয়ালীউল্লাহ) (রাহিমাহুল্লাহ) (খৃস্টীয় ১৭০৩–১৭৬৩)
খৃস্টীয় ১৭০৩ সনে শাহ ওয়ালীউল্লাহ (রাহিমাহুল্লাহ) ষষ্ট মুগল সম্রাট মুহীউদ্দিন মুহাম্মাদ আওরঙ্গজেব আলমগীনের শাসন কালের একেবারে শেষভাগে দিল্লীতে জন্ম গ্রহণ করেন।
খৃস্টীয় ১৭৬৩ সনে দ্বিতীয় শাহ আলমের ওফাতের পর তিনি মাদরাসা রাহীমিয়ার প্রধান হন।
শাহ ওয়ালীউল্লাহ ছিলেন একজন সূক্ষ্ম দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি। আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন তাঁকে সমাজ বিশ্লেষণ করার এবং চিন্তা-চেতনার ভ্রান্তি চিহ্নিত করার অসাধারণ যোগ্যতা দান করেছিলেন।
মুসলিম উম্মাহর সামগ্রিক অবক্ষয়ের প্রধান কারণ ছিলো ‘খিলাফত ‘আলা মিনহাজিন নাবওয়াত’ থেকে বিচ্যুতি। এই মূল বিষয়টি বুঝতে তাঁর একটুও কষ্ট হয়নি।
আশ্ শূরার অবিদ্যমানতার ফলে মুসলিম জনগণ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন বিদগ্ধ ব্যক্তির কাছে ধর্ণা দিতো। ওইসব ব্যক্তি তাঁদের উপলব্ধি অনুযায়ী এককভাবে সিদ্ধান্ত দিতেন। এইভাবে একই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মতের আবির্ভাগ ঘটে। এটি ছিলো মুসলিমদের জন্য একটি সমস্যা।
গ্রীকদর্শন তথা ইউরোপীয় দর্শনের প্রতি ঝুঁকে পড়েছিলো মুসলিম বুদ্ধিজীবিদের একটি গোষ্ঠী। তারা নানা ধরনের কু-তর্কে লিপ্ত ছিলো।
শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুসলিম উম্মাহর চিন্তার বিশুদ্ধি সাধনের জন্য কলম ধরেন। শাসকশ্রণী, পরিষদবৃন্দ, সেনাপতিবৃন্দ, আলিম-সমাজ, সুফী সমাজ এবং জনগণকে তিনি আল কুরআন ও আস সুন্নাহর নিরিখে দিক নির্দেশনা দিতে থাকেন।
শাহ ওয়ালীউল্লাহ (রাহিমাহুল্লাহ) মুসলিম উম্মাহকে বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব দেবার যোগ্যতা সম্পন্ন একদল লোক তৈরি করেন।
খৃস্টীয় ১৭৬৩ সনে শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী মৃত্যুবরণ করলে তাঁর সুযোগ্য পুত্র শাহ আবদুল আযীয একদিকে মাদরাসা রাহিমীয়ার প্রধান, অন্যদিকে শাহ ওয়ালীউল্লাহর হাতে গড়া ব্যক্তিদের নেতা হিসেবে ভূমিকা পালন করতে থাকেন।
খৃস্টীয় ১৮১৮ সনে শাহ আবদুল আযীয দেহলভী ‘তারগীবে মুহাম্মাদীয়া’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। তিনিই ছিলেন এই সংগঠনের প্রধান।
খৃস্টীয় ১৮২৪ সনে শাহ আবদুল আযীয দেহলভীর মৃত্যু হলে ‘তারগীবে মুহাম্মাদীয়ার’ নেতৃত্ব সাইয়েদ আহমাদ বেরেলভীর ওপর ন্যস্ত হয়।
তিনি গোটা ভারত সফর করে এই সগঠনের কর্মী রিক্রুট করেন। অতপর তিনি বুলুচিস্তান হয়ে আফগানিস্তান পৌঁছেন। সেখান থেকে পৌঁছেন উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের দুর্গম পাহাড়ী অঞ্চলে। ব্যাপকভাবে তিনি দাও‘য়াতী তাৎপরতা চালাতে থাকেন।
এই সময় শিখ নেতা রণজিৎ সিং গোটা পাঞ্জাব, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের বিরাট অংশ এবং কাশ্মীরের বিরাট অংশ নিয়ে একটি শিখ রাষ্ট্র গঠন করেন। এই রাষ্ট্রের প্রথম রাজধানী ছিলো লাহোর এবং দ্বিতীয় রাজধানী ছিলো পেশোয়ার।
আর খৃস্টীয় ১৭৫৭ সন থেকে বাংলা-বিহার-উরিশায় প্রতিষ্ঠিত ছিলো ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শাসন।
সাইয়েদ আহমাদ বেরেলভী তাঁর কর্মস্থল হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন দুর্গম পাহাড়ী এলাকা। প্রতিরক্ষার দৃষ্টিতে এলাকাটি ছিলো খুবই সুরক্ষিত।
সেখানকার জনসংখ্যার শতকরা একশত ভাগ ছিলো মুসলিম।
খৃস্টীয় ১৮২৭ সনের ১১ই জানুয়ারী ‘সামাহ’ নামক স্থানে আলিম গোত্রীয় সরদারদের এক বিরাট সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেই সমাবেশে সাইয়েদ আহমাদ বেরেলভী আমির নির্বাচিত হন। সামাহ-কে কেন্দ্র করে একটি রাষ্ট্র অস্তিত্ব লাভ করে। তিনি ইসলামী শরীয়‘য়াহ অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা শুরু করেন।
শিখ রাষ্ট্র প্রধান রণজিৎ সিং ইসলামী রাষ্ট্রের অস্তিত্ব মেনে নিতে পারেন নি। অচিরেই এই নবগঠিত রাষ্ট্রের ওপর শিখদের হামলা শুরু হয়। যুদ্ধে হারজিত চলতে থাকে।
খৃস্টীয় ১৮৩১ সনের ৬ই মে জুমাবার সাইয়েদ আহমাদ বেরেলভী শাহ ইসমাঈল ও অন্যান্য মুজাহিদদেরকে নিয়ে হাজারা জিলার উত্তর-পূর্ব কোণে কুনার নদীর নিকটবর্তী বালাকোট নামক একটি পাহাড়বেষ্টিত স্থানে অবস্থান করেছিলেন।
বিশ্বাসঘাতক পাঠান সরদার খাদি খানের সহযোগিতায় সেনাপতি শের সিং বিশাল শিখ বাহিনী নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয় ও হামলা চালায়।
সাইয়েদ আহমাদ বেরেলভী ও বহু সংখ্যক মুজাহিদ শাহাদাত বরণ করেন।
খৃস্টীয় ১৮৩১ সনে তারগীবে মুহাম্মাদীয়ার আমীর হন মৌলভী বেলায়েত আলী। বিহার প্রদেশের পাঠনাতে স্থাপিত হয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়।
খৃস্টীয় ১৮৩৯ সনে রণজিত সিং মারা গেলে শিখ রাষ্ট্র দুর্বল হয়ে পড়ে। ইংরেজরা আরো বেশি অগ্রবর্তী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।
খৃস্টীয় ১৮৪৫ সনে মৌলভী বেলায়েত আলীর ভাই মৌলভী ইনায়েত আলী সীমান্ত প্রদেশের ফতেহগড় নামক স্থানকে কেন্দ্র করে একটি রাষ্ট্র গড়ে তোলেন। ফতেহগড়ের নাম রাখা হয় ইসলমাগড়।
খৃস্টীয় ১৮৪৬ সনের ৯ই অক্টোবর মৌলভী বেলায়েত আলী সেখানে পৌছলে তিনি আমীরুল মুমিনীন নির্বাচিত হন। এবার সরাসরি ইংরেজদের সাথে মুসলিম মুজাহিদদের যুদ্ধ বাঁধে। বিভিন্ন রণাংগনে যুদ্ধ চলতে থাকে।
খৃস্টীয় ১৮৫১ সনে মৌলভী ইনায়েত আলী দুই মাস দিল্লীতে অবস্থান করেন। ঐ সময় গোপনে শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর-এর সাথে সাক্ষাত করেন বলে জানা যায়।
খৃস্টীয় ১৮৫২ সনের ৫ই নভেম্বর মৌলভী বেলায়েত আলী সিত্তানাতে মৃত্যুবরণ করেন। আমীরুল মুমিনীন হন মৌলভী ইনায়েত আলী।
খৃস্টীয় ১৮৫৭ সনে মিরাট সেনা ছাউনীর সৈন্যরা বিদ্রোহ শুরু করে। বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। উত্তর ভারতের বিভিন্ন শহরে সবুজ পতাকা হাতে নিয়ে সাধারণ মানুষও রাজপথে নেমে আসে।
সিত্তানা থেকে মৌলভী ইনায়েত আলী ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়তে থাকেন। যুদ্ধের এক পর্বে তিনি নারিনজি নামক স্থানে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। খাদ্য ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। এই সময় তাদেরকে বেশ কিছু দিন গাছের পাতা, বাকল শিকড় খেয়ে বাঁচতে হয়। মৌলভী ইনায়েত আলীর এক ছেলে ও ইক মেয়ে দারুণ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তিনি নিজে জ্বরে আক্রান্ত হন। পরে রক্তামাশয় দেখা দেয়।
খৃস্টীয় ১৮৫৮ সনের মার্চ মাসে মৌলভী ইনায়েত আলী মৃত্যুবরণ করন। ইংরেজরা প্রচণ্ড হামলা চায়ে সিত্তানা দখল করে নেয়।
খৃস্টীয় ১৮৫৮ সনে ইংরেজরা শিখ এবং নেপালের গুর্খা সৈন্যদের সহযোগিতায় ভারতের আযাদী সংগ্রামকে স্তব্ধ কর দিতে সক্ষম হয়। হাজার হাজার সৈনিককে ফাঁসি দেওয়া হয়।
খোঁজাখুজি করে তারগীবে মুহাম্মাদীয়ার বিশিষ্ট ব্যক্তিদেরকে গ্রেফতার করা শুরু হয়।
খৃস্টীয় ১৮৪৬ সনে অনুষ্ঠিত হয় আম্বালা ট্রায়াল।
২রা মে মৌলভী ইয়াহইয়া আলী, মুহাম্মাদ জা’ফর থানেশ্বরী এবং মুহাম্মাদ শাফীকে মহারাণীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। লে. গভর্ণর দণ্ড পরিবর্তন কর তাঁদেরকে সারা জীবনের জন্য আন্দামান দ্বীপে নির্বাসনে পাঠানোর সিদ্ধান্ত দেন।
তাঁদেরকে শিকল পরিয়ে হাঁটিয়ে আমবালা থেকে লাহোরে আনা হয়। সেখান থেকে করাচী, করাচী থেকে বোম্বাই পরে আন্দামান দ্বীপে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
খৃস্টীয় ১৮৬৫ সনে অনুষ্ঠিত হয় পাটনা ট্রায়াল।
অন্যতম সেরা সংগঠক মৌলভী আমহাদুল্লাহকে গ্রেফতার করে ১৬ই জানুয়ারী বিচারের সম্মুখীন করা হয়। মহারাণীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার অপরাধে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। অবশ্য হাইকোর্ট এই দণ্ড পরিবর্তন করে তাঁকে সারা জীবনের জন্য আন্দামানে নির্বাসন দণ্ড দেয়।
খৃস্টীয় ১৮৬৫ সনের জুন মাসে মৌলভী আমহাদুল্লাহকে আন্দামন পৌঁছানো হয়।
এরপর হাজী মুবারক আলীর নেতৃত্বে এই আন্দোলন এগিয়ে চলে।