রমাদান প্রস্তুতি সহায়িকা
রমাদান পাঠ্যসূচি
১. আল-কুরআন – তাফহীমুল কোরআন ১৮ ও ১৯ খণ্ড অধ্যয়ন
৩. আল-হাদীস – তাহারাত, সালাত, সিয়াম ও চরিত্র গঠন সংক্রান্ত অধ্যায়
৪. সাহিত্য –
৫। ইসলামী আন্দোলনঃ সাফল্যের শর্তাবলী
৭। ইসলামী আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি
৬. মৌলিক বিষয়ে বাছাই করা আয়াত ও হাদীস মুখস্ত করা
সওম সম্পর্কিতঃ
১. সিয়ামের প্রস্তুতি ও মাসায়েল
২. ফিকহুস সিয়ামঃ সিয়ামের বিধান ও মাসায়েল
সিয়ামের মাসায়েল
১. প্রশ্ন: রমযান মাস নির্ণয় করার সঠিক পন্থা কী?
জবাব: রমযান মাসের সূচনা প্রমাণ করার উপায় তিনটি:
১. শা’বান মাস ত্রিশ দিন পূর্ণ হওয়া। শা”বান মাস ত্রিশ দিন পূর্ণ হবার সাথে সাথেই রমযান মাস শুরু হয়ে যাবে । কারণ, চন্দ্র মাস ত্রিশ দিনের বেশি হয়না ।
২. চাঁদ দেখা । শাবান মাসের ২৯ তারিখে রমযানের চাঁদ দেখতে হবে। যদি আকাশে চাঁদ দেখা যায়, তাহলে রমযান মাস শুরু হবে। কমপক্ষে বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন একজন বিশ্বস্ত মু’মিন ব্যক্তি চাঁদ দেখেছেন বলে সাক্ষ্য দিতে হবে।
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখো এবং চাঁদ দেখে রোযা ভঙ্গ (রমযান মাস সমাপ্ত) করো । যদি চাঁদ দেখতে না পাও, সে ক্ষেত্রে শাবান মাস ত্রিশদিন পূর্ণ করো। (সহীহ বুখারি ও মুসলিম)
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বর্ণনা করেন, লোকেরা চাঁদ দেখাদেখি করলো (কিন্ত তারা কেউ চাঁদ দেখেনি, আমি দেখলাম)। আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানালাম, “আমি চাঁদ দেখেছি।’ তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযা রাখলেন এবং সবাইকে রোযা রাখার নির্দেশ দিলেন। (আবু দাউদ, হাকিম, ইবনে হিব্বান)
৩. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে রমযান মাস নির্ধারণ । মহাকাশ বিজ্ঞানের (জ্যোতিষ শাস্ত্রের) ভিত্তিতে পৃথিবীতে চাঁদ দেখা যাবার তারিখ পূর্ব থেকেই জানা যায়। সে হিসেবে সারা পৃথিবীতে এককভাবে একই দিন রমযান মাস ও রোযা শুরু করা যায়। শেষোক্ত পদ্ধতিটিও হাদিসের সাথে সাংঘর্ষিক নয় । তবে -এ পদ্ধতি এখনো আমাদের দেশে সর্বজনগ্রাহ্য হয়নি ।
২. প্রশ্ন: রোজা ফরজ হবার শর্ত কি কি?
জবাব: রোজা ফরজ হবার শর্তাবলি হলো,
০১. প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া। অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে মেয়ের ওপর রোজা ফরজ নয়।
০২. মুসলিম হওয়া। অমুসলিমের ওপর রোজার বিধান নেই।
০৩. সজ্ঞান হওয়া । কারণ, পাগল, অজ্ঞান ও অচেতন ব্যক্তির উপর কোনো ফরজ বর্তায়না।
০৪. শারীরিক সামর্থ থাকা। যেমন অতি বৃদ্ধ ও দুরারোগ্য ব্যাধিগ্রস্তদের জন্যে ফরজ নয়।
০৫. শরয়ী সামর্থ থাকা। যেমন হায়েয-নেফাস থেকে মুক্ত হওয়া ।
০৬. শরয়ী মুসাফির না হওয়া। কারণ মুসাফিরের জন্য রোজা ফরজ নয়।
৩. প্রশ্ন: রোজার ফরজ কয়টি ও কি কি?
জবাব: রোজার ফরজ দুইটি:
১. ভোর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যৌন মিলন থেকে বিরত থাকা।
২. রোজা রাখার নিয়্যত বা সংকল্প করা। অর্থাৎ যেদিন রোজা রাখবেন, সেদিনকার রোজা রাখার নিয়ত করবেন। সহীহ মত হলো, দুপুরের আগেই নিয়্যত করতে হবে। নিয়ত মুখে বলার প্রয়োজন নেই। মনে মনে সংকল্প করলেই যথেষ্ট। তবে মুখে বললেও ক্ষতি নেই।
৪. প্রশ্ন: রোজা কয় প্রকার ও কি কি?
জবাব: রোজা চার প্রকার: ১. ফরয রোজা, ২. হারাম রোজা, ৩. মুস্তাহাব রোজা, ৪. মাকরূহ রোজা ।
রমজানের রোযা ফরজ। এ মাসের রোজা কাজা করলেও তা ফরজ। কাফফারা এবং মানতের রোজাও ফরজ। অবশ্য শেষোক্ত দুটি কোনো কোনো মাযহাবের মতে ওয়াজিব। ঈদুল ফিতরের দিন রোজা রাখা হারাম। ঈদুল আযহার দিন এবং ঈদুল আযহার পরবর্তী তিনদিন রোজা রাখা হারাম।
প্রত্যেক চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখা মুস্তাহাব । মহরম মাসের ৯ ও ১০ তারিখে রোজা রাখা মুস্তাহাব । যিলহজ্জের ৯ তারিখে (যারা হজ্জে গমন করেনি তাদের জন্যে) রোজা রাখা মুস্তাহাব । শাওয়াল মাসে ৬টি রোজা রাখা মুস্তাহাব । প্রত্যেক সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখা মুস্তাহাব । মুস্তাহাব রোজাকে কোনো কোনো মাযহাবে সুন্নত রোজাও বলা হয়। এর বাইরে রোযা রাখলে তা হবে নফল রোজা ।
৫। প্রশ্ন: কাদের উপর রোজা রাখা ফরজ নয়?
জবাব: যাদের উপর রোজা রাখা ফরজ নয়, তারা হলো:
০১. মাসিক চলাকালে নারীদের উপর রোজা ফরজ নয়। (কাজা করা ফরজ)
০২. নিফাস চলাকালে নারীদের উপর রোজা ফরজ নয়। (কাজা করা ফরজ)
০৩. উম্মাদ।
০৪. নাবালেগ শিশু কিশোর ।
০৫. রোগী।
০৬. মুসাফির । (কাজা করা ফরজ)
০৭. গর্ভবতী ।
০৮. স্তন্যদানকারী মা।
০৯. অতিশয় বৃদ্ধ পুরুষ ও মহিলা ।
১০. অমুসলিম ।
৬। সওম ভঙ্গের কারণ কি কি?
জবাবঃ
১। সহবাস
২। হস্তমৈথুন
৩। পানাহার
৪। যা কিছু পানাহারের স্থলাভিষিক্ত
৫। শিঙ্গা লাগানো কিংবা এ জাতীয় অন্য কোন কারণে রক্ত বের হওয়া
৬। ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা
৭। মহিলাদের হায়েয ও নিফাসের রক্ত বের হওয়া
৭। কি কি কারণে সওম ভাঙে না?
জবাবঃ
০১. অনিচ্ছাকৃত গলার ভেতর ধুলা-বালি, ধোঁয়া অথবা মশা-মাছি প্রবেশ করা।
০২. অনিচ্ছাকৃত কানে পানি প্রবেশ করা।
০৩. অনিচ্ছাকৃত বমি আসা অথবা ইচ্ছাকৃত অল্প পরিমাণ বমি করা (মুখ ভরে নয়)।
০৪. বমি আসার পর নিজে নিজেই ফিরে যাওয়া।
০৫. নাক, কান, চোখে ওষুধ বা সুরমা ব্যবহার করা।
০৬. ইনজেকশন নেয়া।
০৭. ভুলক্রমে পানাহার করা।
০৮. সুগন্ধি ব্যবহার করা বা অন্য কিছুর ঘ্রাণ নেয়া।
০৯. নিজ মুখের থুথু, কফ ইত্যাদি গলাধঃকরণ করা।
১০. শরীর ও মাথায় তেল ব্যবহার করা।
১১. ঠাণ্ডার জন্য গোসল করা।
১২. মিসওয়াক করা। যদিও মিসওয়াক করার দরুন দাঁত থেকে রক্ত বের হয়। তবে শর্ত হলো গলার ভেতর না পৌঁছানো।
১৩. ঘুমের মাঝে স্বপ্নদোষ হলে।
১৪. স্ত্রীলোকের দিকে তাকানোর কারণে কোনো কসরত ছাড়া বীর্যপাত হলে।
১৫. স্ত্রীকে চুম্বন করলে, যদি বীর্যপাত না হয় (রোজা না ভাঙলেও এটা রোজার উদ্দেশ্যের পরিপন্থী)।
১৬. দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা গোশত বা খাবার খেয়ে ফেললে (যদি পরিমাণে কম হয়), পরিমাণ বেশি হলে রোজা ভেঙে যাবে।
৮। রোজা মাকরূহ হওয়ার কারণসমূহ কি কি?
জবাবঃ ১। অযুর সময় গড়গড়া করে কুলি করা, জোর দিয়ে নাকে পানি টানা। এতে গলা বা নাক দিয়ে ভিতরে পানি প্রবেশ করার সম্ভাবনা থেকে যায়।
২। অনাবশ্যক কোনো জিনিস চিবানো বা চেখে দেখা।
৩। থুথু কফ মুখে জমিয়ে গিলে ফেলা। অবশ্য সামান্য থুথু গিলে ফেললে কোন অসুবিধা নেই।
৪। যৌন অনুভূতি নিয়ে স্ত্রীকে চুম্বন ও আলিঙ্গন করা, বার বার তার দিকে তাকানো, বার বার সহবাসের কল্পনা করা। কারণ এসব কার্যক্রমে বীর্যপাত ঘটা বা সহবাসে লিপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
৫। পরনিন্দা করা, মিথ্যা বলা, চোগলখুরী করা, অনর্থক কথাবার্তা বলা ও যেকোন গুনাহের কাজ করা।
৬। রোজা অবস্থায় ঝগড়া করা, গালি-গালাজ করা।
৭। রোজা অবস্থায় টুথপেস্ট-মাজন ব্যবহার করা মাকরুহ। কেননা তা কণ্ঠনালীতে প্রবেশ করলে রোজা ভেঙ্গে যায়।
৮। গোসল ফরজ অবস্থায় রোজা রেখে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অপবিত্র তথা নাপাক থাকলে রোজা মাকরূহ হয়ে যাবে।
৯। দাঁতে ছোলা/বুটের চেয়ে ছোট কোন বস্তু আটকে থাকলে তা বের করে মুখের ভিতর থাকা অবস্থায় গিলে ফেলা।
১০। রোজা রেখে অশ্লীল সিনেমাসহ অশালীন কিছু দেখা বা যৌন উত্তেজক লেখা পড়া বা কাজ করলে রোজা মাকরূহ হয়ে যাবে।
৯. প্রশ্ন: কাদের উপর রোজা ভাঙ্গলে কাজা করা ফরজ?
জবাব: ১. যারা হায়েয ও নিফাসের কারণে রোজা ভেঙ্গেছে, তাদের উপর রোজার কাযা দেয়া (পূরণ করা) ফরজ । এই দুই কারণে রোজা ভাঙ্গাও ফরজ, কাযা দেয়াও ফরজ । মুয়ায রা. বর্ণনা করেছেন, আমি উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা.-কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম: “মাসিকের কারণে বাদ দেয়া রোযা কাযা করা ফরয, কিন্তু একই কারণে বাদ যাওয়া নামায কাযা করার ফরয নয় কেন? “তিনি আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করলেন: “তুমি কি খারেজি? (উল্লেখ্য, খারেজিরা সব ব্যাপারে যুক্তি খুঁজে বেড়ায়, এমনকি ইবাদতের ক্ষেত্রেও)। আমি বললাম: না আমি খারেজি নই। তবে আমি বিষয়টি জানার জন্যে প্রশ্ন করেছি।’ তখন উম্মুল মুমিনীন বললেন: “কারণ আর কি? রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে মাসিকের কারণে ভঙ্গ হওয়া রোযা কাযা করার নির্দেশ দিয়েছেন আর নামায কাযা দেয়ার নির্দেশ দেননি ।” (সহীহ মুসলিম)
২. সফরে যারা রোযা ভাংবেন, তাদের উপরও রোযার কাযা দেয়া ফরয ।
৩. সাময়িক রোগের কারণে যারা রোযা ভাঙবেন তাদের উপরও রোযা কাযা দেয়া ফরয।
৪. হানাফি মযহাবের মতে, গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েরা রোযা ভাঙলে তাদেরকে সেই রোযার কাযা দিতে হবে।
১০. প্রশ্ন: কারা রোযা ভাংতে পারবে এবং ভাংলে ফিদিয়া দিলেই চলবে?
জবাব: যাদের জন্যে রোযা না রাখার অনুমতি রয়েছে, তবে ফিদিয়া দিতে হবে, তারা হলো:
১. অতিশয় বৃদ্ধ পুরুষ ও মহিলা । তাদের জন্যে রোযা না রেখে ফিদিয়া দেবার অনুমতি রয়েছে । তবে ইমাম মালেক ও ইবনে হাযমের মতে তাদের রোযা কাযাও করতে হবেনা, ফিদিয়াও দিতে হবেনা ।
২. সেইসব রোগী যাদের পক্ষে রোযা রাখা অতিশয় কষ্টসাধ্য এবং ভবিষ্যতেও রোগ নিরাময়ের আশা নেই ।
৩. সেই সব শ্রমিক, যারা সারা বছর চরম কষ্টকর শ্রমে নিয়োজিত থাকে এবং এছাড়া যদি তাদের রোজগারের অন্য কোনো সুযোগ না থাকে।
৪. গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মা, যদি তারা নিজের ও সন্তানের জীবনহানি, কিংবা চরম স্বাস্থ্যহানির আশংকা করে । -এটা ইবনে আব্বাস রা.-এর মত। তিনি সূরা বাকারা ১৮৪ আয়াতের ব্যাখ্যায় এমত দিয়েছেন।
১১. প্রশ্ন: ফিদিয়া কী? ফিদিয়া কিভাবে দিতে হবে?
জবাব: কুরআন এবং হাদিসে বিভিন্ন কারণে কিছু লোককে রোযা রাখা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তবে রোযা না রাখার কারণে ফিদিয়া দিতে বলা হয়েছে । ফিদিয়া হলো: একজন মিসকিন (অভাবী) ব্যক্তিকে দু’ বেলা আহার করাবেন। আহার করাবেন সামর্থ অনুযায়ী কিংবা মধ্যম ধরনের। কেউ কেউ প্রশ্ন করেন, খাওয়ানোর পরিবর্তে খাবার মূল্য দিয়ে দিলে হবে কিনা? -এর জবাবে আমরা বলবো, না তা হবেনা। খাওয়াই খাওয়াতে হবে। তবে যদি মূল্য দিতে চান, তা দিয়ে খাবার কিনে দেবেন, অথবা খাবার কেনা
নিশ্চিত করবেন, যা এ নির্দিষ্ট মিসকিন (অভাবী ব্যক্তি) আহার করবেন।
১২. প্রশ্ন: রোযার কাফ্ফারা কী? কি কারণে কাফ্ফারা দিতে হয়?
জবাব: এ প্রসঙ্গে একটি হাদিস উল্লেখ করা হলো:
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্পাল্লাহছু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে নিবেদন করলো: “ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি ধ্বংস হয়ে গেছি।” তিনি জিজ্ঞেস করলেন: “কিসে তোমাকে ধ্বংস করেছে?”
সে বললো: “আমি রমযান মাসে রোযা রেখে স্ত্রী সহবাস করেছি।” রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্মাম বললেন: “তোমার কি একটি দাস/দাসী মুক্ত করবার সামর্থ আছে?”
লোকটি বললো: “জী-না ।”
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “তুমি কি অবিরাম দুই মাস রোযা রাখতে পারবে?”
সে বললো: “জী-না।”
তিনি জানতে চাইলেন: “তবে কি তুমি ষাটজন মিসকিনকে খাবার খাওয়াতে পারবে?”
লোকটি বললো: “জী-না ।”
বর্ণনাকারী বলেন, লোকটি রাসূলুল্লাহর দরবারে বসে থাকা অবস্থায়ই কোথাও থেকে তার দরবারে এক ঝুড়ি খেজুর হাদিয়া এলো । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেজুরসহ ঝুঁড়িটি তার হাতে দিয়ে বললেন:
লোকটি আরয করলো: “এগুলো কি আমার চাইতেও অধিক দরিদ্রকে দান করবো? এ শহরে তো আমার চাইতে অধিক দরিদ্র কোনো পরিবার নেই।” লোকটির কথায় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম হেসে উঠলেন, অতপর বললেন: “তবে নিয়ে যাও, এগুলো তোমার পরিজনকে নিয়ে খেতে দাও।”-এ হাদিসটি সিহাহ সিত্তার ছ’টি গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। (হাদিসে যে ঝুড়ির কথা উল্লেখ হয়েছে তাতে সম্ভবত পনের সা’ অর্থাৎ ষাট মুদ খেজুর ধরতো এবং প্রতি মিসকিনকে একমুদ করে ষাটজন মিসকিনকে খাওয়ানো যেতো ।)
হাদিস থেকে বুঝা গেলো, রমযান মাসে রোযা রেখে স্ত্রী সহবাস করলে রোযার কাফফারা দিতে হবে । কাফফারা হলো:
১. একজন দাস বা দাসী মুক্ত করা। কিন্ত যদি দাস বা দাসী না থাকে,
২. তবে অবিচ্ছিন্নভাবে দুই (চন্দ্র) মাস রোযা রাখতে হবে । কিন্তু এটা যদি অতিশয় কষ্টসাধ্য হয়, তাহলে-
৩. ষাটজন মিসকিনকে (অভাবীকে) আহার করাবে । অর্থাৎ ষাটটি রোযার প্রতি দিনের জন্যে একজনকে আহার করাবে। ক্রম ধারার ভিত্তিতে ।
কিম্তু ইমাম আহমদের মতে, হাদিসে উল্লেখিত তিনটি বিষয় একটি আরেকটির বিকল্প নয়, বরং তিনটির যে কোনোটি করলেই কাফফারা আদায় হয়ে যাবে।
১৩, প্রশ্ন: হাঁপানী রোগীরা রোজা রেখে ইনহেলার ব্যবহার করতে পারবে কি?
জবাব: হ্যাঁ, রোযা রেখে ইনহেলার ব্যবহার করা যাবে । চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ইনহেলারে রোযা ভঙ্গ হবার মতো কিছু নেই ।
১৪. প্রশ্ন: রোযা রেখে ইনজেকশন দেয়া যাবে কি এবং ইনসুলিন নেয়া যাবে কিঃ
জবাব: হ্যাঁ, রোযা রেখে গুকোজ সেলাইন ও পুষ্টি জাতীয় ছাড়া অন্যান্য ইনজেকশন দেয়া যাবে । ডায়াবেটিস রোগীরা ইফতারের পূর্বে ইনস্যুলিন নিতে পারবেন। এতে রোযার ক্ষতি হবেনা ।
১৫. প্রশ্ন: রোযা রেখে কাউকেও রক্তদান করা যাবে কি?
জবাব: রোযা রাখা অবস্থায় অধিক পরিমাণ রক্ত বের হলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। তাই রোযা অবস্থায় রক্ত দান করা যাবেনা ।
১৬. প্রশ্ন: মেডিকেল টেস্টের জন্যে ল্যাব–এ রক্ত দিলে রোযা নষ্ট হবে কি?
জবাব: রোযাদারের শরীর থেকে অল্প পরিমাণ রক্ত বের হলে রোযা নষ্ট হয়না । সে হিসেবে মেডিকেল টেস্টের জন্যে ল্যাব-এ রক্ত দিলে রোযা নষ্ট হবেনা ।
১৭. প্রশ্ন: রোযা রেখে চোখে সুরমা লাগালে রোযা ভঙ্গ হবে কি?
জবাব: হানাফি ও শাফেয়ী মযহাব অনুযায়ী রোযাদার চোখে সুরমা লাগালে তার রোযা ভঙ্গ হবেনা ।
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল ও ইমাম মালেকের মতে কণ্ঠনালীতে সুরমার স্বাদ অনুভূত হলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।
১৮. প্রশ্ন: রোযাদাররা, চোখ, নাক ও কানে ওষুধের ড্রপ দিতে পারবে কি?
জবাব: হ্যাঁ রোযা রেখে নাক, কান ও চোখে ওষধের ড্রপ ব্যবহার করতে পারবেন । ওষুধ মুখে বা গলায় চলে এলে না গিলে বাইরে থুথু ফেলবেন।
১৯. প্রশ্ন: রোযা রেখে খাবারের স্বাদ পরীক্ষা করা যাবে কি?
জবাব: হ্যাঁ, প্রয়োজনের কারণে (রাঁধুনিদের) খাবারের স্বাদ পরীক্ষা করা এবং বাচ্চাদের শক্ত খাবার চিবিয়ে দেয়া জায়েয । বিনা প্রয়োজনে এমনটি করা মাকরূহ।
২০. প্রশ্ন: রোযা রেখে স্বামী–স্ত্রী পরস্পরকে চুমু খেতে পারবে কিঃ
জবাব: হ্যা, রোযা রেখে স্ত্রীকে চুমু খাওয়া, আলিঙ্গন করা জায়েয । উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. এবং উম্মে সালামা রা. বলেছেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযা অবস্থায় তার স্ত্রীদের চুমু খেতেন। (বুখারি, মুসলিম ও অন্যান্য গ্রন্থ) কোনো কোনো ফকীহ বলেছেন চুমু খাওয়া মাকরুহ। তবে এর ফলে
বীর্যপাত হলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।
২১ প্রশ্নঃ গোসল ফরয হওয়া অবস্থায় ভোর হলে তার বিধান কি?
জবাব: রোযাদার যদি গোসল ফরয হওয়া অবস্থায় সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে, তবে তার বিধান কি? এ প্রসঙ্গে দু’টি হাদিস উল্লেখ করা হলো: ১. উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: রমযান মাসে রসূলুল্লাহ সা. -এর এমন বহুবার হয়েছে যে, গোসল ফরয হওয়া অবস্থায় তার সকাল হয়েছে এবং তা স্বপ্নদোষের কারণে নয়, বরং স্ত্রী সহবাসের কারণে । অতপর তিনি (সকালে শয্যা ত্যাগ করে) গোসল করতেন এবং রোযা রাখতেন । (সহীহ মুসলিম)
২. উম্মুল মু’মিনীন উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: অনেক সময় গোসল ফরয হওয়া অবস্থায় রসূলুল্লাহ সা.-এর সকাল হতো। স্বপ্নদোষের কারণে নয়, স্ত্রী সহবাসের কারণেই তার উপর গোসল ফরয হতো । তা সত্ত্বেও তিনি রোযা ত্যাগ করতেন না এবং সেই রোযার কাযাও দিতেন না। (সহীহ মুসলিম)
ইমাম নববী লিখেছেন, গোসল ফরয হওয়া অবস্থায় সকাল হলে রোযা সহীহ হবে কিনা এ বিষয়ে আলিমদের মধ্যে যে মতপার্থক্য ছিলো, পরবর্তী কালে তা দূর হয়ে গেছে। এমনকি বলা হয়ে থাকে, এর্প ব্যক্তির রোযা যে সহীহ হবে, সে ব্যাপারে আলিমদের ইজমা (ঐক্য) হয়েছে । মূলত উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা এবং উম্মুল মু’মিনীন উম্মে সালামা রা. বর্ণিত হাদিস সকল মতপার্থক্যের বিপক্ষে প্রামাণ্য দলিলের মর্যাদা রাখে ।
২২। রমজান মাসের নফল ইবাদত কি কি?
১। কুরআন তেলাওয়াত
২। নফল নামাজ, তাহাজ্জুদ তথা ক্বিয়ামুল লাইল
৩। দ্বীন সম্পর্কে পড়াশুনা ও জ্ঞানার্জন
৪। দ্বীনি বিষয়ে পরস্পর আলোচনা
৫। যিকির
৬। দান সাদকাহ
৭। মাসনূন দু’আ
৮। রোজাদারকে ইফতার করানো
৯। বেশি বেশি তওবা ও ইসতেগফার
১০। দুরুদ শরীফ পড়া
২৩। রমজান মাসে কি কি করবো?
জবাবঃ
১। সত্য বলবেন, সত্যপন্থী হবেন
২। বেশি বেশি নফল ইবাদাতে মনযোগী হবেন
৩। অপরের সাথে দ্বীনি বিষয়ে আলাপ আলোচনা করবেন
৪। বেশি বেশি দান সদকা করবেন
৫। কুরআন, হাদীস ও ইসলামী সাহিত্য বেশি বেশি অধ্যয়ন করবেন
৬। কুরআন তেলাওয়াত, দ্বীনি আলোচনা, ইসলামী সঙ্গীত শুনবেন
৭। কুরআন-হাদীসের আলোচনা, ওয়াজ মাহফিল, ইসলামী সঙ্গীতের ভিডিও দেখবেন
৮। সুন্নতে রাসুলের আমল করবেন
৯। নিজের ভুল স্মরণ করে বেশি বেশি তওবা-ইস্তেগফার করবেন
১০। অপরের বিবাদ মিমাংসা করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবেন
২৪। রমজান মাসে কি কি করা যাবে না?
জবাবঃ
১। মিথ্যা বলবেন না
২। ছোট বড় কোনো ধরণের পাপের কাজ করবেন না
৩। বেহুদা কথা-বার্তা বলে সময় অপচয় করবেন না
৪। কোনোভাবেই অনর্থক অপব্যয় করবেন না
৫। অশ্লীল লেখা, সাহিত্য, বই পুস্তক পড়বেন না
৬। গান-বাজনা করবেন না, শুনবেন না
৭। নাটক, সিনেমা, সিরিয়াল, অশালীন ভিডিও দেখবেন না
৮। বিদয়াত আমল করবেন না
৯। গীবত, পরচর্চা, পরনিন্দা, চোগলখুরী করবেন না
১০। ঝগড়া, বিবাদ, গালি-গালাজ করবেন না
১-২১ প্রশ্নোত্তরেঃ আব্দুস শহীদ নাসিম (বইঃ রমজান প্রস্তুতি ও মাসায়েল)
মাহে রমাদানের মর্যাদা ও মর্যাদার কারণ
স্বয়ং কুরআন মজিদেই মাহে রমযানের মর্যাদার কারণসমূহ উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে মহান আল্লাহ পাকের কালাম থেকে মাহে রমযানের কয়েকটি মর্যাদা উল্লেখ করা হলো:
১. কুরআন নাযিলের মাস: রমযান মাসের মর্যাদার মূল কারণ, এ মাসে কুরআন মজিদ নাযিল করা হয়েছে:
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ
অর্থ: রমযান মাস হলো সেই মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে আল কুরআন (আল কুরআন ২: ১৮৫)
হাদিস থেকে জানা যায় কুরআন নাযিল হয়েছে এ মাসের ২১,২৩,২৫,২৭ অথবা ২৯ তারিখে ।
২. লাইলাতুল কদর–এর মাস: মহান আল্লাহ স্পষ্টভাবে আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন, কুরআন নাযিল হয়েছে লাইলাতুল কদরে:
إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ
“আমি এটি (কেরআন) নাযিল করেছি কদর রাতে ।” (আল কুরআন ৯৭:১)
কদর মানে: ১. মর্যাদা, ২. তকদির বা ফায়সালা, ৩. শক্তি বা ক্ষমতা। সুতরাং এ রাত হলো, মর্যাদার রাত, ভাগ্যবন্টন বা ফায়সালার রাত এবং শক্তিশালী রাত।
৩. হাজার মাসের চেয়ে উত্তম রাতওয়ালা মাস: এ মাসেই রয়েছে এমন একটি
রাত যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম:
وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ – لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ
অর্থ: “তুমি কী করে জানবে ‘কদর রাত’ কী? কদর রাত উত্তম ও কল্যাণময় হাজার মাসের চেয়ে ।” (আল কুরআন ৯৭: ২-৩)
৪. মুবারক রাতের মাস: এ মাসেই রয়েছে এক বরকতময় (মোবারক) রাত:
إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ ۚ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ
অর্থ: আমরা এটিকে (এ কুরআনকে) নাযিল করেছি এক মুবারক রাতে। আমরা তো সতর্ককারী । (আল কুরআন ৪৪: ৩)
৫. ফায়সালার রাতওয়ালা মাস : এ মাসেই রয়েছে ফায়সালার রাত:
فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ – أَمْرًا مِّنْ عِندِنَا ۚ إِنَّا كُنَّا مُرْسِلِينَ
অর্থ: সেই রাতে প্রতিটি বিষয় ফায়সালা করা হয় বিজ্ঞতার সাথে। আমার নির্দেশক্রমে, আমি তো রাসূল প্রেরণ করে থাকি। (আল কুরআন ৪৪: ৪-৫)
৬. জিবরিল ও ফেরেশতাগণের অবতরণের রাতের মাস:
تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمْرٍ
অর্থ: সে রাত্রে নাযিল হয় ফেরেশতাকুল এবং রূহ (জিবরিল), প্রত্যেক কাজের জন্য তাদের রবের অনুমতিক্রমে । (আল কুরআন ৯৭: ৪)
৭. রহমত বিতরণের রাতের মাস:
أَمْرًا مِّنْ عِندِنَا ۚ إِنَّا كُنَّا مُرْسِلِينَ – رَحْمَةً مِّن رَّبِّكَ ۚ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
অর্থ: আমাদের নির্দেশক্রমে। আমরা তো রাসূল পাঠিয়ে থাকি, তোমার প্রভুর পক্ষ থেকে রহমত হিসেবে, নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ। (আল কুরআন ৪৪: ৫-৬)
৮. শান্তির রাতের মাস:
سَلَامٌ هِيَ حَتَّىٰ مَطْلَعِ الْفَجْرِ
অর্থ: শান্তিময় পুরো সে রাত ফজর উদয় হওয়া পর্যস্ত । (আল কুরআন ৯৭: ৫)
৯. মানবজাতির মুক্তির দিশারি অবতীর্ণের মাস:
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ
অর্থ: তাতে নাযিল করা হয়েছে আল কুরআন, যা মানবজাতির জন্যে ‘জীবন যাপনের পথ ও মুক্তির দিশারি।’ (আল কুরআন ২:১৮৫)
১০. সত্য–সঠিক পথের প্রমাণ নাযিলের মাস:
অর্থ: এবং (এ কুরআন) জীবন যাপনের পথ হিসেবে সুস্পষ্ট প্রমাণ। (২: ১৮৫)
وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَىٰ
১১. সত্য–মিথ্যা যাচাইয়ের মানদণ্ড (criterion) নাযিলের মাস:
وَالْفُرْقَانِ
অর্থ: আর (এ মাসে নাযিলকৃত কুরআন ভালোমন্দ, ন্যায় অন্যায়, সঠিক-বেঠিক, এবং সত্যাসত্যের) অকাট্য মানদন্ড (criterion) | (আল কুরআন ২:১৮৫)
১২.সিয়াম সাধনার মাস:
فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ
অর্থ: সুতরাং তোমাদের যে কেউ এ মাসের সাক্ষাত লাভ করবে, তাকে অবশ্যি পুরো রমযান) মাসটিতে রোযা পালন করতে হবে ৷ (আল কুরআন ২:১৮৫)
এগুলো গেলো আল্লাহর বাণী। এখন আমরা এ প্রসংগে কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করছি।
১৩. আকাশের দরজা উন্মুক্ত রাখার মাস :
إِذَا دَخَلَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ السَّماَء …
অর্থ: “যখন রমযান মাসের আগমন ঘটে, তখন আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়……।” (সহীহ বুখারি ও মুসলিম)
১৪. জান্নাতের দুয়ারসমূহ খুলে রাখার মাস :
إِذَا دَخَلَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ …
অর্থ: “যখন রমযান মাসের আগমন ঘটে, তখন জান্নাতের দুয়ারগুলো খুলে দেয়া হয়……।” (সহীহ বুখারি ও মুসলিম)
১৫. রহমতের দুয়ার খোলা রাখার মাস :
إِذَا دَخَلَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الْرَّحْمَةِ …
অর্থ: “যখন রমযান মাসের আগমন ঘটে, তখন রহমতের দুয়ারসমূহ খুলে দেয়া হয়।” (সহীহ বুখারি ও মুসলিম)
১৬. জাহান্নামের দুয়ার বন্ধ রাখার মাস :
إِذَا دَخَلَ رَمَضَانُ غُلِّقَتْ أَبْوَابُ جَهَنَّمَ …
অর্থ: “যখন রমযান মাসের আগমন ঘটে, তখন জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়।” (সহীহ বুখারি ও মুসলিম)
১৭. অতীতের গুনাহ মাফ করে দেয়ার মাস: প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ. وَمَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ. وَمَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ . (متفق عليه)
অর্থ: “যে কেউ ঈমান ও আশা নিয়ে রমযানের রোযা রাখবে, তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। যে কেউ ঈমান ও আশা নিয়ে রমযানের রাতগুলোতে (ইবাদতে) দাঁড়াবে তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। যে কেউ ঈমান ও আশা নিয়ে কদর রাত (ইবাদতে) কাটাবে তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।” (সহীহ বুখারি ও মুসলিম)
সিয়াম সাধনার উদ্দেশ্য
রমযানের পুরো একমাস রোযা রাখার উদ্দেশ্য প্রসংগে মহান আল্লাহ বলেন:
১. আল্লাহর সম্পর্কে সতর্ক ও সচেতন হওয়ার উদ্দেশ্যে:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
অর্থ: তোমাদের জন্যে লিখে (ফরয করে) দেয়া হয়েছে সওম (রোযা), করে তোমরা আল্লাহর সম্পর্কে সতর্ক হও । (আল কুরআন ২: ১৮৩)
২. আল্লাহ প্রদত্ত গাইডেন্সের মাধ্যমে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব প্রচার ও প্রকাশের উদ্দেশ্য:
وَلِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَاكُمْ
অর্থ: এবং যাতে করে (কুরআন নাযিল করে তোমাদের জীবন যাপন ব্যবস্থা প্রদানের জন্যে) তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করো । (আল কুরআন ২:১৮৫)
৩. কুরআন নাযিলের জন্যে আল্লাহর শোকরিয়া আদায়ের উদ্দেশ্যঃ
وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
“আর যেন তোমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো ।” (আল কুরআন ২:১৮৫) অর্থাৎ কুরআন নাযিল করে তোমাদের সামনে সত্য-মিথ্যার পথ সুস্পষ্ট করে তুলে ধরা এবং সত্য ও মুক্তির পথ প্রমাণসহ স্পষ্ট করে দেয়ার আদায় করো ।
রমাদান থেকে ফায়দা লাভের উপায়
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্মাম রমযান মাস থেকে ফায়দা লাভের উপায় বলে দিয়েছেন। সেগুলো হলো:
১. مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ.
যে ব্যক্তি ঈমান ও আশা নিয়ে রমযান মাসের রোযা রাখবে, তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে । (বুখারি ও মুসলিম: আবু হুরাইরা রা.)
২. وَمَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ.
যে ব্যক্তি ঈমান ও আশা নিয়ে রমযানের রাতে সালাতে দাঁড়াবে তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে । (বুখারি ও মুসলিম: আবু হুরাইরা রা.)
৩. وَمَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ .
যে ব্যক্তি ঈমান ও আশা নিয়ে কদর রাতে সালাতে দাঁড়াবে তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে । (বুখারি ও মুসলিম: আবু হুরাইরা রা.)
৪. اَلصَّوْمُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ
আল্লাহ বলেন: রোযা আমার জন্যে এবং আমিই এর পুরস্কার দেবো । (বুখারি)
৫. لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ : فَرْحَةٌ عِنْدَ إِفْطَارِهِ ، وَ فَرْحَةٌ عِنْدَ لِقَاءِ رَبِّهِ .
রোযাদারের জন্যে দুটি আনন্দের সময়ঃ একটি আনন্দ ইফতারের সময়, আরেকটি তার প্রভুর সাথে সাক্ষাতের সময় । (বুখারি ও মুসলিম: আবু হুরাইরা রা.)
৬. الصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ
রোযা এবং কুরআন বান্দার জন্যে সুপারিশ করবে । (বায়হাকি: ইবনে উমর রা.)
৭. شَهْرُ رَمَضَانُ شَهْرُ مُبَارَك
রমযান মাস একটি বরকতময় মাস। (বায়হাকি)
৮. مَنْ تَقَرَّبَ فِيْهِ بِخَصْلَةٍ مِنَ الْخَيْرِ كَمَنْ أَدَّى فَرِيْضَةً فِيْماَ سِواَه.
যে ব্যক্তি রমযান মাসে একটি ভালো কাজ করে আল্লাহর নিকটবর্তী হতে চাইবে, সে অন্য সময়ের একটি ফরয আদায়কারীর সমতুল্য ৷ (বায়হাকি)
৯. وَ مَنْ أدَّى فِيْهِ فَرِيْضَةً كاَنَ كَمَنْ أَدَّى سَبْعِيْنَ فَرِيْضَةً فِيْماَ سِواَه.
যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরয আদায় করবে, সে অন্য সময়ের সত্তরটি ফরয আদায়কারীর সমতুল্য | (সালমান ফারেসি: বায়হাকি)
১০. هُوَ شَهْرُ الصَّبْرِ وَالصَّبْرُ ثَوَابُهُ الْجَنَّةُ.
এ মাস সবরের মাস, আর সবরের পুরস্কার হলো, জান্নাত । (বায়হাকি)
১১. هُوَ شَهْرُ الْمَوَاسَاةِ .
এ মাস (মুসলিমদের মধ্যে) পারস্পারিক সম্প্রীতির মাস। (বায়হাকি)
১২. هٌوَ شَهْرٌ يُزَادُ فِيْهِ رِزْقُ الْمُؤمِنِ .
এ মাসে মুমিনদের জীবিকা বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। (সালমান ফারেসি: বায়হাকি)
১৩. هُوَ شَهْرُ أوَّلُهُ رَحْمَةٌ وَأوْسَطُهُ مَغْفِرَةٌ وَآخِرُهُ عِتْقٌ مِنَ النَّارِ.
এটি সেই মাস, যার প্রথম ভাগ রহমতের, মধ্যভাগ ক্ষমার এবং শেষ ভাগ জাহান্নাম থেকে মুক্তির । (সালমান ফারেসি: বায়হাকি)
১৪. الصَّومُ جُنَّةٌ .
রোযা একটি ঢাল । (বুখারি ও মুসলিম)
১৫. أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا أَفْطَرَ قَالَ اللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلَى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ .
ইফতার করার সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন: হে আল্লাহ! তোমার জন্যে রোযা রেখেছি আর তোমার দেয়া জীবিকা দিয়েই ইফতার করছি। (আবু দাউদ: মুরসাল)
১৬. لاَ يَزَالُ النَّاسُ بِخَيْرٍ مَا عَجَّلُوا الْفِطْر.
মানুষ কল্যাণের উপর থাকবে, যতোদিন তারা দ্রুত ইফতার করবে । (বুখারি)
১৭. تَسَحَّرُوا فَإِنَّ فِي السَّحُورِ بَرَكَةً
তোমরা সাহরি খাও, কারণ সাহরিতে বরকত রয়েছে । (বুখারি ও মুসলিম)
১৮. مَنْ نَسِيَ وَهُوَ صَائِمٌ فَأَكَلَ أَوْ شَرِبَ فَلْيُتِمَّ صَوْمَهُ فَإِنَّمَا أَطْعَمَهُ اللَّهُ وَسَقَاهُ .
যে ব্যক্তি রোযা থাকার কথা ভুলে গিয়ে পানাহার করে ফেলে, সে যেনো রোযা পূর্ণ করে। কারণ আল্লাহই তাকে পানাহার করিয়েছেন । (বুখারি ও মুসলিম)
১৯. رَأَيْتُ النَّبِيَّ صــ مَالَا أحْصِيَ يَتَسَوَّكُ وَهُوَ صَائِمٌ
আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রোযা রেখে কতোবার যে মেসওয়াক করতে দেখেছি! (তিরমিযি)
২০. مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّوْرِ وَالْعَمَلَ بِهِ وَالْجَهْل فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ فِي أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ .
যে ব্যক্তি (রোযা রেখে) মিথ্যা কথা ও কাজ ছাড়তে পারলোনা, তার পানাহার ত্যাগের কোনো প্রয়োজন আল্লাহর নেই। (বুখারি: আবু হুরাইরা রা.)
২১. مَنْ صَامَ رَمَضانَ ثُمَّ أَتَبَعَهُ سِتًّا مِنْ شَوَّالٍ كانَ كصِيَامِ الدَّهْرِ .
যে ব্যক্তি রমযান মাসের রোযা থাকলো, তারপর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোযা তার অনুগামী করলো, সে যেনো পুরো বছর রোযা থাকলো। (মুসলিম: আবু আইউব রা.)
২২. أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ شَهْرِ رَمَضَانَ شَهْرُ اللَّهِ الْمُحَرَّمُ وَأَفْضَلُ الصَّلَاةِ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ صَلَاةُ اللَّيْلِ .
রমযানের বাইরে সর্বোত্তম রোযা হলো আল্লাহর প্রিয় মাস মহররম মাসের রোযা, এবং ফরয নামায ছাড়া সর্বোত্তম নামায হলো রাতের নামায । (মুসলিম)
২৩. كَانَ النَّبِيُّ صــ إِذَا دَخَلَ رَمَضَانُ أَعْطى كُلُّ سَائِلٍ
রমযান মাস এলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক সাহায্য প্রার্থীকে দান করতেন । বায়হাকি: ইবনে আব্বাস রা.)
সিয়াম পালনের সংকল্প
১. সাওম –এর অর্থঃ“সিয়াম’ শব্দটি বহুবচন। এক. বচনে “সাওম’ । সাওম মানে- সংযম অবলম্বন
করা, নিবৃত হওয়া, আত্মনিয়ন্ত্রণ করা, বাক সংবরণ করা । “সাওম’কে ফারসি ভাষায় বলা হয়- ‘রোযা। ফার্সিয়ান মুসলিমরা দীর্ঘদিন আমাদের এই অঞ্চল শাসন করার কারণে আমাদের দেশে বহু ফারসি শব্দ প্রচলিত হয়ে গেছে। যেমন: নামায, রোযা, -বন্দেগি, বান্দা, মুনাজাত, ফরিয়াদ, বেহেশত, দোযখ, পুলসিরাত, আমলনামা, জায়নামায, ঈদগাহ, দরগাহ, খানকাহ, পীর, দরবেশ । কুরআনে ব্যবহৃত আরবি সাওম এবং সিয়াম শব্দই ব্যবহার করা উচিত, কিন্তু আমাদের দেশের সাধারণ জনগণ শব্দও ব্যবহার করবো ।
২. সিয়ামের উচ্চ মর্যাদাঃ সিয়ামের উচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে কয়েকটি হাদিস এখানে উল্লেখ করা হলো:
১. আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ তায়ালা বলেন: আদম সন্তানের সকল কাজই তার নিজের জন্যে । কেবল রোযা ব্যতিত। রোযা আমার জন্য । আর আমিই তার প্রতিদান দেবো। (হাদিসটির কুদসী অংশ এখানে শেষ । পরবর্তী অংশ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিজের উক্তি): আর রোযা একটি ঢাল। তোমাদের কেউ যেদিন রোযা রাখবে, সেদিন সে যেনো কোনো অশ্লীল কথা না বলে, চিৎকার না করে এবং অভদ্র আচরণ না করে । কেউ যদি তাকে গালাগাল করে বা তার সাথে মারামারি করতে আসে, তবে সে যেনো দু’বার বলে: “আমি রোযা রেখেছি।’ মুহাম্মদের প্রাণ যার হাতে, সেই আল্লাহর কসম, রোযাদারের মুখের দুর্গন্ধ (রোযার কারণে সৃষ্ট গন্ধ) কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে মেশকের সুগন্ধির চেয়েও সুগন্ধিপূর্ণ। আর রোযাদারের দু’টো আনন্দ: যখন করবে, তখন রোযার কারণে আনন্দ লাভ করবে | (আহমদ, মুসলিম, নাসায়ী)
২. বুখারি ও আবু দাউদে বর্ণিত: “রোযা একটি ঢাল । তোমাদের কেউ যখন রোযা রাখবে, তখন সে যেনো অশ্লীল কথা না বলে ও অভদ্র আচরণ না করে । কেউ যদি তার সাথে মারামারি বা গালাগালি করতে আসে, ভবে সে যেনো দু’বার বলে: “আমি রোযাদার ।’ যে আল্লাহর হাতে মুহাম্মদের প্রাণ, তার কসম: রোযাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর নিকট মেশকের সুগন্ধির চেয়েও পবিত্র। সে আমার উদ্দেশ্যেই তার পানাহার ও যৌনাচার বর্জন করে । রোযা আমারই জন্য এবং আমিই তার প্রতিদান দেবো । আর প্রত্যেক
সৎ কাজের প্রতিদান তার দশগুণ ।” (বুখারি ও আবু দাউদ)
৩. আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: রোযা ও কুরআন কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে । রোযা বলবে: হে আমার প্রভু! ওকে আমি দিনের বেলা পানাহার ও যৌনাচার থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার সম্পর্কে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। কুরআন বলবে: ওকে আমি রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছি। কাজেই তার সম্পর্কে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। অত:পর তাদের উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে । (আহমদ)
৪. আবু উমামা রা. বর্ণনা করেছেন: আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম: আমাকে এমন একটা কাজের আদেশ দিন, যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে । তিনি বললেন: তোমার রোযা রাখা উচিত। এর সমতুল্য কিছুই নেই। এরপর আবার তার কাছে এলাম । তিনি আবারও বললেন: তোমার রোযা রাখা উচিত। (আহমদ, নাসায়ী)
৫. আবু সাঈদ খুদরি রা. বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কোনো বান্দা আল্লাহর পথে একদিন রোযা রাখলেই সেদিনের বিনিময়ে আল্লাহ তার কাছ থেকে দোযখকে সত্তর বছর দুরে নিয়ে যান।
(আবু দাউদ ব্যতিত সকল সহীহ হাদিস গ্রন্থে বর্ণিত)
৬. সাহল বিন সা’দ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: জান্নাতের একটি দরজা রয়েছে যার নাম রাইয়ান। কিয়ামতের.দিন বলা হবে রোযাদাররা কোথায়? অতপর যখন সর্বশেষ রোযাদার প্রবেশ করবে, তখন সেই দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। (বুখারি ও মুসলিম)
৩. পূর্ণ রমযান মাস সিয়াম পালনের নির্দেশ
অর্থ: রমযান মাস হলো সেই মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে আল কুরআন, যা মানবজাতির জন্যে “জীবন যাপনের ব্যবস্থা’ এবং জীবন যাপন ব্যবস্থা হিসেবে সুস্পষ্ট, আর (এ কুরআন ভালোমন্দ, ন্যায় অন্যায়, সঠিক-বেঠিক, এবং সত্যাসত্যের) অকাট্য মানদন্ড (criterion)| সুতরাং তোমাদের যে কেউ এ মাসের সাক্ষাত লাভ করবে, তাকে অবশ্যি পুরো রমযান) মাসটিতে সওম পালন করতে হবে । তবে কেউ রোগাক্রাস্ত হলে, অথবা সফরে-ভ্রমণে থাকলে (সে সওম পালন থেকে বিরত থাকতে পারে, কিন্ত) তাকে অন্য সময় সওম পালন করে) সংখ্যা পূরণ করতে হবে। আল্লাহ তোমাদের জন্যে (তাঁর বিধান) সহজ করে দিতে চান এবং তিনি তোমাদের জন্যে (তাঁর বিধান) কঠিন-কষ্টকর করতে চান না। (তিনি চান) তোমরা যেনো (সাওমের) সংখ্যা পূর্ণ করো এবং কুরআন নাযিল করে তোমাদের জীবন যাপন ব্যবস্থা প্রদানের জন্যে) তোমরা আল্লাহ্র শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করো আর তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো । (আল কুরআন ২: ১৮৫)
৪. সিয়াম মাসব্যাপী পালনের এক পবিত্র কালচারাল অনুষ্ঠান
মাহে রমযান মুসলিম সমাজের এক পবিত্র, প্রাণচঞ্চল মহোত্তম উৎসব । চন্দ্রমাস রমযান ব্যাপী পালিত হয় এ অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠান কোনো বিশেষ জাতিগোষ্ঠী, ভাষাভাষী বা নৃ-গোষ্ঠীর আঞ্চলিক কিংবা জাতীয় অনুষ্ঠান নয়। এ অনুষ্ঠান দেড় হাজার বছর থেকে প্রচলিত এক অনন্য বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন অনুষ্ঠান বিশ্বব্যাপী বিশ্বাসীরা প্রতিদিন সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে মাসব্যাপী এ অনুষ্ঠান উদযাপন করেন। মাসব্যাপী এই মর্যাদাপূর্ণ অনুষ্ঠানের বৈশিষ্ট্য ও কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে:
০১. বিশ্বব্যাপী সমগ্র বিশ্বাসীদের অংশগ্রহণ।
০২. চন্দ্র দর্শন উৎসব।
০৩. দীর্ঘ কুরআন আবৃত্তির প্রশান্তিময় তারাবিহ অনুষ্ঠান।
০৪. রাতের দ্বিতীয়ার্ধে জাগৃতি, সালাত আদায় এবং সাহরি গ্রহণের অনুষ্ঠান।
০৫. ঘরে ঘরে, হাটে বাজারে, হোটেল রেঁস্তোরায় ইফতার সামগ্রি তৈরি ও পরিবেশনের ধুমধাম।
০৬. সূর্যাস্ত কেন্দ্রিক আনন্দঘন ইফতারি অনুষ্ঠান।
০৭. হৃদয় নিংড়ানো ইফতারি আপ্যায়নের সক্রিয় তৎপরতা।
০৮. গোপনে প্রকাশ্যে দান-সদকার অনাবিল ফলগুধারা।
০৯. দু:স্থ, অসহায়, অভাবী ও এতিমদের সহযোগিতায় বিশেষ তৎপরতা।
১০. পাপ বর্জন ও পুণ্যার্জনের উদ্যোমী প্রতিযোগিতা।
১১. পরম দয়াময় প্রভুর ইবাদতে বিশেষ মনোযোগ।
১২. পরম দয়াময় প্রভুর নিকট প্রার্থনা এবং তার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয়ার প্রতিযোগিতা।
১৩. অতীত পাপ মোচনের জন্যে প্রভুর দরবারে বিনীত হৃদয়ে বারবার অনুতাপ ও ক্ষমা প্রার্থনা।
১৪. জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্যে নিরবিচ্ছিন্ন রোনাজারি।
১৫. জান্নাত লাভের অশান্ত আকুতি।
১৬. মাসব্যাপী পালিত কর্মসূচি সমূহের সমাপ্তি অনুষ্ঠান ঈদুল ফিতরের প্রস্তুতি।
১৭. দুঃস্থ, অসহায়, অভাবী ও এতিমদের ঈদের আনন্দে শরিক করার বিশেষ কর্মসূচি পালনে স্বগত তৎপরতা।
১৮. হাজার মাসের চাইতে উত্তম লাইলাতুল কদর অন্বেষণে রাত জেগে জেগে ইবাদত বন্দেগি, প্রার্থনা ও কুরআন তিলাওয়াত।
১৯. কুরআন নাযিলের মাস হিসেবে পুরো মাস অধিকহারে কুরআন তিলাওয়াত , কুরআন অধ্যয়ন ও মানুষের কাছে কুরআনের বার্তা পৌছানো।
২০. মাসব্যাপী পালিত কর্মসূচি সমূহের সমাপ্তি অনুষ্ঠান ঈদুল ফিতর উদযাপন।
৫. মাসব্যাপী সিয়াম পালনের সংকল্প গ্রহণ
একজন মুসলিমকে আগে থেকেই রমযান মাসব্যাপী সিয়াম পালনের সংকল্প গ্রহণ করতে হয়। এ মাসের মহাকল্যাণ লাভের জন্যে যেসব কর্মসূচির কথা আমরা উল্লেখ করেছি, একজন মুসলিমকে এসব কর্মসূচি পালনের জন্যে পূর্ব থেকেই মানসিক প্রস্ততি গ্রহণ করা জরুরি । বিশ্বনবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাহে রমযানের মহাকল্যাণ হাসিলের জন্যে অনেক আগে থেকেই মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন । তিনি শা”বান, এমনকি রজব মাস থেকে মানসিক প্রস্ততি গ্রহণ করতেন, রমযানের পূর্ণাঙ্গ সিয়াম সাধনার জন্যে সংকল্প গ্রহণ করতেন। তিনি মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন:
“হে আল্লাহ! আমাদেরকে রজব এবং শা”বান মাসে বরকত দান করো আর আমাদেরকে রমযান পর্যন্ত পৌছে দাও।”
এই দোয়ার মাধ্যমেই মূলত তিনি রমযান মাসে সিয়াম সাধনার সংকল্প করে নিতেন। আর এভাবে পূর্ব থেকে সংকল্প ও মানসিক প্রস্ততি নেয়া থাকলেই কোনো কাজ সুন্দর, সুষ্ঠু ও পরিপাটিভাবে পালন করা সম্ভব হয়।
মাসব্যাপী সিয়াম পালনের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি
১. মাহে রমযানের সময়কাল জানুন এবং দিন গণনা করুন
একজন মুসলিম মহা মর্যাদাপূর্ণ মাহে রমযানের জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। তিনি দিনগুণতে থাকেন- কবে আসবে মাহে রমযান? কবে থেকে রোযা রাখবো? মুসলিমদের কাছে মাহে রমযানের আগমন ঠিক এরকম, যেমন: কারো আপনজন দূর বিদেশ থেকে প্লেনে করে বাড়ি ফিরছেন। এ দিকে বিমান বন্দরে এবং বাড়িতে তার স্বজনরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন- কখন এসে পৌছুবে প্লেন? কখন তিনি প্লেন থেকে নেমে আসবেন? কখন পৌছুবেন বাড়ি?
মুসলিমদের কাছে মাহে রমযানের আগমনের অপেক্ষাটাও হয়ে থাকে এরকম ব্যাকুলতা নিয়ে । রমযান মাস আমাদের আপনজনের মতোই । সুতরাং ভালোভাবে জেনে রাখুন, আমরা যে ক্যালেন্ডার অনুসরণ করি সেই ক্যালেন্ডার অনুসারে কবে শুরু হতে যাচ্ছে রমযান মাস? অতপর দিন গণনা শুরু করুন আর মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকুন:
“হে আল্লাহ! শাবান মাসে আমাদের বরকত দান করো আর আমাদের পৌছে দাও রমযান মাসে ।”
২. রমযানে কোথায় অবস্থান করবেন তা আগেই স্থির করুন
আগেই স্থির করুন রমযানে আপনি কোথায় অবস্থান করবেন? কর্মস্থলে? গ্রামের বাড়িতে? নাকি সফর করবেন বাইরে? অবস্থানের স্থান বা এলাকা অনুযায়ী আপনার রমযানের কর্মসূচি প্রণয়ন করুন এবং সেভাবে মানসিক প্রস্ততি নিন।
৩. সিয়াম পালনে পরিবারের সদস্যদের মানসিকভাবে প্রস্তত করুন
আপনার নিজের মানসিক প্রস্ততির সাথে সাথে আপনার পরিবারের সদস্যদের, নিকটাত্মীয়দের এবং অধীনস্থদেরও মাহে রমযানকে স্বাগত জানানোর এবং পুরো মাস সিয়াম পালনের জন্যে মানসিকভাবে সচেতন ও প্রস্তত করতে থাকুক । এ উদ্দেশ্যে পারিবারিক বৈঠক করুন। পরামর্শ করুন। মাহে রমযান সঠিকভাবে পালনের পরিকল্পনা গ্রহণ করুন। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কিছু কিছু করে দায়িতু বন্টন করুন।
৪. আত্মীয়–স্বজন, প্রতিবেশী ও সমাজ–বন্ধদের সচেতন করুন
সবাইকে বলুন “রমযান আসছে”; “রোযা এসে যাচ্ছে”; “রোযার আর মাত্র এতোদিন বাকি।’ -এভাবে আপনার আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, ও সমাজ- বন্ধুদের মাহে রমযানের সিয়াম পালনের ব্যাপারে পূর্ব থেকে সচেতন করতে থাকুন। লোকদের সিয়াম শুরুর তারিখ জানানোর মধ্যেও রয়েছে নেকি এবং সওয়াব ।
৫. অফিস–আদালত ও কাজ–কর্মের সময় পুন:নির্ধারণ করুন
একজন মুসলিমকে রমযান মাসে তার দৈনন্দিন জীবন ধারায় কিছু পরিবর্তন আনতে হয়, কর্মসূচিতে পরিবর্তন আনতে হয়, সময়সূচিতে পরিবর্তন আনতে হয়। তাকে পরিবর্তন আনতে হয়, তার নিদ্রা ও জাগৃতির সময়সূচিতে, তার বিশ্রাম ও পানাহারের সময়সূচিতে, তার অফিস আদালতের সময়সূচিতে, তার কার্যক্রমের সূচিতে, তার আবাস থেকে বের হওয়া এবং আবাসে ফিরে আসার সময়সূচিতে ৷ তা ছাড়া এ মাসে তার কর্মসূচিতে যোগ করতে হয় কিছু কিছু নতুন কার্যক্রম ৷ এ মাসে সে কমিয়ে আনে তার জাগতিক কার্যক্রম আর বাড়িয়ে দেয় তার ইবাদত-বন্দেগি ও পুণ্যকর্মের ফলগুধারা। এ বিষয়গুলো সামনে রেখে আপনি আপনার গতানুগতিক জীবনধারার পরিবর্তন ও সময়সূচি রমযান আসার পূর্বেই পুন:নির্ধারণ করে নিন।
৬. প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক প্রস্ততি গ্রহণ করুন
রমযান শুরু হবার পূর্বেই এ মাসের জন্যে অর্থনৈতিক প্রস্ততি গ্রহণ করুন। কয়েকটি কারণে এ মাসে একজন মুসলিমের অর্থ ব্যয় বেড়ে যায়। যেমন:
১. রোযাদারদের ইফতার করানোর কারণে।
২. বেশি বেশি দান-সদকা করার কারণে।
৩. মওজুতদার ও অসৎ ব্যবসায়ীদের দ্বারা দ্রব্যসামগ্রির মূল্য বৃদ্ধির কারণে।
৪. অনেকেই এ মাসে বার্ষিক যাকাত প্রদান করেন।
৫. ঈদুল ফিতর উদযাপনকে সামনে রেখে।
৬. ফিতরা আদায়ের কারণে।
সুতরাং এসব খাতে এবং কারণে প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয়ের জন্যে আপনিও প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।
৭. বাজার স্বচ্ছ ও নিয়ন্ত্রিত রাখতে উদ্যোগ নিন
নীতি নৈতিকতার দিক থেকে আমাদের সমাজ পুরোপুরি সৎ ও স্বচ্ছ না হবার কারণে দেখা যায়, রমযান মাসেও খাদ্যে ভেজাল, মাপঝোপে হেরফের, ফটকা বাজারি, প্রতারণা ও মূল্যবৃদ্ধির অদম্য প্রবণতা বিদ্যমান থাকে । ফলে রোজাদার জনগণকে প্রচুর ভোগান্তির শিকার হতে হয়। বাজার স্বচ্ছ ও নিয়ন্ত্রিত রাখার ক্ষেত্রে একজন সচেতন নাগরিক এবং একজন মুসলিম হিসেবে আপনারও রয়েছে বিরাট দায়িত। আপনিও হয়তো কিংবা কৃষিজীবি বা অন্য কোনো কর্মজীবি। বাজার স্বচ্ছ ও নিয়ন্ত্রিত রাখার ক্ষেত্রে আপনিও ভূমিকা পালন করুন।
আপনি নিজের অবস্থানে নিজে স্বচ্ছ ও নিয়ন্ত্রিত থাকুন। অন্যদেরকেও স্বচ্ছতার ব্যাপারে সচেতন করুন, উৎসাহিত করুন, উদ্বুদ্ধ করুন। রমযান শুরু হবার আগে থেকেই একাজগুলো করুন।
৮. সিয়াম পালনের উপযোগী পবিত্র পরিবেশ সৃষ্টির উদ্যোগ নিন
মাহে রমযানের বিশেষ ও মহোত্তম পবিত্র মর্ধাদাকে সম্মুননত রাখার ক্ষেত্রে রমযান শুরু হবার আগে থেকেই সমাজে মানসিক ও বাস্তব পরিবেশ সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ করুন। এ উদ্দেশ্যে আগে থেকেই-
১. জনগণকে সচেতন করতে থাকুন।
২. মসজিদের খতিব ও ইমাম সাহেবগণ খোতবায় এবং নামাযের আগে পরে আলোচনা করুন।
৩. ঘরে, মসজিদে, অফিস আদালতে কুরআন ও হাদিসের সিয়াম সংক্রান্ত আয়াত ও হাদিসগুলোর ব্যাপক পাঠ ও আলোচনা করুন।
৪. রমযানের ক্যালেন্ডার মুদ্রণ ও বিতরণ করুন।
৫. লিফলেট ও বুকলেট ছেপে বিতরণ করুন।
৯. মসজিদগুলোতে সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করুন
রমযান মাসে মুসলিমগণ মহান আল্লাহ প্রদত্ত অবারিত রহমত, মাগফিরাত ও নেকি হাসিলের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হন। পুরুষগণ দিনের এবং রাতের নামাযে ব্যাপকহারে মসজিদে আগমণ করেন। আমাদের দেশের মসজিদগুলোতে, শহরে কম হলেও বিশেষ করে মফস্বলের মসজিদগুলোতে মুসল্লিদের প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধার ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। সুতরাং ব্যক্তিগত ও যৌথ উদ্যোগে মসজিদগুলোতে মুসল্লিদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে-
০১. স্থান সংকুলান না হলে স্থান সম্প্রসারণ করুন।
০২. অযু খানার সুব্যবস্থা করুন। অযুর পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখুন।
০৩. প্রস্রাবখানা/ টয়লেট ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখুন।
০৪. মসজিদে ফ্যান না থাকলে, ফ্যান লাগানোর ব্যবস্থা করুন।
০৫. ফ্যানের স্বল্পতা থাকলে সংখ্যা বৃদ্ধি করুন৷
০৬. বিদ্যুত লাইন না থাকলে বিদ্যুত লাইনের সংযোগ লাগান।
০৭. শহরের মসজিদগুলোতে যেখানে যেখানে সম্ভব এয়ার কন্ডিশনার লাগান।
০৮. মসজিদের জানালা দরজা ঠিকঠাক করে রাখুন।
০৯. মুসল্লিদের সুবিধার জন্যে চাটাই/চট/কার্পেট ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখুন।
১০. যারা ই’তেকাফ করবেন, তাদের সুন্দর ও সুরক্ষিত অবস্থানের জন্যে ভালো ব্যবস্থা রাখুন।
এগুলো এবং এ ধরনের আরো যেসব ব্যবস্থা প্রয়োজন ব্যক্তিগত উদ্যোগে যতোটা সম্ভব করুন। মসজিদ কমিটি এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করুন। এছাড়া আল্লাহ পাক যাদের বেশি তৌফিক দিয়েছেন তারা এগিয়ে আসুন।
১০. মসজিদে তারাবিহ্ বা রাতের নামাযের সুব্যবস্থা করুন
ব্যাপক সওয়াব হাসিলের উদ্দেশ্যে তারাবিহ্/ রাতের নামাযে ব্যাপক মুসল্লি সমাগম হয়। এ উদ্দেশ্যে-
১. সুন্দর সুললিত কণ্ঠে দীর্ঘ কুরআন তিলাওয়াতের উদ্দেশ্যে হাফেযদের দ্বারা তারাবিহ পড়ানোর ব্যবস্থা করুন।
২. তারাবিহ্ নামাযে দ্রুত কুরআন পাঠ না করে ধীরে ধীরে তারতিলের সাথে পাঠের ব্যবস্থা করুন।
৩. যেদিন কুরআনের যে অংশ পাঠ হবে ইমাম সাহেব বা হাফেয সাহেব সেদিন নামায শুরুর আগেই সে অংশের অর্থ/মর্ম মুসল্লিদের শুনিয়ে দিন।
১১. মাহে রমযানকে স্বাগত জানান
শাবান শেষে রমযানের চাঁদ দেখুন। একা একা দেখুন, দলবেধে দেখুন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখো।’ তাই রমযানের চাঁদ দেখুন। এভাবে চাঁদ দেখার মাধ্যমে মাহে রমযানকে স্বাগত জানান এবং পুরো মাস রোযা রাখার তৌফিক চেয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন৷
১২. সাহরিতে ঘুম থেকে জাগরণের ব্যবস্থা করুন
প্রথম প্রথম সাহরি খাবার জন্যে ঘুম থেকে জেগে উঠা অনেকের জন্যে সম্ভব হয়না। তাই লোকদের সাহরিতে জাগানোর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। ঘরে প্রবীণরা এ দায়িত্ব পালন করবেন। পাড়ায় মহল্লায় সামাজিকভাবে রোযাদারদের সাহরিতে জাগানোর জন্যে আহ্বানকারী দল গঠন করুন। ব্যক্তিগতভাবেও আহ্বান করা যায়। মসজিদের মাইক ব্যবহার করে আহ্বান করা যায়। সাইরেন বাজানো যায়। যেভাবেই হোক পরিবার ও সমাজের লোকেরা যেনো সাহরিতে জেগে উঠে সেই ব্যবস্থা করুন। সুন্দরভাবে সিয়াম পালন এবং মাহে রমযানের রহমত বরকত মাগফিরাত লাভের উদ্দেশ্যে নিম্নোক্ত কাজগুলো করার জন্যেও প্রস্তুতি নিন:
১৩. কুরআন মজিদ অর্থসহ অন্তত একবার পাঠ করুন
রমযান মূলত কুরআন নাজিলের মাস। কুরআনের কারনেই মাহে রমযানের বিশাল মর্যাদা ।
– মহান আল্লাহ কী উদ্দেশ্যে কুরআন নাযিল করেছেন?
– আমাদের জন্যে কী হিদায়াত, উপদেশ ও নির্দেশ কুরআনে দিয়েছেন?
– কুরআনে জীবন, জগত এবং ইহকাল ও পরকাল সম্পর্কে তিনি কি বলেছেন?
-কী উদ্দেশ্যে মানুষ সৃষ্টি করেছেন?
– মহান স্রষ্টা আল্লাহর প্রতি মানুষের দায়িত ও কর্তব্য কী?
এসব বিষয় জানার জন্যে কুরআন মজিদ বুঝে পড়া অত্যন্ত জরুরি এবং অত্যাবশ্যক। আর একাজ শুরু করার জন্যে এবং ভালোভাবে করার জন্যে রমযান মাসই সবচাইতে উপযুক্ত। তাই-
০১. কুরআন বুঝার জন্যে প্রতি রমযান মাসে কমপক্ষে একবার অর্থসহ পুরো কুরআন পাঠ করুন।
০২. ভালো ও বিশুদ্ধ অনুবাদসহ একখানা কুরআন মজিদ সংগ্রহ করুন৷
০৩. প্রতিদিন/কোনদিন কতোটুকু পাঠ করবেন, পূর্বেই পরিকল্পনা করুন।
০৪. পাঠকালে জরুরি বিষয়গুলো নোট করুন।
০৫. কিছু কিছু অংশ পরিবারের সদস্যদের পাঠ করে শুনান।
০৬. গুরুতৃপূর্ণ বিষয়গুলো অন্যদের সাথে আলোচনা করুন।
০৭. অন্যদের কুরআন বুঝে পড়তে আহ্বান করুন।
১৪. হাদিস ও বিশুদ্ধ ইসলামি বই পড়ুন
মাহে রমযানকে কেন্দ্র করে হাদিস পড়ুন। আলহামদুলিল্লাহ, হাদিস গ্রস্থাবলি বাংলায় অনুবাদ হয়েছে। এ মাসে হাদিস গ্রন্থাবলি থেকে বিশেষভাবে সিয়াম অধ্যায় পাঠ করুন। এ ক্ষেত্রে আপনি পড়ার পরিধি কম করতে চাইলে কমপক্ষে মিশকাত শরীফ থেকে সিয়াম অধ্যায় পাঠ করুন । সম্ভব হলে এগুলো থেকে পাঠের পরিধি বাড়াতে পারেন- ২. রিয়াদুস সালেহীন, ৩. সহীহ মুসলিম, সহীহ বুখারি, ৫. তিরমিযি, ৬. আবু দাউদ ।
এ সময় সিয়াম অধ্যায়ের সাথে সাথে যদি হাদিসের সালাত অধ্যায়ও পাঠ করে নিতে পারেন, সেটা হবে আপনার ইবাদত সংক্রান্ত সহীহ জ্ঞানের এক মূল্যবান ভান্ডার। এ ছাড়া বইয়ের মধ্যে ফিকহুস্ সুন্নাহ গ্রন্থের প্রথম খন্ড থেকে রোযা, নামায ও যাকাত অধ্যায় পাঠ করার চেষ্টা করুন। এটি পাঠ করলে হাদিসের আলোকে মাসায়েল জানার সাথে সাথে সকল ব্যাপারে শ্রেষ্ঠ ইমাম মুজতাহিদগণের মতামতও জানা যাবে ।
১৫. প্রথম রোযাকে পুণ্যশীলতায় সমৃদ্ধ করুন
প্রথম রোযা রমযান মাসের প্রবেশ ছ্বার। এটি সুন্দর ও পুণ্যশীলতায় পরিপূর্ণ করার চেষ্টা করুন, যাতে করে পরবর্তী রোযাগুলো প্রথমটির অনুসরণেই করতে পারেন। প্রথম রোযায় হাতে জাগতিক কাজ কম রাখার চেষ্টা করুন । বেশি বেশি সালাত আদায়, কুরআন হাদিস অধ্যয়ন, ইস্তেগফার, যিকির- আযকার, দোয়া প্রার্থনা ও উপদেশ-নসিহত প্রদানে সময় বেশি ব্যয় করার চেষ্টা করুন।
বেশি বেশি দান সদকা করুন, রোযাদারদের ইফতার করান। বেশি বেশি ভালো কাজ করুন। বাসায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একত্রে ইফতার করুন। পারিবারিক ইফতার অনুষ্ঠানে কুরআন হাদিস থেকে সিয়াম ও সালাত সম্পর্কে আলোচনা করুন। রমযান মাসে সবাইকে পুণ্যশীলতার কাজে নিয়োজিত থাকার বিষয়ে উপদেশ দিন এবং আলোচনা করুন। সবাইকে নিয়ে দোয়া করে ইফতার করুন ।
১৬. মসজিদগুলোতে প্রতিদিন ইফতারির আয়োজন করুন
আল্লাহর রোযাদার মেহমানরা, অসহায়, অভাবী, এতীম, পথিক ও দুস্থ: লোকেরা যেনো মসজিদে ইফতার করতে পারেন- আল্লাহর ঘর মসজিদে মাসব্যাপী সে ব্যবস্থা রাখুন।
এক্ষেত্রে কমিটি, খতিব সাহেব, ইমাম সাহেব অগ্রণী ভূমিকা পালন করুন । সামর্থবান মুসল্পি ও রোযাদার ব্যক্তিগণ সহযোগিতা করুন। মাসব্যাপী মসজিদভিত্তিক ইফতার আয়োজন সফল করার জন্যে আপনি আর্থিক সহযোগিতা করুন। সম্ভব হলে ইফতার সামগ্রি প্রস্তুত করে, কিংবা ক্রয় করে মসজিদে পাঠান। এভাবে যারা এই ইফতারিতে শরিক হবেন তাদের রোযার অনুরূপ সওয়াব আপনিও লাভ করবেন।
১৭. নিজ উদ্যোগে রোযাদারদের ইফতার করান
আপনি নিজেও প্রতিদিন কিংবা মাঝে মাঝে আপনার ঘরে, আবাসে বা অফিসে অন্য রোযাদারদের ইফতারির আমন্ত্রণ জানান। এতে আত্তীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশী, সহকর্মী এবং অভাবী ও মুসাফিরদের আমন্ত্রণ জানাতে পারেন।
এছাড়া এই মর্যাদাবান মাসে আত্তরিকভাবে নিম্নোক্ত কাজগুলো করুন:
১৮. নিয়মিত কিয়ামুল লাইল বা তারাবিহতে শরিক হোন।
১৯, পুরো মাসে বেশি বেশি দান-সদকা করুন।
২০. রমযান মাসেই বার্ষিক যাকাত হিসেব করে আদায় করার চেষ্টা করুন।
২১, রমযান মাসে আপনার চাকর-চাকরানী ও কর্মচারীদের কার্যভার যতোটা সম্ভব হালকা করে দিন।
২২. এ মাসে বিভিন্ন উপায়ে বেশি বেশি মানব সেবা করার চেষ্টা করুন।
২৩. সব ধরনের ঝগড়া-বিবাদ ও হানাহানি থেকে বিরত থাকুন এবং অন্যদের বিরত রাখার চেষ্টা করুন।
২৪. কাউকে গালি দেবেন না। কেউ গালি দিলে কিংবা বিবাদে জড়াতে চাইলেও আপনি দুইবার বলুন- “আমি রোযাদার’ অতপর নিরব থাকুন।
২৫. আপনি নিজে মিথ্যা, অসত্য, অন্যায়, প্রতারণা ও ধোকাবাজি পরিহার করুন। অন্যদেরকেও এগুলো থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করুন।
২৬. হিংসা, বিদ্বেষ, অহংকার ও দ্বিমুখী নীতি পরিহার করুন।
২৭. ভালো কাজে সহযোগিতা করুন এবং উদ্বুদ্ধ করুন।
২৮. সম্ভাব্য সকল উপায়ে মন্দ কাজে বাধা দিন এবং সকল মন্দ কাজকে ঘৃণা করুন।
২৯. খাদ্য দ্রব্যের দাম কমাতে সহযোগিতা করুন এবং ভূমিকা পালন করুন।
৩০. খাদ্য দ্রব্য ভেজালমুক্ত রাখতে সচেতনতা বৃদ্ধি করুন।
৩১. সামাজিকভাবে সিয়াম, সালাত ও যাকাত সংক্রান্ত আলোচনা ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করুন।
৩২. মসজিদগুলোতে ইফতারের সময় বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ করুন।
৩৩. রমযান মাসেই আপনার সন্তানদের কুরআন পাঠ শিক্ষা দিন। নামায শিক্ষা দিন। উপযুক্ত শিক্ষক নিয়োগ করুন।
৩৪. যাদের কাছে অর্থসহ/বঙ্গানুবাদ কুরআন নেই, তাদের কাছে বঙ্গানুবাদ কুরআন পৌছান। এটা হবে আপনার সর্বোত্তম সওয়াবের উপহার।
৩৫. এ মাসে বিশেষ করে সুস্থ থাকার উপযোগী ইফতার ও খাদ্য গ্রহণ করুন।
৩৬. যতো বেশি সম্ভব নফল ইবাদত করুন।
৩৭. মহান আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করুন।
৩৮. রহমত ও মাগফিরাত লাভ এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের জন্যে সদা তৎপর থাকুন।
৩৯. সম্ভব হলে শেষ দশদিন ই’তেকাফ করুন।
৪০. পুরো মাস হৃদয়টাকে মসজিদের সাথে বেধে রাখুন।
৪১. ঈদুল ফিতরের প্রস্ততি নিন।
৪২. সালাতুল ঈদের পূর্বেই ফিতরা আদায় করে দিন।
৪৩. ব্যক্তিগতভাবে গরিব-দুঃখীদের ঈদের আনন্দে শরিক করার চেষ্টা করুন।
8৪. ঈদের সালাতে শরিক হোন। এক পথে যান, অন্য পথে ফিরে আসুন।
৪৫. পুরো বছর সিয়াম পালনের সওয়াব হাসিলের জন্যে শাওয়াল মাসে ছয়টি নফল রোযা রাখুন।
গুরুত্বপূর্ণ দোয়া
* মহামারী বা দূরারোগ্য ব্যধি থেকে পরিত্রাণের দোয়াঃ
اَللَّهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَ الْجُنُوْنِ وَ الْجُذَامِ وَمِنْ سَىِّءِ الْاَسْقَامِ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাসি ওয়াল জুনুন ওয়াল ঝুজাম ওয়া মিন সায়্যিল আসক্বাম।’ -সূনানে আবু দাউদ, সূনানে তিরমিজি
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনার কাছে আমি শ্বেত রোগ থেকে আশ্রয় চাই। মাতাল হয়ে যাওয়া থেকে আশ্রয় চাই। কুষ্ঠু রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে আশ্রয় চাই। আর দূরারোগ্য ব্যাধি (যেগুলোর নাম জানিনা) থেকে আপনার আশ্রয় চাই।’
* ইফতারের সহীহ দোয়াঃ
ذَهَبَ الظَّمَاءُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُّ وَثَبَتَ الأجْرُ إنْ شَاءَ الله
উচ্চারণঃ যাহাবায জোমাউ, ওয়াব তাল্লাতিল উরুক্বু, ওয়া ছাবাতাল আজরু ইন-শা-আল্লাহ! [আবু দাউদ ২৩৫৯]
অর্থঃ পিপাসা দূরীভুত হলো, শিরা-উপশিরা সতেজ হলো এবং ইন-শা-আল্লাহ সওয়াবও সাবোস্ত হলো।
* ক্ষমা প্রার্থনার দোয়াঃ
১) رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُوْنَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
অর্থ: হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের উপর জুলুম করেছি। আপনি যদি আমাদের ক্ষমা না করেন আর আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করেন তাহলে আমরা অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যাব। (সূরা আ’রাফঃ ২৩)
২) رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ
– হে আমার রব! ক্ষমা করুন ও রহম করুন। রহমকারীদের মধ্যে আপনিই শ্রেষ্ঠ রহমকারী।
(সূরা মু’মিনুনঃ আয়াত ১১৮)
৩) رَبَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ
– হে আমাদের প্রভূ! আমরা ঈমান এনেছি। আপনি আমাদেরকে ক্ষমা করুন ও দয়া করুন। আপনি হলেন সবচেয়ে বড় দয়ালু। (সূরা মু’মিনূনঃ আয়াত ১০৯)
* জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য দোয়াঃ
১) رَبَّنَا اصْرِفْ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَ إِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَامًا
– হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে দূরে রাখুন। নিশ্চয় জাহান্নামের শাস্তি অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক। (সূরা ফুরকানঃ আয়াত ৬৫)
২) رَبَّنَا إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
– হে আমাদের রব! আমরা ঈমান এনেছি। আপনি আমাদের পাপ ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা করুন। (সূরাআলে ইমরানঃ আয়াত ১৬)
৩) رَبَّنَا أَتْمِمْ لَنَا نُوْرَنَا وَاغْفِرْ لَنَا إِنَّكَ عَلى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ
– হে আমাদের রব! আমাদের জ্যোতিতে পরিপূর্ণতা দান করুন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি সকল কিছুর উপর শক্তিমান। (সূরা আত তাহরীমঃ আয়াত ৮)
* দ্বীনের উপর অবিচল থাকার দোয়াঃ
১) رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَّثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ
– হে আমাদের রব! আমাদেরকে ধৈর্য্য দান করুন, আমাদেরকে দৃঢ় পদে রাখুন ও কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন। (সূরা বাকারাহঃ আয়াত ২৫০)
২) رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوْبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ
– হে আমাদের রব! হিদায়াত প্রদান করার পর আপনি আমাদের অন্তঃকরণকে বক্র করবেন না এবং আপনার নিকট থেকে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান করুন, নিশ্চয়ই আপনি সবকিছুর দাতা। (সূরা আলে ইমরানঃ আয়াত ৮)
৩) رَبَّنَا آتِنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَةً وَّهَيِّئْ لَنَا مِنْ أَمْرِنَا رَشَدًا
– হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি নিজের নিকট থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন এবং আমাদের জন্য আমাদের এ কাজ সঠিকভাবে পরিচালনা করার ব্যবস্থা করুন। (সূরা কাহাফঃ আয়াত ১০০)
৪) رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَّتَوَفَّنَا مُسْلِمِيْنَ
– হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ধৈর্যধারণ করার ক্ষমতা দিন এবং মুসলিম হিসেবে আমাদেরকে মৃত্যু দান করুন। (সূরা আ’রাফঃ আয়াত ১২৬)
* দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের দোয়াঃ
১) رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ
-হে আমাদের রব! আপনি আমাদেরকে দুনিয়ার কল্যাণ ও পরকালের কল্যাণ দান করুন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে বাঁচান। (সূরা বাকারাহঃ আয়াত ২০১)
২) رَبَّنَا وَآتِنَا مَا وَعَدْتَنَا عَلَى رُسُلِكَ وَلا تُخْزِنَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّكَ لا تُخْلِفُ الْمِيعَادَ
হে রব! নবী-রাসূলদের মাধ্যমে তুমি যে পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছো তা তুমি আমাদেরকে দিয়ে দিও। আর কিয়ামতের দিন আমাদেরকে তুমি অপমানিত করিও না। তুমিতো ওয়াদার বরখেলাফ কর না। (সূরা আলে ইমরানঃ আয়াত ১৯৪)
৩) رَبَّنَا آتِنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً وَهَيِّئْ لَنَا مِنْ أَمْرِنَا رَشَدًا
হে আমাদের রব! তোমার অপার অসীম করুণা থেকে আমাদেরকে রহমত দাও। আমাদের কাজগুলোকে সঠিক ও সহজ করে দাও। (সূরা আল কাহাফঃ আয়াত ১০)
* নেককার সন্তান-সন্ততি লাভের দোয়াঃ
১) رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَّاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِيْنَ إِمَامًا
– হে আমাদের রব! আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে ও সন্তানদের পক্ষ থেকে চোখের শীতলতা দান করুন এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের ইমাম করুন। (সূরা আল ফুরক্বানঃ আয়াত ৭৪)
২) رَبِّ هَبْ لِي مِنْ لَدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاءِ
– হে আমার পরওয়ারদেগার! তোমার কাছ থেকে আমাকে তুমি উত্তম সন্তান-সন্ততি দান কর। নিশ্চয়ই তুমিতো মানুষের ডাক শোনো। (সূরা আলে ইমরানঃ আয়াত ৩৮)
৩) رَبِّ لَا تَذَرْنِي فَرْدًا وَأَنتَ خَيْرُ الْوَارِثِينَ
– হে রব! আমাকে তুমি নিঃসন্তান অবস্থায় রেখো না। তুমিতো সর্বোত্তম মালিকানার অধিকারী। (সূরা আল আম্বিয়াঃ ৮৯)
৪) رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ
– হে রব! আমাকে তুমি নেককার সন্তান দান কর। (সূরা আস সফফাত: ১০০)
* পিতা-মাতা, বংশধর ও মু’মিনীনদের জন্য দোয়াঃ
১) رَبِّ اجْعَلْنِي مُقِيمَ الصَّلَاةِ وَمِنْ ذُرِّيَّتِي رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَاءِ – رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ-
-হে আমার প্রতিপালক! আমাকে সালাত কায়েমকারী করুন এবং আমার বংশধরকেও সালাত কায়েমকারী করুন। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের প্রার্থনা কবুল করুন। হে আমাদের রব! আমাকে, আমার মাতা-পিতাকে এবং সব মু’মিনদেরকে ক্ষমা করুন, যেদিন হিসাব কায়েম হবে। (সূরা ইব্রাহীমঃ আয়াত ৪০-৪১)
২) رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِنَا أُمَّةً مُّسْلِمَةً لَّكَ
– হে আমাদের রব! আমাদের উভয়কে আপনার আজ্ঞাবহ করুন এবং আমাদের বংশধর থেকেও একটি অনুগত উম্মাহ সৃষ্টি করুন। (সূরা বাকারাহঃ আয়াত ১২৮)
৩) رَبِّ اجْعَلْنِي مُقِيمَ الصَّلَاةِ وَمِن ذُرِّيَّتِي ۚ رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَاءِ
হে আমার রব! আমাকে নামাজ কায়েমকারী বানাও এবং আমার ছেলে-মেয়েদেরকেও নামাজী বানিয়ে দাও। হে আমার রব! আমার দোয়া তুমি কবুল কর। (সূরা ইবরাহীমঃ আয়াত ৪০)
* বিপদ-মুসিবত আপতিত হলেঃ
১) رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِيْ أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ
– হে আমাদের প্রতিপালক! বিভিন্ন কাজে আমাদের পাপ ও সীমালংঘনকে ক্ষমা করুন, আমাদেরকে (আপনার পথে) সুদৃঢ় রাখুন এবং কাফির সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন। (সূরা আলে-ইমরানঃ আয়াত ১৪৭)
২) إِنَّا لِلّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ
– নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য আর আমাদেরকে তারই দিকে ফিরে যেতে হবে (সূরা বাকারাহঃ আয়াত ১৫৬)
* জ্ঞানার্জনের দোয়াঃ
১) رَبِّ زِدْنِي عِلْمًا
– হে রব! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দিন। (সূরা ত্বহাঃ আয়াত ১১৪)
২) رَبِّ هَبْ لِي حُكْمًا وَأَلْحِقْنِي بِالصَّالِحِينَ
– হে রব! আমাকে জ্ঞান-বুদ্ধি দান কর এবং আমাকে নেককার লোকদের সান্নিধ্যে রেখো। (সূরা আশ শুআ’রাঃ আয়াত ৮৩)
* দ্বীনি দায়িত্ব পালনের জন্য দোয়াঃ
১) رَبِّ اشْرَحْ لِيْ صَدْرِيْ- وَيَسِّرْ لِيْ أَمْرِيْ – وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّنْ لِّسَانِيْ – يَفْقَهُوا قَوْلِيْ
– হে আমার রব! আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দিন, আমার কাজ সহজ করে দিন, আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দিন, যাতে তারা সহজে আমার কথা বুঝতে পারে। (সুরা ত্ব-হাঃ আয়াত ২৫-২৮)
২) رَبَّنَا آتِنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَةً وَّهَيِّئْ لَنَا مِنْ أَمْرِنَا رَشَدًا
– হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি নিজের নিকট থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন এবং আমাদের জন্য আমাদের এ কাজ সঠিকভাবে পরিচালনা করার ব্যবস্থা করুন। (সূরা কাহাফঃ আয়াত ১০০)
* জুলুম ও নির্যাতন থেকে মুক্তির জন্য দোয়াঃ
১) رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَلْ لَّنَا مِنْ لَّدُنْكَ وَلِيًّا وَّاجْعَلْ لَّنَا مِنْ لَّدُنْكَ نَصِيْرًا
– হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে যালিমদের এ জনপদ থেকে মুক্ত করুন। আপনার পক্ষ থেকে কাউকে আমাদের অভিভাবক করে দিন, আপনার নিকট থেকে কাউকে আমাদের সাহায্যকারী করে দিন। (সূরা নিসাঃ আয়াত ৭৫)
২)رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَّتَوَفَّنَا مُسْلِمِيْنَ
হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ধৈর্যধারণ করার ক্ষমতা দিন এবং মুসলিম হিসেবে আমাদেরকে মৃত্যু দান করুন। (সূরা আ’রাফঃ আয়াত ১২৬)