জি-৬ সামাজিক দায়িত্ব-১
প্রশ্ন ঃ
১. ধম© ও সামাজিক দায়িত্ব সম্পকে© ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কি?
২. ইসলামে যে শুধুমাত্র ব্যাক্তিগত পরিশুদ্ধির নিদে©শনা দেয়না বরং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পরিশুদ্ধির নিদে©শনা দেয়, এর সপক্ষে কোন প্রমাণ আছে কি?
৩. সমাজকে পরিশুদ্ধ করার কোন উপায় ইসলামে নিদে©শিত আছে কি?
৪. সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ (আমরু বিল মারুফ ওয়া নাহি আনিল মুনাকার) – এর ব্যাপারে ব্যাখ্যা কর?
৫. একজন মুসলিম কিভাবে সৎকাজের আদেশ করবে ও অসৎ কাজের নিষেধ করবে? এ ব্যাপারে কুরআনে নিদি©ষ্ট আদেশ আছে কি?
৬. পূব©বতী© উত্তরে কয়েকটি পন্থার যে কোন একটি গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে- এর অথ© কি দাড়ায়?
৭. সামাজিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে সাধারণতঃ নীরবতা ও এড়ানোর চেষ্টা দেখা যায়। এটা কি গ্রহণযোগ্য?
উত্তরঃ
১. ধম© ও সামাজিক দায়িত্ব সম্পকে© ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কি
ইসলাম আল্লাহর সাথে মনুষের সম্পক© সৃষ্টি করে এবং এই সম্পক©কে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করে। এটা এমন এক সম্পক© যা কালক্রমে ব্যাক্তির গোটা জীবনের সকল তৎপরতাকে প্রভাবিত করে, পরিশুদ্ধ করে। ইসলাম নিছক ব্যাক্তিগত অনুষ্ঠানাদি সব©স্ব ধম© নয়। এটা শুধু মানুষের সাথে আল্লাহর সম্পক©ই নিয়ন্ত্রণ করেনা; বরং মানুষে মানুষে সম্পক©ও নিয়ন্ত্রণ করে। মানুষে মানুষে সম্পক© ও সমাজিক দায়িত্ব ছাড়া ইসলাম অসম্পূণ©। যে এটা ছাড়া ইসলামকে কল্পনা করে তার উদাহরণ এমন যে, কেউ বলল আমার একটা বাড়ি আছে, আসলে তার শুধুিএকটি বাড়ির ভিত্তি (Foundation) আছে।
২. ইসলামে যে শুধুমাত্র ব্যাক্তিগত পরিশুদ্ধির নিদে©শনা দেয়না বরং গোটা সামাজের পরিশুদ্ধির নিদে©শনা দেয় কুরআন থেকে তার পক্ষে দলিল
এর পক্ষে সবচেয়ে বড় যুক্তি এই যে কুরআনের সকল আদেশ নিদে©শ এবং শিক্ষা সকল মানব বা মুমিনদের সম্বোধন করে বহুবচনে বলা হয়েছে, এক বচনে বলা হয়নি। নামাজ কায়েম করতে বলা হয়েছে যা একক ভাবে পালন করা সম্ভব নয়। একই ভাবে যাকাত সংক্রান্ত, মদ্যপান ও জুয়াখেলা থেকে বিরত থাকা সংক্রান্ত আদেশসহ প্রায় সব আদেশ নিষেধ বহুবচনে জারী হয়েছে। এসব উদাহরণ এটাই প্রমাণ করে মুসলমানদের ব্যাক্তিগত জীবন এমন ভাবে পরিশুদ্ধ করে যা চূড়ান্ত ভাবে সমাজকেও শুদ্ধ করে।
৩. ইসলামে নিদে©শিত সমাজকে পরিশুদ্ধ করার কোন উপায়
ইসলামে এজন্য তিনটি পন্থা রয়েছেঃ
ক. শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আত্মগঠণ যা ব্যাক্তিকে শুধুমাত্র দেশের বা সমাজের আদশ© নাগরিকই করেনা বরং পৃথিবীর আদশ© নাগরিকেও পরিণত করে।
খ. পরিবার, রাজনৈতিক সংগঠন ও আথি©ক প্রতিষ্ঠান প্রতিটি পরিচালনায় সুষম বিধান ইসলামে রয়েছে এবং এই
তিন এর সমন্বয়ে সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব।
গ. কুরআনে সকল মুসলমানকে নিদে©শ দেয়া হয়েছে সৎ কাজের কাজের আদেশ দিতে এবং অসৎ কাজে বাধা দিতে।
৪. সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধের ব্যাখ্যা
সূত্র নিদে©শিকা- আল কুরআন ৯:৭১, ৩:১০৪, ৩:১১০
“আমরু বিল মারুফ ওয়া নাহি আনিল মুনাকার” সকল মুসলমানদের জন্য বাধ্যতা মূলক। যে সব বিশ্বাসী নারী পুরুষ সম্মিলিতভাবে অন্যায়কে প্রতিরোধ করে ও ন্যায় কায়েম করে তারা আল্লাহর দয়া লাভ করবে। যে সমাজ এই কাজ করবে আল্লাহর দৃষ্টিতে সফল সমাজ। কাজেই এটা নিশ্চিত হচ্ছে যে এই সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের প্রতিরোধ ইসলামের একটি মৌলিক বিধান, যার মাদ্যমে মুসলমানরা আল্লাহর খলিফা হিসেবে পৃথিবীতে তাদের মিশন পূণ© করবে। কুরআন মুসলমানদের আরও সতক© করে দেয় যে, অতীতে যে সব জাতীর ভাল লোকেরা তাদের খারাপ লোকদের অন্যায় কাজে বাধা দেয়নি সেসব জাতির ওপর যখন আযাব দেয়া হয় তখন খারাপদের সাথে ভালদেরও রেহাই দেয়া হয়নি। প্রকৃত মুমীনরা সমাজ সংস্কারে সব©দা তৎপর থাকেন॥
৫. সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধের পন্থা
রাসূল (সাঃ) বলেন, “তোমাদের কেউ অন্যায় কাজ হতে দেখলে সে যেন তার হাত দিয়ে তাতে বাধা দেয়। এর সামথ্য© না থাকলে সে যেন কথা দিয়ে চেষ্টা করে, তাও সমথ্য© না থাকলে অন্তরের মাধ্যমে। এটাই হচ্ছে ঈমানের দব©লতম প্রকাশ।”
৬. উপরের প্রশ্নের উত্তরে বণি©ত বিভিন্ন বিকল্প কম©পন্থার ব্যাখ্যা
উপরে বণি©ত হাদিস থেকে এটা বোঝা যায় যে, রাসূল (সাঃ) অন্যায়ের বিরুদ্ধে কম©পন্থা বলতে গিয়ে বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে শ্রেষ্ঠ থেকে দুব©লতম পয©ন্ত বণ©না করেছেন। তা হচ্চে-
প্রথমতঃ কাজের মাধ্যমে অন্যায়ের প্রতিরোধ(হাত); দ্বিতীয়ত কথার মাধ্যমে (যেমন- অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা) ; তৃতীয়ত ঃ হৃদয়ের মাধ্যমে (যেখানে মুসলমান অন্যায় দেখে কষ্ট পাবে কিন্তু কিছু করতে ক্ষমতাহীন)। যখনই কোন মুসলিম কোন অন্যায় দেখবে তখনই সে তার অবস্থা দেখে এবং সময়ের আলোকে এই হাদিসের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যদি কোন ব্যাক্তি দেখে একদল শিশু একটি পশুকে অত্যাচার করছে তার উচিৎ হবে প্রথমতঃ পশুটিকে মুক্ত করা। কারণ বাচ্চাদের পশুর প্রতি নমনীয় হবার উপদেশ দেয়ার চেয়ে সেটা অগ্রাধিকার পাবে। আবার কেউ যদি তার বন্ধুকে মদ্যপান করতে দেখে তবে সেখানে শক্তি প্রয়োগের চেয়ে আন্তরিকতার সাথে বুঝানো বেশী ফলপ্রসূ হতে পারে। সাথে সাথে এটাও মনে রাখা দরকার যে, সমাজের প্রতিষ্ঠিত অসৎদের শুধু মুখের কথায় পথে আনা যাবে না, এজন্যে সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও প্রতিরোধ আবশ্যক হবে।
৭. নীরবতা ও দায়িত্ব এড়ানোর প্রচেষ্টা সম্পকে© ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি
সূত্র নিদে©শিকা- খালীফা ওমর (রাঃ) বলেণ, “আল্লাহ যেন তাকে দয়া করেন, যে আমাকে আমার ভুল ধরিয়ে দেয়।” আল কুরআন- ৮:২৫
ইসলামের দৃস্টিতে নীরবতা কখনই বিশ্বাসীদের জন্য সঠিক পথ হতে পারেনা। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যাক্তি অন্য বিশ্বাসীদের বিষয়ে উদাসীন সে তাদের অন্ত©ভুক্ত নয়। সাধারণতঃ তিনটি কারণে মানুষ দায়িত্ব এড়াতে চায়-
ক. বন্ধুত্ব হারানোর ভয়ে।
খ. অন্যদের মোকাবেলায় একা হয়ে যাবার ভয়ে।
গ. নীরবতা অথবা দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টায়।
প্রথম যুক্তি এজন্য গ্রহণযোগ্য নয় যে, নিজের দোষ ধরিয়ে দেয়া যারা পছন্দ করেনা তাদের আচরণ ইসলাম সম্মত নয়। এমন বন্ধু হারানোর কোন ক্ষতি নেইঅ আর দ্বিতীয় যুক্তি এজন্য গ্রহণীয় নয় যে, সবাই এই যুক্তি অনুসরণ করলে আজ পয©ন্ত পৃথীবিতে ভাল কিছু হতনা। মানুয়ের ভাল প্রচেষ্টার সাফল্যের মালিক আল্লাহি। কিন্তু প্রচেষ্টা ঠিকমত করা মানুষের দায়িত্ব। তৃতীয় যুক্তিকে কেউ এভাবে জায়েজ করতে চায় যে, নিজের পরিশুদ্ধির ও মুক্তি হলেই তা যথেষ্ট। কিন্তু এটাও গ্রহণ যোগ্য নয়। কেউ যদি মনে করেন অন্যায়কারীরা অন্যদের আক্রমণ করেচে, কাজেই আমার ভয়ের কিছু নেই তবে তা হবে নিজের দরজা পয©ন্ত আসার সুযোগ করে দেয়া। এটা ঠিক যে অনেক সময় ব্যাক্তিগত চেষ্টায় সমাজ থেকে অন্যায় উৎখাত করা যায়না। এজন্য সমন্বিত চেষ্টা দরকার।
জি- ৭ সামাজিক দায়িত্ব- ২
প্রশ্নঃ
১. সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধের বিধান কি কুরআনে বণি©ত ‘ধমে© কোন জবরিস্তি নেই’- মূলনীতির বিরোধী নয়?
২. কোন মুসলমান যদি দাবী করে যে আমি নিজে সৎপথে আছি, এ অবস্থায় তাকে অহেতুক খারাপ লোকদের সাথে লড়তে যাবার দরকার নেই?
৩. ইসলামে এমন কোন নিশ্চয়তা আছে কি যার কারণে কেউ আল্লাহর কথাকে নিজ স্বাথে© ইচ্ছা মত ব্যবহার করতে পারবে না?
৪. সামাজিক দায়িত্ব কিভাবে বিধিবদ্ধ ইবাদত- বরে সাথে সম্পৃক্ত? এ দুটোর মধ্যে কোনটা অগ্রাধিকার পাবে?
৫. সামাজিক দায়িত্ব কিভাবে কাজে পরিণত হয় তার উদাহরণ দিন।
৭. সত্যিকার ইসলামী সমাজের মূল বৈশিষ্ট্যগুলো কি কি?
উত্তরঃ
১. সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধের সাথে ‘ধমে© কোন জবরিস্তি নেই’- মূলনীতির কথিত বিরোধ প্রসঙ্গে [সূত্র নিদে©শিকা- আল কুরআনঃ ২:২৫৬]
এটা একটা মহৎ বিধান যে ইসলাম ধম© গ্রহণের জন্য মানুষকে জার জবরদস্তি করার অনুমতি মুসলমানদের কুরআন দেয়নি। প্রত্যেকেরই তার স্ব স্ব ধম© পালনের স্বাধীনতা ইসলাম ইসলামী রাষ্ট্রে আছে। সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ এর মাধ্যমে এই স্বাধীনতা বিন্দু মাত্র ক্ষুন্ন হয়না। কোন সমাজই তার মধ্যে দুনী©তি পাপাচারকে অবাধে চলতে দিতে পারেনা। অসৎ দুনী©তিবাজ লোকের হাতে সমাজকে জিম্মি করে দিয়ে তাদের রক্ষার জন্য ধমে© কোন জবরদস্তি নেই বলার সুযোগ ইসলামে নেই । ইসলামে বণি©ত সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধের মাধ্যমে দুষ্ট দুনী©তিবাজ ব্যাক্তিদের কবল থেকে সমাজের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা, ইজ্জত ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা যায়।
২. বিভ্রান্তদের প্রতি বিশ্বাসীদের আচরণ [সূত্র নিদে©শিকা- আল কুরআনঃ ৫:১০৫]
কুরআনে একটি আয়াত আছে যে, অবিশ্বাসীরা কি করল তা মুমীনদের দেখার বিষয় না(৫:১০৫। এর প্রকৃত অথ© হচ্ছে কোন ব্যাক্তি যে ঈমান আনে নি, আবার তার কাজ বা তৎপরতা দিযে সে সমাজের কোনও ক্ষতি করেছেনা, মানুষের অিধিকারও নষ্ট করছেনা এব্যাপারে মুমিনদের করার কিছু নেই। কিন্তু যদি একজন অবিশ্বাসী তার কম©কান্ডের মাধ্যমে ইসলামী সমাজের বা ধমে©র গোড়ায় আঘাত হানে তবে তার ব্যাপারে নিলি©প্তি থাকা ইসলাম সম্মত নয়। হযরত আবু বকর (রাঃ) এর খেলাফতের যুগে যখন কিছু মুসলমান পূবে© উল্লেখিত কিছু আয়াতের কথা বলে নিস্ক্রিয় থাকতে চেয়েছিল তখন তিনি তাদেরকে রাসূলের (সাঃ) এই হাদিস বলে সতক© করে দেন যে সমাজে ক্ষতিকর কিছু হতে থাকলে মুসলমানরা যদি নিস্ক্রিয় বসে থাকে তবে আল্লাহর আযাব সবাইকে গ্রাস করবে।
৩. আল্লাহর কথাকে নিজ স্বাথে© ইচ্ছা মত ব্যবহারের বিরুদ্ধে ইসলামের ব্যাবস্থা
যে কোন ধমে©র ক্ষেত্রে এই গ্যারান্টি দেয়া কঠিন যে, তার অনুসারীরা কেই স্রষ্ঠার কথাকে নিজ স্বাথ্যে ব্যাবহার করবে না। ইসলামও এর ব্যাতিক্রম নয়। তবে এক্ষেত্রে ইসলামে এমন এক অনুপম ব্যাবস্থা আছে যাতে কেউ তার অপকমে©র ব্যাখ্যা হিসেবে এটা বলতে পারবে না যে সে আল্লাহর ইচ্ছায় এমন কাজ করেছে। ইসলামের মূলনীতি সমূহের আলোকে এমন ব্যাক্তির কাজ এবং দাবী যে অবৈধ তা প্রমাণ করা যায়। ইসলামে একমাত্র ওহী (প্রত্যাদেশ যা নবী রাসূলরা লাভ করেন) ছাড়া আল্লাহর সরাসরী আদেশের সুযোগ কারো নেই।
আল্লাহর সরাসরী আদেশ একমাত্র কুরআনেই আছে যার ব্যাখ্যা রাসূল (সঃ) এর হাদিসে পাওয়া যায়।
৪. সামাজিক দায়িত্ব ও আনুষ্ঠানিক ধমা©চার [সূত্র নিদে©শিকা- আল কুরআনঃ ২:১৭৭]
ইসলামে ধমী©য় আচার অনুষ্ঠান শুধু নিদি©ষ্ঠ কিছু আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ নয়। কুরআনে সৎপন্থা (হক্ক) বলতে বুঝায় আল্লাহর প্রতি ঈমান, দরিদ্রদের দান ও যাকাত আদায় (সামাজিক ন্যায় বিচার), নামাজ, রোজা (আনুষ্ঠানিক ইবাদত) , ওয়াদা রক্ষা করা, সঙযম, অদ্যবসায় ও সামাজিক দায়িত্ব সম্পন্ন হওয়া। যেহেতু এগুলো সবই ইসলামের বণি©ত হক্ক এর অন্ত©ভূক্ত সেহেতু ইসলামে সামাজিক দায়িত্ব ও আনুষ্ঠানিক এবাদতকে পৃখত করার সুযোগ নেই।
৫. সামাজিক দায়িত্ব কিভাবে কাজে পরিণত হয় [সুত্র নিদে©শিকা- আল কুরআনঃ ৫:১২
সামাজিক ঐক্য ও সংহতিই মানুষের সামাজিক দায়িত্ববোধকে সম্মিলিত করে বৃহৎ কাজে পরিণত করে।
নিন্মলিখিত উপায়ে সমাজে ঐক্য ও সংহতি আসেঃ
ক. পরিবারঃ কারণ পরিবার হরো সমাজের একক। পরিবারের সদ্স্যদের মাঝে ঐক্য, ভালোবাসা এবং আকষ©ণ সমাজে সঞ্চালিত হয়। আবার পরিবার গুলোতে বিরাজমান অবিশ্বাস ও অশান্তি সমাজকেও আক্রান্ত করে। ইসলাম পরিবার রক্ষার উপর জোর দেয়।
খ. কম©ক্ষেত্রঃ প্রত্যেক মুসলমান কম©ক্ষেত্রে তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে।
গ. সমাজঃ সমাজে প্রত্যেক মুসলমান নিজেকে সমাজের দায়িত্বশীল হিসেবে চিন্তা করে এর স্বাথ© সংরক্ষণ করবে।
ঘ. সমাজকে ঐক্যবদ্ধ রাখার ব্যাপারে সবাই সহযোগিতা করবে।
ঙ. সমাজিক সচেতনতাঃ রাসূল (সাঃ) বলেন, “ঐ ব্যাক্তি ঈমানদার নয় যে তার প্রতিবেশীকে অভূক্ত রেখে নিজে পেট ভরে খেয়ে ঘুমাতে যায়।
৬. সত্যিকার ইসলামী সমাজের মূল বৈশিষ্ট্যগুলো [সূত্র নিদে©শিকা – আল কুরআনঃ ৮২:৭, ৪:৫৮]
আল্লাহ পৃথিবী এবং মানব জাতিকে যে ভারসাম্যপূণ©ভাবে সৃষ্টি করেছেন তার বণ©না দিতে ‘আদল’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এই একই শব্দ মানুসে মানুষে সম্পক© ও সামাজিক ভারসোম্যর ব্যাপারে আদেশ দেয়ার সময় ব্যবহৃত হয়েছে। সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলদের কুরআন আদেশ দেয় রাষ্ট্র পরিচালনায় মধ্যপন্থা অবলম্বন করকে, আথ©ক ন্যায়নীতি ও সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে, সমাজের এক অংশ যেন আরেক অংশের উপর শোষণ অবিচার না করে তা নিশ্চিত করতে হবে। বিচারকদের ন্যায়বিচার করতে হবে।
৭. সত্যিকার ইসলামী সমাজের মূল বৈশিষ্ট্য
ক. সমাজের তথা জগতের মূল কতৃ©ত্ব আল্লাহর হাতে।
খ. আল্লাহর আধ্যাত্মিক বিধান অনুযায়ী সমাজ পরিচালিত হবে।
গ. সমাজ পরিচালিত হবে আল্লাহর দেয়া মানব কল্যাণ ও ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক মিশন সফল করতে।
ঘ. সমাজ হবে ভারসাম্যপূণ© ও ন্যায়নীতি সমৃদ্ধ। তাতে আত্মিক ও পাথি©ব উভয় দিয়ে উন্নতির ব্যবস্থা থাকবে। সমাজে প্রতিটি সদ্স্যদের মযা©দা, সম্মান নিরাপত্তা নিশ্চি থাকবে।
জি- ৮ দাস প্রথার অবসান প্রসঙ্গে- ১
প্রশ্নঃ
১. রাসূল (সাঃ) যখন তার মিশন শুরু করেন তখন ক্রীতাদাস প্রথা কোন অবস্থান ছিল?
২. ক্রীতাদাস মুক্ত করতে ইসলামের মানবিক আবেদন সম্পকে© বলুন।
৩. ক্রীতাদাস সম্পকে© ব্যবহার সংক্রান্ত এবং তাদের অধিকার রক্ষায় ইসলামে আর কোন শিক্ষা আছে কি?
৪. এসব শিক্ষা কি মুসলমানদের উপর কি কোন লক্ষ্যনীয় পরিবত©ন আনতে সক্ষম হয়েছিল?
৫. ব্যাক্তি পযা©য়ে আবান ছাড়া দাস প্রথা উচ্ছেদ ইসলামে কোন আইনগত ব্যবস্থা ছিল কি?
৬. ইসলাম সরাসরি দাস প্রথা উচ্ছেদ করেনি কেন?
৭. রাসূল (সাঃ) এর জীবদ্দশায় যেমন মদ্যপান নিষিদ্ধ করা হল, তেমনি তার জীবদ্দশায় দাস প্রথা উচ্ছেদ করা হলো না কেন?
উত্তরঃ
১. রাসূল (সাঃ) এর মিশনের শুরুতে দাস প্রথার অবস্থা
সপ্তম শতকে যখন রাসূল (সাঃ) তার মিশন শুরু করেন তখন দাস প্রথা বহুলভাবে চালু ছিল, যদিও তার ধরণ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ছিল। তিনভাবে ক্রীতদাস সংগৃহীত হত। যথা- ১. যুদ্ধবন্দী, ২. অপহরণ, ৩. ঋণগ্রস্ত মানুষ যখন ঋণ পরিশোধ করতে পারত না তখন মহাজনরা তাকে দাস বানাত। এটা ছিল এমন এক ছিল যখন দাসরা প্যণের মত ব্যবহৃত হত। নিম©ম নিযা©তনের শিকার হত। মালিক তার দাসকে ইচ্ছামত মারার এমনকি হত্যা করার অধিকার রাখত। রোমানদের মধ্যে তো দাস হত্যা একটি আনন্দদায়ক খেলা ছিল। এমন সময়ে ইসলামের অভূদ্যয় শুধু দাসপ্রথার উচ্ছেদই সূচনা করেনি বরং মানুষের অন্তরে এমন পরিবত©ন আনে যা দাস এবং তার মালিক উভয়ের মধ্যে সাম্যতার অনূভূতি নিয়ে আসে। উভয়ের মাঝে মানব সাম্য প্রতিষ্ঠা করে।
২. দাস প্রতা উচ্ছেদে ইসলামের মানবিক আবেদন
[সূত্র নিদে©শিকা- আল কুরআনঃ ৪:১, ২:২২১, ৪:২৫]
প্রথমতঃ ইসলামের মূল কথা হচ্ছে মানুষ আল্লাহ ছাড়া আর কারো দাসত্ব করবে না। ইসলাম অথ© আল্লাহকে আত্মসমপণের মাধ্যেমে শান্তি অজ©ন।
দ্বিতীয়তঃ কুরআন বলে সকল মানুষ এক আত্মা থেকে সৃষ্ট। একথা আবার হাদিসে এভাবে সমথি©ত আছে যে সকল মানুষ হচ্ছে আদম (আঃ) হতে উদ্ধুত এবং আদম (আঃ) মাটি থেকে সৃষ্ট ; এ থেকে মানব সমতা ও ভ্রাতৃত্বের যে দশ©ণ উৎসারিত হয় তা মানুষ কতৃ©ক মানুষের দাসত্বের ধারণাকে উৎখাত করে। সবো©পরী ইসলাম এ্ই শিক্ষাই দেয় যে আল্লাহ শুধুমাত্র বৈচিত্র্য সৃষ্টির জন্যই মানুষকে বিভিন্ন বণ©, ভাষা, গোত্র ও জাতিতে ভাগ করেছেন; কারো উপর কারো প্রভুত্বের জন্য নয়। তদুপরি আল্লাহর দৃষ্টিতে সেই শ্রষ্ঠ্ যে বেশী তাকওয়া (খোদাভীতি সম্পন্ন)। রাসূল (সাঃ) মুমীনদের ভাল বংশের অবিশ্বাসী নারীকে বিয়ে করার চেয়ে বিশ্বাসী দাসীকে বিয়ে করতে উৎসাহিত করেছেন॥ ইসলামের এসব ব্যাবস্থা মানুসের মন থেকে দাসপ্রথার অনূকূল দশ©ণকে ভ্রাতৃত্ব ও সমতার অনূভুতি
দিয়ে প্রতিস্তাপিত করে। এরপর যা অবশিষ্ট থাকে তা মূলতঃ অন্ত©বতী©কালীন ব্যাবস্থা।
৩. দাসদের সাথে ব্যবহার সংক্রান্ত ইসলামের শিক্ষা
[সূত্র নিদে©শিকা- আল কুরআনঃ ৪:৩৬, ২:২৫৬]
কুরআন হাদিসে দাসদের সাথে সুব্যবহারের সংক্রান্ত অসখ্য নিদে©শনা রয়েছে। কুরআনের আল্লাহর উপর বিশ্বাসের সাখে সুব্যবহারের কথা এক বাক্যে এসেছে। কুরআন দাস প্রথাকে এক অন্ত©বতী©কালীন ব্যাবস্থা হিসেবেই নিদে©শিত করে। এক হাদিসে রাসূল (সাঃ) বলেন, দাসরা তোমাদের ভাই, আল্লাহ যদি চাইতেন পরিস্থিতি উল্টে করে ও দিতে পারতেন (অথা©ৎ মালিক নিজে দাস ও দাস মালিক হতে পারত)। ইসলামে দাসদের নিদি©ষ্ট যে অধিকার দেয় তা হচ্ছে-
ক. তাদের নিজস্ব ধম© অক্ষুন্ন রাখতে এবং তা চচা© করতে।
খ. খাদ্য ও বস্ত্রের অধিকার। মালিক যা খাবে এবং পরবে দাসদেরও তা খেতে এবং পরতে দিতে হবে। তাদের সাধ্যাতীত কোন কাজ দেয়া যাবে না। যদি মালিকের কোন কঠিন কাজ থাকে তবে ঐ কাজে মালিক নিজে সাহায্য করতে হবে।
গ. মালিক তার দাসের প্রতি ক্ষমা সুলভ হবেন।
ঘ. একজন প্রাক্তন ক্রীতাদাস মুসলমানদের নেতা হতে পারেন এবং তিনি নামাজে ইমামতি করতে পারেন। এক্ষেত্রে তার আনুগত্য করা সব মুসলমানের দায়ত্ব।
ঙ. রাসূল (সাঃ) শিখিয়েছেন যে, কেউ তার দাসদের আমার দাস বা আমার লোক এভাবে না ডেকে আমার পুত্র বা আমার কণ্যা এভাবে ডাকবে।
৪. এসব শিক্ণা কিভাবে মুসলমানদের আচরণ পরিবত©ণ করবে
ইসলামের মানবিক আবেদন যে তৎকালীন আরববাসী মুসলমানদের আচরণে বৈল্পবিক পরিবত©ন এনেছিল তার অসংখ্য দৃষ্টান্ত আছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, প্রথমদিকে ইসলাম কবুলকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হযরত বেলাল (রাঃ) যিনি ছিলেন একজন হাবশী গোলাম। তাঁর মালিক যখন ইসলাম কবুল করায় তার উপর চরম অত্যাচার চালাচ্ছিল তখন হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) তাকে দ্বিগুণ দামে কিনে নেন এবং মুক্ত করেন। পরবতী©তে তিনি সাহাবায়ে কেরামদের মাঝে গুরুত্বপূণ© অবদান রাখেন। তিনি ছিলেন ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন। একদিন মানুষ দেখলেন আবু বকর (রাঃ) তাঁর ক্রীতাদাসের চেয়ে ও কমদামী পোশাক পড়ে আছেন। লোকজন যখন তাকে এ ব্যাপারে জীজ্ঞাস করল তখন তিনি বললেন যে তিনি একজন বৃদ্ধ মানুষ কিন্তু ক্রীতাদাস তো যুবক। তার ভাল কাপড় পড়তে শখ হয়েছে তাই নিজে কমদামী পড়ে ক্রীতাদাসকে দামী কাপড় দিয়েছেন॥ একজন সাহাবী আবু বকর (রাঃ) একজন কালো মানুষের সাথে ঝগড়ার এক পযা©য়ে রেগে বললেন, তুমি একজন কাল মায়ের পুত্র। একথা শুনে রাসূল (সাঃ) ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, “কাল এবং ফসা© মায়ের পুত্রের মধ্যে কোন পাথ©ক্য নেই।” রাসূলের এই নসীহত শুনে সাহাবী আবু বকর (রাঃ) এত হলেন যে, তৎক্ষনাৎ বালতে শুয়ে গিয়ে নিজের মুখে ঐ কালো ব্যাক্তির পা রাখতে বললেন।
এছাড়াও আরও বলা যায় তৎকালীন ধনী মুসলমানরা দাস কিনতেন তাদের মুক্ত করার জন্য। আর অনেক প্রাক্তন দাস ইসলামী রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূণ© আসন লাভ করেছিল।
৫. দাস প্রথা উচ্ছেদে ইসলাম গৃহীত আইনগত ব্যাবস্থা
ক. দাসদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছিল। দাস পরিবারের কারো বিরুদ্ধে আক্রমণ মোকেবেলায় পুরা পরিবার ব্যবস্থা নিতে পারত।
খ. দাস প্রথাকে মুক্ত করাকে আখেরাতের অনত্যম মুক্তির উপায় বলে উল্লেখ করে কুরআনে দাস প্রথা উচ্ছেদের সূচনা করে।
গ. বিভিন্ন পাপোর জরিমানা (কাফপারা) হিসেবে কুরআনে দাসমুক্তির কথা উল্লেখ করে। যেমন- অনিচ্ছাকৃত হত্যা, ওয়াদা ভঙ্গ, ইচ্ছাকৃত ভাবে রোযা ভঙ্গ এবং আদজিহার- এর মাধ্যমে তালাক। এভাবে যখনই কেউ এসব পাপ করত তখন সে তার কাফফারা হিসেবে দাসমুক্ত করতে। এছাড়াও এ বিধান ছিল যে কেউ ঠাট্টাবশতঃ কোন দাসকে যদি বলত, তুমি মুক্ত হবে, সে মুক্ত হয়ে যেত।
৬. ইসলাম এককথায় দাস প্রথা নিষিদ্ধি করেনি কেন
প্রথম প্রশ্নের উত্তরে আমরা দেখেছি যে সপ্তম শতকে বিশ্ববাসী দাসপ্রথা এক দৃঢ় আথিক সামাজিক ও রাজনৈতিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। সেই অষ্টাদশ শতকে আমেরিকায় যখন দাস প্রতা উচ্ছেদ করা হল তখনকার গৃহযুদ্ধ এবং কমচুত্য দাসদের বেকারত্ব ও দারিদ্রের কথা আমরা ভূলে যাইনি। কাজেই দাসপ্রথা উচ্ছেদের আগে তৃণমূল পাযায়ে কাজ করার দরকার ছিল। এ ব্যাপারে ইসলাম সফল ছিল। ইসলাম মানুষের মনকে দাসপ্রথার অনূকূলে নিয়ে যায়। তার উপর দাস এর উৎস ইসলাম বন্ধ করে দেয়। যেমন মানুষকে দাসত্বের জন্য অপহরন করা নিষেধ করা হয়। ঋণগ্রস্ত ঋণ শোধে রাষ্ট্র এগিয়ে আসে আর যুদ্ধবন্দীদের মুসলিম যুদ্ধবন্দীদের সাথে বিনিময় ও পণ্যের মাধ্যমে মুক্তির ব্যবস্থা করা হয়। এসব কারণে ইসলামের অভ্যুদয়ে দাসের উৎস বন্ধ হয়।
৭. রাসূল (সাঃ) এর জীবদ্দশায় দাসপ্রথা নিষিদ্ধ হল না কেন
যদিও রাসূল (সাঃ) এর জবদ্দশায় মদ্যপান নিষিদ্ধ হয়, তবুও তার জীবদ্দশায় দাসপ্রথা নিষিদ্ধ হয়নি। কারণ
মদ্যপান ছিল ব্যাক্তিগত সমস্যা, যা ব্যাক্তি পরিশুদ্ধির মাধ্যমে চুড়ান্ত নিষেধাজ্ঞার আগেই সীমাবদ্ধ হয়ে ছিল।পক্ষান্তরে দাসপ্রথা ছিল একটি গভীর সামাজীক সমস্যা, এমনকি রাসূল (সাঃ) মৃত্যূর এক প্রজন্ম পরেই অনেক মুসলমান দাসদের ব্যাপারে আইনভঙ্গ করতে শুরু করে।
জি- ৯ দাসপ্রথার অবসান প্রসঙ্গে- ২
প্রশ্ন:
১. এটা ক সত্য যে ইসলামী যুদ্ধবন্দী ছাড়া আর সব দাসের উৎস বদ্ধ করেছিল?
২. যদিও ইনলাম দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করেনি কবুও এমন কোন প্রমাণ আছে যাতে বুঝা যায় ইসলাম এটাকে একটা অন্ত©বতী©কালীন ব্যবস্থা হিসেবে বহাল রেখেছিল?
৩. দাসী প্রশ্নে ইসলামের অবস্থান কী?
৪. ইসলামে দাসের পক্ষে নিজেকে মুক্ত করার কোন সুযোগ ছিল কি? নাকি সে মালিকের ইচ্ছার অধীন ছিল?
৫. মুক্তি মূল্য গ্রহণের বিনিময়ে দাসের মুক্তি দিতে মালিক কি বাধ্য?
৬. কিভাবে একজন দাস তার মুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় অথ© সংগ্রহ করবে?
উত্তরঃ
১. এটা ক সত্য যে ইসলামী যুদ্ধবন্দী ছাড়া আর সব দাসের উৎস বদ্ধ করেছিল?
এটা সত্য ইসলাম শুরুতেই যুদ্ধবন্দী ছাড়া আর সব দাসের উৎস বন্ধ করে দিয়েছিল। যদিও মুসলমানরা কখনও শান্তিকামী মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনা। তারা জাতীয়তা অথবা প্রভুত্ব কায়েমের জন্য অথবা তাদের রাজ্যের সীমানা বাড়তে যুদ্ধ করেনা । তারা এ উদ্দেশ্যে অন্য রাজ্যে আক্রমণ করেনা যে সেখান থেকে মানুষ ধরে দাস বানাবে। ইসলামী আইনে শুধু দুটো ক্ষেত্রে যুদ্ধের অনুমোদন আছে-
ক. আগ্রাসন প্রতিহত করার জন্য।
খ. নিযা©তিত মানুষকে উদ্ধার করতে।
এসব যুদ্ধে মুসলমানরা যাদের বন্দী করত তরা মূলতঃ আগ্রাসী বা হামলাকারী। কাজেই এদর বন্দী করার যৌক্তিক কারণ আছে। এদের ব্যাপারে ইসলামের নীতি ছিল যে এদর সাথে প্রথমত: সৎ ব্যবহার করতে হবে। দাসত্বই তাদের একমাত্র পরিণতি ছিল না। মুসলিম বন্দীর সাথে বিনিময়, অথ© মূল্যে মুক্তি এবং মুসলমানদের লেখাপড়া শেখানোর বিনিময়ে মুক্তির ব্যবস্থা ছিল। তারপরও এটা বলা যায় যে তখন এমন একটা যুগ যখন জেলখানা গড়ে উঠেনি। ফলে যুদ্ধবন্দীদেরকে যুদ্ধে অংমগ্রহণ কারী কোন মুসলমানের জিম্মায় দেয়া ছাড়া উপায় ছিল না।
২. ইসলাম যে দাস প্রথাকে অন্ত©বতী©কালীন ব্যবস্থা হিসেবে নিয়েছিল তার প্রমাণ
[সূত্র নিদে©শিকা- আলকুরআনঃ ৪৭:৪]
প্রথমতঃ ইসলাম যুদ্ধবন্দী ছাড়া আর সব দাস সংগ্রহের উৎস বদ্ধ করে দিয়েছিল। অতঃপর যুদ্ধবন্দীদের ব্যপারে কুরআনে নীচের দুটো ব্যবস্থা নিতে বলে-
ক. তাদের নিঃশত© মুক্তি ও ক্ষমা।
খ. অথে©র বিনিময়ে অথবা মুসলিম যুদ্ধবন্দীর বিনিময়ে তাদের মুক্তি দেয়া অথবা মুসলমান সমাজের উন্নয়নে তাদের মেধা বা শ্রম খাটাবার বিনিময়ে মুক্তি দেয়।
৩. দাসীদের ব্যাপারে ইসলামের অবস্থান
ঐতিহাসিকদের মতে প্রাচীন সেমেটিকদের মধ্যে এই প্রথা ছিল। নারীদের বিশেষ দাসত্ব ইসলামে অন্যসব দাসত্বের মতই গ্রহণযোগ্য নয়। দাস প্রথা অবসানে ইসলাম যেমন ব্যাবস্থা নিয়েছে , তেমনি এই ঘৃণ্য ব্যবস্থার ব্যাপারেও ইসলাম একই ব্যাবস্থা নিয়েছে।
ইসলাম নারী যুদ্ধবন্দীদের সাথে সাথে পুরূষ যুদ্ধবন্দীদের মতই ব্যবহার করতে বলেছে। নারী যুদ্ধবন্দীদের বিপদের সম্ভবনা বেশী কারণ তারা প্রায়ই পিতা/মাতা/ভাইকে যুদ্ধে হারায়। ফলে তারা আথি©ক নিরাপত্তা সংকটে পড়ে পতিতাবৃত্তির শিকার হতে পারে। এসব বিপদের কথা চিন্তা করেই ইসলাম তাদেরকে অনুমোদিত বসবাসের সুযোগ দিয়েছে। এই অনুমোদিত বসবাসের বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ
ক. অনুমোদিত বসেবাসের সুযোগটা প্রায় বিয়ের অনুরূপ কিছু আলেম মনে করেন যে, বিবাহ ছাড়া এরকম মিলনের অনুমতি ইসলামে নেই। (দ্রষ্টব্যঃ মুহাম্মদ আসাদ, ‘দি মেসেজ আব দি কুরআন’ টি কা২৬, সুরা নিসা- অনুবাদক) মহিলা বন্দী প্রায় সকল বিষয়ে স্ত্রীর মযা©দা ভোগ করত।
খ. বৈধ বিয়ের সাথে এর একটি মাত্র পাথ©ক্য ছিল যে স্ত্রীর মতামত (কবুল) এর প্রয়োজন থাকত না। যুদ্ধোত্তর ভয়াভহ পরিস্থিতির মধ্যে এমটা হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
গ. মহিলা ‘বন্দী’ হিসেবে থাকত না বরং সব ধরণের চলাফেরার স্বাধীনতা পেতেন, এবং ভরণ পোষণ নিরাপত্তাসহ নিরাপত্তা পেতেন।
ঘ. প্রাচীন যুহের মহিলা বন্দীদের মত অগণিত সৈন্যদের ভোগ লালসার স্বীকার হত না বরং একজন স্বামী সংসার দুটোই পেত। এত মহিরা বন্দী এবং সৈনিক উভয়েই যৌন উচ্ছৃঙ্খলতার সম্ভাবনা থেকে মুক্ত হত।
ঙ. দাসীদের মত এদের সন্তানরা দাস হতনা বরং মহিলা বন্দীর কোন সন্তান হলে সে হত মুক্ত।
৪. দাসদের পক্ষে নিজেকে মুক্ত করার সুযোগ
সব©প্রথম ইসলাম ‘মুকতাবা’ নামের এক স্কীম ঘোষণা করে। যার মাধ্যমে ক্রীতদাস তার মালিকের সাথে আলাপ করে উভয়ে আলাপ করে একটি মুক্তিমূল্য ঠিক করবে এবং ক্রীতদাস ধীরে ধীরে উক্ত অথ© পরিশোধ করে মুক্ত হবে। এভাবে মুকতাবা দাসমুক্তির সূচনা করে।
৫. মুক্তিমূল্য গ্রহণের বিনিময়ে দাসের মুক্তি দিতে মালিক কি বাধ্য
[সূত্র নিদে©শিকা- আলকুরআনঃ ২৪:৩৩]
(মালিক কি পূবে©র চুক্তি অমান্য করতে পারে)
কুরআনের যে আয়াতে মুকতাবার বিনিময়ে দাসমুক্তির প্রসঙ্গ এসেছে সেখানে আদেশ সূচক বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘তাদের মুক্তি দাও’; এমন বলা হয়নি যে তাদের মুকতাবার বিনিময়ে মুক্তি দিতে পার। বরং কুরআনে মালিককেই এই আদেশ দেয়া হয়েছে যে, সে যেন দাসকে তার মুক্তি মূল্য অজ©নে সাহায্য করে। দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) তার একজন সহযোগীকে যিনি মুকতাবা অস্বীকার করতে চাইছিলেন, তাকে অবিলম্বে দাস মুক্ত করার আদেশ দেন। যদি কুরআনের আইনে এমন বাধ্যবাধকতা না থাকত তবে খলিফা এমন আদেশ করতেন না।
৬. দাস কিভাবে তার মুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় অথ© সংগ্রহ করবে
[সূত্র নিদে©শিকা- আলকুরআনঃ ৯:৬০]
কুরআন যাকাত বিতরণের কিছু নিদি©ষ্ট খাত উল্লেখ করেছে যার একটি হল ‘ক্রীতাদাস মুক্ত করা’ কাজেই প্রত্যাশী ক্রীতাদাস যাকাতদাতা মুসলমানদের কাছ থেকে সহজেই যাকাত সংগ্রহ করে তার মুক্তিমূল্য অজ©ন করতে পারত।