জি-৩৬ দাম্পত্য সম্পর্ক-১
(স্ত্রীর অধিকার)
প্রশ্নঃ
১. বিয়ের মাধ্যমে মানুষ কি কি অধিকার ও দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়?
২. ইসলামে বিয়ের ধর্মীয় ভিত্তি কি?
৩. ইসলামে স্ত্রীর অধিকার কি কি?
৪. ভরণপোষণ বলতে কি বোঝায় এবং এর কুরআন ও হাদিসের ভিত্তি কি?
৫. ভরণপোষণের আইনে স্ত্রীর জন্য স্বামীকে কি কি বিষয় অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে?
৬. ভরণপোষণের মধ্যে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সেবাও কি আসে?
৭. যদি স্বামী চাকুরীচ্যুতি বা ব্যবসায় লোকসানের কারণে স্ত্রীকে আগের মানে ভরণপোষণ না করতে পারে তবে কি হবে?
৮. কোন স্বামী কৃপণ হলে তার স্ত্রী কি তার অজ্ঞাতে তার সম্পদ থেকে কিছু নিতে পারবে?
৯. কোন কোন পরিস্থিতিতে স্ত্রী স্বামীর ভরণপোষণের অধিকার হারায়?
উত্তরঃ
১. বিয়ে থেকে উদ্ভুত অধিকার ও দায়িত্ব
বিয়ের ফলশ্রুতিতে-
ক. বিয়ের পর স্ত্রীর মোহরানা পাওনা হয়।
খ. বিয়ের কাবিননামায় উল্লিখিত যে কোন শর্ত স্বামী এবং স্ত্রী উভয়ে মেনে চলতে বাধ্য।
গ. বিয়ের পর স্বামী স্ত্রী পরস্পরের সম্পদের উত্তরাধিকারী হয়ে যায়।
ঘ. স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে পূর্ণ ভরণপোষণ পাওনা হয়।
ঙ. স্বামী-স্ত্রীর থেকে জন্মপ্রাপ্ত সকল সন্তান বৈধ সন্তান বিবেচিত হয়।
চ. বিয়ের পর স্ত্রীর মা এবং একই ধরনের আত্নীয়রা স্বামীর জন্য মাহরিম হয়ে যায়।
এসব বিষয় ছাড়াও যা উল্লেখ করা প্রয়োজন তা হচ্ছে বিয়ের পরও স্ত্রীর পৃথক ব্যক্তিসত্ত্বা ও ব্যক্তি স্বাধীনতা বহাল থাকে। তার নাম পরিবর্তন করার কোন প্রয়োজন হয় না। সে যদি ইহুদি বা খ্রিস্টান হয় তবে তার ধর্ম পরিবর্তনেরও প্রয়োজন হয়না। সে যদি স্বামীর মাযহাব থেকে ভিন্ন মাযহাবের হয় তাহলে তার মাযহাব পরিবর্তনের কোন প্রয়োজন হয় না। তার পূর্ণ আর্থিক স্বাধীনতা থাকে। সে যে কোন আর্থিক চুক্তি বা অন্য যে কোন চুক্তিতে আবদ্ধ হতে এবং সম্পদের অধিকারী হতে পারে।
২. ইসলামে বিয়ের নৈতিক ও আধ্যাত্নিক ভিত্তি
বিয়ের মাধ্যমে স্বামী স্ত্রীর উপর যেসব দায়িত্ব এসে পড়ে ইসলামে তার শুধু আইনগত ভিত্তিই নয় বরং নৈতিক ও আধ্যাত্নিক ভিত্তিও আছে। এসব আইন আল্লাহর প্রতি ঈমান থেকেই উৎসারিত। এই নৈতিক ভিত্তি সম্পর্কে কুরআন ও হাদিস বলেঃ
ক. স্বামী-স্ত্রী উভয়ে আল্লাহর দাসত্বের কথা সর্বাগ্রে মনে রাখবে। পৃথিবীতে আল্লাহর খলিফা হিসেবে দায়িত্ব পালনই তাদের মূল দায়িত্ব। এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের জন্যই নারী পুরুষ একে অপরকে সহযোগিতা করা প্রয়োজন। বিয়ে বন্ধন বিশেষভাবে দু’জন মানুষকে এই সহযোগিতার সুযোগ এনে দেয়। স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে আল্লাহর পথে দৃঢ়ভাবে চলতে সাহায্য ও সমর্থন করবে। কুরআন নির্দিষ্ট ভাবেই বলেছে যে মোমেন মোমেনা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু ও সাহায্যকারী।
খ. কুরআনে বিয়েকে এক পবিত্র বন্ধন হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। কাজেই কেউই যেন এই বন্ধনকে হালকা ভাবে না দেখে।
গ. কুরআনে বিভিন্ন স্থানে বিয়েকে আল্লাহর নিয়ামত হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে এটা এমন এক বন্ধন যা ভালোবাসা, সহানুভুতি আর সহযোগিতা বৃদ্ধি করে। যেমন সূরা বাকারার ১৮৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের জন্য পোশাক আর তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের জন্য পোশাক। এখানে এক সুন্দর উপমার মাধ্যমে বিবাহিত জীবনের মহত্ত্ব বর্ণিত হয়েছে। পোশাক যেমন মানুষকে সুন্দর করে তেমনি বিয়ে মানুষের ঈমানকে পূর্ণতা দিয়ে তাকে সুন্দর করে। বিয়ে মানুষকে মানসিক এবং আধ্যাত্নিক প্রশান্তি দেয় যেমন পোশাক মানুষকে শীত থেকে গরম করে প্রশান্তি দেয়। পরনের পোশাক যেমন মানুষের সবচে কাছের তেমনি পৃথিবীতে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের সবচেয়ে কাছের। বিয়ে মানুষকে অবৈধ এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখে যেমন পোশাক আশপাশের ধুলো-ময়লা থেকে মানুষকে মুক্ত রাখে। পোশাক যেমন শরীরের যে কোন দাগকে আড়াল করে রাখে তেমনি বিয়ে স্বামী স্ত্রীর দোষ ত্রুটিকে আড়াল করে রাখে।
রাসূল (সঃ) কে যখন জিজ্ঞাসা করা হলো, পৃথিবীতে মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ কি, তখন তার উত্তরে তিনি বললেন, “পৃথিবীতে মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ এমন জিহবা যা আল্লাহর স্মরণে সিক্ত থাকে, এমন হৃদয় যা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকে এবং বিশ্বাসী ধার্মিক স্ত্রী যে তার স্বামীকে ঈমান রক্ষা করতে সাহায্য করে”।
৩. স্ত্রীর অধিকার
আইনবিদরা স্ত্রীর অধিকারকে দু’ভাগে ভাগ করেছে-
ক. আর্থিক অধিকার-ভরণপোষণ ও অন্যান্য;
খ. ব্যবহারিক অধিকার-স্বামীর কাছ থেকে সুব্যবহার ও সহানুভূতি।
৪. কুরআন হাদিসের দৃষ্টিতে ভরণপোষণ
এটা ইসলামের মুলনীতি যে স্ত্রীর আর্থিক অবস্থা যেমনই হোক তার পূর্ণ ভরণপোষণের দায়িত্ব তার স্বামীর। কুরআন ও হাদিসে এই মুলনীতিই ঘোষিত হয়েছে। স্ত্রী ও সন্তানের পূর্ণ ভরণপোষণ স্বামীর জন্য কোন দয়া দাক্ষিন্যের বিষয় নয়; এটা তার দায়িত্ব। ইসলামী আইন মতে সংসারে স্বামী-স্ত্রী সকল বিষয়ে পরস্পরকে সহায়তা করবে কিন্তূ আর্থিক দায়িত্বটা পুরুষের একারই, তবে স্ত্রী চাইলে সে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে পারে।
৫. ভরনপোষণের আওতায় যে সব বিষয় আসেঃ
ক. আবাসঃ স্বামী তার সামর্থ্যের মধ্যে স্ত্রীর জন্য উপযুক্ত আবাসের ব্যবস্থা করবে। এমন বাসস্থানের ন্যুনতম বৈশিষ্ট্য হবে এই যে সেটা স্ত্রীর জন্য নিরাপদ, আরামদায়ক হবে এবং তাতে তার স্বাধীনতা অক্ষুন্ন থাকবে। স্বামী এবং স্ত্রী একে অপরের অনুমতি ছাড়া তার কোন আত্নীয়কে বাড়িতে রাখতে পারবে না। স্বামী এমন কোন আত্নীয়কে রাখতে পারবে না যে তার স্ত্রীকে কষ্ট দেয়।
খ. খাদ্যঃ স্বামী সমাজে প্রচলিত মানের খাবার স্ত্রীর জন্য নিশ্চিত করবে।
গ. পোশাকঃ এ ব্যাপারে ন্যায়সংগত পোশাকের বর্ণনা সুত্রে উল্লিখিত আছে।
ঘ. সাহাজ্যকারীঃ এ ব্যাপারে অনেক আইনবিদ একমত যে সংসারের কাজে স্ত্রীকে সাহায্য করার জন্য স্বামী কোন লোক রাখবে; বিশেসতঃ স্ত্রী যদি এ কাজে অনভ্যাসবশত অথবা অসুস্থতার জন্য অপারগ হয়।
৬. স্বাস্থ্য সেবা ও চিকিৎসা
স্বাস্থ্য সেবা ও চিকিৎসাও ভরণপোষণের মধ্যে পড়ে। কারণ এটাকে বাদ দিয়ে ভরণপোষণ পূর্ণ হয় না। কুরআন বা হাদিসে এমন কোন উদ্বৃতি নেই যাতে মনে হয় এ দু’টো ভরণপোষণের মাঝে পড়ে না।
৭. স্বামী ভরণপোষণের অক্ষম হলে স্ত্রীর করণীয়
এমন অবস্থায় স্ত্রী দু’টো কাজের যে কোন একটি করতে পারেঃ হয় সে স্বামীর সাথে থেকে তার দারিদ্র্যকে ভাগ করে নেবে; না হয় সে তালাক চাইবে। এর বাইরে হানাফী আইনবিদরা বলেন যে, এসময় স্ত্রী তার অভিভাবক বা নিকটাত্নীয়ের কাছ থেকে সাময়িকভাবে তার ভরণপোষণ নিতে পারে। অথবা সে তাদের কাছ থেকে টাকা ধার এনে স্বামীকে সাহায্য করতে পারে। এই ধার পরে স্বামীকে শোধ করতে হবে।
জাহিরি মতবাদের আইনবিদরা বলেন, এমন অবস্থায় স্ত্রী তার সম্পদ থেকে স্বামীকে সাহায্য করবে, কারণ তালাকের চেয়ে এটা উত্তম। তারা আরও বলেন যে, এ ক্ষেত্রে স্বামীর ঐ সাহায্য ফেরৎ দেবার প্রয়োজন নেই। যদি স্বামী বিয়ের সময় তার আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে মিথ্যা করে বাড়িয়ে বলে এবং স্ত্রী চাহিদা সম্পর্কে উদাসীন থাকে তবে স্ত্রী তালাক চাইতে পারে।
৮. কোন স্ত্রীর স্বামী কৃপণ হলে
রাসূল (সঃ)- এর কাছে একবার আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দা এসে অভিযোগ করল যে, তার স্বামী পরিবার চালাতে পর্যাপ্ত অর্থ দেয় না। এ অবস্থায় সে ‘আবু সুফিয়ানের তহবিল থেকে গোপনে টাকা খরচ করে, তখন রাসূল (সঃ) হিন্দাকে এভাবে টাকা সরাবার অনুমতি দিয়ে বলেন যে, সে যেন তার বৈধ প্রয়োজনের বেশী না নেয়। রাসূলের এই অনুমোদন ইসলামের এই নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত যে কেউ তার বৈধ পাওনা আদায়ে নিজ হাতে ব্যবস্থা নিতে পারে। এছাড়া কারো কৃপণ স্বামীকে পথে না আনা গেলে স্ত্রী আদালতে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে আদালত স্ত্রীর ভরণপোষণের পরিমাণ সাব্যস্ত করে দেবে।
৯. যে সব অবস্থায় স্ত্রী ভরণপোষণের অধিকার হারায়
এ ব্যাপারে আইনবিদরা একমত যে যদি কোন স্ত্রী স্বামীর অবাধ্য বা বিদ্রোহী হয় তবে সে ভরণপোষণের অধিকার হারাবে; বিশেষভাবে যদি স্বামীর অনুমতি ছাড়া গৃহত্যাগ করে অন্যত্র থাকে, অথবা তার অজ্ঞাতে কোথাও বেড়িয়ে এসে তার খরচ বহন করতে বলে। এমন সব প্রেক্ষিত ছাড়া আর সব অবস্থাতেই স্ত্রীর ভরণপোষণ দিতে স্বামী বাধ্য।
সুত্র নির্দেশিকাঃ
প্রশ্ন-২: আল কুরআন ৯:৭১, ৪:২১, ১৬:৭২, ৭:১৮৯, ৩০:২১, ২:১৮৭
রাসূল (সঃ) বলেন, “জীবনে কিছু সুখ আছে, তবে সবচে বড় সুখ হল ভাল এবং ধার্মিক স্ত্রী”।
প্রশ্ন-৪: আল কুরআন ৪:৩৪
প্রশ্ন-৫: আল কুরআন ৬৫:৬
ইসলামী আইন স্ত্রীকে ন্যায়সঙ্গত ভরণপোষণ দিতে বলে। কেউ যদি ধনী হয় তবে তার স্ত্রীকে রেশ্মী পোশাক দেয়া তার দায়িত্ব আর গরীব হলে সূতি বস্ত্র দিলেও তার দায়িত্ব পূর্ণ হয়।
জি- ৩৭ দাম্পত্য সম্পর্ক-২
(স্ত্রীর অধিকার)
প্রশ্নঃ
১. আর্থিক অধিকারের বাইরে স্ত্রীর আর কি কি অধিকার আছে?
২. স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক খুব ভালো না হলেও স্ত্রীর এসব অধিকার বহাল থাকে কি?
৩. হিংসা সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কি?
৪. মুসলিম স্ত্রীর অন্যান্য অধিকার সম্পর্কে বলুন?
৫. উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তরের আলোকে দাম্পত্য সম্পর্ক প্রসঙ্গে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি আলোচনা করুন?
উত্তরঃ
১. আর্থিক অধিকার ছাড়া স্ত্রীর অন্যান্য অধিকার
ইসলামে আর্থিক অধিকারের চেয়েও ব্যবহারিক ও অন্যান্য অধিকার বেশী গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্যে কোন স্বামী তার স্ত্রীকে সকল আর্থিক সুবিধা দিয়ে তার সাথে খারাপ ব্যবহার করলে চলবে না। স্ত্রীকে সম্পত্তির মত বিবেচনা করা যাবে না, তার মানবিক দিক দেখতে হবে। ইসলামী মতে বিয়ে শুধু খাদ্য পানীয়ের পার্টনারশীপ নয়, এটা এমন এক পার্টনারশীপ যাতে অনুভূতি, আবেগ, সুখ, দুঃখ, ভালবাসা-সব ভাগ করে নিতে হয়। কুরআন এবং হাদিসে এর পক্ষেই প্রমাণ পাওয়া যায়। রাসুল (সঃ) বলেন, “তোমাদের মধ্যে সেই সবচেয়ে বড় ইমানদার যার চরিত্র ব্যবহার ভালো এবং তোমাদের মাঝে সেই শ্রেষ্ঠ যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম”। তাঁর নিজের জীবনে স্ত্রীদের সাথে উত্তম ব্যবহার করে তাদের সকল অধিকার নিশ্চিত করে রাসুল (সঃ) বিশ্বজনীন অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি তাঁর জীবনের সব সুখ তাদের সাথে ভাগ করে নিয়েছেন। সব সময় তাদের প্রতি কোমল ছিলেন, কখনও তাদের আঘাত দিয়ে কিছু বলেননি। “যখন তুমি খাবে তখন তাদেরও একই খাবার খাওয়াবে, তুমি যেমন পোশাক পড়বে তেমন পোশাক দেবে, তাদের কখনও অপমান করবে না, তাদের অপবাদ দেবে না এবং তাদের কাছে থেকে দূরে যাবে না…।”
২. স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সুসম্পর্ক না থাকলে স্ত্রী অধিকার প্রসঙ্গে
স্ত্রীর পাওনা ব্যবহারিক অধিকার বলতে ইসলাম এক মানদণ্ড দেয় যা অর্জন করার জন্য প্রত্যেক মুসলমান সর্বোচ্চ সাধ্য প্রয়োগ করবে। যদি স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক খারাপও হয় তবু স্ত্রীর এসব পাওনা নিশ্চিত করতে স্বামীর চেষ্টা করা উচিৎ, কারনঃ
ক. এটা ইসলামের এক মৌলিক শিক্ষা যে ব্যক্তিগত ভাল না লাগার অনুভূতির ঊর্ধ্বে সকল মানুষের মধ্যে ন্যায়নীতি ও সমতার ভিত্তিতে ব্যবহার করতে হবে। স্বামী-স্ত্রীর ক্ষেত্রে এই আইন আরও জোরালো ভাবে কার্যকর।
খ. কোন মানুষই ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। কাজেই কোন স্বামীরই স্ত্রীর ভুলত্রুটির ব্যাপারে বেশী খুঁতখুঁতে না হয়ে নিজের ভুলের দিকে দেখা উচিৎ।
গ. রাসুল (সঃ) বলেন, “কোন মুমীন যেন তাঁর স্ত্রীকে ঘৃণা না করে, যদি তার কোন কাজ তার (স্বামীর) অপছন্দ হয় তখন সে যেন তার (স্ত্রীর) ভাল কাজের কথা মনে করে”। ইসলাম এ শিক্ষাও দেয় যে, মুসলিম নারী-পুরুষ যেন তাদের ভবিষ্যৎ স্বামী বা স্ত্রীকে ‘স্বপ্নের মানুষ’ হিসেবে ভুলের ঊর্ধ্বে মনে না করেঃ জীবন সাথী সম্পর্কে অতি বড় আশা করে থাকলে স্বামী বা স্ত্রী কেউই তার সাথীর গ্রহণযোগ্য ভুলত্রুটিকেও ক্ষমা করবে না; এবং এটা সঠিক নয়।
ঘ. যদিও সিনেমা, নাটক ও উপন্যাসে বিয়েকে বেশী রোমান্টিক ও খুব সহজ বলে মনে হয়, বাস্তবে সুখের সংসার করতে হলে রোমান্সের চেয়ে পরস্পর সদয় ভাবে বোঝা ও মানিয়ে চলার অভ্যাস বেশী জরুরী।
৩. সন্দেহ প্রবণতা সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি
সন্দেহপ্রবণতার মানে যদি এই হয় যে স্বামী বা স্ত্রী যে কেউ তাঁর জীবনসাথীকে কারো সাথে অসৎ সম্পর্ক স্থাপন থেকে বিরত রাখে তবে সেই অরথে এটা ভাল। আর যদি এর মানে এই হয় যে, একে অপরের প্রতি বেশী অধিকারবোধ খাটাচ্ছে তবে তা বর্জনীয়। প্রথম ধরনের সতর্কতার ব্যাপারে রাসুল (সঃ) বলেন যে, তিন ধরনের লোক বেহেশতে যাবে না তার মধ্যে একজন হচ্ছে যে তার স্ত্রীর (বা স্বামীর) অপরের সাথে অবাধে মেলামেশা সম্পর্কে উদাসীন।
আবার একই সাথে রাসুল (সঃ) সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছেন যে আল্লাহ চান শালীনতার বিষয়ে সবাই তার স্ত্রী (বা স্বামীর) সম্পর্কে সচেতন থাকবে। কিন্তূ তাই বলে আল্লাহ স্ত্রীর প্রতি সন্দেহপ্রবন পুরুষকে অপছন্দ করেন। তিনি বলেন যারা ঘর থেকে দূরে থাকে তারা যেন স্ত্রীদের সন্দেহ না করে।
৪. মুসলিম স্ত্রীর অন্যান্য অধিকার
দৈহিক মিলনের সময় স্বামীর কাছ থেকে পরিপূর্ণ তৃপ্তি লাভের অধিকারও সব মহিলার আছে। আইনবিদরা এ ব্যাপারে একমত যে এখানেও স্ত্রীকে সন্তূস্ট করার দায়িত্ব স্বামীর রয়েছে। রাসুল (সঃ) এবং তাঁর সাহাবারা এ বিষয়ে কোন কুসংস্কারে ভোগেননি। এসব বিষয়কে আলোচনা বহির্ভূত বা গোপনীয় বা লজ্জার বলে এড়িয়ে যাননি। যার একটি উদাহরণ পাওয়া যায় হযরত ওমর (রাঃ)- এর জীবনে। রাতে তিনি নাগরিকদের অবস্থা দেখতে বেরুতেন। এক রাতে এক বাড়ীর পাশ দিয়ে যাবার সময় তিনি একজন মহিলা তাঁর একাকীত্বের জন্য কাঁদছেন। তিনি তদন্ত করে জানলেন যে মহিলার স্বামী যুদ্ধে যাবার কারণে অনেক মাস অনুপস্থিত। ওমর (রাঃ) তাঁর কন্যা হাফসা (রাঃ)-এর কাছ থেকে জানলেন যে একজন মহিলা সর্বোচ্চ চার মাস স্বামী সংগ ছাড়া ভাল থাকতে পারেন। অতঃপর ওমর (রাঃ) আইন জারী করলেন যে, যুদ্ধ বা ব্যবসা যে কোন উদ্দেশ্যেই কেউ বাড়ী থেকে চার মাসের বেশী অনুপস্থিত থাকতে পারবে না।
আরেকবার একজন মহিলা ওমর (রাঃ)-এর কাছে নালিশ করেন যে, তাঁর স্বামী এতো ধার্মিক যে প্রতিদিন রোযা রাখেন এবং সারারাত নফল নামাজ পড়েন। এদিকে স্ত্রীকে ঘনিষ্ঠ সঙ্গ থেকে বঞ্চিত রাখেন। ওমর (রাঃ)-এর সাথী কাব আল আসাদ (রাঃ) মহিলার সমস্যা বুঝলেন। তিনি মহিলার স্বামীকে নির্দেশ দিলেন সর্বোচ্চ পর পর তিনদিন এরূপ এবাদত করার জন্য এবং চতুর্থ দিনটি অবশ্যই স্ত্রীর জন্য সংরক্ষিত রাখতে।
৫. এসব ঘটনার আলোকে দাম্পত্য সম্পর্ক প্রসঙ্গে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি
এসব ঘটনা এই উদাহরণই দেয় যে দাম্পত্য মিলন সংক্রান্ত বিষয়াদি ইসলামের দৃষ্টিতে আলোচনার বাইরের বিষয় নয়। বৈবাহিক সম্পর্ক মানসিক; দৈহিক সব ক্ষেত্রেই আল্লাহর নেয়ামত। এই কারণেই রাসুল (সাঃ) বলেন যে, স্বামী স্ত্রী উভয়েই প্রতিবার মিলনের জন্য আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কার পাবে। কারণ তারা আল্লাহর নির্ধারিত পন্থায় আল্লাহর নেয়ামত ভোগ করছে। তিনি আরও কিছু ভদ্রতা শিক্ষা দেন যা এটাকে আরও সফল ও অন্তরঙ্গ করে। তিনি বলেন, শামীরা কোমলতার সাথে স্ত্রীদের কাছে যাবে, আল্লাহর কাছে দয়া করবে যে তাদের মিলনে যদি কোন সন্তান জন্ম হয় তবে যেন সে শয়তান থেকে রেহাই পায় এবং স্ত্রীর পরিতৃপ্তির দিকে খেয়াল রাখবে।
সুত্র নির্দেশিকাঃ
প্রশ্ন-১:আল কুরআন ৪:১৯
রাসুল (সাঃ) বলেন, “আমি তোমাদের নারীদের প্রতি দয়ালু ও বিবেচক হতে আদেশ করি।” তিনি আরও বলেন, “উত্তম চরিত্রের সেই যে মেয়েদের প্রতি ভাল, আর মন্দ লোকেরাই তাদের অপমান করে।” তার নিজের জীবনে দেখা যায় তিনি কত স্বাভাবিকভাবে বিবেচনার সাথে তাঁর স্ত্রীদের সাথে ব্যবহার করতেন। একবার বিবি আয়েশাকে তাঁর বান্ধবীদের সাথে পুতুল খেলতে দেখে তিনি নিজেও তা আনন্দের সাথে উপভোগ করলেন। আরেকবার তিনি আয়েশা (রাঃ)-এর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হলেন।
প্রশ্ন-২: আল কুরআন ৫:৯
রাসুল (সঃ) মুসলমানদের তাদের স্ত্রীদের রাগ-বিরাগ সম্পর্কে সহনশীল হতে বলেন। শক্তি প্রয়োগ তাদের পরিবর্তনের চেষ্টা করতে নিষেধ করেন। তিনি বলেন, “মেয়েরা পাঁজরের বাঁকা হাড়ের মত, অতএব তাদের প্রতি দয়ালু ও বিবেচক হও।” (অর্থাৎ মেয়েরা এক স্বতন্ত্র প্রকৃতির এবং তা অযাচিতভাবে পরিবর্তনের চেষ্টা করলে বাঁকা হাড়কে শক্তি প্রয়োগে যেমন ভেঙে যাবে-সেরকম ক্ষতি হতে পারে নারীর ব্যক্তিত্বের। এতে নারীদের প্রতি কতটা সহানুভূতিশীল হওয়া প্রয়োজন-তা আমাদের অনুধাবন করা উচিত-অনুবাদক)।
জি-৩৮ দাম্পত্য সম্পরক-৩ (জন্ম নিয়ন্ত্রণ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ)
প্রশ্নঃ
১. যদি কোন স্বামী স্ত্রীর সাথে দৈহিক সম্পর্ক না রাখে বা রাখতে অক্ষম হয় সে ক্ষেত্রে স্ত্রীর কি অধিকার থাকে?
২. জন্মনিয়ন্ত্রনের ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কি?
৩. কোন সব ক্ষেত্রে ইসলামে জন্মনিয়ন্ত্রণকে বৈধ করে?
৪. গর্ভপাতের ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কি?
৫. টেস্টটিউব সন্তান ও গর্ভভারা প্রদান (Surrogate Motherhood) সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কি?
ক. যদি কোন নারীর ফেলোপিয়ান টিউবে সমস্যার কারণে জরায়ুতে ডিম্ভ প্রবেশ করতে না পারে তবে সে কোন কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারে কি?
খ. স্পা্র্ম ব্যাংক থেকে স্পা্র্ম নিয়ে কোন দম্পতি সন্তান নিতে পারে কি?
গ. Surrogate Motherhood (অন্যদের সন্তান গর্ভে ধারণ) ইসলাম অনুমোদন করে কি?
উত্তরঃ
১. যদি কোন স্বামী স্ত্রীর সাথে দৈহিক সম্পর্ক না রাখে বা রাখতে অক্ষম হয়
নারীর প্রবৃত্তিগত চাহিদা পূরণ তার ইসলাম স্বীকৃত মৌলিক অধিকার। কোন স্বামী স্ত্রীর এ অধিকার পূরণ না করলে ইসলাম কঠোর ভুমিকা দেয়। ইসলামের অভ্যুদয়ের পূর্বে আরবে ‘ইলা’ নামে এক রীতি প্রচলিত ছিল, তাতে স্ত্রীকে শাস্তি দেয়ার জন্য স্বামী তার সাথে দৈহিক মিলন না করার প্রতিজ্ঞা করত । এভাবে মাসের পর মাস এমন কি কয়েক বছর চলে যেত। স্ত্রী তালাকের অধিকার ও পেত না। ইসলাম এই প্রথা রদ করে। ইসলাম বলে যে কেউ কোন কারণে সর্বোচ্চ চারমাস স্ত্রীকে সঙ্গ বঞ্চিত রাখতে পারবে। এর বেশী সময় হলে স্ত্রী তালাক নিতে পারবে। ইমাম শাফেয়ী বলেন চার মাসের পরও স্বামী স্ত্রীকে সঙ্গ না দিলে অথবা তালাকের সুযোগ না দিলে তাকে জেলসহ অন্যান্য শাস্তি দিতে হবে।
২. ইসলামের দৃষ্টিতে জন্মনিয়ন্ত্রণ
জন্মনিয়ন্ত্রণ কথাটি আজকাল বেশ চালু। মুসলমানরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে মানুষের জন্ম-মৃত্যু আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। জন্মনিয়ন্ত্রণের সব ব্যবস্থা নেবার পরও অনেকসময় কন্ট্রাসেপ্টিভ ফেইলিউর এটারই প্রমাণ দেয়। সাধারনভাবে ইসলাম জন্মে উৎসাহই দেয়। রাসুল (সঃ) বলেন যে, মুসলিমরা ‘বিয়ে করবে এবং সন্তান জন্ম দিবে’। ম্যালথাস এর মতবাদ উদ্ভুত ভীতি যে, মানুষের অত্যধিক জন্ম এক সময় পৃথিবীতে মানুষের দাঁড়াবার জায়গাও কেড়ে নেবে। এমনটি ইসলামী চিন্তাবিদ্গন মনে করেন না। আল্লাহ মুমিনদের নিশ্চিত করেছেন এজ তিনি সবার রিজিক (অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, জীবিকা) দেবেন। এজন্যে রাষ্ট্রীয় পলিসি হিসেবে জন্মনিয়ন্ত্রণকে নেয়া ইসলাম সমর্থন করেনা। তবে ব্যক্তিগত পর্যায়ে এর সংগত ব্যবহারকে অনুমতি দেয়। রাসুল (সঃ)-এর সময় প্রচলিত জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিকে তিনি নিষেধ করেননি। অবশ্য রাসুল (সঃ) বলেছিলেন যে কেয়ামত পর্যন্ত যাদের জন্ম হবার তা হবেই। কেউ তা প্রতিহত করতে পারবে না।
অল্পসংখ্যক, যারা ঢালাওভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে বলেন তারা দু’টো যুক্তি দেন-ক. তারা একে দায়িত্বজ্ঞানহীন, অযৌক্তিক কাজ মনে করেন এবং খ. তারা একে শিশু হত্যার মতই মনে করেন। তাদের প্রথম যুক্তি গ্রহনযোগ্য নয় এজন্যে যে অনেক পরিস্থিতিতে অনেক দম্পতির জন্য এটা আবশ্যক হতে পারে। কাজেই এর সুযোগ বন্ধ করা ঠিক না। দ্বিতীয় যুক্তি এজন্যে গ্রহনযোগ্য নয় যে জন্মনিয়ন্ত্রণের মূল লক্ষ্য, ডিম্ব নিযিক্তকরণ (Conception) বন্ধ করা। কাজেই এখানে ‘হত্যার’ প্রশ্ন আসে না। এখানে খেয়াল রাখতে হবে যে জন্মনিয়ন্ত্রণের যেসব পদ্ধতি নিযিক্ত ডিম্ব (জাইগোট)-এর অপসারন ঘটায় তার সবই হারাম (যেমন, এম, আর)। যেসব পদ্ধতি ডিম্ব উৎপন্ন হতে দেয়না (যেমন-পিল), অথবা ডিম্বাণু ও শুক্রানুর মিলন হতে দেয়না (যেমন-কনডম), ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে।
৩. যে সব ক্ষেত্রে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ সঙ্গত
ক. মায়ের জীবন রক্ষার্থে-যদি গর্ভধারনে মহিলার মৃত্যুর শংকা থাকে তবে তার জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ অনুমোদিত।
খ. যদি সম্ভাব্য শিশুর বিকলাঙ্গ বা প্রতিবন্ধী হিসেবে জন্মের আশঙ্কা থাকে।
গ. রাসুল (সঃ)-এর ভাষ্যমতে কোন স্তনদানরত মহিলার বাচ্চার দুধপানের বয়স শেষ না করে সন্তান ধারণ না করাই শ্রেয়। এবং ইসলামে এ সময়কে দুই বছর বলে মত রয়েছে।
ঘ. দারিদ্র্য এবং অনটন। যদিও আল্লাহ নিশ্চিত করেছেন যে তিনি সবার রিযিক দেবেন। এই ছাড় শুধু তাদের জন্য যাদের ইতিমধ্যে জন্মগ্রহণকারী সন্তানের ভরণপোষণই দুঃসাধ্য হচ্ছে।
ঙ. আরও কিছু ব্যক্তিগত কারণ-যেমন স্ত্রী মা হবার পূর্বে লেখাপড়া শেষ করতে চাইছে বা এমন কিছু।
সর্বোপরি এটা প্রত্যেক বিবেকের সাথে সমঝোতার বিষয়। আর এটা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের যৌথ সিদ্ধান্ত হতে হবে।
৪. গর্ভপাত প্রসঙ্গে ইসলাম
গর্ভপাত ইসলামে হারাম; তবে শুধু যেখানে মায়ের জীবন বিপন্ন হবার শংকা থাকে সেখানে এই আইন শিথিলযোগ্য। বর্তমানের কয়েকজন আইনবিদ আরও বলেন যদি আসন্ন সন্তান বিকলাঙ্গ বা প্রতিবন্ধী হবার আশংকা থাকে তাহলেও গর্ভপাত অনুমোদিত যদিও এটা বেশিরভাগের ক্ষেত্রে নয়। এমন কিছু করতে হলে তা অবশ্যই ১২০ দিন পুরো হবার আগে করতে হবে। কারণ ১২০ দিনের পর গর্ভপাত স্পস্তভাবে হারাম। সব ক্ষেত্রেই গর্ভপাত ঘৃণ্য বিষয়। কারণ জীবনের শুরু ডিম্ব নিযিক্তকরন থেকেই। (যদিও বলা হয় যে ১২০ দিন পর রূহ সঞ্চার হয়।)
৫. টেস্ট টিউব সন্তান ও অন্যদের সন্তান গর্ভে ধারণ প্রসঙ্গে
তিন ধরনের সমস্যার টেস্ট টিউব সন্তান ও অন্যের গর্ভে সন্তান নেয়া হয়। সমস্যার তিনটি এবং তা সম্পর্কে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা আলাদাভাবে আলোচনা করা যাক।
ক) স্বামী স্ত্রী উভয়েই শুক্র ও ডিম্ব উৎপাদনে সক্ষম। কিন্তূ কোন কারণে স্বাভাবিক নিয়মে তা নিযিক্ত হচ্ছে না। এ অবস্থায় উভয়ের জনন কোষ সংগ্রহ করে টেস্ট টিউবে নিযিক্ত করে তা আবার স্ত্রীর গর্ভে স্থাপন করা হয়।
খ) স্বামীর বন্ধ্যাত্বের কারণে স্পা্র্ম ব্যাংক থেকে অন্যের শুক্র নিয়ে স্ত্রীর গর্ভসঞ্চার করা হয়।
গ) স্ত্রীর জরায়ু সন্তান ধারনে (Implantation) অক্ষম হলে স্বামী-স্ত্রীর নিযিক্তকৃত ডিম্ব অন্য কোন মহিলার জরায়ুতে স্থাপন করে বাচ্চা জন্ম পর্যন্ত বড় করা হয়।
সমস্যা-ক) এক্ষেত্রে আইনবিদরা বলেন যেহেতু স্বামী এবং স্ত্রী জনন কোষের মিলনে সন্তান জন্ম হচ্ছে সেহেতু এটা ইসলাম সম্মত।
সমস্যা-খ) আধিকাংশ আইনবিদ এটাকে অনৈসলামী বলেন। কারণ প্রথমতঃ এটা প্রায় ব্যভিচারের কাছাকাছি; এবং দ্বিতীয়তঃ সন্তানের পিতৃত্ব প্রশ্নের সম্মুখীন।
সমস্যা-গ) এটা খুব বিতর্কিত বিষয়। আল্লামা ইউসুফ আল কারজাভী এটাকে অনৈসলামী বলেছেন নিম্নলিখিত কারণে-
i. এটা মাতৃত্বের স্বাভাবিক সৌন্দর্য ও অর্থকে নষ্ট করে। মায়ের গর্ভে সন্তানের বড় হওয়া, তার পুষ্টি থেকে পুষ্টি নেয়া, তীব্র কষ্ট নিয়ে সন্তান জন্ম দেয়া-এসবই মাতৃত্বকে মর্যাদা দেয়। আর এটাই এখানে উপেক্ষিত।
ii. আইনতঃ ইসলামে সন্তানের মা সে যে জন্ম দেয় ও স্তন দেয়।
iii. এটা বাচ্চা গর্ভে নেয়াকে ব্যবসায় পরিনত করবে।
iv. যদি গর্ভদানকারী মহিলা বাচ্চার মাতৃত্ব দাবী করে তবে তীব্র আইনগত এবং মানবিক সমস্যা দেখা দিবে। তাঁর কাছ থেকে সন্তানকে দূরে নেয়া অমানবিক হবে।
(সম্প্রতি ব্রিটিশ কোর্ট এমন মামলার রায়ে সন্তান গর্ভধারণকারীনিকে সন্তানের মা বলে রায় দিয়েছেন-অনুবাদক)
সুত্র নির্দেশিকাঃ
প্রশ্ন-১: আল কুরআন ২:২২৬
প্রশ্ন-২: সহীহ হাদিসে দেখা যায় যে, সাহাবারা রাসুলের কাছে আযলের (একটি বিশেষ ধরনের জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি) অনুমতি চান। তিনি তাদের নিষেধ করেননি তবে বলেন যে, “আল্লাহ যাকে জন্ম দিতে চান তার জন্ম হবেই।
প্রশ্ন-৩: আল গাযালী বলেন, সব গর্ভপাতই অন্যায়। যখন একটি ভ্রুন মাংসপিণ্ডের মত তখনও, তারচেয়েও বড় অন্যান্য যখন ১২০ দিনের। আর জন্মের সময় শিশু হত্যা তো মহাপাপ।
প্রশ্ন-৪: ‘Contemporary Versicts; আল্লামা ইউসুফ আল কারযাভী।
জি-৩৯ দাম্পত্য সম্পর্ক-৪
(স্বামীর অধিকার ও অন্যান্য প্রসঙ্গ)
প্রশ্নঃ
১. এমন কোন অবস্থা আছে কি যে অবস্থায় Surrogate Motherhood গ্রহণযোগ্য মনে হতে পারে?
২. যদি পছন্দমত ছেলে বা মেয়ে সন্তান নেয়া যায় সেক্ষেত্রে ইসলামের কোন বিধি নিষেধ থাকবে কি?
৩. ইসলামী আইনে স্বামীর অধিকার কি কি?
৪. কিসের ভিত্তিতে স্ত্রীর স্বামীকে সম্মান করা উচিৎ?
৫. চতুর্থ সূরার ৩৪ নং আয়াতের অনুবাদে ‘কাওয়ামুন’ শব্দের অর্থ কি ‘উত্তম’ বা ‘শ্রেষ্ঠ’ করা যায়?
উত্তরঃ
১. জরায়ু ভারা প্রদান বা অন্যদের সন্তান গর্ভে ধারণ (Surrogate Motherhood)প্রসঙ্গে
যারা মনে করেন যে কয়েকটি বিশেষ পরিস্থিতিতে অন্যদের সন্তান গর্ভে ধারণের অনুমোদন ইসলামে রয়েছে তারা ইউসুফ আল কারযাভীর একটি উদ্ধৃতি দেন। তারা বলেন Contemporary Verdicts গ্রন্থে আল্লামা ইউসুফ অন্যদের সন্তান গর্ভে ধারণের কতগুলো পূর্বশর্ত দিয়েছেন। তারা ভুলে যান যে যদি নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এটা চালু হয়ে যায় তবে তার ক্ষতিকর দিক কমাতে তিনি এসব পূর্বশর্ত দিয়েছেন। এসব পূর্বশর্ত নিম্নরুপঃ
ক) অন্যদের সন্তান গর্ভে ধারণকারী মহিলা বিবাহিতা হতে হবে। অন্যথায় তার সতীত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে (তার বিয়ের সম্ভাবনা নষ্ট হতে পারে-অনুবাদক)
খ) অন্যদের সন্তান গর্ভে ধারণের ব্যাপারে তার স্বামীর অনুমোদন লাগবে, কারণ এতে তাদের পারিবারিক জীবন ব্যাহত হতে পারে।
গ) বন্ধ্যা দম্পতির ভ্রুন গর্ভ স্থাপনের পূর্বে তাদের তিন মাস নিজের স্বামীর সঙ্গ বর্জন করতে হবে, যাতে গর্ভের সন্তানের পিতৃত্বের ব্যাপারে নিঃসন্দেহ থাকা যায়।
ঘ) পুরো গর্ভকালীন সময় ভ্রুন-এর পিতা গর্ভধারনকারী মহিলার পুরো ভরনপোষণ করবে।
ঙ) এমন কারো গর্ভে সন্তান রাখা যাবে না যারা ভ্রুন-এর পিতার মাহরিম আত্নীয়া। আল্লামা ইউসুফ আল কারযাভী মুসলমানদের এ ধরনের চর্চায় জড়িত না হতে স্পষ্টভাবে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন এটা ইসলাম সম্মত নয় এবং পরিত্যাজ্য।
২. ইচ্ছেমত ছেলে বা মেয়ে সন্তান নেয়া প্রসঙ্গে
বিজ্ঞানীরা পশুর উপর পরীক্ষা চালাচ্ছেন নির্দিষ্ট লিঙ্গের ভ্রুন তৈরির জন্য। এখনও মানুষের উপর এর পরীক্ষা হয়নি। তত্ত্বগতভাবে এটা সম্ভব যে, বিজ্ঞানীরা X বা Y ক্রোমজোমবাহী বা স্পা্র্ম চিহ্নিত করে সেতিকে দিয়েই ডিম্বাণু নিযিক্ত করে ছেলে সন্তানের বা মেয়ে সন্তানের জন্ম দেয়া। এক্ষেত্রে মুসলমানদের জবাব হবে যে এভাবে ভ্রুন-এর লিঙ্গ নির্দিষ্টকরণের চেষ্টায় ‘আল্লাহর একক সৃষ্টি ক্ষমতার’ কোন হ্রাস পাচ্ছে না। বিজ্ঞানীরা কোন কিছু সৃষ্টি করছেন না। কুরআন তো বলেই দিইয়েছে যে কেউ এককভাবে কোন মশা, মাছিও তৈরি করতে পারবে না। কুরআন আরও বলেছে যে আল্লাহ কাউকে শুধু কন্যা দান করেন, কাউকে শুধু পুত্র আবার কাউকে পুত্র কন্যা দু’টোই অথবা কাউকে নিঃসন্তান রাখেন।
কাজেই বিজ্ঞানীদের এসব কাজে আল্লাহর সার্বভৌমত্বের কোন ক্ষয় হচ্ছে না। এখানে আরেকটি বিষয় স্পষ্ট কারা দরকার। অনেকে বলেন গর্ভস্থ ভ্রুনের লিঙ্গ পরীক্ষা করা যাবে না। তারা ঐ আয়াতের উদ্ধৃতি দেন যেখানে বলা হয়েছে যে, ‘একমাত্র আল্লাহই জানেন গর্ভের ভেতরে কি আছে’ এখানে বোঝা দরকার যে মানুষ পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বড়জোর গর্ভস্থ ভ্রুনের লিঙ্গ এবং অন্যান্য কিছু শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারে। আল্লাহ তো জানেন সেই ভ্রুনের ভাগ্য, চরিত্র, কবে কি অবস্থায় সে মারা যাবে, ইত্যাদি সব। কাজেই সন্তানের লিঙ্গ নির্ণয়ের চেষ্টাও অনৈসলামী বলার যুক্তি নেই।
উত্তম এসব বিষয়ে অহেতুক উৎকণ্ঠিত না হয়ে ছেলে বা মেয়ে যাই আল্লাহর উপহার হিসেবে আসে তার উপর সন্তূস্ট থাকা।
৩. ইসলামে স্বামীর অধিকার
স্ত্রীর কাছে পাওনা স্বামীর অধিকার রাসুলের (সঃ) এই হাদিসে পাওয়া যায়, “সবচে উত্তম নারী সেই স্ত্রীলোক যার দিকে তাকালে তোমার নয়ন জুড়ায়, তাকে কিছু করতে বললে সে তা করে এবং যখন তুমি দূরে যাও তখন সে তার সতীত্ব ও স্বামীর সম্পত্তি রক্ষা করে।” এ হাদিসের ব্যাখা হচ্ছে স্বামীর যেমন স্ত্রীর প্রতি কোমল হতে হবে সম্মন ভালবাসা প্রদর্শন করতে হবে, তেমনি স্ত্রীরও স্বামীর প্রতি তা একনিষ্ঠ হতে হবে। তাকে সেভাবে ভালবাসতে হবে। তার কল্যাণ ও সুখের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। বিয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য সুখ ও প্রশান্তি অর্জন সেহেতু স্বামী-স্ত্রী উভয়ে নিজেদের পরস্পরের কাছে আকর্ষণীয় ও সুন্দর করে তুলবে। বিশেষভাবে স্ত্রী নিজেকে (ইসলামের সীমার মধ্যে) সুন্দরভাবে স্বামীর কাছে পেশ করবে। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, স্বামীকেও স্ত্রীর কাছে নিজেকে আকর্ষণীও করে তুলে ধরতে হবে। কারণ স্ত্রীরও সেই অধিকার আছে, যা স্বামী স্ত্রীর নিকট থেকে আশা করে।
ইসলামের দৃষ্টিতে সৌন্দর্যচর্চার মূল উদ্দেশ্য স্বামী বা স্ত্রীকে পরস্পরের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য করা। এজন্যে ইসলাম মেয়েদের ঘরে সাজ-গোজ করতে বলে। আর পাশ্চাত্য বলে বাইরে যাবার সময় সবচেয়ে সুন্দরী সেজে যেতে, আর ঘরে কুৎসিতরূপে থাকতে-ইসলাম এটা অসমর্থন করে।
৪. স্বামীর আনুগত্য পাওয়ার ভিত্তি
‘আনুগত্য’ (obedience) শব্দটির ব্যাখা বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন। কারো কাছে এর অর্থ পুরোপুরি আত্নসমর্পণ। কারো মতে এর অর্থ পারস্পরিক সহযোগিতা ও সম্মান। এজন্যে কুরআনে ‘আনুগত্য’ বলতে কি বোঝানো হয়েছে তার সুনির্দিষ্ট ব্যাখা প্রয়োজন। চতুর্থ সূরার ৩৪নং আয়াতে ধার্মিক মেয়েদের বর্ণনায় বলা হয়েছে যে, তারা আল্লাহর আনুগত্য করে, তাদের সতীত্ব এবং তাদের স্বামীর অধিকার হেফাজত করে ইত্যাদি। এই বর্ণনার ঠিক আগে আর একটি কথা এসেছে যাতে স্বামীদের ‘কাওয়ামুন’ বলা হয়েছে। এই ‘কাওয়ামুন’ অর্থ ভরণপোষণকারী (maintainers) অথবা রক্ষক (protectors)। (যদিও কেউ কেউ ভুল্ক্রমে এর ব্যাখা করে বলেন, নারীর উপর পুরুষ ক্ষমতাবান)। কাজেই স্বামীর আনুগত্যের বিষয়টি এখান থেকেই এসেছে যে তারা নারীকে রক্ষা করবে, ভরণপোষণ করবে এবং সংসারের পুরো দায়িত্বে থাকবে। এই হিসেবে তাদের সম্মান করা স্ত্রীর কর্তব্য।
৫. কাওয়ামুন শব্দের অর্থ প্রসঙ্গে
কাওয়ামুন শব্দের অর্থ ‘শ্রেষ্ঠ বা ক্ষমতাবান’ করা মারাত্নক ভুল। কুরআনের কোথাও এমন কথা নেই যে নারীর উপর পুরুষ শ্রেষ্ঠ। চতুর্থ সূরার ৩৪নং আয়াতও এর ব্যতিক্রম নয়। রাসুলের কোন হাদিসেও এমন ধারণা পাওয়া যায় না। কাজেই ঐ আয়াতের অর্থ হিসেবে পুরুষরা নারীদের রক্ষা ও ভরণপোষণকারী এটাই সবচাইতে গ্রহণযোগ্য।
অনুবাদের দোষের কারণে অমুসলিমদের মাঝে এ নিয়ে ভুল ধারণার জন্ম হচ্ছে। পুরুষকে কেন রক্ষকের (protector) দায়িত্ব দেয়া হল এই প্রশ্ন অনেকের। এই প্রশ্নের উত্তরে কুরআন ব্যাখা দিয়েছে-‘তাদের মধ্যে কাউকে অন্যদের উপর কর্তৃত্ববান করা হয়েছে’। এখানে অমুসলিমরা এই ‘কাউকে’ এর ব্যাখা করেন পুরুষ এবং ‘অন্যদের’ ব্যাখা করে নারী হিসেবে এবং দাবী করেন নারীর উপর পুরুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে।
কিন্তূ এটাও অসার যুক্তি। কারনঃ
ক) ব্যাকরণগত-যদিও ঐ আয়াতে ব্যবহৃত আরবী সর্বনাম পুরুষবাচক (masculine pronoun)। কিন্তূ কুরআনে অনেক জায়গাতেই নারী-পুরুষকে এক সম্বোধনেই ডাকা হয়েছে। আরবী ব্য্যকরন মতে পুরুষবাচক সর্বনাম দিয়ে মেয়েদেরও সম্বোধন করে যায় কাজেই ঐ আয়াতের অর্থ দাঁড়ায় তাদের মধ্যে কাউকে (কোন কোন নারী এবং পুরুষ) অন্যদের (নারী এবং পুরুষ) উপর কর্তৃত্ব দেয়া হয়েছে।
খ) নেতৃত্ব প্রশ্নেঃ আয়াতটি পরিবার সংক্রান্ত বিষয়ে নাযিল হয়েছে। পরিবারের ভরণপোষণ সহ সার্বিক দায়িত্ব ইসলামে স্বামীর উপর ন্যস্ত, তাই স্বামীকে পরিবারে কিছুটা preference দেয়া হয়েছে। এটা কোনভাবেই শ্রেষ্ঠত্বের নিদর্শন নয়।
সুত্র নির্দেশশিকাঃ
প্রশ্ন-৩: আল কুরআন ২৫:৭৪
প্রশ্ন-৫: আল কুরআন ২:২২৮, ৪:৩৪
প্রশ্ন:৩: আল কুরআন ২:২২৮, ৪:৩৪
চতুর্থ সূরার-৩৪ নং আয়াত ‘ফাদল’ শব্দটি আছে, যা কুরআনের অনেক জায়গায় আল্লাহর রহমত বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে। এটা একটা নিরপেক্ষ অর্থবাচক শব্দ। এখানে এর ব্যবহার এটাই প্রমাণ করে যে নারীদের ভরণপোষণ ও রক্ষার সামর্থ্য পুরুষকে দিয়ে আল্লাহর তাদের রহমত করেছেন এর মানে এই নয় যে পুরুষ নারীর উপর শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার। Contemporary Verdict’s, আল্লামা ইউসুফ আল কারযাভী।
জি-৪০ দাম্পত্য সম্পর্ক-৫ (স্বামীর অধিকার)
প্রশ্নঃ
১. রাসুলের (সঃ) এমন কোন হাদিস আছে কি যাতে স্বামীকে মান্য করার জন্য স্ত্রীকে আদেশ করা হয়েছে?
২. পরিবারের নেতৃত্বে স্বামীকে দেয়ার মাধ্যমে কি পুরুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে?
৩. উপরের প্রশ্নের জবাবে মুসলমানরা কি বলবে?
৪. মেয়েরা কেন পরিবারের নেতা হতে পারবে না?
৫. স্বামীর প্রতি স্ত্রীর আনুগত্যের সীমা কতদূর?
উত্তরঃ
১. রসূল (সঃ) এর ভাষ্যমতে স্বামীর প্রতি স্ত্রীর আনুগত্য
রাসুল (সঃ)-এর কয়েকটি হাদিসে স্বামীকে স্বামীর আনুগত্য করতে আদেশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, সে এটা করলে বিনিময়ে বেহেশত পাবে। এক সহীহ হাদিসে তিনি বলেন, যদি কোন নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, নিজের সতীত্ব রক্ষা করে এবং স্বামীর আনুগত্য করে তবে হাশরের ময়দানে তাকে বলা হবে বেহেশতের যে কোন দরজা দিয়ে প্রবেশ কর। তিনি আরও বলেন যে, স্ত্রীর প্রতি সুন্তূস্ট অবস্থায় কোন স্বামী মারা গেলে স্ত্রী বেহেশত পাবে। আবার যদি কোন স্বামী স্ত্রীর দুর্ব্যবহারে অসুন্তূস্ট অবস্থায় মারা যায় তবে তার (স্ত্রীর) নামাজ কবুল হবে না। যখন মুসলিম নারীদের পক্ষে একজন নারী রাসুল (সঃ)-কে বললেন যে, যেহেতু মেয়েদের সম্মুখ যুদ্ধে যাবার প্রয়োজন হচ্ছে না, সেহেতু তারা পুরুষদের মতো শহীদ হয়ে মর্যাদাবান হতে পারছেন না। তখন রাসুল (সঃ) তাঁকে বললেন সব মেয়েদের বলে দাও যে, তাদের স্বামীর আনুগত্য এবং তাদের সন্তূস্টি মেয়েদের জন্য শাহাদাতের সমান। রাসুল (সঃ) বলেন, আমি যদি কোন মানুষকে অন্য আর একজন মানুষকে সেজদা করতে বলতাম তবে আমি স্ত্রীদের তাদের স্বামীদের সেজদা করতে বলতাম। এই হাদিসের ব্যাখা নিম্নরূপঃ
ক) রাসুল (সঃ) উপমার ছলে একথা বলেছেন। কারণ ইসলামে আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে সেজদা করার কোন সুযোগ নেই। কাজেই রাসুলের এই উক্তির সাথে মেয়েদের পুরুষের তুলনায় খাটো হবার সুযোগ নেই। বরং পারস্পরিক সহযোগিতা, সমন্বয় ও বোঝাপড়ার মাধ্যমে পারিবারিক বন্ধনকে দৃঢ় করার ইংগিতই রয়েছে। বুদ্ধিমতী মায়েরা মেয়েদের স্বামীর ঘরে পাঠাবার সময় বলে, ‘তোমার স্বামীর দাসীর মত হয়ে যাও, দেখবে সেও তোমার দাস হয়ে গিয়েছে।’ এর মানে পুরুষকে যে ভালবাসা, আকর্ষণ সহযোগিতা ও আনুগত্য দেয়া হবে সেও তাই দেবে।
খ) এই উক্তি পরিবারের ভিতরে সহযোগিতাকেই গুরুত্ব দিচ্ছে।
২. যেসব কারণে মানুষ মনে করে যে ইসলামে নারীকে পুরুষের নীচে স্থান দেয়া হয়েছে
যারা এমন কথা বলেন তারা তিনটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। প্রথমতঃ তারা বলেন সম্পদে নারীর অংশ পুরুষের অর্ধেক, কাজেই নারীর মর্যাদাও পুরুষের অর্ধেক। দ্বিতীয়তঃ তারা বলেন আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত মোকদ্দমায় নারীর সাক্ষ্য পুরুষের অর্ধেক। তৃতীয়তঃ তারা বলেন যে কুরআন পরিবারের নেতৃত্ব পুরুষের হাতে দিয়ে নারীকে তার আনুগত্য করতে বলেছে। পক্ষান্তরে নারীর হাতে নেতৃত্ব দেয়নি। তার আনুগত্য করতে পুরুষকে বলেনি। এসবই প্রমাণ করে যে ইসলামে নারীর স্থান পুরুষের নীচে।
এই ধারণা সাধারনতঃ অমুসলিম বুদ্ধিজীবীরাই প্রচার করেন, যারা সামগ্রিকভাবে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন না কুরআন প্রদত্ত মানব-মানবীর পারস্পরিক মর্যাদা দায়িত্ব সম্পর্কে অবহিত নন। (কিছু মুসলমান যারা কুরআন শিক্ষা যথাযথভাবে বোঝেন না তারাও এমন ধারণা পোষণ করেন।-অনুবাদক)
৩. উপরের প্রশ্নের জবাব
উপরের প্রশ্নের আলোচনায় ইসলামে নারীর মর্যাদার বিরুদ্ধে যেসব যুক্তি পাওয়া যায় তার জবাব নিম্নরুপঃ
ক) কুরআন স্পষ্টভাবে বলে যে, মানুষের মাঝে শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি হচ্ছে তাকওয়া (খোদাভীতি)। নারী বা পুরুষ হবার মাঝে কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই।
খ) কুরআন আরও বলে যে নারী এবং পুরুষ উভয়ে ‘এক আত্না’ থেকে তৈরি। কাজেই সৃষ্টির ভিত্তিতেই উভয়ে সমান। কেউ কারো ‘অর্ধেক’ হবার প্রশ্নই উঠে না।
গ) উত্তরাধিকার সুত্রে সম্পদ বণ্টনের প্রশ্নের ইসলাম মানুষের উপর প্রদত্ত দায়িত্বের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিয়েছে। এখানে লিঙ্গভেদে কাউকে খাটো করার প্রশ্ন অবান্তর। ( এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা ‘জি-১৫’-এ দেখুন)
ঘ) আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত মোকদ্দমার ক্ষেত্রেও মেয়েদের খাট করা হয়নি। এটা শুধু এ জন্যেই যে মেয়েরা এসব কাজে সাধারণতঃ যুক্ত থাকত না। চুক্তির জটিল ধারা যাতে একজন অপরজনকে মনে করিয়ে দিতে পারে তাই এ ব্যবস্থা। যাতে নারীর উপর বেশি চাপ না পড়ে। (এ ব্যাপারে বিস্তৃত আলোচনা জি-১৮ অধ্যায়ে)।
ঙ) কর্মদক্ষতা বুদ্ধির জন্যে সমাজের প্রত্যেকটা অংশে কাজ এবং দায়িত্বের বিভাজন ও বণ্টন হওয়া উচিৎ। ইসলাম স্বামী ও স্ত্রীকে কিছু দায়িত্ব আলাদা করে দিয়েছেন। যেহেতু নারীর ভরণপোষণ ও রক্ষণাবেক্ষণসহ সার্বিক দায়িত্ব পুরুষের সেহেতু পরিবারের নেতৃত্বও তাকে দেয়া হয়েছে। ইসলামে নেতৃত্ব মানে কর্তৃত্ব নয়।
৪. মেয়েরা কেন পরিবারের প্রধান হতে পারবেন না
মেয়েরা কেন পরিবারের প্রধান হতে পারবেন না এই প্রশ্ন উঠার পেছনে কয়েকটি বিভ্রান্তি কাজ করেছে, যথাঃ
ক) স্বামীর হাতে পরিবার প্রধানের দায়িত্ব আসায় পুরুষের প্রতি পক্ষপাতিত্ব হয়েছে।
খ) পরিবার প্রধানের দায়িত্ব পুরুষের উপর দিয়ে তাকে নারীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে।
গ) ইসলামে নারীকে স্বামীর কর্তৃত্ব মেনে তার আনুগত্য করতে বলেছে। এটা নারীর ব্যক্তিত্ব ও পরিচয় ক্ষুন্ন করছে।
বাস্তবে এই তিনটি ধারণাই ভুল। প্রথমতঃ স্বামী স্ত্রীর মধ্যে দায়িত্ব ও অধিকার বণ্টন করেছেন স্বয়ং আল্লাহ, যিনি নারী বা পুরুষ কোনটাই নন। কাজেই কারো প্রতি পক্ষপাতিত্বের ধারনা অমুলক। তিনি মানুষকে একটি সুষম সুখী পরিবার গঠনের নির্দেশনা দেন।
দ্বিতীয়তঃ পুরুষের হাতে পরিবারের নেতৃত্ব নারীর উপর পুরুষের শ্রেষ্ঠত্বের কোন নিদর্শন নয়। ইসলামকে ভালভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে এটা সর্বস্তরেই নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। এখানে নামাজে একজনকে নেতৃত্ব দিতে হয়। যখন তিন বা ততোধিক লোক সফরে যায় তখন একজনকে নেতা বানাতে রাসুল (সঃ) আদেশ করেন। রাসুল (সঃ) বলেন যে, “তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল (মেষচালক)। সমাজবিদরা গবেষণা করে দেখছেন মানুষের গোটা ইতিহাসে দু’ধরনের পারিবারিক নেতৃত্ব আছে। একটা বহির্জগতের (instrumental) সাথে সম্পৃক্ত যার নেতৃত্ব থাকেন সাধারণতঃ পুরুষ। আর ঘরের অভ্যন্তরে চাবিকাঠি থাকে নারীর হাতে (expressive leadership)। ইসলামে এর ব্যতিক্রম কিছু ঘটেনি।
তৃতীয়তঃ স্বামীর হাতে নেতৃত্ব থাকায় স্ত্রীর ব্যক্তিত্ব খর্ব হবার কোন ভয় নেই। বিয়ের মাধ্যমে নারীর স্বতন্ত্র পরিচয় ও ব্যক্তিত্ব বিলীন হয়না। ইসলাম শুধু এটুকুই বলে যে যেহেতু স্বামীকেই পরিবারের ভরণপোষণ ও নিরাপত্তা বিধান করতে হবে সেহেতু পরিবার প্রধানের দায়িত্ব তার। বিয়ে এমন একটা সম্পর্ক পারস্পরিক নির্ভরশীলতার উপর যার ভিত্তি। স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করেই (স্বামীর) কাজ করা উচিৎ।
৫. স্বামীর প্রতি স্ত্রীর আনুগত্যের সীমা প্রসঙ্গে
ইসলামে স্বামীর প্রতি স্ত্রীর আনুগত্য প্রশ্নাতীত ও নিরংকুশ নয়। একমাত্র আল্লাহই প্রশ্নাতীত ও নিরংকুশ আনুগত্য প্রাপ্য যিনি সারা জাহানের পালনকর্তা, আর সবার প্রতি আনুগত্য আল্লাহর আনুগত্যের সীমার মধ্যে। রাসুল (সঃ) বলেন, “কেউ যদি আল্লাহর আদেশের পরিপন্থী কোন আদেশ করে তবে টা যেন কেউ না মানে।” অন্ধ-নির্বিচার আনুগত্য ইসলাম বিরোধী। কোন স্বামী যদি তার স্ত্রীকে ইসলামসম্মত পোশাক পরতে নিষেধ করে তবে আনুগত্য করা যাবে না। কেউ যদি তার স্ত্রীকে মদ খেতে বা ইসলামী পোশাক না পড়তে আদেশ করে, তখন আনুগত্য করা যাবে না। বরং এসব ক্ষেত্রে বিদ্রোহই শ্রেয়। ইসলাম আরও শিক্ষা দেয় যে স্বামী শুধু বৈধ বিষয়েই স্ত্রীর আনুগত্য পাবে। যেমন, কেউ তার স্ত্রীকে তার সম্পত্তি দেবার নির্দেশ দিতে পারবে না। সে যা আদেশ করবে তা হতে হবে সামাজিক, ন্যায্য, যৌক্তিক এবং সুন্দর। কোন স্বামী স্বৈরাচারীভাবে স্ত্রীর সাথে ব্যবহার করতে পারবে না। শুরা (পারস্পরিক পরামর্শ) একটা অত্যাবশ্যকীয় ইসলামী বিষয়। সমাজ ও পরিবারের সকল স্তরে এর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
সূত্র নির্দেশিকাঃ
প্রশ্ন-৩: আল কুরআন ৪৯:১৩, ৪:১
প্রশ্ন-৪: ‘The Hand book of Modern Sociology’. By Zeldith
প্রশ্ন-৫: কোন স্বামী তার স্ত্রীকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন বিশ্বাস (Faith) গ্রহণ করার আদেশ করতে পারবে না।
প্রশ্ন-৬: আল কুরআন ৬০:১২, ২:২৩২
জি-৪১ দাম্পত্য সম্পর্ক ও সন্তানের অধিকার
প্রশ্নঃ
১. ইসলামী মতে মুসলিম দম্পতি কিভাবে স্বামীর উপর অর্পিত অধিকার ও দায়িত্ব যৌথভাবে পালন করবে?
২. স্বামীর ইচ্ছা অনুসারে তার সাথে মিলিত হতে স্ত্রী বাধ্য কি না?
৩. ইসলাম কি নারীকে ঘর গৃহস্থালীর সকল কাজ করতে বলে?
৪. শিশুর অধিকারের বিভিন্ন দিকগুলো কি?
৫. শিশুর জীবনের অধিকার বলতে কি বুঝায়?
৬. শিশুর পিতৃ পরিচয় জানবার অধিকার বলতে কি বুঝায়?
৭. শিশুর সযত্নে বড় হবার অধিকার বলতে কি বুঝায়?
উত্তরঃ
১. স্বামীর অধিকার ও দায়িত্বের বাস্তব প্রয়োগ
ইসলাম নব বিবাহিত স্বামীর উপর অর্পিত দায়িত্ব ও অধিকার যৌথভাবে পালনের শিক্ষা দেয়। যেমনঃ
ক) স্ত্রীকে পরিবার ভরণপোষণের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়ার সাথে স্বামীর অনুপস্থিতিতে বাড়ি দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়ে সমতা কায়েম করা হয়েছে। এ থেকে বুঝা যায় যে, স্বামীর অজ্ঞাতে অথবা অনুমতি ছাড়া তার ঘর ত্যাগ করা উচিৎ নয়। এই দায়িত্ব থেকে পরিবারের ভেতরে কিছু শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বামী সব সময়ে জানতে পারে স্ত্রী কোথায় আছে।
অবশ্য এটা এমন কোন বিধি নিষেধ নয় যা যৌক্তিক প্রয়োজনে স্ত্রীকে ঘরের বাইরে যেতে দেবেনা। ইসলাম প্রয়োজনে নারীকে স্বামীর অনুমতি ছাড়া ঘরের বাইরে যাবার সুযোগ দিয়েছে। যেমনঃ ঈমান ও ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের জন্য, আল্লাহর এবাদতের জন্য, সামাজিক প্রতিরক্ষায় অংশ নেবার জন্য ইত্যাদি। এ ছাড়া যে সব নিয়মিত কাজে একবার অনুমতি নিলেই চলে সেখানে প্রতিবার অনুমতি নেবার প্রয়োজন নেই। যেমনঃ চাকরির উদ্দেশ্যে অফিসে যাওয়া, বাজারে যাওয়া, অসুস্থ আত্নীয়-স্বজনের সেবায় যাওয়া ইত্যাদি।
খ) রাসুল (সঃ)-এর মতে স্ত্রীর উপর সব চেয়ে বেশি অধিকার স্বামীর। কাজেই বিয়ের পর যদিও তার পিতা মাতা ও আত্নীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক বজায় থাকবে তবুও যদি এমন পরিস্থিতি আসে যে স্বামীর দায়িত্ব ও পিতা মাতার প্রতি দায়িত্বের মধ্যে সংঘাত দেখা দেয় তখন স্বামীর প্রতি দায়িত্বই তার কাছে অগ্রাধিকার পাবে।
গ) যদি স্বামীকে ব্যবসায়িক বা চাকরির প্রয়োজনে কোথাও ভ্রমনে যেতে হয় তখন স্বামীর প্রয়োজনে স্ত্রীকেও সাথে যেতে হবে। কিন্তূ যদি বিয়েচুক্তির সময় স্ত্রী এমন শর্ত লিখিয়ে নেয় যে, স্বামী নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে যেতে পারবেনা। অথবা স্ত্রী নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে যেতে বাধ্য নয় এবং স্বামী যদি এই চুক্তিতে সম্মত থাকে তবে সে তার সাথে ভ্রমনে যেতে স্ত্রীকে বাধ্য করতে পারবেনা। যদি স্ত্রীর জন্য ভাড়া করা বা নির্মাণ করা বাড়ি ইসলাম বর্ণিত ন্যূনতম মানের না হয় তবে স্ত্রী সে বাড়িতে থাকতে অস্বীকার করতে পারে। স্বামী স্ত্রীকে নাজেহাল করার ইচ্ছায় বাসা বদল করতে পারবে না।
ঘ) যদি স্ত্রীর চাকরি করা পরিবারের স্থিতিশীলতার জন্য ক্ষতিকর হয় তবে স্বামী স্ত্রীকে চাকরি ছাড়তে অনুরোধ করতে পারে। এখানে উল্লেখ্য যে, যদি বিয়ে চুক্তির সময় স্ত্রীর চাকরী করার শর্তে স্বামীর সম্মতি থাকে তবে স্বামী স্ত্রীকে চাকরী ছাড়তে বলতে পারবে না।
ঙ) স্বামীর অনুমতি ছাড়া ঘরের মেহমানদের স্ত্রী করতে পারবে না।
চ) স্বামীর অনুমোদন ছাড়া তার কোন সম্পত্তি স্ত্রী বিক্রি করতে বা দান করতে পারবে না। অবশ্য স্বামী যদি কৃপণ হয় তবে তার সম্পত্তি থেকে তার নিজের ও পরিবারের প্রয়োজনীয় অর্থ স্ত্রী খরচ করতে পারবে।
ছ) যৌক্তিক কারণ ছাড়া স্বামীর বৈধ যৌনাকাঙ্ক্ষা পূরণে স্ত্রী অস্বীকৃতি জানাতে পারবে না।
২. স্বামীর যৌন মিলনের ইচ্ছা পূরণে স্ত্রীর দায়িত্ব প্রসঙ্গে
প্রায় সব ধর্ম এবং সংস্কৃতিতে বিয়ের উদ্দেশ্য হচ্ছে দু’জন নারী-পুরুষের যৌন সম্পর্ককে বৈধতা দেওয়া। সেই সাথে অন্যান্য সামাজিক দায়িত্ব পালন। কাজেই স্বামী বা স্ত্রী উভয়ের জন্যই তার সাথীর মিলনের ইচ্ছা প্রত্যাখ্যান অভদ্রতা। স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব পূরণে মুসলিম স্বামী যেমন বাধ্য তেমনি স্বামীর যৌন আকাঙ্ক্ষা পূরণে স্ত্রীও দায়িত্ববান থাকা প্রয়োজন। রাসুল (সঃ)-এর একাধিক হাদিসে এ বিষয়ে বলা আছে। কোন মুসলিম স্ত্রী স্বামীর অনুমতি ছাড়া নফল রোজা রাখতে বা নফল হজ্বে যেতে পারবে না। এই সব নফল এবাদত যেন তাদের অন্তঃরঙ্গ সম্পর্কের পথে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।
অবশ্য দৈহিক মিলনে স্ত্রীর বাধ্যবাধকতা স্বামীকে এই সুযোগ দেয় না যে সে তার ক্লান্তি বা অসুস্থতা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় আনবে না। তাছাড়াও রোজার সময়, মাসিক ঋতুর সময়, সন্তান জন্মের পর স্ত্রী স্বামীকে মিলনে বিরত রাখবে। ইসলাম ব্যভিচার ও অবাধ যৌনচারকে কঠোরভাবে বিরোধিতা করে। কাজেই এটা স্বাভাবিক যে বৈবাহিক বন্ধনের মাধ্যমে প্রাপ্ত বৈধ যৌন অধিকার প্রয়োগে কোন বাধা থাকা উচিৎ নয়। তাহলে পরিবারের বন্ধন দুর্বল হবে, স্বামী অন্যায় কাজে প্রলুব্ধ হতে পারে।
৩. ঘর গৃহস্থালির কাজ ও নারী
ইমাম মালিক ও ইমাম শাফীসহ অধিকাংশ আইনবিদ বলেন যে, ঘরের কাজ করতে স্ত্রী বাধ্য নয়। তারা এ ব্যাপারে দ্বিতীয় সূরার ২২৮ নং আয়াতের উদ্ধৃতি দেন, সেখানে বলা হয়েছে যে, স্বামীদের তাদের স্ত্রীদের উপর যা যা অধিকার আছে স্ত্রীদেরও তাদের স্বামীদের উপর একই রকম অধিকার আছে। এই আইনবিদগণ বলেন যে, ঘর গৃহস্থালির কাজ বিয়ে চুক্তির অংশ নয়। কাজেই স্বামী এ ব্যাপারে স্ত্রীকে বাধ্য করতে পারেনা। ইমাম আহম্মদসহ অন্য আইনবিদরা এর বিরুদ্ধে বলেন। তারা বলেন দ্বিতীয় সূরার ২২৮ নং আয়াতে যদিও বলা হয়েছে যে, স্বামী স্ত্রী পরস্পরের উপর সমান অধিকার রাখেন। কিন্তূ যেহেতু স্ত্রী ও গোটা পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব এককভাবে স্বামীর সেহেতু এর সাথে সমতা রক্ষা করার জন্যই ঘর কাজ স্ত্রীর। এতে স্ত্রীর মর্যাদা ও সমতা ক্ষুণ্ণ হয় না। তারা এর পক্ষে রাসুল (সঃ)-এর একটি ঘটনা বলেন, যেখানে তার কন্যা ফাতিমা (রাঃ) তার কাছে ঘরের কঠোর পরিশ্রমের কথা বলে একজন কাজের লোক চেয়েছিলেন। তখন রাসুল (সঃ) তাকে দেননি। এর মাধ্যমে বুঝা যায় যে, মেয়েদের ঘর গৃহস্থালির কাজ করাকে রাসুল (সঃ) অসঙ্গত মনে করেননি। তবে এ কাজ মেয়েদের বাধ্যবাধকতা নাকি ঐচ্ছিক সেই প্রশ্নে কিন্তূ থেকে যাচ্ছে। এই প্রশ্নের উত্তর যাই হইক ইসলামে বিয়ে বন্ধনের লক্ষ্য হচ্ছে যে স্বামী স্ত্রী পরস্পরকে সব বিষয়ে সহযোগিতা করবে। এটা স্ত্রীর জন্য অন্যায় হবে যে, কর্মক্লান্ত শরীরে ঘরে ফিরে স্বামী ঘরের কাজ করবে। আর স্বামীর জন্য এটা অন্যায় হবে যদি সে ঘরের সব কাজ স্ত্রীর উপর চাপিয়ে নিজে অলস বসে থাকবে।
৪. সন্তানের অধিকার ৩ টি ভাগে ভাগ করা যায়ঃ
ক) জীবনের অধিকার
খ) পিতৃ পরিচয়ের অধিকার
গ) সযত্নে বেড়ে উঠার অধিকার
৫. শিশুর জীবনের অধিকার
মানুষের জীবন আল্লাহর কাছ থেকে আসে। কাজেই কোন পিতা-মাতার এই ভাবার সুযোগ নেই যে, তাদের ইচ্ছামত সন্তান আসে। অনাগত সন্তানের জীবন নষ্টের অধিকার কারো নেই। সে জন্য ইসলামে দারিদ্র্য বা সন্তান ছেলে না মেয়ে এসব অজুহাতে গর্ভপাত, এম, আর ও শিশু হত্যা প্রভৃতি নিষিদ্ধ।
৬. পিতৃ পরিচয়ের অধিকার
এ অধিকার শিশুর নিজের পরিচয় জানার ও রক্ষা করার সুযোগ দেয়। তার জানার অধিকার আছে কে তার পিতা। যদি পিতৃ পরিচয় পাওয়া না যায় তবে মায়ের সুত্রে সে তার পরিচয় প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।
যাদের পিতা মাতা কারোরই পরিচয় জানা যায় না। (কুরআন তাদের) “তোমাদের ভাই” এবং “তোমাদের পোষ্য” এইভাবে ঘোষণা করে। এমন সন্তানদের যারা পালন করবে তারা তার পরিচয় গোপন করতে বা অন্য পরিচয় দিতে পারবে না। পাশ্চাত্যে প্রচলিত সন্তান দত্তক নেবার নামে মানুষের পরিচয় নষ্ট করার সুযোগ ইসলামে নেই।
৭. সযত্নে বেড়ে উঠার অধিকার
পুত্র কন্যা নির্বিশেষে জে কোন সন্তানের জন্মকে পিতা মাতা আনন্দের সাথে বরণ করবে। কারণ এটা আল্লাহর উপহার। দ্বিতীয়তঃ ইসলাম এও বলে যে, আল্লাহর উপহারের জন্য আনুষ্ঠানিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে শিশুর বয়স এক বা দু’সপ্তাহ হলে আত্নীয় পরিজনের সমাবেশ (আকীকা) করতে। এই আকিকা অনুষ্ঠানে সন্তানের নাম রাখা হয়। তার চুল কেটে চুলের ওজনের সমপরিমান রুপার মুল্য দান করা যেতে পারে। এছাড়া বাচ্চা জন্মের পর যথাশীঘ্র খাসী বা দুম্বা বা ভেরা জবাই করে আত্নীয় ও গরীবদের খাওয়ানো রাসুলের অন্যতম সুন্নত।
শিশু যখন বড় হতে থাকবে তখন পিতা মাতার পক্ষ থেকে দৈহিক, মানসিক ও বস্তূগত সকল যত্নের সে অধিকারী। যদি শিশুর নিজের সম্পত্তি থাকে অথচ পিতা মাতা গরীব সে ক্ষেত্রে তার ভরণপোষণের জন্য তার সম্পদ তারা ব্যবহার করতে পারবে। ইসলাম ও ঈমান সম্পর্কে জানার অধিকার তার আছে। অবিশ্বাসীদের কবল থেকে দূরে রাখতে হবে। এওমান ব্যবহার পাওয়া সব শিশুর অধিকার। কারো প্রতি পক্ষপাতিত্ব করা যাবে না।
সূত্র নির্দেশিকাঃ
প্রশ্ন-১: স্বামীর কথায় স্ত্রীর চাকরি ত্যাগের বাধ্যবাধকতার একটি ব্যতিক্রম আছে। হানাফী মতে যদি মহিলা কোন ফরজে কেফায়ার দায়িত্বে (যেমন ধাত্রী, ডাক্তার ইত্যাদি) নিয়োজিত থাকে তবে স্বামীর কথায় কাজ নাও ছাড়তে পারে।
প্রশ্ন-২: আল কুরআন ২:২২৮
প্রশ্ন-৫: E.Westonmark. “The Origin and Development of Moral Ideas” গ্রন্থে উল্লিখিত আছে যে বাইবেলের সময় সন্তানের জীবনের উপর পিতার অধিকার ছিল। অর্থাৎ তিনি চাইলে তাদের হত্যা করতে পারতেন।
জি-৪২ পিতা-মাতার অধিকার
প্রশ্নঃ
১. পিতা মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব সম্পর্কে কুরআন কি বলে?
২. পিতা মাতার অধিকার সম্পর্কে রাসুল (সঃ) কি বলেছেন?
৩. পিতা মাতার প্রতি ভাল ব্যবহার বলতে কি বুঝায়?
৪. কোন অবস্থায় পিতা মাতার ভরণপোষণ সন্তানের দায়িত্ব? এটা কি নৈতিক দায়িত্ব নাকি আইনগত বাধ্যবাধকতা?
৫. যদি কারো পিতা মাতা মুসলমান না হয় তবুও কি তাদের ভরণপোষণ করতে হবে?
৬. যদি পিতা মাতা সন্তানের প্রতি দয়ালু না হয়, তবুও কি তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে?
উত্তরঃ
১. পিতা মাতার সাথে ব্যবহার সম্পর্কে কুরআনের শিক্ষা
কুরআন বেশ কয়েক জায়গায় পিতা মাতার প্রতি সদয় ও সহানুভূতিশীল হতে বলা হয়েছে। প্রায় সব জায়গাতেই আল্লাহর এবাদতের পরেই পিতা মাতার সেবার কথা বলা হয়েছে। এটা প্রমাণ করে যে ইসলামে মাতা-পিতার সাথে ভাল ব্যবহারের গুরুত্ব কত বেশি। একটি আয়াতে (১৭:২৩-২৪) অত্যন্ত সুন্দরভাবে পিতা মাতার প্রতি কর্তব্যের কথা এসেছে। বলা হয়েছে তাদের প্রতি দয়ালু হতে, এমন কোন শব্দ উচ্চারন না করতে যা তাদের কষ্টের কারণ হয়। তাদের প্রতি কোন রকম অধৈর্য বা অশ্রদ্ধা প্রদর্শন না করতে। আরও বলা হয়েছে তাদের প্রতি সাহায্যের ডানা বাড়িয়ে দিতে (Lower the wing of humility)। এখানে ‘ডানা’ শব্দটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। পাখি তার সন্তানকে আদর করতে তার পাখা নীচু করে দেয়। তেমনি পিতা মাতা বিশেসভাবে মা সন্তানেকে সযত্নে লালন করেন। বার্ধক্যে তাদেরকে একইভাবে লালন সন্তানের দায়িত্ব।
২. পিতা মাতার অধিকার সম্পর্কে রাসুল (সঃ)
পিতা মাতার সাথে ভাল ব্যবহার সম্পর্কে রাসুলের শিক্ষা কুরআনের শিক্ষারই বিস্তৃতি। যখন তাঁকে জ্জিজ্ঞাসা করা হল আল্লাহর দৃষ্টিতে উত্তম কাজ কি, উত্তরে তিনি বলেন, “সময় মত নামাজ পড়া, পিতা মাতার প্রতি ভাল এবং দয়ালু হওয়া এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করা”। কাজেই দেখা যাচ্ছে পিতা মাতার প্রতি সদয় হওয়ার বিষয়টি নামাজ এবং জিহাদের মত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে মাঝে অবস্থিত। পিতা মাতার প্রতি ভাল ব্যবহারের পুরস্কার সম্পর্কে অনেক জায়গায় তিনি বলেছেন-যেমন এক হাদিসে তিনি বলেন যে, যারা পিতা-মাতা ও আল্লাহর অনুগত তারা বেহেস্তের সর্বোচ্চ জায়গায় থাকবে। আরেক জায়গায় পিতা মাতার প্রতি দয়াকে জিহাদের সাথে তুলনা করেছেন। তিনি বলেছেন যারা তাদের সেবা করবে তার হজ্জের অথবা জিহাদের সাথে তুলনা করেছেন। তিনি আরো বলেছেন যে, পিতা মাতার সন্তুষ্টি ও অসন্তুস্তির মাঝে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টি নিহিত। যারা তাদের পিতা মাতার প্রতি সদয় আল্লাহ তাদের প্রতি সদয়। পিতা মাতার সন্তুষ্টি অর্জনের গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন যে, যদি পিতা মাতা সন্তানের জন্য আগ্রহের সাথে দোয়া করে অথবা তার বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে নালিশ করে তবে আল্লাহ তার জবাব দেন। সর্বশেষে তিনি বলেন, “তোমাদের পিতা মাতার প্রতি দয়ালু হও তা হলে আল্লাহ তোমাদের বার্ধক্যে তোমাদের সন্তানদের তোমাদের প্রতি দয়ালু বানাবেন। আর তোমরা চরিত্রবান হও তাহলে তোমাদের স্ত্রীরাও সতী হবে।”
৩. পিতা মাতার প্রতি ভাল ব্যবহারের পন্থা
কুরআন এবং হাদিসে পিতা মাতার প্রতি ব্যবহারের আলোচনায় আরবী শব্দ ‘বীর’ ব্যবহৃত হয়েছে। এই শব্দের অনুবাদ করা হয়েছে ভাল ব্যবহার; এটি একটি অসম্পূর্ণ অনুবাদ। ‘বীর’ শব্দের অর্থ আরও ব্যাপক। দোয়া, সহানুভূতি, শ্রদ্ধা,আনুগত্য, ধৈর্য, সততা এই সবই বীর শব্দের প্রতিশব্দ, মুসলমানরা পিতা মাতার সাতেহ ব্যবহারে এই সব গুনের প্রয়োগ ঘটাবে। রাসুল (সঃ) বলেন যে, যারা পিতা মাতার দায়সারাভাবে সেবা করে, তারা ‘বীর’-এর মত সেবা করছে না। সব সময় ভালবাসার সাথে ব্যবহার করতে হবে এবং কখনও তাদের সাথে উঁচু গলায় কথা বলা যাবে না।
রাসুল (সঃ)-এর কন্যা বিবি ফাতিমা (রাঃ) সব সময় রাসুল (সঃ)-এর সাথে শিশুর মত সরল ব্যবহার করতেন। যখনই রাসুল (সঃ) তাকে দেখতে যেতেন তখনই তিনি উঠে দাড়িয়ে তাঁকে চুমো দিতেন। এবং শ্রদ্ধার সাথে নিজের আসনে তাকে বসতে দিতেন। রাসুল (সঃ) ও একইভাবে তার সন্তানকে স্নেহ করতেন।
৪. পিতা মাতার ভরণপোষণ প্রসঙ্গে
তিনটি অবস্থায় পিতা মাতার ভরণপোষণ সন্তানের দায়িত্বঃ
ক) পিতা মাতা অক্ষম হলে এবং তাদের জীবন ধারণের জন্য পর্যাপ্ত সম্পদ না থাকলে।
খ) তাদের চলার মতন জীবিকা তারা উপার্জন করতে না পারলে।
খ) সন্তানের তাদের ভরণ পোষণের সামর্থ্য থাকলে। তার একদিন ও একরাতের পরিমাণ খাদ্য ঘরে অতিরিক্ত থাকলেই যে সামর্থ্যবান বলে ধরা হবে।
যদি পিতা মাতা অভাবী হয় এবং তাদের ভরণপোষণের সামর্থ্য সন্তানের থাকে তখন খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, সহ্য তাদের সকল মৌলিক চাহিদা পূরণের দায়িত্ব পূরণের দায়িত্ব তার এমন কি তাদের পিতা মাতার সেবা যত্নে নিয়োজিত কাজের লোকের ভরণপোষণের দায়িত্বও তারই। এই দায়িত্ব নৈতিক এবং আইনগত দু’টোই। একবার রাসুল (সঃ) এর কাছে এসে একজন বলল যে তার পিতা তার কিছু সম্পত্তি নিয়ে নিতে চায়। তখন রাসুল (সঃ) বলেন তুমি এবং তোমার সম্পদ সবই তোমার পিতার। কাজেই কোন মুসলিম তাদের পিতা মাতা অথবা দাদা দাদীর সেবা যত্নে যেন কার্পণ্য না করে। যদি সে এই দায়িত্ব পালন না করে তবে আইন প্রয়োগ করে তাকে দায়িত্ব পালনে বাধ্য করতে হবে।
৫. অমুসলিম পিতা মাতার ভরণপোষণ প্রসঙ্গে
মুসলিম অমুসলিম নির্বিশেষে সকল পিতা মাতা সন্তানের কাছ থেকে ভাল ব্যবহারের অধিকার রাখে। রাসুল (সঃ) এর সময় অনেক মুসলমানের পিতা মাতাই অমুসলিম ছিলেন। তবুও রাসুল (সঃ) তাদের সাথে সদয় ব্যবহার করতে এবং তাদের আনুগত্য করতে বলেছেন। শুধুমাত্র যখন তারা আল্লাহর বিধান এর পরিপন্থি আদেশ করবে তখন আনুগত্য না করতে করেছেন। ৩১ নং সূরার ১৫ নং আয়াতে বর্ণিত আছে মুসলিমরা তাদের অমুসলিম পিতা মাতার সাথে কেমন ব্যবহার করবে। সেখানে এটা স্পষ্ট যে আল্লাহর আনুগত্যের পরিপন্থী বিষয় ছাড়া আর সব বিষয়ে পিতা মাতার আনুগত থাকতে হবে। কুরআন তাদের নিন্দা করে যারা অন্ধভাবে পিতৃ-পিতামহের বিশ্বাস আঁকড়ে থেকে ঈমান গ্রহনে অস্বীকার করে। “সেই দিনের ব্যাপারে সতর্ক থাকো যেদিন কোন পিতা তার সন্তানের, আর কোন সন্তান তার পিতার জন্য কোন অনুরোধ করতে পারবে না।” কুরআন আরও বলে যে অমুসলিম পিতা মাতাকে সদয় সঙ্গ দিবে যতক্ষণ পর্যন্ত তারা মুসলমান ও ইসলামের বিরুদ্ধে আগ্রাসী ভুমিকায় না যায়।
৬. পিতা-মাতা সন্তানের প্রতি দয়ালু না হলে
একবার রাসুল (সঃ) পিতা মাতার প্রতি সদয় হবার মাধ্যমে আল্লাহর আনুগত্য করে তার কাছ থেকে পুরস্কার নেবার কথা বলেছিলেন। তিনি বলেন, যারা পিতামাতার সাথে খারাপ ব্যবহার করে আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করবে তাদের জন্য দোযখের দুই দরজাই খোলা থাকবে। এ সময় একজন রাসুলকে জিজ্ঞাসা করল, “হে রাসুল (সঃ) যদি তারা আমাদের প্রতি অন্যায় ও অন্যায্য আচরণ করেন, তবুও” রাসুল (সঃ) বললেন, “তারা মন্দ হলেও তাদের প্রতি সদয় থাক।” (তিনি এ কথা তিনবার বলেন)।
এতাও মনে রাখা দরকার যে বার্ধক্যের স্বাস্থ্যহানির কারণে পিতা-মাতা অধৈর্য ও খিটখিটে হতে পারেন। তাদের সহ্য ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। অল্পতেই রাগতে পারেন। কাজেই মুসলমানরা ধৈর্যের সাথে তাদের যত্ন করবে। তাঁদের প্রতি কোন কড়া শব্দ উচ্চারন করবে না। রাসুল (সঃ) পিতা মাতার সাথে খারাপ ব্যবহারকারীকে ‘খুনীর’ সমপর্যায়ের বলেছেন। তিনি আরও বলেন, পিতা মাতার প্রতি নির্দয় ব্যক্তির আমল বিফলে যাবে এবং বেহেশত থেকে সে বঞ্চিত হবে।
সূত্র নির্দেশিকাঃ
প্রশ্ন-১: আল কুরআন ৪:৩৬, ৬:১৫১, ১৯:১৪, ১৯:৩২
পিতা মাতার প্রতি সদয় আচরণের উদাহরণ হিসেবে যীশুর এবং জনের (ইয়াহিয়া) নাম এসেছে।
প্রশ্ন-২: রাসুল (সঃ) এর কাছে এক ব্যক্তি এসে বলল, “আমি আল্লাহর পথে জেহাদ করতে চাই। সত্যের জন্য জীবন দিতে চাই। কিন্তূ তা করতে পারছি না।” রাসুল (সঃ) জানতে চান যে তার পিতা মাতা জীবিত আছেন কিনা। ঐ ব্যক্তি জানান তার মা জীবিত আছেন। তখন রাসুল (সঃ) বলেন, “যাও এবং তাঁর সেবা করো, তুমি তাদের সমান পুরস্কার পাবে যারা হজ্ব করে ও জেহাদ করে।” অন্য হাদিসে তিনি বলেন, “মায়ের পায়ের দিকে খেয়াল রাখবে যাতে তাঁর সেবা করবে পারো।” আরেক হাদিসে তিনি বলেন, মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের বেহেশত।
প্রশ্ন-৫: আল কুরআন ৩১:১৫ এই আয়াতে বলা হয়েছে কোন কোন ক্ষেত্রে মাতা-পিতার আনুগত্য কড়া যাবে না। এই আয়াত তখন নাযিল হয় যখন সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রাঃ)-র মুশরিক মা ঘোষণা দেন যে তাঁর ছেলে ইসলাম ত্যাগ না করা পর্যন্ত তিনি আমরণ অনশন করবেন।
আসমা বিনতে আবু বকর (রাঃ) রাসুল (সঃ)-এর কাছে জানতে চান যে তিনি তাঁর অমুসলিম মাকে সাহায্য করে যাবেন কিনা। জবাবে (সঃ) বলেন, তুমি তাঁর প্রতি দয়ালু থাকবে এবং তাঁকে সাহায্য করবে কারণ কুরআন কোন মুসলমানকে তাঁর অমুসলিম পিতা মাতার প্রতি সদয় হতে বারন করেননি যদি না তারা মুসলমানদের প্রতি আগ্রাসী ও শত্রুভাবাপন্ন হন।
জি-৪৩ আত্নীয় স্বজনের অধিকার
প্রশ্নঃ
১. পিতা-মাতার মৃত্যুর পর তাদের প্রতি কি দায়িত্ব থাকে?
২. দ্বিতীয় পর্যায়ের আত্নীয়দের (Second degree relative) (অর্থাৎ স্ত্রী/স্বামী, মাতা-পিতা এবং সন্তান ব্যতীত অন্যান্য আত্নীয়-স্বজন) প্রতি মুসলমানদের কি দায়িত্ব আছে?
৩. যদি ঐ আত্নীয়রা তার প্রতি দয়ালু না হয় তাহলেও কি এসব দায়িত্ব বহাল থাকে?
৪. এসব কি শুধু নৈতিক দায়িত্ব নাকি এর আইনগত বাধ্যবাধকতা আছে?
৫. কোন কোন অবস্থায় একজন মুসলমানের দ্বিতীয় পর্যায়ে আত্নীয়দের আর্থিক ভরণপোষণ করতে হয়?
৬. বিয়ে বিচ্ছেদ (তালাক) সম্পর্কে ইসলামের শিক্ষা কি?
৭. এটা কি সত্য যে ইসলামে তালাক অতি সহজ বিষয়?
৮. তালাকের অধিকারের অপব্যবহার রোধে কোন ব্যবস্থা কি ইসলামে আছে?
উত্তরঃ
১. পিতা-মাতার মৃত্যুর পর তাদের প্রতি দায়িত্ব
রাসুল (সঃ) বলেন যে, যদি পিতা-মাতার অসমাপ্ত কাজ সন্তান করে দেয় তবে আল্লাহ তাদের (পিতা-মাতা) মাফ করে দিতে পারেন। সন্তানরা মৃত পিতা-মাতার জন্য যা করতে পারেঃ
ক) তাদের অসমাপ্ত ওয়াদা রক্ষা করা।
খ) তাদের ঋণ পরিশোধ করা।
গ) জনগণ যেন তাদের পিতা-মাতার উপর কোন রাগ বা ক্ষোভ না রাখে তার ব্যবস্থা করা (অর্থাৎ পিতা-মাতার পক্ষ থেকে তাদের কাছে মাফ চাওয়া)।
i. যে কোন সদকায়ে জারিয়া যা থেকে মানুষ উপকৃত হতে থাকে।
ii. তার বিতরন করা জ্ঞান থেকে যদি মানুষ উপকৃত হতে থাকে।
iii. ধার্মিক ছেলেমেয়ে যারা তার জন্য দোয়া করতে থাকে।
২. দ্বিতীয় পর্যায়ের (Second degree) আত্নীয়দের প্রতি মুসলমানদের দায়িত্ব
কুরআন এবং হাদিসে আত্নীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা এবং তাদের প্রতি সদয় থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কুরআনে আত্নীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার বিরুদ্ধে হুশিয়ার করা হয়েছে।
৩. আত্নীয়রা সুসম্পর্ক না রাখতে চাইলেও তাদের প্রতি সদয় হতে হবে কি?
পিতা-মাতার সাথে আচরণের মতই আত্নীয়রা খারাপ ব্যবহার করলেও তাদের সাথে ভাল ব্যবহার করতে হবে। রাসুল (সঃ) হযরত আলী (রাঃ) কে বলেন,”আলী, আমি কি তোমাকে দুনিয়া ও আখেরাতের মহৎ কাজের কথা বলব? তা হচ্ছে আত্নীয়দের অথবা যে কেউ তোমাদের সাথে সম্পর্কছেদ করে তার সাথে সদয় ব্যবহার কর। যে তোমাকে বঞ্চিত করে তাকে দান কর। যে তোমাকে কষ্ট দেয় তাকে মাফ কর।”
৪. আত্নীয়দের অধিকার নৈতিক দায়িত্ব নাকি আইনগত বাধ্যবাধকতা?
আত্নীয়দের অধিকারের নৈতিক ও ধর্মীয় ভিত্তির বিধয়ে আইনবিদরা একমত। তাদের প্রতি আর্থিক দায়িত্ব আছে কিনা এ বিষয়ে একাধিক মত রয়েছে। শাফেয়ী, মালেকী এবং জাফরী মাজহাব মতে আত্নীয়দের কল্যাণ করা নৈতিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব। তবে প্রয়োজনে আর্থিকভাবে তাদের ভরণপোষণ করতে মুসলমানরা আইনগতভাবে বাধ্য নয়। বরং এমন দরিদ্র ব্যক্তির দায়িত্ব গোটা সমাজের। হানাফী এবং হাম্বলী মতে গরীব আত্নীয়দের আর্থিক সাহায্য করা মুসলমানদের আইনগত দায়িত্ব। এ দায়িত্বের পরিমাণ নির্ভর করবে আত্নীয়দের মধ্যে সম্পদের উত্তরাধিকার সুত্রে এবং বৈবাহিক সুত্রে সম্পর্কের ভিত্তিতে।
৫. যেসব অবস্থায় আত্নীয়-স্বজনের ভরণপোষণ দায়িত্ব
আর্থিক সাহায্য পাওয়ার শর্ত ও অবস্থা নিম্নরুপঃ
ক) সাহায্যপ্রার্থী ও সাহায্যকারীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ আত্নীয়তা বিদ্যমান থাকতে হবে।
খ) সাহায্যপ্রার্থী আত্নীয়কে যথেষ্ট দরিদ্র (Needy) হতে হবে।
গ) যৌক্তিক কারণে উপার্জনে অক্ষম হতে হবে।
ঘ) মুসলিম হতে হবে। অবশ্য প্রথম ধারার (First Degree) আত্নীয়দের আর্থিক সুবিধা পেতে মুসলিম হওয়া শর্ত নয়। আর সাধারণভাবে মুসলিম অমুসলিম সব দরিদ্রকেই সাহায্য করা উচিৎ। মুসলমানরা তাদের অবিবাহিতা কন্যা উপার্জনক্ষম হলেও তার ভরণপোষণ করতে বাধ্য।
৬. বিয়ে বিচ্ছেদ (তালাক) সম্পর্কে ইসলামের শিক্ষা
সমাজবিদরা গবেষণা করে দেখেছেন যে, পৃথিবীর ইতিহাসে প্রায় সব সমাজ ও সভ্যতার ব্যর্থ বিয়ের সমাপ্তি দেবার নিয়ম প্রচলিত ছিল। এই নিয়ম বিভিন্ন সমাজে বিভিন্নভাবে চালু ছিল। কোন কোন সমাজে স্বামী বা স্ত্রীর মৃত্যু ভিন্ন ব্যর্থ বিয়ের বর বা কনের মুক্তির পথ ছিল না। তালাকের পর দম্পতির পুনর্মিলনের কোন সুযোগও ছিল না। আবার কোন কোন সভ্যতায় তালাক ছিল অতি সহজ বিষয়। এ বিষয়ে কোন বাধা ছিল না। ইসলামের অভ্যুদয়ের পূর্বে আরবরা কথায় কথায় স্ত্রী তালাক দিত। বর্তমানে এই ধারা যেন আবার ফিরে এসেছে। খোদ যুক্তরাষ্ট্রে একই দিনের মধ্যে কোন ব্যক্তির পক্ষে তালাক দিয়ে নতুন বিয়ে করে আবার তালাক দেয়া সম্ভব।
এই দুই চরম পন্থার কোনটাই বৈবাহিক সমস্যার সমাধান নয়। বরং এগুলো নতুন সমস্যা সৃষ্টি করে। শুধু তালাকের পদ্ধতি অতি কঠিন করেই যে বিবাহ বন্ধনকে দৃঢ় করা যাবে তাও ঠিক নয়। তাহলে মানুষের মধ্যে আইন ভঙ্গের প্রবণতা আসবে। আবার এটাকে একেবারে সহজ করে দিলে পরিবার নামক ইনিস্টিটিউটের অস্তিত্বই বিপর্যস্ত হবে। এ দুই চরমপন্থার মাঝে ইসলাম দেয় মধ্যপন্থা।
ইসলাম বিয়ে বন্ধনের পবিত্রতা ও গুরুত্ব ঘোষণা করে। সেটাকে স্থায়ী এবং স্থিতিশীল করতে চায়। তারপর ইসলাম ও বাস্তবতাকে স্বীকার করে যে সব বিয়েই যে স্থায়ী হবে এমন নয়। ঘরের মধ্যে নিত্য দ্বন্দ্ব বজায় রেখে উভয়ের মানসিক শান্তি ও ভারসাম্য নষ্ট করার চেয়ে এর বিচ্ছেদ শ্রেয়। ইসলাম তাই তালাককে শেষ প্রচেষ্টা হিসেবেই অনুমতি দেয়; যদিও ইসলাম এটাকে নিরুৎসাহিত করেছে। রাসুল (সঃ) বলেন যে, “আল্লাহর অনুমোদিত কাজের মধ্যে তালাকই সবচাইতে অপ্রিয়।” অবশ্য তাঁর এই কথা সঙ্গত কারণে যারা তালাক দেয় তাদের জন্য প্রযোজ্য নয়। বস্তুতঃ বৈবাহিক সম্পর্ককে স্থায়ী করবার সব চেষ্টা ব্যর্থ হলে তারপরই ইসলামে তালাক অনুমোদিত।
৭. ইসলামে তালাক কি সহজ?
কবুল বলার মাধ্যমে মানুষ বিয়ে করে কিন্তু তার মানে কি এই যে শুধু এই একটি শব্দ উচ্চারনই বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতা। বরং বিয়ের জন্য কত প্রস্তুতি কত আয়োজন করবার পর তাঁর সমাপ্তি হয় কবুল উচ্চারনের মধ্যে। তেমনি ‘আমি তোমাকে তালাক দিলাম।’ এই বাক্যও প্রযুক্ত হবে বিয়েকে টিকাবার সব প্রাণান্ত প্রচেষ্টার ব্যর্থতার পর। এটাই ইসলামী নিয়ম। যদিও কিছু মুসলমান ইসলামের শিক্ষা না জেনে অথবা অমান্য করে তালাকের অপব্যবহার করছে। এসব অপব্যবহারের ঘটনাই অমুসলিমদের কাছে ইসলামী তালাক বলে মনে হয়। ফলে এই নিয়ে ভুল ব্যাখা করে ইসলামের উপর কটাক্ষ করা হয়।
যদিও ইসলামে বিয়ে এবং তালাক কোনটাকেই আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ফেলা হয়নি। মানুষের ভালর জন্যই তাদের আয়ত্বের মধ্যে রাখা হয়েছে। কিন্তূ তাই বলে ইসলাম এ দু’টোর কোনটাকেই হালকাভাবে নেয়নি।
৮. তালাকের সম্ভাবনা কমানোর জন্য ইসলামে গৃহীত ব্যবস্থা
ইসলাম এমন কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে যাতে তালাকের প্রেক্ষিত তৈরি না হয়। এর মধ্যে আছে উপযুক্ত পাত্র-পাত্রী নির্ধারণের কিছু নির্দেশনা। স্বামী-স্ত্রীতে অমিল দেখা গেলে তা অতিক্রম করার উপদেশ। স্ত্রী বা স্বামী যে কোন একজনের ভুল সংশোধনের ব্যবস্থা। সর্বোপরি তালাক বলার পর এটা পুরো কার্যকরী হবার আগে অন্তর্বর্তীকালীন সময় (ইদ্দত) দেয়া, যে সময়ে হয়তো স্বামী-স্ত্রীর পুনর্মিলন হতে পারে।
সূত্র নির্দেশিকাঃ
প্রশ্ন-১: আল কুরআন ১৪:৪০-১
প্রশ্ন-২: আল কুরআন ৪:১, ৪৭:২২
রাসুল (সঃ) বলেন, “যারা আল্লাহ এবং কেয়ামতে বিশ্বাস করে তারা যেন মেহমানের প্রতি আন্তরিক ও সহাস্য হয়, নীরব থাকে অথবা কথা বললে উত্তম কথা বলে এবং আত্নীয়-স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করে।” প্রশ্ন-৩: রাসুল (সঃ) বলেন, “আত্নীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক রক্ষাকারী সে নয় যে তাদের আচরণের প্রতিক্রিয়া দেখায় বরং সেই যে আত্নীয়রা সম্পর্ক না রাখতে চাইলেও তা রক্ষা করে।”
প্রশ্ন-৬: আল কুরআন ৪:২১
উদাহরণ স্বরূপ, স্বামী বা স্ত্রীর কেউ যদি ধর্মীয় দায়িত্ব অবহেলা বা অমান্য করতে থাকে তখন যদি এমন হয় যে এই অবহেলা সন্তানদের ঈমানও নষ্ট করতে পারে, তবে তালাকের বিষয় ভাবা যেতে পারে। ইসলামে তালাককে নিরুৎসাহিত করলেও অনুমতি দেয়া হয়েছে। এক হাদিসে রাসুল (সঃ) বলেন, “যে নারী স্বামীকে তালাক দিতে প্ররোচিত করে, সে বেহেশতের সুবাস পাবে না।” আরেক হাদিসে তিনি বলেন, “সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয় যে কোন স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন নষ্ট করার চেষ্টা করে।”
জি-৪৪ বৈবাহিক সমস্যা
প্রশ্নঃ
১. তালাক প্রতিরোধ করার জন্য ইসলামে কি কি ব্যবস্থা আছে?
২. স্ত্রী দোষী হলে স্বামী তাকে সংশোধনের জন্য কি করতে পারে?
৩. স্ত্রীকে সংশোধনের উদ্দেশ্যে প্রহার (Chastisement) করার স্বামীর অধিকারে কি কি বিধি নিষেধ আছে?
৪. তালাক এবং Chastisement-এর মাঝে তুলনা করুন?
৫. স্বামী অপরাধ করলে স্ত্রী তাকে প্রহার করতে পারে কি?
৬. স্বামী স্ত্রী উভয়ে দোষ করলে কি করা হবে?
উত্তরঃ
১. তালাক প্রতিরোধে এবং তালাকের সম্ভাবনা কমাতে ইসলাম কতগুলো নিরাপত্তামুলক ব্যবস্থা নিয়েছেঃ
ক. পাত্র-পাত্রি নির্বাচনের সময় ধর্মীয় অনুভূতি, চরিত্র এবং পরস্পরের জন্য গ্রহণযোগ্যতা যথাযথভাবে যাচাই।
খ. স্বামী স্ত্রী উভয় তাদের পরিবারের প্রতি এবং পরস্পরের প্রতি দায়িত্ব আল্লাহ ও রাসুল (সাঃ)-এর নির্দেশিত পন্থায় পালন করবে।
গ. যদি পরস্পরের প্রতি কোন বিষয়ে অপছন্দ জন্ম নেয় তখন কেউ কারো ব্যাপারে কোন চরম সিদ্ধান্ত দ্রুত নিতে পারবে না।
২. স্ত্রী দোষী হলে স্বামীর সংশোধনের অধিকার
যদি স্ত্রী কোন বড় রকমের অপরাধ করে (যা কোনভাবেই হালকা করে দেখা যায় না বা ক্ষমা করা যায় না), এমন অপরাধ যা দু’জনের সম্পর্ক নষ্ট করে পরিবারের স্থিতিশীলতাকে বিপর্যস্ত করে-ইসলামের পরিভাষায় এসব অপরাধকে ‘নুশুজ’ বলে। নুশুজ-এর অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে নৈতিক পদস্খলন, বিদ্রোহ, অবিবেচনাপ্রসূত কাজ, অসহযোগিতা ইত্যাদি। এ ধরনের পরিস্থিতিতে চতুর্থ সূরার ৩৪ নং আয়াতে স্ত্রীর আচরণকে নিয়ন্ত্রনে আনতে স্বামীকে কতগুলো ব্যবস্থা নেবার অধিকার দেয়া হয়েছে। এগুলো হলঃ
ক. কোমলভাবে বুঝানো-নিজের ভালবাসা ও আবেগ ব্যক্ত করে স্ত্রীকে পরিবার ভাঙার মত পরিস্থিতি থেকে সরে আসার আসার আহবান জানানো। তাকে আল্লাহর ভয় স্মরণ করিয়ে দিয়ে তার দায়িত্ববোধ জাগানোর চেষ্টা।
খ. বিছানা পৃথক করা-যদি স্ত্রী প্রথম পর্যায়ের ব্যবস্থা সারা না দেয়। (শুধুমাত্র অযৌক্তিক স্বভাবের মেয়েরাই তা করবে), তবে কুরআন স্ত্রীকে দৈহিক সম্পর্ক থেকে সাময়িক ভাবে বঞ্চিত রাখতে স্বামীকে বলে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিদ্যমান ভালবাসা ও আকর্ষণ পরখ করা। আলাদা থাকার মাধ্যমে স্ত্রী পরিস্থিতি বুঝতে সক্ষম হবে। এতে তার গর্ব অহংকার দূর হয়ে তার মধ্যে অনুশোচনা জাগতে পারে।
গ. সৎ উদ্দেশ্য আঘাত (Chastisement)-স্ত্রীকে সংশোধন করার শেষ চেষ্টা হিসাবে তাকে প্রতীকী প্রহার করার অনুমতি স্বামীর আছে। তবে এর কিছু নিয়ম ও বিধি নিষেধ আছে। এই ব্যবস্থা নেয়া যাবে যখন অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে সংশোধনের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এই শেষ চেষ্টার সুযোগ কঠোর নিয়ম দিয়ে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে যাতে স্বামী এর কোন অপব্যবহার করতে না পারে।
৩. সংশোধনের উদ্দেশ্যে স্ত্রীকে প্রহারের ব্যাপারে বিধি নিষেধ
প্রথমতঃ এ ধরনের প্রহার সত্যিকার যৌক্তিক কারণ ছাড়া করা যাবে না। স্ত্রীর মারাত্নক কোন অন্যায়ের ক্ষেত্রেই এ ধরনের ব্যবস্থা অনুমোদিত। এই সুযোগ যে কোন রাগের বশে স্ত্রীর গায়ে হাত তোলার অধিকার স্বামীকে দেয় না। সংশোধনের প্রথম দু’টো ব্যবস্থা না নিয়ে এ কাজ করা যাবে না। তার উপর রাসুল (সাঃ)- এর হাদিসের ভিত্তিতে আইনবিদরা এ কাজের উপর কিছু কঠোর শর্ত দিয়েছেন জথাঃ
ক. রাসুল (সাঃ)-এর মতে, কোন মুসলমান অপরের মুখে আঘাত করতে পারবে না।
খ. যদি শৃঙ্খলার মারাত্নক লংঘনও হয় তবুও কোন মুসলমান অকথ্য ভাষা প্রয়োগ করে এর জবাব দিতে পারবে না।
গ. স্ত্রীকে এমন ভাবে প্রহার করতে হবে যাতে তার গায়ে কোন দাগ না পড়ে অথবা কোন জখম না হয়।
এসব বিধি নিষেধ শুনে রাসুলের সাহাবী আতা (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন যে স্ত্রীকে কি দিয়ে আঘাত করতে হবে। জবাবে রাসুল (সাঃ) বললেন, “মেছওয়াক দিয়ে।” মেছওয়াক হচ্ছে দাঁত মাজায় ব্যবহৃত কাঠি যা টুথব্রাসের সমান আকারের। এই হাদিস থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, স্ত্রীকে প্রহারের বিষয়টি সম্পূর্ণ প্রতীকী। এর উদ্দেশ্য স্ত্রীকে সচেতন করা যে সে অবিলম্বে সংশোধন না হলে তালাক অনিবার্য। এছাড়াও প্রায় সব আইনবিদ একমত যে, এই প্রহার বাদ দেয়াই উত্তম। বিশেষভাবে যেখানে এর বিরূপ ফল হতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংশোধনের এ প্রতিক্রিয়ার ফল ভাল হতে পারে। এ প্রক্রিয়ায় স্ত্রী সুপথে আসলে কুরআন স্বামীকে আদেশ করে স্ত্রীকে ক্ষমা করে দিতে এবং তার এই ভুলের কোন খোঁটা ভবিষ্যতে স্ত্রীকে না দিতে।
৪. তালাক এবং সংশোধনের উদ্দেশ্যে প্রহারের তুলনা
তালাক এবং প্রহার দু’টোকেই ইসলামে প্রথম নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। একেবারে উপায়হীন হলে অগত্যা অনুমোদন দেয়া হয়েছে। রাসুল (সঃ) মুসলমানদের আদেশ করেন স্ত্রীদের প্রতি সদয় হতে। তিনি বলেন, “স্ত্রীরা হচ্ছে স্বামীর কাছে আল্লাহর আমানত, তারা যেন এই আমানতের কোন ক্ষতি না করে।” একবার কয়েকজন মহিলা তার কাছে এই নালিশ নিয়ে এল যে তাদের স্বামীরা তাদের প্রহার করে। তখন রাসুল (সঃ) বললেন যে, “এই স্বামীরা আমাদের মাঝে উত্তম নয়।” তিনি আরও বলেন, “তোমাদের মাঝে সেই উত্তম যে পরিবারের প্রতি উত্তম আর আমি আমার পরিবারের প্রতি উত্তম।” বস্তূত রাসুল (সঃ) তাঁর গোটা জীবনে কখনও তাঁর স্ত্রীদের গায়ে হাত তোলেননি।
৫. স্বামী অন্যায় করলে স্ত্রীর অধিকার
বাস্তবে স্বামীরা শারীরিকভাবে স্ত্রীদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী থাকে। ফলে স্ত্রী কর্তৃক স্বামীরা প্রহার করার সুযোগ বাস্তবিকই নেই। তাছাড়া যেহেতু স্বামী পরিবার প্রধানের দায়িত্বে সেহেতু সংশোধনের উদ্দেশ্যে স্ত্রী তাকে প্রহার করলে উল্টো তালাকের সম্ভাবনাই বাড়বে। এতে প্রহারের উদ্দেশ্যটাই ব্যর্থ হবে। তারপরও যদি স্বামী সত্যিই অন্যায় করে এবং স্ত্রীর প্রতি নিষ্ঠুর হয় তবে তার বিষয়ে স্ত্রী নিম্নোক্ত পদক্ষেপ নিতে পারবেঃ
ক. সে তাকে কোমলভাবে যুক্তির মাধ্যমে বোঝাতে পারবে।
খ. তার প্রতি স্বামীর বিরাগ এবং নিষ্ঠুরতার কারণ খুঁজে তা দূর করতে পারে। এক্ষেত্রে দু’পক্ষই ছাড় দিয়ে আপোষে আসতে পারে।
গ. সে বিচারকের কাছে নালিশ করতে পারে। বিচারক (মালেকী মতে) স্বামীকে সংশোধন হতে আদেশ করবে। স্বামী সংশোধিত না হলে বিচারক সাময়িকভাবে স্বামী-স্ত্রীকে বিচ্ছিন্ন রাখতে পারে। এতেও স্বামী পথে না আসলে তাকে জেল বা দৈহিক শাস্তি দিতে পারে।
ঘ. সর্বশেষ ব্যবস্থা হিসেবে স্ত্রী স্বামীকে তালাক দেবার প্রক্রিয়া করতে পারে।
৬. স্বামী স্ত্রী দু’জনেই অন্যায় করলে
স্বামী স্ত্রী দু’জনেই পরস্পরের বিরুদ্ধে অন্যায় করার অভিযোগ তুলতে পারে। সেক্ষেত্রে চতুর্থ সূরার ৩৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে তারা দু’জনে তাদের পরিবার থেকে অথবা বন্ধুদের থেকে বিচারের জন্য মধ্যস্থকারী নিয়োগ করবে। হানাফী এবং শাফেয়ী আইনবিদরা বলেন যে মধ্যস্থকারীরা শুধু সমঝোতার প্রস্তাব দিতে পারবে। আর ইবনে আব্বাস বলেন যে তার যদি সমঝোতার কোন পথ না দেখেন তবে বিয়ে ভেঙ্গে দেবার সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন। যেহেতু ঐ আয়াতে বিয়ে ভাঙ্গার বিষয়ে কিছু বলা হয়নি সেহেতু বোঝা যায় যে মধ্যস্থকারীরা শুধু সুপারিশ করতে পারবেন।
সূত্র নির্দেশিকাঃ
প্রশ্ন-২: আল কুরআন ৪:৩৪-৩৫
প্রশ-৪: রাসুল (সঃ) স্ত্রীদের প্রহার করাকে নিরুৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেন, “তোমরা কি এতে লজ্জা বোধ করনা, যে তোমরা দিনে স্ত্রীদের প্রহার করে রাতে তাদের সাথে মিলিত হতে চাও!”
প্রশ্ন-৫: আল কুরআন ৯:৭১ এই আয়াতে নারী পুরুষকে পরস্পরের সাহায্যকারী হিসেবে বলা হয়েছে। তারা সৎকাজে পরস্পরকে উৎসাহিত করবে।
প্রশ্ন-৬: যদিও কুরআন বলেছে এই মধ্যস্থকারী উভয়ের পরিবার থেকে আসবে তবুও ঘনিষ্ঠ বন্ধুদেরও একাজে লাগানো যাবে। কুরআন পরিবারের সদস্যদের কথা এজন্যে বলেছে যে তার এ ব্যাপারে বেশি আগ্রহী হবে এবং সমস্যা সম্পর্ক ভাল জ্ঞান রাখবে।
জি-৪৫ বিয়ে বিচ্ছেদ (তালাক)-১
প্রশ্নঃ
১. সাধারণত এটা ধারণা করা হয় যে ইসলামে তালাকের একমাত্র অধিকার স্বামীর-এটা কি ঠিক?
২. কোন কোন পরিস্থিতিতে স্ত্রী এককভাবে স্বামীকে তালাক দিতে পারে?
৩. কোন কোন প্রেক্ষিতে একজন মুসলিম স্ত্রী কোর্টের মাধ্যমে স্বামীর কাছে তালাক চাইতে পারে?
৪. কখন স্বামী স্ত্রী যৌথ সম্মতিতে তালাক দিতে পারে?
৫. মুসলিম স্ত্রীদের স্বামীর মত তালাকের একক ও একচ্ছত্র অধিকার নেই কেন?
৬. ইসলামী আইনে স্বামী বা স্ত্রী কারোরই কোর্টের মাধ্যমে তালাক নেবার বাধ্যবাধকতা নেই কেন?
৭. কোন কোন অবস্থায় তালাক কার্যকরী হয়?
৮. কোন কোন রাগত অবস্থায় স্বামী কর্তৃক উচ্চারিত তালাক শব্দ কার্যকর হয়না?
৯. কোন সময় স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে না?
উত্তরঃ
১. তালাকের অধিকার প্রসঙ্গে
ইসলামে স্বামীর তালাকের একক অধিকারকে কয়েকটি প্রেক্ষিতে স্ত্রীকে তালাক পাওয়ার একক অধিকার দিয়ে সমতা কায়েম করা হয়েছে। এছাড়া স্ত্রী আদালতের মাধ্যমেও তালাক প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে। তাছাড়া স্বামী স্ত্রী পরস্পর সম্মতিতেও পৃথক হতে পারে। কাজেই অসুখী বিয়ে সম্পর্ক তালাকের মাধ্যমে শেষ করার কার্যত সমান অধিকারই স্ত্রীর আছে।
২. যেসব অবস্থায় স্ত্রী এককভাবে স্বামীকে তালাক দিতে পারে
ক. আইসিমা- বিয়ের সময় বা তারপর স্বামী তার তালাকের একক অধিকার স্ত্রীকে দিয়ে দেবার নাম আইসিমা।
খ. শর্তযুক্ত অধিকার- এ ক্ষেত্রে কাবিননামা স্বাক্ষরের সময় স্ত্রী কিছু শর্ত আরোপ করতে পারে যা ভঙ্গ হলে সে তালাক দিতে পারবে।
৩. যেসব প্রেক্ষিতে স্ত্রী কোর্টের মাধ্যমে তালাক চাইতে পারে
ক. স্ত্রীকে ভরণপোষণ অক্ষম হলে অথবা অস্বীকার করলে (স্ত্রী যদি ধনী হয় তবুও তাকে পূর্ণ ভরণপোষণ দিতে স্বামী বাধ্য)।
খ. দুর্ব্যবহার (যার অন্তর্ভুক্ত আছে প্রহার করা, গালি গালাজ করা, অথবা তাকে অন্যায় কাজ করতে চাপ দেওয়া)।
গ. স্বামী পুরুষত্বহীন হলে (স্ত্রীর বৈধ যৌন চাহিদা পূরণে অক্ষম হলে)।
ঘ. স্বামী উন্মাদ হলে অথবা তার দুরারোগ্য/ছোঁয়াচে রোগ হলে
ঙ. দীর্ঘ অনুপস্থিতির ক্ষেত্রেঃ
i. যদি স্বামীর অবস্থান জানা যায়, তবে তালাক কার্যকরী হবার পূর্বে তাকে ফিরে আসার সুযোগ দেয়া হয়।
ii. যদি স্বামীর ঠিকানা জানা না থাকে, তবে স্ত্রীকে ৬ মাস থেকে ১ বছর অপেক্ষা করতে হবে। এর মধ্যে স্বামী ফিরে না আসলে সে স্বামী থেকে তালাক হয়ে যাবে।
চ. স্বামীর দীর্ঘ দিনের জন্য জেল হলে।
ছ. বিয়ের সময় স্বামী নিজের সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিলে অথবা নিজের কোন দুর্বলতা গোপন করলে।
৪. পারস্পরিক সম্মতিতে তালাক
১. পারস্পরিক সম্মতিতে তালাকের দু’টো পদ্ধতি আছেঃ
ক. মোবাররা-যেখানে স্বামী স্ত্রী সম্পর্ক ছিন্ন করতে পরস্পর সম্মত হয়। আর্থিক এবং অন্যান্য বিষয়ে তারা একমত হয়।
খ. খোলা তালাক (একতরফা তালাক)-যেখানে স্বামীর ব্যবহারে স্ত্রী অসুখী থাকে এবং বৈবাহিক সম্পর্ক অব্যাহত রাখতে সে ভীত হয়। এ অবস্থায় স্ত্রী একতরফাভাবে স্বামীকে মোহরানার অর্থ ফেরৎ নিয়ে তালাক নিতে পারে।
খোলা তালাকের শর্তঃ
I. এই তালাক চাওয়ার যৌক্তিক কারণ থাকতে হবে।
II. স্বামী এ তালাক মানতে বাধ্য।
III. কোন স্বামী মোহরানার টাকা ফেরৎ পাওয়ার লোভে স্ত্রীকে খোলা তালাক নিতে চাপ দিতে পারবেনা।
IV. এই তালাক যে কোন সময় নেয়া যাবে।
৫. মুসলিম স্ত্রীদের একচ্ছত্র ও একক তালাকের অধিকার নেই কেন
ইসলামী আইন স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই ব্যর্থ বৈবাহিক সম্পর্ক অবসানে তালাক নেবার সুযোগ দিয়েছে। এই সুযোগের পদ্ধতিতে উভয়ের ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে। ইসলাম স্ত্রীকে তালাকের নিঃশর্ত ও একক অধিকার দেয়নি কারণ এর কিছু ক্ষতিকর প্রভাব তার এবং পরিবারের উপর পড়তে পারে। যেমনঃ
ক. বিয়ের উদ্দেশ্য হচ্ছে স্থায়িত্ব। শামীরা যেমন স্ত্রীদের আবেগ তাড়িত হয়ে তালাক দিতে পারে, মেয়েদের ক্ষেত্রে এই ভুলের আশঙ্কা আরও বেশি। কাজেই যদি স্ত্রীর দতালাকের একক অধিকার থাকত তবে আবেগের বশে সে তালাক দিয়ে পড়ে হয়ত আফসোস করত।
খ. স্বামী-স্ত্রী উভয়েই তালাকের প্রতিক্রিয়ায় কষ্ট পায় (বিশেষ করে মানসিকভাবে)। তবে স্বামীকে এ কষ্টের অতিরিক্ত আর্থিক খরচের বোঝাও বইতে হয়। মোহরানার সমস্ত টাকা তাকে পরিশোধ করতে হয়। ইদ্দতকালীন সময়ে (যা তিন মাস থেকে ৯ মাস পর্যন্ত হতে পারে) স্ত্রীকে ভরণপোষণ করতে হয়। ছোট সন্তান যদি স্ত্রীর কাছে থাকে তবে তাদের ভরণপোষণ করতে হয়। কোন কোন আইনবিদের মতে স্ত্রীকে আরও এক বছরের (ক্ষতিপুরন) ভরণপোষণ দিতে হয়। স্বামীর উপর এত আর্থিক লোকসানের বোঝা তার দ্বারা স্ত্রীকে তালাক দেয়ার বিরুদ্ধে একটি নিবারক (Deter rant) হিসেবে কাজ করে। যেহেতু মেয়েদের এমন আর্থিক লোকসানের আশঙ্কা নেই সেহেতু তাদের নিঃশর্ত তালাকের সুযোগ দিলে এর অপব্যবহার হতে পারত। একক তালাকের অধিকার না থাকাটা মেয়েদের তালাক পাওয়ার সুযোগ কেড়ে নেয়নি। যৌক্তিক যে কোন প্রয়োজনে সে তালাক নিতে পারে।
৬. আদালতের মাধ্যমে তালাক
যদি স্বামী স্ত্রী দু’জনেই তালাকের ব্যাপারে সম্মত থাকে (যেমন, মুবাররা) তবে এ বিষয়ে আদালতের কিছুই করার নেই। ইসলামী আইন তালাক প্রক্রিয়াকে আদালতের আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসুত্রিতায় ফেলতে চায়না। আদালতের আর একটা অসুবিধে হচ্ছে যখনই কোন তালাকের বিষয় মোকদ্দমায় গড়ায় তখনই স্বামী-স্ত্রী দুই পক্ষ হয়ে যায়। তখন তর্কের খাতিরে তর্ক ও বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা উভয়ের সম্পর্ককে আরও তিক্ত করে পুনর্মিলনের সকল সুযোগ দূর করে দেয়। তালাক প্রক্রিয়ায় আইনগত বিষয় জড়িত হলে অবশ্যই আদালতে যেতে হবে। তবে সাধারণতঃ তালাক একটি ব্যক্তিগত বিষয়। যার সমাধান স্বামী-স্ত্রী এবং তাদের ঘনিষ্ঠ আত্নীয় মধ্যস্থকারীর মাধ্যমে হওয়াই উত্তম। না হলে পরিবারের সাথে অনেক অপ্রিয় গোপন কথাও আদালতের মাধ্যমে চারদিকে প্রচারিত হবে।
৭. তালাক কার্যকর হবার শর্তঃ
ক. স্বামী কর্তৃক তালাক শব্দের উচ্চারন হতে হবে অত্যন্ত সচেতন ও সুস্থ মস্তিস্কে। কেউ তাকে এ কাজে প্ররোচিত বা বাধ্য করলে চলবে না।
খ. মৌখিক, লিখিত অথবা দুত মারফত যেভাবেই তালাক দেয়া হোক তালাকের বিষয়টি স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীনভাবে উল্লিখিত হতে হবে।
গ. কতগুলো অবস্থায় তালাকের কথা উচ্চারন করা যায় না। তালাক মৌখিকভাবে দিলেও নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে তা অকার্যকর হয়ঃ
i. স্বামী মদ বা ওষুধের প্রভাবে তালাক দিলে।
ii. স্বামী যদি এ স্বভাবের হয় যে প্রায়ই স্ত্রীকে এ ধরনের কথা বলে যা সে আসলে বোঝায় না। তবে এ ধরনের স্বামী তালাকের কথা বললে তার কাফফারা হিসেবে ১০ জন মিসকিনকে খাওয়াতে হবে অথবা তিনদিন রোযা রাখতে হবে।
iii. চরম আবেগ তাড়িত বা শোকাহত অবস্থায় যখন মানুষ বোঝে না যে সে কি বলছে।
৮. যে সব আইনবিদ ইবনে আল কাইউম রাগান্বিত অবস্থার শ্রেনী বিভাগ করেছেন এভাবেঃ
ক. চরম রাগের মুহূর্তে যখন মানুষ অর্থহীন কথা বলে বা সে জানেনা তার উচ্চারিত কথার অর্থ ও উদ্দেশ্য। এসব সময়ে তালাকের কথা উচ্চারন করলেও তা কার্যকর হবে না।
খ. মাঝারি ধরনের রাগ-সাধারণতঃ মানুষ রাগের সময়ই তালাক দেয়। তবে আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নেয়া তালাকের কথা রাগত অবস্থায় উচ্চারন করলে তালাক হবে।
গ. আর এক ধরনের রাগত অবস্থার কথা বলা হয়েছে যার বিষয়ে কিছুটা দ্বিমত আছে। তা হচ্ছে যখন স্বামী রাগের মাথায় তালাক দিয়ে তারপর অনুতপ্ত হয়, সেক্ষেত্রে আইনবিদরা তালাককে অকার্যকর বলেন। কারণ-
i. রাসুলের একটি হাদিস আছে যে মানুষ রাগের মাথায় তালাক দিলে তালাক হয় না।
ii. এটা কুরআনের এক মূলনীতি যে আল্লাহ মানুষকে অনিচ্ছাকৃত কোন উচ্চারণের জন্য দোষী করবেন না।
iii. এই মাঝারি ধরনের রাগকে মাদকাসক্ত অবস্থার সাথে তুলনা করা যেতে পারে।
iv. ইসলামের বিয়ের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্থায়ী করা। কাজেই এটা টিকিয়ে রাখার সব সুযোগ দম্পতিকে দিতে হবে।
৯. যে সব সময় তালাক দেয়া যায় না
মানুষ নিম্নলিখিত অবস্থায় স্ত্রীকে তালাক দিতে পারে নাঃ
ক. যখন স্ত্রীর মাসিক ঋতুস্রাব চলতে থাকে (যদিও এ সময় স্ত্রী খোলা তালাক দিতে পারেন)।
খ. মাসিক ঋতুস্রাব শেষে স্বামী যদি তার সাথে মিলিত হয়। এ অবস্থায় পরবর্তী মাসিক না হওয়া পর্যন্ত তাকে তালাক দেয়া যাবে না।
গ. সন্তান জন্মের অব্যাবহিত পর (সাধারণতঃ সন্তান জন্মের পর একমাস) এসব সময়ে তালাক দেয়া সুন্নাহ বিরোধী। আইনবিদরা এসব সময়ের তালাককে নাকচ করে দেন।
সূত্র নির্দেশিকাঃ
প্রশ্ন-৪: আল কুরআন ২:২২৯, ৪:১৯
রাসুল (সঃ) সাবিত ইবনে কায়েসকে তাঁর স্ত্রীর মোহরানার অর্থ ফেরত নিয়ে তাকে বিবাহ বন্ধন মুক্ত করে দিতে নির্দেশ দেন।
প্রশ্ন-৮: হাদিস, “শুধুমাত্র সচেতন ঐচ্ছিকভাবে দেয়া তালাকই তালাক।”
জি-৪৬ বিয়ে বিচ্ছেদ (তালাক)-২
প্রশ্নঃ
১. কয়েকটি অবস্থায় তালাক নিষেধ কেন?
২. তালাক শব্দ উচ্চারণের সব পূর্বশর্ত মেনে তালাক দেয়া হলে তা কি সাথে সাথে কার্যকর হবে?
৩. তালাক এর পরে অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে (ইদ্দত) স্ত্রী কোথায় থাকবে এবং কে তার ভরণপোষণ করবে?
৪. তালাকদের পর স্ত্রী কি পুনর্বিবাহ করতে পারে?
৫. একই স্বামী তৃতীয়বারের মত স্ত্রীকে তালাক দিলে তাদের পুনর্মিলনের আর কোন সুযোগ কি থাকে না?
৬. তালাকের পর স্ত্রীর আর্থিক অধিকার ও সন্তানকে নিজের কাছে রাখার ইচ্ছার কোন স্বীকৃতি ইসলামে আছে কি?
উত্তরঃ
১. কয়েকটি অবস্থায় তালাক নিষেধ কেন
মেয়েদের মাসিক ঋতুস্রাবের সময় তাদের তালাক দেয়া নিষেধ কয়েকটি কারণে-
ক. কুরআন মতে মেয়েরা এ সময় এমনিতেই একটু কষ্টের মধ্যে থাকে। এ অবস্থায় তাদের উৎকণ্ঠা ও দুঃখ আরও বাড়ানো হবে অমানবিক।
খ. এ সময় স্বামী স্ত্রীর সাথে মিলিত হতে পারে না। অন্তরঙ্গ মিলনের সুযোগ না থাকার কারনেও স্বামীর মাথায় তালাকের মত চিন্তা আসতে পারে। তাই এই সুযোগ রদ করা হয়েছে।
এ সময়ের স্বামীর তালাকের ইচ্ছা ব্যক্ত করাও নিষিদ্ধ। সন্তান জন্মের অব্যাবহিত পর তালাক দেয়াও একই কারণে নিষিদ্ধ। তাছাড়া এ সময় একজন নারী এবং তার শিশুর দৈহিক ও মানসিক সহযোগিতা প্রয়োজন। এ সময়েও স্বামী স্ত্রীর সাথে মিলিত হতে পারে না।
মাসিক ঋতুস্রাবের পর স্বামী স্ত্রীর সাথে মিলিত হলে এই মিলনের ফলে সন্তান জন্মের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য পরবর্তী ঋতুস্রাব শেষ না হওয়া পর্যন্ত তালাক নিষেধ। স্ত্রী গর্ভবর্তী হবার বিষয়টি স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ককে আরও সহজ করে দিতে পারে। তাছাড়া সন্তানের পিতৃ পরিচয়ও নিশ্চিত করা এর উদ্দেশ্য। গর্ভাবস্থায়ও কোন মহিলাকে তালাক দেয়া যাবে না। যদিও এ সময় তালাকের পরিকল্পনার কথা তাকে জানানো যাবে। ইসলামী আইনে শুধু মাত্র মাসিক ঋতুস্রাবের পর নির্মল সতেজ অবস্থায় স্ত্রীর সাথে দৈহিক মিলন না করে তালাক দেয়া যাবে।
২. তালাকের পর অপেক্ষার সময় (ইদ্দত)
তালাক শব্দ উচ্চারণের সাথে সাথেই তা কার্যকর হয়ে যায় না। এর পর ইদ্দত নামক অপেক্ষার সময় থাকে। এটা হচ্ছে মহিলাদের তিনটি মাসিক ঋতুস্রাবের সমান সময় (তিন মাস) যদি এই তিন মাসে নারী সন্তান ধারণের বিষয়টি ধরা পড়ে তবে এটা নয় মাস পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। খোলা তালাকের ক্ষেত্রে অথবা মাসিক ঋতুস্রাবের পর পরই স্বামী স্ত্রীর মিলনের পূর্বেই যদি তালাক দেওয়া হয় তবে কোন ইদ্দত পালন করতে হয় না। এই ইদ্দতকালীন সময়ে স্বামী স্ত্রীর দৈহিক মিলন নিষিদ্ধ। কিন্তূ যদি এমন কিছু হয়ে যায় তবে তালাক বাতিল হয়ে যায় এবং স্বামী স্ত্রীর পুনর্মিলন প্রতিষ্ঠিত হয়।
৩. ইদ্দতকালীন সময়ে স্ত্রীর আবাসন ও ভরণপোষণ
কুরআন মতে এটা নিশ্চিত যে, তালাকের পর ইদ্দতকালীন সময়ে স্ত্রী তার পূর্বের বাড়িতেই অবস্থান করতে পারবে। তাকে জোর করে ঘর থেকে বের করা যাবে না। এমনকি তার নিজের পক্ষেও অহেতুক ঘর ছাড়া ঠিক নয়; এই সময় সে স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ ও ভাল ব্যবহার প্রাপ্য। তালাকের পর স্ত্রীকে স্বামীর ঘরে থাকার সুযোগ এবং স্বামীর কাছ থেকে তার ভরণপোষণ দেয়ার ইসলামের লক্ষ নিম্নরূপঃ
ক. অপেক্ষার এই সময়টি স্বামী স্ত্রীর ভালবাসার এক পরীক্ষা এবং এটা হয়ত তাদের পুনর্মিলন ঘটাতে পারে। যদি স্বেচ্ছায় এমন পুনর্মিলন ঘটে তবে স্বামী স্ত্রীকে নতুন করে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে না বা আদালতে কোন আবেদন করতে হবে না। যদিও এই পুনর্মিলনকে আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করাই উত্তম।
খ. এই অপেক্ষার সময়ে স্ত্রীর সন্তান ধারণের বিষয়টি নিশ্চিত হয়।
গ. সর্বশেষে এই অপেক্ষার সময়টি একটি অন্তর্বর্তীকালীন সময় হিসাবে কাজ করে যা স্বামী স্ত্রীকে পৃথকভাবে নতুন জীবন শুরু করবার পূর্বে দৈহিক ও মানসিকভাবে প্রস্তূতি গ্রহণের সময় দেয়।
উল্লেখ্য যে এই অপেক্ষার সময় দম্পতি পরস্পরের স্বামী স্ত্রী হিসাবেই আইনত গণ্য হবেন। যদি এর মধ্যে দু’জনের যে কোন একজন মারা জান তবে অপরজন তার সম্পদের উত্তরাধিকারী হবেন।
৪. তালাকের পর ইদ্দত শেষ হলে ইসলাম নতুন করে বিয়ের অনুমতি দেয়। ইসলাম তালাক প্রাপ্ত ব্যক্তির বিয়ের ব্যাপারে কোন কুসংস্কারকে প্রশ্রয় দেয় না। যদিও অনেক সমাজেই এটাকে নিরুৎসাহিত করা হয়। বরং ইসলাম প্রত্যেককে বিয়ে করে (অন্য ব্যক্তিকে অথবা আগের সাথীকে) নতুন জীবন শুরু করবার সুযোগ দেয়। যদি আগের স্বামীর সাথেই বিয়ে হয় তবে নতুন করে বিয়ে চুক্তি করতে হবে এবং মোহরানা দিতে হবে। এভাবে যে কোন দম্পতি দ্বিতীয় ও তৃতীয় বার এ ধরনের পুনর্বিবাহের সুযোগ পাবে। ইসলাম যে কোন মুল্যে স্ত্রীকে পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ রাখতে চায়। সে জন্যে স্বামী স্ত্রীর পুনর্মিলনের এত সুযোগ এখানে রাখা হয়েছে।
৫. স্থায়ী তালাক
যদি কোন মহিলা তার স্বামী কর্তৃক তিনবার তালাক প্রাপ্ত হয় তবে তা হবে এক জটিল সমস্যা এটা তখন স্পষ্ট হয় যে, এই দম্পতির পুনর্মিলনের সুযোগ নেই অথবা তাদের যে কেউ বিয়েকে গুরুত্বের সাথে নিচ্ছে না। এ অবস্থায় তালাকের মর্যাদা রক্ষার্থেই এই স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক স্থায়ী ভাবে শেষ হবে। তারা আর পুনরায় নিজেদের মধ্যে বিবাহে আবদ্ধ হতে পারবেনা। যদি উক্ত স্ত্রী অন্য কোন ব্যক্তির সাথে বিয়ে হয় এবং নতুন স্বামী যৌক্তিক ভাবে স্ত্রীকে তালাক দেন অথবা মারা যান তবে উক্ত মহিলা নতুন করে তার প্রথম স্বামীর সাথে পুনর্বিবাহে মিলিত হতে পারবেন।
৬. তালাকের পর স্ত্রীর আর্থিক অধিকার ও সন্তানকে নিজের কাছে রাখা প্রসঙ্গে
বিয়ে হয়েছে কিন্তূ স্বামী-স্ত্রীর দৈহিক মিলন হয়নি-এমতাবস্থায় যদি তালাক হয়ে যায়, তবে স্ত্রী মোহরানার অর্ধেক পাবে। অন্যথায় স্ত্রীর অধিকার হচ্ছেঃ
ক. মোহরানার পূর্ণ অংশ পাবে।
খ. বাগদান ও বিয়ের সময়ে প্রাপ্ত সকল উপহারাদি স্ত্রীর।
গ. ইদ্দতের সময়ে (৩ বা ৯ মাস) ভরণপোষণ পাবে।
ঘ. সন্তানকে স্তন্যপান করানোর সময়ে সন্তানের বাবা থেকে আর্থিক অধিকার পাবে।
ঙ. কিছু সান্ত্বনা উপহার (কারো মতে তা দিলে উত্তম, কিন্তূ অন্যরা বলেন যে এটা বাধ্যতামূলক)।
ইসলামী আইনে ছোট সন্তানের (সাধারনতঃ সাত বছরের কম বয়স হলে) তত্ত্বাবধান/হেফাজত (Custody)-এর দায়িত্ব মায়ের দিকে বেশি ঝুঁকে। কন্যাদের বা বিয়ে পূর্ব পর্যন্ত কন্যাদের তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব মায়ের হওয়াটাই অধিক যুক্তিযুক্ত, যাতে মা তাকে সঠিকভাবে গরে তুলতে পারে। তবে দু’টি শর্ত রয়েছে যথাঃ
ক. মায়ের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে যোগ্যতা ও ভাল সুনাম থাকা এবং
খ. মা অবিবাহিতা থাকা। এ শর্তটি এসেছে রাসুল (সঃ)-এর একটি হাদিস থেকে, সেখানে তিনি মায়ের বিবাহিতা হওয়া ও সন্তানের স্বার্থবিষয়ে আশংকা প্রকাশ করেছেন।
তবে সাধারণত (Custody) বা বাচ্চাদের হেফাজতকারী হিসেবে ইসলাম মা-কে অথবা তার নিকটের আত্নীয়দেরকে (যদি মা-কে না পাওয়া যায় একাজে) উত্তম হিসেবে বিবেচনা করেন।
সূত্র নির্দেশিকাঃ
প্রশ্ন-২: আল কুরআন ৬৫:৬, ২:২২৮, ৬৫:৪, ৩৩:৩৯
প্রশ্ন-৩: আল কুরআন ৬৫:৬, ৬৫:১
প্রশ্ন-৬: আল কুরআন ২:২৩৭, ২:২৩৬, ২:২৪১
যেখানে উল্লেখ আছে যে, স্বামীকে তার তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে ‘মতন’ উপহার প্রদান করবে/বা করতে হবে।
— সমাপ্ত —