জি- ১৬ ইসলামে নারীর মযা©দা- সামাজিক প্রেক্ষিত
প্রশ্নঃ
১. কণ্যা সন্তান জন্ম সম্পকে© ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কি? ইসলামের আবিভা©বের পূবে© এ ব্যাপারে জনমত কেমন ছিল?
২. নারীর প্রতি নমনীয় হতে কোন নিদি©ষ্ট আদেশ ইসলামে আছে কি?
৩. মেয়েরা কি ছেলেদের মতই লেখাপড়া করতে পারে?
৪. এমন কোন ক্ষেত্র আছে কি যেসব বিষয়ে মেয়ে অথবা ছেলেদের জ্ঞান অজ©ন নিষেধ?
৫. স্ত্রী হিসেবে নারীদের ইসলাম কি বলে?
৬. ইসলামে মায়ের কোন সুনিদি©ষ্ট অধিকার আছে কি?
৭. কোন মুসলিম পুরুষের জন্য এটা কি ঠিক যে তিনি তার স্ত্রীকে নিদি©ষ্ট পোশাক পরাতে বাধ্য করবেন অথচ নিজে পোশাক সম্পকে© নিলি©প্ত থাকবেন?
৮. কোন কোন লেখক বলেছেন যে আদশ© মুসলিম নারী ঘরেই আবদ্ধ থাকেন। এটা কি ঠিক?
উত্তরঃ
১. কণ্যা সন্তান জন্ম সম্পকে© ইসলাম
[সূত্র নিদে©শিকাঃ আল কুরআন- ৮১:৮-৯, ১৬:৫৮]
ইসলামের আবিভা©বের পূবে© আরবের কণ্যা সন্তানদের হত্যা করা হত। অন্যান্য স্থানেও কণ্যা সন্তানকে অশুভ হিসেবে দেখা হত। ইসলাম এই খারাপ চচা©কে শুধু বন্ধই করেনি বরং এক সরাসরি খুন বলে ঘোষণা করেছে এবং মানুষকে এই ধারণায় নিক্ষিপ্ত করেছে যে পুত্র-কণ্যা দুই ধরণের সন্তানই আল্লাহর উপহার।
২. মেয়েদের প্রতি সদয় হবার নিদে©শনা
হাদিসে রাসূল (সঃ) বলেন, যে ব্যাক্তি দুটি কণ্যা সন্তান লালন পালন করে বড় করবে, সে এবং আমি এমনই কাছাকাছি থাকব (এই বলে তিনি তার হাতের পাশাপাশি দু আঙ্গুলের অন্তরঙ্গতাকে দেখালেন)। তিনি আরও বলেন যে, যার একটি কণ্যা সন্তান আছে এবং সে তাকে জীবন্ত কবর দিলনা, তাকে অপমানিত করল না এবং পুত্রদেরকে তার উপর প্রাধান্য দিলনা, আল্লাহ তাকে বেহেমত দাখিল করবেন। মুহাম্মদ (সঃ) তার নিজের জীবনে তিনি এসব শিক্ষার বাস্ত প্রয়োগ দেখিয়েছেন।
৩. নারীর শিক্ষা প্রসঙ্গে ইসলাম
এটা আগেই আলোচনা করা হয়েছে যে ইসলামে জীবিকার প্রয়োজনে নারীর যে কোন বৈধ কাজ করতে বাধা নেই। বরং ইসলামী রাষ্ট্রে কিছু কাজে মহিলাদেরই অগ্রাধিকার দেয়া হয়। এসব প্রয়োজনেই শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ নারীর জন্য আবশ্যক। যে সব কাজে মেয়েদের অগ্রাধীকার থাকে তার অন্ত©ভূক্ত হচ্ছে শিক্ষকতা, চিকিৎসা, নাসি©ং ইত্যাদি। ইসলামে জ্ঞানাজ©ন শুধু প্রত্যেক নারী পুরুষের অধিকার নয় বরং তা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। রাসূল (সঃ) বলেন, জ্ঞানাজ©ন প্রত্যেক নর-নারীর জন্য ফরজ। করআনেও এর সমথ©নে বলা হয় জ্ঞানীদের আল্লাহ বিশেষ মযা©দা দেবেন।
৪. মেয়েদের কোন বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণে কোন বাধা বা সীমাবদ্ধতা আছে কি?
ইসলামে এমন কোন আইন নেই যা বিশেষভাবে মেয়েদের কোন বিষয়ে জ্ঞানাজ©নের সুযোগ নষ্ট করে। নারী-পুরুষের নিবি©শেষে সবার জন্য যার চচা© নিষিদ্দ এমন দু একটি বিষয় আছে যেমন যাদুবিদ্যা। আবার কয়েকটি
বিষয় আছে যার জ্ঞান অজ©ন নারী পুরূষ উভয়ের জন্য ফরজ, তা হলো ইসলামের মৌলিক শিক্ষা, আনুষ্ঠানিক ধমী©য় কাজগুলো, নৈতিক শিক্ষা ইত্যাদি। কিছু বিষয় আছে যা বিশেষভাবে মেয়েদের শিখতে উৎসাহিত করা হয় যা তাদের আল্লাহ প্রদত্ত দাযিত্ব পালনে দক্ষ করে, যেমন- শিশু পরিচযা©, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান, গাইস্থ্য বিজ্ঞান, নাসিং©, চিকিৎসা, ধাত্রীবিদ্যা ইত্যাদি। এছাড়া বিজ্ঞান, কলা-বাণিজ্যের সকল ক্ষেত্রে জ্ঞানের সুযোগ পুরুষ মহিলা উভয়ের জন্য উন্মুক্ত। যতক্ষণ পয©ন্ত এগুলো উপকারী ও প্রয়োজনীয়।
৫. স্ত্রী হিসেবে নারীঃ ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি
ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ে এক পবিত্র বন্ধন। বিয়ের মাধ্যমে স্ত্রী তার স্বামীর দাসী বা স্বামী তার প্রভুতে পরিণত হয়না। ইসলামে আল্লাহই একমাত্র প্রভু এবং সকল মানব মানবী তার দাস-দাসী। কুরআন বিবাহ বন্ধনকে মানুষের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত হিসেবে বণ©ণা করে যা হচ্ছে স্থিতিশীলতা, শান্তি, পারস্পরিক ভালবাসা ও আকষ©ণের উৎস। এজন্যেই ইসলামে বিয়েরব্যাপারে সম্মতি এর এত গুরূত্ব দেয়া হয়েছে। স্ত্রীর সাথে ব্যাবহারে রাসূলের(সঃ) কথা এবং জীবন ছিল অনুপন আদশ©। তিনি বলেন, সবচেয়ে সঠিক বিশ্বাসী সে যার ব্যবহার ভাল এবং তোমাদের মধ্যে সে উত্তম যে তার স্ত্রীর প্রতি উত্তম।(অথা©ৎ উত্তম আচরণ করে- অনুবাদক)
৬. ইসলামে মায়ের অগ্রাধিকার
[সূত্র নিদে©শিকাঃ আল কুরআন- ১৭:২৩, ৩১:১৪]
কুরআন আল্লাহর এবাদতের পরে পিতামাতর প্রতি বিশেষভাবে মায়ের প্রতি সহানূভূতিশীল ও সদয় হতে পরামশ© দেয়। মুসলমানদের জন্য পাশ্চাত্যের মত বৃদ্ধ মাতাপিতাকে নাসি©ং হোম বা দৃদ্ধাশ©মে রাখা নিষ্ঠুর , নিদ©য় ওঅনৈসলামিক আচরণ। রাসূল (সঃ) বলেন, মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের বেহেস্ত। তিনি আরও বলেন, উত্তম চরিত্রের মানুষ মহিলাদের প্রতি দয়াশীল হয় এবং একমাত্র খারাপ লোকেরাই তাদের অপমান করে।
৭. নারীর ইসলাম সম্মত পোশাক প্রসঙ্গে
মুসলিম মেয়েরা ইসলাম সম্মত পোশাক পরেন শুধুমাত্র আল্লাহর আদেশ পালনের জন্য, আল্লাহর প্রতি আন্তরিক সম্মান থেকে এবং তাকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য, স্বামী বা অন্য কোন পুরুষ আত্মীয় বা সমাজের চাপে নয়। বরং অনেক সেকুলার মুসলিম দেশে যেখানে রাষ্ট্র ও সমাজে হিজাব পরা মেয়েদেরকে লজ্জিত ও অপমানিত করে সেসব স্থানেও ধামি©ক মেয়েরা রাষ্ট্রের রক্তচক্ষু, এমনকি স্বামীর বাধা উপেক্ষা করে ইসলাম সম্মত পোশাক পরেন। এটা বলা ভুল যে হিজাব মানেই মেয়েদের নিদি©ষ্ট একটা পোশাক পরতে হবে অথচ অন্যদিকে ছেলেদের পোশাকেও কোন বিধি নিষেধ থাকবে না। ইসলাম নারী-পুরুষ উভয়কেই তাদের শরীরের কিছু অংশ নিদি©ষ্ট ভাবে আবৃত করতে বলা হয়েছে। কিন্তু কি ধরণের কাপড় দিয়ে আবৃত করতে হবে তা (রং বা ডিজাইন) বলা হয়নি। এব্যাপারে ব্যাক্তির পছন্দ অপছন্দই প্রাধান্য পাবে। (অবশ্য আটসাট ফিনফিনে পোশাক পরা যাবে না; এ কথা আল্লামা জামাল বাদাবী অন্যত্র আলোচনা করেছেন।- অনুবাদক)
৮. আদশ© মুসলিম নারী কি ঘরেই আবদ্ধ থাকেন?
মুসলিম মেয়েরা ঘরেই আবদ্ধ থাকবেন- এধারণা ভুল। এটা বলাও ভুল হবে যে ইসলাম মেয়েদের অন্দরে থাকা পছন্দ করে। জ্ঞানাজ©ন মেয়েদের জন্য বাধ্যতামূলক. পরিবারের প্রয়োজনে উপাজ©নের জন্য বাইরে থাকার অনুমতি তাদের রয়েছে। ঘরে আবদ্ধ থাকার ধারণা সম্ভবতঃ কুরআনের একটি আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা থেকে এসছে যাতে বলা হয়েছে, তোমরা ঘরে থাক এবং জাহেলী যুগের মেয়েদের মত নিজেদের পদশ©ণ করো না। এই আয়াত শুধু মাত্র রাসূল (সঃ) এর স্ত্রীদের লক্ষ্য করে নাজিল হয়েছে। ধামি©ক মেয়েদের জন্য এটা বলা যেতে পারে যে অপ্রয়োজনে বাইরে ঘোরাঘুরি না করে ঘরে থেকে শান্তিপূণ© আবাস গড়ে তোলাই উত্তম। রাসূলের হাদিস থেকে জানা যায় যে, মেয়েদের শুধু ঘরে আবদ্ধ থাকার প্রয়োজন নেই; যেখানে রাসূল (সঃ) বলেন, আল্লাহ তোমাদের প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে অনুমতি দিয়েছেণ।
জি- ১৭ ইসলামে নারীর মযা©দা- রাজনৈতিক প্রেক্ষিত
প্রশ্নঃ
১. দেশের রাজনৈতিক কম©কান্ডে অংশগ্রহণ কি মুসলিম মেয়েদের জন্য অনুমোদিত?
২. সামাজিক ও রাজৈতিক বিষয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার অধিকার কি মুসলিম মেয়েদের আছে?
৩. মেয়েদের ভোটাধিকার প্রসঙ্গে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কি?
৪. যারা বলেন, বাইয়্যাত হচ্ছে রাসূল (সঃ) এর প্রতি ধমী©য় আনুগত্যের শপথ, এর সাথে রাজনৈতিক ভোটাধিকার এর কোন সম্পক© নেই,- তাদের এ মন্তব্যের ব্যাপারে কি বলবেন?
৫. আইন প্রণেতা ও নেতা হিসেবে মেয়েদের নিবা©চিত হবার ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কি?
৬. ইসলামের প্রাথমিক যুগে মেয়েরা রাজনৈতিক কাজে জড়িত ছিল এমন কোন দৃষ্টান্ত আছে কি?
উত্তরঃ
১. মেয়েদের রাজনৈতিক তৎপরতায় জড়িত হওয়া প্রসঙ্গে ইসলাম
[সূত্র নিদে©শিকা- আল কুরআনঃ ৮:১, ৬০:১২]
ইসলাম একটি পূণা©ঙ্গ জীবন ব্যাবস্থা, যাতে আছে নৈতিক, আধ্যাত্মিক, সামাজিক, আথি©ক, রাজনৈতিক বিষয়সহ জীবনের সব কিছুর পূণা©ঙ্গ নিদে©শনা। কুরআন এবং হাদিস থেকে এটা নিশ্চি যে, শান্তি পূণ© সমন্বিত ন্যায্য সমাজ প্রতিষ্ঠা মুসলিম নারী এবং পুরুষ উভয়ের দায়িত্ব। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বন্ধু এবং অভিবাবকের মত এক অপরকে সহযোগিতা করবে। এই সহযোগিতা আর সবক্ষেত্রের মতো রাজনিতীতে ও প্রযোজ্য। কুরআন ও হাদিসে যেসব স্থানে সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ করতে বলা হয়েছে, তা নারী পুরুষ উভয়ের জন্য প্রযোজ্য। আর এই সৎকাজের আদেশ এবং অন্যায়ের প্রতিরোধ ব্যাক্তি জীবন থেকে রাজনৈতিক জীবন পয©ন্ত ব্যাপ্ত। প্রত্যেক মুসলমান নর ও নারীর সামাজিক কায©কলাপ সক্রিয় ভূমিকা রাখা আবশ্যক।
২. সামাজিক এবং রাজনৈতিক বিষয়ে মুসলিম মেয়েদের নিজের মত তুলে ধরা প্রসঙ্গে
[সূত্র নিদে©শিকা- আল কুরআনঃ ৯:৭১]
রাসূল (সঃ) এর জীবদ্দশায় এবং খোলাফায়ে রাশেদের যুগে মুসলমানরা নিজেদের পুরাপুরি ইসলাম সম্মতভাবে পরিচালিত করত। সেই সময়ের ইতিহাসে দেখা যায় মুসলিম মেয়েরা সমাজে তাদের অধিকারের ব্যাপারে সচেতন ছিল এবং বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মতামত ও অভিযোগ তুলে ধরতো। কুরআনের ৫৮ নং সুরায় প্রথমে কয়েক আয়াতে রাসূল (সঃ) এর কাছে একজন মহিলার আনীত অভিযোগ প্রসঙ্গে নাযীল হয়। আল্লাহ সেই মহিলার বক্তব্য শুনেছেন এবং গ্রহন করেছেন। ওসমান (রাঃ) এর শাসনকালে বিভিন্ন বিষয়ে হযরত আয়েশা (রাঃ) সরকারের বিষয়ে সমালোচনা করতেন। কিন্তু ওসমান (রাঃ) বা কেউ সমালোচনার জবাবে একথা বলেনি যে নারী রাজনৈতিক বিষয়ে বক্তব্য দিতে পারেনা। ওসমান (রাঃ) এর শাহাদাতের পর আলী (রাঃ) এর খরীফা হিসেবে মনোনয়নের বিরুদ্ধে আয়েশা (রাঃ) দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করেন, কিন্তু কেউ তার মতামতের অধিকারের বিপক্ষে কিছু বলেননি। যদিও পরবতী সময়ে আয়েশা (রাঃ) এর জন্যে অনুশোচনা করেন, কেননা আলী (রাঃ) এর বিরোধীতা করা ভূল ছিল। একবার ওসমান (রাঃ) এর স্ত্রী রাজনৈতিক বিষয়ে বলতে চাইলে তার একজন সহযোগী বাধা দিলে ওসমান (রাঃ) বলেন, তাকে বলতে দাও, সে তার উপমেধ প্রদানে তোমার চেয়েও আন্তরিক। কাজেই মুসলিম মেয়েরা রাজনৈতিক বিষয়ে অংশ নিতে পারে। যদিও তাদের প্রাথমিক দায়িত্ব ঘর রক্ষা, তবুও এটা তাদের সামাজিক রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নেয়না।
৩. মেয়েদের ভোটাধিকার প্রসঙ্গে ইসলাম
রাসূল (সঃ) এর প্রতিষ্ঠিত ইসলামের রাজনৈতিক ব্যাবস্থায় ভোটের প্রচলন ছিলনা। তখন জণগনের জন্য প্রাথমিক ভাবে নিবা©চিত ব্যাক্তি জণগনের কাছে বাইয়্যাত (আল্লাহর অনুগত শাসক হিসেবে তার আনুগত্যের শপথ) আহবান করতেন। কুরআন এবং হাদিসে দেখা যায় তখন মেয়েরাও বাইয়্যাত করতেন। ৬০ নং সূরার ১২ নং আয়াতে দেখা যায় একদল নারী রাসূল (সঃ) এর হাতে বাইয়্যাত নিতে চাইলে কুরআন নবীকে তাদের বাইয়্যাত নিতে আদেশ করে। ইতিহাসে থেকে এটাও জানা যায় যে, আকাবা নামক স্থানে একদল মদিনাবাসী তার নিকটে বাইয়্যাত হন। তাদের কয়েকজন মহিলাও ছিলেন।
৪. বাইয়্যাত কি শুধু রাসূল (সঃ) এর প্রতি ধমী©য় আনুগত্যের শপথ নাকি ভোট প্রয়োগের বিকল্প?
যখন মহিলারা রাসূল (সঃ) এর কাছে বাইয়্যাত নিচ্ছিলেন তখন তারা শুধু মুহাম্মদ (সঃ) এর আল্লাহর রাসূল হবার স্বীকৃতিই দিচ্ছিলেন না বরং মুসলিম সমাজ ও রাষ্ট্র প্রধানের স্বীকৃতিও দিচ্ছিলেন। তাদের এ বাইয়্যাতে শুধু এই স্বীকৃতিই ছিল না যে তারা ইসলামের নৈতিক ও ধমী©য় শিক্ষা মেনে চলবে বরং এই শপথ ছিল যে তারা রাসূলের সকল আদেশ (যার অন্ত©ভূক্ত রাজনৈতিক ও সামাজিক আদেশও) নিদ্বি©ধায় মেনে চলবে। বস্তুতঃ ইসলামে ধম©কে রাজনীতি ও সমাজনীতি তেকে পৃথক করার কোন উপায় নেই।
৫. আইন প্রণেতা ও নেতা হিসেবে মেয়েদের নিবা©চিত হওয়া প্রসঙ্গে
যদিও ইসলামে নেতা নিবা©চনের নিয়ম ভিন্নতর তবুও পাশ্চাত্য নিবা©চন পদ্ধতির সাথে এর কিছু মিল আছে। ইসলামে যে কোন গুরুত্ত্বপূণ© সিদ্ধান্ত শুরা অথা©ৎ পরামশে©র মাধ্যমে করতে হয়। যদিও প্রাথমিক যুগের মুসলমানরা কোন বিষয়ে ভবন তৈরি করেনি যার নাম পালা©মেন্ট বা সংসদ ভবন বলেব- যেখানে সংসদীয় আলোচনা ও মিটিং হবে, খলিফারা জনগণকে ডাকতেন এবং কোন বিষয়ে পরামশ© নিতেন।
রাসূল (সাঃ) এর মৃত্যূর পর, খলিফারা একদল লোকের পরামশ© নিতেন, যাদের সঠিক ও ভারসাম্যপূণ© সিদ্ধান্ত দেয়ার অভিজ্ঞতা, ক্ষমতা ও দক্ষতা ছিল। মুসলমানদের জন্য সৎ কাজের আদেশ দেয়া ও অসৎ কাজের প্রতিরোধ করার গুরূত্ব আরো ব্যাপকতর হয়। এ হাদিসে, রাসূল (সঃ) বলেন, সত্য ঈমান হচ্ছে উপদেশ দেয়া। স্বয়ং রাসূল (সঃ) এর সময়েও কোন কোন বিষয়ে পরামশ© নেবার নজির আছে। মহিলাদের কাছ থেকে ব্যাপারে কেউ বৈধতার প্রশ্ন তুলেছে এমন নজির নেই। তবে পরামশ© নেবার পদ্ধতি ছিল ইসলামের আদব অনুযায়ী।
৬. প্রথম যুগে মুসলিম নারীদের রাজনৈতিক কম©কান্ডের উদাহরণ
দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রাঃ) যখন দেখলেন যে জনগণ বেশী অংকের মোহরানা (কাবিন) দিচ্ছে, তখন তিনি মোহরানাকে সব্বো©চ্চ ৪০০ দিরহামে স্থির করার সিদ্ধান্ত নিলেন। এর বেশী যেই দেবে সেই টাকা বায়তুল মালে জমা করার সিদ্ধান্ত তিনি দিলেন। তিনি তখন মসজিদুন নববীতে এই ঘোষণা দিচ্ছিলেন তখন একজন মহিলা আপত্তি করে বললেন, হে ওমর তোমার এ কাজের অধিকার নেই। এ প্রসঙ্গে মহিলা কুরআনের একটি আয়াত উদ্ধৃত করলেন, যেখান বলা হয়েছে যে স্বামী যদি স্ত্রীকে অঢ়েল স্বণ© পরিমাণ মোহরানা দেয় তবুও সে তা ফিরিয়ে নিতে পারবে না। রাষ্ট্রপ্রধানের মুখের উপর এই কথা বলার জন্য মহিলার বিরূদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করেনি। বরং ওমর (রাঃ) বললেন, মহিলা যা বলেছে তাই ঠিক এবং উমর ভূল বলেছে। ওমর (রাঃ) আরও আপেক্ষে করে বলেন, হে ওমর, তোমার চেয়ে অনেকে বেশী জানে। এভাবেই প্রাথমিক যুগের মেয়েরা মহিলারা রাষ্ট্রীয় পলিসি নিধা©রণে ভূমিকা রাখতেন।
জি- ১৮ ইসলামে নারীর মর্যাদা- রাজনৈতিক প্রেক্ষিত- ২
প্রশ্নঃ
১. এটা বলা যেতে পারে যে যেভাবে একজন মহিলা মোহরানা সম্পর্কে ওমর (রাঃ) আনীত প্রস্তাব বাতিল করলেন তা আধুনিক পার্লামেন্টারী ব্যবস্থারই অনুরুপ?
২. ইসলামী আইন কি মেয়েদের বিভিন্ন জনপ্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বের পদে আসীন হতে বাধা দেয়?
৩. মেয়েদের রাষ্ট্রপ্রধান হতে কুরআন অথবা শরীয়তের কোথাও নিষেধ আছে কি?
৪. মেয়েদের বিচারক হিসেবে কাজ করতে বাধা কোথায়?
৫. একজন পুরুষের সমান দুইজন মেয়ের সাক্ষ্য রাখাটা কি মেয়েদের প্রতি অবজ্ঞা নয়?
উত্তরঃ
১. ওমর (রাঃ) এবং উক্ত মহিলার যুক্তিতর্ক- আধুনিক পার্লামেন্টারী ব্যবস্থার প্রতীকঃ
ওমর (রাঃ)- এর সময়কার উল্লিখিত ঘটনার সাথে আধুনিক পার্লামেন্টারী ব্যবস্থার অনেক মিল আছে। যেমন-
ক. ওমর (রাঃ) কর্তৃক মসজিদে দাঁড়িয়ে মোহরানার সীমা নির্ধারণ করার প্রস্তাব আধুনিক পার্লামেন্ট সংসদ নেতা কর্তৃক কোন আইন সংশোধন প্রস্তাব আনার অনুরুপ।
খ. এই প্রস্তাব আনার স্থানটি আধুনিক পার্লামেন্ট ভবনে ছিল না। এটা মসজিদে ছিল। কিন্তু মনে রাখা দরকার যে ইসলামে মসজিদ শুধু নামাজেরই স্থান নয় বরং খেলাফতের যুগে সমস্ত রাষ্ট্রীয় কাজ নেতারা মসজিদে বসেই করতেন। মসজিদে বসেই যুদ্ধ পরিচালনা, বিদেশী কূটনৈতিক মিশনকে গ্রহণ করা, সবই হত। এখানে জনগণ যেতেন রাষ্ট্র নায়কদের কথা শুনতে ও প্রয়োজন পরামর্শ দিতে। কাজেই সব মুসল্লীই পার্লামেন্ট সদস্যের মর্যাদা পেতেন।
গ. ওমর (রাঃ) জনগণের কাছে তাঁর প্রস্তাব রাখায় বোঝা যায় তাঁর সিদ্ধান্তের উপর মতবাদ দেবার অধিকার জনগণের ছিল।
ঘ. সমাজের সব স্তরেই মানুষ মসজিদে উপস্থিত থেকে তাদের মতামত সমানভাবে প্রয়োগের সুযোগ পেত।
ঙ. উক্ত মহিলা ওমর (রাঃ)- এর প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলেন যে ঐ প্রস্তাব সংবিধান পরিপন্থী। ইসলামী রাষ্ট্রে কুরআনই হচ্ছে সংবিধান, যা কোন মানুষ পরিবর্তন করতে পারে না।
চ. মহিলার সংশোধনী শুনে তার যৌক্তিকতা উপলব্ধি করে ওমর (রাঃ) সঙ্গে সঙ্গে তার প্রস্তাব প্রত্যাহার করেন।
এ ঘটনার বর্ণনাকারী তার বর্ণনায় মহিলার নাম উল্লেখ করেননি। তাতে প্রতীয়মান হয় মহিলা তদানীন্তন সমাজের কোন উল্লেখযোগ্য কেউ ছিলেন না। তখন মসজিদে সমবেতদের মধ্যে রাসূল (সঃ)- এর পরিবারের সদস্য এবং অনেক সাহাবাও ছিলেন। কিন্তু কেউ কোন মহিলার রাজনৈতিক মত প্রদানের বৈধতার বিরুদ্ধে আপত্তি তোলেননি। এতে বোঝা যায় তখনকার সমাজে আইন প্রণয়ন ও সংশোধনের ক্ষেত্রে মেয়েরা স্বাধীনভাবে তাদের মত দিতে পারত। শুধু এ ঘটনাতেই নয় এমন আরও অনেক ঘটনারই উল্লেখ পাওয়া যায়। ওমর (রাঃ)- এর শাহাদাতের পর নতুন খলিফা নির্বাচনের ব্যাপারে আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রাঃ) মহিলাদেরও পরামর্শ নিয়েছিলেন।
২. বিভিন্ন জন প্রতিষ্ঠানের প্রধান/নেতা হিসেবে নারী
সাধারণ অর্থে ‘নেতৃত্ব’ বলতে কোন নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে বোঝায়। কিন্তু ব্যাপক অর্থে নেতৃত্ব বলতে যে কোন গুরুত্বপূর্ণ ও জনগণকে নিয়ন্ত্রণকারী পদকেই বোঝায়। আমরা আগেই আলোচনা করেছি যে, ইসলামী রাষ্ট্রে মুসলিম মেয়েদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কিছু কাজের দায়িত্ব দেয়া হয় যেমন চিকিৎসা, শিক্ষা, নার্সিং ইত্যাদি এসবই গুরুত্বপূর্ণ, দায়িত্বসম্পন্ন ও নেতৃত্বদানকারী কাজ। এগুলো কি সমাজ তথা রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণকারী পদ নয়? এসব অধিষ্ঠিত থেকে কি জনগণকে নেতৃত্ব দেয়া যায় না? শুধু এসব পদ কেন, যে মহিলা ঘরে বসে জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ে তুলেছেন তিনি কি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দায়িত্ব পালন করছেন না?
ব্যাপকভাবে নেতৃত্বের এই আলোচনার পরও বলা যায় নির্দিষ্টভাবে কোন জন প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে নারীদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে শরীয়তে কোন সর্বসম্মত বাধা নেই। বরং চিকিৎসা শিক্ষাসহ কিছু বিষয়ে দায়িত্ব ও নেতৃত্ব মেয়েদেরই থাকা উচিৎ। অন্যদিকে বেশীরভাগ আলেমের মতে যে তিনটি পদে নারীর অধিষ্ঠিত হতে বাধা আছে তা হচ্ছে-
ক. রাষ্ট্রপ্রধান
খ. বিচারক
গ. সেনাপ্রধান
(অবশ্য এই বিষয়ে আলেমদের মধ্যে ভিন্নমতও আছে – অনুবাদক)
৩. এই নিষেধাজ্ঞার পক্ষে দলিল আছে কি?
যদিও কুরআনে নারীর রাষ্ট্রীয় শীর্ষপদে আসীন হবার বিপক্ষে কোন দলিল পাওয়া যায় না, তবুও আলেমরা একটি হাদিসের উদ্ধৃতি দেন যেখানে রাসূল (সঃ) বলেন, সে জাতি উন্নতি করতে পারেনা যারা নেতা হিসেবে শাহজাদী ‘পুরান’ এর মনোনয়নের প্রেক্ষিতে রাসূল (সঃ) এই মন্তব্য উল্লেখ করা হয়। (যদিও এই হাদিসের যথার্থতার এবং এর ব্যাখ্যার ব্যাপারে বেশ কিছু আলেম দ্বিমত পোষণ করেছেন- অনুবাদক)
রাসূল (সঃ) কর্তৃক নারী নেতৃত্ব সম্পর্কে এই মন্তব্যের কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ হচ্ছে প্রথমতঃ এই যে, রাসূল (সঃ) ইসলামী রাষ্ট্রে নেতৃত্ব সম্পর্কে বলছিলেন। ইসলামী রাষ্ট্রের নেতা শুধু জনগনেরই মুখপাত্র নন; তিনি প্রধান নামাজের জামাতেরও ইমাম এবং সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক। আগেই আমরা আলোচনা করেছি যে নামাজ এমন একটা কাজ যাতে নারীর ইমামতি করা তো দূরের কথা, পুরুষের সামনে মেয়েদের দাঁড়ানোটাই দৃষ্টিকটু। আর সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবে নারীকে এখনো পর্যন্ত খোদ পাশ্চাত্যেও মনোনীত করেনি। আরও একটা বিষয় উল্লেখ্য যে, ইসলামী মতে রাষ্ট্রের নেতৃত্ব কোন পুরষ্কার তো নয়ই বরং চরমতম পরীক্ষা ও বোঝা। কেউই এই দায়িত্ব আগ্রহ করে নেয় না।
৪. মেয়েদের বিচারক হতে বাধা কোথায়
এ বিষয়ে আলমদের ঐক্যবদ্ধ কোন মত নেই। যারা এর বিপক্ষে বলেন তাদের যুক্তি হচ্ছেঃ
ক. বিচারকদের দায়িত্বটা তাত্ত্বিকভাবে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বের অনুরূপ এবং যেহেতু মেয়েদের রাষ্ট্রপ্রধান হতে বারণ করা হয়েছে সেহেতু তাদের বিচারক হওয়াও নিষেধ।
খ. যেহেতু পরিবারের প্রধান হিসেবে ইসলামে পুরুষকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সেহেতু বিচারকের আসনে নারী বসাটা এই শৃঙ্খলার পরিপন্থী। কিন্তু এর বিপক্ষে মত হচ্ছে রাষ্ট্রপ্রধান বাদে আর সব পদ এমনকি বিচারক পদেও নারী আসীন হতে পারবে (আত-তারাবী) অন্যদিকে ইমাম আবু হানিফা বলেন, যেহেতু মেয়েদের আদালতে সাক্ষী হবার অনুমতি দেয়া হয়েছে সেহেতু তারা বিচারকও হতে পারবে।
৫. নারীর সাক্ষ্য পুরুষের অর্ধেক- নারীর প্রতি কি অবজ্ঞা?
কুরআনের আর্থিক লেনদেন ও চুক্তি সংক্রান্ত বিষয়ে নারীর সাক্ষ্যকে পুরুষের অর্ধেক ধরা হয়েছে। এর মানে এই নয় যে নারীর মান পুরুষের অর্ধেক। মনে রাখা দরকার যে তখন সময়টা এমন ছিল যে মেয়েরা মূলতঃ ঘর গৃহস্থালির কাজেই ব্যস্ত থাকতেন। আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ে তাঁরা বেশী জড়িত হতেন না। এ ধরণের চুক্তির খুঁটিনাটি বিষয় ঘরোয়া কাজের ব্যস্ততায় মনে নাও থাকতে পারতো। তাই বলা হয়েছে, “….. কারণ তাদের একজন ভুলে গেলে আর একজন মনে করিয়ে দিতে পারবে” (২:২৮২)।
এখানেও বলা হয়নি যে নারীর স্মরণশক্তি কম। এখানে মূলতঃ অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করা হয়েছে, কেননা মানুষের কাছে ঋণ ও অর্থনৈতিক বিষয় খুবই স্পর্শকাতর এবং একজন নারী, যে ঘরের কাজে ব্যস্ত তার পক্ষে আর্থিক চুক্তির জটিল ধারাগুলো সব মনে নাও থাকতে পারে।
সুত্র নির্দেশিকাঃ
প্রশ্ন-২ : রাসূল (সঃ) বলেনঃ “তোমাদের সবাই নেতা (দায়িত্বশীল) এবং তার কাজের জন্য দায়ীঃ শাসক তার জনগণের জন্য, পুরুষ তার পরিবারের জন্য, নারী তার সন্তান ও সংসারের জন্য, কর্মচারী তার কাজের জন্য – প্রত্যেক ব্যক্তি তার উপর অর্পিত কাজের জন্য দায়িত্ববান”
প্রশ্ন-৩ : এ বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে, কারণ এই হাদিসের ব্যাপারে ও তার ব্যাখ্যাতে বেশ কয়েক জন বিশেষজ্ঞ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
প্রশ্ন-৫ : আল কুরআন ২:২৮২
জি- ১৯ মুসলিম নারী- ১
প্রশ্নঃ
১. আর্থিক লেনদেনের বিষয় ছাড়া অন্যান্য বিষয়েও কি মুসলিম মহিলারা সাক্ষী হতে পারেন?
২. ইসলামের ইতিহাসে ধর্মীয় বিষয়ে নারীর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের দৃষ্টান্ত আছে কি?
৩. খাদিজার (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ প্রসঙ্গে কোন খোদায়ী স্বীকৃতি আছে কি?
৪. খাদিজা (রাঃ)- এর যোগ্যতা সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) কিছু বলেছেন কি?
৫. স্বামীর সহায়তা ছাড়া ইতিহাসে প্রসিদ্ধ হয়েছে এমন মুসলিম নারীর উদাহরণ আছে কি?
৬. ইসলাম গ্রহণের জন্য নির্যাতিত হয়েছেন এমন নারীর উদাহরণ আছে কি?
৭. আল্লাহর পথে বিপদ বরণ করেছেন এমন মুসলিম নারীর উদাহরণ আছে কি?
উত্তরঃ
১. সাক্ষ্য হিসেবে নারী
ইমাম আবু হানিফাসহ আরও কিছু বিশেষজ্ঞ বলেন যে শুধুমাত্র ফৌজদারী (Criminal) মামলা ছাড়া আর সব ক্ষেত্রে নারীর সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য। এক্ষেত্রে তাঁদের যুক্তি হচ্ছে যে, যেহেতু নারীরা সাধারণতঃ বেশী আবেগপ্রবণ সেহেতু অপরাধ বা সন্ত্রাসের ঘটনা দেখে তাঁরা মুষড়ে পড়তে পারেন, ফলে যথার্থ সাক্ষ্য নাও দিতে পারেন।
অন্যদিকে আল জুহরীসহ অন্য বিশেষজ্ঞরা বলেন যে, সকল ক্ষেত্রেই নারীর সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য কারণ এ ব্যাপারে কুরআন বা হাদিসে কোনরকম নিষেধাজ্ঞা নেই।
অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ মনে করেন যে আর্থিক বিষয়ের মত অন্য বিষয়ে নারীর সাক্ষ্য পুরুষের অর্ধেক হবে না। বরং সমান হবে। তারা এ ব্যাপারে যে যুক্তি দেন তা নিম্নরূপঃ
ক. কুরআনের সাত জায়গায় সাক্ষ্য সম্পর্কে আলোচনা এসেছে, এর মধ্যে মাত্র এক জায়গায় (আর্থিক বিষয়ে) দুইজন পুরুষ না পাওয়া গেলে একজন পুরুষ ও দুইজন নারীর কথা বলা হয়েছে। (আল কুরআন ২:২৮২)।
খ. ২৪ নং সূরায় ৬ থেকে ৯ নং আয়াতে এটা স্পষ্ট যে নারী এবং পুরুষের সাক্ষ্য সমান মানের, যেখানে সামি বা স্ত্রী কর্তৃক অপরের বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অভিযোগ আনলে একজনের কসম খাওয়া অভিযোগ নাকচ হয়ে যায় অপরজনের কসম খাওয়ার মাধ্যমে। (জি- ১০ এর প্রশ্ন-২ এর আলোচনা দেখুন)।
গ. সাক্ষ্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে কুরআনের বাকী পাঁচ জায়গায় নারী পুরুষের বেলায় ভিন্ন করে বা নির্দিষ্ট করে (পুরুষ হবে বা নারী হবে বা দু’জনেই হবে এমন) কিছু বলা হয়নি। (সূত্র নির্দেশিকা দেখুন)
ঘ. রাসূলের জীবনে এমন অনেক ঘটনা দেখা যায় যখন তিনি শপথের ভিত্তিতে মাত্র একজন পুরুষ বা মহিলা সাক্ষীর বক্তব্যের ভিত্তিতে রায় দিয়েছেন।
ঙ. কুরআনের শিক্ষা থেকে এটাও স্পষ্ট যে সাক্ষী হওয়াটা কোন অধিকার বা সুযোগ নয় বরং এক দায়িত্ব বটে। কুরআন বলে কেউ সাক্ষ্য দেবার ডাক পেলে যেন অনুপস্থিত না থাকে কারণ সত্য গোপন করা অপরাধ।
চ. সর্বশেষে এই কথা বলা যায় যে সাক্ষ্য প্রদান সকল মুসলমানের দায়িত্ব। কাজেই যদি এমন হয় যে কোন অপরাধ সংঘটিত হল যার সাক্ষী এক বা একাধিক নারী। এ অবস্থায় কি শুধু এই অযুহাতে বিচার বন্ধ থাকবে?
২. ধর্মীয় বিষয়ে নারীর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের উদাহরণ
আল্লাহ প্রথম ইসলাম গ্রহণের ভাগ্য কোন পুরুষকে দেননি, দিয়েছিলেন একজন মহিলাকে। তিনি রাসূল (সঃ)- এর প্রথমা স্ত্রী বিবি খাদিজা (রাঃ) যিনি রাসূল (সঃ)- এর কাছে জিবরাইলের আগমন সংবাদ শুনে কোন দ্বিধা না করেই তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেন। রাসূল (সঃ) জিবরাইলের (আঃ)- এর আগমনের পূর্বে প্রায়ই হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন। এসময় তাঁকে দিনের পর দিন খাবার-পানীয় সরবরাহ করতেন বিবি খাদিজা (রাঃ)। তিনি কখনও রাসূল (সঃ) সংসার ত্যাগ করে রাতদিন ধ্যান মগ্ন থাকতে বাধা দেননি। যে দিন প্রথম ওহী নাযিল হলো তখন আবিষ্ট অবস্থায় রাসূল (সঃ) কাঁপতে কাঁপতে বিবি খাদিজার কাছে উপস্থিত হলেন। বিবি খাদিজা (রাঃ) তাকে আশ্বস্ত করে বললেন যে, যেহেতু তিনি সবসময়ই ভালমানুষ ছিলেন, মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন সেহেতু আল্লাহ নিশ্চয়ই তাঁর ক্ষতি করবেন না। ইসলামের প্রাথমিক দিনগুলোতে যখন মক্কার কাফেররা রাসূল (সঃ)- এর উপর চড়াও হল তখন বিবি খাদিজা সারাক্ষণ রাসূল (সঃ)- কে অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা করতেন। কোরাইশরা যখন তাদের বয়কট করে তখন সেকালের আরবের অন্যতম ধনী মহিলা বিবি খাদিজা রাসূল (সঃ)- এর সাথে হাসিমুখে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটান।
৩. খাদিজা (রাঃ)- এর ধর্মনিষ্ঠার ও শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি
খাদিজা (রাঃ) তাঁর বিশ্বাসের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি পান আল্লাহর কাছ থেকে জিবরাইল (আঃ)-এর মাধ্যমে। এক সন্ধ্যায় তিনি যখন পর্বতগুহায় রাসূল (সঃ)- এর জন্য খাবার নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন জিবরাইল (আঃ) উপস্থিত হন এবং তাঁর (খাদিজার) কাছে আল্লাহর তরফ থেকে শুভেচ্ছা ও শান্তির বার্তা পৌঁছান। তাকে এই সুসংবাদ দেন যে আল্লাহ তাঁর জন্য বেহেশতে এক মুক্তার প্রাসাদ তৈরী করেছেন যাতে কোন কোলাহল, অবসাদ ও যন্ত্রণা নেই।
৪. খাদিজা (রাঃ)- এর যোগ্যতা সম্পর্কে রাসূল (সঃ)- এর মন্তব্য
তাঁদের বিবাহিত জীবনে খাদিজার (রাঃ) প্রতি রাসূলের (সঃ) আকর্ষণ ও ভালবাসা ছিল চোখে পড়ার মত। রাসূল (সঃ) মাত্র ২৫ বছর বয়সে ৪০ বছর বয়স্কা বিবি খাদিজাকে বিয়ে করেন। অতঃপর বিবি খাদিজার প্রায় ৬৫ বছর বয়সে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রাসূল (সঃ) আর বিয়ে করেননি। রাসূল (সঃ) তাঁর জীবনের সবচাইতে উজ্জ্বল এবং কর্মক্ষম সময়টিই বিবি খাদিজার সাথে সংসার জীবনে ব্যয় করেন। এতে বোঝা যায় এতে বোঝা যায় তাঁদের বিবাহিত জীবন কত মধুর ও সুখের ছিল। রাসূল (সঃ) প্রায়ই আল্লাহর চোখে সফল নারীর উদাহরণ দিতে গিয়ে বিবি আসিয়া (মুসা (আঃ) এর পালক মাতা), বিবি মারইয়াম, (ঈসা (আঃ) এর জননী) এর সাথে বিবি খাদিজার নাম বলতেন। খাদিজার মৃত্যু পরবর্তী জীবনেও রাসূল (সঃ) বারবার তাঁর কথা স্মরণ করতেন। তাঁর আত্মীয় বন্ধুদের উপহার পাঠাতেন। খাদিজার প্রতি রাসূলের অনুভূতি দেখে একবার বিবি আয়েশা তাঁর মৃত সতীনের প্রতি খানিকটা ঈর্ষা অনুভব করেন। তখন রাসূল (সঃ) বলেন, “খাদিজা সবার আগে ইসলাম গ্রহণ করে যখন কেউ ইসলাম গ্রহণ করেনি, সে আমাকে বিশ্বাস করেছিল যখন অন্যরা অবিশ্বাস করত, যখন সবাই আমার উপর আর্থিক সমর্থন তুলে নেয় তখন সে তাঁর সমস্ত সম্পদ আমাকে দেয় আর আমার সকল সন্তান তাঁর গর্ভে জন্ম নেয়”। এই বলে রাসূল (সঃ) তাঁর সকল স্ত্রীর উপর বিবি খাদিজার শ্রেষ্ঠত্বের ব্যাখ্যা দেন। (খাদিজা ব্যতীত অন্য একজন স্ত্রীর গর্ভে ১টি সন্তান জন্ম হয় যার অকাল মৃত্যু হয়)
৫. স্বামীর উপর নির্ভরতা ছাড়া শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী মুসলিম নারী
রাসূল (সঃ)- এর কন্যা জয়নাব রাসূলের (সঃ) ইসলাম প্রচারের শুরুর পরই ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁর সামি ইসলাম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে জয়নাব (রাঃ) স্বামীর সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে চলে আসেন। কারণ মুশরিকের সাথে বিয়ে নিষিদ্ধ। উম্মে হাবিবা যখন ইসলাম গ্রহণ করেন তাঁর পিতা কঠোরভাবে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাজ করেছিলেন। তিনি প্রমাণ করেন আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস পিতা-মাতার আনুগত্যের চেয়েও ঊর্ধ্বে।
উমর ইবনে খাত্তাবের বোন ফাতিমা ও তার স্বামী মুসলমান হয়েছে জানতে পেরে উমর উত্তেজিত ও রাগান্বিত হয়ে তাদের বাড়িতে ছুটে আসে। ফাতিমা দৃঢ়টা প্রদর্শন করেন যদিও উমর তার মুখে আঘাত করে রক্তাক্ত করেন। এ ঘটনার পরেই উমর ইসলাম গ্রহণ করেন।
৬. ইসলামের স্বার্থে মুসলিম নারীর নির্যাতিতা হবার উদাহরণ
ইসলামের প্রথম শহীদ ছিলেন একজন মহিলা। তিনি হচ্ছেন সুমাইয়া (রাঃ) যাকে কাফেরদের নেতা আবু জেহেল প্রচণ্ড অত্যাচার করে তাঁর মুখ থেকে ইসলাম বিরোধী স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টায়। কিন্তু আবু জেহেলের চেষ্টা ব্যর্থ হলে সে নিজ হাতে সুমাইয়া (রাঃ)- কে হত্যা করে। আরেকজন মহিলার চোখ অন্ধ হয় ইসলাম কবুলের জন্য অনেক নির্যাতন করার ফলে। আরও অসংখ্য মহিলা আছেন যারা অত্যাচারিত হয়েছেন এবং চোখের সামনে পিতা, স্বামী, ভাই অথবা সন্তানকে নির্যাতিত হতে দেখেছেন তবু কাফেরদের কাছে মাথা নত করেননি।
৭. ইসলামের স্বার্থে বিপদ বরণ করার উদাহরণ
ইসলামের স্বার্থে বিপদজনক কাজে মেয়েদের ঝাঁপিয়ে পড়ার বহু উদাহরণ আছে। আবু বকর (রাঃ) যখন রাসূল (সঃ)-এর সাথে মদীনায় হিজরতের উদ্দেশ্যে রওনা হন তখন তাঁর কিশোরী কন্যা আসমা (রাঃ)- কে আবু জেহেল তাঁদের অবস্থান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। কিন্তু হযরত আসমা (রাঃ) কাফেরদের শত চাপেও রাসূলের (সঃ) অবস্থান জানাননি। এমনকি আবু জেহেল তাঁকে প্রহার করলেও আসমা (রাঃ) অটল থাকেন। পরবর্তীতে অত্যন্ত গোপনে আসমা (রাঃ) সওর গিরি গুহায় তাঁদের খাবার পৌঁছান ও কাফেরদের তৎপরতা সম্পর্কে খবর দেন।
সূত্র নির্দেশিকাঃ
প্রশ্ন-১ : Justice Abdul Qadr Auda ‘Criminal Law in Islam. পৃষ্ঠা- ৩১৫’ আল কুরআন- ২:২৮২, ২৪:৬-৯, ৪:১৫, ৫:১০৬-৭, ২৪:৪, ২৪:১৩, ৬৫:২।
প্রশ্ন-২ : ইতিহাসে উল্লিখিত আছে প্রথম ওহী লাভের পর যখন রাসূল (সঃ) কম্পিত ভাবে হেরা গুহা থেকে বাড়িতে আসেন তখন বিবি খাদিজা (রাঃ) তাঁকে আশ্বস্ত করে বলেন যে, ‘আপনি আপনার প্রতিবেশী এবং আত্মীয়দের প্রতি দয়াশীল, আপনি অসহায় মানুষকে সাহায্য করেন, আপনি দানশীল, আপনি সত্যবাদী, আপনি বন্ধুবৎসল এবং রোগাক্রান্ত মানুষের সেবা করেন। আল্লাহ নিশ্চয় আপনার ক্ষতি করবেন না।’
প্রশ্ন- ৩ : বিশেষজ্ঞরা বলেন যে যখন কাফেররা রাসূল (সঃ) এর চারদিকে কোলাহল হট্টগোল করতেন তখন খাদিজা (রাঃ) তাঁর সাথে কোমল ছিলেন, তাই বেহেশতে তাঁর প্রাসাদ হবে কোলাহল মুক্ত। তিনি কখনও রাসূল (সঃ)-কে কষ্ট দেননি বরং সকল অবসাদ ও যন্ত্রণা থেকে তাঁকে মুক্তি দিয়েছেন, তাই বেহেশতেও অবসাদ ও যন্ত্রণা তাঁকে স্পর্শ করবে না।
জি- ২০ ইতিহাসে মুসলিম নারী- ২
প্রশ্নঃ
১. ইসলাম প্রচারে মুসলিম নারীদের অংশ গ্রহণের কোন দৃষ্টান্ত আছে কি?
২. জ্ঞান ও প্রজ্ঞায় খ্যাত মুসলিম নারীর উদাহরণ ইতিহাসে আছে কি?
৩. সমাজ কল্যাণ ও দানশীল কর্মকাণ্ডে মুসলিম মেয়েরা জড়িত ছিল কি?
৪. মুসলিম মেয়েরা যুদ্ধ সংক্রান্ত কাজে অংশ নিত কি?
৫. প্রত্যক্ষ যুদ্ধে মুসলিম মেয়েদের অংশ নেবার কোন ঘটনা আছে কি?
৬. যারা বলে ঐ সময় ইসলাম ছিল নতুন এবং সেহেতু মেয়েদের এসব কাজে অংশ নিতে হয়েছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটা নিষ্প্রয়োজন- এর জবাবে কি বলবেন?
উত্তরঃ
১. ইসলামের প্রচারে মুসলিম নারী
ইসলাম প্রচার ও অমুসলিমদের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছান প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব। শিক্ষার মতই এটা কোন সুযোগ বা অধিকার নয় বরং মুসলাম নর-নারীর জন্য কর্তব্য ও দায়িত্ব। ইসলাম প্রচারে নিবেদিতা কয়েকজন মহিলার উদাহরনঃ
উরওয়া বিনতে আবদুল মোতালেব রসূলের (সঃ) মিশনের প্রথম দিকে প্রকাশ্য ইসলাম গ্রহণ ও প্রচার করেন যখন কাফেররা কঠোরভাবে ইসলামের বিরোধিতা করছিল।
প্রখ্যাত সাহাবা আনাস (রাঃ)-এর মা উম্মে সালিম তাঁর স্বামীর মৃত্যুর পর তৎকালীন মক্কার প্রখ্যাত ধনী আবু তালহার (যিনি তখনও মুশরিক) পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব পান। কিন্তু তিনি এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন যে আবু তালহা মুশরিক। আবু তালহা যখন তাঁর সম্পদের উল্লেখ করেন তখন তিনি তাঁকে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে বলেন, “আপনার সোনা রূপার আমার কোন প্রয়োজন নেই বরং আপনি যদি ইসলাম গ্রহণ করেন তবে আপনার ঈমানই হবে আমার মোহরানা। আপনার কাছ থেকে আর কোন উপহার আমি চাইনা।” পরবর্তীতে আবু তালহা ইসলাম গ্রহণ করেন ও তাঁকে বিয়ে করেন।
উম্মে শারিক বিপদ নিশ্চিত জেনেও মুশরিকদের বাড়ী যেতেন এবং তাদের স্ত্রী কন্যাদের দ্বীনের দাওয়াত দিতেন।
২. জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও শিক্ষায় মুসলিম নারী
রাসূল (সঃ)-এর যুগে এবং পরবর্তীতে বহু মুসলিম নারী জ্ঞান অর্জন করে বিখ্যাত হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে প্রখ্যাত কয়েকজন হচ্ছেনঃ রাসূল (সঃ)-এর স্ত্রী বিবি আয়েশা (রা) যিনি রাসূলের হাদিসের অন্যতম উৎস ছিলেন। প্রখ্যাত সাহাবা আবু মুসা আশআরী (রা) বলেন, আমরা সাহাবারা যখনই ইসলামী আইনের জটিল কোন সমস্যার সমাধান খুজে না পেতাম তখনই হযরত আয়েশা (রাঃ) কাছে যেতাম এবং সমাধান পেতাম। আয়েশা প্রায়ই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এবং বিতর্কিত বিষয়ে ফতওয়া ও সিদ্ধান্ত দিতেন।
মদীনার আসমা বিনতে ইয়াজিদ রাসূল (সঃ)-এর নিকট বায়াত নেন মদীনাতে। তিনি এত ব্যাপক জ্ঞানার্জন করেছিলেন যে, জ্ঞান বিতরণ করে তার পেশায় পরিণত হয়েছিল এবং পরবর্তীতে অনেক পণ্ডিত তার কাছ থেজে জ্ঞানাহরণ করেছিল।
৩. সমাজকল্যাণমূলক কাজে মুসলিম নারী
নারী স্বভাবতইঃ কোমল, দয়ালু এবং ত্যাগী; কাজেই দান, সমাজকল্যাণ ইত্যাদি কাজে তার সব সময়ই অগ্রণী। ইসলামের শুরু থেকেই লক্ষ্য করা যায় মানুষ ইসলাম গ্রহণের সাথে সাথেই ত্যাগী, পরোপকারী ও সমাজসেবী হয়ে উঠে। মেয়রাও এ ধরণের কাজে সমানভাবে অংশ নিয়েছে।
রাসূল (সঃ)-এর মৃত্যুর পর হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর ভ্রাতুষ্পুত্র আবদুল্লাহ ইবনে যোবায়ের তাঁর জন্য এক লক্ষ্য দিরহাম উপহার নিয়ে আসেন। সাথে সাথেই সমুদয় অর্থ তিনি গরীবদের মাঝে বণ্টন করেন। সেদিনটিতে তিনি রোযা ছিলেন। সারাদিন সমস্ত অর্থ তিনি গরীবদের বিলিয়ে ইফতারের সময় যখন তিনি ঘরে ফিরেন তখন দেখেন যে ঘরে এতটুকুও খাবার নেই, কোন তাকা পয়সাও নেই; লক্ষ্য দিরহাম পেয়ে একবারের জন্যও তিনি নিজের কথা ভাবেননি।
ফাতিমা (রাঃ) ছিলেন রাসূলের অত্যন্ত স্নেহের কন্যা। একবার তিনি এবং আলী (রাঃ) রাসূল (সঃ)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে তাদের অভাব দারিদ্র্যের কথা বলেন এবং একজন কাজের লোক দিতে বলেন। এটা কোন বিলাসিতার দাবী ছিলনা। ফাতিমা-আলীর অভাবের সংসারে সব কাজ তাদের করতে হত। যাঁতায় গম পিষে আটা বানাতে গিয়ে ফাতিমার (রাঃ) হাতে কড়া পরে গিয়েছিল আর পানির ভিস্তি বহন করতে করতে আলী (রা)-এর পিঠে দাগ পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু তারপরও রাসূল (সঃ) তাঁদের বলেন, “আমি তোমাদের কাজের লোক দিতে পারব না, যেখানে অনেক মুসলিম এখনো অনাহারে কষ্ট পাচ্ছে”। বরং তিনি তাঁদের কয়েকটি দোয়া পড়তে বলেন। ফাতিমা এবং আলী (রাঃ) সন্তুষ্টচিত্তে ফিরে যান। তাঁদের কাছে আধ্যাত্মিক মুক্তি ও শান্তি দুনিয়ার আরামের চেয়ে অনেক বেশী মূল্যবান ছিল। এই চিত্রের সাথে যদি বর্তমান সময়ের প্রশাসকদের তুলনা করা হয় তাহলে দেখা যায় এরা নিজের ও পরিবারের কল্যাণে অকাতরে রাষ্ট্রের অর্থ ও জনবল ব্যয় করছে। খলীফা হযরত উমর (রাঃ) বাজারের দোকানীরা যাতে ক্রেতাদের ঠকাতে না পারে তা দেখার জন্য উম্মে শিফা নামে একজন মহিলাকে নিযুক্ত করেছিলেন। উমর (রাঃ) তার মতামতকে খুবই গুরুত্ব দেন।
৪. যুদ্ধ প্রক্রিয়ায় মুসলিম নারীর অংশগ্রহণ
শুরু থেকেই ইসলামের সাথে বাতিলের সকল যুদ্ধে মুসলিম মেয়েরা ইসলামের স্বার্থে অংশ নিয়েছে। রণাঙ্গনে তারা পুরুষের পাশে থেকে তাদের খাদ্য, পানীয়, চিকিৎসাসহ অন্যান্য সাহায্য করেছে। অনেক হাদিসে এমন অনেক নেতৃত্বস্থানীয় মহিলার উল্লেখ পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে ছিলেন রাবিয়া বিনতে মাউদ, নুসাইবা বিনতে কা’ব, উম্মে তাহের, হামনা বিনতে যাশ, সাফিয়া বিনেত আবদুল মুত্তালিব প্রমুখ। এরা ছিলেন আরো অনেক নাম না জানা মুসলিম মুজাহিদা নেত্রী। উমাইয়া বিনতে কায়েস গাফারিয়া বলেন, তিনি প্রথম যুদ্ধে যোগ দেন খুব অল্প বয়সে। তিনি যখন রাসূল (সঃ)-এর কাছে এসে আরো কয়েকজন নারীসহ যুদ্ধে যাবার অনুমতি চান তখন রাসূল (সঃ) বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে এগিয়ে এসো’।
৫ প্রত্যক্ষ যুদ্ধে মুসলিম নারী
হুনায়েনের যুদ্ধে যখন মুসলিম বাহিনী বিপর্যস্ত অবস্থায় তখন উম্মে সালিম তার কোমরে ছোরা বেধে তাঁর স্বামী আবু তালহাকে বলেন যে তিনি তাঁর কাছে যে কোন কাফের এলে হত্যা করবেন। তাঁর স্বামী আবু তালহা (রাঃ) অথবা রাসূল (সঃ)-কে ঘিরে ফেলেছিল তখন আরও কয়েকজন মুসলিম পুরুষের মধ্যে নুসাইবা বিনতে কা’ব তলোয়ার হাতে রসূল (সঃ)-কে আড়াল করে দাঁড়িয়ে কাফেরদের মোকাবেলা করেন।
খন্দকের যুদ্ধে সাফিয়া বিনতে আবদুল মুত্তালিব একজন শত্রুসৈন্যকে তাঁবুর খুঁটির আঘাতে হত্যা করেন।
ইয়ারমুকের যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী যখন বিপন্ন অবস্থায় তখন আসমা বিনতে ইয়াজিদ তাঁবুর খুঁটির সাহায্যে দশ জন রোমান সৈন্যকে হত্যা করেন।
৬. বর্তমান সময়ে ইসলাম রক্ষায় মুসলিম নারীর ভুমিকা
বিপদ এবং আগ্রাসন কোন নির্দিষ্ট সময়ে সীমাবদ্ধ থাকে না। অতীত যুগে ইসলাম রক্ষায় মেয়েরা যোগ দিয়েছে এখন তারা যুদ্ধে যেতে পারবে না এমন বলা ভুল। বরং বর্তমান সময়েই ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, কাশ্মীর, মিসর, সিরিয়া, তুরস্ক এসব দেশের দিকে তাকালে দেখা যাবে মেয়েরাও ছেলেদের পাশে সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবে যুদ্ধে যাওয়া মেয়েদের জন্য ছেলেদের মত ফরয নয়। তাই বলে তারা সেচ্ছায় যেতে চাইলে তাদের বাধা দেবার কোন যুক্তি নেই। উল্লেখ্য যে, ঘরে ছোট সন্তানকে অযত্নে রেখে মেয়েদের যুদ্ধে যাওয়া ইসলাম চায় না। তাই বলে যাদের অবসর আছে তাদের যুদ্ধে যেতে বাধা দেয়া যাবে না।
সূত্র নির্দেশিকাঃ
প্রশ্ন-৪: উম্মে আতিয়া বর্ণিত হাদিসে দেখা যায় তিনি রাসূল (সঃ)-এর সাথে ৭টি যুদ্ধে অংশ নেন। তার কাজ ছিল যুদ্ধাস্ত্র, খাদ্য, পানীয় সরবরাহ, চিকিৎসা এবং সেবা প্রদান করা।
প্রশ্ন-৫: রাসূলের (সঃ) হাদিসে উল্লেখ পাওয়া যায় যে তিনি বলেছেন, “আমি ডানে কিংবা বায়ে যেদিকেই তাকিয়েছি, দেখি নুসাইবা বিনতে কা’ব আমাকে রক্ষার জন্য লড়ছে।” ওহুদ যুদ্ধে নুসাইবা বিনতে কা’ব ১২ জায়গায় আঘাত পান।
প্রশ্ন-৬: কিছু লোক মেয়েদের যুদ্ধ থেকে বিরত রাখতে একটি হাদিস উদ্ধৃত করে। যখন উম্মে কাশবা যুদ্ধে যেতে চান তখন রাসূল (সঃ) তাঁকে নিষেধ করে বলেন যে যদি তাঁকে অনুমতি দেয়া হয় তবে সেটাই রীতি হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু যেহেতু ইতিপূর্বে উল্লিখিত অনেক হাদিসে এবং ঘটনায় দেখা যায় যে রাসূল মেয়েদের যুদ্ধে গমনকে অনুমোদন করেছেন সেহেতু বিচ্ছিন্নভাবে একটি হাদিসকেই এ ব্যাপারে শিক্ষার উৎস করা ঠিক নয়।